মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 22/09/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 22/09/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 22/09/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 22/09/2020

" উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"

   (ওয়েব ম্যাগাজিন)
  উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 22/09/2020
প্রকাশ কাল:-22/09/2020, মঙ্গলবার
   সময় :- সন্ধ্যা 7:30 টা

সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇

হাইকু কবিতা
            শংকর হালদার

০১।
কাশবনে ঐ
লেগেছে যে দোল
শরৎ প্রাতেঃ ।
০২।
শুভ্র মেঘের
পায়ে পায়ে উল্লাস
শরৎ এলো ।
০৩ ।
মমতা ভরা
আমার মা তুমি, যে
দুর্গতি নাশে ।
০৪।
এঁকেছি তব
আলপনা'র রঙে
ভরা বসন্তে ।
০৫।
গোধূলি বেলা
স্বপ্ন ভাসে আবিরে
কেমন খেলা!
০৬।
সম্পর্ক কাঁদে
বিচ্যুতি রেখা ধরে
মিলন রাতে ।
০৭।
অনেক দোষে
দুষ্ট মন ও প্রাণ
নিরবে কাঁদি ।
০৮।
মাটির বুকে
স্বপ্ন আঁকা জীবন
মাটির গর্ব ।
০৯।
বিষন্ন মন
সোনা ঝুড়ি রোদ্দুর
গ্রীষ্ম এলো রে ।
১০।
হয়নি প্রাতঃ
তুমি আসবে বলে
জাগেনি পাখি ।




  হাইকু
       দুর্যোগে  আশা
                 এমাজদ্দিন সেখ

ভেজা বাতাস
স্নিগ্ধ  শীতল  বায়ু
বে- দিশা চিন্তা l

কাঁপে পায়রা 
উড়ান  অক্ষম  দানা
  দুশ্চিন্তা  খুঁকি l

অনেক ধারা
অজানা প্রশ্ন মালা
মেঘের ভ্রূকুটি l

লাল শাপলা
কাশ ফুলের গান
উৎসব মুখর l

ঘূর্ণি ঝঞ্ঝা 
বাধ সাধে  আনন্দে
আশঙ্কা মনে l

  পবন তালে
ধান  শিশ দোলে
আশ্বাস  প্রাণে l

মহাকাল গতি
মানুষ থাকে যদি
আবার হবে l






একটা বুড়ো লোক
               সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

    আমি সামান্য এক লোক
           কেউ চেনেনা আমাকে।
ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার কেন চিনবে
      অতি সাধারণ এক  আমানতকারী যে।
যারা বড় বড় টাকা জমা রাখে তারা প্রায়ই যায়
    ক্যাশিয়ার তাদের চেনে।
বয়সটা বছর তিরিশ হবে ক্যাশিয়ার ছেলেটার
  কিন্তু ভীষণ অহঙ্কারী
   সিনিয়র সিটিজেনদের সম্মান দিতে শেখেনি
চাকরিটা যে ব্যাঙ্কের- তাই
    নিজের মতো করে যা তা বলে গেল
     আমাকে উদ্দেশ্য করে।।

         আমি গিয়েছিলাম
   সামান্য টাকার প্রয়োজনে।
    সইটা মিলছে না চেকে
কারণ হাতটা কেঁপেছে বলে।
কাঁচা বয়েসের সই এখন মিলবেই বা কেন?
তাই ক্যাশিয়ার বাহাদুর ডাক্তারি সার্টিফিকেট চাইলেন।

আমি চুপ----
    ক্যাশিয়ার বাহাদুর এমন কথা বলতে পারেন নাকি--
ভুলে গিয়েছিলাম, অত্যন্ত সাধারণ আমানতকারী আমি।
  আমার মতো এমন আছে হাজারে হাজারে
  অল্প ই যাদের সঞ্চয়।

এটা গল্প বলে ভাবলে হবে না
একটা ৭০ বয়সের লোকের আত্মপ্রকাশ।
   বডো দুঃখ তার।

   তার স্বভাবের গভীরে
অসাধারণ কিছু লুকিয়ে রয়েছে হয়তো
কেমন করে প্রকাশ করবে
ঢাকা ঢোল  পিটিয়ে জানাবে
কাঁচা বয়েসের এমনিই দুর্ব্যবহার!
যেন বিকিয়ে গেল আপন স্বত্ত্বা।।

     খেপে উঠলাম।
নীরবে রইলাম নতশিরে
প্রতিহিংসার মানসিকতায়।

গল্পকার গল্প লিখুন
আচ্ছা করে
নাম দিন ----প্রতিশোধ!

সমস্ত অস্তিত্বকে হার মানিয়ে
     পাতার পর পাতা ভরুক
  বয়স্কদের সম্মানে

বিধাতা পুরুষ অলক্ষ্যে হাসান
দীর্ঘ জ্যোতির্বিদের হাত ধরে

দুঃখের জ্বালায়  পুড়ুক বয়স
    কানাকানি হাসাহাসি চলুক

      আমি বাঁচি
আমার আপন মজ্জায়
আপন অস্তিত্বের ক্ষতি না করে করে।
হায়রে বয়েসের  বাষ্প
হায়রে জ্ঞানী গুণীজন
হায়রে স্বল্প বয়েসের অহংকার!!!!







প্রবন্ধ
      জাগো কলম, তুমি  জাগো
        ডঃ রমলা মুখার্জী

বেঁচে থাকার লড়াই যখন তীব্র হয়ে ওঠে, চারিদিক থেকে কালসাপেরা যখন ছোঁবল মারতে উদ্যত হয় শান্তির ললিত বাণীর মত কোনো স্বপ্নময় আশ্রয় নয়, বরং চাবুক চালানো উদ্দীপক লেখনীরা উঠে আসুক লেখক, কবির কলমে; যেমনটি উঠে এসেছিল বিদ্রোহী কবির কলমে,
"আমি চিরদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস।"
দেশকে রক্ষার জন্যে এভাবেই তো শব্দের করিগররা যুগে যুগে উদ্বুদ্ধ করেছেন আপামর জনসাধারণকে। কত মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেশের কাজে নিজের জীবন তুচ্ছ করে।  জন্ম হয়েছে শত শত দেশপ্রমিকের।
       মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের টানাটানিতে কল্পনারা বাস্তবের মাটি ছেড়ে উধাও হয় কল্পলোকে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষ তখন অহরহ যুদ্ধ করে চলে। নিরন্নের কান্নায় ভেসে যায় ললিত বাণীসকল।
      কালনাগিনীর মত শত্রুরা আজ ধেয়ে আসছে চারিদিক থেকে। একদিকে মারণ অসুখ, অন্যদিকে বহিঃশক্তির হানা দেশকে আষ্টেপৃষ্টে অক্টোপাসের মত জড়িয়ে ধরেছে। এই চরম দুঃসময়ে লেখক, কবিদের বড় দায় দেশবাসীকে দেশমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে মরণ পণ লড়াইয়ে আহুতি দেবার জন্য জনমনের মাটিকে কর্ষণ করার। অসির থেকেও শক্তিশালী সেই  মসির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কত কবি, লেখক কত অসাধ্য সাধন করেছেন তা তো আমরা ইতিহাসের পাতা ওল্টালেই দেখতে পাই।রজণীকান্তের "মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই " গানে এখনও আমরা মনে জোর পাই। দেশজ জিনিসের প্রতি আস্হা, দেশজ সহবরাহ বৃদ্ধি, এগুলির প্রতি প্রতিটি নাগরিক যাতে সজাগ দৃষ্টি রাখে সেজন্য কবি, লেখকরা তাঁদের লেখনী শক্তি দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে ঐকাজে তাদের প্ররোচিত করুক। দেশের মেধাকে দেশের কাজে লাগানোর জন্যই  উৎসর্গ হোক। কবি হাল ধর, অলীক আকাশকুসুমকে ছুঁড়ে ফেলে চরম বাস্তবের সম্মুখীন হও।
    আরাম, ভোগবিলাস বর্জণ করে অতি অল্পেও যে বেঁচে থাকা যায়, সে পাঠ তো আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে কিছুটা পেলাম, তবুও তো কিছু বাকি থেকেই যায়। কবি, লেখকের লেখনী থেকে বাকি শিক্ষা আমাদের নিতে হবে। কবির ললিত বাণী পরিস্থিতির সাথে পরিবর্তিত হয়েছে যুগে যুগে। আবার আসুক প্রচন্ড পরিবর্তন; শব্দের কুঠারের প্রচণ্ড কোপে কাঁপুক জনগনের হৃদপিন্ড, তড়িৎ খেলুক তাদের স্নায়ুরজ্জুতে, তন্দ্রা ভেঙে ছুটে যাক ধনী, মধ্যবিত্ত, সর্বহারা। আজ সবার বিপদ; মহামারী, শত্রুহানা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেশ একেবারে নাজেহাল।  চাবুকের পর চাবুক হোক লেখনীর প্রতিটা শব্দ। আরামের, ভোগবিলাসের, স্বার্থপরতার ঘরে চাবুক পড়ুক। জেগে উঠুক ভাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা। সবাই ছুটে যাক দেশমায়ের হাতের তেরঙ্গা পতাকার তলায়।

পরমাণুদের জোটবদ্ধ করে মহাশক্তিকণায় কলম ভরাও কবি;
ঝর্ণা কলমে আছড়ে পড়ুক অদৃশ্য মহামিছিল।
কবি, সূর্যের দিকে মুখ ফেরাও, বিকিরণ কর আক্ষরিক তেজ....
চেতনার চাবুকে ক্ষত-বিক্ষত সেই কবিতার পাহাড়ে জন্ম নিক লক্ষ ওষধি,
সেরে যাক মানুষের পঞ্চরিপুর প্রবৃত্তি।





           জমানো
    অঞ্জলি দে নন্দী, মম

রান্না ঘরের এক কোণে পড়ে থাকা বিরাট গা ফুটো মাটির জালাটার ওখানে থাকার তেমন কোন দরকার নেই। তবুও আছে। তিন পুরুষের না না না তিন নারীর আমলের ব্যবহৃত বলে। এখন বৌমা ওটা শুধু মাঝে মধ্যে সাফ করে। একটু ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে গা, কানা মোছে মাত্র। মাকড়সার জাল, ঝুল, ধূলো পড়ে তো। বৌমার শাশুড়ী ওর ভেতরে পাকা তেঁতুল গাছ থেকে লোক উঠিয়ে পারিয়ে তা চাঁদের আলোয় উঠোনে খেঁজুর পাতার চ্যাটা মিলে পা ছড়িয়ে বসে বোঁটিতে কেটে কেটে কেটে বীজগুলো বের করে নিয়ে সেই তেঁতুল ওই জালায় জমিয়ে রাখতো। আর সারা বছর নিজের ও পাড়ার সবার কাজে লাগতো। যার যখন দরকার পড়ত এসে চেয়ে নিয়ে যেত। আর সে উদার হস্তে তা দান করত। বীজগুলো গরুর গোবরের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে বলত ঝিকে ও তা দিয়ে ঘুঁটে দিতে বলত। এতে করে ওই ঘুঁটে খুব ভালো জ্বলে। এবার তারও আগের - তার শাশুড়ী ওর ভেতরে নানান বীজ জমা করে রাখত। ওটার নাম ছিল, বীজের জালা। সবাই ও বীজ চেয়ে নিয়ে গিয়ে গাছ করত। তার ফুল, ফল সব্জী নিজেদের সংসারের কাজে লাগাত। সে নিজের পরিবারের কাজেও লাগতো। শখের বাগান ছিল যে তার। এ যেন নোহার গল্পের মত। এক কথায় জালাটি সংরক্ষণ কার্যে ব্যবহৃত হত। এবার এই বৌমা এতে কিছুই রাখে না। খালি পড়ে আছে। গায়ের ফুটোগুলো দিয়ে পিঁপড়া ভেতরে ঢোকে। তাই একদিন ও ওটি বাড়ির ঝিকে দিয়ে দিল। সে বলল, "আমি এটি নিয়ে কি করব? তুমিই রেখে দাও!" তো বৌমা ওটার ভেতরে পুরোনো আমলের রজত বর্তনগুলি রেখে দেয়। জালার মুখটায় একটা বিরাট পিতলের হাঁড়ি বসিয়ে রেখেছে। ওটায় রোজ রান্নার চাল থাকে। ওটার মুখেও ঢাকা দেওয়া। হঠাৎ একদিন জালাটা নিজে নিজেই ভেঙে গেল। পর টুকরোগুলি বৌমা ফেলতে গিয়ে দেখল, তাতে আটকে রয়েছে প্রচুর হীরে। অবাক। ও বুঝলো না কীভাবে এ সম্ভব? জালাটা তো কুমোর প্রথমে মাটি দিয়ে বানায়। তারপর তো সেই কাঁচা জালা আগুনে পুড়িয়ে পাকা করে। কিভাবে হীরেগুলি ওটার গায়ে আটকে গেছে? তবে ও বুঝলো যে এ ধন তিন নারীর আগের রক্ষিত। বীজ সংরক্ষণ করত যে সে - ই  এই সম্পদের অধিকারিণী ছিল। যাক, ও সেগুলি খুলে নিয়ে নিজের আলমারীর লকারে জমিয়ে রাখলো। কেউ জানলো না। এবার সে বৃদ্ধা হল। মারা গেল। তার বৌমা লকার থেকে ওগুলি নিয়ে গয়না গড়িয়ে পড়ল।





তুমি আমার দয়াময়ী মা
                 অনাদি মুখার্জি

তুমি আমার দয়াময়ী মা ,
তোমার করুনা আর কিছু চাই না!
তোমার জন্য আমার আলোকিত হয়েছে এই ভূবণ,
জন্ম নিয়েছি তোমার কোলে ধন‍্য আমার জীবন !
আমার যে কত আবাদার ,
তুমি তা মেনে নিতে দিনরাত !
রাতের বেলায় মাথায় উপর ,
ভুলিয়ে দিতে গো তোমার হাত !
শত জন্মের পর তোমার মতোন ,
এমন মায়ের ভালো বাসা পায় !







মা আসছে
      গণেশ দেবরায়

আকাশে সাদা মেঘ
খন্ড খন্ড ঘুরে বেড়ায়
দূরে নীলিমায় চোখ জুড়ায়
মনে হয় মা আসছে।

মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ
তীরে কাশের আনন্দ উচ্ছ্বাস
কুয়াশা ভোরে শিউলির সুবাস
মনে হয় মা আসছে।

রাঙা মাটির মেঠো পথে
বাজছে খুশির ঢাকের বোল
আনন্দ আর খুশির গানে
মনে হয় আসছে মা।

নর দানবের হৃদকম্প শুরু
ভয় পাচ্ছে অসুর দল
শান্তির জয়গান বাজছে দূরে
আসছে মা আসছে যে।




              মনের কথা
    শ্রীকান্ত মালাকার

বাঁচার আশা হারিয়ে গেছে,
এই শূন্য জীবন থেকে।
চাইনা আমি বাঁচতে আর,
মনের উপর বোঝা রেখে।

গরিব বলে তুচ্ছ করে,
সকলে এখন শুধু আমায় !
তবু দেখো একই রক্ত,
বইছে নিয়ে দেহে সবাই ।

এই সমাজ যেন জ্যান্ত কবর,
বেঁচে থেকেও সবাই মরা।
লিখতে বসে হাত কেঁপে যায়,
পারিনা লিখতে কাল্পনিক ছড়া।

সকল ক্ষেত্রে টাকার খেলা,
পৃথিবী দেখছে চেয়ে।
আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে,
সাদা সিদে ছেলে মেয়ে ।

তাইতো আমার প্রশ্ন আজ,
শোনো বিধাতা তোমার কাছে;
এই দূষিত পৃথিবী কে টিকিয়ে রেখে,
কোনো কি লাভ তোমার আছে ?

সেই জন্য আজ বলছি আমি,
চাইনা বাঁচিতে এই পৃথিবীর কোন খানে !
বাঁচিতে চাই শুধু আমি,
সুস্থ মানুষের কোমল মনের একটি কোনে।।





আমরা সবাই
        আব্দুল রাহাজ

চল রে আই চল রে আই
হে তরুণ দল
বাঁচাবো দেশকে মোরা
বাঁচাবো মোরা সবাই।
আকাশে বাতাসে উড়বে
এক নতুন নিশান
হবে শান্তি হবে আনন্দ
হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতি ফুটিয়ে তুলবে অনন্য বৈচিত্র্য।
তাই মোরা সবাই জোটবদ্ধ হই
সামিল হই
মানুষকে সাহায্য করি
গড়ে তুলি উন্নত সমাজ
হয়ে উঠি আমরা সবাই
আমরা সবাই।





তবুও পথ চলতে হবে
          শুভ্রাংশু কুম্ভকার

স্বপ্ন ভাঙছে অবিরত,পলকা কাঁচের চুড়ির মত,
আমাদের ঘুমহীন বুকের মাঝখান বরাবর ব‍্যবচ্ছেদ,
আজও ফুসফুস আর মধ‍্যচ্ছদার বিরোধ,
তাই জীবনের শ্বাসকষ্ট স্বপ্নগুলোকে বাঁচাতে পারেনি।
প্রতি শ্বাসে অভাবী অক্সিজেনের চিৎকার, রক্ত ভালোবাসাহীন,
বইতে পারছেনা আমাকে তোমার কলুষিত হিমোগ্লোবিন।
চাহিদার আন্দোলনে গতি থমকে যাবার উপক্রম,
প্রবাহের পথে জমেছে শ‍্যাওলা,পাথর,রাস্তা চওড়ায় কম।
কিন্তু পথ চলতেই হবে জীবন...
কসরতে মন দাও,অভ‍্যাস অটুট থাকুক হাল না ছাড়া অভীষ্ট আরোগ‍্যের পথে।
যেটুকু অমৃত আছে বিষে,ছেঁকে নাও বিবেক বিচক্ষণতার ছাঁকনিতে,
আকণ্ঠ সুধা থাকুক শুধু, জমা হোক স্তরে হৃদিমধু,
অমৃতের আলোকছটায় আগামীর সমাধান পথ খুঁজে যাবো অনিমেষ,
লেনদেন সবই থাক হিসাবে, পড়ে থাক বেহিসেবি ভালোবাসার অধঃক্ষেপ।






কবিতা : প্রকৃতির ছন্দ!
                       বিশ্বজিৎ কর

শান্ত,স্নিগ্ধ দিঘির জলে-
রাজহংস সপরিবারে,
প্রকৃতি আজ বাঙ্ময় -
অসাধারণ বাহারে!

সারি সারি গাছ দিঘির পাড়ে-
প্রতিবিম্ব দেখি জলে,
নীলাকাশে মেঘের ভেলা -
প্রকৃতি নাচে ঢাকের তালে!






পাঁখির ডাক
             জুয়েল রুহানী

ও পাঁখি তুই সকাল হলেই
করিস ডাকাডাকি,
তোর ডাকে মোর ঘুম ভেঙ্গে যায়
খুলি দু'টি আঁখি!

নিত্য ভোরে এমন করে
গেয়ে যা তুই গান,
তোর গানে মোর ভাঙ্গবে রে ঘুম
শোনব রে আযান।

আযান শুনে পড়বো নামাজ
করবো মোনাজাত,
প্রভূর রাহে যিঁনি মোদের -
দেন সদা রহমত!





                  পারাবত প্রিয়া
                          হামিদুল ইসলাম
                    
পথের ধারেই বাস ওদের
ওরা পথের সাথে করে বন্ধুত্ব
পথ ওদের পৌঁছে দেয় প্রাগৈতিহাসিক সীমানায় 
যেখানে লড়াই ওদের একমাত্র কৃতিত্ব   ।।

তবু ওরা হাঁটে
পেটেতে ক্ষুধার টান
কোথা থেকে কোথা নিয়ে যায় মন
দু চোখের গভীরে ভাসে সোনালী ধানের বান  ।।

মৃত‍্যুর যন্ত্রণা বোঝে না ওরা
পায়ে পায়ে হেঁটে আসে কাঁটা বিছানো পথ
ভোরবেলা সূর্যকে তর্পণ করে
চোখের জলে পৃথিবী পাড়ি দেয় স্বর্গরথ  ।।

ওরা জানে না প্রেমের পারাবত প্রিয়া
প্রেম এসে অপেক্ষা করে প্রতিদিন সদর দরজায়
নৈঃশব্দে কাটে জীবন
ভূখা পেট শরীর হয়ে আসে ক্ষীণ, তবু পৌরুষ গর্জায়  ।।

ওরা প্রতিদিন গড়ে তোলে প্রেমের স্বর্গ
দুহাতে রাখে লোনা লোনা মাটি
জীবন যুদ্ধ, রুক্ষ জীবন
প্রেমে যখন পারাবত প্রিয়া হয়ে ওঠে খাঁটি ।।








        বিশেষ  ধারাবাহিক  প্রবন্ধ

   কবিতা র  রূপকল্প  -----  দ্বিতীয় পর্ব  
                সৌম্য ঘোষ

              বাংলা কবিতার জন্ম লগ্ন থেকে কবিতা তথা পদ্যই ছিল সাহিত্য সৃষ্টির একমাত্র বাহন ।চর্যাপদ থেকে শুরু করে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র, চৈতন্যজীবনী ,মঙ্গলকাব্য সমূহ , বৈষ্ণব শাক্তপদাবলী সবই  পদ্যে লেখা ছিল । সেই পদ্য কখনো কখনো কবিতার স্তরে উত্তরণ হয়েছিল ।পরবর্তী কালপর্বে বাংলা সাহিত্য নানাদিকে শাখায়িত হলো । সৃষ্টি হল  গদ্য ,নাটক ,উপন্যাস,  ছোটগল্প ইত্যাদি । ফলত: কবিতা রেহাই পেয়ে গেল । কবিতার দায়িত্ব থাকলো না গদ্যের করণীয় কাজ করার । ধীরে ধীরে গল্প বলার দায়িত্ব, কাহিনীকাব্যের দায়িত্ব নিল কথাসাহিত্য।  এই সময় থেকে কবিতা আর সাহিত্য সমার্থক নয়। কবিতা সমগ্র সাহিত্যের একটি অংশ হিসেবে গণ্য হলো । এই যুগের মত এত বৈচিত্র্য মধ্যযুগে ছিল না । আধুনিককালে কবিতা লিখিত হলো ------- সাহিত্যিক মহাকাব্য , আখ্যানকাব্য ,গাথাকাব্য, রুপককাব্য গীতিকাব্য ,শোককাব্য ,নাট্যকাব্য ইত্যাদি । আরো একটি যুগান্তকারী বিষয় হলো মনন ও চিন্তন এর পরিবর্তন । আধুনিককালে কাব্য হয়ে উঠল সেকুলার । মাইকেল মধুসূদন যদিও হিন্দু পুরাণ নিয়ে কাব্য লিখেছিলেন। তথাপি তাঁর  "ব্রজাঙ্গনা কাব্যে " রাধা বৈষ্ণবদের মহাভাব স্বরূপিনী নন । তিনি নিছকই Mrs. Radha . রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ঈশ্বর আছে , একথা ঠিক বটে কিন্তু তাঁর কবিতায় ঈশ্বর কোন বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের ঈশ্বর নন । উত্তরকালের বাংলা কবিতা ধর্মনিরপেক্ষ । কোন ধর্মীয় প্রচারের প্রবণতা আধুনিককালের কবিদের কবিতায় থাকেনা ।

                 আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের পরবর্তী কবিরা ইংরেজি জানা  কবি । প্রাচীন ও মধ্যযুগের কবিরা শুধু বাংলায় জানতেন । কেউ কেউ যেমন , বড়ু চন্ডীদাস, বিদ্যাপতি ,গোবিন্দ দাস , ভারতচন্দ্রের মতো কবিরা সংস্কৃত জানতেন। যথা, " ত্বমসি  মম জীবনাং /  ত্বমসি  মম  ভূষণং /  ত্বমসি মম  ভব জলাধিরত্নম  "  ( জয়দেব )।  সৈয়দ আলাওল ফারসি জানতেন । এমনকি ভারতচন্দ্র ফারসি জানতেন।উনবিংশ শতাব্দী থেকে বাংলায় কবি হিসেবে যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন তাঁরা সকলেই প্রায় ইংরেজি ভাষা জানতেন । তাঁদের ইংরেজি কাব্যের ভাব ও শৈলী প্রভাবিত করেছিল । মাইকেল মধুসূদন মূল ভাষায় হোমর , ভার্জিল , দান্তে পড়েছিলেন । মধুসূদন মিল্টনকে আদর্শ বলে মানতেন । স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ গোড়ার দিকে "বাংলার শেলী" হিসেবে পরিচিত ছিলেন । জীবনানন্দ প্রসঙ্গে ইয়েটস,  প্রেমেন্দ্র মিত্রের ক্ষেত্রে হুইটম্যান, অমিয় চক্রবর্তীর আলোচনায় হপকিনস, বুদ্ধদেব বসুর ক্ষেত্রে সুইনবার্ন-বোদলেয়ার , বিষ্ণু দের কবিতা এলিয়ট প্রভৃতির প্রভাব সম্যকভাবে পরিলক্ষিত হয়।

               কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের মৃত্যুর পর থেকে আধুনিক সূত্রপাতের মধ্যবর্তী -- এই সময়টা মূলত: কবিওয়ালা, টপ্পাকার নিধুবাবু ও দাশরথি রায়ের কথা প্রধান সংগীত লক্ষ্য করা যায়। শুধু এই যুগসন্ধ্যায় নয় চর্যাপদ থেকে আধুনিককালের পূর্ব পর্যন্ত সব বাংলা কবিতায় ছিল সুরাশ্রিত । শুধু পদ সাহিত্য নয়,  মঙ্গলকাব্য, চৈতন্যজীবনীও পাঁচালীর সুরে কথকরা পড়তেন। আর কাব্যের উপভোক্তোরা  শুনতেন । আধুনিক কালের কবিতা মূদ্রণের যুগের কবিতা । এই যুগের উপভোক্তারা শ্রোতা নন , তারা পাঠক।  মুদ্রণের ফলে ভেঙে গেল এই গোষ্ঠীগত উপভোগের যূথবদ্ধতা । কবিতার পাঠক এখন একলা পাঠক। আধুনিক যুগে কবিতা হয়ে দাঁড়ালো একজন কবির সঙ্গে একজন পাঠকের সংলাপ ।১৭৭৮ সালে বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার প্রভাব বাংলা কবিতায় পড়তে শুরু করল । কবিতা শব্দ সুরের নির্ভরতা ছেড়ে স্বাবলম্বী হলো।

                  সমস্ত রবীন্দ্র কবিতা এক শব্দ সংগীতের শেষহীন বিপুল ভান্ডার । কিন্তু রবীন্দ্র উত্তর সাধকরা সেই সীমাকে অতিক্রম করে গিয়েছেন অন্তর্গত সংগীতের ব্যঞ্জনায় । উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিচার করলে দেখা যায় যে,  প্রথম পঞ্চাশ বছর ছিল মূলতঃ  ব্যবহারিক গদ্যের প্রাধান্য । দ্বিতীয় পঞ্চাশ বছরের সৃজনশীল সাহিত্যে গদ্যের ব্যবহার দেখা যায়।  এই গদ্য চর্চার ফলে বাংলা কবিতার লাভ হল ।  এখন থেকে যা কিছু কবিতা নয় , কবিতা তার হাত থেকে রেহাই পেলো । এই সময় থেকে জ্যোতিষ চর্চা, ইতিহাস ,উপাখ্যান, জীবনী আর পদ্যে লেখা হতো না । গদ্যের কাছ থেকে রেহাই পেয়ে কবিতা হয়ে উঠল  " মানুষের চৈতন্যের ভাষা । " কবিতার অগ্রগতি হলো শুদ্ধতার দিকে।  এই শুদ্ধতা অর্জন করতে আধুনিক পর্বের বাংলা কবিতার অনেক সময় লেগেছিল । আমরা দেখতে পাই, ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের সাংবাদিকতা , নীতিকথা,  মধুসূদন- হেমচন্দ্র - নবীনচন্দ্রের আখ্যান,  রঙ্গলাল- হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম ইত্যাদি । কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী থেকেই শুরু হয় শুদ্ধ কবিতার জয়যাত্রা । স্বয়ং মধুসূদন দত্ত  দুটি অসামান্য গীতি কবিতা লিখেছিলেন , " জন্মভূমির প্রতি" ও  " আত্মবিলাপ " ।কবিতা সবসময় শুদ্ধতা অর্জন করতে চায় কিন্তু তারা নিরঙ্কুশভাবে অর্জিত হয় না । যে ভাষা আমাদের জীবনযাপনের কাজে লাগে সেই ভাষাতেই কবিতা লিখিত হয় । তাই জীবন যাপনের স্বেদ-গ্লানি থেকে কবিতার মুক্তি নেই।  বর্তমান সময়ের হতাশা ও নৈরাজ্যতার অবসাদ ছিন্ন করে কবিতা কখনই সঙ্গীতের মতো বিশুদ্ধ হতে পারে না।।





   চিতার আগুন
              মিনতি গোস্বামী

চিতার আগুন কথা বলেনা
পোড়ায় শরীর, স্মৃতি, ঘরকন্না
চোখের জলে আগুন নেভেনা
আগুন নিজেই ক্ষণজন্মা।

চিতার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে
মন হয়ে যায় উদাস
অবাক চোখের অনুভবে
তারা খসার শ্বাস।

ঘোড়ার ক্ষুরেও মৃত্যুলেখা
বলে শবগন্ধী বাতাস
মানুষ তবু ও পোস্টমর্টেম ঘরে
খোঁজে মৃত্যুর ইতিহাস।






কম বেশি নয়
      জাহাঙ্গীর দেওয়ান

পরিদর্শক হঠাৎ পরিদর্শনে
সঙ্গে একজন সঙ্গি নিলেন।
যেটা বলবো সেটাই করবে
আগে-ভাগেই বলে  দিলেন।

সরাসরি হাজির শ্রেণিকক্ষে
ভয়ে ছেলেরা আঁতকে ওঠে।
উনি বললেন ভয় নেই বসো
শ্রেণী শিক্ষক রাগলেন ব'টে।

জিজ্ঞেস করেন বলতে পার,
চীনের প্রাচীর ভাঙছে কারা?
বদমায়েসটা বলল-আমি না
একহয়ে বলে হবে ওর দ্বারা।

শিক্ষকও মানছেন এ কথাই
এতবড় দুঃসাধ্য আমার নয়।
কেউ যখন মানতে চাইছে না
প্রধান শিক্ষক-আমি মনে হয়?

যাক্গেযাক কতটা খরচ হবে-
বিদ্যালয় থেকেই দিচ্ছি দিয়ে।
অনুরোধ, দোহাই আপনাদের
পাঁচ কানেই করবেন না গিয়ে।

পরটা বেলতে তেল কম দিলে
পিঁড়ে বেলুনে রুটি জুড়ে যায়।
রুটি সেঁকতে তাপ বেশি দিলে
গরম তাওয়ায় রুটি পুড়ে যায়।






কৃষ্ণচূড়া গাছ
                     সাফরিদ সেখ

পাকা রাস্তায় উঠলেই ,লাইট পোষ্টের পাশে
দেখ
দীর্ঘকায় কৃষ্ণচূড়া গাছ।
তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে যখনই গাছটাকে দেখি
           
কী ভাবি?জানেন?
ভাবি,আপনার জীবন্ত প্রতিমা যেন
              একপায়ে দাঁড়িয়ে।

তোমার এই কথা শুনলে-তুমি জানো ,আমার কী হয়?
চোখ বন্ধ করে দেখি ,সমস্ত কিছুই বালির বাঁধ
কি এক জলস্রোত সব কিছুকে উল্টে দিলো,পাল্টে দিলো।
মিলিয়ে দিলো রক্তাভ সূর্যালোকের ভিতর

তোমার কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটা ফাটা রোদে স্নান
করে দাঁড়িয়ে আছে,নিস্তব্ধ দুপুরে।










২টি মন্তব্য: