*********************************
আপনার ব্লগ ওয়েব সাইটতে বিজ্ঞাপন লাগিয়ে ইনকাম করতে চাইলে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
100% ইনকাম ও Real payment
**********************************
"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
বিশেষ সংখ্যা 👇👇👇👇👇
উপকণ্ঠ দীপাবলি সংখ্যা-2020
প্রকাশ কাল:-15/11/2020, রবিবার
সময় :- সন্ধ্যা 7 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒
উপকণ্ঠ দীপাবলি সংখ্যা-2020
লেখক তালিকা
লিমেরিক:-
1) সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
2) অশোক কুমার রায়
শ্যামা সংগীত:-
1) কনিকা রায়
2) বিমান প্রমানিক
ছড়াগুচ্ছ:-
1) সেকেন্দার আলি সেখ
প্রবন্ধ:-
1) সৌম্য ঘোষ
2) সৌরভ পুরকাইত
3) শিবব্রত গুহ
4) বিপ্লব গোস্বামী
5) মিনতি গোস্বামী
অনুগল্প:-
1) দেবব্রত পাল
2) শেখ নিয়ামত ইসলাম
3) আব্দুল রাহাজ
গল্প:-
1) সুস্মিতা দে
2) লাভলি মুখোপাধ্যায়
3) সুরাইয়া মন্ডল
হাতে আঁকা ছবি:-
1) ডা: সায়ন ভট্টাচার্য
দীপাবলি কবিতা:-
1) সুশান্ত মজুমদার
2) চিত্তরঞ্জন দেবভূতি
3) বিপ্লব গোস্বামী
4) হামিদুল ইসলাম
5) কবিতা ভট্টাচার্য
6) বদরুদ্দোজা শেখু
7) অনাদি মুখার্জী
8) তাপসী প্রামানিক
9) নির্মল সরকার
10) শুভশ্রী সরকার দে
11) জগদীশ মন্ডল
12) গোবিন্দ মোদক
13) আভা সরকার মন্ডল
14) ড. রমলা মুখার্জী
অন্যান্য কবিতা -১:-
1) হরিপদ দুয়ারী
2) স্বরাজ পরামানিক
3) গৌতম ভৌমিক
4) মোঃ আলিউল হক
5) সুনন্দ মন্ডল
6) রঞ্জনা রায়
7) সত্যব্রত চৌধুরী
8) পিনাকী মুখার্জী
9) আব্দুল হান্নান
10) অভিষিক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়
অন্যান্য কবিতা-2 :-
1) প্রতিমা বিশ্বাস সাহা
2) নরেন্দ্রনাথ নস্কর
3) পিঙ্কু হাজরা
4) তপন দাস
5) প্রশান্ত মাইতি
6) অনিমেষ মন্ডল
7) চিত্তরঞ্জন গিরি
8) ইউসুফ মোল্লা
9) বদ্রীনাথ পাল
10) অভিজিৎ মান্না
💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥
💥💥💥 বিভাগ-লিমেরিক 💥💥💥
লিমেরিক
সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
আলু নয় আলুথালু, পিয়াজেঁর ঝাঁঝেরে
ঘাম ঝরে দাম শুনে, বুকে হাঁফ ধরেরে
লঙ্কাও বলে ভাই
আমি কিসে কম যাই
বাজারেতে গেলে তাই, চোখে জল ভরেরে।।
লিমেরিক
টলাটলি
অশোক কুমার রায়
মরণ নাকি ফাঁদ পেতেছে চলছি তবু চলছি
তালবেতালে ঠুংরি তালে অনেক কথাই বলছি।
নাইবা.শুনলো কেউ
অনেকেই তো ফেউ !
পেন্ডুলামের মতন কেমন এদিক ওদিক টলছি !
💥💥💥 বিভাগ- শ্যামা সংগীত 💥💥💥
গান(শ্যামা সংগীত)
কনিকা রায়
(মাগো জগৎ জননী বিশ্ব রুপীনি জয় কালী মা,-(2)
তুমি আমার সঙ্গে আছো , তাই নেই কো ভাবনা) ।-(2)
আমার ভালো মন্দ ----
ও আমার ভালো মন্দ যা কিছু সব সঁপেছি তোমায়--
মাগো সঁপেছি তোমায়---
(তোমার ও রাঙা চরণে একটু ঠাঁই দিও মা আমায়)-(2)
আমি দিন রাত্রি ডাকি তোমায় মা-----' মাগো মা--(2)
তুমি আমার সঙ্গে আছো ,তাই নেই কো ভাবনা।
মাগো জগৎ জননী বিশ্ব রুপীনি জয় কালী মা---
(তুমি আমার সঙ্গে আছো ,তাই নেই কো ভাবনা)-(3)
শ্যামা সঙ্গীত--
"লোকে বলে মা তুই রঙে কালো"
বিমান প্রামানিক
লোকে বলে মা তুই রঙে কালো--
তোর গুনে যে জগৎ আলো
লোকে বলে মা তুই রঙে কালো--
তোর গুনে যে জগৎ আলো।
মা তোর মুখে কেন রক্ত
আমরা যে তোর পাগল ভক্ত
মা তোর মুখে কেন রক্ত
আমরা যে তোর পাগল ভক্ত।
গলায় যে তোর মুন্ড মালা--
গলায় যে তোর মুন্ড মালা--
তুই রাগিলে বড়োই জ্বালা--।
গলায় যে তোর মুন্ড মালা--
ও মা তুই রাগিলে বড়োই জ্বালা--।
হাতেও তোরে মুন্ড ঝোলা--।
তোর হাতের ঐ জ্যান্ত খাঁড়া
তোরে পূজিতে ব্যস্ত তারা।
মা তুই শান্ত রবি বল কিসে--?
মা তুই শান্ত রবি বল কিসে--?
গলায় যে তোর মুন্ড মালা--
দেব তোরে জবার মালা
তুই রাগিলে বড়োই জ্বালা--।
দেব তোরে জবার মালা।
মা তোর গুনে যে জগৎ আলো
লোকে বলে মা তুই রঙে কালো
ও মা, তোর গুনে যে জগৎ আলো--।
ও--মা--, তোর গুনে যে জগৎ আলো----।
💥💥💥 বিভাগ-ছড়াগুচ্ছ 💥💥💥
সেকেন্দার আলি সেখ এর ছড়াগুচ্ছ
1)
ভূতগুলো সব হাড়গিলে
ভূতগুলো সব হাত নাড়ে
রক্ত খাবে কার ঘাড়ে
খাল পাড়ে
বাঁশ ঝাড়ে
দল বেঁধে সব তাল পাড়ে l
ভূত গুলো সব জোর কাশে
শ্মশান ঘাটের চার পাশে
জোর হাসে
লাল ঘাসে
চিবোয় মানুষ এক গ্রাসে
আঁধার মাখা মলমাসে l
ভূতগুলো সব হাড়গিলে
চমকে ওঠে তাই পিলে
কার ঝিলে
সব মিলে
মাছ ধরে খায় খাল বিলে
কাঁটা সমেত গিলে- গিলে l
2)
রেলের ভূত
রেলের ভূত বাদাম খায়
আঁধার হলেই দিল্লি যায়
ঠিক মানুষের পাশে
আসন পেলেই বসে
বুড়োর মতোই কাশে
কথায় কথায় হাসে
সেই হাসিতে রেল গাড়িটা
দৌড় দেয় l
রেলের ভূত মানুষ খায়
ভিক্ষা করে গাজন গায়
সামনে কিছু পেলে
ধাক্কা মারে মেলে
বড় সে বিটকেলে
ভূতেরা মনের ছলে
দুর্ঘটনা ঘটিয়ে তারা
পালিয়ে যায় l
3)
ভূতের খবর
ভূতের ছড়া লেখা হলেই
ভূত রাজ্যে খবর যায়
ভূতগুলো ছড়ার পাতায়
একটু বেশি প্রচার চায় l
তিনশো জাতের ভূতের নেতা
বসে গাছের ডালে
আজব রকম ফন্দি আঁটে
মড়া খাবার তালে l
ভূতের নেতা ছড়ার পাতায়
অনেক বেশি প্রচার নেয়
সেই আশাতে সাত- সকালে
ভূতের খবর পৌঁছে দেয় l
💥💥💥বিভাগ :-- প্রবন্ধ 💥💥💥
মা কালী নগ্নিকা কেন ?
সৌম্য ঘোষ
বাংলায় 'পূজা'' শব্দ সুপ্রাচীন। প্রায় তিন হাজার বছর আগে প্রাচীন বাংলায় 'পূজা' শব্দের প্রাথমিক ধারণার উন্মেষ বলে মনে করা হয়। কেননা, 'পূজা' শব্দটি বৈদিক আর্যদের সংস্কৃত ভাষার শব্দ নয়; 'পূজা' শব্দটি অস্ট্রিক ভাষার একটি শব্দ। সুপ্রাচীন বাংলার মানুষ কথা বলত অস্ট্রিক ভাষায়।
চামুণ্ডাচর্চিকা কালীর পূজা বাংলা ও বহির্বঙ্গে প্রাচীন উৎসব হলেও বর্তমান আকারে কালীপূজা আধুনিক কালের। ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ স্মার্ত পণ্ডিত তথা নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপূজার বিধান দিলেও, কালীপূজার উল্লেখ করেননি। ১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের 'শ্যামাসপর্যা বিধি' গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। ড. শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, 'কাশীনাথ এই গ্রন্থে কালীপূজার পক্ষে যেভাবে যুক্তিতর্কের অবতারণা করিয়াছেন, তাহা দেখিলে মনে হয়, কালীপূজা তখনও পর্যন্ত বাঙলা দেশে সুগৃহীত ছিল না।' তবে খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলায় কালীপূজার প্রচলনের কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নবদ্বীপের প্রথিতযশা তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়। তাঁর আগে কালী উপাসকরা তাম্রপটে ইষ্টদেবীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে পূজা করতেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন_ "কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বয়ং কালীমূর্তি গড়িয়া পূজা করিতেন। আগমবাগীশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া বাঙ্গালার সাধক সমাজ অনেকদিন চলেন নাই; লোকে 'আগমবাগিশী' কা- বলিয়া তাঁহার পদ্ধতিকে উপেক্ষা করিত।" অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এ সময় সাধক কবি রামপ্রসাদ সেনও আগমবাগীশের পদ্ধতি অনুসারে কালীপূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে কালীপূজা বাংলায় দুর্গাপূজার মতোই সনাতনধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব।
কালী বা কালিকা হলেন সনাতনধর্মাবলম্বীদের উপাস্য শক্তির দেবী। তাঁর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। তন্ত্রশাস্ত্রের মতে, তিনি দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত তন্ত্রমতে পূজিত প্রধান দশজন দেবীর মধ্যে প্রথম দেবী।
তন্ত্র ও পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপভেদের কথা পাওয়া যায়। 'তোড়লতন্ত্র' মতে কালী অষ্টধা বা অষ্টবিধ। যেমন_ দক্ষিণাকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, চামুন্ডা ইত্যাদি। 'মহাকাল সংহিতা' অনুসারে আবার কালী নববিধা। এ তালিকা থেকেই পাওয়া যায় কালকালী, কামকলাকালী, ধনদাকালী ও চণ্ডিকাকালীর নাম। আবার বিভিন্ন মন্দিরে 'ব্রহ্মময়ী', 'ভবতারিণী', 'আনন্দময়ী', 'করুণাময়ী' ইত্যাদি নামে কালীপ্রতিমা প্রতিষ্ঠা ও পূজা করা হয়। দুর্গাপূজার পরের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমকসহকারে পালিত হয়। এ ছাড়া মাঘ মাসে রটন্তী কালীপূজা ও জ্যৈষ্ঠে ফলহারিণী কালীপূজাও বিশেষ জনপ্রিয়। অনেক জায়গায় প্রতি অমাবস্যা এবং প্রতি মঙ্গল ও শনিবারে কালীপূজা হয়ে থাকে।
হিন্দুদের অন্যতম আরাধ্যা দেবী কালিকা বা কালীর সবচেয়ে জনপ্রিয় মূর্তিতে দেবীকে নগ্নিকা হিসেবে দেখা যায়। দেবীর এই মূর্তি অনেকের কাছে কৌতুহলের কারণ, অনেকের কাছে কৌতুকেরও। সেক্ষেত্রে এই দেবীরূপের প্রকৃত তাৎপর্য জানা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথমেই বলে রাখা ভাল যে, হিন্দুধর্মে যে কোনও দেব বা দেবীমূর্তিই আদপে প্রতীকী। হিন্দু শাস্ত্রে ব্রহ্মকেই একমাত্র সত্য বলে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি নিরুপাধি, নির্গুণ। মায়াকে আশ্রয় করে তিনি সগুণ রূপ লাভ করেন। এই সগুণ ব্রহ্মই ঈশ্বর, স্রষ্টা। পুরুষ ও প্রকৃতির লীলার মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, অতঃপর স্থিতি ও প্রলয় ঘটে থাকে। শক্তি হলেন "প্রকৃতি স্বরূপিনী"। তিনি জগন্মাতৃকা। আদ্যাশক্তি 'নিরাকারা এবং মানুষের কল্পনার অতীত'। কিন্তু ভক্তের সুবিধার্থেই তাঁকে মানুষের ইন্দ্রিয়বোধ্য রূপে কল্পনা করা হয়ে থাকে। দেবী কালীর প্রচলিত ও সাধারণ্যে পূজিত মূর্তিটিও তাঁর তেমনই একটি কল্পিত রূপমূর্তি। কিন্তু এই রূপকল্পনার বিশেষ শাস্ত্রীয় তাৎপর্য রয়েছে। তাঁর মূর্তির প্রতিটি অংশই গভীর প্রতীকী অর্থ সম্পন্ন। কীরকম সেই অর্থ? সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক—
(১)দেবীর মাথায় কালো চুলের ঢল। তাঁর এই মুক্ত কেশপাশ তাঁর বৈরাগ্যের প্রতীক। তিনি জ্ঞানের দ্বারা লৌকিক মায়ার বন্ধন ছেদন করেছেন। তাই তিনি চিরবৈরাগ্যময়ী।
(২)দেবীর গায়ের রং কালো। আসলে তিনি যে কোনও বর্ণের অতীত। আর কালো রং সকল বর্ণের অনুপস্থিতির প্রতীক। কখনও দেবীকে গাঢ় নীল বর্ণেও কল্পনা করা হয়। তিনি গাঢ় নীল আকাশের মতোই অসীম। তাঁর নীল গাত্রবর্ণ সেই গগনসম অসীমতার ইঙ্গিতবাহী।
(৩ )দেবী ত্রিনয়ন সম্পন্না। এই ত্রিনয়ন চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নির ন্যায় অন্ধকার বিনাশকারী। এই ত্রিনয়নের মাধ্যমে দেবী যেমন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দর্শন করে থাকেন, তেমনই প্রত্যক্ষ করেন সত্য, শিব ও সুন্দরকে; অর্থাৎ বৃহত্তর অর্থে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়কে।
(৪ ) দেবী সাদা দাঁতের দ্বারা নিজের রক্তবর্ণ জ্বিহাকে কামড়ে ধরে রয়েছেন। লাল রং রজোগুণের ও সাদা রং সত্ত্বগুণের প্রতীক। দাঁতের দ্বারা জিহ্বাকে চেপে ধরে দেবী তাঁর ভক্তকুলকে বোঝাতে চাইছেন, ত্যাগের দ্বারা ভোগকে দমন করো।
(৫ ) দেবী মুণ্ডমালিনী। দেবীর গলায় রয়েছে মোট ৫০টি মুণ্ডের মালা। এই মুণ্ডগুলি ৫০টি বর্ণ (১৪টি স্বরবর্ণ ও ৩৬টি ব্যঞ্জনবর্ণ) বা বীজমন্ত্রের প্রতীক। এই বীজমন্ত্রই সৃষ্টির উৎস। দেবী নিজে শব্দব্রহ্মরূপিনী।
(৬ ) দেবী চতুর্ভুজা। তাঁর ডানদিকের উপরের হাতে রয়েছে বরাভয় মুদ্রা, নীচের হাতে আশীর্বাদ মুদ্রা। কারণ দেবী তাঁর সন্তানদের যেমন রক্ষা করেন, তেমনই ভক্তের মনোবাঞ্ছাও পূর্ণ করেন। বাঁ দিকের উপরের হাতে তিনি ধরে রয়েছেন তরবারি, আর নীচের হাতে একটি কর্তিত মুণ্ড। অর্থাৎ জ্ঞান অসির আঘাতে তিনি যেমন জীবকুলকে মায়াবন্ধন থেকে মুক্তির পথপ্রদর্শন করতে পারেন, তেমনই মায়াচ্ছন্ন জীবের মস্তিস্কে প্রদান করতে পারেন প্রজ্ঞা কিংবা বিশেষ জ্ঞান।
( ৭ ) দেবী কোমরে কর্তিত হাতের মেখলা পরিহিতা। এই হাত কর্মের প্রতীক। মানুষের সমস্ত কর্মের ফলদাত্রী দেবী। জীবনচক্রের শেষে সমস্ত আত্মা স্বয়ং দেবীর অঙ্গীভূত হয়। এবং পরে মাতৃজঠর থেকেই পুনরায় তাদের কর্মফল অনুসারে জন্মলাভ করে।
(৮) দেবীর পদতলে শিব শায়িত। শিব স্থিতি, দেবী গতি। শিব ব্রহ্মচৈতন্য, দেবী ব্রহ্মশক্তি। তাঁদের সম্মিলন ব্যতীত সৃষ্টির উৎপত্তি সম্ভব নয়। বঙ্গে সাধারণত দক্ষিণা কালীর পুজো হয়ে থাকে। এই মূর্তিতে দেবীর দক্ষিণ পদ বা ডান পা শিবের বুকে স্থাপিত থাকে।
(৯) দেবী নগ্নিকা। তিনি বিশ্বব্যাপী শক্তির প্রতীক। তিনি অসীম। এই চিরশক্তিকে আবৃত করে এমন সাধ্য কোন বস্ত্রের রয়েছে! দেবী তাই দিগম্বরী।
কারও কারও মতে, কালী আদিতে ছিলেন অনার্যদেবী। তাঁদের যুক্তি হলো যে, কালীর রূপকল্পনা ও পরিবেশ অনার্যোচিত। তাছাড়া অধিকাংশ দেবদেবীর পূজা হয় দিনে, কিন্তু মা কালীর পূজা হয় রাতে। কালক্রমে কালী আর্যদেবীরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্রই কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।। ( Ref. সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় )
প্রবন্ধ:
শাক্ত পদ
সৌরভ পুরকাইত
শাক্ত পদাবলী বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সম্পদ।এই গানগুলিতে একদিকে ভক্তিরস অন্যদিকে সাহিত্যরস দুই-ই পাওয়া যায়।কেউ একে 'মালসী' বলেন,কেউ বলেন শ্যামাসঙ্গীত,কখনো এর নাম শাক্ত পদাবলী।শক্তি বিষয়ক সংগীত বা পদ তাই এর নাম শাক্ত পদ। এই পদগুলির কয়েকটি পর্যায় আছে।যেমন- আগমনী,বিজয়া,ভক্তের আকুতি।উমা-পার্বতী-কালিকাকে কেন্দ্র করে রচিত এই পদে বাৎসল্য রস,ভক্তিরসের অপূর্ব প্রকাশ ঘটেছে।সেই কারণে আপামর বাঙালির কাছে তা গভীর ভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল।
সেকালের গ্রামবাংলার করুণ জীবনযাপনের ছবি ফুটে উঠেছে এই পদগুলিতে।পারিবারিক জীবনের সুখ-দুঃখ,পিতার স্নেহ, মেয়ের জন্য মায়ের ব্যাকুলতা,স্বামী-প্রীতি এসব ছবি পাওয়া যায় আগমনী-বিজয়া পর্যায়ের গানে। একটি পদে কবি বলছেন-
"এবার আমার উমা এলে আর উমা পাঠাব না/বলে বলবে লোকে মন্দ কারো কথা শুনব না"। এই সব গানে মাতৃহৃদয়ের বেদনা ছত্রে ছত্রে ধ্বনিত হয়ে উঠেছে।
কোন পদে দেখা যায় জমিদারের খাজনা দিতে না পারার পরিণতি।সেখানে পেয়াদা এসে 'মসিল দিয়া তশিল করে'। দিনমজুরের প্রাপ্য অর্থ অত্যাচারী পেয়াদা কেড়ে নেয়, কখনো চুরি হয়ে যায়। দেখা যায় বিচারের নামে প্রহসনের চিত্র, বন্দীর দুর্দশার মর্মস্পর্শী বর্ণনা।মানবজীবনের আশা-আশাভঙ্গ,স্নেহ মমতার অপূর্ব রস এই সব পদে ফুটে উঠেছে।।
একজন সত্যিকারের মানুষ
শিবব্রত গুহ
অনিন্দ্য ঘোষ হলেন একজন বাংলা সাহিত্য জগতের নামী কবি। তাঁর কবিতা সত্যিই অসাধারণ। তাঁর রচনা করা কবিতাগুলো
মনকে ভীষণভাবে ছুঁয়ে যায়। বাংলার পাঠক
সমাজে তাঁর খুব সমাদর আছে। তিনি একটি
সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তার নাম
হল " জেনেসিস বার্তা "।
এই পত্রিকাটি এক কথায় অসাধারণ। এর সুনাম দিনকে দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আজ দেশে বিদেশে সবার মুখে মুখে ঘুরছে জেনেসিস বার্তার নাম। এই জেনেসিস বার্তা নামটি ভারি সুন্দর।
এই নামটার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অভিনবত্ব।
যার কোন তুলনাই হয় না। অনিন্দ্য ঘোষ সবার
কাছে অনিন্দ্যদা বলেই বেশি সমাদৃত। তাঁর মনটা বড়ই কোমল। তিনি জেনেসিস বার্তাতে বিভিন্ন জায়গার নতুন নতুন কবি সাহিত্যিকদের অপূর্ব সৃষ্টিকে অতি সুন্দর ভাবে প্রকাশিত করে থাকেন।
নতুন কবি সাহিত্যিকদের মনে তিনি সর্বদা জুগিয়ে
থাকেন আত্মবিশ্বাস। তাঁরা যাতে খুব সুন্দর ভাবে
সাহিত্যের পথে এগিয়ে যেতে পারে, তার জন্য তিনি চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেন না।
তিনি বড় সহজ - সরল মানুষ। তাঁর মন খুব পরিষ্কার। তিনি চিরকাল অন্যের ভালো করে এসেছেন। তাই জন্য, বাংলা সাহিত্যের জগতে,
অনিন্দ্য ঘোষের এক আলাদা সুখ্যাতি রয়েছে।
তিনি সারাবছরই বিভিন্ন জায়গায় কবি সম্মেলনে
যান। আসলে, তিনি একজন সাহিত্যপ্রেমী মানুষ।
তাঁর কাছে সাহিত্য হল সাধনা।
সময়টা ছিল শীতকাল, ডিসেম্বর মাস। আর কিছুদিন পরেই বড়দিনের উৎসবে মেতে উঠবে সবাই। আজ একটা বড় কবি সম্মেলনে গিয়েছিলেন তিনি। সম্মেলনটা হয়েছিল কোলকাতার বাগবাজারে। তিনি অবশ্য থাকেন
কোলকাতারই সাহিত্য পরিষদ স্ট্রিটে।
আজকে তাঁকে বিরাট ভাবে এক সুন্দর শাল
দিয়ে, সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। সাথে আরো দেয় একটি বড় মানপত্র, এক সুদৃশ্য স্মারক ও
একটা মিষ্টির প্যাকেট।
আজকের এই সম্মেলনে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা
এসেছিলেন। তাঁদের সবার সামনে দেওয়া হয়েছে
তাঁকে সম্বর্ধনা। এযে তাঁর জীবনের কত বড় সন্মান! তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তাই, আজ তিনি খুব, খুব খুশি। তবে, আজকে ঠান্ডাটা বেশ পড়েছে। ঘড়িতে বাজে এখন রাত নটা।
এমনিতেই আজ রবিবার, ছুটির দিন, তারওপর,
এই কনকনে ঠাণ্ডার আমেজ, তিনি সাদা শালটা গায়ে জড়িয়ে নিলেন। বাহ! শালটা তো ভারী সুন্দর! তাঁর সারা শরীর গরম হয়ে গেল।
বাস থেকে নেমে, নিজের বাসস্থানের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন কবি অনিন্দ্য ঘোষ। তিনি
হাঁটছিলেন ফুটপাত ধরে। রাস্তায় লোকজন নেই
বললেই চলে। তিনি কিছুদূর হাঁটার পরে, লক্ষ্য
করলেন, যেই ফুটপাত দিয়ে তিনি হাঁটছিলেন,
সেই ফুটপাতেরই এক কোনে, একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক, শুয়ে আছেন, তার সারা গায়ে কোন
বস্ত্র নেই। তার পরনে শুধু একটা ধুতি। প্রচন্ড
ঠান্ডায় তিনি কাঁপছেন ঠকঠক করে। তাই দেখে
ভারি মায়া হল অনিন্দ্য ঘোষের মনে।
তিনি সাথে সাথে তাঁর গায়ের শালটি খুলে নিয়ে সোজা ওই বৃদ্ধের সারা গায়ে জড়িয়ে দিলেন পরম
মমতায়। তিনি যেন শান্তি পেলেন। তার কাঁপুনি
কিছুটা কমলো। তিনি ধরাধরা গলায় হাতজোড় করে, অনিন্দ্য ঘোষের দিকে তাকিয়ে বললেন,
" বাবু, বাবু, আপনি, আপনি আমাকে বাঁচালেন
। এই প্রচন্ড ঠান্ডায় আজ হয়তো আমি মরেই যেতাম। আপনার ঋণ আমি কোনদিনও শোধ করতে পারবো না। আপনি হলেন এই নিষ্ঠুর
সমাজের বুকে একজন মানুষের মতো মানুষ। "
চীনা দ্রব্যে নয়, দেশীয় প্রদীপে পালিত হোক দীপাবলি
বিপ্লব গোস্বামী
আলোর উৎসব দীপাবলি।ধর্মীয় নিয়ম মেনে এদিন দীপের আলোয় সেজে উঠে হিন্দু ধর্মের প্রতি বাড়ি।সেই সঙ্গে লক্ষ্মীর পূজো দিয়ে অলক্ষ্মীকে বিদায় জানানো হয়।অন্ধকার মানেই অলক্ষ্মী আর অশুভ বলে মানা হয় তাই এই দিন দীপ জ্বালিয়ে অশুভ আর অমঙ্গলকে দূর করার প্রয়াস করা হয়।
হিন্দু ধর্ম মতে শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে রাবণকে বধ করে সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন এই দিনে।রামচন্দ্রের আযোধ্যা ফিরার উপলক্ষ্যে গোটা আযোধ্য সেজে উঠেছিলো দীপের আলোয়।সেই তখন থেকে প্রতি বছর দুর্গোৎসের পরবর্তী অমবস্যা দীপাবলি উৎসব হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
দীপাবলি এলেই সস্তার চীনা দ্রব্যে ভরে যায় ভারতের বাজার।অনেক বছর ধরে এভাবেই দীপাবলির বাজারে চীনা পণ্য একচেটিয়া ব্যবসা করে আসছে।সস্তায় ও সহজে চীনা টুনি,বাজি,পটকা,লাইট আর ঘর সাজানোর সামগ্ৰী পেয়ে কেউই কিনতে চায় না দেশীয় সামগ্ৰী ও মাটির প্রদীপ।এরই জেরে মার খাচ্ছে দেশীয় মৃৎশিল্পীরা।এতে দেশীয় মৃৎশিল্পীরা শুধু মারই খাচ্ছেন না বরং বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় কুটির শিল্প।স্বদেশের স্থানীয় মৃৎশিল্প ও দেশীয় কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদেরকেই।ভারতের বাজারকে চীনের অর্থনৈতিক আগ্ৰাসন থেকে মুক্ত করতে এবং মৃৎশিল্পকে উজ্জীবিত করতে বর্জন করতে হবে চীনা পণ্য।আতশবাজীর উদ্ভাবন চীনে।চীন পটকা-বাজি তৈরি করে ভারতের বাজারে বিক্রি করে অথচ তাদের দেশে দীপাবলি পালিত হয় না।তাই এবার যেন চীনা পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ও মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে পালিত হয় দীপাবলি।
সীমান্তে চীন-ভারত উত্তেজনার জেরে চীনা অ্যাপ ও চীনা দ্রব্য বর্জনের হিড়িক পড়েছে দেশজুড়ে।আসুন একজন প্রকৃত দেশ ভক্ত ভারতীয় নাগরিক হিসাবে দীপাবলিতে নিজের বাড়িতে চীনা টুনির পরিবর্তে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে চীনের বিরোদ্ধে লড়াইয়ে অংশ গ্ৰহণ করে দেশ সেবার দায়িত্ব পালন করি।
প্রবন্ধ
অশুভশক্তি বিনাশিনি কালী
মিনতি গোস্বামী
মা দুর্গা যেমন অসুরবিনাশিনী দুর্গতিনাশিনী, তেমনি পৌরাণিক মতে মা কালীও অশুভ শক্তি বিনাশিনী।
পুরাণের কাহিনী থেকে আমরা জানি, অসুরদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে দেবতারা মহাশক্তিরুপিনী মা
দুর্গার সৃষ্টি করেন।দেবতারাই তাঁর দশটাতে দশ অস্ত্র দিয়ে তাঁকে সুসজ্জিত করেন।এই দেবী দুর্গাই মহাবলশালী মহিষাসুরকে বধ করেন এবং দেবলোকে শান্তি ফিরিয়ে আনেন।
কিন্তু অসুর বংশ নির্মুল হলেও দেবলোকে বেঁচে থাকে. রক্তবীজ নামে এক অসুর।সেও মহা বলশালী।তার আবার বিশেষত্ব হচ্ছে, তার রক্ত একফোঁটা মাটিতে পড়লেই সেই রক্ত থেকে জন্ম নেবে হাজার অসুর।সে বেঁচে থাকায় দেবলোকে
আবার অস্বস্তি শুরু হয়।একথা জানতে পেরে দেবীদুর্গা আবার মহাক্রোধে ফেটে পড়লেন।
সেই ক্রোধান্বিত দেবীর দুই ভ্রুর মাঝখান থেকে জন্ম হয় ভয়ালরূপী মা কালীর।
কালীর ভয়াল দৃষ্টিতেই নিহত হয় অনেক অসুর।তাঁর হুংকার শুনেও প্রাণ যায় অনেক অসুরের।ভয়ালরূপী দেবী টকটকে লাল লোল জিহ্বা বের করেই গ্ৰাস করেন অনেককে।কিন্তু তারপরও টিকে থাকে রক্তবীজ।দেবী এবার রাগে অস্ত্র ধারণ করেন।রক্তবীজকে অস্ত্র বিদ্ধ করে তার রক্ত দেবী নিজে পান করেন।রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়ে যাতে অনর্থ না ঘটে, তাই তাকে মহাশূন্যে তুলে তার দেহের সবটুকু রক্ত পান করে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেন।
এরপর দেবী রণরঙ্গিনী রূপে নৃত্য শুরু করেন।
এসময় তিনি নিহত অসুরের হাত দিয়ে কোমরবন্ধনী ,মাথা দিয়ে গলার মালা তৈরী করে পরেন।আর হাতে কাটামুন্ড ঝুলিয়ে নৃত্য শুরু করেন।
মায়ের এই উন্মাদিনী রূপে পৃথিবীও কেঁপে ওঠে।দেবতারা ভীত হয়ে মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন। মহাদেব মা কালীকে নৃত্য থামাতে বললেন,মা নৃত্যের ঘোরে শুনতেই পেলেননা।কারণ মা তখন আনন্দে উন্মাদিনী।
দেবাদিদেব মহাদেব উপায় না দেখে নৃত্যরতা কালীর পায়ে শুয়ে পড়লেন. । দেবীও ঘোরের মাথায় তাঁর বুকে পা তুলে দিলেন। এই সময়েই তিনি সম্বিত ফিরে পান।পায়ের নীচে স্বামীকে শুয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় জিভ বের করেন।
তাই মা কালী পূজিত হন জিভ বের করা রূপে মর্ত্যধামে।
কালী বা কালিকা হলেন হিন্দুদের দেবী।
শাক্ত সম্প্রদায়ের মানুষেরা মা কালীর পুজো করে।
তন্ত্র অনুসারে কালী দশমহাবিদ্যার প্রথম দেবী।
শাক্তমতে কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ।
তন্ত্র ও পুরাণ মতে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়।সেগুলি হল, দক্ষিণাকালী, মহাকালী,
শ্মশানকালী, গুহ্যকালী , ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী
আদ্যাকালী,চামুন্ডাকালী।বঙ্গের বিভিন্নমন্দিরে বিভিন্ন নামে কালীর পুজো করা হয়।
তবে দক্ষিণাকালীর বিগ্ৰহ ই সবচেয়ে প্রসিদ্ধ।
দক্ষিণাকালী চতুর্ভুজা।তাঁর ৪টি হাতে খড়্গ , অসুরের ছিন্নমুন্ড, বর ও অভয় মুদ্রা থাকে।
গলায় নরমুন্ডের মালা। দেবীর গায়ের রং কালো।
আলুলায়িত কেশ এবং শিবের বুকে ডান পা আগে রেখে দন্ডায়মান।
ব্রহ্মযামল তন্ত্রমতে কালী বঙ্গদেশের
অধিষ্ঠাত্রী দেবী।কার্তিক মাসের অমাবস্যার
তিথিতে দীপান্বিতা কালীপুজো প্রধান হলেও ,
অন্যান্য মাসেও কালীপুজো হয় মহা সমারোহে।
বিশেষ মানত করে অন্য মাসে কালীপুজোর
রীতিও বঙ্গদেশে আছে।
সূত্র - সংগৃহীত
💥💥💥 বিভাগ-অনুগল্প 💥💥💥
সমানাধিকার
দেবব্রত পাল
'সবার শিক্ষা, সবার উন্নতি।' স্কুলের দেওয়ালে লেখা থাকতে দেখেছে সে।
তাদের স্কুলে মাহিষ্য, ব্রাহ্মণদের সাথে কামার, কুমোর, জেলেদের
ছেলে-মেয়েরা এক সাথে পড়ে। তফাৎ দেখেনি সে কখনও।
তবে তাকে রবীন্দ্রনাথের হাট কবিতা শুনিয়ে খেপাতো বন্ধুরা। তারা কুমোর।
আর সে ‘বংশী’। তাই 'গাড়ী চালায় বংশী বদন।' সেই বংশী এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা
দিয়েছে।
একদিন গোটা গ্রাম রটে গেল 'কাকমারাদের ছেলে স্কুলে ভর্তি হতে এসেছে।
পইপই করে জনা পঞ্চাশেক গ্রামবাসী স্কুলে ঢুকল। বংশীও ঢুকল।
দিনুকাকারা কাকমারা। শূয়োর চরানো আর শেকড়-বাকড় বিক্রী করা তাদের কাজ।
গ্রামের বাইরে তাদের আস্তানা। তাঁর ছোটো নাতি কার্তিককে স্কুলে ভর্তি
করানো নিয়ে এই বিপত্তি। হেডমাস্টার রাজি হলেও গ্রামবাসীদেরর
চোখরাঙ্গানিতে ভর্তি করা গেল না।
পিছিয়ে পড়ারা কি চিরকাল পিছিয়ে থাকবে? বংশীর ঠাকুরদাদা কুমোরের চাকাটা
ঘুরিয়ে দিয়ে শোনায় অন্য গল্প। একদিন মাহিষ্য-ব্রাহ্মনের স্কুলে তাদের
ঢুকতে সইতে হয়েছে কত চোখরাঙ্গানি। আজ কামার, কুমোর, জেলে, মাহিষ্য,
ব্রাহ্মণের ছেলেরা এক স্কুলে, এক বেঞ্চে বসে। আজ তারাই আটকাচ্ছে পিছিয়ে
পড়া ‘কাকমারাদের’।
আবার লাড়াই। দিনুকাকাদের অধিকারের লাড়াই।
অণুগল্প
অভিমান
শেখ নিয়ামত ইসলাম
একদিন দুপুরে খাওয়ার টেবিলে বাবার সাথে খুব কথা কাটাকাটি হয়ে গেল তময়ানির |বাবার মুখের উপর এমন করে কোনোদিন কথা বলেনি সে |ভাতের পাতে জল ঢেলে দিয়ে উচ্চকন্ঠে বলেছিলো,বাবা হও বলে মাথা কিনে ফেলোনি |তারপর প্রায় তিনদিন বাবার সাথে কথা বলেনি তময়ানি |
আজ আর ইচ্ছা হলেও উপায় নেই |তাঁর বাবার ডাকে সে যেমন ইচ্ছাকৃত অভিমান করে ঘুমের ভান করে নিরুত্তর ছিল |আজ তাঁর বাবা ঠিক তেমন-ই চিরতরে ঘুমিয়ে গেছেন !
ও পাড়ার কালী পূজা
আব্দুল রাহাজ
ভুবন সৈকত রহিম আলীরা একই গ্রামে বসবাস করত ওরা বেশ ভালো বন্ধু সামনে কালীপূজা তাই প্রস্তুতি চলছে। ভুবন সৈকত রহিম আলী রাঃ একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কালী পূজার প্যান্ডেল প্রস্তুতির কাজ করছে কোথাও যেন সম্প্রীতির মেলবন্ধন ফুটে উঠেছে তাদের মধ্যে। আস্তে আস্তে কালী পূজার দিন এসে গেল পুরো গ্রাম ওদের প্রচেষ্টায় আলোর সাজ বাতীতে ভরে উঠলো গ্রামের প্রবেশ এর মূল ফটকের ওখানে বাসের গেট তৈরি করে লেখা আছে সবুজ পুরের সবুজায়ন কালীপূজা। গ্রামটিতে হিন্দু মুসলিমদের বসবাস ওপাড়ার ভুবন হিমেশ সৈকত মন্দিরা অসীমা শুভরা থাকে এই পাড়ায় থাকে রহিম আলী তসলিম পাপিয়ারা পুজো আসতেই দুপাড়ার মানুষ ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে এক সাতে উৎসবে মেতে ওঠে। এমনি থেকে গ্রামটি চারপাশ সবুজের গাছপালায় ঢাকা তার উপরে রাতের আলোর সাজের বাতি বেশ জমিয়ে ছিল পুজোর কটা দিন ওদের। সবুজ সুর গ্রামের উত্তর পাড়ার মাঠে বসে ছিল মেলা নানা রকমের খাবারের স্বাদ দোকান মানুষের আনাগোনা এক মহৎ সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলেছিল ওদের গ্রামে। একজন ছোট্ট ছেলে পাশের গ্রামে থাকে নাম তার হুজাইফা বাবা মসজিদে ইমামতি করে কিন্তু হুজাইফা মেলা খুব পছন্দ করে রাতের বেলা তখন রাত দশটা বাজে একটা ছোট টর্চ নিয়ে মেলায় এসেছে রহিম সৈকতের সঙ্গে বেশ আনন্দ করলো এদিকে রাত গভীর হলো হুজাইফা বলল আমি বাড়ি যাই চলি সামনে পড়ে গেল তার আব্বাজান ইমাম উল্লা তাকে দেখে হুজাইফা ভয়ে কাঁপতে লাগলো কারণ তিনি ছিলেন বেশ গম্ভির মানুষ হুজাইফা কাছে যেতে একটু হেসে বলল ভয় পাইনা আমরা ছোটবেলায় কত এসেছি এখানে। তুই আছিস তো আরো ভালো হয়েছে আমি এসেছি আশেপাশে অন্য ধর্মের মানুষ এসেছে একটা সম্প্রীতি নিবন্ধন তৈরি হল না আমাদের সঙ্গে সঙ্গে হুজাইফা একটু হেসে বললেন তাইতো এরপর বাপ ব্যাটাই জিলাপি স্বাদ নিতে নিতে বাড়ি চলে গেল তাদের সে কি আনন্দ চোখে পরলো। এইভাবে ও পাড়ার কালী পূজা আনন্দ সম্প্রীতির মেলবন্ধন রূপলাবণ্যে ফুটে উঠত আজীবন।
💥💥💥 বিভাগ- গল্প 💥💥💥
গল্পকথা আসরে কালীপূজার
সুস্মিতা দে
সকাল থেকে শুরু বাড়ি না চিড়িয়াখানা , কাকপক্ষী বসতে পারে না বাড়িতো না হয়েছে ?
যাত্রার রঙের রঙ্গমঞ্চ পালা বদলের এক এক জনের একটি একটি আলাদা দল,
এক এক জনের এক এক বায়না মাথায় যার যেমন ইচ্ছে সেই মতো চলতে থাকে আমার খোকা কে সব বায়না শুনতে হবে ।
কেন ? রে বল শুনি? ঠাকুমা গেছে ক্ষেপে ।
পোড়ামুখী শোন যত সব অর্বাচীনের দল আমি যাবো নদীর ঘাটে এক জন আসবি না তোরা আমার পিছু পিছু । বলে গেলুম তোদের সব মায়েদের।
কিনবো বাজী ঠাকুমার কানে ফাটাবো গিয়ে ধানি পটকা বায়না করবো আগে পয়সা দাও বাজি কেনার তবে শান্ত হবো বলছিতো ফাটা বোনা কোন বাজি কানে আজকাল শোনো না কি? তুমি কিছু ঠাকমা
দিদিমুনি এসেছে যাও সব মন দিয়ে লেখাপড়া সাড়ো আর কোন কথা আর এখন নয়।দিদিমুনি বলেন আগে আজ তোমাদের সাথে পাঠের কথা ছাড়া অনেক আলাদা কথা হবে কেমন ?
বুঝতে পেরেছো সব আমার শান্ত সোনা ছেলে মেয়েদের দলবল।
আমরা কালীপূজো করবো তবে বাজি পড়াবো না কেমন?
কেন দিদিমুনি? তোরা আমার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের মাঝে আমার মেয়েরা দুষ্টু না তাই তো ঠিক?
রামকৃষ্ণ দেব তার ছাত্র কে বলেছিলেন তুমি কালি ঠাকুর দেখতে চাও। নরেন কে ?
তিনি স্বামীজি , বিবেকানন্দ সেই বীর সন্ন্যাসী ।
তিনি স্বামী বিবেকানন্দ তাকে সবাই জানে ।
তাকে রামকৃষ্ণ দেব ভবতারিণী মন্দিরে পাঠালেন তাকে বলেন তুই দেখতে চেয়েছিস মাকে মাকে দেখেছিস না বলে নরেন
বারবার তিনি গিয়ে ফিরে আসে দেখা পায় না । নরেন দের বাড়িতে সবাই অনেক কষ্টে খাবার ঠিকমতো সকলে পায় না । নরেন মনে করে রামকৃষ্ণ দেব ঠাকুরের কাছে গেলেন। নরেন জিজ্ঞেস করলেন রামকৃষ্ণ দেব কে আমি মা কে চোখে দেখবো । রামকৃষ্ণ দেব বলেছিলেন আমাকে দেখতে পাচ্ছিস হা পাচ্ছি বলেন ।
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে আসেন তিনি ।মা ভাইরা পেট ভরে খেতে পারেছেনা কি করবে তখন ?রামকৃষ্ণ দেব বিহিত করলেন মঙ্গলবার রাতে মায়ের কাছে যা চাইবি সব পাবি।
মায়ের কাছে আসে মা কালীমূর্তি না জীবন্ত কালি দর্শন করে।
তিন বার কালীমাতা র কাছে গেলেন কিন্তু টাকা কড়ি পয়সা কিছু চাইলেন না তিনি বললেন মা কে জ্ঞান দাও ভক্তি দাও বিবেক দাও বৈরাগ্য দাও ।সবসময় মা কে আমি জীবন্ত রুপে দেখতে চাই এখন যেমন দেখছি তেমন রুপে ।
দিদিমুনি বলে দিন কালীমাতার পূজো হবে না কেন? তিনি তোমাদের আত্মাতে মিশে আছে সর্বক্ষন পুজো করিস তারে।
ভালো মন্দ বিচার করতে পারবে । তোরা ছোট তাই ঠাকুমা কে জ্বালাস? কষ্ট দিও না কে সে কত ভালোবাসে বলো।
এই বছর তোমরা দেশের মানুষের দৈনিক কষ্ট জানো মানুষ খেতে পায় না বিনা চিকিত্সা তে আমফান ঝড়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু র পথে চলছে।
তাই সব বন্ধ করে প্রান দিয়ে মা কে ডাকো আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলাম ধনী দরিদ্র সবাই এক।
অসহায় মানুষের জন্য জীবনে আমাদের কালীপূজার দিনে একসাথে খিচুড়ি খাবো সবাই মাস্ক পড়বো। বাজি পোড়াবো না রাস্তাতে মানুষ বাস করে তাদের গায়ে আগুনের ফুলকি পড়লে তাদের পোড়া র কষ্ট থেকে বাঁচাবো । চাঁদা নিয়ে পুজোর খরচ না করে একটি ছোট গাড়ি বা রিক্সা কিনি আহত মানুষ দের কাজে আসবে।
দিদিমুনি আপনি ঠিক ঠিক কথা বলেন । বাচ্ছারা জড়িয়ে ধরে দিদিমুনি আপনি আমাদের সাড়া জীবন পড়াবেন ।
মায়েরা বাইরে থেকে খুশি হয়ে ভেতরে আসেন । সাড়া জীবনের দায়িত্ব নিয়ে মানুষ করুন দিদিমুনি অনুরোধ করি, আপনি আসবেন কালীপুজোর দিন দুটো খেয়ে যাবেন। তবে করোনা জোড় নেই।
হ্যাপি অ্যানিভার্সারী
লাভলি মুখোপাধ্যায়
রূপছায়া হলের সবেমাত্র শো ভেঙেছে। হল থেকে বেরিয়ে আসা ভীড়ের মধ্যে জটিলেশ্বর ওরফে জটা আর তুতুনকেও বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। জটার বয়স চল্লিশের দোরগোড়ায়, তুতুন ওর চাইতে বছর সাতেকের ছোট। বিবাহবার্ষিকী সেলিব্রেট করতে ওরা আজ দুপুরে ট্যাংরায় লাঞ্চ করেছে। তারপর তুতুনের আবদার রাখতেই দুটো ড্রেস সার্কেলের টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে এসেছে। আর সেখানেই ঘটে গেছে বিপত্তি। তুতুনের অসম্ভব ভূতপ্রীতি। তুতুন ভূতের গল্প পড়তে ভালোবাসে, শুনতে ভালোবাসে, শুনতে শুনতে ভয় পেতে ভালোবাসে। এহেন ভূতপ্রিয়া তুতুনকে কয়েকদিন থেকেই একটা সিনেমার বিজ্ঞাপন খুব টানছে, ‘ভূতের মুখে ভূতের গল্প’। তাই লাঞ্চের পর জটা যখন ইকো পার্ক যাবার প্রস্তাব দিয়েছে, তুতুন বায়না করে আদুরে গলায় বলেছে –
না না ইকো পার্ক নয়, সিনেমা দেখব, ‘ভূতের মুখে ভূতের গল্প।’
জটা সঙ্গে সঙ্গে তীব্র বিরোধিতা করেছে –
না না আজকের দিনে কোন ভূতটূত নয়, আজ আমাদের বিয়ের জন্মদিন।জন্মদিনে ওসব মরে ভূত হয়ে যাবার ছবি কেউ দেখে?
কিন্তু তুতুন নাছোড়বান্দা -
চলো না, চলো না, কাল থেকে আবার তো তোমার ইয়ার এনডিং এর চব্ব শুরু হয়ে যাবে। তখন তো তুমি সময়ই পাবে না। আজ যখন তুমি একটা ছুটি ম্যানেজ করতে পেরেছ, চলো না এটাকে চুটিয়ে enjoy করি। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, আজকের সিনেমাটা দেখে তুমি ভূতের প্রেমে পড়বেই, না হলে আমার নামে তুমি একটা চমরি গাই পুষো।
অগত্যা জটা বউয়ের আবদার রাখতে ‘ভূতের মুখে ভূতের গল্প’ দেখতে এসেছিল। কিন্তু সিনেমাটা দেখে জটার মেজাজ গেছে খিঁচড়ে –
ছ্যা ছ্যা ছ্যা, এসব ছবি মানুষে দ্যাখে? এটা একটা ভূতের ছবি হয়েছে? ডিরেক্টরটা শালা একখানা আস্ত ভূতের বাচ্চা।
২
তুতুনও বিশেষ কোন প্রতিবাদ করতে পারছে না, ছবিটা সত্যিই সেরকম জমেনি। ভৌতিক কান্ডকারখানা দেখাতে গিয়ে এমন অদ্ভুতুড়ে ঘটনা দেখিয়েছে তাতে ভয় পাওয়া তো দূরের কথা বিরক্তি ধরে গেছে। সেই বিরক্তি থেকেই জটার গেছে মটকা গরম হয়ে। হল থেকে বেরোচ্ছেই তাই গজগজ করতে করতে –
এসব ভূতটূত নিয়ে নাচানাচি করা তুমিও এবার বন্ধ করো। যে জিনিসটা এক্সিস্টই করে না সেটাকে নিয়ে যারা মাতামাতি করে তাদের মূর্খ বললেও কম বলা হয়, তারা হলো গবেট।
‘গবেট’ বলা সত্ত্বেও জটাকে পাল্টা আক্রমণ করে না তুতুন, জটার পাশে পাশে চুপচাপ হাঁটতে থাকে। হল থেকে বেরিয়ে জটার মেজাজ আরো তুঙ্গে ওঠে। একটাও ট্যাক্সি, অটো কিচ্ছু নেই। সাড়ে এগারোটাও বাজে নি, এর মধ্যেই চারদিক শুনসান। ল্যাম্পপোস্ট আছে, তবে ল্যাম্প জ্বলছে না। সিনেমার লাস্ট শো হয়ে যাবার পর হলের বাইরের আলোগুলোও নিভিয়ে দেওয়ায় জায়গাটা কেমন অন্ধকার অন্ধকার। তুতুনের কেমন ভয় ভয় করতে থাকে। এই ভয়টা তুতুনের কাছে বেশ রোমাঞ্চের। ভয়ও করছে সেই সঙ্গে ভালোও লাগছে এইরকম একটা অনুভূতি নিয়ে তুতুন জটাকে বলে –
জটু আমার কেমন গা ছমছম করছে, তোমার?
আমারও করছে, তবে ছমছম নয় রি রি-। গা রিরি করছে আমার।একে তো অখাদ্য একটা সিনেমা, তার ওপর গাড়ী নেই ঘোড়া নেই, বাড়ী ফিরবো কি করে এখন? যত্তসব!
জটাকে আর চটানো ঠিক হবে না ভেবে চুপ করে যায় তুতুন। বাস ট্রামগুলোরও যে আজ কি হয়েছে! একটারও দেখা নেই। ট্যাক্সিগুলোও লোক বোঝাই অবস্থায় হু হু করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। অটো স্ট্যান্ডটাও ফাঁকা। আলো আঁধারি রাস্তায় যেন একটা ধোঁয়াশার চাদর বিছানো। তুতুনের গা ছমছমানিটা যত বাড়ে জটার মেজাজও তত চড়ে -
তিনমাইল রাস্তা এখন হাঁটো শালা-! এমন গবেট বউয়ের পাল্লায় যে পড়ে, সেই শালাও একটা আস্ত গবেট।
গজগজ করতে করতেই হঠাৎ জটার চোখ পড়ে, কিছুটা দূরেই একটা অটো দাঁড়িয়ে আছে। চোখটা চকচক করে ওঠে জটার। তুতুনকে বলে –
৩
ওই তো একটা অটোর দেখা পাওয়া গেছে, দেখি ব্যাটা আবার যায় কিনা। হনহন করে অটোর কাছে পৌঁছে যায় জটা। কিন্তু অটোয় কাউকে দেখতে পায় না। অবাক হয়ে বলে –
যাহ্ বাব্বা! যাও বা একখানা অটো পাওয়া গেল, তার ড্রাইভারই নেই! না না আছে, অটোর পেছনের সিটে গুড়িশুড়ি মেরে বসে আছে। ভাবসাব দেখে তো মনে হচ্ছে গলায় বেশ কয়েক পাত্তর ঢেলেছে। অটোটা আবার চালাতে পারবে তো! যা থাকে কপালে, বলে তো দেখি একবার।
ড্রাইভারকে জোর গলায় ডাকে জটা –
ও ভাই ... শুনছেন – শুনছি –
বেশ জলদগম্ভীর গলা ড্রাইভারের।
তালতলা যাবেন?
তিনপাত্তি লাগবে।
তিন পাত্তি! মানে?
তিনটে শ-য়ের পাত্তি।
তিনটে শ-য়ের পাত্তি! মানে তিনশো?
আঁতকে ওঠে জটা –
কি বলছেন কি! রিজার্ভে গেলে মেরে কেটে ১০০। সেখানে আপনি তিনশো চাইছেন?
দিতে পারলে দিন, নয়তো হড়কে যান।
হড়কে যাবো!আহা কি ভাষা! কিন্তু এখন ভাষা নিয়ে আক্ষেপ করে লাভ হবে না, এই ড্রাইভারকেই বাবা বাছা বলে রাজী করাতে হবে।
গলার স্বরটা আরো দু-ধাপ নিচে নামিয়ে জটা বলে –
এই যে শোনো না ভাই, তিনশো না আমি পুরোপুরি দুশোই দেবো।
হবে না হবে না ... তিনশোর এক পয়সা কমে যাবো না __
৪
মনে মনে জটা বলে –
ঝোপ বুঝে কোপ মারা হচ্ছে না! হতভাগা বাচ্চা শুয়োর কোথাকার!
ততক্ষণে তুতুন এগিয়ে এসেছে। জটাকে অটোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে –
কি হলো জটি, উনি যাবেন না?
যাবেন, তিনশো টাকা নেবেন।
তিনশো!
হ্যাঁ আর ভেবে লাভ নেই, উঠে পড়ো, বাড়ীতে তো পৌঁছতে হবে।
ড্রাইভারকে তাড়া দেয় –
চলো ভাই, তিনপাত্তিই পাবে, তবে একেবারে বাড়ীর দরজায় পৌঁছে দিতে হবে কিন্তু।
ড্রাইভার রাজী হয়ে যায়, গুড়িশুড়ি মারা অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে, আড়মোড়া ভাঙে, তারপর নিজের জায়গায় বসে জটাদের বলে –
উঠে পড়ুন Sir.
জটা আর তুতুন অটোতে উঠে পড়ে।অটো চলতে শুরু করে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তুতুন –
যাক্ বাবা শেষ পর্যন্ত অটোটা পাওয়া গেল! নইলে আজ প্রচন্ড দুর্গতিতে পড়তে হতো।
পড়তে হতো মানে? দুর্গতিতে তো পড়েইছি।তোমার কথায় ওই অভূতপূর্ব ভূতের ছবি দেখাটা দুর্গতি ছাড়া আর কি!
তুমি এখনও রেগে আছো।ছবিটা একটু boring মানছি, কিন্তু কয়েকটা জায়গা তো ফাটাফাটি ভয়ের। ওই যে যেখানে রত্না আলমারীটা বন্ধ করার পরও, নিজের থেকে আলমারীর দরজা খুলে সমস্ত বইগুলো ঝপঝপ করে মাটিতে পড়তে লাগলো! তারপর ... তারপর যখন বইগুলো এক এক করে কুড়চ্ছে, হঠাত্ দেখতে পেল আলমারীর তাকে সুজয়ের কাটা মুন্ডু! ওরে বাবাগো!
৫
ননসেন্স, দশবছর আগে যে লোকটা মরে গেছে,আলমারীর তাকে তার কাটা মুন্ডু! ঘোড়া কা আন্ডা!
আরে বাবা কাটা মুন্ডুটা তো আর সত্যি সত্যিই সুজয়ের কাটা মুন্ডু নয়। সুজয় মরে ভূত হয়ে গেছে। রত্নাকে দিয়ে সত্যিটা স্বীকার করাবার জন্য ও নিজের কাটা মুন্ডুটা রেখেছিল।
তার মানে ভূত নিজের মুন্ডু নিজে কেটে দিল।
আহা ভূতেদের তো আর নিজেদের শরীর বলে কিছু থাকে না। ওরা তো অশরীরী, ... ওরা যখন তখন যা খুশী creat করতে পারে।
তুমি থামবে, ভূত ফূত বলে কিস্স্যু নেই। যত্তসব গাঁজাখুরি গল্প।
অটোর ড্রাইভার হালকা চালে বলে ওঠে – কে বলেছে নেই?
জটা জোর গলায় বলে ওঠে –আমি বলছি নেই। বিজ্ঞানের যুগে মানুষ যেখানে চাঁদ তো দূরের কথা মঙ্গলগ্রহে অবধি চলে যাচ্ছে, সেই যুগে দাঁড়িয়ে ভূতের অস্তিত্বকে যারা বিশ্বাস করে তারা পাগল ছাড়া আর কিস্স্যু না।
ড্রাইভার এবার বেশ জোর প্রতিবাদ করে ওঠে –
ওসব মঙ্গলগ্রহ-ট্রহ দেখাবেন না boss, জিন্দা অবস্থায় মানুষ সেখানে পৌঁছবার অনেক আগেই মুর্দা মানুষ ভূত হয়ে সেখানে পৌঁছে গেছে, মঙ্গলগ্রহে বসে ডাংগুলি খেলছে।
ড্রাইভারের কথায় হো হো করে হেসে ওঠে –
মঙ্গলগ্রহে বসে ডাংগুলি! চ্যাংড়ামো হচ্ছে?’
চ্যাংড়ামো? ভূতেদের ক্ষ্যামতা সম্পর্কে আপনার কোন আইডিয়া আছে?
অবশ্যই আছে। একমাত্র ভয় দেখানো ছাড়া তাদের আর কোন ক্ষমতাই নেই। তাও ভয় সবাই পায় না। যারা যুক্তির ধার ধারে না, ভীতুর ডিম, কুসংস্কারের পোকা, তারাই ভূত ভূত করে নাচনাচি করে। আরে বাবা ভূত বলে আছে কিছু? ভূতটা তো মানুষের একটা কল্পনা __ সেই কল্পনাতেই তা দিতে যারা ভালোবাসে, তারাই ভুতে বিশ্বাস করে। কই হিম্মত থাকে তো আসুক দেখি ভূত আমার সামনে।
৬
তুতুন আর চুপ করে থাকতে পারে না। সে বলে –
জটি Please, রাতের বেলা ভূতেদের দিকে এরকম challenge ছুঁড়ে দিও না। ওরা যদি একবার challenge টা accept করে নেয় আমরা কিন্তু বিপদে পড়ে যাবো।
আরে ধ্যুস্, ভূত বলে কিছু থাকলে তো আমার challenge টা accept করবে। ভূত কোথায়? এই তো আমি আবারো বলছি, ভূত বলে যদি সত্যিই কিছু থেকে থাকে, এই মুহূর্তে আমায় তার প্রমাণ দিক। যে কোন প্রমাণ, কাটামুন্ডু, ছায়ামূর্ত্তি anything ......
ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায় তুতুন। বলে –
কি হচ্ছে কি জটি, রাতবিরেতে তোমার এসব কথাগুলো কি না বললেই নয়।
অটো ড্রাইভার বলে –
বলতে দিন না বৌদী ... ভূত যদি সত্যিই সামনে এসে দাঁড়ায় দাদার এই রংবাজি ফুসস্ হয়ে যাবে।
ড্রাইভারের এহেন স্পর্ধায় চটে লাল হয়ে যায় জটা। ধমকের সুরে বলে –
থামো তো হে ছোকরা, আমাদের হাজব্যান্ড ওয়াইফের মধ্যে তোমাকে ইন্টারফেয়ার করতে কে বলেছে, মন দিয়ে গাড়ীটা চালাও।
গজগজ করতে থাকে জটা –
আমার রংবাজি ফুসস্ হয়ে যাবে ... মামার বাড়ী, আসুক না শালা ভূতের গুস্টি দেখি আমার রংবাজি কেমন ফুসস্ হয় .....
জটার কথা শেষ হতে না হতেই অটো প্রচন্ড স্পীডে চলতে শুরু করে আর ড্রাইভার ধাঁ করে অদৃশ্য হয়ে যায়। ড্রাইভার ছাড়াই অটো প্রচন্ড স্পীডে চলতে থাকে। জটা ভয়ানক ভয় পেয়ে যায়, তুতুনও প্রচন্ড ভয় পেয়ে বলে –
জটি___ই।
৭
আর্তনাদ করে জটাকে জড়িয়ে ধরে। জটা কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু ‘ভ-ভ-ভ-ভ-ভ’ ছাড়া আর কোন শব্দ বার হয় না। অটো কখনও ডানদিকে হেলে গড়গড় করে চলতে থাকে, কখনও বাঁদিকে হেলে চলতে থাকে, এলোপাথারী ভাবে দুরন্ত গতিতে ড্রাইভার ছাড়াই অটো চলতে থাকে। সেই সঙ্গে ভূতের নাকি সুরে খিনখিনে হাসি ভেসে আসে, আর হাসির মাঝে মাঝেই নাকি সুরে ‘ফুসস্’ ‘ফুসস্’ কথাটা শোনা যায়। তুতুন আর জটা দুজনে দুজনকে জাপটে ধরে আছে। মানুষ যেমন কোমর দুলিয়ে নাচে, অটোটা ডানদিক বাঁদিকে হেলে ওইভাবে যেন নাচতে শুরু করে। জটার মাথা অটোর মাথায় জোরসে ঠুকে যায়। জটা ‘আঁউ-উ’ করে চিত্কারর করে ওঠে। তুতুন ভয়ার্ত গলায় বলে –
ক্ষমা চাও ক্ষমা চাও জটি, নাহলে ভূত তোমাকেও ভূত বানিয়ে ছেড়ে দেবে। তুমি মরে গেলে আজই আমাদের last anniversary হয়ে যাবে।Sorry বলো জটি, sorry বলো ___
জটা কাঁপতে কাঁপতে বলে –
তাই তাই ... s ... sorry sorry .....
জটার কথা শেষ হতেই ঝপাং করে ড্রাইভারের সিটে ড্রাইভার লাফিয়ে বসে পড়ে। জটা আর তুতুন ভয়ে প্রায় আধমরা। ড্রাইভার হা হা করে হাসতে হাসতে অটোর স্পীড বাড়িয়ে দেয়। তারপর বলে ওঠে –
ভয় পাবেন না sir, ভয় পাবেন না।
বলেই বো করে জটাদের দিকে ঘুরে যায়। অটো কিন্তু চলতেই থাকে,অথচ জটাদের মুখোমুখি ড্রাইভার। জটা থরথর করে কাঁপতে থাকে। ড্রাইভার বলে –
ডরো মত্ ইয়ার। ডর কিস্ বাত কি!
বলেই জটার পিঠে একটা চাপড় মারে। আঁতকে ওঠে জটা। হাতজোড় করে বলে –
ভু ... ভু ... ভুল ... হয়ে গেছে ভাই ... আর কখনও বলবো না ভূ ... ভূ ... ভূত নেই .....
৮
জটার কথা শেষ হবার আগেই আবার ঘুরে যায় ড্রাইভার। কিন্তু এবার আরো ভয়ঙ্কর দৃশ্য। অটো চালাচ্ছে ড্রাইভারের শুধু শরীরটা, মাথাটা নেই ... অটোটা মনে হচ্ছে যেন উড়ে যাচ্ছে। কখনও ওপরে উঠে যাচ্ছে, কখনও নিচে আছড়ে পড়ছে। অটোটা যেন তান্ডব নৃত্য করছে। ড্রাইভারের শরীরটার ওপর তার মুন্ডুটা একবার অদৃশ্য হচ্ছে আবার ফিরে আসছে। জটা আর তুতুনের অবস্থা সঙ্গীন। বিশেষ করে জটার। ভয়ে মৃতপ্রায় জটা প্রানপনে জাপটে ধরে রেখেছে তুতুনকে। তুতুনও ভয় পাচ্ছে। আবার রোমাঞ্চিতও হচ্ছে ভূতের তান্ডব নৃত্য দেখে। At last ঝাঁকুনি দিয়ে অটোটা থেমে যায়। আরো ভয় পেয়ে যায় জটা। মনে মনে বলে –
থেমে গেল কেন অটোটা? থামিয়ে কি খেল দেখাবে ভূতটা!
ভূতটা বলে ওঠে –
কি হলো? এবার ঢেউ তুলুন, তালতলা তো এসে গেছে।
প্রায় লাফিয়ে নেমে পড়ে অটো থেকে ওরা। জটা পকেট থেকে টাকা বার করে না গুণেই ড্রাইভারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে –
আ ..... আপনার ভাড়াটা __
বলতে বলতেই টাকাটা ভুস করে ওপরে উঠে যায়। ওরা হতভম্ব হয়ে ওপরে তাকায়। দেখে রং বেরঙের ফুল নেমে আসছে। যেন ফুলের বৃষ্টি। ফুলগুলো একটা তোড়া হয়ে জটার হাতে পড়ে। অটোটা তখনও দাঁড়িয়ে। হতবাক বিস্ময়ে তাকায় ওরা অটোর দিকে। ড্রাইভার thumbs up করে বলে –
Happy anniversary.
অটোটা আবার চলতে শুরু করে সেই আগের মতই এঁকে বেঁকে, হেলে দুলে, তান্ডব করতে করতে এগিয়ে যায়। জটা আর তুতুন অপলক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
❤"অচেনা তুমি"❤
💔সুরাইয়া মণ্ডল 💔
বাইরে বেরোলেই গাড়ির আওয়াজে কান ঝালাফালা করে,বাতাসের ধুলোতে শ্বাস আটকে আসার উপক্রম৷
আজকাল এগুলোকে যেন নিজের বড্ড আপন মনে হয় , রোজকালের দিনগুলো আমার ব্যস্ততার সাথেই কাটে তাই প্রেম নামক এই জিনিসটার সাথে নিজেকে কখনো জুঁড়ে দেখার বৃথা চেষ্টা করিনি ৷
শহরের ব্যস্ততার সাথে ধীরে ধীরে নিজেকেও ব্যস্ত করে তুলেছি ৷
প্রথম প্রথম অসুবিধার সম্মুখীন হলেও তবে এখন কিন্তু বেশ আছি ৷ মাঝে মাঝে যখন হাঁপিয়ে উঠি তখন বড্ড ইচ্ছা করে রবীন্দ্রনাথের কল্পনার সেই জগতটাই ঘুরে আসি যেখানে আরশিযুগল প্রেমের বন্ধনে প্রত্যেক রমনী আটকা পড়ে আছে ৷
তবে সেখানে গিয়েও কি নিজের আরশিতে ফুটে উঠবে আমার সেই নাম না জানা প্রিয়তমর ছবি? হয়তোবা নয় !
তবে যাওয়া বললেই তো আর যাওয়া হয়ে ওঠে না, একেই ব্যস্ততাপূর্ণ জীবন আর সেখানে অন্য সমস্ত রোমান্টিকতা বাহ্যিক বৃথা নামক বস্তু ৷ তবে দিনগুলো যাচ্ছে ৷
একাকীত্ব জীবনের ধারাতেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি নিজেকে ৷
একদিন আকাশের সেই উজ্জ্বল তারাখসার মতো নেমে এলো আমার "তুমি" নামক ব্যক্তিটা ৷
যানোতো, ভাদ্রের প্রচন্ড চটচটে গরমে যখন তোমাকে দেখেছিলাম ছাতা হাতে রাস্তার ওপাশে প্রচন্ডরকম হাঁসফাঁস করতে তখন চোখ দুটো সেখানেই কিছুক্ষণের জন্য আটকা পড়ে গিয়েছিল আমার৷ গড়িয়ে পড়া ঘাম গুলো যখন চিবুক দিয়া আছড়ে পড়ে তোমার বোতাম খোলা পাঞ্জাবিটাকে ফোঁটা ফোঁটা করে ভিজিয়ে দিচ্ছিল তাতেও মুগ্ধ আমি ৷
বৃষ্টির দিন আমার বরাবরই খুব প্রিয়, তবে জানি না কোন এক অদ্ভুত টানে সে চটচটে রোদমাখা ভাদ্রের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম ৷ যদিও প্রথমে এটা কাকতালীয় মনে হয়েছিল , তাই তখন ক্ষণিকের জন্য নিজের আবেগকে সংযত করে নিয়েছিলাম ৷
তখন হয়তো আমার কল্পনাতেও আসেনি যে এই "তুমিই" আমার মনের গভীরে বিশাল জায়গার অধিকারী হবে ৷
একরাশ আবেগমাখা কল্পনার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে তুমি নামক শব্দটির সাথে নিজেকে পরিচিতি করেছিলাম ৷
আজকাল ভাবতেই বড় অবাক লাগে যে "তুমি"নামক মানুষটাকে তুমি বলে সম্বোধন করলেও পরিচিতি গড়ে তুলতে পারলাম না ৷
বৃথা কল্পনার ভিড়ে ক্ষণিকের জন্য তুমি বলে সম্বোধন করলেও ধুলোমাখা রাস্তার ভিড়ে ফেলে এসেছিলাম "তুমি"নামক মানুষটাকে ৷
হয়তো আজও উষ্ণ পিচের রাস্তার ওপর চলমান গাড়িগুলোর মতো ব্যস্ত আমার "তুমি" নামক মানুষটি৷
-------সমাপ্ত-----
🌌🌌🌌চিত্র অঙ্কন 🌌🌌🌌
হাতে আঁঁকা ছবি👇👇👇
|
ডাঃ সায়ন ভট্টাচার্য (অগ্নিমিত্র)
|
💥💥💥 দীপাবলির কবিতা 💥💥💥
শব্দহীন দীপাবলি
সুশান্ত মজুমদার
দীপাবলি হোক না কেবল
শব্দ দানব বিহীন,
আলোক মালায় মুছে ফেলুক
সকল আঁধার মলিন।
শব্দ বাজির শব্দ ত্রাসে
মাথায় পড়ে যে হাত,
শিশু বৃদ্ধ রোগী পশু
সকলে হয় যে কাত!
বারুদের ঐ ধোঁয়া মিশে
বায়ু দূষণ করে,
পাশাপাশি থাকে যারা
শ্বাস কষ্টে মরে।
কালীপূজায় শব্দ নাশে
হোক'না সবাই সরব,
পরিবেশ' টা দূষণ করে
নেই যে কোনো গরব।
দীপের শিখা জ্বালুক আলো
আঁধার মনের কোনে,
শব্দ দূষণ করব নিপাত
শপথ করো মনে।
মা জানকী ফিরলে ঘরে
দীপাবলী যে হয়,
দুষ্ট শক্তির বিনাশ শেষে
শুভ শক্তির সেই জয়।
নারী মানেই মা...
চিত্তরঞ্জন দেবভূতি
নারী মানেই মা,আর সেই
আদি শক্তির প্রতীক,
মায়ের আরাধনায় পূজার আয়োজন ,আলোকমালায় ভরে উঠেছে দশদিক৷
মা তুমি সবার,তোমার আধাধনা তাই আদিকাল থেকে অনেকে করে,
মিলেমিশে থাকতে বলো তুমি মা,
অনেকে কোথায় আর শোনে তোমার কথা?
তাই বুঝি অশান্তি লেগে থাকে অনেকের ঘরে৷
শক্তি সাহস প্রেম ভরা মন তোমার কাছে চাই,
যাঁরা আছে কাছে ও দূরে,
সবাইকে ভালো বাসতে যেন পাই।
দীপাবলি
বিপ্লব গোস্বামী
ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালো
পালন করো দীপাবলি,
মুছে যাক গহীন আঁধার
ভুলে যাও মনের কালি।
দ্বিধা-দ্বন্দ্ব,হিংসা ভুলে
মনের ঘরে জ্বালাও বাতি,
মিত্র বৈরী এক হয়ে যাক
মুছে যাক আঁধার রাতি।
শক্তিরূপেন
হামিদুল ইসলাম
দুর্গাপূজোর অন্তিমে প্রতিমা নিরঞ্জন
মা চলে গেলেন
আবার কৈলাশে
দীপাবলীতে মা আবার অন্যরূপে ফিরে এলেন ।
শ্যামা মা আসছেন আবার
বিপুল বৈভবে
প্রতি নিয়ত তার পদধ্বনি শুনি
মাটির স্বর্গে। মহা উৎসবে ।
তিনি শক্তি রূপিনী
শক্তির আধার
শুভ শক্তি দিয়েই
প্রতিটি জীবকে করেন উদ্ধার ।
কখনো তিনি রুদ্রমূর্তি
রণদেহে গর্বিতা রণজয়ী বীরাঙ্গনা
নগ্নদেহে ধ্বংস করেন অশুভ শক্তি
ভরে ওঠে তার বীরত্বের আঙিনা ।
এসো এই শক্তিকে চিনে নিই
সারাটা পৃথিবীতে এখন মৃত্যুমিছিল
শক্তি রূপিনী শক্তির আধারকে স্মরণ করি এই দীপাবলীতে
নাশ হোক আজকের অশুভ শক্তি রাস্তা হোক যতো পিচ্ছিল ।
কী কথা
কবিতা ভট্টাচার্য
শরতের উৎসব চলে গেল
তবুও শিউলির গন্ধ লেগে আছে,
মন অশান্ত
বিকেল ফেলে সন্ধ্যা এল
রাতে র চাঁদ আকাশে
হিমেল বাতাস বয়ে যাচ্ছে
একটা ভালো না লাগা ভাব
নিরন্তর হৃদয়ে ঝড় তোলে
জীবনানন্দ ঘরে পাশাপাশি বসে
শ্রুতি নাটক শোনা
শীতের দুপুরে চিড়িয়াখানা
তখন হাতের মুঠোয়
সমস্ত কিছু
প্রতিদিনের সুখ দুঃখ
টুকরো টুকরো ভালো লাগা---
সময়ের কথা
হেমন্তর শিরশিরে হাওয়া টা
আমার সঙ্গে কথা বলে
সেই সময় মনে হয়
কী কথা লিখে পাঠালো।
এই শারদে
বদরুদ্দোজা শেখু
দশদিকে আজ পূজোর হাওয়া, করোনা-খাওয়া জীবন
স্বজনহারা দিশাহারা কাঁদছে সারা ভুবন,
কেমন হবে এবার শারদ এই বিরোধের মাঝে ?
যা-হোক তবু প্রাণের মাঝে ঢাকের বাদ্যি বাজে,
সংক্রমণের তর্জা বাড়ে , বাড়ে মেনকার গ্লানি
কোথায় যেন হারিয়ে গেছে লাজলজ্জার বাণী
হারিয়ে গেছে রক্ষাকবচ, চোখ কান সব ভোঁতা
পুলিশ প্রশাসন বিচার বিবেক সমস্তই তোতা
পাখির মতো বুকনি ঝাড়ে, বাড়ে তর্জার রেস
মধ্যিখানে নির্যাতিতা মণিকারাই শেষ !
মা মেনকার পূজো করবে সাড়ম্বরে দেশ,
হাথরস উন্নাও কাঠুয়া কামদুনির ক্লেশ
ভুলে যাবে সবাই, ভক্ত রক্ত-লোলুপ মন
ঝাঁপিয়ে পড়বে পাড়ায় পাড়ায় অন্ধ অকারণ
ঢাকবাদ্যে মন্ত্রেতন্ত্রে, ষড়যন্ত্রী সব
ঘুরবে অবাধ বুক ফুলিয়ে, ধর্ষণোৎসব
করবে তারা যখন তখন যেমন ইচ্ছা -কাম
মেয়ে-প্রজাতির কান্নাগুলো তাদের উদ্দাম
লালসাসিক্ত। তিক্ত কথা ঘাঁটবে না আর কেউ---
মেনকা তুই নিবি না পূজা কস্মিনকালেও
ওদের থেকে, এই করোনা কেড়ে নিক ওই দস্যুগুলোর প্রাণ,
নারীরা তোমরা এই পূজোকে করো আপন শক্তির নিদান,
নিজের বলে বলীয়ান হও, নিজেকে নিজেই আজ
রক্ষা করার শক্তি ধরো, ধরো মেনকার রাজ - -
ধর্ষকাসুর নিধন করো , নিধন করো ভেদাভেদের ঘৃণা
ভূমন্ডলে রক্ষা করো নারীর ইজ্জত জীবন খুন পসীনা
দীপাবলির আলো
অনাদি মুখার্জি
কার্তিক মাসে হয় এই দীপাবলির আগমন,
এই সময় রবি হয় তাড়াতাড়ি গমন !
রাতের আকাশ যখন মুখ ঢাকে অমাবস্যার অন্ধকারে,
তখন আমি সাজায় প্রদীপের আলোয় আলোকিত করে !
আনন্দ ধারায় বিশ্ব জুড়ে ভীত হয় দেবাঞ্জলির ধূপ,
আতস বাজি কাঁপয়ে তুলেছে পৃথিবীর রূপ !
যে দিকে চোখ যায় দেখি দীপাবলির আলো ,
রাতের এই মনোরম দৃশ্য দেখে হয়ে যায় ভালো !
দীপাবলীর রাতে
তাপসী প্রামাণিক
অন্ধকারে জ্বালো কেবল
হাজার হাজার বাতি
সেই আলোতে কাটবে বড়
আঁধার কালো-রাতি।
সাঁঝ বেলার প্রদীপ যেমন
দেখায় আলোর পথ,
সেই আলোতে চালাও শুধু
বিশ্ব জয়ের রথ।
আতশ বাজির নেই প্রয়োজন
বাতাস করে দূষণ---
অন্ধকারের বুক চিরে আলোর
উৎস কর সৃজন।
তাইতো জ্বালাও আনন্দেতে
মনের ঘরের বাতি,
সেই আলোতেই ঘুচবে যতো
দুঃখ- কালো রাতি।
নারী শক্তি
নির্মল সরকার
নারী তোমার ভয় নেই জঙ্গলে
ভয় তোমার আজ ও মানুষের ভীড়ে-
নগর কিংবা শহরে ।
যে জঙ্গলে ছিলো পশুপাখি
আর জন্ত জানোয়ারের
সেই জঙ্গল আজ নির্ভয় মানুষের ।
নারী তুমি তো মা - ,
যাদের জন্ম তোমাতে
তারাই তো নরপিশাচ একদল পুরুষ
ছিঁড়ে খাচ্ছে ,ভোগ করছে তোমাকে ।
" মানুষ " যে নাম, আজ কলংকিত
কোথায় তাদের ধর্ম -
স্নেহ- মায়া- বোধগম্য ।
নারী যখন আত্যাচারীত হয়
বা ধর্ষিত, মানুষের স্বচোক্ষে-
কেউ তখন কিছুই বলেনা
দেখে অবাক চোঁখে ।
সবাই বলে নারী শক্তি,
নারী ভক্তি ,
নারী করতে পারে সকল শক্তির সংহার ।
মহাকালী
শুভশ্রী সরকার দে
এলো রে এলো রে ওই
মুক্তকশী
কে এলো রে ওই ,
এলো মহাকালের মহাকালী
চতুর্ভূজা খড়্গ ধারী
অনন্ত কাল রূপিনী
পরমা প্রকৃতির রূপ
সে তো মহাকালী ।
ভয়ংকর রূপ তোমার দেবী ভয়ংকরী
রুদ্র পত্নী যে তুমি দেবী রুদ্রাণী
তুমি যে ত্রিনয়নী ।
গলায় নৃমুণ্ডমালা রক্ত পিপাশিনী
সাথে থাকে দুই নারী
ডাকিনী-যোগিনী
সে তো রক্ত পিপাশিনী ।
তুমি মহা ভীমা
মুহুর্মুহু রক্তপানকারিনী,
রক্ত বীজের করেছো তুমি মস্তক ছেদন
সেই রক্ত বীজের রক্ত তুমি
পান করেছো তখন ।
ভয়ংকর রূপ এ কী ভয়ংকর রূপ
শুরু হয়েছে তোমার তান্ডব নৃত্য
দেবকুল এবার হয়েছে ভীত।
মহাদেব তুমি শান্ত করো মাকে
নেমে এসো এবার মর্ত্য লোকে।
এক হস্তে খড়্গ
এক হস্তে সদ্যছেদন অসুরের মস্তক
মহাদেবের বক্ষে দক্ষিন পদ রেখে
এবার গেল মায়ের জীহ্বা কর্তন।
শান্ত হও মা এবার
শান্ত হও তুমি
স্তব্ধ করো ছেদন তুমি নৃমুন্ডখানি
উগ্র রূপ ছেড়ে মা হও আনন্দময়ী ।
অমাবস্যা তিথি আজ হবে মায়ের পূজা
উগ্র রূপ ছেড়ে মাকে মাতৃরূপে সাজা ।
মনের কালো দূর
জগদীশ মন্ডল
কালীপূজা চলে আসে
দূর্গাপূজার পরে
আলোর মালায় ভরে ওঠে
প্রতি ঘরে ঘরে।
চোদ্দশাকে চোদ্দ প্রদীপ
যম প্রদীপের আলো,
দূর করে দেয় কষ্ট,জ্বালা
মনের যত কালো।
নিকষ আঁধার যায় কেটে যায়
রঙিন আলোর রাতে,
বাজি পোড়ায় পাড়ায় পাড়ায়
আনন্দেতে মাতে।
ধুম পড়ে যায় ঠাকুর দেখার
অভিনব প্যান্ডেলে
খুশির পরশ মাখতে ছোটে
বারাসাত টু ব্যান্ডেলে।
এবার পুজো অন্যরকম
বাজি রাখো দূরে,
মনের মাঝে মাকে রাখো
দেখবে না আর ঘুরে।
জ্বলুক আলো দীপাবলীর
গোবিন্দ মোদক
শরৎ ঋতু বিদায় নিলে হেমন্তেরই পালা,
রাতের পাল্লা ভারী হলো, ছোটো দিনের বেলা !
এসে গেল কালীপুজো, দীপাবলীর রাত,
মোমবাতি-প্রদীপ আর টুনির আলোয় মাত !
দেশটা জুড়ে হরেক আলো বাজির রোশনাই,
দীপাবলির আমেজটা তো দেশটা জুড়েই চাই !
রাতের কালো আকাশ জুড়ে ফানুস ওড়ে কতো,
জ্বালানি-টা ফুরিয়ে গেলেই নিভে যাওয়ার ব্রত !
খোকা-খুকু ফানুস ওড়ায়, জ্বালায় রংমশাল,
ফুলঝুরির আলোয় আলোয় রাতটা হলো লাল !
এসো এসো শপথ করি দীপাবলীর ক্ষণে,
সবার ঘরেই আলো জ্বলুক, জ্বলুক সবার মনে !!
মন্দের নিধন
আভা সরকার মন্ডল
কার্তিক মাসের অমাবস্যায়
কালী মায়ের হয় আগমন
ভক্তকুলকে শেখান তিনি
ত্যাগের দ্বারা ভোগকে দমন।।
ত্রি-নয়ন তাঁর আঁধার বিনাশ
ক'রে দেখায় ভূত-ভবিষ্যৎ
সৃষ্টি ,স্থিতি, বিনাশেরও
কারণ তিনি --- নেইকো দ্বিমত ।।
হলেন তিনি কৃষ্ণবর্ণা
নীলকণ্ঠের গরল ছুঁয়ে
দীপাবলি উৎসব দেয়
আলোতে তাঁর চরণ ধুয়ে ।।
পূজিত হন শক্তিরূপে
সুতোর বাঁধন তাঁকে মানায় ?
বিবসনা তাইতো তিনি
অমৃত-সুর কানায়-কানায় ।।
চতুর্ভূজা রূপটি ধরে
আপন জিবটি কাটেন দাঁতে
ব্রহ্মশক্তির ধারক তিনি
মন্দের নিধন তাঁরই হাতে ।।
শুভ দীপাবলি
রমলা মুখার্জি
মলিন মুখে শিউলি সুখে
গায় বিরহের সুর....
বিদায় বেলায় মেঘের ভেলায়
শরৎ যায় সুদূর ।
সোনা রোদের চাঁদোয়াতে
কুয়াশাদের কান্না......
হৈমন্তী ঐ হেসে আসে
ছড়িয়ে চূনি পান্না।
কুলায় কুলায় দীপমালায়
সাজে ভারতবর্ষ
বিজয়ার বিষাদ শেষে
আবার সবার হর্ষ।
অসুরনাশিনী দেবী এবার
কালি-করাল-রূপী....
কানায় কানায় ভরে আবার
উৎসবেরই ঝাঁপি।
যিনি দুর্গা জগদ্ধাত্রী
তিনিই শ্যামা কালি
আঁধার ভাগায় পুলক জাগায়
শুভ দীপাবলি...
অদ্ভুত এক অন্ধকারে
ডুবেছে মানুষ আজ
মনের কলুষ ঘুচিয়ে মাগো
পরাও আলোর সাজ।
💥💥💥অন্যান্য কবিতা-1 💥💥💥
ঐক্য
হরিপদ দুয়ারী
পাইনা ভেবে কবে থামবে এই দ্বন্দ্ব
একই অঙ্গে বাস অথচ দ্বন্দ্ব প্রতিদিন দান নিয়ে,
হৃদয় চলে আবেগে যে আবেগে ভেসে
দিতে চায় সবকিছু উজাড় করে
কিন্তু মন, সে যে বড় হিসেবী
হিসাবের খাতা খুলে কষে অঙ্ক
তারপর পিছিয়ে আসে যখন
তখনই বাঁধে দ্বন্দ্ব,
বাড়ে হৃদয়ের গতি, মনও হয় উচাটন
প্রভাব পড়ে অঙ্গে, বিড়ম্বনার মাঝে
অসহায় লাগে তার, বোঝায়
দুজনে এক নাহলে হয়না কোনো দান
হয় সেটা প্রতিদান কিম্বা অহংকারের বহিঃপ্রকাশ
তাই বলছি থামাও দ্বন্দ্ব
মেলাও গলে গলা ভুলে সকল বিবাদ
গাও ঐক্যের গান।
শিল্পের পথ
স্বরাজ পরামানিক
প্রহরীর ভয়ে রাজপথ ছেড়ে
শিল্পের পথে হাঁটি।
শিল্পের পথে শান্তি বিরাজ;
রাজপথে কাটাকাটি।
রাজপথে জ্বলে মশালের আলো-
দূষিত তব বাতাস।
শিল্পের পথে নিয়নের আলো-
মুক্ত তব আকাশ।
রাজপথে শুধু নেশা আর লোভ;
নেই ভালোবাসাবাসি।
শিল্পের পথে মোক্ষের খোঁজ;
অবাধ জ্ঞানের সাজি।
রাজপথে ঘোরে হিংস্র লোলুপ
নিশাচরদের দল।
শিল্পের পথে অমায়িক সব
কি জল কি স্থল।
ফানুসের মত উড়তে চাই
গৌতম ভৌমিক
ফানুসের মত উড়তে চাই
উড়তে চাই আমি আকাশের পানে
জ্বলতে চাই বাতাসের সাথে সাথে;
দাউ দাউ করে জ্বলতে চাই
খুব জ্বলতে চাই
যেখানে হবে না কোন শেষ
ছুঁতে চাই, অদূর দিগম্বরকে ছুঁতে চাই
আমার সমান কেহ নয়
আমার পাশে যেন কেহ না রয়
আমি আগুনকে সঙ্গ করে নিয়ে চলতে চাই
পুড়তে চাই, খুব পুড়তে চাই
পুড়ে পুড়ে ছাই হতে চাই;
চাই কোন এক সমুদ্রে ডুব দিতে
যেখানে থাকবে নীরবতা
থাকবে আত্মার শান্তি।
কোরাস :
হও আগুয়ান
মোঃআলিউল হক
জোরসে আওয়াজ তোলো
সমস্বরে বলো --- সাবধান সাবধান।
চলো কদম তোলো
এবার সময় হলো আগুয়ান আগুয়ান।
চলোরে দেশের লাগি
দেশ ভক্ত অনুরাগী
ওঠো জাগি স্বার্থ ত্যাগী আর নয় পিছুটান।
ওই রে জাতের নামে
বজ্জাতি ডানে বামে
মরছে মানুষ মারছে মানুষ
নেই কি হুঁস;ঘুমিয়ে বেহুঁশ চলরে আম্পান।
রুদ্র মূর্তি ধরি
প্রহার করবো অরি
নীতি বোধ সঙ্গে করি
দিই উপাড়ি সকল অহং ভ্রান্ত তেজ ধীমান।
শান্তি বাতাবরণ
গড়তে আয় যৌবন
হিংসা দ্বেষ করবো নিধন
আয়রে ভাই চল সবাই দেশ মাতার সুসন্তান।
নগ্ন
সুনন্দ মন্ডল
পৃথিবীর চাকা ক্রমশ ঘূর্ণায়মান
দু'পক্ষের ওঠানামা প্রতি মাসে।
আনত বলয় ঘিরে শক্তির প্রয়োগ!
সমাজ বয়ে চলেছে পালক বিহীন পাখি
নিয়মের অনুশাসনে আবদ্ধ দু'চারটে উৎসব।
আনন্দের ঝুপড়ি ভরে পণ্য জমা মেলা!
হাট বসে, জিনিসপত্রের দাম চড়া
চরা সব সম্পর্কের ভিতেও!
তবুও উৎসব আসবে, মিলবে মানুষ।
মানুষ শুধু নিজেরই বোঝে, কোরিওলিস বল
আবর্তন পরিক্রমন ছেড়ে গন্ডিবদ্ধ চারদিক!
জগৎ সংসারে পরিবারও আজ কেমন নগ্ন।
------------$------------
উৎসব
রঞ্জনা রায়
দেখা হয়েছিল মেঘের সঙ্গে সন্ধ্যাতারার
দেখা হয়েছিল সাগরের সঙ্গে নদীর
এক নিবিড়ক্ষণে
শুকনো পাতাঝরা আমলকি বনে
উঠেছিল স্পর্শাতীত ঝড় চকিত চুম্বনে।
দোপাটির শিশির ভেজা চোখে স্বপ্নের ভোর
জ্যোৎস্নার স্পর্শে চাঁদের শরীরে পূর্ণতার উৎসব।
জীবন খোঁজে জীবনের বাঁকে অরূপ এক জীবন
নির্জন রাত,নদী হাসে,জোয়ারে উচ্ছ্বাস ঝাউবনে ঝংকার।
শিশু বিলাস
সত্যব্রত চৌধুরী
আমরা শিশু আমরা অবুঝ ,
আমরা কাঁচা আমরা সবুজ ।
আমরা প্রভাত আমরা অরুণ ,
আমরা মলয় আমরা বরুণ ।
আমরা অনল আমরা সলিল ,
আমরা সুধীর আমরা সুশীল ।
আমরা আকাশ আমরা মাটি,
আমরা নির্মল আমরা খাঁটি ।।
আমরা সহজ আমরা সরল ,
আমরা অমল আমরা বিমল ।
আমরা প্রেম আমরা প্রকৃতি ,
আমরা ভব্য আমরা ভবতি ।।
আমরা নব্য আমরা আশা ,
আমরা বাক্য আমরা ভাষা ।
আমরা সুপ্ত আমরা জাগ্রত ,
আমরা পুত আমরা পবিত্র ।।
আমরা অশনি আমরা দূর্বার ,
আমরা সৃষ্টি আমরা ছারখার ।
আমরা দূর্জয় আমরা লড়ব ,
আমরা যুঝব আমরা জিতব ।
আমরা দেখব আমরা শিখব ,
আমরা ভাঙব আমরা গড়ব ।
আমরা কুসুম আমরা দল ,
আমরা কর্ম আমরা ফল ।।
আমরা জ্ঞান আমরা গরিমা ,
আমরা ধ্যান আমরা ধন্যি মা।।
লাঠি
পিনাকী মুখার্জী
আকাশ- কুসুম বীজের ফসল
সোনার পাথর বাটি !!
হোঁচট সে তো মায়ের
হাতে , কষ্টিপাথর খাঁটি !!
পাথর বুকে ছেনি -হাতুড়ি
পাহাড় কেটে পথ !!
আগুনে পোড়া সোনার ঝলক ,
আগুন ছোঁয়া শপথ !!
পাথরের বুকে মূর্তি লুকিয়ে
বাঁশের বুকে সুর !!
ঐ আগুনে পুড়েই আলোর
প্রকাশ , ছড়ায় বহুদূর !!
ঢাকের ঐ ভুঁড়ো পেটে
এমন শাসন কাঠির !!
অসুর গুলোও সুরের দোলায়
দেখেই মহিমা লাঠির !!
.....কুহকী
আব্দুল হান্নান
নির্ভুল এই নাম খুব ছিলো মনে
কপালে দিয়ে ছিলো প্রেমের স্বাক্ষর
ভাবিনি কখনো হঠাৎ পরবে মনে
শিউরে জাগবে সেই চেনা অক্ষর।
সেদিন সন্ধ্যে আনাচে কানাচে ছাদে
আনমনা হয়ে একলা আছি বসে
কবেকার ফেলে আসা দুরাশা দুপুর
মনের মধ্যে বারাংবার ওঠে ভেসে।
বহু দিন মুখোমুখি গল্পের ছলে
দুটি মন ভেসে যেত এক মোহনার স্রোতে
আজ চেনা জানা সেই মুখখানি
আবছা হয়েছে আঘাত পেতে পেতে।
সেদিনের ষে কথা মরচা পড়েছে কবে
ভিজে হাওয়ার মত অলস ভাবনার ঘোরে
গোপনে কখন সুড়ঙ্গ করেছে আবার
আস্তা হারা সস্তার মায়া ক্ষত জুড়ে।।
নগ্ন কে ?
অভিষিক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়
যজ্ঞের বলি হয়ে কর স্বর্গলাভ ।"
স্বর্গের লোভে পত্ঙ্গরা উঠল নেচে ধেই ধেই
ঝাঁকে ঝাঁকে এসে ঘিরে বসল দেহটাকে
প্রভুরক্ষায় পতঙ্গরা দিল প্রাণ ।
কিন্তু,হায়! না বাঁচল প্রভু, না পেল স্বর্গ ,
শুধু খিদে মিটিয়ে তৃপ্ত হল নগ্ন দেহ ।
মুচকি হেসে নগ্ন দেহটা ছুটল আবার
কিন্তু, নগ্ন দেহটা কার ? — রাজনীতির ।
💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥💥
🎆🎆🎆অন্যান্য কবিতা-2🎆🎆🎆
ইচ্ছে
প্রতিমা বিশ্বাস (সাহা)
ইচ্ছে করে হারিয়ে যেতে
ঐ দুর আকাশের গায়
মেঘ হয়ে ভাসবো আমি
আনন্দে হেথায় সেথায়।
ইচ্ছে করে ঝর্না হয়ে
ঝড়বো পাহাড় থেকে
নদীর বুকে মিশবো আমি
চলবো এঁকে বেঁকে।
ইচ্ছে করে পাখি হয়ে
উড়ব অসীম আকাশেতে
মুক্ত হাওয়া সঙ্গী করে
ঘুরবো দুর দিগন্তে।
ইচ্ছে করে ছেলেবেলার দিনগুলিতে
আবার ফিরে যেতে
বন্ধুদের নিয়ে খেলবো আমি
পড়ার সাথে সাথে।
ইচ্ছে করে নতুন করে আবার
জন্মিব এই সুন্দর পৃথিবীতে
এ জীবনের ভুলগুলি সব
হবে যে শুধরাতে।
বড় মন
নরেন্দ্র নাথ নস্কর
বড় লোক ভাই প্রচুর দেখেছি,
খুব কম বড় মন;
বিশাল হৃদয়ে , মানুষের তরে,
কাজ করে সারা ক্ষণ।
সমালোচনা কদাচিৎ করে,
ভালোটাই শুধু দেখে;
মানুষের যাতে ভালো হয়,
সেই চেষ্টাতে মন ঢাকে।
সাধ্যমতো সাহায্য করে,
মানুষের প্রয়োজনে;
প্রশংসা ও নিন্দা তারা
কদাচিৎ তোলে কানে।
নর নারী আর জীবের সেবায়,
প্রস্তুত সদা থাকে;
সময়, অসময় নেইকো তাদের,
কাজ করে হাসি মুখে।
দলাদলি নেইকো তাদের,
সবাই ভালবাসে;
সত্যিকারের প্রয়োজন হলে,
পাবে তাকে সদা পাশে।
আর্তের সেবা, দু:স্থের দেখা,
গরিবের তরে দান;
সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে,
নেই লজ্জা বা মান।
জাতের বিচার নেইকো এদের,
মানুষই প্রথম;
বিপদে, আপদে, দু:খে, সুখে,
নি:স্বার্থে দেয় শ্রম।
স্বীকৃতি পেল না পেল,
কোন পরোয়া নেই;
সাধারণের প্রেম, ভালবাসা ,
পাবেই পাবে এরাই।
পিছনে থেকে নি:শব্দে
কাজ করে তারা চলে;
অদম্য শক্তি এদের
ঈশ্বর কৃপা বলে।
কেহ বা পেয়েছে দেশ স্বীকৃতি,
কেহবা অবজ্ঞাত;
হৃদয়ানন্দে আপ্লুত এরা,
ভগবত কৃপা স্নাত।
অনেকে জানে না এদের কথা,
কত বড় অবদান;
মানুষই এদের কাছে আল্লা ও ভগবান।
সিগন্যাল
পিঙ্কু হাজরা
সিগন্যাল ভেঙে হাইওয়েতে
মুখ থুবরে পরল দুরন্ত স্করপিয়টা।
রক্তাক্ত দেহে ছটফট করতে লাগল আকাঙ্ক্ষা,ব্যর্থতা,গ্লানি...রোজকার দিনলিপি,অপেক্ষার দিনরাত।
ঘুম ভাঙ্গা ভোরের আলোয় স্বপ্নভ্রম দুর হলে
বুঝলাম ...
একরাশ শূন্যতা নতুন স্টেশনে।
তুমি নেই।
দগদগে চিহ্ন ফেলে গেছো সবখানে।
হৃদয়টা স্থবির;
কাঁদবে, হাসবে না বিপ্লবে সামিল হবে।
সব শেষ....
তবু বেঁচে আছি।
সূর্য ওঠে, পাখিরা গায় গান,
ঝরা বসন্তে কচি আশা, চিহ্ন কুড়াই, গাঁথি মালা।
দিগন্ত সুদূর।
স্বপ্ন
তাপস দাস
ধরা যাকনা তোমার সাথে আবার হলো দেখা,
ধরা যাকনা সকল অসুখ গেছেই যখন সেরে,
সবাই আবার আসুক অনেক কাছে
বলবো সবাই যায়নি মানুষ হেরে।
ধরা যাকনা তোমার হাতে আবার আমার হাত,
ধরা যাকনা মুষলধারে মাঠের মাঝে দুজন,
বৃষ্টি ধরা চুইয়ে নামা ওষ্ঠে,
এগিয়ে এসো ভালোবাসবে যে জন।
ধরা যাকনা নির্জনতা আবার গেছে ঘুচে
ধরা যাকনা কোলাহলে পূর্ণ এ কলকাতা,
সবার মুখের বাঁধন গেছে খুলে,
সবার মুখেই নতুন কথকতা।
ধরা যাকনা সকাল বেলায় সবাই গেছে ভুলে,
ধরা যাকনা একাকিত্ত্ব গেছে সবার কেটে,
দুঃস্বপ্ন গেছে সবাই ভুলে,
হাজার মাইল চলতে হবে হেঁটে।
ধরা যাকনা নতুন করে এলো খুশির ঈদ,
ধরা যাকনা ঢাকের তালে দুর্গাপূজার বোল,
আবার সবাই আসবে সবার কাছে,
সবাই খোঁজে ভালোবাসার ওম্ ।
ধরা যাকনা সবাই আবার জোড়াসাঁকোর ভীড়ে,
ধরা যাকনা সবাই আবার খোঁপায় পলাশ ফুল,
সবাই আবার পৌষ মেলার মাঠে,
ফিরে পাওয়া নতুন হুলুস্থুল।
ধরবো কেন ? এমন ই তো হবে আমি জানি,
ধরবো কেন ? পূবদিকেতে নতুন সূর্য লাল,
সব সমস্যা সত্যি যাবে কেটে,
এগিয়ে আসছে নতুন একটি সাল।।
প্রেম ছায়া
প্রশান্ত মাইতি
বিকেল সরিয়ে অন্ধকারের ভেতর খুঁজি
জোনাক রাঙা পূর্ণিমার আলো
তোমার সাথে দেখা হলে মাস্ক
পরিয়ে সরিয়ে নিতাম ছোঁয়া থেকে
নানান জনের স্পর্শ ধুলো, ড্রপলেট
লুকিয়ে রাখতাম সব থেকে দূরে
ভালোবাসার ছায়াতলে তোমায় রাখবো বলে।
আঁচল
অনিমেষ মন্ডল
ক্ষীণাঙ্গী শরীরে, আঁচলে এত যন্ত্রণা ঢেকে
কীভাবে হেঁটে চলেছ পথ?
অবিন্যস্ত চুল বেয়ে গোপন ব্যথার স্রোত
মাটি খুঁজছে।
এতো অভিমান রাখার জায়গা কোথায় বলো?
অতন্দ্রিলা, তোমার হৃদয়ে সহজিয়া বাস
গোপন মুদ্রার ন্যায় অনুচ্চার প্রেম
অমল সকালে মেলে দিও
মাটির নির্যাস।
পোস্টকার্ড আসেনিকো আর; তিক্ত সময়।
নিঃসঙ্গ মাতৃত্বে দোল খায় আদর
ভীরু লজ্জায় হেঁটেছ নতুন ভোরের সন্ধানে।
অতন্দ্রিলা, তুমি রৌদ্রস্নাত হবে নিদারুণ স্নেহে
তোমার পায়ে পায়ে লক্ষ্মীর পদচিহ্ন ফোটে
নরম আঁচলে মুছে যায় শোক। অনির্বাণ দ্যুতি
মাটিতে ছড়ায়।
কবির জগৎ
চিত্তরঞ্জন গিরি
সেই যে এক ছোট্ট ঘূর্ণি হাওয়া
অভিব্যক্তির বিবর্ণ রঙ মাখা
নিঃস্ব করেও নিঃস্ব হয়নি সে
সকাল- বিকেল মেঘ সাঁতরে বেড়া
কেউ ভেবেছে সবজিওয়ালা সে
চেতন মনে কবির তীর কাঠি
আগুন ভরে চোখের পাতায় গাছ
ফিকে রঙের পসরা নিয়ে বসে
লালন কবে গান শুনিয়েছিল
মাটিতে এখন শুকোয়নি সে দাগ
মাহুত বন্ধু আমতা আমতা করে
জাতিস্মর আজ উজানে ভাষায় গা
গোলাপ জল চুঁইয়ে পড়ে কোথাও
নীল শালুকে ঘোমটা-পরা রাত্রি
ঈশান কোণে মেঘের গুরুগুরু
কালের রেখায় নিয়ম ভাঙা যাত্রী
ঢেউ কখনো গর্তে এসে পড়
নাচন শুধু জলের তরবারি
ভোরের সূর্য কখন উঁকি দেয়
ছোঁ মারে মাছরাঙ্গা এক পাখি
মন্দিরে ঘন্টা বেজে যায়
শপিং মলে নগ্ন মোমবাতি
মাঝ রাতে কত শব্দের খেল
এক পৃথিবী সহস্র প্রজাপতি ।
সার্কাস জীবন
ইউসুফ মোল্লা
খাঁচার ভিতর বাইকের মারণ খেলা দেখেছো,
সার্কাসের জীবনে এর চেয়ে বেশি কী চাও?
দড়ির উপরে ছাতা হাতে অনায়াসে হাঁটতে শিখেছো,
যেভাবে তোমার সংসার জীবন অতিবাহিত হয়।
বাঁশের মাথায় নিজের দুধের সন্তানকে...
বাজি রাখতে দেখেছো!
এ বাজি দু'মুঠো অন্ন-বস্ত্রের।
সার্কাসের মতো তোমার জীবনে দুঃখ-সুখ আসবেই,
তুমি কি বাজি ধরতে ভুলে যাবে?
তাহলে তোমার দুধের সন্তান না খেয়ে মরবে!
তাই জীবনকে খাঁচার ভেতর মারণ খেলা শেখাও,
একদিন দড়ির উপর থেকে অনায়াসে হাঁটতে পারবে।
বামন হয়ে
বদ্রীনাথ পাল
মুর্তি ভেঙে ভাবছো বুঝি 'আপদ গেল ঘুচে--
যা কিছু তার আলোকদ্যুতি সব-ই যাবে মুছে।
সে হয়েছে অপাংক্তেয় দু'শো বছর পরে'--
তাই বুঝি তার এই অপমান করলে এমন করে ?
সেই যে মানুষ আজো সবার হৃদয়ে দেয় দোলা--
খুব সহজেই যায় কি তাকে এমন করে ভোলা !
যাঁর সে মহান কর্মফলে বিশ্ব তাঁকে চেনে--
তাঁর অপমান কেমন করে নেব সবাই মেনে ?
কিসের লোভে মজলে তুমি আজকে এমন কাজে,
'বাংলা আমার'-আর বলা কি তোমার মুখে সাজে ?
বামন হয়ে চাঁদ ধরতে করছো কেন আশা--
এমনি করে পারবে কি আর কাড়তে ভালোবাসা ?
যন্ত্রণার জলরং
অভিজিৎ মান্না
এ শব্দ রীতিতে কুহক লাগে না
যেনো শাখাহীন দামাল পনা
যত পৃথিবীর ধাপ ভাঙি
আমি যেনো শূন্যতায় গড়া অচীন পাখি
ঐ প্রান্তরে যে হুঙ্কার ধ্বনি
ততটাই বর্জনীয় কজন বোঝে
কঠিন ঘুমে যে তত্ব উঠে আসে
আমি শতবার জলরঙ দিয়ে ধুই
সে যে দীর্ঘ নিশুতিবাস ।