শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 12/09/2020


উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 12/09/2020   Upokontha sahitya patrika web megazine -12/09/2020

Upokontha sahitya patrika web megazine-12/09/2020





উপকন্ঠ প্রাত্যহিক সাহিত্য পত্রিকা
______________________________________
         বিষয় :----- প্রবন্ধ
______________________________________
১২ই সেপ্টেম্বর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মতিথি উপলক্ষে "উপকন্ঠ প্রাত্যহিক সাহিত্য পত্রিকা"র শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন :
প্রকৃতিপ্রেমিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
                          সৌম্য ঘোষ
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
                         ১৯২২ সালে "প্রবাসী" পত্রিকার 'মাঘ সংখ্যায়'  প্রকাশিত হয় বিভূতিভূষণের প্রথম গল্প " উপেক্ষিতা" । গল্পটি পড়ে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় একটি চিঠিতে বিভূতিভূষণ কে লেখেন , ------ "তোমার গল্পটি বড়ই মনোরম হইয়াছে। রচনা যেমন সুললিত, তেমনি প্রাঞ্জল ।"। বিভূতিভূষণ এর প্রথম গল্পগ্রন্থ " মেঘমল্লার" । বিশ- ত্রিশ দশকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যগগনে বিরাজ করছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । তাদের সৃষ্টিতে পাঠককুল মুগ্ধ । সেই সময় " কল্লোল গোষ্ঠী" বিপরীত ভাবনা ও শৈলী নিয়ে উপস্থিত । ঠিক এমনই সময় দুই বিপরীত ভাবনা ও রীতি র  বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব ভঙ্গিতে মানুষ, প্রকৃতি  ও ঐশ্বর ভাবনাকে একত্রিত করে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে নূতন রীতিতে আবির্ভূত হলেন -------  বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় । সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক অস্থির , সংকটময় সময় অবস্থান করেও জগৎ ও জীবনের আনন্দময় রূপকে অনুভব করেছেন তিনি । তিনি বলেছিলেন, " জীবনকে যারা দুঃখময় বলেছে , তারা জীবনের কিছুই জানেনা । জগৎটাকে দুঃখময় মনে করা নাস্তিকতা । "
                        বিভূতিভূষণের আদি বাড়ি উত্তর 24 পরগনার পানিতর গ্রামে । পৈত্রিক বাসস্থান ব্যারাকপুর । মামা বাড়ি নদীয়ার ঘোষপাড়ার মুরাতিপুর  গ্রামে জন্ম ।১২ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪ সালে । পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা মৃণালিনী দেবী । ১৯১৮ সালে শিয়ালদহের রিপন কলেজ ( অধুনা, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে ডিস্টিংশন নিয়ে বি. এ. পাশ করেন ।
                     "পথের পাঁচালী" র অমর রূপকার বিভূতিভূষণের রচনায় দৃশ্য, ঘ্রাণ, শ্রুতি, স্বাদ , প্রকৃতি প্রায় প্রতিটি উপযোগই  সঘন । চিরায়ত গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে প্রকৃতির নিবিড় সংরাগ আর দ্বান্দ্বিক সৌন্দর্য ও রসবোধ পাঠককুলকে মুগ্ধ করে । জীবনের মূল ধারাকেই বিভূতিভূষণ তাঁর রচনাকর্মের  আধার হিসেবে বিবেচনা করেছেন । প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন চারণের সজীব নিখুঁত চিত্র তাঁর কথাশিল্পে পাই ।
                           সাহিত্য সমালোচকগণ বলছেন, বিভূতিভূষণ যে মানবজগৎ সৃষ্টি করেছিলেন তা সারল্যে অসাধারণ। সনাতন গ্রামবাংলার জনজীবনের চিরায়ত ছবি তিনি এঁকেছেন নিপুণ, দক্ষ শিল্পকুশলতায়। গভীর মমতায়, শ্রমে তিনি এই কীর্তি স্থাপন করে গেছেন। কথাশিল্পী হিসেবে আশ্চর্যরকম সফল তিনি। গ্রামীণ জীবনের শান্ত, সরল, স্নিগ্ধ ও বিশ্বস্ত ছবি ফুটে ওঠে তাঁর নিরাসক্ত কথকতা ও বয়ানে, চুম্বকের মতো টেনে নেয় পাঠককে। মুগ্ধ করে, বিস্মিত করে। অথচ পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরণ্যক, ইছামতির মতো অসামান্য সব উপন্যাসের রচয়িতা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখালেখির জীবন ছিল স্বল্প। মাত্র আঠাশ বছর। এই লেখকের আয়ু ছিল মাত্র ৫৬ বছর। তাঁর রচনাসম্ভারের মধ্যে রয়েছে ১৫টি উপন্যাস, সাতখানা কিশোর উপন্যাস, দুইশ’র বেশি ছোটগল্প। পনেরোটি উপন্যাসের মধ্যে একটি ছিল অসমাপ্ত। শিশু-কিশোর উপন্যাসের মধ্যে তিনটি হলো বয়স্কপাঠ্য উপন্যাসের কিশোর সংস্করণ। এসবের বাইরে অন্যান্য বিষয়েও তিনি লিখে গেছেন। সেগুলোর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। তার মধ্যে রয়েছে ভ্রমণকাহিনী, ডায়েরি, প্রবন্ধ, অনুবাদ। ব্যাকরণ বইও তিনি লিখেছেন। উপন্যাস ও ছোটগল্প, ভ্রমণ-দিনলিপি এবং কিশোরদের উপযোগী রচনা-গদ্য সাহিত্যে এ চারটি কীর্তিস্তম্ভের ওপর বিভূতিভূষণের সাহিত্যিক কৃতিত্ব। এ চারটি কিন্তু একে অপরের থেকে কোনো অর্থেই ভিন্ন নয়। সুরে, বিষয়-নির্বাচনে, প্রশান্ত চিত্তের সহৃদয়তায় এগুলো যেমন সরস তেমনি জীবনরসে পূর্ণ। বিভূতিভূষণের অস্তিত্ব জুড়ে আমৃত্যু-প্রথম আবির্ভাবের পর থেকে শ্রীমান অপু বিরাজিত। তার বিস্ময়ভরা দৃষ্টি দিয়ে বিভূতিভূষণ চারপাশের মানুষকে, প্রকৃতিকে দেখছেন এবং আনন্দিত হয়েছেন। সুখে দুঃখে তার সমান আনন্দ, কারণ বালকের মন সহজে দুঃখের স্মৃতি ভুলে যায়। অভাব-অভিযোগের মধ্যেও একটা সুখের কল্পরাজ্য তৈরি করে নেয়। আবার, বিভূতিভূষণের শিল্পী ব্যক্তিত্বের পরিচয় নিতে গেলে আরো একটি দিকে লক্ষ্য না করে পারা যায় না। একদিকে একান্ত লৌকিক জীবন অতিসাধারণ ও প্রাত্যহিক, পরিচিত প্রকৃতি, বাস্তব অরণ্য-যার ভূগোল আছে, অন্যদিকে আছে অলৌকিক, অতি প্রাকৃতের প্রতি আকর্ষণ। তিনি একালের শিল্পী হয়েও ধর্মে আস্থাবান ছিলেন এবং পরলোক, জ্যোতিষবিদ্যা, মৃত্যুর পরবর্তী অস্তিত্ব এবং অন্যান্য বিবিধ অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস করতেন। এর কারণ হিসেবে তার জীবনী থেকে জানা যায়, যখন ছাত্র ছিলেন, তখন তেইশ বছর বয়সে বিয়ে করেন। বিয়ের বছরখানেক বাদে স্ত্রী গৌরী মারা গেলেন নিউমোনিয়ায়। এর কিছুদিনের মধ্যেই ছোট বোন মণির মৃত্যু ঘটে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে। এই দু’টি মর্মান্তিক ঘটনায় তিনি মারাত্মক আঘাত পেলেন মনে। ধারণা করা হয়, তাঁর পরলোকে বিশ্বাস, পরলোকতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা এবং চর্চার কারণ ওই দু’টি বিয়োগান্তক ঘটনা। প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুর দীর্ঘ ২২ বছর পরে আবার বিয়ে করেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
                                     আপাদমস্তক একজন প্রকৃতিপ্রেমিক। তিনি অরণ্য-জঙ্গল-ঝোপঝাড়ের গাছ-গাছালির মধুর সৌন্দর্য শুধু নিজেই বিমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেননি, পাঠকদের কাছেও সেই সুন্দর মনোহর রূপটি তুলে ধরেছেন। তার উপন্যাস পড়ার পর পাঠক এতটাই অভিভূত ও তৃপ্ত হন যে বিভূতিভূষণের বর্ণিত অপরূপ ছবি নিজের চোখে না দেখলেও তা জীবন্ত হয়ে তাদের মনের পর্দায় ভেসে থাকে। এ কথা যেমন 'পথের পাঁচালী'র বেলায় সত্য তেমনি সত্য 'আরণ্যক' বা 'ইছামতী'র বেলায়ও। ‘পথের পাঁচালী’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনন্য কীর্তি। বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় এটির চলচ্চিত্রায়ন করেন। ফলে এই উপন্যাসের খ্যাতির পরিধি বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ে। বিভূতিভূষণ সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন এই উপন্যাসটির মধ্য দিয়েই। এটিই তাঁর প্রথম উপন্যাস, একই সঙ্গে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থও। পথের পাঁচালী প্রথমে ধারাবাহিকভাবে বের হয়েছিল মাসিকপত্র ‘বিচিত্রা’য়। এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল এতে। বই আকারে এটি বের হয় ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে, ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে। এ বই বেরুবার আগে সাময়িকপত্রে এই লেখকের কয়েকটি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। লেখক হিসেবে সামান্য পরিচিতি ছিল তখন। সেই সময় এ বিশাল আয়তন উপন্যাসের প্রকাশক জোগাড় করার কাজটি সহজ ছিল না। ঝুঁকি নিয়ে এ দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন সজনীকান্ত দাস। তার নিজস্ব কোনো প্রকাশনা সংস্থা ছিল না। শুধু এ বইটা বের করার জন্যই তিনি ‘রঞ্জন প্রকাশালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। ‘পথের পাঁচালী’ বই হিসেবে বেরুবার আগেই বিচিত্রা পত্রিকায় এর বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হতে থাকে। সেই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, বইটির দাম রাখা হবে তিন টাকা। বিজ্ঞাপন ছিল এরকম : “শ্রীবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত বাঙলা ভাষায় সম্পূর্ণ নূতন ধরনের উপন্যাস। শিশুমনের দুর্জ্ঞেয় রহস্য ইতিপূর্বে আর কেহ এদেশে এরূপভাবে উদ্ঘাটিত করেন নাই; অন্য দেশেও কেহ করিয়াছেন কি না আমাদের জানা নাই। উপন্যাসখানি ‘বিচিত্রা’য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হইতেছে। ইতিমধ্যেই সাহিত্য-রসিক মহলে ইহার সম্বন্ধে বিস্তর আলোচনা হইয়াছে।”রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, ‘বইখানা দাঁড়িয়ে আছে আপন সত্যের জোরে।’
                       অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন,  "বিভূতিভূষণ কেবল মাটি ও সাধারণ মানুষের শিল্পী নন , আকাশভরা আনন্দলোক ও ঐশী মহিমার রূপকার । "  প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 
"কেউ কেউ আছেন যিনি তুচ্ছ কে মহৎ করে তোলেন, বিভূতিভূষণ শেষ শ্রেণীর লেখক । তাঁর কাছে কিছুই তুচ্ছ নয় --------- তিনি যা কিছু দেখেছেন তার সবই পূর্ণ ।"
                    তাঁর কালজয়ী উপন্যাস, যেমন, পথের পাঁচালী (১৯২৯), অপরাজিত (১৯৩২) , আরণ্যক (১৯৩৯) , আদর্শ হিন্দু হোটেল (১৯৪০) , ইছামতী ( ১৯৫০) , অশনি সংকেত ( ১৯৫৯)  ইত্যাদি ইত্যাদি । শিশুসাহিত্য " চাঁদের পাহাড় (১৯৩৭) বহুল জনপ্রিয় । তাই ভ্রমণ কাহিনী " অভিযাত্রিক ( ১৯৪১) স্মরণীয়। কারো কারো মতে, রোমাঁ রোলাঁ র  " Jean Christophe" - এর সঙ্গে "পথের পাঁচালী"র সাদৃশ্য আছে। "ইছামতী" উপন্যাসের জন্য তিনি মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার পান (১৯৫১)।
                       ১লা নভেম্বর, ১৯৫০ সালে বাংলার প্রকৃতি প্রেমিক কথা সাহিত্যিকের জীবনাবসান হয়।।










বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে লেখা:-
      গল্প
বিভূতিভূষণ, আত্মচরিত ও প্রকৃতিপ্রেম
- অগ্নিমিত্র


  বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন কালজয়ী সাহিত্যিক । এরকম লেখক বাংলা সাহিত্যের জগতে শুধু নয়, বিশ্বসাহিত্যেও খুব বিরল। প্রকৃতির প্রেমে তিনি বিভোর ছিলেন। নানা লেখায় বাংলা ও সাঁওতাল পরগণার প্রকৃতির শোভা উনি বর্ণনা করেছেন । এমনকি ' চাঁদের পাহাড় ' উপন্যাসে আফ্রিকার জঙ্গল ও প্রকৃতির নিখুঁত বিবরণ পাওয়া যায় । ' হীরা মানিক জ্বলে' উপন্যাসেও ইন্দোচীনের প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে দারুণভাবে । অথচ বিভূতিভূষণ কখনো দেশের বাইরেই যাননি । পড়াশোনা ও কল্পনার অনিন্দ্য মিশেলে এরকম দুটি সর্বজনপ্রিয় উপন্যাস লেখা সম্ভব হয়েছিল ।
' পথের পাঁচালী ' ও ' অপরাজিত' যেন ওনার নিজের জীবনেরই আলেখ্য । হরিহর পন্ডিত যেন আর কেউ নয়, ওনারই পিতা। সর্বজয়া যেন ওঁর নিজেরই মা। .. অপু চরিত্রের মধ্যে তাঁর নিজেরই যেন ঝলক দেখতে পাই । ..এঁদের জীবনচর্যার মধ্যে অদ্ভুত মিল। সম্ভবতঃ এই দুটি লেখা আত্মজীবনীর মতো।
জন্মলগ্নে এই অমর সাহিত্যিকের চরণে প্রণাম জানাই । ওনার লেখা নিয়ে আরো চর্চা হোক; নবীন প্রজন্ম আরো ওনার লেখা পড়ুক, এটাই চাই ।।









অমর বিভূতিভূষণ
(প্রবন্ধ)
           আব্দুল রাহাজ

বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বাংলা সাহিত্য কে দিয়েছেন এক অনন্য স্বাদ। সূর্যের উজ্জ্বল দীপ্ত রাশির মত ফুটে উঠেছে তার লেখনি সত্যিই তিনি বাঙালির কাছে মহান শ্রেষ্ঠ। তার লেখনি সৌন্দর্যতা প্রত্যেক বাঙালির মনে প্রাণে গেঁথে আছি আজও যা থাকবে আজীবন আজীবন। সত্যি তার  লেখনীর মধ্য দিয়ে প্রকৃতি পেয়েছে অনন্য স্বাদ প্রত্যেক মানুষের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠেছে প্রকৃতির মনোরম পরিবেশের গল্প। বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশ তিনি জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সত্যিই তিনি বাঙালির কাছে অত্যন্ত গর্বের। তার পথের পাঁচালী সত্যিই বাংলা সাহিত্যকে নিয়ে দিয়েছে এক অনন্য স্বাদ  রুপ-লাবণ্যে ফুটে উঠেছে সত্যি বাংলা সাহিত্যের এই উজ্জ্বল প্রতিভা অনেকটা অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ইছামতি নদীর তীর তার যে বর্ণনা  তার যে লেখনি সৌন্দর্য যে কাহিনী সত্যিই প্রতিটি বাঙালির মনে প্রাণে গেঁথে থাকবে আজীবন। বাংলা সাহিত্যের এই সূর্যের উজ্জ্বল দীপ্ত রাশি সত্যি প্রতিটি বাঙালির মনে প্রাণে অমর অমর যা জীবন হয়ে থাকবে।
"তুমি শ্রেষ্ঠ তুমি মহান তুমি সেই বিভূতিভূষণ তুমি বাঙালির কাছে সাহিত্যকে এনে দিয়েছে অনন্য সম্মান অনন্য স্বাদ
যা প্রতিটি বাঙালির মনে প্রানে তুমি হয়ে থাকবে অমর অমর"








হাইকু কবিতা
         শংকর হালদার
০১।
ভগ্ন হৃদয়
বিরহ যাতনায়
হও সদয় ।
০২।
হৃদয়ে দোলা
বসন্তের আহ্বান
প্রকৃতি হাসে ।
০৩।
মেঘের ভেলা
শিউলির সুবাস
শরৎ এল ।
০৪।
শুভ শক্তির
শুভ ধ্বনি রণিত
দুর্গতি নাশে ।
০৫।
খোলা বাতাস
তুমি আসবে বলে
উন্মুক্ত প্রাণ ।









     চরণ ধূলি দিও
                তাপস বর্মন

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র
     বিভূতিভূষণ তুমি,
তোমায় পেয়ে ধন্য মোরা
      ধন্য বঙ্গভূমি।
পথের পাঁচালি উপন্যাসে
   জাত ছিনিয়ে দিলে,
ইছামতীর জন্য আবার
  রবীন্দ্র পুরস্কার পেলে।
চৌদ্দ উপন্যাসে সাজানো
     তোমার কর্মকাণ্ড,
কুড়িটি গল্প সংকলনে
  কাঁপালে বিশ্বব্রম্ভান্ড।
তাহার উপর কিশোর কাব্য
   ভ্রমণ কাহিনী আছে,
সবই যেন অমৃত সম
সাহিত্য প্রেমীর কাছে।
আজকে তোমার জন্ম তিথি
   সশ্রদ্ধ প্রণাম নিও
ওপার থেকে পারলে একটু
    চরণ ধূলি দিও।









Women and media
            Sohini Shabnam

   Women always get the second position in life, leaving the first to be owned by men.They are not allowed to express their own thoughts and raise their voice against any subject.Just to choke their throat they are not allowed to take proper education.In a relationship,a woman should be treated as the other-half of her husband.Likewise a Nation is incomplete without women.Proper education is needed to be independent for all women.All this forced created problems face a jerk while a collision happened between media and women.
   In 20th century all most everyone has to has an android set with the technology of social networking.Using this social media without putting off their veils,women represent their own creativity infront of the whole world.Though this networking system is somehow virtual but the appreciation and courage what women get from this site, helps them in their real life to improve and grow more and more.All types of creativity is coming forward which remains dark through the last few decades.A good appreciation can make a life full of love and courage.Women get a wider range of vision of life through this social media and doing their best to be a part of this universe.










প্রতিশোধ
        সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

যতদিন থাকি হেথা মৃদু গম্ভীরে
    চলবো উচ্চশিরে রবনা নিরুত্তরে
ঘন গৌরবে জপিব সত্যম্ শিবম্
   কেহ যদিও না সঙ্গ দেয় মৌন অন্তরে।
জেনো, মোর ক্ষীণ দেহ অতি সুকঠোর
     ইঙ্গিতে  শুনিতে পায় চকিতে চাহিয়া
কেহ যদি বাক্য বানে আমারে বৃথা কাঁদায়
তার পানে সহস্র তরঙ্গ লয়ে যাব ধাইয়া।
ভয় করিনা কারে ছিঁড়ে নেব যতেক বন্ধন
   আমারে করো না লাঞ্ছনা টুটে যাবে তব অমিত প্রাঙ্গন।
আছে মোর মেঘমল্লার বজ্রসহ মাখা
   কোথা তবে এসো খুলে দাও শাখা
আমি আজ ঘৃণাভরে করিব রচনা
    কুরুক্ষেত্র মহারণ এর মিথ্যার ছলনা।
আমারে তুচ্ছ ভাবি কোরো না তুলনা
    ব্যর্থ করিব সব মিথ্যা প্রবঞ্চনা।
আমারে চাও যদি বাঁধিতে ব্যবধানে
    আমিও লড়িবো জেনো সমানে সমানে।।









কবিতা : উপলব্ধি!
               বিশ্বজিৎ কর

তুমি আসবে বলে,
কবিতাগুলো খুলে রেখেছে জানালা!
তুমি আসবে বলে,
কথাগুলো চঞ্চল,যেগুলো না-বলা!
আমি আসব বলে,
তোমার মনে অস্বস্তির অনুরণন!
আমি আসব বলে,
দরজায় বিদায়ের আলাপন!
তুমি আসবে না জানি,
খবর দিয়েছে ঝরাপাতা!
আমি আসব জেনেও,
ভালবাসা পেল না আমার কবিতা!








কবিতা
       একলা রাতে
            মিনতি গোস্বামী

শুনছি
বসে বসে
একাই রাতের কান্না
অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায়
রাতের আকাশে বুঝি নক্ষত্র হয়ে
জীবাত্মার সঙ্গে কথা বলে মুচকি হেসে।
নাবলা কথারা ভেসে যায় দূর দেশে
ফকিরা মন চলে দাঁড় বয়ে
অন্ধরা ঘুরে আঁধার হাতড়ায়
বন্ধ পাকশালায় রান্না
তারারা খসে
গুনছি।










                এই দিনগুলো
                         হামিদুল ইসলাম
                    
উদাসীন জীবন
স্বপ্নভরা দিনগুলো আগুনে পোড়ে
পুড়ে যায় পাতাবাহার
আপশোষ নেই কারো, সহমর্মিতাও নেই
বাকি কথা থাক পরে হবে   ।।
নিজেকে নিয়ে ফন্দি আঁটি
জীবন বেতমিজ
ভুলে যাই ইতিহাস
কোথায় আস্তানা ছিলো
এখন ফিরে যাবো  কোথায়   ??
যেতে পারি চাঁদের দেশ
সাগর পাড়ি দিই
জন্মভূমি মাতালের মতো টানে
ফিরে আসি ঘরের চৌকাঠে
শান দিই নিজের পৌরূষ   ।।
দিনগুলো ইতিকথার শেষ কথা না
কথা থাকে আরো অনেক
জন্ম জন্মান্তরের সখীরা পেরিয়ে যায় হালি শহর
খোঁজ রাখে না আমার
আমি নৈঃশব্দে ফিরে যাই জীবন সায়াহ্নে   ।।









কবিতাঃ
       আমার বাংলাদেশ
                   জুয়েল রূহানী

সবুজ-শ্যামল দেশ
রূপের নেইকো শেষ
আমার বাংলাদেশ!
বাংলা মায়ের দেশ
বাংলা ভাষার দেশ
আমার বাংলাদেশ!
রক্তে কেনা দেশ
বীর বাঙ্গালীর দেশ
আমার বাংলাদেশ!
সোনার বাংলাদেশ
নদীমার্তৃক দেশ-
আমার বাংলাদেশ!
আমার বাংলাদেশ
রূপের নেইকো শেষ
হৃদয়ে আমার এই-
বাংলাদেশ।








বেঁচে থাকার  খিদে
                  শুকদেব পাল

এক বাটি পান্তাভাত তাদের কাছে অমৃত
যারা না মরেও বেঁচে আছে ।
ক্ষুধায় ভরা দুটো চোখ দুবেলা পেটপুরে খাওয়ার অপেক্ষায় থাকে হয় তো সে শিশু হয়তো বৃদ্ধা কিংবা বৃদ্ধ ,
পেটে পাথর চাপা দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে বাড়ির যুবতী গৃহবধূ ,কিছুটা প্রশমিত তো হয় ,
চালের কলসি ফাঁকা দানা নেই দেনা আছে ,
তবুও সম্মান বিকতে পারে না ।
টাকা পয়সা তো উদত্যাগী তাই ধরে রাখতে পারে নি , উনুনের ধোঁয়া ঢেকে রাখে দারিদ্রতা ।
পাঁচদিনে ফেরি করে জোটে না চাল আটা ,
জীর্ণতার ছায়া প্রেত হয়ে ঘুরে ফিরে ,
সব ভূতে কি ঘাড় মটকায় ?
রাতেও ঘুম আসে না এই ভেবে পরের দিনের অন্ন সংস্থান ......
কিন্তু ভিক্ষার সাহায্য নিবে না , তাতে উপবাস থাকা ভালো !
স্বপনের সিড়ি গুলি মনে গাঁথতে থাকে
একদিন অট্টালিকা হবে ....
মনের বাগানে আশার বৃক্ষ বাড়তে থাকে হয়তো একদিন পাঁপড়ি ছড়ানো ফুল ফুটবে !
কিন্তু দুরসময় বিদ্রুপ হাসি হাসতে থাকে ,
শরীরের সেই শক্তিও হারিয়ে যায় এক বাটি পান্তা ভাতে যে থাকে !









সুবিমল বাবুর পাল্টে যাওয়া জীবন যাত্রা
            ডা: নরেন্দ্র নাথ নস্কর

সুবিমল সরকার একজন কেন্দ্রীয় সরকারি কেরানি। বাড়িতে ওকে নিয়ে চারজন মানুষ। দুই ছেলে মেয়ে আর স্ত্রী। একজন স্কুলে ও একজন কলেজে পড়ে। যা মাইনে পায় যাহোক করে চলে যায় সংসার। কারো কাছে হাত পাততে ও চায় না। বলে কারো ঋণ রেখে যেতে নেই। ছেলে মেয়েরা যদি শোধ না করে? বরঞ্চ বিপদে আপদে সামর্থ অনুসারে সাহায্য সে করে। সামান্য জমি আছে। অবসর সময়ে একটু চাষের সখ আছে।
যে মরসুমে যে যে সব্জি হয়,একটু চাষ করে। কিছু ফলের গাছ আছে। যেমন আম কাঁঠাল পেয়ারা ও লিচু গাছ। কোথাও বিক্রি করে না। নিজেদের চলে বরং অনেক আত্মীয় স্বজনদের কিছু দিয়ে দেয়।
একটু মিশুকে মানুষ সুবিমল বাবু। কাজ ছাড়া একটু খেলার নেশা আছে। পাড়ার ক্লাবে একটু কেরম ও কখনও একটু দাবা খেলার অভ্যস আছে। পরিচিত লোকের সাথে একটু গল্প করে থাকে অবসর আড্ডায়। মাঝে মাঝে একটু চা মুড়ি খেতে ভালবাসে। শান্তিপ্রিয় মানুষ তাই কখনো কারো সাথে সে ঝগড়া করে না।
স্থানীয় মানুষ জন তাকে ভালবাসে ও শ্রদ্ধা করে।
কিন্তু কোথা থেকে এই করোনা উপদ্রবে ও লগডাউনের দৌলতে তার এই আড্ডা ও লোকের সঙ্গে মেশামিশি বন্ধ হয়ে গেল। সরকারি নির্দেশে ও অদৃশ্য ভয়ে সে আর বাইরে বের হওয়ার সাহস পায় না। অফিসেও সপ্তাহে তিন দিন যেতে হয়। সেখানেও সহকর্মীদের সাথে আগের মতো কথা হয় না। সারাক্ষণ শুধু মাস্ক পরে থাকতে হয়।
কি অফিসে কি পাড়ায় বা ক্লাবে তার কথা  বলা খুব প্রয়োজন ছাড়া প্রায় কয়েক মাস বন্ধ হয়ে গেছে। সবাই কেমন দুরত্ব রেখে চলে।
কি করবে,শুধু সময় একটু বেশি দেয় অব সর ও ছুটির দিনে চাষের কাজে। বাড়ীর লোকের সঙ্গে কত আর কথা বলা যায়। ছেলে মেয়েরা সারাদিন অনলাইন ক্লাসে ব্যস্ত থাকে।
এখন বেশি কথা বলে জমিতে গাছের সাথে। আপন মনে একা গাছের সঙ্গে কথা বলে। তাদের গায়ে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয়। গাছে কত রকম পাখি আসে। বসে বসে তাদের ডাক শোনে। কখনও বা তাদের শস্য বীজ বা মুড়ি খেতে দেয়। কিছু দিন পরে পখিরাও যেন কেমন সুবিমল বাবুকে দেখে আর ততটা ভয় পায় না। এই ভাবে অনেক দিন কাটার পর তার পাখিদের প্রতি যেন কেমন মায়া পড়ে গেছে। একদিন জমিতে না যেতে পারলে সুবিমল বাবুর যেন কেমন কষ্ট হয়।  সেই শূন্যতা এই গাছ ও পাখিরা অনেকটা নিয়ে নিয়েছে।
গাছ,পাখি আকাশ হাওয়া ও এই প্রকৃতি যে কত সুন্দর,এরাও যে কথা বলে,এদেরও একটা ভাষা আছে, সেটা সুবিমলবাবু আগে জানত না বা উপলব্ধি করে নি কোন দিন।
মনে মনে এখন  এই জীবন যাত্রাকে সে ধন্যবাদ জানায়।
এই পাল্টে যাওয়া জীবন যে কত আনন্দের সেটা সে বুঝতে পারেনি।
মানুষের সাথে মিশলে যে আনন্দ আগে পেত,তার থেকে বেশি আনন্দ সুবিমল প্রকৃতির সাথে মিশে পাচ্ছে।







       বিভাগ--অনুগল্প
বাবা করছে মেয়ে পাচার
         মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ

আজকাল সমাজ বড়ো উৎসস্থল গ্রামগঞ্জে দূরগন্ধ ছড়াছে।দূরগন্ধ হল বাচ্চা শিশুদের র্ধষন,নারীপাচার,তাদের প্রতি অসামাজিক ব‍্যবহার করা হচ্ছে।
       একটা ১৪ বছরের মেয়ে তার অবুজ প্রেমে একটা ছেলেকে জীবন সঙ্গী করতে
চাইলো,মেয়েটির বাবা তার আবেগের দিকে তাকিয়ে তাকে বিবাহ দেয়।পরে যখন ওই মেয়েটির একটা সন্তান হয় সন্তানটি পরিপূরক পুষ্টি পায় না,ফলে খোড়া,কানা হওয়া দেখা য়ায়।
        শুধু তাই নয়, একটা ছেলে তার বংশপরিচয়
নেই,কলকাতার একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে।পরে ছেলেটি উকিল ধরে বিবাহ করার জন‍্য।উকিলটি টাকা খেয়ে মেয়ের সন্ধান আনে,মেয়েটির পরিবারে বাবা,মা,এক ভাই আর চার বোন খুব দরিদ্র পরিবার নুন আনতে পান্তা ফুরায়।উকিলটি ওই পরিবারে গিয়ে যখন প্রস্তাব করেন তখন মেয়েটির বাবা বলেন আমি গরিব। মেয়ের বিবাহ দেবার মতো কোনো সমর্থ নেয়।উকিলটি বলেন ও-নিয়ে চিন্তা করোনা রাজি থাকলে ছেলে সব করবে। মেয়েটির বাবা রাজি হয়ে যায়।কিন্তু মেয়টির বাবা একবারও জানতে চাইলো না ছেলে কি করে,সে মেয়ের উপোযুক্ত পাত্র কিনা ফলে বিবাহ হলো। কিছুদিন পরে বাবা গিয়ে দেখেন ঘরে তালা ঝলানো,খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ছেলেটি পাচার কারি।এখানে মেয়ের প্রতি বাবার এই পাচারের কথা বলা হয়েছে।


    উপকণ্ঠ শারদ সংখ্যা- 2020                


আমাদের পরবর্তী বিশেষ সংখ্যা  
           "উপকণ্ঠ শারদ সংখ্যা-2020"
লেখা পাঠান :- 08 Sep 2020 থেকে 16 Sep 2020 এর মধ্যে
শারদীয়া সংখ্যার জন্য লেখা পাঠান কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নেই  যে ধরনের লেখা পাঠাবেন 👇👇👇👇
১) হাইকু, অনুকবিতা, লিমেরিক, কবিতা
২) অনু গল্প, ছোটোগল্প, গল্প 
৩) প্রবন্ধ, জীবনী, স্মৃতি কথা, চিঠি, ভ্রমন কাহিনী
৪) ইংরেজি:-
        Poem, Short story, Story, Essay 
• নিদির্ষ্ট কোনো শব্দসীমা নেই
• whatsaap তে টাইপ করে পাঠান 
• 9593043577 এই নং তে 
• লেখার উপর অবশ্যই উল্লেখ করবেন  "উপকণ্ঠ শারদ সংখ্যা- 2020"  
পত্রিকা প্রকাশ করা হবে- 17 Sep 2020 , বিকাল 3টা (মহালয়ার দিন) 




1 টি মন্তব্য: