গল্প
শুরু থেকে শেষ
অনাদি মুখার্জি
আজ আকশটা আছে মেঘলা,তার সাথে শিরশিরানি হাওয়া বয়ছে ! মনে হয় হালকা বৃষ্টি হবে ,বাগানের টবে ফুলের পাপড়ি গুলো ঝড়ের হাওয়া মাটিতে লুটিয়ে আছে ! ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এই সব দেখছে শুভ ! সেই কাজের ছুটি পেয়ে বাড়ি এসেছে অনেক দিন পর ভালো ই লাগছে ! হঠাৎ বাদরুমে দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে রিয়াকে তার বিয়ে করা বউ কে ! রিয়া সবে মাত্র স্নান করে বেরিয়েছে ,লাল গামজাটা ভিজে চুলের সাথে খোঁপায় জড়িয়ে আছে ! আটপৌরে শাড়ি ,অনাবৃত পিঠে জমে থাকা জল চিকচিক করছে যেনো মনে হয় পদ্য পাতায় জমে থাকা শিশির বিন্দু মতোন ! কিছুক্ষণ পর শুভ গেলো দেখতে রিয়া কি করছে ? রিয়া এখন চোখ বন্ধ করে ঠাকুর কে ধূপ দেখাছে ,শুভ তার পাশে গিয়ে তাকে স্পর্শ করতে রিয়া বলে উঠলো কি হচছে এইসব ভালো লাগে না ! পূজো শেষ হয়ে গেলে রিয়া বলে যাও আগে স্নান টা করে এসো ! তখন হঠাৎ শুভ রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে কতদিন পর এলাম একটু আদর করি ! রিয়া তখন শুভ কে বলে ছাড়ো রান্না করতে হবে ,শুভ বলে উঠে আজ রান্না করতে হবে না ,বাইরের রেস্টুরেন্টে খেয়ে নেব ! রিয়া বলে না তোমাকে তো বাইরে থাকতে হয় আর খাবার ও বাইরে খাও আজ এতদিন পর এলে ছেলে র সাথে একসাথে বাড়িতে খাও ! বলে রিয়া চলে গেলো ! রান্না ঘরে যাবার আগে শুভকে বলে গেলো যাও আমাদের ছেলে আকাশকে টিউশনি থেকে নিয়ে এসো ওর ছুটির সময় হয়েছে ! রান্না ঘরে এসে ভাবতে লাগলো শুভ তাকে ভালোবাসে তার শুধু শরীর কে ,তার মন বোঝার চেষ্টা করেনি ! বাড়িতে এসে শুধু নিজের কথা বলে যায় ,রিয়া ভাবে তার জীবন কি শুধু রান্না আর সংসার সামলানো এর বাইরে কোন জগত নেই যেখানে একটু ভালো বাসার শান্তি আসবে ! এই শুভর সাথে তার 10 বছরের বিবাহিত জীবন ,তাদের একমাত্র ছেলে আকাশের বয়স আজ ৭ তবুও রিয়া আজোও শুভকে তার বর হিসাবে মেনে নিতে পারছে না ! তার মনে পড়ছে তার কলেজ জীবনের ছাত্র অলোক কে ,সেই তো অলোক কে খুব ভালো বাসতো তারা একসাথে কত গান করেছে কলেজের ! সবাই তাদেরকে মানিক জোড় বলতো ! রিয়া ভাবে একমাত্র অলোক জানে তার মনের কথা ,তার কিছু হলে অলোক অস্থির হয়ে উঠতো ! এইসব ভাবতে ভাবতেই আকাশ এসে হাজির ! আকাশ এসে বললো মা এইদেখো তোমার জন্য ই আইসক্রিম নিয়ে আনলাম বলে তার মায়ের মুখে খাইয়ে দিতে লাগলো ! রিয়া বললো আকাশ তোর জন্য খাবার রেডি করলাম খেয়ে নে আগে ! আকাশ বললো তুমি খাইয়ে না দিলে খাবো না ,তাই বলে রিয়া আকাশ কে খাইয়ে দিতে লাগলো আর ভাবছে ঠিক যেনো অলকের মতোন স্বভাব পেয়েছে আকাশ ! অলোক ও এমনি করতো তাকে খাইয়ে না দিলে সেও কিছুইতে খেতো না !
রাতের বেলায় শুতে এসে দেখে শুভ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে ,কিছু না বলে রিয়া তার বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলো ,কিছুক্ষণ পর এসে শুভ তার পাশে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেলো রিয়া তাকে ছাড়িয়ে বললো আর এই সব ভালো লাগে না ! কিন্তু শুভ শুনলো না সেই তাকে বলপূর্বক করে তার সুখ নিতে লাগলো ! সবকিছু হয়ে যাবার পর রিয়া কান্না এসে গেলো চোখে শুভর জন্য ! এই এক শুভর দোষ রিয়ার মন নেই তবু তাকে জোর করে কিছু করাটা একদম ভালো লাগে না ! সেই ভাবে অলোক হলো একমাত্র তার মনের মানুষ সেই ছাড়া আর কেউ তাকে সুখ দিতে পারে না !
পরের দিন সকালে শুভ দেখে রিয়া আপন মনে তার মোবাইলে কি যেন ছবি দেখছে ,শুভ এসে বললো তোমার মোবাইলে সব ছবি আমি ডিলিট করে দিয়েছি ,সরি রিয়া তোমাকে তা জানানো হয়নি আমার ! রিয়া জানে শুভ কে এই শুভ এমন একটা মানুষ তার পচছন্দের জিনিস তাকে রাখতে হবে ,রিয়া পচছন্দের জিনিস থাকবে না ,বিরাট একগুঁয়ে ছেলে শুভ ,এই টা রিয়া একদম মেনে নিতে পারেনি ,এইসবের জন্য রিয়া এখনো শুভ কে মন থেকে ভালো বাসতে পারেনি ! রিয়ার ও তো ব্যাক্তিগত ছবি রাখতে পারে কিন্তু না তা চলবে না !
কিছু দিন যাবার পর শুভ রিয়াকে বললো আকাশ কে তার ঠাকুমার বাড়িতে রেখে চলো আমরা একটু ঘুরতে যাওয়া যাক ! বলে শুভ রিয়া কে নিয়ে পুরুলিয়া অযোধ্যা পাহাড় দেখাতে নিয়ে গেলো ! সেই খানে গিয়ে হঠাৎ অলোকের সাথে দেখা রিয়া ! রিয়া অলোক কে দেখে বললো তুই এইখানে ! অলোক বললো শুভ আমাকে ফোন করে ডেকেছে কিসের আলোচনার জন্য ! অলোক বললো তুই এখন কেমন আছিস বল ! রিয়া বলে উঠলো না মরে বেঁচে আছি ,কতদিন পর তোর সাথে দেখা চল ঐ পাহাড়ের ঘুরে আসি দুটো সেলফি তুলি তোর সাথে বলে রিয়া অলোকের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ! অনেক গলপ হলো ,হাসাহাসি হলো মন খুলে কথা হলো দুইজনের ! রাতে যখন হোটেলে এলো তখন শুভ বললো আয় বস অলোক অনেক দিন আমরা তিনজনে বসে খায় ,অলোক বলে উঠলো আচছা শুভ তুই আমাকে ডাকলি কেনো বলতো কিসের আলোচনা বল ! শুভ বললো বলবো আগে বল তোর কেমন লাগলো এইখানে এসে ! আসলে জানিস তো কেউ ভাবছে আমি কাউকে জোর করে বিয়ে করেছি হয়তো তার মনের কথা আমি বুঝতে পারছি না তাই তো সেই রোজ রাতে তার চোখের জল ফেলে ভাবে তার জীবনটা আমি নষ্ট করলাম ! তখন রিয়া বলে উঠলো কি বলতে চাইছো তুমি এই সব কথা এখন কেনো ! অলোক ও বলে উঠলো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ! তুই তো ভালো আছিস রিয়া কে সুখে রেখেছিস ! আর হুম রিয়া আমাকে শুভ সব বলেছে দেখ আমি তোকে বন্ধু মতোন ভালোবাসি ,আমার ভালোবাসাটা তুই তোর চোখে আমাকে তোর প্রেমিক ভাবিস না ,হুম তোর দুবলতা আছে আমার উপর কিন্তু ঐ সব ভুলে যা ! কিছু কিছু জিনিস পরিবর্তন না হলে ভালো লাগে ,তুই আর আমি একই ভাবে বন্ধু হয়ে থাকবো সারাজীবন তুই শুভকে না হয় তোর স্বামী হয়ে থাকতে দে ! আমি বলেছিলাম শুভ কে তোকে বিয়ে করতে ! শুভ চায়নি তোকে তা কারন আমি তোকে মায়ের স্বাদ দিতে পারতাম না ! আমার কথা রাখতে গিয়ে শুভ তোকে বিয়ে করেছে সেই তোকে খুব ভালোবাসে ,হয়তো তুই জানিস না আমার সাথে শুভ রোজ কথা হয় আর আমি বলেছি তোর মোবাইল থেকে আমার ফোটো গুলো ডিলিট করতে তার কারন কি জানিস ? আমি চায় শুধু তোর মনের বন্ধু হতে ,এই সব শুনে রিয়া একবার শুভর দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে যে মানুষ টা কে একবার ও বলেনি তার মনে কথা ,সেই কি করে জানলো এইসব ! তার অলোক কে ভালো লাগে তাকে মনে ভাবে তার জন্য তার মন ছটফট করে ,তবে কি আজ সকালে আলোকে র সাথে পাহাড়ের গেসলো অনেক গলপ হলো এই সব শুভ জন্য ই তাকে খুশি র করার জন্য ই এইসব !
রিয়া এখন একা এইসব ভাবছে ,শুভ অলোক কে ছাড়তে গেছে ,কিছুক্ষণ পরে এলো শুভ তখন রিয়া নিজের থেকে শুভকে ধরে তার বুকে মাথা রাখলো ! কারুর মুখে কথা নেই কিন্তু মনের মধ্যেই অসংখ্য অনুভূতি কথা বলে গেলো ফিসফিসিয়ে ,শুধু শুভর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল এসে পড়লো রিয়ার গালের উপর ! ঠিক যেনো পদ্মপাতায় শিশিরের ফোটা পড়ে তা কেমন যেনো চকচক করে জ্বলে ওঠে সেই রকম রিয়ার গালে ঐ জলের স্পর্শ পেয়ে আগুনে র মতোন জ্বলে উঠল আর বলে উঠলো রিয়া যেখানে শেষ করে ছিলাম আজ তা শুরু করি বলে শুভ কে জড়িয়ে ধরে বললো আমাকে ভিজিয়ে দাও তোমার ঐ সুখ দিয়ে ! আবার আমরা শুরু করি নতুন পথ চলার জীবনের ছন্দ !
0 comments: