গলপ
ভালোবাসার মান অভিমান
অনাদি মুখার্জি
আকাশটা আজ বড্ড অভিমানী, সে তার অভিমানে জানান দিচ্ছে , দমকা হাওয়া আর অঝোর ধারা বৃষ্টি তে !
৭০ বছরের অমল বাবু মোটা ফ্রেমের চশমার কাঁচে বারবার সিক্ত হচছে সেই বৃষ্টি ফোঁটায় !
কিন্তু সেই দিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ,ঝাপসা কাঁচের
আভাতে তার মনে কোনে জমে থাকা পুরানো স্মৃতি গুলো মনে পড়ে !
চল্লিশ বছর আগে কথা ,সেই তখন তরুণ যুবক ছিলো কলেজের পড়তো তখন পরমা সাথে পরিচয় হয় ! মনে পড়ে সেই দিন ও এইরকম বৃষ্টি পড়ছিলো সেই বৃষ্টি তে ভিজে যাচ্ছিলো। কলেজ ,রাস্তায় মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে শিমুল গাছের তলায় পরমা ! পরমা কে দেখে অমল ও সেই খানে দাঁড়ালো , পরমা তখন বললো কি হল খুব বৃষ্টি তে ভিজে ভিজে কলেজ যাচ্ছো! অমল মুচকি হেসে বললো অনেক দিন এই বৃষ্টিতে ভিজিনি তাই বলে পরমা কেও এই বৃষ্টি মধ্যেই টেনে আনলো ,পরমা বললো কি যে করো খুব জ্বালাতন করো বলে সেই দিন ও আর পরমা খুব ভিজেছে ! তাই আজো ও মনে হয় এই বৃষ্টিতে ভিজে নিজের মান অভিমান গুলো মুঝে ফেলতে !
কি গো শুনছো ? সেই কখোন থেকে বৃষ্টির মধ্যেই আছো ,পরে যখন জ্বর আসবে তখন কার ধকল যাবে শুনি ! খুব জ্বালাও তুমি ! অমলবাবু বৌয়ের পরমা কথা শুনে মুচকি হাসে আর বলে তোমাকে জালাতে খুব ভালো লাগে তাতে করে তোমার মুখ খানি আরো ভালো লাগে ! পরমা বলে আর পারি না বাপু !
পরমা নামে মানুষটি সাথে ৫০ বছরের পরিচয় ও সংসার করছে ,পরমা কে সংসারে সব দায়িত্ব দিয়েছে কিন্তু তার মনের কথা বোঝার চেষ্টা করেনি আজো তাই আজ সেই অভিমান নিয়ে অমলবাবু ব'য়ে বেড়াছে !
আবার পরমা বললো কি গো বাবু তোমার পাঞ্জাবি টা ভিজে গেছে ঘরে এসে ছেড়ে নাও ,তোমার টেবিলে চা ও জল খাবার দেওয়া হলো খেয়ে নাও ! সত্যিই এই পরমা তার কত খেয়াল রাখে ,বলে অমলবাবু ঘরে এসে পাঞ্জাবি ছেড়ে জলখাবার খেতে বসে !
অমলবাবু পেশায় ছিলেন শিক্ষক ,সময়ের নিয়মে রিটায়ার করেছে ,কিন্তু তার গল্পের বই পড়া নেশা কমেনি ,চাকরির অবস্থায় যেমন বই পড়তে ভালো বাসতেন আজো ও তার বই পড়ার নেশা কমেনি ! জীবনের এই দুটি ছাড়া আর কিছুই করেননি ,সব দুই হাতে সামলেছে পরমা ! ছেলে মানুষ করা ,তাকে খাবার খাইয়ে সঠিক সময়ে স্কুলে পাঠানো ,বাজার করা ,ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসা,আবার নিজের মতোন করে ছেলের জন্য একটা বৌ পছন্দ করে বাড়িতে আনা !
কাল অমলবাবু তার পুরোনো বই গুলো বের করতে গিয়ে দেখে তার মধ্যেই একটি নীল রঙের ডায়েরি পান ,সেই ডায়েরি পাতা খুলে দেখে লেখা আছে পরমা মনের কথা ! আগে জানতো না অমলবাবু যে পরমাও ডায়েরি লেখে ,সেই ডায়েরি টা পড়ে অমলবাবু চোখের জল আসে আর তাতে তার অভিমানী মন হয়ে উঠে ! আজ আবার ঐ ডায়েরি টা পড়বে তাই জলখাবার খেয়ে ঐ ডায়েরি টা নিয়ে শুয়ে পড়তে থাকে !
অমলবাবু এই ডায়েরি টা মধ্যেই গল্প টা পড়তে ভালোই লাগছিল পুরোনো দিনের কথা সব কিছু লেখা আছে কিন্তু ডায়েরি পাতা যত শেষ হতে থাকে তত অমলবাবু মন খারাপ হতে থাকে ,এক জায়গাতে পরমা লিখেছে যে মানুষ টা সাথে এতদিন ঘর করলাম সেই মানুষ টা আমার মনের কথা বুঝতে পারেনি ! পরমা লিখেছে একদিন বাজার থেকে ভালো নীল রঙের শাড়ি এনে আমাকে দেখালো তখন আমি বললাম এইটা বুঝি আমার জন্য তখন ঐ মানুষ টা বলে না আমার বন্ধুর স্ত্রীর জন্ম দিন তাই তাকে দেব বলে আনলাম ! ঐ মানুষ টা আমাকে সব দায়িত্ব দিয়ে ছে বলে কি আমার সব সুখ মেটে ! আমার তো ইচ্ছে হয় ঐ মানুষ টা আমাকে কোনোদিন বললো না পরমা চলো আজ পুজোর তোমার শাড়ি বাজার করি ,বা কোনোদিন হাতে করে এনে বললো না পরমা এই টা তোমার জন্যই আনলাম ! প্রতিটা বউ চাই তার স্বামী সাথে একটু ঘুরতে যাওয়া বাজার করা আনন্দ আলাদা ,কিন্তু ঐ মানুষ টা কোনো দিন তাকে একটু ও ঘুরতে নিয়ে কোথাও যাই নি ! এই দুঃখ টা আমার রয়ে গেলো মনে আজো এই ইচ্ছে পূরণ হলো না ! এই লাইন গুলো পড়ে অমলবাবু মন সত্যিই অভিমানে ভ'রে গেলো !
অমলবাবু আজ বুঝলেন পাশাপাশি একসাথে থাকলেও মানুষের মন কতটা দুরে থাকতে পারে !
তাই অমলবাবু তাদের বাড়ির কাজের লোক রঘু কে ডেকে টাকা দিয়ে সব বুঝিয়ে দিলেন ,রঘু চলে যেতে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন !
কি গো কি হল চলো খেয়ে নেবে এইবার দরজটা খোলো বললেন পরমা , অমলবাবু দরজা খুলে পরমাদেবীকে সামনে পেয়ে তার হাতে নতুন প্যাকেট মোড়া দুটি জামদানি নীল রঙের শাড়ি দিয়ে বললেন এই টা তোমার জন্য ,আজ বিকেলে এই শাড়ি টা পরবে আর আমার সাথে বাজারে যাবে ! এই কথা শুনে পরমা খানিকটা লজ্জা পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে তার বৌমা দাঁড়িয়ে আছে ! ছেলের বৌমা দেখে অমলবাবু বললেন বৌমা আজ আমি আর তোমার শাশুড়ি মা বাইরে রেষ্টুরেন্টে খাবো আর বিকেলেপার্কে গিয়ে একটু গল্প করবো ! এই কথা শোনার পর পরমা তার মনের মানুষ টা দেখে আর ভাবে সত্যিই মানুষ টা খুব ভালো আমি চাই না কিছু শুধু একটু ভালো বাসার পরশ চাই তাতে আমার অভিমান দুর হয় ! বলে পরমা অমলবাবু কে টেনে নিয়ে গেলো খাবার খাওয়াতে ! অমলবাবু ও বুঝলেন ভালো বাসা দিলে হয় না তার মনের ইচ্ছে গুলো চেনা দরকার !
0 comments: