বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 29/07/2020

         "উপকণ্ঠ 29 জুলাই সংখ্যা "
          "উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
                (ওয়েব ম্যাগাজিন)

  প্রকাশ কাল:-29/07/2020,বুধবার
               সময় :- সকাল 11 টা


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত

মুঠোফোন:- 9593043577
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷

উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে
Click Here

উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে
Click Here

👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇





রোমান্টিক গল্প

জানলা ভাঙা বউ
                       পার্থ প্রতিম হালদার


                    তখন সকাল আট টা। ছোট স্যামসাং এর মোবাইল টা বেজে চলেছে। আর অন্য একটি এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে রমজান ঘুম দিচ্ছে । রমজানের আম্মি এসে বললেন, 'কখন থেকে তোর ফোন বেজে চলেছে শুনতে পাসনি।' তাড়াতাড়ি করে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলে কলেজ জীবনের পুরোনো বন্ধু ঘন্টু কয়েক মাস পর ফোন করছে। ফোন রিসিভ করে বললে, 'কি রে ভাই এত সকালে তোর আবার কি হলো।' 'আরে আজকের আনন্দবাজার পত্রিকা দেখিস নি  ?' সকাল সকাল ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে পেপার দেখার কথা বলতে রমজানের মাথা গরম হয়ে গেল। তবুও রাগ সামলে নিয়ে ঘন্টু কে বললে, 'কেন রে ভাই পেপার তে 'পাত্রী চাই' বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছিস নাকি।'  'আরে না , আমার পাত্রী নয়, তোর বউকে পেপার তে দেখলাম। দেখলাম নাগিন বৌদি রাস্তায় বসে ফল বিক্রি করছে।' সকাল সকাল নাগিনের নাম শুনে রেগে গিয়ে রমজান বললে, 'এই তুই ফোন রাখ। আমার ভালো লাগছে না । আর ওর নাম আমার কাছে কখনও উচ্চারণ করবি না।' বলে রমজান ফোন কেটে দিলে।
                 যদিও নাম টা নাগিন নয় - নার্গিস খাতুন। ঘন্টু মজা করে প্রথম থেকেই নাগিন বলেই ডাকে। কারণ প্রথম যখন নার্গিস কে দুই বন্ধু দেখেছিল তখন তার রাগ ভাবভঙ্গি দেখে ঘন্টু নার্গিস নাম পাল্টে নাগিন নাম দিয়েছিল। যাইহোক এই নাগিনের কথা ভাবতে ভাবতে রমজান মনে মনে বললে, ' ঠিক হয়েছে। এখানে সুখে থাকতে তো ভুতে ধরেছিল। এবার রোদ্দুরের মধ্যে , তার ওপর লকডাউনের সময়ে রাস্তায় বসে বসে ফল বিক্রি করতে খুব ভালো লাগছে বুঝি ! আসলে কথায় আছে না কুকুরের পেটে ঘি ভাত সহ্য হয় না।' কিছুক্ষণ এমন রেগে থেকে তারপরে রাগ সামলে নিয়ে নেট টা অন করে রমজান আনন্দ বাজার পত্রিকা টা দেখলে। অনেক দিন পর নার্গিস কে দেখে তার চোখে জল চলে আসলো। তার দিকে তাকিয়ে ভাবলে মেয়েটা আগের থেকে একটু বেশি রোগা হয়ে গেছে । সময় মতো এখন আর বুঝি খাওয়া দাওয়া করে না । এখনও নার্গিসের নাকে তার দেওয়া সেই নথ টা আছে। নথ টা পরে থাকলে তাকে খুব সুন্দর লাগে। আরো দেখলে কানের কাছে ঝুলে থাকা কয়েক টা চুল সারা গাল ময় তে ঘামে ভিজে গিয়ে চেপে বসে আছে । আগে যখন বাড়িতে একটু আধটু কাজ করতো তখন তার মুখের ওপর নরম অবাধ্য চুল গুলো চেপে এইভাবে বসে যেতো । তখন নাগিন কে অসাধারণ সুন্দর লাগতো । আর সেই সময় মিষ্টি ঘামের মিষ্টি গন্ধ তার সারা শরীর থেকে বের হতো। এমন রোমান্টিক ঘামের গন্ধে রমজান সেইসময় তাকে একটু বেশি বেশি আদর করতো। রমজানের খুব মনে পড়ে সেসব কথা । আর মনে মনে বললে , 'খোঁপা টাও সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার সময় পায় নি। আগে তো কি সুন্দর করে কৃত্রিম ফুল , কাঁটা, ক্লিপ দিয়ে খোঁপা টাকে সাজিয়ে রেখে কয়েক গাছি অবাধ্য চুল কপালে ঝুলিয়ে রাখতো । তখন তাকে কি অসাধারণই না লাগতো। সেই চুল বারবার তার চোখের ওপর এসে পড়তো আর সে বারবার কানের কাছে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করতো। কিন্তু অবাধ্য দুষ্টু চুল গুলো আবার পড়ে যেত।' এই দৃশ্য গুলো ভাবতে রমজানের খুব ভালো লাগে, তবে তার খুব কষ্টও হয়, তবুও সে সারাক্ষণ এসব ভাবতে থাকে।
             ঘন্টু বোঝে রমজানের মনের অবস্থা টা। তাই মুখের ওপরে ফোন কেটে দিলেও সে রাগ করেনি । তাছাড়া কলেজ লাইফের কয়েক জন ভালো বন্ধুর মধ্যে অর্থাৎ বরিষণ, সিঞ্চন আর রমজানের মধ্যে -   রমজান কে সে একটু বেশি ভালোবাসে। কলেজ লাইফের বছর গুলো তো একই রুম তে তারা দুজনেই  ছিল - বেলঘড়িয়া তে ঘর ভাড়া নিয়ে। যখন রবীন্দ্র ভারতী তে তারা পড়তো তখন ক্যান্টিনে গিয়ে একই প্লেটে চাউমিন নিয়ে দুজনে খেয়েছে। বন্ধু তো বন্ধুই - সে মুসলিম হোক বা হিন্দু। ঘন্টু এমন একটা ধারণা মনের মধ্যে সবসময় পোষণ করতো। তাছাড়া একই মেস তে তারা দুই বছর একসঙ্গে কাটিয়েছে। মেসের মাসি না আসলে কখনও ঘন্টু রান্না করেছে, কখনও বা রমজান রান্না করেছে। ভাত খেতে বসে হাড় মাংস রমজান কে বেশি করে দিয়ে দিতো , রমজান হাড় মাংস খেতে ভালোবাসে বলে। আবার ঘন্টু মাছের ওপরের ছাল খেতে বেশি ভালোবাসতো বলে রমজান তার ভাগের মাছ থেকে মাছের ওপরের ছাল টা ঘন্টু কে তুলে দিতো। এমনই ছিল তাদের দুজনের সম্পর্ক। সব থেকে বড় কথা ধর্ম নিয়ে তাদের মধ্যে কখনও সমস্যা সৃষ্টি হয় নি। তার কারণ গোঁড়ামি জিনিস টা তাদের মধ্যে ছিল না। মনে মনে ঘন্টু ভগবান কে মানলেও ওই ভাবে কখনও মন্দিরে গিয়ে পুজো দিতো না , লোক দেখিয়ে ভগবান কে ডাকতো না বা মূর্তি পুজায় বিশ্বাস করতো না । কিন্তু রমজানের পরিবার থেকে তার আম্মি আব্বা রমজান কে নামাজ পড়া, রোজা করার ব্যাপারে বারবার চাপ দিয়েছিলেন , নানান নীতি কথাও শুনিয়েছিলেন । তাতেও রমজান শোনেনি। এমনকি তার সহপাঠী অনেক মুসলিম বন্ধু এসব শুনে রমজান কে অনেক অপমান ও করতো। তবে ঘন্টুর এমন নাস্তিক প্রকৃতির আচরণের কারণে ঘন্টুর পরিবার থেকে কোনপ্রকার কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় নি।
               যাইহোক কলেজে ভর্তি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে এই রমজান তার মেসের পাশে মেঘনা বলে একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছিল । যদিও মেয়েটি তার থেকে অনেক ছোট - সে ছিলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী । তবুও লাল ফিতে দিয়ে দুপাশে বিনুনি করে , কালো জুতো পরে আর সবুজ রঙের আঁচলের সাদা শাড়ি পরে যখন সে স্কুলে যেত তখন মেয়েটি কে রমজানের অসাধারণ লাগতো। এমনকি কিছুদিন পর থেকে মেয়ে টিও মাঝে মধ্যে রমজানের দিকে একটু আধটু ঘুরে ফিরে তাকাতো, কখনও বা তাকে দেখে সুন্দর লাল ঠোঁটের কোণে হাসি দিয়ে চলে যেত। এমন করে কিছু মাস চলার পর রমজান একদিন মেয়ে টি কে প্রোপোজ করে ফেলে । সেদিন কে যদিও মেয়ে টি রমজান কে কিছু বলেনি। কিন্তু তারপর থেকে মেয়ে টিকে আর স্কুলে যেতে দেখা যায় নি । এমন করে চোদ্দ পনেরো দিন কেটে গেল। তারপর একদিন মেয়ে টি কে দেখা গেল - যদিও স্কুল ড্রেসে নয়, কালো রঙের ফতুয়া তে আর মুখে হিজাব লাগিয়ে। রমজান মনে মনে ভাবলে শাড়ি তেই তাকে বেশি সুন্দর ও পবিত্র বলে মনে হয়, তার প্রকৃত সৌন্দর্য শাড়ি তেই বিচ্ছুরিত হয়। যদিও তার মানসিকতা এমন হওয়ার পেছনে কারণ ও ছিল। তার মা কিন্তু হিন্দু বাড়ির মেয়ে অর্থাৎ তার বাবা হিন্দু বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন । তবে তার মা মুসলিম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী রোজা করেন , বোরখা পরেন , হাতে চুড়ি পরেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই । কিন্তু মন্দিরে শঙ্খ ঘন্টার ধ্বনি শুনতে পেলে রমজানের মায়ের হৃদয় টা কেঁপে উঠতো। এমন সময় মেয়েটি তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলে গেলে , 'আমি বেলঘড়িয়া স্টেশনে ফ্লাই ওভারের নীচে দাঁড়িয়ে থাকবো তুমি একটু পরে এসো। তবে আমার সঙ্গে সঙ্গে নয়। একটু পরে বেরিও।'
     এমন করে কিছুদিন ঘোরাঘুরি , শপিং করা, সিনেমা হলে ঢোকা, পার্কে যাওয়া - এইভাবে কিছু টাকা উড়িয়ে দিয়ে মেয়ে টি বললে আমি আর দেখা করতে পারবো না। মেঘনার এমন আচরণ দেখে রমজান তো অবাক। রমজানের কাঁদো কাঁদো ভাব দেখে মেঘনা বললে , 'তুমি কষ্ট পাবে তাই তোমাকে কিছু বলতে পারি নি। আমার একটা বয়ফ্রেন্ড আছে। যার নাম আকাশ। সে আমাকে খুব ভালোবাসে । আমিও তাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তোমার কথা তাকে বলতে সে আমাকে সন্দেহ করা শুরু করেছে। তাই প্লিজ তুমি আর আমার সাথে কথা বোলো না। তুমি ভালো থেকো। আর এই নাও তোমার থেকে যত টাকা খরচ করেছিলাম' বলে জোর করে রমজানের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে মেঘনা বেরিয়ে গেলে।
          যখন মেঘনার সঙ্গে দেখা হতো , কথা হতো তখন কিন্তু রমজান কখনও বুঝতে পারে নি যে বিচ্ছেদের এত কষ্ট এত যন্ত্রণা থাকে। যাকে মানুষ ভালোবাসে তাকে একটু দেখতে না পেলে, তার কথা  শুনতে না পেলে কত যে যন্ত্রনা হয় তা যার হয় সেই বোঝে। যদিও রমজান কে এমন করে কষ্ট পেতে দেখে ঘন্টু একদিন রমজান কে বললে, 'একটা খুব ভালো জায়গা তে নিয়ে যাবো - যাবি। দেখবি তোর মন একদম ঠিক হয়ে যাবে।' রমজান বললে কোথাও যেতে তার ভালো লাগছে না। তবুও ঘন্টু একদিন জোর করে তাকে বেলুড় মঠে নিয়ে গেলে। সেখানে গিয়ে বললে তুই বিবেকানন্দের মূর্তির দিকে তাকিয়ে এক ঘণ্টা চুপ করে বসে থাক। তোকে আর কিছু করতে হবে না। সত্যি যেমন কথা তেমন ফল। এক ঘণ্টা পরে রমজান বললে, 'এত শান্তি এত সুখ আমি কখনও পাই নি। এই ধ্যানমগ্ন অবস্থা তে যতটা শান্তি পেয়েছি।' বলে কাঁদতে কাঁদতে ঘন্টু কে জড়িয়ে ধরলে।
           কয়েক মাস হলো, রমজান এখন মেঘনার কথা প্রায় ভুলেই গেছে। আর নেই সেই যন্ত্রণা, নেই সেই বিরহ বেদনা। আগের মতো সে আর তাই মন মরা হয়ে বসেও থাকে না। এখন সে ইউনিভার্সিটিও যায় নিয়মিত, কখনও ঘন্টুর সঙ্গে মার্কেটিং করতেও বের হয়। এমন ই একদিন তারা দুজনে সন্ধ্যার দিকে শিয়ালদহ তে গেছিল জিন্স প্যান্ট কিনবে বলে। একটু পরে কোনো একটা মহিলার দিকে তাকিয়ে রমজান বললে , 'রাতের শিয়ালদহ স্টেশন এক আলাদা চেহারা নেয় - রাতের রজনীগন্ধার ছড়াছড়ি হয়ে যায়।' ঘন্টু মহিলার দিকে তাকাতে দেখতে পেলে আরও সাত থেকে আট জন মহিলা সুন্দর করে সেজে, ঠোঁট রাঙিয়ে, এলোচুলে , বুক থেকে কাপড় টা একটু নামিয়ে , সুন্দর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। তারা রাস্তার লোকেদের , প্লাটফর্মের লোকেদের দিকে তাকিয়ে নানারকম ঈশারা করছে। যেন তারা লোক গুলোর সাথে প্রেম করতে চাইছে বা লোক দের কে নিয়ে কোথাও যেতে চাইছে। এটা দেখে ঘন্টুর মনে পড়ে গেল দু - তিন মাস আগের কথা। যেদিন মাম্পি , দেখা করার জন্য ঘন্টু কে শিয়ালদহ জগৎ সিনেমা হলের কাছে দাঁড়াতে বলেছিলো। সেদিন প্রায় ত্রিশ মিনিট জগৎ সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে সে নানা মানুষের ভিড়ে মাম্পির মুখ টা খুঁজছিলো।কিন্তু তাকে এমন করে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে , পঁয়ত্রিশ - চল্লিশ বছর বয়সের মোটা ফর্সা এক মহিলা তার কাছে এসে কাজল পরা চোখে সিনেমা হলের দিকে ঈশারা করে ঘন্টু কে বললে, ' যাবে নাকি।' ঘন্টু তার কথা ও ঈশারা বুঝতে না পেরে বললে
'কোথায়  ? ' সেই মহিলা টি তখন বললে, ' ন্যাকা যেন কিছু জানে না। চলো সিনেমা হলে  বা হোটেলে। অন্য কোন সমস্যা নেই। সব পারমিশন নেওয়া আছে।' এবার ঘন্টু বুঝতে পেরে দুরে সরে দাঁড়ালে। একটু পরে তার জীবনের মানসী প্রতিমা, সৌন্দর্যের প্রতিমা মাম্পি চোখে মুখে হাসি নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালে। মাম্পি কে দেখে আনন্দে তার বুক ভরে গেল। মাম্পির সুন্দর আইলিনার দেওয়া কাজল পরা চোখের দিকে তাকিয়ে  ঘন্টু কাঁদো কাঁদো ভাবে বললে , 'এত দেরি হলো কেনো। অনেক ক্ষণ তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।' তা শুনে মাম্পি ঘন্টুর চোখের দিকে তাকিয়ে শুধু বললে, ' আমার পাগল টা।' তারপর একই ছাতার তলায় দুজনে হাতে হাত দিয়ে মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে কলেজ স্ট্রীটের দিকে এগিয়ে গেলে। যেতে যেতে ঘন্টু মাম্পি কে বললে, ' জানো মাম্পি , জগৎ সিনেমা হলের সামনে একজন মহিলা এসে কি সব উল্টোপাল্টা ঈশারা করে আমাকে কোথাও যাওয়ার জন্য বলছিলো।' তা শুনে ঘন্টুর দিকে তাকিয়ে মাম্পি বললে , 'কখনও ওদের সঙ্গে  কথা বলবে না। ওরা খুব বাজে।' সেই কথাটা আজ আবার ঘন্টুর মনে পড়ে গেল। এমন সময় ঘন্টু দেখলে , পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক সুন্দরী মহিলার দিকে রমজান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রমজান কে এমন করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মহিলা টি বললে, ' শুধু তাকিয়ে থাকলে হবে ?' বলে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা রাতের রজনীগন্ধার দল সবাই মিলে হি হি করে হাসতে লাগলে। অন্য একজন মহিলা তখন বললে, ' আরে এ বেচারা তো তোর প্রেমে পড়ে গেছে রে নার্গিস । দেখ বেচারার চোখ মুখ কেমন ছলছল করছে । আঁচল দিয়ে বয়ফ্রেন্ডের চোখ টা মুছে দে নার্গিস।' বলে আবার তারা হাসতে আরম্ভ করলে। নার্গিস তখন রমজান কে বললে ,' এই দূর হ এখান থেকে। প্রেম মারাতে এসছে। সময় টা শালা নষ্ট করে দিলো। অন্য জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে এতক্ষণে অনেক গুলো কাস্টমার পাওয়া যেতো।' বলে রাগে ফোঁস ফাঁস করতে করতে ভিড়ের মধ্যে চলে গেলে অন্য কোনো শিকার ধরার উদ্দ্যেশ্যে। ঘন্টু তখন রমজান কে জোর করে টেনে নিয়ে গিয়ে ট্রেনে তুলে বললে, ' তুই কি পাগল হয়ে গেছিস। শেষ মেস রাতের রজনীগন্ধা - নাগিন বৌদি । দাঁড়া তোর আব্বা কে ফোন করে বলছি।' রমজান বোঝে ঘন্টু তার আব্বা কে কখনই ফোন করে বলবে না। তবুও কিছুক্ষণ সে চুপচাপ করে বসে থাকলে। একটু পরে ট্রেন ছেড়ে দিলো।
             দুটি স্টেশনের পর বেলঘড়িয়া স্টেশন। সময় লাগে সতেরো - আঠারো মিনিট । কিন্তু এই সতেরো - আঠারো মিনিটে কত কথা নার্গিস কে নিয়ে সে যে ভেবে নিলে তার নেই ঠিক । নার্গিসের দাঁড়ানোর ভঙ্গি, চোখের চাওনি, শাড়ি পরার ধরণ, হাতের মেহেন্দি, রঙিন ঠোঁট, ফুল হাতা নেটের ব্লাউজ, ছোট ছোট আয়না বসানো ঝলমলে শাড়ি তার মনকে যেন পাগল করে দিয়েছে। পাগল করে দিয়েছে তার নাকের বাঁকা নথ , কপালের ওপর পড়ে থাকা এক গুচ্ছ চুল আর কালো গভীর রঙিন চোখের ঈশারা। এমন টি ভাবতে ভাবতে ঘন্টু কে জড়িয়ে ধরে রমজান বললে, 'জানিস ওর রাগ টাও কি সুন্দর লাগছিলো, ভালো লাগছিলো ওর মুখের অশ্লীল ভাষা।' ঘন্টু হাসতে হাসতে বললে, 'যেভাবে নাগিনীর মতো বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছিল, আমি তো ভেবেছিলাম তোকে এবার ছোবল মারলো বলে। ভয়ে তোকে টেনে নিয়ে চলে আসলাম।' ঘন্টুর মুখে এ কথা শুনে রমজান বললে, 'তুই ঠিক বলেছিস, ওর নাকের নিঃশ্বাস টা খুব মিষ্টি, কি সুন্দর মিষ্টি ওর গায়ের গন্ধ। আমি ওকে যেমন করে হোক পটিয়ে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে যাবো।' ঘন্টু এবার রেগে গিয়ে বললে, ' তুই কি পাগল হয়ে গেছিস, রেসের ঘোড়া ধরতে যাস না।' ট্রেন তখন দমদম প্লাটফর্মে ঢুকেছে। সঙ্গে সঙ্গে রমজান নেমে গেলে। নেমে গিয়ে বললে -'তুই মেসে যা, আমি কাল সকালে ফিরবো। তুই যাই বলিস না কেন আমি ওই নাগিনী কেই ভালোবাসবো, আমি ওকে পটাবো । পাগলের মতো ওর পেছনে পড়ে থাকবো। দেখি কেমন করে আমাকে অবহেলা করে ।' ঘন্টু অবাক হয়ে রমজানের দিকে তাকিয়ে থাকলে - কিছু বলতে পারলে না। ট্রেন ছেড়ে দিলো।
         এইভাবে প্রায় একমাস ধরে রমজান রেগুলার রাতে করে একা একা শিয়ালদহ স্টেশনে চলে আসে নাগিন কে একটু দূর থেকে দেখার জন্য। এমনকি কত অপমানও সহ্য করেছে। তবুও বৃষ্টি তে ভিজে ভিজে রাত জেগে নাগিন কে দূর থেকে দেখেছে। দেখেছে রাতের বেলায় রাতের রজনীগন্ধা দের শিকার ধরার দৃশ্য, তাদের জীবন যাত্রা, শুনেছে তাদের অশ্লীল মুখের ভাষা। তবুও নাগিন কে পাওয়ার আশায় দিনের পর দিন সে ছুটে গেছে। এমন ভাবে রাতে করে রেগুলার তাকে বসে থাকতে দেখে পুলিশ সন্দেহ করে তাকে হাজতেও কত বার ঢুকিয়েছে আবার ঘন্টু গিয়ে টাকা পয়সা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছে। তা সত্ত্বেও সে আবার নাগিন কে দেখার জন্য মেস থেকে বেরিয়ে পড়েছে। রোজ রোজ তার এমন টা পাগলামো দেখে , নাগিন একদিন রমজানের কাছে এসে অশ্রু নয়নে বলেছে, 'কেন তুমি নিজের জীবন টা শেষ করছো এইভাবে। আমার চোখের মায়ায় এমন মুগ্ধ হয়ে যেও না, পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। যদি টাকা পয়সার সমস্যা থাকে তো বলো।'এ কথা শুনে রমজান কেঁদে ফেললে। ভ্যা ভ্যা করে তার কান্না শুনে পুলিশ চলে আসলেন। পুলিশ এসে রমজান কে বললেন ,'তুই আবার এসেছিস। এতবার তোকে হাজতে ঢুকিয়েও শোধরাস নি। এবার শ্লীলতাহানির মামলায় ফাঁসিয়ে তোকে জেলে ঢোকাবো না কি রে ?' এ কথা শুনে এক ফোঁটা চোখের জল ফেলে রাগে ফোঁস করে উঠে পুলিশ টাকে নাগিন বললে, 'এই যে ভদ্রলোক বাবু , কাল রাতে যখন আমার সঙ্গে কাটিয়েছিলেন সে কথা মনে নেই। কয়েক দিন পর পর আমাদের কাছে নারী মাংসের বাজারদর টা জানতে আসেন তারবেলা ? একের পর এক নতুন নতুন মেয়েদের কে ভোগ করে চলেন - তারবেলা ?'
নাগিনের এমন চীৎকারে অপমানিত হওয়ার ভয়ে আস্তে আস্তে কিছু না বলে পুলিশ টা অন্য দিকে চলে গেলেন। একটু পরে নাগিনীর অশ্রু সজল নয়নের দিকে তাকিয়ে রমজান বললে, ' আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। যাবে আমার সঙ্গে মুর্শিদাবাদে।' এ কথা শুনে নাগিন রমজানের গালে ঠাস করে একটা চড় মারলে আর বললে, 'লজ্জা করে না তোমার । এ কথা মুখে আনতে ? একটা বাইজি মেয়ে কে চাইছো ঘরেরে বিবি বানাতে। ছিঃ ছিঃ লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসেছ দেখছি। দেখছো না কত শত পুরুষ রেগুলার রাতে আমাকে ভোগ করছে। আর তুমি কিনা সেই মেয়ে কে সামাজিক মর্যাদা দিতে চাইছো।' বলে নাগিন কেঁদে ফেললে। নাগিনের চোখের জল মুছে দেওয়ার জন্য রমজান নাগিনের মুখে হাত দিলে। সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে দিয়ে নাগিন বললে , 'তুমি আমাকে স্পর্শ করবে না। আমি যে বাইজি। আমার স্পর্শে তুমি যে অপবিত্র হয়ে যাবে। আর কখনো এখানে আসবে না। তুমি না আসলে আমি খুব ভালো থাকবো। তোমাকে দেখলে যে , আমি আমার শরীর বেচতে পারবো না। তুমি যাও, তুমি যাও আর আসবে না কখনও।' নাগিনীর এমন অনুরোধে , কান্না কাটি তে সেদিনের মতো রমজান মেসে ফিরে আসলে। কিন্তু পরের দিন আবার শিয়ালদহ তে চলে গেলে নাগিন কে দেখার জন্য। গিয়ে দেখলে নাগিনের মধ্যে আর সেই ছলনাময়ী মায়াবিনী ভাব নেই, তার শরীর ও মনে রাতের রজনীগন্ধার সেই গন্ধ নেই । প্রেমের স্পর্শে এখন সে যেন বিরহিণী কলঙ্কিনী প্রেমিকা। এই নাগিন কে দেখে রমজান তার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললে, 'তোমাকে সবসময় হাসিখুসি তে রাখবো, কখনও কষ্ট দেবো না । যাবে আমার সঙ্গে।'  নাগিন কিছু না বলে শুধু কাঁদতে লাগলে। তবে নাগিন দের গ্রুপের মাসি জানতে পারলে কিন্তু সমস্যা আছে -  যে সে দেহ ব্যাবসা বন্ধ করে দিয়ে প্রেম করা শুরু করেছে। তাই রাতের লাস্ট প্যাসেঞ্জার লালগোলা এক্সপ্রেস ধরে রমজানের সাথে নাগিন মুর্শিদাবাদ পালিয়ে গেলে।
               
মুসলিম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে করে রমজানের সাথে সে প্রায় ছয় মাস কাটালে। কিন্তু পরপর সে যেন অনুভব করলে, 'ধর্মের অনুশাসন, সংকীর্ণ গন্ডি তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। যে গন্ডি থেকে রমজানের মা কখনও বের হতে পারেন নি। হয়তো বা তিনি চাননি - অন্য কোনো ধর্মের নিয়ম নীতি কে লঙ্ঘন করতে, অপমান করতে। তাই নিজে অপমানিত হয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন।' কিন্তু সবাই তো রমজানের মায়ের মতো বোলপুরের লক্ষ্মী দাস নয় - এ তো কলকাতার পার্ক সার্কাসের নার্গিস খাতুন। ঘন্টুর কথায় , রাগে ফোঁস ফাঁস করা নাগিন। আর এই নাগিন কে কিনা বিবি বানিয়ে রমজান মুর্শিদাবাদে নিয়ে গেলে। তাই মাত্র ছয় মাস রমজানের সংসার করেছিল নাগিন। তাছাড়া রমজান কোনো চাকরি করে না, পরিবারের কথায় সে ওঠে আর বসে। সমাজের নিয়ম অনুযায়ী নিজের স্ত্রী কে বোরখা পরিয়ে বাড়ির মধ্যে লুকিয়ে রাখে। আব্বা - চাচা - নানার মুখের ওপর প্রতিবাদ করার সাহস তার নেই। যে কারণে একদিন গভীর রাতে রমজান কে ছেড়ে, বোরখার বন্ধন খুলে, শাড়ি পরে , এলো চুলে নাগিন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে । তবে যাওয়ার আগে রমজানের মায়ের হাতে তার লেখা একটি চিঠি দিয়ে গেলে  -
        প্রিয় রমজান ,
             'আমি যে রাতের রজনীগন্ধা, সকালে আমার আর কোনো মুল্য থাকে না। তখন আমি হয়ে যাই বাসি ফুলের মালা -  আমার রূপ গন্ধ বর্ণ কিছুই থাকে না । তাই আমি রাতেই বেরিয়ে পড়লাম। কারণ আমি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই। সমাজ সংসারের এমন অনুশাসনের মধ্যে আমি থাকতে পারবো না । আমি বোরখার বন্ধন থেকে বের হতে চাই । দিনের পর দিন বোরখা দিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখে , নিজের সত্তা টা কে মেরে ফেলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দাসত্ব করতে আমি পারবো না। পারবো না জোর করে সতীপনা দেখাতে। তুমি বোঝো না - তোমার মায়ের কষ্টের কথা, যন্ত্রণার কথা। আমি তোমার মা কে দেখে বুঝেছি। তোমার মা না মরে বেঁচে আছেন।
নিজের ইচ্ছে ,ভালোলাগা ,রুচি ,অভ্যাস সব কিছু দমিয়ে রেখেছেন । কিন্তু আমি তোমার মা নই - তোমার মায়ের মতো অত কঠিন আমি হতে পারবো না। পারবো না হৃদয় কে অমন পাষাণ করে দিতে। তাই আমি চললেম। তুমি ভালো থেকো। ভেবো না তোমার মা আমাকে পালাতে সাহায্য করেছেন, তিনি আমার কষ্টে কেঁদে ফেলেছেন। তাই বহু বছরের মরচে ধরা লাল - কালো জানলা ভেঙে রাতের অন্ধকারে যখন আমি ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসছি তখন তিনি নীরবে চুপচাপ দেখেছেন - তোমাদের কে ডাকার তাঁর ইচ্ছাও হয়নি। কারণ তিনি আমার মধ্য দিয়ে নতুন করে বাঁচতে চেয়েছেন। পারলে আমাকে ক্ষমা কোরো।'
                                                   ইতি
                                         জানলা ভাঙা বউ













প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা
 রাজা দেবরায়

হে মহান পুরুষ বিদ্যাসাগর
তুমি তো মোদের দয়ার সাগর
তোমার জন্যই আজ বিধবা বিবাহ
তোমার জন্যই চলেছে সুশিক্ষার প্রবাহ
তোমার জন্যই মোরা আজ লিখতে জানি
তোমাকে তাই মোরা আদর্শ শিক্ষক মানি
তোমাকে পেয়ে ধন্য এই ভূমি
নতমস্তকে মোরা তোমার চরণ চুমি ...





শ্রদ্ধাজ্ঞলী
               তৃণা মুখার্জী
হে মহামানব...
তুমি না থাকলে আজ হয়তো আমি পঁচিশে,দশ সন্তানের মা হতাম।
 তুমি সেই, যে নারীকে নারী বলে করো নি অবহেলা । আর সব পুরুষের কাছে প্রমাণ করে দিয়েছ..নারী ,আমরা সব পারি।
 অবাঞ্ছিত কোণে পড়ে থাকা বিধবার ছিল না সংসারে ঠাঁই।
ইচ্ছা প্রকাশ করলে কুলটা বিধবা নারী বলে বদনাম দিত‌ সমাজ।
অসহায় নারীর চোখের জলের এক একটা বিন্দুকে সঞ্চয় করেছো।
এ সঞ্চয়ে পেয়েছ বাঁধা ,এসেছে আঘাত বারংবার।
সকলের কাছে এক অভাগী বিধবার করুণ কাহিনী শোনাও নি।
 বরং তাকে এক উজ্জ্বল শিক্ষিত নারীতে রূপান্তরিত করেছ।
হে মহামানব ।
প্রণাম তোমায়।






      অভিযান
               রঞ্জনা রায়

জীবনের ছন্দে হঠাৎ ছন্দপতনের ছন্দ
 এলোমেলো উদাসী হাওয়ার বুক জুড়ে
 দিনান্তের ক্ষনিক রক্তিম স্তব্ধতা যেন
 কালব্যাপী বেহাগ রাগের শান্তি আশ্রয়।

 রাস্তার বিধিলিপি লেখা হয়
 অন্তহীন গন্তব্যের বহ্নিমান চেতনায়

 ঘুম আসে পথিকের চোখে
 তবুও গন্তব্যের অঙ্গার উত্তাপে জ্বলে
 এক মুক্ত ছন্দের সন্ধানে
 জীবনের অভিযান -





বিভাগ~কবিতা
                   শিউলি
                          অলোক রায়

তোমার ভেজা সুবাসে সতেজ হয়ে ওঠে হৃদয়প্রাণ,
সন্ধ্যায় ফুটে ভোরে ঝড়ো দারুণ লাগে তোমার ঘ্রাণ।
শুধু শীতকালে যে তোমার দেখা মেলে,
আবার তিন চার মাস দেখা দিয়ে কোথায় যে যাও চলে।
পুবের জানলার ধারে তোমায় রেখেছি যত্নে,
তোমার সুগন্ধি সুবাসে কল্পনায় ভাসি আনমনে।

ভোরের নির্মল বাতাসে তোমার ঘ্রাণ,
মোহিত করে আমার মনপ্রাণ।
জানলা দিয়ে ঘরে তোমার প্রবেশে,
মনে হয় ভেসে চলি মগ্ন আবেশে।
ভীষণ সুগন্ধি তুমি হালকা শীতের ভোরে,
মন মোহিনী হয়ে ওঠে সবাই তোমার ঘোরে।
তিন চার মাসই মজে প্রাণ তোমাতে ভেসে।
যদি সারাবছর থাকতে,
তবে তো গোলাপ কেও টক্কর দিতে।

শিউলি ফুল মানুষও তোমার মতো,
সময়ের কোলে অবেলায় ঝরে যায় কত শত।
তুমি ঝরলে কাঁদে না তো প্রাণ,
মানুষ মরলে প্রাণ করে আনচান।
কালের নিয়মে ঝরে পড়ে সবকিছু,
তবে শুভ্র আভায় তোমার আগমনের
সুবাসে ধায় মন তোমার আগে পিছু।






            নিস্ফলা গাছ
                   শাশ্বতী দাস



" এই বাবু, একটু এদিকে শোন - হ্যাঁ, তোকেই বলছি, একটু এদিকে আয় না - "
         উমা তাকিয়ে দ্যাখে ঘরের ভেতর একটি খাটে একজন মহিলা বসে আছেন। একটু ভয়ে ভয়েই ঐ ঘরের দিকে এগিয়ে যায় উমা। দরজার কাছে গিয়ে দ্যাখে, খাটের ওপর বছর তিরিশের একজন সুন্দরী মহিলা বসে আছেন। কি সুন্দর হাসিমাখা মুখ ! উমা অবাক হয়ে চেয়ে থাকে ঐ মহিলার মুখের দিকে। মনে মনে ভাবতে থাকে, "এতোদিন আসছে অতসীদের বাড়িতে কিন্তু এঁকেতো কোনো দিন দ্যাখে নি। কে এই মহিলা ! " হঠাৎ উমা চমকে ওঠে মহিলার কথায়, " কি রে, কি ভাবছিস?"
       " না কিছু না।" সলজ্জে উত্তর দেয় উমা। মহিলা হেসে বলেন, "ভাবছিসতো আমি কে! আমি অতসীর মেজো কাকিমা, এই বাড়ির মেজো বৌ।" উমা শুনে অবাক হয়। মনে মনে ভাবে," মেজো বৌ!! তারমানেতো অতসীর মেজো কাকিমা। কিন্তু অতসীর মুখেতো মেজো কাকিমার কথা শোনেনি কোনোদিন, অতসী ওর প্রিয় বন্ধু, এর আগেও অনেকদিন এসেছে অতসীদের বাড়িতে। কিন্তু কোনোদিন এই মেজো কাকিমাকে দেখাতো দূরঅস্ত এঁনার কথা শোনেও নি কারোও মুখে। অবশ্য এর আগে কোনো দিন দোতলায় আসেওনি উমা। আজই প্রথম দোতলায় আসা। দোতলায় অতসীর পড়ার ঘরে দুজনে একসাথে অঙ্ক করবে বলে। অতসীদের বাড়িটা খুব সুন্দর, খুব বড়, অনেক ঘর ওদের বাড়িতে। দোতলাটাও খুব সুন্দর করে সাজানো। দেখে খুব ভালো লাগে উমার। তাই অতসী কোনো প্রয়োজনে নীচে গেলে উমা আস্তে আস্তে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ উমার সম্বিত ফেরে মেজো কাকিমার ডাকে। " তোর নাম কি রে বাবু? ভারি মিষ্টি মেয়েতো তুই, তুই কি টুসির বন্ধু?" অতসীর ডাকনাম টুসি। উমা জানতো এটা। উমা ঘাড় নেড়ে উত্তর দেয়, " আমার নাম উমা। হ্যাঁ গো, আমি অতসীর বন্ধু। কিন্তু তুমি কি এখানে থাকো না কাকিমা? এর আগেতো কোনোদিন তোমাকে দেখিনি।" " তুইতো এর আগে কোনোদিন ওপরে আসিস নি, কি করে দেখবি বল?" কাকিমা হেসে উত্তর দেয়। "তা ঠিক। আজই প্রথম ওপরে এলাম। অতসী আর আমি একসঙ্গে অঙ্ক করবো বলে।" উমাও হেসে বলে।
        " ও, তা অঙ্ক না করে বারান্দায় ঘুরছিস যে একা, টুসি কই? " কাকিমা মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে।
        "অতসী কি কাজে যেন নীচে গেল, এখনো আসে নি। তাই আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।"
       " বেশ, তবে আয় না এখানে, আমার পাশে বোস না এসে - " মেজো কাকিমা কেমন যেন করুন ভাবে বলেন কথাটা। উমা আস্তে আস্তে গিয়ে বসে তার কাছে। " আচ্ছা, তুমি কখনও নিচে নামো না? কোনো দিন নীচে দেখিনি যে তোমায়?" উমা আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেলে।
          " না রে।" একটু যেন অন্যমনস্ক ভাবেই উত্তর দেয় মেজো কাকিমা।
          " উমা, কোথায় তুই? " অতসীর ডাকে মেজো কাকিমার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে উমা। " একি! তুই ঐ ঘরে গেছিস কেন?" বেশ বিরক্ত ভাবে বলে অতসী। " তোর দেরী দেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন উনি ডাকলেন। একটু অপ্রস্তুত ভাবেই উত্তর দেয় উমা। মেজো কাকিমা তাড়াতাড়ি দরজায় এসে দাঁড়ান। একটু কুন্ঠিত ভাবেই বলেন, " ওর কোনো দোষ নেই রে টুসি, আমিই ওকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার ঘরে ডেকেছিলাম।" অতসী কোনো উত্তর দেয় না। উমাকে টেনে নিয়ে চলে আসতে চায় নিজের ঘরে। ততক্ষনে ওদের কথা বার্তার আওয়াজে অতসীর মা ও ঠাকুমা ওপরে উঠে আসেন।
         " কি হয়েছে রে টুসি?" ঠাকুমা কঠিন গলায় প্রশ্ন করেন।
          " আমি যখন নীচে গেছি, কাকিমা উমাকে নিজের ঘরে ডেকেছিল।" অতসী সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুমাকে বলে।
          " কি! এতোবড় স্পর্ধা তুমি টুসির ঘরে গেছো ওর বন্ধুকে ডাকতে! তোমার সাহসতো মন্দ না।" উমা তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, "না না উনি অতসীর ঘরে যান নি। আমিই অতসীর দেরী দেখে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম" - উমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে ওঠেন ঠাকুমা "আর তাই দেখেই তুমি ওকে তোমার ঘরে ডাকলে মেজো বৌমা ! এতো সাহস তোমার হয় কি করে!! আমি তোমাকে বলেছিনা, তুমি নিজের ঘর থেকে একদম বেরোবে না। তোমার মুখ দেখাও পাপ। তোমার মুখ দেখলে আমার সংসারের অ - কল্যাণ হবে। এই কথাটা বোঝো না তুমি?" ঠাকুমা উত্তেজিত ভাবে বলতে থাকেন।
          "নিস্ফলা গাছ আমরা বাড়িতে রাখিনা মা, কেটে ফেলি। আর আপনি যে কেন এই বাঁজা মেয়ে মানুষটাকে বাড়িতে রেখেছেন ! দূর করে দিতে হয় এই আপদকে।" অতসীর মাও বলতে থাকেন।
            "মেজো খোকা আসুক বাড়িতে, আজই আমি এই বাঁজা মেয়ে মানুষকে বাড়ি থেকে দূর করবো।" বলতে বলতে রাগে কাঁপতে থাকে অতসীর ঠাকুমা। উমা দেখে, লজ্জায়, অপমানে দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়েন মেজো কাকিমা। উমার আর এক মূহুর্ত দাঁড়াতে ইচ্ছে করে না এখানে। মনে মনে ভাবে, ইনিই সেই ঠাকুমা! যিনি নারকেল নাড়ু, কুলের আচার বানিয়ে ডেকে পাঠান! আদর করে নিজের হাতে খাইয়ে দেন!! ইনিই কি সেই মিঠু কাকিমা, অতসীর মা! কি সুন্দর করে কথা বলেন যিনি!! যার কথায় নিজের মায়ের স্নেহের ছোঁয়া পায় উমা!! আর অতসী! তার প্রিয় বান্ধবী ! যাকে না দেখে একদিনও থাকতে পারে না উমা, যে তার বন্ধু হলেও নিজের বোনের থেকেও বেশি!! ছি ছি, এই এদের মানসীকতা!! এদেরতো চেনে না উমা ! এরা কারা !! এখানে আর একমূহুর্ত না। ভাবতে ভাবতেই দোতলা থেকে নামছিলো উমা। এমন সময়ে অতসীর মেজো কাকা হাসি মুখে " মা মা, বৌদি বৌদি" ডাকতে ডাকতে ওপরে আসেন। এসেই মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলেন, " খুব ভালো খবর আছে মা, তুমি আবার ঠাকুমা হতে যাচ্ছো। তোমার মেজো বৌমা মা হতে যাচ্ছে।"
          কেউ কিছু বলার আগেই অতসীর ভাই মোবাইল হাতে দৌড়তে দৌড়তে এসে বলে, " পিসিমণির শ্বশুর বাড়ি থেকে ফোন এসেছে ঠাম্মা। তোমাকে চাইছে। ঠাম্মা হাত বাড়িয়ে মোবাইল নিয়ে মধুঝড়া গলায় বলেন, "হ্যালো, কে বেয়ান? কেমন আছেন বেয়ান? কতদিন আপনাকে দেখিনি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কবে আসবেন বলুন? আমি গাড়ি পাঠাবো। খুব তাড়াতাড়ি দিন ঠিক করুন। এবার কিন্তু এসে কদিন থাকতে হবে, কি হোলো বেয়ান ! আপনার কি হয়েছে? এসব আপনি কি বলছেন! হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো বেয়ান!! " বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ঠাকুমা! "কি হয়েছে মা? মেজো কাকার প্রশ্নের উত্তরে ঠাকুমা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মিনুর শাশুড়ি ফোন করেছিল। বলল, ওরা শহরের নামকরা ডাক্তারের কাছে মিনুকে নিয়ে গেছিলো, উনি বলেছেন মিনু কোনোদিন মা হতে পারবে না। তাই ওরা আজই মিনুকে এখানে পাঠিয়ে দেবে। সলিল মিনুকে ডিভোর্স করবে। নিস্ফলা গাছ ওরা আর বাড়িতে রাখবে না।







The Life Of Ours
             by Sabir Ahmed

                                      The life thou art
        Full of adjectives and interjections !                                                       
               Interjections and adjectives !
             From birth till death, overflowing
      The world of darkness and the lines of light.

  Thy birth was innocent and spotless,
            Angels used to guard thee,
   With their unseen blissful halo,
                Of heavenly sublimation,
   Full of holy utterance,uttered by virtuous men.

         Thou art happy,sweet and sad,
    With the pleasant pleasure of divine accolades,
    Or painful funeral of melancholy valediction,
     Bitter or sour by the dolorous dreams,
      For outlived eases,assets and oof.
 
Thou art art of all arts,
           Might be either artificial or natural,
           Either human deeds and needs,
  Or the orange, the red and the white glow of sun,
            Either immortal feelings of lovers,
    Or the passionate love of earthy creatures.
       
                  Life! thou art short,
        Like the seasonal smell and beauty !
              Beauty and smell like season !

                      Thou may cease,
           While swaying like a hammock.
                 As the rains go away,
                 After the clouds rumble.

                  Upon the ripples or streams,
                       Like a boat or a raft,
     Thou might sink into the depth of river,
      By the storm or by a rift all on sudden.

              In course of time or too early,
                        Thou may fall,
           As the leaves fall from the shoots,
        As the flowers keep falling one by one.

                      Thou might slip down,
                 Like the droplets of water,
              That are lying upon the taro leaf.

                   Thou art stainless,
            But often we make thee profane,
    Marring the gnomic norms of belief and honesty !

                     Thou art enchanted,
    With the melodious tune of natural elements,
And struggling like a bird with beruffled plume,
         Tolerating gust,rains and heat for food.

    Like a chaplet of expensive marine stones,
                   Embellished thou art,
  With respect,with honour,with love,with sympathy,
  With emotion and feelings,with ire-glee-rancor.

            Now and then,thou but suffer,
                   From prolonged illness
          That eats thee up like a baneful worm,
               Yet thou yearn ever for thyself !
                       
                Thou art mammoth,
             Under the cycle of shortness,
           Of tiny and the tiniest insects,
        Larger and the largest creatures,
                      Same but different !!
        Thou art too difficult to make out.
                       
               




করম চাচার দন্ড
              আরশাদ আল গালিব

আমাদের এলাকার করম চাচা, এলাকায় তার বেশ খ্যাতি। কারন তার মতো কিপটে আমাদের মহল্লায় আর একটা ও নেই। প্রতিদিন সকাল থেকেই তার কিপ্টেমির দিন করা শুরু হয়।

এইতো সেদিনের কথা, সকালবেলা বউয়ের মুখঝামটা খেয়ে উঠে ই দৌড় দিয়েছেন বাজারে। উদ্দেশ্য বাজার করা। বাজারে যাওয়ার আগে মোড়ের চায়ের দোকানে গিয়ে বসা তার নিত্যদিনের অভ্যাস, কারন বাড়িতে তিনি চা পাতা রাখেন না খরচের ভয়ে। সবাই খেলে যে খরচ বেশি হয়ে যাবে। তবে তিনি যে পুরোপুরি চা খান তা বলা যাবে না, তিনি মূলত দুধ চিনি ছাড়া তিনটাকায় চালিয়ে নেন।

এরপর তিনি বাজারে ঢোকেন, সেখানেও তার কিপ্টেমি রয়েই যায় তিনি বেছে বেছে কমদামের জিনিসগুলো খোঁজেন, আর সাথে কুচো মাছ। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি, কোনোমতে আধপচা সবজি কিনে তিনি ঢুকেছেন মাছ বাজারে। এসময়ই ঘটে গেল বিপত্তি,  ওপাড়ার নন্দ বাবুর ছাতার খোচা লেগে তার অতি যত্নের ফতুয়া একপাশ দিয়ে এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে গেল৷ আর কি এ কান্ড দেখে রীতিমতো চিৎকার শুরু করলেন করম চাচা।  তার এত সাধের ফতুয়া ছিড়ে ফেলেছে নন্দ বাবু, না তিনি এবার ছাড়ছেন না। নন্দ বাবুর কাছে তিনি ফতুয়ার মূল্য দাবি করলেন। এদিকে তার এরকম গগনবিদারী চিৎকারে আশেপাশে অনেক লোক জমা হয়ে গেছে।  সবাই হ্যা হ্যা বলে নন্দ বাবুকে টাকা দিতে বললেন।  আর এদিকে করম চাচাও সুযোগ বুঝে চড়া দাম হেঁকে বসলেন, ১৫০ টাকায় কেনা ফতুয়ার দাম চাইলেন ৪০০ টাকা। অগত্যা কি আর করা নন্দ বাবু সবার কথার মুখে টাকাটা করম চাচাকে দিয়ে দিলেন। আর টাকাটা হাতে পেয়ে করম চাচা আত্মতৃপ্তির হাসি হেসে সামনে পা বাড়ালেন আর মনে মনে বললেন যাহ সকালে বেশ লাভই হলো একেবারে ২৫০ পার। বাজারের টাকা এতেই হয়ে যাবে। এসব ভাবছেন আর এমন সময়ই হুংকার দিল নন্দ বাবু, কি মশাই কই যান?

কই আবার! আমার ফতুয়ার দাম দিয়েছ এবার বাজারে যাই। তুমিও তোমার রাস্তা দেখ।

নাহ তা বললে তো হচ্ছে না, ফতুয়ার দাম দিয়েছি এবার গায়ের ওটা খুলে দিয়ে যান। ওটা তো এখন আমার।

আরে বলে কি এই লোক। এটা দিলে আমি কি খালি গায়ে দিগম্বর হয়ে যাব।

সে আপনার বিষয় মশাই, আপনি জানেন।  আমার ফতুয়া দিয়ে মানে মানে বিদায় হন।

এবার করম চাচা ভালোই বিপদে পড়লেন। এদিকে সবাই আবার নন্দ বাবুর কথায় সায় দিচ্ছে।  অগত্যা করম চাচা এবার যথাসম্ভব বিনয়ের অবতার হয়ে নন্দ বাবুকে জামাটা দিয়ে দেয়ার অনুরোধ করলেন।

কিন্তু নন্দ বাবুর এক গোঁ,  হয় জামা দেও নাহলে টাকা দিয়ে কিনে নেও।

কি আর করা গ্যাড়াকলে পড়ে নন্দ বাবু এবার ফতুয়া কিনতে রাজি হলেন।

আর হাওয়া বদল দেখে নন্দ বাবুও চড়া দাম চেয়ে বসলেন।

কি আর করা শেষে অতি চালাকির ১০০০ টাকা দন্ড দিয়ে ছেঁড়া জামা ফিরিয়ে নিয়ে জামায় হাত বুলোতে বুলোতে খালি ব্যাগে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন।

আর এদিকে বাজারের সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো আর বললো কিপটে কাকা আজ, ফান্দে পড়িয়া কান্দে!







ছেলেবেলার সেই দিনটা
(ছোট গল্প)
            আব্দুল রাহাজ

সময়টা ছিল নিশান আর তানজিম এর কাছে নদীর তীরে ছেলেবেলায় পড়ন্ত বিকেলে বেশ হই হই করে খেলার সময় ওরা সমবয়স্ক দুজনেই বেশ সাঁতার জানতো মানুষের বিপদে আপদে কোনো কাজে ওরা সবসময় পাশে থাকে। একবার নরেন চাটুজ্যে দেশের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি আসছে রাত বেশ হয়েছে ওরা হিমানী দিদির কাছ থেকে পড়ে নদীর ধার দিয়ে হ্যারিকেনের আলো জ্বালিয়ে গান গান করতে বাড়ি ফিরছে এদিকে আযান শোনা যায় তানজিম বললো নিশান আযান হচ্ছে বন্ধ কর ও বললো তোর কোন অসুবিধা তানজিম চুপ হয়ে গেল নিশান বললো কী রকম একটা আওয়াজ আসছে না নিশান হ্যাঁ মনে হচ্ছে মানুষের গলা ওই নদীর তীর থেকে আসছে চল গিয়ে দেখি ওরা ডাব গাছের আড়াল থেকে দেখলো কয়েকজন ডাকাত একটা মানুষের কাছ থেকে জোর করে লুট করছে আবার বন্দুক আছে তাদের হাতে আরে আমাদের নরেন দাদু শুনিছি উনি থাকেন পূর্ব বঙ্গে তানজিম বললো কী করবি আমরা বাঁচাবো কীভাবে নিশান বললো দেখ ওরা আছে তিনজন আমরা ঝোপে গিয়ে লুকিয়ে তীর গুলতি ছুড়বো তুই আস্তে আস্তে ওখানে গিয়ে চম্পট নরেন দাদু ও তার জিনিসপত্র নিয়ে দৌড় দিবি আর এদিকে আমি সামলাবো ঠিক আছে । তারপর তানজিম বললো তুই ওটা কোথা থেকে পাবি তখন নিশান বললো আরে আমার বাবা বলতেন রাতে পড়া থাকে কোনো অসুবিধা হলে তীর গুলতি রাখতে যাতে শয়তান গুলো বাবারে বাবারে করে পালায় তানজিম হেসে উঠলো বললো সময় নেই তাড়াতাড়ি কর ওরা ঝোপে গিয়ে বসলো ঝোপ থেকে নিশান তিনটি তীর গুলতি ছুড়লো পরস্পর ডাকাতের পায়ে লাগলো যন্ত্রনায় ছটপট করতে লাগলো তানজিম বুক ভরা নিঃশ্বাস নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে নরেন দাদু আর তার জিনিসপত্র নিয়ে দৌড় বাড়ি চলে এলো নিশান ও ওদের পিছু নিলো চার রাস্তায় মোড়ে দেখা কিছু ক্ষন দাঁড়িয়ে বললো ঠিক আছো তো দাদু হ্যাঁ হ্যাঁ কিছু না বলে একটু হেসে চলে গেল ছেলেবেলার এই রাতের ঘটনাটা ওদের কাছে আজীবন স্মৃতিবিজড়িত হয়েছিল ও তাদের সাহস ও মানবসেবা চেতনা সেখান থেকেই শুরু হয় যা তাদের পরবর্তী কালে অনেকপথ পথ পাড়ি দিয়ে ছিল ।








কবিতা
        "মা শব্দের প্রভাব"
                   ডা: নরেন্দ্র নাথ নস্কর

মা শব্দটা খুবই সহজ। কিন্তু এত মধুর,এত অর্থবহ,এত সুদুর প্রসারী শব্দ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয় না।

একটা ছোট্ট অক্ষর দিয়ে এমন সুগভীর শব্দ বাংলা ভাষায় বিরল।

এই শব্দ দিয়ে প্রথম কথা বলতে শেখা। জীবনের প্রথম ভাষা এই মা দিয়ে শুরু। তারপর সারা জীবন মা শব্দের প্রভাবে প্রভাবিত হয় পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষের।
কিছু মুষ্টিমেয় অমানুষ বাদ দিলে এর প্রভাব থেকে কারও মুক্তি নেই।
বাল্যে, কৈশোরে,যৌবনে,প্রৌঢ়ত্বে, বৃদ্ধ বয়সে বা জীবনের কোন পরিচ্ছেদেই এই মা শব্দের অসম্ভব প্রভাব থেকে কেউ মুক্তি পায়নি।
প্রায় প্রত্যেকটা "মা"ও সন্তান স্নেহে এতই কাতর যে তিনিও এই শব্দের মোহে বা প্রভাবে সম্পূর্ণ প্রভাবিত থাকেন সারাজীবন।

এই মায়ের অবদান প্রায় প্রত্যেকের জীবনে অপরিশোধ্য।
মাতৃঋন তাই কখনো শোধ করা যায় না।
স্বয়ং ভগবানও মনে হয় মায়ের মায়ায় আচ্ছন্ন থাকেন।

যতই বলি না কেন, এই মা শব্দের ব্যাখ্যা পুরো করা আমাদের পক্ষেমনে হয় সম্ভব নয়।
এই ধরিত্রী প্রকৃতিও মা হিসাবে অনেকের কাছে পরিগণিত হন।

তবে জীবিত থাকতে মায়ের অবদান বা প্রভাব অনেকেই অনুভব করেন না।
তিনি চলে গেলে তখন তার অভাব,প্রভাব,অবদান সত্যি সত্যি আমাদের বেশিরভাগ মানুষের কাছে অনুভূত হয়।







কবিতা
শিল্পে বিতৃষ্ণা
               মৌসুমী গুহ রায়

গভীর জীবনের পরিনতি উঠে আসে কবিতায়,
কবিতায় ছায়াপথ,
সুড়ঙ্গ খুঁড়ে চলে মানুষ।
অপাপবিদ্ধ শিশু পথের ধারে।
কোন মরীচিকায় ছুটে যায় মন ?
মানুষ বলে - ভালো লাগে না এ জীবন।
তবু চেনা ছন্দে ফিরতে হয়।
বৃত্তের মধ‍্যে আবদ্ধ মানুষ।
দগ্ধ দিনের চিত্র ক‍্যানভাসে।
শিল্পীর শিল্পে বিতৃষ্ণা।
তবু শিল্প আঁকড়ে জীবন যাপন।
আর কোন পথ নেই শিল্পীর।
                   




                  " নির্ভরতা "
               হামিদুল ইসলাম

জলের উপর নৌকো সাজাই
জীবন বৈভব
স্বপ্নগুলো স্মৃতি হয়ে ফিরে আসে
মনের মাঝে নিঃস্ব বাসনা
ভস্মীভূত হয়ে যায় রসনার তিলোত্তমা ।।

বৃষ্টির জলে ছুঁয়ে যায়
মনের একগুচ্ছ কথকতা
তুমি আমি সেই শ্রীকথার সাক্ষী এখনো
দুর্বার জীবন বয়ে চলে
নৈমিত্তিক নিরঞ্জনা ।।

সব দূরে ছুড়ে ফেলি
হঠাৎ পঞ্চভূতে স্বপ্নগুলো লীন
জীবন যাতায়াত করে এবাড়ি সেবাড়ি
ইতিহাসে ক্ষণিক বিপর্যয়
তবু নষ্টের জীবন বাসনায় ভরপুর ।।

যে জন বৈষয়িক দাঁড় ভাঙে প্রতিদিন
মাস্তুল জীবন, রঙ্গমঞ্চের নায়ক আত্মনির্ভরশীল ।।






       তোমাকে বলছি!
                         বিশ্বজিৎ কর

তোমার পথের কাঁটাগুলো -
সরিয়ে দিতে পারি,
যদি আমায় আলো দাও!
তোমার সব আকাঙ্খা -
মিটিয়ে দিতে পারি,
যদি হাত বাড়িয়ে দাও!
তোমার সব দুঃখ -
ভুলিয়ে দিতে পারি,
যদি ভালবাসা দাও !
তোমাকে আমার করে নিতে পারি,
যদি হৃদয়ে স্থান দাও!







কবিতা

 খেলাঘর
           মিনতি গোস্বামী

রাগ করেছি, ‌ বেশ করেছি
      বলবো না তো কথা
  কেউ দেখেনি, কেউ শোনেনি
       এই মনের ব‍্যথা।

     খাওয়া নয়, পরাও নয়
       শুধুই ভালবাসা
  চেয়েছিলাম, এই টুকুই
   মেটেনি সেই আশা।

  জীবন যদি, শুকিয়ে যায়
     হারায় মুখে ভাষা
 সাজিয়ে দিলে গুছিয়ে দিলে
     হয়না বাসা খাসা।







সাতপাক
       সত‍্যব্রত ধর

সাতপাকের অগ্নিশিখার আকাঙ্ক্ষায়,
পবিত্র বিন্দু বিন্দু আলোর কণা
উপহার দিয়েছি তোমায়।

অকৃত্রিম ভালোবাসার যুগলবন্দী,
বাসা বেঁধেছে আট বছর হলো
আমাদের প্রেমের মস্তিষ্কে।

নিঃশব্দ গতিতে ছুটে চলেছি দুজনে,
সমাজের চোখে ছাপ ফেলা
শুভ পরিণতির খোঁজে।

মাঝের এতগুলো বছরের অসীম ধৈর্যের,
লড়াইয়ের ইতিহাস গোপনে
কখনও হেসেছে কখনও কেঁদেছে।

নানা কঠিন বিভেদ অতিক্রম করে,
সরল শান্তি-সুখের কামনায়
সদা প্রার্থনা তাই আজও...!





      করুনাময়ী
                   রুহুল আমিন

আদর করে তুমি বুকে টেনে নিলে,
তোমার ভালোবাসায় মুগ্ধ দুনিয়া।
তুমি আমাকে মমতা দিয়েছো,
দশ মাস পেটে ধরেছো-
জানিনা কে আগে ছাড়বে পৃথিবী।
তবে মরন যদি আসে মাগো,
তোমার কোলে মাথা রেখে চলে যাবো।
মাগো তুমি কাঁদবে রাত্রি শেষে,
আমার জামা বুকে জড়িয়ে।
তবে তুমি আসবে না কখন ,
আমার কবর নামক বাড়ির ধারে;
তোমার চোখের জল ঝরতে দেবনা।






বিভাগ -কবিতা
     এবারের ঈদ
                আব্দুল রহিম

ঈদ মানেই তো মহোৎসব,মহা তোড়জোড়
খুশির প্রদীপ জ্বলে সবার ঘর ঘর,।।

দূর দূরান্ত থেকে আসে সাবাই ঘরে ফিরে
কাধেঁ কাঁধ রেখে দাঁড়ায় নামাজের কাতারে।।

খুশির আনন্দে তাধিনাধিন নাচে মন
বিশ্ব জুড়ে চলে ঈদের মহা আয়োজন।।

কিন্তু পৃথিবীর যেন আজ মাতৃহারা শিশু,
শুধু দু'চোখ বয়ে গড়িয়ে পড়ে অজস্র অশ্রু

নেই তোড়জোড় ,নেই আনন্দ,নেই ভালোবাসা
 আছে শুধু কান্না আর বাঁচার আর্তনাদ ।।

ছেলে মেয়ে ধরে বাইনা,এবার ঈদে চাই নতুন জামা
বাবা হয়েও মাথা নত করে চাইতে হয় হাত জুড়ে ক্ষমা।।

ছেলে কাঁদে বিদেশে,মা না খেয়ে মালা জপে বসে
বৌ দুচোখের জল ফোটাই হাঁড়িতে হেসে হেসে

এবার হয়তো হবে না নামাজ কাঁধে কাঁধ রেখে
সমাজ চলে ভাই আজ দশ হাত দূরত্ব মেপে।।





  কানা
অশোক কুমার রায়

ব্যাঙের ছানা সত্যি কানা
দেখতে পায় না কিছু !
না বুঝে সে ভাল-মন্দ--
ঘুরছে সাপের পিছু ।

••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

      © সেক আসাদ আহমেদ 
         সম্পাদক ,উপকণ্ঠ




0 comments: