বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০

গলপ ভালোবাসার মান অভিমান অনাদি মুখার্জি

 গলপ

ভালোবাসার মান অভিমান    

               অনাদি মুখার্জি 



আকাশটা আজ বড্ড অভিমানী, সে তার অভিমানে জানান দিচ্ছে , দমকা হাওয়া আর অঝোর ধারা বৃষ্টি তে ! 

৭০ বছরের অমল বাবু মোটা  ফ্রেমের চশমার কাঁচে বারবার  সিক্ত হচছে সেই বৃষ্টি ফোঁটায় !

কিন্তু সেই দিকে তার কোনো  ভ্রুক্ষেপ নেই ,ঝাপসা  কাঁচের 

আভাতে তার মনে কোনে জমে থাকা পুরানো স্মৃতি গুলো মনে পড়ে !

চল্লিশ বছর আগে কথা ,সেই তখন তরুণ যুবক ছিলো কলেজের পড়তো তখন পরমা সাথে পরিচয় হয় ! মনে পড়ে সেই দিন ও এইরকম বৃষ্টি পড়ছিলো সেই বৃষ্টি তে ভিজে যাচ্ছিলো। কলেজ ,রাস্তায় মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে শিমুল গাছের তলায় পরমা ! পরমা কে দেখে অমল ও সেই খানে দাঁড়ালো ,  পরমা তখন বললো কি হল খুব বৃষ্টি তে ভিজে ভিজে কলেজ যাচ্ছো! অমল মুচকি হেসে বললো অনেক দিন এই বৃষ্টিতে ভিজিনি তাই বলে পরমা কেও এই বৃষ্টি মধ্যেই টেনে আনলো ,পরমা বললো কি যে করো খুব জ্বালাতন করো বলে সেই দিন ও আর পরমা খুব ভিজেছে ! তাই আজো ও মনে হয় এই বৃষ্টিতে ভিজে নিজের মান অভিমান গুলো মুঝে ফেলতে !

কি গো শুনছো ? সেই কখোন থেকে বৃষ্টির মধ্যেই আছো ,পরে যখন  জ্বর আসবে তখন কার ধকল যাবে শুনি ! খুব জ্বালাও তুমি ! অমলবাবু বৌয়ের পরমা কথা শুনে মুচকি হাসে আর বলে তোমাকে জালাতে খুব ভালো লাগে তাতে করে তোমার মুখ খানি আরো ভালো লাগে ! পরমা বলে আর পারি না বাপু !

পরমা নামে মানুষটি সাথে ৫০ বছরের পরিচয় ও সংসার করছে ,পরমা কে  সংসারে সব দায়িত্ব দিয়েছে কিন্তু তার মনের কথা বোঝার চেষ্টা করেনি আজো তাই আজ সেই অভিমান নিয়ে অমলবাবু ব'য়ে বেড়াছে !

আবার পরমা বললো কি গো বাবু তোমার পাঞ্জাবি টা ভিজে গেছে ঘরে এসে ছেড়ে নাও ,তোমার টেবিলে চা ও জল খাবার দেওয়া হলো খেয়ে নাও ! সত্যিই এই পরমা তার কত খেয়াল রাখে ,বলে অমলবাবু ঘরে এসে  পাঞ্জাবি ছেড়ে জলখাবার খেতে বসে !

অমলবাবু পেশায় ছিলেন শিক্ষক ,সময়ের নিয়মে রিটায়ার করেছে ,কিন্তু তার গল্পের বই পড়া নেশা কমেনি ,চাকরির অবস্থায় যেমন বই পড়তে ভালো বাসতেন আজো ও তার বই পড়ার নেশা কমেনি ! জীবনের এই দুটি ছাড়া আর কিছুই করেননি ,সব দুই হাতে সামলেছে পরমা ! ছেলে মানুষ করা ,তাকে খাবার খাইয়ে সঠিক সময়ে  স্কুলে পাঠানো ,বাজার করা ,ছেলেকে  স্কুলে দিয়ে আসা,আবার নিজের মতোন করে ছেলের জন্য একটা বৌ পছন্দ করে বাড়িতে আনা ! 

কাল অমলবাবু তার পুরোনো বই গুলো বের করতে গিয়ে দেখে তার মধ্যেই একটি নীল রঙের ডায়েরি পান ,সেই ডায়েরি পাতা খুলে দেখে লেখা আছে পরমা মনের কথা ! আগে জানতো না অমলবাবু যে পরমাও ডায়েরি লেখে ,সেই ডায়েরি টা পড়ে অমলবাবু চোখের জল আসে আর তাতে তার অভিমানী মন হয়ে উঠে ! আজ আবার ঐ ডায়েরি টা পড়বে তাই জলখাবার খেয়ে ঐ ডায়েরি টা নিয়ে শুয়ে পড়তে থাকে !

অমলবাবু এই ডায়েরি টা মধ্যেই গল্প টা পড়তে ভালোই লাগছিল পুরোনো দিনের কথা সব কিছু লেখা আছে কিন্তু ডায়েরি পাতা যত শেষ হতে থাকে তত অমলবাবু মন খারাপ হতে থাকে ,এক জায়গাতে পরমা লিখেছে যে মানুষ টা সাথে এতদিন ঘর করলাম সেই মানুষ টা আমার মনের কথা বুঝতে পারেনি ! পরমা লিখেছে একদিন বাজার থেকে ভালো নীল রঙের শাড়ি এনে আমাকে দেখালো তখন আমি বললাম এইটা বুঝি আমার জন্য তখন ঐ মানুষ টা বলে না আমার বন্ধুর স্ত্রীর জন্ম দিন তাই তাকে দেব বলে আনলাম ! ঐ মানুষ টা আমাকে সব দায়িত্ব দিয়ে ছে বলে কি আমার সব সুখ মেটে ! আমার তো ইচ্ছে হয় ঐ মানুষ টা আমাকে কোনোদিন বললো না পরমা চলো আজ পুজোর তোমার শাড়ি বাজার  করি ,বা কোনোদিন হাতে করে এনে বললো না পরমা এই টা তোমার জন‍্যই আনলাম ! প্রতিটা বউ চাই তার স্বামী সাথে একটু ঘুরতে যাওয়া বাজার করা আনন্দ আলাদা ,কিন্তু ঐ মানুষ টা কোনো দিন তাকে একটু ও ঘুরতে নিয়ে কোথাও যাই নি ! এই দুঃখ টা আমার রয়ে গেলো মনে আজো এই ইচ্ছে পূরণ হলো না ! এই লাইন গুলো পড়ে অমলবাবু মন সত্যিই অভিমানে ভ'রে গেলো ! 

অমলবাবু আজ বুঝলেন পাশাপাশি একসাথে থাকলেও মানুষের মন কতটা দুরে থাকতে পারে !

তাই অমলবাবু তাদের বাড়ির কাজের লোক রঘু কে ডেকে টাকা দিয়ে সব বুঝিয়ে দিলেন ,রঘু চলে যেতে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন !

কি গো কি হল চলো খেয়ে নেবে এইবার দরজটা খোলো বললেন পরমা , অমলবাবু দরজা খুলে পরমাদেবীকে সামনে পেয়ে তার হাতে নতুন প্যাকেট মোড়া দুটি জামদানি নীল রঙের শাড়ি দিয়ে বললেন এই টা তোমার জন্য ,আজ বিকেলে এই শাড়ি টা পরবে আর আমার সাথে বাজারে যাবে ! এই কথা শুনে পরমা খানিকটা লজ্জা পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে তার বৌমা দাঁড়িয়ে আছে ! ছেলের বৌমা দেখে অমলবাবু বললেন বৌমা আজ আমি আর তোমার শাশুড়ি মা বাইরে রেষ্টুরেন্টে খাবো আর বিকেলেপার্কে গিয়ে একটু গল্প করবো ! এই কথা শোনার পর পরমা তার মনের মানুষ টা দেখে আর ভাবে সত্যিই মানুষ টা খুব ভালো আমি চাই না কিছু শুধু একটু ভালো বাসার পরশ চাই তাতে আমার অভিমান দুর হয় ! বলে পরমা অমলবাবু কে টেনে নিয়ে গেলো খাবার খাওয়াতে ! অমলবাবু ও বুঝলেন ভালো বাসা দিলে হয় না তার মনের ইচ্ছে গুলো চেনা দরকার !



বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 09/12/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 09/12/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 09/12/2020

**********************************

"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
                 (ওয়েব ম্যাগাজিন)     

প্রকাশ কাল:- 09/12/2020, বুধবার
               সময় :- রাত 9 টা. 30 মি:


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম


সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒



দাগ
আব্দুল হান্নান

যখন শরীরের কোনো জায়গায়
আঘাত বা ক্ষত হয় -- তা
চিকিৎসার পরিচর্চায় সেরে যায়
অল্প বা বেশ কিছু দাগ থাকে
সে দাগে ব্যথা বা যন্ত্রণা
অনুভব হয় না..অনুভব হয়।

মনে যখন আঘাত লাগে
সে আঘাত চিকিৎসার কোনো
পরিচর্চার মধ্যে সারে না..
সাময়িক কিছু সমস্যা হলেও
বাস্তবে চির দিন থাকে না...থাকে
মনের মনিকোঠায় সে দাগ চির দিন...যা
সময়ে সময়ে গলে

বরফের মত কোনো জনসমুদ্রে
অথবা নিভৃতে নির্জনে শুধুই
নিমর্ম উপহাস নিয়ে....।।





জীবন অভিব্যক্তি-৩
ডাঃ তারক মজুমদার

স্বার্থসিদ্ধি হলে তোমার
নাও ফিরিয়ে মুখ
নানা অছিলায়---।

আবেগ এখন মূল্যহীন  জানি
বেঁচে থাকাটাই আশ্চর্য
কৃত্রিম  মুখোশ দৌরাত্মে---।

শুধু স্বার্থ ,শুধু স্বার্থ
মুঠোভরা জীবন আর প্রতারক মন
পারেনা করতে স্পর্শ
সাগরের গভীরতা----।




   অবহেলা
মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ

চক্ষুর সম্মুখে দেখেছি ট্রেনে
প্রতিবন্ধী ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে।
গায়ছে গান মধুমাখা সুরে
কতক মানুষ দিচ্ছে দু-এক টাকা করে।
খোদা এ তোমার কেমন লীলাখেলা
মানুষ হয়েও অন‍্যের থেকে কেন আলাদা।
বুট শুট পরা বাবুর কাছে হাত পাতিলো
টাকা দিলই না তাকে ঠেলে ফেলে দিল।
ভিক্ষুকটি মাটিতে পড়ে কাঁদদে লাগলো
একজন ফেরিওয়ালা ট্রেনে তুললো।
আহারে বেচারা কতইনা দুঃখ কষ্ট পেল।
এই গোটা দৃশ্য দেখতে দেখতে
ট্রেন এসে থামলো ক‍্যানিং স্ট্রেশনে।
যাইবার সময় ভিক্ষুক উচ্চসরে বললেন
বুঝলেন বাবু,বুঝবে সেদিন,আসিবে যেদিন
আমারই জায়গাই যে।
খোদার খেলা খোদায় জানে
কখন কি করিবেন তিনি।
এই বলে অদৃশ্য হলো ট্রেন থেকে
আর সজাগ করলেন মানবজাতির মনকে।






রজনী অতীত হলে..
    শান্তি দাস

সকালের সূর্য উদিত হয় রজনী অতীত হলে,
পাখির ডাকে জাগে সবাই ভোর হয়েছে বলে।
ভোরের সূর্যোদয় জানান দেয় নতুন প্রভাতের আলো,
রজনী অতীত হলো দুর হলো আঁধার রাতের কালো।

কুয়াশার আবরন ভেদ করে উঁকি দেয় প্রভাত রবি হাসে,
রোদের মাঝে মুক্তা শিশির বিন্দু গেলো এবা মিশে।
জনমানবহীন জনপথে শুরু হয় মানুষের পদচারণা,
নতুন দিনের নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে্য নামে জনতা।

নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়নে পথচলা শুরু করে স্বপ্নচারী,
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করে অভিযাত্রী।
এইভাবেই তো শুরু রজনী অতীত হয়ে সুন্দর সকালের,
দিনের পর দিন চলছে এমনভাবে একটি নতুন সকালে।

রাতের নিরবতা ভেদ করে কুয়াশার চাদরে ঢাকা কৃষকদের আঙ্গিনায়,
পুর্ব দিগন্তে এখনো আসেনি প্রভাতের আলো কৃষক চলছে নিজ ভঙ্গিমায়।
কৃষকেরা ছুটছে মাঠে নতুন ফসল বুনবে আশায়,
রজনী অতীত হলো যে যার কাজে লাগে নিজ ভালোবাসায়।





          মিছিলে হাঁটুন
      হামিদুল ইসলাম
                   

মিছিলে হাঁটুন
দাবী সনদটা হাতে নিন
আসুন প্রতিবাদ করি  ।।

মিছিলে হাঁটুন
কৃষি বিল বাতিল করুন
আসুন এই স্লোগান তুলি  ।।

মিছিলে হাঁটুন
আজ অবরুদ্ধ নগরী
এগিয়ে চলুন  ।।

মিছিলে হাঁটুন
পুলিশের বুটে ভয় কি সে
পুলিশের বুট ভাঙছি, ভাঙবোই  ।।

মিছিলে হাঁটুন
ওদের টিয়ার গ‍্যাস আর জল কামান
আজ গুড়িয়ে দেবো, দেবোই  ।।

মিছিলে হাঁটুন
আসুন দাবীগুলো উসুল করে নিই
কৃষিবিল আগুন জ্বালিয়ে পুড়ুন  ।।

মিছিলে হাঁটুন
রাষ্ট্রশক্তিকে হুঁশিয়ারি দিন
কৃষিবিল প্রত‍্যাহার করুন  ।।





গ্রহণ করুন
সুস্মিতা দে

আজ নব আনন্দে হবে
যাত্রাপালা ? মায়েরা শিশু
কোল বসে আছে কবিদের
পানে চেয়ে ।শুরু হলো কবির
লড়াই হাসছে সবাই জীবন
সুন্দর আঁকেন গ্রামের মানুষ ।

কবির লড়াই তুঙ্গে যখন সরল
গ্রামবাসী ভয়ে ঈশ্বর কে প্রার্থনা
করে তর্ক নহে পেয়েছি তোমার
কৃপা হে জগন্নাথ । যেমন রাখো
থাকি খুশি শুধু বড় ভয় রোগে
কে কেন এতো করে কৃপা
করো নাথ।

জ্বালা যন্ত্রণা তোমার কৃপাতে
হোক নীরোগ। সকলের জীবন
বড় দুসঃহ আজ মানব জন্মে
কেন এতো রোগের শিকার?
কাঁদে অহরহ রাতদিন ।
আনন্দ মনে যা দিয়েছো প্রভু
নিয়েছি ভালোবাসে সব ।
রোগ ছাড়া নেই কোন তর্কের
অবকাশ ?

    




প্রবন্ধ
ভক্তি আন্দোলন ও সুরদাস
  - অগ্নিমিত্র

  ভক্তি আন্দোলন পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সমাজ ব্যবস্থা , জীবনযাত্রা ও সাহিত্যে আমূল রদবদল ঘটল এই আন্দোলনের মাধ্যমে। এলেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য, নিত্যানন্দ, গুরু নানক, কবীর প্রমুখ। বাংলায় এলেন অনেক মহাকবি । অন্ধ কুসংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে মানুষ মানুষ হতে শিখলো। সহজিয়া ধর্ম জনপ্রিয় হলো। ভেদাভেদ , ছুঁতমার্গ ভুলে, ধর্মের বাধা ভুলে গিয়ে ভক্তি ও প্রেমই হলো মুখ্য উপজীব্য!..বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ঘটলো। আউল- বাউল সবাই এলেন। প্রচলিত হলো সব ধর্মের মিলনস্বরূপ সত্যনারায়ণ ও সত্যপীরের পূজা।  সবাই বুঝলো, মানুষকে প্রেম করলেই ঈশ্বরের অধিক নিকট পৌঁছনো যায়। ঘৃণা করে লাভ নেই।
  এই প্রেক্ষাপটে আবির্ভাব ঘটল মহাকবি ও গায়ক সুরদাসের। সহজ ব্রজভাষা ও অবধী ভাষায় তিনি ভক্তি ও প্রেমের কবিতা বাঁধতেন ও গাইতেন। জন্মান্ধ, তাও এত প্রতিভাধর ও প্রেমরসে বিলীন অদ্ভুত এক ব্যক্তিত্ব এই সুরদাস।
  আগ্রার কাছে এক গ্রামে ষোড়শ শতকে জন্মগ্রহণ করেন সুরদাস । পিতার নাম রামদাস। জন্মান্ধ হবার কারণে পরিবারের সবার অপ্রিয় ছিলেন তিনি। তাই তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। যমুনা নদীর তীরে গান গেয়ে ভিক্ষা করে কোনরকমে তিনি দিনাতিপাত করতে থাকেন। পরে সাধু বল্লভাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন । সুরদাস রচনা করেন সুরসাগর ও সুর সারাবলীর মতো গ্রন্থ । মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণ- রাধার প্রেম ও কৃষ্ণ ও গোপিকাদের লীলা নিয়ে কাব্য রচনা করতেন তিনি। তাঁর কবিতা ও গান যুগের পর যুগ ধরে হিন্দি ভক্তি সাহিত্যকে প্রভাবিত করে। এমনকি গুরু গ্রন্থ সাহেবেও তাঁর লেখা উদ্ধৃত আছে।।




ভুবন দের গ্রামে শীতের মেলা
      আব্দুল রাহাজ

চারিদিকে বেশ শীতের আমেজ সকাল হলেই কুয়াশায় মোড়া এক পরিবেশ দেখতে পায় প্রকৃতি মা সেরকম ভুবন দের গ্রামে শীতের আমেজ এবার বেশ পড়েছে ‌। ওদের গ্রামে তেপান্তরের মাঠে শীতের মেলা হয় গ্রামের মানুষেরা শীতের বিভিন্ন সবজি নিয়ে বসেন আরো নানারকম মুখরোচক খাবার অনুষ্ঠান হয় আশেপাশের গ্রামের লোকও আসে দেখতে গ্রামের মানুষগুলো প্রান্তিক হলেও ওরা বেশ সুখে শান্তিতে বসবাস করে। এবারের মেলায় বেশ ভিড় চোখে পড়েছে শীতের খাবার থেকে শুরু করে নানা রকমের খাবার ভরপুর হয়ে ওঠা ভুবনের গ্রামের মেলা আমোদপ্রমোদ হয়েছিল এবারের শীতের আমেজে। এক সপ্তাহ ধরে চলে ওদের এই গ্রামের মেলা মাত্র কুড়ি বছরে পড়ল ভুবনের গ্রামের এই মেলা শোনা যায় ভুবন দের গ্রামের জমিদার জগৎশেঠ তিনি এই মেলার উদ্বোধন করেন যা হোক ভুবন রা এবার কয়েকজন বন্ধু মিলে সবজি নিয়ে বসেছে যা বিক্রি হবে তা দিয়ে লাস্টে দিনরাত জিলাপি পাপড় ভাজা খাবে ও তাদের কি আনন্দ আস্তে আস্তে মেলার সেই দিন এসে গেল কুয়াশায় মোড়া শীতের আমেজে শীতের মেলায় ভুবনের তার বন্ধুরা কথামতো জিলাপি পাপড় ভাজা নিয়ে ওরা বসে গেল যাত্রাপালার মাঠে হো হো করে হেসে উঠছে যাত্রা দেখে মাঝে মাঝে জিলাপি আর পাপড় ভাজা স্বাদ নিচ্ছে এভাবে উপভোগ করেছিল সে বছর। এবছর একটা ঘটনা ঘটেছিল মেলার তৃতীয় দিনে ঠান্ডা পড়েছে সেদিন সবাই রংবে রঙের পোশাক পড়ে এসেছে রাত বাড়তেই মানুষের চোখ ভীড় চোখে পড়ল বেশ একটা ছেলে তার বাবাকে বলছে বাবা বাবা আমি ওই খেলনা গাড়িটা কিনব কিন্তু প্রান্তিক দরিদ্র মানুষ বলে কিছু কিনে দিতে পারেনি তাকে সামান্য পাঁচ টাকার জিলাপি কিনে তাড়াতাড়ি করে বাড়ি নিয়ে গেল ভুবন এসব দেখে খুব মায়া লাগলো পরের দিন মেলা থেকে একটা গাড়ি নিয়ে গিয়ে ছেলেটির হাতে দিয়ে বলল যাও খেলা করো এই ঘটনাটা ভুবন স্বচক্ষে দেখে তার এই কাজ নিজে চোখে করে মেলাকে এক অন্যরকম চোখে দেখত ভুবন। এইভাবে ভুবন দের গ্রামের মেলা শীতের দিনে বেশ জমে উঠতো।





তোর অপেক্ষায়
সমীরণ বেরা

এখন শরীর পোড়ে না আর
মন বরাবর।
অস্তাচলের সূর্য কখনো ভালো করে দেখেছ কি?
জ্বালাময়ী সূর্য নিস্তেজ হয়ে পড়লে
লাল আভার মাঝে একটা কালো বিন্দু
তুই চলে গেলেও থাকবি ওই বিন্দুর মত।
তোকে কিছুতেই মুছতে পারছি না
ভালো আছিস তো তুই?

আমি এখন যাযাবরের মত
বোহেমিয়ান তো চিরকালের তাই,
তোর এখন ভরা গৃহস্থালি
আমার চারপাশে অনেক সবুজ
তুই একটু সবুজ ছোঁয়া নিতে পারিস?

গণ্ডীবদ্ধ জীবনের প্রান্তসীমা পেরিয়ে
নতুন নতুন দিগ্বলয়; কোন এক অজানা দেশের মত
সেখানকার রাতের অন্ধকারে তোর চুলের ভিতর
আমার চেতনায় জোনাকিরা আলো দেয়।

এক রহস্য ভরা অন্য পৃথিবী যেখানে তুই আর আমি।
নেভা আলো বার বার জ্বলে ওঠে সৌদামিনীর মত
তুই আর নিজে থেকে জাগবি কবে?
আমি পূর্ণিমা চাঁদের অপেক্ষায় বসে আছি।




বৃষ্টিপতন
মহীতোষ গায়েন

সব আগুন নিভিয়ে দেবে বৃষ্টি
বৃষ্টি তুমি আগুন চিনে নাও,
জলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়
ঘুমহীন রাত বৃষ্টি এনে দাও।

ভোরের আকাশ হাত বাড়ায়
হাতছানিতে হৃদয় দিশাহীন,
সূর্য ওঠে পাখিরা গান গায়
মনের নদী আজও গতিদীন।

দুপুর গড়ায় বিকেল চলে আসে
গোধূলি বেলায় বিষাদ সুর ভাসে,
মনের আগুন জ্বলছে দাউদাউ
বৃষ্টি কোথায়,আনলো না তো কেউ।

রাত এসে যায় চাঁদের আলো পড়ে
একলা বাউল হারিয়ে ফেলে পথ...
দেহ মনে অস্থিরতা হঠাৎ আসে বৃষ্টি
আগুন নেভে,নেভে বিষাদ এবং অনাসৃষ্টি।







আমার নাজানা উপকথা

অঞ্জলি দেনন্দী, মম


আমার জীবনের কথা,

কইতে পাই ব্যাথা।

জীবনটা কেটে গেল অযথা।

সবই কী হল বৃথা?

পর্বত - ঢালে পুঁতে দিলাম,

প্রেমের ঝুনো-নারকোল।

অঙ্কুরই বের হল না, 

তার থেকে!

কতকাল যে অপেক্ষায় ছিলাম, ...

ধৈর্য্যকে আঁকড়ে রেখে!

গাছই যখন হল না, 

তার ফল কী করে পাবো, আর?

প্রেমের অসফল অভিজ্ঞতাকে চিনে নিলাম।

ভালোবাসার তুফানে, আবার,

পেতে চাইলাম, মহাসাগরের ঢেউয়ের দোল।

বাঁধলো গোল।

ডুবে, তলিয়ে গেলাম, অতলে।

প্রবল ভালোবাসার উথাল পাথাল বলে।

প্রেম, ভালোবাসা,

বারবার,

শেষ করল মোর আশা।

অবশেষে, আমার প্রেম, ভালোবাসা,

কবিতায় পেলো, চিরসফল ভাষা...

বাঁধলো সেথায় অশেষ বাসা.......

এখন মোর সফল প্রেম, ভালোবাসা,

শুধুই অদম্য অনন্ত হাঁসা.......





মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০

গল্প প্ৰতারণার শিকার অনাদি মুখার্জি

গল্প  প্ৰতারণার শিকার   অনাদি মুখার্জি

গল্প

প্ৰতারণার শিকার     
    অনাদি মুখার্জি


বেশ কিছুদিন যাবৎ একটা ছেলে রিয়া ও তার বান্ধবীর  সোমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে ! কিন্তু রিয়া ভাবে কার দিকে তাকায় ছেলেটা ,তার দিকে না তার বান্ধবী সোমা দিকে ! কি চায় ছেলেটা ! প্রতিদিনের মতোন  সেইদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিল দুই বান্ধবী ,কিছুক্ষণ পর টের পেলো ঐ ছেলেটা তাদের পেছন পেছন আসছে ! রিয়া তার মনের ধারনা ঠিক করতে একটি মোবাইল দোকানের সামনে দাঁড়ালো ঠিক তখন ঐ ছেলেটা একটু দূরে অপেক্ষা করতে লাগলো ! সেই টা দেখে রিয়া তার বান্ধবী সোমা কে বললো দেখ ঐ ছেলেটা আমাদের পিছনে আসছে কেনো ! সোমা তখন হাসতে হাসতে বললো হুম মনে হয় তোকে ওর খুব পছন্দ হয়েছে ! রিয়া তখন আগবাড়িয়ে বললো ,চল তো দেখি বলে ছেলেটা কাছে গিয়ে জানতে চাইলো ? এই যে দাদা আপনাকে রোজ দেখি আমাদের কে লক্ষ‍্য করেন কেনো ? ছেলেটা বলে উঠলো আমার নাম দিপক ,আমার আপনাকে খুব ভালো লাগে তাই বন্ধুত্ব করতে চায় বলে রিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল দিপক ! এই দেখে রিয়া খানিক টা লজ্জায়
মাথা নিচু করে ওকে বলে চলে গেলো ! এই ভাবে রিয়ার সাথে দীপকের খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো ,তারা মাঝেমধ্যেই বিকেলে দেখা করতো রিয়া কে নিয়ে নদীর পাড়ে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা গলপ করতো আর রাতের বেলায় ফেসবুকের মাধ্যমে মেসেজ হতো ! রিয়া তার বাড়িতে একদিন নিয়ে গেলো দিপক কে ,রিয়ার তার বাবা ঐ মায়ের সাথে পরিচয় করে দিল ! এই ভাবে যেতে যেতে একদিন রিয়া দিপক কে বললো তুমি কি করো ? জবাবে দিপক জানালো সেই একজন সাব ইন্সপেক্টর তার বিরাট বড়ো ফ্লাট আছে ! তখন রিয়া বললো চলো তোমাদের বাড়ি গিয়ে দেখা করে আসি ! দিপক বললো কেনো ? আমার বাবা ও মায়ের সাথে পরিচয় করে কি হবে ? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি আমাকে কি বিশ্বাস হয় না তোমার ,রিয়া বললো তাই বলিনি আমি বলতে চাই এইভাবে আর কতোদিন চাতক পাখি হয়ে থাকবো ,এইবার আমরা বিয়ে করতে চাই, তা ছাড়া আমার বাপি খুব তাড়া দিচছে আমার বিয়ের জন্য ! এমন একটি ভালো ছেলে তুমি বুঝলে বাবু ! দিপক তখন রিয়াকে পাগলি বলে তার ঠৌটৈ একটা আলতো করে চুমু খেলো ! রিয়া তখন বললো ওয়ে কি হচছে এইসব বলে হেসে গড়িয়ে পড়লো দীপকের বুকের মধ্যেই ! এই ভাবে চলতে থাকে তাদের প্রেম ,একদিন দিপক রিয়া কে অনেক দূরে নিয়ে গেলো ,সেই খানে তাদের অনেক গলপ হলো একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসে অনেক কিছুই হলো  ,রিয়া খুব সরল মেয়ে আর তার লাস‍্যময়ি রূপে দিপক মোহিত হয়ে তার সাথে লিপ্ত হলো ! প্রথম প্রথম রিয়া বাধা দিতে গেসলো কিন্তু পারলো না ,দীপকের ভালোবাসা কাছে হার মেনে তারা সুখের সাগরের ভাসতে লাগলো ! হয়ে যাবার পর রিয়া খানিক লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকলো ! তার পর তারা হাত ধরাধরি যে যার বাড়ি গেলো ! সেই রাতে রিয়া তার মোবাইলে ফেসবুক খুলে দেখে তার ফ্রেন্ড লিষ্টে দিপক তাকে ব্লক করে দিয়েছে ,তখন রিয়া দীপকের মোবাইলে ফোন করতে লাগলো ,দেখে তার সুইচ অফ ! রিয়া অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো ,কেনো এমন হলো ,সমস্ত রাত রিয়া ঘুমাতে পারলোনা ! পরের দিন তার বনধু সোমা কে সব জানালো ,সোমা বললো দীপকের ফোটো আছে ? রিয়া বললো হুম আছে ,সোমা বললো দিপক থাকে কোথায় ? রিয়া জানালো সেই থাকে শ্যামপুরে ,চল তবে  ঐখানে গিয়ে খোঁছ করি ! এইসব ঘটনা রিয়া তার বাবা ও মাকে বলেনি বকবে বলে ! এইভাবে দশদিন দীপকের ফোনে যোগাযোগ হয়নি ! তার জন্য সোমা আর রিয়া একদিন সকাল সকাল শ্যামপুর গেলো ,সেই খানে তার ফোটো দেখিয়ে অনেক লোকজন কে জিগ্যেস করাতে একজন দেখিয়ে দিল দিপকের বাড়ি !  দিপকের বাড়ির সামনে আসতে রিয়া দিপকের দেখা পায় ,রিয়াকে দেখে দিপক চমকে উঠে ,সেই তখন বলে তুমি কেনো এসেছো আমার সাথে দেখা করতে  প্লিজ চলে যাও আমার সাথে সম্পর্ক রেখো না ! তখন সোমা বলে উঠলো মানে কি বলতে চাইছেন ? ভালোবেসে মিষ্টি খেলেন আর ছুড়ে ফেলে দিলে হবে শয়তান ! দিপক বললো দেখো আমি চেয়েছিলাম বনধু হয়ে থাকতে কিন্তু বিয়ে করতে নয় ,তা ছাড়া আমার বিয়ে হয়েগেছে ! তখন রিয়া রেগে দিপকের গালে ঠাস করে চড় মেরে বললো ,তা হলে তুমি অভিনয় করতে গেসলে ,বলে রিয়া কাঁন্নায় ভাসিয়ে দিল ! এই হলো পুরুষের কাজ আমাকে ঠকিয়ে তুমি সুখি হতে পারবে না ! তখন ঐ  গ্রামের লোকজন ছুটে এসে সব শুনে বললো , দিপক কোন সাব ইন্সপেক্টর নয় ,আপাদের মিথ্যে কথা বলেছে ! সোমা তখন বলে উঠলো এই হারামি টা একটা শাস্তি চাই ,সহজ সরল মেয়ে কে ঠকিয়ে লজ্জা লাগে না ! তখন গ্রামের মোড়ল বললো হুম বেটা কে থানায় গিয়ে দিয়ে আসি ! কিন্তু রিয়া মনে একরাশ দুঃখ নিয়ে ঘরে এসে দিনরাত কাঁদতে লাগলো ! সেই স্বপ্নে ও ভাবতে পারেনি এই রকম বন্ধু থাকে যারা ভালো বন্ধু সেজে বিশ্বাসঘাতক করতে পারে ! একটি মেয়েকে ভালোবেসে  পতুল খেলা ভেবে তার জীবন নষ্ট করতে পারে ! সমাজের কি দোষ এই রকম পুরুষ থাকলে সমাজ কোনদিন ই ভালো হবে না ! এই বিশ্বঘাতক বনধু থাকলে সমাজ অন্ধকারের থেকে যাবে !

প্রবন্ধ কবি ও কবিতা বুদ্ধদেব বসু প্রেমিক-সত্তায় কবি

প্রবন্ধ  কবি ও কবিতা  বুদ্ধদেব বসু  প্রেমিক-সত্তায় কবি


        প্রবন্ধ  কবি ও কবিতা

  বুদ্ধদেব বসু ------  প্রেমিক-সত্তায় কবি
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''""""""""""""
                  সৌম্য ঘোষ
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""

              উত্তর-রৈবিক পর্বের আধুনিক বাংলা কবিতা আন্দোলনে একটি স্মরণীয় নাম,  বুদ্ধদেব বসু । "কল্লোল যুগের" অন্যতম তরুণতম প্রতিনিধি হলেন বুদ্ধদেব । আবু সয়ীদ আইয়ুব তাঁর "আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন" এর ভূমিকায় লিখেছেন ,  "কালের দিক থেকে মহাযুদ্ধ পরবর্তী এবং ভাবের দিক থেকে রবীন্দ্র প্রভাবমুক্ত কাব্যকেই আধুনিক কবিতা বলে গণ্য করা হয় ।‌ এই হিসেবে বুদ্ধদেব বসু একজন আধুনিক কবি ।

                  বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্র-উত্তর কবি । রবীন্দ্র পরিমণ্ডল থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াস তাঁর কবিতায় পরিলক্ষিত হয় । অথচ তিনি রবীন্দ্র- দ্রোহী নন  । আধুনিক পর্বে কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে কাব্য-সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বুদ্ধদেব বসু হলেন সব্যসাচী । কবিতা ,গল্প ,উপন্যাস, ভ্রমণ ও প্রবন্ধ যেমন তাঁর প্রতিভার আলোয় আলোকিত।  তেমনি কাব্যনাট্য রচনাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। তবে মূলতঃ তিনি কবি  ।

                বাল্যকাল থেকেই বুদ্ধদেব বসুর কবিতা শক্তির স্ফুরণ ঘটে । পূর্ববঙ্গের নোয়াখালীর দাদা মশাই এর বাড়ী ছেড়ে যখন তিনি ১৯২৩ সালে ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করেন তখন তিনি একটি কবিতা লিখেছিলেন ইংরেজিতে ।

      " Adieu, Adieu, Delony House dear,
        We leave you because the sea is near,
        And the sea will swallow you, we fear
        Adieu, Adieu .......    ........"

তবে তাঁর ইংরেজি কবিতা এটাই প্রথম এবং শেষ ।
কিশোর বয়স থেকেই নানা পত্র পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 
" মর্মবাণী" ১৯২৪ সালে প্রকাশিত হয়। তখন তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষার ছাত্র । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে   রবীন্দ্র প্রভাব সুস্পষ্ট । এমনকি তাঁর কবিতায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার অনুসরণ লক্ষ্য করা যায়। ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র থাকাকালীন ঢাকার জগন্নাথ কলেজের বন্ধুদের নিয়ে ১৯২৫ সালে প্রকাশ করেন  হাতে লেখা পত্রিকা "ক্ষণিকা" ।
এরপর ১৯২৭  আরেকটি হাতে লেখা পত্রিকা "প্রগতি" প্রকাশ করেন । পরবর্তীকালে "প্রগতি" মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হতে থাকে । বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে এই পত্রিকার সম্পাদনের দায়িত্বে থাকেন আর এক বিশিষ্ট কবি ও অবাল্য বন্ধু অজিত দত্ত ।

                 বুদ্ধদেব বসুর "বন্দীর বন্দনা"(১৯৩০),  "কঙ্কাবতী"(১৯৩৭), " নতুন পাতা"(১৯৪০), "দময়ন্তী"(১৯৪৩), "দ্রৌপদীর শাড়ি"(১৯৪৮), "শীতের প্রার্থনা : বসন্তের উত্তর"( ১৯৫৫), "যে আঁধার আলোর অধিক"(১৯৫৮), "মরচে-পড়া পেরেকের গান"(১৯৬৬)‌ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর দেখা যায়। তিনি মূলতঃ প্রেমের কবি । তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে কাম ও প্রেমের  দ্বন্দ্ব । বিশ্বসৃষ্টির মূলে রয়েছে দেহজ কাম । কিন্তু মানুষ শুধু কামের বশবর্তী হয়ে নিজেকে নিঃশেষ করে দেয় নি।  সে আবিষ্কার করেছে প্রেমকে।
"বন্দীর বন্দনা" থেকে একটি লাইন উদ্ধৃতি দিলাম :

" মোরে দিয়ে বিধাতার এই শুধু ছিল প্রয়োজন;
  স্রষ্টা শুধু এই চাহে, এ-বীভৎস ইন্দ্রিয়মিলন--
   নির্বিচারে প্রাণী সৃষ্টি করে থাকে যেমন পশুরা।"

                 "মানুষ" কবিতায় তিনি লেখেন :

"বিধাতারও চেয়ে বড়--- শক্তিমান, আরো সে মহান
নিজেরে নুতন করি' গড়িয়াছে আপন আগ্রহে।
এ জীর্ণ পাতার স্পর্শ নারীমাংস চেয়ে সুখকর,
মলাটে ধূলির গন্ধ- মুখ মদ্য তার তুল্য নয়,
গ্রন্থের অক্ষয় গ্রন্থি--- পরিপূর্ণ, প্রবল প্রণয়
এই প্রেমে সমাসীন স্বপ্নলব্ধ পরমসুন্দর ।"

             "কঙ্কাবতী" পূর্বরাগের কাব্য। ‌ সঙ্গমপূর্ব রতিই তাঁর অবলম্বন । "দ্রৌপদীর শাড়ি" , "শীতের প্রার্থনা : বসন্তের উত্তর " কাব্যগ্রন্থে সঙ্গমউত্তর
রতিই কবিমানসে মুখ্যস্থান পেয়েছে । এরপর "মরচে পড়া পেরেকের গান"-- এ কবির উত্তরণ।
"আরোগ্যের তারিখ" কবিতায় কবি লেখেন :

       "থাকুন মঙ্গলে মাতা ও সন্তান,
       জমুক ধুলো পুঁথিপত্রে ।
       জগতে বিদ্বান আছেন ঢের;
        কিন্তু ভালোবাসা দৈব ।
        জগতের ঢের আছে পত্নী, পতি,
        কিন্তু প্রেমিকের অনটন ।"

"বন্দীর বন্দনা" কবিতায় আমরা দেখি, কামনা ছিল "অন্ধকার অমারাত্রিসম"। আর "মরচে পড়া পেরেকের গান" কাব্যগ্রন্থে পৌঁছে তিনি লিখলেন,
"মুক্ত বাসনার দাহ থেকে "।

                 বিশিষ্ট কাব্য সমালোচক কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য একদা প্রেমচেতনা সম্পর্কে তুলনা করতে গিয়ে জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু ও প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন ,
"জীবনানন্দ কবি-সত্তায় প্রেমিক , বুদ্ধদেব প্রেমিক- সত্তায় কবি ,  আর প্রেমেন্দ্র মিত্র বিদ্রোহী-সত্তায় কবি ও প্রেমিক ।"
(Ref.  "আধুনিক কবিতার ভূমিকা": সঞ্জয় ভট্টাচার্য )
প্রেমের কবি বুদ্ধদেব বসুর প্রেমের আবেগ, উচ্ছাস ও সংরাগের প্রকাশ এমনভাবে উৎসারিত ও উচ্ছ্বসিত যে, তাঁর কবিতায় যেকোনো কাব্যরসিক আপ্লুত হয়ে পড়বেন । তাঁর প্রেম বায়বীয় নয়, রোমান্টিকও নয় , তাঁর প্রেম পার্থিব তাই শরীরী, দেহজ ।

            রচনাশৈলী দিক থেকেও বুদ্ধদেবের উত্তর উত্তর রূপান্তর ঘটেছে। " বন্দীর বন্দনা" রচিত হয়েছে মিশ্রবৃত্ত রীতির পয়ার ছন্দে। আবার "কঙ্কাবতী" তে কলাবৃত্ত রীতির সংগীতময় গীতধ্বনি ।

"ঘুমাও, ঘুমাও; আঁখি দুটি তব এসেছে তুলে,
                                           কঙ্কাবতী !
ঘুমাও, ঘুমাও ! রেখো না জানালা, রেখো না খুলে,
                                           কঙ্কাবতী !"

এরপর আবার রূপান্তর ঘটলো । "নতুন পাতা" কাব্যগ্রন্থে তিনি অবলম্বন করলেন গদ্যবন্ধের ।
তিনি তাঁর কবিতার প্রকরণ- কৌশল অর্থাৎ আঙ্গিক, মিল, ছন্দ, অবয়ব ইত্যাদির দিকে অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। কাব্য সমালোচকদের মতে, কবিকৃতি ও কলাকৃতি উভয় দিক দিয়েই
"দময়ন্তী" শ্রেষ্ঠ।

              মূলতঃ কবি হলেও গদ্য রচনাটি ও তিনি তাঁর পরিশীলিত চিন্তার স্বাক্ষর রেখেছেন। ছোট গল্প, প্রবন্ধ এবং উপন্যাসেও তিনি স্বচ্ছন্দ । রম্য রচনাতে তাঁর মননশীলতার পরিচয় পাই। গদ্য সাহিত্যে তিনি অমর হয়ে থাকবেন তাঁর ভাষার সৌজন্যে । তাঁর জীবনের শেষ প্রান্তে রচিত
"তপস্বী ও তরঙ্গিনী" (১৯৬৬), "কালসন্ধ্যা"(১৯৬৯),
"অনাম্নী অঙ্গনা "(১৯৬৯), "প্রথম পার্থ"(১৯৭০), "সংক্রান্তি"(১৯৭৩) - র মত কাব্যনাটক রচনা করেন ।

           তিনি দেশি-বিদেশি কবিদের কাব্য ও কবিতার অনুবাদ ও অনুলিখনও করেছিলেন । কালিদাস ( মেঘদুত), শংকরাচার্য ( আনন্দলহরী),
য়ুয়ান চন , বরিস পাস্টেরনাক , এজরা পাউন্ড , কামিংস , শার্ল বোদলেয়ার, রিলকে প্রভৃতি কবির কবিতা অনুবাদ করেন ।  বুদ্ধদেব বসু ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক ‌। ফলে তাঁর রচনায় আমরা এজরা পাউন্ড, শার্ল বোদলেয়ার, লরেন্স, রিলকে , র‍্যাঁবো , এলিয়ট প্রমুখ কবির সুস্পষ্ট প্রভাব দেখতে পাই ।

               এক সময় তাঁর লেখায় অশ্লীলতার অভিযোগ উঠেছিল । এজন্য তাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে ।

"তবু, ঈষদচ্ছ , এখনো ছায়ারহিত,
প'ড়ে রইল , এক ঝাড় এপ্রিলের বার্চগাছের মতো,
উষ্ণ, শূন্য, উন্মুক্ত যোনিদেশ ।"
( 'ভেনাসের জন্ম')

আর একটা উদ্ধৃতি দেই :

"দেখো, মোর বুকে দুটি পাকা ফল ভরেছে রসে---
বাসনার রসে সকল কালের সব পুরুষের । ....."
("কঙ্কাবতী" কাব্যগ্রন্থ থেকে)

                  বুদ্ধদেব বসু বাংলা সাহিত্যের এক অনন্যসাধারণ কবি । তাঁর সৃষ্টিকর্মের জন্য তিনি যেমন নন্দিত হয়েছেন, আবার নিন্দিতও হয়েছেন।
তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, সমকালীন সাহিত্য কোন নিরালম্ব বায়ুভূক বস্তু নয় । অতীতের সঙ্গে রয়েছে তাঁর নাড়ির যোগ ও টান । তিনি চিরন্তন যৌবনের কবি ।।

_______________________________________
লেখক ---- অধ্যাপক সৌম্য ঘোষ। চুঁচুড়া হুগলি।

_________________________________________
ঋণ স্বীকার :

১/  "আধুনিক কবি ও কবিতা" -- বুদ্ধদেব বসু ---- নন্দলাল মাইতি ।
২/ "আমার কালের কয়েকজন কবি" --- জগদীশ ভট্টাচার্য ।
৩/ বুদ্ধদেব বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা ---- দে'জ পাবলিশিং
_________________________________________

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 08/12/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 08/12/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 08/12/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 08/12/2020

**********************************

"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
                 (ওয়েব ম্যাগাজিন)     

প্রকাশ কাল:- 08/12/2020, মঙ্গলবার
               সময় :- রাত 7 টা. 30 মি:


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম


সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒


তুমি না বাসলেভালো
           বিপ্লব গোস্বামী

তুমি না বাসলেভালো , জানতাম না
       ভালোবাসা কারে কয়।
তুমি না আসলে কাছে , বুঝতাম না
         প্রেম কি করে হয়।

তুমি না ধরলে হাতে , জানতাম না
           বন্ধু কারে কয়।
তুমি না থাকলে পাশে , বুঝতাম না
        জীবন এত মধুময়।

তুমি না গেলে দূরে,  জানতাম না
           বিরহ কারে হয়।
তুমি না করলে হেলা , বুঝতাম না
         প্রেম যে বেদনানাময়।




The mom bird
© Anjali Denandee, Mom

The mom bird.
She lays on her eggs for next generation,
With motherly meditation power,
Hatchs for many days, nights, hours...
She loves to  new creation.
She works hard and hard.....
At day time, she builds nest,
Feeds babies and also
Protects them under own chest.
Fights by beaks and clows against foe
Who is attacking her children.
The criminal storm destroy her nest
Again and again.......
But she built again and again......
She does not know,
Yes, does not know the rest.
She is maker of home.
Yes, she is mom.
In the creature, she is the best.





                   বিপাশা
            হামিদুল ইসলাম
              
হাজারো হাতে
মিলিয়ে দিয়েছি হাত
তুমি আসো বন্ধু আমার
আজ ছুঁয়ে দেখি জোছনা রাত  ।।

তোমার আশায় পথ চলি
একা একা
পথের মাঝে পথ
পথেই তোমার সাথে দেখা  ।।

গভীর নিদাঘে
তোমাকে ফিরে পাই
অশথ গাছ হাতছানি দিয়ে ডাকে
ছায়ায় ছায়ায় তোমার প্রেম পুড়ে হয় ছাই  ।।

পথকে ডাকি
পিঠের ছালে দাসত্বের বোঝা
তুমি কতো কাছে তবু কতো দূর
তবু তোমাকেই কেবল খোঁজা  ।।

তুমি আমার বন্ধু
আমার ভালোবাসা 
তুমি আছো আমি আছি
তবু কেনো মাঝে মাঝে শুকিয়ে যায় নদী বিপাশা  ??




টুকরো ছবিতা-১৯
ডাঃ তারক মজুমদার

টপ টু বটম সব ব্যাটারাই
পাতে বা হাত,
ইচ্ছা পূরণ না করলেই
তুমি কুপোকাত  ।





শ্রীকান্ত মালাকার এর দুটি কবিতা

পারাপার
শ্রীকান্ত মালাকার

রাতের জ্যোৎস্না শেষে,
দিনের আলোয় মেশে।
বহু অভিনয়ের পরে,
ক্ষমা চাও কাছে এসে।

দিন যায় রাত আসে,
ভাগচাষী জমি চাষে,
মানুষের অন্তিম লগ্নে,
অন্ধকার নেমে আসে।

মাছ নাচে জলে,
শ্বাস ছাড়া কি প্রাণী চলে?
প্রদীপ শুধু জ্বলে রাতে,
শত্রু আছে বিভিন্ন ছলে।

মন ভাঙ্গা কবিতা লিখে কবি,
প্রেমিকের বুকে কত ছবি;
সকল এবার হবে পার,
নৌকার হালে আছে যে নবী।।



তবু ব্যর্থতা
শ্রীকান্ত মালাকার

ক্লান্ত সময়,অক্লান্ত পরিশ্রম,
কি করে বানাবো প্রভু,তোমার আশ্রম।
শরীর রক্ত ফুটন্ত আগুন,
তোমাকে দেখার ইচ্ছে দ্বিগুণ।
অবুঝ মন ,সবুজ বন, এখনো আছে।
মীরা কেন আজ কানহার কাছে।

বিষাক্ত মন, নীলাভ দেহ,
প্রকৃত প্রেম করে কেহ।
মন্দির তো আছেই, ঠাকুর বেদীতে।
সুখ আছে ,তবু দেখা যায় কাঁদিতে।
দুর্বল তারুণ্য, হোঁচট খাচ্ছে জীবন।
খেলা শেষে, টিকে আছে মরণ।।




এখানে  কুমীর  নেই
চিত্তরঞ্জন  দেবভূতি

এখানে  চারদিকে  চা  বাগান  আছে,
আর  চিতাবাঘ  করে  খেলা,
কেউ  ভুলেও  যায়  না  তাদের  কাছে,
প্রকৃতির  রূপ  দেখে  কেটে  যায়  বেলা৷
সাগর  এখান  থেকে  অনেক  দূরে,
আশেপাশে  কুমীর  নেই,
মাঝি নৌকা  লঞ্চ এসবের দেখা  পাওয়া  ভার,
বরফ  মেঘলা  আকাশ  কুয়াশা,
খুব  সুন্দর লাগে,সবটা  লিখে  শেষ  হবে  নাতো  তার৷




নি:সংশয়ী তুমি
সমীরণ বেরা

প্রতিদিন আমি এক অচেনা সমুদ্র থেকে
ফিরে আসি উদ্বেলিত ঢেউয়ের মত
অনুভবের কাল মাত্রায় সমুদ্র সফেন
নিজেকে কখনো মনে হয় যেন
অস্তপারের পাখির ঘরে ফেরার মত
আবার এক নূতন দিন যাপনের প্রস্তুতি।

জীবন কখনো কখনো ধোঁয়াশা
তবু কোথাও বেঁচে থাকে এক চিলতে আশা
আমি ভুলে গেছি পরাগ মেখে ফুল হতে
দূর আকাশে ওড়া চিলের ডানায় রোদ মেখে
মন এখন ডুব দেয় অতীত গহীন দেশে
সেখানে তুমি নও আমি আমার মুখোমুখি।

হারিয়ে যাওয়া শৈশব বা যৌবনের উদ্দামতা
আজ মনে হয় এসব কি একান্ত আমারই ছিল?
তা তো নয়, তুমি তো জড়িয়ে ছিলে!
এখনো রাতের অন্ধকারে কোপাই তীরে
বাউল গানের সুরে নিবু নিবু তারা ভাসে
নদী ভরা ঢেউয়ে মিছে শুধু হাল বাই?
কি বলো তুমি? মিছে কিছু নয় মিছে কিছু নয়
তোমার থাকা এবং না থাকা দুটোই সত্যি- নি:সংশয়।




কোনটা সত্যি?
নরেন্দ্র নাথ নস্কর

তোমার সুন্দর মুখ কি আদৌ সত্যি সুন্দর?
নাকি মুখোশ?

তোমার হৃদয় কি আদৌ কোমল ?
নাকি পাথর ও নিষ্ঠুর ?

তোমার ভালবাসা কি সত্যি  কাউকে ভালবাসে?
নাকি ভালোবাসার অভিনয় করে?

তোমার কালো কেশ কি সত্যি রূপ  চড়ায়?
নাকি কালিমা দেয়?

তোমার হাতের স্পর্শ কি সত্যি কাউকে আনন্দ দেয়?
নাকি আনন্দের আড়ালে দু:খ ডেকে আনে?

তোমার রূপ কী আদৌ আলো দেয়?
নাকি অন্ধকার করে?

তোমার ভালোবাসায় কি প্রেম আছে ?
নাকি প্রেম হরণ করে ?

তুমি যা বল সেগুলো কি সত্য?
নাকি সত্যের আড়ালে অসত্য ?

কে বলে দেবে?




চুরি বাঁচাও
মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ

ছুটছাট কারনে কেনো করি,দলাদলী আর তান্ডব।
সমাজ কুলোসিত হয়,বুঝেও বঝোনা সব।
নিজে নিজেরাই মাতি রক্তের হুলি খেলায়
পিতৃ মাতৃর গর্ভে দেখো,অন্তরে অশ্রুজল।
এই ভেবে,এই ভেবে গাধার দলেরা বুঝবে কবে।
দেশ চুরির উৎপাদ বাড়ছে যে দেশে
এ খবর ক'জন নেয়,ক'জনই বা জানে!
স্বপ্নের বাসভবন করবে চুরি অন্যজন।
মানুষ নয় ওরা,মানুষ নামে নরপিচাস
এতে নেই মাথা ব‍্যাথা,নেই কি নয়নে জল?
নেশার ঘোর কাটবে কবে,কবে হবে উওাপ
আগুন জ্বালাও অন্তরে অগ্নিকুন্ঠে।

মুশারি ছিদ্র থাকলে,প্রবেশ করে শসা।
রক্ত চুসে নিলে,তবেই হয় বেঘুমের হুঁশ।
জানতে,তবু হয়নি ক্ষমতা তোমার সারা।
তাইতো নিলো চুসে, এক ফোটা রক্তের কনা।
দেশ আজ হচ্ছে,মুশারির মতো
কি হবে পরে,একবার ভেবে দ‍্যাখো।
সমস্ত ছিদ্রটাকে মারো তালি
বাঁচাও স্বপ্নের দেশ মাতৃ ভূমি।
চাল চোরের পিছনে দিতে গিয়ে সময়
দেখো দেশ চুরি করছে,গড়ছে সন্ত্রাস।
আর নয়,আর নয় গর্জে ওঠো সব
মাতৃভূমির রক্ষার জন‍্য,করো তীব্র প্রতিবাদ।
তাতে,দিতে হয় দেবো আত্মবলিদান
তবু মাতৃভূমিকে হারাতে দেবোনা প্রান।।






দ্রষ্টব্য
বদরুদ্দোজা শেখু

শরীর পুড়ছে ভীষণ গরমে শরীর পুড়ছে
বন্ধুরা তবু দ্রষ্টব্যের প্রত্ন খুঁড়ছে
দারুণ দু'বেলা উত্তেজনার সকল দিবস ,
মনটা আমার তাদের সঙ্গে সুদূরে উড়ছে ,
গা ঝেড়ে ওঠার মন করতেই শরীর বেবশ ।

বলে ঘরকুনো আমাকে নবীশি মহল-শুদ্ধ ।
তাই বিরুদ্ধ সময়ের সাথে করবো যুদ্ধ
বলতেই , ওরা ভীষণ শব্দে ধরলো খড়্গ ---
একি ভালো ছেলে হচ্ছে হঠাৎ এমন লুদ্ধ !
ফাঁকি দিয়ে ওরা স্বর্গ খুঁজছে নগর-বর্গ ।

কেউ সতীর্থ সঙ্গিনী -সহ সুখের গন্ধ
খাচ্ছে আড়াল কামের কাঙাল কাতর অন্ধ -
মাছির মতন উড়ছে বেতাল ওদের মধ্যে ,
ভিনদেশিনীর মন যোগাচ্ছে বেহায়া ছন্দ ।
মাতাল রাত্রে গল্প শুনছি লোলুপ গদ্যে ।

সখ্যতা-হারা হাঁটছি যখন খুঁজছি সঙ্গ
চক্ষে আমার যুবতী নারীর নধর অঙ্গ
ঢেউ তোলে শুধু , ধু-ধু  সংযম হয় বিপন্ন।
স্বপ্নে খুঁজছি বন্য নিবিড় গোপন রঙ্গ
হাঁটছি নগরে নীল বিহঙ্গ দেখার জন্য ।

শরীর পুড়ছে ভীষণ গরমে শরীর পুড়ছে
বন্ধুরা তাজা দ্রষ্টব্যের প্রত্ন খুঁড়ছে
উত্তেজনায় আহত দুষ্ট কামুক রক্ত
দেখার জিনিস ওই একটাই নগরে ঘুরছে
মুখোমুখি তার দাঁড়াতেই একি , শরীর শক্ত !

ভক্তরা বলে, এ অবরুদ্ধ বধির উষ্ণ
আদিম ইচ্ছা , রক্ত-লোলুপ জঙ্ঘা শিশ্ন--
পুরুষ-নারীর মুক্ত-সঙ্গম সরল যুক্তি ;
গহন জঘন গুহার ফাটল করছে প্রশ্ন ---
পাবো কি তাতেই রক্তে আমার বিরল মুক্তি ?

ভীষণ গরমে শরীর পুড়ছে মিথ্যা-সত্যে
হইনি লিপ্ত কোনো গর্হিত কর্মে কথ্যে
মোহন দৃশ্যে ভাঙছি গড়ছি প্রেমের মূর্ত্তি ,
বংশ -তৃষ্ণা ডাকছে নিত্য দার-অপত্যে
ঢাকছে চিত্ত নগ্ন নতজানু ফতুর ফূর্ত্তি ।

উদর-পূর্তির আসব খুঁজতেই জীবন যাচ্ছে
সহজ স্বপ্ন রূঢ় বাস্তবে ধাক্কা খাচ্ছে
খুঁড়ছি তবুও সরল দৃশ্যে বিরল প্রত্ন ----
মগ্ন চক্ষে নগ্ন লক্ষ্মীর লক্ষ্য নাচছে ,
জ্বলছে এ-কোন্  আঁধার গুহায় প্রেমের রত্ন ?





শ্রমিক ও তার দুঃখেরা
- ইউসুফ মোল্লা

আমার কান্নাগুলো মিশে গেছে ময়দার সাথে,
তাই একটুও নুন কম হয়নি।
রুটিটা চেয়েছিলাম চাঁদের মতো হোক,
কড়ায় পড়তেই একেবারে জ্বলে উঠল সূর্যের মতো।
তেল-হাতের ছাপ রয়ে গেল তার পিঠের উপর।
একে একে খদ্দর এলো,
সমস্ত দোকান ভরে গেল।
তাকে খুবলে খুবলে একেবারে নিঃশেষ করে দিল!
আমার কান্নাগুলো মিশে গেল,
একটুও নুন কম হয়নি।

                __________




শূন্য থেকে
      অনিন্দ্য পাল
==================
পৃথিবী! পৃথিবী! পৃথিবী!
পৃথিবী?
কোথায়?
মাটি! মাটি! মাটি!
মাটি?
কোথায়?
কী খুঁজছি?
কাকে?
নিজেকে?
কে?
কেন?
যদি বিয়োগ করে দিই 'আমি'
আমার খাতা ভর্তি
শূন্য!
শূন্য?
সেও তো আছে
তারও আছে
'আমি!'
নিজেকে তাই হঠাৎ মনে হয়
শূন্য!
আর ঠিক তার পরেই দেখতে পাই
পৃথিবী
মাটি
আদর
মৃত্যু
জন্ম
এবং সব রূপকথারা এসে একে একে
চুমু দিয়ে যায়
আমার শূন্যের কপালে ...





.......অবাক
আব্দুল হান্নান

পৃথিবীটা আজ বড়ই ক্লান্ত
চারি দিকে সত্য উদভ্রান্ত
মানব নামে দানব ব্যস্ত।

আত্ম শুদ্ধি মেটাতে তৃষ্ণা
নিরীহের কত দেয় যন্ত্রণা
সহজে তারা যাবে না অস্ত।

যত দিন থাকবে তাদের  শ্বাস
তত দিন করে যাবে গ্রাস
নোয়াবেনা মাথা কোনো মতে।

বিরাম হীন এই চেষ্টায়
জেগে থাকবে তেষ্টায়
ভাসবেনা শৃঙ্খলতার স্রোতে।

ভোগ বিলাসের স্বাক্ষর
রেখে যাবে নির্মম অক্ষর
তপস্যার অর্জিত ধনে।

দুদ্দান্ত দুবোর্ধ বিস্ময়
এক দিন সব হবে ক্ষয়
মাসুল দেবে উত্তর সূরীঋণে।

এ সব কথা ভাববার
অবকাশ নেই একবার
মানবতার চিত্তে বসে।

জীবনের মাপ নিয়ে যারা
দেয়নি কখনও নাড়াচাড়া
তাদের ক্ষমা নেই ইতিহাসে।।





মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা
১। শিরোনাম- সময়

একটা
একটা করে
দিন কেটে যায়
ভেসে যাই সময়ের স্রোতে
ডুবে যায় কত লালিত স্বপ্ন
মূল‍্যবান দিনগুলো ক্রমশ হয়ে যায় গুরুত্বহীন।

জীবন আসলে গোঁজামিলে কাটিয়ে যাওয়া দিন
একদিন মূল‍্যহীন হয় সব যত্ন
বসত ভরে বিষাক্ত ক্ষতে
সময় আয়ু খায়
পাতা ঝরে
শেষটা।

২। শিরোনাম- আমার কৃষক ভাইয়েরা

শীতের
কনকনে ঠান্ডায়
আমার কৃষক ভাইয়েরা
খোলা রাস্তায় নিয়েছে ঠাঁই
মুখের অন্ন নিয়ে মুনাফা নয়
তারা চায় ফসলের কালা কানুন বাতিল।

আজ যারা এর বিপক্ষে সবাই কাতিল
তারা দেশের পক্ষে বিপজ্জনক ভয়
আজ তাদের ও হিসেব চাই
দল বাঁধুক চাঁইয়েরা
হবেনা রাস্তায়
হেরফের।




কবিতা 
      শান্ত হেমন্ত
কলমে    ডঃ রমলা মুখার্জী

সুন্দর শান্ত মিষ্টি হেমন্ত
     আসে শরতের পরে-
   নূতন ধান্য, শুভ নবান্ন
       বাংলার ঘরে ঘরে।

    গ্রামের পথে চাষীর সাথে
       নতুন ধানের গন্ধ ,
  হেমন্ত নামে যাবই গ্রামে
       শহরে প্রাণ বন্ধ।

    সবুজে ভরা প্রান্তরে মাঠে
   শিশিরে ভিজবো সকালে-
নরম শীতের মাখবো পরশ
         হেমন্তিকার বিকেলে।




পেন্সিল
   শান্তি দাস

জীবন তৈরীর প্রথম আঁকা জোঁকা,
অক্ষর শুরুতে লাগে স্লেট পেন্সিল।
কি অদ্ভুত ছোট বেলা যত ভুল সব যায় মুছে,
লিখতে ভুল মুছে দিয়ে লিখো বারবার।
অক্ষরে কর শব্দ তৈরি তাতে অনেক ভুল,
রাবার দিয়ে মুছে ফেলো,শুদ্ধ কর বারবার।
বাক্য তৈরি ভুল হলে কর সংশোধন,
বাবার দিয়ে মুছে শূন্য স্থানে কর পুরন।
ছোটবেলা যত ভুল সব মুছে ফেলা যায়,
কলম ধরতেই ভুল হলেই কেটে দেওয়া হয়।
কলমের লেখা ভুলে মুছে দেওয়া সম্ভব নয়।
সেই ভুলে কাটাকাটি,মুছে সংশোধন নয়,
হয় না শূন্য স্থান পুরণ জীবনে আনে সংশয়।
ছোটবেলা ছিল ভালো সবতেই সংশোধন হয়।
বড় হতেই কোন ভুল মুছে শূন্য স্থান পুরণ নয়।





       দেহদান
         পিনাকী  মুখার্জী
     

            খেলার  মাঝে বেড়ে ওঠা ,
          সবুজ মাঠ টাটকা বাতাস  !!
          নীল  আকাশের কেবল ভাসে  ,
           ধোঁয়ায়  ঢাকা   দূর  আভাস  !!
         
       চারিদিকে সমাধির জঙ্গল , ফেরারী
              সবুজ স্বপ্ন , নীল আকাশ  !!
          আগামীর  অঙ্গীকারের পোড়া গন্ধ ,
            চোখে  সিঁদুরে মেঘের পূর্বাভাস !!

                 চিমনি ভাটায় পোড়া ইঁট ,
            পোড়া  লাল  সভ্যতার  পাঁজর !!
                  একেই বলে মায়ের মন ,
                আগলে রাখা মা'র আদর  !!

                  রং  বার্নিশে সেজে ওঠা
                যত  ঝাঁ চকচকে  সমাধি  !!
                জীবন সেতো পরের জন্য
              তুলে  রাখা ,  দেহদান অবধি  !!



মানুষগুলো আজ ও প্রান্তিক
   আব্দুল রাহাজ

ওহে ওই মানুষ গুলো ‌আজ ও প্রান্তিক
নদীর ধারে শীত বর্ষা গ্ৰীস্মে কত কষ্ট করে থাকে ওরা ।

দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ার আশায় ছেলেমেয়েরা ‌ঘোরে‌ প্রভাবশালী ‌ ব্যক্তির দুয়ারে দুয়ারে।
ওদের সাহায্য করার মতো কেউ‌ নেই
ওরা হয়ে‌ যাচ্ছে
চরম‌ অসহায় ।
ওরা আজ ও উন্নত‌‌ এই মায়াজালে  ওরা প্রান্তিক‌ প্রান্তিক‌।




শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 04/12/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 04/12/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 04/12/2020

**********************************

"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
                 (ওয়েব ম্যাগাজিন)     

প্রকাশ কাল:- 04/12/2020, শুক্রবার
               সময় :- রাত 8 টা. 30 মি:


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম


সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒


               তোমার জন‍্যে 

             হামিদুল ইসলাম

                


তোমার জন‍্যে তুলে আনি 

পদ্মফুল

ফুলে ভ্রূণের সঞ্চার 

বিকশিত জীবন 

প্রতিটি পাপড়ি রাঙা পদ্মবীজে  ।।

তোমার জন‍্যে তুলে আনি মুক্তো

ধা চকচকে 

প্রতিটি মুক্তোয় জীবন 

প্রেম

ভালোবাসার দুগ্ধবতী ধানক্ষেত  ।।

তোমার জন‍্যে ভালোবাসা আগলে রাখি

ভালোবাসা গড়ে 

স্বপ্নের তাজমহল 

তোমার খোঁপায় গুঁজে দিই পদ্মফুল আর মুক্তো 

জীবন এখানে তবু অসহায়  ।।

তোমাকে ভুলতে চাই 

পারি না কিছুতেই 

প্রেম এসে দাঁড়িয়ে থাকে ঘরের দরজায় 

বাহুবলী আক্ষেপে ভাঙি ধানসিঁড়ি 

সিঁড়ির কার্নিসে তোমাকে বারবার পেয়ে যাই  ।।







খাঁচায় বন্দি  আমার প্রেম
অনাদি মুখার্জি

আমাদের প্রেম কোনো এক খাঁচায় আছে  বন্দি,
তার নাম অভিমান কিছুতেই ভুলতে পারছিনা সেই দিন।
এখনও আমি তোমায় খুঁজি ঐ নীল আকাশে আড়ালে,
আমাকে ছেড়ে যদি চলে যাবে তবে কেনো এসেছিলে !
আজ তুমি যেথায় থাকো ভালো থেকো এই করি কামনা,
আমার অভিমান পাথরের খাঁয়াচ পায় কত বেদনা !
বসন্তের বাতাস কতদিন কাঁদবে আর কোকিলার সুর বিণে,
হৃদয় দিয়ে তৈরী সেই লাল গোলাপের নিবেদনে !
আজোও বেঁচে আছি শুধু তোমার প্রেমের স্মৃতিতে ,
তোমার চোখের ক্যানভাসে আমার মনে ছবি আঁকে !
তোমাকে নিয়ে সুখের ঘর বাঁধর সাধ ছিল গোপনে,
তাই তিলে তিলে প্রাসাদ গড়েছি কুয়াশার অন্তরালে ,
প্রভাতে সমিকরণ থমকে দাঁড়ায় তোমার ঐ হাসিতে ,
আমাদের মিলন ঘটুক চিরকাল অভিমানের খাঁচা যাবে খুলে !






লক্ষ  লক্ষ  মানুষ  খাদ্য চায়....
চিত্তরঞ্জন  দেবভূতি

দেশে  দেশে  ক্ষুধিত  মানুষ  সবার  আগে  অন্ন  চায়,
লক্ষ  লক্ষ   মানুষের  ঘরে  খাদ্য  নেই,
সেদিকে  চোখ  আর  কাদের  কখন  যায়?

পাহাড়  থেকে  সাগর  অবধি  কতশত ক্ষুধিত  নরনারী,
ভদ্র  লোকের  পোষাক  পড়ে, বড়  কোনো  পদে  থেকে,
তাঁরা  ছলেবলে আর কৌশলে  সরকারী  টাকা  করে  না  চুরি!
গরীব  শ্রমিক  মজুরদের  শোষণ  করে,  করছে  বাবুগিরি ও বাহাদুরী,
কথায়  কথায়  আমরা  যাঁরা  ভয়  ও  ভক্তিতে 
প্রনাম  করি,
তাঁদের  ভূমিকা  কেমন  আজ?
ভাবলে  পড়ে  অবাক  হই,
মানুষের  পাশে  দাঁড়াতে  না  পারলে,তবে  আমরা  তেমন  মানুষ—ই  নই!

রাষ্ট্রনায়কদের  বিশ্বজুরে  চোখ  খুলে  যাক,
দেশে  দেশে  ক্ষুধিত  মানুষ  ঘরে  ঘরে  সবাই  বাঁচার  মতো  খাদ্য  পাক৷





ঘুম আসেনা
উমর ফারুক

ঘুম আসেনা শীত কাটে না
দিনের বেলা  বেজায় ঘুম
রাতের বেলা লাগে ধুম
বেড়াল ছানা দিচ্ছে হানা
ইঁদুর ধরে খুব ঝপাঝপ
শিশির ঝরে টপ টপা টপ
ভূত তাড়াতে হাতটা মুখে 
ভয় পেতে গায় ভগ্ন সুরে
গান গুলো তাই ছন্দ ছুঁড়ে।
যেথায় ঘুমোই বালিশ চাপা
শীত নিবারনে বাড়ছে কাঁপা
জানালা খুলে বাতাস ভারী
ঝুলছে একি লম্বা দাড়ি!
সাদা চুলের মুঠটি খোল
বলছে কেহ আস্তে চলো।
শীত বুড়া এক পাকা দাড়ির
লোকটি নাকি মেঘের বাড়ির ।
তাই দেখে মোর ঘুম কি আসে
একলা মাথায় পদ্য ভাসে
আগুন জ্বালো উম হতে চাই
ঘুম টা আসুক মানুষ তো সে!





আমরাও মানুষ
বিপ্লব গোস্বামী

নাইবা আমরা  ডিগ্ৰিধারী
নাইবা তোদের মতো লক্ষপতি,
তবুও আমরা মানুষ ভাই
তোদের বাবা কাকারই জাতি।
হয়তো কারো পিতা পুত্র
নয়তো কারো মামা কাকা
না হয় হয়তো কারো জ্ঞাতি।

হয়তো মোদের তোদের মতো
মান খ‍্যাতি যশ নাই,
তবু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে
তোদের অন্ন যোগাই ভাই।
তোদের মুখের গ্ৰাস যোগাতে
বড় তৃপ্তি লাগে ভাই,
তবু ভদ্র লোকের সভ‍্য সভায়
নেইতো মোদের ঠাঁই।




ওরা‌ আসছে
    আব্দুল রাহাজ

ওহে বামি রুহি  ওরা
আসছে ওরা আসছে
অন্য দেশান্তর থেকে
সবকিছু জয় নিয়ে যাবে রে ।
চল চল চল মোরা ঐক্য
গড়ি
ঐক্য ছাড়া আমাদের সম্বল নাই
তাই ঐক্য চাই ‌ঐক্য চাই
ঐক্য ছাড়া ‌মোদের কিছু নাই।
সব ভেদাভেদ ভুলে আয় ওদের আটকায়
নাইলে পড়ে ভিটেমাটি‌ হাতছাড়া হবে রে ভাই।








বাজার
  বদরুদ্দোজা শেখু


ওইখানে অনেকদিন সন্ধ্যায় দাঁড়িয়েছি
বিচিত্র নরনারী কৌতুহলে দেখেছি খ

দেখেছি পরিচ্ছদ রূপ  রঙ ডিজাইন
আর্থিক ডামাডোলে কত সব শৌখিন

প্যান্ট শার্ট শেমিজের ছাঁটফাঁট ঢিলেঢোলা
ম্যাক্সি মিডির ঢলে বুক পেট ঊরু খোলা

এলোমেলো সাজগোজে মাখনের মতো দেহ
বড়ো বেশী কামাতুর ----- চোখে বাজে সন্দেহ ,

পানীয়ের স্টলে ওরা বড়ো বেশী উচ্ছ্বল
কথ্য ইংরেজীতে করে কূট কোলাহল ।

পথচারীদের পানে হানে তির্যক শ্লেষ ,
বাজার যেন ওদের অবাধ উপনিবেশ ।

ভাড়া-দেওয়া গ্রণ্থের দোকানে ওদের ভিড়
জেমস্ হ্যাডলী চেজ ক্রেজটা ইত্যাদির ।

অদ্ভুত ব'নে গেছে অনভ্যস্ত চোখ
যা ইচ্ছে বই মেলে যত অশ্লীল হোক ,

আড়াল কাম-কলার যেন তা প্রকট ঢেউ
চোখে চোখে ঘুরে চাপা যৌন-ক্ষুধার ফেউ ।

কেউ কি দাঁড়িয়ে ঠায় আলো-আঁধারির মোড়ে ?
অচেনা মনের খোঁজে অজানা ভিড়ের দৌড়ে ?

বাজার হাউজ খাস সাঁঝ রাতেই সরগরমছ
ইচ্ছের মোচ্ছব হবে অবাধ কমসেকম  ।

কেউ কি দাঁড়িয়ে ঠায় আলো-আঁধারির মোড়ে ?
অচেনা মনের খোঁজে অজানা ভিড়ের তোড়ে ?




প্রথম প্রেম
সমীরণ বেরা

তুমি চেয়েছিলে বলেই আমি
ভালোবেসে ছিলাম অন্ধের মত
তখন আকাশ দেখিনি
ছুঁয়ে দেখিনি চাঁদের আলো।

কত অন্ধকার কেটে তবে চাঁদ আসে
ভুলে বসেছিলাম অমাবস্যা বলে কাকে!
চারদিক আলো শুধু আলোয় ভাসে
এখন কারা যেন মুচকি হাসে।

কত হৃদ স্পন্দন ওঠা নামার পর
ভিজে ওষ্ঠ নিবিড় শরীর তোমার
তাই বলে কি সহজে ছোঁয়া যায়?

কত বার ভেবে ভেবে সারা রাত
তোমাকে ছোঁওয়া হল না আর
মাঝ দুপুরে ঘুম ভেঙে যায়
ভেঙে যাওয়া প্রথম প্রেম - কী দুর্নিবার!!

তোমার চোখে আর কালো চুলের আঁধারে
আমি নিজেকে হারিয়ে
তুমিময় পৃথিবীর শিকড় টানে সব একাকার
নিজেকে রিক্ত বিধ্বস্ত বলে মনে হয়
তখন শুধু দুটি আঁখি জেগে থাকে
এক দিন দেখা হবে নিশ্চয়।




প্রবন্ধ
ভালো গল্প লিখতে গেলে
   - অগ্নিমিত্র

সার্থক গল্প লিখতে গেলে আগে ভালো গল্পের বইয়ের পাঠক হতে হবে। ছোটবেলা থেকেই যদি গল্পের বই পড়ার অভ্যাসটা থাকে তবে তো আরো ভালো। আর লেখা অভ্যাস করতে হবে শুরু থেকেই। বিদ্যালয়ে রচনা বা ভাবসম্প্রসারণ , এগুলো লিখতে গেলে তো আমাদের মৌলিক লেখার একটু অনুশীলন হয়ই। সেটাই আরো মন থেকে ভালোবেসে করতে হবে ।
  লেখককে ধৈর্যশীল হতে হবে । প্রথমে দু তিনটি লেখা হয়তো ভালো হবে না । বন্ধু বা মা-বাবা- দিদাকে পড়ে শোনানো যায়। তাঁরা যা উপদেশ দেবেন লেখা আরো উন্নত করার জন্য, সেগুলো মেনে চলা যেতে পারে । তবে তাঁরা এবিষয়ে নিরুৎসাহ করলে মুশকিল !.. তাই বাড়িতে সাহিত্যের পরিবেশ থাকলে খুব ভালো হয়। তাহলে গল্প লেখকের কাজ খানিকটা সহজ হয়ে যায় ।
  গল্প লেখা খুব সোজা কাজ নয়। বানান, ব্যাকরণ, এগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। লিখনশৈলী তৈরী হবে সময়ের সাথে সাথে, লিখতে লিখতে ।
  একেকজন এক এক রকম গল্প লিখতে পারঙ্গম; যেমন কেউ উপন্যাস ভালো লেখেন । কেউ আবার ছোটগল্প ও অনুগল্প ভালো লেখেন। সেই দিকেই আরো এগিয়ে যেতে হবে । নিজের কোন দিকে ঝোঁক আছে বা কোনটা ভালো লিখতে পারছেন সেটা লিখতে লিখতেই বুঝতে পারা যায় ।..
  লিখতে শুরু করার পর পাঠক কী চাইছেন বা কীরকম পরিণতি আশা করছেন, সেটাও একটু আঁচ করা দরকার । লেখা তবে আরো মনোগ্রাহী হবে। পাঠক যেন বিরক্ত না হয়ে পড়ে । তবে সব সময়ে পাঠকের মন যুগিয়েই লিখতে হবে এমন কোন কথা নেই।।..





মর্যাদা
অঞ্জলি দে নন্দী, মম

বউ থাকতে বৌয়ের মর্যাদা দিন।
কাটবে তবেই বার্ধক্যে সুখে দিন।
আপনার আজকের অবহেলা
বার্ধক্যে সিক্ত করবে সারা বেলা।
আপনার করা আজকের অপমান
তখন জীবনে আনবে অনুতাপের লোকসান।
পুরুষ তো আপনি বটেই
তার সাথে মনুষ্যত্বেরও অধিকারী।
এ হেন নিচতা আপনাকে শোভা পায় না মোটেই।
আপনার মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা -
সকলেই নয় কি জাতে একই সে নারী?
তারা কী নয় সত্যই অগ্রগণ‍্যা ?
পত্নীকে করুন যথাযথ সম্মান!
তাতেই বাড়বে আপনার আপন মান।
এ-ই প্রাপ্য তারই।
তার হার আপনার নিজের হারই।
তার জয় আপনারই জয়।
প্রসারিত করুন তার প্রতি হৃদয়!





সেই কবি মেয়েকে ...
     অনিন্দ্য পাল
=========================
তোমার কথা শুনে শব্দরা নিরিবিলি শান্ত
কলমকে বানিয়েছ বাধ্য অনুচর
বাস্তব মিশে গেছে অধিবাস্তবের গুহামুখে
তোমার চোখে চাঁদ, ঠোঁটে কবিতা-প্রহর ...

নিরাশ্রয় মন পংক্তি খুঁজে খুঁজে ঘর পায়
সর্বস্ব রেখে দেয় যতি চিহ্নের আড়ালে
কখনো সখনো উঁকি দিয়ে মগ্ন বিধুরতা
কবিতা ছুঁয়ে থাকি, মধ্যযাম পেরোলে...

ডুবুরি হই যদি কোন দিন কোন কালে
সমুদ্র বুদবুদে ডুব দিয়ে পৌঁছাবো কবিতার দেশে
শব্দের জালে সঁপে দেবো তোমার দোয়াতে
দেখো, কিভাবে কবিতা কবিতায় শর্তহীন মেশে।