সোমবার, ২০ জুলাই, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন-19&20/07/2020

       উপকণ্ঠ 19 ও 20 জুলাই সংখ্যা, 2020

                  উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ
           "উপকণ্ঠ 19 & 20 জুলাই সংখ্যা "
               "উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
                    (ওয়েব ম্যাগাজিন)
        প্রকাশ কাল:-20/07/2020, সোমবার
                    সময় :- সকাল 7 টা


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত

মুঠোফোন:- 9593043577
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷

উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে
Click Here

উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে
Click Here

👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇


" উপকন্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"                     
                         
                          চেনা-অচেনা
                               সুরজিৎ দাস 

    ট্রেন এসে থামল ধুপগুড়ি স্টেশনে। আন্দাজ তখন সকাল আটটা।

    বলে রাখা ভালো আমি একা ছিলাম না, সঙ্গে ছিল আমার স্ত্রী মৌসুমী আর আমার ছেলে পরিমল। এটা দুর্গা পুজোর আগে বেড়াতে যাওয়া ।লোকে যাই বলুক সত্যি কথা বলতে কি বাঙালির শ্রেষ্ঠ পূজা দুর্গাপূজায় বাড়ি -ঘর-দুয়ার ছেড়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া আমার পছন্দ নয়। তাই অফিসের বেশ কয়েকদিনের ছুটি পাওনা ছিল তারই কিছুটা ব্যয় করে রওনা দিলাম ডুয়ার্সের দিকে।

    জায়গাটা আমার স্ত্রী মৌসুমীর'ই পছন্দের। সত্যি কথা বলতে কি পাহাড়ি এলাকা এত সুন্দর হয় তা আমার আগে জানা ছিল না। সারা রাতের ট্রেন জার্নিং-এর পর এক জায়গায় এসে বুঝতে পারলাম ট্রেনের গতি আগের তুলনায় অনেকটাই কমে এসেছে। জানালার ফাঁক দিয়ে হালকা ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করছে। তখন দেখলাম আমার স্ত্রী ওপরের বিছানা থেকে কখন নেমে পড়েছে। বাকিরা তখনও বেশ স্বচ্ছন্দে কম্বল চাপা দিয়ে ঘুমোচ্ছে।

    বিছানায় পরিমলকে একা দেখে বেশ কিছুক্ষণ জেগেই পড়ে রইলাম। কতক্ষণ কেটে গেছে জানিনা, এক সময় ট্রেনের এক হ্যাঁচকা ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে যেতেই ধড়ফড় করে উঠে দেখি আমারই পায়ের তলায় মৌসুমী জানালা খুলে বসে রয়েছে। একরাশ ঠান্ডা কুয়াশা প্রবেশ করছে খোলা জানালা দিয়ে।

  আমি চশমাটা চোখে দিয়ে দেখি ট্রেন শিলিগুড়িতে থেমেছে ।ট্রেন থামতেই একদল হকার কামরায় ঢুকে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই কামরার মধ্যে দেখা দিল ব্যস্ততা।

     ট্রেন এর পর থেকেই যেন ক্রমশ আস্তে আস্তে চলতে থাকে। বুঝতে পারলাম একে  পাহাড়ি এলাকা, তার উপর কুয়াশা। ট্রেনের গতি আস্তে হওয়াটাই স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে গায়ে  হালকা ঠান্ডা বাতাস যেন হাত বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। দূরে পাহাড়ের সারি;  তাতে সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোথাও বা ট্রেনের ধার দিয়ে বয়ে গেছে স্বচ্ছ নদীর ধারা । পাহাড়ের বুক চিরে আঁকাবাঁকা পথ ধরে ট্রেন চলেছে। কোথাও বা লাইনের পাশে লেখা' হাতি পারাপারের জায়গা আস্তে চালান'। যেন এটাই একটা সাইড টুর হয়ে গেল আমাদের।

     আগে থেকেই আমাদের সব ঠিক করাই ছিল। ধূপগুড়িতে নামতেই দেখি ট্রেন প্রায় ফাঁকা হয়ে গেল। যে যার জিনিসপত্র নিয়ে নেমে পড়েছে স্টেশনে । স্টেশন একটু ফাঁকা হতেই একজন কাঁচা-পাকা দাড়ি গোঁফ যুক্ত মাঝ বয়সী ভদ্রলোক এসে বললেন "আপনি সৌরভ গাঙ্গুলী?" অবশ্য আমি যেভাবে বাংলায় বললাম সেভাবে তিনি বলেননি, তিনি  খোদ হিন্দিভাষী। হিন্দিতেই তিনি বললেন "ব্যানার্জি লজ থেকে আমাকে পাঠিয়েছে।"  অবশ্য হোটেল থেকে আমার গাড়ি পাঠানোর  কথা ছিল।

    তিনি হিন্দিতে বললেও প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন বাঙ্গালি। সে পরিচয় পেলাম গাড়িতে উঠে। তিনি এবার স্পষ্ট বাংলা ভাষায় বললেন আমি খুব খুশি হয়েছি।  আমি বাঙ্গালিদের খুব পছন্দ করি। কারণটা জানেন?
-না। কেন?
-কারণ ,এর আগে আমি অনেকদিন কলকাতায় ছিলাম। তাদের আপ্যায়ন আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না।

   নানা প্রসঙ্গের পর গাড়িটা লাটাগুড়ির স্টেশনের নিচে সাবওয়ে দিয়ে গিয়ে লজের এর সামনে এসে থামলো।

    জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। চারিদিকে পাহাড়ি গাছপালা রয়েছে; আবার অনেকটা আমাদের পাড়াগাঁয়ের মতোই  লজের সামনেই রয়েছে খাল। খালের অপর দিয়ে গেছে লাটাগুড়ির রেললাইন।

   গাড়ি থেকে নামতেই এক বয়স্ক করে লোক এসে বললেন -"ভঞ্জ লাগেজগুলো নামা ।" আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন-" আসুন আপনি আমার সঙ্গে আপনার কিছু  অফিশিয়াল কাজ আছে। আমি মি .মল্লিক। কিছু অফিশিয়াল কাজ সেরে চলে গেলাম আমাদের কটেজে। ছোট ছোট পাথরের ঢালা রাস্তা। আমাদের জিনিসপত্র নিয়ে ঘর রেখে  নমস্কার জানিয়ে চলে গেল ভঞ্জ।

    পরিমল তখনও বেশ ক্লান্ত ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই বিছানায় শুয়ে পড়ল।

    ঘর গুলো বেশ পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। এই ঘরটি মাটি থেকে থামের সাহায্যে হাত চারেক উঁচুতে অবস্থিত। ঘরের ভিতরে সবকিছুর ব্যবস্থা রয়েছে।


    বিকেল তখন চারটে বাজবে। আজকে কোনো বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই‌। কাজেই চারপাশটা দেখার জন্য বেরোতে যাব এমন সময় দেখি চাকর ভঞ্জ পিছু থেকে ডেকে বললো" বাবু চা খেয়ে যাবেন?"

