"উপকণ্ঠ 25 জুলাই সংখ্যা "
"উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-25/07/2020, শনিবার
সময় :- বিকাল 4 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে
Click Here
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে
Click Here
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇
Short story
Dreamblossom
Dr. Mahitosh Gayen
It has been raining since morning, Manzil has no mind to create, today Maujhuri's phone did not come, Manzil didn't do it either, Khabar-Corona Vaccine on TV in December. Will you live so long? This question revolves around, college teaching doesn't feel good anymore
After lunch,all three of them went to bed, suddenly the fire engine was running with a loud siren, there was a fire somewhere,Manzil went to the balcony, saw darkness in his eyes. There was no mail in mail box, spam box, -boxbe waiting for two days, it seems Lockdown.
The whole country is burning with fire, burning, jealousy, violence, values, pride, arrogance, burning in the jungle of politics. When he opened the door, he saw Mallika, a flower full of two hands, standing with flowers in her hand.blossoms of dream.The opening music of the new life in the society.
হাত দেখা
সিদ্ধার্থ সিংহ
লোকটা সবার হাত দেখত
নিজের হাত কি কোনও দিনও দেখেনি সে !
একে বলতো আগামী সাড়ে চার মাসের মধ্যে তুই এই পুরষ্কার পাবি
সাত মাসের মধ্যে তোর মেয়ের বিয়ে হবে
এগারো মাসের মাথায় তোর বাড়ি হবে
লোকটা সবার হাত দেখত
অক্ষরে অক্ষরে মিলেও যেত কারও কারওটা
ও কি নিজের হাত দেখেনি কখনও
তাহলে তো একটু সতর্ক হতে পারত
প্রেসক্লাব থেকে ক্যারামবোর্ড খেলে
বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায়
এইভাবে দু'পা খোয়াতে হত না তাকে
লোকটা সবার হাত দেখে বেড়াত
শুধু নিজের হাতটাই বোধহয় দেখেনি কোনও দিন
পুরোনো কথা
মিনতি গোস্বামী
দুপুরে একচোট বৃষ্টি হয়েছে, বিকেলের আবহাওয়াটা দারুন।
ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া, আকাশটা পরিস্কার।আকাশের দিকে তাকালে কেউ বলবেনা, দুঘন্টা আগেই দুর্যোগ হয়েছিল।আকাশের টানেই মল্লিকা বারান্দা থেকে
তিনতলার ছাদে উঠলো।চারদিকের গাছগুলো ঝলমল করছে।কিশোরী প্রেমিকার মত ঢলাঢলি হাসি।অস্তমিত সূর্যের লালিত আভায় পশ্চিম আকাশ নববধূর সাজে।একঝাঁক বক উড়ে গেল আকাশে, পাখিরা নানারকম আওয়াজ করে বাসায় ফিরছে।মল্লিকা দেখলো, ছাদের টবগুলো বেলফুলে ভরে গেছে।সাদা ফুলগুলোর গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে মল্লিকা চোখ বোজে।কেন এতদিন বাদে পুরোনো স্মৃতি ফিরে এলো? আকাশ যেমন করে দুর্যোগকে ঢেকে হেসে উঠেছে,মল্লিকাও তো তেমনি দশটা বছর জীবনের দুর্যোগকে ঢেকে রেখেছে।
কলেজে পড়তে পড়তে হাসিবুলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও প্রেম।দেহ ছাড়া প্রেম পূর্ণতা পায়না, তাই হাসিবুলের
সঙ্গে সেই পর্ব ও চলেছিল।মা অবশ্য ছোট বয়স থেকে সাবধান করে বলেছিল,"মেয়েদের পেট হয়, তাই মেয়েদের সাবধানে থাকতে হয়।"হয়েওছিল
তাই।হাসিবুল অস্বীকার করেনি।কিন্তু মল্লিকাদের
পরিবারে জানাজানি হতেই ক্লিনিকে গিয়ে পর্ব চুকিয়ে, তাকে মালদহে মাসির বাড়ি গ্যারেজ করা হয়েছিল।ছ'মাসের মধ্যে তাপসের সঙ্গে বিয়ে।
মল্লিকাও সব কিছু মানতে বাধ্য হয়েছিল।
কিন্তু তার প্রথম ভালোবাসা, প্রথম সন্তান আসার অনুভূতি আজও ভুলতে পারেনি।
পারেনি বলেই হঠাৎ , হাসিবুলের তার চুলে ক্লিপ দিয়ে বেলফুলের মালা আটকানোর কথা মনে পড়ে গেল।হাসিবুল খুব ভালোবাসতো বেলফুল।
অনুকবিতা
প্রহসনের শেষে
ডঃ রমলা মুখার্জী
অন্যায়ের অন্ধকারে মুখ থোবড়ানো সমাজে-
অবিচার লুকিয়ে কাঁদে প্রতি ইঁটের ভাঁজে ভাঁজে।
দুরাচারী বেকসুর খালাস,বুক ফুলিয়ে ঘোরে-
অসহায় নির্দোষীরই কপাল চড়চড় করে।
জুজুর ভয়ে,অর্থের লোভে বিচারক যদি টলে,
বিচারের নামে প্রহসনটাই ক্রমাগত চলে.......
পরের কথায় নাচন যেদিন রায়দাতার শেষ হবে-
ন্যায়ের কষ্ঠি পাথরে সেদিন সুবিচার ঝলকাবে।
পিতামহী
( ৺ প্রভাবতী দেবী স্মরণে )
সৌম্য ঘোষ
আমার পিতামহী যখন বিনম্র সন্ধ্যেবেলায়
পূজা ঘরে ; মনে হয় , সে তখন
অনেক অনেক কোন দূর প্রশান্ত হিমালয়ের
শৈল শিখরে তমোঘ্ন ধ্যানে ;
সন্ধ্যাশঙ্খ কাঁসরের সুর ছাড়িয়ে ভাসিয়েছে
তাঁর নিরঞ্জন ভেলা কোন প্রভুপাদ ক্ষীর সাগরে ।
এখন সত্তায় তাঁর শান্ত , দিগন্তে মোহন বংশীধ্বনি,
সাগরের বিশাল তরঙ্গ, চঞ্চল পাটাতন
উঠোনে শিশুর খেলা
সব ধ্বংসস্তূপের মতো একাকার, নিজে সে একা , তন্নিষ্ঠ !
যদিও পশমের আসনে বসে নতজানু তিনি ,
তবুও শালপ্রাংশু মত , মাথা ছুঁয়ে যায় সুদূর
নক্ষত্রের নীল নীলিমায় ।
তার মত আমি সমর্পিত ধ্যানে, তবুও
আমার ঈপ্সা ক্রমাগত চলে যায় কেন
কোন বিলাসীর গৃহে ?
আমি আমার পরাজয়ে ম্লান হই বিষন্নবেলায়।
রামুদের কুটির ঘর
(ছোট গল্প)
আব্দুল রাহাজ
রামু লামা আর ইশান ওরা সেদিন মোড়লদের বড়ো মাঠের ধার দিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে হাওয়া বইছিল বেশ জোরে জোরে গ্ৰীস্মের দুপুরে এই হাওয়া ওদের খুব ভালো লাগছিল ওরা সময় সময় একসাথে বলছে আ কী আরাম আরাম আসতে আসতে আজান শোনা যায় ওরা তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বাড়িতে আসে রামুদের বাড়ির সামনে এসে রামু বললো বিকালে খেলতে আসবি আসবো একটু তাড়াতাড়ি আসিছ কারন আজ একটা জিনিস দেখব গল্প শুনবো তাড়াতাড়ি চলে আসিস কেমন হ্যাঁ হ্যাঁ এই বলে যে যার বাড়িতে চলে গেল।তখন ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে তিনটা বাইরে বেশ রৌদ্র ইশান চুরি করে বাড়ির সদর দরজা খুলে দৌড়ে লামাদের বাড়ি চলে গেল লামা যে ঘরে থাকে তার পাশে বড়ো জাম গাছ সেই গাছে উঠে লামাকে ডাকলো লামা আস্তে আস্তে খিড়কির দরজা খুলে বাইরে চলে এলো কিন্তু লামার দাদু দেখতে পেল কিন্তু কিছু বললো না একটু হেসে ঘরে চলে গেল ওরা হাসতে হাসতে মধুদের বাড়ি সামনে এলো চাপা গলায় বললো রামু রামু ওই দ্বারা আসছি রামুদের বাড়ি রাজপ্রাসাদ এর মতো রামুর দাদু নাকি একসময়কার এই অঞ্চলের বড়ো প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন এই সব কথা বলতে বলতে ওদের সামনে রামু এসে দাঁড়ালো বললো আয় ভিতরে ওরা দেখলো কী সুন্দর বাড়ি ওদের চোখে সব যেন চকচকে করছে রামু বললো আজ তোদের আমি একটা জিনিস দেখাবো ইশান বললো কী আমাদের কুটির ঘর লামা বললো এত বড়ো বাড়িতে কুটির ঘর গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো রামু বললো ওহে ভাবুক তাড়াতাড়ি আয় বাড়ির পুরো ভিতরে চলে গেল ওরা দেখল কুটির ঘর কী সুন্দর ওরা বললো ভিতরে ঢুকে দেখে বিভিন্ন ধরনের জিনিস যা ওরা বইতে দেখেছে খুব আনন্দ হলো ওদের কুটির বাড়ি রামুদের কাছে বাড়তি পাওনা ছিল লামা একটু জোরে বলে উঠলো কেন কারন ইংরেজরা নাকি এটা ভেঙে দিচ্ছিল দাদু বীরের মতো যুদ্ধ করে বাঁচায় ও আচ্ছা এদিকে সন্ধ্যা হয়ে যায় এসেছে লামার মা ডাকতে লাগলো এই রামু চলি কাল দেখা হবে পরের দিন গ্ৰামের মানুষ সব জেনে গেল ওদের কাছ থেকে আস্তে আস্তে রামু দের কুটির বাড়ি সবাই জানলো এবং এটাকে ঘিরে চারিদিকে উৎসব ময় পরিবেশ সৃষ্টি হলো। রামু দের বাড়ির কথা সবাই শুনলো নতুন রূপে সেজে উঠেছিল রামুদের বাড়ি সহ কুটির বাড়ি গ্ৰামের সবাই মনে রাখলো রামুদের কুটির বাড়ি।
নূর
সেখ সাবির মোল্লা
অনাদি কালের অন্ধকারময় শতাব্দীর গহ্বর থেকে জ্বলে উঠুক নূর।
স্থবির বোবা মানবতার নির্বাক হৃদয়ে বলে উঠুক
"নূর চাই,নূর চাই"।
এই পাপার্ত অলস হৃদয়ের দ্বারে দ্বারে নূরের প্রশান্তি শিহরিত হোক।
লালসার বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ক্ষুধার্ত ফাঁদ গুটিয়ে যাক নূরের পাক মহিমায়।
বুভুক্ষু্র কলিজায় নূরের পিদিমে আলোকিত হোক
এই নিটোল রক্তক্ষয়ী পাশবিক সভ্যতা।
ভয়ের মূঢ়তা ভেঙে মুক্তিকামী বিপ্লবীদের হিমোগ্লোবিনে নূরের কণায় প্রগাঢ়িত হোক রক্ত।
সেই রক্তের বিধ্বংসী ম্যাগমা কপট শাসকের নিষ্ঠুর হাত জ্বালিয়ে দিক, পুড়িয়ে দিক।
তারপর
এই দূর্যোগের তমসাময় আকাশের ছত্রে ছত্রে, পোষ্টারে ফেস্টুনে আমি লিখে রাখবো দৃঢ় প্রত্যাশায়
"নূর চাই,নূর চাই"।
কবিতা
নাকানিচোবানি
অগ্নিমিত্র
ভাই যদি কেউ বিপদ নিয়ে খেলতে ওগো চাও ..
তালাবন্ধের আগের দিনে বাজার করতে যাও !
দেখবে কেমন ঘাড়ের উপর মানুষ বেয়ে ওঠে;
মুখোশ মুখোশ শিকেয় তুলে দুধ কিনতে ছোটে ।
মাস মাইনের পুরোটা যে সবজি কিনতে যায় ...
কারোর সর্বনাশ, কারো পৌষমাস হায় !
বিষাণু বেরোয় কি তবে শুভ মহরৎ দেখে ?
আমার মতো বোকা লোকে ঠেকে ঠেকেই শেখে !!
কবিতা
স্বাধীনতার অপেক্ষায়
মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ
ভারতের মাটি হলো স্বাধীন
যাদের রক্তের বিনিময়ে
তারা আজ পরোপারে,কিন্তু
মানবের মনে জাগ্রত আছে।
হাজারও মায়ের বুক শুন্য করে
দিলো জীবন অকাতরে
দেশও বাসীর কথা ভেবে
দিলো নিজেকে আত্তোবলীদান।
তাদের কারনে পেলাম আজ
মাথা গোঁজার ঠাঁই।
ভারত স্বাধীন দেশ আমার
ভারত স্বাধীন দেশ আমার।।
স্বাধীনতা জয় যুদ্ধের গান
আজও বাজে কানের ধার।
সেই বিদ্রোহের আগুন,জ্বলে ওঠে
প্রতি ক্ষণে ক্ষণে আজ।
প্রতিবারের মতো আবারও সাজাবো
সবুজ,সাদা,গেরুয়া রংয়ের সাজ।
ভারতস্বাধীনতা সংগ্রামী বীরদের জন্য
ফুলের মালা হাতে সারা ভারতবাসী
১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা দিনটি
ফিরে আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে।
ভারত স্বাধীন দেশ আমার
ভারত স্বাধীন দেশ আমার।।
হাইকু
শংকর হালদার
হাইকু-০১
তমসা স্নান
নির্জনে ভাসিয়ে গা
আমি একাকী ।
হাইকু-০২
আলতো ছায়
তোকে আঁকি আবিরে
মোর মায়ায় ।
হাইকু- ০৩
শব্দের জাল
বাসা বোনে অন্তরে
রঙিন স্বপ্নে ।
হাইকু-০৪
দখিনা বায়
ফুরফুরে মেজাজ
স্বপন খোঁজে ।
হাইকু-০৫
চন্দ্রিমা হাসে
খেলে সকল ধরা
জোয়ারে ভেসে ।
নীড়
রঞ্জনা রায়
চলছি সারারাত; চলছি সারাদিন
চলতে চলতে পথ হারাচ্ছি
চলতে চলতে পথ চিনছি।
একটা কাল, তার থেকে অন্য একটা কাল , চলছি
গলিপথ ,মাঠপথ, আলপথ ,রাজপথ চলছি।
খুঁজছি সিঁড়ি
একতলা দোতলা ছাব্বিশতলা
চোখে সিঁড়ি, মনে সিঁড়ি
উঠতে উঠতে
জীবনকে খুঁজতে খুঁজতে
নীড় খোঁজা এক বাবুই।
ভয়
- গণেশ দেবরায়
স্তব্ধ আজ পৃথিবী
নিস্তব্ধ হৃদয়
নেই কোলাহল
নেই গুঞ্জন
নেই যানবাহনের ধ্বনি
নেই দোকানের আড্ডা
নেই ঘুরে বেড়ানোর মজা
নেই নিশ্চিন্ত শান্তি ।
এ এক অচেনা বিশ্ব
এ এক অচেনা শতাব্দী !
বাতাসে বইছে আজ আতঙ্ক
মানুষকেই ভয় শুধু মানুষের
ভাইরাসের নিষ্ঠুর থাবা
কেড়ে নিলো তোমার আমার সব কিছু
ভালোবাসা প্রেম স্নেহ মমতা মাতৃত্ব।
এখন শুধু লক্ষ্য ঘড়ির কাঁটা
এই বুঝি থেমে যাবে সব
আশা আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন ভালবাসা
তাই নিশ্বাস ফেলতে ও ভয়
সবটাই যদি থেমে যায়।
****** মাতৃস্নেহ*******
✍✍শাশ্বতী দাস
সরস্বতী পূজোর বাজার করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেশ রাত করে ফেলল সুজয় ও দীপা। রাত প্রায় ন'টা বাজে। আর মাঘ মাসের কনকনে ঠান্ডার রাতে ন'টা মানে বেশ রাত। রাস্তাঘাটেও তেমন লোকজন নেই। সাইকেল নিয়ে নয়নজুলির কাছে আসতেই একটা কচি বাচ্চার কান্না কানে এলো ওদের। একটু থমকে গেল ওরা। এতো রাতে এই নয়নজুলির ধারে বাচ্চার কান্না আসছে কোথা থেকে! কোথাওতো কোনো লোকজন নেই। সাইকেল থামিয়ে দাঁড়িয়ে কান খারা করে শোনে ওরা। ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝতে পারে, পাশের একটা ঝোপ থেকে আওয়াজটা আসছে। তাড়াতাড়ি ঝোপের দিকে এগিয়ে যায় দুজনে। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে ভালো করে তাকাতেই দেখতে পায় ঝোপের মধ্যে কাপড় জড়ানো একটা সদ্যোজাত শিশু এবং কান্নাটা এই শিশুটিরই। শিশুটিকে তাড়াতাড়ি কোলে তুলে নেয় দীপা। " এখানে কেউ আছেন? এই বাচ্চাটা কার? জোরে জোরে ডাকতে থাকে সুজয়। সুজয়ের ডাকে আশপাশের বাড়ির লোক এবং সরস্বতী পূজোর বাজার করে ফেরা কিছু লোক এসে দাঁড়ায় তাদের কাছে। ব্যাপার দেখে সবাইতো তাজ্জব। প্রায় সকলেই বলে ওদের শিশুটিকে লোকাল থানায় জমা দেওয়া উচিৎ। কিন্তু সদ্যোজাত ফুটফুটে শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন অদ্ভুত একটা টান অনুভব করে দীপা, তার ভেতরের মাতৃস্নেহ জেগে ওঠে। আর একটি অবাক কান্ড হোলো এতো কাঁদছিলো যে শিশুটি, দীপা কোলে নিতেই কেমন সুন্দর চুপ করে গেল।
দীপা সুজয়কে স্পষ্টই জানিয়ে দেয়, "আমি একে থানায় জমা করবো না, ও আমার কাছেই থাকবে। আমার বীথির সঙ্গেই একসঙ্গে ওকে মানুষ করবো আমি। আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাব। আজ থেকে আমিই ওর মা। "
দীপার কথা শুনে একটু চিন্তায় পরে যায় সুজয়। বাড়িতে তার বৃদ্ধা মা আছেন। মা ভীষণ গোঁড়া। কার না কার বাচ্চা এইভাবে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়ে গেলে মা যদি না মেনে নেন! দীপা সুজয়ের মনের কথা বুঝেই বলে ওঠে, " তোমার মা যদি একে মেনে না নেন, তাহলে আমি বীথি আর একে নিয়ে আমার বাপের বাড়ি চলে যাব।
ওদের এই কথাবার্তার মাঝে অন্যান্য লোকজন সবাই আস্তে আস্তে ফিরে যেতে থাকে। কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী শুধু যেতে যেতে বলে যান, " যাই করুন, লোকাল থানায় জানিয়ে করবেন। নইলে ভবিষ্যতে আপনারাই বিপদে পড়তে পারেন। কার মনে কি আছে বলাতো যায় না।"
সুজয়ও বুঝতে পারে দীপাকে মানানো যাবে না। সে যখন বলেছে শিশুটিকে তার নিজের কাছে রাখবে, তখন তাইই করবে। তাই একটু হতাশ হয়েই বলল সে, " ঠিক আছে তাই হবে, এখনতো বাড়ি চলো।" এই কথা বলে দীপা ও সদ্যোজাত শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি আসে সে।
বাড়ি এসে ডাকতেই দরজা খুলে দেন সুজয়ের মা। দরজা খুলেই বাচ্চা কোলে দীপাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন তিনি, " এ কে বৌমা! কার বাচ্চা! কোথা থেকে নিয়ে এলে!" " সব বলছি " বাড়ির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সুজয় বলে, " আগে একটু জল দাওতো।" এদিকে ঠাকুমার কথা শুনে ভেতর থেকে বারো বছরের বীথিও " কোথায় বাচ্চা মা? আমিও দেখবো।" বলতে বলতে বেরিয়ে আসে। এসেই ছোট্ট পুতুলের মতো শিশুটিকে তার মায়ের কোলে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, " এ কে মা! " " তোমার বোন।" দীপা হেসে উত্তর দেয়।
সুজয়ের মা চমকে ফিরে তাকান দীপার দিকে। " তারমানে! কে বোন! কি বলছো তুমি! " দীপাকে প্রশ্ন করেন তার শাশুড়ি।
" হ্যাঁ মা। এ আমারই মেয়ে। আমিই একে মানুষ করবো। " দীপা জানায়। সুজয় তাড়াতাড়ি দীপাকে থামিয়ে সব কথা খুলে বলে তার মা কে। সব শুনে তার মাও হাসিমুখে মেনে নেন দীপার কথা। দীপার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "তবে তাই হোক। তুমিই মানুষ করো একে। আজ থেকে তুমিই এর মা। যাও, দুই মেয়েকে নিয়ে ঘরে যাও।"
সুজয় আশ্বস্ত হয় মায়ের কথায়। একটু অবাকও হয়। " তোমার কোনো আপত্তি নেই মা! " সুজয় জানতে চায়। " না না আপত্তি থাকবে কেন? " আমিওতো মা। বৌমা ঠিক কাজই করেছে। আমি খুব খুশী হয়েছি। আমারতো গর্ব হচ্ছে বৌমার জন্য।" হেসে বলেন সুজয়ের মা। দীপাও খুব খুশী হয় শাশুড়ির কথায়। " আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আজ থেকে আরও বেড়ে গেল মা।" বলে শাশুড়িকে প্রণাম করে দীপা।
" আরে থাক থাক, আর প্রণাম করতে হবে না। তুমি তাড়াতাড়ি ভেতরে যাও। তোমার ছোট মেয়েকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দুধ খাওয়াও। আর দেরী কোরোনা। দীপা হেসে তার দুই মেয়েকে নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। এমন সময় সুজয় তার মাকে বলে, " মা দরজাটা একটু বন্ধ করে দাও। আমি একটু আসছি। " " কোথায় যাচ্ছিস এতো রাতে!" সুজয়ের মা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করেন।
" একটু থানায় যাচ্ছি মা।" সুজয়ের কথায় তার মা ও দীপা দুজনেই চমকে ওঠে। " কেন থানায় কেন!!" প্রশ্ন করে দীপা। " আমি বলেছিনা, আমি ওকে দেবনা। ও আমার ছোট মেয়ে।" শিশুটিকে বুকে চেপে বলে দীপা।
" না না ওকে তোমাকে দিতে হবে না। আর অন্য কেউ যাতে ওকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতেই থানায় যাচ্ছি আমি। আরে ওকে আমরা দত্তক নেব। আর সেই জন্যেই থানায় যাচ্ছি আমি। " হেসে বলে সুজয়। দীপাও শুনে নিশ্চিন্ত হয়ে দুই মেয়েক নিয়ে ঘরে চলে যায়।
কবিতা
বায়বীয় জীবন
মৌসুমী গুহ রায়
মন শূন্য। অনুভূতি রা ছোট্ট তরঙ্গ তুলে মিলিয়ে যায়।
মন একেবারে নিস্তরঙ্গ। মাঝ সমুদ্রের মতো।
শব্দেরা আনাগোনা করেনা তেমন।
একটা গোটা আকাশ বা একটা সমগ্র সমুদ্র যেন মনের মধ্যে ঢুকে গেছে।
মানুষ বলে : তাপ, উত্তাপ হীন। সুখী জীবন।
একদিনে এসব হয়নি। মানুষের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় এই সুখী জীবন। জ্বলতে জ্বলতে,
পুড়তে পুড়তে, ছাই হতে হতে, এই বায়বীয় সুখী জীবন।
দীর্ঘ দিন কেটে গেছে বাইরের জগতে, কর্মের জীবনে।
এখন আর সেসব নেই। এখন ঘরের জীবন। প্রতিদিন, প্রতিমুহুর্তে কবিতার জীবন। অবসর দীর্ঘ।
কবিতা খুঁটে খায় খাদ্য, জীবন থেকে। জীবন পরিমিত।
কবিতা :
স্মৃতির আয়নায়!
বিশ্বজিৎ কর
হয়তো কোনদিন পৌঁছে যাব এক গ্রহের কাছে....
স্থির আলো থেকে কিছু আলো নিয়ে আমি পথ চলব,
একলা চলার আবেগে!
এই সেই পথ,যে পথে চিরতরে চলে-যাওয়া প্রিয়জনের পদচিহ্ন আজও ভেসে ওঠে!
আমার বাবা,মা.........
অন্তরাত্মায় বিকশিত হবে কত স্মৃতি,চোখের কোণে জল জমবে!
বাবা প্রায়ই গাইতেন-"যখন পড়বে না মোর পায়ের
চিহ্ন..!"
সব স্মৃতি হবে আমার কবিতা,
জীবনখাতার প্রতি পাতায়!
প্রকাশ
বাপন দেব লাড়ু
দাবানল আগুনে
পুড়ে ছাই হয়েছে কত পান্ডুলিপি,
হেমকূট মগ্ন আহ্বানে
করেছি অর্চনা,
আছে শুধু হেমাদ্রি এবুকে
তপোনিধি চোখ তাই
প্রকাশ করে অব্যক্ত ভাষা।।
হারানো শৈশব
রুহুল আমিন
ভালোলাগে শৈশবের ছন্দময় স্পন্দের গল্প
কিশোর হয়ে ভালোলাগে শৈশবের স্বপ্নে কাঁদতে
বর্তমান স্মাটফোন কিশোর কিশোরীর সঙ্গি
তারা চার দেওয়ালের মাঝে সময় বেঁধেছে ঘড়ির কাঁটায়
আজ শৈশব হারিয়েছে আমাবস্যা অন্ধকারে
মানসিক অবসাদের সর্বনাশ নেমেছে পৃথিবীতে
গ্রীষ্মের রৌদ্রময় ছায়া হীন মাঠে
ক্রিকেট ব্যাট হাতে তুমুল ঝগড়া
মৃদু বর্ষায় বরশি নিয়ে পুকুর পাড়ে
মাছের সাথে খেলা
কলমি শাঁকের ঝোপের মাঝে
দলবদ্ধ শাপলার বাঁহাদুরি
পকেট ভর্তি ব্যাঙাচি নিয়ে
দুঃস্বপ্নের কবিতা শৈশবে দেয় পাড়ি
লাটুম হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া
রঙিন স্বপ্নের পিছে অভ্যাসের দায়বদ্ধতা
পদ্ম নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে
সূর্যের সাথে দেয় আড়ি
ফুটবলের লাথি কাঁদা ছিটায় দেহে
মায়ের শাসন কড়া, তাই বাড়িতে আসা চুপি চুপি
হে যুবক মনে পড়ে কি শৈশব,
নাকি, স্মাটফোন গ্রাস করেছে তোমায়?
বুঝে নে স্বাধীনতা
আব্দুল রহিম
গাধা তো গাধা !তুই কি বুঝিস সভ্যতা ?
আজীবন তোর পিঠে মস্ত বোঝা
তবু কি করেছিস শিড়দাঁড়া সোজা ?
গাধা তো গাধা পিঠে নে আবার বোঝা।
পারিস না ঠিক করে বোঝা নিয়ে হাঁটতে
তবু কেন পারিস না বিদ্রোহ ঘোষনা করত
তোর মেরুদন্ডের হাড় বেঁকে ধুনুকাকার
তবু কেন! ইচ্ছা জাগে না স্বাধীন ভাবে বাঁচবার।
তোর মুখে পরানো রক্ত মাখা নাকছাবি
কবে তুই সভ্য মানুষের মুখোশ খুলবি
ভয় করে বুঝি!ভূতের কানমোলা খাবার
তাহলে বাঁচার নেই কোনো তোর অধিকার।
বাঁচতে যদি হয় শিকল ভেঙে ফেল এবার
হাতে হাত রেখে কর স্বাধীনতার চিৎকার
তুই কি গাধা ? জীবন মানে নয় কিন্তু ধাঁধা
বুঝেনে আজ তোর রক্তের সেই স্বাধীনতা।।
বাঁচতে যদি হয় জয়ধ্বনি কর
বাঁচতে যদি হয় জয়ধ্বনি কর
না হয় শুকনো রুটির জন্য মর
না হয় চোখের জলকে অস্ত্র কর।
তুই গাধা না!শুধু হৃদয়ের মাঝে আগুন জ্বলা
মুছে দে কপালের আঁকা দারিদ্র্যের কালো রেখা
তাহলে দেখবি তোর জন্মাবে সিংহের হিংস্র থাবা
ফিরে পাবি তোর রক্ত মাখা হাতে গড়া স্বাধীনতা।
অন্তহীন
শঙ্কর ভট্টাচার্য
"এই শালা রেন্ডির বাচ্চা, এতক্ষন বাথরুমে লাগে?" ভয় পেয়ে গায়ে কাপড় টা কোন রকমে জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে যায় মাধবী।সামনে এসে দাঁড়ায় নাজনিন।"দাঁড়া ,আমার সাথে বেরোবি।কুত্তাগুলো ঠিক বাথরুমের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।তোকে দেখলেই গুটখা খাওয়া দাঁত বের করে হি হি করে হাসবে।"
নাজনিনের হাত ধরে মাধবী বাথরুম থেকে বেরোয়।বাইরে এসেই নাজনিনের হুংকার ,"শালা মাগীর শরীর দেখার জন্য সকাল থেকেই লেডিজ বাথরুমের সামনে লাইন দিয়েছিস? চল শালা,রাস্তা ছাড়"।ভয় পেয়ে যায় মাধবী,এর পর যদি রক্ষীগুলো দূ একটা চড় থাপ্পড় মারে।
নাজনিন একটু হেসে বলে " খুব ভয় পেয়েছিস তো।বাবা,দৌড়চ্ছিস একেবারে।আরে শালা যে যা ভাষা বোঝে।ওরা এই ভাষাটাই বোঝে" বলে আবার হাসতে থাকে।
নাজনিন বেগম,স্বামী খুনের আসামী।পাঁচ বছর হয়ে গেল জেল খাটছে।প্রায় ছয় ফুট লম্বা।দৈত্যাকৃতি চেহারা।কাউকে ভয়ও পায় না আবার তোয়াক্কা ও করে না।
কেন জানিনা প্রথম দিন থেকেই নাজনিন,মাধবীকে কেমন আগলে রাখে।প্রথম রাত্তিরেই সেলের অন্য কয়েদিরা ওকে একটু টীকা টিপ্পনি করছিল।কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে একটু খোঁচাখূঁচিও করেছে।নাজনিনের এক হুংকারে সব ভীড় ফাঁকা হয়ে গেছে নিমেষে।" মাদারচোদ বে ফিকির কিঁউ পরেশান করতি হো?"
তখন জেলের নিয়ম কানুন, জেলের জীবনযাত্রা কিছুই জানত না মাধবী।তবে নাজনিনের প্রিয় ছিল বলে সবাই ওকে সমীহ করে চলত।
সেলের মধ্যে সারারাত হল্লা করত কয়েকটা মেয়ে ।তার মাত্রা যখন ছাড়িয়ে যেত আবার নাজনিনের চীৎকার "শালা,হল্লা মাত করনা,সবকো নিদ যানে দে"। নিজে কিন্তু ঘুমাতো না সারা রাত্তির প্রায় ।ভোরের দিকে ওর চোখ একটু লেগে আসত।মাধবী একদিন প্রশ্ন করেছিল "তুমি সারারাত ঘুমাও না দিদি?"মাধবীর চুলের জট ছাড়াতে ছাড়াতে বলেছিল নাজনিন "রাতেই আমার ভয় রে,দুনিয়ামে ম্যায় কিসিকো ডরতা নহী,লেকিন অন্ধেরা" এই অবধি বলে চুপ করেছিল নাজনিন ।
"কি হয়েছিল দিদি?" প্রশ্ন করে মাধবী।
খানিকটা চুপ করে থেকে নাজনিন বলে "সময় টা ছিল ঠিক পূজোর আগে।দু দিনের জন্য দিদির বাড়ী যাব বলে ঘর থেকে বেরিয়ে ছিলাম।আমার আদমী বলেছিল "আর দু দিন থেকে আয়না"।আমি চাইনি।ওকে ছেড়ে বেশীদিন থাকতে পারতাম না।মেটিয়াবুরুজ এর এই ছোট খুপড়িটা ছিল আমার স্বর্গ ।ও কাজ করত শিপ বিল্ডার্সে ,মাল খালাসের কাজ।আমার দিদির বাড়ী রানাঘাট ।ষ্টেশনে গিয়ে শুনলাম ওভার হেডে তার ছিঁড়ে গেছে,ট্রেন বন্ধ ।তবে আধঘন্টা পর থেকে হয়ত চলবে।পাক্কা তিনঘন্টা বসে থেকে শিয়ালদহ থেকে বাস ধরে যখন বাড়ী ফিরলাম দেখলাম ঘরের আলো নেভানো।একটু খটকা লাগল।দরজায় টৌকা দিতেই ওর গলার স্বর। "কৌন?"
আমি কোন উত্তর দিলাম না।এত তাড়াতাড়ি তো ওর শুয়ে পড়বার কথা নয়।ও আবার বলল " কৌন" আমি আবার চুপ।খট করে দরজা খুলল,আমি ওকে ধাক্কা মেরে ঘরে ঢুকে আলো জ্বেলে দিলাম।"এই অবধি বলে চুপ করে নাজনিন।
মেয়েটি তখনও খাটেই শোয়া ছিল।তাড়াতাড়ি তে কাপড় টাও ঠিক করে পরতে পারেনি।এক দৌড়ে ঘর থেকে পালিয়ে গেল।
আমার মাথায় তখন আগুন জ্বলছে।হাতের সামনেই পেলাম ডাল পিষবার বড় নোড়াটা।ওটা তুলে নিয়ে ওর মাথায় সপাটে বসিয়ে দিলাম।হমার আদমী একটা শব্দ করারও সময় পেল না।
এতখানি একসাথে বলে একটু দম নেয় নাজনিন।চোখের কোনে একফোঁটা জল।মাধবী ওর আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেয়।ফের নাজনিন বলে " ম্যায় রোতা নহী,আমার কোন দুঃখ নেই।যা করেছি ঠিক করেছি।ফির উনকো কঁহাপর মিলেগা তো ভী শালেকো" কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায় ।
বাগানে কাজ করছিল দুজনে।রক্ষীর হুংকার শোনা যায় "আরে ঐ এত গল্প কেনরে,কাজটা কে করবে?" নাজনিন একবার ঘুরে তাকিয়ে দেখে ফের মাটি কোপাবার কাজ শুরু করে।
সেদিন ই সন্ধ্যা বেলা নাজনিন সেলের ভিতর বসে মাধবীর চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে "তোর এত ভাল চুলগুলো একটূ যত্ন করিস না কেন?
মাধবী উত্তরে বলে " কিসে লাগবে দিদি? এই
জেলেই তো কেটে যাবে বাকীঠি জীবন ।"
এমন সময় জেলের ভিতরের হনুমান মন্দিরের আরতির ঘন্টা বেজে ওঠে।কপালে হাত ঠেকায় মাধবী।এতদিনে সে জেনে গেছে প্রথমে আরতি শুরু হবে তারপর হনুমান চালিশা পাঠ।সব মিলিয়ে প্রায় ঘন্টা দেড়েক চলবে এই পূজা পাঠ।
মাধবী বলে " চল দিদি ,অনেকদিন মন্দির যাইনা।"এই টুকুর অনুমতি আছে ওদের।
দুজনে গিয়ে সিঁড়িতে বসে।পুরোহিত রামসূরথ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দেখে আবার আরতি শুরু করে।আরতি হয়ে গেলে প্রদীপ টা বাইরে রাখে।দু তিনজন রক্ষী শিখার উত্তাপ নিয়ে কপালে ঠেকায়।
রামসুরথ নাজনিন কে উদ্দেশ্য করে বলে ," হনুমান জী কে ভাল করে ডাক,তাড়াতাড়ি ছুটি পেয়ে যাবি।"
নাজনিন শ্লাঘা দেখিয়ে বলে " কি করব চাচা ছুটি পেয়ে? কোথায় যাব?"
রামসুরথ রাগ দেখিয়ে বলে কেন "আপনজনদের কাছে যাবি।ইচ্ছা করেনা তোর?"
নাজনিন বলে "ইএ তো বহূথ মুশকিল কি বাত চাচা,কৌন মেরী আপনা আদমী ইয়ে তো ঢুঢনা পড়েগা। আর আমার মত জেল খাটা কয়েদী কে কে ঘরে থাকতে দেবে বলত,।এইত বেশ আছি,হৈ হুল্লোড় করে দিন কেটে যাচ্ছে ।"
রামসুরথ এবার মালতী কে উদ্দেশ্য করে বলে "তুই তো সবে এসেছিস।ভাল করে মন দিয়ে কাজ কর আর দু বেলা হনুমানজীর সেবা কর।দেখবি তাড়াতাড়ি ছুটি পেয়ে গেছিস।"
মাধবী মুখে কিছু বলেনা।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।মনে মনে ভাবে সত্যি ই ওরও তো যাবার কোন জায়গা নেই।স্বামী মারা যাবার পর তিন বছরের বাচ্চা কে কোলে নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাঙলাদেশ থেকে এপারে এসেছিল।কাজ জুটেছিল শ্যামনগর এক মাসিমার বাড়ী ।ওরা মা মেয়ে দুজনকেই থাকতে দিয়েছিল।প্রথম প্রথম একটু সন্দেহর চোখে দেখত বটে,পরে সব ঠিক হয়ে যায় ।ওরা সবাই মেয়েটাকে খুব ভালবাসত।আদর করে ডাকত টেঁপাই বলে।
বৌদি ওকে নিয়মিত পড়াশুনা করাত,স্কুলেও ভর্তি করে দেয়।মাধ্যমিক পড়তে পড়তে কাকে একটা বিয়ে করে পালিয়ে যায় মেয়েটা।স্কুল থেকে আসছে না দেখে বৌদিকে সঙ্গে করেতিনদিন ধরে খূঁজেছে মেয়েটাকে।থানা,পুলিশ কিছুই বাদ রাখেনি।তিনদিন পর মেয়ের চিঠি এল ওর এক সহপাঠী মারফৎ।পালানোর আগে চিঠিটা লেখে।মা'কে লিখেছে " শমীক দাকে বিয়ে করে আমি বাইরে চলে যাচ্ছি ।চিন্তা কোরনা ।তুমি ভাল থেক।"
একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল মাধবী ।রামসুরথ ওদের সাথে একটু গল্প করে আবার হনুমান চালিশা পাঠ করতে চলে যায় ।যাবার আগে বলে গেল "যাসনি প্রসাদ নিয়ে যাবি।" ওরা দুজন নিজেদের গল্প করছিল।ইতিমধ্যে কারা রক্ষীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে গেছে।" সেলে যারে"।
নাজনিন মুখ ভেঙচিয়ে বলে "যাচ্ছি রে মিনশে"।
এই রামসুরথ একদিন ওদের কাছে গল্প করেছে ।ওর জীবনের গল্প ।অনেক বছর এই জেলে চাকরি করছে ।অবসরের পর এই জেলেরই পাশে একটা ছোট খুপরিতে ভাড়া নিয়ে থাকে।ঘরে কেউ নেই।ওর বাড়ী উত্তরপ্রদেশ এর এলাহাবাদে।যুবক বয়সে ঘর ছেড়ে চলে এসেছে।আর ঘরে ফেরেনি।
সারাটা দিন ওর এখানেই কাটে।রক্ষীদের ক্যান্টিনে দূপুরের খাওয়া সেরে নেয়।রাতে ঘরে গিয়ে ছটা রুটি আর খানিকটা তরকারি ফুটিয়ে নেয় ।
জেলের সবাই ওকে চাচা বলে ডাকে।চব্বিশ ঘন্টা ই ওর ঢোকার বা বেরোবার অনুমতি আছে।
মাধবী আবার ডুব দেয় ওর পুরানো দিনের ভাবনায়।মেয়েকে ইস্কুল থেকে দিতে বা নিতে আসার সময় ওর 'গুলাব'এর সাথে আলাপ।গুলাব কুমার।বউ মারা গেছে দু বছর হয়ে গেল।তিনটে বড় বড় ছেলে মেয়ে আছে।গুলাব রিক্সা চালায়।ও ওর মাসিক ভাড়ার বাচ্চা টাকে নিতে আসে।সেই গুলাব প্রকারান্তরে ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।মাধবী কোন উত্তর করেনি নিজের মেয়ের কথা ভেবে।
মেয়ে পালিয়ে যাবার পর ও গূলাবের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল।চাকরি ছেড়ে ও গুলাবের সাথে এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়ল।গুলাবের আসল বাড়ী বিহারের বেতিয়া।এক রাত্তির একটা ধাবায় কাটিয়ে গুলাব পরের দিন ওকে নিয়ে হাওড়া ষ্টেশনে উপস্থিত হয়।কথা ছিল ওকে নিয়ে গুলাব বেতিয়া যাবে।সেখানে কদিন কাটিয়ে তারপর ফিরবে।ষ্টেশনে আরও দুটো লোক আসে।তারা গুলাবের পিসতুতো ভাই বলে পরিচয় দেয় ।ওরাও বেতিয়া যাবে।ট্রেনে ওঠবার পর গুলাব বলে ওকে পাটনাতে নামতে হবে।জমি সংক্রান্ত কিছু কাজ আছে,সেরে নিয়ে পরের দিন ঔ বেতিয়া ফিরবে।পিসতুতো এক ভাইও ওর সাথে যাবে আর আর এক ভাই 'মনুয়া'ওকে নিয়ে বেতিয়া যাবে।
মনুয়া বলে " ভাবী সোচিয়ে মাত।আরামসে চলিয়ে।"ওরা অনেক দামী খাবার দাবার নিয়ে এসেছিল।সেই সব খাবার খেতে খেতে আর আড্ডা দিতে দিতেই কখন পাটনা চলে এল।
পাটনাতে গুলাব চলে যায় ।যাবার আগে মাধবী কে হাত ধরে বলে যায় কাল সকালের মধ্যেই ও বেতিয়া পৌছবে।মনুয়া র সাথে মাধবী বাসে উঠে বেতিয়া রওনা দেয় ।
বাসে উঠে মনুয়া বলে আজকের রাতটা বেতিয়া তে কোন হোটেলে থাকতে হবে।ও নিজে যদিও কোন ধাবায় থাকবে।কালকে সকালেই ওরা ওদের গাঁয়ের বাস ধরবে।কারন গাঁয়ে যাবার এই একটাই বাস খুব ভোরে।এইবার মাধবী র একটু খটকা লাগে কারন গূলাব বলে গেল আজকে রাতেই ও গাঁয়ে পৌছে যাবে।
হুঁসই ছিলনা মাধবীর ,রামসুরথ কখন পূজোপাঠ শেষ করে মন্দিরের দরজা দিয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ।খান দশেক বাতসা দিয়ে বলে " এই নে হনুমানজীর প্রসাদ।এখন চলে যা এখানকার বাতি নিভিয়ে দেবে।"
প্রায় ঘোরের মধ্যে সেলে ঢোকে মাধবী ।বাতসা গুলো হাতেই ধরা।আবার ডুব দেয় অতীতে।সেদিন রাতেই মনুয়া ওর হোটেলে এসেছিল বেহেড মাতাল হয়ে।দরজা খুলতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে মাধবীর ওপর প্রথমে মাধবী একটু হকচকিয়ে যায়, তারপরেই নিজেকে সামলে নিয়ে দরজার বড় ভারী তালাটা হাতে তুলে নেয় ।একদম সোজা মনুয়ার মাথার ঠিক সামনে দিকটা একদম থেঁতলে দেয়।আর তারপর নিজেই বেতিয়া থানায় গিয়ে ও জানায় সব কথা।
মামলা উঠল খুনের মামলা।কোন এক ভাল মানুষ ওর পক্ষের উকিল হয়ে দাঁড়ায় ।ও শুধু একটাই কথা বলে "ওর হাত থেকে বাঁচবার জন্য খুন আমি করেছি।" তা সত্বেও যেহেতু খুনের মামলা মাধবী র আট বছরের জেল হয়।
নাজনিন ওকে ধাক্কা দিয়ে বলে ক্যায়া হুয়া রে রাত কে খানা নহী খাওগে কেয়া?
সম্বিত ফেরে মাধবীর,নাজনিন এর সাথে খাবার আনতে যায় ।
এর ঠিক ছয় মাসের মাথায় মাধবী মুক্তি পায় ।তখন ওর পাঁচ বছর হয়ে গেছে।
জেলার ওকে সব বুঝিয়ে দেবার পর প্রশ্ন করে "কোথায় যাবেন এখন?"
ও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে জেলারের দিকে।
"দেখুন নিশ্চয় আত্মীয়, স্বজন কোথাও কেউ আছে।আপাতত তাদের ওখানেই উঠুন তারপর না হয় কিছু জুটিয়ে নেবেন।"
এই টুকু বলে জেলার সাহেব নিজের কাজে মন দেয় ।
প্রধান ফটকের ঠিক বাইরে একটা বড় বটগাছ আছে।তাকে ঘিরে একটা চওড়া বেদী।নিজের হাতের ভারী ব্যাগ গুলো তার ওপর নামিয়ে একটু বসে মাধবী ।হঠাৎ চোখে পড়ে একটু দুরে বসে ' চাচা' মানে রামসুরথ ।মুচকি হাসে মাধবী ।চাচা উঠে আসে মাধবীর কাছে বলে "তোর জন্য ই তো বসে আছি রে বেটী"।
মাধবী বলে " কেন ,কিছু বলবেন?"
চাচা প্রশ্ন করে " কোথায় যাবি এখন? কে আছে তোর?"
মাধবী বলে "কেউ নেই চাচা।এক দাদা,বৌদি আছে শ্যামনগরে কিন্তু সেখানে যাবার মুখ নেই আমার।"
চাচা বলে " ফির এক বাত বলব?বুড়া মাত সোচনা"
মাধবী তাকায় চাচার মুখের দিকে।
চাচা ফের বলে " আমার সাথে চল।আমার একফালি ছোট ঘর আছে।হামি তো সারাদিন ঘরেই থাকিনা।তুই থাকবি।নিজে রসূই করবি।নিজে খাবি।অগর বাপ বলে মানতে পারিস তো চল।তোকে আমি জোর করব না।ফির আবার কোথায় কি ঝামেলায় জড়িয়ে যাবি।যতদিন মন চায় থাক।"
মাধবী বলে " আপনি কোথায় থাকবেন?"
চাচা বলে "ও রাতটুকু তো? আমি ঘরের এক কোনে পড়ে থাকব। থাকতে দিবিনা মা?
ফির দো মাহিনা বাদ নাজনিন কা ভী ছুটি হোবে।উকেও এখানে লিয়ে আসব।হমার দো বেটীকে লিয়ে হামি থাকব।
মাধবী একবার ঐ অশ্বত্থ গাছের উঁচূ ঝাড়টার দিকে তাকায়, তাপর বলে " চলুন চাচা"।
Copyright reserved
ঘরেবাইরে র নিখিলেশ ।তাঁকে কেন্দ্র করে এ কবিতা। বাইশে শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন।
কবিতা
আমি নিখিলেশ,বিমল
নবনীতা বসু হক
আর কিছুই নয় বিমল,
তুমি এখন কষ্টমুখ,
গুমরে যায় ঘনঘটায়
বিধবা রিক্ত শূন্য পাল।
যদি কখনো আঙুল দাও
স্পর্শ করো সীমন্তিনী
হয়তো জুড়ে কোথাও।
নিখিলেশ,সঙ্গিনী।
তোমার অন্য পথে পা
আমার বিপদ সীমানা
বাদই দিই, থাক কাঁপা অতিরিক্ত সে ভাবনা।
তবু ভালো থেকো বিমল
নদীর মতো ভাঁজে জীবন
একলা একা পথ-কমল।
তৃপ্ত হও, স্হিরমন।
✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌🌌
©সেক আসাদ আহমেদ
সম্পাদক, উপকণ্ঠ
0 comments: