বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ শারদ সংখ্যা- 2020 Upokontha Sharod issue-2020

উপকণ্ঠ শারদ সংখ্যা- 2020  Upokontha Sharod issue-2020

Upokontha Sharod issue-2020

 "উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা
   (ওয়েব ম্যাগাজিন)
       বিশেষ সংখ্যা 
       "উপকণ্ঠ শারদ সংখ্যা- 2020"

প্রকাশ কাল:-17/09/2020, বৃহস্পতি 
   সময় :- দুপুর 12 টা 

সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

প্রচ্ছদ শিল্পী- বিকাশ ঘড়াই

প্রচ্ছদ ভাবনা ও টেক্সট ডিজাইন- 
সেক আসাদ আহমেদ

                বিভাগ-  নিবন্ধন                   

    মহালয়ার দিনবদলে একই আবাহনী সুর
                রাজীব কুমার নন্দী


"আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর,
ধরণীর বহিরাকাশি অন্তর্হিত মেঘমালা;
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন-বার্তা,
আনন্দময়ী মহা মায়ার পদধ্বনি;
অসীম চাঁদে বেজে উঠে রূপ-লোক ও রস-লোক এ আনে নব ভাবমাধুরী সঞ্জীবন,
তাই আনন্দিত শ্যামলী মাতৃকার চিন্ময়ী কে মৃন্ময়ী তে আবাহন..."
   মহালয়ার দিন বদলের সুরে আজও শহর থেকে গ্রামের মাটির উঠোনে একই আবাহনী সুর।মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠের জাদুতে আজও বাঙানীর নেশা লাগে।মহালয়ার সুরেই জানান দেয় পুজো আসছে।কাশফুলের সাথে শরতের পেজা তুলোর মেঘে পাড়ি দিয়ে এসে পৌঁছায় বাঙালীর নস্টালজিক প্রাণের উৎসব।সাল ১৯৩১ থেকেই আকাশবাণী থেকে সম্প্রচার হতে শুরু করে মহিষাসুরমর্দিনী যা বাঙালীর আবেগ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে।প্রথমে কায়েতের ছেলে বলে চন্ডীপাঠে আপত্তি জানায় অনেকে কিন্তূ আকাশবানীর পঙ্কজ মল্লিকের জেদের বসেই সেদিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কন্ঠ দান করেছিলেন।যা আজ ইতিহাস হয়ে আছে।গঙ্গা দিয়ে এই দীর্ঘদিনের জয় যাত্রায় অনেক জল গড়িয়ে গেছে কিন্তূ বাঙালীর আবাহনে মাধ্যম বদলালেও সুর রয়ে গেছে একই।বাঙালীর প্রাণের রেডিও আজ বাক্স বন্দী মোবাইল ,টিভি,সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে আজ ভার্চুয়ালী গানে, কবিতায়, নৃত্যে মহালয়া পালিত হলেও মহালয়ার ঐতিহ্যবাহী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠ মালার বিকল্প হয়নি।সেকাল একালেও চির প্রাসঙ্গিক রয়েছেন তিনি।
   দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে কলকাতার ও গ্রামের শরৎকাল। শরৎ মানেই শারদীয় দুর্গোৎসব।
শারদ উৎসবের সুর শুরু হয় মহালয়ার দেবীপক্ষের সূচনার মধ্য দিয়ে।
একদিকে ভোররাতের ফোটা শিউলি ফুলের সুরভির সাথে শরতের আবাহনী সুর বেজে ওঠে। অন্যদিকে চণ্ডীপাঠের চিরাচরিত সুরে পিতৃতর্পণের উদ্দেশ্যে গঙ্গার ঘাটে জমা হন সনাতন ধর্মের মানুষরা।
তখনকার দিনে কলকাতার মহালয়া শুরু হতো আকাশবাণী কলকাতায় ভোরবেলা বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠের সুরে।
এখনো একই সুরে সুরভিত বাঙালী মনন।
আজও আকাশবাণীতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ বাজিয়ে শোনানো হয়।
   রামধন মিত্র স্ট্রীটের  গলিতে পা দিলে সময় যেন পিছিয়ে যায় ।বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের  হলুদ রংয়ের একটা বিশাল বাড়ির সামনে সাদা পাথরের ফলক। লেখা, স্বর্গীয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সঙ্গে জন্ম-মৃত্যুর তারিখ। তার নীচে পাথরে খোদাই করা তিনটে লাইন, 'এই বাড়িতেই আমৃত্যু বাস করেছেন বেতারে মহিষাসুরমর্দিনীর সর্বকালজয়ী অন্যতম রূপকার এই সুসন্তান।'
তিনি এখনো বাঙালীর মননে ভাবনায় উদ্ভাসিত।
  ১৯৭৬ সাল ,রেডিয়োতে সে বার মহিষাসুরমর্দিনী প্রচারিত হয়নি। হয়েছিল, 'দুর্গা দুর্গতিহারিণী'। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে যা উত্তমকুমারের মহালয়া বলে প্রচলিত।বাঙালী বিক্ষোপে ফেটে পড়েছিলো।আকাশবাণী বাধ্য হয়ে ষষ্ঠীর দিন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া চালাতে বাধ্য হয়েছিলো।রবীন্দ্রনাথ, বিধানচন্দ্র রায় থেকে উত্তমকুমার, তিন কিংবদন্তির প্রয়াণ যাত্রার ধারাবিবরণীও দিয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। যে রেডিওর জন্য এতকিছু, তারা অবশ্য শেষ বয়সে পেনশনও দেয়নি।
মহালয়ার দিনবদলের ধারায়ও এখনো রয়ে গেছে একই সুরে।মহালয়ার ভোরে বেজে ওঠে সেই সুরভী কন্ঠ-
"জাগো তুমি জাগো জাগো দূর্গা জাগো দশ প্রহরণ ধারিণী
আভায় শক্তি বলো প্রাদায়িনী তুমি জাগো
জাগো তুমি জাগো
প্রণমি বরাদ আজলা অতুল
বাহুবলধারিনী রিপুদলাবাড়িনি
জাগো মা জাগো মা
যারা ওময়ী গান্ধী কে শঙ্করী জাগো
জাগো মা
জাগো অসুর বিনাশিনী তুমি জাগো
জাগো দূর্গা জাগো দশ প্রহরণ ধারিণী
আভায় শক্তি বলো প্রাদায়িনী তুমি জাগো
জাগো তুমি জাগো।"
বাঙালীর পূজার সুরভিতে শারদ উৎসব এক মহান উৎসব হয়ে উঠেছে।সেই উৎসবের আবহ তৈরী করে দিয়ে যায় মহালয়া।ভার্চুয়াল আধুনিক জীবনে সমাজ এখন ফেসবুক হোয়াটস আপ এ শরতের কাশফুল দেখে মহালয়ার কবিতা লেখে।বিভিন্ন চ্যানেলে শুরু হয়ে যায় নায়িকা দের নিয়ে মহালয়ার অনুষ্টান।আজকের এই করোনার অতিমারীর সময়ে মনখারাপের আবহে মহালয়া যেনো আনন্দ সুরের আহ্বান নিয়ে হাজির।দেবীর আগমনীতেই শেষ হবে করোনা নামক অসুরের এই আশায় বুক বেঁধে আছে আপামর বাঙালী।
   আধুনিকতার রূপাঞ্জলীতে মহালয়ার ঐতিহ্য আজও বাঁধা আছে আহারিটোলার কালীকৃষ্ণ ভদ্র ও সরলা বলা দেবীর সন্তান বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠের জাদুতে।মহালয়ার ভোরে ফেসবুক ও হোয়াটস আপ ইন্সট্রাগম এর পাতা উল্টাতে উল্টাতে কোথাও যেনো মনে পড়ে বাড়ির এক কোনে ধূলী ধুসরিত রেডিওটিকে।মনে পড়ে আকাশবানী থেকে সম্প্রচারিত মহিষাসুরমর্দিনী।









          
      লকডাউন
                      অর্নব বেরা

লকডাউন শব্দটির সঙ্গে সারা বিশ্ববাসী 2019 সালের ডিসেম্বর থেকে পরিচিত হতে থাকে।ভারতবাসী লকডাউন এর ব‍্যাবহারিক অর্থ বুঝতে পারে 2020 সালের মার্চ মাসে। লকডাউন এর শুরুটা হয় আকস্মিক ভাবে ,হটাৎ সব কিছু বন্ধ হয়ে যায় ।দিন আনা দিন খাওয়া সাধারণ মানুষেরা দিশেহারা হয়ে পড়েন ।
যারা কাজের জন‍্য বাইরের রাজ‍্যে গিয়েছিলেন তাদের সঞ্চিত উপার্জন ফুরিয়ে যায়,দিনের পর দিন তাদের অভুক্ত থাকতে হয় । অবশেষে বাধ‍্য হয়ে তারা পায়ে হেঁটে নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েন । আট থেকে আশি প্রত্যেকে জাতীয় সড়ক ধরে তীব্র গরমে  মাইল এর পর মাইল হাঁটতে থাকে, আর প্রশাসনের আধিকারিক ও মন্ত্রীরা এসি ঘরে বসে প্রতিশ্রুতি দিতে থাকেন । রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অনেকের মৃত্যুও হয় । কিছু জায়গায় তো পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর জীবাণুনাশক ছড়ানো হয়,এমন ছবিও সংবাদ মাধ্যমে দেখা যায়।
লকডাউনে যারা ট্রেনে ফেরি করে অর্থ উপার্জন করতেন তারা বেকার হয়ে যান ।অনেকের পেশা বদলে যায়।কেউ থিয়েটার ছেড়ে ডিম বিক্রি করছেন, উদীয়মান ফুটবলার টাকার অভাবে রাস্তায় বসে মাছ বিক্রি করছে, কেউবা খাওয়ার দোকান এর বদলে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দোকান খুলেছেন।
লকডাউনে বাজারে জিনিসের দাম বেড়ে যায়,রোজগারহীন দরিদ্র মানুষ নুন ভাত খেয়ে অর্ধেক দিন কাটিয়ে দেন ।আর যারা দরিদ্র মানুষের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে রাজত্ব করছেন ,তারা কিছু কিছু মানুষকে দান করে ভাবেন ,তারা যেন সবার সমস্যা সমাধান করে দিয়েছেন ।
লকডাউন হয়েছিল সুস্বাস্থ্যের জন্য কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার বেহাল দশা মানুষের চোখে ধরা পড়ে।একজন বাবার চোখের সামনে তার সন্তান কে  বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়,কোথাও আবার দেখা যায়  একজন ছেলে তার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন নার্সিং হোম ও হাসপাতালের দোরে দোরে ঘোরে চিকিৎসার জন্য কিন্তু কেউই ভর্তি নেয়না কারন তার কাছে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট নেই।পয়সার অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রায়শই দেখা যায়।বৃদ্ধ দম্পতির এম্বুলেন্স এর অভাবে মৃত্যু হয় ।
তবুও কিছু রাজনৈতিক মানুষ কে বুক ফুলিয়ে বলতে শোনা যায় "আমাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা উন্নত"।
আমরা কাউকে  আমাদের দেশে আহ্বান করে কোটি কোটি টাকা খরচা করতে পারি,কিন্তু পরিকাঠামো উন্নত করতে পারিনা।
লকডাউন করে যারা মনে করেছিল মহামায়া আটকাবেন তারাই রাজস্ব আদায়ের জন্য সুরাপ্রেমীদের জন্য মদের দোকান যত্ন সহকারে খুলে দিলেন।সাধারণ মানুষকে প্রশাসন নিয়মের যাঁতাকলে পিসেচে এবং কিছু রাজনৈতিক মানুষ মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়েছে। লকডাউনএ সাফল্য আসেনি 1 লাখ এর কাছাকাছি মানুষ মরতে চলেছে।
সবশেষে বলব লকডাউন ও আনলক ইতিহাসের পাতায় রাজনৈতিক প্রহসন থাকবে।





             বিভাগ- বিশেষ নিবন্ধন           



কন্যাশ্লোক
                অজয় মন্ডল


দুগ্গা দিদি........যাবি?
বলনা যাবি?
দুপুরবেলা চুপটি করে,
যৌবনেতে থুতু ছুড়ে;
শৈশবের ঐ নরম কোলে,
আস্তে আস্তে যাব চলে।
তুই যাবি দুগ্গাদিদি?
বলনা যাবি?
কঞ্চি দিয়ে ঘর বানাবো,
রান্না করে মিষ্টি খাবো;
চোর-পুলিশে দ্বন্দ্ব করে,
ফিরব না আর নষ্ট ঘরে।
ঐ বাঁকা নদীর তীরে যাব,
তুই মা,আমি মেয়ে হবো;
নদীর বালিই রান্না করে,
শৈশবটা আনবো ঘরে।
যাবি দুগ্গাদিদি?যাবি?
শরীরটাকে খাবলে ধরে,
পাড়ার হরেন কাকু,
               দিল নষ্ট করে।
নখের ঘায়ে শরীর জ্বলে!
এখন পাড়ার সবাই,
                    বেশ্যা বলে।
মা বলল একদম চুপ!
বাপটা সেদিন মারলো যে খুব;
এসব কথা সবাই জানলে পরে,
বলতে পারিস,
তোর বিয়ে দেব কেমন করে?
যৌবনে তাই ঘেন্না এলো,
ঐ শরীরখেকো মানুষগুলো।
এখন বাঁচাতে তুই একাই পারিস,
শৈশব যদি ফিরিয়ে আনিস।
যাবি?
যাবি একটিবার ফিরে?
তোর তো অনেক শক্তি আছে,
অসুর মারলি নিজের হাতে;
শক্তিরূপে আয় না আবার!
খানিক পশু করনা শাবাড়্!
নরম শরীর দেখলে যাদের,
জিভ লক্-লক্,লালা ঝরে।
কালীর মতো খাড়ার ঘায়ে,
দে না তাদের খতম্ করে?
নয় ফিরে চল সবুজ ক্ষেতে।
শৈশবেতে যায় যে মেতে।
যৌবনটা  ডাকলে সুরে,
ফিরবো না আর আতুর ঘরে!
দুগ্গাদিদি, যাবি ?
তুই শরৎ শেষে যাবি চলে।
তখন ওরা আমায় একা পেলে;
রক্ত খাবে ইচ্ছেমতো;
দাঁতের কামড়,দগ্ধ ক্ষত।
শুধু আমার মনের নয় রে ব্যথা!
হাজার নারীর আত্মকথা,
মুখের লালায়,গায়ের জোরে,
ধর্ষিতা রোজ গলির মোড়ে।
আয় না সেজে দশভুজা,
ধ্বংস কর ওই পাপের বোঝা।
শক্তিরূপী,শক্তি দে মা,
         করব না ভয়,মরব মরি!
আকাশ-পাতাল দানব খুঁজে,
          ত্রিশূলেতে দু-ভাগ করি।
আয়রে দুগ্গা,আয়রে উমা,
      করিসনা আজ ওদের ক্ষমা।
আয়রে রাতের শুদ্ধ নারী,
       সব শালা দের খতম্ করি।
(যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।।
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্ ।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।)
দিকে দিকে বেজে উঠবে অস্থির  বিদ্যুতের চমক।মেঘের তীব্র গর্জনও মুখ লুকাবে,নারীর চিৎকারের আওয়াজ ।কেঁপে উঠবে পাষাণ হৃদয়ের শিরা-উপশিরা ।কেঁপে উঠবে গলির নোংরা কীটরূপী অমানুষের দল। লোভী নারী- খাদকদের স্নান করিয়ে, গলায় পড়ানো হবে রক্ত জবার মালা,আর কপালে এঁকে দেওয়া হবে রক্ত -তিলক। এগিয়ে আসবে লক্ষ লক্ষ নারীর দল। চতুর্দিকে বেঁচে উঠবে উলুধ্বনি,বেজে উঠবে মঙ্গলময় শঙ্খ আর নারীর বিজয় ডঙ্কা । কেঁপে উঠবে ধরণী পুনর্বার ।সেজে উঠবে ধরণী নতুন সাজে । অসুর নিধনের গাঢ় রক্তে, সবুজ ঢাকবে লালে।পাপের ক্ষয় হবে,পাপীর অবসানে।
    
      স্বর্গ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হবে বিজয়ে অভ্যর্থনায়। কাশফুলের  দোলায় বর্ষার কালো মেঘ সরে, আসবে শরতের শুভ্র আলো। শুরু হবে অন্য এক মহালয়া,শুরু হবে অন্য এক যুগ।




                 বিভাগ- হাইকু                     



হাইকু কবিতা
              শংকর হালদার 

০১।আলস্য মুছে
খেলায় মাতে প্রাণ
তব কিরণে ।

০২।
তব হাসিতে
প্রাণের সাড়া মেলে
নবীন প্রাতেঃ।
০৩ ।
প্রাণের আশা
সুন্দর হোক ধরা
উদ্যম্ ছন্দে ।
০৪।
স্নিগ্ধ প্রভাত
নির্মল কর মন
প্রার্থনা মাগী ।
০৫।
অপাঙ্গে দেখা
মৃদু হাসিতে প্রেম
গুপ্ত আলাপ ।।
০৬।
কাশের নৃত্য
মৃদু বায়ুর ছন্দে
ভৈরবী প্রাতেঃ ।
০৭।
 ব্যস্ত সময়
গোপন ঈশারায়
অস্পষ্ট হাসি ।
০৮।
শিউলি, কাশ
কালের স্রোতে শান্তি
মা এসেছে গো ।
০৯।
নববর্ষার
থৈ থৈ ভরা যৌবন
ঊর্বর হর্ষ ।
১০।
যেখানে সত্য
গাঢ় তমসা সেথা
তব পরীক্ষা ।

       






হাইকু
          অমিত দেশমুখ



ঢাকিরা বলে
শিয়ালদা চলরে
ভাত জুটিবে।

শরৎ জানে
কেন যে কাশ বনে
হৃদয় টানে?

মহালয়াতে
অসুর ধরে পণ
মরিবেনা সে।

শিউলি আর
শরতের আকাশে
বিষাদ থাবা।


••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
 👇👇👇👇👇👇👇                   
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


চক্রবর্তী অ্যাণ্ড সন্স পাবলিকেশন
 কলকাতা-১৪৪
প্রকাশ :২০২০ কলকাতা বইমেলা
(পাঁচ ফর্মা অর্থাৎ ৮০ পেজের বই)
মূল্য: ২০০ টাকা(৫০ টাকা ছাড় )
যোগাযোগ: শংকর হালদার
মোবাইল: ৮৬৩৭৫৩২৯৯৩ /৯৫৯৩০৭৯৪২৭
 mail id: halder.sankar@yahoo.com



                 বিভাগ- লিমেরিক                


       লিমেরিক
             সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


ঢাক বাজে কাঁসর বাজে তাক- কুর-কুর
নীলচে রঙা আসমানেতে আগমনীর সুর
আসছে উমা ঘরে
আবার বছর পরে
ভুবনপুরে সবার বুকে খুশির সমুদ্দুর।







                 বিভাগ- অনু কবিতা             


রোদছায়া
                 শ্যামাপদ কর্মকার


নরেন চল্ বাগানে
         আম পাড়তে যাই
গুঁড়ো নুন লংকা নিতে ভুল করিনি
বড্ড রোদ গরম
        বাগানে বসে ঠান্ডা হবো
ঢিল ছুঁড়তে তুই ওস্তাদ
ধপা ধপ্ পেড়ে ফেলবি আম
তারপর টক নুন ঝাল
গরম হাওয়া    রোদ ছায়া
সবুজ শৈশব----








অবেলায় এসো না
                   অভিজিৎ মান্না


রাস্তার বুকে সেই এক মন্দির
একই পুরোহিত
চোখের জল স্নান জল হতে পারে না
তবু নিবারণের আকুতিতে মানবের সারি l
একটা পাখি সব জানে
কতটা বিশ্বাস মেখে কে আসে দোরে l
অনুকূল স্রোত তখন উদ্দাম ডিজে নৃত্য
তারপর অন্ধকারের ঝড়ে
রক্ষা পাবার নিবিড় স্তব
তবু কেউ ছুঁয়ে থাকে
তবু চলছে হয়তো এভাবেই মেনে নেবে l









           আকাঙ্ক্ষা
                         কৃপাণ মৈত্র


'আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি' সে কেবল কাব্য কথা ।
পাত্র উপচে পড়লেও অবশিষ্টট ধরে রাখার
আকাঙ্ক্ষায় জীবন বিস্তৃতির আরেকটা সূর্য
রাতের তারা ,চাঁঁদ ,গোপন অভিসারের
বাঁকা হাসি স্বস্তি দেয় দেনা না।
মনে হয় বারবার, আর বার।








     প্রেমিক
               তন্ময় বিশ্বাস


আকাশকে বলেছিলাম-
আমি প্রেমিক হতে চাই
আকাশ বলেছিল:
তার জন্য আগে নদী হতে শেখ;
পাহাড়ের মত স্তব্ধ হও।
নদী-পাহাড়ের জরায়ু ভাঙা আলোয়
চোখ রাখলেই,
মাটি ভেদ করে মানুষ প্রেমিক হতে শেখে।







     অনু গুচ্ছ
                 বিকাশরঞ্জন  হালদার


অনু-১

তুমি কতো বোঝো। আমি এখনও অবুঝ। বেঁচে আছে - আছে প্রেম। পোড়া কাঠে থেকে গেছে কিছুটা  সবুজ !!

অনু-২

পড়ে থাক সহ্য করা। বিরাট বিফল। টুকরো টুকরো জন্ম নিই।অভিপ্রায় বুনে চলি। স্বপ্নের শিকড়ে ঢালি জল !!

অনু-৩

গভীর অ-ছন্দ এসে শক্ত করে ধরে। চরম স্পন্দন নেই। সাধ করে আঁধার সাজাই। প্রাণ জাগে মনের  ভিতরে !!







আজ মৃত্যু আসবে নাকি
                        তৌফিক হোসেন


আজ মৃত্যু আসবে নাকি?
এখন জ্ঞানত দরজা খুলে দিলাম,
এসো তো মৃত্যু আমার ইচ্ছায়!
আজ আমার কি আছে বাকি?
দেহ - মন কসাই করেছে নিলাম,
এসো হে মৃত্যু অবশিষ্ট ইচ্ছায়!

আজ মৃত্যু আসবে নাকি?











       বিভাগ - ইংরেজি কবিতা               


   To My Love  
                  Murselim Saikh     
    
Poured my soul into you
Dear be conscious !
Hurt my obstinate mind never
take it in your comfort.
My heart says,
I'm in you always
Being charmed by your warmth
Will stay alive in thousand birth
And thus
Will be loving you till my last...
                            







          Mahamaya
                     Sunanda Mandal


Mahamaya, Goddes of hindu.
     All bengal are support this
     ‎like and love this festival,
     ‎in this moment we're festive.
Who, known as Durga
Little theme set at pandle.
We're also proud,
     Nightengle for bangalees.
We all prey for ourselves,
      In the temple of our mind.
      ‎              -------------



              বিভাগ- ইংরেজি প্রবন্ধ          

I'm the world speaking...(Rapes and then brutal murders)

                   Sayantani Banerjee

Why do rapes and then brutal murders happens in this world? Do it really depends on the evocation of boys, when girls wear short dresses or will you say that's the male dominance power to show females belong under them and can't raise their voice against something wrong deeds conducted by them or some sort of jealousy, anger, desperation? There are many following reasons, actually infinite but there is no fixed or stable one, and that's where the problem arises. If the question is asked to many, no one or least one two will answer.
                Hello everyone out here, I am the world speaking and I am not only with best, advantageous and beautiful sceneries and reactions, but I am in a part where everything is sad, dreadful and fearful actions that my children are facing from day to year since 1975. 'Rape was firstly conducted in the United States in the year 1975 and from then onwards became like a vital disease that spread whole over me. The first case itself shocked and shattered me up. It made me cry and left me in a perplexed state, as neither me nor my children down here knew this damage neither knew the cause, the reason and many questions with fear in them arose. From then onwards I was stated as the 'Melancholic world.'
      The grief, pain and confusion is carried till date. But with all these burdens 'I have to be happy. I'm bound to be happy for the upcoming days, for my future. But what is the use? The future also has to face these things, as these dirty and worst deeds spread more vigorously as years pass by. My children need to know the inner me but still; I have to be sadly happy for them.
   Mostly of you all scream and shout down there in me that breakups, end of love and all those stuffs make you all sad, broken from within, yet you smile in front of others, covering up your grief in yourself. But can you all tell me with whom shall I share my grief with? Who will listen to my screams, my tears? Who will weep my tears out in my silence, who can give me an explanation? At least you broken lovers have a friend who can listen to you, make you soak your tears, gives a proper explanation for your problems and gives you at least one reason to live, and not to die. But do I have anyone? Please children explain me. My pain, my bruises are just like the victims, my girls, my children facing when those demons get hold of them. They are brutally raped, then burnt alive or killed, smashed. Now will you compare your silly pains with this torture, pain and grief and try to end your following lives. No right?
     Those little children of mine there in the heaven are getting more in number each day. Now its the time when they will be stored in the clouds as fires, and will rain like hot burning ashes that would melt those guilty persons down below in me.
       Why do you all make me dirty by doing such annoying, disgusting and wrong actions? Am I responsible for all the dirt that you all threw over the whole me? No children, no, I am not at all responsible for these; these painful and dreadful deeds. But after performing these actions, you blame me, blame the world and say Well thats the nature of the world now a days. Please stop!
I warn you all dare to do such things further on me, or else Ill let you all nasty people finished by my disasters, and when they will attack they will be a huge one. Dont forget a child gets everything from their parents, and I am everyones mother, the mother world. Dont you dare to misuse the silence of mine. I am quiet because you all are my children. But mother has the right to love, care as well as beat, scold and lead her child to the correct path. If you dare to do these actions, then warn you I will be the worst for you all.
       Yet with all these dirt, with all these guilt, sadness and pain I have to be happy.
This is the World speaking, who is bound to be happy forever.










          বিভাগ-শারদ কবিতা                  


শারদগাথা
             বদরুদ্দোজা শেখু

শব্দগুলো শরৎ সাজে , শব্দগুলো বাজে বুকে,
কাশফুল আর ঢাকের বাদ্যি আদ্যিকালের সুখ অসুখে
বছর বছর ঘর ক'রে যায় আমাদের এই মন-মৌসুমে
দেবীমাতা দূর্গা আসেন উমা আসেন মর্ত্যভূমে ,
ঘুম উড়ে যায় কুমোরটুলির ঢাকী- ঢুলির ক'দিন যেন ?
বলতে পারো ,লেপ্টে থাকে আমজনতার ধ্যানজ্ঞানও
ওই পরবে, তার গরবে উড়তে থাকে মেঘের তুলো
ঝকঝকে নীল আকাশ জুড়ে , শিশির ছোঁয়ায় বাতাসগুলো
হিমেল পরশ আনলো ব'য়ে হিমালয়ের পাহাড় থেকে
কখনো আকাশ হাসতে থাকে, কখনো যায় বাদলে ঢেকে ,
প্রকৃতিরাণীর খেয়ালিপনায়  দুঃখ-সুখের বাজনা বাজে
চারটি দিনের মামলা শুধু, সম্বৎসর তবু বিরাজে
মাতৃরূপেণ কন্যারূপেণ শক্তিরূপেণ  পূজ্য  দেবী
আমজনতার  হৃদ-মাঝারে দনুজদলনী সুহিসেবী ।
আগমনীতে আমরা হাসি, আমরা কাঁদি নিরঞ্জনে
প্রকৃতি-মাতাও হয়তো কাঁদেন হেমন্তময় বনে বনে !!







মা আসছে
             কথিকা বসু

শিশির ভেজা ঘাসের বনে,
হঠাৎ দেখি পায়ের ছাপ,
পড়লো মনে, মা ফিরছে
বাড়ছে সবার খুশির মাপ।
মায়ের ফেরার খবর পেয়ে
আলোর বন্যা চারিদিকে,
সব অশুভ তার কাছে
যাকনা হয়ে ভীষন ফিকে।
দুঃখ শোক মুছে ফেলে
ঢাকে কাঠি পড়ুক আবার,
জোটে যেন প্রতি মানুষেরই
এবার পুজোয় ভরপেট খাবার।
ভুলে গিয়ে সমস্ত কিছু
মায়ের উৎসবে মাতুক সব,
ত্রিনয়নীর ছোঁয়ায় ছড়িয়ে যাক
পৃথিবী জুড়ে শান্তির রব।
মা তোমার অসীম দয়ায়
করো তুমি সবকিছু ঠিক
মুছে যাক ভীষন মহামারী,
পবিত্র হোক সমস্ত দিক।







আগমনী বার্তা
                সুচন্দ্র বিশ্বাস

শরতের আকাশে পেঁজা পেঁজা মেঘের আগমন
মাঝে মাঝে দুই এক পশলা বৃষ্টি
আনন্দে যে ভরে যায় মন।
এসেছে শরৎ -মায়ের আগমনী বার্তা নিয়ে
সিন্ধ ভোরে মৃদু মন্দ হিমেল হাওয়ায়
কাশবনে কাশ ফুলের ঘন ঘটায় হৃদয় যায় জুড়িয়ে।
শরৎ ৠতুতে তো আসছেন না "মা"
দোলায় আগমনে নানা বিপর্যয় ও সর্বনাশ সঙ্গে করে আনছেন "মা"।
20 সালে -গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত করোনায়
তারপর মায়ের আগমন ও শুভ নয়।
তবে শুভ সংবাদ
এবার জগৎ জননীর গজে গমন।
"মা"শষ্য পূর্ন বসুন্ধরা উপহার
দিয়ে যাবেন।।।









অফিস চিত্র
         স্বপন কুমার হাজরা

তাই তাই তাই                 
অফিস আমি যাই
অফিস গেলে ভারি মজা
উপরি কিছু পাই ।
তাই তাই তাই
যখন খুশি যাই
দশটা-পাঁচটা অফিস আমার
বলার কেউ নাই ।
তাই তাই তাই
কাজে মন নাই
চেয়ার ছেড়ে যখন তখন
যেথা খুশি যাই।
তাই তাই তাই ।
কাজে ফাঁকি নাই
কাজ নিয়ে এলে কাছে
মাস ছয় ফেরাই । 
তাই তাই তাই
চেয়ারে কেউ নাই
জ্বলছে আলো ঘুরছে পাখা
দেখার সময় নাই ।
তাই তাই তাই
ভালই আছি ভাই
মাসের প্রথমে মাইনে পেলে
আনন্দে গান গাই ।








মহালয়া মহাভোর
             বিপ্লব গোস্বামী

মণ্ডপে মণ্ডপে আজি
    চণ্ডীপাঠের সুর।
অপেক্ষার অন্তে এলো
    মহালয়া ভোর।
শাঁখ বাজে উলু ধ্বনি
  ঢাকে পড়ল কাঠি।
মণ্ডপে মণ্ডপে  আজি
  পূজোর পরিপাটি।
   বছর ঘুরে যখন
   আসে শরৎকাল।
সারা ধরা তাকেয়ে থাকে
      অপেক্ষায় মার।
    স্বামীর ঘর হতে মা
    আসেন মর্ত‍্য পুরী।
মেনকা থাকেন পথে চেয়ে
   উমা আসছে বাড়ি।






মায়ের আগমন
                মন্দিরা ভারতী

নৈঋতের কালো মেঘের মতো
সেজেছে তোর চুল,
মন কাড়া ওই পরেছিস তুই
ঝুমকো কানের দুল।
নীল দীঘির মতো
মায়াজড়ানো তোর চোখ,
সূর্যের আলোয় যেন ফুটে উঠেছে তোর সূর্যমুখির মতো মুখ।
মা তুই খড়্গধারিনী ,তুই অসূরবিনাশিনী,
তুই যে মায়াবিকন্যা,
তুই অন্নপূর্না, তুই আঁধার রাতের জ্যোৎস্না।
দেখ না মা তুই আসবি বলে
সেজেছে কত কাশবন,
নিরাশায় ভরা মানুষগুলোর কাছে তুই যে আশার কিরণ।
একবার তুই আই তারপর
বকবো তোকে খুব করে,
একটা বছর হলো দেখিনি তোকে
তোর আসতে এত দেরি কেন রে ?
তোর আদর তোর ভালোবাসায়
ভরে যা এই পৃথিবীটাকে,
শেষ করে সব হিংসা বিবাদ
নিয়ে শ্রদ্ধা ও প্রনাম
দিয়ে যা আশির্বাদ।।







হোক অণুর নিধন (সনেট)
                     নব কুমার সাউ

পরমা  প্রকৃতি  মাত!  সৃষ্টির কারণ।
মহাশক্তির আধার   পুরাণে বর্ণিত।
দুর্গম অসুর বধে  দুগ্গা  নামে খ্যাত।
বিষের ভাণ্ডার হতে করো বিষহরণ।
দগ্ধ করো পাপাচার  মেলে ত্রিনয়ন।
কালকূট সংক্রমণে বিশ্ব জর্জরিত।
রক্ষ আজি ধরাধামে  সন্তান শঙ্কিত।
নিক্ষেপিত শূলে হোক অণুর নিধন।
কেন দেবী বিশ্বমাঝে  দিবসে আঁধার ?
তুমি বিনা কে বা আছে ?দুর্গতিনাশিনী!
আদ্যা আশিসে আসুক  শান্তি  ভুবনে!
হৈমবতী   আগমনে   পাবোই  নিস্তার।
কল্যাণকর  বার্তায়   ঘুচবে  যামিনী।
মাতবে ধরিত্রী নিজ  ছন্দ কলতানে।







মহামারী আবহে আগমনী
                      সত্যব্রত চৌধুরী

কেন মা আসো দোলায় চড়ে?
মর্ত্যবাসী যে সব মড়কে মরে !
কোভিড আবহে জর্জরিত ধরা
দোসর আমফানে যে বাস্তুহারা  ।
মৃত্যু মিছিলে দিশেহারা ভূধর,
কেমনে বাঁচিবে সভ্যতার ঘর?
করোনাসুরকে বধো হে জননী
শূলে বিদ্ধ করো ত্রিশূলধারিণী  ।
তবু,আশা জাগে তব গজ গমনে,
শস্য পূর্ণ হোক অকালবোধনে ।।
মা'র আরাধনে সাজিছে দেউল ,
এসো আত্ম-জন, এসো বান্ধবকুল  ।
বিশ্ব স্বাস্থ্যবিধি মান্য হলে তবে
কোভিড আতঙ্ক হবে দূর হবে  ।।










তাদের পাশে
            জগদীশ মন্ডল

মেঘের ভেলা জানায় টা টা
শিশির ধোয়া ঘাসে
সোনালী রোদ মুচকি হাসে
যুঁই চামেলি কাশে।
এমন সময় দূগ্গা আসার
মর্তে পড়ে সাড়া,
ঘর থেকে সব বেরিয়ে পড়ে
কাজে যাবার তাড়া।  
নতুন পোশাক দিতে হবে
কর্তা যে হিমশিম
মন্ডপগুলো সাজে যত
এগিয়ে আসে দিন।
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি
যারা ফুটপাতবাসি
শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে আছে
নেই আনন্দ হাসি।
পুজোর দিনে তাদের পাশে
একটু খানি যাবে,
দেখবে তখন খুশির পরশ
প্রানের সাড়া পাবে।








           খবর
                    বদ্রীনাথ পাল

ঘাসের আগায় হাসছে শিশির
মাঠের আলে দুলছে কাশ-
সুনীল আকাশ আনলো খবর
"এলো রে ভাই আশিন্ মাস"।
শিউলিরা সব আলপনা দেয়
রোজ সকালে উঠোন 'পর-
খুশির বানে ভাসছে ভুবন
'মা আসছেন আবার ঘর'।
রোদ ঝিল্ মিল্ ঢেউয়ের তালে
নাচছে শালুক শতদল-
শরৎ রাণী বিছিয়ে দিলো
সবুজ মাঠে তার আঁচল।
উদাসী মন আর কি মানে
ওই শোনা যায় বোধন সুর-
ঢাকির ছেলে বাজাচ্ছে ঢাক
ঢ্যাম্ কুড়াকুড়্, তাকুড়্ কুড়্।





জয় মা দূর্গা
              কনিকা রায়

       "ঔঁ শিবে সবার্থ সাধিকে
      শরন্যে ত্রাম্বকে গৌরী
       নারায়ণী নমঃ স্তুতে"
মা গো তুমি জন্ম দায়িনী জগৎ জননী,
কখনো তুমি ধনী-দরিদ্র,উচু-নিচু মানোনি।
বছরে এক বার আসো তুমি এই ধরা ধামে,
সকলের মাঝে পূজিত হও তুমি শহরে এবং গ্রামে।
আলোক সজ্জা শোভিত হয় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে,
নারী ,পরুষ সকলে পরিনত হয় মডেলে।
ষষ্ঠীতে মা প্রথম যখন ঢাকে পড়ে কাঠি,
তোমার আগমনে আমরা সবাই মেতে উঠি।
সপ্তমী আর অষ্টমীতে তোমার দর্শন করি,
মাগো আমরা সবাই যেন ভালো থাকতে পারি।
নবমীতে  ধুনুচি নাচে মাতে  ছেলে বুড়ো,
চারিদিকে উঠছে শুধু ধুয়ো-কারন,ধুনুচিতে ছেলেরা সব দিচ্ছে ধূপের গুঁড়ো।
দশমীতে সিঁদূর খেলায় ওঠে মায়েরা মেতে,
তোমার কি আর সেদিন মন -
চায় মা চলে যেতে।
সন্ধে বেলায় তোমার যখন হয় মা বিসর্জন,
মনের মাঝে কষ্ট রেখে বলি আমরা-
কয়দিন পরে লক্ষী মায়ের হবে আগমন।

এই পাঁচ দিন কেমন করে যায় চলে মা কেটে,
সত্যি কথা সময় একটা অদ্ভুত জিনিস বটে।











শারদ সুখ
          সুশান্ত মজুমদার


বরিষণ শেষে শরৎ আসে
        আদুরে নরম সুখে,
প্রকৃতি মজে অপরূপ সাজে
       বাতাস রোদ মাখে।

শারদ প্রাতে ঘাসেয় ডগায়
        শিশু শিশির ঝরে,
পুজোর গন্ধে লাগে দোলা
         দখিনা শান্ত সমীরে।

প্রিয়ার মন কুঞ্জে ফোটে
       টগর মাধবী মল্লিকা,
যৌবন আকাশে আগমনীর সুরে
  নাচে মেঘ বালিকা।

দিকচক্রবালে সবুজের প্রান্তরে
 ছায়া রোদের লুকোচুরি,
ভরা যৌবনা দিঘির পাড়ে,
 দোলে কাশফুলের ঝুরি ।

শিউলি সুরভি মাখা রাতে
     তন্দ্রাহীন অলস চোখে,
কর্ম নাশা অতিমারীর শিখা
আতঙ্কের কাজল মাখে !

   



                   বিভাগ- প্রবন্ধ                    

বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছ তুমি,নজরুল
                শিবব্রত গুহ


" বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি' আমারি নতশির ওই শিখর
হিমাদ্রির!

বল বীর -
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
খোদার আসন ' আরশ' ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির- বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-
রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর -
আমি চির উন্নত শির!"

- উপরোক্ত লাইনগুলি কবি কাজী নজরুল
ইসলামের রচিত বিখ্যাত কবিতা ' বিদ্রোহী ' - এর।
এই কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য
সম্পদ। এর প্রতিটি লাইন, শব্দ থেকে বেরিয়ে আসে যেন বিদ্রোহের আগুন। কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা সবাই বলি
" বিদ্রোহী কবি "।

নজরুলের কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে,
তাকে এই নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয় হল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের
বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।তাই তো, তাঁর কবিতা
পাঠ করলে মনেপ্রাণে জাগে বিপ্লবের চেতনা।


নজরুল যখন, কোলকাতার ৩/৪ সি, তালতলা লেনের বাড়িতে থাকতেন, তখন, তিনি এই
বিদ্রোহী কবিতাটা রচনা করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে,
তাঁর ঘনিষ্ঠ মুজফফর আহমদ তাঁর " কাজী নজরুল ইসলাম ঃ স্মৃতিকথা " বইতে লিখেছেন ঃ
" সে কবিতাটি লিখেছিল রাত্রিতে। রাত্রিতে কোন
সময়ে তা আমি জানি নে। রাত দশটার পরে আমি
ঘুমিয়ে পড়েছিলেম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ
ধুয়ে এসে আমি বসেছি, এমন সময়ে নজরুল
বলল, সে একটি কবিতা লিখেছে। পুরো
কবিতাটি সে তখন আমায় পড়ে শোনাল।
' বিদ্রোহী ' কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা। "

নজরুল বিদ্রোহী কবিতাটি লিখেছেন পেন্সিলে।
কারণ, সেসময়, কোন ফাউন্টেন পেন বা ঝরনা
কলম ছিলই না। ১৯২২ সালের, ৬ ই জানুয়ারি,
সাপ্তাহিক " বিজলী " - তে তাঁর এই বিদ্রোহী কবিতাটি প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল।

নজরুলের আর একটি অনবদ্য কবিতা হল
ধূমকেতু। এই কবিতায় কবি জয়গান গেয়েছেন
বিপ্লবের। নজরুল বিপ্লবকে ভালোবাসতেন।
তিনি চাইতেন, আমাদের মানবসমাজের বুকে
যে সামাজিক বৈষম্য রয়েছে প্রবলভাবে,
তা চিরকালের মতো দূর হোক। আর তিনি
বিশ্বাস করতেন, যে, এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে
পারে একমাত্র বিপ্লব, সমাজের সর্বস্তরে সর্বাত্মক
বিপ্লব।

তাই তো, ধূমকেতু কবিতায় কবি কাজী নজরুল
ইসলাম বলেছেন,

" আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
সাত সাতশো নরক - জ্বালা জলে মম ললাটে,
মম ধূম - কুন্ডুলি করেছে শিবের ত্রিনয়ন ঘর ঘোলাটে!
আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ,
আমি স্রষ্টার বুকে সৃষ্টি - পাপের অনুতাপ - তাপ
- হাহাকার -
আর মর্তে সাহারা- গোবি- ছাপ,
আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ!

আমি সর্বনাশের ঝাণ্ডা উড়ায়ে বোঁও বোঁও
ঘুরি শূন্যে,
আমি বিষ - ধূম - বাণ হানি একা ঘিরে ভগবান - অভিমুন্যে।"


কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক। তিনি বিশ্বাস করতেন স্বাধীনতায়।
তিনি চাইতেন, ব্রিটিশ শাসনের পরাধীনতা থেকে
যেন ভারতবাসী চিরকালের মতো মুক্তি পায়।
তাই, তিনি বিদ্রোহ করেছিলেন দেশের পরাধীনতার বিরুদ্ধে, ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে, ভারতীয়দের ওপরে ব্রিটিশদের অকথ্য
অত্যাচারের বিরুদ্ধে। তাঁর কলম গর্জে উঠেছিল
সোচ্চার প্রতিবাদে।

তিনি বারবার ব্রিটিশদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে
তাঁর বিদ্রোহ চালিয়ে গিয়েছেন। তিনি কখনো
কোন পরিস্থিতিতে পাননি ভয়। তিনি সর্বদা করেছিলেন ভয়কে জয়। তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য করেছিলেন কারাবরণ। তাঁর লেখা দেশাত্মবোধক কবিতা ও গান প্রেরণা যোগাত ওইসময় আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের।


তাঁর লেখা একটি কবিতার নাম হল কান্ডারী হুশিয়ার। এই কবিতাটি দেশাত্মবোধক চেতনায়
সমৃদ্ধ। এই কবিতায় কবি নজরুল বলছেন,
"
দুর্গম গিরি কান্তার- মরু- দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভূলিতেছে মাঝি
পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার
হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে
ভবিষ্যত।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী
পার!! "

একটা দেশ ও সমাজের ভিত হল সেই দেশ ও
সমাজের ছাত্রসমাজ। এই ছাত্রসমাজ যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে তার
খারাপ প্রভাব পড়তে বাধ্য দেশ ও সমাজের
ওপরে। তাই দেশ ও সমাজের উন্নতিতে,
ছাত্রসমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ছাত্রসমাজের জয়গান কবি কাজী নজরুল
ইসলাম গেয়েছেন তাঁর " ছাত্রদলের গান "
কবিতায়।

" আমরা শক্তি আমরা বল
আমরা ছাত্রদল।
মোদের পায়ের তলায় মুর্সে তুফান
উর্ধ্বে বিমান ঝড় - বাদল।
আমরা ছাত্রদল।।

মোদের আঁধার রাতে বাধার পথে
যাত্রা নাঙ্গা পায়,
আমরা শক্ত মাটি রক্তে রাঙাই
বিষম চলার ঘায়!
যুগে - যুগে রক্তে মোদের
সিক্ত হ'ল পৃথ্বীতল!
আমরা ছাত্রদল।। "

কবি নজরুল ছাত্রদলের গুরুত্ব ভালো ভাবেই
উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তখন ভারতবর্ষ ছিল পরাধীন। লালমুখো সাহেবদের অত্যাচারে,
সারা ভারত জুড়ে উঠেছে ত্রাহি ত্রাহি রব। ভারতবাসী মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারছে
পরাধীনতার জ্বালা। ভারতবাসীরা চায়
পেতে স্বাধীনতা। ব্রিটিশরা আবার কড়া হাতে
দমন করে চলেছে ভারতীয়দের স্বাধীনতা সংগ্রাম।

এই সময় নিষিদ্ধ হয়েছিল বিভিন্ন ভারতীয় কবি
- লেখকের বই, প্রবন্ধ - নিবন্ধ। অনেকের মতো
দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল
নজরুলের বই। তাঁর খবর জোগাড় করার জন্য
তাঁর পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।


১৯২২ সাল থেকে ১৯৩১ সাল অবধি নজরুলের ৫টি
বই করা হয়েছিল বাজেয়াপ্ত। তাঁর প্রথম যে বইটি
অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকদের রোষানলে পড়েছিল,
তার নাম হল " যুগবাণী "। ১৯২২ সালে ব্রিটিশ ফৌজদারী বিধির ৯৯এ ধারা অনুসরণ করে,
এই বইটিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়। তখনকার
ব্রিটিশ শাসকেরা, এই বইটাকে " একটি ভয়ংকর
বই " বলে চিহ্নিত করে।

এরপরে, ১৯২৪ সালের ২২শে অক্টোবর, নজরুলের কবিতার বই " বিষের বাঁশি "নিষিদ্ধ
হয়েছিল। তারপরে, ১৯২৪ সালেই, ১১ ই নভেম্বর,
নজরুলের আরো একটি কবিতার বই " ভাঙার
গান " বাজেয়াপ্ত হয়।

এরপর, নজরুলের, আর একটি কাব্যগ্রন্থ
" প্রলয় শিখা " বাজেয়াপ্ত করা হয় ১৯৩১ সালে।
এই সময় কবির হৃদয় বেদনায় ছিল ভরা,
তাঁর প্রিয় ছেলে বুলবুলের মৃত্যুতে। তাঁর দুচোখ
অশ্রুতে সিক্ত হলেও, তাঁর কলম থেকে বেরিয়েছিল একের পর এক আগুনের ফুলকি,
প্রলয় শিখাতে।

তারপরে, নজরুলের একটি ব্যঙ্গ বিদ্রুপের কবিতার বই " চন্দ্রবিন্দু " নিষিদ্ধ হয়েছিল
১৯৩১ সালের ১৪ ই অক্টোবর। কিন্তু, এতকিছু করেও দমানো যায়নি নজরুলকে। কারণ, তিনি
যে বিদ্রোহী কবি। বিদ্রোহ তাঁর রক্তে, বিদ্রোহ তাঁর
কলমে, বিদ্রোহ তাঁর শিরায় - উপশিরায়।

বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছ তুমি,
নজরুল,
মানুষের অন্তরে,
মানুষের অন্তরে,
মানুষেরই অন্তরে।

( তথ্য সংগৃহীত )


           ————::-———









    স্মরণে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন 
             সৌম্য ঘোষ

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন একজন বাঙালি চিন্তাবিদ ,প্রাবন্ধিক , ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি বাঙ্গালী নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং সম্ভবতঃ প্রথম বাঙালি নারীবাদী ।
                  রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালের অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত( তৎকালীন পূর্ব বঙ্গে )রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার অন্তর্গত পায়রাবন্দ গ্রামে । তাঁর জন্ম সাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তার রচিত " অবরোধ বাসিনী" তে তিনি লিখেছিলেন, তার জন্ম সাল ১৮৭৭ । পিতা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার ছিলেন জমিদার। মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী ।রোকয়ারা ছিলেন দুই বোন ,তিন ভাই ।এদের একজন শৈশবে মারা যায়।
                বেগম রোকেয়ার পিতা বহু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন ।আরবি ,উর্দু ,ফার্সি, বাংলা ,হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় ।তা সত্ত্বেও তিনি নারী শিক্ষার ব্যাপারে রক্ষণশীল ছিলেন ।সেই সময় মেয়েদের বিদ্যাচর্চার সমাজ মান্যতা ছিলনা ।বড় দুই ভাই কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে বিদ্যা লাভ করায় তাঁরা ছিলেন আধুনিকমনস্ক ।বড় বোন ও বড় দুই দাদার উৎসাহ ও সহযোগিতায় তাঁর শিক্ষালাভ ,সাহিত্য চর্চা ও সামগ্রিক মূল্যবোধের বিকাশ লাভ করে ।বেগম রোকেয়ার বড় দুই দাদা ও বড় দিদির সমর্থন ও সহায়তায় বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি ও আরবি আয়ত্ত করেন ।

                      ১৮৯৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বেগম রোকেয়ার বিবাহ হয় বিহারের ভাগলপুর বাসিন্দা উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে ।তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং কুসংস্কারমুক্ত সমাজ সচেতন প্রগতিশীল দৃষ্টিসম্পন্ন। উদার ও মুক্ত মনের অধিকারী স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় দেশী বিদেশী লেখকদের রচনা সঙ্গে পরিচিত হন। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন । তাঁর সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত হয় স্বামীর অনুপ্রেরণায় । স্বামীর সঙ্গে বয়সের তফাৎ থাকলেও স্বামীর কাছ থেকে বিদ্যাশিক্ষা ও সাহিত্য চর্চার জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা পেয়েছিলেন। দাদার কাছে যে ইংরেজি শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছিল, স্বামীর কাছে তা সম্পূর্ণ হয় । খান বাহাদুরের সযত্ন চেষ্টায় তিনি ইংরেজি ও উর্দুতে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেছিলেন । দাদা ইব্রাহিম ও দিদি করিমুন্নেসা র যত্নে যে কুঁড়িটি ফুঁটে ছিল ,‌ তা সৈয়দ সাখাওয়াতের প্রেম ছায়ায় পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হয় ।

                       ১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি গল্প লিখে সাহিত্য জগতে অবদান রাখা শুরু করেন । তাঁর নারীবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটান "মতিচূর "প্রবন্ধ সংগ্রহে। তাঁর প্রথম খন্ড (১৯০৪) ও দ্বিতীয় খন্ডে (১৯২২) । তার বিখ্যাত সৃজনশীল রচনা সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫) , পদ্মরাগ (১৯২৪) , ইত্যাদি ।তাঁর রচিত " সুলতানার স্বপ্ন "কে বিশ্ব নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হয় । তাঁর প্রবন্ধ ,গল্প ,উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে তিনি নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও লিঙ্গ সমতার পক্ষে সাওয়াল তুলে ধরেছেন ।তাঁর রচনার মধ্যে দিয়ে তিনি সামাজিক সচেতনতা ,ধর্মের নামে নারীদের প্রতি অবিচার রোধ করা, শিক্ষা ও পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্বাচনে নারীদের দাবি মূর্ত করেছেন ।তিনি নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে সচেষ্ট হতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

                    স্বামীর মৃত্যুর পর (১৯০৯) নিঃসঙ্গ রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন । মৃত্যুর আগে তাঁর স্বামী তাঁকে তৎকালীন নগদ দশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন একটি স্কুল খোলার জন্য । ১৯০৯ সালে ভাগলপুরে স্বামী স্মৃতিতে " সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল " প্রতিষ্ঠা করেন ।পরবর্তীকালে পারিবারিক কারণে কলকাতায় চলে আসেন ।কলকাতায় তিনি মাত্র আট জন ছাত্রী নিয়ে নবপর্যায়ে "সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল " স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে (১৯৩১) এটি উচ্চ ইংরেজি গার্লস স্কুল হিসেবে পরিগণিত হয় । প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি তাঁর সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন স্কুল পরিচালনায় ।বিরূপ সমালোচনা ও নানাবিধ সামাজিক বাধা অতিক্রম করে তিনি এই প্রতিষ্ঠানকে সে যুগের মুসলমান মেয়েদের শিক্ষা লাভের অন্যতম পীঠস্থানে পরিণত করেন ।

                     সাহিত্যিক হিসেবে বেগম রোকেয়া ছিলেন এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা । নূর ,মোহাম্মদ, মহিলা ,ভারত মহিলা আল ইসলাম, নওরোজ, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, The Mussalman ,Indian ladies magazine প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশ পেত । উদ্ভাবনা ,সৃজনী ,যুক্তিবাদিতা ও কৌতুক প্রিয়তা তাঁর রচনায় সহজাত বৈশিষ্ট্য। তাঁর প্রবন্ধের বিষয় ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত ।সেযুগে অভিজাত শ্রেণীর মুসলমানদের ভাষা ছিল উর্দু । ১৯২৭ সালে বঙ্গীয় নারী শিক্ষা সম্মেলনে বেগম রোকেয়া বাংলাভাষার স্বপক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন যা সে যুগের প্রেক্ষিতে ছিল দুঃসাহসিক ।

       ‌ বেগম রোকেয়া বিশ শতকে একজন বিরল ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণীয় ।

                   সরোজিনী নাইডু ,বড়লাট পত্নী লেডি চেমসফোর্ড ,লেডি কারমাইকেল ,ভূপালের বেগম সুলতান তাঁর কর্মকান্ডে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন এবং তাঁকে সমর্থন করতেন ।

                  ২০০৯ সালে বাংলাদেশের রংপুরে তাঁর নামে "বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়" স্থাপিত করেন বর্তমান সরকার । প্রতিবছর তাঁর জন্মদিনে ৯ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ "বেগম রোকেয়া দিবস" পালিত হয়।
             
               আগ্রহী মাননীয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে কবি বেগম রোকেয়া র একটি কবিতা নিবেদন করছি :----

                        || আপীল ||
                    """""""""""""""""""""""""""
                  কবি বেগম রোকেয়া
                 """""""""""""""""""""""""""""""""
( প্রথম প্রকাশ "সাধনা পত্রিকা" ফাগুন, ১৩২৮ )


             "কারো কাছে জমিদারি
               কেহ-বা উপাধিধারী....
 বাঙালা বিহারে মোর যত কিছু ধারী.......
 সকলে মিলিয়া এই আবেদন করি । ......
             প্রাণের মরি সেও ভালো,
             শতবার মৃত্যু ভালো
 লাঙ্গুল বিরহ কিন্তু সহিতে না পারি ।
             বোম্বাই নগর ধাম,
             " ভারত সময়" নাম........
 শ্বেতাঙ্গ পত্রিকা এক রাগীয়াছে ভারী ,
 মহাক্রোধে করেছে সে এ হুকুম জারি.......
             " যত মূক ভদ্র পাও,
               লাঙ্গুল কাটিয়া দাও ।
 তা হলে হইবে দণ্ড উচিত সবারই ।"


                নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং আলোর দিশারী বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালে তাঁর কলকাতাস্থ বাসগৃহে মাত্র 52 বছর বয়সে স্বর্গারোহণ করেন ।।










বাংলা সাহিত্যে রম্যরচনা
                 অগ্নিমিত্র

লঘু কোন লেখা, যা পড়তে ভালো লাগে ও যাতে মধুর রস বা হাস্যরস থাকে, অথচ আক্ষরিক অর্থে যা প্রবন্ধ, গল্প বা অণুগল্প নয়, তাই হলো রম্যরচনা । সাধারণত আকারে এগুলি বেশি বড় হয়না। ভাষাও থাকে সহজ সরল। কোনো মজার ঘটনা বা সমাজের কোনো অসঙ্গতি মজার আড়ালে লেখা যায় রম্যরচনার মাধ্যমে । ট্রেনের বা বাসে কোথাও সফর করতে করতে পড়তে দারুণ লাগে। .. বাংলায় শিবরাম চক্রবর্তী, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ও তারাপদ রায় এই ধারার লেখার পথিকৃৎ। লীলা মজুমদারের ' খেরোর খাতা 'ও এই ধারার লেখা । এগুলি পড়তে আজও দারুণ লাগে।
   এই লেখাগুলি আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব ভালো লাগে। কোন গুরুগম্ভীর বার্তা নেই, অথচ সুন্দর একটা অনুভূতির রেশ থেকে যায়।
 এই ধারার লেখা আজকাল আর তেমন দেখা যায় না। যদিও সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ লিখছেন। আরো বেশি রম্যরচনা লেখা হোক । বাংলা সাহিত্যকে এটা আরো সমৃদ্ধ করবে।।








দেশ আকাশ ও স্বাধীনতা
               ডা: নরেন্দ্র নাথ নস্কর

এই একটা মোটে পৃথিবী। মানুষ তথা কথিত সভ্য হওয়ার পর, নিজেদের মত এক একটা দল গড়ে তাদের সুবিধা মত বাহুবলে এক একটা দেশ বানিয়েছে। নিজেরা সেই দেশের একটা সীমানা বানিয়েছে। দেশের একটা নাম ও দিয়েছে।
পরে কোন কোন দেশ পেশী শক্তির সাহায্যে পাশের দুর্বল মানুষদের জায়গা দখল করে নিয়েছে ও তাদের দেশের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে।
ক্রমে ধর্ম ভেদে পৃথিবীতে নানা দেশ ও নানা জাতির সৃষ্টি হয়েছে।

একই আকাশের তলায় থেকে এই ভাবে কত দেশ তৈরী হয়েছে ।

 কোন দেশ আবার ভাষার ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে।

যতদিন না বিমান আবিষ্কার হয়েছে, আকাশের কোন সীমানা ছিল না।
 বিমান বাহিনী ও র‌্যাডর আবিষ্কারের পর আকাশকে ও কাল্পনিক সীমারেখা দিয়ে ভাগ করা হয়েছে।
একটাই পৃথিবীতে এই ভাবে প্রায় দুশোর ও বেশি ছোট ও বড় দেশ তৈরী করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামরিক শক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তিতে আবার কোন দেশ কত শক্তিশালী তার একটা মাপকাঠি তৈরী করা হয়েছে।

অথ্চ ভগবান নিজেথেকে কোন দেশ সৃষ্টি করেননি।
সমস্তই মানুষের তৈরী।

মানুষ জাতি এই ভাবে নিজেদের মধ্যে একটা ভৌতিক ও মানসীক বিভেদের সীমারেখা তৈরী করে নিয়েছে।
আজ পর্যন্ত কত যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে তথাকথিত সভ্য মানুষরা তার হিসাব করা মুশকিল কম সময়ের মধ্যে।

অত্চ সমস্ত দেশের একটাই সূর্য।একটাই চন্দ্র ।
 গোলার্ধ অনুসারে সমস্ত দেশের রাত ও দিন একবার করে হয়।

তবে আবহাওয়ার তারতম্য স্থান অনুসারে হয়ে থাকে।

সত্যি বলতে কি স্থানীয় মানুষেদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে । সে কোন দেশে থাকবে, কোথায় যাবে তার একটা মাপকাঠি তৈরী করে দিয়েছেন শাসকরা।
মানুষের তৈরী এই সীমারেখার ফলে মানুষ ইচ্ছামত পৃথিবীর যে কোন স্থানে নিরাপদে স্বাধীন ভাবে ঘুরতে পারে না, ভালো লাগলে থাকতেও পারে না। সেই দেশের শাসকদের আইনত সম্মতি চাই।

তাহলে পাঠকই বলুন ঈশ্বরের পৃথিবীতে মানুষ সত্যি কি স্বাধীন?
কবে এই পরাধীনতা কাটবে কেউ জানে না। হয়ত ঈশ্বরই বলতে পারেন এর উত্তর।











পা ছুঁয়ে প্রণাম কি বিজ্ঞানসম্মত বা স্বাস্থ্যসম্মত ?
             রাজা দেবরায়


বহুশ্রুত 'অপবাদ' - "আজকাল তো প্রণাম উঠেই যাচ্ছে..." । তারপরেও গুরুজনদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে আমাদের দেখা যায় । পা ছুঁয়ে প্রণাম করার রীতিই মোটামুটিভাবে আমাদের সমাজে প্রচলিত ।

কিন্তু পা ছুঁয়ে প্রণাম করলে নিম্নলিখিত অসুবিধাগুলোর সম্মুখীন হতে পারি আমরা -

১) পায়ে (বা চটি/জুতোয়) লেগে থাকা ময়লা আমাদের হাতে লাগতে পারে । ময়লা হাত না ধুলে রোগজীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে ।

২) চর্মরোগ থাকলে সেটা বিপজ্জনক হতে পারে ।

৩) কোমরে ব্যথা বা মেরুদণ্ডে সমস্যা থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে ।

৪) পেটে ছোট-বড় সমস্যা থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে ।

৫) ঘাড়ে সমস্যা থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে ।

৬) গর্ভবতী মহিলাদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করাটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে ।

অনেকে আবার এর মধ্যে বিজ্ঞান খুঁজে পান । বলেন - পা ছুঁয়ে প্রণাম করলে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বা মানসিকতা দূরে চলে যায় এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বা মানসিকতা শরীরে প্রবেশ করে । কিন্তু এর পেছনে কোনো বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই এখন পর্যন্ত ।

তাই কাপড়ে ঢাকা হাঁটুতে ছুঁয়ে অথবা হাতজোড় করে (নমস্কারের মাধ্যমে) প্রণাম করলে তুলনামূলকভাবে ব্যাপারটা বিজ্ঞানসম্মত বা স্বাস্থ্যসম্মত হতে পারে ।

তবে এর প্রচলন আমাদের ইয়ং জেনারেশন থেকেই শুরু করতে হবে ।
আমাদের থেকে ছোটদের বোঝাতে হবে বিষয়টা ভালোভাবে ।

আমাদের আগের জেনারেশন যেহেতু ব্যাপারটা ইমোশনালি দেখেন বা দেখে আসছেন, তাই উনারা উক্ত বিষয়টাকে 'অসামাজিক' হিসেবে না দেখলে কৃতজ্ঞ থাকবো ।

পরিশেষে, অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি অশোভন কিছু বলে থাকি বা ধৃষ্টতা মনে হয়ে থাকে, তবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য করজোড়ে অনুরোধ রইল । সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ।।












         বিভাগ- বিশেষ  প্রবন্ধ                  


শিশু চলচিত্রে পঞ্চ রত্ন
                             নিমিত দত্ত

সিনেমা বা চলচিত্র আধুনিক সময়ের অদ্ভুদ এক সৃষ্টি ।এর মধ্যেই আছে ফটোগ্রাফি , অভিনয়, সঙ্গীত,ইত্যাদি অনেক গুলি চারু ও কারু শিল্পের সমন্বয়ের প্রচেষ্টা। ভারতীয় সিনেমায় সেই দাদা সাহেব ফালকে থেকে সত্যজিৎ মৃনাল হয়ে আজকের অনেক সুখ্যাত পরিচালক তাদের অনবদ্য সৃষ্টির স ম্ভারে আমাদের সমৃদ্ধ করছেন ।আজ এই দুঃসময়ে য খন শিশু কিশোরদের স্বাভাবিক শিক্ষা আর খেলাও মেলার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে আর নির্মমভাবে নির্দিষ্ট গন্ডী বদ্ধ জিবনে ওরা হাফিয়ে উঠছে তখন মনে হলো আমার দেখা এই পাঁচটি সিনেমা নিয়ে অল্প কিছু আলোচনা করা যায় ।এইসব সিনেমায় কিছু এমন জাদু আছে যা আট থেকে আশি সবাইকেই নতুন জীবন রসের সন্ধান দেবে ।

ফির ভি (১৯৭২/ হিন্দি)

কাহিনী: পাপ্পু ও জুমন দুই বাটুল এর কাহিনী।স্কুলের বন্ধুদের ঠাট্টা বিদ্রূপে অতিষ্ঠ হয়ে ওরা সার্কাসে যোগ দেয়।
মজার মজার গান ও নাচ করে ওরা দর্শকদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করে।এখানেও ওদের কপালে জোটে শুধু লাঞ্ছনা। সার্কাসের ম্যানেজার ও ওদের সাথে বিশ্রী ব্যবহার করতে থাকেন ।জীবনের নানা নিষ্ঠুর ঘাত প্রতিঘাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে দুই বন্ধু লজ্জায় ঘেন্নায় একদিন সার্কাস থেকেও পালায়। ম্যানেজার ওদের পিছনে পুলিশ লেলিয়ে দে য়।এরপর শুরু হয় ভুলো মনা গোঁফওয়ালা মজার পুলিশের সাথে জলে ডাঙায় আসমানে দুই বাটুল এর সাথে পুলিশের লুকোচুরি খেলা।অনাবিল হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। পাপ্পু ও জুমন শেষ পর্যন্ত এসে হাজির হয় অসুস্থ অক্ষম শিশুকিশোর দের এক আশ্রমে। এখানেই অসহায় শিশুদের দুঃখ কষ্ট দেখেই নিজেদের বাটুল হবার কষ্ট ও ভুলে যায় এক সময়ে।ওরা ঠিক করে এদের মাঝে থেকেই এদের জীবনযুদ্ধের ও যান্ত্র নার ভাগীদার হয়ে উঠবে । চমত্কার হাস্যরসের শিল্পী জনি ওয়াকারের অসামান্য অভিনয় দক্ষতায় এই মানবিক শিশু চলচিত্র দুখহাসির মেলবন্ধন এর নজির হয়ে থাকবে।
পরিচালক : বার্লিন ও লন্ডন একাডেমী থেকে চলচিত্রের বিষয়ে শিক্ষ ন প্রাপ্ত পরিচালক শিবেন্দ্র সিংহ।তিনি প্রথম থেকেই ছোট টিভি সিরিয়াল ও নাটকের পরিচালনায় ও অভিনয়েও নিজ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন।১৯৭২ সালে তিনি এই" ফির ভি"(হিন্দি সিনেমা) জন্যে শিশু চলচিত্রে জাতীয় পুরস্কার পেলেন তিনি।

দ্যা গোল

সুদক্ষ ফুটবল কোচ অনুপম বাবু বস্তির ছেলে মনুর মধ্যে প্রতিভার খোজ পেয়ে তাকে ফুটবল খেলবার সুযোগ করে দেন।মনু কঠোর পরিশ্রমে আর গভীর আত্মবিশ্বাসে র সাথে নিজ প্রতিভাকে আরো ক্ষুরধার করে তুলতে থাকে। এরপর কোচ য খন  একদিন মনুকে ফাইনাল টিমে রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে তখনই "নিচুজাত" আর " ওর বাবা জেলখা টা চোর" এই অজুহাতে দলের অন্য সবাই তীব্র আপত্তি জানায়।"মনুর প্রতিভাকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেবেন না" এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় কোচ মনুকে একটি প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলায় নামায়।এখানে মনু কি নিজ প্রতিভায় জ্বলে উঠতে পারবে ?শেষ বিচারে প্রতিভা নাকি জাতপাত ও কুসস্কারের জয় হয়? সদ্যামৃত , সু অভিনেতা ইরফান খানের( কোচ) জীবন্ত উপস্থিতি" দ্যা গোল"(২০০০) কে জাতীয় সেরা চলচিত্র পুরস্কার এনে দিয়েছে।
পরিচালক: এই সিনেমার পরিচালক গুলবাহার সিং বেশকিছু তথ্যচিত্র ও ছোট সিনেমা করে হাত মস্কো করেন।তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কীর্তির মধ্যে "অঙ্কু রান", ": বায়োটেকনোলজি; সাম পসিবিলিটি স"," গতিপুয়া",*
"ভীত" ইত্যাদি।


সবুজ দ্বীপের রাজা

কাহিনী: আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে র এক অজানা দ্বীপে মহাকাশের থেকে একটা জ্যোতির্ময় শক্তি পাথর এসে পরে। ঐ দ্বীপের আদিম বাসিন্দারা এই ব্যাপারে থাকেন অজ্ঞাত। কিন্তু একদল দুষ্কৃতিকারী টাকার লোভে ওই সম্পদ লুঠ করতেই দ্বীপে হানা দে য়। ইতিমধ্যে সুখ্যাত অভিযাত্রী কাকাবাবু ( মিস্টার রায়চৌধরী) তার কিশোর বয়সী দুঃসাহসী ভাইপো সন্তুকে নিয়ে জারোয়া দের সেই দ্বীপে হাজির হয়। এরপর সন্তু ও কাকাবাবু অকুতোভয় কর্মকাণ্ডে কিভাবে হিংস্র জারোয়ারা তাদের বন্ধু হলো; আর কিভাবেই বা লুন্ঠন কারি দের সায়েস্থা করা গেল সেই নিয়েই ত সিনেমা ।হ্যাঁ ,আন্দামানের অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য এই সিনেমার আর এক সম্পদ।
পরিচালক : তপন সিংহ ,শিশু ও কিশোরদের জন্যে মাঝেসাঝে বেশকিছু ভালো সিনেমা উপহার দিয়েছেন।লন্ডনের পিন উড স্টুডিও থেকেই চলচিত্র পরিচালনার বিষয়ে গভীর ব্যুৎপত্তি নিয়ে এসে তপন বাবু একের পর এক  নিজস্ব রুচিশীল সিনেমা নির্মাণ করতে থাকেন।তার "ক্ষুধিত পাষাণ", "অতিথি",ও "কাবুলিওয়ালা" সিনেমার কথায় অনেকের স্মৃতিতেই আজও উজ্জ্বল।২০০৯ সালে তার প্রয়াণ।

সানডে

কাহিনী: আজ রবিবার।আজকেই চিন্টুর বাবা বাইরে থেকে ফিরবেন। তাই ও চটপট ঘুম থেকে উঠেই ও রেডি হয়ে যায়।ও মায়ের সঙ্গে স্টেশন যাবে। পৌঁছানোর পথে ওদের জিপ গাড়ি হঠাৎ বিগ ড়ে গেলেও খানিকবাদে অলৌকিকভাবে সেরেও যায়। এরপর আরো সব একটার পর একটা অদ্ভূত অদ্ভুত কাণ্ড ঘটতে থাকে এই পরিবারে। চিন্টুর বাবা ঘুমিয়ে পড়ায় স্টেশনে নামতেই পারেননি।ওদিকে ওর মা বাবার কাছে পৌঁছানোর জন্যে যে ট্রেনে চ ড়ে বসে সেটা একটা সুপার এক্সপ্রেস ,, ছয় ঘণ্টা পরে স্টপেজ দে য় ।ওদিকে চিন্টু ও তার বাবা মাকে ধাওয়া করে ধরতে অদ্ভুত অদ্ভুত বিপদ ঘটায়।আর তালগোল পাকিয়ে এইসব নিয়ে দারুন মজা হয়।এইসব হুল্লুর আর লুকো চুরি ছেলেবুড়ো সবাইকেই দারুন মজা দেবে।এই Sunday সিনেমায় পঙ্কজ আডভানি নানা চমকপ্রদ হাস্যামূহর্ত রচনা করেই ১৯৯৪ সালের শিশু সিনেমার জাতীয় সেরার তকমাটি জিতে নেন।
পরিচালক : বারদার এম এস বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পঙ্কজ অ্যাড ভানি চলচিত্র নির্মাণকাজ শেখেন FTII থেকে।তার চিত্রনাট্যে নির্মিত সিনেমা "কাভি হা কাভি না" য থে ষ্ট সম্মান পায়। এছাড়া"উর ফ প্রফেসর","কেপ কর্মা", সংকট সিটি" জন্যেও তিনি বিখ্যাত।মৃত্যু ২০১০ সাল।

দা মু

কাহিনী: গায়ের অনাথ ছেলে দামুকে একজন ধনী ও দয়ালু ব্যাক্তি আশ্রয় দিয়ে লালন পালন করেন।দামুর সাথে সেই দয়াবন ব্যক্তির একমাত্র নাতনির দারুন ভাব হয়ে যায়। বেখেয়ালে,কথার ছলে দা মু তার ছোট্ট   রুনকু দিদিমনি কে  "হাতিতে চড়িয়ে গ্রাম ঘুরাবে " বলে কথা দে য়। কিন্তু গায়ে চট করে হাতী পাওয়া কি সম্ভব? একগুয়ে দা মু "হাতী ধরে আনবে" বলেই একসম় য় বাড়ি থেকে রওয়ানা দে য়।অনেক নাকাল হয়ে অনেক কাণ্ড ঘটিয়ে দা মু এক সার্কাস দলের তাবুতে এসে হাজির হয়। ম্যানেজার ওর সাথে কথা পর্যন্ত বলে না। নাছোড় দা মু রেগেমেগে হাতী চুরির কথাও ভাবে। কিন্তু" সৎ ভালোমানুষের বোঝা ভগবান বয়।"তাই শেষমেশ কি হয় ? অধম দা মু কি রিংকী দিদিকে দেওয়া কথা রাখতে পারবে? কিভাবে একা একটা মানুষের ভালোবাসা সবকিছু জয় করতে পারে ?,,এইটুকু জানতেই এই দিনে সবার দেখা উচিত।সেই সঙ্গে এই সিনেমা রঘুবীর যাদব( মূল চরিত্র) সত্য ব্যানার্জি ( ধনী ব্যাক্তি)এর অনবদ্য অভিনয় আর অসামান্য গানের সম্পদে ও সমৃদ্ধ।১৯৯৫ সালে রাজা সেনের পরিচালনায় জাতীয় চলচিত্র ( শিশু) পুরস্কার পাওয়া এই সিনেমার কাহিনীকার নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়।
পরিচালক : রাজা সেন নানা জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল ও ট থ্য চিত্র নির্মাণ করে হাত মস্কো করেন।নয় নয় করে তিন তিনটে জাতীয় পুরস্কার তার ঝুলিতে ।১৯৯৩ সালে" সুচিত্রা মিত্র"(ত থ্য চিত্র),১৯৯৯ সালে "আত্মীয়স্বজন"( পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচিত্র)এর জন্যে।সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ টি চলচিত্র,টিভি সিরিয়াল ও ত থ্য চিত্র তার শিল্প নৈপুণ্যের স্বাক্ষর বহন করে।




            






               বিভাগ- অনুগল্প                    


                মূর্তি
                       অঞ্জলি দে নন্দী, মম

মা মেয়ের জন্ম দিয়েই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরতরে চলে গেল। বিপত্নীক বাবাটা কাঁচা হাতেই মেয়েটাকে বড় করল। মাটির কুঁড়ে ঘরে ওরা বাবা মেয়ে খুব সুখী। মাঝে মাঝে মাঝে শুধু বাবা নীরবে মেয়েকে বুকে চেপে ধরে কাঁদে যখন ওর ছোট্ট মুখ দিয়ে প্রশ্ন বের হয় - " বাবা সবার মত আমার কেন মা নেই? "
দেখতে দেখতে দেখতে ও কিশোরী হল।
বাবা মাটির মূর্তি গড়ে পাকা হাতে। এখন সব মূর্তিতেই ওর কন্যার রূপ ফুটে উঠছে। মেয়েই শ্রী দেবী। আবার শ্রী দেবীই মেয়ে। ভাব ভক্তি স্নেহ ভালোবাসা বাস্তব কল্পনা প্রাণহীন জীবন্ত - সব মিলেমিশে একাকার।
আশ্বিন মাসে মূর্তি সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে। তাই দ্রুত কাজ করছে ওরা। সেদিন প্রতিদিনের মতই মেয়ে বাবার কাজে সাহায্য করছে। কন্যা বাবার গড়া মাতা শ্রী দুর্গা দেবীর কেশ বানাচ্ছে। ভাদ্র মাস। খোলা আঙিনায়। বিকালে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আবছা আলো। প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়েই এসেছে। বাবা বলল, " মা অঞ্জলি! সন্ধ্যেটা দিয়ে দে মা! " ও তুলসী তলায় দীপ জ্বালালো। শঙ্খ বাজালো। এবার ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করছে। এমন সময় ডান পায়ের পাতায় আঙুলের কাছে সর্প দংশন করলো। ও চিৎকার করে ডাকলো, " বাবা গো আমার পায়ে কি কামড়ালো? খুব জ্বলছে গো বাবা! " বাবা মূর্তি গড়ার কাজ ফেলে রেখে ছুটে এলো। দেখলো - একটি কালী গোখরো সাপ এঁকেবেঁকে চলে যাচ্ছে। বাবা ওকে নিয়ে চলল কাছের ডাক্তারখানায়। সেখানে কিছুই চিকিৎসা হল না। চলল দূরের হাসপাতালে। পথেই সব শেষ। ওর নীল দেহ। মাথাটা বাবার কোলে। বাবা কেঁদে উঠলো। ঘরে ফিরলো। পাড়ার সবায়ের সঙ্গে বাবাও মেয়ের দেহ দাহ করে শূণ্য ঘরে ফিরলো।
সব মূর্তি বাঁশের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল। আর কখনই বাবা কোনোও মূর্তিই গড়লো না জীবনে।
এর কয়েকবছর পর বাবা নদের জলে নাইতে গিয়ে আর ফিরলো না। তার হাতে গড়া সব মূর্তির মতই সেও চিরতরে বিসর্জিত হল।







অণু গল্প
          প্রতীক্ষা
                     তন্ময় চক্রবর্তী

পঞ্চমীর সন্ধে । দেবীর বোধন শুরু না হলেও পুজো পরিক্রমা শুরু হয়ে গেছে । খাটে বসে টিভিতে চোখ রেখে একের পর এক প্যান্ডেল দেখে চলেছে অনুপমা । পাশে বসে তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী মালতী। সে এই বাড়িতেই থাকে। পাঁচ-ছয় মাসে একবার গিয়ে ছেলেটিকে দেখে আসে । পুজো পরিক্রমা দেখার পাশাপাশি তারা দু'জনে নাড়ু বানিয়ে চলেছে । একদিন যদি নাতি নাতনিদের নিয়ে ছেলেরা আসে ।
অনুপমার দুই ছেলে । একজন পাশের পাড়ায় ফ্ল্যাট কিনেছে । আর একজন শ্বশুরবাড়িতেই থাকে । ২০ মিনিট হাঁটা পথ । শ্বশুর নেই । শাশুড়ি অসুস্থ । অনুপমার মতো সেও হাঁটতে চলতে পারে না । ছেলেরা আগে প্রতিবারই পুজোয় একদিন নিয়ম করে আসত । কিন্তু তিন-চার বছর হল সোনারপুরে বড় ছেলের শ্বশুর একটা বাগানবাড়ি কেনার পর থেকে সেখানেই যায় ।
হঠাৎ অনুপমার মোবাইলটা বেজে উঠল । বড় ছেলের ফোন । বলল, সপ্তমীর সন্ধ্যায় দুই ভাই আসবে । মালতীকে দিয়ে ছাদের ঘরটা যেন পরিষ্কার করিয়ে রাখে । ফোনটা রেখে মালতীকে ঘর পরিষ্কারের কথা জানিয়ে সে বলল, "সকালে উঠে একটু ময়দা নিয়ে আসিস তো । টুকাই আর তিতলিকেও মনে হয় আনবে । ওরা খুব নিমকি ভালোবাসে ।"
সপ্তমীর সকালে মালতীকে দিয়ে চিকেন আনিয়েছে অনুপমা । বলেছে, পকোড়া বানাতে । আগে সপ্তমীর সন্ধ্যায় ওরা এলেই বাইরে থেকে এগুলো অর্ডার দিত । এবার তাই আগেভাগেই রেডি করে রেখেছে সে । ছেলেদের সন্ধ্যার আড্ডায় লাগবে । নাতি নাতনিদের জন্য নাড়ু, নিমকিও তৈরি ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার মুখে । বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে অনুপমা । এত দেরি তো করে না ! বড় ছেলেকে ফোনটা করেই ফেলল । ছেলে ফোন ধরতেই বলল, "কী রে আর কত দেরি ?" ছেলে একটু আমতা আমতা করে বলল, "এই রে তাড়াহুড়োতে তোমাকে আর বলা হয়নি । অনন্যার বাবার বাগানবাড়িটা যারা বুক করেছিল তারা কাল রাতেই ক্যান্সেল করেছে । এক রাতের প্ল্যানিংয়েই চলে এসেছি ।" ফোনটা রেখে নাড়ু আর নিমকির বয়ামের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে অনুপমা...!!!








দাঁতের ডাক্তার
                    সুশান্ত দত্ত

অনেকক্ষন ধরে দাঁতের ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বসে আছি। ডাক্তার আসার নাম নেই। বীভৎস গরমে আমার আর কিছু ভালো লাগছে না। অবশেষে দুই ঘন্টা দেরি করে ডাক্তার আসলেন তার চেম্বারে। ডাক্তারের নাম মিলি ঘোষ। মালদা শহরে এই ডাক্তার খুব নাম করেছেন। আমি শুনেছি এই ডাক্তারের বাড়ি রায়গঞ্জ শহরে। আমি অবশ্য রায়গঞ্জে থাকাকালীন মিলি ঘোষ নামে একটা মেয়ের সাথে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি, এই ডাক্তার সে মেয়ে কিনা আমি জানি না।
আমি চেম্বারে ঢুকেই মিলি ঘোষকে চিনে ফেললাম।  জিজ্ঞাসা করলাম, 'চিনতে পারলি ? আমি রুবাই মানে রুবাই পাল। আমরা একসঙ্গে রামকৃষ্ণে পড়তাম রায়গঞ্জে।'
মহিলা ডাক্তার উত্তরে জানালেন, 'আমি কোন রুবাই বুবাইকে চিনি না, কাজের কথায় আসুন।'
'আমি পিছনের গোড়ালির একটা দাঁত সিল করাবো।' আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম।
' ও ঠিক আছে, ঠিক আছে। '
দাঁত সিল করতে করতে মহিলা ডাক্তার বললেন, 'আচ্ছা, আপনার সামনের দাঁতদুটো পড়ে গেছে কি করে ?'
হাসতে হাসতে বললাম, 'ছোটবেলায় এক বান্ধবীর জন্য পেয়ারা পাড়তে গিয়ে ধপাস করে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে .........।'
' এ রকম পেয়ারা পাড়তে যান কেন ? দেখুনতো এই দাঁত দুটো না থাকতে আপনার সৌন্দর্য কত কমে গেছে !' একনিঃশ্বাসে মহিলা ডাক্তারটি বললেন।
' আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম যে ...... ওর ভালোবাসা না পেয়ে আমি পাগলের মত ......... ' আমি উত্তরে জানালাম।
মহিলা দাঁতের ডাক্তার রেগেমেগে  আমাকে প্রতিউত্তরে বললেন, ' ভুলে যাবেন না , আমি কিন্তু দাঁতের ডাক্তার, পাগলের ডাক্তার নই।'
দাঁত সিল হয়ে গেল।  টাকা দেবার সময় মহিলা ডাক্তার বললেন, 'পুকুর পাড়ের বটগাছের নিচে পেয়ারা গাছটার কথা বলছিলেন তো ? জানবেন বটগাছের নিচে পেয়ারা গাছ কিন্তু বেশিদিন বাঁচে না।'
চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসলাম।  মনে মনে ভাবলাম , হ্যাঁ, ভালোকরেই জানি যে, বটগাছের নিচে পেয়ারা গাছ বেশিদিন বাঁচে না।








আসছে মা দূর্গা
             আব্দুল রাহাজ

একটা বছর  ঘুরে আবার বাঙালি সামনে আসছে মা দূর্গা বাঙালির দূর্গা উৎসব কে কেন্দ্র করে চারিদিকে সাজো সাজো রব। প্রতিবছর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সবার চোখের সামনে পড়ে সম্প্রীতির মেলবন্ধন এক অনন্য মিলন এর ক্ষেত্র তৈরি হয়। নীল আকাশের নিচে কাশফুলের বন যেন ফুটে ওঠে অপরূপ বৈচিত্র্য যা গ্রাম বাংলার পরিবেশকে দেয় অনন্য স্বাদ সূর্যের উজ্জ্বল রশ্মিতে রুপ-লাবণ্যে ফুটে ওঠে বাঙালির দূর্গা উৎসব‌এই দূর্গা উৎসব ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে শুভেচ্ছা আসে। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় শহরের অলিতে গলিতে দূর্গা মায়ের প্যান্ডেল সন্ধ্যায় আলো রশ্মিতে ফুটে উঠে এখন অন্য বৈচিত্র্য  মানুষে মানুষে মিলিত হয় অনন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফুচকা জিলিপি স্বাদ সবাই যেন জমিয়ে খায় আর কত রকমারি খাবার ‌। রহিম করিম রা আসে নরেন সরেন দের বাড়ি এ যেন এক মিলিত প্রবাহ ‌‌। আনন্দে সুখে বাঙালি দুর্গা উৎসব কাটে জমজমাট ভাবে দশমীর দিনে চোখের জলে বিদায় দেয় দুর্গা মাকে আর সামনের বছর গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে আপামর বাঙালি এই উৎসবের টানে।










কনেবউ হল কর্মরতা
                 ডঃ রমলা মুখার্জী

      আমার বিয়ে ঠিক হল বীরভূম জেলার লাভপুরে। হবু বর দিল্লীতে চাকরি করে। আমার বাপেরবাড়ি হুগলী জেলার বৈঁচীগ্রামে, সেখান থেকে একটু দূরে বেশ গ্রাম্য এলাকায় একটি বালিকা বিদ্যালয়ে আমি শিক্ষকতা  করি। বিয়ের পর চাকরি ছাড়তেই হবে, সেই শর্তেই বিয়ে। সেই সময় স্বামী-স্ত্রী দুজনে দুজায়গায় থেকে চাকরি করবে এই কথাটা কেউ ভাবতেই পারতো না। মেয়েদেরই চাকরি ছাড়তে হত। এমনই সমাজের নিয়ম। তাই অনিচ্ছা থাকলেও মেনে নিতেই হল।
       বিয়ের পর এলাম শ্বশুরবাড়ি; এখানকার রীতিনীতি, মাটি, জলহাওয়া সবই হুগলী জেলার থেকে আলাদা, এমনকি ভাষাতেও একটা মিষ্টি আঞ্চলিক টান আছে। খুব সুন্দর মানিয়ে নিলাম। শ্বাশুড়িমাতার অগাধ স্নেহ পেলাম।
     ক'দিন পরেই স্বামীর আগের কর্মস্থল শিলিগুড়ি গিয়ে সেখানকার কাজকর্ম মিটিয়ে স্বামী  সেখান থেকে সোজা দিল্লী চললেন আমাকে নিয়ে। আমার দুবার বৌভাত হয়েছিল; লাভপুরে একবার আর শিলিগুড়িতে আর একবার।
     দিল্লী গিয়ে দেখলাম ওখানে মেয়েরা সেই ঊনিশো একাশি সালেই কি উন্নত! আমাদের কেরলবাগের বাড়িটার সামনে দিয়ে স্কুটার নিয়ে অবিরত সব মেয়েরা ছুটছে। ভীষণ মন খারাপ লাগত। আমার সময় কাটতেই চাইত না।
      মাস দুয়েক দিল্লী থাকার পর আমার খুব শরীর খারাপ হল। স্বামী ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে ধরা পড়ল আমি অন্তঃসত্ত্বা। ডাক্তারবাবুর পরামর্শে আমার স্বামী আমাকে বাপের বাড়িতে রেখে দিল্লী চলে গেলেন।
       ডাক্তার জ্যাঠামশাইয়ের ওষুধ আর মায়ের হাতের রান্না খেয়ে দু-চার দিনেই বেশ একটু চাঙ্গা হয়ে গেলাম। আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এলেন আমায় দেখতে; উনি আমাকে নিজের বোনের মতই ভালবাসতেন। আমাকে বললেন, "তুমি স্কুলে জয়েন কর, এখনও তোমার ছুটি ফুরোয় নি। তোমার স্বামী তো ডেপুটেশনে দিল্লী গেছেন, উনি তো  ফিরে আসবেন বলছো, তাহলে তুমি কেন চাকরি ছাড়বে? তোমার মত টিচার আমি কি পাব?" আসলে আমি জীবনবিজ্ঞানের ক্লাস নেওয়া ছাড়াও অঙ্ক, কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা ইত্যাদি অনেক বাড়তি ক্লাস নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের যাবতীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা ও পত্রিকা সম্পাদনার কাজও করতাম। আমারও স্কুলঅন্ত প্রাণ ছিল।
     স্বামীকে চিঠি লিখে সব জানালাম। জবাবী চিঠিতে ও জানালো," তুমি জয়েন কর, কয়েক মাস পরেই আমি পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসছি।"
    আবার স্কুলে গিয়ে আমি যেন নিজেকে ফিরে পেলাম। আমার ছাত্রীদের পেয়ে মহানন্দে আমার সবকিছু উজাড় করে দিতে থাকলাম। ওরাও আমাকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।





 
         সম্পর্ক
               - গণেশ দেবরায়

চেয়ে আছে দূরে, বহুদূরে। ভাঁজ পড়া গাল, কপাল, চিবুক। এই বৃদ্ধ বয়সে নিধুবনের কাজ একটাই। সারাদিন শুয়ে শুয়ে ,জানালা দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকা আর অতীতের কথা ভাবা। অবশ্য করবেই বা কি বৃদ্ধাশ্রমে আর কে আছে? যারা আছে সবাই তার মতোই হতভাগ্য।
         দূরে কোথাও ঢাক বাজছে , শ্যামল বাবু বলল আজ মহা অষ্টমী পূজা। মনে পড়ে নিধুবনের কত কাল আগের কথা - তখন সৌম্যর বয়স পাঁচ কি ছয় হবে। ওর মা আর আমি মিলে সৌম্য কে পাঁচটি ড্রেস কিনে দিয়েছিলাম। অবশ্য কিনবা না কেন? আমাদের প্রথম সন্তান ও। তার উপর দুইজনই চাকুরিজীবী। সৌম্যর দিনভর কত জল্পনা কল্পনা।
       নিধুবনের দুই চোখ ভরে গেছে জলে-ওর মার মৃত্যুর পর যখন ওর স্ত্রী আমাকে সহ্য করতেই পারছিল না আমিই সিদ্ধান্ত নিলাম এখানে চলে আসবো। সৌম্য কে যখন বললাম ও প্রথম চমকে উঠে বলল - এসব কি বলছো তুমি বাবা?  আমরা থাকতে..! কথাটা সম্পূর্ণ করতে দেয়নি রুমেলা, বলে উঠে - উনি যখন নিজেই বলছেন, তা থাকুক না সেখানে, ওখানে বৃদ্ধরা মিলে বেশ ভালোই থাকে। তাছাড়া আমি তো সারাদিন বাবাই কে নিয়েই ব্যস্ত, তুমি থাকো অফিসে ,তাই হয়তো তিনি...।
     বৌমা ঠিক বলেছে - মনের দুঃখ চেপে নিধুবন সেদিন বলেছিল। তবু বলেনি বৌমার তুচ্ছ তাচ্ছিল্যর কথা। তারপর আজ চার বছর হলো এখানে। আগে তবু সৌম্য মাঝে মাঝে আসতো, এখন খুব একটা আসে না। আজ পূজোর দিনে ওর কি মনে আছে বাবার কথা?
      আপনার বাড়ির লোক এসছে , ওয়েটিং রুমে আসুন- ক্যায়ার টেকারের কথায় মনটা নেচে উঠলো নিধুবনের। নিশ্চয়ই সৌম্য এসেছে , আজ বোধহয় দাদাভাই কে ও এনেছে, পূজো বলে কথা। ভাবতে ভাবতে ওয়েটিং রুমে আসে, কাউকে দেখতে পায় না।
- কে এসছে আমার বাড়ি থেকে?  জিজ্ঞেস করে রিসিপসানিষ্ট কে।
- ঐ তো বসে আছে উনি।
নিধুবন আশ্চর্য হয়ে তাকায়। লোকটা কাছে এসে বলে - আপনি নিধুবন বাবু? সৌম্য স্যারের বাবা?
- হ্যাঁ, কিন্তু তুমি কে?
- আমি সৌম্য স্যারের অফিসের গ্রুপ ডি। স্যার আপনার জন্য এই শার্ট আর মিষ্টি পাঠিয়েছে।
- সৌম্য কোথায়?
- স্যার, ম্যাডাম আর ছেলে নিয়ে আজ শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। দুই দিন ছুটি তো তাই। নিন ধরুন এগুলো।
নিধুবন নির্বাক হয়ে চেয়ে রইল।
লোকটা আবার বলছে নিন এগুলো।
- সৌম্য কে বলো এসবের দরকার নেই। ওরা ভালো থাকলেই আমি খুশি। বলেই নিধুবন হনহন করে ভেতরে চলে গেল।
   লোকটা তবুও দাঁড়িয়ে আছে।








বিভূতিভূষণ
          তমনাশ মন্ডল

প্রকৃতির খেলায় শরতের আকাশে শুভ্রতার প্রতীকে যখন ফুটে উঠে গভীর অন্তরে প্রকৃতির সৌন্দর্য, সাদা কাশফুল, নীল আকাশ,শিউলির মনভোলানো সুবাসে কিংবা স্নিগ্ধ কোনো এক জ্যোৎস্না রাতে, সকালে শিশির ভেজা ধানের শীর্ষে, কিংবা কোমল রোদের পুকুরে ভাসমান শুভ্র শাপলার হাসিতে, হৃদয় জাগরণের সাথে ভেসে ওঠে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী সেই অপু দুর্গার রেলগাড়ি দেখতে যাবার স্বপ্ন।কিন্তু যে বিভীষিকায় গ্রাস করেছিল প্রকৃতির পাগল খেলায় ভাসমান নীল আকাশকে,
আকাশের নীল আস্তরণ ভেদ করে অনন্তের হাতছানিতে ধেয়ে এসেছিল পৃথিবীর বুকে জীবনে সর্বাপেক্ষা বড় অজানার ডাক।

যখন সেই নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ধু ধু কাশবনে শরতের আকাশে ঢাকের তালে বেজে উঠেছিল আগমনী সুর, যেখানে ছিল না ছাপা শাড়ি, রঙিন রঙিন নখ পালিশ,কড়কড়ে  ইস্ত্রি করা নতুন জামা প্যান্ট, ছিল শুধু ছেড়া এক শাড়ি, ময়লা,চিটচিটে এক ধুতি, তেলহীন জটা পড়া চুলে চিরুনির আঘাতে, আর হাতে আম আঁটির ভেঁপু, আর কাজল পরা ডাগর ওই দুটি চোখে অপরাজিত শুধু স্বপ্ন,রোগশয্যায় বালিকার।
ছিল জ্বরে গা পুড়ে যাওয়া বালিকা দুর্গা দিদির হাত দুটো শক্ত করে ধরে কল্পনায় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিদি তুই সেরে উঠলে রেল গাড়ি দেখতে যাব।
তবে যেই নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে শুনেছিল ভাইবোনের কলকলানি আজ সেই শরতের আকাশে ধু ধু ধুলোয় কালো অন্ধকারে মিশে গেছে সব।
পুজোর আগেই দুর্গা আর চাহে না। অজানা এক জ্বরে হার্ট ফেল। সেই যে বুকে নিয়া স্বপ্ন রেলগাড়ি দেখব। আজ সব কুয়াশাচ্ছন্ন শরতের আকাশে অমলিন। পথের পাঁচালী দেখতে গিয়ে মিলিয়ে গেছে সব বর্ণনাই, সেই অপু আর দুর্গা বেঁচে আছে শুধু কল্পনায়। তবে হাজার স্বপ্ন বুকে রেখে পুনরাবৃত্তির সুরে পথের পাঁচালীর পাতা উল্টে কোন একদিন শরতের নীল আকাশে কাশফুলের স্নিগ্ধ বাতাস পেরিয়ে অপু দুর্গার হাত ধরে কু ঝিকঝিক শব্দের রেলগাড়ি দেখতে যাবেই যাবে।
হ্যাঁ আর সেই বিশেষ দিনেই আসবে তোমার আমার হৃদয়ে মনভূমির আরণ্যক,
সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।








ভূকম্পন
            মিনতি গোস্বামী

লকডাউনে চলে গেছে মালার পাঁচ বাড়ি কাজ।ফ্ল্যাটবাড়িতে কাজ করতো , মাইনে ভালো দিত,মালার চলে যেত সংসার।তার স্বামী কানাই তেলগদিতে টিন ধুতো।কাজ‌ চলে গেছে তার ও।
ছেলের আশায় বসে থেকে পরপর তিন মেয়ে।
পাঁচজনের সংসার। লকডাউনে তাই পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।মেয়েরা তো ছোট।
বড় মেয়ে বুল্টির বয়স মোটে দশ।একটা সাত আর একটা পাঁচ।ওরা স্কুলে যায়, খেতে পায়
একবেলা।কিন্তু স্কুল ও বন্ধ।

 বন্ধের একমাস পরে অবশ্য চাল,আলু দিয়েছিল।
কিন্তু তিন কেজি চাল আর দুকেজি আলুতে কি. মাস চলে? রেশনে চাল পায়, তবু সংসারে মশলা,আনাজপাতি, জলখাবারের যোগার  করতে ও
পয়সা লাগে।জমা টাকা শেষ।চারমাস খুব কষ্ট
করে   একবেলা  খেয়ে চালিয়ে দেয়।
কাজের বাড়িরা  একমাস ই মাইনে দিয়েছিল, আর দেয়নি।
 পাড়ার. মুদি বিশু তাদের অবস্থা দেখে অল্প অল্প ধার দেয় । মালা ভাবে, এই  অসময়ে  বিশু  তাদের
পাশে দাঁড়িয়েছে, কাজ পেলেই   তার পয়সা  আগে মিটিয়ে দেবে।

পুঁজির অভাবে কানাই  কোন ব‍্যবসাও করতে পারে না।বসে বসে হাত কামড়ায়।
সেপ্টেম্বর মাসে মালার বুকে আশা জাগলো।
কল্পতরু আবাসনের ফ্ল্যাটের  পুরোনো
কাজের বাড়িগুলো থেকে ডাক এলো।
 তারা বললো, " কাজে  লাগো আগের মত, এখন তো সংক্রমণ  কিছুটা কমেছে।"

মালার বুক থেকে যেন পাথর সরে যায়।
আবার সে কাজ করবে, মাইনে পাবে।
কানাই কাজ না করলেও সংসারে দুবেলা তাদের খাবারটা জুটবে।

মালা কানাইকে বলে," দেখো, দুঃখের দিন সময় এলে কেটে যায়।আর তো একমাস পর পূজো ,
পুরোনো  বাড়ি, সবাই   নিশ্চয়  বোনাস দেবে।
বোনাস পেলেই  মুদির দোকানে   টাকাটা শোধ
করবো। বিপদের দিনে ও আমাদের  পাশে না দাঁড়ালে আমরা সত্যি  না খেয়ে মরে
যেতাম।   মেয়ে তিনটের জামাগুলো  একদম
ছিঁড়ে গেছে।  ওদের পূজোয়   একটা করে ছিটের
জামা কিনে দেব, ওরা পরবে।আমি বৌদিদের
 কাছে পুরোনো কাপড় চেয়েই চালিয়ে দেবো।
তোমার দুটো বারমুডা ও লাগবে।আনন্দে মালার চোখে জল।
কানাই  চোখের জল মুছিয়ে বলে, আমার
গদিটাও  বোধহয় এবার খুলবে।
তখন আর কষ্ট থাকবে না।"

 মালা সব বাড়িতে মনের আনন্দে কাজ করে।
 আগের থেকে বেশি বেশি কাজ করে দেয়।
বৌদিরা যাতে সন্তুষ্ট হয়।

দিন পনেরো কাজ করার পর একদিন সকালে কাজে যেতেই বোস বৌদি বললো,

"তোমাকে আর কাজে আসতে হবেনা।তোমার পাড়ায় কোভিডে
দুজন মারা গেছে, আরো পাঁচটি পরিবারের হয়েছে, আমরা  খোঁজ নিয়েছি।"
আর ও চারটি বাড়িতে এক ই কথা বললো।
আর একবার পায়ের তলায় ভূকম্পন
অনুভব করলো মালা।
পড়ে যাওয়ার আগে মুখার্জি বৌদির
দোতলার রেলিংটা ধরে ফেললো।




                  বিভাগ-ছোটোগল্প               

      অনাহিতা
                  শ্যামসুন্দর মন্ডল

ফুলের ও কান্না শোনা যায় পাথরের কানে। সেদিন ওর কান্না অখণ্ড মানবতার কানে ধ্বনিত হয়েছিল কিনা জানি না,তবে আকাশের শূন্য কানও পূর্ণ হয়েছিল। সে কোন অলাকাপুরীর অপ্সরা বা দেবী নয়,সে হল এক রক্ত-মাংসে গড়া মায়াময় বার্বিডল,অনাহিতা।সে আজ কালের ছায়াপথে এক অনামী ইতিহাস।
অনাহিতা, উত্তর ইতালির মিলান নগরীর উপকন্ঠে বসবাসকারী দম্পতি আশকান ও এস্তা-এর সন্তান।
বয়স মাত্র দশ।ওরা উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার। পরিবারে চারজন, অনাহিতা, ওর মা-বাবা আর ওর একমাত্র পুচকে ভাই এহসান। ওরা পারসিক কিন্তু খ্রিস্টানধর্মী। যাইহোক  ওরা সুখী ও সংস্কৃতিমনস্ক পরিবার। ভালোই দিন কাটছিল। কিন্তু দেশে হঠাৎ মহামারী করোণা , জীবনের রঙটা ধূসর করে দিলো।
৭ই এপ্রিল। আকাশের নীল, অচঞ্চল মেঘের অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল। অনাহিতা অসুস্থ হয়ে  হাসপাতালে ভর্তি।ওর মা-ও,ভাই এহসান কে নিয়ে  হসপিটালে। হঠাৎ লকডাউনে ওর বাবা আটকে পড়েছে কর্মক্ষেত্রে। তবুও খবর দেওয়া হয়েছে। আসতে সময় লাগবে। মায়ের দিকে চেয়েই অনাহিতা কাঁদতে থাকল।সে শুধু বলেই চলল,"মা,আমার বুকে খুব কষ্ট হচ্ছে,একবার হাত বুলিয়ে দাও না।"ওর মা দ্বিধা ও দ্বন্দে কাছে যেতে গিয়ে ও যেতে পারেনি। শুধু ঝাপসা চোখে বলল," মা,একটু। ডাক্তারবাবু আসছেন। সব ঠিক হয়ে যাবে। "
ডাক্তারবাবু এলেন।দেখার পর ঔষধ দিলেন।একটুপরে মনে হলো তাকে মোটামুটি কিছুটা সুস্থ। রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হল। ওর বাবা আসাতে ওর মা বাড়ি গেল। দিন কয়েক পরে রিপোর্ট এলো।করোনা পজিটিভ। ইতিমধ্যেই অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ইমারজেন্সিতে নেওয়া হবে ঠিক হল। কিন্তু পুরোপৃথিবীকে একপাশে রেখে এতো অসুস্থতার মধ্যেও অনাহিতা চাতকের মতো ওর মাকেই খুঁজে চলেছে সৃষ্টির নিয়মে।
ইতালির রাজপথে অগণিত কান্নার ধ্বনি অসীম শূন্যতায় মিলিয়ে গেছে।অন্ধকারে ছেয়ে গেছে গলিপথ থেকে রাজপথ। জোনাকিরাও ভুলে গেছে নিদেনপক্ষে ও-ই টুকু আলো দিতে। অনাহিতা-এর আর্ত,অসহায় আকুতি শুধু মৃত্যুকাতর চোখের ঈশারায় পরিনত হয়েছে।স্বচ্ছ জলে ভাসমান দুটি স্ফটিক আশার আলো খুঁজে হন্যে। নিরাশ্রয় চোখ
বিশ্বস্ত আশ্রয় খোঁজায় ব্যাকুল।
এস্তাকে প্রথমে বাধা দিলেও,পরে তাকে সমস্ত সুরক্ষা নিয়ে মেয়ের কাছে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। যতই হোক মা তো। এস্তা অদৃশ্য অপারগতার সংশয় নিয়ে স্বামীর দিকে তাকাল।ওর স্বামী "এস্তা, এহসান...।" বলে ওর মুখের দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে,আর ওর মুখে ফুটে উঠেছে এক আকাশ হতাশা।
এরপর? এরপর দৃশ্যটা দৃষ্টিরেখাকে ভেদ করে অদৃশ্য হৃদয়ের অতলে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ারই মতন। আশকান ও এস্তা এর কিংকর্ত্তব্যবিমূতার মাঝে স্বাস্থ্যকর্মীরা অনাহিতাকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেল। যাওয়ার পথে পাথর ভাঙা প্রচেষ্টা নিয়ে অতিকষ্টে কচি কলাপাতার মতো হাতটা ঈশারা করে অস্ফুটস্বরে বলেছিল,"মা...বাবা...।" আর ওরা বোবা পাথরের মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। একটু পরেই ধূপের আগুনে ছেঁকা খাওয়ার মতো, অদৃশ্য ছেঁকা খেয়ে উদভ্রান্তের মতো দৌড়ে গেলো ইমারজেন্সির গেটের দিকে। অনাহিতা শুধু এক হাত নেড়ে বলছে," মা,ভাইকে দেখো।" আর,ওর আর এক হাতে জন্মদিনে মায়ের দেওয়া সেই বার্বিডলটা।"

আশকান ও এস্তা কাঁচের দেওয়ালের বাহিরে দাঁড়িয়ে
বলে চলেছিল,"মা, ভয় নেই, সব ঠিক  হয়ে যাবে।আমরা আছি।" ওদের কথা অনাহিতা শুনতে পেয়েছিল কিনা জানিনা। তবে ওর ,"মা,ভাইকে দেখো" কথাগুলো কাঁচের দেওয়াল ভেদ করে আকাশের অসীম শূন্যে মিলিয়ে গিয়েছিল।
অক্সিজেনের মাস্ক পরানো হল। হঠাৎ গুমোট শান্ত মেঘের ঝরে পড়ার আগে অশান্ত হয়ে যাওয়ার মতো, অনাহিতা আরো অশান্ত হয়ে পড়ল। এরপরেই শান্ত হল।অসম্ভব শান্ত। সূদুর  উত্তর মিলানের কোমো হ্রদের শান্তি ওর ছোটো মুখে। ঠোঁটে আলপাইনের সবুজ হাসি। আর তখনো জন্মদিনে মায়ের দেওয়া সেই বার্বিডলটা।বোধহয় সেদিন গথিক ডুওমো ডি মিলানো ক্যাথিড্রাল ও সান্টা মারিয়া ডেল গ্রাজি কনভেন্ট এ জ্বলন্ত মোমবাতিও তার শিখাকে ধরে রাখতে পারে নি। ওরাও থেমে গেছিল।আর ওদের চোখের জল জমাট বেঁধে গিয়েছিল। অসম্ভব নিরবতায়,শুধু ছোটো  একটা শব্দে দরজা খোলে,ডাক্তার বেরিয়ে এলেন। ওর বাবা মা ব্যকুল বুকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, "ডাক্তারবাবু।"
ডাক্তারবাবু মাথা নিচু করে কাঁপাকাঁপা গলায় শুধু বললেন," সরি।"








অপরাধী
             অঞ্জনা গোড়িয়া

 একা। বড্ড একা লাগছে আজ।  বাড়িটা পুরো ফাঁকা । সবাই চলে গেল তাঁকে দেখতে । আমি পারি নি যেতে।বড্ড অসহায় লাগছে। দম বন্ধ  হয়ে আসছে। কখন ফিরবে ওরা? কি জানাবে আমাকে?  মনের মধ্যে প্রশ্ন গুলো  দোলা পাকাচ্ছে।
কি যেন এক অজানা কষ্ট আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।কি করলাম আমি? আমি কি অপরাধী হয়ে গেলাম ।  
 চোখে ভেসে উঠল সেই দিনগুলির ছবি।
যেদিন প্রথম দেখি "ও"কে । মানে সুব্রতকে ।একটা প্রাণচঞ্চল ছেলে। মুখে মিষ্টি হাসি। চোখে  বুদ্ধিদীপ্ত চাহনী।দেখে কার না ভালো লাগে।
আমার দিদির একমাত্র দেওর। বিয়ের দিন থেকেই  আমার পিছনে  লেগেছে। ইয়ার্কি  মস্কোরা করতেই  থাকে। আমাকে দেখেই  ওর খুব পছন্দ  হয়েছিল। সম্পর্কে আমি যে শালী । মজা করার  অধিকার একটু আছে বটে।
তারপর আবার দাদার বিয়ে বলে  কথা। আমি  কিছু  মনে করিনি।
ছেলেটি যেমন  সরল। তেমন স্পষ্টবাদী ।  কয়েক মাস আলাপ করে ই তা বুঝে ছিলাম।  যখন দিদির বাড়ি যেতাম।আমাকে দেখেই চিৎকার করে বলত "মনিকা ,আই লাভ ইউ।  বাড়িসুদ্ধ  লোকের সামনে।
ইস্ কি লজ্জা।  রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে  ঘর থেকে বেরিয়ে  আসতাম। পাগল একটা  ছেলে।এমন করে কেউ বলে? সবার সামনে।
একদিন বলে ই  দিলাম, খবরদার এমন করে  সবার সামনে বলবে না।
তাহলে  আর আসব না তোমার বাড়ি।
মনে মনে অবশ্য  বেশ লাগত শুনতে।
আমি তখন সবে মাধ্যমিক পাস করে ক্লাস ইলেভেনে পড়ি।
সুব্রত বলত ,আরে রাগ করছ কেন দিদিমনি? তোমাকে তো আমি ই  বিয়ে করব? বর হিসাবে কেমন হবো, বলতো?
তোমার সব কাজ করে দেব।তুমি দিদিমনি হবে। আর  যখন তুমি স্কুল করে বাড়ি ফিরবে। তোমার জন্য  শরবত  করে দেব। পাখার বাতাস দেব। চুলের বেনি খুলে দেব। আমি শুধু দেখব তোমায়।
আর তুমি  আমাকে  ভালোবাসবে । আদর করবে। তাহলে ই হবে। কি গো পারবে না?
সব টাই ছিল ওর মজা। এসব বলে ই আমার গোমরা মুখ দেখে খিলখিল করে  হেসে উঠতো।  দিদিমনি, তুমি কি ভয় পেলে?
সত্যি মাঝে মধ্যে ওর কথায় খুব রাগ হতো। আবার সরল স্পষ্ট কথা গুলি শুনে বেশ ভালো  লাগত।
সেদিন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। হঠাৎ দেখি পরীক্ষা হলে হাজির। একটা ডাব আর এক খুড়ি দই নিয়ে । ডাবের জল পান করলে নাকি মাথা ঠান্ডা থাকবে আর দই খেলে নাকি  ভালো ফল হবে।
মানে পরীক্ষা ভালো হবে। এমনই ধারনা পাগলটার । কোন দিন  "ওর" কথাকে গুরত্ব দিয়ে গ্রহন ই করি নি । মনে হত ,"ও" মজা করছে।  সবটাই ওর ইয়ার্কি।  সম্পর্কে শালী তো ।
এসে গেল সেই দিন টা। আমি দিদির বাড়ি আছি । ও হঠাৎ পেছন থেকে চেপে ধরল চোখ টা । বলল,কে বলত,দেখি?খুব রাগ হল আমার।
বললাম,ছাড়ো আগে।খুব বাড়াবাড়ি  করছ। এমন করলে সবাই কে বলে দেব। আর আসব না কোন দিন ।
সুব্রত কেমন চুপ হয়ে গেল। চোখটা ছেড়ে বলল,রাগ করো না দিদিমনি। আমার একটা কথা আছে।  খুব সিরিয়াস কথা। শুনবে একটু।  আমি বললাম, কি বলার তাড়াতাড়ি  বলো।
ধীর  স্বরে বলল,একদিন আমাকে সময় দেবে ? শুধু একটা দিন যাবে আমার সাথে কোথাও?
আমি বললাম ,যা বলার আজ ই বলো?  কোথাও  যেতে পারব না।
"ও "বলল,এখানে নয়। অন্য কোথাও অন্য একদিন। আসবে দেখা করতে। প্লিজ দিদিমনি।  একদিন আসবে?
আমি কিছু না ভেবেই বলে দিলাম। "হবে না" কোথাও যাবো না। যা বলার এখানে এখুনি বলো?
ও  মুচকি হেসে বলল,থাক।আর নাই বা শুনলে।  এসো  এবার। আর কোনো দিন বিরক্ত করতে আসব না। ভালো থেকো দিদিমনি ।
বুকের ভেতরটা কেমন ধাক্কা লাগল। কেন এমন করে বলল? আমার ফেরার পথে  কেমন  হাঁ করে চেয়ে ছিল।  তবু সাড়া দিতে পারি নি ওর ডাকে । চলে আসি বাড়ি ।
পরের দিন সকালেই এলো সেই খবর!সেই ভয়ঙ্কর সংবাদ।
বাড়িতে খবর এলো।দিদির দেওর সুব্রত একটা বাগানের আমগাছে গামছার ফাঁসে ঝুলিয়ে দিয়েছে দেহ টা ।  সব শেষ।
বাড়ির সবাই চমকে উঠল। দল বেঁধে চলে গেল দেখতে । আমি বাদে। এখন বাড়িতে  একা। বড্ড একা।
আমি নিশ্চুপ ! পাথরের মতো দাঁড়িয়ে । হাত কাঁপছে।বুকটা ধুকপুক করছে। দাঁড়িয়ে থাকার ও ক্ষমতা নেই ।
আমি কি তবে অপরাধী হয়ে গেলাম। কি বলতে চেয়ে ছিল সেদিন?কেন দেখা করলাম না আমি?হ্যাঁ আমি অপরাধী!একটা সরল ছেলের মৃত্যুর জন্য আমি অপরাধী !
একটা  চিরকুটে লিখে গেছে, আমার মৃত্যুর জন্য আমি ই দায়ী।










  আলোর প্রমিতি
          দেবাশীষ  মুখোপাধ্যায়
            
-- চিনতে পারছেন স্যার?
মহিলার প্রশ্নে চোখ তুলে তাকাল অভীক। স্মৃতির দরজায় কড়া নাড়া।পরণে শাড়ি পরিপাটি।ঈষৎ পৃথুলা। প্রায় ত্রিশ ছুঁইছুঁই। চোখে মুখে শিশুর সারল্য। রামকিঙ্কর বেইজের আদিবাসী মহিলার ছবি যেন। অভীকের দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় মিটিমিটি হাসি মুখ।
--মা...মানে... ঠিক.....
--স্যার,আমি অনুপমা...... আপনার ক্যাপ্টেন। মনে পড়ে স্যার আপনি বলতেন, তোকে উপমা হতে হবে......
    স্মৃতিরা শরতের শিউলির মতো একটা একটা করে ঝরে পড়ছে। বিদ্যালয়ের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু একটা রোগা পাতলা পাখি চেহারার মেয়ে।সবে পঞ্চমে ভর্তি হয়েছে।১০০ মিটার,২০০মিটার সবেতেই উসেইন বোল্ট। প্রথম। করতালি মুখর জিজ্ঞাসু মুখগুলো উৎসাহ দিয়ে চলেছে ওকে। প্রতিযোগিতার শেষে পড়ন্ত সূর্যের আলো গায়ে মেখে ওর যখন ঘরে ফেরার পালা, তখন প্রশ্নের উত্তরে মজার কথা বলেছিল--ওর বাবা নাকি বলে যখন ছুটবি তখন ভাববি আকাশের বুকে পাখিদের উড়ে যাবার কথা। তাহলেই দেখবি তুই ছুটছিস না....উড়ছিস। বেশ মজার তো ব্যাপারটা। মগজে লালমোহন গাঙ্গুলি যেন বলে উঠেছিল, একটু কালচার করতে হচ্ছে মশাই।
     এর কিছুদিন পরই ওর বাবার সাথে দেখা।শণিবার মেয়েকে ছুটির পর নিতে এসেছেন।সেদিনই বলেছিল অণুর করুণ ইতিহাস।
      অণুর যখন সাড়ে তিন বছর বয়স,ওর মা ওদের ফেলে চলে যান। সেই সময় থেকেই ভদ্রলোক অর্ধনারী--একই শরীরে বাবা ও মা। ওনার চোখ ভর্তি জল সেদিন জানিয়ে দিয়েছিল অনেক না বলা কথা।এর পর থেকেই অণু অভীকের মনের কাছাকাছি। ভালো লাগার এক তাল কাদা। মানুষ গড়ার কারিগর হতে হলো অভীককে।লেখাপড়ায় খারাপ ছিল না।ওর সকলকে সাহায্য করার অদম্য ইচ্ছা ওকে অচিরেই বিদ্যালয়ে সকলের নেত্রী করে তুললো।অভীক মজা করে ডাকতো, ক্যাপ্টেন।সেই ক্যাপ্টেন আজ সামনে.....এতো বড়ো হয়ে গেছে !
       শেষ দেখা মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হবার দিন। প্রণাম করে যাবার সময় বলে গেছিল ওর বাবার বদলির কথাটা।চলে যাবে পুরুলিয়া। সেই শেষ দেখা.....
--- হ্যাঁ, হ্যাঁ , মনে পড়েছে।তা তোর সেই পাখির চেহারাটা যে মেলাতে পারছি নারে....
--স্যার,পাখিটাও যে বড়ো হয়েছে.....ওড়ার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে....
--কতো বছর পর বলতো....তা কুড়ি বছর তো হবে।
--ঠিক তাই। দীর্ঘ কুড়িটা বছর স্যার। তবে আপনি কিন্তু আমার সাথেই ছিলেন । এখনও আছেন।
--মানে  ?
--আপনার কথা মতো পড়াশোনা স্নাতক পর্যন্ত শেষ করেছি। তারপর আপনার কথা মতোই মানুষের মাঝেই আছি। স্যার আপনি বলতেন-----হায়াদ লেকে চলো,কায়নাদ লেকে চলো
মজা তো তব হ্যায়,জমানে কে সাথ লেকে চলো..... সকলের পাশেই আছি স্যার।
      অভীক বুঝল, সময়ের ব্যবধান এর মধ্যে অনেক ইতিহাস লিখে ফেলেছে।
--তো তুই হাওড়া ষ্টেশনে? এখন?
--ইকো পার্কে হস্তশিল্প মেলা চলছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা স্টল দিয়েছে। ওরা ওখানেই রাত্রে থাকে। আমি বোলপুর ফিরি বাবার জন্য।
-- বোলপুর?
-- রিটায়ারমেন্টের পর বাবা ও আমি বোলপুরে দেশের বাড়িতে চলে আসি স্যার। প্রান্তিক ষ্টেশনের বামদিকে যে রাস্তাটা খোয়াইয়ের দিকে যাচ্ছে সেখানে ক্যামেলিয়া হোটেল থেকে একটু এগিয়ে আমাদের বাড়ি " আনন্দ ভৈরবী "। ওখানেই বাপ বেটিতে একটা এন জি ও চালাই।
--এন জি ও?
--বাবা যখন পুরুলিয়ায় প্রোজেক্ট অফিসার হিসাবে অসহায় নিরন্ন মানুষগুলোর মাঝে কাজ করতেন, তখন দেখতাম বাবার চোখে মুখে এক স্বর্গীয় আনন্দ। জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানুষটা মানুষের মাঝেই যেন আবার নতুন করে জীবনের মানে খুঁজে পেলেন। বাবা ঠিক আপনার মতোই বলতেন, মানুষ বড়ো কাঁদছে, মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াও।
       এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে একটু থামল ক্যাপ্টেন।একবুক ভালোলাগা নিয়ে অভীক তাকিয়ে রইল ওর দিকে। কবেকার বলা কথাগুলো ও এখনও জীবন্ত করে রেখেছে ওর মনে....
--ছেলে মেয়ে গুলো ঐ "গুড আর্থ " রই। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য সব।
--গুড আর্থ ! এ নামে তো পারল্ এস বাকের এক কালজয়ী উপন্যাস আছে। নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন।
--আপনার মুখেই প্রথম শোনা গুড আর্থের গল্পটা। হাতে হাত রেখে ওয়াঙলুর মতো চোখে সবুজ স্বপ্ন নিয়ে পৃথিবী গড়ার লড়াই ! ভুলিনি স্যার।ঐ নামটাই তাই রাখলাম।
-- এন জি ও তে কি করিস তোরা?
-- শিরদাঁড়াটা সোজা করে বাঁচতে শেখাই। সরীসৃপ হয়ে নয়----মাথা উঁচু করে বাঁচা। মানুষকে স্বনির্ভর করি আমরা।আর এটা হলেই অর্ধেক যুদ্ধ জয়। সাথে সাথেই ফিরে আসবে আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান বোধ, সহানুভূতি, গোষ্ঠীবদ্ধতা। সর্বোপরি মহিলাদের ক্ষমতায়ন।
--কিভাবে স্বনির্ভর করিস তোরা?
--এটা আপনার জনকল্যাণ মূলক অর্থনীতির গল্প স্যার। বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসের রোড ম্যাপ।ছোট ছোট দল গড়ি। পনেরো থেকে কুড়ি জন সদস্য থাকে।সেলফ হেল্প গ্রুপ। দলগুলো ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে বিভিন্ন আয় উপার্জনকারী কাজে যুক্ত হয়। আমাদের দলগুলো তাঁতের শাড়ি, গামছা, মাটির খেলনা, বাঁশের তৈরী হাতের কাজ,বেতের কাজ করে।পৌষমেলাতে এবং আশপাশের বিভিন্ন মেলাতে জিনিস বিক্রি করে ওরা ভালোই আয় করছে স্যার।তার ওপর প্রতি শনিবার খোয়াই এ সোনাঝুড়ির হাট বসে। বিভিন্ন সোসাল মিডিয়ার দৌলতে এখন প্রচুর লোক সমাগম হয়। কেনাকাটাও ভালো হয় এখন।
--বা: বেশ তো।এও তো এক ট্রান্সফরমেশন রে !
-- হ্যাঁ স্যার, বলতে পারেন। তবে সবচেয়ে বড়ো বদল হয়েছে পরিবারগুলোতে। বাচ্চাগুলো  স্কুল যাচ্ছে। পুরুষগুলো আর নেশা করে পড়ে থাকে না সারাদিন। মহিলাদের পাশে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছে। দিনের শেষে ভূমিকা বদলে এখন প্রেমিক সোয়ামী। রামকিঙ্কর বেইজের সুখী আদিবাসী পরিবারের ছবি। সত্যিই এ এক আনন্দ ভৈরবী !
--তুই "অ্যাকটিনোমাইসেটিজ" এর নাম শুনেছিস?
--সেটা কি স্যার?
-- এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। তপ্ত পৃথিবীর বুকে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন যে মাটির সোঁদা গন্ধ বের হয় তার কারণ নাকি এই ব্যাকটেরিয়া।তুইও তো জীবনের তপ্ত বুকে বাঁচার সোঁদা গন্ধটা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসছিস। স্যালুট তোকে----তোদের সকলকে।
--কি যে বলেন স্যার ! এতো আপনারই শেখানো পথ। আপনার মতো শিক্ষকরাই তো আমাদের জীবনের দিক নির্দেশ করে দেন।এই অস্থির সময়টায় আপনাদেরই বেশি করে দরকার সমাজের।
         চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো অভীকের। গর্বিত মুখ তুলে তাকাল অণুর দিকে।ঘোষিকার আওয়াজ জানিয়ে দিল অগ্নিবীণা ছাড়তে চলেছে। এগিয়ে চলল আর এক যমুনাবতী। চললো মেয়ে রণে চললো। হঠাৎ বাবার কথাটা মনে পড়ল অভীকের----- বাঁচতে জানলে পৃথিবীটা সত্যিই " গুড আর্থ "!
            









                 বিভাগ-গল্প                          

শ্বেত বলাকার পালক
                 লাভলি মুখোপাধ্যায়

কুয়াশার চাদর জড়ানো গাছ গাছালির ফাঁক দিয়ে যেন উড়ে আসে জ্যোত্‍স্নার মত ফুটফুটে সেই পক্ষীরাজটা । তার ছুটে আসার তালে তালে গলার ঘণ্টাটাও আওয়াজ তোলে ঝম ঝম ঝম ঝম । ছুটতে ছুটতে এসে পক্ষীরাজ হাজির হয়ে যায় রক্ত পলাশ গাছটার গায়ে যার পুবসুখী ডালে দড়ির দোলনা খাটিয়ে আনমনে দোল খাচ্ছে তিতির । পক্ষীরাজের পিঠে বসেই তিতিরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় রাজপুত্তুর । বনানীর নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান হয়ে যায় রাজপুত্তুরের দরাজ ডাকে – “ তি – তি – র ,  তি – তি – র – ” ঘোর কেটে যায় তিতিরের । রাজপুত্তুরকে দেখে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ে তার সারা মুখে । নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হয় না তার , অস্ফুটে সে বলে ওঠে  “ তুমি এসেছো ! তুমি স – অত্যি এসেছো রাজপুত্তুর ? ”
হেসে ওঠে রাজপুত্তুর । বলে – “ সত্যি না তো কি ? সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পেরিয়ে, শ্বেত বলাকার পালক নিয়ে এই ছুটে আসা কি মিথ্যে ? ”
“ তুমি এত দেরী করলে কেন রাজপুত্তুর ? ”
“ কি করি বলো ? বাধা কি আর একটা ? যেমন ধ – রো – ”
“ যাক রাজপুত্তুর । তুমি এসেছো এই আমার অ – নে – ক । ”
রাজপুত্তুর ওর কাঁধের বিরাট ঝোলাটা দেখায় তিতিরকে , সে বলে –
“ এর মধ্যে কি আছে জানো ? ”
ছোট্ট মেয়ের মত মাথা নাড়ে তিতির –
“ হ্যাঁ ” –
ঝোলা থেকে রাজপুত্তুর বার করে শ্বেত বলাকার পালক আর লাল টুকটুকে একটা বেনারসী । জরির নক্সা বোনা ঝকমকে আঁচলটা চোখ ধাঁধিয়ে দেয় তিতিরের । হাত বাড়িয়ে সে আঁচলটার নাগাল পেতে চায় । কিন্তূ বে-সামাল হওয়ায় আঁচলটা এলোমেলো উড়তে থাকে । তিতির আর দোলনা আঁকড়ে বসে থাকতে পারে না । ছুট্টে গিয়ে আঁচলটাকে বুকে চেপে ধরে । পক্ষীরাজের ওপর থেকেই রাজপুত্তুর বলে ওঠে –
“ উহুঁ , ও ভাবে নয় , ঘোমটা টেনে , ঠিক কনে বউদের মত । ”
রাজপুত্তুরের আবদারে লজ্জা পায় তিতির । তবুও বেনারসীর আঁচলটা মাথায় তুলে দেয় । রক্তপলাশ যেন এর প্রতীক্ষাতেই ছিল । ঘোমটা টানার সাথে সাথেই নুয়ে পড়া ডালটা থেকে টুপ টুপ করে ঝরে পড়ল । আধফোটা ভোরের লালচে আকাশের নিচে লাল টুকটুকে ঘোমটা টানা তিতিরের মুখটা রক্তপলাশের পাপড়িতে ভিজে কেমন রাঙা হয়ে যায় । হতবাক হয়ে যায় রাজপুত্তুর । দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে –                                                 “ এসো , উঠে এসো – ”
কুয়াশার ঢেউ ভেঙে ভেঙে তিতির এগিয়ে যায় , কিন্তূ পক্ষীরাজ হঠাত্‍ বিদ্রোহ করে ওঠে । সামনের পা দুটো শূন্যে তুলে চিত্‍কার করে ওই অবস্থাতেই স্থির হয়ে যায় । দিশেহারা হয়ে পড়ে তিতির । রাজপুত্তুরের বাড়িয়ে দেওয়া হাত দুটো যে অনেক উপরে । আপ্রাণ চেষ্টা করে তিতির রাজপুত্তুরের হাতদুটো ধরতে কিন্তূ অত উঁচুর কি নাগাল পাওয়া যায় ! ঝাপসা হয়ে আসে তিতিরের চোখ , আবছা হয়ে যায় রাজপুত্তুরের মুখ , কান্না ভেজা গলায় তিতির ডেকে ওঠে –“ রাজপুত্তুর – রা – আ – জ – পু – ত্তু – র । ” –
কোথায় রাজপুত্তুর ? কোথায়ই বা সেই পক্ষীরাজ ? দিনের আলো বুজে আসা আধো আলো ঘরখানা জুড়ে শুধু তো তিতির , নিঃসঙ্গ , একাকী । নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তিতিরের বুক চিরে । নিজেকেই সে প্রশ্ন করে – “ স্বপ্ন কি কখনও সত্যি হতে নেই ? ”
মনে মনে হিসেব কষতে থাকে তিতির – তার মনে এই প্রশ্নের জন্মদিনটা যেন কবে ? অ – নে – ক , অ – নে – ক দিন আগে । শীতের মিঠে কড়া রোদ্দুরে সেই যখন মায়ের বুকে মুখ রেখে বায়না করত –                         
“ গল্প বলো না মা ” –
দময়ন্তী বলতে শুরু করত –
“ এক ছিল রাজপুত্তুর , তার হাতিশালে হাতি , ঘোড়াশালে ঘোড়া , কত ঐশ্বর্য , দাসদাসী ....... তবে সব চাইতে বড়ো জিনিস রাজপুত্তরের কি ছিল জানিস – বিরাট আকাশের মত একটা মন । সব্বাইকে সে ভালবাসতো , কারুর কষ্ট দেখলেই তার চোখে জল আসতো । রাজপুত্তুরের কাছে ছিল শ্বেতবলাকার পালক । যখনই যার কষ্ট দেখতো , রাজপুত্তুর তার সেই পালক ছুঁইয়ে দিত । ব্যাস সবার সব কষ্ট সেরে যেত । ” গল্প বলতে বলতে কেমন আনমনা হয়ে যেত দময়ন্তী । তিতির অস্থির হয়ে উঠত – “ তারপর কি হলো – ও মা বলো না তারপর কি হলো রাজপুত্তুরের ? ”
“ তারপর ? দেখতে দেখতে রাজপুত্তুর বড়ো হয়ে গেল । এবার তো তার বিয়ে দিতে হবে । কিন্তূ যে সে মেয়ে হলে তো চলবে না । অমন সুপুরুষ রাজপুত্তুরের যোগ্য রাজকন্যা তো চাই । ’’
তিতির মাঝপথেই মা কে থামিয়ে জিজ্ঞেস করত –
“ কেমন রাজকন্যে মা ? খু – উ – ব সুন্দর । ”
দময়ন্তী হেসে মেয়েকে বুকে টেনে নিত , বলতো –“ খু – উ – ব সুন্দর , ঠিক আমার এই তিন্নির মতোন । ”
মায়ের নরম কোলে মাথা গুঁজে রূপকথা শোনার সেই সোনালী দিনগুলোকে মনে মনে হাতড়ে বেড়ায় তিতির । হাতড়াতে হাতড়াতে অনেকগুলো ছবি খুঁজে পায় সে । ফেলে আসা দিনগুলোর আলবামে এত ছবি ! কিন্তূ বিনি সুতোর মালায় একের পর এক এইভাবে ছবিগুলোকে গাঁথলো কে ? ওই তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তিতির অয়নকে ।
মেডিকেল কলেজের লম্বা চৌহদ্দিটা পেরিয়ে ওই তো ঐ তো এগিয়ে আসছে ওরা । তিতির আর অয়ন । অয়নের মুখে আষাড়ের মেঘের ছায়া । তিতির চোখ রাঙিয়ে বলে ওঠে –                                                 
“ তখন থেকে মুখটার ওরকম ছিরি করে রেখেছিস কেন বল তো ? ”
অয়ন গোমড়া মুখেই উত্তর দেয় –
“ আমার মুখটাই ওরকম । ”
“ মোটেও না । আচ্ছা পরীক্ষা কি তোর একার খারাপ হয়েছে ? আমাদের সকলেরই তো ....... ”                                     
“ আঃ তিতির ” – ধমকে ওঠে অয়ন -“ খেজুর না করে কালকের paper টার কথা ভাব । Scoring paper টাই তো ভোগে গেল – ”
“ তাহলে এবার মেজাজ টেজাজ বিগড়ে অন্য paper গুলোকেও ওই ভোগেই পাঠাবার ব্যবস্থা কর । ”  “ আশ্চর্য ! তোর কোনও reaction হচ্ছে না ?
“ না - হচ্ছে না । কারণ যা হবার তাতো হয়েই গেছে । এখন আর তা নিয়ে ভেবে লাভ কি ? যাক গে , তোর সাথে আর সময় বরবাদ করবার কোন মানে হয় না । আমি চলি । ”
অয়ন বাধা দেয় – “ এখনই ” –
তিতির বলে – “ এখনই নয়তো কি ? আমার পরীক্ষার টেনশনে মায়ের প্রেসার তুঙ্গে উঠেছে । অফিসই যেতে পারে নি । ”
অয়ন বলে –“ তাহলে চল – তোদের বাড়িতেই যাওয়া যাক । ”
“ তা চল – আপত্তি নেই । কিন্তূ ওরকম হাঁড়ি মুখে নয় । কারণ তোমার ওই মুখ দেখলে মাকে কিছুতেই convince করানো যাবে না যে আমাদের পরীক্ষা ভালো হয়েছে । ”
“ যা হয়নি তা বলে লাভ ? ”       
গম্ভীর ভাবেই জিজ্ঞেস করে অয়ন ।
“ লাভ একটাই । রোগীর স্বাস্থ্যন্নতি । মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যে শারিরীক স্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভরশীল M.B.B.S. এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রের এটা অন্ততঃ জানা উচিত । ”   “ জানা আছে । কিন্তূ একি রে ? আমাকে জ্ঞান দিতে গিয়ে তোর মুখটাও যে বিগড়ে গেল ।”হো হো করে হেসে ওঠে অয়ন ।
গেটের মুখেই দাঁড়িয়েছিল কৌস্তভ আর মারিফ । মারিফ বলে ওঠে – “ মাশাআল্লাহ! কি প্রেম মাইরি !
তিতির বলে – “ হিংসে হচ্ছে বুঝি ? ”
মারিফ বলে – “ হবে না ? কিউতে শালা প্রথম দাঁড়ালাম আমি , আর অয়নটা গুঁতোগুতি করে আমায় ডিঙিয়ে গেলো ” –
কৌস্তভ উদাসীন সুরে বলে -“ গতস্য শোচনা নাস্তি মারিফ । ”
তারপর তিতির আর অয়নকে প্রশ্ন করে কৌস্তভ –“ তা আপনারা জোড়ে চললেন কোথায় ? ”
তিতির কৌস্তভের কানটা মুলে দিয়ে বলে –“ জাহান্নামে । তুই যাবি ? ”
“ তুই নিয়ে গেলে তিতির , শুধু জাহান্নমে কেন , যে চুলোয় বলবি যাবো । ”
“ তাহলে এখন বাড়ি যা । বাড়ি গিয়ে ভালো ছেলের মত পড়তে বোস । ” 
মারিফ বলে ওঠে –“ সেই ভালো । আমরা বাড়ি ফিরে বই মুখে নিয়ে বসি আর ওরা দুটিতে চাঁদনি আলোর নিচে ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে ......... ”
মাঝ পথে বাধা দেয় কৌস্তভ – “ ব্যস , ব্যস মারিফ , বাকিটা ওদের ওপরেই ছেড়ে দে । ”    
তিতির চোখ রাঙিয়ে বলে ওঠে –“ সব সময় এরকম বাঁদরামী করিস কেন বলতো – ”
মারিফ জবাব দেয় – “ ওটাই বাঁদরের স্বভাব বলে । ”
তিতির আর কথা বাড়ায় না । অয়নের দিকে ফিরে বলে –“ কিরে আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবি ? ”
অয়ন অবাক হয় –“ বা রে , আমি তো পা বাড়িয়েই আছি । তুই – ই – তো – ” 
অয়নকে থামিয়ে দিয়ে তিতির বলে ওঠে –“ আচ্ছা , আচ্ছা সব দোষ আমার । চল এবার । ” 
ওরা চলে যায় ।
কি ছেলেমানুষই না ছিল তখন তিতির । একুশ বছরের সেই তিতিরটাকে দেখে হাসি পায় আজ ছাব্বিশের তিতিরের । যে পথটা মাড়িয়ে এতদূর এগিয়ে আসা , ভাগ্যিস সেই পথের প্রত্যেকটা ছবি মনের কোটরে এখন স্থায়ী ঘর বেঁধেছে । ভাবনার জাল ছিঁড়ে আর একটা পুরোনো ছবিও উঁকি মারে । সেই যে M.B.B.S. এর ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট বেরোবার দিনটা । টেনশনে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত টানটান । সকাল থেকে কলেজ চত্বরে ওরা বসে – হা পিত্যেস করে । অয়ন আর মারিফ একের পর এক সিগারেট পুড়িয়ে যাচ্ছে । list টাঙ্গাতে টাঙ্গাতে দুপুর প্রায় ফুরিয়ে এলো । list-এ নিজেদের নাম গুলো দেখে ওরা সবাই আনন্দে আত্মহারা । প্রায় হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বাড়ি এসে হাজির তিতির ।
“ মা – মাগো – ”
দময়ন্তী দাঁড়িয়েছিল দোরগোড়াতেই । দু হাত বাড়িয়ে তিতির জড়িয়ে ধরে মাকে –                                                     “ ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি মা , আমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি । ”
আনন্দের অথৈ জোয়ারে সব কথা হারিয়ে যায় দময়ন্তীর । মুখটা ভিজে যায় চোখের জলে । তিতির অবাক হয় – “ একি তুমি কাঁদছো কেন মা ? ”
আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে জবাব দেয় দময়ন্তী –“ এত খুশীর ভার আমি একা বইতে পারছি না রে । আজ তোর বাবা থাকলে ...... ”
“ বাবা থাকলেও তুমি আনন্দের চোটে কেঁদেই ভাসাতে , আর তোমাকে সামলাতে বাবাকে হিমসিম খেতে হতো । ”
তিতিরের কথার ঢঙে হেসে ফেলে দময়ন্তী । তিতির বলে –“ ভয়ঙ্কর রকমের ক্ষিদে পেয়েছে মা , শিগগির কিছু খেতে দাও । ”
দময়ন্তী ব্যস্ত হয়ে পড়ে –“ তুই মুখ হাত ধুয়ে আয় , আমি ভাত বাড়ছি । ”
তিতির মুখ ব্যাকায় – “ ভাত ? না – ”
দময়ন্তী বলে – “ কি খাবি তবে ? ”
তিতির আর দময়ন্তীকে চমকে দিয়ে অয়ন বলে ওঠে –“ লুচি হলে মন্দ হয় না - ”
তিতির অবাক হয়ে যায় অয়নকে দেখে , অয়ন বলে চলে –“ লুচি , বেগুনবাজা তত্‍সহ একটি কাঁচালঙ্কা । ”
দময়ন্তী হেসে বলে –“ তোরা বোস , আমি আসছি । ”
দময়ন্তী রান্নাঘরের দিকে চলে যায় । তিতির অয়নকে বলে –“ আচ্ছা তুই কি বলতো ? ”
সোফায় বসতে বসতে অয়ন বলে –“ কেন , আমি আবার কি করলাম ? ”
“ কি করলাম ? পরীক্ষায় পাশ করলি , মাকে তো একটা প্রণাম করবি , না কি ? তা নয় লুচি , বেগুনভাজার ফরমায়েস দেওয়া হয়ে গেলো । ”
“ ঈশশ – বড্ড ভুল হয়ে গেছে । ”
“ সব সময় তোমার এরকম ভুল হয় । ”
“ আর বড়জোড় একটা বছর । তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে । ”
“ তার মানে ? ”
“ মানে বছর খানেক বাদেই বিয়ে করে তোর আঁচলের তলায় ঢুকবো । আর বউ হয়ে তোর main কাজই হবে আমার ভুলটুল গুলোর ওপর কড়া নজর রাখা – ”
“ বয়ে গেছে আমার । আমি যেন ওর ভুলটুলের খবরদারী করবার জন্যই ডাক্তারীটা পাশ করলাম । ”
“ কি মুশকিল , যে রাঁধে সে কি চুল বাঁধে না ? রুগী সেবার পাশাপাশি তুই পতি সেবাও চালিয়ে যাবি ।
“ পতি সেবা!” অয়নের কথায় হাসি আর আড়াল করতে পারে না তিতির । বাঁধভাঙা হাসির দমকে ওর এলো খোঁপাটা খুলে পিঠময় চুল ছড়িয়ে পড়ে ।
অয়ন কেমন ঘোর লাগা চোখে চেয়ে থাকে তিতিরের দিকে । সেই মূহুর্তে তিতিরেরও কেমন অচেনা লাগে অয়নকে । হাসি থামিয়ে অবাক হয়ে সে বলে – “ কি রে , কি হলো তোর ? কি দেখছিস অমন করে ? ”
অয়ন তিতিরের মুখটা দু-হাতে তুলে ধরে । ঘন পাতায় ঘেরা তিতিরের চোখে নিজের ঠোঁট ছুইয়ে অস্ফুটে বলে –“ তুই সত্যিই খুব সুন্দর তিতির , খুব সুন্দর । ”
অয়নের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে যায় তিতির । তবে ভালোও লাগে । বুকের মধ্যেটা কেমন তিরতির করে কাঁপতে থাকে ।চোখ বোজা অবস্থাতেই নিঃশ্বাস বন্ধ করে বলে– “ ছেড়ে দে অয়ন, মা এসে পড়বে। ”
এই ছবিটা কতদিনের পুরোনো ? নাঃ ছবিটাকে পুরোনো বলে মানতে মন চায় না । অতীতের ধুলোটা ঝেড়ে ফেললে ছবিটাকে কেমন ঝকঝকে নুতন বলে মনে হয় । আজ হয়েছে কি তিতিরের ? ফেলে আসা দিনগুলোর সব ছবিগুলোকে নিয়ে নাড়াচাড়া করেই চলেছে । কিন্তূ অতীত নিয়ে এই নাড়াচাড়ায় বড্ড ভয় তিতিরের কারণ ওই ছবিগুলোর মধ্যেই তো লুকিয়ে আছে সেই ভয়ঙ্কর ছবিটা , যেটা শকুনের মত ডানা মেলে তিতিরের সব সোনায় মোড়া দিনগুলোতে মেঘের বিবর্ণতা এনে দেয় ।
আকাশ সেদিন সকাল থেকেই মেঘলা । বেলা অনেকটা গড়িয়ে গিয়েছে । দুটো দিন তিতিরের এখন অখণ্ড অবসর । দময়ন্তীর কড়া হুকুম , বিয়ের অন্তত দুদিন আগে হসপিটাল থেকে ছুটি নিতে হবে । পরশু বিয়ে , অতএব ...... । বিয়ে ! মনে মনে তিতির আবারও শব্দটা উচ্চারণ করে । মনের তারে কেমন যেন একটা অচেনা অনুভূতির ঝঙ্কার ওঠে । বালিশে মুখ গুঁজে ভাবনাটাকে উপভোগ করতে চায়। অফিসে বেরোবার আগে ব্যস্ত হয়ে ঘরে ঢোকে দময়ন্তী –“ তুই এখনও উঠিস নি তিন্নি ? কি মেয়ে রে তুই ! ”
“ একটু বসো না মা – ”
হাত বাড়িয়ে তিতির মায়ের হাতটা ধরে । ছোট্ট মেয়ের মত আবদার করে –“ একটু বসো না মা । ”
ঘড়িতে দম দিতে দিতে তিতিরের মাথার কাছে বসে পড়ে দময়ন্তী । বলে – “ বসবো কি রে ? অফিস নেই বুঝি আমার ?
ঘুম ঘেরা চোখের ভারী পাতা খুলে তিতির বলে – “ আজও তোমার অফিস ? তবে আমায় বাড়িতে বসিয়ে রাখলে কেন ? ”
“ কারণ তুমি বিয়ের কনে বলে । ”
তিতিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় দময়ন্তী , বলে – “ আজ তো আমার অফিস হাফ । তিনটের মধ্যেই ফিরে আসব । তারপর তোকে নিয়ে সাউথ সিটি ......
তিতির মায়ের কোলে মাথা গুঁজে বলে – “ আবারও সাউথ সিটি! তোমার shopping এখনও শেষ হলো না ?”
“ হলো আর কই ? অয়নের পাঞ্জাবীটা delivery নিতে হবে , তোর pure silk টা পিকো করতে দেওয়া আছে , সেটা নিতে হবে , আরো ছোটখাটো দু একটা কেনাকাটা আছে । তুই কিন্তূ ready হয়ে থাকিস তিন্নি – ”
ঘুম জড়ানো গলাতেই তিতির উত্তর দেয় –“ থাকবো – ”
ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে দময়ন্তী –“ ওরে বাবা ! সাড়ে ন’টা বাজে । আমি আসি , টেবিলে সব রইলো , খেয়ে নিস , কেমন – ”
দময়ন্তী চলে যায় । তিতির চাদরটা মাথা অবধি মুড়ে নিয়ে আবারও ঘুমের তোড়জোড় শুরু করে । কিন্তূ তোড়জোড়ই সার হয় । মোবাইলটা বেজে উঠে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেয় । বিছানা ছেড়ে বিরক্তভাবেই মোবাইলটা তুলে নেয় তিতির–“ হ্যালো ” –
“ তিতির ” –
“ এই সাতসকালেই ফোন করেছিস কেন ? ”
“ সাত সকাল ? ”
আকাশ থেকে পড়ে অয়ন । “ বাড়ির ঘড়িগুলো সব বন্ধ নাকি ? ”
“ বাজে কথা রাখ , ফোন করেছিস কেন বল ? ”
“ কেন আবার ? এমনিই – ”
“ আজ chamber নেই ? ”
“ আছে সব আছে , কিন্তূ এমন thrilled হয়ে আছি না , কিচ্ছু করতে ইচ্ছে করছেনা । ঘড়ির কাঁটাগুলোও যেন সিভিয়ার আর্থাইটিসে ভুগছে , এগোতেই চায় না । ”
অয়নের ছেলেমানুষীতে হেসে ওঠে তিতির । অয়ন জিজ্ঞেস করে –“ হাসছিস কেন ? ”
“ তোর দুর্দশা দেখে । বিয়ের আগেই এই , বিয়ের পরে যে কি করবি ...... ”
অয়ন বলে ওঠে – “ কি আবার করবো ? প্রেম করে হাবুডুবু খাচ্ছি , বিয়ে করে পুরো ডুবে যাবো। ”
গলার স্বরটা ভারি করে তিতির বলে – “ শুনে খুশী হলাম । কিন্তূ ডাক্তারবাবু দয়া করে ফোন ছেড়ে এবার চেম্বারে যান । রুগীরা সেখানে হা পিত্যেস করে বসে আছে । ”
অয়ন হতাশ স্বরে বলে – “ তুই বড্ড বেরসিক তিতির । রোম্যান্টিক এপিসোডগুলো কোথায় ইলাস্টিকের মত টেনে বাড়িয়ে যাবি , তা না রুগী , চেম্বার ...... যাক গে । তোর সঙ্গে কোথায় কখন দেখা হচ্ছে ? ” 
“ পরশু একদম ছাদনা তলায় , এরমধ্যে no phone , no দেখা । ঠিক আছে ? ”
“ যো হুকুম । ”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অয়ন । তিতির হেসে ফোন নামিয়ে রাখে ।“ কাল রাত থেকেই মাথাটা কেমন ভারী হয়ে আছে । একটা ওষুধ খেলে হয় । ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারটা হাতড়াতে থাকে তিতির । কাজের সময় যদি কোন জিনিস পাওয়া যায় । রাজ্যের ওষুধের মধ্যে কোথায় যে লুকিয়ে আছে । নাঃ ! পাওয়া গেছে শেষ পর্যন্ত । ”
ট্যাবলেটটা বার করে রেখে বাথরুমে চলে যায় । মাথার মধ্যে আশ্চর্য রকমের পিন ফোটানো একটা যন্ত্রনা শুরু হয় । ব্রাশ করতে করতেই পা টা কেমন টলমল করতে থাকে । তাড়াতাড়ি মুখটুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসে তিতির । ভিজে মুখটা মোছবার জন্য তোয়ালের দিকে হাত বাড়ায় । ব্যস ...... তারপরই সব অন্ধকার, একেবারে নিশ্চ্ছিদ্র অন্ধকার । আলোর জগতে ফিরে তিতির প্রথমটায় খুব অবাক হয়ে যায়! এ কোথায় শুয়ে আছে ও! বিছানাটাই বা কার! মুখের ওপর ঝুঁকে পড়া মুখটাই বা কার ? কেমন যেন চেনা চেনা লাগে । কে যেন ? কে যেন ? হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়ে যায় , উনি তো D.N. , নিউরোলজিস্ট , ডিপার্টমেণ্টের হেড ডঃ নন্দী –  কিন্তূ উনি এখানে কেন ? তিতিরের মাথার মধ্যে সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যায় । সে তাড়াতাড়ি উঠে বসতে যায় । কিন্তূ একি ? উঠতে পারছে না কেন ? সারা শরীরটা যেন মরে যাওয়া পাখীর ডানার মতই মুখ থুবড়ে বিছানায় পড়ে থাকে । অনেক চেষ্টা করেও তিতির তাকে এক ইঞ্চিও নড়াতে পারে না । আর্তনাদ করে ওঠে সে –                 “ মা – মা – আ – গো ”
ড: নন্দী তার থমথমে মুখটাতে হাসি ফোটাবার চেষ্টা করে বলেন –“ Don’t get exited তিতির , তুমি ভালো হয়ে যাবে । দ্যাখো আমরা সবাই আছি , তোমার কোন ভয় নেই । ”
তিতিরের চোখের সামনে সার বাধা মুখের আবছা মিছিল – মা , অয়ন , কৌস্তভ , মারিফ আরো অনেকে । তিতিরে বুকের মধ্যে সজোরে কেউ যেন হাতুড়ির ঘা দিতে শুরু করে । ভীষণ – ভীষণ ভয় করতে থাকে তার । কি হলো কি তিতিরের?ত্রাসে উত্তেজনায় তার ঠোঁট দুটো কাঁপতে থাকে । জিভটাও কেমন জড়িয়ে আসে । বুঝতে পেরে যায় তিতির তার কি হয়েছে , তবুও নিশ্চিন্ত হবার জন্য জড়ানো গলায় প্রশ্ন করে – It’s a case of Transverse Myelities ......
ডঃ নন্দী কোনও উত্তর দেন না , কিন্তূ তার অভিব্যক্তি থেকেই তিতির উত্তর পেয়ে যায় । তার গলা থেকে একটা ঘর্ঘর শব্দ উঠে আসে –
“ আ–আ–আমি আর কোনও–দিন–ও দাঁ–ড়াতে পা–র-ব-না ”
ডঃ নন্দী সান্ত্বনার সুরে বলেন –“ তিতির  প্লিজ, প্লিজ বি স্টেডি ”
ডঃ নন্দীর কোন কথাই তিতিরের কানে পৌছয় না , সে চিত্‍কার করে ওঠে – “ না ” _____
আবারও হারিয়ে যায় সীমাহীন অন্ধকারে । কতগুলো ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরো টুকরো কথা যেন অনেক দূর থেকে ভেসে আসে ।
“ ন’বছর বয়সে ওর বাবা মারা গেছে । তারপর থেকে ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই. ডঃ নন্দী  যত টাকা লাগে , আমি যোগাড় করে দেবো – আপনি শুধু আমার তিন্নিকে ভালো করে দিন , ভালো ..........
“ তিতির , কোথায় কখন যেন দেখা হচ্ছে আমাদের ? ”
“ পরশু , ছাদনা তলায় । ”
“ অয়ন, বিয়িং আ ডক্টর তোমার কিন্তূ এভাবে ভেঙে পড়া উচিত নয় । তুমি ভেঙে পড়লে তিতির কি করবে ? ...... ”
ঘোর কেটে যায় তিতিরের । এই জন্যই তো পুরোনো ছবিগুলো সে ঘাটতে চায় না । সব ছবিগুলোকে মাড়িয়ে ডাইনির মত এই ছবিটাই ওর ধারালো নখ বার করে এগিয়ে আসে , নির্মমভাবে খামচে দিয়ে যায় তিতিরের বুকটা । তিতির তো সব কিছু মেনে নিয়েছে । এখন মনে হয় , ডাক্তারী পড়াই ওর কাল হয়েছিলো । হিউম্যান এনাটমিটা জানা না থাকলে ও তো ওর মায়ের মত একটা বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে পারতো যে আবার ও ভালো হয়ে যাবে , আবারও আগের মত হেঁটে চলে বেড়াবে । কিন্তূ যে রোগের কামোড়ে তার গলা থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে তা যে আর কোনদিনও সাড় ফিরে পাবে না , তিতির তো সেই কঠিন সত্যটা জানে । বিজ্ঞানের জগতে এই রোগটা নিয়ে কতই তো গবেষণা চলছে , কিন্তূ ওই পর্যন্তই । এখনও এর কোন যোগ্য ওষুধ বেরোয় নি । বেরোবেও কিনা কে জানে ? ভাবতে ভাবতে কেমন ক্লান্ত বোধ করে তিতির । হুইলচেয়ারটায় মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে । দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তিতিরের বুক চিরে । যতদিন বাঁচবে জীবনের এই ভারী বোঝাটাকে বয়ে যেতে হবে । অবশ্য এই বোঝাটা বইতে সঙ্গ দিতে চেয়েছিল অয়ন , কিন্তূ তিতির তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে । অনে–ক , অ–নে–ক  দিন অয়ন এসেছে , তিতিরকে বুঝিয়েছে –
“ ধর আমারই যদি এমনটা হতো , তুই কি করতিস ? ”
তিতির সে প্রশ্নের উত্তর দেয়নি । গলায় মরুভূমির রুক্ষতা এনে বলেছে –“ তুই চলে যা অয়ন , তুই এলে আমার কষ্ট বাড়ে । প্লিজ তুই চলে যা । ”
অয়নটা বড্ড ছেলেমানুষ । তিতিরের রূঢ়তায় ওর চোখে জল এসে গিয়েছে , ধরা গলায় জানতে চেয়েছে – “ তুই আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছিস তিতির ? ”
তিতির এ কথারও কোনও উত্তর দেয়নি । অয়নের সঙ্গে সেই শেষ দেখা । মনের দরজা দুটোয় জোর করে খিল তুলে দিয়েছে তিতির । না তার দুর্ভাগ্যের সঙ্গে অয়নকে সে কিছুতেই জড়াতে পারে না , কোন ভাবেই না , কোন মতেই না ।
আজ বোধহয় পূর্ণিমা । ঝকঝকে জ্যোত্‍স্নার আলো বারান্দার মেঝেতে এঁকে দিয়েছে আলো-ছায়ার আলপনা । রূপোলি রেলিংগুলোতেও কেমন থই থই করছে জ্যোত্‍স্না । একনাগাড়ে স্মৃতির পথে হেঁটে এখন শ্রান্ত তিতির । চোখ দুটো কেমন ভারী হয়ে আসে তার । দেখতে দেখতে উপচে পড়া জ্যোত্‍স্না কখন যেন পক্ষীরাজ হয়ে যায় । পক্ষীরাজের পিঠে ওই তো চাঁদনী রঙা রাজপুত্তুর । ওর হাতে কি ওটা ? সব কষ্ট সারিয়ে দেবার সেই শ্বেত বলাকার পালক না! আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় তিতির–“ তুমি এসেছো রাজপুত্তুর ! তুমি এনেছো শ্বেত বলাকার পালক ! ”
তিতিরের আর তর সয় না । মেঘের বালিয়াড়ি পেরিয়ে ছুটে যেতে চায় রাজপুত্তুরের কাছে । কিন্তূ পক্ষীরাজটা কিছুতেই তিতিরের সাথে ভাব করতে চায় না , রাজপুত্তুরকে পিঠে নিয়েই মেঘের আড়ালে কোথায় যেন হারিয়ে যায় । তবুও হতাশ হয় না তিতির । মেঘ হাতড়ে হাতড়েই সে খুঁজে চলে ________“ রাজপুত্তুর তুমি কোথায় ? কোথায় তুমি রাজপুত্তুর .......... ? ”










বিভাগ : গল্প
     গল্পের নাম : অন্য পুজো
     কবিরুল
      

      " শঙ্খ শঙ্খ মঙ্গল গানে
           জননী এসেছে দ্বারে "
   
     সত্যিই তো আর কদিন পরেই সকলের ঘর আলো করে মা উমা আসবেন। সকলের ব্যস্ততা একেবারে তুঙ্গে। সবাই বাইরে কেনা কাটা করছে।

     মলি শুভধীপকে কবে থেকে মার্কেটিং করার জন্য বলছে।শুভদীপের এমনিতেই কাজের চাপ। সবে বদলি হয়ে নতুন জায়গাতে এসেছে। একেবারে দম ফেলার টাইম নেই।
      আজ দুদিন ধরে কথা দিয়েও শুভ শপিং এ বেরোতে পারছে না। ঘরে আসলেই ল্যাপটপ তার সঙ্গী।
     আজ রবিবার আজ টাইম দিলেও মুষলধারে বৃষ্টির জন্য যেতে পারল না।

    সকাল থেকেই তাই মুডটা আজ অফ মলির। একপ্রস্থও তুমুল ঝগড়া হয়ে গেছে।
      দুদিন আগেই বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালিত হল স্কুলে। সব দিদিমণিরা তাদের হাসব্যাণ্ডকে সাথে করে এসেছিল। ব্যাতিক্রম শুধু মলি। ওর বর আসতে পারেনি। অভিমানের পারদ তাই একটু বেশী।
     এমনিতেই প্রতিবছর মলির স্কুলে বেশ ধুমধাম করে বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালন করা হয়। অনেক লোকের সমাগম হয়। অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
     এবারের অনুষ্ঠানের পুরো রেসপনসিবিলিটি মলি উপর বর্তায়। তাই পরিশ্রমটাও দ্বিগুণ। অনেক খাটতে হয়েছে।
     দিদিমণিদের মধ্যেও অনেক প্রতিযোগিতা হয়েছিল। আর সেখানে মলি একটাও প্রাইজ আনতে পারেনি। একটা চাপা দুঃখ তাই সব সময় ঘিরে ধরেছে।
    মলির স্কুলটা ঈশ্বরচন্দ্রের জন্ম ভিটার অনেকটাই কাছে। তাই আবেগের মাত্রাটা সব স্কুলের থেকে একটু বেশী। নেতা মণ্ত্রীদের ও চাপ থাকে।
   
      ******* ******** ***********
   
    দুপুরে মেয়ের ফোনটা পেয়ে একটা ফ্রেশ অক্সিজেন পেল। তিতিরের স্কুলে বিদ্যাসাগরের জন্মদিনের দিন প্রবন্ধ লেখার প্রতিযোগিতা হয়। প্রবন্ধের সাবজেক্ট ছিল " নারী স্বাধীনতা , নারী শিক্ষা ও শিক্ষার বিস্তার "। তিতির ফার্স্ট প্রাইজ জিতেছে।
      সব শুনে মলির চোখে ঘোর বিস্ময়। ওইটুকু মেয়ে এত শক্ত একটা টপিকে প্রথম প্রাইজ জিতেছে তাতেই মলির আনন্দ আর ধরে না। নিজে পুরষ্কার না পেলেও তিতিরতো পেয়েছে।
তবে একটু খচখচানি থেকে গেল।নারী স্বাধীনতা বিষয়টা তিতির কিভাবে রপ্ত করে লিখল সেটাই জানতে চাইল মলি।
  মলি ফোনে যা শুনল তা স্পীকার অন করে শুভকেও শোনাল।

******** ********* **********

মলি গ্রামের মেয়ে। একটু ভীত। যদিও চাকরি করে। তবু সেইভাবে স্বাধীন না। সব ব্যাপারে শুভর উপর নির্ভর করতে হয়। যে কোন কাজে শুভদীপ মতামত দেয়। একা একা রাস্তা ঘাটে বেরোতেও শুভ তেমন ভরসা পায় না।
ছোটবেলাতেই বাবা মার নিদারুণ শাসনে মানুষ হয়েছিল। ভেবেছিল বিয়ের পর একটু স্বাধীনভাবে গুছিয়ে সংসার করবে। ফ্রেশ অক্সিজেন নেবে। করতে পারেনি।
 শুভদীপ করতে দিল না। একটা খাঁচার মধ্যে করে বন্দী করল। নিজের স্বাধীন স্বত্তাটুকূ একটু একটু করে লোপ পেল।
এতে শুভর কোন দোষ ছিল না। ও জানে বেশী স্বাধীনতা পেলে মানুষ মাথাতে ওঠে। যেটা ওর একমাত্র বোনের ক্ষেত্রে হয়েছিল।
বারো ক্লাস পাশ করার পর কলকাতাতে পড়তে গিয়ে বাজে সঙ্গ ধরল। অসীম স্বাধীনতার সাধ পেতে ধরল মদ। তারপর ড্রাগস্। নিত্যদিন নেশা করে ঘরে ফিরত। তাপর জীবনের কোন মোরে গিয়ে হারিয়ে গেল। একেবারে গোল্লায় গেল।
  ছোট্ট তিতির মা বাবা পিউমণির সব ঘটনা গুলো শুনেছে। সেইগুলিই নিজের প্রবন্ধে রিফ্লেক্ট করেছে।
  আজ তিতিরের সাফল্যে শুভদীপ বেশ উল্লসিত। চোখের কোণে নোনা পানির ধারা।

 আকাশের কালো মেঘের বোরখা অনেক আগেই সরে গেছে। শুধু মলির মন থেকে অভিমানের চাদর এখনও সরেনি। শরতের সোনাঝরা দুষ্টূমি ভরা রোদ্দুরের দস্যিপনা অল্প অল্প করে মলির নাইটিতে পাক খাচ্ছে। শুভ একমনে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে।

মলি আলতোভাবে শুভকে বুকে টেনে নিল। মলির চোখের কোণ বেয়ে নামছে শরতের নিষ্পাপ শিশির। ওর অবাধ্য চুলগুলো শুভর কপালে ভালবাসার উপপাদ্য আঁকছে।
আজ মলিকে সাংঘাতিক সুন্দর দেখাচ্ছে। একদম টেরিফিক। মলি জানে শুভদীপের জন্যই আজ তিতির প্রাইজ পেয়েছে। ও চাইনা শপিং করতে। একা বেরোতে। এইভাবে শুভর ভালবাসার কাছে পরাধীন থাকতে চাই।

******* ******** ********

বিকেলের ফুলপিসিমার ফোন সব অঙ্ক বদলে দিল। পিসিমা পূজোতে ওদের তিনজনকে আস্তে বলেছে। পিসিমার গ্রামের পূজোর এবার পঞ্চাশ বছর। বিশাল ব্যাপার।
সেই কোন ছোটবেলাতে একবার সেখানে এসেছিল। তারপর শুভর সাথে আর একবার। তারপর আর আসেনি।আজ বহু বছর পরে সেই গ্রামটা একবার দেখতে ইচ্ছে করছে।
 গ্রাম দেখার থেকেও পিসিমার পাড়ার পূজোর এবারের থীম " বিধবা বিবাহ ও নারী স্বাধীনতা "। কারণ পিসিমার গ্রামেও বিদ্যাসাগরের আবেগ মাখা। অবিভিক্ত মেদিনীপুরের একটা আদিবাসী গ্রাম। যে গ্রামে বিদ্যাসাগর বহুবার এসেছেন। মানুষের সেবা করেছেন।

  ******* ********* ********

পঞ্চমীতে গ্রামে পা রেখেই বুঝতে পারল পুজো কাকে বলে। এবারের পুজো সাঁওতালী মেয়েরা করছে। সাথে বেশ কিছু হিন্দু আর মুসুলমান বৌরা যোগদান করেছে।
 পুজোর রাশ মহিলা সমিতির হাতে। একেবারে নারী শক্তির জাগরণ যাকে বলে। পুরুষ প্রবেশ নিষেধ।
ছোটবেলার খেলার সাথীরা সব একে একে হাজির। মলির আজ আনন্দের শেষ নেই। টুসু , ঝুমরি , লাচন , ডংলু , নাফিসা , তমরু , ঝিলম , বাসির কে না নেই। ওদের মুখের পরিভাষা বদলে গেছে। মলিকে পেয়ে ওরাও আনন্দে আত্মহারা।
  সারা পুজো আর মণ্ডপে বিদ্যাসাগরের ছোঁয়া। সেই সাথে নারী স্বাধীনতার জয়গান। মুসুলমান বৌরাও বেশ খুশীতে ডগমগ করছে। একটা দারুণ পরিবেশ।
  পূজোর আবার জাত কিসের! মা উমার কাছে সব শুদ্ধ।
  রবীন্দ্রনাথ ঠিক বলেছেন " Unity in diversity ".আজ সারা মণ্ডপে রবিঠাকুর আর বিদ্যাসাগর মিশে গেছেন।

" বাজলো তোমার
....... ....... ........
   মাতলো রে ভুবণ
      ...... ....... ...... "
ভোর হতেই মাইকের জোরালো গানে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
গ্রামের পরিবেশ সত্যিই মায়াবী।
সবুজের মখমলে শিশিরের চন্দন। কাশের মাতলামি। ঢাকের মাতাল করা সুর।
  কচিকাঁচারা ছুটছে। তাদের হাতে বাজি। ফুলঝুরি।
 সবাই কে দেখতে পেল। মলির একমাত্র বন্ধু বকুলকে দেখতে পেলনা। ও কি মারা গেছে? অনেক অল্প বয়সে ত বিধবা হয়েছে।বকুলকে দেখতে না পেয়ে মনটা খারাপ।

********** ******** *********

ষষ্ঠীর দিন পিসিমা পাড়ার পুজো বিধবা বকুলকে দিয়ে উদ্বোধন করাল। সবার চোখে আনন্দের অশ্রু। বিধবা তো কি হয়েছে ? মা দশভূজার সেও সন্তান।
 বকুল ফিতে কাটছে আর জামালের বৌ আফসানা বকুলকে ধরে আছে। সম্প্রীতির এক অপূর্ব মেল বন্ধন।

আজ অষ্টমী। শুভর এখনও পাত্তা নেই। মনে হচ্ছে এবারেও ডোবাবে।
অঞ্জলি শুরু হতে আর কিছু সময় বাকি।
শুভ ঢুকল। ওর পাশে ওর বোন শুভশ্রী।
  বৌদিকে দেখতে পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল মলির বুকে।
শ্রী অনেক চেঞ্জ। মলির গরদের শাড়ি ভেসে যাচ্ছে চোখের জলে।
আজ সবাই মিলে অঞ্জলি দিল।
....... ........ ....... ...... ......... .........
সন্ধি পুজোর ১০৮টি প্রদীপ জ্বলে উঠল। বাইরে প্রবল জোরে তখন বাজছে
" দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী
   ..... ...... দুর্গে .... "


                  বিভাগ-কবিতা 2                 

           বিশ্বাস
মূল রচনা: ব্রুশলীস কে সাংমা
     অনুসৃজন: সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমার বিশ্বাস যদি এক পাথর ছুড়ি উর্ধ্বে-
আমি স্বর্গেও করি ছিদ্র
ক্রীড়ারত পরিদের পাই দেখতে।
আমার বিশ্বাসের ডানায় উঠি উঁচুতে-
মখমলী মেঘকে করি স্পর্শ
নক্ষত্রখচিত আকাশ আসে অনুভবে।
আমার বিশ্বাসের আঁধারে ডুব দিয়ে-
ঠিক পৌঁছে যাব গভীরে
হাঙ্গরদের সাথে ব‍্যস্ত থাকবো সাঁতারে।
আমার বিশ্বাস পৃথিবীর অন্তরে আঁচড়ে-
তুলে আনব মূল্যবান রত্ন
নিজেকে যত্নে সাজাব সেই রত্নে।
বিশ্বাসের ভরে করতে পারি অনেক কিছু
দেবদূতের মাঝখানে আমি মানুষ
ধরিত্রীর রত্নভান্ডারের চারপাশে উড়িয়ে ফানুস
কিন্তু আমার বিশ্বাসের দৃঢ়তায় আমি হব পূর্ণ-
এখানে যে কাজে হয়েছি ব্রতী
যেখানে আমার স্বপ্নরা নিঃশ্বাস নেয়।






প্রত্যাশা
        স্বপ্না আচাৰ্জী

বর্ষাদিনের গান কি ভেজা ?
না হলে মন ভিজে যায় কেন ?
চারপাশে স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ
প্রেমকে নেতিয়ে দিয়েছে ,
কোথাও রোদ্দুর নেই বলে
তাকে চাঙ্গা করা যাচ্ছে না ।
মন খুঁজছে একটা তপ্ত দিন ,
প্রেম খুঁজছে একটা উত্তপ্ত মন ,
শরীর খুঁজছে ওম জড়ানো
একটা অজানা গান ,
কাছেই পিঠের কোনও সুর নয় ---
দূর থেকে ভেসে আসা এক
রোদ্দুরমাখা স্বাধীনতার প্রত্যাশা ।।






                        ঝড়
              
               হামিদুল ইসলাম

তোমার গর্ভকোষে
জমা রাখি ভ্রূণ
কালের চক্রে নৈকট‍্যের ব‍্যবধান রাখি
চোখের জলে হাজার অশ্রু বিসর্জন
তবু তোমাকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে বারবার ।
অসাড় হৃদয় খোঁজে মৌনতার
ভাষা
পুবালী আলোয় চাঁদের জাগরণ
ভুলে যাই পথের দিশা
তবু ফিরে আসি নিত‍্য জীবন যাপন
একঘরে পৃথিবী দুচোখে ভাসে আবার  ।
নিত‍্য নতুন পাখিদের আকাশ
পাখিরা সারারাত নির্ঘুম
নৈঃশব্দের  মমতায় দেখি তোমার মুখ
ভিনদেশী প্রজা
ভুলে যায় স্বপ্নে তার কাঠফাটা রোদ   ।
অকাল বৈধব‍্য দেখি
দাঁড়িয়ে থাকে পথের উপর
শরীরী প্রতিবন্ধকতা তার সমস্ত হৃদয় জুড়ে
তোমাকে দেখি ঈশান কোণে মেঘ
অপেক্ষা করি তোমার ঝড়ের প্রতীক্ষায়  ।






জীবনেশ্বর
            মহীতোষ গায়েন

ছিন্নমূল আশা নিয়ে,এই দু:সময়ে
তবু বেঁচে আছে কান্না ভেজা মুখ,
এখনো ভোরের আকাশে দেখি
আশাবরি নির্মল জীবনের সুখ।
পাতা ঝরা গান শুনে শিহরিত হই!
মেঘ,বৃষ্টি গায়ে মাখি,অসুখ করে না,
সব ফুল ঝরে গেছে,সব স্বপ্ন মরে
তবুও আশ্বাস,এই গাছ মরে না।
মানুষের দু:খের উত্তাপ শুষে
শান্তির ছায়া পাওয়া মহাসুখ,
স্মৃতির পাতায় লেখা এ-কঠিন
প্রত‍্যয়,সংগ্রামে পেতে দিই বুক।
যখন জীবন হাতড়ে দেখি অতল তিমিরে
জেগে অন্তর্লীন,এই গাছ মৃত্যুহীন মনে হয়,
এ জীবন আগুনের আকাশের মাঝে দীপ্ত,
বাতাসে ভাসে দেখ আগামীর সুনিবিড় জয়।
মানুষের সমস্ত সত্তায় ও জীবনেশ্বর
সুদৃঢ় অঙ্গীকারে তীব্র লড়াইয়ে আছো,
গভীর দুর্দিনে কঠিন প্রত‍্য‍য়ে থেকে
ও' গাছ,ও' স্বপ্ন-গাছ মৃত্যুহীন বাঁচো।







প্রেমসাগরে খেলবি যদি আয়    
            লক্ষণ কিস্কু 

প্রেম সাগরে খেলবি যদি আয়রে--
ছুটে  ছুটে আয়, ভব নদীর তিরে
বুকচেরা  তটিনী   পরশের   বনে
লাগিবে ভালোবাসা ছোঁয়া, কচি মনে
মোরাল-মোরালী  হাঁটু  জলে  দু'জনে 
জলকেলি  খেলিব মোরা  এই  ক্ষণে
সাবধানে   নামিও   নীল    দরিয়ায়
নিও  প্রেমের  কলস   নিজ   হিয়ায়,
নদীতে জোয়ার আছে, সাগরে ঢেউ 
ভাটার   টানে   জীবনতরী    বাইও।
শাখায়   ভরা  ফুল  দুলবে    দোদুল
তোমাতে আমি মিলন বীথি, আকুল
পরাণ  চেয়ে  আছে   নতুন   সকাল।






অভিমান
           নারায়ণ নন্দী

কারণে-অকারণে ছোট ছোট রাগ অভিমান।
তোলে বিভেদের প্রাচীর,গড়ে তোলে ব্যবধান।
হাজারো অভিযোগ হোক না সত্য বা মিথ্যে।
আমায় তাও যে মানতে হয় সব প্রফুল্ল চিত্তে।
ঝুড়ি ঝুড়ি সব মিথ্যা অভিযোগের কন্টক মালা।
জানি সবই তার রাগ মান-অভিমানের পালা।
সে যখন করে অভিমান-মন যে আমার কেমন করে।
জানি থাকবে না বেশিক্ষণ-অভিমান যাবে ঠিক সরে।
তবুও সে করলে অভিমান-বুকটা লাগে বড় খালি ।
লিখব কি আর তখন-কলমে পড়ে না যে কালি।
হতাশ হয়ে যাই- ফুরিয়ে যায় মুখের সব ভাষা।
জানি,অভিমান কেটে যাবে-রাখি মনে এই আশা।
যখন সে করে অভিমান-ডাকে না আমায় কাছে।
ভাবি মনে,আমার আপন বলে-কেউ কি আর আছে ?
তবু নীরবে সহে যাই,যত মান-অভিমান,জীবনের যত ঘাত প্রতিঘাত।
আজও আছে যে বিশ্বাস-কেটে যাবে ঠিক দুর্যোগের অন্ধকার রাত।
কিন্তু এই অভিমান দেয় যে ব্যথা,জীবনকে করে কালো।
জানি তবুও,যতই করুক না অভিমান-বাসে সে আমায় ভালো।







অসহায়ের সুযোগ নিয়ে
                মোঃআলিউল হক
  
অসহায়ের সুযোগ নিয়ে পাড়ার কলম চোর
কায়দা করে চুরি করে এঁটে সম্মুখ দোর
     সাধারণে দুটি টাকায়
     ভাবে,আহা তারি দয়ায়
এ মাহিনা কাটবে ভালো আনন্দ মুখোর।।
হাতের ছাপে হাতিয়ে নিয়ে  চলে বহু মাস
ওদের নামে খাতা খুলে আপন কড়ি চাষ
     ছেঁড়া ফাটা লুঙ্গি শাড়ি
     বারেক দিয়েই বাহাদুরী
বাবুগিরি দেখায় গাঁয়ে আনকোরা লেবাস।।

ওদের বহু ন্যায্য পাওনা গোপন করে রাখে
দশটি টাকা হাতে দিয়া একশো টাকা লেখে    
       যখন তখন খাটিয়ে বেশি
       ওদের অর্থে বাড়ায় পেশি
  দেশি বাবুর বদ চালে চোখ সর্ষে ফুল দেখে।।
 
  অসাম্য বৈষম্য কত সইছে সাধারণে
  নির্বিবাদে সবি কিছু মেনে সরল মনে
         কলুর বলদ খেটে চলে
         "ভাগ্য লিখন "- এই ব'লে
   মন্দ ভালোয় তারি আলয় ঘোরে সকল ক্ষণে।। 
 






দারুচিনি মেয়ে
            রথীন্দ্র নাথ দাস

দারুচিনি মেয়ে এলো হঠাৎ না জানিয়ে
               হাজারদুয়ারির পর্দা ঠেলে ঠেলে---
জীবনকে কিছু দেবে বলে শপথ নিয়েছে যেন,
সূর্যস্নানের ভেতর থেকে উঠে আসছে গঙ্গা;
চারিদিকে ঝকমকে পাথর থেকে
                             আলো ছড়িয়ে পড়ছে।
কোকিলের গানে ভরিয়ে দিল দিগ্বিদিক---
বাতাসে লজ্জাহীন সুবাস মদিরতা,
আকাশে রামধনু কী মায়াময়!
ফাগুনফুলে ভ্রমর মাখামাখি,
আবহমানতা গেল ভুলে।
অদৃশ্য শরীরজাত প্রেমের পর্দা গেল খুলে,
যেন সাইরেনে পথ পরিষ্কার
পাতায় পাতায় ছড়িয়ে পড়ল খবর---
অকালে শুরু হলো বসন্ত উৎসব!
মৃত্যুর পরোয়ানা হাওয়ায় গেল উড়ে।
বুঝি বা সুজনেষু বিষণ্নতায় সফরসঙ্গী,
কতদিনের ক্ষতচিহ্নে এঁকে দিচ্ছে অগণিত চুম্বন!
জাতক কাহিনী এল ফিরে;
নিবিড় বন্ধন সব গাঢ় হচ্ছে ক্রমশ---
কি অমোঘ মেদুরতায় উড়ে যাই দিগন্তহীনে।
সবুজে মুগ্ধ নির্জনে মাতোয়ারা মন
ভিখারী প্রেমের কাছে
                        জীবনের গান গায় গুনগুন---
ফিরে এল শিউলিদোলা সুসময়!
মৃত্যুর ছায়া থেকে জীবনের বিবর্ণতা মুছিয়ে দিতে
    দারুচিনি মেয়ে এলো সোনালী ফসল ফলাতে।







কালো মেয়ে
                 ববি সরকার

গরিব ঘরের কালো মেয়ে
তাকাওনি তাই ফিরে,
উপহাসের পাত্রী হয়ে
দাঁড়িয়ে ছিলাম ভিড়ে।
হাসিটা তোমার আগুন যেন
জ্বালিয়ে দিলো চোখ,
হিরের টুকরো ছেলে তুমি
অনেক বড়োলোক।
গুণ জানো আমারো ছিল
কিন্তু আমি যে কালো,
রূপটাই আমায় করলো মাটি
কাড়লো মনের আলো।
বাবা আমার গরিব ভীষণ
টাকা কোথায় পাবে !
বেশি তো নয় লক্ষ টাকায়
তোমায় পাওয়া যাবে।
একথা নাকি বলেছিলে
ঘটক মাসীর কাছে !!
বেনীমাধব তোমার জন্যে
ঘৃণা তোলা আছে।
টাকার জোগাড় হয়নি সেদিন
তাতে আক্ষেপ নেই,
গায়ের রংটাই দেখলে কেবল
দুঃখ তো সেখানেই।
বুঝবে সেদিন জ্বালাটা কোথায়,
কিসের এতো শোক।
বেনীমাধব তোমারো একটা
কালো মেয়ে হোক।।







মৃত্যু বিভীষিকা
                লিজা লিনকন


আজকাল স্বপ্ন দেখা ভুলতে বসেছি,
ভবিষ্যতের কথা ছেড়েই দিলাম
চোখ খুললেই মৃত্যু বিভীষিকা!
কি জানি কার ঘর ফাঁকা হলো,কোন মায়ের কোল শূন্য হলো—
চাপা উৎকণ্ঠা বাড়ছে, বাঁচার মতো বাঁচতে পারছি কই?
অজানা আতঙ্ক কব্জা করেছে আমার মস্তিষ্ককে
ভাবার ক্ষমতা হারিয়েছি, ক্রমশ অবশ...
এখনও লিখছি,জানিনা কতদিন মনের আবেগ ভাষা খুঁজে পাবে!
প্রিয় মানুষের ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা সইতে পারবো তো?
এ যেনো অদৃশ্য লড়াই চলছে, লড়ছি প্রতিনিয়ত নিরস্ত্র সেপাই হয়ে
বড্ড অসহায় লাগে জানো, এ যেন প্রতীক্ষিত মৃত্যু বরণ
জানি আসছে ধেয়ে নিঃশব্দে,কিন্তু নিরুপায় অসহায় আমরা!
চারদিকে শুধু হাহাকার, মৃত্যু ভয় যেন শ্বাসনালী টিপে ধরেছে..
কি জানি মৃত্যুর করাল গ্রাস থেকে যুদ্ধ জয় করে কজন ফিরে এলো !
আহত সৈনিকের তো কেউ খোঁজ রাখেনা,রাখেনা হিসেব,তখন সেটা হয়....পলিথিন মোড়কে "ডেডবডি " ।






সেই মেয়েটি
               সাফরিদ সেখ

পুরো পাড়া ঘুমে কাদা
ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম ।
কেউ ঘুম থেকে জেগে আবার
বালিশে মাথা রেখে শুয়ে গেছে।
সেই মেয়েটির চোখে ঘুম নেই,
যার বিবাহের বয়স পেরিয়ে গেছে,
যে মেয়েটি চিরকুমারী থেকে গেছে
যে মেয়েটি নিজের যমুনা অক্ষত রেখেছে।
যাকে কেউ কোনো দিন ব্যাঙ্গ করেও
বলেনি-"আমি তোকে বিয়ে করবো"
হাতে হাত দেয়নি কোনো দিন,
নির্জনে মনের কথা কেউ শুনে নি।
তার মন জেনে গেছে ,কোনো দিন
বিয়ের ফুল ফুটবে না,বাজবে না বাজনা।
তার মনের গহনা জেগে ছিলো  প্রেম।
নিবেদনের মানুষ পাই নি,পাইনি শান্তি নীড়।
সমুদ্রের মতো নয়ন শুধুই করেছে প্রত্যাশা।
চোখ মেলাবার হয় নি অবকাশ কখন।
বায়ুর মতো মন পারেনি   ভোলাতে কাউকে।
আঁকড়ে ধরে বাঁচতে ,শান্তি নীড় গড়তে।




👇👇👇👇👇👇            
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

সাহিত্য বিচিন্তা :নানা রূপে নানা আঙ্গিকে
প্রবন্ধ সংকলন গ্রন্থ
ISBN:978-81-938747-0-7
 সম্পাদনায়:সাফরিদ সেখ ও রোহিদা খাতুন

এই বই টি বাংলা সাহিত্যের তরুণ প্রাবন্ধিক দের চিন্তার ফসল।কুড়ি টি প্রবন্ধ এই বইটিতে সংকলিত হয়েছে।তরুণ গবেষক ,শিক্ষক ও অধ্যাপক এর লেখা এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।বাংলা সাহিত্যের বিচিত্র আঙ্গিক ভিন্ন ভাবে এসেছে তাদের লেখুনিতে।
        
 বইটির প্রথম প্রকাশ:আগস্ট,2018
প্রকাশনী-বার্নিক
ISBN-978-81-938747-0-7
বই পেতে অর্ডার করুন:8348291773(whatsapp)
8926119255(call)

••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


টার্গেট
        রাজকুমার ঘোষ

কি জানি কি হলো, হঠাৎই মনে হল
নির্লজ্জের মত,
টার্গেট কিন্তু একটাই...
যে যা করবে, সব কিছু দেখে কপিও করবে
নির্লজ্জের মত,
টার্গেট কিন্তু চেঞ্জ হয়ে গেলো...
মন থেকে না মেনে, প্রয়োজনে তবু তাকে ডাকবে
নির্লজ্জের মত,
টার্গেট পুরণ হলো না, নতুন কোনো টার্গেট।
কান্নাকাটি করবে আবার হাতিয়েও নেবে,
নির্লজ্জের মত,
এই বুঝি টার্গেটে পৌঁছে গেলো, কিন্তু...
এইভাবে চলতে থাকে বছরের পর বছর
টার্গেটে আর পৌঁছাতে পারে না...
কেউ তো এসে বলে,
সঠিক পথ ধরে এগিয়ে চল, টার্গেট আসবেই,
সে ঘাড় নাড়িয়ে সায় দেয়...
ইতিবাচক কিনা সময়েই বলবে, তারপর...
আরেকটু শর্টকাট, মিথ্যাকে দেবে সাথ
নির্লজ্জের মত,
টার্গেট... জানা নেই!






ভোর
       পুনম বোস

বাইরে তুমুল বৃষ্টি...
দমকায় পুবমুখী গুড়ো বাষ্পে ক্রমশ নিবিড় চুইয়ে ভেজা কার্ণিশ
সুদৃশ্য গলির দু'পাশে দোপাটি গুলঞ্চ কাঠ গোলাপের বন
যতদূর চোখের বিস্তৃতি বুঁদ হয়ে থাকা কৃষ্ণপক্ষের রাত
যুবতী শরতের গান গেয়ে যায় নদীর জোনাক.....
হঠাৎ অন্ধকার চিরে ভেসে ওঠে জেদি শিশুর ক্রন্দন
ভেসে ওঠে আলোর গভীরতা'------
বাইরে তুমুল বৃষ্টির গর্জন...
মাথার ওপর চেনা শব্দের ঘুর্ণি
ভিতরে হেঁটে যায় ক্লান্ত রাতের চেনা বিভ্রম ;
নগ্ন টেবিলের ওপর আপাতত বিশ্রাম জীবনানন্দের নগ্ন নির্জন হাত' শরদিন্দুর ব্যেমকেশ!
কবিতার শব্দ ওড়ে পতঙ্গের মতন.................
বর্ণময় কলমের গভীরতা বোঝে ঐ রাত চোরা উত্তরণ, -------------

বাইরে তুমুল বৃষ্টির গর্জন
গর্ভিনী রাত প্রসব করেছে কমলা রঙের ভোর।।







হারিয়ে ফেলা
           মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়

বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে বেলাভূমি
স্তব্ধ চাঁদ মায়াবী আলো ছড়াতে বিস্মৃত হয়েছে।
বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখছে বেলাভূমির নির্লজ্জতা ।
যা একদিন ধুয়ে যেত চাঁদের কিরণে
আজ সেখানে বন্যার দাপট ।
তারা পরস্পর আশ্লেষে চুম্বনে লিপ্ত ।
তাদের মোহমুগ্ধ দৃষ্টির সামনে আজ সব তুচ্ছ ।
দুরন্ত অভিমানে সরে যাচ্ছে চাঁদ
ঢেকে নিচ্ছে নিজেকে কালো চাদরে,
আর কোন দিন কিরণ পড়বে না বেলাভূমিতে ।
বেলাভূমি জানল না সে কী হারাল ! 





মৃত্যু-বিভীষিকা এবং আশার দিনলিপি
                 শ্রীরণজিৎ

পৃথিবীর বুক চিরে আজ গ্রাস করে বসে আছে এক মৃত্যু-বিভীষিকা.....
বাতাসের ঐ অদৃশ্য কালো ছায়াটি যেন অন্ধকার ঘরে কিলবিল সাপের মত বাসা বেঁধে আছে। শুরু হয়েছে এক ছোবল ছোবল খেলা.... আমাদের   অস্তিত্বটাকে যেন ইডেনের ময়দানে নামিয়ে ফুটবল খেলছে একদল যুবক। আর মুখে কুলুপ এঁটে এক অস্ফুট যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠছে সব ব্রাত্য মহোদয়গন।
তবু সমস্ত ঝুকির নির্মম আঘাত সয়ে সমান্তরাল আলপথটি ধরে পথিক-মন এগিয়ে যেতে চায় তার গন্তবে। তাই প্রশ্ন হয়ে মনে জাগে---  কোথায় সেই জাদু, কোথায় সেই বাস্তবতা যে বাস্তবতায় মার্কেজীয় ভঙ্গিতে উঠে আসবে প্রভুত্বের লীলা-বিলা-খেলা?  তাই প্রশ্ন হয়ে মনে জাগে--- কোথায় সেই বিপ্লবী মন্ত্র, যে বিপ্লবের নেশায় বুদ হয়ে থাকবে সমস্ত যুবক-যুবতীর হৃৎপিন্ড?
তবু আশা নিয়েই বাঁচবো
যে আশাতে অন্ধ এক স্বার্থ?
যে আশাতে কীটের মত বাস?








উল্টো খবর
            গোপাল বিশ্বাস

খবর এলো
গাড়ি নাকি চলছে উড়ে
কালো মেঘের দেশে
এরোপ্লেন মেঠো পথে
ঠেলা গাড়ির বেশে  l
খবর এলো
মাছেরা সব উড়ছে আকাশ
বসছে গাছের ডালে
পাখিরা সব কাটছে সাঁতার
ঢেউয়ের তালে তালে  l
খবর এলো
মানুষেরাই পশু হবে
হিংস্র রক্তে তাজা
শেয়াল মশাই হবে এবার
মেঘলা পুরের রাজা l
খবর এলো
উপর দিকে গাছের শিকড়
নীচের দিকে ডাল
ঠেলা গাড়িতে জুড়ে দিল
পবন নৌকোর পাল l
খবর এলো
পুরুষদের হাতে চুড়ি
গায়ে রঙিন শাড়ি
মেয়েদের থুঁতনিতে গজিয়েছে
নীল রঙের দাড়ি  l
এ সব খবর শুনে আমি
মহা ভাবনায় পড়ি
গোপন খবর জানার জন্য
সংবাদ কেন্দ্রে ফোন করি  l






তোমাকে দিতে চাই
               গৌতম ব্যানার্জি

তোমাকে আমি সব কিছু দিতে চাই
দিতে চাই আমার পৃথিবীটাই
তোমাকে দিতে চাই আমার উজাড় করা ভালবাসা
অথচ তুমি চাও নি কিছুই।
এক মুঠো শরতের রোদ আর
সমুদ্রের বালুকা রাশির সমান ভালবাসা আজ তোমাকে দিলাম
বাকি রাখলাম সমুদ্র উত্তাল করা ঢেউয়ের
সমান এক রাশ চুম্বন আর বূক ভরা ভালবাসা।
ভোরের আকাশ থেকে চুরি করে আনা
নীল,সাদা,লাল নানান রঙ
যা দিয়ে রাঙিয়ে দেওয়া যাবে তোমার সিঁথি ও মনকে
আমি সব কিছু দিতে চাই তোমায় ।
এক গাছ ফুল ও ফল দেবো
আকাশ ভরা পাখির গান
সন্ধ্যা তারার এক টুকরো হাঁসি,সব
সব কিছু দিতে চাই তোমায়,
   
     দিতে চাই আমার পৃথিবীটাই।








অতীতের দিন
           অনিন্দ্য পাল

দেখেছি আজন্মকাল সেই সব মুখ
মৃত্যুকে যারা উড়িয়ে দিয়েছে
সিগারেটের ধোঁয়ায় ...
দেখেছি আজন্মকাল সেই সব চোখ
জীবনকে যারা ভয় পায়নি
মরণের মতো
দৃষ্টিতে লুকানো ছিল অসহ্য অবকাশ
চিবুকের  চিহ্নে ছিলো ধূসর অবিশ্বাস
দেখেছি তাদের মৃত্যুহীন শব .....
তারপর আমিও নিভিয়ে দিয়েছি
হলুদ আগুন শিখা
বন্ধ করেছি হাততালি আর উৎসব ...
কতদিন হেঁটেছি আমিও সেইসব
মানুষের মিছিলে
খেয়েছি আধগরম চা
পুড়ে ওঠা ভাঁড়ে ....
কখনো জিভ পোড়েনি ধূমায়িত তাপে
তারা রেখেছিল লোহিত আগুনকে
গোটানো আস্তিনে ....
আজন্মকাল দেখেছি তারা বেঁচেছে
মানুষের মতো
রত্নাকর সময়ের স্রোতে ধুয়ে ফেলেনি
শিকড়ের মাটি
হেমন্তের আহ্বানে .......






নজরুল স্মরণে!
                    বিশ্বজিৎ কর

সৃষ্টি আক্রান্ত,সুখ বিপন্ন -
উল্লাস অবদমিত!
লিচুচোর নেই, এখন নোবেল-চোর!
"ছাত্রদলের গান"-
কেরিয়ার শিল্পের ফর্মুলায়,
ছন্দোহীনতার নাগপাশে ছটফট করে!
"শায়ক বেঁধা পাখি"-
"অবেলায় ডাক" দিয়ে যায়!
"দূরের বন্ধু" "পথের দিশা" খুঁজে চলে!
লড়াই থেমে নেই,
"সর্বহারা"-র দল মিছিলে...
কান্ডারী, হুঁশিয়ার থাকো-
ঐ শোনো,প্রতিধ্বনিত হচ্ছে -
"চল্ চল্ চল্..........!"







গৃহবন্দী
            বাপ্পা মান্না

আমার পায়ের  নিচে একটু সবুজ ঘাস এনে দিতে পারো?
আধভেজা কাক ডানা ঝাপটায়, শুকনো ডালে বসে।
সবুজ ঘুড়িটা আটকে গেছে তারে, ওড়া তার বন্ধ।
বারান্দার বাহারি গাছ বেরিয়ে আসতে চায়, গ্রিলের বাইরে।
সবুজ ঘাসে পা-দুটো  পড়েনি কতদিন।
তবু দেখি রোজ উঠোনে পাখিরা আসে
আর সন্ধ্যেয় ফিরে যায়।
আমার দুচোখ শিশিরে ভিজিয়ে  দিতে পারো?
কার্নিশের আগাছাগুলো বড়ো হয়ে উঠছে দিন দিন।
চাপা কলের হাতল থেকে থেকে কাঁদে, মরচে ধরেছে।
রাস্তার কুকুরগুলো কাকে যেন ডাকে, আকাশে তাকিয়ে।
দুচোখ আমার স্বপ্ন দেখেনি কতদিন,
তবু দেখি গাছে নতুন মুকুল ধরে,
আর শুকনোটা ঝরে যায়।
আমার দু-হাতে সমুদ্রের নোনা জল এনে দিতে পারো?
রাস্তার গড়িয়ে চলে কাগজের ঠোঙা, হওয়ার টানে।
ফুল ফোটে আর ঝরে যায়, পড়ে না দেবতার পায়ে।
ঘড়ির কাঁটা ছাড়া সবই থেমেছে, সময়ের পায়ে বেড়ি।
সাগরের ঢেউ ছুঁয়েও দেখিনি কতদিন,
তবু দেখি রোজ মৌমাছি ফুলে বসে,
আর মধু খেয়ে উড়ে যায়।
আমায় একটু বাঁশি বাজিয়ে শোনাতে পারো?
একঘরে শুধু আমি আর আমার প্রবৃত্তি, কেউ নেই পাশে।
জগৎ আঁকি চার দেওয়ালের ক্যানভাসে, সাদা-কালো।
ইচ্ছে পাখিরা উড়ে যেতে চায় আকাশে, খাঁচায় বন্দী।
পাহাড়িয়া বাঁশি সুরেতে বাজেনি কতদিন,
তবু দেখি রোজ সোনালী সূর্য ওঠে
আর লাল হয়ে ডুবে যায়।






হাওয়ারা কথা বলে
                    রাজু মণ্ডল

শরতের নীলাকাশে যখন বলাকারা ঘরে ফেরার টানে,
ঠিক তখনি হাওয়ারা কথা বলে, আপন মনে দুলে দুলে।
তাদের আলাপন সবুজ ঘাসের সাথে কাশফুলের আর,
ভোরের শিউলি ফুলের মিষ্টি মাতাল করা গন্ধে।
রাঙা পথের দু'ধারে দুর্বার সমাগম, মাথায় শিশির বিন্দু তাদের,
কুয়াশা ভেজা সূর্যের আলোকে সেই বাতাস যেন লুকোচুরি খেলেছে।
সাদা মেঘের ভেলা ভাসিয়ে এনেছে কোন দূর দেশ থেকে আপন মনে,
যেন আগমনির আগমন বার্তা পৌঁছে দিয়েছে সবার দ্বারে দ্বারে।
এখনো হাওয়ারা কথা বলে আনমনা একলা দ্বিপ্রহরে ,
যেখানে রাশিরাশি কাশফুল হাওয়ার সাথে মিশে।
সবুজ ধানের শিষেরা উন্মত্ত হয়ে উঠেছে তারই আবেশে ,
এই বাতাসেই ঢাকিদের ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসে কানে,
প্রকৃতির বুকে জেগেছে সবুজের ঢেউ, হাওয়ারা কথা বলে।






ছুটে চলা
            হর্ষময় মন্ডল

চঞ্চল ত্রস্ত হরিণীর মতো মন নিয়ে
এক অস্থিরতায় ছুটে চলি।
নিজের কোন শাসন মানে না,
ব্ড্ড ভুল হয় ,ভুল হয়
কেবল মনে হয় একটা বোধ
কাজ করে চলেছে সর্বক্ষণ।
সম্পূর্ণ হয় না কোন কাজ
ইষ্টিকুটুম পাখির মতো
কিছুক্ষনের জন্য থাকি
আবার উড়ে চলি নতুনের সন্ধানে।
এভাবেই সব কিছু পণ্ড হয়ে,
নষ্ট হয় চাঁদ,নষ্ট হয় সূর্য।
কেবল পেলব মেলে দেখি
আর বোধের পর বোধ এসে ভিড় করে
নিরানন্দে ছুটে চলি সবকিছু অতিক্রম করে।







ও চাঁদ
         উমর ফারুক

হে স্নিগ্ধ আলোর জ্যোতি   
রুপের নহর বহে
কে আছে রুপসি বল
ধরায় তোমার চেয়ে।

মুক্তা সদৃশ্য রুপ খানি
আকাশ দিল টিপ
গান ঘুম পাড়ানি
ঘুম না এলে মা বলে  
মুছে যায় আত্মগ্লানি। 
ও চাঁদ!
শুনতে কি তুমি পাও
একটু হাত বাড়াও 
তোমার হাতে হাত রাখি
ভূধরের দৃশ্য গুলো আঁকি 
তোমার চোখের করূণ দশা 
তোমার রূপে যে তারা খসা,
উল্টো পিঠে কে চেনো কি?





         রক্ত
                   সজল বন্দ্যোপাধ্যায়

মনটা একটুও ভালো নেই
চাপ চাপ রক্ত ছড়িয়ে চারপাশে !
রক্ত মানুষকে হাসায়
রক্ত মানুষকে কাঁদায়
আবার রক্ত ছড়িয়ে পড়ে বংশ পরম্পরায় ।
এই রক্ত কখনো ছড়িয়ে পড়ে ঘাসে
কখনো বা গিয়ে মেশে নদীতে
নদী বক্ষ ভরে যায় লাল রক্তধারায় ।
মনটা একটুও ভালো নেই
ভেবেছিলাম এই রক্ত ছুঁয়ে শপথ নেবো
তা ছড়িয়ে দেবো সমাজে
বিভেদহীন সমাজ আনবো ধরায় ।
কিন্তু আজ , সেই রক্তে মাখামাখি আমি
সারা গায়ের রক্ত ধুয়ে নিই রক্ত নদীর ধারায়
আর মুখ লুকোই চিলেকোঠার নিকষ কালো অন্ধকারে !






                বিভাগ-কবিতা-3                  

নজরুল
       অমৃকা মজুমদার

জার্মান সম্রাট কাইজার
     জ্বালিয়েছে যে দাবানল,
সেই আগুনে দগ্ধ হয়েছারখার
   দাঁড়ালে হাতে নিয়ে মশাল।
হিন্দোল আনলে ধূমকেতুর
                                 ন্যায়।
যুবসমাজকে দিলে হুশিয়ারী,
সর্বহারার পাশে গাইলে গান,
           বাজালে অগ্নিবীণা।।
অন্তজেদের জন্য লিখলে
                    সর্বহারার সুর।
কাণ্ডারীদের করলে হুশিয়ার।
যাঁদের জন্য ধরেছিলে লেখনী
               করেছিলে  বিদ্রোহ,
দিলো তারাই বাহবা 'কাফির'
                                পদবী।
'আমার কৈফিয়ত ' কি
          শুনবে ইসলামী?
ঐক্যের কবি গাইলে---
'অরুণ প্রাতের তরুণদলকে'
                     নিয়ে চললে ।
গান্ধীকে করলে মাতোয়ারা,
         ঘুরিয়ে সাধের চরকা।
সারথি হয়ে সম্পাদকীয়,
হানলে আঘাত গোরার শিরে,
             লাঙ্গল হল ছারখার।
পড়েছিলে রোষানলে
            বরণ করলে কারা,
ভাঙলে ঐ লৌহকপাট,
          করলে হান্গার স্ট্রাইক।
হে মহিরুহ, নির্ভীক ভৃগু
  যে অর্ধেক আকাশ
     করে আছো স্ফীত।।
      





যাযাবর
         শর্মিষ্ঠা সাহা

এই শহর থমকে গেছে এখন
সমস্ত খোলা করিডোরে বদ্ধ হাওয়ার আস্তিন,
বৃষ্টির জলে নির্বাক চলচিত্রের
বাক ফেরাতে অপরাগ পার্চমেন্ট,
শুধু, কালি শেষ হয়ে আসা কলমে
ঘষে ঘষে কাব্য বুনোনের চেষ্টায়,কাবার রাত্রিদিন।
শহুরে ছাদের ফুলগুলো
ভেসে গেলো যেই প্লাবনে,
আর, যে ধূমকেতুর পতন হয়েছিল
অসংখ্য গ্রহ উপগ্রহদের গুঞ্জনে,
এক বৃহৎ মিথুন রাশি জন্মেছিল
ওদের মেলবন্ধনে ।
আমি জ্যোতিষী নই, কবিও নই,
আমি সংগ্রাহক ।
পার্চমেন্ট চোষা গলন্ত হৃৎপিন্ড
আর প্লাবনের পলল পাথর ,
ইশারার ঝুলি ভরে থাক।
আর প্রাঞ্জল অনেতিবাচক ভিড়ের প্রত্যাশায়
                 ……………ইতি আমি অস্থাবর ।।






 
মুখোশ নাকি জীবন!
                 অপূর্ব হালদার

  জীবনে  হাসিমুখের  মুখোশ পড়ে চলে যায় দিন
মনে হয় সকলের  মাঝে  তখন আমি একটি যন্ত্র পুতুল
রাস্তায় চলি - কথা বলি - হাসি — মনে হয় তখন-----
সবই যেন মুখোশের  আড়ালে!
দিন শেষে  মনে হয় বড্ড একাকী এই জীবন—
কেননা আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেখি —
অচেনা এক আমি'কে!
দিনের  আলোয় মুখোশের আড়ালে  এ জীবন
আবার রাতের অন্ধকারে  এ জীবন'ই  দমবন্ধ ঘরে মুখোশহীন, একা —
জীবন  পথে চলি আমরা — মুখোশ পড়ে,
চলি আবার  লোক দেখানো হাসি নিয়ে....
দিন শেষে এসে দেখি - পরের জন্য করেছি  নিজেকে ক্ষত বেশি!
জীবন পথে— দেখি আাবার,
মুখোশ পড়ে  পরের থেকে আপনজন আঘাত করে বেশি।
দিনের আলোয় মুখোশ পড়ে, ফিরি  আবার ঘরে - রাতের অন্ধকারে 
ঘরে তখন মুখোশহীন আমি প্রশ্ন করে আমায় —
  সতেজ অনুভূতিরা কোথায়?
উত্তরহীন তায় আমি ছটফট করি,
দমবন্ধ ঘরে   যখন আমি একা —
মুখোশ পড়া আমি তখন বলে যায় আবার—
জীবন পথে  অপেক্ষারত আরেকটা মুখোশ দিন!
দমবন্ধ ঘরে আমি  বলতে থাকি শুধু —
জীবন নাকি মুখোশ!
       






  মেঘ মুক্তি  
                পিনাকী মুখার্জী
           
                কান্না চাপা রাতের খামে
             দিনের আলোয় হাসির ভ্রমে  !!
                 অশ্রু  জলে  রূদ্ধ  জীবন
                 ভাসান  জমা কান্না জমে   !!
            বাদল বাতাস মেঘলা আকাশ
            আলোর পথে কালোর বারণ !!
            পেরোলে তবেই আষাঢ় শ্রাবণ
               ঝলমলে রোদ  শারদ বরণ  !!    
             জমাট বাঁধা মেঘ গুলো তাই
                ঝরে পড়ুক অশ্রু হয়ে  !!
              বাদল কাটা রোদের ঝলক
               ঝরুক হাসির মুক্তো হয়ে  !!
                কান্নাঘরের কান্না গুলো
               হাসির হাওয়ায় বাষ্প হয়ে  ,
               জমানো ব্যাথা গোপন গাথা
              বেরিয়ে আসুক কথা হয়ে  !!
   






সততাই পরিচয়
                  তাপস বর্মন

চলতে হবে সত্য পথে
  বেঁধে বুকে বল,
সত্যেই জয় হবেই হবে
  মুছবে আঁখি জল।
ঝড় ঝঞ্ঝা যতই আসুক
    সত্য পথে থাকলে,
হিংসা ঘৃণা কেউ করেনা
   সহায় পাবো ডাকলে।
একটিবার অসত্য যদি
  চেপে পড়ে মাথে,
সবাই হেলায় ছুঁড়ে দেবে
  কেউ রবেনা সাথে।
ভালো মন্দ দুটোই সত্য
   মেনে নিতে হয়
সততা একজন মানুষের
    আসল পরিচয়।
      





      অক্ষর   
         জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

রিমঝিম বৃষ্টিতে অক্ষর ভিজে যায়
ঝমঝম বৃষ্টিতে অক্ষর মুছে যায়
অক্ষরের ভেতরে যত শব্দ সম্ভাবনা
অন্তর্লীন অজাত কলিকার কান্নায়।
অক্ষর মানে কি শুধু শব্দের উৎস
স্বপ্নরঙে আঁকা কিছু ছবি ?
কৃষিমজুরের চোখে ঢেউতোলা জমি
নিজের মাটি অথবা চটকল শ্রমিকের স্বঘর ?
অক্ষর মানে কি তবে সাজানো আশ্বাস !
ক্ষমতার অমোঘ নির্মাণ পথভোলানো রং
শুধুই ছলনা জাদু ভীরুজন আশা
ক্ষরণহীন ক্ষরণহীন.......






       গন্তব্য
              মুজিবর রহমান মল্লিক

যেদিকে তাকাই তোমার নিশান,
তোমার পথের হয়েছি আগুয়ান।
গুটি গুটি পায়ে হাটি তোমার গন্তব্য,
তিল তিল করে গড়ো কুঠির,
                           শুধুই তোমার কর্তব্য।
তুমি এক বিপ্লব, তোমার উপসনা,
                                        তুমি মধুময়।
তুমি এক পদক্ষেপ, তোমার আন্দোলন,
                                         তুমি সর্বময়।
তোমার নয়ন, তোমার চয়ন,
                      তোমার দেখি স্বপ্ন।
তোমার ভজনা, তোমার ভাবনা,
                       তোমার কল্পনায় মগ্ন।






ইচ্ছেকথা
       রঞ্জন চৌধুরী

রাত্রি এগিয়ে চলেছে প্রভাতের দিকে
যাওয়ার পথে ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে সে
                                  চাঁদের মিহিকণা
আর তাতে স্নানরত যত ঘর-বাড়ি,
বৃক্ষ, পশু, পাখি এবং এমনকী
শেষ রাতে ফেরা কীছু বেহেড মাতাল হাওয়া....
রাত্রি ——
আমি তোমার এই বিদায় বেলায়
আমার একান্তে সংগৃহীত রক্তের ভেতর
যা কীছু চলাচল তোমায় দিচ্ছি।
দিচ্ছি রাতের সব না-বোঝা অচেনা কথা,
বিনিদ্র নক্ষত্রের স্তুপ এবং
জেগে থাকা প্রহরীর ভেতর ও বাহির....
কেবল দিচ্ছিনা
অলেখা পংক্তিতে আমার কুড়িয়ে পাওয়া সুখ
আর এই যে তোমার চলে যাওয়ার পথে
আমার এই নিজেকে পুন: নগ্ন করে দেখা।

                         







      জন্ম
          বাপন দেব লাড়ু 

ভূমিষ্ঠ হবার পর,
অনেকবার জন্মেছি আমি;
শ্রান্ত প্রবাহে নদী চিনিয়েছে পথ।
রোদ মাখা মাটির বুকে লেগে প্রসব যন্ত্রনার চিহ্ন,
পারম্পর্য রক্ষার্থে নীরব সবাই,
কোনো কথা বার্তা নয়,
চার কুঠরীতে লুকিয়ে আছে
           বিভাজিত প্রাণ।
ভিডিও গেমের মতো
যদি বদলে দেওয়া যেত প্রান
তবে বেঁচে থাকতো আরও কত কত প্রাণ।।












৮টি মন্তব্য:

  1. শুভ সংস্কৃতি মূলক প্রচেষ্টা

    উত্তরমুছুন
  2. অনেক ধন্যবাদ🙏💕
    এগিয়ে চলুক উপকন্ঠ।
    শুভেচ্ছা রইলো।

    আর লেখাটা প্রকাশ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  3. খুব সুন্দর । উপকন্ঠর জন্য নিরন্তর শুভকামনা

    উত্তরমুছুন
  4. খুব সুন্দর । উপকন্ঠর জন্য নিরন্তর শুভকামনা

    উত্তরমুছুন
  5. উপকেন্ঠ শারদ সংখ্যা একটি উল্খেযোগ্য সংকলন হয়েছে। বিষয়-বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতি
    মনে রাখার মতো।সম্পাদক মহাশয় ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাই ও এই পত্রিকার আরো প্রসার কামনা করি।

    উত্তরমুছুন
  6. শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।। উপকন্ঠ এগিয়ে চলুক। খুব সুন্দর একটি সংকলন। সকলের লেখাই সুন্দর।।

    উত্তরমুছুন
  7. শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।। উপকন্ঠ এগিয়ে চলুক। খুব সুন্দর একটি সংকলন। সকলের লেখাই সুন্দর।।

    উত্তরমুছুন