শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/09/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/09/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 26/09/2020




স্ত্রী শিক্ষার প্রসার ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর
                বিপ্লব গোস্বামী

উনবিংশ শতকে ভারতের মাটিতে যে কজন সমাজ সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর ছিলেন তাঁদের মধ‍্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।তিনি ছিলেন বাংলায় নারী শিক্ষা প্রসারের মূল পথিকৃৎ।তিনি বাস্তববাদী ও মানবতাবাদী সংস্কারক ছিলেন।তারই প্রচেষ্টায় বাংলায় স্ত্রীশিক্ষার প্রসার ঘটে।

          এই মহান সমাজ সংস্কারক ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর (বাংলা ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ আশ্বিন মঙ্গলবার) পশ্চিম বঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্ৰামে জন্মগ্ৰহণ করেন।তার পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ‍্যোপধ‍্যায় ও মাতার নাম  ভগবতী দেবী।

             তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে নারী জাতির উন্নতি না ঘটলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।এ জন‍্য তাদের মধ‍্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো দরকার।তাই তিনি সারা জীবন নারী শিক্ষা প্রসার, বহু বিবাহ রোধ, বাল‍্য বিবাহ রোধ, বিধবা বিবাহ প্রচলন এবং বাংলার নবজাগরণের জন‍্য কাজ করে গেছেন।তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নারী শিক্ষার সপক্ষে লেখালেখি শুরু করেন।গ্ৰামে গ্ৰামে ঘুরে অভিভাবকদের স্ত্রী শিক্ষার  সুফল বুঝাতে লাগলেন।তাঁরই উদ‍্যোগে কলকাতায় ভারতের প্রথম বালিকা প্রতিষ্ঠা হয়।তিনি ড্রিংকওয়াটার বিটনকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি নিজে ছিলেন এই বিদ‍্যালয়ের সম্পাদক।এটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত।তিনি ১৮৫৭ সালে বর্ধমান জেলায় মেয়েদের জন‍্য একটি বিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।গ্ৰামাঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ‍্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী প্রতিষ্ঠা করেন।১৮৫৮ সালে তিনি ব‍্যক্তিগত উদ‍্যেগে নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।প্রায় ১৩০০ জন ছাত্রী এই বিদ‍্যালয় গুলিতে পড়াশোনা করত।পরবর্তী কালে তাঁরই প্রচেষ্টায় সরকার এই সব স্কুলের কিছু ব‍্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়।১৮৬৪ সালে বাংলায় বালিকা বিদ‍্যালয়ের সংখ‍্যা দাঁড়ায় ২৮৮ টি। ১৮৭২ সালে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন (বিদ‍্যাসাগর কলেজ)প্রতিষ্ঠা করেন।একই বছর তিনি মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ‍্যে নিজ গ্ৰাম বীরসিংহে ভগবতী বিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
          সেই সময় হিন্দু সমাজে কিছু কুপ্রথা প্রচলিত ছিল।অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে  দেওয়া হত।ঈশ্বর চন্দ্র চিন্তা করলেন বাল‍্য বিবাহ রোধ না করলে স্ত্রী শিক্ষা প্রসার সম্ভব নয়।তাই তিনি বাল‍্য বিবাহ নামক সামাজিক ব‍্যাধি নির্মূল করার জন‍্য নিরলস সংগ্ৰাম করেন এবং সফল হন।১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাস করে মেয়েদের বিবাহের বয়স কমপক্ষে ১০ ধার্য করে‌।
        নারীমুক্তি আন্দোলনে  স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর অবদান ছিল অসামান‍্য।তাঁর এই অবদান ভারতবাসী কোন দিনও ভুলতে পারবে না।মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন " পৃথিবীতে এমন লোক খুব কমই জন্মেছেন।একথা বলা যেতে পারে যে,যদি ঈশ্বরচন্দ্র কোন ইউরোপীয় দেশে জন্মাতেন তবে ইংলণ্ডে নেলসনের যেমন স্মারক বানানো হয়েছে,সেই রকম স্মারক ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত‍্যুর পরও স্থাপিত হত।তবে ঈশ্বরচন্দ্রের স্মারক আজ বাংলার ছোট অথবা বড় ,গরীব অথবা আমীর,সব লোকের হৃদয়ে স্থাপিত।"সত‍্যি তিনি আজো ভারতবাসীর মনে অমর হয়ে আছেন আর অনন্ত কাল ধরে থাকবেনও।







বিদ‍্যাসাগর


অনাদি মুখার্জি

ভারত মাতার বীর  সন্তান  তুমি বিদ‍্যাসাগর,

দয়ালু ছিলো তোমার মন তাই তো তুমি দয়াসাগর !

সেপ্টেম্বর মাসে তুমি ধরাধামে জন্ম নিলে ,

বড়ো হয়ে ফোটালে কুসুমরাজি বঙ্গ সাহিত্যের উদ‍্যানে !

বর্ণপরিচয় ও দশমিক ধারা পাত লিখেছো এক নিমেশে,

সবার ঘরে ঘরে শিক্ষা আলো এল তোমার লেখনী তে !

গরীব দুঃখির দুঃখ দেখে হতে খুব কাতর ,

বিলিয়ে দিতে তাদের সব কিছু তোমার সাধ‍্যেরমতোন !

নারীর বেদনায় তোমার হৃদয় হয়েছিল ক্ষত,

নারীরা আজো তোমার কাছে করে মাথা নত !

নারী সমাজকে স্বপ্ন দেখালে নতুন করে  বাঁচার,

আজি এই তোমার শুভ জন্মদিনে প্রনাম জানাই শতবার !








হাইকু কবিতা

শংকর হালদার


০১ ।

সোনালী ঢেউ

ক্ষেতে ক্ষেতে আনন্দ

সবুজ স্বপ্ন ।

০২।


হারিয়ে যাবো


পাখনা মেলে দূর...


তব হাসিতে ।

০৩।


গ্রামের শেষে


সবুজ ঘর-বাড়ি


রং-তুলিতে ।

০৪।


আপন দুঃখ


আপন কর্ম দোষে


নালিশ মিথ্যা ।

০৫।


সবুজ ঢেউ


প্রাণ্ অস্তিত্ব তাতে


জীবন দাও ।










ওগো_মা_ভারতলক্ষী
       রাজু গোল্ডার

  মাগো তুমি শুনছো এই মিনতি
মাগো ওরা চাই না রাজাকুমার হতে,
দাও ওদের ভিটেমাটির দেশে ফিরতে।
শত শত কিমি পথ হেঁটে এলো ক্লান্ত হয়ে,
তবু তৃষ্ণায় কে কোন পথে আছে পড়ে।
কেউ লাশ হয়ে পারলো না ঘরে ফিরতে,
আবার কেউ খাবারের খোঁজে বসে আছে পথে।
এ দেশ তাদের পাশে কি আছে আজব,
অন্যায় অত্যাচারে ভেসে গেছে কত গুজব।
করেছিল বিশ্বাস তারা কারে দিয়েছিল অধিকার,
এই অসময়ে পাশে না দাঁড়ানোর এতো অবিচার।
তৃষ্ণায় জীবন আজও আর যাবে কত দূরে,
পড়ে আছে পথে পথে ভিক্ষা চেয়ে।
নেইতো কোথাও কাজ ফিরবে তারা ঘরে,
আজও কি সেখানে পৌঁছাতে পারবে সেই ঘরে।
শুধু দল বেঁধে চলেছে অবহেলিত হয়ে,
কখন কোথায় কার জীবন যাবে শেষ হয়ে।
কিছু মানুষ যা দিয়েছে মন ভরিয়ে,
কিছুটা পথ এগিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে।
সেই সুরে মাতোয়ারা হয়ে ফিরছে ঘরে আনন্দে, কোথাও এসে কার জীবন থেমে গেছে বিপদে।
প্রবাসীরা যেমন উজান করে ফিরলো দেশে,
পরিযায়ীরা কেন পারলো না ফিরতে অবশেষে।
মাগো ওরা কি দোষ করেছিল নিজের দেশে,
স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কেন এতো অবহেলা দেশে।
মাগো তুমি শুনছো এই মিনতি........
মাগো ওরা চাই না রাজাকুমার হতে,
দাও ওদের ভিটেমাটির দেশে ফিরতে।






তুমি তো তুমিই


        মম

তুমি কি সাগর।


তুমি তো মহাসাগর।


তুমি বিদ্যাসাগর।


তুমিই আবার দয়ার সাগর।


বর্ণে বর্ণে বর্ণে তুমি।


ধন্য জন্মভূমি।


তুমি তাই


বাংলায় গান গাই।


বাংলায় লিখি, পড়ি।


বিজ্ঞানের কথা প্রকাশ করি।


রবি কবি তো বিশ্ব করলেন জয়


তোমার বর্ণের পরিচয়


দিল তাঁকে নোবেল পুরষ্কার।


এ তো তোমারই সৃষ্টির উপহার।


তুমিই আদি সৃষ্টিকার।


অনন্য ঈশ্বর বাংলা ভাষার।












অনুগল্প 
      নবরূপা
   ডঃ রমলা মুখার্জী

বছর দুয়েক আগের ঘটনা। ট্রেনে কোচবিহার চলেছি তোর্সা সাহিত্য পত্রিকার আমন্ত্রণে। হঠাৎ একজন ভদ্রমহিলা আমার কাছে এসে বললেন, "কি রে আমায় চিনতে পারছিস?"
ভদ্রমহিলাকে আমার চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু নামটা পেটে আসছে তো মুখে আসছে না। সেই আধচেনা মুখ এক গাল হাসি নিয়ে বলল, "আমি সেই কলেজের সাধন রে, তবে এখন রূপান্তরিত হয়ে সাধনা হয়েছি।"
আমি অপার বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে অস্ফুটে বলি,
"তুই সেই আমাদের ব্যাচের সব থেকে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সাধন? কিন্তু তুই মানে-"
- হ্যাঁ, লন্ডনে পোস্ট ডক্টরেট করতে গিয়ে একেবারে অপারেশন করে পুরুষ থেকে নারী হয়ে দেশে ফিরলাম। স্বামীর সাথে যাচ্ছি দার্জিলিং হানিমুনে।"
ওর স্বামী অর্কবাবুকে ডেকে আলাপও করিয়ে দিল। আমার ফোন নং নিয়ে নবরূপা সাধনা নিজের সিটে গিয়ে বসল। হতবাক আমার আত্মকথন,"সাবাস, সাধন, তোর মেয়েলী স্বভাব নিয়ে আমরা কত হাসাহাসিই না করতাম! কিন্তু সব প্রতিকুলতা কাটিয়ে তুই অসাধ্য সাধন করেছিস।"
..................................................
দু বছর বাদে আর এক চমক! অর্কবাবু ফোনে জানালেন ওদের একটি মেয়ে হয়েছে। শুনে নবরূপা সাধনাকে জানালাম  কুর্ণিশ।








পরমাণু-কবিতা!


বিশ্বজিৎ কর

১) কোনদিন দেখিনি,


     গোলাপ ফুল -


     মায়ের খোঁপায়!


     এলোচুলে কবিতা ছিল!


২) মোমবাতির মিছিলে,


     শ্লোগান নেই -


     আছে ঝড়ের পদধ্বনি!


৩) চৌকাঠে প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখো, হয়তো আসব না ফিরে!


৪) আজও খুঁজি মা'কে,


     ছায়া থেকে ছায়াপথে -


     স্মৃতির চলমান রথে!










বন্ধু
  আব্দুল রাহাজ

বন্ধু আমার মস্ত বড়
মস্ত এক শরীর
শুধু খায় খায় করে
সে তো এক মস্ত বড় পেটুক।
টিফিন বেলার সবার টিফিন ফাঁকা করে দেয় সে একা।
সে এক বেশ আমোদ প্রমোদ
করে যে সে আমাদের সাথে বেজায় মজা।
বন্ধু আমার ভালোই ছিল
হয়েছিল একদিন ঝামেলা
পরীক্ষা নিয়ে এসে বলে চলত ওই টিফিনটা খাই
দুজনে হেসে হাত ধরাধরি করে চলি যায় যায়
এইভাবে বন্ধু আমার থাকবে আজীবন।









ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর

এমাজদ্দিন সেখ


ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা জাতের বেড়ায়  আটকে  আছি ;...


দু'শো    বছরেও  পারিনি মুক্ত হতে !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


অন্ধকারে মুখ ঢেকে কাঁদে নারী আজও লাঞ্ছিত ; ..


ধর্ষিত  মা -  পণ্য তোমার গড়ে !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আজও মজুর কিষান মেহনতি     অনাহারে মরে ;...


শয়তানি ভদ্রের  ঠুলি পড়া বাবুদের কারনে !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর ! 


শিক্ষায় আজও মোল্লা  পুরুতের চোখ রাঙানি  ;...


বেদ- পুরাণ , 'মনুবাদ'  নাচে মাথায় চড়ে !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা কার ঘরে গো-মাংস আছে সন্ধান করি ;...


যে অনাহার , নাই পোশাক ,থাকার ঘর দেখে তারে ঘৃণা করি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা অন্যায় ও অন্যায়কারীর  তোষামোদ করি ;...


অন্যায় দেখে জালিমের  মোসায়েবি  করতে চুপ করে থাকি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা পৌরুষ  চরিত্র সাধন বর্জন  করে ;...


  নপুংশক রঙ মেখে পণ্য সেজে  দাসত্ব  ভালোবাসি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর  !


আমরা বৈজ্ঞানিক যুক্তি ধারা চর্চা ত্যাগী  ;....


অন্ধ সংস্কারের গোলক ধাঁধায়  মরতে  রাজি  আছি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা বরুন -  লঙ্কেশদের হত্যা ও গুম  করে ফেলে ;...


শয়তানের ভজন সাধন  কীত্তন করি !!

ক্ষমা কর বিদ্যাসাগর !


আমরা বুকে শয়তান , চরিত্রে  ব্যাভিচার  পুষে  রেখে ;...


তোমার ছবিতে  মালা দেবার  ভান করি !!

আবার এসো বিদ্যাসাগর !


"সাত পুরু মাটি উপড়ে ফেলে নতুন মানুষ চাষ ";...


করার গুরু ভার উত্তর সুরির  দিয়ে গেছো  !!

জাগাও 'ঈশ্বর '  বিদ্যাসাগর !


বাংলার ঘরে ঘরে নব প্রাণে ,নব সাজে ;...


যেন এই নরক পঙ্কিল  মুক্ত সাম্যের দেশ গড়তে পারে !!










২৫শে সেপ্টেম্বর
         সাফরিদ সেখ

তুমি আমাদের যতই চমকাও না কেন?
আমরা তোমার গর্জন কে ভয় পাই না।
তুমি যতই আমাদের লাঞ্ছিত অপমানিত
করতে চাও,আমরা তবুও করবো না ভয়।
তোমার পার্লামেন্ট হোক যত বলবান,
আমাদের মনোবল কভু পারবে ভাঙতে।
কাস্তে আর হাতুড়ির ঝলকানি আজ
সারা আকাশ করেছে আলোকিত।
আমাদের অধিকার হোক সুরক্ষতি
নইলে আমরা তোমার সরকার রাখবো না অক্ষত।

আজ দেখো তোমার কারণে কত মজুর
শ্রমিক,কৃষক গর্জে উঠেছে ফুঁসছে মনে মনে।
মহামারীর  ২৫ শে সেপ্টেম্বর আজ
আর এক মহাবিদ্রোহের ডাক গর্জিছে গগনে।







অবাক

গোপাল বিশ্বাস


এক যে শিশু


ক্ষুধায় কাঁদে


ভাত জোটে না কষ্ট


এক যে শিশু


খেতে চায় না


খাবার করে নষ্ট  l

এক যে শিশু


পথের পাশে


কুড়ায় খেলনা জিনিস


এক যে শিশু


দামি খেলনা


ভেঙে করে ফিনিস  l

এক যে শিশু


লেখা পড়া


রয়ে গেল বাকি


এক যে শিশু


উপরে ওঠে


অবাক চেয়ে থাকি  l

এক যে শিশু


বড় হয়ে


মা বাবাকে প্রণাম


এক যে শিশু


মা বাবাকে পাঠায়


বৃদ্বাশ্রম  l









বিদ্যাসাগর স্মরণে

        আসরাফ আলী সেখ


মলিন মর্ম মোছাতে


তুমি এসেছিলে


বাংলাতে ,


তোমার স্পর্শে উজালা হল


বিধবা নারী


জীবন ,


তোমার হাতে


বাঙালির শুরু হলো


শৈশবের ই পাঠ ,


তোমার আলোয়


ঘুচিলো কালো


কুসংস্কারের হাট ,


কত যাতনা সয়েছো


তুমি  সমাজ মুক্তির


তরে ,


সাগরের মতো উদার


তুমি , ঢেউয়ের মত


চলন ,


এসে ছিলে সংস্কার


তরে জ্ঞানের শিখা


নিয়ে,এসো


হে বীর  ,এসো সাগর


এই ভাঙা জাতির


প্রানে ,


আলোর ছোঁয়ায়


জাগিয়ে তোলো


ঘুমন্ত এই প্রানে ।








      বাবা


        হামিদুল ইসলাম


               

বাবা মানে রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা


ছেঁড়া ছাতা হাতে একটি মানুষ


সে দাঁড়িয়ে থাকে যতোক্ষণ ট্রেণ না ছাড়ে


ছেলে তার রেলযাত্রী


চাকরীর পরীক্ষা কোলকাতায়  ।

বাবা মানে একজন সংগ্রামী মানুষ


সে সংসারের হালটা ধরে নিজ হাতে


তিনটে ছেলে মেয়ে লালন পালন করে


স্কুলের খরচা খাওয়া পরা


সবই তার দায়িত্বে বর্তায়  ।

বাবা মানে একজন পুরোনো মানুষ


কখনো এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি তালগাছ


কখনো দুঃখে হৃদয় ভাঙে না তার


সাহসের সাথে পাড়ি দেয় সে সাগর


ইতিহাস তার সময়ের ঘড়ি ।

বাবা মানে ইতিহাস


বাবা মানে বহুকষ্টে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুরুষ


পৌরুষ তার বুকের পাটায়


হেঁয়ালির হাত ধরে সে পেরোয় না সাগর


বাবা মানে শ্রদ্ধায় ভরা রসের বড়ি  ।








সেপ্টেম্বর


উমর ফারুক

এই মাস বড় মাস


সবথেকে দুঃখু


উপবাস এক বেলা


গরীবও বুভুক্ষু।


এইমাসে পূজা হয়।


শারদের শুভ মাস


এই মাসে করো ঘরে


জ্বলে শুধু পোড়া বাঁশ।


পূজো দিলে নুন পরে


সব আশা মিটে যায়


ছিটিয়ে সে নূন টা।


গরীবের কাটা ঘায়।


ঠিকঠাক চলেনাকো


উনুনের চাল যার


মাঝরাতে ঘুম ডাকে


একবুক ভাবনার।


মরে যায় সুখ কারো


এই মাসে ভেবে তাই


ছিনতাই বাড়ে কভু


কোন কোন দিনটাই।










ভারতমাতার মহান সন্তান
         শিবব্র‍ত গুহ

ভারতে অনেক মহান মানুষের হয়েছিল জন্ম।
তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই নামটি শুনলেই মন ভরে ওঠে শ্রদ্ধায়। তিনি ছিলেন উনবিংশ শতকের
একজন বিশিষ্ট বাঙালী শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। ওনার প্রকৃত নাম হল
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল। এছাড়া, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর
পান্ডিত্য ছিল অগাধ। তিনি প্রথম বাংলা লিপি
সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার হলেন তিনিই।
তাঁকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে, অভিহিত করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

তাঁর ছিলেন একজন ভালো মানুষ। তিনি আজীবন মানুষের ভালো করে গেছেন। তিনি গর্বিত করেছেন দেশ ও জাতিকে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মগ্রহণ করেছিলেন
১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ব্রিটিশ ভারতের
বীরসিংহ গ্রামে। এই চলতি বছর, ২০২০ সাল হল
তাঁর দ্বিজন্মশতবর্ষ। যা খুবই আনন্দের কথা। তাঁর পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার অন্তঃপাতী বনমালিপুর নামক গ্রামে।

তাঁর বাবার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও
মায়ের নাম ছিল ভগবতী দেবী। তিনি ছিলেন
খুব মাতৃভক্ত। তাঁর মাতৃভক্তি ও পিতৃভক্তির হয় না কোন তুলনা। তিনি ছিলেন একজন মানুষের মতো মানুষ। তাঁর মাতৃভক্তি নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। তার মধ্যে একটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

একবার, তাঁর মায়ের ডাকে, তিনি ভয়ংকর দামোদর নদ সাঁতরে পার হয়ে গিয়েছিলেন
। কি অসাধারণ ঘটনা! বিদ্যাসাগর মহাশয়, অসম্ভবকে করেছিলেন সম্ভব।

চার বছর নয় মাস বয়সে, তাঁর বাবা, তাঁকে, গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দিয়েছিলেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তাঁর মেধাসত্তা ছিল অতুলনীয়।
তিনি পড়াশোনাতে কখনো অবহেলা করেননি।
১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে, পাঠশালার শিক্ষা শেষ করে, তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁর বাবার সাথে কোলকাতাতে চলে আসেন।

কথিত আছে, পায়ে হেঁটে কোলকাতা আসার সময়ে, পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে তিনি সেগুলো সহজেই আয়ত্ত
করে ফেলেছিলেন। এমনই ছিল তাঁর আশ্চর্য মেধাশক্তি! ব্যাকরণ পড়ার সময়ে, তিনি সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন
১৮৩০ সালে। ১৮৩১ সালের মার্চ মাসে, বিদ্যাসাগর, বার্ষিক পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য, মাসিক ৫ টাকা হারে বৃত্তি পেয়েছিলেন।

১৮৩৫ সালে, ইংরেজি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রূপে,
বিদ্যাসাগর, পারিতোষিক পান। তাঁর একটা মহান গুণ ছিল। তিনি একজন বিরাট পন্ডিত মানুষ ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তাঁর মধ্যে কখনো পান্ডিত্যের অহংকার দেখা যায়নি। তিনি দ্বিতীয় বর্ষে, সাহিত্য পরীক্ষায় অধিকার করেছিলেন
প্র‍থম স্থান। তিনি মাত্র পনেরো বছর বয়সে,
প্রবেশ করেছিলেন অলংকার শ্রেণীতে।

অলংকার শাস্ত্র কিন্তু একটি খুব কঠিন বিষয়।
কিন্তু, তিনি মাত্র ১ বছরের মধ্যেই, সাহিত্য দর্পণ,
কাব্য প্রকাশ, রসগঙ্গাধর প্রভৃতি অলংকার গ্রন্থে,
ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। যা দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল। ১৮৩৬ সালে,
তিনি শেষ করেছিলেন তাঁর অলংকার পাঠ।
১৮৩৮ সালে, তিনি বেদান্ত পাঠ সমাপ্ত করেছিলেন। এই পরীক্ষায় তিনি অর্জন করেছিলেন প্রথম স্থান।

তাঁর জন্মের সময় তাঁর পিতামহ তাঁর বংশের ধারা অনুযায়ী, তাঁর নাম রেখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৩৯ সালের ২২শে এপ্রিল, তিনি হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
সেই পরীক্ষাতে তিনি বিরাট কৃতিত্বের সাথে
হয়েছিলেন উত্তীর্ণ। যা ছিল তাঁর জীবনের এক
অসামান্য সাফল্য।

সংস্কৃত কলেজে, বারো বছর পাঁচ মাস অধ্যয়নের
পরে, তিনি এই কলেজ থেকে একটি প্রশংসাপত্র
লাভ করেছিলেন।
১৮৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে, তাঁর প্রাপ্ত দেবনাগরী হরফে লিখিত এই সংস্কৃত প্রশংসাপত্রে,
কলেজের অধ্যাপকেরা, ঈশ্বরচন্দ্রকে অভিহিত
করেছিলেন " বিদ্যাসাগর " নামে।

বিদ্যাসাগর, মাত্র একুশ বছর বয়সে, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান পন্ডিতের পদে আবৃত হন। তখন তাঁর বেতন ছিল
মাসে ৫০ টাকা।
১৮৪৬ সালের ৫ ই এপ্রিল অবধি, তিনি এই পদের
দায়িত্বে ছিলেন। ১৮৪৬ সালের ৬ ই এপ্রিল, একই
বেতন হারে, তিনি সংস্কৃত কলেজের সহকারী
সম্পাদকের ভার গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে,
তিনি স্থাপন করেন সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি নামে একটি বইয়ের দোকান।

এই বছরেই, প্রকাশিত হয়েছিল, হিন্দি বেতাল পচ্চিসী অবলম্বনে রচিত তাঁর বই বেতাল
পঞ্চবিংশতি। প্রথম বিরাম চিহ্নের সফল ব্যবহার হয়েছিল এই বইতে। ১৮৪৯ সালে,
মার্শম্যানের হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে,
তিনি রচনা করেন বাঙ্গালার ইতিহাস দ্বিতীয় ভাগ
গ্রন্থখানি। ১৮৫০ সালের আগস্ট মাসে, মদনমোহন
তর্কালঙ্কারের সাহায্যে, তিনি সর্ব্বশুভকরী পত্রিকা
করেছিলেন প্রকাশ।

বিদ্যাসাগরের কর্মকান্ডের সীমা পরিসীমা ছিল না।
তিনি যা যা কাজ করেছেন সারা জীবন ধরে, তা
সবই মানুষের কল্যাণের জন্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রের মধ্যে দেখা যায়
বহুবিধ গুণের সমাবেশ। তাঁর চরিত্র ছিল কঠোর ও কোমলের সংমিশ্রণ। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন
একজন প্রখর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। সকলেই তাঁর ব্যক্তিত্বকে
করতো প্রবল শ্রদ্ধা। তিনি সবসময় মনে করতেন, যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মাথা নত করে কাজ করার থেকে সেই কাজ থেকে অবসর নেওয়া অনেক বেশি ভালো।

ইংরেজদের তিনি কখনো প্রভুর দৃষ্টিতে দেখতেন না। দেশের দরিদ্র অসহায় মানুষদের প্রতি তাঁর মন ছিল সহানুভূতিতে ভরা। তাঁদের দুঃখ - দুর্দশা,
ব্যথা, বেদনা, কষ্ট, যন্ত্রণা তাঁর হৃদয়কে সবসময় করে রাখতো ভারাক্রান্ত। তিনি সদা সর্বদা তাদের
দুঃখ নিরসনের চেষ্টা করতেন। তাঁর দয়া মায়ার কোন সীমা ছিল না।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বলা হয় দয়ার সাগর।
তিনি সারাজীবন ধরে কত মানুষের যে উপকার করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। কেউ কখনো অর্থসংকটে পড়ে, তাঁর কাছে সাহায্যের জন্য এলে, তিনি কখনোই কাউকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেননি। অনেক দরিদ্র ছাত্র, তাঁর দেওয়া
অর্থে, পড়াশোনা ও খাওয়াপরা চালাতো।

দুর্ভিক্ষের সময়, তিনি অন্নসত্র খুলে, সবাইকে দুই বেলা সেখানে খাওয়াতেন। যারা এখানে এসে খেতে লজ্জা পেতেন, তাদের তিনি, বাড়িতে গোপনে চালডাল বা টাকা পাঠাতেন। এজন্য তিনি
কখনো লোকের দানের ওপরে নির্ভর করতেন না।
সব খরচ নিজে করতেন। একবার, বিখ্যাত কবি
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিদেশে ঋণগ্রস্ত হয়ে,
যখন তাঁর কাছে অর্থসাহায্য চেয়েছিলেন,
তখন তাঁর নিজের কাছে অর্থ ছিল না। তিনি ধার করে মাইকেলকে সাহায্য করেছিলেন। এমনই মহান মানুষ ছিলেন বিদ্যাসাগর।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে মনে করা হয়, বাংলার প্রথম সার্থক গদ্যকার। তিনি সর্বপ্রথম বাংলা সাধু গদ্যের একটি মান্য ধ্রুবক নির্দেশনা করেছিলেন।
প্রয়োজনবোধে তিনি, সেই গদ্যে চলিত ভাষার গতিশীলতা যুক্ত করেন। তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যের নব জন্মদাতা। সংস্কৃত কাব্যসাহিত্যে,
তাঁর খুব দক্ষতা ছিল। আবার, নিজের চেষ্টায়, তিনি ইংরেজি ভাষা শিখে সেই ভাষার সাহিত্যের
সাথে সম্যক পরিচিত হয়েছিলেন।

সংস্কৃত শব্দ ও পদবিন্যাসের শ্রুতিমাধুর্য ও
গাম্ভীর্যকে তিনি স্থান দিয়েছিলেন বাংলা গদ্যে।
কাব্যিক ছন্দোময়তায় গদ্যকে দিয়েছিলেন এক ললিত রূপ। ইংরেজি সাহিত্যের আদর্শে,
যতিচিহ্নের ব্যবহার করে, বাংলা সাহিত্যে এক
নবদিগন্তের তিনি করেছিলেন সূচনা।

" শকুন্তলার অধরে নবপল্লবশোভার
সম্পূর্ণ আবির্ভাব ; বাহুযুগল কোমল
বিটপের বিচিত্র শোভায় বিভূষিত ;
আর, নব যৌবন, বিকশিত
কুসুমরাশির ন্যায়, সর্বাঙ্গ ব্যাপীয়া
রহিয়াছে৷ ( শকুন্তলা, প্রথম পরিচ্ছেদ)। "

- কি অসাধারণ সৃষ্টি বিদ্যাসাগরের! এর কোন তুলনাই হয় না। কি অপূর্ব শব্দচয়ন তাঁর! বাংলা
গদ্য সাহিত্যকে নানা অলংকারে সমৃদ্ধ করেছিলেন
তিনি।

তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছিলেন, " বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যভাষার উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত, সুবিন্যস্ত,
সুপরিচ্ছন্ন ও সুসংহত করিয়া তাহাকে সহজ গতি
ও কর্মকুশলতা দান করিয়াছিলেন। "

তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো বাংলা সাহিত্যের এক একটি
সম্পদ। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি ঃ

বর্ণপরিচয় ১ম ও ২য় ভাগ ১৮৫৫, ঋজুপাঠ প্রথম,
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগ ১৮৫১ - ১৮৫২, সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা ১৮৫১, ব্যাকরণ কৌমুদী
১৮৫৩, শকুন্তলা ১৮৫৪, সীতার বনবাস ১৮৬০,
বাঙ্গালার ইতিহাস ১৮৪৮, জীবনচরিত ১৮৪৯,
নীতিবোধ ১৮৫১, বোধোদয় ১৮৫১, কথামালা ১৮৫৬, চরিতাবলী ১৮৫৭, ভ্রান্তিবিলাস ১৮৬১,
প্রভৃতি।

বাংলা তথা ভারতে নারীশিক্ষার প্রসারে বিরাট অবদান ছিল যে মানুষটির, তিনি আর কেউ নন,
তিনি হলেন আমাদের সবার সবার প্রিয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলা তথা ভারতের নারীজাতি যখন শিক্ষার আলো থেকে ছিল বঞ্চিত, অবহেলিত, তখন এই নারীজাতিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করেছিলেন। এই মহান কাজ করতে গিয়ে তাঁকে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়।

কিন্তু, তিনি তা করেছিলেন অগ্রাহ্য। তিনি ছিলেন তাঁর সংকল্পে অটল। তাঁর গতিরোধ কেউ পারেনি করতে। তিনি ও ড্রিংকওয়াটার বিটন উদ্যোগী হয়ে, কোলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিদ্যাসাগর ছিলেন
এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। এই বিদ্যালয় বর্তমানে
বেথুন স্কুল নামে পরিচিত। ১৮৫৭ সালে, বর্ধমান জেলায়, তিনি মেয়েদের জন্য একটা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় এক সম্মেলনীর সূচনা করেছিলেন। সেযুগে দাঁড়িয়ে এ ছিল এক অভাবনীয় উদ্যোগ। যার প্রশংসা করেছিলেন অনেকে। এর নাম ছিল স্ত্রী শিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে,
১৮৫৮ সালের মে মাসের মধ্যে, নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।

সত্যিই এই উদ্যোগ বিরাট প্রশংসনীয়। ১৮৬৪ সালে, বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। সেটা গিয়ে দাঁড়ায় ২৮৮ টিতে। এর পেছনেও বিদ্যাসাগরের বিরাট ভূমিকা ছিল।নারীরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে
এক নতুন জীবন ফিরে পেল। সারা দেশজুড়ে নারীজাতির মধ্যে এক অপূর্ব সাড়া পড়ে গেল।
এসবই সম্ভব হয়েছিল একমাত্র, শুধু একমাত্র,
বিদ্যাসাগরের জন্য।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সারাজীবন ধরে অনেক মহান কাজ করেছিলেন। তার মধ্যে একটি হল
সমাজে বিধবা বিবাহের প্রচলন করা। এই কাজ
করতে গিয়ে তিনি অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। কেউ কেউ তাঁর প্রচন্ড সমালোচনা করে। কিন্তু, বিদ্যাসাগর ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি অসম্ভবকে করেছিলেন সম্ভব।
বাংলা তথা ভারতের বুকে তিনি স্থাপন করেছিলেন এক নতুন দৃষ্টান্ত।

বিদ্যাসাগর সংস্কৃত সাহিত্যের এক বিরাট পন্ডিত মানুষ ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি ছিলেন একজন উদার মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি। তিনি খোলামনে
পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি ছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের একজন
প্রবল সমর্থক। সেযুগে, মেয়েদের অল্প বয়সে
বিয়ে হয়ে যেত। সেকালের হিন্দু বিধবা নারীদের
প্রতি যে অত্যাচার হতো, তা ছিল অবর্ণনীয়।

সেকালের হিন্দু বিধবা নারীদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার বিদ্যাসাগরের হৃদয়কে করেছিল
ব্যথিত। তিনি এর প্রতিরোধ কিভাবে করা যায়?
তার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি এই সংগ্রাম
করেছেন বীরত্বের সাথে। এই বীরত্বের হয় না কোন তুলনা।

তিনি হিন্দুশাস্ত্র উদ্ধৃত করে, প্রমাণ করেছিলেন,
যে, লোকাচার ধর্মের নামে সমাজের বুকে যে প্রচলিত আছে, আসলে তা ধর্ম স্থবিরতার আচারমাত্র। তাঁর এই সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত হয়েছিল সফল। ১৮৫৬ সালে, ব্রিটিশ সরকার,
বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
তবে, শুধু আইন প্রণয়ন করেই থেমে যাননি বিদ্যাসাগর। তিনি এক অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন সেযুগে দাঁড়িয়ে। তাঁর উদ্যোগে,
একাধিক বিধবা বিবাহের আয়োজন করা হয়েছিল।

বাংলার বিধবা নারীরা ফেলেছিল স্বস্তির নিঃশ্বাস।
তারা পেয়েছিল এক নতুন জীবনের আস্বাদ।
এর মূল কৃতিত্ব ছিল বিদ্যাসাগরের, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হলেন ভারতমাতার এক বীর সন্তান। তিনি চিরকাল সমাজের বুকে ঘটে চলা অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। করেছেন তিনি বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিজন্মশতবর্ষে, তাঁর প্রতি জানাই আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ও প্রণাম।
তিনি চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে।

( তথ্য সংগৃহীত )




লিমেরিক
সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

ঢাক বাজাও ঢোল বাজাও, থালা বাটি বাজা
দে বুঝিয়ে সব ব্যাটাকে, আমি দেশের রাজা
কেউ যদিরে ভোলে
ভর ব্যাটাকে জেলে
দেশান্তরে পাঠালে তবেই, বুঝবে তখন মজা।


আলোর শিখা বিদ‍্যাসাগর
      মিনতি গোস্বামী

আলোর শিখা জ্বালিয়ে দিয়ে
খুলেছো বন্ধ দ্বার
সবার চোখে দিতে চেয়েছো
সূর্য সম বাহার।

সিংহশিশু নামেই খ‍্যাত
বিদ‍্যাসাগর নাম
জন্মে তোমার আলোর খ‍্যাতি
বীরসিংহ ধাম।

বর্ণমালার পরিচয়েই
হয় স্বপ্ন সফল
দুই শতাব্দী আগেই তুমি
ফেরালে মনোবল।

মুক্তচিন্তার শপথ নিয়ে
ঘোচালে সংস্কার
আইন করে তুমিই দিলে
বিয়ে তো বিধবার।

বোধোদয় ও.  কথামালায়
জাগে নতুন ভোর
দুই শতাব্দী পরেও দেখি
কাটে আঁধার ঘোর।

কঠিন দিন নামে আঁধার
বাতাস ভরা বিষ
মানবতার কিংবদন্তী
প্রণাম অহর্নিশ।




আল্লাহ মহান
        জুয়েল রুহানী

দৃষ্টি সবার যায় যতদূর
সৃষ্টি সু-মহান,
নাজ-নেয়ামত তাঁরই স'বি-
প্রভূর প্রতিদান।

গাছ-গাছালি, পাঁখ পাঁখালি
আল্লাহরই দান,
বৃক্ষ ভরা ফল-ফলাদি-
পাঁখির কন্ঠে গান।

আকাশ-বাতাস, পাহাড়-সাগর
নদীর কলতান,
সব কিছুরই স্রষ্টা তিঁনি-
আল্লাহ মেহেরবান।

মানবজাতী, প্রাণীকূলে-
রিযিক করেন দান,
জ্বীন-ইনসান,ফেরেশতা গায়
প্রভূর গুনগান।



বিদ্যাসাগর
        জাহাঙ্গীর দেওয়ান

বীর সিংহে মেদিনী পুরেই ভগবতীর তরে,
বিদ্যা ও দয়ার সাগর ঠাকুর দাসের ঘরে।
ঊনিশ শ'- এ কুড়ির ছাব্বিশে সেপ্টেম্বরে,
দারিদ্রতায় জন্ম নিলেন এক অনাড়ম্বরে।

পায়ে হেঁটেই রাস্তা চলা মাইলফলক চিনে,
পড়তেবসা পথের আলোয় তেল না কিনে।
নৌকা নেই, সাঁতরে নদী পার মায়ের টানে,
সাংস্কৃতি টোল মেদিনীপুরের সবাই জানে।

'শিশুশিক্ষা'-য় চমকপ্রদ, বিকল্প নেই যার,
'বর্ণপরিচয়,কথামালা'-র জুড়ি মেলা ভার।
দরিদ্রকে ভালোবাসো আদেশ ছিল মা'-র,
এই ভারতেই বিদ্যাসাগর তৈরি হবে আর?

বিধবা বিবাহ প্রচলন-তিনিই করেন দেশে,
প্রথম পাঠান ছেলেকে বিধবা'র বর বেশে।
প্রমাণ দিলেন নিজের ঘরে বধু নিয়ে এসে,
উদারনীতি মেনেই নিল ভারতবাসি শেষে।

ছিলেন শ্যামলাবরণ যশুরেকই হেড়োমাথা,
উপকার করলে গালখেতে হয় উনার কথা।
উইলিয়াম কলেজে পন্ডিতজী প্রধান হোতা,
মতানৈক্যে সেসয়য়ে নকরি ছাড়ে বঙ্গছাতা।





সেইদিন
        শুকদেব পাল

যেদিন চাঁদের আলো পৃথিবীকে ছুঁয়ে ফিরে যায় শূন্যে কেবল আমাকে আড়াল করে
সেদিন নিজেকে একা লাগে ।
যে ভোরে কাক ডেকে যায় ঘরের চার পাশে মনে হয় সেই মুহূর্ত যেন নতুন বিপদ ফিরে আসছে !
যেই দুপুরে রৌদের কণা গুলিও শরীরে বিঁধে
তখন নিজেকে বিবশ অনুভব করি ।
চেনা মানুষগুলো যখন মুখ ফিরিয়ে চলে যায় তখন নিজেকে .....ভিন জগতের মনে হয় ।
যে রাত্রে শিয়ালের ধ্বনি শোনা যায় সে রাত ভয়ানক অসীম কালো নিশুতি যুগ ।
যে সময় সমাজ তোমায় উপেক্ষা করে মনে রেখো তুমি আরো পরিণত আরও কঠিন ...
যে চাপে তুমি অঙ্গার হয়েছো মনে রেখো তাতেই একদিন আগুন জ্বলবে ,পুড়বে ওদের মুখ ---
সেদিন পৃথিবীতে আসবে আঘাত ,কাঁদবে মানুষ ভাঙবে তাসের ঘর বুঝবে ওদের  প্রয়োচিত্তের  সময় এসেগেছে ,আর তোমারও জয় সুনিশ্চিত ।
দিশেহারা খড়কুটোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে আশ্রয়ের সন্ধানে , করে কিন্তু আশ্রয় ----
সেদিন মাতাল হওয়ায় ঘুড়িটা পাঁক খাবে
আর সুতো লাটাই কিন্তু তোমার হাতেই থাকবে ।


বলতে চাই
      তৃণা মুখার্জী

চিৎকার করে করে সবাইকে বলতে চাই ...আমি কতটা পারি।
আমি কতটা উন্নত।
কতটা আর্দশ বাদী।
কতটা সমাজ ও দশজনের কথাকে মূল্য দি।
আমি ভবিষ্যতের কথা ভাবি।
ভবিষ্যতের কারিগরদের পথ দেখাই।
আমি পারি ‌।
কিন্তু মন তো আমার অন্য খাতে বইছে।
আমি বড্ড মেকি।
আমি ছলনা করি নিজের সঙ্গে।
আমার শত্রু ,আমি নিজেই।
আমার ভয় কি।
আমি নিজেকে জয় নাই বা করলাম, নিজের মেকি,ভন্ডতাকে  লুকিয়ে অন্যের ভালো চাই আমি।





সেইদিন
         শুকদেব পাল

যেদিন চাঁদের আলো পৃথিবীকে ছুঁয়ে ফিরে যায় শূন্যে কেবল আমাকে আড়াল করে
সেদিন নিজেকে একা লাগে ।
যে ভোরে কাক ডেকে যায় ঘরের চার পাশে মনে হয় সেই মুহূর্ত যেন নতুন বিপদ ফিরে আসছে !
যেই দুপুরে রৌদের কণা গুলিও শরীরে বিঁধে
তখন নিজেকে বিবশ অনুভব করি ।
চেনা মানুষগুলো যখন মুখ ফিরিয়ে চলে যায় তখন নিজেকে .....ভিন জগতের মনে হয় ।
যে রাত্রে শিয়ালের ধ্বনি শোনা যায় সে রাত ভয়ানক অসীম কালো নিশুতি যুগ ।
যে সময় সমাজ তোমায় উপেক্ষা করে মনে রেখো তুমি আরো পরিণত আরও কঠিন ...
যে চাপে তুমি অঙ্গার হয়েছো মনে রেখো তাতেই একদিন আগুন জ্বলবে ,পুড়বে ওদের মুখ ---
সেদিন পৃথিবীতে আসবে আঘাত ,কাঁদবে মানুষ ভাঙবে তাসের ঘর বুঝবে ওদের  প্রয়োচিত্তের  সময় এসেগেছে ,আর তোমারও জয় সুনিশ্চিত ।
দিশেহারা খড়কুটোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে আশ্রয়ের সন্ধানে , করে কিন্তু আশ্রয় ----
সেদিন মাতাল হওয়ায় ঘুড়িটা পাঁক খাবে
আর সুতো লাটাই কিন্তু তোমার হাতেই থাকবে ।





  বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :

   || কবিতার রূপকল্প : পর্ব  - ৬  ||

    ( ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত-- শেষ অংশ )

                সৌম্য ঘোষ
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""''''""'''''''''''''''''''''''''
              
                        ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন মজলিশি স্বভাবের কবি, রঙ্গ-ব্যঙ্গেই তাঁর কবিতা ভালো খুলতো । কবি বিষ্ণু দে তাঁকে প্রশংসা করেন। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত পারিপার্শ্বিক জীবন, নতুন কলকাতা শহরের জীবন ইত্যাদি নিয়ে কবিতা লিখতেন। অদম্য কৌতুকবোধের সরসতা মিশিয়ে । তাঁর লেখা অনেক ছত্র প্রবাদের মর্যাদা পেয়েছে । যেমন , " এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরে "। তিনি "সংবাদ প্রভাকর "এর সম্পাদক ছিলেন । ব্যক্তিগতভাবে তিনি সাংবাদিকও ছিলেন। সমকালের সমাজ সম্পর্কে সচেতন সাংবাদিক ও কবি।  ইংরেজ ললনার সম্পর্কে লিখেছিলেন,

    " বিড়ালাক্ষী বিধুমুখী মুখে গন্ধ ছোটে।
       আহা আয় রোজ রোজ কত রোজ ফোটে ।।"

বাঙালি ধনীদের সম্পর্কে লিখেছিলেন,

        " কর্তাদের গালগপ্প গুড়ুক টানিয়া ।
          কাঁঠালের গুড়ি প্রায়  ভূড়ি এলাইয়া।।"

পুরানো পন্থী ও নব্য পন্থীদের সম্বন্ধে ,

         " একদিকে কোশাকুশি আয়োজন নানা।
           আর দিকে টেবিলে ডেভিল খায় খানা।।"

                  কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কার ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সমকালীন। সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক ইংরেজীও জানতেন তিনিও পুরানো পন্থী কবি । সমাজ চিন্তায় প্রগতিশীল মনন ও চিন্তন ছিল মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মধ্যে। তিনি বিধবা বিবাহ, স্ত্রীশিক্ষা প্রভৃতির সমর্থক ছিলেন এবং জাতিভেদের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু কাব্য রচনার ক্ষেত্রে ছিলেন রক্ষণশীল তাঁর জনপ্রিয় পংক্তি :

  " পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল
     কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল ।। "

বাংলার লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২৭-- ১৮৮৭ ) ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত পন্থী এবং "সংবাদ-প্রভাকর" এর শিক্ষানবিশি। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ঈশ্বর গুপ্ত" সংবাদ প্রভাকর" পত্রিকার সম্পাদনা নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে "সংবাদ রত্নাবলী "পত্রিকার সম্পাদক হন ।' সংবাদ প্রভাকর' ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। তিনি এটিকে দৈনিকে রূপান্তরিত করেন। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে "সাপ্তাহিক পাষণ্ড" পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। "সংবাদ সাধুরঞ্জন" পত্রিকার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন এবং কবিগান বাঁধতেন ।প্রায় বারো বছর গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রাচীন কবিওয়ালাদের তথ্য সংগ্রহ করে জীবনী গ্রন্থ রচনা করেন ।

                   ইশ্বরচন্দ্র প্রথম জীবনে অত্যন্ত রক্ষণশীল ছিলেন। তিনি হিন্দু কলেজের শিক্ষা পদ্ধতি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিরোধিতা করতেন । পরবর্তীকালে থিওফিলান্থ্রপিক সভা, তত্ত্ববোধিনী সভা ও জোড়াসাঁকোর সংস্পর্শে এসে তাঁর রক্ষণশীল পুরানো পন্থী মানসিক গোঁড়ামি মুক্ত হয় ।

                   ঈশ্বরচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যুগসন্ধির কবি হিসেবে পরিচিত, কারণ তিনি সমকালের সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা করলেও তাঁর ভাষা, ছন্দ ও অলঙ্কার ছিল মধ্যযুগীয়। মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্রের সাহিত্যাদর্শ যখন লুপ্ত হয়ে আসছিল, তখন তিনি বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে খন্ডকবিতা রচনার আদর্শ প্রবর্তন করেন। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপই ছিল তাঁর রচনার বিশেষত্ব। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের এ ভঙ্গি তিনি আয়ত্ত করেছিলেন কবিয়ালদের নিকট থেকে। ব্যঙ্গের মাধ্যমে অনেক গুরু বিষয়ও তিনি সহজভাবে প্রকাশ করতেন।

                     স্বদেশ ও স্বসমাজের প্রতি ঈশ্বরচন্দ্রের অনুরাগ ছিল অত্যন্ত নিবিড়। তিনি বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য যে আন্দোলন করেছেন তা আজ স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি সবসময় ইংরেজি প্রভাব বর্জিত খাঁটি বাংলা শব্দ ব্যবহার করতেন। ভাষা ও ছন্দের ওপর তাঁর বিস্ময়কর অধিকারের প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর বোধেন্দুবিকাশ (১৮৬৩) নাটকে।

                      ঈশ্বরচন্দ্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, নিধুগুপ্ত, হরু ঠাকুর ও কয়েকজন কবিয়ালের লুপ্তপ্রায় জীবনী উদ্ধার করে প্রকাশ করা। পরবর্তীকালের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের জন্য একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করার কৃতিত্বও তাঁর। যদিও ঈশ্বরচন্দ্রের কাব্যরীতি পরবর্তীকালের বাংলা সাহিত্যে আর অনুসৃত হয়নি, তথাপি এ কথা স্বীকার্য যে, ভবিষ্যৎ বাংলা সাহিত্যের জন্য তাঁর গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও আদর্শ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

                  বাংলা সাহিত্যে তাঁর চিরস্থায়ী আসন লাভ হয়েছে। মধ্যযুগের দেবমাহাত্ম্য ব্যঞ্জক বিষয় থেকে বাংলা সাহিত্যকে তিনি মুক্ত করেন । এমনকি তৎকালীন কবিওয়ালাদের জিম্মা থেকে বাংলা কবিতাকে বৈদগ্ধ ও মার্জিত রুচির আলোয় আনেন । স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে " গুরু" মানতেন।
               ২৩শে জানুয়ারি, ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় পরলোকগমন করেন।।





২টি মন্তব্য: