মদন ঠাকুর
গলপ
কলমে,,,অনাদি মুখার্জি
পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে ,যে কোন লোককে শুধালে বলে দেবে মদন ঠাকুরের বাড়ির ঠিকানা ! মুনসেফ ডাঙগা হরিসভা মোড়ে যে রাস্তা টা নেমে গেছে সেই খানে তার বাড়ি ! এই মুনসেফ ডাঙগা চত্বরের একটা ও পুরোহিত ঠাকুর পাওয়া যাবে না শুধু ঐ দুইজনকে ছাড়া ,এক সাধন ঠাকুর আর মদন ঠাকুর ! সবাই কার বাড়িতে পূজো অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে মদন ঠাকুরের ! খুবই ভক্তি সহকারে পূছো করেন ! খুবই ধার্মিক মানুষ ,যার বাড়িতে যায় পূজো করতে কিন্তু দক্ষিণা বলতে শুধু জল বাতাসা পেলে খুবই খুশি ! আমি একদিন বললাম মদন ঠাকুর তুমি তো পূজো খুব সুন্দর করো কিন্তু দান দক্ষিণা তো কিছুই নাও না তোমার সংসার চলে কি রকম ! হাসতে হাসতে বলে ভগবান তো আমাকে দুই বেলা ঠিক খাবারের জোগাড় দেয় আর কি চায় !
কথাটা মদন ঠাকুর মন্দ বলেনি পরে আমি তা বুঝলাম , মদন ঠাকুর কত বড়ো মনের মানুষ যেদিন আমি দেখলাম নিজের চোখে !
বেনুপালের ছেলে কে সাপে ছোবল মেরেছে ,তাই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো ,ডাক্তার সাহেব সব দেখে বললেন সাপের বিষ সেই ভয়ংকর বাঁচার আশা একদম নেই সব উপরবালার হাত ! তা শুনে তো বেনুর বউ খুবই কান্নাকাটি জুড়ে দিল ! ডাক্তার সাহেব বললো একটা ইনজেকশন লিখে দিচছি খুব দাম তবে দোকান থেকে কিনে আন এখুনি দিলে মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে বলে ডাক্তার সাহেব লিখে দিল ! বেনুপালের অবস্থা ভালো নয় এখুনি লাগবে দামি ইনজেকশন কি করবে ভেবে পারছে না ! দোকানে গিয়ে শুধায় কত দাম ইনজেকশনের ? দোকান দার বললো একটা দাম একহাজার টাকা এত দাম শুনে চিন্তায় পড়লো ! কে একজন বললো বেনু একবার মদন ঠাকুর কে খবর দিলে হয় না ! কেন মদন কি করবে ? সেই তো পূজো নিয়ে ব্যাস্ত থাকে সেই কি আর ডাক্তার বিদ্যা জানবে ! সবাই যখন বলছে তখন বেনু তার ছেলেকে নিয়ে মদন ঠাকুরের বাড়িতে গেল ! সেই সরু গলি ভেতরের একচালা বাড়ি মদন ঠাকুরের সেই খানে গিয়ে হাজির বেনু ! মদন ঠাকুর সব কিছু দেখে শুনে তার ছেলে মুখে কি যেন দুই এক ফোঁটা ঔষধ খাওয়াতে বেনুর ছেলে উঠে পড়লো তা দেখে তো সবাই অবাক হয়ে উঠলো জয় মদন ঠাকুরের জয় সবাই তখন বলতে লাগলো ! বেনু তখন মদন ঠাকুরের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো সত্যিই ঠাকুর তুমি আমার ছেলেকে বাঁচালে বলে তার হাতে পাঁচশ টাকা দিতে গেসলো ,সেই টাকা দেখে মদন ঠাকুর বলে উঠলো আমি টাকা নিয়ে কি করবো যা এই টাকা দিয়ে তুই তাদের জন্য খাবার কিনে দিলে আমি খুশি ,যারা ফুটপাতে বসে থাকে অনাহারে দিন কাটায় ,তাদের হাতে দিলে তোর ছেলের মঙ্গল হবে ! আমি তো সব দেখে অবাক হয় যখন সবাই চলে গেলো আমি তখন মদন ঠাকুর কে বললাম তুমি তো ভালোই বিদ্যা জানো ,তুমি এই করে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারো তবে কি জুড়ি বুটি খাওয়ালে যে বেনুপালের ছেলে ঠিক হয়ে গেলো ! সব শুনে বললাম সত্যিই তোমার সাধনার শক্তি আছে কিন্তু টাকা টা তো নিতে পারতে এতে তোমার সংসারে লাভ হতো ! সেই হেসে বললো সব থেকে সুখী মানুষ কে বলতো ধনী না গরিব ! ধনীর টাকা আছে কিন্তু সেই কি সুখী তার দেহের কত রোগ অসুখ হচছে ,সেই ঠান্ডা গরম অনুভূতি পাচছে কিন্তু যে গরিব সেই দেখ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে সেই কিন্তু ঠান্ডা কি আর গরম কিছুই বুঝতে পারে না ,আর তার কোনো কঠিন রোগ হয় না সেই ঠিক হাসিমুখে থাকে বুঝলি কিছুই ! তাই টাকা টাকা করে কোন লাভ হয় না ,তার চেয়ে তোর মনটা রাখ বড়ো ঐ আকাশের মতোন ,,সবাই কে সমান চোখে দেখলে তবে দেখবি তোর ঠিক চলছে ! আমি বললাম সত্যিই তোমার নীড় ছোটো কিন্তু তোমার মন ঐ আকাশের মতোন বড়ো তাই তোমার যত কষ্ট আসুক না কেন সব কষ্ট যে তোমার কাছে হার মানে ! জীবনের যে যত সমস্যা য় পড়ুক না কেন , তোমার কাছে এলে তার সব সমস্যা সমাধান হবে ! সত্যিই তুমি মানুষ নয় তুমি মহামানব তাই তো তোমার মন ঐ আকাশের মতোন বড়ো !
0 comments: