উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 19/09/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 19/09/2020
অভাগীরা
হামিদুল ইসলাম
নদী পেরিয়ে চলে দেশ দশান্তর
নদীর কোলে জন্ম নিয়েছিলো
অভাগীরা
নদী ছিলো ওদের মা ।।
বিছানো জল
আয়নার মতো স্বচ্ছ
সে জলে নেমে প্রতিদিন তর্পণ করতো ওরা
নদী মা'কে ।।
নদীতে জোয়ার আসলে
জীবন উথলে উঠতো মাছের মতো
অভাগীরা নদীর মাছ ধরতো
পেটের টানে ।।
সেই নদী একদিন
বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেলো ওদের
অথৈ জল
অথৈ জীবন ।।
সেই থেকে নদীর সঙ্গে সম্পর্ক আলাদা হয়ে গেলো ওদের
ওরা এখন চালকলের শ্রমিক ।।
দুঃখের কবি আমি
শংকর হালদার
দুঃখের কবি আমি
আলোর স্বপন্ দেখি'নি,
ভূমিতে শয়ন আমার
হর্ম্য নকশা আঁকি'নি ।
বিষের ছোবলে দিশেহারা
চাতকের পথ ধরেছি,
দৃঢ় পায়ে চলেছি একা
সুষম্ আলো মেখেছি ।
পেয়েছি খেতে পেট ভরা নয়
অনশনে কাটে দিন,
হারতে বসে হারাতে পারেনি তবু
সমাজ চোখে হীন ।
রেশন সারিতে ঝরেছে ঘাম
ঋতুভেদে পরীক্ষা,
অবিচল থেকেছি আপন কর্মে
পাষাণ মন্ত্রে দীক্ষা ।
দুঃখীর তরে কাতর প্রাণ
রেখেছি জীবন বাজি ,
এই আছি এই নেই
পণ পালনে রাজি ।
মাটির ঘরে জনম্ আমার
কপাল ঢাকা মেঘে,
আকাশ ফুঁড়ে আলো দেবে
উঠবে কবে জেগে ।
দুঃখের কবি আমি
জীবন তরী বায় ,
দৃঢ়হাতে ধরেছি হাল
জানিনা যাবো কোথায় !
কবিতা : ঋণী
বিশ্বজিৎ কর
দেনা হয়ে গেছে কবিতার কাছে,বহর বেড়ে যাওয়ার আগে পালিয়ে যেতে চাই!
পছন্দ-অপছন্দের অভিমানে কবিতা আমার কষ্টে আছে!
অভাবের তাড়নায় কবিতা আমার উপযুক্ত ছন্দের ভিক্ষা চায়!
চোখের জল চোখেই যায় শুকিয়ে, কেউ আসে না এগিয়ে!
অন্তিমদশায় কবিতাগুলো ছুঁড়ে দিও,অপছন্দের ভাগাড়ে!
কবিতার মৃত্যু দেখতে দেখতে-
আমি শেষ কবিতা লিখব সেদিন!
পরিবেশ
আব্দুল রাহাজ
পরিবেশ পরিবেশ তুমি কি খুব ক্লান্ত হয়ে আছো
তোমার শোভা তোমার মনোরম দৃশ্য আর দেখতে পাবো না আমরা।
তুমি যে দূষণে জর্জরিত যদিও শোভা মেলে তাকাও তাতে আছে অসহায়তা রোগা জীর্ণ এক ফ্যাকাশে পরিবেশ।
তুমি তো মানুষের কত উপকার করো কিন্তু মানুষ তোমার বিপদের দিনে এখনো পর্যন্ত পাশে দাঁড়ায়নি
সত্যিই আফসোসের বিষয় পরিবেশ তুমি কিন্তু অতোলে চলে যেতে চলেছো।
হে মানুষ
পরিবেশকে হাতছাড়া করতে দিওনা অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে আমাদের
সুন্দর মায়াভরা পৃথিবী রসাতলে চলে যাবে। তোমরা জাগ্ৰত হও
সবাইকে একজোট করো
আমাদের পরিবেশ কে সবাই মিলে আবার রূপ দান করো
তা না হলে একদিন আমরা একদিন বড়োই বিপদে পড়বো।
তোর মনে আছে ?
শ্রীকান্ত মালাকার
দোয়েল, তোর মনে আছে?
সুরেশ স্যারের বাড়িতে পড়ার শেষে,
দিয়েছিলি খোপা থেকে খুলে গোলাপ।
তোর খোপাতে গোলাপ দেখে,
আমি কিন্তু বুঝতে পারিনি সেটা আমার জন্যই এনেছিলি।
আমি সেই গোলাপ আজও রেখেদিয়েছি;
দশম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের 56 নম্বর পাতায়।
যদি ইচ্ছে হয় ,তবে দেখে যাস।
দোয়েল, তোর মনে আছে?
একাদশ শ্রেণিতে লিপি ম্যামের বাংলা ক্লাসে;
প্রথম প্রেমপত্র দিয়েছিলি রুমালে নেলপলিশ দিয়ে লিখে।
লেখার রংটা একটু বদলেছে ,,
তবু রেখে দিয়েছি - স্কুল ড্রেসের প্যান্টের পকেটের।
যদি পারিস, তবে পড়ে যাস।
দোয়েল, তোর মনে আছে?
প্রথম মোবাইল কিনে তোকে যখন দেখালাম।
তুই বাইনা করলি মোবাইলটা নেবার জন্য;
আমি দিয়েও দিলাম,,,
তারপরের দিন যখন ফেরত দিলি তখন দেখলাম:
তোর গলাতে রেকর্ডিং করা আছে "তুমি আছো এত কাছে তাই ...."
সেই গানটি আমি আজও মুছিনি।
যদি সম্ভব হয়,তবে শুনে যাস।
দোয়েল, তোর মনে আছে?
চাকরি পেয়ে বাড়িতে এসেছিলি মিষ্টির প্যাকেট দিতে। আমি পড়ার ঘরে আছি শুনে,,
এক ছুটে এসেছিলি দোতালায়।
আর আমাকে একা পেয়ে কাছে পেতে চেয়েছিলি।
কিন্তু আমি যাইনি - বলেছিলাম বিয়ের পর।
আজ তুই বিবাহিত আর আমি চিরকুমার!
যদি মনে হয়,তবে খবর নিস।
দোয়েল, তোর মনে আছে?
তুই যেদিন বললি তোর জীবনে আমার আর কোন জায়গা নাই।
আমি সেদিন সকলের আড়ালে শুধু কেঁদেছিলাম।আর তোর নাম নিয়ে রচিত সকল কবিতার ঘরবাড়ি গুলি;
একে একে ফেলে দিয়েছিলাম বাড়ির পেছনের জঙ্গলে।
তবে, সেই পাতা ছেঁড়া ডায়েরিটা আজও আছে।
যদি কোনদিন সময় পাস, তবে নিয়ে যাস।।
বিজ্ঞান পড়ান উনি
মম
উনি
খুবই গুনি।
পদার্থ বিজ্ঞান পড়ান ক্লাসে।
স্টুডেন্টসদের ফুল মার্ক আসে।
এতো ভালো পড়ান উনি।
অতি সবল শিক্ষায় উনি।
শক্তিশালী হয়েও ব্রেনে,
উনি কিন্তু দুর্বল আপন মনে।
সর্বাঙ্গে জ্যোতিষ রত্ন পাথর পড়া।
জ্যোতিষীর সৎ পরামর্শেই
এ সব ধারণ করা।
নিজ নত শিরে ন্যান উনি মেনে।
গ্রহ দোষ দূর হবে,
এ সবের পরশেই।
যদিও খুব ভালো আছে
ওনার বিজ্ঞানটা পড়া।
তবে? তবে? তবে?
তবুও সাবধানী
যদি গ্রহ দোষ ধরে পাছে।
যতই হোক না ক্যানো
উন্নত আধুনিক বিজ্ঞানই,
এ সব তো আর নয় ভ্রান্ত বিশ্বাস!
বিজ্ঞান পড়ান, তাতে কি আছে?
গ্রহ রত্ন পাথর থাকুক না হয় কাছে।
যতদিন চলবে দেহের শ্বাস।
ওনার অঙ্গ থেকে
এ সব মৃত্যুর আগে
খোলা হয় না যেন।
জ্যোতিষী বলেছেন যে এঁকে।
কি জানি কি কোন না কোন গ্রহের প্রকোপ লাগে?
প্রার্থনা
মাওলানা মহবুবুর রহমান
প্রভু তব দরবারে,
তুলেছি দুটি হাত।
করুণার সাগর তুমি,
জগতের নাথ।
ক্ষমা করো নরমানবে,
কিছুই বুঝে না তারা।
তোমার বাণী ভুলে সবে,
হয়েছে পথ হারা।
তুমিই সুপথ দেখাও বিভু,
ফেরাও মনের মতি।
করুণার বলয়ে জড়াও তাদের,
নাশো সকল দুর্গতি।
প্রবল বিশ্বাস,শক্তি দাও,
দেখাও সঠিক দিশা।
শান্তি আসুক ধরাপরে,
দূর হোক অমানিশা।
প্রার্থণা মোর গ্রহণ করো,
এইটুকু আকুল মিনতি।
তোমার পদে লুটিয়ে জানাই,
লক্ষ কোটি প্রণতি।
হচ্ছি যখন একা
মিনতি গোস্বামী
এক এক করে
সবাই চলে যাচ্ছে দূরে
ক্রমশ সরে যাচ্ছে স্নেহচ্ছায়া
নিজেই সামলাচ্ছি নিজের কায়া।
খেতভরা ফসলের মত
অমৃতের পরশ ছিল একদিন
সে অমৃত চেটে চেটে
বাড়িয়ে গিয়েছি শুধু ঋণ।
অমৃতের দিন শেষ
মাটি ভরা শুধু বিষ
সেই বিষ পান করে
কাটাতে হবে অহর্নিশ।
জনজীবন
সেক আসাদ আহমেদ
অবিশ্রান্ত পৃথিবীর মন —
কুশলী মানবজীবন ;
বিপ্লব আজ স্বার্থপরতার বিরাজে , তাই
শান্তির সুখ আজ রাজনৈতিকতার ভাই।
ক্ষণিকের ক্ষণে মিথ্যাচারণ
বুদ্ধিজীবিদের জীবন-ধারণ ;
রাত্রি দিন অন্ধকারে
পূর্ণ আজ স্বার্থের কারবারে।
স্বার্থান্বেষী স্বার্থ সুখী মন
বিপন্ন আজ জনজীবন...
তবে কার জন্য পাতা এ সিংহাসন?
যাক না মুছে অসত্যের শাসন
উষ্ণ বুকে স্বার্থের বিপক্ষে উঠুক মেতে
ভেসে যাক ওরা বিপ্লবের জনস্রোতে...
জানো কি?
তৃণা মুখার্জী
তোমাদের শহরের সঙ্গে আমার গ্রামের পার্থক্য কি জানো?
আমার গ্রাম কথায় কথায় ইংরেজি বলে না। সাদামাটা তার জীবন।
so called স্মার্ট নয় ।
বৃষ্টি হলে রোমান্টিক হওয়ার জো নেই।
ছাদ বাঁচাতে হবে যে।
সুযোগ কম তা জেনেও আশায় বুক বাঁধে ।
অনেকটা রাস্তা পার হয়ে যখন কেউ বলে, ওর দ্বারা কিছু হবে না।
গ্রামে আবার প্রতিভা থাকে নাকি?
তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কলম বলে.......
ওরা জানে কি?
শহরের ইট-কাঠের দ্বন্দ্বে গ্রামের সবুজ জিতবে।
কারণ বিশুদ্ধ অক্সিজেনটা গ্রামে হঠাৎ বেড়ে ওঠা কোনো অজানা গাছ দেয়,তোমাদের বানানো লাখ টাকার বোটানিক্যাল গার্ডেন নয়।
মায়াবিনী
বিপ্লব গোস্বামী
তুমি এসো না মোর
মনের এ পারে,
তুমি যেন স্বপ্ন মোর
কাছে পেয়েও তোমায়
হারাই বারে বারে।
ধরা তুমি দেও না
তাই বাড়ে মনে কামনা,
কাছে পায়েও যেন মনে হয়
দূর হতে ভালোবাসো
নিকটে এসো না।
ঘুমে বিভোর ধরিত্রী
সাফরিদ সেখ
নিস্তব্ধ দুপুর রজনী এখন
ঘুমে বিভোর ধরিত্রী এখন।
অসময়ে কাঁচা ঘুমে জাগাতে নেই,
ঘুমের ব্যাঘাত হবে ,মেজাজ চটবে।
তার কি দোষ ছিল বলো?
আজ নিশীথে আসার কথা ছিলো না তো!
দুপুর প্রাতে এমন কথা কই হলো?
আজ নয় অন্য কোনো নিশী।
দুপুর রজনী পর হলো,বিকেল রাত।
রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙলো নেংটি সারমেয়।
হেঁটে গেল বধূটি সিক্ত কাপড়ে শরীর ঢেকে।
পিছনে লোকটির পরনে পানছা কেবলই।
রাত্রি এখন আড়মোড়া ভাঙে,জগা
চুল্লিতে কয়লা ফেলে,বালতিতে জল আনে,
নিত্য দিনের জীবিকা তার,উঠেছে সে
একে একে জমে ওঠে ভিড় দোকানে তার।
কোলাহল
এমাজদ্দিন সেখ
গভীর রাতে ঘুম নাই ; যেন কার কোলাহল শুনি;
থালা - তালির ঝনঝনানি,বর্জ্র চিৎকার শুনি।
কান পেতে শুনি ,যেন ফেটে যায় পর্দা খানি ;
চোখ মেলে দেখি , যেন ঝলসে যায় চোখ খানি !
চোখ বুজে ভাবি ,কিছু বুঝিতে না পারি l.
অথৈ সাগর, নিটোল আঁধার পেরোতে না পারি l
গভীর রাতে আমি কার কোলাহল শুনি ?
ভয় - শিহরণ - কাঠ প্রাণে কার কোলাহল শুনি ?
হতে পারে, ওই গাছে ঝুলে পড়া লাখো অভাবী কৃষকের প্রাণ ;
হতে পারে , কাজ হারানো লাখো শ্রমিকেরা দৃপ্ত স্লোগান ;
হতে পারে , কাজ না পাওয়া কোটি ছাত্র- যুবের প্যারোডি গান ! ....
চেনা স্বর , কাছের মানুষ তবু চিনতে না পারি !
একই ব্যাথা , যন্ত্রণা সাগর তবু মিশতে না পারি !
তবুও দিনের আলোয় বুক ফুলিয়ে মানুষের বাড়ায় করি ! ...
দেশের মানুষ প্রমাণ দিতে ; অতিমারীর আঁধারে ডুব মারি ; ....
অনাহারে লাশের পাহাড় ; করোনা আফিমে ঘুমাই !
বর্ষ পূজা ভোট বৈতরণী এলে, 'পুলওয়ামা ' জাগে ভাই !
আলো- আঁধারির গোলক ধাঁধায় পৃথিবী ঘুমায় ; .....
সেই আঁধারে কোন পিশাচে রক্ত শুষে খায় ?
রাত শেষে ঐ ভোর হয় , সূর্যালোকে কুয়াশা সরে যায় ; ...
যুগান্তের বঞ্চিত ব্যাথায় আকাশ ভেঙে যায় !
মাভৈ ! মানব সাগরের কোলাহল শোনা যায় !
নতুন দিনের আশার আলোয় বুক ভরে যায় ......
ভাদুগানে ভাদু বরণ..
শুভ্রাংশু কুম্ভকার
ভাদর মাসের আকাল দিনে
ঘরে আল্য ভাদুধন,
চাল,চিঁড়া,গম নাইখ ঘরে
খ্যাইতে দিব কি এখন?
কাশীপুরের রাজার ঘরে
জনম লিলেক মা হামার
রূপে, গুণে, নাচে,গানে
ক্যাইড়ে লিলেক মন সবার।
বর্ধমানের রাজার কুমার
বর সাজে আইস্যতে ছিল,
পথের মাঝে ডাকাইতগিলা
পরাণটা ক্যাইড়ে লিল।
লগন ভাঙা ভাদুমণি
বাঁইচব্যাক গো কেমন কইর্যে,
রাইখল্য নাই জীবনটা বিটি
ঝাঁপ দিয়ে দিল মইর্যে।
মানভুঁইয়ারা মনে রাইখ্যে
ভাদুকে পূজে একমাস,
সাঁকরাইতে জাগরণ করে গো
তুমাতে রাখে বিশ্বাস।
ঘরের বিটি খুদ কুড়াতেও
খুশি হইয়্যে রইয়্যে যায়,
তবুও জুটায় খাজা ঝিলপি
যে যেটা পারে সেটাই।
বিদায় দিলম জলে মাগো
ভাসান দিনের সকালে,
আইসবে যাবে তুমি মাগো
হামরা যে থাইকব্ ভাইল্যে।
Valo Laglo Ajker Protisthapona. Thanks Ashad...
উত্তরমুছুন💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐
Thankyou Sir
মুছুনআজকের পত্রিকা খুবই বৈচিত্র্যময় , সুন্দর ।
উত্তরমুছুননিরন্তর শুভকামনা রইল উপকন্ঠর জন্য