সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন-31/08/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 31/08/2020  Upokontha sahitya patrika 31/08/2020

          "উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
              (ওয়েব ম্যাগাজিন)
            
প্রকাশ কাল:-30/08/2020, রবিবার 
               সময় :- দুপুর 12 টা 

সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577



🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆🎆

 ধারাবাহিক গল্প
 সিদ্ধিলাভ
          (শেষ পর্ব )

            🖊🖊 শাশ্বতী দাস

        "ওরে, কুমারী মায়ের সন্তানকে যে এই সমাজ মেনে নিত না। তাই বাধ্য হয়েই তোকে অনাথ পরিচয়ে বড়  করেছি। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতেেই বলেন প্রজ্ঞা দেবী।
        মোবাইল রিং হওয়ায় সম্বিত ফেরে দুজনের। হাসপাতাল থেকে অদিতির ফোন। "হ‍্যালো", গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দেয় সৃজা। "ম‍্যাডাম, আমি অদিতি বলছি। মিঃ নিলয় সেনের জ্ঞান ফিরেছে, উনি একবার আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন।"
         "ওকে, আমি আসছি।" বলে ফোনটা কেটে দেয় সৃজা। "মা, চলো।" প্রজ্ঞা দেবীর হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় সৃজা। "কোথায়"?  প্রজ্ঞা দেবী অবাক হন মেয়ের কথায়। "হাসপাতালে। নিলয় সেনের জ্ঞান ফিরেছে, উনি আমার সঙ্গে  দ‍্যাখা করতে চাইছেন। চলো মা। আজ যে সময় হয়েছে নিলয় সেনের মুখোমুখি দাঁড়ানোর, আজ সিদ্ধিলাভ করেছো তুমি। তোমার দয়াতেই, তোমার সন্তানের হাত ধরেই প্রাণ ফিরে পেয়েছেন বিজনেস ম‍্যাগনেট নিলয় সেন। আজ তুমিই জয়ী। নিলয় সেন হেরে গেছেন তোমার কাছে। এই কথা তাঁকে নিজের মুখে জানাবেনা তুমি! আজ যে সময় হয়েছে মা, এসো আমার সঙ্গে।" প্রজ্ঞা দেবীর হাত ধরে গাড়িতে ওঠে সৃজা। "ড্রাইভার, হসপিট‍্যাল চলো।" বলে মায়ের কাঁধে মাথা রাখে সৃজা। মেয়ের মাথায় পরম মমতায় হাত রাখেন প্রজ্ঞা দেবী। সত্যিই আজ পূর্ণ হয়েছে তাঁর সাধিকার জীবন। আজ তিনি সিদ্ধিলাভ করেছেন।

                ( সমাপ্ত )







এক অদ্ভুত পরিচয়
         আব্দুল রাহাজ

অনেকদিন পর শীতের শুরুতে ওরা মামার বাড়ি যাচ্ছে পৌষ সংক্রান্তি মেলা দেখতে গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে শুশুক রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে বেশ আরামদায়ক জায়গা পেল মামার বাড়ি যেতে বেশ অনেকক্ষণ লাগবে সৈকত একা পাশে বসে আছে সব বয়স্ক মানুষ সামনে বসে আছে সম বয়সী একজন মেয়ে একবার চোখ পড়লেও সামনের স্টেশনে নেমে যায় সেই মেয়েটি তারপর বেশ অনেক্ষণ বাইরের দিকে ফিরে দেখল মানুষের ব্যস্ততার জীবন পাশে বসে থাকা লোক গুলো সবাই নেমে গেল পাশে এসে বসলো একজন প্রবীণ মানুষ তিনি খুব আলাপ প্রিয় খুব হাসতে থাকে পাশে বসে। বয়স ওই
ষাটের উপরে মনে হয় তারপর ওর সাথে কথা বলতে শুরু করল সৈকত অবাক হয়ে গেল বাড়ি থেকে বলে দিয়েছে অচেনা মানুষের সাথে কথা বলতে বারণ করতে সৈকত একঘেয়েমিতা দূর করার জন্য সেই প্রবীন মানুষের সাথে কথা বলল সৈকত বলল দাদা আপনার নামটা কি বলল জগমোহন চাটুজ্জে সৈকত বলল আচ্ছা তারপর জগমোহন বাবু সৈকতকে বললো কোথায় যাওয়া হচ্ছে রে সৈকত বলল মামার বাড়ি যাচ্ছি নিশ্চয়ই পৌষ সংক্রান্তিতে জগমোহন বাবু বললো আপনি কি করে জানলেন আরে এতো বয়স হয়েছে জানবো না। বেশ খোলামেলা লোকটি সৈকতের সাথে বেশ মিশে গেল মনে হয় কোনো সমবয়স্ক এরপর জগমোহন বাবু বললেন বাছা তোমার নামটা কি বললেন আমার নাম সৈকত বারুজ্জি ও আচ্ছা পড়াশোনা কোথায় হয় ওই তো আমাদের গ্রামের বাড়িতে টেংরা কাটি হাই স্কুল আচ্ছা। সৈকত বলল দাদু আপনি এরকম অভিনয় এর মতো কথা বলো কেন বাসের যাত্রীরা সবাই ওদের দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিল কেউ কেউ হাসছিল তারপর দাদু বলল আমি টিভিতে একটু অভিনয় করি এই যা সৈকত বলল তাহলে তো আমি আপনি গণ্যমান্য ব্যক্তি তাহলে আমাদের সাথে কেন আরে সৈকত এখান থেকেই তো আমাদের উঠে আসা সেজন্যই যাতায়াত করি এইতো একটু পরেই টালিগঞ্জ নেমে পড়বো দেখবি আমার একটা বইতে অভিনয় চলছে এখন সেটা বার হলে দেখিস কেমন লাগে আমার অভিনয় সৈকত বলল আপনি যে কথা বলছেন তা দেখে আমি অনেক মুগ্ধ হয়ে গেছি সেগুলো আপনার ফোন নাম্বারটা একটু দেবেন ডায়েরিতে নোট বুক করে নিল এরপর সামনে টালিগঞ্জ প্লেস্টেশন আসতেই মোহন বাবু নেমে গেল পাশের লোকেরা বলল তুমি খুব ভাগ্যবান ছেলে এরপর সৈকত ভেসে গেল এক অন্য জগতের অন্য পৃথিবীতে আসছে মামার বাড়ি চলে গেল। বেশ আনন্দে পৌষ সংক্রান্তি মেলা কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামে ফেরি ঘাটে এসে মন মাঝি কে বলল যেন আমি না টিভিতে অভিনয় করার একজনের সাথে পরিচয় হয়েছে মনো আছে বলে বাহ বেশ ভালো ভালো এরপর ওরা নিজেদের গ্রামের ফেরি ঘাটে এসে বাড়িতে চলে এলো সৈকত ওই কথাগুলো খুব মনে পড়ছিল ওর কাছে এরপর থেকে তার কাছে জগমোহন বাবুর পরিচয় হয়ে উঠল এক অদ্ভুত এক অদ্ভুত আজীবন মনে রেখেছিল ওপাড়ার সৈকত ‌।









উপকন্ঠ " মহরম সংখ্যা ২০২০" র অসাধারণ প্রচ্ছদ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এই কবিতায়:

         মুক্তির বার্তা
            সৌম্য ঘোষ


  আকাশ বাতাস জুড়ে এতো শোক
দেখিনি কোনদিন কেউ,
শোনেনি  এমন  মর্মবিদারী কান্না ,
শোনেনি এমন ধ্বনি , "  হায় হাসান! হায় হোসেন!"
যে ধ্বনিতে মিশে যায়
মানবতার ক্রন্দন !
কারবালার প্রান্তর রঞ্জিত হলো
শহীদের রক্তে---
ইমাম হোসেনের পবিত্র দেহ !
লুটিয়ে পড়ল সেদিন ইসলামের
সাম্য ও মৈত্রীর সবুজ ঝান্ডা !
শোক হলো পাথর ,
নিভলো পরমত সহিষ্ণুতার বাণী !

সেই শোক  বুকে নিয়ে যাব --
মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে
জনপদ ছেড়ে দূরে বহুদূরে ।।









কবিতা
    আমার শহর
              মিনতি গোস্বামী

আমার
শহরে রোজ
বাড়ছে সংক্রমণের গ্ৰাফ
সন্ধ‍্যেতে দেখি পৌরসভার চার্ট হিসেব কষতে কষতে দেওয়ালে পিঠ
জানিনা শেষ কবে মৃত্যুর লুকোচুরি খেলা।

দিন গুজরাতে গুজরাতে কেটে যায় বেলা।
কবে খুলবে এই গন্ডীর গিঁট
ধুকপুকুনিতে বন্ধ হবে হার্ট?
লেখা হবেনা এপিটাফ !
মানুষ নিখোঁজ
দেদার।








      সাক্ষী ইতিহাস
                 হামিদুল ইসলাম
                 
 একদিন এসো
কবিতার ছন্দ তুলে রাখি বুকে
তোমার জন‍্যে  ।

তোমাকে ভালোবাসি
তুমি আমার
তোমার সাথে প্রেম, হে প্রেম কন‍্যে  ।

আর কতোদিন অপেক্ষা
মনের গভীরে উদ্বেগ
তোমাকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিই ।

ধরে থাকি নৌকোর হাল
চাঁদনি রাতে তুমি আমি দুজনে এক আকাশ
প্রেম দিয়ে তোমাকে সাজাই  ।

তোমার জন‍্যে ভাঙি জলকাদা
পাহাড়ি চাঁদ
তুমি আমার মনে শরতের আকাশ  ।

এখন আকাশে তুমি আর আমি
ভুলে যাই পৃথিবীর রূপ
আমরা দুজন দুজনের জন‍্যে সাক্ষী ইতিহাস ।








কবিতা:
      আমার কবিতার প্রতি
                      বিশ্বজিৎ কর

আমার সকালের বাতাস এনে দাও-
স্বচ্ছ,হিমেল,তোমার গন্ধমাখা!
কতদিন দেখিনি তোমায়,
কত হাসি স্বস্তি দেয়নি,
কত ছোঁয়া ছটফট করছে,
কত দেখা ডুঁকরে কাঁদছে!
কত যত্ন আলোর অপেক্ষায়,
কত কথা সুর-তালহীন,
উঠোনে এসে দাঁড়াও,কবিতা!
আমার বাতাস ছুটছে তোমাতে.....
গায়ে মেখে নিও,আমি আসছি!








 নিঃস্বার্থের অর্থ
       জুয়েল রূহানী

অর্থ-বিত্ত প্রাচুর্যতায়
কি হবে ভাই এই দুনিয়ায়?
কর্মে যদি না হয় ভবে-
এই দুনিয়ার স্রষ্টা সহায়!

কি হবে আর প্রাচুর্যতায়?
জীবন গড় দানশীলতায়,
মুক্তি পাবে পরকালে-
আল্লাহ মহান হবেন সহায়।

সবাই আপন জীবন গড়
স্বার্থ ভূলে এই দুনিয়ায়,
নিঃস্বার্থের অর্থ বুঝে-
নাযাত পাবে প্রভূর দয়ায়।











বিদ্রোহী নজরুল
            বিপ্লব গোস্বামী

বিদ্রোহী নজরুল
সঙ্গীতের বুলবুল
গেয়েছো সাম‍্যের গান‌।
চির নির্ভীক
ন‍্যায় সৈনিক
করেছো সত‍্যের জয়গান।

কবিতা ছড়া
বিদ্রোহে ভরা
বাজিয়েছো বিষের বাঁশি।
পালটাতে ধারা
কেটেছো কারা
মা মানুষেরে ভালোবাসি।

হে নারীবাদী
হে সাম‍্যবাদী
গেয়েছো সম্প্রীতির গান
হে ধুমকেতু
সাম‍্যের হেতু
প্রণম‍্য তোমার অবদান।








শরৎ এলে
     চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

শরৎ এলে দোল খেয়ে যায়
সাদা কাশের বন,
তুলোর মত মেঘ গুলো সব
উদাস করে মন।

শরৎ এলে শিশির ভেজা
ঘাসের ডগাই হাসে,
মাঠে মাঠে পাগলা হাওয়ায়
সবুজ ফসল ভাসে।

শরৎ এলে শাপলা শালুক
নদীর জলে ফোটে,
দুষ্টু ছেলে সাঁতার কেটে
অমনি সেদিক ছোটে।

শরৎ এলে পাখীর গানে
জুড়ায় সবার প্রান,
আকুল করে শিউলী টগর
জুঁই চামেলীর ঘ্রান।

শরৎ এলে জোনাক মেয়ে
ছড়ায় শুধু আলো,
এই শরতে আনন্দ ঢেউ।
তাইতো লাগে ভালো।






To Kite
A poem by S. Sundar Mondal 

Up above the blue sky,
Oh Kite ! Only You can soar high.
None can ever touch You,
As You're big, boundless too.
When You bring a sudden flight,
Everyone becomes fright a slight.
Make everything seen,
Still You stay unseen.
We all preys so feel always suspense
And spend time counting every moment.
Oh,Kite,come with no fright but love bright
In Your nest within our heart-lite.









অনুকবিতা 
            প্রেমহীন শিমূল
                   ডঃ রমলা মুখার্জী

তোর জন্যে গেঁথেছি দেখ, প্রেমের ফুলের মালা-
ভালোবাসায় সাজিয়েছি আমার অর্ঘ্য ডালা।
কেন তুই ফিরিয়ে দিস আমায় বারে বারে,
কালো গাত্রবর্ণে আমার কি দোষ ওরে?

এই দেখ, আমি করেছি ডাক্তারিটা পাশ-
শিমূশ ফুল তুই, এপাশ, ওপাশ, ধপাস।
এবার কেন এসেছিস আমার কাছে তুই?
এই প্রেম তো চাই নি আমি, স্পষ্ট কথা কই।










একটা এমন কিছু
                  শুকদেব পাল

একটা ঝরা পাতা হাজারো অজানা কাহিনীকথা ,
একটা অনুভুতি মৃত্যুর সমান গভীর জখম ,
একটা দুঃখ চিরকালের নিস্তব্ধ নিরবতা ...
একটা শর্ষেরদানা চাষীর অকান্ত পরিশ্রম ।
একটা পৃথিবী একটা মানুষের একগ্রাস খাদ্য পিন্ড ,
অসীম বেদনার পুঞ্জীভূত ক্ষোভেপূর্ন একটা কালো রাত্র ,
একটা ন্যায় বিচার লক্ষ যুবকের মানদন্ড ।
এক কোটি তারা একটুকরো আকাশের ক্ষীণ আলো মাত্র !
একটা তারাখসা অসংখ্য মানুষের জমানো বিশ্বাস ।
একটা ইচ্ছা কোটি কোটি মানুষের আশা - ভরসা - জীবন ।
একটা ভাতের খণ্ড শত পিপড়ের একদিনের উল্লাস।
একটা কবিতা সহস্র ভাবনার মিশ্রণ ...... ।
একটা সুযোগ বানাতে পারে তোমায় মহান ।
ছোটো ছোটো খড় কুট সঞ্চয়ে তৈরি হয় একটা নীড়।
একটা শব্দ হাজারো স্বপের অবসান !
একটা সিদ্ধান্ত ভাঙতে পারে প্রচলিত অভেদ্য প্রাচীর ..
একটা কণা চক্ষুশূল করে তা হোক না ধানের তুষ !
একটা ক্ষমা দুর করে দেয় রাগের পাহাড় ।
একটা অনুপ্রেরণা নির্বোধ কেও করে তোলে মানুষ ।
একটা ছোটো হাসি লুকিয়ে রাখে দারিদ্রতা অনাহার ....









    ফুলদানি
         সত্যেন্দ্রনাথ পাইন


     আমি ফুলদানি।
কেন আজ রিক্ত নিশীথে
কেন শুধু পড়ে অশ্রুজল?

মনে পড়ে,  কত না বিচিত্র  ফুল
একদিন সাজানো হোত
    আমার বুকের মাঝখানে।
ছিল পরিপূর্ণ সে,  রজনী, গোলাপ, জুঁইয়ের
   ভালোবাসায় পরিপাটি আকর্ষণে ছিল মোহিনী রূপা
     ক্ষণিক বিরহে
      ব্যাকুলতায়
ভরে যেত হৃদয়ের কানন।

 হাসি কান্না বেদনায়
   সতত শুনে নিত
মিলনের প্রান্তদেশে নয়নের নেশা
    জীবনের বসন্ত বেলায়।

আজ বুক ফেটে যায়
   চোখে ঝরে অনাবিল অশ্রু
মলিন হয়ে পড়ে আছি-----
কেউ আসেনি ধুলো ঝেড়ে
   দেখাতে নিখিলের  শোভা!

কেউ ভাবেনি আমার ফুল হীন জ্যোতি
        অনন্ত সজ্জায়
    কেন আজ শয্যা হীন

কোথায় আমার দেবতা
   কোথায় পাব তারে?

এ তর্ক নয়, এ হৃদয়ের  ফেটে পড়া
             হাহাকার।
কে বুঝবে এ শুধু চোখের জল নয়
   নয় অনন্ত ভর্ৎসনা!

চাই কিঞ্চিৎ অনুগ্রহ।
 অপবিত্র আমি  নই
আমার  চাহিদা তোমাদের
  বসন্ত সমীরণশুধু
আর কুসুমের প্রবাহে
 সৌরভের শুভ্রতনু।










রাজপথ 
------- শক্তিপ্রসাদ ঘোষ

অন্ধকার থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে
রুগ্ন আলোর দিকে চেয়েছিলাম
দূরের কোন হলুদ চিঠির অপেক্ষায়
বৃষ্টির জলে ধোয়া ঘুমন্ত রাজপথ
তোর্ষার জলে স্নান সেরে নেয়
রাজপথ লাল সুরকি মেখে ইতিহাস
জীবনের সুগন্ধ মাখে চিতার আগুনে
স্মৃতি ঘরে জমে থাকা চাবিকাঠি
ঋতুবদলের দিনে অঝোরে বৃষ্টি নামে।



রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০

উপকণ্ঠ মহরম সংখ্যা-2020

 উপকণ্ঠ মহরম সংখ্যা- 2020 Upokontha Maharram issue-2020

উপকণ্ঠ মহরম সংখ্যা- 2020

           "উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
              (ওয়েব ম্যাগাজিন)
                    বিশেষ সংখ্যা 
       "উপকণ্ঠ মহরম সংখ্যা- 2020"

প্রকাশ কাল:-30/08/2020, রবিবার 
               সময় :- দুপুর 12 টা 

সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

প্রচ্ছদ ডিজাইন- সেক আসাদ আহমেদ

🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌
             লেখক তালিকা
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇

বিভাগ-প্রবন্ধ

1) মৌলানা শফিকুল ইসলাম
2) শিবব্রত গুহ
3) সৌম্য ঘোষ

বিভাগ-ছোটোগল্প

1) আব্দুল রাহাজ
2) সৌমেন সরকার

 বিভাগ- Short Story◆

1) ড. মহীতোষ গায়েন

বিভাগ - লিমেরিক 

    1)  সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
    2) অনিমা মাইতি

বিভাগ- অনু কবিতা ও কবিতা


  1.  বিশ্বজিৎ কর 
  2. প্রদীপ কুন্ডু
  3. সুনন্দ মন্ডল
  4. চিত্তরঞ্জন গিরি
  5. উমর ফারুক
  6. সেখ  নুরুল হুদা 
  7. হামিদুল ইসলাম 
  8. কনিকা রায়
  9. আব্দুল বাসেত 
  10. টুম্পা ঘোষ দেবনাথ 
  11. গোবিন্দ মোদক 
  12. রুহুল আমিন 
  13. বদরুদ্দোজা শেখু
  14. সেক আসাদ আহমেদ 
  15. জুয়েল রুহানী

বিভাগ- স্মৃতিকথা

1) মিনতি গোস্বামী
2) টুম্পা মুখার্জী


🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌

               বিভাগ - প্রবন্ধ
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••



কারবালা ও মুহাররম
          মৌ লা না   শ ফি কু ল   ই স লা ম

হজরত আলী (রা‌ঃ) দ্বিতীয় পুত্র হজরত হুসাইন (রা) ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা নামক প্রান্তে শহীদ হন, মুহাররম  মাস ও আশুরার (10ই মুহাররম)দিনটা মুসলিম জাহানের কাছে একটা গুরুত্ব পূর্ণ দিন। রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারনে তখনকার শাসনকর্তা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে ৬১হিজরীতে মহানবী সাঃ এর দোহিত্র জান্নাতের সর্দার ঈমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু শাহাদত বরণ করে ছিলেন।ইয়াজিদের হুকুমে  তার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ এর নেতৃত্বে হজরত হুসাইন রা কে নির্মম ও পৈশাচিক ভাবে হত্যা করা হয়েছিল ।ইসলামের ইতিহাসে বহু সাহাবী ও খলীফা  হজরত উসমান (রা), হজরত আলী(রা),হুসাইন (রা) এর চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ মহান ব্যক্তির হত্যা কান্ড হয়ে থাকলেও ৬১হিজরীর ঘটনা এতটাই নির্মম ও পৈশাচিক ছিল যে কঠিন হৃদয় কেও সাড়া দেয় ও কেয়ামত পর্যন্ত জালিমদের ধিক্কার জানাতে মুমীন মুসলমানদের হৃদয়কে উদ্বুদ্ধ করবে।কিন্তু কি ভাবে ইয়াজিদের হাতে শাসনব্যবস্থা গেল,দয়ার নবী মহানবী সাঃ তার ইন্তেকালের পূর্বে কোন উত্তরাধিকারী নির্দিষ্ট করে যান নি।তিনি জনগণের উপর উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ভার ছেড়ে দিয়ে গিয়ে ছিলেন।ফলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চার খলীফা  হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা), হজরত উমর ফারুক (রা),হজরত আলী (রা),হজরত উসমান গনি (রা) নির্বাচিত হন।কিন্তু উমাইয়া রাজবংশের  প্রতিষ্ঠাতা হজরত মুয়াবিয়া (রা) খিলাফত লাভের সাথে সাথে বংশানুক্রমে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন।৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা হজরত মুগীরা (রা) প্রচেষ্টায় হজরত মুয়াবিয়া (রা) তার পুত্র ইয়াজিদের হাতে শাসনব্যবস্থার ভার তুলে দেন।হজরত মুয়াবিয়া (রা) ও হজরত মুগীরা (রা) দুজনেই সাহাবী ছিলেন, তাই ভুল হওয়া স্বাভাবিক।আর এই ভুলই ইসলামের ইতিহাসকে ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করেছে। ইসলামের শাসন ব্যবস্থার মূলে চরম কুঠারাঘাত করেছে। কুফাবাসী ইয়াজিদের শাসন ব্যবস্থাকে কিছু মতেই মেনে নিতে পারেননি,তাই তার অপশাসন থেকে বাঁচার জন্য বারংবার হজরত ঈমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কে আসার জন্য পত্র লেখেন।কুফাবাসীর পত্র পেয়ে ঈমাম হুসাইন (রা)নিজের চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকিল কে কুফার অবস্থা জানার জন্য পাঠান।কুফাবাসী মুসলিম (রা)আগমনের সংবাদ পেয়ে দলে দলে এসে ঈমাম হুসাইন (রা) জন্য বাইয়াত হন, যার সংখ্যা প্রায় বার হাজার ছিল।মুসলিম (রা) কুফাবাসীর সাহায্যের আশ্বাস পেয়ে হজরত ঈমাম হুসাইন (রা) কে আসার জন্য পত্র পাঠান ও তিনি হানী বিন উর ওয়াহ (রা)বাড়িতে আশ্রই নেন।কিন্তু এরই মধ্যে ইয়াজিদের অধীনস্থ ইরাকের শাসনকর্তা ইবনে জিয়াদ হজরত মুসলিম (রা) কে খুঁজে বের করে ও তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে ও তার সাহায্যকারী হানী বিন উর ওয়াহ কেও হত্যা করে।এতে কুফাবাসী ভীত হয়ে পড়ে।কুফাবাসী ঈমাম হুসাইন (রা) কে খলীফা হিসাবে চাইলেও তার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতে রাজী ছিল না।ঈমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলিম বিন আকিল এর পত্র পেয়ে স্ত্রী পুত্র কন্যা সহ দুশো  সহচর নিয়ে কুফা পথে যাত্রা করলেন। ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ঈমাম হুসাইন (রা) কে ইয়াজিদের আনুগত্যের প্রস্তাব দেয়,হুসাইন (রা) তা প্রত্যাখ্যান করে।ফলে তারা ফোরাত নদীর তীরে দন্ডায়মান হয় ও হুসাইন (রা) পানি সরবরাহ পথ বন্ধ করে দেয়।পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যায়।হুসাইন (রা)দুরবস্থা দেখে তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি গ্রহণের অনুরোধ করে।এক তাকে মদীনায় ফেরত যেতে দেওয়া হোক,দুই ইয়াজিদের সাথে আলোচনা করার জন্য দামেস্কে যেতে দেওয়া হোক,তিন কিংবা তুর্কি সীমান্তে অবস্থান করতে দেওয়া হোক।ইবনে জিয়াদ কোনটাই মানলো না।অবশেষে কারবালা প্রান্তরে অসম যুদ্ধ শুরু হলো। হজরত হুসাইন (রা) শিশুপুত্র কে কোলে নিয়ে অগ্রসর হলে একটি তীর বিদ্ব  হয়ে শিশুপুত্র টি শাহাদত বরণ করে।হুসাইন(রা) শিশুপুত্রের মৃত্যুতে মর্মাহত হলেন আর আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন আপনি এর ফায়সালা করুন।অতঃপর হুসাইন (রা) নিজের বাচ্চা কে একটি ইয়ামানি চাদরে ঢেকে দিয়ে তলোয়ার হাতে যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়লেন।বীরবিক্রমে যুদ্ধ করতে করতে ঈমাম শহীদ হলেন।ঈমাম হুসাইন (রা) মাথা শরীর থেকে আলাদা করে ইবনে জিয়াদ ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার দরবারে পাঠিয়ে দিলো।এই ভংকর দৃশ্যে কঠিন হৃদয় ও বিগলিত হলো।আহমাদ বিন দাউদ আবু হানিফা দিনওয়ারি তার কিতাব, “আখবার আত তাউল”-এর পৃষ্ঠা নং ২৭৯ (মিশর প্রিন্ট) উবায়দুল্লা ইবনে যিয়াদের স্বীকারোক্তি উল্লেখ করেছেনঃ 
ما قتلي الحسين فإنه خرج على إمام وأمه مجتمعة، وكتب إلى الإمام يأمرني بقتله، فإن كان ذلك خطأ كان لازما ليزيد، وأما بنائي القصر الأبيض، فما فكرتي 
“আমি হুসাইনকে হত্যা করেছি এই কারনে যে, সে আমাদের ইমামের (ইয়াজিদ) বিরুদ্ধে ক্বিয়াম করেছে আর ঐ ইমাম (ইয়াজিদ) আমাকে লিখেছে, হুসাইনকে হত্যা করতে। এখন এটা যদি গোনাহ হয় তবে ইয়াজিদ এই জন্য দায়ি।”
  হুসাইন(রা) পরিবারের সদস্যদের জীবিত দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে পাঠানো হয়।এদিকে ঈমাম হুসাইন (রা)মৃত্যুর ভয়াবহ দৃশ্য পুরো দেশকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। ইয়াজিদ ক্ষমতা নিরাপদ রাখতে ও জনরোষের ভয়ে কৌশলে বন্দীদের মুক্ত করে মদীনায় পাঠিয়ে দেয়।কারবালার ইতিহাস মলিন হওয়ার নই। এ এক অসাধারণ ও অদ্বিতীয় শাহাদত,এমন এক   হৃদ়য়বিদারক ঘটনা যার কোন নজির নেই। এত দীর্ঘস্থায়ী ও এত ব্যাথা মুসলিম জাতির কোন শহীদের জন্য হইনি। এই শোক এই প্রতিবাদ মুসলিম জাতির উপর চেপে বসা নব্য ইয়াজিদদের কে কম্পন ধরিয়েছে।

**মুহাররম ও আশুরা**

মুহাররম এটি হিজরী সনের বা আরবী বর্ষের প্রথম মাস পবিত্র কোরআন শরীফ বা হাদীস শরীফ যা এসেছে তা হলো এটি অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ মাস কুরআনের ভাষায় আর্বায়াতুল হুরুম অর্থাৎ  চার সম্মানিত মাস,তার মধ্যে মুহাররম মাস একটি।এই মাসে রোজা রাখার অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত আছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন রমজানের রোজার পর মহররম মাসের রোজা সর্বশ্রেষ্ঠ।  (সহীহ মুসলিম ২/৩৬৮ ,জামে তিরমিযী ১/ ১৫৭)
আর মুহাররম মাসের 10 তারিখ কে আশুরার দিন বলা হয়। আশুরার রোজার ফযীলত আরও বেশি। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন আমি রসূলুল্লাহ সা. কে রমজান ও আশুরার রোজা যেরকম গুরুত্বের সঙ্গে রাখতে দেখেছি অন্য সময়  তা দেখিনি। (সহীহ বুখারী ১/২১৮ )
হজরত আলী রা. কে এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলেন রমজানের  পরে আর কোন মাস আছে যে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করবেন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে এক জৈনিক সাহাবী করেছিলেন তখন আমি তার খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন "রমজানের পরে যদি তুমি রোজা রাখতে চাও তাহলে মুহাররম মাসে রোজা রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে যে দিনে আল্লাহ একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।   (জামে তিরমিযী ১/১৫৭)
এই মাসে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা নিজের কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনী ইসরাইলদের জন্য সমুদ্রে রাস্তা করে দিয়েছিলেন। আর ওই রাস্তাতেই ফিরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে মেরে ছিলেন। (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড পৃঃ৪৮১)
তাহলে বোঝা গেল আশুরার দিনের ফযীলত শুধু হুসাইন রা. শহীদ হওয়ার জন্যই নয়  বরং এই দিনের ফযীলত হজরত আদম আঃ থেকেই।
বর্তমানে মুহাররম ও আশুরা কে কেন্দ্র করে নানা কুসংস্কার ও অ-ইসলামিক কাজে বেশির ভাগ মানুষই লিপ্ত আছে যার কোন ভিত্তি কুরআন হাদীসে নেই।যেমন তাজিয়া করা,শোকগাঁথা পাঠ করা,মিছিল বের করা, এগুলি বিধর্মীদের প্রতিমা বিসর্জনের অনুসরণ করা। ১০ই মুহাররম শরীর থেকে রক্ত ঝরানো,এই সমস্ত কাজ যা কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী হারাম।আল্লাহ তায়ালা নিজের উপর  অত্যাচার করতেও নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ কুরআনের ইরশাদ করেছেন যে — "সুতরাং  তোমরা এর মধ্যে নিজেদের উপর অত্যাচার করো না " (সূরা তওবা আয়াত ৩৬)
কেননা প্রত্যেক মানুষের প্রাণের  আসল মালিকানা আল্লাহ তায়ালা,আমরা শুধু ভোগ করার মালিক। আমাদের কাছে এটা আমানত। কুরআনে উল্লেখ্য যে আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে তাদের জন্য জান্নাত আছে।(সূরা তওবা,আয়াত ১১১)
তাই মানুষ নিজের প্রাণকে কষ্ট দিতে পারে না,রক্ত ঝরাতে পারে না যদি এ রকম করে তাহলে আল্লাহর আমানত এর খিয়ানত  করলো। আর খিয়ানত কারি কখনই মুমীন হতে পারে না।সুতরাং মাতম করে শরীরকে ক্ষত বিক্ষত করে কখনোই ঈমানদার হতে পারে না। হজরত আবু বুরদা ইবনে মুসা রা.থেকে বর্ণিত হুজুর সা. বলেন আমার সাথে ঐ ব্যক্তির সম্পর্ক নেই যে মাথা কেশ ছিন্ন করে, উচ্চস্বরে বিলাপ করে এবং জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে।(সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০৪)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বোঝার তৌফিক দান করুক (আমিন)


                               —::—





রক্তেভেজা কারবালা
            শি ব ব্র ত  গু হ

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক নৃশংস ঘটনার উদাহরণ আছে। তার মধ্যে একটি ঘটনার
কথা আমি আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরার
আপ্রাণ চেষ্টা করবো। এর কথা মনে পড়লেই,
হৃদয় ভরে ওঠে দুঃখে। এই নৃশংস ঘটনা লজ্জা
দেয় মানবিকতাকে। যারা যারা এই ঘটনার
সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদেরকে আমি অন্তত মানুষ বলে মনেই করি না।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এক পরব অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছর।
এর নাম আমাদের সবার জানা আছে, তবুও বলি।
এর নাম হল মহরম। ইমাম হোসেইন ছিলেন
নবী হজরত মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমার পুত্র এবং হাসানের কনিষ্ঠ ভাই। ইমাম হোসেইন ইসলামের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বও
বটে।
ইমাম হোসেইন ছিলেন একজন মহান ব্যক্তি।
তাঁর মহানতার বিবরণ দেওয়ার মতো শব্দ আমার কাছে নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি, যে, পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয়েকজন মহান ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ইমাম হোসেইন হলেন
একজন ব্যক্তি। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন।
এই দুনিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে, আমরা দেখতে পাবো, যে, যে সকল মহান ব্যক্তি মানুষকে
ভালোবেসেছেন , তাদের ভালো করার চেষ্টা করেছেন সারাজীবন ধরে, সেই তাঁদের,
, তাঁদেরই ক্ষতি করার জন্য দুষ্ট লোকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে।
মুহররম হল ইসলামি বর্ষপঞ্জির এক মাস। ইসলামের চারটি পবিত্রতম মাসের মধ্যে হল
এটি একটি। প্রাচীন কাল থেকে মুহররম মাস
পবিত্র হিসাবে গণ্য করা হয়ে এসেছে। মহরমের
১০ তারিখ হল এক বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন দিন।
যাকে বলা হয়ে থাকে " আশুরা "। এক বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হল এই মাস।
শিয়া ও সুন্নী, বিশ্বের দুই ধরনের বৃহৎ মুসলমান সম্প্রদায়, দুইরকম ভাবে, মহরম পালন করে থাকে। কয়েকজন ঐতিহাসিকদের মতে, এজিদের
রাজত্বকাল, তিনটি দুষ্কর্ম্মের জন্য কুখ্যাত। প্রথম বছরে, তার দ্বারা মহানবীর আদরের দৌহিত্র ইমাম হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
যা বিশ্ব মানবতাকে করেছিল কলঙ্কিত।
দ্বিতীয় বছরে, সে মহানবীর স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র
মদিনাকে লুন্ঠন করেছিল। তৃতীয় বছরে, সে, ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের পবিত্র ধর্মস্থান মক্কার
কাবা শরীফের ওপরে করেছিল হামলা। আমি,
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এজিদ, ছিল মানুষরূপী
এক অমানুষ। সে যা যা দুষ্কর্ম করেছে, সারা জীবন ধরে, তার জন্য, সারা বিশ্বের মানবজাতি
তাকে কোনদিনও দেখবে না শ্রদ্ধার নজরে,
তাকে, চিরকাল দেখবে ঘৃণার নজরে।
ইমাম হোসেনেকে, আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে, শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষেরাই নয়,
সারা পৃথিবীর মানবজাতি। তাঁর মহান জীবনকাহিনী এখনো প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে অনেক মানুষকে। তিনি হলেন বিশ্ব মানবতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। তাঁর আত্মত্যাগের কোন তুলনাই হয় না। তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা।
সারা পৃথিবী জুড়ে, অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে মহরম পালিত হয়ে থাকে। এই মহরমের সাথে জড়িয়ে আছে এক নির্মম ইতিহাস। এবার আমি সেই ইতিহাস আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
উমাইয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুয়াবিয়া,
খলিফা পদ লাভ করার পরে, বংশানুক্রমিক
রাজতন্ত্রের করেছিলেন সূচনা। ৬৭৬ সালে, বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিবার কুপ্ররোচনায়,
তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্র এজিদকে তার উত্তরাধিকারী
মনোনীত করেছিলেন।
এজিদের বদগুণের কোন অভাব ছিল না। সে ছিল
এক নিষ্ঠুর, বিশ্বাসঘাতক, অধার্মিক ও মদ্যপায়ী
ব্যক্তি। তার নিষ্ঠুরতা ইতিহাসকে দেয় লজ্জা।
এজিদের খলিফা মনোনয়ন, অনেকে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু, ধার্মিক, সৎ ও বিশ্ব মানবতার প্রতীক ইমাম হোসেন সহ কতিপয় ব্যক্তি, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। কিছুদিন পরে,
অবশ্য, বিরোধীদের এক বড় অংশ, অর্থের বিনিময়ে, এজিদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল।
এজিদ দ্বারা প্রবর্তিত কুশাসন, ইমাম হোসেনের পক্ষে, কোনভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
কারণ, তাঁর চিন্তাভাবনা ছিল মহৎ। খিলাফত
ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম
প্রধান লক্ষ্য। কুফাবাসীরা, এজিদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যে, বারবার ইমাম হোসেনের সাহায্য প্রার্থনা করেছিল। তাদের প্রার্থনায় আর থাকতে না পেরে, ইমাম হোসেন অবশেষে, কুফা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁর জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও।
তিনি, কুফার সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য, তাঁর কাকাতো ভাই, মুসলিম - বিন - আকিলকে, সেখানে পাঠিয়েছিলেন। কতিপয় কুফাবাসী, ইমাম হোসেনকে, কুফায় আসার মিনতি করে চিঠি লিখেছিলেন। এজিদের অধীনস্হ ইরাকের শাসনকর্তা, কঠিন হৃদয়ের শয়তান, ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ, তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে, নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।
এতে, কুফাবাসীরা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
তারা হারিয়ে ফেলল তাদের মনের সব সাহস।
তারা ইমাম হোসেনেকে সমর্থন করার সাহস আর পেল না। কিন্তু, তারা মনে মনে, ইমাম হোসেনকেই,
খলিফা হিসাবে দেখতে চাইত। তবে, তা করতে গিয়ে তারা তাদের প্রাণ বিসর্জন দিতে চাইছিল না।
এজিদের নির্মমতার কথা মনে রেখেই, কিছু লোক,
শুধুমাত্র, ইমাম হোসেনকে ভালোবেসে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস রেখে, এজিদের বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রামে হয়েছিলেন অবতীর্ণ। তাঁরা পাননি ভয়। তাঁরা অন্যায়ের সাথে করে নেননি কোন আপোষ।
কারণ, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন এক - একজন বীর।
প্রেরিত পত্র পেয়ে, আর দেরি না করে, ইমাম হোসেন, তাঁর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয় স্বজন, অনুচরদের সাথে নিয়ে, বেরিয়ে পড়েছিলেন কুফার উদ্দেশ্যে। এদিকে, কুফায়, এজিদ বাহিনীর সেনাপতি ওমর, ইমাম হোসেনকে, এজিদের কাছে আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু, বীর
হোসেন তা সজোরে করেছিলেন প্রত্যাখ্যান।
এতে, এজিদের সেনারা ভীষণ ক্ষেপে উঠেছিল।
তারা তখনো জানতো না, যে, তারা কি ক্ষমার অযোগ্য পাপ কাজে লিপ্ত হতে যাচ্ছে! যার জন্য,
বিশ্ববাসী তাদের চিরকাল দেখবে ঘৃণার নজরে।
এজিদের সেনারা, ফেরাত নদীর জল বন্ধ করে দিয়েছিল। কারবালার পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ইমাম হোসেনের সাথীরা, অবিচল থেকে তাঁদের দায়িত্ব পালন করে গেছিলেন। যা সত্যিই, এক অপূর্ব শিক্ষা মানবজাতির জন্য। একজন বিশ্বস্ত অনুচরের নাম ছিল হযর‍ত আব্বাস। তিনি ছিলেন হযরত আলি ও উম্মুল বানিনের ছেলে। তিনি ছিলেন একজন
সুদর্শন সুপুরুষ। তাঁর সাহস ছিল খুব। কারবালার
যুদ্ধে, তিনিই ছিলেন ইমাম হোসেনের পক্ষের প্রধান সেনানায়ক।
তৃষ্ণার্ত ইমাম হোসেন সহ শিশু, নর নারীদের বাঁচানোর জন্য, তাঁদের জল এনে দেওয়ার জন্য,
তিনি জীবন পণ করেছিলেন। তাঁর এই বীরত্ব,
ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে স্বর্ণাক্ষরে।
ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের সেনাবাহিনীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার। তারা ইমাম হোসেনকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল। ইমাম হোসেনের সন্তানেরা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লে, হযরত আব্বাস গিয়েছিলেন, ফোরাতে জল আনতে।
তিনি নিজেও কিন্তু খুব পিপাসার্ত ছিলেন।
তিনি নিজে জল পান করতে যাবেন, এমন সময়,
তাঁর মনে পড়ে গেল, পিপাসার্ত ইমাম হোসেনের
সন্তানদের কথা।
তিনি জল নিয়ে, তাঁবুর দিকে রওনা দিলে,
শত্রুদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁর এক হাত যায় কেটে। তিনি অন্য হাতে জল নিয়ে, তবু্ও এগিয়ে চললেন। এবার, তাঁর অন্য হাতটাও কাটা গেল। এবার তিনি, জল ভর্তি, মশকটা মুখে নিয়ে,
চলতে লাগলেন। শত্রুর তীর এবার তাঁর দেহে সরাসরি বিদ্ধ হয়েছিল। তিনি বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
সাহাবা হাবিব ইবনে
মাজাহের, মুসলিম ইবনে আওসাজা, নওমুসলিম ওহাব প্রমুখ ইমাম হোসেনের অনুচরেরা সহ আরো অনেকেই এই অসম যুদ্ধে
শহীদ হয়েছিলেন। জলের অভাবে, ইমাম হোসেনের শিবিরে পড়ে গিয়েছিল প্রচন্ড হাহাকার। কি অসহনীয় দৃশ্য! যা যায় না সহ্য করা।
ছোট শিশুরা মুর্ছা যেতে লাগলো। নিরুপায় হয়ে,
ইমাম হোসেন শেষবারের মতো, শয়তানদের কাছে করলেন অনুরোধ। কিন্তু, তাতে হয়নি কোন লাভ। এরফলে, শুরু হয়েছিল যুদ্ধ। কারবালার প্রান্তরে, এই যুদ্ধ হয়। ইমাম হোসেনের ভ্রাতুষ্পুত্র
কাশিম শত্রুর আঘাতে মারা গেলেন।
তৃষ্ণার্ত ইমাম হোসেন শিশুপুত্র আসগরকে কোলে নিয়ে, ফোরাত নদীর দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন।
কিন্তু, এজিদ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত তীর শিশুপুত্রের শরীরে বিদ্ধ হয়েছিল। পুত্রের মৃত্যুর পরে, ইমাম হোসেন একাকী অবসন্ন অবস্থায়, তাঁবুর সামনে বসে পড়লেন।
এজিদ বাহিনীর এক সৈন্য সীমার নামীয় তরবারীর আঘাতে, নামাজ রত অবস্থায়,
ইমাম হোসেনের মস্তক শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে
দিয়েছিলেন। উফ, এই দৃশ্য যায় না সহ্য করা,
এরা কি মানুষ? মানুষ হয়ে এরা কিভাবে, এই ধরনের হত্যাকান্ড ঘটাতে পেরেছিল? এদের নৃশংসতা যে বন্য পশুদেরকেও হার মানিয়ে দেয়।
ইমাম হোসেনের পরিবারের জীবিত সদস্যদের,
বন্দী করে, দামাস্কাসে, এজিদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এদিকে, ইমাম হোসেনের ভয়াবহ হত্যাকান্ড, জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল।
এজিদ তাই দেখে, বিচলিত হয়ে উঠেছিল।
তিনি নিজের রাজগদি নিরাপদে রাখার জন্য
ও জনরোষের হাত থেকে বাঁচার জন্য, এক কৌশল নিয়েছিলেন।
তিনি বন্দীদের মুক্ত করে, মদিনায় পাঠিয়ে দেন।
হিজরি মহরম মাসের ১০ তারিখ, ইমাম হোসেন শহীদ হয়েছিলেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা,
এই তারিখে, প্রতি বছর, মহরম পালনের মধ্যে দিয়ে, সেদিনের ওই নির্মম ও হৃদয়বিদারক ঘটনাকে স্মরণ করে থাকেন। মহরমের তাৎপর্য বিরাট। যা ভাষায় ব্যাখ্যা করা মোটেই নয় সহজ।
এই মহরমের দিনটিকে বলে, আসুরা। যার অর্থ হল দশ।
শিয়া মুসলিমেরা, ইমাম হোসেনের নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের করুন স্মৃতি হিসাবে এই দিনটিকে পালন করে থাকে। তারা ইমাম হোসেনের শোকে,
অবিরাম বুক চাপড়ে রক্ত বের করতে থাকেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা, এইদিন নামাজ পাঠ,
কোরান পাঠ, দরিদ্র মানুষদের দানের মধ্যে দিয়ে
শ্রদ্ধার সাথে মহরম পালন করে থাকেন।
মহরমের দিন চলে, গান ও বাজনার তালে তালে
লাঠি, তলোয়ার, বল্লমের খেলা। যা পরিচিত আখড়া নামে।
মহরমের মিছিলের সামনে, চলে, লম্বা বাঁশে বাঁধা
নানা রঙের পতাকা। কোথাও মিছিলের সাথে চলে
ইমাম হোসেনের সাদা রঙের ঘোড়া। ইমাম হোসেন ( রাঃ) - এর জীবনের সবচেয়ে বড় আকাঙক্ষা কি ছিল জানেন? তা হল শাহাদত।
কারণ, খোদা স্বয়ং বলেছেন, শাহাদাত হচ্ছে সবচেয়ে বড় পুণ্য। ইমাম হোসেন ( রাঃ) - এর
কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যায় তাঁর পিতা
হযরত আলী ( আঃ) - এর কথা। তাঁর পিতা ছিলেন একজন মহান ব্যক্তি। তিনি ছিলেন
ইসলামিক ইতিহাসের এক অন্যতম সেরা বীর যোদ্ধা।
ইমাম হোসেনের সমাধি কোথায় অবস্থিত জানেন আপনারা? সে জায়গার নাম হল কারবালা।
যা বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকে অবস্থিত।
মক্কা ও মদিনার পরে, ইমাম হোসেনের মাজার
ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের এক অন্যতম পবিত্র
স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
সারা বিশ্ব থেকে প্রচুর মানুষ এখানে এসে থাকেন।
প্রতি বছর, ইমাম হোসেনের লাখো লাখো অনুসারী, পবিত্র আশুরার দিন এখানে এসে উপস্থিত হয়ে থাকেন। মাজারের সীমানা দেয়াল
কাচ দ্বারা সজ্জিত কাঠের দরজা দ্বারা বেষ্টিত
করা হয়েছে। ইমাম হোসেনের রওজা, একটা ধাতব জালিকার দ্বারা আবদ্ধ করা হয়েছে।
রওজাটি ঠিক সোনালী গম্বুজের নীচে অবস্থিত।
মুহররম একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ হল পবিত্র,
সন্মানিত। আশুরা শব্দটি আশরা শব্দের অপভ্রংশ। মহরম মাস খুবই পবিত্র। এই মাসে
ইসলামিক ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। এই মাসেই মহান নবী হজরত মহম্মদ
ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন শুরু। এই মাসেই,। তিনি আবার যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রতি বছর, মহরম আসলেই মনে পড়ে যায়,
কারবালার কথা। এই কারবালা হয়েছিল এক অসম যুদ্ধে রক্তস্নাত। এই রক্তস্নাত কারবালা আজো পীড়া দেয়
সারা পৃথিবীর মানবজাতিকে।

( তথ্য সংগৃহীত)

                               —::—





     

   
     বাংলা সাহিত্যে মুহররম  
               সৌ ম্য ঘো ষ


               আরবির বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস------ মুহররম মাস । " মুহররম " শব্দের অর্থ অলঙ্ঘনীয় পবিত্র । হিজরি সনের প্রথম মাস । এটি "আশহুরে হুরম " অর্থাৎ হারামকৃত মাস । মুহররমকে , মুহররম বলে অভিহিত করা হয়েছে কারণ এটি অতি সম্মানিত । মুহররম মাসের দশ তারিখ "আশুরা" । আরবি "আশারা" শব্দ থেকে আশুরার উৎপত্তি । আশারা মানে দশ । এ মাসের কথা উল্লেখ আছে পবিত্র কুরআনে । যে মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম করা হয়েছে ,তার মধ্যে অন্যতম মুহররম । বহুবিধ কারণে এই মাস মুসলিম উম্মাহের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। স্বয়ং আল্লাহ রাসুল ( সা:) নিজে এই মাসকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন । হযরত মুহাম্মদ ( সা:) মানুষকে শান্তির ধর্ম ইসলামের পথে আহবান শুরু করেছিলেন মুহররম মাসে । আশুরা ও মুহররম শব্দদ্বয়ের মধ্যেই নিহিত আছে এক ভয়ঙ্কর, বীভৎস ,নিষ্ঠুর ,নির্মম ইতিহাস ।

                    ইসলাম সাহিত্যে মুহররম নিয়ে সপ্তদশ শতক থেকে সাহিত্যচর্চা পরিলক্ষিত হয় । মুহররম নিয়ে বাংলা সাহিত্যে মুসলিম লেখকরা চর্চা করে আসছেন । রামায়ণে রাম রাবণের যুদ্ধের বহু ঘটনাবলীর মধ্যে যেমন একটি অন্যতম প্রধান ঘটনা অবলম্বনে "মেঘনাথ বধ কাব্য" লিখিত, তেমনি, এজিদ ও ইমামদের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়, তার অনেকগুলি ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হামিদ আলীর "কাশেম বধ", " সোহরার বধ" ইত্যাদি । "মেঘনাদবধ" ও "বৃত্তসংহার "এর মত এই কাব্যের উপকরণ পুর্ব সংগৃহীত ছিল না । মুহররম এর যুদ্ধবিগ্ৰহাদি যে মহাকাব্য রচনা পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী সে সম্পর্কে মাইকেল মধুসূদন দত্ত সচেতন ছিলেন। মাইকেল বলেছিলেন , " মহাকাব্য লিখিবার একটি উপযোগী বিষয় রহিয়া গেল------- সে মুসলমানদের মহরম । জগতে এমন করুণ রসাত্মক বিষয়ে আর নাই । ............. যদি কেহ লিখিতে পারেন পরম উপাদেয় হইবে । "


                     রাধা ও কৃষ্ণের প্রণয়োপখ্যান মূলক শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্য রচিত হয়। সেসময় কয়েকজন মুসলিম কবির মনে ইসলামের বিজয় গাঁথা নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টির ইচ্ছা জাগ্রত হয়। সুলতান শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহের আমলে ( ১৪৪৭--৮১) শক্তিশালী কবি জৈনুদ্দীন , তাঁর " রসুল বিজয় "‌ কাব্য রচনা করেন।
                    বাংলা সাহিত্যে মুহররম আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় পুঁথি সাহিত্যের। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে পুঁথি সাহিত্য। পুঁথি সাহিত্যে মুহররম বেশ গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে । ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বহু লেখা পাওয়া যায় মুহররম কে ভিত্তি করে । কারবালার কাহিনী নিয়ে লেখা সর্বাপেক্ষা প্রাচীন কাব্য "জঙ্গনামা "।রচনাকাল ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দ । রাধারমন গোপ নামক এক হিন্দু কবির" ইমামজঙ্গ "র সন্ধান পাওয়া যায় । ‌ পুঁথি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ " মকতুল হোসেন " , "জঙ্গনামা" , "শহীদে কারবালা " ইত্যাদি মুহররম কে কেন্দ্র করে রচিত । মীর মোশারফ হোসেনের গ্রন্থ "বিষাদসিন্ধু "সমগ্র বাংলা গদ্য সাহিত্যের অন্যতম সৃষ্টি ।আলী মোহাম্মদ আলীর "জয়নালো দ্ধার কাব্য" ( ১৯০৯ সাল ) এবং হামিদ আলীর "কাশেম বধ " ( ১৯০৬ সাল ) উল্লেখযোগ্য। তাঁরা
 দীনেশচন্দ্র সেন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন ।


              কবি নজরুল ইসলাম মুহররম কে নিয়ে কবিতা ও গান রচনা করেছেন প্রচুর । তিনি লিখেছেন ,
 " ওগো মা ফাতেমা ছুটে আয়, তোর দুলালের বুকে হানে চুরি "।
তাঁর লেখা গান , " মহররমের চাঁদ এলো ওই কাঁদাতে ফের দুনিয়ায় " , " নীলসিয়া আসমান, লালে লাল দুনিয়া " , " এলো শোকের সেই মহররম" ইত্যাদি । কাজী নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ", মহাররম" মোসলেম ভারতে প্রথম প্রকাশিত হয় । পরবর্তীকালে "অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ" প্রকাশিত হয় ( ১৯২২ সাল ) । কবি নজরুল ইসলাম এর পরবর্তীকালে সৈয়দ আলী আহসান ইসলামী ভাবাবহ প্রধান কবিতা রচনা করেন ।

             পরিশেষে , ১৪৪০-৪১ সালে প্রকাশিত কাজী নজরুলের বিখ্যাত কবিতা "শেষ সওগাত" কবিতা থেকে দু-চার লাইন উদ্ধৃতি করছি । কবিতাটিতে দ্বন্দ্ব ও আত্মকলহের চিত্র ফুটে উঠেছে :------

 " ওরে বাঙলার মুসলিম তোরা কাঁদ
  এনেছে এজিদী বিদ্বেষ ‌ পুনঃ মহাররমের
  চাঁদ ।
  এক ধর্ম ও এক জাতি তবু ক্ষুধিত
  সর্বনেশে -
  .... ..... ..... ..... .... ‌.... ..... ......

  কাঁদে আসমান জমিন কাঁদিছে মহাররমের
  চাঁদ ।। '"
                 

                     ———::———




🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌

            বিভাগ - ছোটোগল্প
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


ও পাড়ার মহরম উৎসব 
              আ ব্দু ল   রা হা জ


আফজাল ইনসান নাজমুস সাজিদ গ্রামের হাই স্কুলের পাঠ চুকিয়ে এখন শহরের কলেজে পড়ে ওদের গ্রামের বাড়ি রহমতপুরে ওদের গ্রামে নাকি মহরম উৎসব পালন হয় বেশ জমজমাট কলেজের বন্ধুদের সাথে বলছিল এসব কথা। আফজাল বলল আমরাতো বাড়ি যাবো তোরা যাবি নাকি ইনসান বলল হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো ও পাড়ার মহরম উৎসব দেখতে হবে না ওরা সবাই রবিবারের দিন গ্রামের বাড়িতে আসার জন্য রওনা দিল চাঁদপুর ফেরিঘাট থেকে নৌকা ধরে গ্রামের ফেরি ঘাটে এসে পৌঁছল ওরা অনেকদিন বাদে সবুজ প্রকৃতি দেখে ওদের মনটা হালকা হয়ে গেল বেশ ফুরফুরে বাতাসে ওরা গল্প করতে-করতে যে যার বাড়ি চলে গেল । এসে গেল মহরম মাসের সেই দিনটি গ্রামের চারিদিকে উৎসব উৎসব পরিবেশ চারিদিকে হিমেল বাতাস বয়ে চলেছে গ্রামের প্রতি ঘরে ঘরে কেউ মহরম মাস সম্পর্কে প্রতি বাড়ি বাড়ি তাৎপর্য মাহাত্ম্য বুঝিয়ে দিচ্ছে বেশ ভালই লাগছিল সেদিন। বিকাল বেলায় নদীর পাড়ে একসাথে এসে বসল ওরা সবাই ওপাড়ার মহরম উৎসব দেখতে গিয়ে দেখল একদল মানুষের করুণ অবস্থা যারা গাছের উপর থেকে কাঁটায় লাফ মারছে কেউ আবার ব্লেট দিয়ে গায়ে মারছে সব মিলিয়ে ও পাড়ার মহরম উৎসব একদিকে যেমন আত্মত্যাগের বেদনাময়ের অন্যদিকে আনন্দেরও বটে এরপর ওরা জিলাপি স্বাদ নিয়ে বাড়ি আসার পথে মেলা প্রাঙ্গণে ওদের ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে সবার দেখা হয়ে গেল বেশ আনন্দে ও পাড়ার মহরম উৎসব শেষ হলো বাড়ি ফিরছে গল্প করতে করতে। সাজিদ বলল দেখ দেখ পাশের গ্রাম থেকে লোকেরা আসে মনে হয় সবার কাছে ও পাড়ার মহরম উৎসব এক ঐতিহ্যবাহী হয়ে উঠেছে। এই শোকাহত আবেগঘন ময় দিনটি ঐতিহ্যবাহী হলেও ও পাড়ার মহরম উৎসব সবার কাছে মনেপ্রাণে উৎসবময় পরিবেশ হিসেবে সবার কাছে আজীবন পরিচিতি লাভ করে এসেছে যেখানে অনেকটা সম্প্রীতির বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে মহরম যে আত্মত্যাগের দিন বিভিন্ন দিক থেকে ইসলামের সাফল্যের দিন তাও পাড়ার মহরম উৎসব থেকে জ্বলন্ত ছবি ফুটে উঠে সবার মাঝে।


                         ——::——







                        সে
           সৌ মে ন   স র কা র

বিকালের শেষের দিকে যখন হোটেল থেকে বার হলাম তখনও আবহাওয়া ভালো ছিল।বৃষ্টির এতটুকু আভাসও পাইনি।তাই হাটতে হাটতে কখন যে অনেকটা দূরে চলে এসেছি তা বুঝতে পারিনি।বুঝে উঠতেই উল্টোমুখে রওনা দিলাম।বেলা পড়ে এসে এবার সন্ধ্যা নামবে।আঁধার হবার আগেই আমাকে হোটেলে ফিরতে হবে।
তখন অর্ধেক পথ বোধহয় এসেছিলাম।হটাৎ করে বৃষ্টি শুরু হল।আমি দিশা না পেয়ে রাস্তার বাম দিকে থাকা দুটো বাড়ীর একটার বাইরের একটু ছাউনির মত অংশ ছিল,সেখানেই গিয়ে দাঁড়ালাম।দেখলাম দুটো বাড়ীর রং ই লাল।ইঁটের  তৈরী মজবুত বাড়ী,কিন্তু টালির চাল আর ছাউনিটুকু টিন দিয়ে তৈরী।বেশ চিমছাম।হটাৎ দিখে বারান্দায় আলো জ্বলে উঠল।তারপর একজন ভদ্রমহিলা এসে দরজা খুললেন।বয়স চব্বিশ কি পঁচিশ হবে,কিন্তু তার রূপ লাবণ্য বর্ণনা করার আমার সাধ্যের বাইরে।কোন কবি হলে দারুণ বর্ণানা করতে পারতেন।তিনি কিছু বলার আগে আমিই কৃতাঞ্জলিপুটে বলে উঠলাম-"ক্ষমা করবেন ম্যাডাম।হঠাৎ বৃষ্টি আসায় এভাবে দাঁড়াতে হয়েছে।আপনাদের বিব্রত করবা না কথা দিচ্ছি।বৃষ্টি থামলেই..."
আমার কথা কেড়ে নিয়ে হেসে বললেন-"আমি আপনাকে ভিতরে এসে বসে এককাপ গরম কফি খাবার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি মহাশয়।"
আমি নমস্কার করে বললাম-"আমি সুব্রত রায়।"
-"আমি মৃণালিনী সেন।"
তাঁর আহ্বান এড়াতে পারলাম না।যেন তার অসীম আকর্ষণ,দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও গভীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমাকে সম্মোহিত করে ফেলল।আমি আচ্ছন্নের মত তাঁর পিছু পিছু চললাম।বসার ঘরে বসলাম।কফি,মিষ্টি আর প্রচুর জলখাবার চলে এল মিনিট পনেরোষোলোর মধ্যে।দুজনের জন্য খাবার এসেছে।আমি লজ্জা না পেয়ে খেতে খেতে বললাম-"দার্জিলিং এ আগেও এসেছি ম্যাডাম,কিন্তু এরকম দুর্ভোগে কখনও পড়িতে হয়নি।কি অবস্থা বলুন তো।"
-"তা হটাৎ করে বৃষ্টি হওয়াটা আজকাল নতুন কিছু নয়।আপনি লজ্জা করবেন না,খেয়ে নিন।" তিনিও খেতে খেতে বললেন।
-"আর কাউকে দেখছি না,আপনি কি একাই থাকেন?"
-"হ্যাঁ।আমার স্বামী আর্মি তে আছেন।সংসারে আমি আর দুজন কাজের লোক।তো আজ ওদের বিকালে ছুটি দিয়েছিলাম।"
-"ইস,তাহলে আপনাকে বড়ই বিব্রত করলাম আজকে এই দুর্যোগে আর এই বৃষ্টির মধ্যে!"
-"না না,তাতে কি হয়েছে।আপনি বৃষ্টিতে বাইরে ভিজবেন তা কি করে হয়।বৃষ্টি থামলে তারপর নাহয় যাবেন।"
ঘন্টাখানেক ছিলাম সেখানে।তারপর তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে আসি।তিনি একটা ছাতা দিয়েছিলেন আমাকে।আমি হোটেলে এসে সেরাতে আর বাইরে বার হইনি।
কিন্তু শকটা পেলাম পরদিন সকালে।ছাতাটা ফেরত দেব বলে সেটা বার করতে গিয়ে কোথাও খুঁজে পেলাম না।অবাক কাণ্ড।ছুটলাম মৃণালিনী সেনের লাল বাড়ীর উদ্দেশ্যে।অারও অবাক হয়ে দেখি রাস্তার উল্টোদিকের টালির চাল ওয়ালা হলুদ বাড়ীটা ঠিকই আছে,কিন্তু সেই লাল ইটের টালিওয়ালা দুটো বাড়ীর মধ্যে একটি থাকলেও অন্যটি অর্থাৎ মৃণালিনী সেনের বাড়ীর স্থানে একটা লাল ভগ্নস্তূপ পড়ে আছে।হলুদ বাড়ীতে ঢুকে জিজ্ঞেস করলে মালিক শম্ভূ বাবু বললেন-"বছর দশেক আগে ও বাড়ীতে থাকতেন একজন আর্মি অফিসার ও তার স্ত্রী।অফিসার জঙ্গি হামলায় নিহত হলে তিনিও আত্মহত্যা করেন।"
আমি তখন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না।তাহলে গতকাল রাতে আমার সাথে যার আলাপ হল সে কে ছিল?


                            ——::——


🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌
             বিভাগ- Short Story◆ 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
 Mysterious Night in the Forest-Bungalow   
   
             Dr. Mahitosh Gayen


 The day of Muharram festival ahead, It has been raining since morning, no one cares about work;Corona weather, school,college closed.Today the cooking girl did not come, the afternoon rolled, Rupsha did not like anything for a long time, she sat down to write poems.She ordered food on the phone,fried rice and tandoori-chicken.
 After finishing the online class, Riyaz says, "What did you cook today that time rolled over?" Rupsha came out of the reading room to write,Shark's hungry in her stomach today.She said that food came from outside today.At that time childhood friend Anindya's telephone ringing for a long time ..."Malabika has been saying let's not go outing anywhere,in the lap of a lonely, secluded nature,and to spend two or three nights.Riyaz says,how is it when you go to Jhalong forest bungalow, the Jaldhaka river and Bindu village are wonderful.Anindya agrees."

The next day at dawn Contessa rented and left. Finally,in the late afternoon,the caretaker of the forest bungalow is happy
Come down, babu, choose two rooms facing south, I'll deliver the luggage, by then.
Wash your hands and get fresh, I make snacks
I'm bringing.Sudhamoy comes,says, 'now eat chicken pokora and hot coffee, make good food at night
Supply to you'.After eating to their heart's content, they go out to look around. After going some distance, the darkness came closer, everyone smelled of Orchids and Madhabilata flowers,Riyaz's head became dizzy. In the lap of wonderful nature, they seemed to move like a child of God. At night, after supper with local crab pickles and young goat meat, on the hanging porch they sang songs. Riyaz Can play tabla well, he plays tunes on the table.The night grows, whoever goes to his house,falls in love, in the middle of the night
 The sleep of peace falls on his eyes, suddenly Riyaz hears the sound of the trumpet of Dove, and the melody of the female voice of Rabindra Sangeet, the leaves of his two eyes do not become one.

 The next day, Thursday, they woke up in the morning to breathe a sigh of relief.
 Sudhamoy says, 'don't go too far in the forest, babu,when you come, the worship of the forest goddess will come to an end,She is big awake, ranachandi again. As soon as it gets dark,good to Come back,actually the people of Bindu village here
 This bungalow is called "Mysterious Bungalow.' Why? Why? Everyone's question;
 Sudha say's, a family came 12 years ago, with a young lady',didimoni went out into the forest and never returned to bungalow'.
 The Anindya's wandered in the forest all day and returned with the worship of the forest goddess.
 The handkerchief is lost in the gust of wind, I don't know what the hint is, Riyaz thinks. Returning at night, translucent moonlight,they eats wild broth soup and picks up the sweet scent of orchids that they go to their house,Sudha noy says-
 'Babu ,keep the door closed well, at night
 Don't open the door if anyone calls except me, today is
 Full moonlight,the people of Bindu village say that in this bungalow
 An unsatisfied soul wanders around
 Sitting down,' they think, Rupsha is not on the body, on the bed
 Riaz puts his head on his chest and starts to caress, night falls, Rupsha falls asleep, pathetic call of the street dog
 Riyaz hears "Arthur Conan Doyle's'" dog call in the mystery story, two o'clock in the morning, the sound of the roar and the madness of the song.
 At deep night, Riyaz opens the door at the call of the mystery soul, presses his feet and goes upstairs.
 The wind blows so hard that he enters, the same! Why does the whole house smell of his lost Madhabilata? In that mystery-smell and melancholy melody, he becomes unconscious, Riyaz stays there all night.

 The red rays of the morning sun fell on her face through the open window and woke Rupsha up. She screamed when she didn't see Riyaz next to her. Everyone goes upstairs with Sudhamoy and sees Riyaz lying down, the faint sound of his moaning in his mouth. The doctor comes, gives him medicine. Sudhamoy says 'that all about the girl's suicide is open now. Riyaz, unwinking looks at everyone, there is no sound in his mouth, he can't recognize anyone, not even Rupsha.Doctor says to him 'In fact, Riyaz has been in a hallucination for a long time.' after a few days, he returns to normal life, but he will never recognize Rupsha again, as far as he is concerned, with that suicide.
 There is definitely a story of Riaz's past.' Darkness descends on Rupsa's eyes,twisting of her chest comes out. Riyaz is immaculate.
 He looks at Rupsha,no one recognizes him, and the stream of water falls from his eyes,
 All around her now is just the scent of Madhabilata, his first love, his imperfect first love.



                             ——::——



🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌

          বিভাগ- লিমেরিক
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


লিমেরিক -১
          সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

ভীতি নয় প্রীতি থাক
আজান হোক বাজা ঢাক
সম্প্রীতির বাঁধনে
মহরম বোধনে
জীবনের সুর থাক।





 লিমেরিক -2
        অনিমা মাইতি


পানি বিনা হায় হায় হোসেনের পরিবার
কাশিমের কাটা শিরে ফাতিমার হাহাকার ,
এজিদের ভয়ে ছোটে দুলদুল
রক্তাক্ত কারবালা হুলস্হূল
পবিত্র মহরম বলে যায়রে বারেবার ।।







🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌

     বিভাগ- অনু কবিতা ও কবিতা
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


 সেলাম কারবালা
        বি শ্ব জি ৎ   ক র

কারবালার রক্তাক্ত প্রান্তরে,
শহীদের হাহাকারে ইনসাফ কেঁদে মরে!
অত্যাচারীর বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ জেহাদ,
প্রান্তরে প্রতিফলিত বিপ্লবের স্বাদ!
কারবালা আজও এক প্রতিবাদের নাম,
সেলাম হজরত হোসাইন,তোমায় সেলাম!





 মুখোশের আড়ালে
        প্র দী প   কু ন্ডু


মুখোশের আড়ালে দিবানিশি
          চলে আলো আঁধারের খেলা,
নেশাতুর শহরে ভদ্র সমাজ
          হারায় তাতে নির্দ্বিধায় দুই বেলা।

দানপত্র হাতে মনুষ্যত্বহীন মানুষ
              তৈরি করে ধর্ম বিভেদের জাল,
গরিব মরলে কার কি আসে যায়
               ওরা তো সমাজের জঞ্জাল।








           মহরম
              ‎ সু ন ন্দ  ম ন্ড ল

সমাজের সংস্কৃতি উৎসব
    উৎসবে আচরণে লৌকিক আবেদন
ধর্মীয় সংকেত রাগিনীর সুর
     পালনীয় প্রস্তাবে খসড়া লিখন।

চৌকাঠে পা ছোঁয়ানো
          ঘর থেকে বাহিরের উন্মাদন
গল্পের খোঁজে মহরম
         বিন্যস্ত স্রোতে খুশির লালন।

উৎসব ও উপলক্ষ্যে নির্মল নিয়ম,
নব অঙ্কুরিত শস্যের শ্যামল বিকিরণ।
     







মেরুপ্রভামহরম 
          চি ত্ত র ঞ্জ ন  গি রি

হিজরী সনের প্রথম মাস প্রথম আলোর দ্যুতি
মণিকাঞ্চন সাত্ত্বিক যোগ শান্তির অনুভূতি

মহাপ্লাবন -চল্লিশ দিন। মহা দুর্যোগ মুছে মুছে যায়।
আশিজন দিব্যদর্শন আল্লাহ রাসূলের অমৃত সুধায়।

নির্যাতিত অসহায় কালের পথ যাত্রী যারা
মহাসিন্ধুর ওপার থেকে তোমারি স্নেহে মুগ্ধ তারা

আলোর মেঘে আলোর নয়ান তোমারি নামে আকাশ জুড়ে
এক পৃথিবী রজনীগন্ধা, ভাস্বর সে মেঘমুক্ত রোদ্দুরে।







আলী আকবর (রাঃ)
           উ ম র  ফা রু ক

সেই তো বীরের পিতা তিনি
কোটি কোটি দাম
স্বর্গ দ্বারের হবেন নেতা
বাড়িয়েছে সম্মান।

প্রিয় হাবিব দিলেন যে নাম
বিশ্ব সে নাম চেনে
শেরে খোদা আলী তো বীর
দ্বীন নিয়েছে মেনে।

একটি ভুলে তওবা হাজার
তাহাজ্জুদও পড়েন
আখলাখ ব্যবহার মিষ্টি হাসি
শান্ত নিখিল গড়েন।

পাহাড় সম ইলম ছিল যার
তিনি ইলমের দরজা
সেই দ্বারে লোক করল প্রবেশ
দ্বীন হয়েছে বোঝা।

তার খিলাফত শান্তি সুখের
রাষ্ট্র চালান ধীরে
ন্যায্য বিচার দেশে দেশে
দুর্নীতি নাহি ভীরে।





মহরম হলো জেহাদের ময়দান
          সে খ  নু রু ল হু দা

মহরম হলো জেহাদের ময়দান
মহরম হলো সত্যের পথে অভিযান
মহরম হলো কোরআনের আহ্বান
মহরম হলো প্রিয় রসূলের বয়ান।

মহরম হলো কোরআনকে ভালোবাসা
মহরম হলো অন্ধকারে আলোর দিশা
মহরম হলো জীবনের জয়গান
মহরম হলো কারবালা ময়দান।

সেদিন কেঁদেছিল ইরাকের কারবালা ময়দান
ফোরাতের কুল, জমিন ও আসমান
আজও কাঁদে ইরাকসহ দুনিয়া জাহান
ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন, জেগে ওঠো মুসলমান।

কোথায় ঘুমিয়ে রয়েছো সংগ্রামী নওজোয়ান
কোথায় তোমার তেজ প্রদীপ্ত সেই ঈমান
কোথায় গেল তোমার সেই জেহাদি অভিযান
কাঁদে আজও জালিমের জুলুমে বিশ্ব জাহান।

ইয়াজিদের শাসন জুলুমের রাজ
যদি মেনে চলি, খোদা হবে নারাজ
তাই হবে আমার প্রথম কাজ
ধ্বংস করো আজই ইয়াজিদের রাজ।

এই অনুভব করেছিল মা ফতেমার দুলাল
তাই ফোরাতের পানি হলো লালে লাল
তীরে ঝাঝরা হলো বুক, হলো ছিন্ন প্রাণ
এ যে সত্যের পথে শ্রেষ্ঠতম বলিদান।
             









                       মহরম 
                   হা মি দু ল  ই স লা ম
                   

মহরম একটি উৎসব
মহরম বিষাদ উৎসবের বহ্নিশিখা
দিকে দিকে মহরমের লাঠিখেলায় ঢাকা পড়ে
আসল ইতিহাসের ইতিহাস লিখা ।

আসল ইতিহাস আসলে উলটো পুরাণ
ইতিহাসে গাঁথা কেবল বীরত্বের কাহিনী
বীর বিক্রমে যুদ্ধের মাঠে আসীন দুপক্ষ
অস্ত্রে তখনো বলিয়ান এজিদ বাহিনী ।

হাসান হোসেন জানে সহায় তার ঈশ্বর
মানুষের জন‍্য যুদ্ধ করে মানব সৈনিক
মানুষের ঐক‍্যে সমাসীন যুদ্ধক্ষেত্র
যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তখনো জীবন পদাতিক ।

ফরহাদ নদীর মুখ বন্ধ করে দেয় এজিদের দল
চরম যুদ্ধের সামনেই দুপক্ষ
হঠাৎ জলের প্রচণ্ড পিপাসা
যেনো পিপাসায় ফাটে বক্ষ ।

জলের জন‍্য হাহুতাশ শুকনো কারবালা প্রান্তর
এজিদের দল হুঙ্কার ছাড়ে
জল নেই একফোঁটা
মৃত‍্যু দাঁড়িয়ে আছে প্রতিটি হৃদয়ের দ্বারে দ্বারে।

প্রিয় হাসান ছেড়ে যায় প্রাণ
 হোসেন জলের জন‍্যে চিৎকারে আকাশ কাঁপায়
বিজয়ী দস‍্যুরা গলা কাটে একে একে
বুকের গভীরে তখন কেবল মৃত‍্যু দাপায় ।









মহরমের আনন্দ
           ক নি কা রা য়


আজ মহরম বড়োই খুশির দিন!
ওপারেতে বসবে মেলা মন তাই নাচছে তাধীন ধীন!!
নানান জিনিস আসে মেলায়!
ছেলে বুড়ো দলে দলে যায় যে বিকেল বেলায়।

রান্না ঘরে সুস্বাদু সব খাবার গন্ধ আসে!
জিভে জল নিয়ে তাই বসে থাকি রান্না ঘরের পাশে!!

নানা রকম হাতি ঘোড়া সাজে, খেলা দেখায় রাস্তা ঘাটে!
মহরমের দিনটা তে ভাই ,
মন যে আমার আনন্দে মেতে ওঠে।








কারবালার প্রান্তরে
           আ ব্দু ল বা সে ত

এল ওই মহরম সময়ের ব্যবধানে, নববর্ষের সূচনা করে;
আনল বয়ে শোকবার্তা হৃদয়ের গভীরে।
 ইতিহাসের পাতায় ইমাম হুসাইন, রক্তমাখা শরীরে;
ফিরে গেলাম কারবালার প্রান্তরে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে।
ক্ষমতালোভী ইয়াজিদের কুচক্রে হল শহীদ ইসলামের কত সৈনিক;
ফুরাত নদীর তীরে, ইমাম হুসাইনের হৃদয় ছিল নির্ভীক।
ন্যায়ের পথে ছিলেন তিনি আজীবন, অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামী;
তাঁর আদর্শ ভুলে, আমরা আজ হয়েছি বিপথগামী।
ইসলামের তরে দিলেন প্রাণ নবীর আদরের নাতি;
কারবালার রক্তাক্ত মাটি আজ ও তার সাক্ষী।
ইমাম হুসাইনের অনুসারী আমরা,করব না কভু অন্যায়ের সাথে আপস;
যদিও দিতে হয় প্রাণ, তবু ও ন্যায়ের পক্ষে করে যাব সংগ্ৰাম নিরলস।







কবিতা- স্মৃতি
              টু ম্পা  ঘো ষ  দে ব না থ
             
রক্তবন্যা বইছে আজো
    কারবালার মরু প্রান্তরে
বাতাসে বইছে আর্তনাদ
     তুমি আছো মোদের অন্তরে

তুমি ছিলে মহা শক্তিমান
      তুমি পবিত্র শহীদ প্রাণ
তুমি আছো-থাকবে হৃদয়ে
       তুমি সবার প্রিয় ইমাম।

দেখতে কি পাও হুসেইন?
        কত শত বিষাদগ্রস্ত মন
তোমার কুর্বানির স্মৃতিচারণ
         পবিত্র এই মহরম্ ।।







 পবিত্র মহরম
          গো বি ন্দ  মো দ ক


ওই দেখো ভাই আসছে তাজিয়া, সুন্দর মনোরম,
শোভাযাত্রায় সকলে শামিল আজ যে মহরম।
এই উৎসব আনন্দের নয়, দুঃখ আর বেদনার,
কারবালার ইতিহাসটায় লেখা আছে কথা তার।
বিষাদ-জড়িত মহরম এক সুমহান স্মরণিকা,
ধর্মপ্রাণ শিয়াদের চোখের অশ্রুধারায় লিখা!
দশ দিন ধরে ধর্ম-যুদ্ধ কারবালা প্রান্তরে,
দশমদিনে ঘোর পিপাসায় কতো না শহীদ মরে!
হায় হাসান! হায় হোসেন! তোমরা শহীদ হলে,
কারবালামাঠ আদর করে তোমায় কোলে নিলে।
পিপাসার জল হলনা খাওয়া হায়রে ফোরাত নদী
শোকেরবার্তা বহন করে আজও বহে নিরবধি।
ধর্মপ্রাণ শিয়ারা জানে কত ব্যথা পায় হোসেন,
করুণ স্মৃতি স্মরণ করে চোখের জলটা মোছেন।
রমজান মাসে দশদিন ধরে অনুষ্ঠানের শেষে,
তাজিয়া নিয়ে শোভাযাত্রায় ধর্মপ্রাণরা মেশে।
তরবারি নিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ অভিনয় আর খেলা,
ধর্মযুদ্ধের স্মারক রূপে ঘোষিত শোকের বেলা।
সুদর্শন তাজিয়া জুড়ে ফুল, লতা-পাতা আলো,
হোসেনের যেন সমাধি-সৌধ দৃষ্টিনন্দন, ভালো।
বুক চাপড়িয়ে কান্নারবে হায়রে হাসান-হোসেন!
তাজিয়াখানা জলে দিয়ে চোখের জল মোছেন।
সারাদিনের উপোস শেষে সন্ধ্যায় ফতেহা পাঠ,
বুকটা জুড়ে হাসান-হোসেন,আর কারবালা মাঠ।
মহরম জুড়ে অন্ন-বস্ত্র কিংবা অর্থ দান ,
ধর্মপ্রাণের জীবনে বার্তা বয়ে আনে সু-মহান।
খলিফার নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদ যতো ক'রে,
মহরমে যেন সেই বার্তাই পৌঁছায় দোরে-দোরে।
যুগে যুগে তাই মহরম বলে মানবিকতার বাণী,
শ্রদ্ধায় আর স্মরণে দিই হৃদয়-আসন খানি।
মানবতার মূর্ত বাণীতে উজ্জ্বল মহরম,
দানের মধ্যে সার্থক হোক জীবনটা হরদম !!








 মহরম
        রু হু ল  আ মি ন

কারবালার প্রান্তরে কত প্রাণ বলিদান
 রক্তে রাঙানো ফুরাত নদী শত শহীদের লাশ
 এক ফোঁটা পানি নেই বাধেরে এপারে
 বিশ্ব ব্যাথা বুকে নিয়ে কাঁদে ছোট্ট মেয়ে ফাতেমা
 মায়ের স্তনে দুধ নেই
ছোট্ট ছেলে আজগরের ধর থেকে প্রাণ যায়
কারবালার প্রান্তরে কত প্রাণ বলিদান
আলীজাদা হোসেন মাটিতে লুটিয়ে
মা ফাতেমা জান্নাত এর ধারে দাঁড়িয়ে
নবী পাক বলেন হোসেন এসো মোর পানে
 কত মহরম এসে পাড়ি দিলো বহুদূর
 এয় খোদা ক্ষমা করো
 বদলে দাও বহুকালের চলার পথ
 শহীদের অন্তর করে দিও লাগে
 মুসলিম হয়ে যেন গাইতে পারি জয়গান
কারবালার প্রান্তরে কত প্রাণ বলিদান ।








শোকসিন্ধুর বিন্দু-গাথা
         ব দ রু দ্দো জা  শে খু


মহরম মাস ঘুরে এলো , হিজরী সালের নিষিদ্ধ মাস
"নিষিদ্ধ" -য়ের মানে হলো নিষিদ্ধ সব আনন্দোচ্ছ্বাস,
মহরমের মাতম নিয়ে কারবালা কি এলো কাছে ?
শুধু কাছে নয় , সেই কারবালা আছে আমাদের বুকের মাঝে ;
কারবালা তো শোকের সিন্ধু মর্মন্তুদ বিষাদ-গাথা- --
কী যেন কেন এমন দুঃখ লিখেছিলেন ভাগ্যবিধাতা
ইমাম হোসেন ও তাঁর পরিবারের জন্য মরু-প্রান্তরে !
এক কাতার পানির জন্য শহীদ হলো অন্যায় সমরে---
কুফা নগরীর খলিফাগিরির বিবাদ নিয়ে ইয়াজিদের সাথে,
সাথ দিলো না কুফার যারা মদৎ করার অজুহাতে
উস্কেছিল ইমামকে, তারা পিছু হটলো ষড়যন্ত্রকারী---
তারা ছিল পিছন থেকে ছুরি মারার গোপন ব্যাপারী,
কারবালার মরু-প্রান্তরে ঘিরে ধরলো ইয়াজিদের সেনা,
বন্ধ করলো ফোরাত নদী, পানি ছাড়া তো কেউ বাঁচবে না,
এটাই ছিল তাদের মন্ত্র, ফেরার পথও বন্ধ ক'রে
একে একে করলো কোতল ইমামের বীর যোদ্ধাদেরে,
সর্বশেষে ইমাম হোসেন বন্দী হলো সপরিবারে
অমানুষিক অত্যাচারে গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে মারলো তারে , ----
রব উঠলো কারবালাতে আকাশ বাতাস অন্তরীক্ষে
"হায় হোসেন হায় হোসেন হায় হোসেন হায়" চতুর্দিকে
রোদন শুধু রোদন-ভরা মর্মভেদী মাতম-সাথে ,
ইমাম হোসেন দিয়েছিলো শির, তবু দ্যায়নি হাত ইয়াজিদের হাতে,
সত্যের প্রবক্তা হোসেন, ইমাম হোসেন , ইমাম হোসেন
খোদার কসম, প্রশংসিত ইমাম হোসেন ,
ইমাম হোসেন !
মহরমের আশুরা দিবস সেই শোককে
 স্মরণ করে
কাঁদে মুসলমান জাহান হায়, হায় হোসেন ,হায় গেঁথে অন্তরে !!








 দশই মহরম
          জু য়ে ল রু হা নী

দশই মহররম স্বরনীয় দিন,
কেয়ামত অব্দি রবে অমলিন।
দশই মহররম ঘটে ঘটনা!
নিম্নে বিবরন যা আছে জানা;
দশই মহররম রব্বুল আল-আমিন
সৃষ্টি করেন যে আসমান ও যমীন।
এই দিনে আদি পিতা সৃষ্টি হয়,
এদিনেই জান্নাতে ঠাই দেয়া হয়।
এই দিনে জন্মেছে জাতীর পিতা,
এই দিন ভবে আসে আদি পিতা।
মাছের পেটে ছিল ইউনুছ পয়গাম
এ দিন মুক্তি পায় যপে প্রভূর নাম।
এ দিনে মুক্তি পান আইয়ুব নবী,
এ দিন ভেসে ওঠে করুণ ছবি!
নবী দৌহিত্র ইমাম হুসাইন-
কারবালা মাঠে পান শহীদের মান।
দশই মহররম ফেরাউন মরে,
প্রভূর হুকুমে নীল নদে পরে।
দশই মহররম প্রভূর আদেশে
ঈসা নবী উঠেন ঊর্ধকাশে!
এই দিনে পৃথিবীর সুত্রপাত-
দশই মহররম হবে কেয়ামত!






মহরম উৎসব কেন?
         সে ক  আ সা দ   আ হ মে দ

রক্তের সম্পর্ক বোঝে ক'জন
ক'জন বোঝে ধর্ম
আমার আসলতো মনুষ্যত্ব ।

দিনে পাঁচবার নত হও
তোমরা শান্তি বিশ্বাসী কিনা!
পরস্পর সম্পর্কে ভ্রাতৃত্ব ।

নিজেকে জাহির কর
সভ্যতার শ্রেষ্ঠ পবিত্রতায়
শুদ্ধ সিয়ামে চাও - আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব।


কারবালার প্রান্তরে পিপাসার্ত
ইমাম ক্ষত-বিক্ষত
দ্বিখন্ডিত মুন্ডু, বীরশহীদ রক্তাক্ত ।


তারিখটি দশ মুহররম্ - আশুরা
শয়তান বাহিনীর আনন্দ উল্লাস
ইমামের পরাজয়, এজিদের বীরত্ব।

সবকিছু জেনে বুঝে
তবুও মহরম উৎসব কেন ?





🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌

             বিভাগ-স্মৃতিকথা
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

       আমার শহরে মহরম
                 মি ন তি  গো স্বা মী

মহরম মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি পবিত্র উৎসব।কিন্তু ছোটবেলায় থেকে দেখেছি, শুধু মুসলিম নয়,এটি হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মিলিত উৎসব রূপেই পালিত হয়।

আমি বর্ধমান শহরে থাকি।ছোটবেলা থেকেই দুর্গাপূজোর মত মহরমের ঢাল দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম।আমাদের পাড়ায়
মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাস নেই।
কিন্তু আমাদের পাড়ায় মতাই নামে একজন দর্জি ছিল।সে পাড়ার সবার জানা-কাপড় সেলাই করতো
মহরমের সময় সে বাড়ি বাড়ি চাঁদা নিত।
 আর তাদের পাড়া কাটরাপোতার ঢাল আমাদের পাড়ার অলিতে গলিতে নিয়ে আসতো। ।
ছোটরা সেই ঢাল দেখার জন্য উৎসুক হয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকতো।পাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা থালায় করে মিষ্টান্ন সাজিয়ে ঢালের
পুজো দিত।হিন্দু ছেলেরাই ঢাল কাঁধে নিয়ে পাড়ায়
ঘোরাতো।ঢাল কাঁধে নেবার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যেত।ছোটবেলায় এসব দেখে খুব আনন্দ পেতাম।

বর্ধমান শহরে রানীগঞ্জ মোড়ে কারবালার ঢাল আছে।এই ঢালের. বৈশিষ্ট্য হল ,থালাগুলি কালো,
অন‍্যান‍্য ঢালের মত সোনালী নয়।এই কালো ঢাল‌
দেখার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো।

আমার ওয়ার্ডের রাজবাড়ির সামনে ভেড়িখানা দিয়ে শহরের সমস্ত ঢাল কারবালার মাঠে যায়।
 ভেড়িখানায় মেলা বসতো, এখনো বসে।
অসংখ্য মানুষ ছাদে, রাস্তায় বিকেল থেকে বসে, দাঁড়িয়ে থাকতো ঢাল দেখার জন্য।
আর আমাদের মত ছোটরা বাড়ির বড়দের কাছে পয়সা নিত মেলা দেখার জন্য।মেলার, ঘুগনি,পাঁপড়,বাদাম ভাজা এখনো নষ্টালজিক করে দেয়।

      ছোটবেলা দেখেছি ভেড়িখানা মসজিদের পাশের মাঠে নকলযুদ্ধের মহড়ার প্রধান অঙ্গ লাঠিখেলা হত।একমাস আগে থেকে এই মহড়া হত।
মহরমের দিন একটা বড় খেজুর গাছ মাটিতে পোঁতা হত রাস্তার ধারে ভেড়িখানায়।তাতে পুরোনো জামাকাপড় জড়ানো হত।সন্ধ‍্যেবেলায় তাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হতো।
আর সেই আগুন নিয়ে খেলতো বিভিন্ন দলের ঢালের লোকেরা।
আগে শহরে গোটা পঞ্চাশ ঢাল হতো।মাঝরাতে সবার শেষে আসতো কালাপাহাড়ি ঢাশ।সেই ঢাল দেখে বাড়ির বড়রা ঘরে ফিরতো।

এখন জাঁকজমক বেড়েছে।ঢালের সঙ্গে প্রতিটি পাড়ার থেকে সুন্দর সুন্দর তাজিয়া বের হয়।
লাঠিখেলা, আগুন খেলা,তরবাড়ির খেলা দেখার জন্য মুসলিমদেরকে সঙ্গে হিন্দুরাও সমান ভিড় করে।বছর শেষে ঢাল দেখার জন্য যেমন মুখিয়ে থাকতাম, ছোটদের দেখানোর জন্য এখনো তেমনি অপেক্ষা করি।

মহরম যদি ও শোকের উৎসব।কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা নকল এই যুদ্ধের মহড়ায়
বুক চাপড়ে, নিজেদের কষ্ট দিয়ে তার ই
বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।‌এটা সত্যি ই উৎসবের মতো লাগে।
এবার অতিমারীর প্রকোপে অন্যান্য শহরের মত আমার শহরে ও মহরমের শোভাযাত্রা বের হবে না।
কিন্তু অন‍্যান‍্য উৎসব বন্ধের মতো মহরমের জন্য ও
মনটা খারাপ লাগছে।
আশা করি আগামী দিনে পৃথিবী সুস্থ হবে।
আবার আমরা মিলিত হবো মহরমের শোভাযাত্রায়।






টুকরো কথা
             টু ম্পা  মু খা র্জী 

       (১) *সহযোগী*

অন্তরস্থ এজিদকে পরাজিত করে গ্ৰামের নির্জন পথ দিয়ে গভীর রাতে ট্রেন অবরোধে পরা প্রতিমাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিল তথাকথিত সমাজবিরোধী রাকিবুল।
     
       ( ২) *রাখীভাই*

মহরমের তাজিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি দুইভাই আরাফাত আর জাহির, থ‍্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিবুকাকার মেয়ে দুর্গাকে তারা রক্ত দিতে ছুটে গেছে হসপিটালে, দুর্গা যে তাদের রাখী বেঁধেছিল।

           (৩) *অনুভব*

বেশ কিছুক্ষণ আগেই শিবশঙ্কর ঘোষাল মীর মোশারফ হোসেনেথ 'বিষাদ সিন্ধু' বইটা শেষ করেছেন। কিন্তু হাসান হোসেনের জন্য মনখারাপি বাতাস থেকে থেকে তার হৃদয় তন্ত্রিতে অদ্ভুত যন্ত্রণা আর কষ্টের ঝংকার তুলছে।
               












শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০

উপকণ্ঠ মহরম সংখ্যা লেখক তালিকা- 2020


#Upokontha_Sahitya_Patrika
উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন
      বিশেষ সংখ্যা মহরম সংখ্যা-2020
                 লেখক তালিকা
মহরম সংখ্যা লেখক তালিকা-2020

প্রকাশিত হবে আগামীকাল -30 অগাস্ট 2020 , রবিবার বিকাল -3টা

লেখক তালিকা 👇👇👇


      🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌🕌
             লেখক তালিকা
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇

বিভাগ-প্রবন্ধ

1) মৌলানা শফিকুল ইসলাম
2) শিবব্রত গুহ
3) সৌম্য ঘোষ

বিভাগ-ছোটোগল্প

1) আব্দুল রাহাজ
2) সৌমেন সরকার


 বিভাগ-ইংরেজি Short Story

1) মহীতোষ গায়েন

বিভাগ - লিমেরিক 

    1) সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
    2) অনিমা মাইতি

বিভাগ- অনু কবিতা ও কবিতা

 বিশ্বজিৎ কর
প্রদীপ কুন্ডু
সুনন্দ মন্ডল
চিত্তরঞ্জন গিরি
উমর ফারুক
সেখ নুরুল হুদা
হামিদুল ইসলাম
কনিকা রায়
আব্দুল বাসেত
টুম্পা ঘোষ দেবনাথ
গোবিন্দ মোদক
রুহুল আমিন
বদরুদ্দোজা শেখু
সেক আসাদ আহমেদ
জুয়েল রুহানী

বিভাগ- স্মৃতিকথা

1) মিনতি গোস্বামী
2) টুম্পা মুখার্জী


উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 29/08/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 29/08/2020
Upokontha Sahitya Patrika
Upokontha Web Megazine


"উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
   (ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-29/08/2020, শনিবার
               সময় :- সকাল 11 টা 

সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷







ধারাবাহিক গল্প 

    সিদ্ধিলাভ
         ( তৃতীয় পর্ব )
           🖊🖊 শাশ্বতী দাস


       দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর সৃজার আজ অনেকদিন পর খুব গল্পের বই পড়তে ইচ্ছে হলো। কতদিন গল্পের বই পড়েনা! সবসময় শুধু মেডিকেল জার্নাল, হসপিট‍্যাল আর পেশেন্ট। "নাঃ আজ একটা গল্পের বই পড়ি।" নিজের মনেই বলে সৃজা।  যেমন ভাবা তেমন কাজ। গল্পের বই নিতে সৃজা মা'র ঘরে যায়। মা'র বুকশেল্ফ ছাড়া গল্পের বই আর কোথায়! সৃজার নিজের বুকশেল্ফতো এখন পুরোটাই শুধু দেশবিদেশের মেডিকেল জার্নালে ঠাসা। মা'র বুকশেল্ফ ঘাঁটতে ঘাঁটতে সৃজার নজর যায় জীবনানন্দ দাশের কবিতার বইয়ের দিকে। "বাঃ! কতদিন কবিতা পড়া হয় না! " বইটা টেনে নেয় সৃজা। "আজ সারাদুপুর কবিতা পড়ব"। মনে মনে ভাবতে ভাবতে বইটার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে নিজের ঘরে আসে। হঠাৎ, বইয়ের ভেতর থেকে কি যেন একটা নীচে পড়ে গেল, তাকিয়ে দ‍্যাখে একটা ছবি! সৃজা নীচু হয়ে ছবিটা তুলেই চমকে ওঠে! এ কাকে দেখছে সে! এতো যৌবনের নিলয় সেন! হ‍্যাঁ, তাইতো, এই ছবিটাইতো সে দেখেছে এর আগে! হ‍্যাঁ, ঠিক, অনেকদিন আগে, সব মনে পরতে থাকে সৃজার, তখন বোধহয় সৃজা ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ে। সরস্বতী পূজোর সকালে মার আলমারি থেকে শাড়ি বের করতে গিয়ে বেরিয়েছিল ছবিটা। সেদিন অনেক প্রশ্ন করেও মা'র কাছে কোনো উত্তর পায়নি সৃজা! বারে বারে জানতে চেয়েছিল কে এই ভদ্রলোক!   মা শুধু একটা কথাই বলেছিলেন, "বড় হও সব জানবে। " তারপর এতো বছরে আস্তে আস্তে সৃজা ভুলেই গিয়েছিল এই ছবির কথা। " কিন্তু আজ যে জানতেই হবে, কি এই ছবির রহস্য! কেন এই ছবি তার মা'র আলমারিতে! কে এই নিলয় সেন!"  এইভাবেই কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে, সৃজা খেয়ালও করেনি।
         "বাবি কি করছিস? দুপুরে একটু ঘুমিয়েছিস?" জিজ্ঞেস করতে করতে মেয়ের ঘরে ঢোকেন প্রজ্ঞা দেবী। "নিলয় সেনের এই ছবি তোমার কাছে কেন মা?" ছবিটা মায়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে সৃজা। চমকে ওঠেন প্রজ্ঞা দেবী। "এই ছবি তুমি কোথায় পেলে!" নিজেকে সামলে নিয়ে কঠিন গলায় প্রশ্ন করেন। "তোমার বুকশেল্ফে এই বইটির ভেতরে।" অদ্ভুত শান্ত গলায় উত্তর দেয় সৃজা। চুপ করে থাকেন প্রজ্ঞা দেবী। "এই ছবি আমি এর আগেও দেখেছি তোমার আলমারিতে মনে আছে মা? তুমি সেদিন বলেছিলে আমি বড় হলে সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। আজ তোমায় বলতেই হবে কেন এই ছবি তোমার কাছে! কি সম্পর্ক তোমার সাথে এই নিলয় সেনের? বলো মা, আজ আর চুপ করে থেকোনা! আজ আমার এইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া খুব দরকার।" একদমে কথাগুলো বলে হাঁফাতে থাকে সৃজা।
             "ইনিই তোমার বাবা।" ধীর শান্ত গলায় উত্তর দেন প্রজ্ঞা দেবী। "মানে! আমি অনাথ নই!" চমকে উঠে প্রশ্ন করে সৃজা। "না, তুমি আমার আর নিলয় সেনের সন্তান। কিন্তু বিবাহ পূর্ব সন্তানের পিতৃত্বের দায় নিতে অস্বীকার করে সেদিন নিলয় সেন তার বাবার বিশাল সম্পত্তি হারাবার ভয়ে। উনি সেদিন নিজের বাবার নির্দেশে তোমাকে এই পৃথিবী থেকে চির বিদায় দিতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি রাজী হইনি। কি করে রাজী হতাম বল! আমি যে তোর গর্ভধারীনী!  নিজের গর্ভের সন্তানকে জন্মের আগেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে আমি পারিনি। তাই উনি আমাকে ত‍্যাগ করেছিলেন। কিন্তু আমি আজও ভুলতে পারিনি ঐ অমানুষটাকে, তাই এই ছবিটা বয়ে নি বেড়াই।" বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পরেন প্রজ্ঞা দেবী। "কিন্তু আমাকে কেন অনাথ পরিচয়ে বড় করলে মা! কেন তোমার সন্তান বলে পরিচয় দিলেনা?" কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায়, অভিমানে গলা বুঁজে আসে সৃজার।
                    ( ক্রমশ )








ছোটোগল্প
         সেই মেয়েটি
                     আব্দুল রাহাজ


রাতুল গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকতো ওর বাবা-মা কেউ ছিলনা বলতে গেলে এই পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই সে খুব কষ্ট করে গ্রামের পাঠশালায় পড়ে পড়াশোনায় বেশ ভালো সকালবেলা কোনদিন ভাতের স্বাদ নেয় কোনদিন ভাতের স্বাদ হয় না ময়ূরী নদীর পাশে বসে কত ভাবনা পরিকল্পনা করতে থাকে রাতুল। গ্রামের ছেলেদের সাথে বেশ খেলাধুলা করে খুব আনন্দে বাবা-মা হারা কষ্টকে দমিয়ে রেখে বেঁচে থাকে প্রকৃতির মায়ের বুকে। গ্রামের পাঠশালায় হরি চাচার মেয়ে তিন্নির সাথে ওর খুব ভাব দুজনে একসাথে ময়ূরী নদীর ধারে বসে কত গল্প করে খেলাধুলা করে এইভাবে গ্রামের পাঠশালায় শেষ পর্যায়ে এসে পড়ে ওরা দুজনেই এখন বেশ বড় গ্রামের পাঠশালা শেষ হওয়ার আগের দিন নদীর ধারে বসে তিন্নি বলল রাতুল আমি কাল শহরে চলে যাব আর বোধহয় আর দেখা হবে না আমাদের রাতুল হেসে উড়িয়ে দিল তিন্নি বলল তুই হাসছিস তা না তো কি তুই শহরে চলে যাবি আর আমি ওই দূরে দেখ কানু মাঝির সাথে কাল থেকে কাজে যাব তিন্নি বলল তোর পড়াশোনা আরে বাবা মা হারা ছেলের পড়াশুনা হয় না এই না দেখ কাল থেকে না খেয়ে আছি কোন কষ্ট হচ্ছে আমার তিন্নি বললো তুই এখনো খাস নি বা বা বেশ দম আছে তো তোর এর পর তিন্নি ওকে দৌড়ে বাড়ি থেকে ভাত এনে দিল সেই দিনে যেন রাতুল বেশ ভাত খেলো ওদের বাড়ি থেকে এদিকে দূরের ঐ মসজিদ থেকে আজান ভেসে আসে রে আমি বাড়ি চললাম হয়তো কাল থেকে আর একসাথে দেখা হবে না রাতুল বললো আচ্ছা ঠিক আছে যা ভালো থাকিস। রাতুল সন্ধ্যায় বাড়ি এসে একা একা বলতে লাগল আমি আবার একা হয়ে গেলাম একা হয়ে গেলাম তো ঠিক আছে কাল থেকে মনু মাঝির সাথে কাজ করতে যেতে হবে বাকি জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দেবে তার কিছুক্ষণ পর স্কুলের হরি দাদু এসে বলল রাতুল তোমাকে মাধব বাবু ডেকেছেন একটু রাতুল দৌড়ে গেল মাধব বাবু বললো রাতুল শুনছি তুমি নাকি কাল থেকে কাজে যাবে মনু মাঝির সাথে রাতুল বলল হ্যাঁ পড়াশোনা করবে না আর বাবা মা হারা ছেলের পড়াশোনা তাও তো ঠিক আচ্ছা তুমি যাও রাতুল ভাবলো বোধহয় পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে কিন্তু এ তো দেখছি উল্টো হয়ে গেল এবারের মতো পড়াশোনা দরকার হয় তিন্নির জন্য বসে থাকবো ময়ূরী নদীর দিকে ফিরে পরের দিন থেকে কাজ করতে লাগলো এইভাবে রাতুল বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিল আর তিন্নি চলে গেল শহরে রাতুল সে যে বসে আছে তার অপেক্ষায় কিন্তু সূর্যের এক দিগন্ত রাশির মত সে যেন এক কথায় মিশে গেল রাতুলের কাছে তিন্ন হয়ে রইল সেই মেয়েটি রুপে ।







কবিতা :
        মোর কল্পনা
                   সায়ন প্রামানিক

নিস্তব্ধতার বুকে শুন‍্যতা ঘিরে
বসে আছি আমি একা ,
একলা আকাশ একলা নীড়
একলা বেচে থাকা ।
শূন্যতা কে আজ বুকে টেনে নিয়ে
বেধেঁছি দৃঢ় জল্পনা ,
একলা পৃথিবী জয় করব
এই মোর কল্পনা ।
    








শুভ জন্মদিন
             বিপ্লব গোস্বামী


হাসি দিয়ে লুকালে যদি মম সবটুকু বেদনা
মম তরে আজীবন হাসো প্রিয় এটুকুই বাসনা।
চরণে দিও ঠাঁই হে প্রিয় করতে তব বন্দনা
আজ তব জনম দিনে করি তব শুভ কামনা।
কি আছে দেবার বলো,কি আছে বলার
যা কিছু আমার সবই তব উপহার।
হৃদ বাগে সদ‍্য ফোটা কুসুমের হার
করিব তোমাকে দান করে তোমাতেই ধার।
না দেবো অমূল‍্য ধন,না দেবো গোলাপ
আজ না হয় করে গেলাম শুধুই প্রলাপ।
বঙ্গ তব সৃষ্টি কভু করবেনা অপলাপ
প্রাপ্তি যেন হব তব কাঙ্খিত সর্বচ্ছো ধাপ।










অনুগল্প
কল্পতরুর কল্পনা
             আরশাদ আল গালিব


বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি, একহাতে সিগারেট আর আরেক হাতে আমার লেখা বই 'স্পর্শী'। সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে, ছাই জমা হচ্ছে,  কিন্তু আমি অপলক নয়নে তাকিয়ে আছি বইয়ের দিকে। পড়ছি কিনা তা বলতে পারব না, তবে একমনে দেখছি। এমন সময় পিঠে হাতের স্পর্শ পেলাম। কিন্তু চমকে উঠলাম না। কারন এ স্পর্শের সাথে আমি বহুদিনের পরিচিত। এ আলতো স্পর্শ কখনো ভোলার মতো নয়। এর রয়েছে একটি নিজস্বতা, রয়েছে মোহময়ী এক অনুভূতির আকুল আবেদন। তাই আমি না দেখেই বলে দিতে পারি যে এটা কল্পতরু। সবসময়ের মতো কল্পতরু আজও এসে আমার পিঠে হাত রেখে বলল,
- কি করছ
আমি বললাম,
- "প্রখর রৌদ্রতপ্ত মরু পানে দাঁড়িয়ে
  পথিক যেমন চায় এক পেয়ালা জল,
  তেমনি আমিও আছি উন্মুখ হয়ে
  পেতে তোমারই পেলব করতল।"
- তাই!
  এ বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
- "চাও যদি হে প্রিয়
  পেতে মোর করতল,
  তব কেন অপেক্ষায়
  এসো চলে আমারই নিকটে"
আমি অবাক হয়ে বললাম,
- আজ হঠাৎ মুখে কবিতা!
- কেন কবিতা বুঝি আমার মুখে মানায় না।
- না তা নয়, তুমি তো কবিতা আবৃত্তি করতে চাইতে না। আজ হঠাৎ?
সলজ্জ হেসে কল্পতরু বললো,
- আজ ইচ্ছে হলো তাই।
একটু থেমে আবার বললো,
- কেন তুমি খুশি হও নি?
- সব অভিব্যক্তি কি ভাষায় প্রকাশ করতে হয়।
কিছু নাহয় বুঝেই নিলে।
- তারমানে?
কল্পতরুর বাড়িয়ে দেয়া দুটি হাত ধরে বললাম, 
- "হে প্রিয়া এসেছ মোর জীবনে নিয়ে আজ,
   অঝর ধারায় আনন্দ বর্ষণের সাজ।
   তাই, চলো হে প্রিয়া আজ হতে ধরি এ হাত
   মেটাই আজন্মের বন্ধনের আস্বাদ। "
আবেগাপ্লুত হয়ে উঠলো কল্পতরু। মুখে প্রাণোচ্ছল হাসি এনে বলল,
- সত্যি বলছো তো।
- হুম, তিন সত্যি।
- জানো তোমার মুখ থেকে একথাটি শোনার জন্য আমি অপেক্ষায় ছিলাম আজ অসংখ্য রজনী।  শুধু একবার এ কথাটি শোনার আসায়।
আজ সত্যি ই আমি আনন্দিত। ভালো লাগার এক মোহময়ী আবেশ যেন আচ্ছন্ন করছে আমায়।
এসব শুনতে শুনতে কখন যে হারিয়ে গেছি এক তৃপ্তিময় অজানা ভুবনে তা হয়তো আমি নিজেও জানি না। আমার দুচোখে এখন শুধু একবুক তৃষ্ণা আর কল্পতরুর কল্পনা। এই নিয়ে ই আমি থাকতে চাই, এটাই আমার তৃপ্তিময় এক পাওয়া। কল্পতরু আমার কল্পনায় আসে প্রতিনিয়ত,  যদিও সে বাস্তব চরিত্র,  কিন্তু সদা বিরাজমান আমার কল্পনার এক অসীম মোহময় ভুবনে।








কবিতা : প্রতীক্ষা!
               বিশ্বজিৎ কর

আমি যাবই তোমার কাছে,
যেদিন তোমার মধুময় হৃদয়ে-
থাকব শুধু আমি!
নিখাদ ভালবাসার নির্যাস,
আকন্ঠ পান করার ইচ্ছায়-
ছুটে যাব তোমার কাছে !
বাহুবন্ধনের তাপে তপ্ত হয়ে,
বুঝে নেব ভালবাসার উষ্ণতা!
দিন গুনেই চলেছি,
কবে যে আসবে সেই দিন!









                      বাবা
                হামিদুল ইসলাম

বাবা নামক এক ছাতা ছিলেন
দাঁড়িয়ে পাহারা দিতেন
সারাটা সময়  ।
আমরা ব‍্যস্ত থাকতাম প্রতিদিন ।
ভ্রুক্ষেপ করি নি
সেই ছাতাই আমাদের পথ প্রদর্শক
সময় কিংবা অসময় ।
বৈধব‍্যের জাল রোদে শুকায় অজানা মেঘ ।
হে ঈশ্বর !
ক্ষমা করো
বাবা নামক ছাতাটাকে তুমি টেনে নিলে অজানতে ।
সেই থেকে সংসারে ছাতার বড়ো অভাব ।








নিঃসঙ্গতা
           জুয়েল রুহানী


নিঃসঙ্গ জীবনের বাঁকে
উপনীত আজ
অর্থ-বিত্তের নেই চিত্তন্নতি
তাইতো সকলে যায় বহুদূরে
দিয়ে নিঃসঙ্গ জীবন উপহার!
গুমড়ে উঠে বুকের ভিতর-
সঞ্চিত সুখকর অনুভূতিগুলো
করুণার সুর মম অন্তরে বাজে,
নিঃসঙ্গ জীবন দানে-
বহুজন বহুরূপে সাজে!!










       ভুল
           মিনতি গোস্বামী

ভুলে
যাচ্ছি তারিখ
বার ও সময়
ঘরের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছি
মাপা খাবারে পেট ভরাচ্ছি দুবেলা
পরিকল্পনা হীন বাড়িতে গেঁথে যাচ্ছি ইঁট ।
ভুলে যাচ্ছি আমি মানুষ না কীট।
মৃত্যুর সঙ্গে খেলছি কানামাছি খেলা
কুপীর আলোতে চোখ জ্বালছি
প্রতি মূহুর্তেই প্রলয়
আঁকছি সামান্তরিক
কূলে।










প্রকৃতি
         সত‍্যব্রত ধর


নদীরা নীল জামা পরে ছুটে চলে দিক-দিগন্ত পেরিয়ে,
মোহিত মিলনের নেশায়।
বনের অজস্র গাছের সবুজ প‍্যান্ট ঝলসে গেছে,
পোড়া রোদের নিদারুণ তাপে।
ওদিকে পাহাড়ের কোলের বরফ গলছে অবিরত,
যেন বিধবার কাপড় খুলে যাচ্ছে।
প্রকৃতির রূপ আজ মিছে সভ‍্যতার জৌলুসে ছিন্ন হলেও,
ফুলের গন্ধ মাতিয়ে রাখে আমাদের।
পাখিদের কুজনে ঘুম ভাঙতেই দেখি নানা পশু হাজির,
ভালোবাসা বিনিময় করতে।
চশমা পড়া কবির চোখে প্রকৃতি ধরা দেয় যেনো,
স্বপ্নের তিলোত্তমা রূপে।








এই কবিতা টি আমি আমার বাবার স্মৃতি তে  লিখেছিলাম । ওনার  হসপিটালে থাকাকালীন ব্যাথ্যাতুর  স্মৃতি :-----------

  তোমায় দেওয়া শেষ কথা রাখতে পারিনি
             সৌম্য ঘোষ
       
মুখটা পান্ডুর হয়ে আসছিলো ,
চোখের তারা ধীরে ধীরে ফিকে ,
থেমে থেমে আসছিল তোমার কথা
দু'চোখে ব্যাকুল আকুলতা নিয়ে
বলেছিলে ,
আমার হাত তোমার কাঁপা কাঁপা দু'হাতে
চেপে
তোমার কাতরতা :
"বাবু, চল্ বাড়ি যাই ,
বাড়ি ,বাড়ি
আমাদের বাড়ি ফিরে চল ! "
তোমায় কথা দিয়েছিলাম :
আর ক'টা দিন থাকো
ডাক্তারবাবু তোমায় বাড়ি যেতে দেবেন  ।
প্রাণপণ চেষ্টায় টেনে টেনে বলেছিলে
কথাগুলি ।
নিশ্চল কালো পাথরের সামনে
নতজানু হয়ে বসে আছে, মা আমার ।
করজোড় প্রার্থণা !
মা বলেছিলো :
" কবে বাড়ি আসবে , তোর বাবা ?"
সজল চোখ !
প্রতিজ্ঞা বদ্ধ আমি , হারবো না  কিছুতেই ।
হাসপাতালের দক্ষিণ দিকে সোনাঝুরি গাছ
সারাদিন সেখানে পাখিদের আসর !
ক্লান্ত মানুষটার এটাই ছিল শেষ বিনোদন !
বাড়ী ফিরেছিলাম ,
একা ,
সঙ্গে নিথর হয়ে যাওয়া একটা মানুষ ।
ফিরে এসেছি ,  বাড়ি
একা
তুমি এলে না ঘরে ।
রাখতে পারিনি তোমাকে দেওয়া শেষ কথা ।
পারিনি তোমায় বাড়ি ফিরিয়ে আনতে ,
তোমায় দেওয়া শেষ কথাটুকু ---
পারিনি রাখতে  ।।








গোপন সম্পদ  
             সমীহ বসু  

বুক চিরে দেখাতে পারবে না --

তোমার বুকে আছে রাম সীতা !

বুক চিরে দেখাতে পারবো --
    আমার বুকে আছে হৃৎপিণ্ড !

মরিচিকার পিছনে ছুটে কী লাভ, 
  গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো ছাড়া, 

 তোমার কাছে আছে
      সেই চির তৃষ্ণার
            শ্বাস-প্রশ্বাস ! 

জ্ঞান, চেতনা, চৈতন্য, হরি ওঁ ...








     বিপর্যয়ের আগে  
                শুকদেব পাল 

সেদিনও ভাবেনি আমরা থমকে যাবো এই গতিশীল পৃথিবীতে ।
লাশের পাহাড় চোখের জলকে শুকিয়ে দেবে চুল্লির দহনে, সময় যে গুটি গুটি পায়ে পেছনে ফিরে যাবে তারপর গতিহীন হতে হতে ঘুমিয়ে পরবে বন্দি ঘরে কে ভেবেছিল ।
প্রকাশ কথা দিয়েছিল সামনের মাসে বাড়ি ভাড়ার টাকা মিটিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে দশ মাস পর ,মা অপেক্ষায় আছে ভাঙ্গা ঘরের ছাউনীটা মেরামতি করবে বর্ষায় জল পড়ে ভেসে যায় ব চোখের পাতা দুটি থেকে বিছানায়।
বিকাশ ভেবেছিল বয়সের শেষবেলায় সরকারি চাকরির জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করবে ,নইলে প্রিয়তমা পরিণীতার কথাটি আর রাখতে পারবে না নইলে তাকে পরিনয় বিরহের জীবন্ত দর্শক হয়ে থাকতে হবে ।
তাদের সম্পর্কের বাঁধন কষতে কষতে ছিড়ে যাবে ।
স্বপন কাকার ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর সাথ ছিল , আর ছোটো মেয়েটিকে গায়িকা করবে কিন্তু হঠাৎ চটকল বন্ধ হয়ে গেল ।
কাকা এখন স্বপ্ন দেখে রাতের অন্ধকারে ।
বিশু রেলের হকারের কাজটা করে দুবেলা পেটপুরে ভাত খেতে পাচ্ছিল ,তার অভাবে কিছুটা ঘুচেছে ।
বিজয় বাবু অফিসার কর্মব্যস্ততা আপনজনের বিয়োগ বেদনাকে ভুলিয়ে রেখেছে ...
কার্তিকদার দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর বিয়ে ঠিক হল ,সংসারের বুড়ি মা টাকে এবার নিস্তার দেবে ।
পঞ্চম ক্লাসের ছাত্র জীবন ,সে অসুস্থ তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে ,যদিও ফার্স্ট স্টেজ ।
ইলিয়াস চাচা ফুলবাগানে আয়তন টা বেশি বৃদ্ধি করেছে এ বছর বাংক থেকে লোন নিয়েছে বড়ো রকমে ,তার রকমারি ফুল বিদেশ যাবে ।
চিত্রা আর্ট কলেজ ভর্তি হয়েছে বড়ো বড়ো এক্সেবিশনে নিজের প্রতিভা প্রকাশ করবে তার লক্ষ্য ।
প্রদীপ্ত মনে জেদ ধরেছে আবার উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করবে বোর্ডের টপার হবার ইচ্ছাটা জিইয়ে রেখেছে ,
আর ধনী বাবুর পাঁচতারা হোটেল,নতুন গাড়ি ,বেশ কটা বাড়ি নেতাদের ধরে মানুষের কাছে ইমেজটা বাড়ানো সবমিলিয়ে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ......
তখনি নেমে এলো বিপর্জয় প্রকাশ বাড়ি ফেরেনি ,রেল লাইন ধরে হাঁটার সময় মালগাড়ি তাকে পিষে দেয়েছে ।
বিকাশ চাকরির আশা ছেড়ে বেরিয়ে গেছে দিনমজুরের কাজে ।
বিশুর পেটের হাড় গুলি বেরিয়ে এসেছে তীব্র ক্ষুধায় তার কাজ নেই ।বিজয় বাবুর প্রিয়জনের কোথায় ফিরে ফিরে আসছে স্মৃতিতে । কার্তিক দার বিয়েটা ভেঙে গেল, বয়সের ভার বয়ে বেড়াচ্ছে । জীবনের জীবন সংশয় চিকিৎসার অভাবে । ইলিয়াস চাচা ফুলের বাগানে বসে কাঁদে কাঁদে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল তার সাধের বাগানের ফুল দিয়েই শেষ যাত্রার সমাপ্তি ঘটলো । চিত্রা চোখের কোণে কালসিটে শেষ রঙের ভাষা বুঝতে পারে না । প্রদীপ্ত পরীক্ষা দেওয়া হলো না ,তার পরিশ্রমের মূল্যের মাপকাঠির মূল্যায়ণ হলো না ।
সহস্র মানুষের আশা ক্ষীণ হতে হতে মুছে যাবে চিতার আগুনে .......


🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉

Today last day for Maharam Issue 2020