বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 24/09/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 24/09/2020
 Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 24/09/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 24/09/2020


   বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ
__________________________________

   || বাংলা কবিতা র রূপকল্প-- পর্ব ৪ ||
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
            ||  রামপ্রসাদ সেন ||
        """""""""""""""""""""""""""""""""""""""
                     সৌম্য ঘোষ 
           """"""""""""""""""""""""""""""""""""""


                 "কবিরঞ্জন" রামপ্রসাদ সেন (১৭১৮ বা ১৭২৩ – ১৭৭৫) ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর এক বিশিষ্ট বাঙ্গালী শাক্ত কবি ও সাধক। বাংলা ভাষায় দেবী কালীর উদ্দেশ্যে ভক্তিগীতি রচনার জন্য তিনি সমধিক পরিচিত; তাঁর রচিত "রামপ্রসাদী" গানগুলি আজও সমান জনপ্রিয়। রামপ্রসাদের জীবন সংক্রান্ত নানা বাস্তব ও অলৌকিক কিংবদন্তি বাংলার ঘরে ঘরে প্রবাদবাক্যের মতো প্রচারিত।
রামপ্রসাদ সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের এক তান্ত্রিক পরিবারে। বাল্যকাল থেকেই কাব্যরচনার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ লক্ষিত হত। পরবর্তীকালে তিনি তন্ত্রাচার্য ও যোগী কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর রচিত ভক্তিগীতিগুলি তাঁর জীবদ্দশাতেই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভে সমর্থ হয়। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাঁর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। রামপ্রসাদ সেনের উল্লেখযোগ্য রচনা হল -----বিদ্যাসুন্দর,কালীকীর্তন, কৃষ্ণকীর্তন ও 
শক্তিগীতি। বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত ধারা বাউল ও বৈষ্ণব কীর্তন সুরের সঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগরাগিণীর মিশ্রণে তিনি বাংলা
সঙ্গীতে  এক নতুন সুরের সৃষ্টি করেন। রামপ্রসাদী সুর নামে প্রচলিত এই সুরে পরবর্তীকালেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বহু সংগীতকার গীতিরচনা করেছেন।

                  রামপ্রসাদ সেন সম্ভবত: ভারতচন্দ্রের চেয়ে বয়সে ছোট ছিলেন। সেই সময়, পলাশীর যুদ্ধের অবহিত পর সারাদেশে রাজনৈতিক- অর্থনৈতিক- সামাজিক সর্বব্যাপী অরাজকতা চলছিল । মানুষের জীবন ছিল অনিশ্চিত । সেই অনিশ্চিত দিনে দুঃখ নিপীড়িত কাতর মানুষ গুলি নিশ্চিত নির্ভরতা চেয়েছিল । রামপ্রসাদের খ্যাতি তাঁর শাক্তপদাবলীর জন্য ; যেগুলি রামপ্রসাদী গান হিসাবে বিখ্যাত । সরল আধ্যাত্বিকতার গুনে বাংলার সাধারণ মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল । মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের রূপকে আত্মপ্রকাশ করেছে তাঁর আধ্যাত্মিকতা । সঠিক কিনা জানিনা, আমার ব্যক্তিগত অনুভব , রামপ্রসাদ সেন সম্ভবত: তান্ত্রিক কবি ছিলেন । কোন কোন পদে তিনি দেবীর স্বরূপ তুলে ধরেছেন :

   " হৃদকমল  মঞ্চে দোলে করালবদনী শ্যামা ।
     মনপবনে দুলাইছে দিবসরজনী ও মা ।"

                       কিম্বা
      " কালী পদ্মবনে হংসসনে হংসীরূপে করে রমণ
     তাঁরে মূলাধারে সহস্রারে সদাযোগী করে মনন।"

   রামপ্রসাদের ব্রহ্মময়ী করুণাময়ী। মাতৃ স্বরূপিনী।  " কালী হলি মা রাসবিহারী/ নটবর বেশে বৃন্দাবনে ।" কি অসাধারণ গভীরতম ভক্তি মার্গে তিনি অবস্থান করতেন, সেটা তাঁর রচনায় অনুধাবন করা যায় । লিখলেন------- " আমার ব্রহ্মময়ী সর্বঘটে" অথবা  "সকল আমার এলোকেশী" । বাংলা সাহিত্য আবহমানতার পরম্পরা যারা অধ্যয়ন করেছেন , তারা নিশ্চিত বুঝতে পারছেন, এই রূপ অসামান্য ভাব আমরা এর পূর্বে পাইনি ।

"ধাতু পাষাণ মাটির মূর্তি কাজ কিরে তোর সে গঠনে/
তুমি  মনোময়  প্রতিমা করি বসাও হৃদি পদ্মাসনে।"

বিজয়ার বিসর্জনের বিষাদে তাঁর পদ :

    " মন কেন রে ভাবিস এতো / যেন মাতৃহীন বালকের মতো ।"

আবার তিনি মায়ের কোলে আশ্রয় চেয়ে বলে উঠেন :

" বল মা আমি দাঁড়াই কোথা ।
  আমার কেহ নাই শঙ্করী হেথা।।"

আবার তিনি নিজেকেই নিজে বলেন :

" ডুব দে রে মন কালী বলে ।
  হৃদিরত্নাকরের অগাধ জলে ।"

                  তৎকালে দেশব্যাপী প্রবল অত্যাচার, অনাচার ,অরাজকতার মধ্যে জর্জরিত মানুষের সেই নির্ভরতার প্রত্যাশা রামপ্রসাদের সংগীতে মায়ের কল্পনার মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের আকুলতা । কার্ল মার্কসের তত্ত্বানুসারে বলা যায় , রামপ্রসাদের কাব্যে প্রসাদসংগীত বাস্তবিকই  "  sign of the hardpressed creature " হয়ে উঠেছে ।।








হাইকু কবিতা
         শংকর হালদার

০১।
শিশির ঝরে
আলোয় ভাসিয়ে গা
লাজুক গাঁয়ে ।
০২।
বৃষ্টির ছোঁয়া
আগলে রেখে দেখি
শুধু তামাশা ।
০৩।
মরণ এলে
কি নামে তোর ডাকি
আমি তো নেই ।
০৪।
লাজুক বুকে
ক্ষত আঁকে বাক্যাগ্নি
ইঙ্গিতে ডাকি ।
০৫।
প্রদীপ শিখা
অন্তর আলো হোক
অমাবস্যায় ।








অনু কবিতা
       কনিকা রায়

এই ধরা ধাম থেকে
যেদিন যাব চলে ,
না বলা কথা যা ছিল মনে_
আমি যাবার আগে বলবো তোমায় , যে কোন ছলেবলে।

সেদিন তুমি বুঝবে
কত দিন আমি, তোমার পথ পানে চেয়ে রয়েছি একাএকা।
এখন যাবার বেলায় শুধু বলে যাই-
পরজন্মে যেন আমি তোমায় , বড়ো আপন করে পাই।







আমার জন্মভূমি
         আব্দুল রাহাজ

আমি জন্মেছি মোরা এই জন্মভূমিতে
এই জন্মভূমি আমায় টানে এক বিস্ময় রূপে।
হাওয়া বাতাস প্রকৃতি যেন জন্মভূমিকে আগলে ধরে রেখে আছে
এই জন্মভূমি ছিল একদিন পরাধীন
বহু রক্তের বিনিময়ে আমাদের জন্মভূমি পেয়েছে এক স্বাধীনতার স্বাদ
সত্যি নিজের জন্মভূমি এক অনন্য রুপের অধিকারী
ও যে এক আলাদা টানের মাটি ও তো সেই  আমার জন্মভূমি
সূর্যের উজ্জ্বল দীপ্ত রাশি জন্মভূমিকে ফুটিয়ে তোলে এক অনন্য সৌন্দর্যের অধিকারী
বিশ্বের দরবারে আমাদের জন্মভূমি শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ যা থাকবে আজীবন।







                      খুন
              হামিদুল ইসলাম
                 
পাতার কুটিরে তোমার পবিত্রতা সাজিয়ে রাখি
গাছের কোটরে ভালোবাসা
অনিত‍্যতায় বেড়ে ওঠে মানবিক মুখ
হে মেঘ ! বৃষ্টি দাও
ছাতনাতলায় জন্ম নিচ্ছে আমার আসুরিক ভ্রূণ।

নতুনত্বের মাঝে গরমিল সমূহ ব‍্যাঘাত
চৌকাঠে মাথা ঠোকে
কংক্রিট দেয়াল
হতাশার সাম্রাজ‍্যে তোমার  নিষ্ঠুর পদচারণা
মৃত‍্যুকে স‍্যালুট জানায় অশরীরী খুন ।








দেশ, আমার দেশ!
               বিশ্বজিৎ কর

ভারত আমার ভারতবর্ষ -
আমার হৃদয়, আমার প্রাণ-
কুচক্রীর দল হুঁশিয়ার,
এক্কেবারে সাবধান!
মোরা নেতাজি-উষ্ণতায় তপ্ত,
ক্ষুদিরাম মোদের প্রেরণা -
শান্তিকামী দেশ মোদের,
ফালতু দাদাগিরি মানি না!
বীর জওয়ানেরা সদা জাগ্রত,
জনগণও তৈরী-
অযথা লেজে দিস না পা,
প্রত্যাঘাতে হবে না দেরী!









মানবের ঠাই
            জুয়েল রূহানী

মানব মহান মুখের কথায়
ভিতরে তার শয়তান রূপ,
মুখের বুলিতে কারবে মন
মুখোশ না করে উন্মোচন!

বুঝা বড় দায় মানব রূপ
সাধুর ভিতরে চোর নিশ্চুপ,
কখনও বা সাধারনে-
অসাধারন গুনের স্তুপ!

মানব মনে শয়তান কভূ
বসবাস করে ছলনায়,
মানবে ফুটিয়ে তোলে-
চিত্র নানান উন্মাদনায়!

মানব মনের ঠাই ফেরেশতায়
কখনও বা ঠাই শয়তানে,
মানবের ঠাই মানব মনে-
দোযক কিংবা স্বর্গপানে।







আবাহন
        মিনতি গোস্বামী

দেবীরূপে যদি আমায়  করো আবাহন
সেই তুমিই কোন বোধে কর নারী নির্যাতন?

কন‍্যারূপে লালন করে যে গর্বে হ ও পিতা
সেই হাতেই কন‍্যা কেন হচ্ছে যৌনলাঞ্ছিতা ?

পুত্ররূপে যার গর্ভে জন্ম নিচ্ছো শুভক্ষণে
সেই মাকেই কেন তবে পাঠাচ্ছো নির্বাসনে?

নারী রূপের নানা বেষ্টনে  হচ্ছে পুরুষ পালিত
নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ হোক তাই মার্জিত।

হোক প্রতিমা মাটিতে গড়া তাতেই স্থিত  মাতৃমূর্তি
তার বোধেই জেগে ওঠে অসুরবিনাশী শক্তি।

পঞ্চরিপুকে বলি দিয়ে হোক মায়ের আবাহন
তবেই হবে মনুষ‍্যত্বের মঙ্গলময় জাগরণ।








শ্যামলী
      সাফরিদ সেখ

শ্যামলী তোমার স্পর্শ আমাকে
বিহ্বল করে,পাগোল করে তোলে।
তোমার আজাণু লম্বিত কেশ রাশি,
তোমার শরীরের ঘ্রাণ, পদ চিহ্ন
তোমার জানু,তোমার অক্ষি গোলক
তোমাকে উন্মাদ করে তোলে বিষন্ন করে।

তোমাতে মাথা রেখে যে রাখাল
সারাদিন ধেনু চড়ায়, রাখালী গান গায়
তুমি তার কথা ভাবো?তার কাছে যাও?
যে কৃষক তোমার আলুলায়িত কেশ সজ্জিত
করে, তোমাকে  সজ্জিত করে,লালন করে।

তোমার মত নরম তনু কভু
দেখিতে না পাই,পাই না করোডোরে বাঁধতে।
তপ্ত মরু প্রান্তে আজ তোমার নির্বাসন,
তোমার দিপান্তর,নির্বাসন,বিচ্ছিন্ন করণ।








ফুটপাথের জীবন
            উমর ফারুক

ঝুলছে কারা খিলান ধরে
ছুটছে জোরে ট্রাম
ফুটপাথে কে একলা ঘুমায়
দিচ্ছে না কেউ দাম।

গভীর রাতে কাতর স্বরে
চাইছে তারা ভাত
পথের ধারের নর্দমা তে
খুঁজছে না কেউ জাত!

ট্রেনের দ্বারে যাত্রী নামে
ক্ষুধা ভীষন জোর
সুট পড়া সেই বাবুর পায়ে
পিসছে তাদের ঘর ।

ছেঁড়া কাঁথা একটিই গায়ে
পায়ের পাতায় চিড়
হাঁটুর ওপর ভর করে কেউ
যাচ্ছে আপন নীড়।

ঝুলছে কেহ জীবন মরণ
নিয়ে নানান ক্ষত
কুকুর পাশে দাঁড়াই যেন
মানুষ অসংগত।







প্রশান্তি
    শুকদেব পাল

টুপটাপ বৃষ্টি মায়াকান্না মেশা ঘোলাটে সকাল,
সিক্ত পাখির পালক, সবুজ পাতার থেকে চুটিয়ে পরা জলবিন্দু , ড্রইং বুকে আঁকা রামধনু অঙ্কুরিত চারার হাতছানি মাথাতুলতে চায় ।
ব্যাঙের গোঙ্গানী বিদ্যুতের সংগ্রাম কোনো আসুরিক শক্তির পতনের সূচনা ........
নবজাতকের ঠোঁটের রক্তিম উৎচ্ছাস আরো একবার জয় করলো সত্যকে ।
কালো মেঘের যন্ত্রণাকে কোনো দৈবিক সলিল বর্ষণে হিম শীতল স্রোতধারা প্রবাহিত কৈলাস থেকে মহাসাগরে ।
তৃষ্ণার্ত কাননের সমস্ত জীব অপেক্ষা করছে বুক ভেজাবে প্রাণধারায় ।










My empty cup
        Anjali Denandee, Mom

Just i finish my tea.
Now the empty cup is in my hand.
Though it is now empty
Yet warm.
I am a husband.
My wife gifts me tea daily.
It's my source of charm.
I feel happiness with this cup of tea.
When it touches my lips,
Mouth, throat and ultimately
Reaches in my belly
Then my body becomes satisfied, really.
Sips sips and sips.......
With little sounds of it
Give me heavenly peace.
I feel with my every heart beat
That it's not only a warm cup of tea
But also my life's part.
Yes, i love it
By my heart.
Why?
Because it's the touch of my wife's emotion.
Which is only for my taste buds.
It's as same as the Earth's motion
Around the Sun.
It's can not expressed by me in words.
Why?
Because it's felt by me only.
When I take this cup of tea
My all responses run run and run....
To see
The love center of her.
And then I try try and try
To discover
The depth of love in her life.
Ultimately i realize that she is my wife,
It's the only reason of her each and every  activity.
Yes, her love is this warm cup of tea.








হাইকু
এমাজদ্দিন সেখ

01.
পিতা রুগ্ন 
মার মুখ শুস্ক
আশে বাঁধি বুক l

02.
পথ চেয়ে
গুনছি শুধু দিন
বেড়ে যায় ঋণ !

03.
ডালি সাজাই 
আসার আশে ,আসবে ...
প্রতীক্ষা শেষে !!

04.
শ্বাস শেষে
আশা হবে শেষ
মাঝে  প্রচেষ্ঠা !!

05.
রাজ্ ইচ্ছায় 
অন্নদাতা চাষাই
আজ  বিপন্ন !

06.
ভিত্তি কৃষি 
কর ধ্বংসের চুক্তি
কেন রাজন  ?

07.
কর্মের  আশা,
জাতীয় ক্ষেত্র যত
সবই বেচা  ?

08.
পুঁজি সেবায়
চাষ- জমি -ভিটে ...
সেই নীল চুক্তি !

09.
ভক্তের তালি ,
কৃষকের বলী
কর্পোরেট ভোগে  !

10.
স্তম্ভ চতুর্থ
বলেনা সত্য, কার
পদ লেহনে ?








করোনাকালের বইপড়া-৫
        প্রশান্ত ভৌমিক

করোনা শুরুর দিনগুলোতে যেরকম বই পড়া হয়েছে, আগস্টে এসে আর সেই স্পিডে পড়া হচ্ছে না। এর কারণ অফিস খুলে যাওয়া। তাও যা পড়ছি, তাই লিখে রাখছি।

১) জননী দেবী। সমরেশ মজুমদার

সমরেশ মজুমদারের লেখা  অন্য যেসব বই পড়েছিলাম সবগুলোই ছিল থ্রিলার। ‘জননী দেবী’ সে দিক দিয়ে ব্যতিক্রম। এটি মানব-মানবীর প্রেমের গল্প, মানবিকতার গল্প। লেখক চিন্ময় বৃন্দাবনের ঘাট থেকে এক বৃদ্ধাকে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন। সেই বৃদ্ধার অতীত খুঁজতে চান তিনি। কিন্তু এই ফাঁকে চিন্ময়ের নিজের অতীতই বর্তমান হয়ে ফিরে আসে। সেই অতীতের নাম রাত্রি। উপন্যাসের একেবারে শেষটা নাটকীয়। শেষ সংলাপটা নাটকীয় হলেও বোধহয় জীবনের রুঢ় সত্যটাকেই সামনে নিয়ে আসে। জননী দেবীর ভাষায়- “তোমায় আর নতুন কী বলব গোপাল, জীবন বড় নিষ্ঠুর। কষ্ট করে সুখী হতে হয় গো। সেই সুখে তো কোন দাগ থাকে না।” খুবই সুখপাঠ্য উপন্যাস। ভাল লাগল।

২) ফসলবিলাসী মাটি-হাওয়া। বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রমণ গদ্যটি স্বাদু। বিনায়কের কবিতার তুলনায় যথেষ্ঠ সরল। অবশ্য আমি বিনায়কের কবিতাকে জটিল বলে কোন ধরণের নেতিবাচক মন্তব্য করছি না। তিনি আমার অত্যন্ত পছন্দের কবি। আইওয়ায় লেখকদের ওয়ার্কশপে অংশ নিতে আমেরিকা গিয়েছিলেন তিনি। সেই ভ্রমণের শুরু থেকে প্রথম দুই দিনের বর্ণনা। লেখাটি অসম্পূর্ণ। আমি জানি না এই লেখার আর কোন অংশ আছে কিনা, কিংবা এই লেখাটিই পরবর্তীতে বই হয়ে বেরিয়েছে কিনা। আমি এটা পড়লাম ‘শারদীয়া সংবাদ প্রতিদিন-১৪২৫’-এ। খুবই ভাল লাগল। একই প্রোগ্রামে যাওয়া অগ্রজ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শঙ্খ ঘোষের কথা বারবার এসেছে। সাথে আইওয়ার প্রাকৃতিক বর্ণনা। যেন চোখের সামনেই স্পষ্টভাবে ভেসে উঠছিল সব।

৩) হানাবাড়িতে তিন গোয়েন্দা। শামসুদ্দীন নওয়াব

বইয়ের শুরুতেই লেখা- “এই বইটি তাদের জন্য, তিন গোয়েন্দার ইমেজ এদিক-ওদিক হলেও যাদের আপত্তি নেই।” আপত্তি আমার নেই। কিংবা এরকম কাহিনি পড়ার ইচ্ছে কিংবা রুচি কোনটাই নেই। কেন? প্রথমেই আসা যাক সিরিজের নামের প্রসঙ্গে। ‘তিন গোয়েন্দা’ নামের সিরিজের বইতে আমেরিকায় বসবাসকারী তিনজন গোয়েন্দা ভূতের সাথে কথা বলছে, ভূতের বাড়িতে গিয়ে ঢুকছে! শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘অদ্ভুতুড়ে’ সিরিজের ভক্ত হয়েও এই ব্যাপারটি ঠিক মেনে নিতে পারছি না। কারণ, সেই গল্পগুলোর পটভূমি আর তিন গোয়েন্দার পটভূমি মোটেই এক নয়। সেখানে আগেই বলা আছে অদ্ভুতুড়ে জগতের কথা। কিন্তু এখানে তিনজন গোয়েন্দার গোয়েন্দাগিরি কই? এর চাইতে ‘তিন বন্ধু’ নাম দিয়ে বই করাটাই উপযুক্ত হত। আর গল্পের না আছে শুরু, না আছে শেষ। কোন চরিত্রের প্রতিই ভালবাসা জাগে না। 

৪) অপারেশন কক্সবাজার। রকিব হাসান

তিন গোয়েন্দার এই কাহিনি কক্সবাজারের পটভূমিতে হলেও কক্সবাজার শহরের কিংবা সমুদ্র সৈকতের কোন বর্ণনাই এখানে নেই। সেক্ষেত্রে বলা যায়, কক্সবাজার না হয়ে এই কাহিনি কুমিল্লায় হলেও তেমন ক্ষতিবৃদ্ধি হত না। তাছাড়া গল্পের যে জমে ওঠার ব্যাপার সেটা কখনোই এখানে ছিল না। কিশোরের ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে যাওয়া, রবিনের অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করা, মুসার ত্রাণ দিতে যাওয়া ও ফিরে অসুস্থতা- সব মিলিয়ে তিন গোয়েন্দার সেই থ্রিলিং ব্যাপারটি পাওয়া যায় নি। তাছাড়া নার্স সাফিয়ার খুন, অরুণের ওপর সন্দেহ, মূল অপরাধী ধরা পড়া- সব মিলিয়ে যেন সেই স্বাদের ব্যাপারটি নেই। তাছাড়া তিনজন আমেরিকান কিশোরের বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে আসার উপযুক্ত কারণও কোথাও পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে, রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দার খুব ভাল উদাহরণ এটি নয়।

৫) দরিয়া-ই-নুর। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন থ্রিলার লেখক হিসেবে যথেষ্ঠ সমাদৃত। ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি’ আর ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি’ এই বই দু’টি নিয়ে ফেসবুকে খুব আলোচনা হলেও কখনো পড়ার সুযোগ হয় নি। ‘প্রথম আলো’র ঈদ আনন্দ সংখ্যা ২০২০-এ পেলাম নাজিম উদ্দিনের ‘দরিয়া-ই-নূর’। খুব যে আগ্রহ করে পড়তে বসেছি এমন নয়। আবার পড়ে খুব আনন্দ পেয়েছি এমনও নয়। তবে টানা পড়ে যাবার ইচ্ছে হয়েছে। ভাষা সুন্দর। থ্রিলারের টানটান ভাবটা একদম শেষ অব্দি ধরে রাখতে পেরেছেন লেখক। তবে সব ছাপিয়ে কাহিনিটাই প্রধান হয়ে ওঠে এখানে। থ্রিলারের তথাকথিত ধাওয়া, পালটা ধাওয়া, খুন ব্যাপারগুলো এখানে ততটা নেই। তার চাইতে ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা বেশি। কিন্তু সেটা আবার ফেলুদার মত মগজাস্ত্রের খেলা নয়। তবে সেটা কী? সেটা সম্পূর্ণ আলাদা বলেই আগ্রহ পেয়েছি বইটা শেষ পর্যন্ত পড়ে যেতে। সব মিলিয়ে আগ্রহ জাগে লেখকের অন্য বই পড়ার।



0 comments: