সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০

মদন ঠাকুর গলপ কলমে,,,অনাদি মুখার্জি

মদন ঠাকুর   গলপ  কলমে,,,অনাদি মুখার্জি

 মদন ঠাকুর 
     গলপ 
কলমে,,,অনাদি মুখার্জি
 


পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে ,যে কোন লোককে শুধালে বলে দেবে মদন ঠাকুরের বাড়ির ঠিকানা ! মুনসেফ ডাঙগা হরিসভা মোড়ে যে রাস্তা টা নেমে গেছে  সেই খানে তার বাড়ি ! এই মুনসেফ ডাঙগা চত্বরের একটা ও পুরোহিত ঠাকুর পাওয়া যাবে না শুধু ঐ দুইজনকে ছাড়া ,এক সাধন ঠাকুর আর মদন ঠাকুর ! সবাই কার বাড়িতে পূজো অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে মদন ঠাকুরের ! খুবই ভক্তি সহকারে পূছো করেন ! খুবই ধার্মিক মানুষ ,যার বাড়িতে যায় পূজো করতে কিন্তু দক্ষিণা বলতে শুধু জল বাতাসা পেলে খুবই খুশি ! আমি একদিন বললাম মদন ঠাকুর তুমি তো পূজো খুব সুন্দর করো কিন্তু দান দক্ষিণা তো কিছুই নাও না তোমার সংসার চলে কি রকম ! হাসতে হাসতে বলে ভগবান তো আমাকে দুই বেলা ঠিক খাবারের জোগাড় দেয় আর কি চায় ! 

কথাটা মদন ঠাকুর মন্দ বলেনি পরে আমি তা বুঝলাম , মদন ঠাকুর কত বড়ো মনের মানুষ যেদিন আমি দেখলাম নিজের চোখে !

বেনুপালের ছেলে কে সাপে ছোবল মেরেছে ,তাই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো ,ডাক্তার সাহেব সব দেখে বললেন সাপের বিষ সেই ভয়ংকর বাঁচার আশা একদম নেই সব উপরবালার হাত ! তা শুনে তো বেনুর বউ খুবই কান্নাকাটি জুড়ে দিল ! ডাক্তার সাহেব বললো একটা ইনজেকশন লিখে দিচছি খুব দাম তবে দোকান থেকে কিনে আন এখুনি দিলে মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে বলে ডাক্তার সাহেব লিখে দিল ! বেনুপালের অবস্থা ভালো নয় এখুনি লাগবে দামি ইনজেকশন কি করবে ভেবে পারছে না ! দোকানে গিয়ে শুধায় কত দাম ইনজেকশনের ? দোকান দার বললো একটা দাম একহাজার টাকা এত দাম শুনে চিন্তায় পড়লো ! কে একজন বললো বেনু একবার মদন ঠাকুর কে খবর দিলে হয় না ! কেন মদন কি করবে ? সেই তো পূজো নিয়ে ব্যাস্ত থাকে সেই কি আর ডাক্তার বিদ‍্যা জানবে ! সবাই যখন বলছে তখন বেনু তার ছেলেকে নিয়ে মদন ঠাকুরের বাড়িতে গেল ! সেই সরু গলি ভেতরের একচালা বাড়ি মদন ঠাকুরের সেই খানে গিয়ে হাজির বেনু ! মদন ঠাকুর সব কিছু দেখে শুনে তার ছেলে মুখে কি যেন দুই এক ফোঁটা ঔষধ খাওয়াতে বেনুর ছেলে উঠে পড়লো তা দেখে তো সবাই অবাক হয়ে উঠলো জয় মদন ঠাকুরের জয় সবাই তখন বলতে লাগলো ! বেনু তখন মদন ঠাকুরের পা ধরে  কাঁদতে কাঁদতে বললো সত্যিই ঠাকুর তুমি আমার ছেলেকে বাঁচালে বলে তার হাতে পাঁচশ টাকা দিতে গেসলো ,সেই টাকা দেখে মদন ঠাকুর বলে উঠলো আমি টাকা নিয়ে কি করবো যা এই টাকা দিয়ে তুই তাদের জন্য খাবার কিনে দিলে আমি খুশি ,যারা ফুটপাতে বসে থাকে অনাহারে দিন কাটায় ,তাদের হাতে দিলে তোর ছেলের মঙ্গল হবে ! আমি তো সব দেখে অবাক হয় যখন সবাই চলে গেলো আমি তখন মদন ঠাকুর কে বললাম তুমি তো ভালোই বিদ‍্যা জানো ,তুমি এই করে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারো তবে কি জুড়ি বুটি খাওয়ালে যে বেনুপালের ছেলে ঠিক হয়ে গেলো ! সব শুনে বললাম সত্যিই তোমার সাধনার শক্তি আছে কিন্তু টাকা টা তো নিতে পারতে এতে তোমার সংসারে লাভ হতো ! সেই হেসে বললো সব থেকে সুখী মানুষ কে বলতো ধনী না গরিব ! ধনীর টাকা আছে কিন্তু সেই কি সুখী তার দেহের কত রোগ অসুখ হচছে ,সেই ঠান্ডা গরম অনুভূতি পাচছে কিন্তু যে গরিব সেই দেখ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে সেই কিন্তু ঠান্ডা কি আর গরম কিছুই বুঝতে পারে না ,আর তার কোনো কঠিন রোগ হয় না সেই ঠিক হাসিমুখে থাকে বুঝলি কিছুই ! তাই টাকা টাকা করে কোন লাভ হয় না ,তার চেয়ে তোর মনটা রাখ বড়ো ঐ আকাশের মতোন ,,সবাই কে সমান চোখে দেখলে তবে দেখবি তোর ঠিক চলছে ! আমি বললাম সত্যিই তোমার নীড় ছোটো কিন্তু তোমার মন ঐ আকাশের মতোন বড়ো তাই তোমার যত কষ্ট আসুক না কেন সব কষ্ট যে তোমার কাছে হার মানে ! জীবনের যে যত সমস্যা য় পড়ুক না কেন , তোমার কাছে এলে তার সব সমস্যা সমাধান হবে ! সত্যিই তুমি মানুষ নয় তুমি মহামানব তাই তো তোমার মন ঐ আকাশের মতোন বড়ো !



রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০

Upokontha sahitya patrika-27/12/2020

Upokontha sahitya patrika-27/12/2020

 Upokontha Sahitya Patrika - 27/12/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 27/12/2020

**********************************

"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
                 (ওয়েব ম্যাগাজিন)     

প্রকাশ কাল:- 27/12/2020, রবিবার
               সময় :- রাত 09 টা. 30 মি:


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম


সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒


মিষ্টিকথা
   অগ্নিমিত্র

কী দারুণ সৃষ্টি, বাংলার মিষ্টি!..
বাংলার মিষ্টি যে আমাদের কৃষ্টি ।
সন্দেশ ভালো লাগে নানা স্বাদে গন্ধে..
চমচম মুখে পুরি, বিনা কোনো ধন্দে ।
গরম গরম পান্তুয়া পেলে আমি
চাইনা যে আর কোনো উপহার দামী ;
তবে সবথেকে আদি সেই রসগোল্লা ,
চুপচাপ খেয়ে নিই, করি না তো হল্লা !..
সুগার ও কোলেস্টেরলকে ভয় নেই,
দিনে একখান খেয়ে নাচি ধেই ধেই !
জিলিপির মোহ আমি ছাড়তে পারি না ..
তার সাথে রাবড়িও আমি যে ছাড়ি না ।
কষ্ট করেও লাইন দিয়েই কিনবো,
গন্ধ ও স্বাদেই যে মিষ্টি চিনবো।
আরো কত মিষ্টি ছড়িয়ে ছিটিয়ে
আছে চারদিকে, তাই আশ মিটিয়ে
মিষ্টিচরিত লিখে যাব আমি দেখো,
এই কথাটি আমার মনে রেখো ।।





চলো বিদ‍্যালয়ে যাই
বিপ্লব গোস্বামী

আয়রে সখা আয়রে সখী
বিদ‍্যালয়ে যাই,
সেথা পড়ি-লিখি,হাসি,খেলি
বড় মজা ভাই।

নিয়ম মাপিক পড়াশোনা
নিয়ম মাপিক খেলা,
গুরু মশাইর আদর-স্নেহে
কাটে সারা বেলা।

পড়ার সময় আদর করেন
দুষ্টামিতে ধমক,
বকাটে সব বড্ড পাজী
সরাক্ষণ বকবক।

আয়রে সখা আয়রে সখী
বিদ‍্যালয়ে যাই,
যেথা সত‍্য,নিষ্ঠা,সহিষ্ণুতার
সদা শিক্ষা পাই।






ভগবানের দূত যিশুর বাণীর এখনকার  প্রাসঙ্গিকতা
নরেন্দ্র নাথ নস্কর

প্রভূ যিশুর আত্মত্যাগ ব্যর্থ হবার নয়।

মানুষকে সেবা করতে গিয়ে, মানুষের চেতনা ফেরাতে গিয়ে, যীশু  তত্কালীন শাসক ও ধর্ম রক্ষার ধ্বজাধারীদের হাতে যে লাঞ্চনা পেয়েছিলেন তা এযুগের সাধারণ মানুষ ধারণাও করতে পারবেন না।

শুধু লাঞ্চনা নয়, অকল্পনিয়  অত্যাচার তাকে সেই সময় সইতে হয়েছিল।

ততকালীন রাজাও সমস্ত জেনেও  চোখ বুঝিয়ে ছিলেন।

তখনকার তথাকথিত ধর্মের ধ্বজাধারীদের জন্য  ও তাদের চাপে রাজা  যিশুকে বিচারের নামে প্রহসন করে, তাকে  ক্রুশবিদ্ধ করে ভয়াবহ  যাতনা দিয়ে, তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন।

যিশুর হত্যাকরিদের মত চরিত্র আজকের সমাজের বুকেও  মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তবে প্রভূ যিশুর মত, বানী  ও মানুষের ভালবাসাকে কেউ মারতে পারেনি।

এখনও যীশুর প্রেমের বানী  ও উপদেশাবলি  আজকের দিনেও একইরকম ভাবে প্রযোজ্য।

হিংসায় উত্তাল এই পৃথিবীতে মানুষের মনে ভাতৃত্বের ভাব জাগাতে, তার জীবন আদর্শ, বানী এখন বা ভবিষ্যতেও প্রাসঙ্গিকতা আছে ও থাকবে।




মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা
১ ।ঘরের টানে

ঘরের
টানে এতদিন
ঘুরেছি চরকির মত
পটের মত নিজেকে ধরেছি
মেলে প্রতিদিন একটু একটু করে
নতুন মাটির প্রলেপে ঘর হয়েছে খোলতাই।

জানিনা কেমন করে হারিয়ে গেল রোশনাই
অবাঞ্ছিত আমি রয়েছি  কোণের ঘরে
বিছানাকে শুধু আঁকড়ে রেখেছি
শরীরে ব‍্যাধির মত
ডাক প্রতিদিন
বাইরের।

২ ।পথের যীশু

হাজার
যীশু প্রতিদিন
পড়ে থাকে ফুটপাতে
শীতের দিনে জোটেনা জামা
খিদের পেটে জোটেনা তাদের আহার
বড়দিনে তবু যীশুকে নিয়ে আদিখ‍্যেতার বাহার।

যীশু মানেনা সমাজের এই বৈষম্য অনাচার
তার জীবন দান পাপের প্রতিকার
ঘুচলে পাপীদের পাপের পরিসীমা
আসবে যীশু শীতরাতে
মিটবে ঋণ
রাজার।





এক চাষী
আব্দুল রাহাজ

একটা ছোট্ট গ্রামে বাস করতো রহমত চাচা তার পরিবার ছিল বেশ বড়‌। রহমত চাচা মাঠে কাজ করে চার ছেলে সবাই ছোট থেকেই বাবার সাথে উত্তর দিকের সুবিস্তীর্ণ মাঠে কাজ করে সারা বছর। প্রতি সপ্তাহে মুন্সিগঞ্জের হাটে গিয়ে বিভিন্ন সবজি নিয়ে বসে ওরা  যা উপার্জন হয় তা একটা অংশ নিজেরা দৈনন্দিন সংসারের কাজে লাগান আরেকটি অংশ সঞ্চিত করে রাখেন আরেকটি অংশ গ্রামের প্রান্তিক মানুষগুলোর জন্য দু'বেলা দু'মুঠো ভাত তুলে দেয় তাদের হাতে এইভাবে ওরা দিনগুলি কাটায় বছরগুলি কাটায়। দেখতে দেখতে রহমত চাচার পরিবারে সুখ শান্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠে গ্রামের মানুষগুলো তাদের কাছে কাজ করতে আসে সেই রহমত চাচা সবাইকে আপন করে নিয়ে বেঁচে থাকে আজীবন সেই গ্রামে। সবুজ শস্য শ্যামলা গ্রামে বেশ পারস্পারিক মেলবন্ধন সহযোগিতা মধ্য দিয়ে ওরা বেঁচে থাকে আজীবন।সবার মুখে মুখে চাষী পরিবার নামে সবার পরিচিতি হয়ে ওঠে।  এরপর বেশ কয়েকটা বছর কেটে যায় নতুন রূপে সেজে ওঠে ফসলে। সেদিন ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে রহমত চাচা জীবনের শেষ সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছেন তখন বেলা বারোটা আজান শুরু হয়েছে পূর্বপাড়ায় রহমত চাচা পারছিলেন না ফেরার দেশে গ্রামে বেশ শোকের আবহ তৈরি হয় কোথায় যেন সূর্যের নিস্তেজ হলুদ আভার আলোর মত দূরের মাটির সাথে যেন বিলীন হয়ে যায়। তার যে উদার মন তার যে ফেলে যাওয়া স্মৃতি তার যে সাহায্য সবাই মনে রেখেছিল মনের মনিকোঠায় আজীবন। এইভাবে সেই চাষী ও তার পরিবার গ্রামে এক অনন্য কৃতিত্ব‌ নিয়ে বেঁচে ছিল আজীবন।






চির বঙ্গ স্পেশাল
    মম

পাটালি গুড়।
কাঁঠালি কলা।
ও উচ্চারণ করে কথাবলা।
গাওয়া ঘিয়ের লুচী।
নাওয়া হলে তবেই সূচি।
অষ্টম প্রহরের কীর্তনের সুর।
নৃত্যকলা।
পুরনোকে আঁকড়ে থাকা।
বুদ্ধিতে চির পাকা।
সাধারণ বেশবাস।
ভ্রমণ বারোমাস।
অম্বল রোগ।
শ্রী মহাদুর্গা নবমিতে মাংসের প্রসাদ ভোগ।
কম্বল ঢেকে মাথা পর্যন্ত শীতের ঘুম।
প্রিয় চিলেকোঠার রুম।
সম্বল গীতাঞ্জলি, কথামৃত, গীতা।
বাগানে নীল অপরাজিতা।





বর্ষার এক রাত
শ্রীকান্ত মালাকার

আকাশ হাসে বাতাস গাই
জীর্ণ পাতা ঝরে যায়।
শ্রাবণ মাসে আষাঢ়ে মেঘে
বৃষ্টি ধারা ঝরে তাই।

দক্ষিণ কোণে গোয়াল ঘরে
গাভীর পিঠে মোরগ চড়ে।
বিনা ছাতায় কাজ সেরে
শরীর কাবু হল জ্বরে।

জমা জলে মশার চাষ
ঝোপেঝাড়ে সর্পের বাস।
উঠোন শুকাতে লাগবে তুষ
নইলে পিছলে পড়ে হইবো লাশ।

দিঘি পুকুর কানাই কানাই
বন্যার আভাস দিচ্ছে জানাই।
ব্রাহ্মণপাড়ায় কার বিয়ে গো?
নিঝুম রাতে শুনলাম সানাই।।







কাকের ধর্ম 
সুস্মিতা দে

একটি কাককে খাবার দিলাম
চাড়টি নিজের পাতে খানিক
ফেলা ভাত।দশটি কাক এসে
হাজির হলো একটি  কাকের ডাক।
একটি কাক মারা গেলে হাজির
করে দশ কুড়ি কতো কাক।

মানুষের  জীবন নহে কাকের
মতো নয় ।তাই মানুষের 
পেটে খাবারের  হাহাকার
তাই তো শেষ যাত্রার সময়
মানুষ ভাবে মানুষের অভাব
জ্বলজ্বলকরে মানুষের মাঝে
মানুষের প্রয়োজন আজ ।

জনহিতকর কাজ সৃষ্টি
করে তাদের নাম আজ
সবার স্মরণে তাই তো
মহাপুরুষর বানি আজো
ইতিহাস তাখোদিত আছেন
মানুষের জন্য মানুষের
প্রয়োজন সেই কথা বলে ।

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/12/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/12/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/12/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/12/2020

**********************************

"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
                 (ওয়েব ম্যাগাজিন)     

প্রকাশ কাল:- 26/12/2020, শনিবার
               সময় :- রাত 09 টা. 30 মি:


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম


সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒


   শীতের সেই রাতদিন
   ডঃ রমলা মুখার্জী

শীত ক্রমশ বিলীয়মান সঙ্গে নিয়ে শীতের পিঠে-
মা বানাতেন ঝাল-নোনতা,কিছু আবার বেশ মিঠে।
পিঠে তৈরির পাঠ আজ আর রান্নাঘরে নেই-
মন চাইলে দোকানে বা মেলার মাঠে পাই।

রোদে পিঠ দিয়ে ঠাম্মি দিতেন গহনা বড়ি-
মায়ের আমলে গোল-গাল,স্বাদে আহা মরি !
কোনটা মশলা,কোনটা মুলো, কলাই-মুসুর বড়ি-
এখন বড়ি দোকানে,প্যাকেট কিনে ঘরে ফিরি।

হারিয়ে গেছে শীতের কাঁথা,যুগটা বড় আধুনিক -
রকমারি বাহারি কম্বল,আগাগোড়া সিন্থেটিক।
হাল্কা শীতে মা বানাতেন পাতলা  পাতলা সুজনি কাঁথা,
ওঃ,সে কি আরাম! মায়ের পরশ পা থেকে মাথা!
বাবার কাঁথায় ফুল,লতা,সুন্দর সে নক্সি-কাঁথা-
ঠাম্মী তুলতেন কাঁথাতে নক্সা,সে সব এখন গল্প কথা।
পুরনো কাপড়, পাড়ের সুতোয় অপরূপ শিল্প গাঁথা-
খুব শীতে ঠাম্মী নিতেন মোটা একটা লেপ-কাঁথা।
লেপ-কাঁথা লেপের মত,বেশ মোটা আকারে বড়-
আমিও ঢুকে পড়তাম তাতে ভীষণ শীতে হলেই জড়ো।
মা-ঠাম্মির গল্পগুলো কাঁথায় আছে সেঁদিয়ে-
নিখরচার কাঁথা-শিল্প কোথায় গেল  হারিয়ে!








এশিয়াড
  বদরুদ্দোজা শেখু


নাতিদূরে দেখা যায় এশিয়াড গ্রাম
ঝিলমিল আলোর লহরী জাগে আচ্ছন্ন বিভায়
মাঠময় ইতস্ততঃ , নবম এশিয়াড ক্রীড়াচক্রের অকুস্থল
আধুনিক সবরকম সুযোগ সুবিধা সমন্বিত, দেশি বিদেশী
দর্শক সমর্থক ভাষ্যকার ইত্যাকার বিশিষ্ট জনেরা
এলেন গেলেন লাখ লাখ , ভিড় সামলাতে
বাইপাস উড়ালপুলে ছেয়ে গেল রাজধানী
আর অক্লেশে উচ্ছেদ হলো হকার ভিক্ষুক উদ্বাস্তু
অবাঞ্ছিত প্রাণীকুল , রাজধানী সুন্দর হলো অসম্ভব
দ্রুততায় জরুরী ভিত্তিতে ।
যথাসাধ্য স্বচ্ছন্দ করা হলো অতিথি-কুলের  ভ্রমণ - যাপন।

চিত্ত-আলোড়ক সেই এশিয়াডে আয়োজক দলের সাফল্য
বড়োই করুণ , আশি কোটি ভারতবাসীর মাথা নত অজন্মা অনাথ।
অবশ্য বিশাল এশিয়াড আয়োজন সংগঠন
নিরাপত্তা বিধান বিলক্ষণ গৌরবের বটে ,
বিশেষতঃ জায়মান প্রচার -মাধ্যমে আর সরকারী মহলের
বিত্তদুষ্ট চালচক্রে , আত্মতুষ্ট  বেহায়াপনায় ।

এশিয়াড উপলক্ষ্যে দিল্লীর চেহারা হালফিল হলো
প্রসাধন বিনোদন সুরক্ষার সুচারু ব্যবস্থাপনায় , অসহায়
দেশবাসী অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-স্বাস্থ্যের কাঙাল,
এক পা-ও এগোলো না , ক্রীড়া জগতের উন্নয়নে
সরকারী প্রয়াস নাই , মদত নাই ,
পরিকল্পনা নাই , বাজেট বরাদ্দ নাই ,
দীর্ঘমেয়াদী কোনো লক্ষ্য নাই , পরিকাঠামো নাই,
দেখে শুনে মনে হয় এশিয়াড গ্রাম
অধুনা অকেজো । চমৎকার , চমৎকার কেন্দ্রীয় সরকার ।

আকস্মিক সন্ত্রাস রোখার অজুহাতে
আগে থেকে ছকে'-দেওয়া সফর-পঞ্জীর আনুকূল্যে
সীমিত বহরে সাজানো শহর দেখে বিদেশীরা
এদেশের প্রকৃত স্বরূপ দেখার উপায়
পেলেন না কিছু , রাজধানী থেকে অবাঞ্ছিত
উদ্বাস্তু হকার ভিক্ষুক কুলিমজুর
বিমুক্ত রাখার পরিকল্পনার ধন্য সুচারু নিষ্ঠায়, নিশ্ছিদ্র
নিরাপত্তার প্রয়োগে ।
দেশবাসী ধন্য হলো
অগ্নি-পরীক্ষার উত্তরণে , সংবাদের
সাধুবাদে , এশিয়াডের শিক্ষায় , ধন্য ,
ধন্য  গণতান্ত্রিক সরকার !!




মনকেমনের কথা
মোহর ভট্টাচার্য্য

মনকেমনের কথা রা  আজ একলা,
চেয়ে তোমার উপস্থিতি।
ওরা চায়না নিজেদের  উত্থাপন করতে।
তুমি কোথাও আছো এই বিশ্বাসে থাকে জীবিত।
আমি শুনে চলি ওদের তোমাকে চাওয়ার তাগিদের কথা।
জানতে চাওনি তুমি কোনোদিন ওদের কথা
তবুও ওরা বাঁচে তোমার উপস্থিতির অপেক্ষায়।
মনকেমনের  কথা রা আজ বড় একলা।






এক অসমাপ্ত বন্ধুত্ব
আব্দুল রাহাজ

ওরা তখন ছোট গ্রামের পাঠশালায় পড়াশোনা করত সে আজ থেকে দশ বছরের আগের কথা এখন আর তার সাথে দেখা নেই সব যেনো দিনগুলো এলোমেলো  হয়ে গেল। গ্রামটির নাম ছিল মধুপুর নদী-নালা গাছপালা আবৃত এই গ্রাম পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলত বেশ মানুষগুলো ছিল অতি সরল সাদাসিদে সবাই একসাথে বসবাস করত‌। সেরকমই সামাদ এর জন্ম ওই গ্রামের এক প্রান্তিক দুবেলা-দুমুঠো খেতে না পাওয়া ঘরে খুব কষ্টে সামাদের ছোটবেলা কেটেছে ভাগ্যিস গ্রামের স্কুলের পাঠশালায় বৃত্তি পেয়েছিল নইলে তাদের অভাবে এখনো থাকতো। এখন সামাদ শহরে থাকে একজন মস্ত বড় ব্যবসায়ী হয়েছে তার সাথে সাথে গ্রামের ছেলে দের নিয়ে গ্রামটি কেউ উন্নতি করছে। গ্রামের পাঠশালায় পড়াকালীন পাঠশালার পন্ডিত রওশন আলী একমাত্র মেয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব তার সাথে বাল্যকাল শৈশবকাল সখা নদীর পাড়ে কত গল্প কত খেলা সব জানো মনের মনিকোঠায় সামাদের স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।তারপর আর দেখা হলো না এখন কে কোথায় সব যেন এলোমেলো হয়ে গেল সামাদের এখন এসব কথা মনে পড়লে কোথাও যেন অসমাপ্ত থেকে যায় তাদের এই বন্ধুত্বের মধ্যে কিন্তু যে স্মৃতি তা যেন কোথাও পূরণ করে দেয় ‌।






উমর ফারুক এর দুটি কবিতা

সর্ষেফুল
উমর ফারুক

হাঁটছি যেদিক সর্ষেফুল
দেখতে ভালো খুব রঙিন
সুরভী মাথা ঘাস ঘুমায়
হয়েছে তারা আজ প্রবীণ।
শিশির কণা জমছে বেশ
পাতায় পাতায়  বিন্দু জল
সবুজ পাতার ছত্রতে
পৌষ গড়েছে পূর্ণ দল।
শুন্য হয়ে ও গগন হে..
সুর্য কেন তাতছে কম
মিঠা রোদের ছায়া খেয়ে
সর্ষে গলে হচ্ছে মোম।

  সর্ষে ক্ষেত
উমর ফারুক

এই ক্ষেত কুয়াশার জন্য
ভিজে পা পথটা বিপন্ন
একা রব একজন এ ক্ষেতে
ভাললাগা মিশে যায় যেতে যেতে।
হেঁটে যায় মনটা উচ্ছন্ন
ফিরে চাই পিছনে অরণ্য
ফুল দিয়ে সাজানো ওই ক্ষেতে
রঙ লাগে পরনের বসনেতে ।
সবুজের পতাকাই সর্ষে
একা মন কি যে ভয় করছে!
নির্জন নিহারিকা ফাঁকা মাঠ
দেখা যাই সুন্দর দূর হতে ।
কি ভালো লাগছে কি ভালো!
পুব কোনে ডুবে যায় সূর্য
দেখা যায় প্রকৃতির ঐশ্বর্য্য
ঝিরি ঝিরি শিশিরও বর্ষে।





সত‍্যকেরে ভালোবাসিলাম
মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ

সত‍্য কথা কইলেরে ভাই,ঢেলা ছুঁড়ে মারে।
আঘাত লাগে,যন্ত্রনা হয়,চেতনাতিন মনে।
শাক দিয়ে মাছ যাইনা ঢাকা,বুঝবি আর কবে।
সত‍্য একদিন উঠবেই জ্বলে,ধংসের নিষান হয়ে।
মিথ্যা আর অসত পাপের,ফল ভোগকরবি সব।
সত‍্যের কাছে হারমেনে,মিথ্যা হবে বেলুন ফট।
তাইনা ভেবে,তাই আমি,করছি স্বপথ আজ।
সত্যকেরে তাই ভালোবাসিলাম।
সত‍্যকেরে ভালোবাসিলাম।।

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 25/12/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 25/12/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 25/12/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 25/12/2020

**********************************

"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
                 (ওয়েব ম্যাগাজিন)     

প্রকাশ কাল:- 25/12/2020, শুক্রবার
               সময় :- রাত 09 টা. 30 মি:


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম


সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒


*বড়ো দিনের সান্তাক্লজ ও যীশুজন্ম উৎসবের বাঙালিয়ানা*

      রাজীব কুমার নন্দী

"ক্রিসমাস বড়দিন ভারি ধূম হয়,
গীর্জা ঘরে ঘণ্টা বাজে প্রভাত সময়।
যীশুর প্রার্থনা হয় প্রথমে প্রভাতে,
প্রার্থনা সঙ্গীত সবে গাহে একসাথে।"
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কথায় আজ বড়দিনের রঙ্গীন উৎসব প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পায়।কে এই শান্তা?রয়েছে হাজার প্রশ্ন।ইংল্যান্ডে নিকোলাসের গল্পকে ভিত্তি করেই ক্রিসমাসে শিশুদের উপহার দেওয়ার চল তৈরি করা। ফাদার ক্রিসমাস এবং ওল্ড ম্যান ক্রিসমাস নামও দেওয়া হয়।
শহরের পাড়া-মহল্লার বর্ণিল সাজসজ্জা, গিফট কেনা আর বাহারি সব পোশাকের সঙ্গে চমৎকার চোঙা আকৃতির টুপি আমাদের প্রতিবছরের ২৫ ডিসেম্বর রঙিন ক্রিসমাসের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে। এই দিনটি মূলত যিশুর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে, এই দিনই যিশু জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা মনে করেন, ঈশ্বরের পুত্ররূপে যিশু এসেছিলেন এই মর্ত্যে।

বড়দিনের অন্যতম বড় আকর্ষণ হলো সান্তা ক্লজ। সান্তা ক্লজ বলতে আমরা যাকে চিনি, তিনি লাল রঙের পোশাক, চোঙা আকৃতির লম্বা টুপি পরা সাদা চুল-দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ লোক। কিন্তু রহস্য  হলো কে এই সান্তা? কোথা থেকে এলেন, কেমন করে তাঁর আবির্ভাব, কেনই বা ঘুরে ঘুরে বাচ্চাদের  মাঝে উপহার বিতরণ করেন? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, আজ যাকে আমরা সান্তা ক্লজ নামে চিনি, তার পেছনে রয়েছে লম্বা কাহিনী। ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের দিকে লাল জামা, টুপি ও সাদা চুল-দাড়িওয়ালা লোকটির ইতিহাসের সন্ধান মেলে।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কিংবদন্তি চরিত্রটি আসলে ছিলেন সেন্ট নিকোলাস নামের একজন ধর্মযাজক। এশিয়ার মাইনর বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুবই মহৎ ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। দান-দক্ষিণায় তাঁর বেশ সুনাম ছিল চারদিকে। তিনি তাঁর সম্পদ অসহায় গরিব মানুষের সাহায্যে ব্যয় করতেন। তাঁর এই মহানুভবতার জন্য তিনি মানুষের কাছে অতিপ্রিয় ছিলেন। ধারণা করা হয়, একবার দাসী হিসেবে বিক্রি হওয়া তিনটি মেয়েকে রক্ষা করে তাদের বিয়ে ও যৌতুক বাবদ সব খরচ তিনি বহন করেন। তাঁর এই মানবতার জন্য তিনি মানবরক্ষক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী নিকোলাস ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ও মধ্যরাতে ছেলেমেয়েদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে উপহার দিতেন। কিন্তু এখন আমরা রঙিন পোশাক পরা যে সান্তা ক্লজকে দেখি, তিনি তেমন কোনো পোশাক পরিধান করেননি।

১৮২৩ সালে ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে আমেরিকার বিখ্যাত লেখক ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের লেখা ‘A visit from St. Nicholas’ কবিতায় এই পোশাকের উদ্ভাবন হয়। আজকের সান্তা ক্লজের রঙিন পোশাকের সূচনা হয় এই কবিতা থেকেই, যা বিভিন্ন পরিক্রমায় আজকের এই রূপ লাভ করেছে। এক সন্ত আটটি হরিণটানা গাড়িতে করে উড়ে উড়ে বাচ্চাদের উপহার দিচ্ছেন—এমন চিত্রই ফুটে ওঠে এই কবিতায়।

১৮৮১ সালে থমাস ন্যাসট নামক একজন আমেরিকান কার্টুনিস্টের আঁকা ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সান্তা ক্লজের এই সাজ ব্যাপক খ্যাতি পায়। সেখানে সান্তা হরিণটানা গাড়িতে চড়ে কাঁধে উপহারভর্তি ঝোলা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার চিত্র ফুটে ওঠে, এই ছবিটি গোটা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এভাবেই সারা বিশ্বে ক্রিসমাস ডের আগের রাতে বাচ্চাদের বাসায় বাসায় উপহার দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। আর বাচ্চারা বিশ্বাস করে, সান্তা ক্লজ জাদু জানেন। জাদু দিয়ে উড়ে এসে তাদের নানা রকম উপহার দিয়ে যায়।
এখানেই বুঝি সান্তার স্বার্থকতা।বড়দিন মানেই কেক,বড়ো দিন মানেই এক আনন্দ উৎসব।বাঙালীর আবেগ ও জড়িয়ে আছে এই খ্রিস্টীয় উৎসব এর সাথে।
উত্তম চক্রবর্তীর কথায় বলা যায়
"এই দিনে এলো ভবে প্রভু যীশুখ্রিস্ট,
ধরাধাম পূর্ণ হলো মহামানব সৃষ্ট।
মানব রূপেই জন্ম নিলো পৃথিবীতে।,
ধরণীর বেথেলহেমে জীর্ণ গোশালাতে।"



মাতা  মেরীর  কোলে  যীশু.....
চিত্তরঞ্জন  দেবভূতি

যুগে  যুগে  পৃথিবীতে  মহামানব  আসেন,
জীবন  দিয়ে  তাঁরা  এই  মানব  জাতিকে  ভালোবাসেন৷
এই  ২০২০ বছর  ধরে  যীশুর  নামে  বন্দনা  চলে,
তিনি  আজও  সমান  প্রাসঙ্গিক,
বিশ্বের  কোটি  কোটি  নরনারী  প্রভু  যীশুর  কথা  বলে৷
শয়তান  চিরকাল  থাকে  সব  দেশে,
তাঁদের  নাম    জানে  না অনেকে,
যাঁরা   সেদিন  হত্যা  করেছিল  প্রভু  যীশুকে৷
কত রোগ  নিরাময়  থেকে  শুরু  করে,
মৃতদেহে  প্রাণ  দান,
করতে  পারতেন মহান  যীশু,
তাই  বুঝি  সারা  বিশ্বের  মানুষ  গাইছেন  আজও মহামানব  প্রভুর  জয়গান৷
হিংসায়  জ্বলে  উঠেছিল  যাঁরা  সাফল্য  যীশুর  দেখে,
শেষে  মেরে  প্রভুকে  তোমরা  অমর  করে  দিলে,
প্রশ্ন  উঠেছে  তার  বিনিময়ে  তোমরা  কি  আর  পেলে?
প্রভু  যীশু  ছিলেন,আছেন  থাকবেন  বেঁচে,
লক্ষ  লক্ষ মানুষের  মনে,
প্রভুর  স্মরণে  সমবেত  প্রার্থনা  চলে  এখানে   ওখানে৷
ক্ষমা  করো  আর  ভালোবাসো...
তোমার  অমর বাণী,
মেনে  চলতে   পারলে  সুন্দর   হবে  আমাদের  ক্ষুদ্র   জীবন  খানি৷





মেরি  ক্রিসমাস
        পিনাকী   মুখার্জী
  
             মুক্তো  ধারা  ঝরবে  সকল
               খোকা  খুকুর  ঠোঁট  বেয়ে  !!
            সেই  হাসিরই  জোয়ার  তোড়ে 
                নাব্য  খুশির  গাঙ  ধুয়ে  !!
           
                      আয়  না  ছুটে ,  রং -
             বেরঙের , স্বপ্নগুলো  ধরবি  আয়  !!
               কেক  লজেন্স  , খেলনা পুতুল ,
                 কেমন  রামধনুতে  রং  ছড়ায়  !!

                 বড়দিনে  বুড়োর  বেশে ,  ঐ
                   পাকা  দাড়ি  পক্ক  কেশ  !!
               ওর  ঝোলায়  ভরা  হাসিখুশি ,
             আর  ইচ্ছেপূরণ  এক  নিমেষ  !!
    
                      গল্প দাদু , ঠাকুমা  আর ,
                  চাঁদের  বুড়ির মজার দেশ  !!
               সেই  তেপান্তরের  মাঠ  হতেই
               আজ  সান্টা  দাদুর  সমাবেশ  !!




Very Happy Christmas
           Mom

I celebrate Christmas.
I pray,
Hey!
Bless us!
Bless, bless, bless!!!....
At this night
You Son of God, yes, yes, yes,
Gift us your bliss-light!
Which is endless.
On your holy feet
Kindly give me place!
In my every heart beat,
You stay as my response, always.
On my all ways,
You become my life-guide as my soul-rays.
You become my mind's fragments with spirituality.
In my activity you become my reality.


  বিভাগ :    কবিতা

  বিলম্বিত
সৌম্য ঘোষ

আমার পৌঁছুতে শুধু দেরি হয়ে যায়
দরজা খুললেই আলোকের বারান্দা,
ইশারায় ডাকে রূপালী হাহাকার,
সারি সারি ঘর উজালা উঠান,
বেদীতে বাঁধানো হর্ষ চারুলতা।
সবকিছু জুড়ে কোথায় যেন এক মানবিক ঘ্রাণ।
উৎপল নেশায় রাঙা কামনা,
রূপের কাছে মিনতি শুধু,
অগ্নি শুভ্রতায় দুপায়ে জড়ানো শৃঙ্খল,
লক্ষ বছরের চুম্বনের হতাশায়
দাঁড়ানো ভালোবাসা,
পায়রা ওড়ানো হারানো বিকেল,
কিশোরীর নাভিমূলে দূরত্বে ঝড়।
আমার পৌছুতে শুধু দেরি হয়ে যায়।।।



মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা

১।. তোমার ইচ্ছা

ইহলোকে
আমি থাকি
তুমি আর চাওনা,
ক্রমশ তাই অসুস্থ হচ্ছি
চোখের সামনে নামছে কালো পর্দা
ক্ষীণ একটা ডাক নীরবে কর্ণগোচর হচ্ছে।

কে যেন অজান্তেই পাততাড়ি গুটিয়ে দিচ্ছে
ছুঁড়ে ফেলেছি পানের বাটা জর্দা
নিজেই নিজেকে অবিরত বলছি
এই ঘরে আরনা
নিজেকে রাখি
পরলোকে।

২।. হঠাৎ একদিন

টিকটিক
করতে করতে
একদিন হঠাৎ থামে
ঘড়ির কাঁটা,স্তব্ধ চরাচর
জিভ আগ্ৰহ হারায় কথা বলার
চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে।

চিকন  শরীর আগ্ৰহ হারায় নিজের ঘরে
চিতার আগুন পেরিয়ে শুরু চলা
অসীম অনন্ত নক্ষত্রের ঘর
শান্ত সমাহিত ধামে
হয় চলতে
ঠিকঠিক।




উমর ফারুক এর দুটি কবিতা
কিছু চাওয়া
উমর ফারুক

শিশিরের বিন্দু তে
ভিজে পা ,সন্ধ্যার চাপা ঘুমে।
রক্তিম সূর্য থেকে রক্তিম আলো
নিয়ে বেঁচে থাকা এই মরশুমে।
চিৎকার করি
চিত্কার করে উঠলো মন
তীক্ষ্ণ বাতাস বয়ে নিয়ে আনে ওরা
অজানা অচেনা এক গুঞ্জন।
বোঝে না সে শুধু
আমার পথ চেয়ে দেখে থাকা
কারা যোগায় না আহার
করে নিদ্রা হারাম কিছু চাওয়া
কি আমার অপরাধ?

একটি খুনের গল্প
উমর ফারুক

দুপুরে সূর্য টা মাথাতে দেই রোদ
আমি হয় নির্বাক অন্ধ
কোন পথে ছুটে যায় মানুষের জন্য
রাখিনা পথ কভু বন্ধ।
পৃথিবীটা তেতে উঠে সূর্যের আলো তে
ডুবে যায় কারো ভরা নৌকা
হিসেবের খাতা লেখা নিয়ে  ফর্দ
বয়ে যায় বিকাশের নৌকো।
একদিন রাত ভারী বিষ্মিত মে মাস
হাত জোড়া এক করে দাঁড়াল
'বাবু সাব, শুনে নিল তার যত কাকুতি
ব্রেন ছিল তার খুব ধারালো।
সংক্ষেপে বলা হয় চাহিদা কত তার
নির্জন রাতে কত হুমকি
প্রতিকূল না থাকায় বজ্র তার কন্ঠ
ফেঁপে ওঠে রাগ তার কম কী!
টুটি চেপে ধরে আছে খুব জোড়ে
ঠ্যাং দুটো ফাঁক হল কিছুটা
ভাষাতে ফুটে উঠে জীবনের শেষ গান
খুনী তো মানুষ নয় কিছুটা।
চাঁদ তুই ডুবে গেলি কেন আজ এ রাতে
সুর তার টুটি থেকে হলো বের
সব কিছু মিলিয়ে যাবে আজ এই ক্ষণে
শেষ সুর ছেয়ে গেল মত ঝড়ের!
ততক্ষণ নির্জন পথ চেয়ে দেখা তার
হতাশার শেষ সুর যদিও
পুব দিকে ফাঁকা মাঠ ঝিঝিদের ডাক পড়ে
আছে এক নিষ্পাপ নদিও।
দেখেছে সে পাপ কার কেবা করে খুন
সেইদিন বিচারের দণ্ডে
কষ্টের চাপা ঘুম শেষ শ্বাস নিতে হয়
ধরা খাবে এই খুন কাণ্ডে।





হামিদুল ইসলাম এর কবিতা গুচ্ছ
                 প্রিয়তমা
          হামিদুল ইসলাম

            

ফিরে আসি সামুদ্রিক বন্দর
অযাচিত জীবন
ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ যামিনী
কুয়াশায় ঢাকা মেঘের আস্তরণ
তবু পথ চলি সুদূর স্বপ্নভূমি ।।

যেখানে দাঁড়িয়ে আছে
আমার স্বপনচারিনী
উন্মত্ত হয়ে ওঠে মন
আরশিনগর ডুবে যায় বরাবর
আমার স্বপ্নস্রোতে ।।

সহচরী
হাতে হাত রাখো
এখন ছায়ারা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে
জানালার শার্সিতে রোদ
কার্নিসে আটকে আছে আমার প্রিয়তমার মুখ ।।




                    লড়াই
             হামিদুল ইসলাম
                

কৃষক উঠেছে জেগে
হাতের ঝাণ্ডা লাল
শাসক দলের এখন পৌষ মাস
কৃষকের আকাল  ।।

কাস্তে শানানো কৃষক
নিজ দাবী আদায়ে অটল
জীবন যায় যাক
তবু সংগ্রাম করে তোলে সফল  ।।

লাখো লাখো কৃষক আজ
দিল্লির ময়দানে
তাদের দাবী কৃষি আইন বাতিল করো
লাখো কণ্ঠ কথা বলে একই কলতানে  ।।

ইতোমধ‍্যেই শহীদ হয়েছেন একচল্লিশ জন
কী নিষ্ঠুর শাসক দল !
জোর করে আইন করে
দেখায় রক্তের বল  ।।

তোদের রক্ত একদিন নিঃশেষ হবে
পারবে না নিজেদের বাঁচাতে
জীবন মৃত‍্যু জীবনের সাথী
প্রমান হবে সেদিন দিল্লির সভাতে  ।।




                     তুমি
            হামিদুল ইসলাম
              

এখন যতোবার দরজায় কড়া নড়ে
মনে হয় তুমি এসে দাঁড়িয়ে আছো
আমার দরজায়  ।।

দরজা খুলি
লোক নেই
কেবল কুকুরের চিৎকার   ।।

কিন্তু চেনা ছন্দগুলো হারালেও বুঝতে পারি
তুমি এসেছিলে
অভিমানে দাঁড়িয়েছিলে দরজায়  ।।

আমি দরজা খুলতেই
তুমি অদৃশ‍্য হয়ে গেলে
তবে কেনো এসেছিলে  ??

প্রাণের গভীরে তোমার প্রতিচ্ছবি আঁকি
প্রাণের টানে
নিতান্ত ভালোবাসায়  ।।





                  সমুদ্র
          হামিদুল ইসলাম
            

ধলেশ্বরী নদীতে যখন স্নান করি
আমার একটা হাত টেনে ধরেছিলো
স্রোত
কষ্ট করে ফিরে এসেছিলাম তীরে ।।

আজ সমুদ্র দেখে ভয় হচ্ছে
কতো অগোছালো সমুদ্র
সমুদ্র প্রাণ কাড়ে
ভালোবাসা কাড়ে প্রতিদিন  ।।

অগাধ জলরাশি ! তোমাকে প্রণাম
আর স্নান করতে সমুদ্রে নামবো না
কোনোদিন
সমুদ্র মানুষ টানে পিশাচের মতো ।।



হারা শব্দ নেই
সুস্মিতা দে

অস্ত্র ছাড়া সফলতা অর্জন সীতা রাম রাজত্ব কে রক্ষা করেছিলেন তবে  আমার সেতু মা সব পারে। সেতু মাথা তোল । তোর ভাবনা খাতায় লিখে রাখবি মাথা তোল সেতু।

মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে মাথা তোল সেপটিক হবে সময় নাই।সফলতায় চেয়ে দেখ তোর শিরে মার করুনার আশীবার্দ তোর শক্তিতে ঘুমেে অচেতন মানুষের আঁধার কাটে আজ। তুমি ঠিক দেখেছো মা ? 

পরিবর্তন হয়েছে মেয়েদের  লেখাপড়ার হার অনেক বাড়ছে।  চিন্ত ধারা কল্পনা শক্তি স্বাধীনতার মানে  মানুষের মন সুন্দর হলে ঈশ্বর আশীর্বাদ আছে । তোর সুন্দর স্বপ্ন  সফল হবে । সমাজের অসহায় নারী আজ নয়। তারা সহায় দিতে জানে বল সেই  লাইন টা  জননী জন্ম ভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সি মা ।

লোকে ভাবে তার স্বাধীন মতো ।নারী অবলা মেয়েছেলে নয়।  মেয়েরা রাতে ঘুমাতে মাথায় চিন্তা থাকে। সহ্য শক্তি বেশি । সীতার কথা ।সুবর্ণলতা সত্যবতী  তারা সমাজের জন্য মানুষ ছিলো। তুই পারবি ।সুন্দর  মানুষের মতো বুদ্ধিমতী মেয়ে হৃদয়ে শান্ত ধীর স্থির নম্রতা আছে উদরতা আছে আর কি?

তেজস্বিনীর চোখে জ্বলে আগুন ,অস্ত্র সুসজ্জিতা মা দিদিরা তোকে পাশে চায়, একটি ধর্ম সভ্যতার আলোকে বর্বরতার ধ্বংস চাই ,অন্নপূর্ণাআশীর্বাদে কৃষক কে প্রাপ্ত সন্মান মর্যাদা দিতে হবে। তা না হলে কৃষিকাজ বন্ধ হোক।

ধনী শ্রেনীর বুদ্ধি তে বুদ্ধি কোথায় থাকে আজ কেউ জানেনা। উদাহরণ হীরক রাজা ।।চলো চলো আর একবার  সিনেমা দেখি?। 




শান্তি দাস এর কবিতা গুচ্ছ
উত্তরণ
শান্তি_দাস

জীবনের যত ঘাত প্রতিঘাত
   পেরিয়ে যাবার আশায়,
আসে মোদের অনেক আঘাত
    কেউ থাকে না নিরাশায়।
জীবনে পেরিয়ে যেতে হবে সাগর
   পাহাড় নদী মনে ভাবনা,
সময় বহমান স্রোতের গতিতে
   তবুও মনে জাগে সাধনা।
কামনা বাসনা জীবনের দোড়ে
    সুখকে করি আহরণ,
জীবন যাত্রায় হাবুডুবু খেতে হয়
   যদি না জানে কেউ সন্তরণ।
হতাশাকে চিরসাথী করে রাখলে
   সময় তো পেরিয়ে যাবে,
জীবনের সব আশা আকাঙ্খা
  পূর্ণ হবে না কোন কালে।
চাই মোদের আশা হোক পূর্ণ
   করতে চাই উত্তোরণ,
তাই তো জীবন পথে চলতে
সুখটুকু করতে হবে আহরণ।


আমার জন্মভূমি
      শান্তি দাস
    

"জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি 
গরিয়সী "
যে ভূমিতে জন্ম আমার,মোদের জন্মভূমি,
জন্মেছি মা তোমার কোলে সুন্দর ভুবন জুড়ে,
শষ্য শ্যামলা প্রকৃতির সৌন্দর্যে মোদের বসুন্ধরা

মায়ের কোলে জন্ম আমার এই মাটিতে,
তাই তো এই জন্মভূমিকে এতো ভালোবাসি।
মাগো এই দেশে জন্ম আমার এই দেশকেই ভালাবাসি,
এই দেশের মাটির স্পর্শ মোদের ভালোবাসা।

এই দেশের নদী নালা মাঠ ঘাট সবই মোদের প্রাণ,
ফসলে ফসলে ভরে উঠে মোদের দেশের মাটি।
ধন ধান্য  ফলে ফুলে প্রকৃতিকে বড় সুন্দর দেখায়,
স্বপ্নে ঘেরা মোদের দেশ মোদের ভালোবাসা।

সকালের সুর্যোদয় আর বিকেলে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য,
কোন অপরূপ রূপ মোদের এই জন্মভূমি।
প্রভাতের সূর্যের কিরন আর পাখিদের কোলাহল,
মোদের ঘুম ভাঙানো,স্বপ্ন বয়ে যায় কত স্মৃতি।

এই মাটিতে জন্ম মোদের এই মাটিতে প্রাণ,
বিকেলের সূর্যাস্ত যেন মনে বিষাদ জাগায়।
এই মাটিতে জন্ম এই মাটিতে যেন হয় মৃত্যু,
সকল দেশের উপরে যেন মা মোদের জন্মভূমি।




মায়ার বাঁধন
    শান্তি দাস

এই সংসার মায়ার বাঁধন জীবনের সব কিছু,
ভালোলাগা ভালোবাসার এই আমার পৃথিবী তাই তার পিছু।
সন্তান গর্ভে ধারণ করে জন্ম হয় মায়ের কোলে,
তার মায়া ভরা চোখ আর হাসিতে মন যায় ভুলে।

এই মায়ার বাঁধন থেকে জীবনে শুরু সন্তানের মুখপানে চেয়ে,
বাঁধন ছেড়ে কেউ পারেনা  সমস্ত ব্যথা বেদনা নিয়ে।
সন্তান আস্তে আস্তে বড় হয় মায়ের আঁচল ধরে,
আদো আদো বুলিতে যখন মা বলে ডাকে মনটি যায় ভরে।

মিষ্টি হাসিতে মা ডাকলে নিমেষে মায়ের প্রাণটা জুড়ায়,
এই মায়ার বাঁধন ছিন্ন করতে পারবে না কেউ এই ধরায়।
মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে যেতে সাধ্য একমাত্র সাধু সন্ন্যাসীরা,
সংসারের মায়াজাল থাকতে আমার আমার করা।

এই সংসারে মায়ার বাঁধন রাখতে কত না মিথ্যা আচরণ,
সংসার পালনে সারাজীবন ধরে কত কিছুই করে গোপন।
দিনরাত খেঁটে যায় একটু চায় সুখের ছায়া,
শুধু নিজের করে গড়তে সন্তান যার জন্য এতো মায়া।

যতদিন পৃথিবীর বুকে ততদিন শুধু মায়াজালে থাকতে হয়,
আসলে তো যাহা আছে জগৎ সংসারে নিজের কিছু নয়,
ভগবান আছেন বিপদ আসলেই নেই  তার নাম,
মরন নিশ্চিত জেনে ও মায়ার বাঁধনে রাখে এই ধরাধাম।



সত্যেন্দ্রনাথ পাইন এর দুটি কবিতা

কে ওখানে
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

তোমার দখিন হাতের পরশে
  স্তব্ধ হোক আসামির তবলা
শীত বাষ্প সৃষ্টির কান্ডারি
    বিলকুল রুদ্ধ কন্ঠ
গিরি শীর্ষে  ছায়াপথ
   স্রোতের প্রসাদ কোনো মতে

ভীরু বাসনার অঞ্জলির আয়োজন
গবেষণার অবিশ্রাম অহংকার
  আনন্দ চঞ্চলতা
   বল্গাহীন
প্রতি ধ্বনি নিষ্ঠুর ভাবে
   স্ত্রীবুদ্ধির জোরে
শ্লেষ বাক্যে হানে দূরন্ত ছায়া

ঐ যে দূরে, বহুদূরে স্পর্শময়ী
     সূক্ষ্ম সংকোচে
বেঁধে আনে অনুরোধ উপরোধ
অনবধানের অপবাদ

সেখানে  প্রশ্ন ওঠে--
     "কে ওখানে"!!!


ঘুম ঢাকা রোদ্দুর
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

    হলুদ হয়েছে ঘাস
লাবণ্য হারিয়েছে শিশুর হাসি
ছড়া কাটে না আর ঠাম্মা
ঘুম আসে না চোখে

হারিয়ে যাওয়া সোনালী রোদ
মুখ লুকিয়েছে সজীব স্বপ্নে

ভাবনাগুলো যেন বাজপাখি
জানলার গরাদ ভেঙে ঢুকেছে বিছানায়
   ঠিক দুপ্পুর বেলায়

পুতুলের বিয়েতে শিরীষের গুঞ্জন
প্রাণের গভীরে আনে সংকোচ-  পীড়িত নিরেট রোদ

স্পষ্টভাবে দেখা যায়
ঘুম ঢাকা রোদ্দুরের বিক্ষত দেহ
  
বাধাহীনভাবে পরিহাসে পরিহাসে
গড়ে তোলে এক অত্যাশ্চর্য
সুন্দরী নারী শরীর....





রাজপথে উদ্বাস্তুর গোধুলি-স্বপ্ন
বদরুদ্দোজা শেখু

ঝকঝকে তকতকে রাজপথে হাঁটছি এখন আমি, হাঃ হাঃ !
ঘোলা ময়লা পুকুরের পাতিহাঁস ঠিক যেন  সরোবরে
কাটছি সাঁতার আমি , হাঃ হাঃ !
দু'ধারে দালান-বাড়ি  । ফুল্ল লন বারান্দায় নামছি সটান আমি,হাঃ হাঃ !
সুখটান জীবনের ভোজবাজি ভাবছি হঠাৎ আমি ,হাঃ হাঃ!

কী ক'রে এমন হলো ? কী ক'রে হঠাৎ
নগরীটা হ'য়ে গেল যানহীন ? গোধুলির রাত
নৈঃশব্দ্যে পড়লো ঢাকা ? রাতচরা নাগরিক-কুলোততত
হারালো কি উত্তেজনা ? অহংকারী কামনার ফুল
ওড়ানো প্রতিমাগুলো হারালো কোথায় ?অবাঞ্ছিত
আগন্তুক খেদানো পুলিশ কই ? কই নিয়ন্ত্রিত
লাল নীল হলদে সবুজ ট্রাফিক সিগন্যাল ?নাকি ওরা
ব'নে গেছে হঠাৎ উদার ? অথবা নাকি চালাচ্ছে কোনো গোপন মহড়া ?

হ'তে পারে  । যা ইচ্ছে করুক  ।
দু'ধারের রকমারি রহস্যের তীব্র স্বপ্নভুক
হাঁটছি এখন আমি অবারিত রাজপথে ,হাঃ হাঃ !
ছাঁটছি এখন আমি দুরাশার বনবীথি,হাঃ হাঃ !
ধুকপুকে বুকে সুখ শুঁকছি এখন আমি হাঃ হাঃ !
খিঁচ-লাগা জীবনকে পিচঢালা রাজপথে টুকছি এখন আমি  , হাঃ হাঃ!

অন্ততঃ পেতাম যদি একটা এমন তকতকে
করিডর রাত্তিরে নিশ্চিন্তে ঘুমোবার , জিরোবার
পেতাম প্রশ্রয় বৌ বাচ্চা নিয়ে হাত পা ছড়িয়ে
পরিচ্ছন্ন পরিসরে দিন কাটানোর প্রসন্ন
সৌভাগ্যে ,জীবনটা ধন্য হ'য়ে যেত তবে ,
ঝুপড়ি-পট্টির পিলপিলে ঠাসাঠাসি যক্ষ্মাকাশিতে
ধুঁকে ধুঁকে অনর্থক মরতে হতো না ,একটি গোলাপ
অথবা যুঁই কি বেলী লাগাতাম করিডর ঘেষেঁ, প্রত্যহ দিতাম জল ,
ভোরে কি সন্ধ্যায়
ব'সে থাকতাম ঘাসের সবুজে প্রেয়সীর সাথে
মুখোমুখি পাশাপাশি কিংবা বাচ্চা নিয়ে
পাখি আর প্রজাপতি ফড়িং ফিঙের প্রাকৃতিক সাহচর্যে আহা ,জীবনের
ফুরফুরে উজানী নৌকায় ।
নগরীর উদ্বাস্তু বাসিন্দা ব'লে কেউ
তাড়িয়ে দিত না ঝুপড়ি ভাগাড়ে নিত্য ,সৌভ্রাতৃত্ত্ব ,মুক্ত চিত্ত ,
জন্মসূত্রহীন  ঘটনা নিমিত্ত ইত্যাদি বিষয়
বাগ্মিতার পরিভাষা বলেই হতো না মনে ,
পৃথিবীটা হতো একান্তই মানুষের ,সব মানুষের ।

তবু ধ'রে নিচ্ছি এখন আমি -----এই রাজপথ নিজস্ব আমার,
যেহেতু আর কেউ নাই এই রাজপথে এখন
যেহেতু কোনো যান নাই এই রাজপথে এখন
যেহেতু পুলিশরা নাই এই রাজপথে এখন
যেহেতু সদিচ্ছার প্রতিদ্বন্দ্বী নাই এই রাজপথে এখন ,

তাই এই নিরঙ্কুশ এই
ছিমছাম রাজপথে ঝিমোচ্ছি এখন আমি  হাঃ হাঃ!
আকাঙ্ক্ষার করিডরে ঘুমোচ্ছি এখন আমি  হাঃ হাঃ !
বৌ বাচ্চা বাস্তুভিটা গুছোচ্ছি শহরে আমি   হাঃ হাঃ !
স্বপ্নের মোহর দিয়ে সাজাচ্ছি প্রহর আমি   হাঃ হাঃ !
হাঃ হাঃ ! হাঃ হাঃ! হাঃ হাঃ ! হাঃ হাঃ ! হাঃ হাঃ ! - - - - -







কবিতার সার্থকতা
নরেন্দ্রনাথ নস্কর

বাংলার সাহিত্য আকাশে এখন কবিতার ছড়াছড়ি।

এত কবিতার ভীড়ে কটা কবিতা পাঠকের হৃদয়ে পৌঁছায়?

এই নিয়ে কোন সত্যকারের তথ্যের বড় অভাব। আরো গবেষণা দরকার এই নিয়ে।

পাঠক যথেষ্ট বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতী।

দেখা দরকার একশটা কবিতার মধ্যে  কটা কবিতা পাঠক মন দিয়ে পড়েন?
আর পড়লেও কটা কবিতার তারা মানে বুঝতে পারেন?

সবার থেকে বড় হল কটা কবিতা পাঠকের হৃদয়ে পৌঁছায়?

যে কবিতা পড়ে পাঠককূল মানে বুঝতে পারেন, সেগুলি কিছুটা সার্থক।
যে কবিতা সমূহ পড়ে শুধু মানে বুঝা নয়, সেই কবিতা একেবারে পাঠকের হৃদয়ে পৌঁছায় সেই কবিতা গুলি হল আসল সার্থক কবিতা।

কবির ভাব ও ভাষা যেন মোটামুটি অবিকৃত ভাবে পাঠকের মনে পৌঁছায়।

অর্থাৎ যাহা কবি বলিতে চান সেই একই অর্থ যেন পাঠক বুঝিতে পারেন।
তখনই কবি ও তার কবিতা সার্থক হয়।

লেখক লিখলেন এক, আর পাঠক বুঝলেন আর এক। এটা যেন না হয়।
বিখ্যাত রম্য রচয়িতা শিবরাম চক্রবর্তী একবার বলে ছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার বেশির ভাগ দুর্বোধ্য, যদি কেউ বাংলা অনুবাদ করে দেয় তবে বুঝতে পারি।

এখনকার অনেক কবিতা কেমন যেন সত্যিই মানে বুঝা খুব কষ্টকর।

লেখক লিখলেন এক ভেবে, আর পাঠক পড়ে বুঝতে না পেরে অন্য মানে করলেন।

এতে কবিতার ভাব ও ভাষা দুইই ঠিক ভাবে পাঠকের মনের কাছে  পৌঁছায় না, বা অন্য মানে নিয়ে পৌঁছায়।

মনে হয় কবিতার ভাষা সাবলীল ও অর্থবহ হলে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

অসংখ্য নরনারী কবিতা ভালোবাসেন। কিন্তু ভাষার জটিলতা তারা বুঝতে পারেন না।

অনেক দিন আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এস মুখোপাধ্যায়  একবার বলেছিলেন যে কমবেশি প্রায় সবার মধ্যে লেখকের বা কবিত্বের ভাব আছে।
কেউ প্রকাশ করতে সক্ষম। কেউবা ঠিকমত ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না।

কবিতার ভাষা যদি সাবলীল, সোজা, অর্থবহ ও হৃদয়ে গ্রহণ যোগ্য হয় তবে খুব সহজে সাধারণ কবিতা প্রেমিক পাঠকগণ পড়ে বুঝতে পারেন ও  কবিতার ভাব হৃদয়ঙ্গম করে থাকেন।

কবিতার ভাষা জটিল ও দুর্বোধ্য হলে পাঠক গণ সেই কবিতা পড়েও মনে ঠাঁই দেন না বা এড়িয়ে চলেন।

তাদের কথা ভেবে লেখার ভাষা  যদি একটু সাবলীল ও প্রাঞ্জল হয় তবে পাঠকও বুঝতে পারেন ও লেখাও সার্থক হয়।

লেখক বা কবি  যাহা বলতে চান, পাঠক যদি ঠিক সেই ভাব ও মানে  অনুধাবন করতে পারেন, তাহলে সেই কবিতা বা লেখা কালের সময় অতিক্রম করে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। এই সমস্ত লেখা বা কবিতা সার্থক বলা যায়।

*মতামত লেখকের নিজস্ব।
অন্য যুক্তিগ্রাহ্য বাঞ্চনিয় মতও গ্রহণযোগ্য






প্রবন্ধ

সময়, সমাজ ও মহাপুরুষের আবির্ভাব
  -  অগ্নিমিত্র

সব সময়ে সব দেশেই মহাপুরুষরা আসেন। সমাজের বক্রতা, পঙ্কিলতা দূর করতে তাঁরা আবির্ভূত হন। আমাদের শাস্ত্রেই বলা আছে -' যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারতঃ, অভ্যুত্থানম্ অধর্মস্য, তদাত্মানং শ্রীযাম্যহম, পরিত্রাণায় সাধুনাং , বিনাশায় চ দুষ্কৃতাং; ধর্মসংস্থাপনাস্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ।'  তাই যুগে যুগে মহাপুরুষরা আসেন, মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে, প্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করতে । শ্রীচৈতন্য, গুরু নানক, কবীর, সাধক রামপ্রসাদ, রাজা রামমোহন রায়, রাণী রাসমণি , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি প্রভৃতি মহামানবেরা  এভাবেই বারে বারে এসে সমাজকে সঠিক মার্গ দেখিয়েছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। তাঁদের উত্থানের পিছনে তাই সমাজের এবং সেই সময়ের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল। অবক্ষয়িত সমাজের সংস্কার করতেই তাঁরা এসেছিলেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জাতপাত, ছুত অচ্ছুত ভুলে কৃষ্ণপ্রেমের সাগরে মানুষকে ভাসতে শিখিয়েছিলেন।  সতীদাহের মতো নারকীয় প্রথা রদ করতে সচেষ্ট হন রাজা রামমোহন, যার জন্য তাঁকে সমাজের মাথাদের বিরাগভাজন হতে হয়েছিল। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শত বাধা উপেক্ষা করে বিধবা বিবাহের প্রবর্তন করান ও বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ রোধে বিশেষ সক্রিয় ভূমিকা নেন। স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার ও বাংলা গদ্যের প্রসারে তাঁর কাজ সর্বাগ্রগণ্য । এসব কাজ করতে গিয়ে তাঁকে বহু কটূক্তি শুনতে হয়েছে।  পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ ধর্মের সঠিক অর্থ সবাইকে বোঝালেন, যত মত তত পথের বাণী শোনালেন । আর স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহতী প্রতিভাকে আমরা আজও নব নব রূপে আবিষ্কার করে চলেছি।
  এঁদের সবারই পথ বন্ধুর ছিল। তবে সমাজের পঙ্কিলতা এঁদের পথ রূদ্ধ করতে পারেনি। তবে ঘুড়ি যেমন বিপরীত হাওয়ায় আরো ভালো করে ওড়ে, তেমনি এঁরাও বাধা পেয়ে আরো সফল হয়েছেন । তাই সমাজের ও সময়ের ভূমিকা তো ছিলই।।




কে বলেছে তুমি নেই
   বিপ্লব গোস্বামী

কে বলেছে তুমি নেই
আছ জগৎ জুড়ে।
যে বলে তুমি নেই
থাকো তার হতে বহু দূরে।
কাছে পেয়েও তোমায়
চিনেনি যে ,তার তো কপাল মন্দ।
যে চিনেছে সে পেয়েছে
দেখেনি যে ,সেতো অন্ধ।
আছো তুমি জগৎ জুড়ে
আছ প্রতি জীবের মাঝে।
তোমায় আমি খুঁজে পাই
ভবের প্রতি শুভ কাজে।
সর্বত্র তুমি বিরাজমান
আছো সবার মাঝে তুমি।
বিপদ কালে বন্ধু বেশে
সদা কাছে আসো তুমি।






ছবি আঁকে
ডাঃ তারক মজুমদার

একবার ফিরে তাকাও
পৌষের হিমেল হাওয়ায়
নরম রোদের উষ্ণ ছোঁওয়ায়---- ।

মানুষ বধির হলে,বিষন্ন সময়
উদবিগ্ধের পথে হাটে---।
বৃষ্টিস্নাত সকাল ভিজলে
মিটে রোদ অঝোর প্লাবনে
ভালোবাসার ছবি আঁকে-----।





সময় কথা বলে
আব্দুল হান্নান

এক সময় এই গ্রাম সাদা মাঠা
শহরের থেকে ছিল বেশ নামি
হোক না হোক খাওয়া তাদের
চরিত্রে ছিল সব থেকে দামি।

ঝড়ের মত রাজনীতি টা এসে
মুছে দিল সেসব সাদা বুলি
লোভ লালসায় ডুবিয়ে দিয়ে তাদের
মাখিয়ে দিল ইন্দ্রজালের কালি।

হারিয়ে গেল গাছের ছায়া য় বসা
গরম কালের তপ্ত সেই দুপুর
শুরু হলো নতুন পথে চলা
আত্মসাতের রঙিন আলোয় সুর।

বুদ্ধি শক্তি পেশির বলী যারা
নিরীহের জুলুম করে প্রচুর
অভিযোগর আঙুল যেথায় ওঠে
শক্তি পূজারী তারা সাজা অসুর।

মিথ্যে বুলিই গ্রাম শুদ্ধ শান্তি
দূরে থেকে ল্যাপে কথার মালায়
অরাজকতার নিপুণ এখন গ্রাম
সত্য ঢাকে মিথ্যার কঠিন ছায়ায়।।






লোভী
শুকদেব পাল

অনেকদিন মনে পরে না তোমাকে , অনেক দিন.......
তুমি চলে যাওয়ার পর পৃথিবীও নিজের চারপাশটা ঘুরে দেখে নিয়েছে বেশ কয়েক বার,
এখনও ঘুরছে এ চলা অন্তহীন ।
শ্মশানে সব দেহ পুড়ছে ,সেই আগুনের শিখা মনেও ছড়িয়ে পড়েছে ।
যে মাছ স্বচ্ছ নদীর জলে খেলে বেড়ায় নিরন্তর --
সর্বনাশী দৃষ্টি অনেক আগে থেকেই প্রতীক্ষা করে,কিন্তু সে তো উদাসীন !
দূরের ঈগলের ধারালো নখগুলো প্রস্তুত হয়ে আছে ।
ঝোঁপ বুঝে কোপ পরে ব্যর্থ নীরব চিৎকার ।
তুমি যদিও আগের মতো নও , অনেক বেশি মলিন ...।

তীক্ষ্ম নখে বুকটি বিঁধে ,
অন্য প্রাণের মিটলো খিদে
ভেবেছিলে গভীর জলে ঠাই পাবে কে আবার ?
ডুবেও তুমি ভাসলে আবার ব্যর্থ তুমি ,
জীবন তোমার ...
অন্ধকারে সুখের ভাবনা ছিল শুধুই অর্থহীন ।
চঞ্চলতা কাল হলো ছিল না যার প্রতিকার
যেই মোহতে ডুব দিয়েছিলে অভিশাপ সেই জলাভূমি ।
তোমার করুন চোখের জলের আশার আলো ক্ষীণ ।





ওরা সবাই
আব্দুল রাহাজ

ছোট্ট একটা পাহাড়ি অঞ্চলে কয়েকটা ঘরের বসতি ওরা এসেছে পূর্ববঙ্গ থেকে কাজের সন্ধানে‌। দিনটা সেরকম ভাল যাচ্ছে না ওদের বেশ কয়েক বছর ওখানে আছে ওরা স্থানীয় চা বাগানে ওদের রুটিরুজি নির্ভর করে কাজ করে এখন  যা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনরকমে দিন চলে যায় । ওদের ঐক্য ছিল বেশ ভালো একবার শহর কলকাতা এসেছিল ওরা সে সময় উৎসব-পার্বণ চলছে শহরে জীবন দেখে অবাক একদল ছেলে ওদের দেখে ওদের মায়া লেগে গিয়েছিল ওই পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের নিজেদের উদ্যোগে কিছু বস্ত্র কিছু খাবার তুলে দেয়। সেই থেকে ওরা উৎসব-পার্বণে শহরের বড় বড় বাবুদের বাড়ি বাড়ি ঘোরে যা পাই তাই দিয়ে বছরখানেক কাটিয়ে ফেলে ওরা । কিন্তু ওদের ঐক্যবদ্ধ সঙ্ঘবদ্ধ বসবাস কেউ অক্ষুন্ন করতে পারিনি এখনো ‌। ওদের মধ্যে শান্তি নিরলস কষ্ট দুঃখ বেদনা সবার মাঝে ভাগ করে নেই এইভাবে ওদের জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একতাবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছে সুন্দর পাহাড়ি  অঞ্চলের মনোরম পরিবেশের মধ্যে।








গল্প : টান লেখক: দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

গল্প : টান     লেখক: দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

  উৎসাহিত ও আবেগস্নাত বন্ধুদের শুভেচ্ছা আগেই জানিয়ে দিয়েছে ডিসেম্বর ২০২০ গৃহশোভা পত্রিকায় প্রকাশিত গল্প " টান" তাদের টেনেছে......যে সব বন্ধুদের গল্পটি এখনও পড়ার সুযোগ হয়নি তাদের ভালোবাসার অনুরোধে.......

             

                         গল্প : টান

                      লেখক: দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

        সবুজ ঘাসের ওপর চাপ চাপ রক্তের দাগ। জানোয়ার ও সহ্য করতে করতে একসময় ফুঁসে ওঠে।আর এরা তো মানুষ ! দীর্ঘ দিনের বঞ্চনার লাভা স্রোত তো এরকম হবেই !

   ডুয়ার্সের লাবডুঙ চা বাগান । ছোট্ট চাবাগান।তাই চা পাতার উৎপাদনও কম ।মালিকের অতিরিক্ত লাভের প্রত্যাশা প্রায়  অনাহারে  থাকা শ্রমিকদের বঞ্চনার আগুনে পুড়িয়েছে দীর্ঘ দিন। পরিণাম মালিক রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার থ্যাতলানো রক্তাক্ত শরীর ঘিরে জেগে থাকা একরাশ প্রশ্ন ও হতাশা।

   কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শেষ করেই ইউ পি এস সির চাকরিটা জুটে গেল। স্ট্যাটিসটিকাল ইনভেস্টিগেটর কাম অফিসার । অনেক পরিশ্রম ছিল তার জন্য। মেধাবী অভীক পেরেকটা ঠিক জায়গাতেই পুততে পেরেছিল। বেশ মোটা মাইনে।কাটাকলের আরো দুজন পেল। অর্ক ও দেবারতি।

   দেবারতি কিছুদিন পরেই বার্কলে ইউনিভার্সিটি তে গবেষণা করতে চলে গেল। অর্করও  পালাই পালাই ভাব।কলেজ সার্ভিস কমিশনের দিকে তাকিয়ে বসে। প্রথম দিন থেকেই চা বাগানের এতো সমস্যার মাঝেও অভীক আস্তে আস্তে মানুষগুলোকে ভালোবেসে ফেলেছে। আসলে অর্থনীতির ছাত্র হিসাবে কোথায় যেন ও একটা দায়বদ্ধতা অনুভব করতে পেরেছিল। মায়ের কথাটা মনে ছিল,ফেস দ্য ব্রুট। চোখে চোখ রেখে সমস্যার মোকাবিলা। শেষ সাক্ষাতে বিদ্যা মন্দিরের দীপঙ্কর মহারাজের কথাটা যেন কানে বাজে ওর: মানুষের জন্যও  কিছু করিস !

   আলিপুরদুয়ার ষ্টেশন রোডের শেষে ওর অফিস । ডি এম অফিস লাগোয়া ।ওর থাকার জায়গা কিন্তু কাছাকাছি চা বাগান কোরাঙগিনির বাংলোয়।ভারী মনোরম পরিবেশ। আলিপুরদুয়ারের বারোটা চা বাগানের বর্তমান অর্থনৈতিক চিত্র ,শ্রমিকদের অবস্থা, অনুন্নয়নের কারণ থাকলে তার খোঁজ  ও উন্নয়নের নকশা বানানো। তবে সবকিছুর মূলে যেন থাকে শ্রমিকের সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন। এক কথায়,মানব মূলধনের রক্ষণাবেক্ষণ। এজন্য লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয় ওকে।আর মাথার ওপর ডি এম , অশোক ভুটিয়া।

   ডি এম ভালো বাংলা বলতে পারেন। শিবপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র। প্রচন্ড মেধাবী।হাই পাওয়ার গ্লাসের নীচে দুটো বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। প্রশাসন টা দারুন বোঝেন। খুব বড়ো মনের মানুষ। কর্মীদের বিপদতারণ তিনি। কর্মীরাও তার জন্য প্রাণম উৎসৃজেৎ।এক মন ভালো করা পরিবেশ ওনার অফিসে।

   প্রথম দিন থেকেই অভীকের সাথে ভালোলাগার সম্পর্ক ডি এমের।ওনার স্ত্রী বাঙ্গালী। ভালো গানের গলা। সুচিত্রা মিত্রের ছাত্রী। অশোক বাবু আবার কবি মানুষ। লেখালেখি করেন অবসরে। অভীকের কবিতা পড়ে একদম আপ্লুত। তবে ও অন্য একটা কারণও বুঝতে পেরেছে। ওনার মৃত ছেলে আকাশের সাথে নাকি ওর অনেক মিল।তাই ভালোলাগায় অপত্য স্নেহের ভাগই বেশি পায় ও।

   সহজ সরল মানুষগুলোর জন্য ও একটা টান অনুভব করে এখন। সত্যিই এরা যেন প্রকৃতির সন্তান। সবুজের মাঝে যেন এক একটা সবুজ মানুষ। বঞ্চনা অবজ্ঞা এদের দিনলিপি।ওর বাবার কথা মনে পড়ে খুব। সমাজবিজ্ঞানী বাবা বলতেন: রাস্ট্র সব মানুষের সমস্যার কাছে সবসময় পৌঁছতে পারবে না। ট্রিকল ডাউন থিওরি থাকবেই।মানে গাছের ওপরের পাতা বেশি জল পাবে আর নিচের পাতায় জল চুঁইয়ে পড়বে। সরকারি সুবিধা কিছু মানুষের কাছে বেশি মাত্রায় যাবে।তাই বেশি-পাওয়া মানুষগুলো যখন কম-পাওয়া মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে তখনই হবে প্রকৃত উন্নয়ন। ' তখনই বাস্তব হবে 'আশ্চর্য ভাতের গন্ধ'  প্রতি ঘরে।

      আলিপুরদুয়ারের চা বাগানগুলোতে চা পাতার উৎপাদন অন্যান্য বাগানের তুলনায় অনেক কম । মালিকরা উৎপাদন বেশি করতে চায় ।চা বাগান ম্যানেজারদের নিয়ে বৈঠকে অভীক বেশ কয়েকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে,বহু পুরানো চা গাছগুলো থেকে বেশি উৎপাদন আশা করা বৃথা।কচি পাতা উৎপাদনের ক্ষমতা হারাচ্ছে গাছগুলো। নতুন করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেও বিপুল আর্থিক চাপের কারণে পিছিয়ে আসছে অধিকাংশ চাবাগানের মালিকরা।

  আর কথায় আছে, সুস্থ শরীরে বাস করে সুস্থ মন। অপুষ্টি যেখানে যাপন চিত্র, সেখানে শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা সর্বাধিক আশা করা যে কাঁঠালের আমসত্ত্ব ! উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের উন্নতি প্রথম প্রয়োজন। দিন প্রতি একশো টাকায়  অন্ততঃ চারজনের একটা পরিবারের ভালো ভাবে চলা এই মুদ্রাস্ফীতির সময়ে খুবই কষ্টকর।তাই লাভের অঙ্ক কষার সাথে শ্রমিকদের সুস্থ ভাবে বাঁচার হিসাবটাও কষা দরকার।

   চা বাগান গুলোতে শ্রমিকদের বাঁচা সত্যিই নিম্নমানের। হাজারো না পাওয়ার মাঝে বেঁচে থাকা ওদের । এদের জন্য কিছু করার ইচ্ছায় ছিলই ও ।সাহসী  অভীক একটা কান্ড করে বসলো । বেশ কয়েকবার চাবাগান শ্রমিকদের অবস্থা জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে কিছু করার আর্জি জানিয়ে ও মেল করেছে। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা ! হঠাৎ সুযোগটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই এসে গেল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে চাবাগান উন্নয়ন মন্ত্রী আলিপুরদুয়ার চাবাগান পরিদর্শনে আসেন।ডি এম, লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার,অভীক ও অবস্থা খারাপ এমন চা বাগানের মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মন্ত্রী।আশোকবাবুকে বার বার অনুরোধ করে অভীক আলোচনার স্থান কোরাঙগিনি চা বাগানের অডিটোরিয়ামে করতে বলে।

     উদ্দেশ্য একটাই ছিল এর পিছনে। অন্য বাগানগুলোর থেকে কোরাঙগিনি অনেক টাই পিছিয়ে। উৎপাদন কম এখানে । এটাকে মালিকরা ঢাল করে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া থেকে বঞ্চিত করে আসছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজের চোখে দেখে যাক শ্রমিকদের অবস্থাটা।

   আশানুরূপ কাজই হলো। মন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে চা বাগানের মালিকরা শ্রমিকদের অবস্থা বোঝাতে ভুল তথ্য দিতে থাকল । মন্ত্রী ওকে শ্রমিকদের সার্বিক অবস্থাটা বোঝানোর কথা বলতেই অভীক  কান্ডটা করে বসে। সামনে থাকা জল ভর্তি গ্লাসের মধ্যে নিজের পেনটা ডুবিয়ে দিয়ে মন্ত্রীর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে বসে:পেনটা ঠিক কি দেখছেন , বাঁকা না সোজা? বাকরহিত মন্ত্রী ও অন্যরা।এরকম উপস্থাপনা ওরা আশাই করেননি। মন্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে ও বুঝলো, কেল্লা ফতে !জল মাধ্যমের মধ্য দিয়ে দেখলে পেন তো বাঁকা দেখাবেই। অর্থাৎ ম্যানেজারদের চোখে শ্রমিকদের অবস্থা বুঝতে গেলে তা সত্য হবে না। অবস্থার অসদ বিম্বটাই ধরা পড়বে এবং তাতে  মালিকদেরই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে।

   এরপর সবকিছু ওর পরিকল্পনা মাফিকই হল। শ্রমিক কলোনিতে গিয়ে তাদের ঘর, শৌচাগার, জলের ব্যবস্থা দেখে আবেগ তাড়িত মন্ত্রী। বাগানের ম্যানেজারকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সবকিছু ঠিকঠাক করতে নির্দেশ দিলেন। দেখভালের দায়িত্ব দিলেন ডি এমকে। শ্রমিকদের অবস্থার সার্বিক উন্নতির একটা মাস্টার প্ল্যান বানাতে বললেন অভীককে।ওর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে আগামী মাসে দিল্লি আসার প্রস্তাব দিলেন।অশোকবাবুর উৎফুল্ল মুখ বলে দিল ওনার খুশির কথা।

  অভীক মনে মনে এটাই চাইছিল। শ্রমিকদের বাঁচার অযোগ্য পরিবেশের কথা প্রচার করতে হবে ব্যাপকভাবে। লজ্জায় ফেলতে হবে সভ্য সমাজকে। বোঝাতে হবে, পশ্চাতে রাখিছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে। উন্নয়নের কর্ম যজ্ঞে এদের ব্রাত্য করা যাবে না। তবে যদি কাজ হয়। কদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী চাবাগান শ্রমিকদের বিনা পয়সায় চাল ডাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে অবস্থা কতটা শোধরাবে !

      সারা চাবাগানে এখন শুধু দিন বদলের স্বপ্ন। অর্ধাহারে থাকা মানুষগুলোর কাছে অভীক এখন নয়নের মনি।ও প্রত্যাশার চাপটা বোঝে। দিল্লি যাওয়ার তোড়জোর চলছে। পুরো দায়িত্ব ডি এম নিজে নিয়েছেন। সারা সময় ধরে উন্নয়নের রুপরেখা বানিয়ে চলেছে ও। স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে টি ট্যুরিজমের প্রস্তাব রাখছে। টি ট্যুরিজম হলে বাগানের পুরুষগুলো হোটেল,দোকান , রিক্সা বা ভ্যান চালানো অথবা গাইডের কাজ করতে পারবে। সহায়ক অর্থনীতি । মহিলাদের চাপাতা তোলার সাথে সাথে পুরুষগুলোও কিছু আয় করলে বাঁচার পরিবেশ, পদ্ধতি আস্তে আস্তে বদলাবে নিশ্চিত। বাচ্চা গুলো স্কুলে যেতে শুরু করবে । দিনের শেষে মাতাল মরদগুলো ভূমিকা বদলে তখন হয়ে উঠবে প্রেমিক সোয়ামী !

   সারা রাত প্রজেক্টটার কাজ করে শুতে অনেক দেরি হয়েছে ওর। সঞ্চিতাকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেছে অনেক বার। পায়নি। মেয়েটা বড়ো মায়ার বাঁধনে বেঁধেছে ওকে।প্রতি মূহুর্তে ওর ভালো বাসা অনুভব করে অভীক । কতো দিন দেখা হয় নি ! একরাশ মন খারাপ নিয়ে শুতে গেল ও।

     পরদিন সকালে চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো ওর।কি হলো আবার ! বাইরে বেড়িয়েই চমক! ও কি স্বপ্ন দেখছে ? একেই কি টেলিপ্যাথি বলে ? কাল যার কথা মনে করেছে বারবার সেই এখন সামনে। মূর্তিমান বর্তমান। আনন্দে উত্তেজনায় নীচে নেমে দেখল চা বাগানের মেয়ে দের মাঝে সঞ্চিতা । অভীকের মুখের হাসি ছড়িয়ে পড়ল সকলের মাঝে আনন্দ ঝর্ণা হয়ে। সঞ্চিতা সকলকে জানিয়ে দিল, দুদিন থাকবে ও এখানে ।ঐ দিন সকলের জোরাজুরিতে রাত্রে খাওয়াদাওয়া, ক্যাম্প ফায়ারের আয়োজন। অনেক রাত অব্দি চলল নাচগান। সারা চাবাগানে যেন নতুন প্রাণের উৎসব। সঞ্চিতা যেন বঞ্চিত মানুষ গুলোর মনে রাশি রাশি আনন্দ উল্লাসের জ্যোছনা ছড়িয়ে দিল। 

     পরদিন সকালে খুশির খবর আবার ! অশোকবাবু সকালের খবরের কাগজ টা পাঠিয়ে দিয়েছেন বাহাদুরের হাত দিয়ে। মন্ত্রী  কথা রেখেছেন।চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। মালিকপক্ষের সংগঠন ও মেনে নিয়েছে। বাগানের সকলেই এই খুশির খবর  সঞ্চিতা আসার কারণ হিসেবে দেখছে। হাসি হাসি সঞ্চিতার সাথে অভীক ও একরাশ টাটকা বাতাস ভরে নিল আগামীর জন্য।

  দুটো দিন যেন সত্যি ই আনন্দ ভৈরবী ওর জীবনে। সঞ্চিতার মুখে শুনেছে শিলিগুড়িতে ব্যাঙ্ক অফিসারদের ট্রেনিং ছিল।ও ম্যানেজ করে চলে এসেছে অভীকের কাছে। দুদিন পরেই ওকে আবার ফিরতে হবে সরাইঘাট এক্সপ্রেসে ওর অফিস মালদায় ।স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার হেড অফিসে ।

   দুটো দিন হইচই করে কেটেছে ওদের।চাবাগান ঘুরে দেখেছে। প্ল্যান্টে গিয়ে চা পাতা তৈরি দেখেছে। অভীক ওকে ফার্স্ট ফ্লাস চা তৈরি করে খাইয়েছে। মালদায় নিয়ে যাবার জন্য প্যাকও করে দিয়েছে। সঞ্চিতা বাগানের বাচ্চা দের চকোলেট বিলিয়েছে। সঙ্গে আনা জামা কাপড় চা তুলতে আসা মেয়েদের দিয়েছে।সাজের জিনিসের অবস্থা ও তাই। অভীকের মুখে চাবাগানের মানুষগুলোর দুঃখ কষ্টের গল্প শুনে সত্যিই ও মানুষগুলোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে । শুধু সঞ্চিতার সারপ্রাইজ ভিজিটের খবর মাকে জানাতে পারে নি অভীক। দিন পাঁচেক আগে ঝড়ের তান্ডবে মোবাইল টাওয়ারের অবস্থা বারোটা বেজে গেছে। শত যোগাযোগের চেষ্টা তাই ব্যর্থ ।ঠিক হতে কতোদিন লাগবে কে জানে !

   অশোকবাবু ও বৌদিকে নিজের হাতে রান্না করে খাইয়েছে সঞ্চিতা চলে যাবার আগের রাত্রে। গান আড্ডা গল্প মাউথঅরগানে  ভালো লাগা যেন টুপটাপ ঝরে পড়েছে ওদের ঘিরে সেই সময় ।বিদায় বেলায় চোখের জলে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বৌদিকে। সারা রাত উত্তেজনায় কাঁপতে থাকা ওদের দুটো শরীর চাঁদের আলো গায়ে মেখে ভালোবেসেছে, আগামীর স্বপ্ন এঁকেছে।ভালো বাসার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সকালের প্রতীক্ষা করেছে ।

     তবে এ সকাল বড়ো মন খারাপ করা সকাল কোরাঙগিনি চা বাগান জুড়ে। ফোনে ওর মুখে বাগানের মানুষ গুলোর দুঃখ কষ্টের কথা শুনে সঞ্চিতা বলেছিল , একদিন আসবে এখানে। কথা রেখেছে ও।এক সমুদ্র ভালোবাসায় সকলকে ভাসিয়েছে।চা পাতা তুলতে এসে মেয়েরা ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে । অশোকবাবু ও তনিমা বৌদিরও মন ভালো নেই। সত্যিই যেন জাদু জানে মেয়েটা ! সকলের মতো অভীক ও চাইছে ,আর কদিন থেকে যাক। কিন্তু মুখে বলতে পারে নি। সঞ্চিতা ম্যানেজার হয়ে  বছর খানেক আগে জয়েন করেছে মালদা হেড অফিসে। ওর তাই কাজের বেজায় চাপ ,জানে অভীক । শুধু নির্বাক সাক্ষী থেকেছে বিদায় বেলায় চোখের জল নিয়ে।

   কাল সারা রাত যেন শেষের কবিতার অনুভব ছিল অভীকের কাছে। তারাদের মিটিমিটি ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ সঙ্গে করে সঞ্চিতার স্মৃতির কোলাজ বানিয়েছে ও রাতজাগা হয়ে।কখন আকাশ আলোর খেলায় মেতেছে ও খেয়ালই করেনি। ছোট্ট পাখিটার ডাকে ও যেন জেগে উঠলো মানসঘুম থেকে। জানলায় বসে ল্যাজ দুলিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নেচে গেয়ে ওকে সুপ্রভাত জানাল পাখিটা।ওর মনের দুঃখের খবর পেয়েছে বোধহয় !

   হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। তাহলে  লাইন ঠিক হল এতোদিনে ! ফোনের ওপাশে মায়ের গলা।ও হ্যালো বলতেই মায়ের কান্নার আওয়াজ।

    এও কি সম্ভব ! শিলিগুড়ি স্টেডিয়ামের পাশে ট্রেনিং সেরে সেবক রোড ধরে হোটেলে আসার পথে পিছন থেকে একটা লরি  ব্রেক ফেল করে ধাক্কা মারে অটোর পিছনে। রাস্তায় ছিটকে পড়লে পাস থেকে একটা ট্যাক্সি চাপা দিয়ে চলে যায়।থ্যাতলানো দেহটা আই সি সি ইউতে লড়েছিল চব্বিশ ঘণ্টা। সে আর নেই ! সঞ্চিতা আর নেই !

   অভীক মাথা ঘুরে পড়ে গেল খাটে। ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে গেল শরীর জুড়ে। তাহলে দুদিন চাবাগানের মানুষগুলোর মাঝে কাটিয়ে গেল,ও কে? অভীককে ভালোবাসার আবীরে যে রাঙিয়ে গেল,সে কে ?






সান্টা দাদু গল্প অনাদি মুখার্জি

সান্টা দাদু     গল্প   অনাদি মুখার্জি

 সান্টা দাদু 

           গল্প 

কলমে ,, অনাদি মুখার্জি 

আজ বাদে কাল বড়দিন ! কাল  খুব সকাল সকাল সান্টা দাদু আসবে অনেক কিছু উপহার নিয়ে সব  বাচ্চা শিশুদের জন্য ! তাই আজ আট বছরের মেয়ে ঝিলিকের মনে একটু আনন্দ হচছে ! মনের মধ্যেই অনেক আশা নিয়ে ভাবছে সেই কাল  সান্টাদাদুর কাছে কি চাইবে ! সেই ছোটোবেলায় শুনেছে নাকি  সান্টাদাদুর কাছে ঐ দিন যা চাই তা সব কিছু পূরণ করে ! তার মনে পড়লো সেই যখন  পাঁচ বছরের শিশু তখন এই বড়দিনের আগের রাতে তার বাবা সান্টাদাদুর নিয়ে গল্প শোনাতো ! সেই সান্টাদাদু কে দেখেনি কিন্তু সেই লাল পশমে কোট পরা ,মাথায় লাল টুপি আর লাল রঙের জুতো পরে ! কাঁধের একটা ঝোলা ব্যাগ তাতে অনেক উপহার থাকে ! সেই সব গল্প শুনতে ঝিলিক ঘুমিয়ে পড়তো ,পরের দিন সকালে উঠে তার পাশে থাকতো ক‍্যাডবেরি আর একটা লাল রঙের টেডি ! সেই সব দেখে ঝিলিক খুশি হয়ে বলতো বাবা এই সব কে দিল ? তার বাবা তখন তাকে বলতো  এইসব সেই বরফের দেশ থেকে তোর  সান্টা দাদু এসে দিয়েগেলো ,তা শুনে ঝিলিক তার বাবা কে জড়িয়ে ধরে বলতো সান্টাদাদু কি ভালো ! তার ছোটোবেলাতে সান্টা দাদু কে তার বাবা কাছে গল্প শুনে ! কিন্তু এখন সব কিছুই হারিয়ে গেছে ,একসময়ের কত আপন ছিল, এখন তারা অনেক দূরে ঐ নীল আকাশে তারা হয়ে আছে ! ঝিলিকের মনে আজ একটা বিষাদের ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচছে যেন ! কেন তারা নিল আকাশে তারার মাঝে লুকিয়ে আছে ? আমি কি আর তোমাদের ফিরে পাবো না ? তিন বছর আগে একটা গাড়ি একসিডেন্ট হয়ে ঝিলিকের বাবা ও মা যায় ! তখন ঝিলিকের পাশে কেউ ছিল না ,পাড়ার এক শান্তি মাসি তখন তাকে অনাথ আশ্রমে রেখে আসে ,সেই তখন থেকে সেই ঝিলিক অনাথ আশ্রমেই আছে ! এই সব ভেবে ঝিলিকের চোখের জল নেমে গেলো গাল বেয়ে ! সেই কাল  সান্টা দাদুকে চিঠি লিখে জানাবে বলে সেই চিঠি লিখতে লাগলো  সান্টা দাদুকে !

          পর্ব 2

দেখতে দেখতে ঝুপ করে শীতের সন্ধ্যা নেমে এল শহরের বুকে ! কাল বড়দিন তাই শহর সেজে উঠেছে আনন্দে ! রমানাথ বাবু বিরাট  কাপড়ের ব্যাবসা তার ,অনেক টাকা আছে কিন্তু টাকা থাকলে কি হবে ,তার মনে সুখ নেই ! তার একমাত্র মেয়ের জন্ম দিন এই বড়দিনে ! আজ তার মেয়ে নেই এক অজানা রোগের তার মেয়ে মারা যায় ! তাই তার মেয়ের জন্ম দিনের উপলক্ষে সেই সান্টা সেজে ঐ অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের কাছে যান এবং অনেক উপহার দিয়ে আসে ! প্রতিবছরের মতোন সেই এই দিনটি এই ভাবে বাচ্চাদের সাথে সময় দেন ! পরের দিন রমানাথ বাবু একটা লাল ফোলা ফোলা পশমে লাল কোট পরে মাথায় লাল টুপি ও সাদা দাড়ি লাগিয়ে হাজির হয় অনাথ আশ্রমে ! তখন আশ্রমের সব বাচ্চারা রমানাথ বাবু কে তাদের সান্টা দাদু ভেবে ঘিরে ধরে বলছে  সান্টা দাদু আমাকে দাও তুমি কি এনেছো ! তখন সান্টা দাদু তার ঝোলার ব্যাগ থেকে কেক,চকলেট, বেলুন ,পুতুল সব উপহার সেই সব বাচ্চাদের হাতে তুলে দিয়ে বলছে  হ্যাপি ক্রিস্টমাস ডে ! রমানাথ বাবু অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ‍্য করছে একটু দূরে আর একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে তাকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে ! তখন রমানাথ বাবু তার কাজে এসে বললো ,এই যে খুকি তোমার সান্টা দাদুর কাজ থেকে তুমি কি উপহার নিতে চাও বলো ? ঝিলিক কখোনো সান্টা দাদুকে দেখেনি ,আজ  প্রথম দেখলো ,সেই লাল পোশাক ,লাল টুপি আর লাল রঙের জুতো পরে আছে ! তার কাছেই আসতে ঝিলিক বললো তুমিই সান্টা দাদু ,আমি যা চাইবো তুমি দিতে পারবে ? বলে তার হাতে একখানা কাগজ ধরিয়ে বললো  সান্টাদাদু আমি চোকলেট ,বেলুন চাই না শুধু আমার বাবা ও মা কে এনে দাও! রমানাথ বাবু কাগজ খানা পড়ে বললো তুমি এই চিঠি তোমার সান্টা দাদুকে লিখেছো বলে ঝিলিকের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো আচছা খুকি এখন এই বেবি ডল টা তুমি নাও, এই টা তোমার জন্যই এনেছি ! ঝিলিক কে দেখে রমানাথ বাবু মনটা কেমন যেন হয়েছিল ! ঠিক যেনো তার হারিয়ে যাওয়া মেয়ের মতোন দেখতে ঝিলিক ,তার দেওয়া চিঠি পড়ে জানলো সব যে ঝিলিকের বাবা ও মা নেই ! তখন রমানাথ বাবু ঝিলিকের জড়িয়ে ধরে বললো লক্ষি মা তুমি কি আমার সাথে যাবে ? ঝিলিক তখন বললো কোথায় তোমার দেশে ,তুমি তো বরফের দেশে থাকো ! রমানাথ বাবু তাকে বললো হুম কিন্তু এই বার থেকে আমি তোমাদের এইখানে থাকবো আর যাবো না ! সত্যিই ঝিলিক বলে উঠলো তখন সেই রমানাথ বাবু কে  সান্টা দাদু ভেবে জড়িয়ে ধরে বললো তুমি কি ভালো  সান্টা দাদু ! রমানাথ বাবু র দুই চোখ জলে ভরে উঠলো ,ঝিলিক কে জড়িয়ে ধরে বললো হয়তো তোর বাবা কে ফিরিয়ে আনতে পারবো না কিন্তু তোর বাবার অভাব আমি পূরণ করতে পারবো তুই তো আমার হারিয়ে যাওয়া মা ! 

সেই থেকে আজো ও সবাই রমানাথ বাবু কে  সান্টা দাদু বলে চেনে ! এই বড়দিনে রমানাথ বাবু ও সান্টা দাদু সেজে বাচ্চাদের জন্যই  উপহার নিয়ে হাজির হয় !







নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীঃ বিখ‍্যাত আধুনিক বাংলা কবি বিপ্লব গোস্বামী

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীঃ বিখ‍্যাত আধুনিক বাংলা কবি    বিপ্লব গোস্বামী

 নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীঃ বিখ‍্যাত আধুনিক বাংলা কবি


বিপ্লব গোস্বামী


বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আবির্ভূত বিখ‍্যাত আধুনিক ভারতীয় বাংলা কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী ও স্বদেশপ্রেমী কবি।তিনি ঘৃণা করতেন মেকি  দেশপ্রেমকে।তাঁর কবিতার ভাষা আধুনিক কবিদের মতো দুর্বোধ‍্য না হলেও গভীরতা খুব বেশি।

       কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১৯৪২ সালের ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশের ফরিদপুরের চন্দ্রগ্ৰামে জন্ম গ্ৰহণ করেন।তাঁর পিতা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন একজন ইংরেজে ভাষা ও সাহিত‍্যের অধ‍্যাপক।আর মাতা প্রফুল্লনলিনী চক্রবর্তী ছিলেন একজন পরিপূর্ণ গৃহবধূ।কবির পিতার কর্মস্থল ছিল কলকাতায়।তাই মাত্র দু বছর বয়সে কবিকে তাঁর ঠাকুরদাদা লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছে রেখে কলকাতায় চলে আসেন তাঁর মা বাবা।ঠাকুরদাদার কাছে গ্ৰামবাংলার প্রকৃতিক পরিবেশ আর কাদা-মাটিতে  বড় হয়ে উঠেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।খুব আনন্দে কাটছিল তাঁর শৈশব।শৈশবেই পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর প্রতিভার।মাত্র চার বছর বয়েসেই তিনি মুখস্থ করেছিলেন রামায়ণ গান ও কবিগান।

       কবির প্রাথমিক শিক্ষা শুরু গ্ৰামের পাঠশালাতেই।তারপর ঠাকুরদার মৃত‍্যুর পর ১৯৩০ সালে কলকাতায় চলে আসেন তিনি।কলকাতায় এসে প্রথমে বঙ্গবাসী স্কুলে এবং পরে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। ১৯৪০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ  হন তিনি। ১৯৪২ সালে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন নীরেন্দ্রনাথ।তারপর ১৯৪৪ সালে সেন্ট পলস্ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বি. এ পাশ করেন তিনি।

      কর্ম জীবনে নীরেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন কবি-সাহিত‍্যিক ও সাংবাদিক।"দৈনিক প্রত‍্যহ" পত্রিকায় তাঁর সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।"সত‍্যযুগ" পত্রিকায় সাংবাদিক রূপে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়।তারপর তিনি কাজ করেছেন  মাতৃভূমি,ভারত,স্বরাজ,ইউনাইটেড প্রেস অফ ইণ্ডিয়া,প্রভৃতি পত্রিকায়।১৯৫১ সালে তিনি যোগ দেন আনন্দবাজার পত্রিকায়।আনন্দবাজার পত্রিকায় তিনি সম্পাদকীয় নিবন্ধিকার হিসাবে কাজ করেছেন।১৯৭৬ সালে তিনি "শিশু কিশোর" পত্রিকার আনন্দমেলার সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন।

     সাহিত‍্যের প্রতি তাঁর অনুরাগটা সেই ছোটবেলা থেকেই।মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৬ বছর বয়সে "শ্রীহর্ষ" পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মধ‍্য দিয়ে সাহিত‍্য জগতে তাঁর আত্ম প্রকাশ ঘটে।তাঁর প্রথম কাব‍্যগ্ৰন্থ "নীল নির্জন" , প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে।এরপর একে একে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব‍্যগ্ৰন্থ অন্ধকার বারান্দা,নীরক্ত করবী,নক্ষত্র জয়ের জন‍্য,আজ সকালে,উলঙ্গ রাজা,ভালোবাসা মন্দবাসা প্রভৃতি বিখ‍্যাত কাব‍্যগ্ৰন্থ।এসবে মধ‍্যে "উলঙ্গ রাজা" তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কাব‍্যগ্ৰন্থ।'পৃর্তিপুরুষ" তাঁর বিখ‍্যাত উপন‍্যাস ,প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে।তাঁর লেখা আত্মজীবনী মূলক গ্ৰন্থ "নীরবিন্দু-১" প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে।১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা কাব‍্যনাট‍্য "প্রথম নায়ক"।এছাড়াও তিনি লিখেছেন অনেক ভ্রমণকাহিনী,রহস‍্যকাহিনী ও ছোটদের ছড়া-কবিতা।

      আধুনিক বাংলা সাহিত‍্যে রয়েছে তাঁর অনন‍্য অবদান।সাহিত‍্যে তাঁর অনন‍্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ভঙ্গবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করে।ঠিক একই বছর কলকাতা বিশ্ববিদ‍্যালয় তাঁকে ডি.লিট ডিগ্ৰি প্রদান করে।১৯৭৪ সালে তাঁর "উলঙ্গ রাজা" কাব‍্যগ্ৰন্থের জন‍্য লাভ করেন সাহিত‍্য একাডেমি পুরস্কার।এছাড়া তিনি ১৯৭০ সালে তারা শঙ্কর স্মৃতি পুরস্কার  এবং ১৯৭৬ সালে তিনি আনন্দ শিরোমণি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও ২০১০ সালে লাভ করেন বিদ‍্যাসাগর পুরস্কার।

        দীর্ঘ দিন বার্ধক‍্য জনিত রোগে ভুগে ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ৯৪ বছর বয়সে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শেষ নিঃশ্বাস ত‍্যাগ করেন।বাংলা সাহিত‍্য তাঁর অনন‍্য অবদান অবিস্মরণীয়।তিনি আজও জীবিত হয়ে আছেন তাঁর সৃষ্টির মধ‍্য দিয়ে।তাঁর অনন‍্য সৃষ্টি আজও পাঠকমহলে সমাদৃত।




বড়দিন--- শুধু খ্রিস্টান নয়, মুসলিমরাও শ্রদ্ধা করে

বড়দিন---  শুধু খ্রিস্টান নয়, মুসলিমরাও শ্রদ্ধা   করে

 উপকন্ঠ প্রাত্যহিক সাহিত্য পত্রিকা :




বড়দিন---

শুধু খ্রিস্টান নয়, মুসলিমরাও শ্রদ্ধা

 করে


""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""


  

মুসলিমদের কাছে যীশু হচ্ছেন ঈসা নবী

যা জেনে  বিশ্বের খ্রিস্টানরা অবাক হতে পারেন তা হলো - ইসলাম যীশুর জন্মদিন পালন না করলেও - তাঁকে সম্মান করেন।মুসলমানরা তাঁদের ধর্ম বিশ্বাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে  যীশুকে গভীরভাবে সম্মান করেন    যীশুকে সবচেয়ে সম্মানিতদের অন্যতম বলে স্থান দিয়েছে কোরান।

 কোরানে অসংখ্যবার উল্লিখিত হয়েছে যীশুর নাম(যাকে আরবিতে বলা হয়-- ঈসা)।  নবী মোহাম্মদের নামের চেয়েও বেশিবার।

ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থে নাম ধরে উল্লেখ করা হয়েছে এমন নারী আছেন মাত্র একজন।


তিনি হচ্ছেন কুমারী মেরি । আরবিতে তাঁর নাম মরিয়ম।


মেরি বা মরিয়মের নামে কোরানের একটি পূর্ণাঙ্গ সুরার নামকরণ হয়েছে - যাতে কুমারীর গর্ভ থেকে যীশুর জন্মের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

তবে ইসলামের এই কাহিনিতে কোনো জোসেফের উল্লেখ নেই, নেই কোন যীশুর জন্মের বার্তাবাহী জ্ঞানী ব্যক্তি বা পশুর আস্তাবলের কথাও।

এখানে আছে, মেরি একাই যীশুর জন্ম দিয়েছিলেন মরুভূমিতে, একটি মরা খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিয়ে।

সেখানে তাঁর খাবার জন্য গাছ থেকে পাকা খেজুর পড়ে, এবং তাঁর পায়ের কাছে পানীয়জলের ধারার সৃষ্টি হয়।

মেরি এবং তাঁর কুমারী অবস্থায় যীশুর জন্মের গল্প শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মনে দাগ কেটেছে।

একজন অবিবাহিত নারী সন্তান জন্ম দেবার ফলে তাঁকে নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু যীশু - নবজাত শিশু অবস্থা থেকেই ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ হিসেবে কথা বলতে শুরু করেন।

এই যাদুকরী ঘটনার পর তার মায়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা থেমে যায়। তবে  এটি হচ্ছে সংস্কার ও বিশ্বাস ।  


মুসলিমরা যখন যীশুর নাম নেন, তখন তাঁদের 'তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক' বলতে হয়।


 মুসলিম ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী শেষ বিচারের দিনের আগে ( Judgement Day) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য  যীশু পৃথিবীতে ফিরে আসবেন ।     মুসলিম সাহিত্যে তাঁকে যেভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছে তা শুধু কোরানেই সীমিত নয়।

সুফী দার্শনিক আল-গাজ্জালি যীশুকে বর্ণনা করেছেন 'আত্মার নবী' বলে। ইবনে আরাবি তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন 'সন্তদের নিশানা' হিসেবে।

মুসলিম বিশ্ব জুড়েই ঈসা এবং মরিয়মের নামে শিশুদের নাম রাখা হয়। খ্রিস্টান পরিবারে কি মোহাম্মদের নামে শিশুর নাম রাখার কথা কেউ কল্পনা করতে পারেন?


ইসলাম ধর্মের সাথে যীশু পরিচয়ের ঐতিহাসিক কারণ আছে। ধর্ম হিসেবে ইসলামের জন্ম হয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে। ততদিনে মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিস্টান ধর্ম ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে ।

বাইবেলে নবী মোহাম্মদের কোন উল্লেখ নেই।

কিন্তু ইসলাম যদিও যীশুকে সম্মান করে, তবু এটা বলা খুব একটা ভুল হবে না যে খ্রিস্টান চার্চ সবসময় এ অনুভূতির সদয় প্রত্যুত্তর দেয়নি।


ইতালির বোলোনায় পঞ্চদশ শতকের স্যান পেত্রোনিও গীর্জায় একটি দেয়ালচিত্র আছে যাতে ইসলামের নবীকে দেখানো হয়েছে নরকে, তাঁর ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। ইউরোপে এমন অনেক শিল্পকর্ম আছে যাতে তাঁকে অবমাননার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।


সময় বদলে গেছে, কিন্তু আমাদের এই যুগে নতুন সব ধর্মীয় দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষমূলক সংস্কার, এবং উগ্রপন্থী সহিংসতার জন্ম হয়েছে।

২০০২ সালে বোলোনার চার্চের দেয়ালচিত্র বোমা মেরে উড়িযে দেবার ষড়যন্ত্রের জন্য ইসলামী জঙ্গীদের সন্দেহ করা হয়।

বোলোনার ওই ঘটনার পরবর্তীকালে ইসলামের নামে ইউরোপে এবং বহু মুসলিম দেশেও বড় বড় আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে - যাতে বহু লোকের মৃত্যু হয়েছে। এগুলোর ফলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেকার সম্প্রীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।


সেকারণেই মুসলিমদের মধ্যে যীশুকে কিভাবে চিত্রিত করা হয়, এবং তাঁর গুরুত্বই বা কি - এটা উপলব্ধি করাটা হয়তো আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা খ্রিস্টানদের জন্য যেমন, তেমনি মুসলিমদের জন্যও।


নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে - তা দূর করার একটা ভালো পন্থা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে যেসব অভিন্ন ব্যাপার আছে তা তুলে ধরা।


__________________________________________


  লেখক :----  অধ্যাপক সৌম্য ঘোষ । চুঁচুড়া। হুগলি।

সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 21/12/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 21/12/2020


উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 21/12/2020

**********************************

"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
                 (ওয়েব ম্যাগাজিন)     

প্রকাশ কাল:- 21/12/2020, সোমবার
               সময় :- রাত 09 টা. 30 মি:


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম


সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒


      পর্ণমোচী
         পিনাকী  মুখার্জী
 
         জাঁকিয়ে  যখন  কনকনে শীত
              বইছে   হাওয়া  উত্তুরে  !!
          কাঁপছে  হাওয়ায়  পর্নমোচী , দেখা
                 আদুড়  গায়ে  রোদ্দুরে  !!

                এসেছে  শীত ,  মর্মর  শুনি
                     তবু  আনন্দে  নাচি  !!
               নূতন  রূপে আসবে জীবন
                      সবুজ  কচি - কচি  !!

              পোশাক  বদল  নয়তো  স্বভাবে ,
                      যজ্ঞে  পূর্ণ   আহুতি  !!
                 আসতে  হবে  নব নবরূপে ,
                      যজ্ঞই   তার  নিয়তি  !!

                  সাথী  ঝরাপাতা , ঐ শুকনো
                    ডালে ,  আগুনের  ফুলকি  !!
                    লক্ষ বুকে জীবনের নামে
                         লেখা  হল  উল্কি  !!





আমি তাহাদের কবি
বিপ্লব গোস্বামী

আমি কবি ভাই ভিখারিনীর ছেলে;
আমাকে পাবি তোরা দীন জনের মেলে।
আমাকে পাবি তোরা কৃষাণের মাঠে;
আমাকে দেখবি তোরা মাঝিদের ঘাটে।
আমাকে দেখবি তোরা ঠেলতে ঠেলা গাড়ী;
আমাকে পাবি তোরা মুচীদের বাড়ী।
আমাকে পাবি তোরা রাখালের সনে;
আমাকে দেখবি তোরা ধেনু সনে বনে।
আমাকে দেখবি তোরা হাল নিয়ে মাঠে;
আমাকে পাবি তোরা কুমারের হাটে।
কামার,কুমার,ছুতর সবই আমার সাথী;
ফুঠপাতের হাটে মোরা নিত‍্য দোকান পাতি।





পবিত্র ভালোবাসা
     -শান্তি দাস

স্রষ্টার সৃষ্টি ভালোবাসা  নির্মল শাশ্বত, সুন্দর অমলিন।
এই প্রেম ভালোবাসা‌ বাহ্যিক সৌন্দর্যে নয় অন্তরের আকর্ষণ।

প্রেম ভালোবাসা জীবনের অঙ্গ এক অনন্য আবেগ,
কখন ও করে বিধ্বস্ত কখন ও আশ্বস্ত চিরন্তন সত্য।
মা বাবার ভালোবাসা স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ, অবিনশ্বর।

পরিণত যৌবনে বসন্তের ছোঁয়া,
প্রণয় বিরহের শাশ্বত প্রেমের নব অধ্যায়।
ভালোবাসা ত্যাগের জীবনকে করে ঐশ্বর্য্যবান
জীবনকে করে দুর্বিনীত গতিশীল।

ভালোবাসার রঙ মেঘলা আকাশে কখনো রামধনু,
কখনো সন্ধ্যার দিবাকর, অমাবস্যার রাত প্রদীপ তারা,
যামিনীর আকাশে মনোলোভা চাঁদ এটা চিরন্তন।

ভালোবাসা অন্তরের অন্তঃস্থলে অনুভব করা,
মনের গভীরে বিনে সুতোয় গাঁথা অদৃশ্য বন্ধন,
জীবনের পরিপূর্ণতার আবাস্থল,প্রাপ্তি দুর্বার প্রেমসুধা।

কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক প্রেরণা ভালোবাসা,
হয় কল্যাণকর, সম্পর্ক হয় নিগূঢ়।
আবহমানকালের সৃস্টি তাই রেখেছে করে মহান
শিল্প, সাহিত্য  সৃজনশীল স্থাপত্য ভাস্কর্যে।






                এই শীত
           হামিদুল ইসলাম
             
শীত শীত করে
পাগল হয়েছিলাম একদিন
এখন ঘরের দুয়ারে শীত
শীতে আমি নিদ্রাহীন  ।।

শীত আমার প্রেয়সী
শীতের জন‍্য‍ে দাঁড়িয়ে থাকি পথের বাঁকে
কুয়াশা মাখা প্রভাত
হাতছানি দিয়ে প্রতিদিন আমায় ডাকে ।।

আমি প্রেয়সীর কাছে যাই
প্রাণ খুলে সামনে দাঁড়াই
মন ভরে ওঠে
শীতের জন‍্যে হাত বাড়াই  ।।





অভিনব শো-য়ে
বদরুদ্দোজা শেখু


অভিনবত্ব-মাতাল আমি ধ্বনি-আলোকের শো-য়ে
বসেছি সন্ধ্যায় লাল কেল্লার অন্দরে, ইতিহাসের শুঁড়িপথ ব'য়ে
উঠে এলো টগবগে ছুটন্ত অশ্বের হ্রেষা, সংগীত -নৃত্য-মহলের ঝংকার
চুড়ি ও নূপুর-ধ্বনির  টুংটাং অনুরণ  থেকে ঝলসিত অস্ত্রের টংকার
ঘটনা-পরম্পরা ইমারতগুলো থেকে, এক ঘন্টার অনুপুঙ্খ মহড়ায়
উচ্চকিত হলো স্নায়ুতন্ত্র আবিষ্ট বিহ্বল , যেন চোখ রগড়ায়
আঁধারে শ্বাপদকুল, পুষ্পিত রমণীকুল হামাম-মহলে
যমুনা-বিলাস করে সোহাগে আদরে , ইশারায় ফিসফাস কথা বলে ।

মুঘলশাহীর আলেখ্য ঘটনাক্রম শেষ হলো, সময়ের গ্রন্থিগুলো থেকে
কতো কিছু ঝ'রে পড়লো পলকে পলকে, প্রত্নলোকে নিয়ে - গেলো ডেকে
রুদ্ধশ্বাস শো-য়ের ব্যঞ্জনা, আনমনা কখন্ হয়েছি মনে নাই
মোহাবিষ্ট ব'সে আছি অতীত-রচনাকারী শিল্পিত সভায়
শ্রোতারা সবাই উঠে গেছে একে একে , আমি ব'সে আছি ---
'চলিয়ে বাবুজী' -- মার্শাল ডাকলো এসে স্নায়ুচর বিস্ময়ের কাছাকাছি - - -






অনুগল্প
মাঠের সেই তেঁতুল গাছ
   আব্দুল রাহাজ

গ্রামের মধ্যে পূর্বদিকে সুবিস্তীর্ণ মাঠ সেখানে আছে বহুযুগের তেঁতুল গাছ তার সামনে কিছুটা দূর গিয়ে একটা স্কুল।স্কুলের ছেলে মেয়েদের টিফিন বেলা কাটে ওই তেঁতুল গাছ তলায়। গ্রামের বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ের ছেলেবেলা কাটে তেঁতুল গাছের নিচে খেলা করে ‌‌। গ্রামের প্রবীণ মানুষেরা গ্রীষ্মকালে ছেলেমেয়েদের নিয়ে তেতুল গাছের গল্প করতেন। সেদিন ছিল পূর্ণিমার দিন আলী চাচা সিদ্দিক করিম রহিম আল আমিন সবাইকে নিয়ে গল্প করছে। করিম বলল দাদু আজকে তেঁতুল গাছের গল্প শুনবো ও আচ্ছা আচ্ছা শোনাবো একটু হেসে নিলেন হো হো করে ‌। আলী দাদু শুরু করলেন সেদিন মেলার দিন আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে মেলায় গিয়েছিলাম সেদিন বাড়ি আসতে রাত হয়েছিল আমাদের মধ্যে আমার এক বন্ধু মরেনি দেখতে পেলেও তেঁতুল গাছের তলায় অদ্ভুতভাবে কি একটা জ্বলছে আমরা তখন দৌড়ে ছুটে অন্য রাস্তা দিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে দৌড়ে বাড়ি ফিরলাম। তারপর আমার দাদুর কাছে ওই তেঁতুল গাছের এক অদ্ভুত গল্প শুনলাম নাকি তেঁতুল গাছ তলায় সোনার কলসি ও তার পাশে সাপ আছে একবার একটা লোক এসে ওটা নেওয়ার চেষ্টা করলে সাপের কামড়ে তার প্রায় সবাই হা করে শুনতে থাকে‌। এদিকে এশারের নামাজের আজান শোনা যাচ্ছে ওরা দৌড়ে সবাই বাড়ি চলে গেল এই তেতুল গাছের কথা শুনে আর কেউ আর তেঁতুল গাছ তলায় খেলতে যেত না তারপর থেকে তেঁতুল গাছ বড় বড় গাছের সাথে জড়িয়ে বিশাল আকার ধারণ করল ওখানে এখন সাপের বাস গ্রামের মানুষেরা আর কেউ যায় না মোটামুটি পাশে একটা পুকুর ছিল তাই ওর নাম হল মাঠপুকুরের তেঁতুল গাছ‌‌।







গদ্য কবিতা   
      উপাধি প্রাপ্ত শাল
  সুস্মিতা দে

আজ খুব শীত লাগছে
গায়ে চাদর টি মুড়িয়ে নে।
রাখা চাদর ঘরে
এই টি চাদর নহে ।
এই টি শাল বলে।
দেখি দেখি খুকি শাল কি?

এই শীতে শরীরে গরম দেয়
এই টি শাল সবাই অবাক চোখে
তাকিয়ে দেখে কি অপূর্ব শোভা
সুন্দর কারুকাজে শাল
মোলায়েম কতো?

এই খুকি কোথায়
পেলি শাল। বকবেনা
মাগো কাল  নদীর ধারে
গাছের নীচে হারিকেন
  আলোর তলায়
একজন বুড়ো মানুষ
বসেছিলতিনি আমাকে
  আমার গায়ে জড়িয়ে দেন
    আমি চাইনি মাগো ।
    তিনি কে জানো? তিনি হলেন
    স্বয়ং ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর
   মহাশয়ের কাছ থেকে পাওয়া
              এ শাল।

শাল টি কে ব্রিটিশ
সরকার সন্মানিত
করেছিলেন উপাধি সরূপ
আমি  তখন নদীর
তীরে বসে উনি দিয়েছিলেন।
গ্রামবাসী দেখে নিশ্চিত হন
বোঝেন উনি কেউ নয় তা
দয়ার  সাগর বিদ্যাসাগর
মহাশয়ের উপাধিপ্রাপ্ত শাল
খুকির শতো ছিদ্রো শাল দেখে
তিনি নিজের শাল দিলেন তবেই
তফাৎ কি? কে? 
দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর ।
জনহিতকর কর্ম সৃষ্টি করে ধর্ম ।

আত্মমগ্ন কবি কালীকৃষ্ণ গুহ ----- এক আলোকবর্তিকার সন্ধানে

বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :

-------------------------------------

 প্রবন্ধ -----  কবি ও কবিতা 

  --------------------------------------

    আত্মমগ্ন কবি কালীকৃষ্ণ গুহ  -----  এক আলোকবর্তিকার সন্ধানে 


            সৌম্য ঘোষ


 

                   কবিও আলোর সন্ধান করেন। ‘অন্ধকার হতে উৎসারিত আলো’র পথে যাত্রার ইঙ্গিত তিনি দিয়ে যান। একজন কবির ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র প্রথম কবিতার প্রথম শব্দই যদি ‘রক্তাক্ত’ হয় তবে আর বলার অপেক্ষা রাখে না কোন জটিল অন্ধকারাচ্ছন্ন ভগ্ন মন্থনের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত হয়ে চলেছে।  

তিনি কবি কালীকৃষ্ণ গুহ। উত্তর জীবনানন্দ কালের কবিদের মধ্যে  অন্যতম। 

             জীবনানন্দ লিখেছিলেন-  "মহাবিশ্বলোকের ইশারার থেকে উৎসারিত সময়চেতনা আমার কাব্যে একটি সঙ্গতিসাধক অপরিহার্য সত্যের মতো ; কবিতা লিখবার পথে কিছু দূর অগ্রসর হয়েই এ আমি বুঝেছি, গ্রহণ করেছি। এর থেকে বিচ্যুতির কোনো মানে নেই আমার কাছে। তবে সময়চেতনার নতুন মূল্য আবিষ্কৃত হতে পারে।“ ( কবিতা প্রসঙ্গে’, ‘কবিতার কথা’, নিউ স্ক্রিপ্ট, মাঘ ১৪১৯, পৃ. ৩৭ ) 

                 একজন কবি এই নতুন মূল্যবোধের চেতনাতেই অগ্রসর হন। কেননা সময় সমাজের সঙ্গে মূল্যবোধ ও পারিপার্শ্বিক সমাজ জীবন পাল্টে যেতে বাধ্য।কবি যেমন সময়ের কথা লিপিবদ্ধ করবেন তেমনি আপন মনগহনে স্বচ্ছন্দ বিচরণ করবেন। কালীকৃষ্ণ গুহের প্রকৃতির স্বপ্নিল নিকেতনে এক অনলস বিচারণের স্বাভাবিক প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। জীবনানন্দের সার্থক উত্তরাসূরী হিসেবে শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও কালীকৃষ্ণ গুহকে প্রতিষ্ঠা করা বোধহয় শক্ত নয়। একজন দক্ষ কবির প্রকৃত কাজ সদা অলিখিত পাতা ভরে ফেলা, লিখিত পাতায় লেখা নয়। এই লিখিত পাতা বলতে আমি বলতে চেয়েছি অনুকরণ । তবে প্রভাবিত হওয়া স্বাভাবিক। চেতনে অবচেতনে কাব্যপাঠের মধ্য দিয়ে যে কবিসত্তা গড়ে ওঠে সেখানে অনিবার্য ভাবে প্রিয় কবির শব্দবন্ধন, চিত্রকল্প উঁকি দেয়। কবিকে সচেতন ভাবেই সেই চেনাপথ অতিক্রম করে অচেনা, অজানা গলিপথ থেকে রাজপথে যেতে হয়। আর এই যাওয়ার পথ খুব সহজ নয়। জীবনানন্দ দাশকে সামনে রেখেই কালীকৃষ্ণ গুহ কাব্যক্ষেত্রে নেমেছেন, বেশ কিছুক্ষেত্রে সফল ভাবে নিজস্ব অতিক্রম করেছেন- কাব্যপাঠে এমনই অভিজ্ঞতা জানান দেয়।

                     কবিতায় তিনি কী লিখতে চান, দেখে নিতে পারি নিজস্ব বক্তব্য থেকেই --

-“ অজস্র স্মৃতির আলোড়ন ও নির্জ্ঞান নিয়ে অভিজ্ঞতার পুরাণ ও অন্তর্নিহিত ভাঙন নিয়ে ক্ষতবিক্ষত অবচেতন নিয়ে নারী ও শূনতার মুখোমুখি দাঁড়ানোর কম্পন নিয়ে নিরন্তর নাক্ষত্রিক উৎসবের কিছু অন্ধকার নিয়ে যে জীবন কাটিয়ে এসেছি তা থেকে সঞ্চারিত কিছু বেদনাবোধ আর কিছু নীরবতার প্রতিবেদন ছাড়া অধিক কিছু পাবার নেই এইসব লেখায়।“ ( ভূমিকা, শ্রেষ্ঠ কবিতা, দে’জ, পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ- ডিসেম্বর ২০১৩ )

            এই ‘বেদনাবোধ’ ও ‘নীরবতার প্রতিবেদন’ ছাড়াও তাঁর কবিতায় রয়েছে প্রকৃতিচেতনা। লাভ লোকসানের হিসেব নয় তিনি কবিতায় সত্য আবিষ্কারে মত্ত। জনপ্রিয় হতে চান নি, নিমগ্ন থেকেছেন আত্মপ্রেচষ্টায়, সেখানে বিচারণ এক সত্য- “ আমরা কবিতা লিখি, আমাদের ক্ষতি কিছু হয় না”( ‘ঝড়েশ্বর বাখরা’, ঐ , পৃ. ৩২)। কবিতাই কবির পরিচয়ের শ্রেষ্ঠ ধ্রুবক।     


                   লেখা শুরু করেছেন ছয়ের দশকে। ইতিমধ্যে বহুকাব্য প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কাব্যগুলি হল – ‘ রক্তাক্ত বেদীর পাশে’( ১৯৬৭), ‘ নির্বাসন নাম ডাকনাম’ ( ১৯৭২ ), ‘ হস্টেল থেকে লেখা কবিতা’ ( ১৯৮৪ ), ‘ হে নিদ্রাহীন’ ( ১৯৮৮), ‘ পিতামহ, খোয়াইয়ে এসেছি’ ( ১৯৯০), ‘ তোমার প্রবাহ, চৈতমাস’ ( ১৯৯১), ‘ ক্লান্তির ভিতরে এই শেষ’( ১৯৯৬), ‘ স্মৃতিহীনতার মধ্যে নিস্তব্ধ পুরাণ’ ( ১৯৯৯), ও ‘ বৃষ্টির ভ্রমণ’ ( ২০১২ )। কতগুলি পর্যায় ক্রমে আমরা তাঁর কাব্যপাঠে অগ্রসর হব।

               কবি কালীকৃষ্ণ গুহ প্রকৃতির অতলন্ত পরিবেশে মিশে থাকতে ভালোবাসেন। চেনা জানা প্রকৃতির নিবিড় গহীন গাঙ থেকেই তাঁর কাব্যস্বর উচ্চারিত হয়। এক নস্টালজিক মন মৃদু স্পর্শে ভাববিশ্বে রূপায়িত হয়। সেখানে তিনি আর কোন আড়াল খোঁজেন না। অবচেতন বিশ্বে নিজস্ব স্বর থেকে বহুদূরে প্রসারিত হয়ে যায়। প্রত্যেকেরই একটি নিজস্ব স্বদেশ থাকে। তাঁর কবিতায় একটা জার্নি আছে, সেখানে প্রাপ্তি বলে কিছু নেই শুধুই অনুভূতির এক গদ্যসত্তা বিরজামান-


“ রাত্রির ভিতর দিয়ে হেঁটে গেছে মানুষ, এইতো তার ভাষা –

তার অভিজ্ঞতা এই পাথরের মধ্যে আছে,

মৃত্যু এবং জন্মদিন আছে, প্রিয়তমা নারীর মুখ আছে, রাগিণী আছে।

এইখানে এসে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে, সময়ের অস্পষ্ট শিলালিপি

পড়ে দেখতে ইচ্ছে করে, বলতে ইচ্ছে করে :”

( ‘পর্যটন’, ঐ, পৃ. ২১ )

                স্বপ্ন, বিচ্ছেদ, বিশ্বাস ও বিশ্বাসভঙ্গ সমস্তকেই তিনি প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন। আকাঙ্ক্ষিত মন নিয়ে অন্ধকারে বিরজামানসত্তা এগিয়ে আসে আলোর পথে। কখনও বা শুধু স্মৃতি নির্ভর জীবনসমুদ্র মন্থনে অগ্রসর। তাঁর স্মৃতি রোমন্থনে একাকিত্ব আছে কিন্তু একাকিত্ব থেকে বাঁচতে প্রকৃতিই বড় সহচার্য হয়ে উঠেছে। 

        নগর কলকাতার নিয়মতান্ত্রিক জীবনের ক্লেদ গ্লানিই হয়ে উঠেছে কবিতার সত্য। কিন্তু এই ক্লান্তবিধুর অবস্থা থেকে কবি পরিত্রাণ চেয়েছেন। নৈঃশব্দের অন্তঃলোকে বিচরণ করতে চেয়েছেন-


“ আজ সন্ধায় আবার তোমার কাছে কেন ফিরে এলাম, কার্তিকের মাঠ ?

গত দশবছর ধরে অনেক তর্কের পর তোমার এইসব পুরোনো

গাছগুলির কাছে কেন ফিরে এলাম আবার ?”

( ‘কার্তিকের মাঠ’, ঐ, পৃ. ৩০ )

            কবি তো জীবনের জয়গানই গেয়ে চলেন। জীবনের ত্রিবিধ স্বরান্তের ভাষ্য লিপিবদ্ধ করেন। কবিতার শুরুই হয়েছিল বাল্মীকির যে শ্লোক দিয়ে সেখানে ছিল প্রকৃতির দৃশ্য। সে কাল থেকে একাল অবধি বহু কবি বৃক্ষকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। তারপরও একজন কবি কেন বৃক্ষকে নিয়ে কবিতে লিখবেন ? আসলে কবি তো কবিতায় নিজের অনুভূতিকেই ব্যক্ত করতে চান। হৃদয় মন্থনজাত সে অনুভূতি অবশ্যই পৃথক। তাই বহু কবিতার পরেও কবি ‘বৃক্ষ’ কবিতায় ব্যক্ত করেন-


“ তোমাকে নিয়ে অনেক কবিতা লেখা হয়েছে, বৃক্ষ।

বলা হয়েছে, তোমার পবিত্রতার ভিতর থেকে নিয়তি মাথা তোলে, তার

পুরোনো মুখ তোলে।

অজস্র কবির কাছে ঋণ রয়েছে তোমার।

বৃক্ষ, আজ তুমি আমার ঘুমের মধ্যে শান্ত ডালপালা ছড়িয়ে দাও

যথাযথ নির্জনতা দাও

( ‘বৃক্ষ’, ঐ, পৃ. ৩২ )

         জীবনানন্দ হেমন্ত সচেতন, কালীকৃষ্ণ গুহের কবিতায় শরৎকালের প্রাধান্য। তবে এখানেও রয়েছে ক্লান্তি ও অন্ধকারের ইঙ্গিত। তবে এই ক্লান্ত জীবনের মধ্যেই রয়েছে নতুনের হাতছানি। পরিশীলিত ভূগোলের মধ্যেই কবি সুখের সন্ধান করেছেন। সে অনুসন্ধান এসেছে নবজাতকের আগমনের মধ্য দিয়ে। কখনও আবার চিত্র আঁকেন। সে চিত্রে মিশে থাকে ক্ষয়িষ্ণু সময় ও মূল্যবোধের ধূসর পাণ্ডুলিপি।  আর স্বগত আত্মকথনে উচ্চারিত হয় –


“ নিঃসঙ্গ দিন যায়। দীর্ঘ দুপুর

গ্রীষ্ম

ধুলো উড়িয়ে আনে।

শিশুবর্ষের এক একটি দিন যায় – নিঃসঙ্গ ধুলো –ওড়া দিন

শুধু মাঝে মাঝে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বোদলেয়রের মুখ,

র‍্যাঁবোর মুখ, আর “

( ‘গ্রীষ্মের দুপুর’, ঐ, পৃ. ৩৭ )


               কবিতার সত্যে, ব্যক্তি অনুভূতির সত্যে, আলোর সন্ধানেই  আনন্দধারা বর্ষিত হয়। সমস্ত মুছে দিয়ে শুরু হয় নতুন জীবন –


“ বৃষ্টি আনে প্রতিশ্রুতি, খণ্ড অন্ধকার

বৃষ্টি আনে ভয় আর দৃশ্যের আড়াল আর বিলুপ্ত শৈশব

বৃষ্টি আনে রজস্বলা রমণীর গান, পরচুলা

বৃষ্টি আনে স্বগতোক্তিময় এক উন্মাদ রচনা

বৃষ্টি আনে অন্ধত্বের পাশাপাশি বেড়ে ওঠা দেবদারুগাছ”

( ‘তোমার প্রবাহ, চৈত্রমাস’, ঐ, পৃ. ৬৩ )


                  কালীকৃষ্ণ গুহ লেখেন –“ অদ্ভুত এক ঝিঁঝির ডাক নির্ধারিত করে দিচ্ছে এই সময়কে।“ ( ‘এই গ্রহ’, ঐ, পৃ. ৭২ )

                 আনন্দসত্তা পূর্ণ বিকশিত হয়েছে প্রকৃতির মধ্যেই –

“ জ্যোৎস্নায় ভরে গিয়েছে মাঠ গাছপালা বাড়িঘর সঙ্ঘ অতিথিশালা

জ্যোৎস্নায় ভরে গিয়েছে দীর্ঘ সব শালবন

জ্যোৎস্নায় ভরে গিয়েছে ব্রিজ মূর্তি অগণিত ধর্ম- পাতাকা

জ্যোৎস্না এসে পড়েছে আমাদের পাপের ভিতরে

জ্যোৎস্না এসে পড়েছে আমাদের পাপপুণ্যের অতীত সব জিজ্ঞাসায়

জ্যোৎস্না এসে পড়েছে আমাদের স্মৃতিতে, কামনাবাসনায়”

( ‘ সুদূর অতীতকালের মধ্য থেকে কাক ডাকছে’, ঐ, পৃ. ১২৭ )


           কবি সেখানে মিশে যেতে চান-

“ যখন কিছু ভেবে- ওঠার আগেই বৃষ্টিতে ভিজে যাও তুমি

যখন তোমার অতীতকালও বৃষ্টিতে ভিজে যায়

যখন মল্লার গাওয়া হয় নিরবধিকালের নৈঃশব্দ্যকে বোঝানোর জন্য

তখনো আঘাত আসে।“

( ‘আঘাত’, ঐ, পৃ. ১৩৩ )


                    কাব্যযাত্রায় তিনি জীবনানন্দের দ্বারা প্রভাবিত হলেও অচিরেই নিজস্ব পথ খুঁজে নিয়েছেন। ফলে শব্দসজ্জা, চিত্রকল্প ও উপস্থাপন রীতিতে এসেছে অভিনবত্ব- এখানেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, এখানেই তিনি কালজয়ী শিল্পী।


__________________________________________


লেখক :----  অধ্যাপক সৌম্য ঘোষ । চুঁচুড়া। হুগলী।