    বিকালে চায়ের নেশা আমার বরাবরই নেই, তবু বললাম" হ্যাঁ হলে ভালোই হয়।"
  
   মৌসুমী মৃদু হেসে বলল -"কী ব্যাপার।  অন্যদিন খেতে চাও না আজ এক ডাকেতেই হ্যাঁ বললে।"

     "পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন অভ্যাসটাও পাল্টাতে ইচ্ছে হল" একবার মুচকি হেসে বললাম।

    পড়ন্ত রোদের আলো মৌসুমীর মুখে পড়ে এক অস্বাভাবিক সুন্দর লাগছে। ঠোঁটে হালকা গোলাপি আভা যেন শিশির ভেজা পদ্ম। মৌসুমীর কানে কানে বলতে যাবো এমন সময় ভঞ্জ এসে সব বরবাদ করে দিল।

    ভঞ্জ বেশ হাসিখুশি মানুষ ।বয়স্ক। এসে থেকে সে যেন আমাদের যত্নের দিকে বেশ নজর দিচ্ছে। এরই মধ্যে আমার স্ত্রীর মন ছুঁয়ে গেছে সে। এমন সময় সে বলে বসল-" বাবু এখানে বাজারে যাবেন? বেশ ভালো লাগবে।"

   " চলুন না বেশ হয়" চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল"আমরাও নতুন, আমাদের চিনিয়ে দেবেন সবকিছু ,কেমন।"

   ভঞ্জ আমার ছেলে পরিমলকে দেখিয়ে বলল-" দাদাবাবু আপনার ছেলে ? কি নাম?"
- পরিমল
 - বেশ সুন্দর । কী দাদুভাই কেমন লাগছে।

   পরিমলের বয়স বছর চারেক। কথা বললেও কথাগুলোর জড়তা ভাব কাটেনি। সে বলল "খুব ভাল লাগছে।"


      পথে যেতে যেতে ভঞ্জ এটা সেটা নানা কথা বলছে। এবার দেখছি সে যেন আস্তে আস্তে পরিমলকে ও  বশ করে নিয়েছে, নানা কথার ফাঁকে।

     আশ্চর্য ! মনের ভিতরটা কয়েকবার খোঁচা দিয়ে উঠলো। এই কিছুক্ষণের মধ্যেই মৌসুমী, পরিমলকে বশ করে নিল ! তবে কি সে বশীকরণ জানে? না না এ -কিরকমে হয়।

      বাজারে ঢুকতেই দেখলাম যেন আজ থেকে কুড়ি-প৺চিশ বছর আগে ফিরে গেছি আমাদের গ্রামের হাটে। মাটির ছোট ছোট চালাতে দোকান বসেছে, জামা-কাপড় ঝুলছে সার দিয়ে। বেশ লোকজন । মাঝে মাঝেই পরিমলকে দেখেছি।  এখন সে ভঞ্জের কোলে।  চলতে-ফিরতে বারবার কেমন যেন সন্দেহ জাগছে আমার মনে।

      সন্ধ্যা থামতেই লজে ফিরে আসি। মনের ভিতরটা কেমন যেন খচখচ করছে। তবে কি পরিমলকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইছে ।

     মৌসুমী বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসেছে। পরিমল ভঞ্জের কিনে দেওয়া ট্রয়-ট্রেনটাকে নিজের মতো করে বিছানার উপর কু-ঝিক-ঝিক শব্দ করে চালাচ্ছে।

   মৌসুমী আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসা করল-" কী ব্যাপার বলতো? কিছু হয়েছে নাকি?"

    মৌসুমিকে কী সবটা বলবো! না না, থাক। বলে কোন কাজ নেই, আগে দেখাই যাক না।

" তুমি একটু ঘরেই থাকো । আমি আসছি ।"

    ম্যানেজারের ঘরের কাছে যেতেই দেখি ভঞ্জ আর ম্যানেজার নিজেদের মধ্যে হাসছে আর গল্প করছে। একটু আরি পেতে শুনলে কেমন হয়! আমাদের বিরুদ্ধে  কী  কিছু ষড়যন্ত্র করছে নাকি?

     কান পাততেই শুনতে পেলাম মি. মল্লিকের গলা-" তবে ভঞ্জ আবার তুমি সবকিছু ফিরে পাবে। কেমন লাগছে পুরনো স্মৃতি ফিরে পেতে?"

    "মি. মল্লিক দারুন লাগছে। পরিমলকে দেখলেই যেন আমার সেই সুবিমলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।"

    দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ। তারপর ভঞ্জ বলল "যাক সে কথা যা হারিয়ে গেছে তা তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তবে কি বলুন তো নামের কী আশ্চর্য মিল- পরিমল- সুবিমল চমৎকার মিল "।

   এবার আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আমার কান ক্রমশ গরম হয়ে যাচ্ছে; মাথার ভেতর সব কিছু  কেমন যেন ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। চোখ, মুখ গরম হয়ে আসছে।

    নিজেকে যেন সামলাতে পারলাম না । দরাম করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ি।

    আমাকে ওইভাবে আসতে দেখে মি. মল্লিক ও ভঞ্জ অবাক হয়ে বললেন " কি হয়েছে আপনার! কিছু সমস্যা!?"


    জানিনা তখন আমাকে কেমন দেখতে লাগছিল। ঘরের ভিতরে যেতে আমার মনে হল- না ,থাক; শত্রুপক্ষকে বুঝতে দিলে হবে না আমি ওদের মতলব বুঝে ফেলেছি। তাই নিজেকে একটু সামলে নিয়েই  বললাম " না না তেমন কিছু নয়। তা কি কথা হচ্ছিল?"

     তখন একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল "এই কালকে গরুমারা অরণ্যে আপনাদের যাওয়ার নিয়েই কথা হচ্ছিল ।"

   ভঞ্জ বলল "কাল একটু ভোর ভোর বেরুলেই  ভালো হয়। রোদ উঠে গেলে আর পশুদের নাও দেখা যেতে পারে ।"

   নিজের মধ্যে অস্বস্তিটা কাটাতে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে মি. মল্লিকের সামনে বসে পড়লাম ।

   ভঞ্জ বলল" বাবু আপনার বাড়িটা কোথায় যেন ?"
 - তারকেশ্বর 
-"বাবার ধাম "মি. মল্লিক বললেন" ওখানে সবাই বাবার আশীর্বাদপুষ্ট কি বলেন সৌরভ বাবু"।

    একটু থতমত খেয়ে কাষ্ঠ হাসি হেসে বললাম- "আজ্ঞেহ্যাঁ"


    ভঞ্জ বলল "আচ্ছা বাবার দুধপুকুরে কী সত্যিই দুধের পুকুর" একটু থেমে " মানে দুধপুকুরে কি দুধ আছে!"

 --"না , দুধ নেই, শুধুই গঙ্গাজল আছে"।

     মি. মল্লিক হেসে বললেন" মানে  বাগবাজারে বাগ নেই বউবাজারে বউ নেই তেমন অবস্থার।"

      সত্যি বলতে  ঘরের পরিবেশটা বেশ গরম হয়ে উঠেছে ।আমার গায়ের জামাটা ভিজে সপসপ করছে।

     কাজেই একটু হেসে বললাম "আচ্ছা মি. মল্লিক ঘরের স্ত্রী-ছেলে একা আছে চলি"একটু খানি ভঞ্জ দিকে তাকে বললাম- "চলি ভঞ্জবাবু"।

   বাইরে আসতেই দেখলাম পূর্ণিমার চাঁদ মধ্যাকাশে, বাইরে ঠান্ডা হাওয়া এক নিমিষেই প্রাণ জুড়িয়ে  দিয়ে গেল।

    ঘরে গিয়ে দেখি মৌসুমী আর পরিমল টিভি দেখছে।

    আমাকে দেখেই মৌসুমী বলল "কি ব্যাপার?  কি হয়েছে বলতো?"

      "কই কিছু না তো" একটু অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম "ম্যানেজারের কাছে গিয়েছিলাম কাল আমরা গরুমারা অরণ্যে যাচ্ছি, কেমন ।"

    মৌসুমী একগাল হেসে বলল" ঠিক আছে। এবার বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।"

    রাত তখন সাড়ে দশটা বাজেছে পরিমল খেয়ে শুয়ে পড়েছে মৌসুমী বিছানা করছে। চোখের ঘুম যেন আমার ছুটে গেছে। বাইরে পূর্ণিমার জ্যোৎস্না। চাঁদের আলো পাহাড়ের গায়ে গিয়ে পড়েছে,এক অসামান্য রূপের সৃষ্টি করেছে। চারিদিক নিস্তব্ধ ,তার মাঝে দূর থেকে ভেসে আসছে ময়ূরের ডাক ।

    রাত তখন কটা জানিনা। আমার চোখে ঘুম নেই, এই বেশ ভালো আছি। ঘরের বাইরেআমি পাহারায় ,ভিতরে মৌসুমী পাহারা দিচ্ছে। একবার দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম  রূপালী চাঁদের কিরণ কাঁচের জানালা ভেদ করে মৌসুমীর সমগ্র শরীরটাকে যেন ঢেকে দিয়েছে, মাঝে মাঝে বুকের ওঠানামা, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ।অপূর্ব। তারই পাশে পরিমল গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন।

    ভোর তখন কটা খেয়াল নেই। যখন উঠলাম তখন ঝিপঝিপ বৃষ্টি পড়ছে বাইরে ।

    মৌসুমীর ঘুম ভেঙে গিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল "কই গো শুনছো, আজ আর মনে হয় আমাদের যাওয়া হলো না, বাইরে বৃষ্টি পড়ছে ।"

     মনে মনে বেশ স্বস্তি পেলাম। যাক আজকের দিনটা তো কাটালো।  আর কোনো ক্রমে কালকের দিনটা কাটাতে হবে, কাল সন্ধ্যায় ট্রেন; তারপর আর কি ।

   মৌসুমীকে একটু বুকের কাছে টেনে নিলাম। আমার গরম নিঃশ্বাস তার ঠান্ডা মুখে পড়ছে। এই বেশ ভালো লাগছে।

    বৃষ্টি যখন থামল তখন সকাল দশটা বাজছে। মি. মল্লিকের কাছে যেতেই, মি. মল্লিক আফসোসের সুরে বললেন "সৌরভ বাবু আমরা খুব দুঃখিত ।কিন্তু কি করবো বলুন তো যদি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে --"

      "না না , আপনারা আর কি করবেন। এসব তো তার ই ইচ্ছা! তিনি যদি না চান তো কারুর কিছু করার ক্ষমতা নেই।" প্রসন্ন হাসি হেসে বললাম ।

    বেলা অনেক হল , ভঞ্জের কোন দেখা নেই। অবশেষে দেখলাম দুপুরের খাবারের টেবিলে ।
কেমন যেন শুকনো শুকনো লাগছে মুখটা। শুকনো লাগারই তো কথা। আজ তাদের কেমন সব মতলব বানচাল হয়ে গেল ।

    পরদিন সকাল হতে না হতেই বেরিয়ে পড়লাম বিন্দু জলপ্রপাত দেখার জন্য।

     ভঞ্জ সামনে ড্রাইভারের পাশে বসে। আমি আমার স্ত্রী আর পরিমল মাঝে সিটে বসে আছি ।

     সত্যি বলতে, আজ সকালটা কেমন যেন অন্যরকম লাগছে । পাহাড়ি রাস্তা ভুটানের বর্ডার পৌঁছাতেই বেশ খানিকক্ষণ কেটে গেল। কিন্তু কী অপূর্ব দৃশ্য! তলায় ছোট ছোট বাড়ি, গাছপালা, মাঝে মাঝে পাহাড়ের গা ঢেকে দিয়ে যাচ্ছি কুয়াশার চাদর। তারপর আর আরোও এগিয়ে গেলাম। গাড়িটা যেন পাখির মত মেঘের ভেতর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, অসাধারণ সেই মুহূর্ত।

       একসময় গাড়ি এসে থামল  বিন্দু জলপ্রপাতের সামনে।বিকট আওয়াজ।  গাড়ি থেকে নামতেই  ভঞ্জ বলল -"বাবু আমি পরিমলকে দেখছি আপনারা আসুন। "

    না না ,তা তো দেওয়া চলে না। কায়দা করে সামলাতে হবে। ব্যাটা খুব চালাক। কোলে করে চম্পট দেবার মতলব করছে ।

     তাই একটু হাসি টেনে বললাম" না না ভঞ্জ তুমি কেন। তার চেয়ে এক কাজ করো, এই ক্যামেরাটা নিয়ে আমাদের কয়েকটা ছবি তুলে দেবে?"

     ভঞ্জ একগাল হেসে বললো "বেশ তো  দিন না। আমি এককালীন অনেক ছবি তুলেছি। দিন আমাকে" সাগ্রহে সে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিল ক্যামেরাটা। 

     বেশ চালাক। কেমন হাসিমুখে উত্তর দিতে হয় তাও জানে , আসল কথা হলো অভিনয়। অভিনয় না জানলে ছেলে চুরি করবে কেমন করে ।

     তবে হ্যাঁ কথায় বলে না, বড় কিছু পেতে হলে ছোট কিছু যাক না ; ক্ষতি কী । পরিমল তো আর আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে না ।

    বিকালে ট্রেনের আগেই রওনা দিলাম স্টেশনে। মি.মল্লিকও গেছেন ট্রেনে তুলতে। ভঞ্জের দেখা নেই ,তবে কি এরা শেষ চেষ্টায় আরোও একবার করবে নাকি!

      না , কিছুতেই হয় না। আর কয়েকটা মিনিট সাবধানে থাকতেই হবে আমাকে। সৌরভ বাবু মনে মনে ভাবলেন।

      ট্রেন আসতেই মি. মল্লিক ট্রেনে তুলে দিলেন। জানালার ধারের সিটে সৌরভ বাবু বসে। এখন তিনজনেই বসে আছি একই সিটে ।মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি না তো!।

     ট্রেন ছাড়ার  মুখেই ভঞ্জ এসে বললো" সৌরভ বাবু আপনার ক্যামেরাটা আর ছবিগুলো আমি প্রিন্ট করাতে গিয়ে ছিলাম তাই দেরি হয়ে গেল। "

     আজ ভঞ্জকে বড্ড নিরাশ দেখাচ্ছে। গায়ের জামাটা ভিজে গেছে। চোখদুটো কেমন যেন ভেজা ভেজা ।

    হাতে একটা খাম ও ক্যামেরাটা দিয়ে দিল।

      এবার তাদেরও একটা কিছু দেওয়া দরকার। যাক এই ক্যামেরাটা দিলে  এমন কি আর হবে। আমি ভঞ্জের হাত থেকে শুধু খামটি তুলে নিয়ে বললাম "ভঞ্জ তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো ।তার মূল্য দিয়ে আমি তোমাকে  ছোট করতে চাই না , বরং এই ক্যামেরাটা রেখে দাও। প্রকৃতির সুন্দর সুন্দর ছবি তুলবে।"
         ট্রেন  চলতে শুরু করেছে। মি. মল্লিক ও ভঞ্জ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।
    ট্রেনের গতি এখন বেশ বেড়েছে, তিনজনে কামরায় পাশাপাশি বসে । খামটা খুলতেই দশ-পনেরোটা ছবি বেরিয়ে এলো, সঙ্গে একটা চিঠি।

 প্রিয় বন্ধু,
তুমি হয়তো আমাকে চিনতে পারোনি, আমি তোমাকে ঠিকই চিনেছি ।
আচ্ছা ,তোমার মনে পড়ে আজ থেকে দশ বছর আগে শুকতারা পত্রিকার 'বন্ধুর চিঠির' কথা। তোমার সঙ্গে আমার সেই বন্ধুত্বতা  হয় চিঠির মধ্য দিয়ে। মাঝে দীর্ঘদিনের নানা কারণে  আর যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব পর হয়নি।
   তাই আজ তোমাকে দেখে আমার সংশয় হয়েছিল  আমি সাহস করে কিছু বলতে পারিনি।
       তাই তোমাদের না বলেই ফটোর এক কপি আমার কাছে রেখে দিলাম। 
                                                       ইতি
                                            ভঞ্জন লাল বিহারী 


সৌরভ ভেজা চোখে চিঠিটাকে আঁকড়ে ধরে থাকে।
                                ----@-----







  

      Ode To A Tree
                by S. Sundar Mondal

God loves you by a name, tree
Though you're austere, are you free?
What words you spread far,
Is your air that shakes our hair.
We feel your touch calm and still,
That nothing but only you can ever fill.
Give your molten heart to the cacophony
Won't they break your leaves' symphony?
Your limbs and bloom,
Remain unseen under society's tomb.
Humanity loves to kiss your hand.
Think; It's not love,it's your life-banned.
They love and care anatomically,
As you speak voicelessly .
Mankind's love deep and dark,
Embraces you in a sadistic touch.
No doubt you will turn into parts,
As their love-bite sucks your hearts.
I see to be blacken your reddish lips.
Now, are you going to be asleep?
Pained I think it's not your ruins,
It's the cemetery of humankind on the valley of pains.






                 Hope
                      by Sabir Ahmed

The hope of
                Life and living,likeable love
                       Comes off
               In the bubbles of colored mundane dream,
            Or in the retina of poetry.

            The transitory hope
       Flickers in the heart
To make enlightened
          The wills of grey and yellow heart,
        Like a burning cloth-wick of fictile lamp
       Is put out by the light puff of someone.


                 The hope in the mind like the waves
             Of low tide and high tide
                   Rises and falls
  That hits upon the rough rocks,
    And the pebbles of shore,
Like a woodpecker's beak pecks,
 Again and again on the petto of wood,
  And retreat to the destination.

                        The hope is like a moth
          Wants to reach to the glow of fire,
       Just as a traveller runs to the mirage,
              In the desert by forgetting the expire,
And the riddle of life
That makes the conflict
Between failure success and success failure.

                  To overwant,to overget
           Creates the feelings of further hope,
            That makes our unspeakable desire
                   Suffers us with the pain.

      The hope itself changes frequently Over time,
                  And takes a fragile form,
               Like a taffeta or a chameleon,
       That alters its colour in the fair of colour
                     Where as there is.
               Ah! my hope, ah! my hope.






     অণুগল্প
                      মেসেজ
                             শঙ্কর ভট্টাচার্য

মৈনাক ড্রাইভার কে তাড়া দেয় "ড্রাইভার সাহেব আর একটু জোরে চালান।একটা কুড়ি হয়ে গেল। এখনও মিনিমাম আধ ঘণ্টার পথ।ট্রেনটা মিস করব যে।"
ড্রাইভার নিজের গামছায় মুখটা মুছে নিয়ে আবার স্টিয়ারিং এ মন দেয় ।
পৌলমীর ও একটা চাপা উত্তেজনা হচ্ছে ।ট্রেনটা মিস করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।গাড়ী তে পৌলমীর বাবা ও মা ও রয়েছে ।কিন্তু চুপচাপ।হয়ত ওদের উত্তেজনা ওরা কাউকে বুঝতে দিতে চায় নি।গাড়ী যখন টালা ব্রীজ পেরিয়ে শ্যামবাজারে র মুখে তখনতখন পৌলমীর বাবা বিজয় বাবু মৈনাকের পিঠে হাত দিয়ে বলেন"ভয় পেওনা ঠিক পৌঁছে যাব।আজ ছুটির দিন রাস্তা ফাঁকা ।"
মৈনাক সেটা শুনেও না শোনার ভান করে।আসলে বিয়ে, বৌভাত,অষ্টমঙ্গলা সেরে আজকেই পৌলমী কে নিয়ে তার কর্মস্থল মানে দুবাই ফিরছে।বম্বে থেকে ফ্লাইট পরশু ভোর তিনট কুড়ি তে।ট্রেনটা মিস করলে বড় রকমের গন্ডগোল হয়ে যাবে। সামনের সীট থেকে একবার পিছন ঘুরে পৌলমী কে উদ্দেশ্যে করে বলে "এই জন্যই আমি বলেছিলাম আধঘন্টা আগে বেরোতে ।হাজারটা লোকের সাথে দেখা করে আসতে হবে।" বাকীটা নিজের মনেই বিড় বিড় করে বলে যাতে কেউ শুনতে না পায় ।
ঠিক এই সময় পৌলমীর মোবাইলে একটা মেসেজ ঢোকে।অনিচ্ছা সত্বেও পৌলমী নিজের ফোনটা অন করে দেখে ঋদ্ধি র মেসেজ প্রায় এক মাস পর।আগ্রহ ভরে ও মেসেজটা খোলে।তাতে লেখা "যেখানেই থেক ভাল থেকো।তুমিত জান আমি আশীর্বাদ এ বিশ্বাস করিনা।ভগবান ভাল রাখবেন এতেও আমার কোন বিশ্বাস নেই।এ আমার শুভেচ্ছা বলতে পার।"
           বেশ খানিকটা হতচকিত হয়ে যায় পৌলমী।অভিমান, আবেগ,রাগ,দুঃখ সবকিছু মিলে যেন সে বাক্যহীনা।এখনও ও বলতে পারে 'তুমি ভাল থেক'?কোন উত্তর দেয় না ও।পরমুহূর্তে আবার মেসেজ "শোন,নিজের মেজাজটা একটু কমাতে হবে। আরও বেশী সংযত হতে হবে।সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে।"
এবার আর পৌলমী নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা।খুব দ্রুত লিখে ফেলে "তুমি কোথায় এখন?একমাস ধরে কোথায় ছিলে?কোন ফোন নেই,কোন মেসেজ নেই।যত মেসেজ আমি পাঠিয়েছি তার কোন উত্তর দাওনি।এইভাবে আমাকে যন্ত্রণা দিয়েছ।"লিখতে লিখতে চোখে জল এসে যায় পৌলমীর ।
অনেকক্ষন কোন উত্তর নেই।পৌলমী এবার মেসেজ করে "কি হল কি তোমার?"
অপর প্রান্ত থেকে উত্তর আসে "না"।
পৌলমী "না মানে? তুমি কি কাঁদছ? আমি অনেক দুরে চলে যাব বলে কাঁদছ তুমি?"
গাড়ী হাওড়া ব্রিজ পেরোচ্ছে।হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে।নিশ্চিন্ত মৈনাক, পৌলমীকে উদ্দেশ্য করে বলে "আমি মালগুলো নামাব।তুমি একটু খেয়াল রেখ।একটু অসতর্ক হলেই মাল আর পাওয়া যাবে না।"
যাকে বলা তার কানে কথাটা বোধ হয় গেলই না।আবার মেসেজ করে পৌলমী " বল কোথায় আছ তুমি?"
অপর প্রান্ত নিরুত্তর ।পৌলমী কয়েকবার হ্যালো,হ্যালো লেখবার পর ও প্রান্ত থেকে উত্তর আসে " তোমার ট্রেন এর সময় হয়ে এল,ওদিকে মন দাও "।
সঙ্গে সঙ্গেই পৌলমীর উত্তর " আমি তোমাকে ঠকিয়েছি ঋদ্ধি ।তুমি বাগদত্তা জেনেও শুধু তোমার উদ্দামতা আর উচ্ছলতার প্রেমে পড়ে,পৃথিবীর একমাত্র পুরুষ তোমাকেই ভেবে আমি কষ্ট দিয়েছি তোমায় ।"
এবার একটু কঠিন ভাবেই ঋদ্ধি লেখে " সমস্ত অতীত কে ভুলতে হবে সুন্দরী, শুধু আগামীর কথা ভাব।তোমার সঙ্গের মানুষটাকে আগামী দিনে আরও ভাল রাখতে চেষ্টা কর।"
"আমি অনেক দুরে চলে যাচ্ছি ঋদ্ধি, হয়ত আবার কবে দেখা হবে কে জানে।"খুব দ্রুত লেখে পৌলমী ।
পৌলমীর বাবা,মা ওদের শুভকামনা জানিয়ে বিদায় জানায়।খুব সংক্ষেপে পৌলমী বলে " বাবা,মা তোমরা সাবধানে থেক।"বলেই আবার মোবাইলে দৃষ্টি দেয়।ব্যাপারটা মৈনাকের ও নজর এড়ায় না।ও শ্বশুর শাশুড়ি কে প্রনাম করে সামান্য কটি কথা বলে বিদায় জানিয়ে কুলির সাথে হাঁটতে শুরু করে।পৌলমী ও ওকে অনুসরণ করে।চোখ কিন্তু মোবাইলে । এসি থ্রি টায়ারের কামরাটা খুঁজে নিয়ে গাড়ীতে সব মাল তোলে মৈনাক ।পৌলমী কে সব দেখে নিতে বলে।ঘাড় নেড়ে পৌলমী ভিতরে চলে যায় ।
অনেকক্ষন হয়ে গেল ও প্রান্ত থেকে কোন লেখা আসছে না।অধৈর্য হয়ে ওঠে পৌলমী ।বার কয়েক হ্যালো লিখে ফেলে।তা,ও কোন উত্তর নেই।
মৈনাক মালপত্র গুছিয়ে পৌলমীর পাশে এসে বসে।গাড়ী ছাড়ার সময় হয়ে গেছে।ঠিক সেই সময় ঋদ্ধি র মেসেজ আসে "উইশ ইউ এ গুড জার্নি এন্ড হ্যাপি মেরেড লাইফ।"
সঙ্গে সঙ্গেই পৌলমী প্রত্যুত্তর করে "ঋদ্ধি লাইনে থাক ছেড়োনা।"
মেসেজ টা ফিরে আসে।পৌলমী বোঝে লাইনটা ঋদ্ধি ব্লক করে দিয়েছে।
গীতাঞ্জলি তখন গুটি গুটি পায়ে প্লাটফর্ম ছাড়ছে।




        ছোট গল্প
                 চাষির ছেলে
                         আব্দুল রাহাজ
     

একটা বড় নদী নাম তার ময়ূরী তার একটি ছোট্ট দ্বীপ নামটি তার মায়াদ্বীপ এই দ্বীপে সবাই চাষবাস করে আর কিছু জন্য অন্য কাজ করেন নৌকা চালিয়ে গঞ্জে যায় মানুষ পারাপার করে মাছ ধরে এইভাবে এই দ্বীপের মানুষের দিন চলে দ্বীপ টিতে গাছপালায় চারিদিক থেকে ঢাকা সবুজের আচ্ছাদন সেই দ্বীপকে ঘিরে।দূর থেকে দেখলে মনে হয় একটা ছোট্ট বন প্রকৃতির মায়ের কোলে এক অন্যরূপ নিয়ে অবস্থান করছে‌। গ্রামের ছেলেরা গ্রামের পাঠশালায় খুব ভালোভাবে পড়াশোনা করত চাষের কাজে যোগ দিত কেউ মাছ ধরত নৌকা চালাতো তাদের জীবন কাটে এক অন্যরকম পরিবেশের মধ্য দিয়ে। একটা ছোট্ট পরিবার ছিল মাঠে চাষ করে তাদের দিন চলত একবার সেই চাষের ঘরে জন্মেছিল একটা ছোট্ট ফুটফুটে সন্তান নামটি রেখেছিল দ্বীপময়। বাড়ির কর্তা হারাধন বেশ ভালো মনের মানুষ প্রায় ষাটের কাছাকাছি বয়স একটু লম্বা গায়ের রং কালো কোকড়ানো চুল আর সবাইকে সহযোগিতা করতেন । তিনি ছিলেন সেই গ্রামের একজন ভালো চাষী আস্তে আস্তে দীপের হাওয়া বাতাসে কাদামাটি খেলা দ্বীপময় একটু একটু বড় হয়ে উঠলো গ্রামের পাঠশালায় ভালো পড়াশোনা করত আস্তে আস্তে সব কিছু বুঝতে শিখলো বাবার মতো সবার বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াতে। একবার ঝড়ের রাতে গোপীদের বাড়ির সবাইকে বাঁচিয়েছিল গ্রামের চারিদিকে তার নাম ছড়িয়ে পরলো। এই দ্বীপময় স্কুলে বন্ধুদের সাহায্য করত সবাইকে নিয়ে একসাথে আনন্দে মেতে উঠতো। এবার গ্রামের পাঠশালা শেষের পথে ‌ দ্বীপময় এর গ্রামের পাঠশালার শিক্ষকের প্রচেষ্টায় বৃত্তি পরীক্ষার বসার সুযোগ হয়েছে পরীক্ষা দিয়েছে ভালোই এবার দেখা গেল দ্বীপময় বৃত্তি পরীক্ষায় পাস করেছে সারা গ্রামে আনন্দের খুশির হিমেল বাতাস বইছিল তারপর শহরের পড়ার সুযোগ হলো চাষির ছেলে আজ এই প্রথম দ্বীপের বাইরে পড়বে সবাই বেশ আনন্দিত তারপর দ্বীপময় কে শহরে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা করা হলো । দ্বীপময় শহরে পড়তে গেল এদিকে শহরে যাওয়ার পর দ্বীপময় আস্তে আস্তে সব ক্ষেত্রেই পারদর্শী হয়ে উঠলো। দেখতে দেখতে কয়েকটা বছর কেটে গেল সবরকম দক্ষতা অর্জনে সেসময় সম্মানে পারদর্শী হয়ে উঠলো পাস করল প্রায় আট বছর তাদের এই দ্বীপ ছাড়া ওইসব সরল মানুষের জন্য মনটা যেন কাঁদে বন্ধুরা অধীর আগ্রহে আছে কবে ফিরবে। এবার শহর থেকে ফেরার পালা দীর্ঘ নয় বছর পর তাদের মায়াদ্বীপে ফেরা। ময়ূরী নদীর এপার ঘাটে এসে মাঝিদের সবাইকে প্রণাম ও ভালোবাসা জানিয়ে তাদের নৌকায় উঠে দ্বীপের পথে রওনা দিলেন পাশের নৌকাগুলো তীরের বেগে ছুটে চলেছে দ্বীপময় দাদু ওরা ছুটছে কেন মানুষকে খবর দিতে ছুটছে দূর থেকে মাঝিরা বলল দ্বীপময় আসছে আসছে সবাই আনন্দে ফেটে উঠল মায়াদ্বীপ যেন জেগে উঠলো দ্বীপময় বললেন তোমাদের সবরকম সাহায্য করব আমি ওরা তো খুব খুশি। গ্রামের কয়েকজন যুবককে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে বিভিন্ন দ্রব্যাদি পৌঁছে দিলেন অসুখ হলে চিকিৎসা করতেন গ্রামের সার্বিক উন্নতি করতে লাগলেন আস্তে আস্তে মায়াদ্বীপ প্রকৃতির মায়ের কোলে এক অনন্য পরিবেশের রূপদান করতে লাগলেন। যা সবার কাছে প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত থাকতো। এদিকে দ্বীপের এই সহজ-সরল মানুষগুলোর সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন। দ্বীপময় চ মায়াদ্বীপকে যেন এক অনন্য উপহার দিচ্ছে সবাইকে। উপভোগ করছে তার মায়াবী সৌন্দর্য আকর্ষিত হয়ে মায়াদ্বীপ কে ভালোবাসছে।এই ভাবে দিনের পর দিন বছরের পর বছর দ্বীপময় মায়াদ্বীপ কে রূপকথার দেশে পরিণত করেছিলেন ‌। এই দ্বীপময় সবার মনে মাঝে চাষির ছেলে হিসেবে আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে।






                       তুলনা
                           দীপেশ নাগ

শীতের দিনে পিকনিক খেতে
সবাই ব্যস্ত ভাই,
তাদের কথা ভাবো একবার
যাদের কিছু নাই।

দামী দামী খাওয়ার আর
নানা রকম কাপড়,
তাদের কথা ভাবো একবার
যাদের ছেঁড়া কাপড়।

নানা জায়গায় ঘুরাঘুরি
হরেক রকম খেলনা,
গরিব ছেলে পায়না আদর
সবার কাছে ফেলনা।

বড় বড় দালান বাড়ি
যারা তৈরি করে,
তাদের দেখলে ঘৃণা করে
বড়লোকের ছেলে।






               মোদের দেশ
                             আব্দুল রহিম

মোদের দেশের মাটি মোদের প্রাণ
মোরা দেশ মাতার গায় জয়গান
মোরা নয় হিন্দু নয় মুসলমান।।

মোদের এ দেশের মাটি বড়ই খাঁটি
মোদের জাতি ধর্ম নয় হাজারটি
প্রাধান্য দিই মানব ধর্মটি।।

মোরা সবে কাঁধে কাঁধ রেখে চলি
সাজাই না কেউ মিথ‍্যার রংতুলি
মোরা সর্বদা সত‍্যের কথা বলি।।

এ মাটিতে শত শত বীরের জন্ম
এ দেশে নেই কোনো বর্ণ বৈষম্য
মোরা বহু গর্ব করি এই জন‍্য।।

এ দেশ মোদের'কে বাঁচতে শেখাই
এ দেশ মোদের'কে হাসতে শেখাই
এ দেশ মোদের'কে স্বপ্ন দেখাই।।

কিন্তু আজ দেশ মায়ের অসুখ
বুকে জমে বালুচরের বহু দুখ
চাপাপড়া কথাগুলো এবার জাগুক।।

আজ দেশে চলে সভ‍্য'র মাপকাঠি
বাবার পিঠে পড়ে আজ ছেলের লাঠি
বদলে গেছে স্মৃতির সেই পাতাটি।।






                       " ব‍্যথা "
         
                হামিদুল ইসলাম
                   
____________________________________
পতিতার ভ্রূণে জন্ম তার
জীবনের উচ্চাশা যা ছিলো মাটিতে মেশে
জীবন তীর্থের কাক
ঘরের ভেতর প্রাণ তবু হেলায় ভাসে অবশেষে ।।

তোমার প্রাণের মায়ায় প্রতিদিন খুঁজি
একতাল আকাশ
কতো প্রাণ এলো আর কতো প্রাণ গেলো
হিসেবের খাতায় বেমিলের তথাগত আশ্বাস ।।

মনের জোরে কলম ভাঙি
পতিতার নাম করি খণ্ডন
জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক প্রশংসনীয়
হাজার কবিতায় তার অজস্র মানব বন্ধন ।।

ফিরে আসি ইছেপুর শালগঙ্গা বকখালি
মনের মানুষ আসে না আর
জীবনকে ভেঙে দেখি প্রতিদিন
জীবনের মাঝে নেই জীবন আমার 
    ।।

জীবনের গান গাই
ইতিহাস হোক ইতিহাস
বন্ধুরা ছেড়ে যায় আস্তানা সব ফাঁকা
সত‍্য শীব সুন্দর, সুন্দর সত‍্যপীর সবার মনে একই ব‍্যথা ।।
___________________________________








          জীবনপাত্র পূর্ণ
                      মৌসুমী গুহ রায়

জীবন যাপনের ক্লান্তি বোধহয় একটা থাকে।
পড়ন্ত বেলায় আশা জাগানো জীবন হয় না।
অথচ মানুষ তাই চায়।
চায় আলো, আনন্দ, জীবনী শক্তি।
সত‍্যি কথা বলতে কী সেসব আর তেমন পাওয়া যায় না।
দৈবাৎ দু'একদিন হাসি মাখা সূর্য ওঠে।
জীবন যাপনে একটা ক্লেশ থেকেই যায়।
মানুষ জোর করে আনন্দে থাকতে চায়।
আমি জোর করি না। জীবন যেভাবে আমাকে অনুভূতি দেয় আমি তা দু'হাত ভরে গ্রহন করি।
যন্ত্রনা, বিষণ্ণতা, ধোঁয়াশা ও আনন্দ সব‌ই পেয়েছি আমি।
আমার জীবন পাত্র পূর্ণ ।
       






         জুঁইফুল , না সাদা ভাত
                    সৌম্য ঘোষ
           


জুঁই ফুলের উপমা কবির অপরিহার্য বিষয় ,
স্বর্ণচাঁপার সুবাস বা নীল নীলিমায় শাদা
বকেদের সারি ,
এসব নিয়ে হয়তো বেশ একটা কবিতা
লেখা যায় ,
কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের অনাহারক্লিষ্ট শিশুর
কাছে জুঁইফুলের সুঘ্রাণ থেকেও
সাদা ভাত ই অপরিহার্য ।


নগ্ন শিশুর ধুলোমাখা গালে চুমু খেয়ে
আমার কবিতা এগিয়ে চলেছে
শস্যহীন মাঠে অনাহারী কিষানের সাথে
জরুরী আলোচনা করার জন্য ।

কবিতার লিপিগুলি সঙ্গতভাবে লাল ,
না অন্য কোন রং
সে বিষয় নিয়ে ভাবি না


কতবার বললে ,তুমি বুঝবে


জুঁই ফুলের চেয়ে সাদা ভাত ই অপরিহার্য ।।






       শ্বাপদের আস্তানা
                          ইউসুফ মোল্লা

দু-পাশে লোভে চকচক করছে হিংস্র সব চোখ
তাই আতঙ্কে বুক কাঁপছে আজকের তরুণীদের
আর হঠাৎ হঠাৎ চমকে উঠছে তারা ঘুমের মাঝে
কারণ, শ্বাপদের আস্তানা তো নিজের ঘরেই।
#

পোস্টার প্যাকার্ড- 'গণধর্ষণ-খুনের বিচার চাই। '
কিন্তু বিচার করবে কারা? - স্বার্থগোষ্ঠীর সদস্যরা!
অথচ দেখেছো প্রতিবাদে পা মেলালো সমস্ত মানুষেরা
কোনো কিছু বদলায় না- পশ্চিমবঙ্গ আছে পশ্চিমবঙ্গতেই।





20 জুলাই সংখ্যা, সোমবারের পাতা 





      Hulla baloo
                 Siddhartha Singha

Come, let us start a hullabaloo

Everyday has become drunken by their true snd swaying
Taking the change everybody is decorating interior of their house as they can
Setting the hands of clock in any body's room

Come, let us start a hullabaloo

at least for once the drunkards may stop their swaying and look-out.





                    কোজাগরী
                             রঞ্জনা রায়


 আকাশে মোহিনী কোজাগরী চাঁদ   
জ্যোৎস্নার  দুধ সাদা উড়ন্ত আঁচল 
 তিমির নিশুতি মৌন নীরবতায়
 আশ্রয় খোঁজে  আকাশগঙ্গায়।


 পদ্মলক্ষ্মীর  পদ্মচিহ্ন বুকে নিয়ে
 ধান শুকানো পৌষালী উঠোন যেন
 জীবনের পূর্ণস্নাত নিভৃত  আঁধার।

 জন্ম থেকে মৃত্যু কিংবা
 মৃত্যু থেকে জন্মের দিকে
 জোয়ার ভাটার নিরন্তর স্রোতে
 একটি পূর্ণচ্ছেদ অতি স্বাভাবিক।

 কোজাগরীর অপেক্ষায় বছর কাটে
 জীবন কাটাতে হয় অসীমের সন্ধানে
 শুক্লা প্রতিপদের একক   অন্ধকারে।





প্রাথমিকে ব্যাকরণে লিঙ্গ অধ্যায় বাদ দেওয়া উচিত ?
(চতুর্থ পর্ব)
             রাজা দেবরায়

এগুলো বলা হয় বা পড়ানো হয় বলেই কি ছোটবয়স থেকেই "আমি ছেলে মানে আমার শক্তি বেশি" অথবা "আমি মেয়ে মানে আমি ছেলেদের থেকে দুর্বল" এই চিন্তাভাবনা চলে আসে ? এই চিন্তাভাবনাকে কি আমরাই জেনে বা অজান্তে তাদের মাথায় একদম ছোট বয়স থেকেই ঢুকিয়ে দিচ্ছি ?

আর যদি এগুলো ঠিক নয় বলে মনে করি, তবে কি বিদ্যালয়ে 'লিঙ্গ'ভেদে আলাদা আলাদা পোশাক ও 'লিঙ্গ' অধ্যায় বা 'লিঙ্গ পরিবর্তন' উঠিয়ে দেওয়া উচিত ?

৪) ব্যাকরণে শিশু হলো উভলিঙ্গ বা উভয়লিঙ্গ । অর্থাৎ যার দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কেই বোঝায় । অথচ শিক্ষক, ডাক্তার, ছাত্র ইত্যাদি আবার পুংলিঙ্গ !

এখন প্রশ্ন হলো শিশু কেনো উভলিঙ্গ বা উভয়লিঙ্গ ? শিশুকেও তো 'ছেলে শিশু' বা 'মেয়ে শিশু' বলা যেতে পারে । উত্তরে হয়তো বলা হবে শিশুকে একশব্দে লিঙ্গ পরিবর্তন করা যায় না, তাই শিশু উভলিঙ্গ বা উভয়লিঙ্গ । উদাহরণ হিসেবে বলা হতে 'কবি' । 'কবিনী' তো আর হয় না ! আচ্ছা বেশ তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম যে এই কারণে শিশু হলো উভলিঙ্গ বা উভয়লিঙ্গ ।

(চলবে)








                 দলায় প্রভু
                         বিপ্লব গোস্বামী

মানবের তরে মহান প্রভু
করেছো কেবল দান,
আকাশ,বাতাস,গ্ৰহ,তারা
চাঁদ,নদীর কলতান।

বাঁচিবার তরে দিয়েছো বাযু
তৃষ্ণা মিটাতে জল,
ক্ষুধা মিটাতে দিয়েছো অন্ন
শাক,সবজি ,ফল।

আঁধার নাশিতে দিয়েছো রবি
জোছনা ছড়াতে চাঁদ,
নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছো প্রভু
দিয়েছো গগন চাঁদ।

না চাইতে দিয়েছো সবই
হে দয়াল মহান,
যা পেয়েছি যা দেখেছি
সবই তব দান।





লিমেরিক//শংকর হালদার

লিমেরিক ০১ 

পুবের কোলে সূয্যি জেগে পশ্চিমে যায় ঢলে
আকাশ তারার বাজার বসে আঁধার ঘনিয়ে এলে ।
জলদ ভেলা ডিঙি বেয়ে
ঘুরে বেড়ায় গান গেয়ে, 
বাজার মাঝে থাকে বসে শশী আলো জ্বেলে ।





ধারাবাহিক আত্মকথা 

          অরিজিতের ডাইরি
                        -: অরিজিৎ কুমার রায়


"সে তাকে ভুলতে পারলো না। কারণ, হয়তো সে তাকে খুব করে ভুলতে চেয়েছিল তাই"

কাউকে ভুলে যাওয়াটা কিন্তু কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। খুব সহজেই যে কাউকে বা যেকোনো বিষয়কে ভুলে যাওয়া যায়। তা সেই মানুষটি বা বিষয়টি আপনার যত প্রিয়ই হোক না কেন। আজকাল একটা কথা খুবই শুনতে পাওয়া যায়, 'আমি তাকে এত করে ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারলাম না'।
এটা ধ্রুব সত্য, যাকে আমরা ভুলতে চাই তাকে আমরা খুব সহজে ভুলতে পারিনা। তার কারণ হলো আমরা তাকে ভুলতে চাই তাই তাকে ভুলতে পারি না।
ঠিক বুঝতে পারলেন না তো। ঠিক আছে আমি বুঝিয়ে বলছি । আমরা তখনই কোনো বিষয়কে বা কাউকে ভুলে যাই যখন উক্ত বিষয়টিকে বা উক্ত ব্যক্তিকে নিয়ে দীর্ঘদিন আমাদের মনের মধ্যে কোনো চর্চা হয়না। অর্থাৎ যে বিষয়কে বা ব্যক্তিকে নিয়ে দীর্ঘদিন আমাদের জীবনে কোনো অ্যাক্টিভিটি থাকেনা।
কিন্তু আপনি যদি কোন বিষয়কে বা কাউকে ভুলতে চান তবে আপনার মনের মধ্যে সেই বিষয়টিকে নিয়ে বা সেই ব্যক্তিকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে। অর্থাৎ আপনি যতবার কোন বিষয়কে বা ব্যক্তিকে ভোলার চেষ্টা করছেন ততবার সেই ব্যক্তির কথা বা বিষয়টির কথা আপনার মনে হচ্ছে। সুতরাং আপনি যাকে বা যেই বিষয়টিকে ততবেশি করে ভুলতে চাইবেন তার অস্তিত্ব ততবেশি করে আপনার হৃদয়ে গেঁথে যাবে। সেহেতু আপনি সারা জীবন আফসোসই করে যাবেন কিন্তু কখনোই ওই ব্যক্তিকে বা ওই বিষয়টিকে ভুলতে পারবেন না। অর্থাৎ আপনি যদি কোন বিষয়কে বা কোন ব্যক্তিকে ভুলতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে উক্ত বিষয় বা উক্ত ব্যক্তিকে ভোলার চেষ্টা ছাড়তে হবে।
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না, জীবন নদীর স্রোতে সময় আমাদের সব কিছুই ভুলিয়ে দেয়। তাই আপনি সঠিক সময়ে অপেক্ষা করুন। তবেই আপনি সব কিছুই ভুলতে পারবেন। আর যদি তার মাঝে আপনার ধৈর্যচ্যুত ঘটে, আর আপনি ভুল করেও সেই বিষয়কে ভুলতে চান তবে সেই বিষয়টি আরও বেশ কিছুদিন আপনার মনের মধ্যে  বসবাস করার ছাড়পত্র পেয়ে যায়। 
স্বয়ং বিচার করুন

                            চলবে...... 






ল্যাম্পপোস্ট
সৌরভ পুরকাইত

রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট  আজ
দাঁড়িয়ে কাঁদছে
আমি তা শুনছি।
গুঁড়ি গুঁড়ি জলের মতন
 যে বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে
তা শিশির নয়
আমি জানি।
যে শ্বেতাভ জ্বেলে ওকে
সারারাত  জেগে থাকতে হয়
তার পিছনে এত অন্ধকার!
লাইব্রেরী রুমে তার ইতিহাস লেখা আছে।
কিন্তু বেদনার ইতিহাস?
দিনের বেলায় সূর্য যখন
আলো জ্বালাবার  ভার নেয়
তখনো তাকে কেউ বলে না -'তোমার ছুটি'।
শীতে কিংবা গ্রীষ্মে 
উৎসবে বা ভূমিকম্পে
সবাই তোমার আলো দেখে
পথ পার হয়ে যায়
অথচ 
তোমার জীবনের আলো
কোনদিন  জ্বলল কি?
তোমার স্থিরতা
 হিমালয়কে হার মানায়
তোমার ধীরতা
গাছেরাও টের পায়
তোমার সহিষ্ণুতা
ধরিত্রী মা জানিয়ে যায়
ঈশ্বরচন্দ্র হইতে
বিদ্যাসাগর  হয়ে ওঠা
সে তো তোমারই আলোর দান








গোধূলি 
        মৌসুমী গুহ রায় 

আজ বিকেলে বৃষ্টি হয়েছিল।
বুঝিনি। যখন বুঝলাম, দেখলাম বর্ষনক্ষান্ত আকাশ।
হঠাৎ আকাশে চোখ গেল। পশ্চিমাকাশে।
ঈশ্বর এক অপূর্ব চিত্র এঁকেছেন।
আকাশে ছাই রঙা মেঘ ও কমলা রঙা মেঘের মেশামেশি।
কী অপূর্ব এই আকাশের চিত্র।
কী সুন্দর এই গোধূলি।
আমি তাকিয়েই থাকলাম, তাকিয়েই থাকলাম, যতক্ষন না আকাশে অন্ধকার নেমে আসে।
আমি চেতনার গভীরে নিমজ্জিত হলাম।
এই পৃথিবীতে এত হানাহানি, মারামারি, অশান্তি,
মানুষের মনে হিংসা, কুটিলতা, জটিলতা।
তবু আকাশে এখনো এমন অপূর্ব গোধূলি দেখা যায়।
ঈশ্বর এমন চিত্র আঁকেন আকাশে।
এমন শান্তির দৃশ‍্য‌ই যেন দেখি হে ঈশ্বর।
                        





কবিতা : একটা তুলি দাও! 
বিশ্বজিৎ কর। 

চলো আকাশপথে -
এ বাতাস বিষাক্ত, এ বাতাস রক্তাক্ত! 
বাতাবরণে ভালবাসার আর্তনাদ! 
লেনদেনের বিভৎস হাসি, 
আখের গোছানোর সমঝোতা সূত্র !
সব শব্দের চিতার আগুনে কবিতা জ্বলছে..... 
বোঝাপড়ার বিকিকিনির হাটে "কলম" সস্তা সওদা! 
আমাকে একটা তুলি দাও -
প্রতিবাদের লেলিহান শিখা আঁকব!





কালের রাখাল
মহীতোষ গায়েন

তোমাকে ছেড়েই দিলাম,মুক্তি দিলাম...
তুমি ভেসে যাও বাঁধভাঙা স্রোতের মতন,
কাল্পনিক সংলাপ আর কতকাল বন্ধনে
আবদ্ধ রাখবে সমাজ সত্যের অঙ্গীকার?

তোমার দু:খ,অস্থিরতা যদি কখনো
শান্তি খুঁজে পায়,যদি কোন অবলম্বন
তোমাকে আঁকড়ে ধরে স্বর্ণলতার মত;
তোমার মধুমাসে আমি অন্তরায় হব না।

পৃথিবীর বয়স বাড়ে,বয়স বাড়ে মনের-
দিকভ্রান্ত মেষপালকের মত আমি
ঢুকে পড়েছিলাম কালের নিয়মে,আমি
দলছুট,আমি অভিশপ্ত কালের রাখাল।

অদ্ভুত সময় এখন,সময় খেলছে বৃন্ত প্রেম-
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষাক্ত বাতাসের সমারোহ,
স্রোত ঢুকে খেলা ভাঙছে,খেলা ভাঙার
খেলায় মানুষ কেমন ভীষণ মেতে উঠেছে।

বন্ধন ছিঁড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলেই কি পারা যায়?
পারা যায় সাদা পায়রার মত ডানা মেলে নীল
আকাশে মিশে যেতে?মন উড়ে যায় চেনা জগৎ
ছেড়ে অচেনা জগতে;আমি কালের রাখাল।

বন্ধন ক্রমশ আলগা হচ্ছে,আলগা হচ্ছে মূল্যবোধ-
সমস্যার শরশয‍্যায় শায়িত আমাদের বিবেক,
চরাচরে ভয়ংকর অস্থিরতা,দুর্যোগের ঘনঘটা...
তবুও গাছে ফোটে বাহারি ফুল,পাখি গায় গান।

মনমাঝি তার বৈঠা নিয়ে উত্তাল নদীতে খেয়া বায়-
উদ্ভ্রান্ত পথিক বিষাদ সুরে বাঁশি বাজায় ক্লান্তিহীন-
বাঁশির সুর ছড়িয়ে যায় গ্রাম থেকে শহর-অলিন্দে,
বন্ধন ছিন্ন হয় আর এক আরম্ভের প্রত‍্যাশায়।

আমি যে কালের রাখাল,বন্ধন কি আমায় বাঁধতে
পারে?আমি ছিন্ন পৃথিবীর এক অবিনশ্বর সৃষ্টি;
বন্ধন আমায় মুক্তি দিল,আমি অনাদি অনন্ত
মুক্তি দিলাম তোমাকে,আমি যে কালের রাখাল।





 রাস্তার একটি কুকুর
            বিমান প্রামানিক 

গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় কতই যে প্রাণী ঘুরাঘুরি করে 
কাক,চড়ুই, বিড়াল,কুকুর সবই যেন ঘোরে। 
সবাই ঘোরে এক টুকরো খাবারের খোঁজে, 
বেচারির বড্ড কষ্ট দেখে আমার ভীষণ অবাক লাগে।
সমানে একটু খাবার ও পাই না ভালো করে, 
যদিও বা একটুখানি পাই কোনো বাড়ির পাশের আস্তাকুড়ে। 
সেখানে আবার ভীষণ চিৎকার আর কারাকারি ,
এত শুধু আজকেই নয়, প্রতিদিনের মারামারি। 
কখনও আবার একটি বাড়িতে গিয়েও একটু বসে,
যদিও বা পাই খাবারের একটু টুকরো শেষে। 
কোনো দিনতো এক্কেবারে অনাহারে তার কাটে,
পাড়ার লোকের কারও মায়া থাকেও না তাতে। 
হয়তো তারা ভাবে, রাস্তার কুকুর, কিচ্ছুটি দেব না।  
বেচারার কষ্টের কথা গুলো প্রাসাদের কেউ বোঝে না। 
সারা সারারাত পাড়ার চৌকিদার হয়ে পথেই ঘুমাই। 
আর আমরা? পাড়ার সবাই শান্তিতে নিদ্রা যায়। 
দরজা সেঁটে,কুলুপ এঁটে এক্কেবারে নিজের দেশে,
তাদের ভয়ে নিশ্চুপ সব,সারা পাড়ায় শান্তি আসে।







*উপকন্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ*
            *অণুগল্প*
১.*অবসান*
          ---টুম্পা মুখার্জী


গেটের সাথে যুক্ত বহু পুরোনো লেটার বক্সটা ভেঙে  সরিয়ে ফেলতে ফেলতে বিরক্তিতে রণিত মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,"যত্তসব আবর্জনা!"

 বিমলা দেবীর মনে হলো আজ এত বছর পর তিনি সত্যিই বিধবা হলেন। সেই বিয়ে হওয়ার পর থেকে আটষট্টি সালে ভারত চীন যুদ্ধে নিখোঁজ হওয়ার আগে পর্যন্ত তার উদ্দেশ্যে লেখা স্বামী সুবেদার রণজিৎ রায়ের কত  চিঠি এই লেটার বক্সেই এসে জমা হতো। এমনকি স্বামীর নিখোঁজের সংবাদও এই লেটার বক্সেই পেয়েছিলেন সদ‍্য সন্তানের মা হওয়া বিমলা দেবী। তারপর বাহান্ন বছর ধরে স্বামীর ফিরে আসার সংবাদের আশায় প্রতিদিন একবার করে লেটার বক্সটা হাতিয়ে যান তিনি। আঁচলের লাল পাড় দিয়ে সিঁথির সিঁদুর মুছতে মুছতে বিমলা দেবী ধরা গলায় বিড়বিড় করে বললেন, 
"আজ আমার সকল প্রতীক্ষার অবসান হলো।"
                    -----------
২. *হৃদয়ের উষ্ণতা*

 সকাল থেকেই মনটা খারাপ ল‍্যান্স নায়েক চন্দ্রমাধব মুখার্জীর। একমাত্র ছেলেকে প্রমিস করেছিলেন এবার তার দশ বছরের জন্মদিনে তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবেন। কিন্তু লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় তার ছুটি বাতিল হয়ে যায়। 

হঠাৎ ঝটপট আওয়াজ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কারা যেন চন্দ্রমাধব মুখার্জীর চোখ হাত বেঁধে তাবুর বাইরে নিয়ে যাচ্ছে.... বুঝলেন তার অসতর্ক হওয়াটা উচিত হয়নি। শেষ বারের মতো ছেলের মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। 
             
চারদিকে অসীম নিস্তব্ধতা।কেবল হাওয়ার শব্দ। কে যেন তার হাত খুলে দেয়, তারপর চোখ খুলতেই দেখেন বড় একটা চকলেট কেক সাজানো সামনে , আর তার সহকর্মীরা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো। মেজর সাব তার হাতে ছুরি দিয়ে বলেন, "লে লে জলদি সে কেক কাটলে। আজ এক পিতা কা ভি জনম্ দিন হ‍্যায়।" সহকর্মীদের কোরাসে হ‍্যাপি বার্থডে গাওয়া আর করতালির মধ্যে অশ্রুপ্লাবিত চোখে আর মুখে হাসি নিয়ে কেক কাটতে থাকে চন্দ্রমাধব। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন জাতি আর বিভিন্ন ভাষাভাষীর প্রতিনিধি জওয়ানদের হৃদয়ের উষ্ণতায় আজ আর্মি ক‍্যাম্পটি আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে।
               --------
😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁😁


© সেক আসাদ আহমেদ
      সম্পাদক ,  উপকণ্ঠ







২টি মন্তব্য:

  1. আমার আন্তরিক ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।।
    তাছাড়া সমস্ত কবি বন্ধুদের কবিতা অসাধারণ।।।
    সবার জন‍্যে একরাশ শুভ কামনা

    উত্তরমুছুন
  2. সুন্দর মতামতের মাধ্যমে সবাইকে উদবুদ্ধ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ🙏💕🙏💕🙏💕

    উত্তরমুছুন