উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 30/09/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 30/09/2020
উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 30/09/2020 |
বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :
কবিতার রূপকল্প : পর্ব ৯
বাংলা কাব্যে মহাকাব্য ও গাথাকাব্য ধারা
সৌম্য ঘোষ
" মেঘনাদবধ কাব্য" রচিত হবার পর বাংলা কাব্যজগতে সাহিত্যিক কাব্যধারার প্রবর্তন দেখা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যায় পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত ছিল । সেই সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৮৩৮--১৯০৩) রচিত "বৃত্রাসংহার কাব্য" দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল এর আগে তিনি লিখেছিলেন বীর রসাত্মক কাব্য "বীরবাহু"। মধুসূদনের "মেঘনাদবধ কাব্যে" রাবণ দৈব চক্রান্ত ও বিধিলিপি বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে । "বৃত্রাসংহার কাব্যে " ইন্দ্রের বিরুদ্ধে দানবরাজ বৃত্রাসুরের বিদ্রোহের কাহিনী । স্বর্গ নির্বাসিত নৈমিষারণ্য বাসিনী শচী যেন অশোক কাননের সীতা । রুদ্রপীড় অনেকটাই ইন্দ্রজিতের ধাঁচে পরিকল্পিত। সমসাময়িক সমালোচকেরা এমনকি কিশোর রবীন্দ্রনাথ "বৃত্রসংহার "এর প্রশংসা করেছিলেন।
তৎকালীন সময়ের আর এক উল্লেখযোগ্য কবি নবীনচন্দ্র সেন ( ১৮৪৭-১৯০৯) "পলাশীর যুদ্ধ " নামে এক মহাকাব্য লেখেন । পাঁচ সর্গে সমাপ্ত এই কাব্যের নায়ক মোহনলাল । নবীনচন্দ্র সেন কাল্পনিক ইতিহাস অবলম্বনে এক আখ্যান কাব্য লেখেন "রঙ্গমতী "। যাকে সুকুমার সেন বলেছেন, ' পদ্যে লিখিত উপন্যাস' । নবীনচন্দ্রের উল্লেখযোগ্য রচনা------ রৈবতক, কুরুক্ষেত্র এবং প্রভাস । পুরান অবলম্বনে এই ত্রয়ী মহাকাব্য কে সাহিত্য সম্রাট আখ্যা দিয়েছিলেন, "Mahabharat of the nineteenth century".
নবীনচন্দ্র সেন বলতেন, " কবিরা কালের সাক্ষী, কালের শিক্ষক " ।
একটি পর্যায়ের পর এই বীর রসাত্মক মহাকাব্যের ধারা লুপ্ত হয়ে যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম আদর্শ কবি কায়কোবাদ ( ১৮৫৮--১৯৫২) । তিনি প্রথম জীবনে লিখেছেন গীতিকাব্য। দ্বিতীয় পর্যায়ে মহাকাব্য এবং তৃতীয় পর্যায়ে নানা ধরনের কাব্য । কায়কোবাদ তাঁর কবিতায় মুসলমানগণের অতীত গৌরব এর জন্য শ্লাঘা বোধ করেছেন । আবার বর্তমান পতনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাঁর অন্যতম রচনা------ অশ্রুমালা, শিব মন্দির ,অমিয়ধারা, শ্মশান ভস্ম ,মহরম ,শরীফ উল্লেখযোগ্য। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন অনল প্রবাহ কাব্য । মুসলমানের দুরবস্থার জন্য বেদনা এবং শাসক ইংরেজদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ। এই ক্ষোভের কারণে কাব্যটি বাজেয়াপ্ত হয় । সেই সময়ে আরও একজন উল্লেখযোগ্য কবি মোজাম্মেল হক ( ১৮৫৮--১৯৩৩) । তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি হযরত মোহাম্মদ কাব্য ।
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
বিহারীলাল চক্রবর্তী এবং অন্যান্য
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
মহাকাব্য ধারার ঈষৎ পর থেকে প্রায় সমান্তরালভাবে একটি স্বতন্ত্র কাব্যধারা প্রবাহিত হতে শুরু করল। যাকে রূপককাব্য- গাথাকাব্য ধারা বলা হয়। এই কাব্য গুলিতে বস্তুতন্মতার দিক থেকে সরে এল আত্ম- তন্ময়তার দিকে। এই ধারার প্রধান কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-- ১৮৯৪) এবং দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর । তৎকালীন সময়ে প্রধান কবি ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী। তাঁর মনের চারিদিক ঘিরে যে" কবিত্বের একটি রশ্মি মন্ডল" ছিল তা-ই তাঁকে কাব্য রচনায় অনুপ্রাণিত করত । তাঁর কাব্য ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং অন্তরঙ্গ। বিহারীলালের প্রথম কাব্য "সংগীত শতক ও বাউল বিংশতি " মূলত: নিধু বাবু ও রাম বসুর ধারায় সংকলিত । বিহারীলাল চক্রবর্তীর প্রধান কাব্যগুলি --------- নিসর্গ সন্দর্শন ,বঙ্গসুন্দরী, সারদামঙ্গল এবং সাধের আসন । বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কাব্য "সারদামঙ্গল"। তাঁর কবিতার ভাষা বাগ্মিতাময় নয় , lyrical ballads - ওয়ার্ডসোয়ার্থ যেমন, তেমনি বিহারীলালের কবিতার ভাষা মানুষের মুখের ভাষার কাছাকাছি।
বিহারীলালের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি নয়, কিন্তু নিজ উদ্যোগে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য অধ্যয়ন করেন এবং অল্প বয়সেই কবিতা লেখা শুরু করেন। তাঁর পূর্বে বাংলা গীতিকবিতার ধারা প্রচলিত থাকলেও এর যথার্থ রূপায়ণ ঘটে তাঁর হাতেই। তিনি বাংলা কাব্যের প্রচলিত ধারার রদবদল ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার প্রবর্তন করেন। এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্য দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। তাঁর রচনায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য কবিদের প্রভাব থাকলেও নিজস্ব রীতিই ফুটে উঠেছে। বিহারীলাল বস্ত্ততন্ময়তার পরিবর্তে বাংলা কাব্যে আত্মতন্ময়তা প্রবর্তন করেন। বাংলা কবিতায় তিনিই প্রথম কবির অন্তর্জগতের সুর ধ্বনিত করে তোলেন। তাঁর কবিতায় রূপ অপেক্ষা ভাবের প্রাধান্য বেশি। প্রকৃতি ও রোম্যান্টিকতা, সঙ্গীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষা এবং তৎসম ও তদ্ভব শব্দের যুগপৎ ব্যবহার বিহারীলালের কাব্যকে করেছে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তাঁর কবিতার বিষয়-ভাবনা, প্রকাশভঙ্গির অভিনবত্ব, অনুভূতির সূক্ষ্মতা, সৌন্দর্য প্রকাশের চমৎকারিত্ব, ছন্দ-অলঙ্কারের অভূতপূর্ব ব্যবহার অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পঁয়ত্রিশ বছরের কবিজীবনে বিহারীলাল অনেক গীতিকাব্য ও রূপককাব্য রচনা করেছেন।
বিহারীলালের রচনাবলির মধ্যে স্বপ্নদর্শন (১৮৫৮), সঙ্গীতশতক (১৮৬২) বন্ধুবিয়োগ (১৮৭০), প্রেমপ্রবাহিণী (১৮৭০), নিসর্গসন্দর্শন (১৮৭০), বঙ্গসুন্দরী (১৮৭০), সারদামঙ্গল (১৮৭৯), নিসর্গসঙ্গীত (১৮৮১), মায়াদেবী (১৮৮২), দেবরাণী (১৮৮২), বাউলবিংশতি (১৮৮৭), সাধের আসন (১৮৮৮-৮৯) এবং ধূমকেতু (১৮৯৯) উল্লেখযোগ্য। নিসর্গসন্দর্শন কাব্যে বিহারীলাল বঙ্গপ্রকৃতির শোভা অপূর্ব ভাব-ভাষা ও ছন্দ-অলঙ্কার প্রয়োগের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। বঙ্গসুন্দরী কাব্যে কয়েকটি নারী চরিত্রের মাধ্যমে তিনি গৃহচারিণী বঙ্গনারীকে সুন্দরের প্রতীকরূপে বর্ণনা করেছেন। সারদামঙ্গল কাব্য বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ রচনা। এটি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি স্তম্ভস্বরূপ। এর মাধ্যমেই তিনি উনিশ শতকের গীতিকবিদের গুরুস্থানীয় হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ এ কাব্যটি পড়ে নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছেন এবং বিহারীলালকে আখ্যায়িত করেছেন ‘ভোরের পাখি’ বলে।
বিহারীলালের পথের পথিক সুরেন্দ্র নাথ মজুমদার (১৮৩৮--১৮৭৮) । তিনি গার্হস্থ্য প্রেমের কবি। সমসাময়িক ছিলেন কবি অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী ( ১৮৫০--১৮৯৮) । তাঁর কবিতায় ছিল শেক্সপিয়ার বায়রনের সঙ্গে বৈষ্ণব পদাবলীর কাব্যগীতি পরম্পরা । তাঁর কয়েকটি গান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্মিকী প্রতিভা য় অন্তর্গত করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্ৰজ দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের "স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্য" বাংলা ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ রূপককাব্য । রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, " স্বপ্নপ্রয়াণ যেন একটা রূপকের অপরূপ রাজপ্রাসাদ ।" রূপক কাব্যধারায় আরো লেখা হয়েছিল হেমচন্দ্রের "আশাকানন এবং ছায়াময়ী।" এই ধারার আরেক উল্লেখযোগ্য কবি শিবনাথ শাস্ত্রী ( ১৮৪৭--১৯৯১) । তিনি লিখেছিলে "নির্বাসিতের আত্মবিলাপ "এবং "ছায়াময়ী পরিণয়" । রাজকৃষ্ণ রায় (১৮৫২--১৮৯৪) লিখেছিলেন নয় সর্গে লেখা গাথাকাব্য "নিভৃত নিবাস ।" তিনি বিহারীলালের আদর্শে কবিতা লিখতেন। ঈষৎ পরবর্তী সময়ে কবি অক্ষয়কুমার বড়াল (১৮৬০--১৯১৯) চারটি কবিতা সংকলন রচনা করেছিলেন ------- প্রদীপ, কনকাঞ্জলি, ভুল এবং শঙ্খ । অক্ষয় কুমার বড়াল ও ছিলেন বিহারীলালের অনুগামী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিদি স্বর্ণকুমারী দেবী (১৮৫৬--১৯৩২) সাহিত্যের সব শাখাতেই অনায়াসে বিচরণ করেছিলেন । সেই সময়ের আর একজন মহিলা কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী (১৮৫৮--১৯২৪) স্বর্ণকুমারী থেকেও উচ্চমানের কবি । ঈষৎ রবীন্দ্র পূর্ববর্তী কাল থেকে অনেক মহিলা কবি আত্মকথা লিখেছেন, লিখেছেন গীতিকবিতা । এমনি উল্লেখযোগ্য স্বর্ণকুমারী, প্রসন্নময়ী ,গিরীন্দ্রমোহিনী । উনবিংশ শতাব্দীর মহিলা কবিরা সকলেই ছিলেন গৃহবধূ । সংসারের সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে বসে তাঁরা জীবনের সৌন্দর্য আনন্দ-বেদনা কে প্রকাশ করেছিলেন তাঁদের আন্তরিক হৃদয়বত্তার জোরে। তাঁদের সরল উচ্চারণ অনেক সময় মর্মস্পর্শী হয়েছে ।।
অস্থিরতা
সাফরিদ সেখ
ভূলোক দূলোক সর্বময় এক
অদম্য পরাক্রমী অস্থিরতা।
যেখানেই দৃষ্টি যায় শুধুই
অনিশ্চয়তা, কালমেঘের ঘনঘটা।
মাঝ দরিয়ায় যে নাবিক গমে
তার কেবলই অজানা আশঙ্কা।
আমরা এখন অনিশ্চিত দুর্বোধ্য
লোকালয়ের বাসিন্দা,নাগরিক
হতাশা,না পাওয়ার বেদনা
কেবলই জীবনকে দংশন করে।
মূল্যবোধ আজ সিন্ধুকে বন্দী
বিশ্বাস চাদর মুড়ে ঘুমাই এখন।
ভাইয়ের বিপদে ভাই থাকে না,
পিতা কন্যার অপমানে নিশ্চুপ।
মানুষের জানার পৃথিবী খুবই ছোট
ভাই জানতে পারে না বোনের হৃদয়।
স্ত্রী জানতে পারে না স্বামীর মন।
তবুও মেকি ভালোবাসার বন্ধনে বন্দী।
বিশ্বের সব কিছুই আজ অস্থিরতার
দুরন্ত প্রতাপে ক্ষত বিক্ষত,ভঙ্গুর।
কবিতা
আসছে পুজো
মিনতি গোস্বামী
পুজো আসছে পুজো আসছে
বলছে হেসে কাশ
বলছে হেসে শিশির সিক্ত
ভোরের দুর্বাঘাস।
নীল আকাশে সাদা মেঘের
ভাসিয়ে দিয়ে ভেলা
আসছে দেবী মর্ত্য ধামেতে
নেইতো আর বেলা।
চারটে দিন মায়ের কাছে
হাজির হবে সবে
খুশি আনন্দে মাতবে সবে
মাতবে কলরবে।
নতুন জামা নাইবা হলো
না থাক হাতে অর্থ
মায়ের কাছে জানাবো সব
করবো না অনর্থ।
ধনী গরীব করেছে যারা
হোক তার বিচার
বিচার হলে জানবোই মা
আমাদের সবার।
এসো হে মহাত্মা
বিপ্লব গোস্বামী
এসো এসো হে মহাত্মা
হে অহিংসার পূজারী ।
আজ হিংসার ভারত মাঝে
বড় দরকার তোমারি।
চারিদিকে জাতি হিংসা
অমানবতা হানাহানি,
এসো হে শান্তির-দূত
নিয়ে শান্তির বাণী।
আজ দিকে দিকে হিংসা
অন্যায়-অধর্ম-অবিচার ,
অহিংসার বাণী নিয়ে
হে মহা মানব তুমি, এ দেশে
এসো এসো আরেকবার।
কবিতা :
যৌথ পরিবার!
বিশ্বজিৎ কর
যৌথ পরিবার একাত্মার-
মুক্ত হিমেল হাওয়া,
যৌথ পরিবার সমস্বরে -
আন্তরিকতার গান গাওয়া!
যৌথ পরিবার মানেই -
'দশে মিলি করি কাজ',
যৌথ পরিবার মিষ্টিমধুর -
পরাজয়েও নেই লাজ!
যৌথ পরিবার অভাবেও -
এক আঁচল সুখ,
যৌথ পরিবার মনের মতো -
দৃঢ় একতার মুখ!
জীবন সংগ্রাম
হামিদুল ইসলাম
তোমার জন্যে যুদ্ধে জিতি
প্রতিটি যুদ্ধে সংগ্রামের জয়
তোমার জন্যে সুদূর সাগর পাড়ি দিই
জীবন সংগ্রাম হয়ে থাকে অক্ষয় ।।
তোমার জন্যে প্রতিদিন সংগ্রাম করি
সংগ্রামী সমুদ্র হয়ে যাই পার
জীবনের ঘাটে নোঙর করি তরী
সংগ্রামের বার্তা নিয়ে তোমার কাছে ফিরে আসি বারবার ।।
তোমার জন্যে আকাশে উড়ি
প্রতিদিন সংগ্রামে ঘর্মাক্ত কলেবর
সংগ্রামী জীবন ব্যস্ত সংগ্রামে
তুমি রাখো না খবর ।।
তোমার জন্যে অস্ত্র ধরি
বিভেদের আগুনে দিই কোপ
যারা আগুন নিয়ে প্রতিদিন খেলা করে
সে আগুনে পুড়ে ফেলি জাতপাতের জঙ্গল ঝোপ ।।
মৃত্যুকে তুচ্ছ করি
জীবনে সংগ্রাম আছে বলে
তোমাকে পেয়ে যাই সংগ্রামের মাঝে
সংগ্রামই জীবন তাই ফিরে আসি সংগ্রামী বলে ।।
আহ্বান
অঞ্জলি দেনন্দী, মম
আলোর পথিক, এসো হে!
অশেষ আকাশ হয়ে হেসো হে!
আমার অপেক্ষিত দু-আঁখি।
হবেই হবে লাকি,
তোমার প্লাবনে ভেসে।
আমার দৃষ্টি অবশেষে
যেন তোমার পথের শেষে
অক্লেশে মেশে,
ভালোবেসে।
আঁধারে মোরা নব চির বিশ্ৰাম।
আলিঙ্গনে চির তরে রবে মোদের চারার্ম।
মোরা লভিব অনন্ত চার্ম।
নদী
আব্দুল রাহাজ
নদী তুমি বয়ে চলেছে
আদি দিগন্তের পথ ধরে।
তোমার ঢেউয়ের আওয়াজে প্রকৃতি পায় তার মাধুর্য।
নদী তুমি যেন চির বসন্তের প্রতীক
যা তুমি সময়ে সময়ে প্রমাণ করেছে।
নদী এভাবে তুমি আপন বেগে চলো
আর মানুষের মনটাকে জয় করো।
শুধু তোর অপেক্ষা
অনাদি মুখার্জি
কোনো এক বৃষ্টি ভেজা দুপুরে,
পথের ধারে থাকবো আমি দাঁড়িয়ে!
শুধু তোর অপেক্ষায় !
তুই আসবি পরি হয়ে ধরবি ,
স্পর্শ করবি আমার শুধু হাত!
তোর সাথে হারিয়ে যেতে যায় ,
নগরের সমস্ত পথ হবে তোর আমার!
তোর যত মনের কথা বলবি আমার সঙ্গে ,
ইচছে ডানা মেলে শুনবো আমি কান পেতে !
বৃষ্টি জল মেঘে দেখবো তোর ঐ ভিজে ঠোঁট ,
তখন আকাশের বিজলি চমকে উঠবে,
তখন ভয়ে তুই আমাকে জড়িয়ে ধরিস ,
তোর স্পর্শ পেয়ে সারা জীবনের ক্লান্তি দূর হবে আমার !
আমার গাঁয়
গোপাল বিশ্বাস
আমার গাঁয় উত্তর কৃষপুর
ভোরের আলোক খেলা
পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে
আনন্দে কাটে বেলা l
কৃষকের ফাতলা মাথায়
রোয়ায় ধানের চারা
মেঠো পথে বাউল গায়
খুশির বাঁধন হারা l
খোয়াই নদীর মিষ্টি বাঁকে
ধবল বক পাখনা মেলে
নৌকো চলে স্রোতের টানে
জাল ফেলে জেলে l
ডাঙায় হাসে সোনালী ধান
গোলায় ভরে ওঠে
কৃষক --হৃদয় জুড়ে
লাল গোলাপ ফুটে l
তুলসী তলায় সন্ধ্যা নামে
ধূপ বাতির গন্ধ
গ্রাম্য বঁধু মুচকি হেসে
মুখটি তুলে ছন্দ l
ঝিলের মাঝে কলমী শাক
মাথায় তুলে নাচে
গ্রাম্য মেয়েটি অবাক চোখে
অকারণে হাসে l
আমার গাঁয় উত্তর কৃষ্ণপুর
সবুজ সবুজ মেলা
পুকুর ডোবায় শ্যাপলা ফুল
দোলছে সারা বেলা l
গাঁয়ের মানুষ সোজা সরল
মোটা কাপড় ভাত
হাসি খুশিতে দিন কাটায়
সুখ দুঃখে এক সাথ l
বুমেরাং
ডঃ রমলা মুখার্জী
লোভ-লালসায় মত্ত মানুষ হারিয়ে ফেলছে বিবেক-চেতন-
জিগীষার পিছনে ছুটেও ধুলায় লুটায় জয়ের কেতন।
জালিয়াতির জাল পেতে সে ভাবছে কিনবে বসুন্ধরা-
বুমেরাং হয়ে শেষে সেই জালতেই পড়ছে ধরা।
খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে দেদার,খাচ্ছে জাতির বংশধর.....
দেশের ক্ষতি,দশের ক্ষতি,মানুষ বোকা,স্বার্থপর।
জাত-ধর্মে বিবাদ করে মরছে মানুষ নিরন্তর.....
বাহির-মনের দূষণ থামাও, শোধন কর অন্তর-তর।
কোথায় অন্ত
এমাজদ্দিন সেখ
নাই বিদ্যাসাগর , শরৎ ও নেই !
রামমোহনের মহত্বও বুঝি শেষ !
তাই হাজার নির্ভয়া , আসিফা , মনীষা ....
ধর্ষিতা - খুন হতে নিত্য দেখছি নির্নিমেষ !
দাগ কাটেনা বিবেক কোনো , নেইকো অনুভূতি !
মনুষ্যত্বহীন ক্লীব সমাজ বাঁধন টিকবে কতদিন ?
ধনোন্মত্ব শোষণ সর্বস্ব সমাজ নির্মমে কাড়ে ;...
প্রেম - প্রীতি - স্নেহ -শ্রদ্ধা সুকুমার বৃত্তি যতো !
জানালা পানে চেয়ে আছি একবুক আশে ...
নতুনের পানে যারা জীবনের গান গায় ,স্বপ্ন দেখে ...
হিসেব দিতে হবে
মোঃআলিউল হক
দিন দিন করে চলেছো ভুল
তাই পুড়ছে কুশ পুতুল....
পুড়বে না?
একশো বার পুড়বে
আজ চতুর্দিকে জ্বলন ধ'রেছে যে!
জঘন্য অপরাধের দিকে তাকাও
মানবিক মন নিয়ে একবার দেখো
অপরাধের সব রেকর্ড তোমার যুগে
কোনটাকে আঙুল দিয়ে দেখাই
মশাই কিছুই তো বাদ নাই!!!
অন্ধত্বের পর্দা এঁটে বসে আছো আরামে?
আসছে শেষের দিন
এই মাটিতে দাঁড়িয়ে
হিসেব দিতেই হবে সেদিন।।
কবিতা:
সিঁটিয়ে প্রহর
আসরাফ আলী সেখ
আকাশ কানে কানে
বলে বাতাস কে , বলো না কেউ কে ,
সিঁটিয়ে সবাই ; কখন
যে , কী হয় - কে জানে!
বাতাস বলে মেঘের
কানে কানে , বলো না
ভায়া! কারো কানে ,
কি হয় , দেখা যাক !!
তার পর না হয় হবে ;
মেঘের পেট গুড় গুড়
করে , ভারি হয়ে ওঠে
পেট ; জল কণার কানে কানে বলে কি
যে বলি ভাই তুমি যেন
বলো না , কারো সনে ! কি যে হবে কে জানে!
জল ফোঁটা, ফোলা ফোলা গালে চলে
সমুদ্রের ধারে ,
মালিক মালিক ,কি
যে হয় কে জানে !
সিঁটিয়ে সবাই আমার
টা যদি কেও শোনে ,
আমার টুকু হলে ই চলে যায় কার দায়
কে নেয় ,
বজ্র পাত শোনে সব ,
রেগে মেগে ডেকে
ডেকে দেয় , জল কণা
পড়ে যায় ,সাগর তোলে হাই বলে ছিলি
মনে মনে , কার দায় কে নেয় চল জীবন
ভাসায় ,
প্রহর গুনে যায়
ছাড় কেও না
পায় , কানে মনে
রাষ্ট্র চলে নিশি দিন
জল কণা থামে না
ঝোপ বুঝে চলে সেও
বজ্রপাতের ধ্বনি কখন তার মনে মনে
কানে কানে শুনি ।।