গল্প
সুখের সংসারের কালো ছায়া
অনাদি মুখার্জি
রামপুর গ্রামের মতি মাস্টার কে সবাই এক কথাতে চেনে ,তিনি ঐ গ্রামের মাস্টার খুবই সরল মিশুকে ,এই জন্য তার কাজে অনেক ছাত্র প্রাইভেট টিউসানি পড়তে আসে ! মতি বাবু তাদের কে বিনাপয়সা পড়ান ,সেই সুবাদে তাকে সবাই ভালো বাসে ! মতি বাবু সুখের সংসার তার পরিবারের তার বউ ,ও তার একমেয়ে এক ছেলে ,মেয়ে বড়ো নাম আলো ! মতি বাবুর মেয়ে ও খুব ভালো ,সেই বুভো বুড়ি ছোট্ট সবার সাথে শুধু বক বক করে আর মোবাইলে টুক করে সেলফি তুলে ,খুব হাসিখুশি একটা মিষ্টি মেয়ে ! বাপের মতোন তার ও মন খুব ভালো ! একদিন যখন আলো স্কুলে যাচছিল ,পথের মধ্যেই দেখলো একটা মেয়ে কাঁদছে ,আলো তার সামনে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে ,মেয়েটি বললো সেই আজ স্কুলে টাকা না দিলে সেই পরীক্ষা দিতে পারবে না ,তখন আলো তার টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে জমানো টাকা থেকে ঐ মেয়ে টা হাতে দিয়ে বললো যাও এইবার ! মতি মাস্টারের সংসার সুন্দর এই ভাবে চলতে লাগলো ,ও একছেলে ও এক মেয়ে কে মানুষ করতে লাগলো ! আলো স্কুল গন্ডি পেরিয়ে কলেজের ভর্তি হলো ,যতই বড়ো হচছে আলো দেখতেও তেমন সুন্দরী হয়ে উঠছে উপচেপড়া যৌবন আর সুন্দর চোখ ঐ গ্রামের সব ছেলেদের একটা নজর ঐ আলো তার চেয়াহা কথা বলা ও হাসি দেখলে সবার মন জুড়ে যায় ! একদিন আলোর মা মতি বাবু কে বললো মেয়ের জন্য একটা ছেলে দেখে আর রাখা যাবে না ,বিয়ে দিয়ে দিলে ভালো হয় ! এইদিকে আলো একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে এত দিন আলো কাউকে জানায় নি ! আলো খুব ভালো পড়াশোনা করতো এই জন্যই তার মাঝেমধ্যে মাথা ব্যাথা করতো ,আলো একটা সেরিডন খেয়ে সেই ব্যাথা কমিয়ে রাখতো ! কিন্তু যতদিন দিন বড়ো হচছে আলো তত এই মাথাব্যথা বেড়ে চলছে ,প্রচন্ড মাথাব্যাথা করতো ,একদিন তো কলেজের মধ্যেই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে ফিট হয়ে গেসলো ,,তাই একদিন আলো ও তার এক বনধু ডাক্তারের কাজে গিয়েছিল এর কারন জানতে ,ডাক্তার সব কিছু দেখে একটি মাথার স্ক্যান করে অবাক হয় ডাক্তার বাবু ! আলো জানতে চাই কি হয়েছে ডাক্তার বাবু ,ডাক্তার বললো মা তোমার ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে ,সাবধানে থাকো ! এই সব শুনে আলো খুব ভয় পায় ,জানে যার ব্রেন ক্যান্সার হয় সেই বেশী দিন আর বাঁচে না ! এইসব কিছু ই আলো তার পরিবারের লোকজন দের জানাই নি ! আলো ভাবছে সেই তো আর বেশী দিন নেই ,,সেই ও ঐ পরিবারের সুখ দেখে আর তার কথা বলে দুঃখ প্রলেপ দিতে চাই না সেই ! একদিন আলো বাড়িতে খাবার খাওয়া সময় তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হয় ও সাথে সাথে বুক ধড়ফড় করতে থাকে ,সাথে সাথে ডাক্তারের কাজে নিয়ে যাওয়া হলো ,ডাক্তার সব কিছু দেখে বললো অনেক দেরি করে ফেলেছেন ওর ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে ,অপরাশেন না করলে হবে না ! বাড়ির লোক সবাই অবাক এই মেয়ে ব্রেন ক্যান্সার এই কথা শোনা পর আলো মা সব সময় কাঁন্না করছে ,আলোর মায়ের কাঁন্না দেখে তার বাবা মতি মাস্টার বলে ঐ আলো মা এত চোখের জ্বল ফেলো না ,তোমার জ্বল দেখে আলোর মন ভেঙে যাবে ওকে সাহস দাও ,আমি আছি তো যেমন করে হোক আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে ! আলোর ভাবে সেই আর বেশী দিন নেই এই সব চিন্তা য় তার ও ঘুম নেই দিন দিন তার চেহারা ও খারাপ হয়ে গেলো ! মতি মাস্টার ও জানে এই সব রোগের খুব কম লোক বাঁচে ! তবুও সেই যেমন করে মন শক্ত করে আলো ও তার মায় কে বলে জানো আলো মা আমি কোনোদিন কাউকে খারাপ কিছু করেনি তবুও কেন ভগবান এত কষ্ট দিচছে ,বলে চোখের জ্বলে ভরে উঠে ! এই ভাবে একটা সুখের সংসারের এই ভাবে কালো ছায়া নেমে আসবে কে জানতো ! ডাক্তার বাবু একটা আশা দিয়েছে অপারেশন করলে ও ভালো হয় অনেক সময় ,তাই মতি বাবু অনেক ধার দেনা করে আলো কে হাসপাতালে ভর্তি করে অপারেশন করতে বললো ডাক্তার কে ! আলোর মায়েও মন খুব খারাপ চারদিন ধরে কোনো রান্না হয়েনি বাড়ির সবাই কেউ আর খেতে পারছে না এই আলো অবস্থা দেখে ,আলো সব সময় একই কথা বলছে মা আমার জন্য শুধু শুধু তুমি আর বাবা কষ্ট পাচছো আর তো আমি বেশি দিন নেই ,এই কথা শুনে মতি বাবু বলে মা আমি থাকতে তোকে হারতে দেবো ,আমার মেয়ে তুই জিতে আসবি ! শেষমেশ ডাক্তার অপারেশন করলো খুবই ভালো হয়েছে ,ডাক্তার কে দেখে আলোর ভাই ,বাবা ও মা উৎকণ্ঠা ভাবে শুধালো আমার মেয়ে কেমন আছে ! ডাক্তার হাসতে হাসতে বললো আপনার মেয়ের মনের জ্বর আছে সেই জন্য তার অপারেশন ভালো হয়েছে ! তিনদিন পর আপনার মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাবেন ! সেই কথা শুনে আলোর মা তার স্বামি বুকে মাথা রেখে অঝোর কাঁন্নায় ভাসিয়ে বললো ওগো আমাদের সংসার যে কুয়াশা ছিলো তা কেটে গেলো ! সুখের সংসারের যে শোকের ছায়া নেমে ছিল তা এখন আর নেই সেই শোক আকাশে মিলিয়ে গেলো !
0 comments: