সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

Bangla golpo Somoyer opekha by Anadi Mukherjee

 সময়ের অপেক্ষা 

           গল্প

কলমে,,,অনাদি মুখার্জি 


প্রেমের পড়ার কোনো দিনক্ষণ

ঠিক হয়না ! কে বা কাকে কখোন ভালো লেগে যাবে তা বলা যাই না ! সেই রকমই মালা আর সমুর প্রেম ,তারা একে অপরের প্রতি কথা ও চোখের ইশারায় কথা হয় কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারছে না ! 

মালার এক বন্ধু সুজাতা জন্ম দিনের পার্টি তে সুজাতার মামাতো দাদা সমুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সুজাতা ! বেশ  হ্যান্ডসাম ছেলে চোখে সুন্দর ফ্রেমের চশমা পরে আছে ! প্রথম দেখাতে ভালো লেগেছে মালার ! সেই দিন সুজাতা জন্ম দিনে অনেক রাত হয়ে গেসলো ,তাই সেই দিন মালা সুজাতা কে বললো এই অনেক রাত হলো ,আমি তো একা যেতে পারবো না ! সুজাতা বললো নো প্রবলেম আমার দাদা আছে তো তোকে  বাড়ি পৌঁছে দেবে এই বলে সমু কে ডেকে এনে পরিচয় করিয়ে বলে যা তুই আমার দাদার সাথে ! মালা বাড়ি কাছে এসে নেমে পড়ে আর বলে থ্যাংক ! সমু বলে আমাকে থ্যাংকস বলে লাভ নেই কারন তোমাকে আমি চিনি না ! মালা তখন বলে তবে তোমার গাড়িটা কে ধন্যবাদ বলি যে আমাকে এত রাতে বাড়ি পৌঁছে দিল ! সমু বলে তোমার বন্ধু বলে মনে করো আমাকে তা হলে চলবে বলে সমু চলে গেল ! মালা অনেকক্ষণ তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে বনধু আমার তুমি ভালো থেকো ! ঠিক কিছু দিন পর সুজাতা ও তার বন্ধুরা  প্ল্যান করলো অনেক দিন হলো বাংলা সিনেমা দেখতে যাবে ,জীত ও প্রিয়াঙ্কা সাথী ছবি নাকি খুব ভালো ছবি তাই তারা দেখতে যাবে ,মালাও রাজি কিন্তু সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে দেখে হাউসফুল টিকিট শেষ হয়ে গেছে কি আর করা যাবে ! সুজাতা বললো দ্বারা আমি সমু দা কে বলে কোনো  ব্যাবস্থা করতে পারি কি না ! এই বলে সমু কে ফোনে বলতে সমু সাথেই সাথেই টিকিট নিয়ে হাজির ! মালা বললো আরে বেশ তো হাউস ফুলের মধ্যেই টিকিট পেয়ে গেলে ! সমু বললো আরে ওসব হাতের ময়লা যতই হাউস ফুল থাক ! মালা হাসতে হাসতে বলে খুব বাহাদুর তো তুমি ! বলে টিকিট নিয়ে হলেই ঢুকে পড়লো ! এই ভাবে মালার সাথে সমু কত কথা আদান প্রদান হতে লাগলো ,মাঝে মাঝেই সমু মালা কে নিয়ে ফুচকা ,বিরিয়ানী খেতো আর গল্প করতো ! দুজনের মধ্যেই এমন ভাব হলো যে দুজনেই দুজনকে ছাড়া থাকতে পারতো না ! একদিন সুজাতা বললো মালাকে তুই তো ভালোই  প্রেম করছিস কিন্তু আমার দাদা কে ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দিস না ! মালা বললো আরে সমু তো কিছু বলে না এমন ভাব করে বলেদিলে তো হয় ! সুজাতা বলে তুই বল আগে সমু তোর জন্য ই পাগল আমার কাছে তোর কত নাম করে ! মালা বলে কি বলবো শুনি ! সুজাতা বলে উঠে  কেনো আই এল ইউ বলে দিলে হয় ! সমু আবার আই এল ইউ মানে বুঝে না ! 

একদিন সুজাতা ও তার বনধু রা ঠিক করলো আজ তো ৮ ই ফেব্রুয়ারি নাকি পোপজ ডে এই উপলক্ষে মালা ও সমু কে কাছে এনে তাদের সম্পর্ক টা পরিস্কার করে দিতে চাই !

 মালা ও ভাবে আজ একটা খোলামেলা আলোচনা করে আসবো সমুর সাথে ,কিন্তু যখনই সমুর সামনে আসে তখনই সব ভুলে যায় সমুর মুখে মিষ্টি হাসি দেখে ! তারা কতবার দুই জনে একটা ফাঁকা জায়গা বসে কত গল্প হয় মাঝে মাঝেই সমুর হাত মালার শরীরের ছোঁয়া লেগে যায় তবুও সমু বলে না মালা আমি তোমাকে ভালোবাসি ! শুধু এই কথাটা শোনার জন্যে ই মালা অপেক্ষা করছে ! একদিন মালা বলেছিল আচছা সমু তোমার আমার কথা তুমি ভাবো ? সমু বললো হুম ভাবি বলে তো তোমাকে ডাকি আমি ! মালা বলেছিল কেনো ভাবো ? সমু সপাটে জবাব দিল ভালো লাগে তাই ভাবি ! সেই দিন খুব ইচছে করছিল মালার সমু কে বলে ফেলি আমি ও তোমাকে চাই তোমার বুকে আমাকে জড়িয়ে রাখো ! কিন্তু মালা নিজেকে সংযতো রেখেছে ! 

এইসব ভাবতেই ভাবতেই সুজাতা র ফোন এলো ! সুজাতা কথা মতোন মালা সেই দিন বিকেলে ওদের সাথে গঙ্গার ঘাটের কাছে দেখা করলো ! সেই খানে সমু ও আছে ,সমু কে দেখে মালা মন অস্থির হয়ে উঠলো কিছু কথা বলার জন্য ,দুই জন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ! যে সময় টা এতদিন ধরে অপেক্ষা করছিল সেই সময়টা বোধহয় আজ এসেছে বলার ,কিন্তু কখোন বলবে সেই কথা ! মালা ও সমু কাছে আসতে সুজাতা ও তার বন্ধুরা সব দূরে সরে গেল ! মালা বললো তুমি কখোন এলে কিছু কি বলবে ! সমু তখন পিছন থেকে হাতে রাখা লাল গোলাপ ফুল দিয়ে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বললো এই ফুল তোমার জন্য ই , আমি তোমাকে ভালোবাসি মালা ,তুমি আমার ! মালার কানে তখন মধু বর্ষণ করছিল  ,বার বার তার কানে

আওয়াজ শুনতে পাচছে একটাই আমি তোমাকে ভালোবাসি ! যে কথাটা শোনার জন্য ই এতদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে ,আজ শোনার পর মালার মুখখানি রক্তিম আভা হয়ে উঠেছে লজ্জায় ! তবুও সেই সমুর হাত থেকে লাল গোলাপ নিয়ে বললো আমি যে শুধু তোমার ! 

তোমার প্রপোজ আমি নিলাম ! দূর থেকে সুজাতা হাততালি দিয়ে বললো হ‍্যাপি প্রপোজ ডে ভালো থাকিস তোরা দুই জনে !

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০

মদন ঠাকুর গলপ কলমে,,,অনাদি মুখার্জি

মদন ঠাকুর   গলপ  কলমে,,,অনাদি মুখার্জি

 মদন ঠাকুর 
     গলপ 
কলমে,,,অনাদি মুখার্জি
 


পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে ,যে কোন লোককে শুধালে বলে দেবে মদন ঠাকুরের বাড়ির ঠিকানা ! মুনসেফ ডাঙগা হরিসভা মোড়ে যে রাস্তা টা নেমে গেছে  সেই খানে তার বাড়ি ! এই মুনসেফ ডাঙগা চত্বরের একটা ও পুরোহিত ঠাকুর পাওয়া যাবে না শুধু ঐ দুইজনকে ছাড়া ,এক সাধন ঠাকুর আর মদন ঠাকুর ! সবাই কার বাড়িতে পূজো অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে মদন ঠাকুরের ! খুবই ভক্তি সহকারে পূছো করেন ! খুবই ধার্মিক মানুষ ,যার বাড়িতে যায় পূজো করতে কিন্তু দক্ষিণা বলতে শুধু জল বাতাসা পেলে খুবই খুশি ! আমি একদিন বললাম মদন ঠাকুর তুমি তো পূজো খুব সুন্দর করো কিন্তু দান দক্ষিণা তো কিছুই নাও না তোমার সংসার চলে কি রকম ! হাসতে হাসতে বলে ভগবান তো আমাকে দুই বেলা ঠিক খাবারের জোগাড় দেয় আর কি চায় ! 

কথাটা মদন ঠাকুর মন্দ বলেনি পরে আমি তা বুঝলাম , মদন ঠাকুর কত বড়ো মনের মানুষ যেদিন আমি দেখলাম নিজের চোখে !

বেনুপালের ছেলে কে সাপে ছোবল মেরেছে ,তাই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো ,ডাক্তার সাহেব সব দেখে বললেন সাপের বিষ সেই ভয়ংকর বাঁচার আশা একদম নেই সব উপরবালার হাত ! তা শুনে তো বেনুর বউ খুবই কান্নাকাটি জুড়ে দিল ! ডাক্তার সাহেব বললো একটা ইনজেকশন লিখে দিচছি খুব দাম তবে দোকান থেকে কিনে আন এখুনি দিলে মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে বলে ডাক্তার সাহেব লিখে দিল ! বেনুপালের অবস্থা ভালো নয় এখুনি লাগবে দামি ইনজেকশন কি করবে ভেবে পারছে না ! দোকানে গিয়ে শুধায় কত দাম ইনজেকশনের ? দোকান দার বললো একটা দাম একহাজার টাকা এত দাম শুনে চিন্তায় পড়লো ! কে একজন বললো বেনু একবার মদন ঠাকুর কে খবর দিলে হয় না ! কেন মদন কি করবে ? সেই তো পূজো নিয়ে ব্যাস্ত থাকে সেই কি আর ডাক্তার বিদ‍্যা জানবে ! সবাই যখন বলছে তখন বেনু তার ছেলেকে নিয়ে মদন ঠাকুরের বাড়িতে গেল ! সেই সরু গলি ভেতরের একচালা বাড়ি মদন ঠাকুরের সেই খানে গিয়ে হাজির বেনু ! মদন ঠাকুর সব কিছু দেখে শুনে তার ছেলে মুখে কি যেন দুই এক ফোঁটা ঔষধ খাওয়াতে বেনুর ছেলে উঠে পড়লো তা দেখে তো সবাই অবাক হয়ে উঠলো জয় মদন ঠাকুরের জয় সবাই তখন বলতে লাগলো ! বেনু তখন মদন ঠাকুরের পা ধরে  কাঁদতে কাঁদতে বললো সত্যিই ঠাকুর তুমি আমার ছেলেকে বাঁচালে বলে তার হাতে পাঁচশ টাকা দিতে গেসলো ,সেই টাকা দেখে মদন ঠাকুর বলে উঠলো আমি টাকা নিয়ে কি করবো যা এই টাকা দিয়ে তুই তাদের জন্য খাবার কিনে দিলে আমি খুশি ,যারা ফুটপাতে বসে থাকে অনাহারে দিন কাটায় ,তাদের হাতে দিলে তোর ছেলের মঙ্গল হবে ! আমি তো সব দেখে অবাক হয় যখন সবাই চলে গেলো আমি তখন মদন ঠাকুর কে বললাম তুমি তো ভালোই বিদ‍্যা জানো ,তুমি এই করে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারো তবে কি জুড়ি বুটি খাওয়ালে যে বেনুপালের ছেলে ঠিক হয়ে গেলো ! সব শুনে বললাম সত্যিই তোমার সাধনার শক্তি আছে কিন্তু টাকা টা তো নিতে পারতে এতে তোমার সংসারে লাভ হতো ! সেই হেসে বললো সব থেকে সুখী মানুষ কে বলতো ধনী না গরিব ! ধনীর টাকা আছে কিন্তু সেই কি সুখী তার দেহের কত রোগ অসুখ হচছে ,সেই ঠান্ডা গরম অনুভূতি পাচছে কিন্তু যে গরিব সেই দেখ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে সেই কিন্তু ঠান্ডা কি আর গরম কিছুই বুঝতে পারে না ,আর তার কোনো কঠিন রোগ হয় না সেই ঠিক হাসিমুখে থাকে বুঝলি কিছুই ! তাই টাকা টাকা করে কোন লাভ হয় না ,তার চেয়ে তোর মনটা রাখ বড়ো ঐ আকাশের মতোন ,,সবাই কে সমান চোখে দেখলে তবে দেখবি তোর ঠিক চলছে ! আমি বললাম সত্যিই তোমার নীড় ছোটো কিন্তু তোমার মন ঐ আকাশের মতোন বড়ো তাই তোমার যত কষ্ট আসুক না কেন সব কষ্ট যে তোমার কাছে হার মানে ! জীবনের যে যত সমস্যা য় পড়ুক না কেন , তোমার কাছে এলে তার সব সমস্যা সমাধান হবে ! সত্যিই তুমি মানুষ নয় তুমি মহামানব তাই তো তোমার মন ঐ আকাশের মতোন বড়ো !



সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০

গল্প সুখের সংসারের কালো ছায়া অনাদি মুখার্জি

 গল্প
সুখের সংসারের কালো ছায়া 
অনাদি  মুখার্জি



রামপুর  গ্রামের মতি মাস্টার  কে সবাই এক কথাতে চেনে ,তিনি ঐ  গ্রামের মাস্টার খুবই সরল মিশুকে ,এই জন্য তার কাজে অনেক ছাত্র প্রাইভেট টিউসানি পড়তে আসে ! মতি বাবু তাদের কে বিনাপয়সা পড়ান ,সেই সুবাদে তাকে সবাই ভালো বাসে ! মতি বাবু সুখের সংসার তার পরিবারের তার  বউ ,ও তার একমেয়ে এক ছেলে ,মেয়ে বড়ো নাম আলো ! মতি বাবুর মেয়ে ও খুব ভালো ,সেই বুভো বুড়ি ছোট্ট সবার সাথে শুধু বক বক করে আর মোবাইলে টুক করে সেলফি তুলে ,খুব হাসিখুশি একটা মিষ্টি মেয়ে ! বাপের মতোন তার ও মন খুব ভালো ! একদিন যখন আলো  স্কুলে যাচছিল ,পথের মধ্যেই দেখলো একটা মেয়ে কাঁদছে ,আলো তার সামনে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে ,মেয়েটি বললো সেই আজ  স্কুলে টাকা না দিলে সেই পরীক্ষা দিতে পারবে না ,তখন আলো তার টিফিনের পয়সা  বাঁচিয়ে জমানো টাকা থেকে ঐ মেয়ে টা হাতে দিয়ে বললো যাও এইবার ! মতি মাস্টারের সংসার সুন্দর এই ভাবে চলতে লাগলো ,ও একছেলে ও এক মেয়ে কে মানুষ করতে লাগলো ! আলো  স্কুল গন্ডি পেরিয়ে কলেজের ভর্তি হলো ,যতই বড়ো হচছে আলো দেখতেও তেমন সুন্দরী হয়ে উঠছে উপচেপড়া যৌবন আর সুন্দর চোখ  ঐ  গ্রামের সব ছেলেদের একটা নজর ঐ আলো তার চেয়াহা কথা বলা ও হাসি দেখলে সবার মন জুড়ে যায় ! একদিন আলোর মা মতি বাবু কে বললো মেয়ের জন্য একটা ছেলে দেখে আর রাখা যাবে না ,বিয়ে দিয়ে দিলে ভালো হয় ! এইদিকে আলো একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে এত দিন আলো কাউকে জানায় নি ! আলো খুব ভালো পড়াশোনা করতো এই জন‍্যই তার মাঝেমধ্যে মাথা ব‍্যাথা করতো ,আলো একটা সেরিডন খেয়ে সেই ব্যাথা কমিয়ে রাখতো ! কিন্তু যতদিন দিন বড়ো হচছে আলো তত এই  মাথাব্যথা বেড়ে চলছে ,প্রচন্ড মাথাব‍্যাথা করতো ,একদিন তো কলেজের মধ্যেই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে ফিট হয়ে গেসলো ,,তাই একদিন আলো ও তার এক বনধু ডাক্তারের কাজে গিয়েছিল এর কারন জানতে ,ডাক্তার সব কিছু দেখে একটি মাথার  স্ক্যান করে অবাক হয় ডাক্তার বাবু ! আলো জানতে চাই কি হয়েছে ডাক্তার বাবু ,ডাক্তার বললো মা তোমার ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে ,সাবধানে থাকো ! এই সব শুনে আলো খুব ভয় পায় ,জানে যার  ব্রেন ক্যান্সার হয় সেই বেশী দিন আর  বাঁচে না ! এইসব কিছু ই আলো তার পরিবারের লোকজন দের জানাই নি ! আলো ভাবছে সেই তো আর বেশী দিন নেই ,,সেই ও ঐ পরিবারের সুখ দেখে আর তার কথা বলে  দুঃখ প্রলেপ দিতে চাই না সেই ! একদিন আলো বাড়িতে খাবার খাওয়া সময় তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হয় ও সাথে সাথে বুক ধড়ফড় করতে থাকে ,সাথে সাথে ডাক্তারের কাজে নিয়ে যাওয়া হলো ,ডাক্তার সব কিছু দেখে বললো অনেক দেরি করে ফেলেছেন ওর  ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে ,অপরাশেন  না করলে হবে না !  বাড়ির লোক সবাই অবাক এই মেয়ে ব্রেন ক্যান্সার  এই কথা শোনা পর আলো মা সব সময়  কাঁন্না করছে ,আলোর মায়ের কাঁন্না দেখে তার বাবা মতি মাস্টার বলে ঐ আলো মা  এত চোখের জ্বল ফেলো না ,তোমার জ্বল দেখে আলোর মন ভেঙে যাবে ওকে সাহস দাও ,আমি আছি তো যেমন করে হোক আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে ! আলোর ভাবে সেই আর বেশী দিন নেই এই সব চিন্তা য় তার ও ঘুম নেই দিন দিন তার চেহারা ও খারাপ হয়ে গেলো ! মতি মাস্টার ও জানে এই সব রোগের খুব কম লোক বাঁচে ! তবুও সেই যেমন করে মন শক্ত করে আলো ও তার মায় কে বলে জানো আলো মা আমি কোনোদিন কাউকে খারাপ কিছু করেনি তবুও কেন ভগবান এত কষ্ট দিচছে ,বলে চোখের জ্বলে ভরে উঠে ! এই ভাবে একটা সুখের সংসারের এই ভাবে কালো ছায়া নেমে আসবে কে জানতো ! ডাক্তার বাবু একটা আশা দিয়েছে অপারেশন করলে ও ভালো হয় অনেক সময় ,তাই মতি বাবু অনেক ধার দেনা করে আলো কে হাসপাতালে ভর্তি করে অপারেশন করতে বললো ডাক্তার কে ! আলোর মায়েও মন খুব খারাপ চারদিন ধরে কোনো রান্না হয়েনি বাড়ির সবাই কেউ আর খেতে পারছে না এই আলো অবস্থা দেখে ,আলো সব সময় একই কথা বলছে মা আমার জন্য শুধু শুধু তুমি আর বাবা কষ্ট পাচছো আর তো আমি বেশি দিন নেই ,এই কথা শুনে মতি বাবু বলে মা আমি থাকতে তোকে হারতে দেবো ,আমার মেয়ে তুই জিতে আসবি ! শেষমেশ ডাক্তার অপারেশন করলো খুবই ভালো হয়েছে ,ডাক্তার কে দেখে আলোর ভাই ,বাবা ও মা উৎকণ্ঠা ভাবে শুধালো আমার মেয়ে কেমন আছে ! ডাক্তার হাসতে হাসতে বললো আপনার মেয়ের মনের জ্বর আছে সেই জন্য তার অপারেশন ভালো হয়েছে ! তিনদিন পর আপনার মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাবেন ! সেই কথা শুনে আলোর মা তার  স্বামি বুকে মাথা রেখে অঝোর কাঁন্নায় ভাসিয়ে বললো ওগো আমাদের  সংসার যে কুয়াশা ছিলো তা কেটে গেলো ! সুখের সংসারের যে শোকের ছায়া নেমে ছিল তা এখন আর নেই সেই শোক আকাশে মিলিয়ে গেলো !

শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০

গল্প শুরু থেকে শেষ অনাদি মুখার্জী

 গল্প

        শুরু থেকে শেষ 

        অনাদি মুখার্জি 


আজ আকশটা আছে মেঘলা,তার সাথে শিরশিরানি হাওয়া বয়ছে ! মনে হয় হালকা বৃষ্টি হবে ,বাগানের টবে ফুলের পাপড়ি গুলো ঝড়ের হাওয়া মাটিতে লুটিয়ে আছে ! ব‍্যালকনিতে  দাঁড়িয়ে এই সব দেখছে শুভ ! সেই কাজের ছুটি পেয়ে বাড়ি এসেছে অনেক দিন পর ভালো ই লাগছে ! হঠাৎ বাদরুমে দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে রিয়াকে তার বিয়ে করা বউ কে ! রিয়া সবে মাত্র স্নান করে বেরিয়েছে ,লাল গামজাটা ভিজে চুলের সাথে খোঁপায় জড়িয়ে আছে ! আটপৌরে শাড়ি ,অনাবৃত পিঠে জমে থাকা জল চিকচিক করছে যেনো মনে হয়  পদ্য পাতায় জমে থাকা শিশির বিন্দু মতোন ! কিছুক্ষণ পর শুভ গেলো দেখতে রিয়া কি করছে ? রিয়া এখন চোখ বন্ধ করে ঠাকুর কে ধূপ দেখাছে ,শুভ তার পাশে গিয়ে তাকে  স্পর্শ করতে রিয়া বলে উঠলো কি হচছে এইসব ভালো লাগে না ! পূজো শেষ হয়ে গেলে রিয়া বলে যাও আগে স্নান টা করে এসো ! তখন হঠাৎ শুভ রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে কতদিন পর এলাম একটু আদর করি ! রিয়া তখন শুভ কে বলে ছাড়ো রান্না করতে হবে ,শুভ বলে উঠে আজ রান্না করতে হবে না ,বাইরের রেস্টুরেন্টে খেয়ে নেব ! রিয়া বলে না তোমাকে তো বাইরে থাকতে হয় আর খাবার ও বাইরে খাও আজ এতদিন পর এলে ছেলে র সাথে একসাথে বাড়িতে খাও ! বলে রিয়া চলে গেলো ! রান্না ঘরে যাবার আগে শুভকে বলে গেলো যাও আমাদের ছেলে আকাশকে টিউশনি থেকে নিয়ে এসো ওর ছুটির সময় হয়েছে ! রান্না ঘরে এসে ভাবতে লাগলো শুভ তাকে ভালোবাসে তার শুধু শরীর কে ,তার মন বোঝার চেষ্টা করেনি ! বাড়িতে এসে শুধু নিজের কথা বলে যায় ,রিয়া ভাবে তার জীবন কি শুধু রান্না আর সংসার সামলানো এর বাইরে কোন জগত নেই যেখানে একটু ভালো বাসার শান্তি আসবে ! এই শুভর সাথে তার 10 বছরের বিবাহিত জীবন ,তাদের একমাত্র ছেলে আকাশের বয়স আজ ৭ তবুও রিয়া আজোও শুভকে তার বর হিসাবে মেনে নিতে পারছে না ! তার মনে পড়ছে তার কলেজ জীবনের ছাত্র অলোক কে ,সেই তো অলোক কে খুব ভালো বাসতো তারা একসাথে কত গান করেছে কলেজের ! সবাই তাদেরকে মানিক জোড় বলতো ! রিয়া ভাবে একমাত্র অলোক জানে তার মনের কথা ,তার কিছু হলে অলোক অস্থির হয়ে উঠতো ! এইসব ভাবতে ভাবতেই আকাশ এসে হাজির ! আকাশ এসে বললো মা এইদেখো তোমার জন্য ই আইসক্রিম নিয়ে আনলাম বলে তার মায়ের মুখে খাইয়ে দিতে লাগলো ! রিয়া বললো আকাশ তোর জন্য খাবার রেডি করলাম খেয়ে নে আগে ! আকাশ বললো তুমি খাইয়ে না দিলে খাবো না ,তাই বলে রিয়া আকাশ কে খাইয়ে দিতে লাগলো আর ভাবছে ঠিক যেনো অলকের মতোন স্বভাব পেয়েছে আকাশ ! অলোক ও এমনি করতো তাকে খাইয়ে না দিলে সেও কিছুইতে খেতো না ! 

রাতের বেলায় শুতে এসে দেখে শুভ ব‍্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে ,কিছু না বলে রিয়া তার বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলো ,কিছুক্ষণ পর এসে শুভ তার পাশে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেলো রিয়া তাকে ছাড়িয়ে বললো আর এই সব ভালো লাগে না ! কিন্তু শুভ শুনলো না সেই তাকে বলপূর্বক করে তার সুখ নিতে লাগলো ! সবকিছু হয়ে যাবার পর রিয়া কান্না এসে গেলো চোখে শুভর জন্য ! এই এক শুভর দোষ রিয়ার মন নেই তবু তাকে জোর করে কিছু করাটা একদম ভালো লাগে না ! সেই ভাবে অলোক হলো একমাত্র তার মনের মানুষ সেই ছাড়া আর কেউ তাকে সুখ দিতে পারে না !

পরের দিন সকালে শুভ দেখে রিয়া আপন মনে তার মোবাইলে কি যেন ছবি দেখছে ,শুভ এসে বললো তোমার মোবাইলে সব ছবি আমি ডিলিট করে দিয়েছি ,সরি রিয়া তোমাকে তা জানানো হয়নি আমার ! রিয়া জানে শুভ কে এই শুভ এমন একটা মানুষ তার পচছন্দের জিনিস তাকে রাখতে হবে ,রিয়া পচছন্দের জিনিস থাকবে না ,বিরাট একগুঁয়ে ছেলে শুভ ,এই টা রিয়া একদম মেনে নিতে পারেনি ,এইসবের জন্য রিয়া এখনো শুভ কে মন থেকে ভালো বাসতে পারেনি ! রিয়ার ও তো ব্যাক্তিগত ছবি রাখতে পারে কিন্তু না তা চলবে না ! 

কিছু দিন যাবার পর শুভ রিয়াকে বললো আকাশ কে তার ঠাকুমার বাড়িতে রেখে চলো আমরা একটু ঘুরতে যাওয়া যাক !  বলে শুভ রিয়া কে নিয়ে পুরুলিয়া অযোধ্যা পাহাড় দেখাতে নিয়ে গেলো ! সেই খানে গিয়ে হঠাৎ অলোকের সাথে দেখা রিয়া ! রিয়া অলোক কে দেখে বললো তুই এইখানে ! অলোক বললো শুভ আমাকে ফোন ক‍রে ডেকেছে কিসের আলোচনার জন্য ! অলোক বললো তুই এখন কেমন আছিস বল ! রিয়া বলে উঠলো না মরে  বেঁচে আছি ,কতদিন পর তোর সাথে দেখা চল ঐ পাহাড়ের ঘুরে আসি দুটো সেলফি তুলি তোর সাথে বলে রিয়া অলোকের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ! অনেক গলপ হলো ,হাসাহাসি হলো মন খুলে কথা হলো দুইজনের ! রাতে যখন হোটেলে এলো তখন শুভ বললো আয় বস অলোক অনেক দিন আমরা তিনজনে বসে খায় ,অলোক বলে উঠলো আচছা শুভ তুই আমাকে ডাকলি কেনো বলতো কিসের আলোচনা বল ! শুভ বললো বলবো আগে বল তোর কেমন লাগলো এইখানে এসে ! আসলে জানিস তো কেউ ভাবছে আমি কাউকে জোর করে বিয়ে করেছি হয়তো তার মনের কথা আমি বুঝতে পারছি না তাই তো সেই রোজ রাতে তার চোখের জল ফেলে ভাবে তার জীবনটা আমি নষ্ট করলাম ! তখন রিয়া বলে উঠলো কি বলতে চাইছো তুমি এই সব কথা এখন কেনো ! অলোক ও বলে উঠলো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ! তুই তো ভালো আছিস রিয়া কে সুখে রেখেছিস ! আর হুম রিয়া আমাকে শুভ সব বলেছে দেখ আমি তোকে বন্ধু মতোন ভালোবাসি ,আমার ভালোবাসাটা তুই তোর চোখে আমাকে তোর  প্রেমিক ভাবিস না ,হুম তোর দুবলতা আছে আমার উপর কিন্তু ঐ সব ভুলে যা ! কিছু কিছু জিনিস পরিবর্তন না হলে ভালো লাগে ,তুই আর আমি একই ভাবে বন্ধু হয়ে থাকবো সারাজীবন তুই শুভকে না হয় তোর  স্বামী  হয়ে থাকতে দে ! আমি বলেছিলাম শুভ কে তোকে বিয়ে করতে ! শুভ চায়নি তোকে তা কারন আমি তোকে মায়ের স্বাদ দিতে পারতাম না ! আমার কথা রাখতে গিয়ে শুভ তোকে বিয়ে করেছে সেই তোকে খুব ভালোবাসে ,হয়তো তুই জানিস না আমার সাথে শুভ রোজ কথা হয় আর আমি বলেছি তোর মোবাইল থেকে আমার ফোটো গুলো ডিলিট করতে তার কারন কি জানিস ? আমি চায় শুধু তোর মনের বন্ধু হতে ,এই সব শুনে রিয়া একবার শুভর দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে যে মানুষ টা কে একবার ও বলেনি তার মনে কথা ,সেই কি করে জানলো এইসব ! তার অলোক কে ভালো লাগে তাকে মনে ভাবে তার জন্য তার মন ছটফট করে ,তবে কি আজ সকালে আলোকে র সাথে পাহাড়ের গেসলো অনেক গলপ হলো এই সব শুভ জন্য ই তাকে খুশি র করার জন্য ই এইসব ! 

রিয়া এখন একা এইসব ভাবছে ,শুভ অলোক কে ছাড়তে গেছে ,কিছুক্ষণ পরে এলো শুভ তখন রিয়া নিজের থেকে শুভকে ধরে তার বুকে মাথা রাখলো ! কারুর মুখে কথা নেই কিন্তু মনের মধ্যেই অসংখ্য অনুভূতি কথা বলে গেলো ফিসফিসিয়ে ,শুধু শুভর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল এসে পড়লো রিয়ার গালের উপর ! ঠিক যেনো পদ্মপাতায় শিশিরের ফোটা পড়ে তা কেমন যেনো চকচক করে জ্বলে ওঠে সেই রকম রিয়ার গালে ঐ জলের স্পর্শ পেয়ে আগুনে র মতোন জ্বলে উঠল আর বলে উঠলো রিয়া যেখানে শেষ করে ছিলাম আজ তা শুরু করি বলে শুভ কে জড়িয়ে ধরে বললো আমাকে ভিজিয়ে দাও তোমার ঐ সুখ দিয়ে ! আবার আমরা  শুরু করি নতুন পথ চলার জীবনের ছন্দ !




বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০

গলপ ভালোবাসার মান অভিমান অনাদি মুখার্জি

 গলপ

ভালোবাসার মান অভিমান    

               অনাদি মুখার্জি 



আকাশটা আজ বড্ড অভিমানী, সে তার অভিমানে জানান দিচ্ছে , দমকা হাওয়া আর অঝোর ধারা বৃষ্টি তে ! 

৭০ বছরের অমল বাবু মোটা  ফ্রেমের চশমার কাঁচে বারবার  সিক্ত হচছে সেই বৃষ্টি ফোঁটায় !

কিন্তু সেই দিকে তার কোনো  ভ্রুক্ষেপ নেই ,ঝাপসা  কাঁচের 

আভাতে তার মনে কোনে জমে থাকা পুরানো স্মৃতি গুলো মনে পড়ে !

চল্লিশ বছর আগে কথা ,সেই তখন তরুণ যুবক ছিলো কলেজের পড়তো তখন পরমা সাথে পরিচয় হয় ! মনে পড়ে সেই দিন ও এইরকম বৃষ্টি পড়ছিলো সেই বৃষ্টি তে ভিজে যাচ্ছিলো। কলেজ ,রাস্তায় মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে শিমুল গাছের তলায় পরমা ! পরমা কে দেখে অমল ও সেই খানে দাঁড়ালো ,  পরমা তখন বললো কি হল খুব বৃষ্টি তে ভিজে ভিজে কলেজ যাচ্ছো! অমল মুচকি হেসে বললো অনেক দিন এই বৃষ্টিতে ভিজিনি তাই বলে পরমা কেও এই বৃষ্টি মধ্যেই টেনে আনলো ,পরমা বললো কি যে করো খুব জ্বালাতন করো বলে সেই দিন ও আর পরমা খুব ভিজেছে ! তাই আজো ও মনে হয় এই বৃষ্টিতে ভিজে নিজের মান অভিমান গুলো মুঝে ফেলতে !

কি গো শুনছো ? সেই কখোন থেকে বৃষ্টির মধ্যেই আছো ,পরে যখন  জ্বর আসবে তখন কার ধকল যাবে শুনি ! খুব জ্বালাও তুমি ! অমলবাবু বৌয়ের পরমা কথা শুনে মুচকি হাসে আর বলে তোমাকে জালাতে খুব ভালো লাগে তাতে করে তোমার মুখ খানি আরো ভালো লাগে ! পরমা বলে আর পারি না বাপু !

পরমা নামে মানুষটি সাথে ৫০ বছরের পরিচয় ও সংসার করছে ,পরমা কে  সংসারে সব দায়িত্ব দিয়েছে কিন্তু তার মনের কথা বোঝার চেষ্টা করেনি আজো তাই আজ সেই অভিমান নিয়ে অমলবাবু ব'য়ে বেড়াছে !

আবার পরমা বললো কি গো বাবু তোমার পাঞ্জাবি টা ভিজে গেছে ঘরে এসে ছেড়ে নাও ,তোমার টেবিলে চা ও জল খাবার দেওয়া হলো খেয়ে নাও ! সত্যিই এই পরমা তার কত খেয়াল রাখে ,বলে অমলবাবু ঘরে এসে  পাঞ্জাবি ছেড়ে জলখাবার খেতে বসে !

অমলবাবু পেশায় ছিলেন শিক্ষক ,সময়ের নিয়মে রিটায়ার করেছে ,কিন্তু তার গল্পের বই পড়া নেশা কমেনি ,চাকরির অবস্থায় যেমন বই পড়তে ভালো বাসতেন আজো ও তার বই পড়ার নেশা কমেনি ! জীবনের এই দুটি ছাড়া আর কিছুই করেননি ,সব দুই হাতে সামলেছে পরমা ! ছেলে মানুষ করা ,তাকে খাবার খাইয়ে সঠিক সময়ে  স্কুলে পাঠানো ,বাজার করা ,ছেলেকে  স্কুলে দিয়ে আসা,আবার নিজের মতোন করে ছেলের জন্য একটা বৌ পছন্দ করে বাড়িতে আনা ! 

কাল অমলবাবু তার পুরোনো বই গুলো বের করতে গিয়ে দেখে তার মধ্যেই একটি নীল রঙের ডায়েরি পান ,সেই ডায়েরি পাতা খুলে দেখে লেখা আছে পরমা মনের কথা ! আগে জানতো না অমলবাবু যে পরমাও ডায়েরি লেখে ,সেই ডায়েরি টা পড়ে অমলবাবু চোখের জল আসে আর তাতে তার অভিমানী মন হয়ে উঠে ! আজ আবার ঐ ডায়েরি টা পড়বে তাই জলখাবার খেয়ে ঐ ডায়েরি টা নিয়ে শুয়ে পড়তে থাকে !

অমলবাবু এই ডায়েরি টা মধ্যেই গল্প টা পড়তে ভালোই লাগছিল পুরোনো দিনের কথা সব কিছু লেখা আছে কিন্তু ডায়েরি পাতা যত শেষ হতে থাকে তত অমলবাবু মন খারাপ হতে থাকে ,এক জায়গাতে পরমা লিখেছে যে মানুষ টা সাথে এতদিন ঘর করলাম সেই মানুষ টা আমার মনের কথা বুঝতে পারেনি ! পরমা লিখেছে একদিন বাজার থেকে ভালো নীল রঙের শাড়ি এনে আমাকে দেখালো তখন আমি বললাম এইটা বুঝি আমার জন্য তখন ঐ মানুষ টা বলে না আমার বন্ধুর স্ত্রীর জন্ম দিন তাই তাকে দেব বলে আনলাম ! ঐ মানুষ টা আমাকে সব দায়িত্ব দিয়ে ছে বলে কি আমার সব সুখ মেটে ! আমার তো ইচ্ছে হয় ঐ মানুষ টা আমাকে কোনোদিন বললো না পরমা চলো আজ পুজোর তোমার শাড়ি বাজার  করি ,বা কোনোদিন হাতে করে এনে বললো না পরমা এই টা তোমার জন‍্যই আনলাম ! প্রতিটা বউ চাই তার স্বামী সাথে একটু ঘুরতে যাওয়া বাজার করা আনন্দ আলাদা ,কিন্তু ঐ মানুষ টা কোনো দিন তাকে একটু ও ঘুরতে নিয়ে কোথাও যাই নি ! এই দুঃখ টা আমার রয়ে গেলো মনে আজো এই ইচ্ছে পূরণ হলো না ! এই লাইন গুলো পড়ে অমলবাবু মন সত্যিই অভিমানে ভ'রে গেলো ! 

অমলবাবু আজ বুঝলেন পাশাপাশি একসাথে থাকলেও মানুষের মন কতটা দুরে থাকতে পারে !

তাই অমলবাবু তাদের বাড়ির কাজের লোক রঘু কে ডেকে টাকা দিয়ে সব বুঝিয়ে দিলেন ,রঘু চলে যেতে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন !

কি গো কি হল চলো খেয়ে নেবে এইবার দরজটা খোলো বললেন পরমা , অমলবাবু দরজা খুলে পরমাদেবীকে সামনে পেয়ে তার হাতে নতুন প্যাকেট মোড়া দুটি জামদানি নীল রঙের শাড়ি দিয়ে বললেন এই টা তোমার জন্য ,আজ বিকেলে এই শাড়ি টা পরবে আর আমার সাথে বাজারে যাবে ! এই কথা শুনে পরমা খানিকটা লজ্জা পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে তার বৌমা দাঁড়িয়ে আছে ! ছেলের বৌমা দেখে অমলবাবু বললেন বৌমা আজ আমি আর তোমার শাশুড়ি মা বাইরে রেষ্টুরেন্টে খাবো আর বিকেলেপার্কে গিয়ে একটু গল্প করবো ! এই কথা শোনার পর পরমা তার মনের মানুষ টা দেখে আর ভাবে সত্যিই মানুষ টা খুব ভালো আমি চাই না কিছু শুধু একটু ভালো বাসার পরশ চাই তাতে আমার অভিমান দুর হয় ! বলে পরমা অমলবাবু কে টেনে নিয়ে গেলো খাবার খাওয়াতে ! অমলবাবু ও বুঝলেন ভালো বাসা দিলে হয় না তার মনের ইচ্ছে গুলো চেনা দরকার !



মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০

গল্প প্ৰতারণার শিকার অনাদি মুখার্জি

গল্প  প্ৰতারণার শিকার   অনাদি মুখার্জি

গল্প

প্ৰতারণার শিকার     
    অনাদি মুখার্জি


বেশ কিছুদিন যাবৎ একটা ছেলে রিয়া ও তার বান্ধবীর  সোমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে ! কিন্তু রিয়া ভাবে কার দিকে তাকায় ছেলেটা ,তার দিকে না তার বান্ধবী সোমা দিকে ! কি চায় ছেলেটা ! প্রতিদিনের মতোন  সেইদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিল দুই বান্ধবী ,কিছুক্ষণ পর টের পেলো ঐ ছেলেটা তাদের পেছন পেছন আসছে ! রিয়া তার মনের ধারনা ঠিক করতে একটি মোবাইল দোকানের সামনে দাঁড়ালো ঠিক তখন ঐ ছেলেটা একটু দূরে অপেক্ষা করতে লাগলো ! সেই টা দেখে রিয়া তার বান্ধবী সোমা কে বললো দেখ ঐ ছেলেটা আমাদের পিছনে আসছে কেনো ! সোমা তখন হাসতে হাসতে বললো হুম মনে হয় তোকে ওর খুব পছন্দ হয়েছে ! রিয়া তখন আগবাড়িয়ে বললো ,চল তো দেখি বলে ছেলেটা কাছে গিয়ে জানতে চাইলো ? এই যে দাদা আপনাকে রোজ দেখি আমাদের কে লক্ষ‍্য করেন কেনো ? ছেলেটা বলে উঠলো আমার নাম দিপক ,আমার আপনাকে খুব ভালো লাগে তাই বন্ধুত্ব করতে চায় বলে রিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল দিপক ! এই দেখে রিয়া খানিক টা লজ্জায়
মাথা নিচু করে ওকে বলে চলে গেলো ! এই ভাবে রিয়ার সাথে দীপকের খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো ,তারা মাঝেমধ্যেই বিকেলে দেখা করতো রিয়া কে নিয়ে নদীর পাড়ে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা গলপ করতো আর রাতের বেলায় ফেসবুকের মাধ্যমে মেসেজ হতো ! রিয়া তার বাড়িতে একদিন নিয়ে গেলো দিপক কে ,রিয়ার তার বাবা ঐ মায়ের সাথে পরিচয় করে দিল ! এই ভাবে যেতে যেতে একদিন রিয়া দিপক কে বললো তুমি কি করো ? জবাবে দিপক জানালো সেই একজন সাব ইন্সপেক্টর তার বিরাট বড়ো ফ্লাট আছে ! তখন রিয়া বললো চলো তোমাদের বাড়ি গিয়ে দেখা করে আসি ! দিপক বললো কেনো ? আমার বাবা ও মায়ের সাথে পরিচয় করে কি হবে ? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি আমাকে কি বিশ্বাস হয় না তোমার ,রিয়া বললো তাই বলিনি আমি বলতে চাই এইভাবে আর কতোদিন চাতক পাখি হয়ে থাকবো ,এইবার আমরা বিয়ে করতে চাই, তা ছাড়া আমার বাপি খুব তাড়া দিচছে আমার বিয়ের জন্য ! এমন একটি ভালো ছেলে তুমি বুঝলে বাবু ! দিপক তখন রিয়াকে পাগলি বলে তার ঠৌটৈ একটা আলতো করে চুমু খেলো ! রিয়া তখন বললো ওয়ে কি হচছে এইসব বলে হেসে গড়িয়ে পড়লো দীপকের বুকের মধ্যেই ! এই ভাবে চলতে থাকে তাদের প্রেম ,একদিন দিপক রিয়া কে অনেক দূরে নিয়ে গেলো ,সেই খানে তাদের অনেক গলপ হলো একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসে অনেক কিছুই হলো  ,রিয়া খুব সরল মেয়ে আর তার লাস‍্যময়ি রূপে দিপক মোহিত হয়ে তার সাথে লিপ্ত হলো ! প্রথম প্রথম রিয়া বাধা দিতে গেসলো কিন্তু পারলো না ,দীপকের ভালোবাসা কাছে হার মেনে তারা সুখের সাগরের ভাসতে লাগলো ! হয়ে যাবার পর রিয়া খানিক লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকলো ! তার পর তারা হাত ধরাধরি যে যার বাড়ি গেলো ! সেই রাতে রিয়া তার মোবাইলে ফেসবুক খুলে দেখে তার ফ্রেন্ড লিষ্টে দিপক তাকে ব্লক করে দিয়েছে ,তখন রিয়া দীপকের মোবাইলে ফোন করতে লাগলো ,দেখে তার সুইচ অফ ! রিয়া অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো ,কেনো এমন হলো ,সমস্ত রাত রিয়া ঘুমাতে পারলোনা ! পরের দিন তার বনধু সোমা কে সব জানালো ,সোমা বললো দীপকের ফোটো আছে ? রিয়া বললো হুম আছে ,সোমা বললো দিপক থাকে কোথায় ? রিয়া জানালো সেই থাকে শ্যামপুরে ,চল তবে  ঐখানে গিয়ে খোঁছ করি ! এইসব ঘটনা রিয়া তার বাবা ও মাকে বলেনি বকবে বলে ! এইভাবে দশদিন দীপকের ফোনে যোগাযোগ হয়নি ! তার জন্য সোমা আর রিয়া একদিন সকাল সকাল শ্যামপুর গেলো ,সেই খানে তার ফোটো দেখিয়ে অনেক লোকজন কে জিগ্যেস করাতে একজন দেখিয়ে দিল দিপকের বাড়ি !  দিপকের বাড়ির সামনে আসতে রিয়া দিপকের দেখা পায় ,রিয়াকে দেখে দিপক চমকে উঠে ,সেই তখন বলে তুমি কেনো এসেছো আমার সাথে দেখা করতে  প্লিজ চলে যাও আমার সাথে সম্পর্ক রেখো না ! তখন সোমা বলে উঠলো মানে কি বলতে চাইছেন ? ভালোবেসে মিষ্টি খেলেন আর ছুড়ে ফেলে দিলে হবে শয়তান ! দিপক বললো দেখো আমি চেয়েছিলাম বনধু হয়ে থাকতে কিন্তু বিয়ে করতে নয় ,তা ছাড়া আমার বিয়ে হয়েগেছে ! তখন রিয়া রেগে দিপকের গালে ঠাস করে চড় মেরে বললো ,তা হলে তুমি অভিনয় করতে গেসলে ,বলে রিয়া কাঁন্নায় ভাসিয়ে দিল ! এই হলো পুরুষের কাজ আমাকে ঠকিয়ে তুমি সুখি হতে পারবে না ! তখন ঐ  গ্রামের লোকজন ছুটে এসে সব শুনে বললো , দিপক কোন সাব ইন্সপেক্টর নয় ,আপাদের মিথ্যে কথা বলেছে ! সোমা তখন বলে উঠলো এই হারামি টা একটা শাস্তি চাই ,সহজ সরল মেয়ে কে ঠকিয়ে লজ্জা লাগে না ! তখন গ্রামের মোড়ল বললো হুম বেটা কে থানায় গিয়ে দিয়ে আসি ! কিন্তু রিয়া মনে একরাশ দুঃখ নিয়ে ঘরে এসে দিনরাত কাঁদতে লাগলো ! সেই স্বপ্নে ও ভাবতে পারেনি এই রকম বন্ধু থাকে যারা ভালো বন্ধু সেজে বিশ্বাসঘাতক করতে পারে ! একটি মেয়েকে ভালোবেসে  পতুল খেলা ভেবে তার জীবন নষ্ট করতে পারে ! সমাজের কি দোষ এই রকম পুরুষ থাকলে সমাজ কোনদিন ই ভালো হবে না ! এই বিশ্বঘাতক বনধু থাকলে সমাজ অন্ধকারের থেকে যাবে !

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২০

মারাঠি কবি নারায়ন সুরবে ( ১৯২৬-- ২০১০)/ Narayan Gangaram Surve

মারাঠি কবি নারায়ন সুরবে ( ১৯২৬-- ২০১০)

Narayan Gangaram Surve (15 October 1926 – 16 October 2010) was a Marathi poet from Maharashtra, India.

                 

   কলম ধরেছেন......সৌম্য ঘোষ




Narayan Gangaram Surve


          "একলা ত' আসিনি

          যুগটাও সাথে আছে ।

          তুফান থেকে সাবধান ।"


     ____  নারায়ন সুরবে । মারাঠি কাব্য সাহিত্যে আর পাঁচজন কবির চেয়ে একটু আলাদা । জন্ম, শৈশব, কৈশোর জর্জরিত হয়েছে অন্নচিন্তা করতে করতে। বিদ্যালয়ের লেখাপড়া মাত্র চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত । যা কিছু শিক্ষা, জীবন দর্শন সব আহোরণ করেছেন জীবন থেকে । জীবনে পাওয়া না পাওয়া

সুখ-দুঃখের স্বাদ থেকে । বেঁচে থাকার ধরন ও বৈচিত্র্য থেকে । মানুষের লোভ হিংসা ক্রোধ সাধ আহ্লাদ দুচোখ দিয়ে  দেখেছেন, মন দিয়ে অনুভব ও উপলব্ধি করেছেন। দেখেছেন দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন । তাই তাঁর কবিতায় কাব্য এবং জীবন পৃথক থাকেনি । অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে সম্পৃক্ত । জীবন মিশে গেছে কবিতায়, কবিতা মিশে গেছে জীবনে ।


         " এরা এবার জেগে উঠেছে

           বদলে দেবে পৃথিবীর রূপটাকেই ।"

কার্ল মার্কস, লেলিন এর আদর্শে অনুপ্রাণিত তরুণ বয়স থেকে। সাধারনত: মারাঠি কবিতায় আমরা দেখতে পাই,  কেবল সুন্দর মধুর কল্পনা । আর তাও পরিবেশিত হয়ে থাকে কঠিন শব্দ আর দুর্বোধ্য ছন্দ প্রকরণের মাধ্যমে । যা অল্প শিক্ষিত ও সাধারণ বোধবুদ্ধির মানুষের পক্ষে বোধগম্য নয় ।

নারায়ণ সুরবে' সেই প্রথা ও বাধা ভেঙেছেন । তাঁর কবিতা বোঝার জন্য সংস্কৃত জানার প্রয়োজন নেই। নেই ছন্দজ্ঞান থাকার আবশ্যকতা । এই কারনে তাঁর কবিতা অন্য মাত্রা পায়, অন্য মূল্য পায় পাঠকসমাজে । তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রত্যেক কবির কাব্যকৃতি লিখনশৈলী ও রচনাকৌশল সেই যুগকে চিহ্নিত করে। তিনি বলেন, মানুষের কথাই আমি মানুষের জন্যই লিখি। 


    "এই বস্তিতেই একদা উদিত হবে নতুন সূর্য

      আমাকে এগিয়ে যেতে হবে ততদিন 

      দ্বারপ্রান্ত থেকে আসবে সোনারঙের রথ

      প্রিয়ে, আমার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে     

      ততদিন ..... "


সেই উদিত নতুন সূর্য আজও এলোনা । দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলির স্বপ্ন আজও অধরা । পরিবর্তনবাদী মানুষগুলি চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থায় লালিত শোষিত হতে হতে  ব্রাহ্মণ, সমাজপতি , ধনী ও শাসকদের প্রতি আজন্ম পালিত ভক্তি-শ্রদ্ধার কারণে একজোট হতে পারল না । সমাজে পরিবর্তন আর হলো না । উদিত হল না নতুন সূর্য ।

কখনো তাঁর কলম দুঃখবোধে জর্জরিত ------


       " আগামী দিনের সমস্ত দুঃখরাশি

         আমি ভুলে যাবো ভাবছি

         আজকের ব্যথাটুকু কোথা রাখি

         কেউ ত' বলে দেয় না ....."


তবুও কবির  দু'চোখে জীবনের আশা, নতুন ভোরের স্বপ্ন সবুজ কিশলয়ের মত কচিপাতা মেলে দেয় ------


  "হাতে ধরা পতাকা উড়বে

  হাঁসেরা উড়ে যাবে বাতাসের সঙ্গে

   যাত্রা শুরু হবে এবার

   শুরু হবে নব নব সৃষ্টির ।"



                মারাঠি সাহিত্যের সমালোচকদের বিচারে কবি নারায়ন সুরবে' নিজের স্বভাবগুণে, সৃষ্টি ও বৈচিত্রের গুনে এক সর্বজনস্বীকৃত স্বতন্ত্র জাতের কবিতা শিল্পী। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ -----

৭টি কবিতা সংকলন। প্রবন্ধ পুস্তক ৯টি । সম্পাদনা ৪টি ।  পুরস্কার পেয়েছেন ------  রাজ্য পুরস্কার (১৯৬৩ ও ১৯৬৭), সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার (১৯৬৮) , নরসিং মেহেতা পুরস্কার (১৯৬৯), কবীর সম্মান পুরস্কার (১৯৬৯), জনস্থান পুরস্কার (২০০৫) প্রভৃতি  ।।

___________________________________________

    লেখক ... অধ্যাপক সৌম্য ঘোষ । চুঁচুড়া। হুগলী

রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০

গল্প- নিজের পরিচয় সেক আসাদ আহমেদ Story- Nijer Porichoy by Sk Asad Ahamed

গল্প- নিজের পরিচয়  সেক আসাদ আহমেদ
Story- Nijer Porichoy by SK Asad Ahamed

গল্প- নিজের পরিচয় সেক আসাদ আহমেদ


সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত  সেক আসাদ আহমেদ এর  গল্প.... 
                 নিজের পরিচয়
                     সেক আসাদ আহমেদ
       

             (প্রথম অংশ)

দুপুর ১টা
রতনপুর প্রাইমারি স্কুলে টিফিনের ঘন্টা বেজে উঠল। বৈশাখ মাসের কড়া রোদ্দুর। ভ্যাপসা গরমে বাইরে বেরুনো দায়। গা যেন পুড়ে যায়, তাই হেডমাস্টার মশাই স্কুলের বাইরে বেরুতে বারণ করেছেন। কিন্তু আজ একমাত্র ব্যাতিক্রম হল খালেক। কখনও শিক্ষকের আদেশ অমান্য করেনি, তবুও প্রচন্ড গরমে বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল।
আজ স্কুলে আসার পর থেকে মনটা কেমন ছটফট করছিল। কিছু ভালো লাগছিল না ওর, নিয়মিত ক্লাসে পড়া দেয়। কিন্তু আজ পড়া করে এসেও পড়া দিতে পারেনি। এর জন্য ক্লাস টিচারের বকুনি ও খেতে হয়েছে।
কেন? কেন সে পড়া দিতে পারেনি ?— মনে প্রশ্ন জাগল তার।
বাড়িতে তো মা অসুস্থ! কিছু হয়নি তো?  ভাবতেই গা শিউরে উঠল।
বাড়ি থেকে স্কুল মাত্র ৭ মিনিটের হাঁটা পথ।
এগিয়ে চলল খালেক।
মোড়ের রাস্তায় রাইসু জেঠুর কাছে খবর পেল মা হাসপাতালে। আর কোনো কথা না শুনে সোজা দৌড় দিল ওদিকে। হাসপাতালে পৌঁছে দেখল বাবার চোখে জল...

এখন সারাদিন বাড়িতে একা থাকে খালেক।
বাবাকে তো পেটের জন্য ফেরি করতে যেতে হয়। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করেনা, স্কুলেও যায় না। যেখানে সেখানে একা বসে কাঁদে। মনের আনন্দ যে ওর হারিয়ে গেছে।
এই অল্পবয়েসী শিশুকে কে মানুষ করবে? কে তার হারানো মুখের হাসি এনে দেবে।  এভাবে আর কতদিন চলতে পারে।
শেষে ইউসুফ বাবু ঠিক করলেন ওর জন্য নতুন মা আনবেন।
নতুন মা পেয়ে তার মুখে সত্যি হাসি এল, কিন্তু তা বেশিদিন নয়।
কথায় বলে ফুটো কলসিতে আর কতক্ষণ জল ভর্তি থাকে।
খালেক যখন ১১ বছরের হল তখন বিমাতার পুত্র সন্তান হল।
নতুন মা আর যেন ভালোবাসে না। কেমন যেন হিংসুটে হয়ে গেছে, কথায় অকথায় গলা চড়ায়। বাড়ির কাজ কর্ম করায়... এমনকি এঁঠো থালা-বাসন ও মাজিয়ে  নেয়।
বাবাকে জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। তাই মুখ বুজে সব সহ্য করেছে।
                           






(দ্বিতীয় অংশ) 


বাবার ইচ্ছা না থাকলে ও  বিমাতার লাঞ্ছনা থেকে রেহাই পেতে খালেক কলকাতায় চলে এল। বিমাতার মামাতো ভাই কাজের কথা বলে আসলে এক  বিহারীবাবুর বাড়িতে কিছু টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিল। এসব কিছুই বুঝতে পারেনি খালেক।
তবে বিমাতার লাঞ্ছনা থেকে নতুন শহরে বেশ ভালো লাগছে। সন্তানহীন বিহারীবাবুর বাড়িতে ছেলের মতো  থাকে  আর পুরো বাড়িটি দেখাশোনা করে,
জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখে,
পরিষ্কার করে।
নিজের হাতে ইচ্ছে মতো খাওয়া-দাওয়া সবকিছুতেই স্বাধীনতা ছিল, কিন্তু  একটা পরাধীনতাও ছিল।  কখনও গেটের বাইরে বেরুনো যাবে না।
গ্রামের মুক্ত পরিবেশের ছেলে হয়েও মেনে নিয়েছিল খালেক — এটাই সে জীবনে চরম ভুল করে ফেলে ছিল। চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে জীবন্ত আত্মার কবর দিয়েছে সে। জীবনটাকে নিসঙ্গ একগুঁয়েমি  করে তুলেছে পৃথিবীর কেউ যেন এই প্রথম জীবনের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে। কলরবপূর্ণ শহরে থেকেও কলরব শুনতে পায়নি। বুঝতে পারেনি চার দেওয়ালের ভেতরকার  স্বার্থের কলরব।
কাটিয়েছে জীবনের পরবর্তী ৭টা বছর...

খালেক এখন ১৮ বছরের।
তবে শরীরে যৌবনের ছাপ নেই, লম্বা ও শীর্ণ দেহ। উসকু-খুসকু চুল। শরীরটা বুড়োর মতো সামনে দিকে ঝুঁকে পড়েছে  ।
এখনও ছেলেবয়েসী স্বভাব কাটেনি, কথা বলতে ও শেখেনি।
তবে একদিন ভোর প্রায় তিন টা। দরজায় কেউ টোক্কা দিচ্ছে।
কী ব্যাপার?  এত  তাড়াতাড়ি সকাল হয়ে গেল নাকি?
ঘড়ির দিকে তাকাল  খালেক — না তো। কোন রকম চোখ রগড়াতে রগড়াতে দরজা খুলল।
সামনে বিহারীবাবু দাঁড়িয়ে , কিছুটা অচকিত লাগছিল তাকে। কিন্তু  কিছু না বলার আগে সহেব বললেন -  আমি তিন দিনের জন্য দিল্লি যাচ্ছি ব্যবসার কাজে। এই কদিন তুই একা সাবধানে থাকিস।
—ঠিক আছে বাবু
            তারপর বিহারীবাবুকে গেটের কাছে পৌঁছে দিয়ে এসে শুয়ে পড়ল খালেক।
                    
                              





     তৃতীয় অংশ      

এভাবে দুদিন  কেটে গেল, তিন দিনের সময়  কেউ যেন দরজায় টোক্কা দিচ্ছে।
প্রত্যেক দিন সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠে, কিন্তু ক'দিন কিছু কাজ না থাকায় একটু দেরি করে উঠছে সে। তাই আজও ঘুমিয়ে ছিল।
সাহেব মনে হয় ফিরে এসেছেন ।
তার মনে ভয় জাগল, আজ বকাঝকা শুনতেই হবে ।  ভয়ে ভয়ে দরজা খুলতেই — সামনে উর্দি পরা কয়েকজন  লোক।
   অবাক হয়ে খালেক প্রশ্ন করল  — তুমরা  কারা? সঠিক বাংলা ও জানে না সে।
কিছুটা  হিন্দি ও বাংলা মিশিয়ে কথা বলে। এককথায় যাকে বলে খট্টা বাংলা । অথবা আধো বাংলা ও বলতে পারেন।
— আমরা পুলিশ
পুলিশ!  পুলিশ বলে নাম শুনেছে কিন্তু কখনও স্বচক্ষে এত কাছে দেখেনি। তাছাড়া পুলিশের ভয় মা দেখাতো। তাই  ভয়টা  যে আরও বেশি বেড়ে গেল।
আবার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল — কায় এসেছে?
  একজন উর্দি পরা লোক বললেন — তুই খুন করেছিস।
অন্য একজন উর্দি পরা লোক হাতে লোহার বেড়ি  পরিয়ে দিল।
      খুন !!!  সেটা আবার কী?
জীবনে এই প্রথম খুন কথাটি শুনল  খালেক। খুনের মানে কী তার জানা নেই, অথচ  সে নাকি খুন করেছে।
আবার উর্দি পরা লোকটি বললেন— হুম, মানুষ মেরে আবার  ন্যাকা সাজা হচ্ছে। চল ব্যাটা নীচে চল — দেখাচ্ছি তোকে।
এমন সময় বাড়ির নীচু তলায় হইচই -এর আওয়াজ শোনা গেল। উর্দি পরা লোকেরা তাকে নীচে নিয়ে এল।
একটি মানুষের লাশ, ৪০-৪৫ বয়সী হবে। পচা দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। নীচু তলার গুদাম ঘর থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।
এমন সময় একজন পুলিশ খাটের তলা থেকে রক্তে রাঙানো ছুরি বের করল।
খালেক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল... কী অবিশ্বাস্য কান্ড ঘটে যাচ্ছে  তার চোখের সামনে, অথচ সে কিছুই করেনি।
তার মাথায় যেন বাজ পড়ল, বন্ বন্ করে মাথা ঘুরতে লাগল। হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে  ধপ করে মাটিতে পড়ে গেল  ।
তারপর কিছুই মনে নেই তার...
                        
                                  




           চতুর্থ অংশ            


প্রায় মিনিট বাইশের পর যখন তার  জ্ঞান ফিরল, তখন অবাক হয়ে চেয়ে দেখল — চারিদিকে দেওয়াল, সামনে  লোহার রেলিং আর গাঢ় অন্ধকার।
সে বলে উঠল  — হামি কোথায়?
এমন সময় এক উর্দি পরা লোককে  দেখতে পেয়ে তার সব কথা মনে পড়ল।
তখন সে মনে মনে বলল আমি তো কোনো ভুল করিনি ? আমায় কেন বন্দী করা হল ?
মনের মধ্যে তার ভয়টা আরও বেড়ে গেল।
হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল এবং আধো বাংলায় চেঁচিয়ে উঠল — হামায় বিশ্বাস করুন, হামি খুন করিনি, হামি খুন............
কিন্তু ভাগ্য সহায় নেই  কেউ শোনেনি তার করুণ আর্তনাদ। যাকে দেখে তাকেই বলে উঠে  — হামায় বিশ্বাস করুন, হামি খুন.........
নিরপরাধে খুনের দায়ে তার জেল হল।
যখন যাকে দেখে সেই একই বাক্য উচ্চারণ করে
আর কাঁদতে থাকে,
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমের ঘোরে ঢুলিয়ে  পড়ে।
                               








          পঞ্চম অংশ         

শেষে একদিন ভাগ্য সহায় দিল। দীর্ঘ পাঁচ বছর জেলে কাটানোর পর একদিন এক নতুন জেলার মুর্শিদাবাদ থেকে বদলি হয়ে এখানে এসেছেন। প্রথম দিন এসে তিনি গোটা জেল ঘুরে দেখতে লাগলেন।
এমন সময় তিনি শুনতে পান — হামায় বিশ্বাস করুন ,  হামি খুন করিনি, হামি খুন.......
খালেক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে  যাকে দেখে এই বাক্য  উচ্চারণ করে। এটি তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। তাই সবার কাছে অতি তুচ্ছ ব্যাপার হয়ে উঠেছে  তার এই করুণ আর্তবাক্য।
নতুন জেলারের মনে কেমন যেন  খটকা লাগল। তিনি এগিয়ে খালেকের কাছে,  দেখলেন এক অল্প বয়সি যুবক  পশ্চিম দিকে মাথা করে হাঁটু গেড়ে বলছে সেই  একই বাক্য।
—হামায় বিশ্বাস........হামি খুন......
সবাই তাকে পাগল ভাবলেও  নতুন জেলারের মনে হল যুবকটি যেন সত্যি কথা বলছে।
তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না।
গার্ডকে আদেশ দিলেন  লক্ আপ খুলতে।
দরজা খুলার শব্দে  উঠে বসল  খালেক এবং ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে  চার দেওয়ালের এক কোণে সরে বসল  কিন্তু মুখে সেই একই বাক্য উচ্চারণ করতে থাকল।
জেলার সাহেব আস্তে আস্তে  তার কাছে এগিয়ে এলেন  এবং  মাথায় হাত বুলিয়ে অতি ক্ষীণ কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন
— তোমার নাম কী?
খালেক আস্তে আস্তে চোখ তুলে তাকাল  উর্দি পরা লোকটার  দিকে। কেন? কেন বলতে যাব আমার নাম টা? এত দিন কত এল গেল কেউ জিজ্ঞেস করেনি।
——না বলব না ।
হঠাৎ তার কানে কাছে মিষ্টি শব্দ ভেসে এল এবং  এক ধরনের অদ্ভুত গন্ধে ভরে গেল চার দেওয়ালের অন্ধকার বন্দীশালাটা।
দেরি কর  না বলে দাও, বাড়ি যেতে চাও না  নাকী?
হুমম চাই! চাই!
আমি বাড়ি যাব! আমি বাড়ি যাব!
জেলার সাহেব  আবার জিজ্ঞেস করলেন — কী হল বল তোমার নাম কী?
— বলছি - বলছি
নিজের নামটাই যেন ভুলে গেছে, অনেক ভেবে চিন্তে শেষে বলল — খালেক মহম্মদ।
— বাড়ি কোথায়?
— রতনপুর। এটাও অনেক ভেবে চিন্তে বলল।
— রতনপুর? মানে দীঘা?
— হুুঁম
— বাবার নাম?
ইউসুফ মহম্মদ
— ইউসুফ মহম্মদ! জেলার সাহেব যেন চমকে  উঠলেন, কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে গেলেন।
আবার জিজ্ঞেস করলেন
— মায়ের নাম?
খালেকের চোখে জল ভরে এল। মাথা নীচু  করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
— ইয়াসিনা
কী? তুমি ইয়াসিনার  ছেলে? জেলার সাহেব দূরে সরে গেলেন। মনে হয়  মাথায় যেন  বাজ পড়ল।  খালেক স্থির ভাবে লক্ষ্য করল  জেলার সাহেবের চোখ দুটো ছলছল  হয়ে  উঠেছে। এসব কিছু দেখে  খালেক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ লোকটি মায়ের নাম শুনে অমন হল কেন? তিনি কী মায়ের কোনো আত্মীয়? এসব কিছুই  উত্তর খুঁজে পেল না খালেক।
                           








           ষষ্ঠ অংশ            

সেদিন গভীর রাতে  আবার এলেন জেলার সাহেব। একের পর এক সব ঘটনা শুনলেন  খালেকের কাছে। খালেক সত্যি নির্দ্বিধায়  সব সত্যি ঘটনা খুলে বলল। দুজনেরই চোখে জল ভরে এল। আর এক মূহুর্তের জন্য অপেক্ষা না করে জেলার সাহেব বেরিয়ে গেলেন ।
পরের দুদিন পর পর এসেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দু-সপ্তাহ আর মেলেনি।
শেষে একদিন এক পুলিশ পাহারাদার এসে বলল— বাইরে এসো
——বাইরে এসো? মানে?
— তোমার সাজা মুকুব হয়েছে
— মুকুব হয়ে গেছে? আরে আরও তো দু'বছর বাকি। যেন বিশ্বাস হয়না  খালেকের। কিছুটা বিশ্বাস অবিশ্বাস এর মাঝে সত্যতা লুকিয়ে রয়েছে।
হঠাৎ চার দেওয়ালের মধ্যে মিষ্টি গন্ধে ভরে গেল । গন্ধটা খুব চেনা খালেকের। প্রতি রাতে এই চেনা গন্ধ ঘুম পাড়িয়ে যেত।
— আচ্ছা এতো তাড়াতাড়ি সাজা মুকুব হয়ে গেল কেন?
—তা জানিনা। বাইরে এসো। আমার পিছনে পিছনে এসো। জেলার সাহেবের হুকুম।
পাহারাদারের কথা মতো এগিয়ে চলল খালেক। জেলার সাহেবের ঘরে ঢুকিয়ে স্যালুট করে বিদায় নিল  পাহারাদার।
খালেক লক্ষ্য করল  সেই নতুন উর্দি পরা লোকটি মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে আছেন।
তিনি অন্য উর্দি পরা লোকটিকে কী নির্দেশ করলেন। সে ভাষার কিছু বোধগম্য হয়নি খালেকের।
0666 তো?
——হাঁ জ্বি
— এখানে এসো
কথা মতো উপস্থিত হল খালেক। তিনি সই করতে বললেন।
কেন সে সই  করবে? কী ব্যাপার  ?  সাজা কী সত্যি মুকুব হল। জিজ্ঞেস করবে ভাবলেও সাহস করে উঠতে পারেনি।
সই করল খালেক
হাত দেখাও  স্ট্যাম্প দিতে হবে।
তৎক্ষণাৎ জেলার সাহেব বললেন— না - না! আমার কাছে পাঠাও।
জেলার সাহেব নিজের মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা দিলেন এবং বললেন যাও আজই বাড়ি চলে যাও।
হঠাৎ খালেক বলে বসল রাস্তা জানি নে।
জেলার সাহেব তাকে সব বুঝিয়ে দিলেন এবং নিজের ড্রাইভারকে ডেকে পাঠালেন।
ড্রাইভারের সঙ্গে সঙ্গে বাসস্টোপের দিকে চলল খালেক।
আসার হঠাৎ পিছন ফিরে তাকল খালেক দেখল নতুন জেলার সাহেবের দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
                  






        সপ্তম অংশ    


বিকেল সাড়ে পাঁচটা।
দীঘা সায়েন্স সেন্টার রতনপুরে পৌঁছালো। রাস্তাঘাট কেমন যেন বদলে গেছে, বাড়ি কোথায় বুঝে উঠতে পারছে না। বুঝবে কেমন করে দীর্ঘ ১২ বছর চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থেকে সবই যেন ভুলে গেছে সে। কাউকে কী জিজ্ঞাসা করবে, কেমন লজ্জাবোধ হয় তার।
তাছাড়া কে?
এতদিন কোথায় ছিলে?  এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তাকে।
এদিক ওদিক কেমন থতমত খাচ্ছিল সে। অনেকক্ষন এদিক ওদিক ঘোরা ঘুরি করে  কিছুই খুজে পেল না। তখন  সন্ধ্যা নেমে এসেছে  । ভাবনা চিন্তা করতে করতে হঠাৎ এক বুড়ি মা এগিয়ে এলেন। পরনে সাদা শাড়ি মাথার চুল সাদা। কেমন যেন একটা গন্ধ ও ভেসে এল অনেক চেনা গন্ধ টা। কেমন অস্থির হয়ে উঠল সে।
— তুমি বাড়ি যাবে  বাবা? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন বুড়ি মা।
— হ্যাঁ আমি বাড়ি যাব। হতভম্ব হয়ে বলল খালেক
— তুমি খালেক তো?
অবাক হল খালেক, ইতস্তত বোধ করল খালেক তবুও জবাব দিল — হ্যাঁ।
— আমি ঠিক আপনাকে চিনতে পারলাম না?
— চিনতে পারবে না বাবা।
তিনি  মাথা নাড়াতে নাড়াতে ঘুরে  পড়ে এগিয়ে চললেন।
কী করবে খালেক কিছু বুঝতে পারছে না, এদিকে সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে এল। সে ও এগিয়ে চলল পিছনে পিছনে।
আবার হঠাৎ বুড়ি মা  বলে উঠলেন — তোমায় একটা সুখবর দিই বাবা ।
— সুখবর! কী সুখবর? তাছাড়া আপনিই বা কে?
— আরে আগে শোনো তো বাবা। যে জেলার সাহেব তোমার সাজা মকুব করছে,  সে কে জানো?
কী???? একেবারে চমকে উঠল খালেক
কিছু টা অপ্রস্তুতভাবে বলল — না,  জানি না, তিনি কে?  
সত্যিই তো তিনি কে? কেনই বা সাজা মকুব হল, নিজেকে প্রশ্ন করল  । কোনো উত্তর খুঁজে পেল না সে।
খালেক বিস্মিত হয়ে ভাবতে লাগল কেমন করে এ বুড়ি মা আমার গোপন রহস্য জানল ।
একই কোনো  ফকির সন্ন্যাসী? নাকি জিন?
এসবের উত্তর খুঁজে পেল না,  খুব ভয় হচ্ছে তার, চলতে চলতে থমকে দাঁড়াল। পিছনের দিকে দৌড়ে পালাবে ভাবল সে। কিন্তু পিছনে গাঢ় অন্ধকার, কী করে যাবে সে।
সামনে বুড়িমার  পরনে সাদা শাড়ি যেন ক্ষীণ আলো ছড়িয়ে পথ দেখাচ্ছে।
এসব দেখে ভয় দ্বিগুণ বেড়ে গেল, হাত-পা কাঁপতে লাগল তার।
কী বাবা , কী ভাবছ? ও তুমি ভয় পাচ্ছো ,
কোনো নেই বাবা — বুড়ি মা পিছন ফিরে বললেন।
না, কিছু না, না ——না —কিছুটা থতমত হয়ে বলল খালেক আবার এগিয়ে চলল।
— তবে যা বলছি শোনো।
    তারপর বুড়ি মা বলতে শুরু করলেন —
আজ থেকে ২৪ বছর আগে তোমার বাবার পরিচয় হয় দীঘায় একটি মেয়ের সাথে, মেয়েটি মুর্শিদাবাদ থেকে পরিবারের সাথে বেড়াতে এসে ছিল, তখন তোমার বাবা দীঘা সায়েন্স সিটির 'আকাশ-নক্ষত্র' প্রদশর্নীতে প্রজেক্টর হিসেবে কাজ কাজ করত। সেই সূত্রে তাদের দুজনের পরিচয়।
প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর প্রেম... কিন্তু মেয়ের বাবা তা মেনে নেয়নি। পরে কিন্তু মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে  এসে  বিয়ে করেছিল। পরে কিন্তু মেয়ে জামাইকে নিতে এসেছিলেন কিন্তু তার মেয়ে নিজে যেতে চায়নি।
কারণ ওর ভয় করে ওর বাবা পুলিশ অফিসার ছিলেন। এখন নিয়ে গিয়ে পাছে স্বামীকে জেলে পুরে দেয়, মেয়েটির বাবা জীবনে মেয়ের মুখ দেখবে না  বলে প্রতিজ্ঞা করে সেই যে গেছেন আর কোনোদিনই  আসেননি।
এখন তিনি জেলার সাহেব...
কথা শেষে বুড়ি মা বললেন —  বাবা এইতো তোমার বাড়ি...
বাড়ির কথা শুনে বুড়ি মাকে পেরিয়ে চোখভরে  দেখতে লাগল।
কথা বন্ধ, হঠাৎ পিছন ফিরে দেখল বুড়ি মা ও নেই, আর সেই চেনা মিষ্টি গন্ধও নেই।
খালেক অবাক দৃষ্টিতে পিছনের দিকে তাকিয়ে রইল আর বলল 
— যা বুড়িমা তো নিজের পরিচয় বলল না?
             
                   সমাপ্ত




বি:দ্র:- এই গল্পের কোনো অংশ কপি করা বা মুদ্রণ করা দন্ডনীয় অপরাধ