"উপকণ্ঠ 10 জুলাই সংখ্যা "
"উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-10/07/2020, শুক্রবার
সময় :- সন্ধ্যা 6 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে
Click Here
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে
Click Here
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇
বাংলা-রক্ !
রাজা দেবরায়
রক্ শব্দটি শুনলেই বিশেষত যুবসমাজের আনন্দের সীমা থাকে না । আর বাংলা-রক্ শুনলেই বিশেষত বাঙালি যুবরা আহ্লাদে আটখানা হয়ে যায় । তবে ব্যতিক্রম তো সর্বদাই ছিলো, আছে এবং থাকবে ! কিন্তু যুবসমাজ রক্ বলতে আসলে কী বোঝে সেটাই বোঝা মুশকিল । কারণ নাচানাচি ছাড়া তো আর কিছুই দেখা যায় না । তবে হ্যাঁ, অবশ্যই কেউ কেউ বোঝেন বা বোঝার চেষ্টা করেন । তবে সম্ভবত সেটা খুবই নগণ্য সংখ্যা । তবে যেভাবে রক্ মিউজিক যন্ত্রানুষঙ্গের সাথে পরিবেশিত হয় তাতে কথা শোনা যায় না, শুধুই মিউজিকটা শোনা যায় । হতে পারে সেটা আমার অজ্ঞতা, তবে আমার মতো হয়তো অনেকেই শুধু মিউজিক আর নাচটাই শুধু শুনেছেন এবং দেখেছেন । আমাদের বহু কষ্ট করে একটা শব্দ বুঝতে হয় ।
এবার কথা হলো সঙ্গীতের তো কোনো ভাষা নেই, তাহলে বাংলা-রক্ নিয়ে আলোচনা করছি কেনো ? আসলে প্রত্যেকটা দেশের একটা নিজস্ব সুর আছে, ধারা আছে । রক্ যে মাটিকে প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের দেশ সে মাটি নয় । রক্ নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা, গবেষণা, সমালোচনা হতেই পারে । কিন্তু রক্ আমাদের দেশে ধারা হতে পারে না । কিছু গানে রকের ফ্লেভার থাকতেই পারে । রবি ঠাকুরের অনেক গানে বিদেশী সুরের ব্যবহার আছে, গবেষণা আছে, ফিউশন তৈরী করেছেন তিনি । তার জন্য তাঁকে অনেক সমালোচনাও শুনতে হয়েছিলো । কিন্তু তিনি কখনোই এটাকে ধারা বানান নি । মূল সুরটা আমাদের দেশের যে সুর সেটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন ।
রক্ মানেই খারাপ, সেটা কোনোভাবেই বলা হচ্ছে না । রক মিউজিকের চিন্তন, মনন, দর্শন ইত্যাদি আছে, কিন্তু সেটা আমাদের দেশের সুরের সাথে খাপ খায় কিনা সেটা চিন্তা করতে হবে ! আর বাংলা-রক্ তো হতেই পারে না ! তাহলে তো অ্যামেরিকান গজল, অস্ট্রেলিয় টপ্পা ইত্যাদিও হতে পারে ! কারণ মিউজিকের তো কোনো ল্যাঙ্গুয়েজ নেই !!
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
পরিণাম
(প্রথম পর্ব)
বুবাই দাস
রমেশ ও.. রমেশ....বাড়িতে আছো?তখন বাড়ির ভেতর থেকে রমেশের বউ চিৎকার করে বলে উঠল,কে?মাস্টারমশাই বলছি।রমেশের বউ আশাদেবী এবং তার একটি মাত্র মেয়ে টুম্পা বাইরে এলো।মাস্টারমশাই আপনি!আসুন ভেতরে আসুন।না থাক মা আজ থাক।রামের চিঠি এসেছে। স্কুলের পথে এক পিওন এই চিঠিটা আমার হাতে ধরিয়ে দিল।রমেশ কোথায়? ওতো নদীতে গিয়েছে। এই শুনে মাস্টারমশাই চলে গেলেন।মা, ছেলের চিঠি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে, টুম্পাকে বললো যা মা যা চট করে তোর বাবাকে ডেকে নিয়ে আয়।রমেশ নদীতে নৌকা চালায়,যাত্রীদের এপার - ওপার করে।খুব টানাটানির পরিবার রমেশের।নৌকা চালিয়ে সংসার চালায়।বাড়িতে একটি গরুও আছে আশাদেবী সেই গরুটা দেখাশোনা করে।ইতিমধ্যেই টুম্পা নদীর কাছে এসে পৌঁছায়। রমেশ তখন নদীর ওপারে। টুম্পা তখন বাবা বলে চিৎকার বলে বললো বাবা ও..বাবা......দাদার চিঠি এসেছে। এই শুনে রমেশ তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরে আসলো।টুম্পা এখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। দাদার চিঠিটা পড়ে শুনাচ্ছে বাব ও মাকে।"মা ও বাবা তোমরা কেমন আছো?আমি ভালো আছি। টুম্পা পড়াশুনা করছে তো?আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে।আমি ফাস্টক্লাস পেয়েছি। তোমরা আমার প্রনাম নিয়েও। ইতি তোমার বড়ো ছেলে রাম"।রাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি পড়াশোনা করে।ছোটো থেকেই খুব মেধাবী ছাত্র ছিল রাম।চিঠির দুই মাস পরেই রাম বাড়িতে ফিরে এলো।সেইদিন মা,বাবা ও বোন সবাই একসাথে রাতের খাবার খেতে বসে দারুণ একটা গল্পের আসর জমিয়েছে।গল্পে গল্পেই রমেশ রামকে বললো, রাম বাড়িতে টাকা পয়সার খুব সমস্যা বাবা!আমার এখন বয়স হয়েছে আগের মতো আর নৌকার দাঁড় টানতে পারিনা।তোর মাও বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ।মাঝে মাঝেই মাথা ঘুরে পরে যায়। তারপরে তোর বোন টুম্পা ও যথেষ্ট বড় হয়েছে।ওর তো বিয়ে দিতে হবে তাই না? তখন রমেশ এই শুনে বলতে লাগলো,হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা তুমি কোনো চিন্তা করোনা আমি কলকাতায় যায়,একবছরের মধ্যে একটা চাকরি জোগাড় করে নিবো।তারপর টুম্পার ভালো একটা সম্বন্ধ দেখে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দিবো।কয়েকদিন বাড়িতে সময় কাটিয়ে রাম আবার কলকাতায় ফিরে যায়।সেখানে গিয়ে আবার মন দিয়ে পড়াশোনা শুরু করে।বছর শেষ হতে না হতেই রামের হঠাৎ চিঠি এলো।কলকাতার একটি বিদ্যালয়ে সে মাস্টারের চাকরি পেয়েছে।এই খবর পেয়ে রামের পরিবার হঠাৎ যেন বসন্তে দোলের রঙে রেঙে উঠলো।গোটা গ্রামের লোকজনের মুখে রামের এই সাফল্যের কারণে রমেশের খুব প্রশংসা হল।এতে রমেশের বুক গর্বে ভরে উঠলো।ঠিক তার ছয়মাস বাদে বাড়ি ফিরে রাম তার কথামতো টুম্পার ধুমধাম করে বিয়ে দেয়। বিয়ের পরেই আবার রাম কলকাতায় ফিরে আসে।কলকাতায় ফিরে এসে মাস কয়েক বাদে একটি সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে নেয়। বাড়িতে এই খবরটা রাম না জানিয়ে লুকিয়ে রাখলো।এদিকে রমেশ এবং তার বউ আশাদেবী একা। বাড়িটা যেন বোবা হয়ে গেছে।দেখতে দেখতে বহুদিন হয়ে গেলো। রামের কোনো খবর নাই। একদিন রমেশ বাড়ি ফিরে এসে আশাদেবীকে বললো।হ্যাঁগো! রামের কি কোনো চিঠি এসেছে?আশাদেবী কাতর কন্ঠে বললো নাগো আসেনি!বাড়ীর গরুটা হাম্বা হাম্বা করে ডাক ছাড়ছে মাঠের ওই রোদ্দুর থেকে।কিগো গরুটা মাঠ থেকে নিয়ে আসোনি কেনো?শরীরটা বড্ডো খারাপ করছে গো উঠতে পারছিনা। তখন রমেশ আশাদেবীর কপালে হাত দিলো।বাপরে!এতো অনেক জ্বর এসেছে গো তোমার।এই বলে শিগগির গিয়ে পাড়ার মলয় ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে আসলো।ডাক্তারবাবু আশাদেবীকে ভালো করে চেকাপ করলেন।তারপর রমেশকে বাইরে এনে ডেকে বললো তোমার বউয়ের শরীরটা কিন্তু ভালো না।যতো তাড়াতাড়ি পারো কলকাতায় বড়ো হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।এখন এই ঔষুধগুলো দিলাম খাইয়ে দিও।আস্তে আস্তে আশাদেবীর শরীর আরও খারাপ হতে লাগলো।পাড়ার ডাক্তারের ঔষুধ আর কাজ করছেনা।হ্যাঁগো তুমি নদী যাবে না? না!আজ আর ভালো লাগছেনা।তোমাকে এইভাবে একা ফেলে যাই কি করে? আশাদেবী আস্তে করে বললো না না আমার কিছু হবে না তুমি যাও আমি ভালো আছি।আচ্ছা ডাক্তারবাবু কি বললো গো? ও..কিছু না।এখন এই ঔষুধটা খেয়ে নিয়ে চুপটি করে শুয়ে পড়ো।এদিকে রমেশের গরুটা দিন দিন অযত্নে শুকিয়ে হাড়গোড় বেড়িয়ে আসছে।ঘরে কোনো খড়কুটো নেই। রোদ্দুরে পুড়ে পুড়ে গরুটা চোখের জল ফেলছে আর মাঠের পোঁড়া ঘাস গুলো একটু করে মুখে তুলছে আর বাড়ির দিকে মাথা উঁচু করে আশাদেবীর অপেক্ষা করছে।এদিকে আশাদেবী বিছানায় পড়ে আছে। রমেশ ছুটোছুটি করছে গোটা গ্রামে রামের কাছে চিঠি পাঠাবে বলে। চিঠি পাঠালেও রামের কোনো উত্তর আাসে না।দিন দিন আশাদেবীর শরীরের অবনতি হতে লাগলো।একদিন হঠাৎ রাতে রমেশের সেই গরুটা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।কেউ কিছু বুঝতেই পারলো না।সকাল হলেই গরুটা হাম্বা হাম্বা করে ডাক দেয়।আজ হঠাৎ তার কোনো সাড়াশব্দ নেই।এই দেখে আশাদেবী রমেশকে বললো, দেখোতো আজ গরুটার কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না কেন?রমেশ তখনি গরুটা দেখলো যে,গরুটা মাথা লম্বা করে পাগুলো টানটান করে যেনো নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। চোখের জল ফেলতে ফেলতে সে যেনো চোখের কাজল পড়েছে। রমেশ যেই গরুটার গায়ে হাত দিয়েছে অমনি চিৎকার করে বললো আশা আমাদের লক্ষী আর নেই গো। লক্ষী মারা গেছে।কষ্ট পেতে পেতে গরুটাও আজ তাদের কে ছেড়ে চলে গেলো।পরের দিন রমেশ আর রামের আশা না করে গ্রামের গোপাল মাস্টারমশাই ও টুম্পা আশাদেবীকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।ভোরবেলা যখন কলকাতায় এসে পৌঁছলেন ততক্ষণে খুব দেরি হয়ে গেছে।আশাদেবী তার ছেলেকে শেষবারের মতো দেখবে বলে ভরা নয়ন জলে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে যাচ্ছেন। আর শুধু রাম রাম রাম করে ছেলেকে ডাকছে।রামের কোনো খবর নাই। আশাদেবী রমেশের হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বলছে আমার রামকে একবারের জন্য আমার কাছে এনে দাও, আমি আমার খোকাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে চায়।মায়ের চোখে জল অনবরত বয়ে চলেছে।আশাদেবী বুঝতে পেরেছে যে, তার হাতে আর বেশী সময় নেই।একটি বারের জন্য সে তার সন্তান রামকে বুকে নেবে।আশাদেবীর কান্না দেখে সকলে কাঁদছে।রমেশ কাঁদছে আর আশাদেবীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে,আশা তুমি চিন্তা করো না,আমরা কলকাতা চলে এসেছি।তুমি সুস্থ হয়ে যাবে সব ঠিক হয়ে যাবে।তোমার ছেলে রামতো কলকাতাতেই আছে সেও তোমার কাছে আসবে গো।রমেশ বলছে আর আশার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে। ঠিক কিছুক্ষণ পরে আশাদেবীর শরীরটা শান্ত হয়ে গেলো।নয়নে জল শুকিয়ে এলো।হাসপাতালের সামনে এসে যেই বলেছে আশা দেখো আমারা হাসপাতালে এসে গেছি।আশা তখন টকটক করে তাকিয়ে রয়েছে আকাশের দিকে।আশা তখন বহুদূরের যাত্রাপথের উদ্দেশ্যে সকলকে ছেড়ে বিদায় নিয়েছে। রয়ে গেছে শুধু তার খোলা আশাবাদী চোখ।বিধির কি বিধান দেখো,যে হাসপাতালের গেটের সামনে আশাদেবী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো,সেই হাসপাতাল থেকেই রাম তার ক্যানসারে নিহত নিজ পত্নীকে নিয়ে শ্মশানের পথে রওনা দিয়েছে।দাহ করে গ্রামে ফেরার কথা ছিল রামের।মৃত পত্নীকে নিয়ে যখন হাসপাতালের গেটের কাছে আসলো দেখতে পেল তার ছোট্টো বোন কান্নাকাটি করছে, বাবা কাঁদছে আর মা চুপ করে ঘুমোচ্ছেন গভীর নিদ্রায়।একসাথে জন্মদায়িনী মা ও পত্নীর মৃত দেহ, এ যেনো কয়েক হাজার নরকের যন্ত্রনার থেকেও বেশী যন্ত্রণাদায়ক।যা রাম তার নিজের কর্মের কারনে মর্তেই সে যন্ত্রণায় কাতর।সে কিছু বুঝতে পারছে না কি করবে।মা ও পত্নীকে গ্রামে নিয়ে গিয়ে সেখানকার শ্মশানে দাহ করলো।এই ব্যাথার উপশম হতে না হতেই রামের সম্মুখে পড়লো আরও এক হতশা।যা ছিল খুবই কঠিন যন্ত্রনা,কষ্ট।আশাদেবীর অনুপস্থিতির কারণে ব্যাথা বেদনা সহ্য করতে না পেড়ে রমেশও হার্টঅ্যাটাক করে মারা গেলেন কয়েকমাস বাদেই। পুরো পরিবারটা অস্বাভাবিক ভাবে নিস্তেজ শুন্য হয়ে গেলো।অসহায় এই অভাগা পরিবারের মেয়ে টুম্পা তখন তার দাদাকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে ফিরে গেলো।
পাঠকের উদ্দেশ্যঃ-আমার প্রিয় পাঠকেরা,তোমরা হয়তো এই গল্প পড়লে তোমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগবে। যার উত্তর আমি আমার "পরিণাম(দ্বিতীয় পর্ব)" এই গল্পটি তে সবিস্তারে আলোচনা করেছি। দ্বিতীয় পর্বটিতে সমস্ত উত্তর তোমরা পাবে যা প্রথম পর্বে রহস্যজনক অবস্থায় রয়েছে।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
অন্য এক সুর
সুরজিৎ দাস
আজ শুক্রবার। বিশ্বনাথ বাবুর কলেজ থেকে বাড়ি আসতে আজ এমনিতেই দেরি হবে। তার উপর আসার পথে মল্লিক বস্ত্রালয় থেকে তার কিছু কেনাকাটা রয়েছে । কাজেই চাবির গোছাটা যাবার সময় রামিকে দিয়ে বললেন- " আজ আমার বাড়ি ফিরতে দেরী হবে । তুই কাজ সেরে চাবি নিয়ে বাড়ি চলে যাস, ফেরার পথে তোর বাড়ি থেকে নিয়ে নেব।"
রামি বিশ্বনাথ বাবুর বাড়িতে কাজ করে। না না করে এ- বাড়িতে এগারোটা বছর কাজ করছে রামি। যদিও বিশ্বনাথ বাবুর সঙ্গে রামির পরিচয় গত দু'বছর।
এ বাড়িতে আগে যিনি ভাড়া থাকতেন তারই বাড়িতে কাজ করত রামি। বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার সময় তিনিই রামিকে কাজের লোক হিসাবে রাখতে বলে যান বিশ্বনাথ বাবুকে।
সত্যি কথা , বলতে রামি মেয়ে হিসাবে মন্দ নয়। তার একটি বিশেষগুণ হল সাত-চারে রা নেই। স্বাভাবিক ভাবে খুব সহজেই তার উপর একটা বিশ্বাস জন্মে গেছে বিশ্বনাথ বাবুর।
সেদিন বিশ্বনাথ বাবু যখন বাড়ি ফিরলেন তখন রাত্রি সাড়ে আটটা বাজছে। রামি আগেই রুটি- তরকারি করে গিয়েছিল। বিশ্বনাথ বাবু একা মানুষ, তিনি সংসার করেননি। তিনি একতলা ঘর ভাড়া নিয়ে একাই থাকেন।
গ্রীষ্মের গরমের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য বিশ্বনাথবাবু রাতের খাওয়া-দাওয়া সেড়ে ছাদে গিয়ে বসলেন। নিজের শরীরটাকে যেন দক্ষিণা বাতাসে মেলে দিলেন । বাড়ির পাশেই নারকেল গাছের পাতার ঝরঝর শব্দ আর মাঝে মাঝে গাড়ির হর্ণ ভেসে আসছে; সেই সঙ্গে এক করুন বাঁশির সুর ভেসে আসছে।
বিশ্বনাথ বাবু কি মনে করে ছাদের ওপর কার্নিশের চাপ দিয়ে নিচের রাস্তার ওপর একভাবে তাকিয়ে রইলেন । রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সমগ্র রাস্তাটা আলোয় খিটখিট করছে। বেশ কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থাকলেন রাস্তার দিকে । পাড়ার মোড়ের রাস্তার কুকুরগুলো দু-এক'বার ডেকে চুপ করে গেল।
দূরের করুন এক বাঁশি সুর এখন বেশ শোনা যাচ্ছে। বিশ্বনাথ বাবুর কাছে এ-যেন খুব চেনা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভাবতে ভাবতে একটা ঘুম ঘুম ভাব চোখ জুড়ে মেতে থাকে। ছাদে মাদুর পেতে শুতেই চোখে পাতলা ঘুমের আস্তরণ নেমে আসে। ঘুমের ঘরে তিনি যেন শুনতে পেলেন বাঁশিটা একে বারে খুব কাছেই বাজছে। বাঁশির সুরটা এবার তিনি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন , আর সেই সঙ্গে তার মনে পরে যায় আজ থেকে প্রায় কয়েক বছর আগেকার কথা। তখন বিশ্বনাথ বাবু তালপুর স্কুলের শিক্ষক । এটাই তো তার চাকরি জীবনের প্রথম স্কুল। সেইখানেই তো সে শুনে ছিল এমন বাঁশির সুর।
তবে কি সেই চিত্তরঞ্জন! যাকে সে চিতু বলে ডাকতো।
বাঁশির শব্দটা বিশ্বনাথ বাবুর কাছে যেন আরও স্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে। তখন সে ছাদ থেকে দেখে তার বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে কুড়ি-একুশ বছর বয়সের এক ছেলে বাঁশি বাজাতে বাজাতে এগিয়ে আসছে।
এবারে বিশ্বনাথ বাবুর শরীরের মধ্যে কেমন যেন এক অসারতা অনুভব করছেন।
বাঁশির সুরটা তাকে যেন ডাকছে। থাকতে না পেরে এক সম্মোহন শক্তির বলে'ই বিশ্বনাথ বাবুর ছুটে গিয়ে সদর দরজা খুলে রাস্তায় বেরিয়ে পরেন।
ছেলেটি কাছে আসতেই বিশ্বনাথবাবু বুঝতে পারলেন এতক্ষণ তিনি যে অনুমান করেছিলেন তা মিথ্যা নয়, এ সেই চিত্তরঞ্জন।
বিশ্বনাথ বাবু তবু জিজ্ঞাসা করলেন- "তুমি সেই চিত্তরঞ্জন না?"
ততক্ষনে বাঁশির শব্দটা বন্ধ হয়ে গিয়ে গোটা গ্রাম জুড়ে এক নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।
ছেলেটি একটু অবাক হয়েই বলল-" স্যার আমাকে চিনতে পেরেছেন!"
তা এত রাতে তুই এখানে কি করছিস? আর তালপুর থেকে এখানে এলেই বা কীভাবে?
চিত্তরঞ্জন বিনম্র শ্রদ্ধায় মেয়েলি কন্ঠে বলল-"স্যার আমি এখানেই থাকি। আর রাতেই আমার ঘুরতে বেশ ভাল লাগে; কেমন সব নিরিবিলি, কেউ কোথাও নেই।"
বিশ্বনাথ বাবু একবার এসেই বললেন- " সত্যিই তোর গলার স্বরটা আর পাল্টালো না।"
চিত্তরঞ্জন কেমন যেন থমকে গেল। একমুহূর্তে মুখের সেই আনন্দের ভাব মিলিয়ে গিয়ে বলল- " আচ্ছা মাস্টারমশাই আমি কি মানুষ নই, আমার বাইরে কাঠামোটাই যা অন্য রকম ভিতরে তো আমি একজন মানুষ।"
চিত্তরঞ্জনের কথায় বিশ্বনাথ বাবু কেমন যেন থমকে গেলেন। নিজের সেই ভাবটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেও কাটিয়ে উঠতে পারলেন না। তিনি একটু হাসির সুরটেনে ,বললেন ---"ঠিকই বলেছিস, এটার জন্য আমাদের সমাজই দায়ী। আসল কথা কি বলতো, আমরাই একদিন সমাজ তৈরি করি আর আমরাই সেই সমাজের দাস হয়ে যাই। এই সমাজই তো তকমাটা দিয়ে দেয়।"
কিছুক্ষন বিশ্বনাথ বাবু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন --- " আচ্ছা তোর মনে আছে, তুই যখন ক্লাস নাইনে পড়তিস তখন আমিও একদিন তোকে 'লেডিস' বলেছিলাম সেদিন তুই রাগ করেছিলিস না?"
"জানিস সেদিন তোর এই অসাধারণ বাঁশির সুর আমি শুনেছিলাম সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম মানুষের অন্তর টাই হলো আসল। কিন্তু তা শুধরে নেবার ক্ষমতা সেদিন আমার আর ছিল না।
"তারপর আমার বদলির চিঠি আসে আমি চলে আসি; সে ভুল আর আমার সংশোধন করা হয়নি আজও।"
বিশ্বনাথ বাবুর যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখেন তার খাটের চারপাশে রামি ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘিরে রয়েছে, সঙ্গে একজন ডাক্তার। যিনি তার সামনের চেয়ারে বসে নারী পরীক্ষা করছেন।
বিশ্বনাথ বাবু চোখ খুলতেই রামি জিজ্ঞাসা করল--" দাদাবাবু আপনার কি হয়েছিল? দরজা খোলা, দরজার সামনে আপনি ওভাবে পরেছিলেন কেন?"
এর উত্তরে বিশ্বনাথবাবু কী বলবেন? তার মত এমন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ পক্ষে এই ঘটনা সকলের সামনে বলাও লজ্জাজনক। এরচেয়ে চোখ বুজে অজ্ঞানের ভান করাই ভালো।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
রচনাঃ পত্র-১
জুয়েল রূহানী
সুভাষিনী চৈতী,
চৈত্রের খরতাপে তৃষ্ণাত্ব হৃদয় যখন ছটফট করিয়াছিল তখন স্বর্গীয় হুর রুপে আমার পানে আগোমন করিয়া দৃষ্টির অগোচরে মায়াময়ী সুরে সজীব করিয়া তুলিয়াছিলে আমার প্রাণ! তোমার সুর শুনিয়া হতবিহ্বল হইয়াছিলাম, বাকরুদ্ধ হইয়া হইয়াছিলাম তোমায় দর্শন করিবা মাত্র।
দীর্ঘ ছয়টি বছর পূর্বে তোমার পানে একটি পলক চাহিবামাত্র আমার হৃদস্পন্দন যেন কেমন করিয়া উঠিয়াছিল! মনে ধারন করিয়াছিলাম তোমার হাস্যজ্জল মুখ অবয়ব। সময়ের ব্যাবধানে দিন, মাস, বছর চলিয়া যায় তবুও আমার চিত্ত হইতে তোমার চিত্র মুছিয়া ফেলিতে পারি নাই একটি মুহুর্তের জন্যও। মনের কথাটিও মুখ ফুটিয়া বলিবার সাহস অর্জনে ব্যর্থ হইয়াছি! তবুও নীরবে কল্পরাজ্যে বিচরণ করিয়া দৃষ্টি রাখিয়াছি তোমার মুখ পানে। তোমার হাসিমাখা মুখ খানা সর্বদা প্রেরণা যুগাইয়াছিল কর্মে, আর মর্মে উথিত হইয়াছিল তোমার মরমি সুর!
চৈতী দীর্ঘ ছয়টি বছর অতিক্রান্তের পর যখন তোমার কন্ঠ শুনিয়াছিলাম তাহাতে যতটা ব্যাকুল হইয়াছিলাম তাহা নাই বা বললাম। তবে তোমায় দর্শন করিবার পর হইতে মনে যে ভাবের উদয় হইয়াছে তাহা হইলো;
"বিশ্ব নিয়ন্তা তোমায় সৃষ্টি করিয়াছেন আমার পানে দৃষ্টি দানের জন্য" ইহা না হইলে দীর্ঘ সময়ের ব্যাবধানে মনের দূরত্ব সংকীর্ণ হইবার কোন কারন তো খুঁজিয়া পাই না?
চৈতী এতটা দিবসের ব্যাবধানে যখন দুইটি মনের মিলন ঘটিলই তখন জীবনের প্রান্তব্দী মায়াবীনি প্রতিমারুপে হৃদয় মন্দিরে স্থান করিয়া দিলাম।
" সৃষ্টি ভবে তব তোমারও লাগিয়া,
পেয়েছি খোদায় দোয়া মাগিয়"
চৈতী, প্রেম সাধনায় মত্ত থাকিয়া এতটাকাল যেইভাবে অতিক্রান্ত করিয়াছো জীবনের বাকীটা পথও অতিবাহিত করিবে মনের মিলনের অমরত্ত্ব দানে।
"জীবন সয়াহ্নে রব দু'জন দু'জনার
ক্ষণিকের এ মর্ত্যে,
স্বপ্ন রঙ্গে সাজাবো সংসার-
প্রেম অমরত্ত্বে"
তোমার প্রাণে ব্যাথা সঞ্চরক
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
Hunger
by Sabir Ahmed
I want food, I am a beggar.
From door to door I stagger,
Since morning till evening.
No food and my stomach is burning.
I am poor.
My heart is full of sore .
I am an orphan.
I am trodden,
With the feet of hundreds of churlish-men.
When alms I ask for,
By roaming nook and corner,
Of cities and towns,
Saying alms and alms;
I am tortured.
I am spat and kicked.
Oh ! too much I have had hunger.
Inside me there is a monster,
Tearing my all intestines.
But where are the dustbins?
They are not seen .
Maybe a civilized beggar has stolen !
Nature is too failure still,
To make me drink venom as well.
O lad !Why are you crying ?
Have you got a little appetite ?
Lo!With a full stomach, beaux are sleeping.
They are right,
Though in the eyes of society.
They think of us as nonentity.
Hush ! for ten days I am too hungry,
Full of fury.
One day beggars' outcry
Will finish all cuscutae and worms;
Under the feet of thunderstorms.
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
সখী ফিরে আয়...
রাহাত জামিল
সখী,
তোর মুখ দেখে মোর সুখ আসে।
দুঃখ ভুলে মন হাসে।
থাকিস কেন এতো দূরে,
মান ভেঙে আয় আপন নীড়ে।
সখী,
তোর মুখ দেখে মোর সুখ আসে।
হাসি দেখে মোর মন ভাসে।
আয় তো দেখি সব ভুলে।
বলবো কথা প্রান খুলে।
সখী,
আয় আয় তো ফিরে নিজ নীড়ে।
বাজায় বাঁশি আবার নতুন সুরে।
উঠুক ভানু, সব রাতের শেষে।
লিখব গান আবার নতুন ছাচে।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
শূণ্যতায়
✍সুব্রত সামন্ত
একাকীত্ব মরুভূমি আজ
বাতাসের বিন্দুতে
ভেসে আসা সুরে.....।
দামি কোহিনুর মিশে একাকার
শুধু ও কেন আজ মুখোশধারী!
কবি সুকান্ত আজ তোমার একাকীত্ব
ভিন্ন ভিন্ন মরীচিকার মত।
মাঠ ফাঁকা জনতার ধূলিকণা--
বাতাসের একাকীত্ব চায়না হারাতে।
হারাতে চাই একা হাজার বছর পরেও!
থাকুক অটুট মুখোশের আড়ালে
আমার চেনা মুখখানি।
ক্ষণিকের তরে যাক হারিয়ে
নিজের একাকীত্ব ।।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
একমুঠো ভাত
আব্দুল রাহাজ
খাবো আমি একমুঠো ভাত পেট পুরে
কিন্তু অভাবের তাড়নায় সে আর হচ্ছে নারে।
আমাদের মতো অসহায় মানুষ গুলো কোথাও যেন সমাজে আড়াল হয়ে যাচ্ছে রে।
ছেলে মেয়েরা চেয়ে থাকে বেলাশেষে একমুঠো ভাত পেট পুরে খাবে বলে
কিন্তু সে আশা সূর্যের ক্ষীণ আলোয় মিলিয়ে যায়
খেতে হয় পরের থেকে চাওয়া ভাতের ফ্যান
আহা একমুঠো ভাতের আশায় ওরা যেন ছুটে চলে প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।
পরের বাড়ির ভাতের গন্ধে পেট পুরে যায় ওদের
আহা ওদের কষ্ট সহ্য হয় নারে ।
তবুও তারা সরল মনে নিয়ে বেঁচে থাকে প্রকৃতির মায়ের কোলে।
একমুঠো ভাত ওইসব অসহায় মানুষগুলোকে দিতে ধনী ব্যাক্তিদের গায়ে লাগে
বরং অপমান করে তাড়িয়ে দেয় বাড়ির সদর দরজা থেকে।
হায়রে ওরাও তো মানুষ
কেন তবে একমুঠো ভাত তাদের মুখে তুলে দেওনা।
একমুঠো ভাত ওদের কাছে এক অন্য স্বাদের এক অন্য স্বাদের
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
ইস্ট্রোজেন
নৈর্মিষা প্রামানিক
দিনের শেষে পূর্ব দিকে লাল অগ্নিপিন্ড চাঁদ উঠেছে,
ওই পূর্ন পৃর্নিমার স্নিগ্ধ চাঁদের প্রথম তাপ লাগলো,
যে বাল্য বিদায়ক্ষন মেয়েটির বুকে,
তার মুহূর্তের মধ্যে শুরু হলো কিশোরীর জীবন।
তখন তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখলো,
সপ্তর্ষি মন্ডলকে স্বাক্ষীকরে মনে মনে সাতপাকে ঘুরলো।
তুমিও সেই তাপ মুঠো মুঠো কুড়িয়ে গায়ে মাখলে,
আর খরপ্রবাহ নদীর মতো ভেসে চল্লে বাঁচার তাগিদে।
কিন্তূ মেয়েটির বুকে যে তাপ লেগেছিল,
তা তুমি বুঝলে না নিশিকান্ত!
শুধু হিসেব রাখলে ওই তাপ মেখে,
কত গ্ৰাম-শহর আলোকিত হলো,
কতজন বাঁচার লড়াইয়ে বেঁচে থাকলো,
ভাবলে না ওই মেয়েটির কথা,
যে তোমার জন্য পূর্নিমার মিথ্যা প্রেমে পড়লো।
নিশিকান্ত আজ সমাজে তুমি রুমাল বেঁধে বাঁচার লড়াইয়ে,
রুমালটা সেই মেয়েটি বেঁধে দিয়েছিল তোমার রক্তারক্ত হাতে।
আর সে তোমার জন্যই মরলো নিশিকান্ত,
তার মধ্যেও তো বাঁচার লড়াই ছিল,
সেও কারুর মেয়ে-বোন-বন্ধু ছিল,
সর্বপরি সে একজন মানুষ ছিল,
তোমারই মতো মানুষ নিশিকান্ত।
শোনো নিশিকান্ত সমাজে নারী অর্ধেক আকাশ না হলে,
তুমিও আজ এই নিশিকান্ত হতে না।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
প্রেমের শ্রাবণ মেঘ
অঞ্জলি দে নন্দী
দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য।
প্রবল প্রেমের বেগ।
ওরা ছুটে, উড়ে চলা মেঘ।
বুকে ওদের ভালোবাসার বারি পূর্ণ।
পর্বতের বুকে মিলে ওরা ঝরে পড়ে।
ওরা প্রেমের প্রবাহ গড়ে।
শ্রাবণ ওদের মাতায়।
ওদের আবেগ,
তা তো সৃষ্টির পুণ্য।
তার পরশ নেমে আসে
বর্ষণ রূপে ধরার
তরুর পাতায় পাতায় পাতায়।
ওরা সিক্ত আবেশে ভাসে।
ওদের ঝরে পড়ার
নাই কোনোই চাওয়া।
আপনারে নিঃশেষ করার
ত্যাগের খুশিই, ওদের পাওয়া।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
কবিতার রক্ত!
বিশ্বজিৎ কর
আমাকে সেই বধ্যভূমিতে নিয়ে চলো-
কবিতা যেখানে আক্রান্ত হয়!
প্রতিহিংসায় দগ্ধ কবি নিষ্ঠুর উন্মত্ততায় চিৎকার করে!
ব্যক্তি আক্রোশের বিষাক্ত নিঃশ্বাস,
রেষারেষির কুটিল পরিবেশ!
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিভেদকামী শক্তি উল্লাস করে,
পদলেহন, অকারণ প্রশস্তি, নৈতিকতার জলাঞ্জলি!
নেকনজরে থাকার প্রাণান্তকর প্রয়াস -
চারিত্রিক অবনতির পূতিময় গন্ধ!
চলো, বধ্যভূমিতে.....
ঘাতক দেখতে চাই,
দেখতে চাই কবিতার রক্ত!
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
ভেদ -- ২
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
দাঁড়াও জলের আয়নায় দেখো ওই কার মুখ?
তোমার বা আমার বা আমাদের মলিন অথবা উজ্জ্বল
ভেদবুদ্ধি রেখেছো জমিয়ে অন্ধকারে কয়লাসিন্দুক।
অথচ নিজের কাছে অথবা ঈশ্বর তফাত খোঁজায় সফল?
বুকে হাত দিয়ে বলো ওখানে আকাশের ডাক নীরব বাতাস
জলও দেখছে সব এসময় মিথ্যার কথাকলি নয়।
তোমাদের বানানো বিধান ডালপালা মেলে অট্টহাস
প্রতিস্পর্ধী প্রকৃতির কুলাঙ্গার জীবনের বর্জ উপজাত ক্ষয়!
সফল হবে না এই নির্জল পাপ ভেদবুদ্ধির কলঙ্কপ্রলয়।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
রাজা মশাই
- গণেশ দেবরায়
বনের রাজা সিংহ মশাই
ক্ষোভে ফাটছো কেন?
একটা করে পশু পাবে
শর্ত ছিলো জেনো।
রাজা বলে তুমি কেবল
রক্ত চুষবে মোদের?
আমরা কতো নিরবে দেবো
দামী প্রাণটা মোদের!
খরগোশ ছিল বুদ্ধিমান
জব্দ করলো সেদিন
ভেবো না আর নেই খরগোশ
আসবে না এমন দিন।
যতই তুমি ফাঁদ পাতো
লাভ হবে না কিছু
যুগে যুগে খরগোশরা
নেবে তোমার পিছু।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻👇🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
এতবার
অনাদি মুখার্জি
এতবার মিথ্যে বলেছি তোমাকে ভালো বাসি,
তাই আজ হল ভালো বাসা পরবাসি!
এতবার দুঃখ পেয়েছি সুখের ছদ্মবেশে,
তাই দুঃখ আমার এই জীবনে!
এতবার অন্ধকারে মেলেছি চোখ,
তাই অন্ধচোখে জেগে থাকে পরলোক!
এতবার পৃথিবীতে করেছি শত লাঙছনা,
তাই পৃথিবী করেছে আমার জরিমানা!
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
নদী সংগম
হামিদুল ইসলাম
ঈশ্বরের পৃথিবীতে স্পর্ধা দেখায়
মানুষ
উপঢৌকন চেয়ে নেয় নিজের বাহাদুরির
আজ নদী উৎসব
সঙ্গীতে মুখর নদী জীবন
ব্যস্ত প্রতিটি পা ।।
নদীকে বড়ো ভালোবাসি
হে নদী! তুমি মাটিকে করেছো উর্বরা
শস্য শ্যামলা জমিগুলো তুমি গড়েছো নিজ হাতে
তোমার হৃদয়ে জেলেদের জীবন
এক একটি প্রাণকোষ
বেঁচে আছে তোমার মমতায় ।।
হে পৃথিবী !
ফিরিয়ে আনো হাজারো নদী
জলে ভরে উঠুক নদীর দুকূল
বাঁধনহারা রাখাল সারাদিন স্নান করুক নদীর জলে
শান্ত হোক শরীর মন ।।
মানুষ ব্যস্ত আজ নদী সংগ্রামে
অস্তিত্ব ধরে রাখতে প্রয়োজন এখন হাজারো নদী সংগম ।।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
ছড়া
আমার নাতি
মিনতি গোস্বামী
নাতি আমার বারফটাই
ঘরে রাখাই দায়
কিছু পেলেই ধরে দাঁড়ায়
মিটিক মিটি চায়।
হামা দিয়ে এঘর ওঘর
নিমেষে চলে যায়
জিনিস পেলেই মুখে রাখে
সব কিছূই খায়।
পালারি ঘটি বাটি ঢাকনা
সব তার খেলনা
খাতা কলম নিয়েই রোজ
বাঁটে ঘষে বাটনা।
ঝুমুর ঝুমুর পায়ে মল
বাজায় ঝুম ঝুম
দিনে রাতে কোন সময়েই
চোখেতে নাই ঘুম।
ফোকলা দাঁতের আধো বোলে
ছড়িয়ে দেয় সুখ
ঘরের মাঝেই চাঁদ ওঠে
জুড়িয়ে যায় বুক।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
প্রতিদিন তোমায় সেবী
-বিমান প্রামানিক
মা তুমি দেবী
জগতে তোমার নেই তুলনা।
মা তুমি সবই
আমরা কখনই ভুলিবনা।
তোমার আশিস পেয়ে
ধন্য আমরা জগৎ সংসারে
তোমায় দেবীর আসনে
পূজিব প্রতি দিবস পরে।
মা গো,তুমি মহান
তোমার চরণ ছোঁয়া পেয়ে
পূণ্য আমাদের জীবন
তোমায় মাতা রুপে পেয়ে।
একটি দিনে তোমার পুজা
তাতে নয় তোমার সেবা পূর্ন
প্রতিদিন পূজিব তোমারে
দেবী তুমি, মানব রুপে অবতীর্ণ।
শুধু একটিবার তোমার সেবা
মাতৃদিবস প্রতিদিনেই
করি প্রতিজ্ঞা এ হেন
তুমিই তো মা সারাক্ষণ
থেকে চির অন্ধকারে,
আশার আলো জ্বেলে
তুমিই পথ দেখাও আমাদেরই।
মন্দিরে কিবা মসজিদে যায়
করিতে সাধনা ভজনা,
বাড়িতেই দেবীর চরণে ঠাঁই
তাই প্রতিদিন মাতৃ সাধনা।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
উপকন্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ
রসবতীর আখ্যান
বাপন দেব লাড়ু
জল খুঁজতে গিয়ে
গভীরে গিয়েছে শিকড়,
শক্ত জমি,
দু-হাত পেতেছি তাই আকাশে
নিঃস্ব চাতক আমি
চাই প্রানের স্পর্শ।
সবুজের ঘাম ঝরিয়ে ততক্ষণে
লিখে গেছি মেঘদূত,
যতক্ষণ না শেষ হয়
রসবতীর আখ্যান।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ
ডাক টিকিট
-চিরশ্রী কুণ্ডু (অবন্তিকা)
ডাক টিকিটের খামটা
আজ যত্নে তোলা থাক,
তোমার আমার গল্প গুলো
স্বপ্ন হয়ে লুকিয়ে থাক ,
নতুন সকালের সেই পুরনো
স্মৃতি কণার অস্তিত্ব,
মোড়া খামের আড়ালে
থাকুক জীবন্ত লুকিয়ে ,
বেনামী সুরের টানে কেদে কেদে
উঠুক মোর অন্তর মম ,
একফালি সুখ খুঁজতে চেয়ে ছিলাম ডাকটিকিটেরখামে নতুন প্রাণের ভিড়ে ,
হাজারো ভাষা জমে আছে
পাতার অন্তরালের বক্ষ মাঝে ,
মুছে গেছে সেই হারিয়ে যাওয়া
লেখা দের ভিড়ে ,
বেহিসেবী আধার খুঁজেছে যখন
আড়ালে চুপিসারে কয়েক খানি
গল্প খোঁজে চোখের আড়ালে ,
ডাকটিকিটের খাম টা আজ
যত্নে তোলা থাক ,
তোমার আমার গল্প গুলো
স্মৃতির পাতায় পাতায় বন্দীর কাব্য লিখে যায়।।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
"এসো দাবানল,
এ পরম অন্তঃপুরে"
ঈশিতা চৌধুরী
সময় হলে এসো আবার .........
উদাত্ত আবেগ এখনও নিয়মিত নিয়মহারা,
তোমার দৃঢ় আলিঙ্গনের অভ্যাসের মতো
মিষ্টি যাতনায় প্রত্যহ মাতোয়ারা।।
তুমি এসো,
আলেয়ার মায়া দুচোখে ভরে,
এসো শ্রাবণের মতো একটানা রিমঝিম ঘন সুরে,
এসে ছুঁয়ে যাও আরও একবার,
অলস নয়ন মণি.....
তুমি আকাশ জুড়ে এসো.....
এসো, বিষের আবেশে উষ্ণ এ ঠোঁটে,
আতর-সুখ কুড়ায়ে......
এসো আজ কাল রোজ,
হৃদয় পাতার ধূসর কবিতা বাহারে,
বসন্তে আমার মাতাল মনে
আগুন শিখা জ্বেলে,
এসে মিশে যাও হৃদে,
অজানা কাব্যের
অনিমেষ চরিত্র হয়ে। ।
সময় নিয়ে এসো দাবানল,
এসো এ প্রবাস পুরে।।
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻
© সেক আসাদ আহমেদ
সম্পাদক উপকণ্ঠ
খুব ভালো ও সমৃদ্ধ সম্পাদনা
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
উত্তরমুছুন