বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 30/09/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 30/09/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 30/09/2020


বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :
  কবিতার রূপকল্প :  পর্ব  ৯

বাংলা কাব্যে মহাকাব্য ও গাথাকাব্য ধারা

                        সৌম্য ঘোষ

             " মেঘনাদবধ কাব্য" রচিত হবার পর বাংলা কাব্যজগতে সাহিত্যিক কাব্যধারার প্রবর্তন দেখা যায়।  ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যায় পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত ছিল । সেই সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৮৩৮--১৯০৩) রচিত "বৃত্রাসংহার কাব্য" দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল এর আগে তিনি লিখেছিলেন বীর রসাত্মক কাব্য "বীরবাহু"। মধুসূদনের "মেঘনাদবধ কাব্যে" রাবণ দৈব চক্রান্ত ও বিধিলিপি বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে । "বৃত্রাসংহার কাব্যে " ইন্দ্রের বিরুদ্ধে দানবরাজ বৃত্রাসুরের বিদ্রোহের কাহিনী । স্বর্গ নির্বাসিত নৈমিষারণ্য বাসিনী শচী যেন অশোক কাননের সীতা । রুদ্রপীড় অনেকটাই ইন্দ্রজিতের ধাঁচে পরিকল্পিত। সমসাময়িক সমালোচকেরা এমনকি কিশোর রবীন্দ্রনাথ "বৃত্রসংহার "এর প্রশংসা করেছিলেন।

                  তৎকালীন সময়ের আর এক উল্লেখযোগ্য কবি নবীনচন্দ্র সেন ( ১৮৪৭-১৯০৯) "পলাশীর যুদ্ধ " নামে এক মহাকাব্য লেখেন । পাঁচ সর্গে সমাপ্ত এই কাব্যের নায়ক মোহনলাল । নবীনচন্দ্র সেন কাল্পনিক ইতিহাস অবলম্বনে এক আখ্যান কাব্য লেখেন "রঙ্গমতী "। যাকে সুকুমার সেন বলেছেন, ' পদ্যে লিখিত উপন্যাস' । নবীনচন্দ্রের উল্লেখযোগ্য রচনা------ রৈবতক, কুরুক্ষেত্র এবং প্রভাস । পুরান অবলম্বনে এই ত্রয়ী মহাকাব্য কে সাহিত্য সম্রাট আখ্যা দিয়েছিলেন,  "Mahabharat of the nineteenth century".
নবীনচন্দ্র সেন বলতেন,   " কবিরা কালের সাক্ষী, কালের শিক্ষক " ।

                     একটি পর্যায়ের পর এই বীর রসাত্মক মহাকাব্যের ধারা লুপ্ত হয়ে যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম আদর্শ কবি কায়কোবাদ ( ১৮৫৮--১৯৫২) । তিনি প্রথম জীবনে লিখেছেন গীতিকাব্য।  দ্বিতীয় পর্যায়ে মহাকাব্য এবং তৃতীয় পর্যায়ে নানা ধরনের কাব্য । কায়কোবাদ তাঁর কবিতায় মুসলমানগণের অতীত গৌরব এর জন্য শ্লাঘা বোধ করেছেন । আবার বর্তমান পতনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাঁর অন্যতম রচনা------ অশ্রুমালা, শিব মন্দির ,অমিয়ধারা, শ্মশান ভস্ম ,মহরম ,শরীফ উল্লেখযোগ্য। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন অনল প্রবাহ কাব্য । মুসলমানের দুরবস্থার জন্য বেদনা এবং শাসক ইংরেজদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ। এই ক্ষোভের কারণে কাব্যটি বাজেয়াপ্ত হয় । সেই সময়ে আরও একজন উল্লেখযোগ্য কবি মোজাম্মেল হক ( ১৮৫৮--১৯৩৩) । তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি হযরত মোহাম্মদ কাব্য ‌ ।

       """""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
        বিহারীলাল চক্রবর্তী এবং অন্যান্য
       """"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
         মহাকাব্য ধারার ঈষৎ পর থেকে প্রায় সমান্তরালভাবে একটি স্বতন্ত্র কাব্যধারা প্রবাহিত হতে শুরু করল। যাকে রূপককাব্য- গাথাকাব্য ধারা বলা হয়। এই কাব্য গুলিতে বস্তুতন্মতার দিক থেকে সরে এল আত্ম- তন্ময়তার দিকে। এই ধারার প্রধান কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-- ১৮৯৪) এবং দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর । তৎকালীন সময়ে প্রধান কবি ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী। তাঁর মনের চারিদিক ঘিরে যে" কবিত্বের একটি রশ্মি মন্ডল" ছিল তা-ই তাঁকে কাব্য রচনায় অনুপ্রাণিত করত । তাঁর কাব্য ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং অন্তরঙ্গ। বিহারীলালের প্রথম কাব্য "সংগীত শতক ও বাউল বিংশতি " মূলত: নিধু বাবু ও রাম বসুর ধারায় সংকলিত‌ ।  বিহারীলাল চক্রবর্তীর প্রধান কাব্যগুলি ---------  নিসর্গ সন্দর্শন ,বঙ্গসুন্দরী, সারদামঙ্গল এবং সাধের আসন । বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কাব্য "সারদামঙ্গল"। তাঁর কবিতার ভাষা বাগ্মিতাময় নয় , lyrical ballads - ওয়ার্ডসোয়ার্থ যেমন, তেমনি বিহারীলালের কবিতার ভাষা মানুষের মুখের ভাষার কাছাকাছি।

                      বিহারীলালের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি নয়, কিন্তু নিজ উদ্যোগে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য অধ্যয়ন করেন এবং অল্প বয়সেই কবিতা লেখা শুরু করেন। তাঁর পূর্বে বাংলা গীতিকবিতার ধারা প্রচলিত থাকলেও এর যথার্থ রূপায়ণ ঘটে তাঁর হাতেই। তিনি বাংলা কাব্যের প্রচলিত ধারার রদবদল ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার প্রবর্তন করেন। এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্য দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। তাঁর রচনায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য কবিদের প্রভাব থাকলেও নিজস্ব রীতিই ফুটে উঠেছে। বিহারীলাল বস্ত্ততন্ময়তার পরিবর্তে বাংলা কাব্যে আত্মতন্ময়তা প্রবর্তন করেন। বাংলা কবিতায় তিনিই প্রথম কবির অন্তর্জগতের সুর ধ্বনিত করে তোলেন। তাঁর কবিতায় রূপ অপেক্ষা ভাবের প্রাধান্য বেশি। প্রকৃতি ও রোম্যান্টিকতা, সঙ্গীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষা এবং  তৎসম ও  তদ্ভব শব্দের যুগপৎ ব্যবহার বিহারীলালের কাব্যকে করেছে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তাঁর কবিতার বিষয়-ভাবনা, প্রকাশভঙ্গির অভিনবত্ব, অনুভূতির সূক্ষ্মতা, সৌন্দর্য প্রকাশের চমৎকারিত্ব, ছন্দ-অলঙ্কারের অভূতপূর্ব ব্যবহার অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পঁয়ত্রিশ বছরের কবিজীবনে বিহারীলাল অনেক গীতিকাব্য ও রূপককাব্য রচনা করেছেন।

                        বিহারীলালের রচনাবলির মধ্যে স্বপ্নদর্শন (১৮৫৮), সঙ্গীতশতক (১৮৬২) বন্ধুবিয়োগ (১৮৭০), প্রেমপ্রবাহিণী (১৮৭০), নিসর্গসন্দর্শন (১৮৭০), বঙ্গসুন্দরী (১৮৭০), সারদামঙ্গল (১৮৭৯), নিসর্গসঙ্গীত (১৮৮১), মায়াদেবী (১৮৮২), দেবরাণী (১৮৮২), বাউলবিংশতি (১৮৮৭), সাধের আসন (১৮৮৮-৮৯) এবং ধূমকেতু (১৮৯৯) উল্লেখযোগ্য।          নিসর্গসন্দর্শন  কাব্যে বিহারীলাল বঙ্গপ্রকৃতির শোভা অপূর্ব ভাব-ভাষা ও ছন্দ-অলঙ্কার প্রয়োগের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। বঙ্গসুন্দরী  কাব্যে কয়েকটি নারী চরিত্রের মাধ্যমে তিনি গৃহচারিণী বঙ্গনারীকে সুন্দরের প্রতীকরূপে বর্ণনা করেছেন। সারদামঙ্গল কাব্য বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ রচনা। এটি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি স্তম্ভস্বরূপ। এর মাধ্যমেই তিনি উনিশ শতকের গীতিকবিদের গুরুস্থানীয় হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ এ কাব্যটি পড়ে নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছেন এবং বিহারীলালকে আখ্যায়িত করেছেন ‘ভোরের পাখি’ বলে।

    
                    বিহারীলালের পথের পথিক সুরেন্দ্র নাথ মজুমদার (১৮৩৮--১৮৭৮) । তিনি গার্হস্থ্য প্রেমের কবি। সমসাময়িক ছিলেন কবি অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী ( ১৮৫০--১৮৯৮) । তাঁর কবিতায় ছিল শেক্সপিয়ার বায়রনের সঙ্গে বৈষ্ণব পদাবলীর কাব্যগীতি পরম্পরা । তাঁর কয়েকটি গান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্মিকী প্রতিভা য় অন্তর্গত করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্ৰজ দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের "স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্য" বাংলা ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ রূপককাব্য । রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, " স্বপ্নপ্রয়াণ যেন একটা রূপকের অপরূপ রাজপ্রাসাদ ।" রূপক কাব্যধারায় আরো লেখা হয়েছিল হেমচন্দ্রের "আশাকানন এবং ছায়াময়ী।" এই ধারার  আরেক উল্লেখযোগ্য কবি শিবনাথ শাস্ত্রী ( ১৮৪৭--১৯৯১) । তিনি লিখেছিলে "নির্বাসিতের আত্মবিলাপ "এবং "ছায়াময়ী পরিণয়" । রাজকৃষ্ণ রায় (১৮৫২--১৮৯৪) লিখেছিলেন নয় সর্গে লেখা গাথাকাব্য "নিভৃত নিবাস ।" তিনি বিহারীলালের আদর্শে কবিতা লিখতেন। ঈষৎ পরবর্তী সময়ে কবি অক্ষয়কুমার বড়াল (১৮৬০--১৯১৯) চারটি কবিতা সংকলন রচনা করেছিলেন ------- প্রদীপ, কনকাঞ্জলি, ভুল এবং শঙ্খ । অক্ষয় কুমার বড়াল ও ছিলেন বিহারীলালের অনুগামী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  দিদি স্বর্ণকুমারী দেবী (১৮৫৬--১৯৩২) সাহিত্যের সব শাখাতেই অনায়াসে বিচরণ  করেছিলেন । সেই সময়ের আর একজন মহিলা কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী (১৮৫৮--১৯২৪) স্বর্ণকুমারী থেকেও উচ্চমানের কবি । ঈষৎ রবীন্দ্র পূর্ববর্তী কাল থেকে অনেক মহিলা কবি আত্মকথা লিখেছেন, লিখেছেন গীতিকবিতা । এমনি উল্লেখযোগ্য স্বর্ণকুমারী, প্রসন্নময়ী ,গিরীন্দ্রমোহিনী । উনবিংশ শতাব্দীর মহিলা কবিরা সকলেই ছিলেন গৃহবধূ । সংসারের সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে বসে তাঁরা জীবনের সৌন্দর্য আনন্দ-বেদনা কে প্রকাশ করেছিলেন তাঁদের আন্তরিক হৃদয়বত্তার জোরে। তাঁদের সরল উচ্চারণ অনেক সময় মর্মস্পর্শী হয়েছে ।।




অস্থিরতা
            সাফরিদ সেখ

ভূলোক দূলোক সর্বময় এক
অদম্য পরাক্রমী অস্থিরতা।
যেখানেই দৃষ্টি যায় শুধুই
অনিশ্চয়তা, কালমেঘের ঘনঘটা।
মাঝ দরিয়ায় যে নাবিক গমে
তার কেবলই অজানা আশঙ্কা।

আমরা এখন অনিশ্চিত দুর্বোধ্য
লোকালয়ের বাসিন্দা,নাগরিক
হতাশা,না পাওয়ার বেদনা
কেবলই জীবনকে দংশন করে।

মূল্যবোধ আজ সিন্ধুকে বন্দী
বিশ্বাস চাদর মুড়ে ঘুমাই এখন।
ভাইয়ের বিপদে ভাই থাকে না,
পিতা কন্যার অপমানে নিশ্চুপ।

মানুষের জানার পৃথিবী খুবই ছোট
ভাই জানতে পারে না বোনের হৃদয়।
স্ত্রী জানতে পারে না স্বামীর মন।
তবুও মেকি ভালোবাসার বন্ধনে বন্দী।

বিশ্বের সব কিছুই আজ অস্থিরতার
দুরন্ত প্রতাপে ক্ষত বিক্ষত,ভঙ্গুর।







কবিতা
        আসছে পুজো
                 মিনতি গোস্বামী

পুজো আসছে পুজো আসছে
বলছে হেসে কাশ
বলছে হেসে শিশির  সিক্ত
ভোরের দুর্বাঘাস।

নীল আকাশে সাদা মেঘের
ভাসিয়ে দিয়ে ভেলা
আসছে দেবী মর্ত‍্য ধামেতে
নেইতো আর বেলা।

চারটে দিন মায়ের কাছে
হাজির হবে সবে
খুশি আনন্দে মাতবে সবে
মাতবে কলরবে।

নতুন জামা নাইবা হলো
না থাক হাতে অর্থ
মায়ের কাছে জানাবো সব
করবো না অনর্থ।

ধনী গরীব করেছে যারা
হোক তার বিচার
বিচার হলে জানবোই মা
আমাদের সবার।




এসো হে মহাত্মা
             বিপ্লব গোস্বামী

এসো এসো হে মহাত্মা
হে অহিংসার পূজারী ।
আজ হিংসার ভারত মাঝে
বড় দরকার তোমারি।

চারিদিকে জাতি হিংসা
অমানবতা হানাহানি,
এসো হে শান্তির-দূত
নিয়ে শান্তির বাণী।

আজ দিকে দিকে হিংসা
অন‍্যায়-অধর্ম-অবিচার ,
অহিংসার বাণী নিয়ে
হে মহা মানব তুমি, এ দেশে
এসো এসো আরেকবার।







কবিতা :
যৌথ পরিবার!
               বিশ্বজিৎ কর

যৌথ পরিবার একাত্মার-
মুক্ত হিমেল হাওয়া,
যৌথ পরিবার সমস্বরে -
আন্তরিকতার গান গাওয়া!
যৌথ পরিবার মানেই -
'দশে মিলি করি কাজ',
যৌথ পরিবার মিষ্টিমধুর -
পরাজয়েও নেই লাজ!
যৌথ পরিবার অভাবেও -
এক আঁচল সুখ,
যৌথ পরিবার মনের মতো -
দৃঢ় একতার মুখ!




       জীবন  সংগ্রাম      
                 হামিদুল ইসলাম
                   
তোমার জন‍্যে যুদ্ধে জিতি
প্রতিটি যুদ্ধে সংগ্রামের জয়
তোমার জন‍্যে সুদূর সাগর পাড়ি দিই
জীবন সংগ্রাম হয়ে থাকে অক্ষয় ।।

তোমার জন‍্যে প্রতিদিন সংগ্রাম করি
সংগ্রামী সমুদ্র হয়ে যাই পার
জীবনের ঘাটে নোঙর করি তরী
সংগ্রামের বার্তা নিয়ে তোমার কাছে ফিরে আসি বারবার ।।

তোমার জন‍্যে আকাশে উড়ি
প্রতিদিন সংগ্রামে ঘর্মাক্ত কলেবর
সংগ্রামী জীবন ব‍্যস্ত সংগ্রামে
তুমি রাখো না খবর  ।।

তোমার জন‍্যে অস্ত্র ধরি
বিভেদের আগুনে দিই কোপ
যারা আগুন নিয়ে প‍্রতিদিন খেলা করে
সে আগুনে পুড়ে ফেলি জাতপাতের জঙ্গল ঝোপ  ।।

মৃত‍্যুকে তুচ্ছ করি
জীবনে সংগ্রাম আছে বলে
তোমাকে পেয়ে যাই সংগ্রামের মাঝে
সংগ্রামই জীবন তাই ফিরে আসি সংগ্রামী বলে ।।





আহ্বান
    অঞ্জলি দেনন্দী, মম

আলোর পথিক, এসো হে!
অশেষ আকাশ হয়ে হেসো হে!
আমার অপেক্ষিত দু-আঁখি।
হবেই হবে লাকি,
তোমার প্লাবনে ভেসে।
আমার দৃষ্টি অবশেষে
যেন তোমার পথের শেষে
অক্লেশে মেশে,
ভালোবেসে।
আঁধারে মোরা নব চির বিশ্ৰাম।
আলিঙ্গনে চির তরে রবে মোদের চারার্ম।
মোরা লভিব অনন্ত চার্ম।






নদী
   আব্দুল রাহাজ

নদী তুমি বয়ে চলেছে
আদি দিগন্তের পথ ধরে।
তোমার ঢেউয়ের আওয়াজে প্রকৃতি পায় তার মাধুর্য।
নদী তুমি যেন চির বসন্তের প্রতীক
যা তুমি সময়ে সময়ে প্রমাণ করেছে।
নদী এভাবে তুমি আপন বেগে চলো
আর মানুষের মনটাকে জয় করো।




শুধু তোর অপেক্ষা
               অনাদি মুখার্জি

কোনো এক বৃষ্টি ভেজা দুপুরে,
পথের ধারে থাকবো আমি দাঁড়িয়ে!
       শুধু তোর অপেক্ষায় !
তুই আসবি পরি হয়ে ধরবি ,
   স্পর্শ করবি আমার শুধু হাত!
তোর সাথে হারিয়ে যেতে যায় ,
নগরের সমস্ত পথ হবে তোর আমার!
তোর যত মনের কথা বলবি আমার সঙ্গে ,
ইচছে ডানা মেলে শুনবো আমি কান পেতে !
বৃষ্টি জল মেঘে দেখবো তোর ঐ ভিজে ঠোঁট ,
তখন আকাশের বিজলি চমকে উঠবে,
তখন ভয়ে তুই আমাকে জড়িয়ে ধরিস ,
তোর  স্পর্শ পেয়ে সারা জীবনের ক্লান্তি দূর হবে আমার !


আমার গাঁয়
        গোপাল বিশ্বাস

আমার গাঁয় উত্তর কৃষপুর
ভোরের আলোক খেলা
পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে
আনন্দে কাটে বেলা  l

কৃষকের ফাতলা মাথায়
রোয়ায় ধানের চারা
মেঠো পথে বাউল গায়
খুশির বাঁধন হারা   l
            
খোয়াই নদীর মিষ্টি বাঁকে
ধবল বক পাখনা মেলে
নৌকো চলে স্রোতের টানে
জাল ফেলে জেলে  l

ডাঙায় হাসে সোনালী ধান
গোলায় ভরে ওঠে
কৃষক --হৃদয় জুড়ে
লাল গোলাপ ফুটে  l

তুলসী তলায় সন্ধ্যা নামে
ধূপ বাতির গন্ধ
গ্রাম্য বঁধু মুচকি হেসে
মুখটি তুলে ছন্দ  l

ঝিলের মাঝে কলমী শাক
মাথায় তুলে নাচে
গ্রাম্য মেয়েটি অবাক চোখে
অকারণে হাসে   l

আমার গাঁয় উত্তর কৃষ্ণপুর
সবুজ সবুজ মেলা
পুকুর ডোবায় শ্যাপলা ফুল
দোলছে সারা বেলা  l

গাঁয়ের মানুষ সোজা সরল
মোটা কাপড় ভাত
হাসি খুশিতে দিন কাটায়
সুখ দুঃখে এক সাথ  l



       বুমেরাং
  ডঃ রমলা মুখার্জী

লোভ-লালসায় মত্ত মানুষ হারিয়ে ফেলছে বিবেক-চেতন-
জিগীষার পিছনে ছুটেও ধুলায় লুটায় জয়ের কেতন।
জালিয়াতির জাল পেতে সে ভাবছে কিনবে বসুন্ধরা-
বুমেরাং হয়ে শেষে সেই জালতেই পড়ছে ধরা।
খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে দেদার,খাচ্ছে  জাতির বংশধর.....
দেশের ক্ষতি,দশের ক্ষতি,মানুষ বোকা,স্বার্থপর।
জাত-ধর্মে বিবাদ করে মরছে মানুষ নিরন্তর.....
বাহির-মনের দূষণ থামাও, শোধন কর অন্তর-তর।





কোথায় অন্ত
      এমাজদ্দিন সেখ

নাই বিদ্যাসাগর , শরৎ ও নেই !
রামমোহনের মহত্বও বুঝি শেষ !
তাই হাজার নির্ভয়া , আসিফা , মনীষা  ....
ধর্ষিতা - খুন হতে নিত্য  দেখছি নির্নিমেষ !
দাগ কাটেনা বিবেক কোনো , নেইকো অনুভূতি  !
মনুষ্যত্বহীন ক্লীব সমাজ বাঁধন টিকবে  কতদিন  ?
ধনোন্মত্ব শোষণ সর্বস্ব  সমাজ  নির্মমে কাড়ে ;...
প্রেম -  প্রীতি -  স্নেহ -শ্রদ্ধা সুকুমার বৃত্তি যতো !
জানালা পানে চেয়ে আছি একবুক  আশে ...
নতুনের পানে যারা জীবনের গান গায় ,স্বপ্ন দেখে ...






হিসেব দিতে হবে
            মোঃআলিউল হক

দিন দিন করে চলেছো ভুল
তাই পুড়ছে কুশ পুতুল....

পুড়বে না?
একশো বার পুড়বে
আজ চতুর্দিকে জ্বলন ধ'রেছে যে!

জঘন্য অপরাধের দিকে তাকাও
মানবিক মন নিয়ে একবার দেখো
অপরাধের সব রেকর্ড তোমার যুগে
কোনটাকে  আঙুল দিয়ে দেখাই
মশাই  কিছুই তো বাদ নাই!!!

অন্ধত্বের পর্দা এঁটে বসে আছো আরামে?
আসছে শেষের  দিন
এই মাটিতে দাঁড়িয়ে
হিসেব দিতেই হবে সেদিন।।



কবিতা:
           সিঁটিয়ে প্রহর
               আসরাফ আলী সেখ
            

আকাশ কানে কানে
বলে বাতাস কে , বলো না কেউ কে ,
সিঁটিয়ে সবাই ; কখন
যে , কী হয় - কে জানে!

বাতাস বলে মেঘের
কানে কানে , বলো না
ভায়া! কারো কানে ,
কি হয় , দেখা যাক !!
তার পর না‌ হয় হবে ;

মেঘের পেট‌ গুড় গুড়
করে , ভারি হয়ে ওঠে
পেট ; জল কণার কানে কানে বলে কি
যে বলি ভাই তুমি যেন
বলো না , কারো সনে ! কি যে হবে কে জানে!

জল ফোঁটা, ফোলা ফোলা গালে চলে
সমুদ্রের ধারে ,

মালিক মালিক ,কি
যে  হয় কে জানে !
সিঁটিয়ে সবাই আমার
টা যদি কেও শোনে ,

আমার টুকু হলে ই চলে যায় কার দায়
কে নেয় ,

বজ্র পাত শোনে সব ,
রেগে মেগে ডেকে
ডেকে দেয় , জল  কণা
পড়ে যায় ,সাগর তোলে হাই বলে ছিলি
মনে মনে , কার দায় কে নেয় চল জীবন
ভাসায় ,

প্রহর গুনে যায়
ছাড় কেও না
পায় , কানে মনে
রাষ্ট্র চলে নিশি দিন
জল কণা থামে না
ঝোপ বুঝে চলে সেও
বজ্রপাতের ধ্বনি কখন তার মনে মনে
কানে কানে শুনি ।।















মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 29/09/2020

Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 29/09/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 29/09/2020


"উপকন্ঠ প্রাত্যহিক সাহিত্য পত্রিকা"
________________________________________
       বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :
_________________________________________

     কবিতা র রূপকল্প -- পর্ব : ৮
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
              সৌম্য ঘোষ
""""""""""""""""""""""""""""""""'''''''''''""""""""""""""""'''''''''""""""""             
( বিদ্রোহী কবি -- মধুসূদন দত্ত : ফিরে দেখা 
               ---- শেষ অংশ  )


                      তাঁর পরবর্তী কাব্য ব্রজাঙ্গনা । ব্রজ নারী রাধা এখানে মানবী। Mrs. Radha. এই কাব্যে তিনি মিশিয়েছেন নিধুবাবু ,রাম বসু, হরি ঠাকুরের গানের ভাব ।
   
  " কি কহিলি কহ ,  সই          শুনি লো আবার--
                           মধুর বচন।
    সহসা হইনু কালা,            জু্ড়া এ প্রাণের জ্বালা
           আর কি পোড়া প্রাণ পাবে সে রতন।
    মধু যার মধু ধ্বনি         কহে কেন কাঁদ, ধনি,
            ভুলিতে কি পারো তোমা শ্রীমধুসূদন।"

তাঁর অসামান্য রচনা আত্মবিলাপ এবং জন্মভূমির প্রতি। 

            " সেই ধন্য নরকুলে,
              লোকে যারে নাহি ভুলে,
 মনের মন্দিরে সদা           সেবে সর্বজন,---
             কিন্তু কোন গুণ আছে,
             যাচিব  যে তব কাছে,
 হেন অমরতা আমি           কহ,গো , শ্যামা জন্মদে!

এটি তাঁর প্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত উচ্চারণ।  তিনি মনে করতেন অমিত্রাক্ষর ছন্দে নাটক না লিখলে বাংলা নাটকের শ্রীবৃদ্ধি হবে না । পরবর্তীকালে তিনি লিখেছিলেন চতুর্দশপদী কবিতাবলী । সনেটের বাংলা নাম তিনি দিয়েছেন চতুর্দশপদী কবিতা।  বাংলা সনেটের প্রবর্তক তিনি স্বয়ং। পেত্রার্ক ও মিল্টনের গঠনশৈলী কে আশ্রয় করে রচিত হয়েছে এইসব সনেট । 

          " বিসর্জিব আজি, মাগো, বিস্মৃতির জলে
           ( হৃদয়-মন্ডপ, হায়, অন্ধকার করি !)
           ও প্রতিমা! নিবাইল , দেখ , হোমানলে
             মন:কুন্ডে অশ্রুধারা মনোদুঃখে ঝরি !...
             এই বর, হে বরদে, মাগি শেষবারে,----
              জ্যোতির্ময় কর বঙ্গ ------- ভারত-রতনে !"


           ফরাসি দেশে বসে মধুসূদন দুটি অনুবাদ করেছিলেন ঈশপের হিতোপদেশ অবলম্বনে ফরাসি লেখক লা ফঁতেনের  কবিতার স্বাধীন অনুবাদ । এই নীতি গর্ভ কবিতা গুলি কোন কোনটির সঙ্গে লা ফঁতেনের সাদৃশ্য খুব ঘনিষ্ঠ।  তাঁর "হেক্টর বধ " Iliad   কাব্যের অনুবাদ । এটি গ্রিক থেকে অনূদিত কিন্তু তরজমা নয় ।

                          মধুসূদনের কৃতিত্ব এখানেই যে, তিনি যাকিছু রচনা করেছেন তাতেই নতুনত্ব এনেছেন। তিনিই প্রথম পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ বাংলা সাহিত্যে সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন। তখনকার বাংলা সাহিত্যে রচনার শৈলীগত এবং বিষয়ভাবনাগত যে আড়ষ্টতা ছিল, মধুসূদন তা অসাধারণ প্রতিভা ও দক্ষতাগুণে দূরীভূত করেন। ১৮৬০ সালে তিনি গ্রিক পুরাণ থেকে কাহিনী নিয়ে রচনা করেন পদ্মাবতী নাটক। এ নাটকেই তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ইংরেজি কাব্যের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার বরেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার এটাই প্রথম এবং এর ফলে তিনি বাংলা কাব্যকে ছন্দের বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহারে এই সফলতা তাঁকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করে এবং এই ছন্দে একই বছর তিনি রচনা করেন তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য। পরের বছর ১৮৬১ সালে রামায়ণের কাহিনী নিয়ে একই ছন্দে তিনি রচনা করেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি । এটি বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক মহাকাব্য। আর কোন রচনা না থাকলেও মধুসূদন এই একটি কাব্য লিখেই অমর হয়ে থাকতে পারতেন। এই কাব্যের মাধ্যমেই তিনি মহাকবির মর্যাদা লাভ করেন এবং তাঁর নব আবিষ্কৃত অমিত্রাক্ষর ছন্দও বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রামায়ণে বর্ণিত অধর্মাচারী, অত্যাচারী ও পাপী রাবণকে একজন দেশপ্রেমিক, বীর যোদ্ধা ও বিশাল শক্তির আধাররূপে চিত্রিত করে মধুসূদন উনিশ শতকের বাঙালির নবজাগরণের শ্রেষ্ঠ কবির মর্যাদা লাভ করেন। এক্ষেত্রে তিনি ভারতবাসীর চিরাচরিত বিশ্বাসের মূলে আঘাত হেনে প্রকৃত সত্য সন্ধান ও দেশপ্রেমের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, বাংলা সাহিত্যে তা তুলনাহীন।

                          মধুসূদনের কাব্যে এক ধরনের নারীবিদ্রোহের সুর লক্ষ করা যায়। তাঁর কাব্যের নায়িকাদের মধ্য দিয়ে যেন যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, অবহেলিত, আত্ম সুখ-দুঃখ প্রকাশে অনভ্যস্ত ও ভীত ভারতীয় নারীরা হঠাৎ আত্মসচেতন হয়ে জেগে ওঠে। তারা পুরুষের নিকট নিজেদের ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ এবং কামনা-বাসনা প্রকাশে হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। তাঁর বীরাঙ্গনা (১৮৬২) পত্রকাব্যের নায়িকাদের দিকে তাকালে এ কথার সত্যতা উপলব্ধি করা যাবে। এখানে জনা, কৈকেয়ী, তারা প্রমুখ পৌরাণিক নারী তাদের স্বামী বা প্রেমিকদের নিকট নিজেদের কামনা-বাসনা ও চাওয়া-পাওয়ার কথা নির্ভীকচিত্তে প্রকাশ করে। নারীচরিত্রে এরূপ দৃঢ়তার প্রকাশ বাংলা সাহিত্যে মধুসূদনের আগে আর কারও রচনায় প্রত্যক্ষ করা যায় না। মধুসূদনের এ সময়কার অপর দুটি রচনা হলো কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১) ও ব্রজাঙ্গনা (১৮৬১)। প্রথমটি রাজপুত উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত একটি বিয়োগান্তক নাটক এবং দ্বিতীয়টি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক গীতিকাব্য। এ পর্বে মধুসূদন দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ  নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এবং কিছুদিন হিন্দু প্যাট্রিয়ট (১৮৬২) পত্রিকা সম্পাদনা করেন ।



        
         ২৯শে জুন, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটিয়ে অমৃত ধামে যাত্রা করেন। মাত্র ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে । কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোডের গ্রেভ ইয়ার্ডে বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা, সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক , বাংলা মায়ের অন্যতম মেধাবী ও কৃতি সন্তান চির শান্তিতে শায়িত আছেন।।










সুখ
রঞ্জনা  রায়

নিজের মাঝে সুখ খুঁজে নিই
নিজের মাঝেই অ-সুখ
নিজের মনেই স্বপ্ন সাজাই
জোয়ার ভাটায় উন্মুখ

স্বপ্ন সবই ভাঙা ঝিনুক
পায়ের তলায় ফোটে
বৃহন্নলার স্বপ্ন শালুক
রক্ত ঝরায় ঠোঁটে ।

জ্যোৎস্না শুধু পালিয়ে বেড়ায়
তোর আমার দুটি বাড়ি
মাছ রাঙাদের মনের ডেরায়
ইচ্ছে ঘুড়ির ওড়া উড়ি ।

সুখ খুঁজতে বেরিয়ে পড়ি
গহন জলের ঘূর্ণি টানে
হিসেবি মন মাপছে  কড়ি
কে জানে গো সুখের মানে?





             বিবর্ণ পাতাবাহার
                   হামিদুল ইসলাম
                     
কবিতার জন‍্যে কবিতা লিখি
শব্দের মধ‍্যে লুকিয়ে থাকে ছন্দ
মনের শব্দগুলো কখনো দূরে বহুদূরে চলে যায়
আমরা থাকি অন্ধ  ।

কবিতারা এখন প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে আসে
মনের গভীরে জেগে ওঠে আকাশ
পেরিয়ে যাই শীলেদের বাগান শিফনবাড়ি
পূজো পূজো গন্ধে ভেসে বেড়ায় বাতাস ।

বাতাসের কানে কান পাতি
আমরা এখন ইতিহাস
জলে জলে ডুবে যায় জলনূপুর
হৃদয়ের চোরাবালিতে দোপাটি ফুলের সুবাস।

ফুলগুলো প্রতিদিন উড়ে যায়
প্রজাপতি হয়ে
উদ‍্যানের বসতি ভাঙে দেয়ালের কার্নিসে
রিক্ত নদী চলে যায় বয়ে ।

নদীর জলে জীবনকে খুঁজি
পেয়ে যাই মুক্তো
বিবর্ণ পাতাবাহার ঝরে পড়ে প্রতিদিন
প্রতিটি শিরায় শিরায় জমে ওঠে রক্ত ।





আমি একান্তই গ্রামের মেয়ে
                     সাফরিদ সেখ

আমি একান্তই গ্রামের মেয়ে
তোমাদের মতো কি আর পারি?
আমার মাথায় ওড়না, মৃদু স্বর
তোমাদের ওসবের বালাই নেই।

কপালে চশমা ,নিতম্বে জিন্সপ্যান্ট
চলার ভঙ্গি নাই বা বললাম।
বিলেতি ঢঙের বার তোমাদের বড়ই দরকারী
সেখানে তোমাদের কতই কারবার।

আমি কিন্তু তোমাদের মত স্মার্ট নয়
মুখে সিগারেট টানতে টানতে কথা বলি না।
উন্মুক্ত মাঠে একটু বসা আর উদার নীলিমার অবলোকন।
যা কিছু নেবার পাবার সবই ফসল ভরা মাঠে।

তুমি সারারাত কলকাতার লাইট গুনতে পারো।
ভোর রাতে টলতে টলতে বাড়ি ফেরা।
পরদিন কলেজ বন্ধ, বকেলে জমিয়ে আড্ডা।
বন্ধুকে ম্যাসেজ,চ্যাট, লইক,পোস্ট...কমেন্ট।

মোকে প্রদীপ শিখা তন্দ্রা আনে ,ঘুম পাড়ায়।
ভোর বেলায় উঠে বই নিয়ে বসে পড়তে পড়তে বিছানায় লুটিয়ে পড়া।
যথা সময়ে কলেজ, বন্ধুদের সাথে কথা,ব্যাস।
ম্যাসেজ চ্যাট নয়,বিকেলে কিন্তু বেড়াতে আসিস।







   নিভৃত মনের পুজো
             ডঃ রমলা মুখার্জী

হোক না পুজো অন্যভাবে, নিভৃত মনের আরাধনা-
বাহির পুজোর ঘুচুক আঁধার, অন্তরের হোক উপাসনা।
জানি যে জন গড়ছে ঠাকুর, তার এটা উপার্জন,
তবু বলবো সীসার রঙে জল দূষণ অতি ভীষণ।
বন্ধ হোক বেলপাতা, ফুল, জলে প্রতিমা নিরঞ্জন-
মনের যত জমাট কালো এবার পুজোয় বিসর্জন।
আচার, আমোদ পরের কথা, আগে সামলাই পরিবেশ -
বাজি-বারুদের শব্দ-অগ্নি হোক একদম নিঃশেষ।
আলোকমালার ঝলকানিতে নিভে যায় চেতন আলো-
স্বল্পালকে হোক পুজো, পরিবশ রক্ষার পক্ষেও ভালো।
শুদ্ধ হোক পরমা প্রকৃতি, পবিত্র হোক চিত্ত,
মানবী দুর্গার দুর্গ গড়ে সুরক্ষিত করি নারীত্ব।
যে দেশে নারী লাঞ্ছিত হয়, গরীবেরা মরে ভুখা-
মারণ অসুখে অসহায় রুগী ঘরের কোনে একা-
সে দেশে এবার পুজিত হোক স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার,
সাফাইকর্মী, পুলিশ আর সব, নিরলস সেবা যার।
অসুস্থদের পাশে থেকে কঠিন সময় করি পার-
স্বাস্হ্যবিধি হোক পূজা-উপাচার, চৈতন্যোদয় হোক সবার।






প্রবন্ধ
শিশুদের সুশিক্ষিত করতে হলে
  -  অগ্নিমিত্র

  শিশুদের সুশিক্ষিত করতে গেলে আগে বাড়ির সুস্থ পরিবেশটা খুব  দরকার। বাড়িতে শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চা থাকাও বাঞ্ছনীয় । বাড়িতে কলহ বা কোলাহল বেশি না হওয়াই উচিত । তা না হলে শিশুর রুচি ও মনন ঠিক গড়ে উঠবে না। তার মানসিকতার উপর কুপ্রভাব পড়বে !     বিদ্যালয়ের পড়ার পাশাপাশি শিশুদের প্রচুর সাধারণ জ্ঞানের বই বা ভালো গল্পের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন । এতে জ্ঞান ও কল্পনাশক্তি বাড়ে । তবেই এক উদার, শিক্ষামনস্ক ব্যক্তিত্ব তৈরী হবে। আর উচিত বন্ধুদের সাথে রোজ খেলাধুলো করতে দেওয়া; কারণ না খেললে বুদ্ধি, চেতনা ঠিক বিকশিত হয় না । তবে সেই বন্ধুরা যেন ভদ্র ও ভালো হয় ।
   বেশি মুঠোফোনের অভ্যাসও না করানোই শ্রেয়। এতে নানা অবাঞ্ছিত সাইটে আকৃষ্ট হয় শিশুরা । একটা নেশাও তৈরী হয় । তবে মুঠোফোনের মাধ্যমে শেখা অবশ্যই ভালো।।







কবিতা -
             ক্ষুধিত  পাষাণ
          পিনাকী  মুখার্জী
 
               পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা
                  পাহাড়ের বুক চিরে  !!
               জীবন সঙ্গী জীবন গাথা
                 রোজ তোমাকে ঘিরে  !!

               তোমার ওপর সময় ছোটায়
                      সভ্যতার  জয় রথ !!
                 তোমায়  ঘিরে  ওঠা  পড়া  ,
                    পোড়া  ভাগ্যের  ভগীরথ  !!

              তোমায়  ঘিরে  ভরসা আশায়
                    বুক  বেঁধেছে  মানুষ  !!
             ওড়ায়  আগুন পোড়ায় আগুন
                 আশার  আহুতি  ফানুস  !!

             তোমার  কালোয়  ভাগ্য  লিখনের
                    অনুভবে  এগিয়ে  চলা  !!
              মমতা  বিহীন  ক্ষুধিত  পাষাণে
                     জীবন  মাড়িয়ে  চলা  !!






শিক্ষাগুরু
           বিপ্লব গোস্বামী

শিক্ষা হলো প্রদীপ শিখা
ঘুচায় আঁধার কালো,
শিক্ষক হলেন আলোর দিশারী
জ্বালান মনে আলো।

ধূপের কাঠির ন‍্যায় শিক্ষক
নিজেই পুড়ে যান,
শূন‍্য করে নিজের ভাণ্ড
জ্ঞান করেন দান।

যেদিন আমার চোখ ফোটেনি
নিকষ কালো রাত,
তিনিই সেদিন দেখিয়ে ছিলেন
আলোর সুপ্রভাত।

যার কাছেতে শিক্ষা নিয়ে
যাত্রা হলো শুরু,
তিনিই হলেন আলোর দিশারী
তিনিই শিক্ষা গুরু।

যার আশিসে পদ‍্য লিখি
যার আশিসে কবি,
এসব কিছুই আমার নয়তো
তার শেখানো সবই।








তোমার খেয়ালে
       মন্দিরা ভারতী

বাতাসে মিশে আছে
তোমার দেহের গন্ধ ,
বসেছি লিখতে কিন্তু
খুঁজে পাচ্ছি না ছন্দ।
সূর্য উঠেছে নিয়ে
তীব্র এক প্রকাশ ,
তবু কেন মেঘলা আজ
আমার মনের আকাশ?
চাইছি ভূলতে তবু
বারে বারে পড়ছে মনে ,
সারাদিন ঠোঁটে মিথ্যে হাঁসির সাজ
গুমরে মরছি গোপনে।
ভূলবো কোনটা বলো
সারা প্রকৃতি জুড়ে তোমার খেয়াল,
তুমি সমীরনে তুমি নীলাকাশে
আর কী বোঝাবো মনের হাল।








নৈঃসঙ্গ্য 
     বদরুদ্দোজা শেখু

থিকথিক গিজগিজ করছে মানুষ ,
শহরের এই নিত্য ভয়ংকর ভিড়
আমার একান্ত
নৈঃসঙ্গ্য বাড়িয়ে তোলে
ক্রমশঃ প্রসারমাণ ঘরবাড়ির ভিতর
নিজেকে নিজের ক'রে  গুটিয়ে রাখার
নির্বিঘ্ন দেয়ালে লেগে থাকা দূরত্ত্বের মতো ,
অন্তরঙ্গ সখ্যতার হাত খুঁজতে বেরিয়ে
অর্থের কুঠারে ধাক্কা খেয়ে চারার বনানী
বিবর্ণ ধূসর হ'য়ে যাওয়ার মতো ,
চার আনা পয়সার দুর্মূল্য রিক্ততায়
চৌদ্দ  মাইল পথ পায়ে হাঁটার দীর্ঘ ক্লান্তির মতো ,
পার্কের বেঞ্চিতে ব'সে ফুলের সান্নিধ্য পাওয়ার বদলে
বস্তির জবর-দখল-নোংরা খিস্তিখেউড় খাওয়ার মতো
কঠোর শূণ্যতা আমার একান্ত নৈঃসঙ্গ্য বাড়িয়ে তোলে ---
অথচ আমার চারিপাশে
থিকথিক গিজগিজ করছে মানুষ ।।








কবিতা
         কথা
           - মিনতি গোস্বামী

না বলা কথারা গুমড়ে মরে
সুযোগ পেলে রাতের আঁধারে
জোনাকির মতো দিপ দিপ করে
ডানা মেলে ঘুরে বেড়ায়।

সব কথা কখনো কেউ
সাজাতে পারেনা অক্ষরে
জীবনের কত কথা,কত গল্প
চলে যায় লোকচক্ষুর অগোচরে।

কথার টুঁটি টিপে থাকার
যতদিন থাকবে রেওয়াজ
ততদিন মনের কথার
কেউ পাবেনা আঁচ।







অনুগল্প
        পরীর দেশ
              আব্দুল রাহাজ

একটা বিচিত্র দেশ ছিল চারিদিকে গাছপালায় ঘেরা সেখানে থাকত পরীরা ।বেশ মায়াবী সৌন্দর্যের অধিকারী ছিল সেই দেশ সেখানে বাস করত নীল পরী লাল পরী। পরীদের রানী ছিল লাল পরীরা বেশ মিলেমিশে থাকতো ওরা। রংবে রঙের ফুলের বাগান নানা রকম গাছপালার মাঝে এক মনোরম পরিবেশে থাকতো রানী লাল পরী অন্যান্য পরীদের গল্প শোনাতো। একদিন অন্য দেশান্তরের দস্যুরা পরীর দেশে থাকতে আরম্ভ করলো নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে লাগল পরীর দেশে কোথাও যেন পরীর দেশের সব হারিয়ে যাচ্ছিল শোভা হারিয়ে যাচ্ছে তারপর নীলপরীর একদল ভুতের অভিনয় করে তাদের কিনা শাস্তি দিয়েছিলো আর এই খবর শুনে লাল পরী রা কি আনন্দ পেয়েছিল।পরীরা তখনও পৃথিবীর কথা শুনেনি অনেক কাল আগে একবার লাল পরি রা ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর এক বনে নেমে পরে তারা ভাবে এখানে ফুলের বীজ ছড়াবে তাদের দেশ থেকে ফুলের বীজ নিয়ে এসে ছড়িয়ে দিতেই কিছুদিন পর ফুলে ফুলে ভরে উঠলো সারা পৃথিবী পরীর দেশের মতো সুন্দরে সুন্দরে ভরে উঠলো মায়াবী পরিবেশ গঠিত হলো তা দেখে পরীরা হাসতে হাসতে পরীর দেশে ফিরে গেল। এরপর থেকে পৃথিবী হয়ে উঠল অনন্য সৌন্দর্যের অধিকারী আর পরীরা তাদের দেশকে নিয়ে এক বিচিত্র জগতে ভেসে রইল।




রাত
উমর ফারুক

ঝিঁঝি ডাক ছাড়ে জানালার বাইরে
চিন চিন করে এই অন্তর
জোনাকিরা আজ সেথা নাই রে  
ফু দিয়ে পড়ি শুধু মন্তর।

ব্যাঙ সাপ পাশা খেলে শত্রুতা নায় রে
চামচিকে ঘুরেফিরে বড্ড
বাদুড়ের চোখ কানা করিসনে ভয় রে
দিন হলে রাত হবে স্তব্ধ।

পুকুরে মাছ ঘোরে রাত বড় বিস্মিত
কলুষিত জলে কেউ লুকিয়ে
বক চিল মাছরাঙা হয়েছে স্তিমিত 
নারিকেল গাছ মাথা উচিয়ে।

আরশোলা গুটি গুটি পায় হেঁটে যায় রে
বিষদাঁত কারো ভেঙে পড়ে
আপনার পিছু ভয় বুক চেপে ধরে রে
নিশুতি এই রাত ভুত্তুড়ে!

সাদা চাঁদ দেখা গেল ঝলমলে জলেতে
রূপ খানি সুন্দর খুব লাগে
না জানি কোন ফাঁকে দস্যুর থাবাতে
ঘুমন্ত আমি যেন ওঠে জাগে।




চোখের
    অঞ্জলি দে নন্দী, মম

সবার মত বাইরে থেকে হলেও শক্তিতে এক্সট্রা অর্ডিনারী। যা ঘটবে তা অঞ্জু অনেক আগে থেকেই দেখতে পায়। কোথায়? ওর সামনে, হাওয়ায়। ও সাবধান করে, যার যা খারাপ দেখে তাকে বলে। আবার সুখবর জানায় কারোর ভালো দেখলে। এ সব মিলেও যায়। তাই ওকে সবাই মানে। দেবী জ্ঞানে ভালোবাসে। বিয়ে হল। ওকে বিবাহিতা সম্পর্কিতা ওর সকলেই নির্যাতন করে। বললেই বলে যে পাগলী বৌ জুটলো, মরলেই তারা রেহাই পায়। একদিন শ্বশুর রাস্তায় বেরোচ্ছে। ও বলল, " বাবা আজ আপনি বাড়ীর বাইরে বেরোবেন না! কাল বেরোবেন! " শ্বশুর বলল, " ক্যানো? " বৌমা বলল, " ২৪ ঘন্টা আপনার জীবনে বিপদ ডেকে আনবে। এই সময়টা কেটে গেলে আর ভয় নেই। " ওকে ধমকি দিয়ে বেরিয়ে গ্যালো। একটু পরে হন্তদন্ত হয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে একটি বালক এসে বলল, " তাড়াতাড়ি চল! দে জ্যেঠুর মোড়ের মাথায় একসিডেন্ট হয়েছে। একটি মাল বোঝাই ট্রাক পিছন থেকে এসে জ্যেঠুর বাই সাইকেলে ধাক্কা মারে। " তখন সবাই ছুটলো। হাসপাতালে দিল। কয়েক দিন পরে ডান হাত ও বাঁ পায়ে প্লাস্টার করে বাড়ি ফিরলো। ক্রাকস। এবার শাশুড়ি বউকে বেদম চুলের মুঠি ধরে ঝাঁটা দিয়ে মারলো। বলল, " কুকথা বলে আমার স্বামীকে খেয়ে নিচ্ছিলো আর একটু হলে। আমার সিঁদুরের জোরে ফিরে পেলুম। এই জয়! তুই তোর বউকে এক্ষুনি বাপের বাড়ি ধরে দিয়ে আয়! আর যেন ও কক্ষনো এমুখ হয়। বলে আসবি বৌয়ের বাপকে। আমি ফের তোর ভালো দেখে বিয়ে দব। " অঞ্জু চিরতরে ত্যাজ্য হল। কিন্তু ওর দিব্য শক্তি ওকে নব পথ দেখালো। ও সাধু হল। আশ্রমে থাকে। সারা পৃথিবীতে ওর ভক্ত হল...........





মনের ইচছে
           অনাদি মুখার্জি

ইচছে হয় কভু পাখি হয়ে যায় কাছে তোমার ,
কতদিন দেখিনো তোমায় ওগো সাথি আমার !
আজ আমি চাই মোর নয়নে দেখিতে তোমায় ,
ইচছে তো জাগে মনে চলো কথাও হারিয়ে যায় !
ইচছে গুলো সাজিয়ে রেখেছি আমি মনে ,
সকাল  সাঁজে তোমাকে মনে পড়ে  ক্ষনে ক্ষনে !
রাজপথ ছেড়ে এসেছি তোমার এই গলিতে,
আমি নাকি বাউনডুলে তুমি প্রায় বলিতে !
তুমি হলে আমার কাছে গোলাপে চেয়েও দামি ,
মনের ইচছে তো তুমি আছো আমার এক অনুভূতি ছবি !




                         হীরক রাজ‍্যে করোনা
                          সুশান্ত মজুমদার

     রাজাঃ-  কেমন আছ সব সভাসদ গণ,
শুনেছ কি খবর আছে জব্বর একখান?
মন্ত্রীঃ- কি সন্দেশ জাহাপনা ?
            করুন নিবেদন,করি প্রার্থনা।
রাজাঃ-  বেটা নিষ্কর্মার ঢেঁকি একখানা,
                কি করে করো মন্ত্রিত্ব বুঝিনা।
মন্ত্রীঃ-  মহারাজ,করুন মার্জনা,
            ভুল করেছি মস্ত
          গৃহ কাজে ছিলাম ব‍্যাস্ত
         তাই খবর টি আছে অজানা।

রাজাঃ- সুদূর দুর্গম এই হীরক রাজ‍্যে                 
              ভাইরাস করোনা,
         পুরো-দস্তুরে দিয়েছে হানা !

সভাসদ গণ সকলেঃ-- সে কি !

রাজাঃ- তবে আর বলছি কি,
        এযে মাথায় ভেঙে পড়ল আকাশ !
কি করে প্রবেশ করল এ রাজ‍্যতে ভাইরাস?
          কিহে গুপ্তচর,
     জানো কি,  কোন সমাচার?

গুপ্তচরঃ- মহারাজ, করলে অভয় দান,
                 করি তবে নিবেদন।
রাজাঃ- আহা! করো কেন হেঁয়ালি,
        কি জানো?শুনাও দেখি পাঁচালি।

গুপ্তচরঃ-  পাঠশালার ধূর্ত পন্ডিত,
                 সেই বেটা উদয়ন।
     করে ছিলো বিদেশে গমন ।
হঠাৎ  তার ঘটেছে আগমন
দেহেতে করি বীজাণু  বহন।
     এখন রাজ‍্য মাঝে তার
      ঘটেছে  অবাধ বিস্তার ।

রাজাঃ- হুম,পন্ডিতের ব‍্যাবস্থা পরে হবে,
    এমন সাধের হীরক রাজ‍্যের কি হবে?

মন্ত্রীঃ- এখন আমাদের আশু প্রয়োজন,
     যে ভাবেই হোক ঠেকানো সংক্রমণ।

রাজাঃ - ওহে গবেষক ! কি বলে তোমার
            গবেষণা ?
আছে কি কোন ঔষধি,দমনে করোনা?

গবেষকঃ- ঔষধ মেলা ভার,
              এখনো হয়নি  তো  আবিস্কার।
   তবে মানতে পারলে কিছু নিয়ম,
  হতে পারে ঢের  উপশম।

রাজাঃ- বলো গবেষক, কি আছে
            উপায় ?
         মানলে নিয়ম, যদি বাঁচা যায় !

গবেষকঃ- নিয়ম খুবই সহজ সরল,
             সকলের আছে জানা।
          মুখেতে লাগাবে মুখোশ,
      হাতেতে  দস্তানা ।
বার বার হাত ধুতে কর ব‍্যবহার,
সাবান, জল এবং স‍্যানিটাইজার।
লকডাউনে দিতে হবে গুরুত্ব,
মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব।

রাজাঃ-   বাহ্! উপায় তো দেখছি খাসা
               ভারি চমৎকার!
  কিন্ত লকডাউনে প্রজারা
         হবে যে জেরবার !

গবেষকঃ-   এ ছাড়া মহারাজ                                            
                গতি আর কোথায়?
       লকডাউন করাটা তাই
                    হবে মঙ্গলময় ।

রাজাঃ- অন‍্য উপায় নেই যখন
          আর বাঁচিবারে,
        অর্থমন্ত্রী পাঠাও অর্থ
                সকল প্রজার তরে।
    আমার প্রজাগণ যেন,
কেউ না থাকে অনাহারে।
ঠিক কিনা ------

মন্ত্রীঃ- ঠিক,ঠিক ,ঠিক ।

অর্থমন্ত্রীঃ- মাহারাজ,রাজকোষের
        অবস্থা বিশেষ ভালো নয়,
         কিছু ঋণের ব‍্যাবস্থা করলে
          খুবই ভালো হয়।

রাজাঃ- এ দুঃসময়ে ঋণ কি
           কেউ আর দেবে ?
মন্ত্রী আমলাদের না হয়
কয়েক মাস বেতন কাটা যাবে।
ঠিক কিনা---

মন্ত্রীঃ- ঠিক ,ঠিক,ঠিক ।

রাজাঃ-  সভাকবি, শুনলে তো
            সকল বিবরণ,
এখন শুনাও দেখি
     তোমার কলমের কি লিখন ?

সভাকবিঃ- দূরত্ব বজায় রাখো
           সদা সর্বজনে,
জমায়েত এড়িয়ে ‌চল
  বাজার, হাটে কিম্বা ধর্মস্থানে।
    হাত ধোওয়ার অভ‍্যাস
         কর বার বার,
অকারণে হাত না দিবে
নাকে কিম্বা মুখের উপর ।
"সুস্থ থাকো ঘরে থাকো"
   মানবে এ বচন,
প্রাণপণে রাজ নির্দেশ
     করবে পালন ।
ভুল তথ‍্য না করবে
কখনো রটনা,
হীরক রাজা পাশে আছে,
  সে কথাটি যেন ভুলো না।
করোনাকে সাথে নিয়ে
       চলতে হবেই যখন,
জীবনধারাতে তাই আনো পরিবর্তন।
করতে চাঙ্গা দেশের অর্থনীতি,
সহজ সরল করতে হবে
   লকডাউনেরর রীতি।
অতঃপর মহামারি হবে শেষ
বাঁচবে সবার প্রাণ,
সবাই মিলে হীরক রাজার
   কর   জয়গান।

সকলে একসাথেঃ-  করোনায় যদি
     যায় প্রাণ,
  তবু, হীরকের রাজা ভগবান!!

                       




  গণ ক্ষেদ
           এমাজদ্দিন  সেখ

  উথাল পাথাল ভারত ভূমি , তবু বাঁচি ;  একী মায়াজাল  !
দাদা তোষে অম্বানিকে  , দিদি  দেয় ভিক্ষার চাল ;....
বৈতরণী  পাঁচ বছরের; বোকা বাক্সে  করে পার !
ঠকে মরি সারা জীবন; ভোটটা  দিয়ে হায় রে হায় ! ...
মাঝে মাঝে ঢেউ খেলে যায় --  ছাত্র -  শ্রমিক  বা চাষীর ---
লড়াই-  সংগ্রাম হুঙ্কার জুলুস  ক্ষিপ্র  ধারায় ....
মন্দির - মসজিদ সঞ্জীবনী  , '  মন কী বাত '  এ ঘুম পাড়ায় l

কোন আশাতে , কার ভরসায়  চাষী ফলায় ধান -  গম-  ডাল ....
শ্রমিক মরে কারখানা গেটে  , রমণীর ছিন্ন ভিন্ন দেহ পথের পাশে ,  যুবা ধর্না মঞ্চে  ....
মরণ মিছিল অনন্ত ধারা ;... চৌকিদারের  টনক  নড়ে না !
ধাঁধাঁয় রইলো দেড়'শো কোটি ,  সুদিন  আজও এলো না !
মিথ্যা প্রেমের '  জুমলাবাজিই '  বেচে দিলাম প্রাণ ধন ;...
বাস্তব অন্ধ , বৃথা লোভে নষ্ট করলাম এই জীবন !
বাঁচার আকুতির  আগুন জ্বালো  , ছিন্ন করো এই  মায়াজাল  !!







কবিতা :
একদিন এসো!
             বিশ্বজিৎ কর

তুমি যেদিন মুক্ত হবে -
সেদিন কাছে এসো,
তুমি যেদিন আমার হবে -
সেদিন ভালবেসো!
তোমার গন্ধ,তোমার স্পর্শ-
আমারই উষ্ণতা,
তোমাতে জড়িয়ে থাকা -
আমার কবিতা!
যেদিন আমি থাকবো না -
তোমার কুঞ্জবনে,
হৃদয় তোমার হবে অশান্ত-
বিষন্নতার দিনে!





গোলাপ রহস্য
         শংকর হালদার

বয়সের সন্ধিক্ষণে,
রং -এর আলপনা আঁকে যৌবন।
বিস্তর ব্যবধান ভুলে
শব্দের মায়াজাল বুনে সমাধান খোঁজে
গোলাপের অদৃশ্য মায়ায় দুটি প্রাণ।
রচনা করে অধ্যায়ের প্রথম পর্ব আর
খাম বন্দী মায়ার অংশীদারিত্বের ভাগাভাগি।
শব্দের সেতু বন্ধনে
একমুখী ঘরবাড়ি পূর্ণতার প্রতীক্ষায়
চাতকের মতো প্রথম বসন্তে পায়চারী...
পান্ডুলিপি হয়ে থাক পিঞ্জরে।
প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় এ যেন এক উপচানো ঢেউ
আমাকে লিখে যাও
তোমার মতো করে আসমুদ্রহিমাচল,
আর  উপলব্ধি করি তোমাকে
যাবজ্জীবন বন্দী দশায়,
দুটি প্রাণ একই সত্তায় হারাতে চায়
গোলাপের মায়াজালে দিগন্ত রেখায় ।





প্রভূ দয়াময়
            জুয়েল রুহানী

হে প্রভূ দয়াময়-
তুমিই মহান,
হৃদয়ে গেঁথে দাও
তোমার কোরআন।

হৃদয়ে এঁকে দাও
হাদীসের সে বাণী,
যে বাণী শুনে মোর
ভরবে এ মন জানি।

কোরআন-হাদীস নিয়ে
এ জীবন যেন যায়,
ফরিয়াদ হে প্রভূ-
হে মহান দয়াময়।





আমি মল্লিকা
        গোপাল বিশ্বাস

আমি কি নষ্টা মেয়ে  ?
কেউ কেউ আমাকে নষ্টাই বলে
আমার দোষ কি  ?
আমি এখন থানায় যাবো
বলবো আমি বেঁচে আছি
আমি পাগলী নই --
মল্লিকা   l
মেয়েরা কি শুধুই মেয়ে  ?
তোমরা আমাকে ধর্ষণ করে
খুন করতে চেয়েছিলে
পারোনি
ভাবছো মরে গেছি
জল কাদায় মাথা থেতলে
কত ক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম ?
তোমরা তো জান  না --মল্লিকারা
এতো সহজে মরে না
তোমাদের ভুলেই
আমি বেঁচে গেলাম
বিশ্বাস হচ্ছে না ?
এই দেখো উরুতে রক্তের দাগ
গলায় ফাঁসের চিহ্ন
বুকে দাঁতের কামড়
পেটে নখের আঁচড়,
এ গুলোই তো রাজনীতির হট হিস্যু  l ওমা ! লজ্জা কিসের  ?
আমি তো মৃত
মৃত মেয়েদের স্তন উরু
দেখতে লজ্জা নেই  !

আমাকে ধর্ষণ করে
খুন করেই তো তোমরা
ভোটে জিতবে
একে অন্যের দোষ দাও
মিডিয়া চাউর হয়  l
সব দলের নেতারাই আমাকে মাথায়
তোলে নাচে
মজা আর কাকে বলে   l
নইলে তোমরা তো
ভালো মানুষই
শুধু ভোটের জন্যই
এ সব কর  l
ইলেকশন --এতো খাটাখাটনি
লাইক রিস্ক
মেয়েদের নিয়ে তো একটু আমোদ
স্ফূর্তি করতেই পারো
ভোটে জিততে কত ক্ষণ ?
আগে নিজে দাঁড়াও
নিজে খাও
নিজে বাঁচো
জনগণ --দু পয়সার কানাকড়ি  l
এ পথেই আমি একটা মোমবাতি জ্বালাতে চাই
এবার বাইরে এসে দাঁড়াও
সূর্যের দিকে তাকাও  l




রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 27/09/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 27/09/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 27/09/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 27/09/2020


বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :

      কবিতার রূপকল্প --  পর্ব ৭
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
              সৌম্য ঘোষ
""''''''''''"""""""""""""""""""""""""""''''''''''"""""""""""""""""
 বিদ্রোহী কবি : মধুসূদন দত্ত-- ফিরে দেখা 



                 মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ( ১৮২৪--১৮৭৩) উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার এবং প্রহসন রচয়িতা। তাঁকে বাংলার নবজাগরণে সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয় ।আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি। ২৫শে জানুয়ারি, ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত এবং মাতা   জাহ্নবীদেবী। তিনিই প্রথম জীবনে টিমোথি পেনপোয়েম  ছদ্মনামে লিখতেন। যৌবনে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন । ফলে তাঁর পিতা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে তিনি মাতৃভাষার প্রতি আকৃষ্ট হন। বাংলা কবিতায় তিনি সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক । হিন্দু কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন সর্বশ্রী ভূদেব মুখোপাধ্যায় ,রাজনারায়ণ বসু ,গৌরদাস বসাক, প্যারীচরণ সরকার প্রভৃতি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র । তিনি বহু ভাষাবিদ।  মাতৃভাষা ও ইংরেজি ছাড়াও ফারসি, ল্যাটিন, গ্রিক ,তেলেগু ,তামিল সহ মোট 12 টি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী -------  দ্য ক্যাপটিভ লেডি ,মেঘনাদবধ, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক) ,পদ্মাবতী (নাটক), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ (প্রহসন), একেই বলে সভ্যতা (প্রহসন), তিলোত্তমাসম্ভব, বীরাঙ্গনা, ব্রজাঙ্গনা, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেক্টর বধ ইত্যাদি ইত্যাদি।

                 
                 উনিশ শতকে ইংরেজ শাসন ব্যবস্থা ও ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের ফলে বাঙালি জীবনে এক আলোড়ন দেখা দেয় এই আলোড়ন কলকাতা কেন্দ্রিক হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজের সীমাবদ্ধ ছিল এই আলোড়ন এর প্রথম পূর্ণাঙ্গ সুফল----- মাইকেল মধুসূদন দত্ত । তাঁর কাব্যে ছিল সেক্যুলার মনোভাব । তিনি ইহবাদী, যুক্তিবাদী এবং মানবতাবাদি । এই জীবন রসিক কবি ভোগবাদীও ছিলেন । মাইকেল মধুসূদন উনবিংশ শতাব্দীর গতিশীলতার প্রথম পূর্ণতম বিকাশ।

                     মিল্টন ভক্ত এই কবি শুরুতে ইংরেজিতে কবিতা লিখতেন । ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে অবস্থানকালীন তিনি রচনা করেন " the captive ladie" , " visions of the past". ভারত হিতৈষী ড্রিংকওয়াটার বীটনের মাতৃ ভাষায় লেখা, "something higher and better" পড়ার পর তাঁর মধ্যে আত্ম অনুসন্ধান জাগায় । মধুকবি বুঝেছিলেন, মাতৃভাষায় চর্চা ও শ্রীবৃদ্ধি সাধন এর চেয়ে মহত্তর কিছু হয় না।  বাংলায় তিনি প্রথম লিখেছিলেন নাটক । পদ্মাবতী নাটকের তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন । সমগ্র পাশ্চাত্য সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর প্রগাঢ়  পরিচয় ছিল। হোমর, ভার্জিল,মিল্টন ,দান্তে ,টাসো  প্রভৃতির রচনার সঙ্গে তাঁর নিবিড় পরিচয় ছিল। মধুকবি ভারতীয় ঐতিহ্য "grand mythology" - কে প্রাণবন্ত ভাবে উপস্থাপিত করেছিলেন।

                        আখ্যানকাব্য তিলোত্তমাসম্ভব তাঁর কবি জীবনের সূত্রপাত।  তিলোত্তমা সৌন্দর্যের প্রতিমা আর এই রোমান্টিক কাব্যের ভাষা লালিত্য ও পেলব । তিনি বাংলা কাব্যজগতে প্রবর্তন করেন সাহিত্যিক মহাকাব্য ধারা। তাঁর মহৎ সৃষ্টি মেঘনাদবধ কাব্য রচনায় । উপাদান আহরণ করেছিলেন বাল্মিকী-কৃত্তিবাস থেকে। আর সামনে আদর্শ হিসেবে ছিল মিল্টনের " The paradise lost" . সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত মন্থন করে মধুকবি মেঘনাদবধ কাব্য রচনায় হাত দিয়েছিলেন কিন্তু তাঁর অন্তঃশীল বাঙালি মনটি এই কাব্যে উজ্জ্বল ভাবে উপস্থিত  । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, এই কাব্যে একটা বিদ্রোহ আছে। তিনি মাইকেলকে বিদ্রোহী কবি আখ্যা দেন।

( চলবে.....)





সেই মেয়ে
       সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

   আমি এক মেয়ে---যার

জন্মলগ্নে বাজেনি শঙ্খ
দেয়নি কেউ উলুধ্বনি।
মায়ের মুখটাও ছিল বিষণ্ণ যেন--
   মেয়ে জন্মেছে বলে।

সারাদিন ধরে আমার শরীরের
  তাপমাত্রা মাপা হয়েছে
প্রচন্ড গরমেও যখন সবাই
অনাবৃত
আমাকে শরীর ঢাকতে     শেখানো হয়েছে নানান পোশাকে আবৃত থাকতে

শেখানো হয়েছে পরের বাড়িতে যাবার নানান উপদেশ
বিয়ের পরে। অথচ
যার শরীরটাকে ভোগ করেছে এক অজানা অচেনা পুরুষ
বিছানায় খুঁটে খুঁটে চেটেপুটে।

যার গর্ভে সন্তান জন্ম নিয়েছে
যে চিরকাল উচ্ছ্বিষ্ট খেয়েছে।

সকলের খাবার পরে অবশিষ্ট খাবার খেয়ে স্বামী শ্বশুর শাশুড়িকে শান্ত রেখেছে সর্বক্ষণ
  সেই মেয়ে

  বিয়ের সময় যাকে ঘিরে চারদিকে ফিসফিস ফিসফিস
        সেই মেয়ে।

দেনা শোধ করতে না পেরেও যার বিয়েতে বাবাকে অযথা  খরচ করতে বাধ্য হতে হয়েছে
    আমি সেই মেয়ে।

পদবী পাল্টিয়ে আমি বউ হয়েছি।
নিজস্বতা বিসর্জন দিতে হয়েছে।
আমার শরীরের আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে অসংখ্য মধুকর।

       মধু পানের আশায়
টাকা দিয়ে কিনতে চেয়েছে আমার শরীর।
      আমি সেই মেয়ে।
ছেলেমেয়েদের সামলানো
স্বামীর কামনা পরিতৃপ্ত করা
ঘরের বাড়ির পাটঝাঁট  করা

সকলে শরীর এলিয়ে শুয়ে পড়লেও
যাকে রান্নাঘরের সাঁজবাতি জ্বালিয়ে
  চা থেকে নানান ব্যঞ্জণ রাঁধতে হয়েছে।
যার জন্য ডাক্তার আসলে
বাবা মাকে অশ্রাব্য কটু কথা শুনতে হয়েছে---
"কেমন মেয়ে রে বাবা শরীর খারাপ লেগেই আছে"
    আমি, হ্যাঁ আমি
       সেই মেয়ে।

বিধবা হলে যাকে যত কুসংস্কার মেনে চলতে বাধ্য করা হয়
যার আঁচলে পয়সা বিন্দুমাত্র থাকে না।
যে অন্য কোনো পুরুষের সাথে খোলামেলা বন্ধুত্ব্ও করতে পারে না।
   সেই মেয়ে।

কান্না এলেও কাঁদতে পারেনা যে মেয়ে
     আমি সেই মেয়ে।
স্তনে ক্যানসার, নিম্নাঙ্গের জন্য যন্ত্রণা থাকলেও যাকে
      মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়েছে।

প্রসব বেদনায় কাতর হয়েও সহ্য করতে হয়েছে নানান অকথা কুকথা যখন তখন
       যাকে
     সেই মেয়ে।







(বিদ্যাসাগর স্মরণে)

বিভাগ-হাইকু কবিতা
শংকর হালদার

০১।
সাগর তুমি
বিদ্যাকে সাক্ষী রেখে
প্রণতি পদে ।
০২।
উদ্যম্ মন
দুঃখ মেনেছে হার
ললাট জয়ী ।
০৩।
আদর্শ স্থান
জনমানব মাঝে
ওগো দরদী ।
০৪।
দারিদ্র্য ভীত
গর্জনে থরথর
জয়ী পুরুষ ।
০৫।
মাতৃ দরদী
সংস্কার মুখী ,যে
ভুবন খ্যাত ।
০৬।
মুগ্ধ পৃথিবী
চিনেছে নাম -ধাম
অক্ষর চিনে ।
০৭।
তব ছটায়্
কুসুম ফোটে রাশি
মানব হৃদে ।
০৮।
তব পরশে
বর্ণ শেখা আলোয়
বর্ণ স্থাপন ।
০৯।
আলাপীমন
শিক্ষা আলোয় নারী
অক্ষর শিখে ।
১০।
তোমাকে পেয়ে
বদলে গেছে দেশ
সম্মান হানি ।







বাংলা হাইকু
       মন্দিরা ভারতী

অমাবশ্যার তারাগুলি
জানালার ফাঁকে
জোনাকির দল।








সময়
      আব্দুল রাহাজ

সময় যেন এক দ্রুতশীল স্রোত
যে সময় কাউকে তোয়াক্কা করে না
দিন যায় দিন আসে নদীর স্রোতের মতো ভাসতে থাকে
সময় জীবনটাকে বদলে দেয়
প্রকৃতির মায়া কোলে সময় যেন চলমান।








অবুঝ সোনা
          বিপ্লব গোস্বামী

আমার অবুঝ ছোট্ট সোনা
বুঝে নাতো কিছু,
ধরতে চায় নিজের ছায়া
দৌড়ে পিছু পিছু।

গরমে পরে ভারী কাপড়,
শীতে খালি গা,
আগুন দেখলে ধরতে যায়
জলে বাড়ায় পা।

কাজের জিনিস নষ্ট করে
মোবাইল ফেলে জলে,
ছোট কাকার চশমা নিয়ে
দৌড়ে পালায় দূরে।

বাবার ব‍্যাগের কাগজ গুলো
সব দিয়েছে ফেলে,
রান্না ঘরের টমেটো গুলো
সব দিয়েছে গেলে।

ধরতে গেলে দৌড়ে পালায়
হাসে খিল খিল,
অবুঝ সোনার দুষ্টুমিতে
বাপের আছে মিল।








কবিতা
        সাফরিদ সেখ

সারা দিনের ব্যস্ততার মাঝে
তোমাকে হারিয়ে ফেলি কবিতা।
রাত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে
তুমি আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হও।
প্রাত্যহিকের চাওয়া পওয়ার মাঝে
কখন যেন তুমি মিলিয়ে যাও,
তোমায় খুঁজে এনে খাতায় বসায়।

প্রাতে পুনঃ  পুনঃ মিলে যাও কোলাহলে
তোমার দেখা পাইনা তখন কোনো মতে।
অফিস,দোকান-বাজার নিত্য কেনাকাটায়
ছেলের টিউশনি,মেয়ের নার্সারি
এর মাঝে কখন তুমি অদৃশ্য হয়ে গেছো।
সন্ধ্যা হলে তোমাকে কলম বন্দি করে।

এমন দিন  নামচার সমাবেশে কবিতা
তোমার আসা যাওয়া নব রূপে ক্ষণে ক্ষণে।








                   কবিতার জন‍্যে
                    হামিদুল ইসলাম
                      
শুধু কবিতার জন‍্যে
যদি আমার জন্ম হতো এই বাংলায়
আমি ধন‍্য হতাম
শব্দের শৃঙ্খলায়  ।

কবিতাকে আমি ভালোবাসি
কবিতা যেনো এক অবলা নারী
তার ঠোঁটে চুম্বন দিই
তাকে ভালোবাসি  ।

কবিতার জন্ম আমার বুকে
আমি কবিতা চষে বেড়াই
কবিতাকে খুঁজি
পলাশডাঙা শিফনবাড়ি ধানসিঁড়ি  ।

কবিতা আমার জন‍্যে বয়ে আনে
শব্দের ডালি
এক আকাশ বাসি ফুল
কবিতার জন‍্যে বাঁচার বড়ো লোভ হয় আমার।

বাঁচতে চাই কবিতার জন‍্যে
কবিতার সাথে করি রাত্রি যাপন।







কবিতা :
জাগো,নতুন প্রভাত!
              বিশ্বজিৎ কর

কিছু খুঁজছিল,হয়তো বা কাউকে কাছে চাইছিল.....
না,গতরাতে ঘুম আসেনি!
রাতবিরেতে ঘুমের আজকাল অভিমান হয়,
কল্পনার জগতে মানভঞ্জনে ভোর হয়ে যায়!
ভোরের পাখি হৃদমাঝারে গুনগুন করে -
"জাগো,নতুন প্রভাত জাগো.."









শেষ লেখা
        উমর ফারুক

যে চাওনি পৃথীবিতে বিপ্লব ঘটুক
কয়েক দশক মুখ ঢেকে নাও!
মোহের ফাঁদে মগ্ন হও!?
মুছে যাবে একদিন তোমার পরিচয়
নজরে কেউ রাখবেনা।
নজরে রাখবে তোমার রুহ ।
কতটা কলুষিত করেছ তার হিসেব কষবে,
একদিন আবৃত্তি শুনবে দুইজন প্রহরী
আওড়িয়ে উচ্চারণ হলে নীরবে
অশ্রুজলের মিছিল
ও রক্ত নদী প্রবাহিত হবে।
বাঁশ তলার পুকুর পাড়ে তোমার মুখ ঢাকা
ওরকম চেহেরা ওরকম বিত্তবান মহত্ত বোধ , আত্মম্ভরিতা ও লালসার মিশ্রণে তৈরি করা জীবন প্রণালীর কি হবে?
দুখ সমুদ্র বন্যা বইয়ে দিতে পারে
অবশ্য অন্তর নির্মল হলে পদ্ম ফুটবে।









কবিতা:
     সময় এক
                 সফর
কলমে: আসরাফ আলী সেখ

কালো ঊষার মোড়কে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে,
তুমি চলো তালে তালে আপনার সাথে,
কালো হিরে আনো বয়ে কালো বিড়াল থাকে চেয়ে!
সোনার রোদের বোঝা নিয়ে হাঁটতে থাকো আপন মনে,
মেঘের ছানা  তোমার খোঁজে হন্নে হয়ে ছুটে মরে!
সাগর জলে জোয়ার কালে ভাটার বুকে হিংসা জমে
হঠাৎ তোমায় চেপে ধরে,
বসন্তের ডালে ডালে ফুল ফোটে গোছা ভরে,
ডাকে কোকিল সুরে সুরে বিষাদ আনে ভব ঘুরে!
কদম অতি যতনে গড়া সবাই হতে চাই তোমার সখা,
তুমি কারো বন্ধু ও ন ও শত্রু বিভীষণ,
যে তোমার বন্ধু হয় তারে করো সমর্পণ!
তোমায় জয় করেছে যারা তোমার দেওয়ালে ঘড়ি টাঙিয়ে ছে
তাঁরা,
তুমি তাদের খুঁজে ফেরো হৃদয় খুঁড়ে নয়ন জলে।।








কবিতা
        নারীর ঈশ্বর
মিনতি গোস্বামী

নারীর হাতেও কলম মানায়
শুনিয়েছিলে তুমি
নারী শিক্ষার ব‍্যাবস্থা করেই
পুণ্য করলে জন্মভূমি।
শিক্ষা পেলেই নারী জাতির
ঘটতে পারে মুক্তি
বর্ণমালায় রেখেছিলে
সেই লুকোনো শক্তি।
বিধবার সাদা সিঁথিতে উঠলো
সিঁদুর তোমার প্রয়াসে
কষ্টপীড়িত নারী আজ
তোমার দয়ায় ঘুরছে আয়াসে।
নারী হয়ে জেনেছি তাই
তুমি আমাদের মূর্ত ঈশ্বর
জন্মদিনে​ নয়তো শুধু
প্রতি পলে তোমাকে নমস্কার।








মানবের পরিচয়
         জুয়েল রুহানী

সময় যখন সন্নিকটে-
দুঃসময়ের!
আপন মানুষ যায় পালিয়ে
হোক না কাছের!

সু-সময়ে ছিল যারা-
আপন মানুষ,
দুঃসময়ে আজকে তাদের-
নেই কোন হুষ!

বাস্তবতা বড়ই কঠিন-
দুঃসময়ে,
আপন কি হয়, যে পাশে রয়-
সু-সময়ে?

মানুষ চিনো; যে পাশে রয়
দুঃসময়ে,
সেই তো আপন, সর্বদা যে-
রয়কো পাশে।








বনের পাখি
         গোপাল বিশ্বাস

বনের পাখি
বনে থাকি
বনের ছবি আঁকি
গহীন বনের ভালবাসা র
নেই যে কোন ফাঁকি  l

মুক্ত হাওয়া
নির্মল পরিবেশ
ফুলবনে ঘুরি
মনের সুখে গাই গান
ইচ্ছে মতন উড়ি  l

বনের মাঝে
কতো পাখি
এক সাথে খেলি সবুজ গাছের ডালে বসে
দুঃখ্য ঝেরে ফেলি   l

স্বাধীন বনে রাজনীতি
ভোটা  ভোটি নাই
গাছ গাছালিতে ঘর বেঁধে
সুখে জীবন কাটাই   l






দয়ার সাগর
        রাজু গোলদার

হে প্রভু তুমি ধন্য,
তোমারই করা বাঙালির প্রানে।
কখন জানি না তুমি,
এসেছিলে মোদের এই ভুবনে।
দিয়ে গেছো কত লিখে,
অক্ষরে অক্ষরে বর্ণপরিচয়ে।
দিবানিশি এই বিশ্ব দরবারে,
জেগেছে বাঙালি তোমাকে নিয়ে।
কত বইয়ের পাতায় পাতায়,
পেয়েছে খুঁজে কত তোমার সুনাম।
দেখছি তোমাকে ছবির অন্তরালে,
তবুও আমি দূর থেকে জানাই প্রনাম।








শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/09/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/09/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 26/09/2020




স্ত্রী শিক্ষার প্রসার ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর
                বিপ্লব গোস্বামী

উনবিংশ শতকে ভারতের মাটিতে যে কজন সমাজ সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর ছিলেন তাঁদের মধ‍্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।তিনি ছিলেন বাংলায় নারী শিক্ষা প্রসারের মূল পথিকৃৎ।তিনি বাস্তববাদী ও মানবতাবাদী সংস্কারক ছিলেন।তারই প্রচেষ্টায় বাংলায় স্ত্রীশিক্ষার প্রসার ঘটে।

          এই মহান সমাজ সংস্কারক ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর (বাংলা ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ আশ্বিন মঙ্গলবার) পশ্চিম বঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্ৰামে জন্মগ্ৰহণ করেন।তার পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ‍্যোপধ‍্যায় ও মাতার নাম  ভগবতী দেবী।

             তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে নারী জাতির উন্নতি না ঘটলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।এ জন‍্য তাদের মধ‍্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো দরকার।তাই তিনি সারা জীবন নারী শিক্ষা প্রসার, বহু বিবাহ রোধ, বাল‍্য বিবাহ রোধ, বিধবা বিবাহ প্রচলন এবং বাংলার নবজাগরণের জন‍্য কাজ করে গেছেন।তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নারী শিক্ষার সপক্ষে লেখালেখি শুরু করেন।গ্ৰামে গ্ৰামে ঘুরে অভিভাবকদের স্ত্রী শিক্ষার  সুফল বুঝাতে লাগলেন।তাঁরই উদ‍্যোগে কলকাতায় ভারতের প্রথম বালিকা প্রতিষ্ঠা হয়।তিনি ড্রিংকওয়াটার বিটনকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি নিজে ছিলেন এই বিদ‍্যালয়ের সম্পাদক।এটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত।তিনি ১৮৫৭ সালে বর্ধমান জেলায় মেয়েদের জন‍্য একটি বিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।গ্ৰামাঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ‍্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী প্রতিষ্ঠা করেন।১৮৫৮ সালে তিনি ব‍্যক্তিগত উদ‍্যেগে নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।প্রায় ১৩০০ জন ছাত্রী এই বিদ‍্যালয় গুলিতে পড়াশোনা করত।পরবর্তী কালে তাঁরই প্রচেষ্টায় সরকার এই সব স্কুলের কিছু ব‍্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়।১৮৬৪ সালে বাংলায় বালিকা বিদ‍্যালয়ের সংখ‍্যা দাঁড়ায় ২৮৮ টি। ১৮৭২ সালে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন (বিদ‍্যাসাগর কলেজ)প্রতিষ্ঠা করেন।একই বছর তিনি মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ‍্যে নিজ গ্ৰাম বীরসিংহে ভগবতী বিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
          সেই সময় হিন্দু সমাজে কিছু কুপ্রথা প্রচলিত ছিল।অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে  দেওয়া হত।ঈশ্বর চন্দ্র চিন্তা করলেন বাল‍্য বিবাহ রোধ না করলে স্ত্রী শিক্ষা প্রসার সম্ভব নয়।তাই তিনি বাল‍্য বিবাহ নামক সামাজিক ব‍্যাধি নির্মূল করার জন‍্য নিরলস সংগ্ৰাম করেন এবং সফল হন।১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাস করে মেয়েদের বিবাহের বয়স কমপক্ষে ১০ ধার্য করে‌।
        নারীমুক্তি আন্দোলনে  স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর অবদান ছিল অসামান‍্য।তাঁর এই অবদান ভারতবাসী কোন দিনও ভুলতে পারবে না।মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন " পৃথিবীতে এমন লোক খুব কমই জন্মেছেন।একথা বলা যেতে পারে যে,যদি ঈশ্বরচন্দ্র কোন ইউরোপীয় দেশে জন্মাতেন তবে ইংলণ্ডে নেলসনের যেমন স্মারক বানানো হয়েছে,সেই রকম স্মারক ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত‍্যুর পরও স্থাপিত হত।তবে ঈশ্বরচন্দ্রের স্মারক আজ বাংলার ছোট অথবা বড় ,গরীব অথবা আমীর,সব লোকের হৃদয়ে স্থাপিত।"সত‍্যি তিনি আজো ভারতবাসীর মনে অমর হয়ে আছেন আর অনন্ত কাল ধরে থাকবেনও।







বিদ‍্যাসাগর


অনাদি মুখার্জি

ভারত মাতার বীর  সন্তান  তুমি বিদ‍্যাসাগর,

দয়ালু ছিলো তোমার মন তাই তো তুমি দয়াসাগর !

সেপ্টেম্বর মাসে তুমি ধরাধামে জন্ম নিলে ,

বড়ো হয়ে ফোটালে কুসুমরাজি বঙ্গ সাহিত্যের উদ‍্যানে !

বর্ণপরিচয় ও দশমিক ধারা পাত লিখেছো এক নিমেশে,

সবার ঘরে ঘরে শিক্ষা আলো এল তোমার লেখনী তে !

গরীব দুঃখির দুঃখ দেখে হতে খুব কাতর ,

বিলিয়ে দিতে তাদের সব কিছু তোমার সাধ‍্যেরমতোন !

নারীর বেদনায় তোমার হৃদয় হয়েছিল ক্ষত,

নারীরা আজো তোমার কাছে করে মাথা নত !

নারী সমাজকে স্বপ্ন দেখালে নতুন করে  বাঁচার,

আজি এই তোমার শুভ জন্মদিনে প্রনাম জানাই শতবার !








হাইকু কবিতা

শংকর হালদার


০১ ।

সোনালী ঢেউ

ক্ষেতে ক্ষেতে আনন্দ

সবুজ স্বপ্ন ।

০২।


হারিয়ে যাবো


পাখনা মেলে দূর...


তব হাসিতে ।

০৩।


গ্রামের শেষে


সবুজ ঘর-বাড়ি


রং-তুলিতে ।

০৪।


আপন দুঃখ


আপন কর্ম দোষে


নালিশ মিথ্যা ।

০৫।


সবুজ ঢেউ


প্রাণ্ অস্তিত্ব তাতে


জীবন দাও ।










ওগো_মা_ভারতলক্ষী
       রাজু গোল্ডার

  মাগো তুমি শুনছো এই মিনতি
মাগো ওরা চাই না রাজাকুমার হতে,
দাও ওদের ভিটেমাটির দেশে ফিরতে।
শত শত কিমি পথ হেঁটে এলো ক্লান্ত হয়ে,
তবু তৃষ্ণায় কে কোন পথে আছে পড়ে।
কেউ লাশ হয়ে পারলো না ঘরে ফিরতে,
আবার কেউ খাবারের খোঁজে বসে আছে পথে।
এ দেশ তাদের পাশে কি আছে আজব,
অন্যায় অত্যাচারে ভেসে গেছে কত গুজব।
করেছিল বিশ্বাস তারা কারে দিয়েছিল অধিকার,
এই অসময়ে পাশে না দাঁড়ানোর এতো অবিচার।
তৃষ্ণায় জীবন আজও আর যাবে কত দূরে,
পড়ে আছে পথে পথে ভিক্ষা চেয়ে।
নেইতো কোথাও কাজ ফিরবে তারা ঘরে,
আজও কি সেখানে পৌঁছাতে পারবে সেই ঘরে।
শুধু দল বেঁধে চলেছে অবহেলিত হয়ে,
কখন কোথায় কার জীবন যাবে শেষ হয়ে।
কিছু মানুষ যা দিয়েছে মন ভরিয়ে,
কিছুটা পথ এগিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে।
সেই সুরে মাতোয়ারা হয়ে ফিরছে ঘরে আনন্দে, কোথাও এসে কার জীবন থেমে গেছে বিপদে।
প্রবাসীরা যেমন উজান করে ফিরলো দেশে,
পরিযায়ীরা কেন পারলো না ফিরতে অবশেষে।
মাগো ওরা কি দোষ করেছিল নিজের দেশে,
স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কেন এতো অবহেলা দেশে।
মাগো তুমি শুনছো এই মিনতি........
মাগো ওরা চাই না রাজাকুমার হতে,
দাও ওদের ভিটেমাটির দেশে ফিরতে।






তুমি তো তুমিই


        মম

তুমি কি সাগর।


তুমি তো মহাসাগর।


তুমি বিদ্যাসাগর।


তুমিই আবার দয়ার সাগর।


বর্ণে বর্ণে বর্ণে তুমি।


ধন্য জন্মভূমি।


তুমি তাই


বাংলায় গান গাই।


বাংলায় লিখি, পড়ি।


বিজ্ঞানের কথা প্রকাশ করি।


রবি কবি তো বিশ্ব করলেন জয়


তোমার বর্ণের পরিচয়


দিল তাঁকে নোবেল পুরষ্কার।


এ তো তোমারই সৃষ্টির উপহার।


তুমিই আদি সৃষ্টিকার।


অনন্য ঈশ্বর বাংলা ভাষার।












অনুগল্প 
      নবরূপা
   ডঃ রমলা মুখার্জী

বছর দুয়েক আগের ঘটনা। ট্রেনে কোচবিহার চলেছি তোর্সা সাহিত্য পত্রিকার আমন্ত্রণে। হঠাৎ একজন ভদ্রমহিলা আমার কাছে এসে বললেন, "কি রে আমায় চিনতে পারছিস?"
ভদ্রমহিলাকে আমার চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু নামটা পেটে আসছে তো মুখে আসছে না। সেই আধচেনা মুখ এক গাল হাসি নিয়ে বলল, "আমি সেই কলেজের সাধন রে, তবে এখন রূপান্তরিত হয়ে সাধনা হয়েছি।"
আমি অপার বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে অস্ফুটে বলি,
"তুই সেই আমাদের ব্যাচের সব থেকে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সাধন? কিন্তু তুই মানে-"
- হ্যাঁ, লন্ডনে পোস্ট ডক্টরেট করতে গিয়ে একেবারে অপারেশন করে পুরুষ থেকে নারী হয়ে দেশে ফিরলাম। স্বামীর সাথে যাচ্ছি দার্জিলিং হানিমুনে।"
ওর স্বামী অর্কবাবুকে ডেকে আলাপও করিয়ে দিল। আমার ফোন নং নিয়ে নবরূপা সাধনা নিজের সিটে গিয়ে বসল। হতবাক আমার আত্মকথন,"সাবাস, সাধন, তোর মেয়েলী স্বভাব নিয়ে আমরা কত হাসাহাসিই না করতাম! কিন্তু সব প্রতিকুলতা কাটিয়ে তুই অসাধ্য সাধন করেছিস।"
..................................................
দু বছর বাদে আর এক চমক! অর্কবাবু ফোনে জানালেন ওদের একটি মেয়ে হয়েছে। শুনে নবরূপা সাধনাকে জানালাম  কুর্ণিশ।








পরমাণু-কবিতা!


বিশ্বজিৎ কর

১) কোনদিন দেখিনি,


     গোলাপ ফুল -


     মায়ের খোঁপায়!


     এলোচুলে কবিতা ছিল!


২) মোমবাতির মিছিলে,


     শ্লোগান নেই -


     আছে ঝড়ের পদধ্বনি!


৩) চৌকাঠে প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখো, হয়তো আসব না ফিরে!


৪) আজও খুঁজি মা'কে,


     ছায়া থেকে ছায়াপথে -


     স্মৃতির চলমান রথে!










বন্ধু
  আব্দুল রাহাজ

বন্ধু আমার মস্ত বড়
মস্ত এক শরীর
শুধু খায় খায় করে
সে তো এক মস্ত বড় পেটুক।
টিফিন বেলার সবার টিফিন ফাঁকা করে দেয় সে একা।
সে এক বেশ আমোদ প্রমোদ
করে যে সে আমাদের সাথে বেজায় মজা।
বন্ধু আমার ভালোই ছিল
হয়েছিল একদিন ঝামেলা
পরীক্ষা নিয়ে এসে বলে চলত ওই টিফিনটা খাই
দুজনে হেসে হাত ধরাধরি করে চলি যায় যায়
এইভাবে বন্ধু আমার থাকবে আজীবন।









ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর

এমাজদ্দিন সেখ


ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা জাতের বেড়ায়  আটকে  আছি ;...


দু'শো    বছরেও  পারিনি মুক্ত হতে !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


অন্ধকারে মুখ ঢেকে কাঁদে নারী আজও লাঞ্ছিত ; ..


ধর্ষিত  মা -  পণ্য তোমার গড়ে !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আজও মজুর কিষান মেহনতি     অনাহারে মরে ;...


শয়তানি ভদ্রের  ঠুলি পড়া বাবুদের কারনে !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর ! 


শিক্ষায় আজও মোল্লা  পুরুতের চোখ রাঙানি  ;...


বেদ- পুরাণ , 'মনুবাদ'  নাচে মাথায় চড়ে !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা কার ঘরে গো-মাংস আছে সন্ধান করি ;...


যে অনাহার , নাই পোশাক ,থাকার ঘর দেখে তারে ঘৃণা করি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা অন্যায় ও অন্যায়কারীর  তোষামোদ করি ;...


অন্যায় দেখে জালিমের  মোসায়েবি  করতে চুপ করে থাকি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা পৌরুষ  চরিত্র সাধন বর্জন  করে ;...


  নপুংশক রঙ মেখে পণ্য সেজে  দাসত্ব  ভালোবাসি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর  !


আমরা বৈজ্ঞানিক যুক্তি ধারা চর্চা ত্যাগী  ;....


অন্ধ সংস্কারের গোলক ধাঁধায়  মরতে  রাজি  আছি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা বরুন -  লঙ্কেশদের হত্যা ও গুম  করে ফেলে ;...


শয়তানের ভজন সাধন  কীত্তন করি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা বুকে শয়তান , চরিত্রে  ব্যাভিচার  পুষে  রেখে ;...


তোমার ছবিতে  মালা দেবার  ভান করি !!

আবার এসো বিদ্যাসাগর !


"সাত পুরু মাটি উপড়ে ফেলে নতুন মানুষ চাষ ";...


করার গুরু ভার উত্তর সুরির  দিয়ে গেছো  !!

জাগাও 'ঈশ্বর '  বিদ্যাসাগর !


বাংলার ঘরে ঘরে নব প্রাণে ,নব সাজে ;...


যেন এই নরক পঙ্কিল  মুক্ত সাম্যের দেশ গড়তে পারে !!










২৫শে সেপ্টেম্বর
         সাফরিদ সেখ

তুমি আমাদের যতই চমকাও না কেন?
আমরা তোমার গর্জন কে ভয় পাই না।
তুমি যতই আমাদের লাঞ্ছিত অপমানিত
করতে চাও,আমরা তবুও করবো না ভয়।
তোমার পার্লামেন্ট হোক যত বলবান,
আমাদের মনোবল কভু পারবে ভাঙতে।
কাস্তে আর হাতুড়ির ঝলকানি আজ
সারা আকাশ করেছে আলোকিত।
আমাদের অধিকার হোক সুরক্ষতি
নইলে আমরা তোমার সরকার রাখবো না অক্ষত।

আজ দেখো তোমার কারণে কত মজুর
শ্রমিক,কৃষক গর্জে উঠেছে ফুঁসছে মনে মনে।
মহামারীর  ২৫ শে সেপ্টেম্বর আজ
আর এক মহাবিদ্রোহের ডাক গর্জিছে গগনে।







অবাক

গোপাল বিশ্বাস


এক যে শিশু


ক্ষুধায় কাঁদে


ভাত জোটে না কষ্ট


এক যে শিশু


খেতে চায় না


খাবার করে নষ্ট  l

এক যে শিশু


পথের পাশে


কুড়ায় খেলনা জিনিস


এক যে শিশু


দামি খেলনা


ভেঙে করে ফিনিস  l

এক যে শিশু


লেখা পড়া


রয়ে গেল বাকি


এক যে শিশু


উপরে ওঠে


অবাক চেয়ে থাকি  l

এক যে শিশু


বড় হয়ে


মা বাবাকে প্রণাম


এক যে শিশু


মা বাবাকে পাঠায়


বৃদ্বাশ্রম  l









বিদ্যাসাগর স্মরণে

        আসরাফ আলী সেখ


মলিন মর্ম মোছাতে


তুমি এসেছিলে


বাংলাতে ,


তোমার স্পর্শে উজালা হল


বিধবা নারী


জীবন ,


তোমার হাতে


বাঙালির শুরু হলো


শৈশবের ই পাঠ ,


তোমার আলোয়


ঘুচিলো কালো


কুসংস্কারের হাট ,


কত যাতনা সয়েছো


তুমি  সমাজ মুক্তির


তরে ,


সাগরের মতো উদার


তুমি , ঢেউয়ের মত


চলন ,


এসে ছিলে সংস্কার


তরে জ্ঞানের শিখা


নিয়ে,এসো


হে বীর  ,এসো সাগর


এই ভাঙা জাতির


প্রানে ,


আলোর ছোঁয়ায়


জাগিয়ে তোলো


ঘুমন্ত এই প্রানে ।








      বাবা


        হামিদুল ইসলাম


               

বাবা মানে রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা


ছেঁড়া ছাতা হাতে একটি মানুষ


সে দাঁড়িয়ে থাকে যতোক্ষণ ট্রেণ না ছাড়ে


ছেলে তার রেলযাত্রী


চাকরীর পরীক্ষা কোলকাতায়  ।

বাবা মানে একজন সংগ্রামী মানুষ


সে সংসারের হালটা ধরে নিজ হাতে


তিনটে ছেলে মেয়ে লালন পালন করে


স্কুলের খরচা খাওয়া পরা


সবই তার দায়িত্বে বর্তায়  ।

বাবা মানে একজন পুরোনো মানুষ


কখনো এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি তালগাছ


কখনো দুঃখে হৃদয় ভাঙে না তার


সাহসের সাথে পাড়ি দেয় সে সাগর


ইতিহাস তার সময়ের ঘড়ি ।

বাবা মানে ইতিহাস


বাবা মানে বহুকষ্টে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুরুষ


পৌরুষ তার বুকের পাটায়


হেঁয়ালির হাত ধরে সে পেরোয় না সাগর


বাবা মানে শ্রদ্ধায় ভরা রসের বড়ি  ।








সেপ্টেম্বর


উমর ফারুক

এই মাস বড় মাস


সবথেকে দুঃখু


উপবাস এক বেলা


গরীবও বুভুক্ষু।


এইমাসে পূজা হয়।


শারদের শুভ মাস


এই মাসে করো ঘরে


জ্বলে শুধু পোড়া বাঁশ।


পূজো দিলে নুন পরে


সব আশা মিটে যায়


ছিটিয়ে সে নূন টা।


গরীবের কাটা ঘায়।


ঠিকঠাক চলেনাকো


উনুনের চাল যার


মাঝরাতে ঘুম ডাকে


একবুক ভাবনার।


মরে যায় সুখ কারো


এই মাসে ভেবে তাই


ছিনতাই বাড়ে কভু


কোন কোন দিনটাই।










ভারতমাতার মহান সন্তান
         শিবব্র‍ত গুহ

ভারতে অনেক মহান মানুষের হয়েছিল জন্ম।
তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই নামটি শুনলেই মন ভরে ওঠে শ্রদ্ধায়। তিনি ছিলেন উনবিংশ শতকের
একজন বিশিষ্ট বাঙালী শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। ওনার প্রকৃত নাম হল
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল। এছাড়া, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর
পান্ডিত্য ছিল অগাধ। তিনি প্রথম বাংলা লিপি
সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার হলেন তিনিই।
তাঁকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে, অভিহিত করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

তাঁর ছিলেন একজন ভালো মানুষ। তিনি আজীবন মানুষের ভালো করে গেছেন। তিনি গর্বিত করেছেন দেশ ও জাতিকে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মগ্রহণ করেছিলেন
১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ব্রিটিশ ভারতের
বীরসিংহ গ্রামে। এই চলতি বছর, ২০২০ সাল হল
তাঁর দ্বিজন্মশতবর্ষ। যা খুবই আনন্দের কথা। তাঁর পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার অন্তঃপাতী বনমালিপুর নামক গ্রামে।

তাঁর বাবার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও
মায়ের নাম ছিল ভগবতী দেবী। তিনি ছিলেন
খুব মাতৃভক্ত। তাঁর মাতৃভক্তি ও পিতৃভক্তির হয় না কোন তুলনা। তিনি ছিলেন একজন মানুষের মতো মানুষ। তাঁর মাতৃভক্তি নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। তার মধ্যে একটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

একবার, তাঁর মায়ের ডাকে, তিনি ভয়ংকর দামোদর নদ সাঁতরে পার হয়ে গিয়েছিলেন
। কি অসাধারণ ঘটনা! বিদ্যাসাগর মহাশয়, অসম্ভবকে করেছিলেন সম্ভব।

চার বছর নয় মাস বয়সে, তাঁর বাবা, তাঁকে, গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দিয়েছিলেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তাঁর মেধাসত্তা ছিল অতুলনীয়।
তিনি পড়াশোনাতে কখনো অবহেলা করেননি।
১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে, পাঠশালার শিক্ষা শেষ করে, তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁর বাবার সাথে কোলকাতাতে চলে আসেন।

কথিত আছে, পায়ে হেঁটে কোলকাতা আসার সময়ে, পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে তিনি সেগুলো সহজেই আয়ত্ত
করে ফেলেছিলেন। এমনই ছিল তাঁর আশ্চর্য মেধাশক্তি! ব্যাকরণ পড়ার সময়ে, তিনি সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন
১৮৩০ সালে। ১৮৩১ সালের মার্চ মাসে, বিদ্যাসাগর, বার্ষিক পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য, মাসিক ৫ টাকা হারে বৃত্তি পেয়েছিলেন।

১৮৩৫ সালে, ইংরেজি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রূপে,
বিদ্যাসাগর, পারিতোষিক পান। তাঁর একটা মহান গুণ ছিল। তিনি একজন বিরাট পন্ডিত মানুষ ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তাঁর মধ্যে কখনো পান্ডিত্যের অহংকার দেখা যায়নি। তিনি দ্বিতীয় বর্ষে, সাহিত্য পরীক্ষায় অধিকার করেছিলেন
প্র‍থম স্থান। তিনি মাত্র পনেরো বছর বয়সে,
প্রবেশ করেছিলেন অলংকার শ্রেণীতে।

অলংকার শাস্ত্র কিন্তু একটি খুব কঠিন বিষয়।
কিন্তু, তিনি মাত্র ১ বছরের মধ্যেই, সাহিত্য দর্পণ,
কাব্য প্রকাশ, রসগঙ্গাধর প্রভৃতি অলংকার গ্রন্থে,
ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। যা দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল। ১৮৩৬ সালে,
তিনি শেষ করেছিলেন তাঁর অলংকার পাঠ।
১৮৩৮ সালে, তিনি বেদান্ত পাঠ সমাপ্ত করেছিলেন। এই পরীক্ষায় তিনি অর্জন করেছিলেন প্রথম স্থান।

তাঁর জন্মের সময় তাঁর পিতামহ তাঁর বংশের ধারা অনুযায়ী, তাঁর নাম রেখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৩৯ সালের ২২শে এপ্রিল, তিনি হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
সেই পরীক্ষাতে তিনি বিরাট কৃতিত্বের সাথে
হয়েছিলেন উত্তীর্ণ। যা ছিল তাঁর জীবনের এক
অসামান্য সাফল্য।

সংস্কৃত কলেজে, বারো বছর পাঁচ মাস অধ্যয়নের
পরে, তিনি এই কলেজ থেকে একটি প্রশংসাপত্র
লাভ করেছিলেন।
১৮৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে, তাঁর প্রাপ্ত দেবনাগরী হরফে লিখিত এই সংস্কৃত প্রশংসাপত্রে,
কলেজের অধ্যাপকেরা, ঈশ্বরচন্দ্রকে অভিহিত
করেছিলেন " বিদ্যাসাগর " নামে।

বিদ্যাসাগর, মাত্র একুশ বছর বয়সে, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান পন্ডিতের পদে আবৃত হন। তখন তাঁর বেতন ছিল
মাসে ৫০ টাকা।
১৮৪৬ সালের ৫ ই এপ্রিল অবধি, তিনি এই পদের
দায়িত্বে ছিলেন। ১৮৪৬ সালের ৬ ই এপ্রিল, একই
বেতন হারে, তিনি সংস্কৃত কলেজের সহকারী
সম্পাদকের ভার গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে,
তিনি স্থাপন করেন সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি নামে একটি বইয়ের দোকান।

এই বছরেই, প্রকাশিত হয়েছিল, হিন্দি বেতাল পচ্চিসী অবলম্বনে রচিত তাঁর বই বেতাল
পঞ্চবিংশতি। প্রথম বিরাম চিহ্নের সফল ব্যবহার হয়েছিল এই বইতে। ১৮৪৯ সালে,
মার্শম্যানের হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে,
তিনি রচনা করেন বাঙ্গালার ইতিহাস দ্বিতীয় ভাগ
গ্রন্থখানি। ১৮৫০ সালের আগস্ট মাসে, মদনমোহন
তর্কালঙ্কারের সাহায্যে, তিনি সর্ব্বশুভকরী পত্রিকা
করেছিলেন প্রকাশ।

বিদ্যাসাগরের কর্মকান্ডের সীমা পরিসীমা ছিল না।
তিনি যা যা কাজ করেছেন সারা জীবন ধরে, তা
সবই মানুষের কল্যাণের জন্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রের মধ্যে দেখা যায়
বহুবিধ গুণের সমাবেশ। তাঁর চরিত্র ছিল কঠোর ও কোমলের সংমিশ্রণ। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন
একজন প্রখর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। সকলেই তাঁর ব্যক্তিত্বকে
করতো প্রবল শ্রদ্ধা। তিনি সবসময় মনে করতেন, যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মাথা নত করে কাজ করার থেকে সেই কাজ থেকে অবসর নেওয়া অনেক বেশি ভালো।

ইংরেজদের তিনি কখনো প্রভুর দৃষ্টিতে দেখতেন না। দেশের দরিদ্র অসহায় মানুষদের প্রতি তাঁর মন ছিল সহানুভূতিতে ভরা। তাঁদের দুঃখ - দুর্দশা,
ব্যথা, বেদনা, কষ্ট, যন্ত্রণা তাঁর হৃদয়কে সবসময় করে রাখতো ভারাক্রান্ত। তিনি সদা সর্বদা তাদের
দুঃখ নিরসনের চেষ্টা করতেন। তাঁর দয়া মায়ার কোন সীমা ছিল না।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বলা হয় দয়ার সাগর।
তিনি সারাজীবন ধরে কত মানুষের যে উপকার করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। কেউ কখনো অর্থসংকটে পড়ে, তাঁর কাছে সাহায্যের জন্য এলে, তিনি কখনোই কাউকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেননি। অনেক দরিদ্র ছাত্র, তাঁর দেওয়া
অর্থে, পড়াশোনা ও খাওয়াপরা চালাতো।

দুর্ভিক্ষের সময়, তিনি অন্নসত্র খুলে, সবাইকে দুই বেলা সেখানে খাওয়াতেন। যারা এখানে এসে খেতে লজ্জা পেতেন, তাদের তিনি, বাড়িতে গোপনে চালডাল বা টাকা পাঠাতেন। এজন্য তিনি
কখনো লোকের দানের ওপরে নির্ভর করতেন না।
সব খরচ নিজে করতেন। একবার, বিখ্যাত কবি
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিদেশে ঋণগ্রস্ত হয়ে,
যখন তাঁর কাছে অর্থসাহায্য চেয়েছিলেন,
তখন তাঁর নিজের কাছে অর্থ ছিল না। তিনি ধার করে মাইকেলকে সাহায্য করেছিলেন। এমনই মহান মানুষ ছিলেন বিদ্যাসাগর।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে মনে করা হয়, বাংলার প্রথম সার্থক গদ্যকার। তিনি সর্বপ্রথম বাংলা সাধু গদ্যের একটি মান্য ধ্রুবক নির্দেশনা করেছিলেন।
প্রয়োজনবোধে তিনি, সেই গদ্যে চলিত ভাষার গতিশীলতা যুক্ত করেন। তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যের নব জন্মদাতা। সংস্কৃত কাব্যসাহিত্যে,
তাঁর খুব দক্ষতা ছিল। আবার, নিজের চেষ্টায়, তিনি ইংরেজি ভাষা শিখে সেই ভাষার সাহিত্যের
সাথে সম্যক পরিচিত হয়েছিলেন।

সংস্কৃত শব্দ ও পদবিন্যাসের শ্রুতিমাধুর্য ও
গাম্ভীর্যকে তিনি স্থান দিয়েছিলেন বাংলা গদ্যে।
কাব্যিক ছন্দোময়তায় গদ্যকে দিয়েছিলেন এক ললিত রূপ। ইংরেজি সাহিত্যের আদর্শে,
যতিচিহ্নের ব্যবহার করে, বাংলা সাহিত্যে এক
নবদিগন্তের তিনি করেছিলেন সূচনা।

" শকুন্তলার অধরে নবপল্লবশোভার
সম্পূর্ণ আবির্ভাব ; বাহুযুগল কোমল
বিটপের বিচিত্র শোভায় বিভূষিত ;
আর, নব যৌবন, বিকশিত
কুসুমরাশির ন্যায়, সর্বাঙ্গ ব্যাপীয়া
রহিয়াছে৷ ( শকুন্তলা, প্রথম পরিচ্ছেদ)। "

- কি অসাধারণ সৃষ্টি বিদ্যাসাগরের! এর কোন তুলনাই হয় না। কি অপূর্ব শব্দচয়ন তাঁর! বাংলা
গদ্য সাহিত্যকে নানা অলংকারে সমৃদ্ধ করেছিলেন
তিনি।

তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছিলেন, " বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যভাষার উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত, সুবিন্যস্ত,
সুপরিচ্ছন্ন ও সুসংহত করিয়া তাহাকে সহজ গতি
ও কর্মকুশলতা দান করিয়াছিলেন। "

তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো বাংলা সাহিত্যের এক একটি
সম্পদ। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি ঃ

বর্ণপরিচয় ১ম ও ২য় ভাগ ১৮৫৫, ঋজুপাঠ প্রথম,
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগ ১৮৫১ - ১৮৫২, সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা ১৮৫১, ব্যাকরণ কৌমুদী
১৮৫৩, শকুন্তলা ১৮৫৪, সীতার বনবাস ১৮৬০,
বাঙ্গালার ইতিহাস ১৮৪৮, জীবনচরিত ১৮৪৯,
নীতিবোধ ১৮৫১, বোধোদয় ১৮৫১, কথামালা ১৮৫৬, চরিতাবলী ১৮৫৭, ভ্রান্তিবিলাস ১৮৬১,
প্রভৃতি।

বাংলা তথা ভারতে নারীশিক্ষার প্রসারে বিরাট অবদান ছিল যে মানুষটির, তিনি আর কেউ নন,
তিনি হলেন আমাদের সবার সবার প্রিয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলা তথা ভারতের নারীজাতি যখন শিক্ষার আলো থেকে ছিল বঞ্চিত, অবহেলিত, তখন এই নারীজাতিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করেছিলেন। এই মহান কাজ করতে গিয়ে তাঁকে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়।

কিন্তু, তিনি তা করেছিলেন অগ্রাহ্য। তিনি ছিলেন তাঁর সংকল্পে অটল। তাঁর গতিরোধ কেউ পারেনি করতে। তিনি ও ড্রিংকওয়াটার বিটন উদ্যোগী হয়ে, কোলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিদ্যাসাগর ছিলেন
এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। এই বিদ্যালয় বর্তমানে
বেথুন স্কুল নামে পরিচিত। ১৮৫৭ সালে, বর্ধমান জেলায়, তিনি মেয়েদের জন্য একটা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় এক সম্মেলনীর সূচনা করেছিলেন। সেযুগে দাঁড়িয়ে এ ছিল এক অভাবনীয় উদ্যোগ। যার প্রশংসা করেছিলেন অনেকে। এর নাম ছিল স্ত্রী শিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে,
১৮৫৮ সালের মে মাসের মধ্যে, নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।

সত্যিই এই উদ্যোগ বিরাট প্রশংসনীয়। ১৮৬৪ সালে, বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। সেটা গিয়ে দাঁড়ায় ২৮৮ টিতে। এর পেছনেও বিদ্যাসাগরের বিরাট ভূমিকা ছিল।নারীরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে
এক নতুন জীবন ফিরে পেল। সারা দেশজুড়ে নারীজাতির মধ্যে এক অপূর্ব সাড়া পড়ে গেল।
এসবই সম্ভব হয়েছিল একমাত্র, শুধু একমাত্র,
বিদ্যাসাগরের জন্য।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সারাজীবন ধরে অনেক মহান কাজ করেছিলেন। তার মধ্যে একটি হল
সমাজে বিধবা বিবাহের প্রচলন করা। এই কাজ
করতে গিয়ে তিনি অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। কেউ কেউ তাঁর প্রচন্ড সমালোচনা করে। কিন্তু, বিদ্যাসাগর ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি অসম্ভবকে করেছিলেন সম্ভব।
বাংলা তথা ভারতের বুকে তিনি স্থাপন করেছিলেন এক নতুন দৃষ্টান্ত।

বিদ্যাসাগর সংস্কৃত সাহিত্যের এক বিরাট পন্ডিত মানুষ ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি ছিলেন একজন উদার মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি। তিনি খোলামনে
পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি ছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের একজন
প্রবল সমর্থক। সেযুগে, মেয়েদের অল্প বয়সে
বিয়ে হয়ে যেত। সেকালের হিন্দু বিধবা নারীদের
প্রতি যে অত্যাচার হতো, তা ছিল অবর্ণনীয়।

সেকালের হিন্দু বিধবা নারীদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার বিদ্যাসাগরের হৃদয়কে করেছিল
ব্যথিত। তিনি এর প্রতিরোধ কিভাবে করা যায়?
তার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি এই সংগ্রাম
করেছেন বীরত্বের সাথে। এই বীরত্বের হয় না কোন তুলনা।

তিনি হিন্দুশাস্ত্র উদ্ধৃত করে, প্রমাণ করেছিলেন,
যে, লোকাচার ধর্মের নামে সমাজের বুকে যে প্রচলিত আছে, আসলে তা ধর্ম স্থবিরতার আচারমাত্র। তাঁর এই সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত হয়েছিল সফল। ১৮৫৬ সালে, ব্রিটিশ সরকার,
বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
তবে, শুধু আইন প্রণয়ন করেই থেমে যাননি বিদ্যাসাগর। তিনি এক অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন সেযুগে দাঁড়িয়ে। তাঁর উদ্যোগে,
একাধিক বিধবা বিবাহের আয়োজন করা হয়েছিল।

বাংলার বিধবা নারীরা ফেলেছিল স্বস্তির নিঃশ্বাস।
তারা পেয়েছিল এক নতুন জীবনের আস্বাদ।
এর মূল কৃতিত্ব ছিল বিদ্যাসাগরের, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হলেন ভারতমাতার এক বীর সন্তান। তিনি চিরকাল সমাজের বুকে ঘটে চলা অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। করেছেন তিনি বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিজন্মশতবর্ষে, তাঁর প্রতি জানাই আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ও প্রণাম।
তিনি চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে।

( তথ্য সংগৃহীত )




লিমেরিক
সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

ঢাক বাজাও ঢোল বাজাও, থালা বাটি বাজা
দে বুঝিয়ে সব ব্যাটাকে, আমি দেশের রাজা
কেউ যদিরে ভোলে
ভর ব্যাটাকে জেলে
দেশান্তরে পাঠালে তবেই, বুঝবে তখন মজা।


আলোর শিখা বিদ‍্যাসাগর
      মিনতি গোস্বামী

আলোর শিখা জ্বালিয়ে দিয়ে
খুলেছো বন্ধ দ্বার
সবার চোখে দিতে চেয়েছো
সূর্য সম বাহার।

সিংহশিশু নামেই খ‍্যাত
বিদ‍্যাসাগর নাম
জন্মে তোমার আলোর খ‍্যাতি
বীরসিংহ ধাম।

বর্ণমালার পরিচয়েই
হয় স্বপ্ন সফল
দুই শতাব্দী আগেই তুমি
ফেরালে মনোবল।

মুক্তচিন্তার শপথ নিয়ে
ঘোচালে সংস্কার
আইন করে তুমিই দিলে
বিয়ে তো বিধবার।

বোধোদয় ও.  কথামালায়
জাগে নতুন ভোর
দুই শতাব্দী পরেও দেখি
কাটে আঁধার ঘোর।

কঠিন দিন নামে আঁধার
বাতাস ভরা বিষ
মানবতার কিংবদন্তী
প্রণাম অহর্নিশ।




আল্লাহ মহান
        জুয়েল রুহানী

দৃষ্টি সবার যায় যতদূর
সৃষ্টি সু-মহান,
নাজ-নেয়ামত তাঁরই স'বি-
প্রভূর প্রতিদান।

গাছ-গাছালি, পাঁখ পাঁখালি
আল্লাহরই দান,
বৃক্ষ ভরা ফল-ফলাদি-
পাঁখির কন্ঠে গান।

আকাশ-বাতাস, পাহাড়-সাগর
নদীর কলতান,
সব কিছুরই স্রষ্টা তিঁনি-
আল্লাহ মেহেরবান।

মানবজাতী, প্রাণীকূলে-
রিযিক করেন দান,
জ্বীন-ইনসান,ফেরেশতা গায়
প্রভূর গুনগান।



বিদ্যাসাগর
        জাহাঙ্গীর দেওয়ান

বীর সিংহে মেদিনী পুরেই ভগবতীর তরে,
বিদ্যা ও দয়ার সাগর ঠাকুর দাসের ঘরে।
ঊনিশ শ'- এ কুড়ির ছাব্বিশে সেপ্টেম্বরে,
দারিদ্রতায় জন্ম নিলেন এক অনাড়ম্বরে।

পায়ে হেঁটেই রাস্তা চলা মাইলফলক চিনে,
পড়তেবসা পথের আলোয় তেল না কিনে।
নৌকা নেই, সাঁতরে নদী পার মায়ের টানে,
সাংস্কৃতি টোল মেদিনীপুরের সবাই জানে।

'শিশুশিক্ষা'-য় চমকপ্রদ, বিকল্প নেই যার,
'বর্ণপরিচয়,কথামালা'-র জুড়ি মেলা ভার।
দরিদ্রকে ভালোবাসো আদেশ ছিল মা'-র,
এই ভারতেই বিদ্যাসাগর তৈরি হবে আর?

বিধবা বিবাহ প্রচলন-তিনিই করেন দেশে,
প্রথম পাঠান ছেলেকে বিধবা'র বর বেশে।
প্রমাণ দিলেন নিজের ঘরে বধু নিয়ে এসে,
উদারনীতি মেনেই নিল ভারতবাসি শেষে।

ছিলেন শ্যামলাবরণ যশুরেকই হেড়োমাথা,
উপকার করলে গালখেতে হয় উনার কথা।
উইলিয়াম কলেজে পন্ডিতজী প্রধান হোতা,
মতানৈক্যে সেসয়য়ে নকরি ছাড়ে বঙ্গছাতা।





সেইদিন
        শুকদেব পাল

যেদিন চাঁদের আলো পৃথিবীকে ছুঁয়ে ফিরে যায় শূন্যে কেবল আমাকে আড়াল করে
সেদিন নিজেকে একা লাগে ।
যে ভোরে কাক ডেকে যায় ঘরের চার পাশে মনে হয় সেই মুহূর্ত যেন নতুন বিপদ ফিরে আসছে !
যেই দুপুরে রৌদের কণা গুলিও শরীরে বিঁধে
তখন নিজেকে বিবশ অনুভব করি ।
চেনা মানুষগুলো যখন মুখ ফিরিয়ে চলে যায় তখন নিজেকে .....ভিন জগতের মনে হয় ।
যে রাত্রে শিয়ালের ধ্বনি শোনা যায় সে রাত ভয়ানক অসীম কালো নিশুতি যুগ ।
যে সময় সমাজ তোমায় উপেক্ষা করে মনে রেখো তুমি আরো পরিণত আরও কঠিন ...
যে চাপে তুমি অঙ্গার হয়েছো মনে রেখো তাতেই একদিন আগুন জ্বলবে ,পুড়বে ওদের মুখ ---
সেদিন পৃথিবীতে আসবে আঘাত ,কাঁদবে মানুষ ভাঙবে তাসের ঘর বুঝবে ওদের  প্রয়োচিত্তের  সময় এসেগেছে ,আর তোমারও জয় সুনিশ্চিত ।
দিশেহারা খড়কুটোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে আশ্রয়ের সন্ধানে , করে কিন্তু আশ্রয় ----
সেদিন মাতাল হওয়ায় ঘুড়িটা পাঁক খাবে
আর সুতো লাটাই কিন্তু তোমার হাতেই থাকবে ।


বলতে চাই
      তৃণা মুখার্জী

চিৎকার করে করে সবাইকে বলতে চাই ...আমি কতটা পারি।
আমি কতটা উন্নত।
কতটা আর্দশ বাদী।
কতটা সমাজ ও দশজনের কথাকে মূল্য দি।
আমি ভবিষ্যতের কথা ভাবি।
ভবিষ্যতের কারিগরদের পথ দেখাই।
আমি পারি ‌।
কিন্তু মন তো আমার অন্য খাতে বইছে।
আমি বড্ড মেকি।
আমি ছলনা করি নিজের সঙ্গে।
আমার শত্রু ,আমি নিজেই।
আমার ভয় কি।
আমি নিজেকে জয় নাই বা করলাম, নিজের মেকি,ভন্ডতাকে  লুকিয়ে অন্যের ভালো চাই আমি।





সেইদিন
         শুকদেব পাল

যেদিন চাঁদের আলো পৃথিবীকে ছুঁয়ে ফিরে যায় শূন্যে কেবল আমাকে আড়াল করে
সেদিন নিজেকে একা লাগে ।
যে ভোরে কাক ডেকে যায় ঘরের চার পাশে মনে হয় সেই মুহূর্ত যেন নতুন বিপদ ফিরে আসছে !
যেই দুপুরে রৌদের কণা গুলিও শরীরে বিঁধে
তখন নিজেকে বিবশ অনুভব করি ।
চেনা মানুষগুলো যখন মুখ ফিরিয়ে চলে যায় তখন নিজেকে .....ভিন জগতের মনে হয় ।
যে রাত্রে শিয়ালের ধ্বনি শোনা যায় সে রাত ভয়ানক অসীম কালো নিশুতি যুগ ।
যে সময় সমাজ তোমায় উপেক্ষা করে মনে রেখো তুমি আরো পরিণত আরও কঠিন ...
যে চাপে তুমি অঙ্গার হয়েছো মনে রেখো তাতেই একদিন আগুন জ্বলবে ,পুড়বে ওদের মুখ ---
সেদিন পৃথিবীতে আসবে আঘাত ,কাঁদবে মানুষ ভাঙবে তাসের ঘর বুঝবে ওদের  প্রয়োচিত্তের  সময় এসেগেছে ,আর তোমারও জয় সুনিশ্চিত ।
দিশেহারা খড়কুটোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে আশ্রয়ের সন্ধানে , করে কিন্তু আশ্রয় ----
সেদিন মাতাল হওয়ায় ঘুড়িটা পাঁক খাবে
আর সুতো লাটাই কিন্তু তোমার হাতেই থাকবে ।





  বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :

   || কবিতার রূপকল্প : পর্ব  - ৬  ||

    ( ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত-- শেষ অংশ )

                সৌম্য ঘোষ
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""''''""'''''''''''''''''''''''''
              
                        ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন মজলিশি স্বভাবের কবি, রঙ্গ-ব্যঙ্গেই তাঁর কবিতা ভালো খুলতো । কবি বিষ্ণু দে তাঁকে প্রশংসা করেন। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত পারিপার্শ্বিক জীবন, নতুন কলকাতা শহরের জীবন ইত্যাদি নিয়ে কবিতা লিখতেন। অদম্য কৌতুকবোধের সরসতা মিশিয়ে । তাঁর লেখা অনেক ছত্র প্রবাদের মর্যাদা পেয়েছে । যেমন , " এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরে "। তিনি "সংবাদ প্রভাকর "এর সম্পাদক ছিলেন । ব্যক্তিগতভাবে তিনি সাংবাদিকও ছিলেন। সমকালের সমাজ সম্পর্কে সচেতন সাংবাদিক ও কবি।  ইংরেজ ললনার সম্পর্কে লিখেছিলেন,

    " বিড়ালাক্ষী বিধুমুখী মুখে গন্ধ ছোটে।
       আহা আয় রোজ রোজ কত রোজ ফোটে ।।"

বাঙালি ধনীদের সম্পর্কে লিখেছিলেন,

        " কর্তাদের গালগপ্প গুড়ুক টানিয়া ।
          কাঁঠালের গুড়ি প্রায়  ভূড়ি এলাইয়া।।"

পুরানো পন্থী ও নব্য পন্থীদের সম্বন্ধে ,

         " একদিকে কোশাকুশি আয়োজন নানা।
           আর দিকে টেবিলে ডেভিল খায় খানা।।"

                  কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কার ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সমকালীন। সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক ইংরেজীও জানতেন তিনিও পুরানো পন্থী কবি । সমাজ চিন্তায় প্রগতিশীল মনন ও চিন্তন ছিল মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মধ্যে। তিনি বিধবা বিবাহ, স্ত্রীশিক্ষা প্রভৃতির সমর্থক ছিলেন এবং জাতিভেদের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু কাব্য রচনার ক্ষেত্রে ছিলেন রক্ষণশীল তাঁর জনপ্রিয় পংক্তি :

  " পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল
     কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল ।। "

বাংলার লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২৭-- ১৮৮৭ ) ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত পন্থী এবং "সংবাদ-প্রভাকর" এর শিক্ষানবিশি। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ঈশ্বর গুপ্ত" সংবাদ প্রভাকর" পত্রিকার সম্পাদনা নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে "সংবাদ রত্নাবলী "পত্রিকার সম্পাদক হন ।' সংবাদ প্রভাকর' ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। তিনি এটিকে দৈনিকে রূপান্তরিত করেন। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে "সাপ্তাহিক পাষণ্ড" পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। "সংবাদ সাধুরঞ্জন" পত্রিকার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন এবং কবিগান বাঁধতেন ।প্রায় বারো বছর গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রাচীন কবিওয়ালাদের তথ্য সংগ্রহ করে জীবনী গ্রন্থ রচনা করেন ।

                   ইশ্বরচন্দ্র প্রথম জীবনে অত্যন্ত রক্ষণশীল ছিলেন। তিনি হিন্দু কলেজের শিক্ষা পদ্ধতি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিরোধিতা করতেন । পরবর্তীকালে থিওফিলান্থ্রপিক সভা, তত্ত্ববোধিনী সভা ও জোড়াসাঁকোর সংস্পর্শে এসে তাঁর রক্ষণশীল পুরানো পন্থী মানসিক গোঁড়ামি মুক্ত হয় ।

                   ঈশ্বরচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যুগসন্ধির কবি হিসেবে পরিচিত, কারণ তিনি সমকালের সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা করলেও তাঁর ভাষা, ছন্দ ও অলঙ্কার ছিল মধ্যযুগীয়। মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্রের সাহিত্যাদর্শ যখন লুপ্ত হয়ে আসছিল, তখন তিনি বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে খন্ডকবিতা রচনার আদর্শ প্রবর্তন করেন। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপই ছিল তাঁর রচনার বিশেষত্ব। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের এ ভঙ্গি তিনি আয়ত্ত করেছিলেন কবিয়ালদের নিকট থেকে। ব্যঙ্গের মাধ্যমে অনেক গুরু বিষয়ও তিনি সহজভাবে প্রকাশ করতেন।

                     স্বদেশ ও স্বসমাজের প্রতি ঈশ্বরচন্দ্রের অনুরাগ ছিল অত্যন্ত নিবিড়। তিনি বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য যে আন্দোলন করেছেন তা আজ স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি সবসময় ইংরেজি প্রভাব বর্জিত খাঁটি বাংলা শব্দ ব্যবহার করতেন। ভাষা ও ছন্দের ওপর তাঁর বিস্ময়কর অধিকারের প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর বোধেন্দুবিকাশ (১৮৬৩) নাটকে।

                      ঈশ্বরচন্দ্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, নিধুগুপ্ত, হরু ঠাকুর ও কয়েকজন কবিয়ালের লুপ্তপ্রায় জীবনী উদ্ধার করে প্রকাশ করা। পরবর্তীকালের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের জন্য একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করার কৃতিত্বও তাঁর। যদিও ঈশ্বরচন্দ্রের কাব্যরীতি পরবর্তীকালের বাংলা সাহিত্যে আর অনুসৃত হয়নি, তথাপি এ কথা স্বীকার্য যে, ভবিষ্যৎ বাংলা সাহিত্যের জন্য তাঁর গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও আদর্শ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

                  বাংলা সাহিত্যে তাঁর চিরস্থায়ী আসন লাভ হয়েছে। মধ্যযুগের দেবমাহাত্ম্য ব্যঞ্জক বিষয় থেকে বাংলা সাহিত্যকে তিনি মুক্ত করেন । এমনকি তৎকালীন কবিওয়ালাদের জিম্মা থেকে বাংলা কবিতাকে বৈদগ্ধ ও মার্জিত রুচির আলোয় আনেন । স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে " গুরু" মানতেন।
               ২৩শে জানুয়ারি, ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় পরলোকগমন করেন।।