উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 18/09/2020 Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 18/09/2020
উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 18/09/2020 |
বিভাগ- গান
গান
কনিকা রায়
মেঘলা দিনে --মেঘলা আকাশ-(2)
দেখে মন ভরে যাই ----,দেখে প্রাণে লাগে উৎছাস।-(2)
ও---মেঘ আমি তোর বন্ধু হবো---
ও----মেঘ আমি তোর সঙ্গী হবো --
তোর সঙ্গে নিবি কি আমায়।
মেঘলা দিনে ---মেঘলা--আকাশ--(2)
দেখে মন ভরে যাই--
দেখে প্রাণে লাগে উৎছাস-(2)
দূজনে মোরা হাড়িয়ে যাব নীল আকাশের গায়-
তোর সঙ্গে নিবি কি আমায়।
দিনের আকাশে ঘুরবো দুজনাতে-
রাতের আকাশে সঙ্গী হবে তারারা-(2)
ও মেঘ তোর সঙ্গে নিবি কি আমায়।
মেঘলা দিনে- মেঘলা আকাশ-- (2)
দেখে মন ভরে যায়-
দেখে প্রানে লাগে উৎছাস-
দেখে মন ভরে যায় -
দেখে প্রাণে লাগে উৎছাস
দেখে প্রাণে লাগে উৎছাস।-(2)
বিভাগ- হাইকু
হাইকু কবিতা
শংকর হালদার
০১।
কুসুম হাসি
সকল হিয়া হাসে
বিষাদ ভুলে ।
০২
মেঘের ভেলা
ভাসতে দেখে লিখি
এক অধ্যায় ।
০৩ ।
শ্রাবণ দিনে
বৃষ্টি নুপূর পায়
তোমায় খুঁজি...
০৪।
নিবিড় রাতে
স্বপন নিয়ে খেলি
তুমি যে নেই ।
০৫।
আগলে থাকি
অতীত স্মৃতি নিয়ে
তোমারি ছায় ।
০৬।
পেয়েছে ছুটি
শরতের আকাশে
বাঁধন ছিঁড়ে ।
০৭।
প্যান্ডেলে হর্ষ
হৃদয়ে ফোটে ফুল
বছর পরে ।
০৮।
ঢাকের বাদ্যি
ইঙ্গিতে তার নেশা
প্রসন্ন প্রাণ ।
বিভাগ-কবিতা
শুধু একমুঠো
পিনাকী মুখার্জী
অন্ন চাই প্রাণ চাই ,
প্রাণ কোথা তবে পাই !!
শুধু একমুঠো ভাত ,
নয় একমুঠো তাই !!
নিত্যতা সূত্র কূল সম্বল
বাইরে কিছুটি নাই !!
সাড়ে তিন হাত মাটি
নয় একমুঠো ছাই !!
যেথায় আকাশ দিগন্তে মেশা
অসীম অন্ত নাই !!
আকাশে বাতাসে শারদ প্রকাশে
ধরা একমুঠো তাই !!
দিয়েছো সকল তোমাকে দেয়ার
সাধ্য তো বেশি নাই !!
সবাই তোমায় সব ভালোবাসা ,
শুধু একমুঠো দিয়ে যাই !!
সভ্যতার শ্মশান
অঙ্কুর মাইতি
একটা হ্যাঁচকা টানেই
ছিঁড়ে যায় সব অনুভূতি।
দেহ খুবলে খায় মাংসাশী।
প্রতিবাদী কলম পড়ে থাকে নিশ্চুপের ধুলোভরা টেবিলে।
পিশাচের রাজত্ব চলে দুনিয়ায়।
অশান্ত চিতার আগুন,নিয়ত দগ্ধ হয় সমস্ত কীর্তি।
কালো ধোঁয়া,ছাইতে ভরেছে আকাশ।
কান্নার রব ছাপিয়ে যায় মন্দিরের ঘন্টাধ্বনিকে।
সোনার থালায় জমে
বিষন্ন ভিক্ষান্ন।
তবুও মেটেনা আশ।
অট্টহাসে নিষ্ঠুর নিয়তি।সভ্যতা ভাঙছে।
তার টুকরো হাড় ছড়িয়ে পড়ছে শ্মশানে।
বনভোজন
আব্দুল রাহাজ
ওরে নুরু পুশি অনিমা তোরা আয় দেখি নি
আজ বিকালে সখি নদীর পাড়ে করব যে বনভোজনের মেলা
তোরা যদি আমার সঙ্গে থাকিস হবে তো ভারি মজা।
আচ্ছা আচ্ছা দিদি আছি তো তোমার সাথে
শীতের শুরুতে বনভোজন আমরা করবো সবাই হৈ হৈ হুল্লোড় সঙ্গে সঙ্গে বনভোজনের স্বাদ আহা কি আনন্দ না হবে।
ওরে তোরা কাল আছিস কিন্তু নদীপাড়ে
ডিম ভাত আলু ঝোল দিয়ে হবে আমাদের প্রথম বনভোজন
আর থাকবে আমাদের মনু মাঝির প্রাণ ভরা গান।
সত্যিই সে এক আনন্দ শীতের হিমের পরশে
সারাদিন কাটবে আমাদের বনভোজনে।
শুরু হলো বনভোজন ওই নদীর পাড়ে
নদীর ঠান্ডা বাতাসে গা যেন কাঁটা দিয়ে ওঠে
সন্ধ্যার প্রাক্কালে সূয্যিমামা পশ্চিমাকাশে ডুবে মনোরম পরিবেশ তৈরী করে হৈ-হুল্লোড়ে সাথে সাথে বনভোজনের পদের স্বাদ নিতে নিতে শেষ হয় আমাদের আনন্দের বনভোজন রে।
কবিতা :
এক সকালের কথা!
বিশ্বজিৎ কর
তুমি যে সকালে আমায় ডাক দিয়েছিলে,
সেই সকাল আজ ধর্ষিত হল-
অবিনাশবাবুর বৃদ্ধাশ্রম যাত্রায়!
আমি দেখেছি চোখের জল,অবিনাশবাবুর!
কে যেন বলে উঠেছিল -
"দুগ্গা! দুগ্গা!"
আকাশে তখন নিকষ কালো মেঘের ঘনঘটা!
আগমনীর সুর
অনাদি মুখার্জি
শরতের মেঘমালা রাশি রাশি আকাশে উড়ে,
সোনালী রোদ্দুর খেলা করে সারা বিশ্ব জুড়ে।
কাশবনে সারি সারি কাশফুল খুশিতে দোলায় মাথা,
সকালের শিশিরের ছোঁয়া লাগে ঘাসের পাতায়।
নদীর ঘাটে যাত্রী দের শুনি কোলাহল,
সেই খুশীতে সাওতালেরা বাজায় যেন মাদল।
শিউলি টগর ও গন্ধরাজ ছড়িয়ে তাদের সুভাষ,
যত সব পাখিরা গান গেয়ে দেয় আগমনীর আভাস।
দিঘিতে ফুটে শালুক আর পদ্ম সকলি,
মধুলোভে তিলে তিলে ধেয়ে আসে কত অলি।
জানান দিচ্ছে আকাশে বাতাসে ভেসে উঠছে আগমনীর সুর,
মাগো ধরাধামে এসে নিধন করো অসুর।
মৃন্ময়ী মা আবির্ভুতা, তুমি দুর্গা দুর্গোতিনাশিনী ,
দিকে দিকে বেজে উঠছে তোমার পদধ্বনি।
মাগো তোমার এই আগমনে মেতে উঠে সারা ত্রিভুবন,
ভোরের পাখি উঠলো গেয়ে তোমারি বন্দন।
অশুভ শক্তিকে হারিয়ে এনেছো তুমি শুভ শক্তি,
মর্ত্যে এসে সবার মনে জাগিয়ে তোলো মাতৃভক্তি।
করজোড়ে বলি মাগো বাঁচাও সবার প্রান,
সব নারীরা যেন রাখে তাদের সিঁথির সিঁদুরের সম্মান।
হয়তো তুমি আসবে ফিরে
বিপ্লব গোস্বামী
হয়তো তুমি আসবে ফিরে
ভাঙ্গা বুকের ভাঙ্গা নীড়ে।
আসলে কাছে বুঝে নিও
ভেজা চোখের ভাষা।
ইচ্ছে হইলে মিটিয়ে দিও
ভাঙ্গা বুকের আশা।
হয়তো তুমি আসবে ফিরে
শুকনা গাঙ্গের ভাঙ্গা তীরে।
আসলে ফিরে নৌকা বাইও
শুকনা গাঙ্গের জলে।
ইচ্ছে হইলে মিশে যাইও
কুল হারাদের দলে।
জল
হামিদুল ইসলাম
জলকে চিনি
জল জীবন
জীবনের আনন্দে মেতে ওঠে মন
শরতের সুবাস ভোরের হাওয়ায় ভরায় দু নয়ন
মিশে যায় জীবনের ছন্দে ।।
তোমাকে ভিজিয়ে দিই শিশিরে
আঁচল ধরে দিই টান
বন্ধুরা আর আসে না বারেবারে
শরতের হাওয়ায় আজ শুভ্র কাশের বান
নৈঃশব্দ প্রতিদিন আকাশের গায়ে ।।
পূজোর হাওয়া এখন চারদিকে
পূজো পূজো মন
পূর্ণিমা রাতে চাঁদের হাসি
ফিরে আসে আরণ্যক জীবন
অরণ্যে জল ঢালি প্রতিদিন ।।
এখন তো সময়ের অপেক্ষা
শরতের হাওয়ারা তৈরি এখন
আমরা মাঠে নামলে পূজো পূজো খেলা
দু চোখের গভীরে আনন্দের বন্যা যখন
এখন পথ চলি নির্বিবাদে ।।
মিলন-বিরহ
সাফরিদ সেখ
দিবসের অনুতে গম্য রজনী,
কেহ কাহারো তরে নাহি নির্ভর।
অন্তহীন ,অগম্য পথে চলেছে দিবস,
দূর ...আরো দূর ..অনন্তলোকে।
কেহ মাথা নোয়াই না কারো পায়ে,
কেহ পারে না ঘোরাতে অন্য কে।
তাদের যাত্রা পথ অনন্তকালের ,
অন্তহীনের দুর্গম,দুস্তর পথ চা ওয়া।
এমনি ভাবে জীবনের মেঠোপথ চলেছে,
হাসি-কাঁন্নার বিষম ডোরের বন্ধনে।
মিলন বিরহের কোনো দিন হয় না সহাবস্থান,
মিলন গৃহে বসিলে বিরহ দরজায়।
এই শারদ প্রাতে
মিনতি গোস্বামী
আশ্বিনের এই শারদ প্রাতে
আকাশে বাতাসে উঠেছে ধ্বনি
কান পেতে শোনো সবাই
বাজছে মায়ের আগমনী।
অসুর নাশিনী দুর্গা আবার
আসবে মর্ত্যে চন্ডীরূপে
চন্ডমুন্ড বিনাশ করে
বিরাজিত হবে মঙ্গল রূপে।
কাটবে এবার আতঙ্কের দিন
মাতবে সবাই ঢাকের তালে
প্যান্ডেলের রোশনাই ছেড়ে
মা আসুক এবার একচালে।
দৈন্যতার মাঝেই হোক
ভক্তি দিয়ে মায়ের আরাধনা
আমরা সবাই মায়ের সন্তান
মাতৃ শক্তিতেই করি সাধনা।
সবুজারণ্য
জুয়েল রুহানী
সবুজ বনের মাঝে
সোজা মেঠো পথ,
হেটেছি দু'জনে-
হাতে রেখে হাত।
সূর্য্য পড়লে হেলে
পশ্চিমাকাশে,
ডেকেছে সবুজ বন
মায়াবীর বেশে।
সবুজ বনের ডাকে-
দিয়ছি সাড়া,
রাতের অন্ধকারে;
হয়েছি হারা!
আমাদের বিদ্যালয়
যুথিকা দোলই
একদিন বসে বসে ভাবছিলাম মনে
স্বরচিত কবিতা দিতে হবে স্কুল ম্যাগাজিনে।
কবিতার 'ক' জানিনা লেখব এবার কি?
হঠাৎ একটা ছন্দ এসে মনে দিল উঁকি।
স্কুলের আগে আছে নারকেল গাছের সারি
এক সাথে থাকি মোরা করিনা কভু মারামারি।
কতশত ছেলেমেয়ে আসে নানা গ্রামের
সবে মিলে করি হেথা সাধনা ঞ্জানের।
এই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষীকারা সকলেই যত্নবান
তাঁদের মোরা শ্রদ্ধা করি পিতা মাতার সমান।
এই স্কুলের শিক্ষার্থী মোরা এটাই মোদের প্রান
যেন মোরা রাখিতে পারি এই স্কুলের মান।
বিভাগ :--- প্রবন্ধ
বর্ষা কাব্য ------ কালিদাস ও রবীন্দ্রনাথ
সৌম্য ঘোষ
"কবিবর, কবে কোন বিস্মৃত বরষে
কোন পুণ্য আষাঢ়ের প্রথম দিবসে
লিখেছিলে মেঘদূত! মেঘমন্ত্র শ্লোক
বিশ্বের বিরহী যত সকলের শোক
রাখিয়াছে আপন আধার স্তরে স্তরে
সঘন সংগীত মাঝে পুঞ্জীভূত করে।।"
(মেঘদূত/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ৮জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭, ১৮৯০ খ্রি: শান্তি নিকেতন)
আষাঢ়ের প্রথম দিনের বর্ষণের সাথে মেঘদূত কবিতা এক হয়ে মিশে আছে। বর্ষার প্রথম দিনের বর্ষণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অমর বর্ষাকাব্য ‘মেঘদূত’ এর জনক কালিদাসের কথা মনে করেছেন। মহাকবি কালিদাসের অনবদ্য কাব্য ‘মেঘদূত’ রবীন্দ্রনাথকে বিশেষ ভাবে মুগ্ধ করে এবং তাঁর মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-
‘‘আষাঢ়ের মেঘ প্রতি বৎসর যখনি আসে, তখনই নতুনত্বে রসাক্রান্ত ও পুরাতন পুঞ্জীভূত হইয়া আসে।... মেঘদূতের মেঘ প্রতি বৎসর চিরনূতন চির পুরাতন হইয়া দেখা দেয়... মেঘদূত ছাড়া নববর্ষার কাব্য কোনো সাহিত্যে কোথাও নাই। ইহাতে বর্ষার সমস্ত অন্তর্বেদনা নিত্যকালের ভাষায় লিখিত হইয়া গেছে। প্রকৃতির সাংবৎসরিক মেঘোৎসবের অনির্বচনীয় কবিত্ব গাঁথা মানবের ভাষায় বাঁধা পড়িয়াছে।(বিচিত্র প্রবন্ধ- নববর্ষা)"
মেঘদূতের চিত্র কল্পনা, তার ভাষা ও অন্তর্নিহিত তত্ত্ব কবি মনকে এমন করে অধিকার করেছে যে, তিনি যেন কালিদাসের ভাবে ভাবানুরাগী। তিনি কবিতাটি লিখেছেন নৈপুণ্যের সাথে। মেঘদূতের কাহিনীর সাথে সাথে সেই কবিতার চিত্র বর্ণনা ও এমন কি ভাষা পর্যন্ত নিজের কবিতার অন্তর্গত করে এগিয়ে চলেছেন। যা পরের ঐশ্বর্য সম্ভার সঞ্চয় করতে করতে নিজেকে আবিষ্ট করার সুনিপুণতা। কবিতাটিতে কবিগুরু কালিদাসের কালের একটি পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা তৈরি করেছেন।
নববর্ষার আগমনে কবির মনে পড়ছে মেঘদূতের বিরহ ব্যথিত যক্ষের কাহিনী আর তার মেঘদূতের পথের ছবি ও শোভা। সে কবিতা এমনই বর্ষার দিনে কত বিরহী পাঠ করে দুঃখের মধ্যে ও আনন্দ অনুভব করেছে। কবি সেই সবার কথা মনে করেছেন বঙ্গদেশে বসে। যেখানে আরেক কবি জয়দেব তাঁর সুললিত কাব্য গীতগোবিন্দ আরম্ভ করেছিলেন নববর্ষার মেঘ- মেদুর ছবি এঁকে। কবি আকাশে বহমান মেঘ দেখতে দেখতে তার সাথে কল্পনার কালিদাসের বর্ণিত সকল দেশের শোভা সন্দর্শন করছেন। আবার কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যান। কবি তখন চিন্তা করেন-
"ভাবিতেছি অর্ধরাত্রি অনিদ্র নয়ান
কে দিয়েছে হেন শাপ, কেন ব্যবধান?
কেন ঊর্ধ্বে চেয়ে কাঁদে রুদ্ধ মনোরথ?
কেন প্রেম আপনার নাহি পায় পথ?
সশরীরে কোন নর গেছে সেইখানে,
মানস-সরসী তীরে বিরহ শয়ানে
রবিহীন মনিদীপ্ত প্রদোষের দেশে
জগতের নদী গিরি সকলের শেষে।"
কবি গুরু বর্ষাকে রূপ দিয়েছেন নানা ভাবে। তাঁর কবিতায় বর্ষা কখনো বিরহিনীর বিরহ আবার কখন প্রিয় মানুষটিকে একান্তে কাছে পাবার আনন্দ, না বলা কথা বলার আনন্দ। বর্ষা এলায়েছে তার মেঘময় বেণী।’’ ইহা দেখে কবির মনে পরছে সে সময়ের বর্ষার কথা, বিচিত্র সব ছবি তার চোখের সামনে ফুটে উঠছে। চিরন্তনী নারীর প্রতিনিধি রাধা বর্ষার আগমনে প্রিয়া সমাগমের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন তিনি বিরহ ব্যথা সহ্য না করতে পেরে দিবাতেই অভিসারে চলেছেন। যে সব প্রবাসী প্রিয় মিলনোৎসুক হয়ে গৃহের পথে যাত্রা করে বাহির হয়েছেন সেই সব পথিকের বিরহ বধূরা শূন্য পথের দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রতীক্ষা করছে কবির চোখে সেই ছবিও ভেসে উঠছে (একাল ও সেকাল ২১ বৈশাখ ১২৯৫, ১৮৮৮ খ্রী:)
রাধাকৃষ্ণ প্রেম কাহিনী বহু পুরাতন হয়েও নিত্য নবীন, কালিদাসের মেঘদূতের যক্ষদম্পতীর বিরহ ব্যথা বহু প্রাচীন কিন্তু এখনো চির নবীন। এই দুই প্রেমিক যুগল আত্মভোলা প্রণয় নিবেদন ও বিরহ ব্যথার প্রতীক স্বরূপ। তাই এইসব কাহিনী কখনো পুরানো হয় না। নবীন প্রেমিক প্রেমিকারাও তাদের অন্তর বেদনা নিজের অন্তরে আজও অনুভব করে থাকে। রবীন্দ্রনাথ বর্তমানের সঙ্কীর্ণ ভূমিতে দাঁড়িয়ে দুই হাতে অতীত ও ভবিষ্যতকে ধারণ করে মিলন ঘটিয়েছেন বহু কবিতায়। তাঁর মানসলোকে বর্তমান ভূত ও ভবিষ্যৎ একটি মালার মত গ্রথিত হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরহের একরূপ প্রকাশ করেছেন বর্ষার মধ্যে। যখন নববর্ষার আগমনে আর্দ্র তীর পূর্ব বায়ু বহিতেছে বেগে তখন মনে জাগিতেছে সদা আজি সে কোথায়? কতদিন সে তো আমার কাছে ছিল তবু তো তাকে আমার অন্তরতম গূঢ় কথাটি বলার অবসর পাই নাই-
"কতকাল ছিল কাছে, বলিনি তো কিছু
দিবস চলিয়া গেছে দিবসের পিছু।
মনে হয় আজ যদি পাইতাম কাছে
বলিতাম হৃদয়ের যত কথা আছে।"
(আকাঙ্ক্ষা- ২০ বৈশাখ ১২৯৫, ১৮৮৮ খ্রী:)
হৃদয়ের সেই কথাটি জীবনের শেষ চরমতম কথা- ‘জীবনমরণময় সুগম্ভীর কথা তাকে যদি আত্মার আঁধারে বিজনে বসিয়ে সেই কথা শুনতে পারতাম, তা হলে দুজনেই শুনতে পারতাম-
‘‘দুটি প্রাণতন্ত্রী হতে পূর্ণ একতানে
উঠে গান অসীমের সিংহাসন পানে”।
অফলাইন নয়, অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া জরুরি
পার্থ প্রতিম হালদার
করোনা মহামারির কারণে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস হলো দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিছু করার ও নেই। এখন জীবন নিয়ে চলছে টানাটানি। তা সত্ত্বেও করোনা পরিস্থিতি তে লকডাউনের মধ্যে ইউজিসি নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে তাড়াতাড়ি পরীক্ষা নিয়ে নিতে হবে। যেখানে দিন দিন প্রতিদিন ভারতবর্ষে করোনা সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। সেই পরিস্থিতি তে ইউজিসি পরীক্ষা নেওয়ার কথা কীভাবে যে ভাবছে তা ভাবলে অবাক হতে হয়। তাছাড়া আমাদের দেশে তেমন তো ইনফ্রাস্টাকচার নেই যেখানে প্রতিটি স্টুডেন্ট কে আলাদা আলাদা করে গাড়ি করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে , পরীক্ষা হয়ে গেলে আবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। সব থেকে বড় কথা হসপিটালে বেড ও ফাঁকা নেই। তাই এই মুহুর্তে পরীক্ষা কেন্দ্রে জমায়েত হলে ছাত্র ছাত্রী রা সংক্রমিত হয়ে যাবে এটাও স্বাভাবিক। আর সেই সংক্রমণ যে তার বাড়িতেও পৌঁছে যাবে সেটাও ঠিক।
যেখানে মার্চ মাস থেকে আমাদের কে বলে বলে আসা হচ্ছে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে না বের হওয়ার জন্য - সেখানে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এত কিসের মাথা ব্যাথা ? জীবনের থেকে নিশ্চয়ই পরীক্ষা টা বড়ো নয়। গোটা পৃথিবী তো চুপ করে আছে। সমস্ত দেশেই তো ছাত্র ছাত্রী আছে। তাদের infrastructure ভালো হওয়া সত্ত্বেও তারা তো পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এত তড়িঘড়ি করছে না । আর আমরা আমাদের এই ইনফ্রাস্টাকচার নিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছি। তাছাড়া পরিবহন ব্যবস্থা ও তো আগের মতো ওই ভাবে সচল নয়। তার ওপর বিভিন্ন জায়গা তে রয়েছে লকডাউন নিয়ে কড়াকড়ি। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কথা কি করে ভাবা যায় ? হ্যাঁ তবে তার মানে এই নয় যে, পরীক্ষা বাতিল হোক। পরীক্ষা তো নিতেই হবে - তবে অফলাইন তে নয়, অনলাইনে।
এটা ঠিক পরীক্ষা হবে কি হবে না এই দোটানা তে পড়ে ছাত্র ছাত্রীরা এতদিন ভালো করে পড়াশোনাও করতে পারেনি । তার ওপর সমস্যা হয়েছে এমন অনলাইন ক্লাস সিস্টেম তেও। কারণ অনেক গ্রামাঞ্চলের ছেলে মেয়ে রা যারা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে না তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে গেছে। তবে যাদের স্মার্ট ফোন আছে তারাও যে খুব পড়াশোনা করে নিয়েছে তাও নয়। পড়াশোনার অভ্যাস টাও একটু একটু করে যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আগের মতো পড়াশোনার ইচ্ছে টা যেন আর নেই। তার ওপর এমন কঠিন পরিস্থিতি তে পড়াশোনা যে ভালো হবে না এটাও স্বাভাবিক। তবে তার মানে এই নয়, পরীক্ষা বাতিল হোক। পরীক্ষা হোক তবে অনলাইনে ।
যাদের এন্ড্রয়েড মোবাইল নেই , যাদের বাড়ির কাছে নেট ওয়ার্ক ভালো নেই বা ইলেকট্রিকের সমস্যা তাদের জন্য সরকার থেকে যেন বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই পরীক্ষা হোক কিন্তু অনলাইনে। এমন পরিস্থিতিতে অফলাইনে নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তবে অনেকে বলছেন পরীক্ষা না নিয়ে নম্বর দেওয়ার কথা। এই সিদ্ধান্ত কে কখনও মেনে নেওয়া যায় না। পরীক্ষা না নিয়ে নম্বর দিয়ে দিলে ছাত্র ছাত্রী দের ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। তা উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে হোক বা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে হোক । তাই পরীক্ষা নিয়ে নম্বর দেওয়া টা খুব দরকার। সেই পরীক্ষা অনলাইন নিলেও হবে। অফলাইন বা কাগজ কলম নিয়ে নয় । তাছাড়া এমন পরিস্থিতিতে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলতে পরীক্ষার্থীরা রীতিমত ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছে। কোন মা বাবাও তো তাঁদের ছেলে মেয়ে কে এমন বিপদের মধ্যে পরীক্ষা দিতে কখনোই পাঠাবেন না এটাও স্বাভাবিক।
প্রায় এক মাস আগে দেশের তেরোটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পরীক্ষা না নিয়ে নম্বর দিতে চেয়েছিল । তবে ইউজিসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে পরীক্ষা ছাড়া নম্বর কোন মতেই দেওয়া যাবে না।
এমন গুরুতর নিয়ম ভঙ্গ কখনও বরদাস্ত করা হবে না। তবে ইউজিসির এই গাইডলাইন ঠিক ই আছে। পরীক্ষা ছাড়া নম্বর দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় তে পরীক্ষা ছাড়াই চতুর্থ ও ষষ্ঠ শিক্ষাবর্ষের নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও তা ইউজিসি গাইড লাইন আসার আগেই। ৮০ : ২০ - র ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফল নির্ণয় করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন। যেখানে বিগত সেমিস্টারের ৮০ শতাংশ নম্বর আর বাকি ২০ শতাংশ ইন্টারনাল মার্কস এর ওপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে। তবে একটা কথা ভেবে পাওয়া যায় না, কয়েক দিন আগে দেশের ৭০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পরীক্ষা না নিয়ে নম্বর দেওয়ার বিরোধিতা করেছিল সেখানে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পদক্ষেপ কি করে নিয়ে নিল ? এটা তো ছেলে খেলা নয়। এখানে ছাত্র ছাত্রী দের ভবিষ্যতের কথা আছে। শুধুমাত্র ছাত্র ছাত্রী দের স্বার্থ দেখে নাম্বার দিয়ে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। এতে তো ভবিষ্যতে তাদের ই সমস্যা হবে। তাছাড়া পরীক্ষা না নিয়ে নম্বর দেওয়া - এ তো শুনতেও খারাপ লাগে। তবে এমন অতিমারীর সময়ে নিজের প্রাণ বাঁচানো টাই বড়ো কথা , পরীক্ষা টা বড়ো কথা নয় । তাছাড়া এই ভাবে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কে গাইড লাইন দেখিয়ে কখনও এমন করে বিপদের মুখে ঠেলে ফেলে দেওয়া যায় না । তা শুধু অন্যায় নয় , তা পাপ।
© Sk Asad Ahamed
খুব সুন্দর । নিরন্তর শুভকামনা
উত্তরমুছুন