"উপকণ্ঠ 27 জুলাই সংখ্যা "
"উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-27/07/2020, সোমবার
সময় :- বিকাল 4 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে
Click Here
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে
Click Here
🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼
হতাশার শারদ উৎসব ২০২০
আব্দুল রাহাজ
দীর্ঘ এক বছর পর বাঙালির সামনে আবার আসতে চলেছে শারদ উৎসব বা দুর্গাপূজা কিন্তু করোনার আবহে সে উৎসব কোথাও যেন বাঙালির কাছে আনন্দটা কিছুটা হলেও হতাশার আক্ষেপের। সর্ব ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালি যে দুর্গাপূজা তার এবার সেইভাবে চোখে পড়বে না সূর্যের নিস্তেজ আলোর মত বাঙালির এই বড় উৎসব নদীর ভাটার মতো মিশে যাবে। এবছর মানুষের যে চাঁদের হাট আনন্দের যে ঘনঘটা পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় শহরে শহরে দুর্গা মাকে ঘিরে যে ভিড় তার থাকবে না কোথাও যেন চারিদিকে গুটিকয়েক মানুষের সমাহারে এক হতাশাময় পরিবেশ নিয়ে এবারের শারদ উৎসব উপস্থাপিত হবে বাঙালি সামনে। ও পাড়ার রহিম করিমরা আর আসবে নাকোথাও যেন সম্প্রীতির মেলবন্ধন পারস্পারিক আদান-প্রদান আর হবেনা এখানেও যেন এ বছর আক্ষেপ কোথায় থাকবে। যে আলোর ঝঞ্ঝার রশ্মিতে চারিদিকে বৈচিত্র্যে ভরা দিচ্ছে এক অন্যরকম পরিবেশ নিয়ে শারদ উৎসব এর সংজ্ঞা মেতে উঠতো অনন্য রূপে শারদ উৎসবে সন্ধ্যা মেতে উঠতো অনন্য রূপে এবছর শারদ উৎসবে আলোর রশ্মি থাকলেও মানুষের যে ভিড় তা আর চোখে পড়বে না জমজমাট যে কোলাহল আনন্দের পরিবেশ তার থাকবেনা বিভিন্ন খাবারের দোকান দেওয়া মানুষগুলো হতাশ হয়ে থাকবে এক অন্যরকম পরিবেশ নিয়ে শারদ উৎসব বাঙালির চোখের সামনে হতাশ রূপে উপস্থাপিত হবে। বাঙালির বড় উৎসব দুর্গাপূজা তার যে সংজ্ঞা বৈশিষ্ট্য বিগত বছরের আনন্দে রচনায় সম্প্রীতি আবেগ যে মেলবন্ধন ফুটে উঠত তার থাকবে না সবি হতাশাজনক হয়ে গড়ে উঠবে। কাশফুল গুলো যেন এবার মনমরা হয়ে উঠবে খোলামেলা শরৎ এর আকাশ কোথাও যেন হতাশায় ভুগবেন।শারদ উৎসবের মেলা ঘুরতে ঘুরতে বাড়ি ফেরার পথে জিলাপি খেতে খেতে বাবার কাঁধে চড়ে রাতের বেলা কাশ বনের মধ্য দিয়ে বাড়ি আসা এবার হয়তো বাঙালির ছেলে মেয়েরা আর সেইসব পাবেনা। সব মিলিয়ে বছর ঘুরে আসা এই শারদ উৎসবের আনন্দ সম্প্রীতি বার্তা যে আনন্দ তা যেন এবছর আর চোখে পড়বে না করোনার আকালে শারদ উৎসব বাঙালির কাছে বাতাস আক্ষেপ হয়ে থাকবে।
মানবী ঘর
রঞ্জনা রায়
নিজস্ব কোরকের স্নিগ্ধ আভায়
মন থেকে চেয়েছি যাদের সজ্জিত করে, সুন্দর করে
আমাকে তারাই ছেড়ে যায়
হৃদয়কে নির্বাসিত করে, নিরুদ্দেশে।
বেঁধে নেব আমার একক মানবী ঘর
রতিময় বিশ্বে রতিহীন সম্ভোগ আশায়।
অণু কবিতা
আমার স্বপ্ন
কনিকা রায়
কতদিন দেখিনি তোমায়!
কত রাত ভেবেছি তোমায়!!
কত পথ চলেছি একাএকা!
তবুও তোমার পায়নি যে দেখা!!
তুমি মোর স্বপ্নে জাগরণে
রয়েছো অন্তরে!
একবার যদি পায় তোমার দর্শন !!
এক মূহুর্তের লাগি আমি করিবো আলিঙ্গন!
ওগো মোর প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘা!!
বিভাগ : কবিতা
সাদা কালো রঙ্গীন
কবিরুল
তুমি একা কাঁদো বারান্দায়
শুনি কার প্রতীক্ষায়
বেলা যে যায় যায়।
একটু পরে নামবে আধাঁর
হবে ফিকে লোক ,বাজার
জমবে আসর মশার।
অফিস থেকে ফিরে
বাস ট্রেনের ভিড়ে
অবশেষে তোমার প্রেমঘন নীরে।
তোমার ক্লান্ত শরীর
পাবে আদর নিবিড়
যখন রাত গভীর।
আসবে নতুন ভোর
কাটবে ঘুমের ঘোর
আবার খুলবে কাজের দোর।
আবার তুমি একা
আমার অপেক্ষায় থাকা
দিনের শেষে তোমার নামটি ধরে ডাকা।
এভাবেই দুজনের একটা দিন
কালো সাদা রঙ্গীন
নিজেকে ভাঙ্গে প্রতিদিন।
তোমার জন্য
বিমান প্রামানিক
ও প্রিয়তমা সুখে থেকো তবে
তোমার সাথে কবে দেখা হবে?
জানি তুমি ভালো আছো
আমায় কি মনে রেখেছো?
বেসেছি ভালো, বাসবো ভালো
জীবনে তুমি এগিয়ে চলো।
তোমার সুখেই সুখী আমি
তোমার কথা ভাবছি আমি।
আজ তুমি অন্যের ঘরণী
অনেক শান্তি তোমার জানি।
জীবন যেন বড়োই কঠিন
পুরনো স্মৃতি তবুও নবীন।
স্মৃতি গুলো ফিরে আসে
কেবল তুমি নেই পাশে।
ছোট্ট ছোট্ট ছিল কত আশা
তাই তো এখনও ভালোবাসা।
জীবনের প্রতিটি ক্ষণে তুমি
তাই আজও তোমায় ভুলিনি।
আবাহনী
মৈত্রেয়ী ঘোষ
প্রকৃতি আজ তোমার আবার পরীক্ষা এই বিশ্বকূলে
সেই আদিকালে অসুরদলনী রূপে আবির্ভূতা হয়েছিলে।
শরতের সেই পুণ্য তিথিতে অকালবোধনের স্বরে
মহিষাসুরের বিনাশ করেছিলে ধরিত্রী রক্ষার তরে।
আকাশ বাতাস সেদিন ছিল আগমনী গানে মুখরিত,
আজ আবার বহু শতাব্দী পর অশুভ শক্তিরা আগত।
কখনো দাবানল রূপে , তো কখনো রূপ মহামারী
কখনো অতি বৃষ্টি আর ঝড়ের তান্ডবে
মানুষ হারায় ভিটে-মাটি-বাড়ি।
মানব সভ্যতা আজ অস্তাচলে, চারিধারে প্রাণ সংশয়
রুদ্ধশ্বাসে প্রহর গুনছে মানুষ বুকে নিয়ে মৃত্যুভয়,
চারিদিকে শুধু মৃত্যু-মিছিল, দু'মুঠো অন্নের হাহাকার,
সন্তানেরা তোমার এত অসহায়,তবু তুমি নির্বিকার?
আসছে মাগো আবার শরৎ,মোরা সকলে অপেক্ষমান,
তোমার আগমনে সাজুক ধরা হোক অশুভ শক্তির অবসান।।
এক পশলা বৃষ্টি
অলোক রায়
কখনো তুমি বিরহী হয়ে অঝোরে ঝড়ো,
কখনো ঝিরিঝিরি ভাবে বাতাসে ভেসে পড়ো।
এক পশলা বৃষ্টি কোথায় তোমার সৃষ্টি,
তুমি তো আকাশের কান্না বড়োই মিষ্টি।
হাসো তুমি রোদেলা দুপুরে সূর্যের পরশে,
ঝড়ে পড়ো মাটিতে ছুঁয়ে দিয়ে বাতাসে।
আহা! কী আর বলবো তোমায়,
হিমেল হাওয়ায় ভেসে যে
থাকো তুমিই রোমান্সের সূচনায়।
আবার কখনো তুমিই হও বারি রূপে কালবৈশাখী,
তখন তোমায় অন্য রূপে দেখি।
তোমাতেই হয় যৌবনের পাগলামি আর প্রেমের প্রকাশ,
কখনো তোমার অবাক আগমনে মেতে ওঠে মনাকাশ।
তুমি হলে যুগলদের প্রথম পছন্দে,
তোমার মায়াবী শীতলতায়
ওরা যে গা ভেজায় স্বাচ্ছন্দ্যে।
তুমি এক পশলা বৃষ্টি,
তোমাতেই আদিমতার সৃষ্টি।
শতবর্ষের আলোকে কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
সৌম্য ঘোষ
১৯২০-র ২রা সেপ্টেম্বর ঢাকার বিক্রমপুর তার জন্ম । আজীবন সুন্দর সমাজ গঠনের স্বপ্নকে অবলম্বন করেই তাঁর কাব্য সৃজন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "গ্রহচ্যুত" তাকে কবি পরিচিতি না দিলেও "রানুর জন্য" কাব্যগ্রন্থে পেয়েছেন স্বীকৃতি । আজীবন আধুনিক বাংলা কবিতায় তিনি যে কত প্রাসঙ্গিক , আজও তা তাঁর কবিতা পড়লেই জানা যায় । পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৮২) ।
তাঁর সমস্ত উচ্চারণ ,শব্দ গুলির জন্ম যেন উঁচু ঘাড় , ফোলানোর শিরা আর উঁচু পর্দা থেকে ; কিন্তু তা বিশুদ্ধ কাব্য গুনে পুষ্ট । সমস্ত অসাম্যের বিরুদ্ধে, সমস্ত লাঞ্ছনার বিপরীতে তাঁর প্রচন্ড রণহুঙ্কার ধ্বনিত হয় ।দেশভাগ ,পার্টি ভাগ ,খাদ্য আন্দোলন থেকে শুরু করে নকশালবাড়ি আন্দোলন , জরুরি অবস্থা ,বন্দি মুক্তি আন্দোলন-------- তাঁর লড়াই-সংগ্রাম । পাশাপাশি মধ্যবিত্ত মন-মেজাজ মানসিকতাকে চাবকে শাসনের পর বিধ্বস্ত তাঁর হৃদয় থেকে উৎসারিত রক্তমাখা শব্দ , একটি নির্মল প্রেমের কবিতা ।
তাঁর ঝোলার ভেতর থাকতো কবিতার বই। মন্ত্রের মতো সব শব্দলিপি । দরজায় দরজায়, মেলায়, গ্রামে ঘুরে ঘুরে নিজের বই বিক্রি করেছেন। একটানা ত্রিশ বছর ।বইমেলাতেও দেখা যেত , নিজের বই বিক্রি করছেন। ভালোবাসতেন বিড়ি, সিগারেট ,চা। প্রিয় খাদ্য মুড়ি। ঢাকাই টানে বাঙাল ভাষায় কথা বলতেন। কবিতা মাথায় এলে হাতের কাছে যা পেতেন -------- তাতেই লিখে রাখতেন । তিনি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।এই ভাবেই একদিন লিখলেন কালজয়ী কবিতা :
" মাটি তো আগুনের মতো হবেই
যদি তুমি ফসল ফলাতে না জানো
যদি তুমি বৃষ্টি আনার মন্ত্র ভুলে যাও
তোমার স্বদেশ তাহলে মরুভূমি ।
যে মানুষ গান গাইতে জানে না
যখন প্রলয় আসে, সে বোবা ও অন্ধ হয়ে যায় ।"
জীবন যাপনে নিজের আদর্শ ,স্বাধীনতা ও সততার প্রতি দায়বদ্ধতা অন্য কারোর সঙ্গে যার মেলেনা । মানুষের প্রতি তাঁর অনি:শেষ ভালবাসার জন্য যাঁকে রাখা হয় --- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ,ঋত্বিক ঘটকের পাশে।
প্রথম জীবনে কবিতা লেখার উৎসাহ পেয়েছিলেন বিমল চন্দ্র ঘোষ ও অরুণ মিত্র -র কাছ থেকে । কলেজ শিক্ষক ছিলেন বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে । দেশভাগ তাঁকে আলোড়িত করেছিল। লিখেছেন :-
"আমার জন্মভূমিকে এখন আমি স্বদেশ বলতে পারিনা ।"
চল্লিশ দশকে বহু কবি লেখক এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল । ছিলেন রাম বসু ,মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় ,কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত ,অমিয়ভূষণ মজুমদার ,হেমাঙ্গ বিশ্বাস প্রভৃতি । বন্ধু ছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী । যেতেন প্রেমেন্দ্র মিত্র বা দিনেশ দাস বা অশোক বিজয় রাহার বাড়ি ।সখ্যতা ছিল জীবনানন্দ দাশ ,মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে।
শুরুর দিকে তাঁর কবিতায় ছিল প্রেম ও স্মৃতি ।গোড়ার দিকে প্রচ্ছন্নভাবে হলেও তাঁর কবিতায় জীবনানন্দের প্রভাব ছিল । যেন তিনি জীবনানন্দের জগত থেকে জেগে উঠলেন। তখন তাঁর প্রায় সমস্ত কবিতার ভুবন ছিল জীবনানন্দের নদী ,মাঠ ,ঘাস ,ফুল ,পাতা ,শালিক ,চড়ুই ,চাঁদ, হাওয়া । ক্রমে তাঁর কবিতায় মূল বিষয় হয়ে উঠতে থাকে ------ মানুষ ও দেশ । মুখোশ পরা মানুষ দেখতে দেখতে ক্লান্ত কবি লিখলেন ,
"আসলে মুখোশ মোটেই বাইরের নয়। বরং ভিতরের
যাকে আমরা সত্যিকারের মুখ ভাবি
তেমন কিছুই মানুষের নেই । "
"আশ্চর্য ভাতের গন্ধ" কবিতায় মানুষকে বলেন,
"তোমার কাজ
আগুনকে ভালোবেসে উন্মাদ হয়ে যাওয়া নয়
আগুনকে ব্যবহার করতে শেখা । "
একজন প্রকৃত কবি তাঁর সময় থেকে এগিয়ে থাকেন ।এটি খুবই পুরানো কথা ।অতি ব্যবহৃতও বটে । কবি র কবিতায় সময় ও ইতিহাস চেতনাকে ধারণ করবে । বামপন্থী মতাদর্শ এর প্রেক্ষিতে আজীবন গণআন্দোলনের অংশ হয়ে কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর সমসাময়িক সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি থেকে এগিয়ে ছিলেন। তাই আজ তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতেও তাঁর কবিতা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ।
একজন প্রকৃত বামপন্থী কম্যুনিস্ট এবং সৈনিক কবির মতো তিনি চিরকাল ক্ষমতা কাঠামোর বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন নির্ভীক চিত্তে। আপোষ করার মধ্যপন্থা তাঁর মধ্যে ছিল না । একটা সময় সারা দেশের মানুষ একটা মুক্ত ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিলো । ক্রমশ: ভারতবর্ষে রাষ্ট্রের শোষন , ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা দেশের ঘাড়ের উপর চেপে বসে ।১৯৬৮ সালে ২২শে আগস্ট তিনি যে কবিতা লেখেন , তা কি এখনো জীবন্ত নয় ?
|| অন্ধ পৃথিবী ||
""""""""""""""""""""""
কার পাপ আমাদের রক্তের ভিতরে;
কার অন্ধকার ?
কণ্ঠস্বর,
ভেসে আসে, "জোর যার".....
মানুষ কি এখনো তোমার
চোখ -রাঙানো প্রেমের চাকর ? "
অথচ কোথায় যাবো ? এ পৃথিবী আমার,
তোমার ও !
"মারো ! যত পারো ! "
কবি শঙ্খ ঘোষ যখন লেখেন, " এ আমার তোমার পাপ" , জীবনানন্দ লেখেন, " যারা অন্ধ আজ সবচেয়ে বেশি চোখে দেখে তারা ।" তখন সকল ভাবনা যেন একসূত্রে এসে মিশে যায়। কী নীরব , শান্ত এক সংলাপ ! সমসাময়িক অথচ চিরকালীন ।
সারাজীবন আর্থিক অনটনের মধ্যে কাটিয়েছেন। বারংবার কাজ হারিয়েছেন । বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন। এখানে কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবুও তিনি কখনো সরকারি অনুদান, বদন্যতা গ্রহণ করেননি। বরং শাসকের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন আজীবন। আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রখর। বলতেন, কবি যত শক্তিমান ই হোন , তাঁকে ভালো মানুষ হতে হবে । সময়ের অস্থিরতার আঘাতে কেঁপে উঠেছেন। তাঁর উচ্চারণ শ্লোগান হয়েও কবিতা , সোচ্চার হয়ে ওঠা মন্ত্র ; কবিতার মন্ত্র :
" অন্ন বাক্য অন্ন প্রাণ / অন্ন চেতনা / অন্ন ধ্বনি অন্ন মন্ত্র অন্ন আরাধনা "
তরুণ কবিদের প্রতি ছিল গভীর মমত্ববোধ । তাদের ভালো কবিতা লেখার প্রেরণা দিতেন । দেশভাগ, ১৯৫৯- এর খাদ্য আন্দোলন, ভিয়েতনামের যুদ্ধ, ফের ১৯৬৬- র খাদ্য আন্দোলন, জরুরি অবস্থা, জেল, কবিতা, মিছিল, প্রতিবাদের মধ্যে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। লিখেছেন,
" ছত্রিশ হাজার লাইন কবিতা না লিখে
যদি মাটিকে জানতাম !"
দেশের প্রতি গভীর মমতা ঝড়ে পড়তো তাঁর লেখায় ,
" তোর কি কোন তুলনা হয় ?
তুই ঘুমের মধ্যে জলভরা মেঘ,
জাগরণে জন্মভূমির মাটি । "
বামপন্থী সভা-সমিতিতে কখনও যেতেন, কিন্তু সেও কারণ বিবেচনা করে তবেই। ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। বলতেন, কমিটেড হতে গেলে কোন দলে নাম লেখাতে হবে কেন ? রবীন্দ্রনাথের একাধিক কবিতা, বিভূতিভূষণের "আরণ্যক" , সতীনাথ ভাদুড়ীর " ঢোঁড়াই চরিত মানস" বা জীবনানন্দের " ১৯৪৬--৪৭ "- এর মত কমিটেড লেখা কটা আছে? তিনি বলেছিলেন, " আধুনিক সভ্যতার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, কিন্তু ....... আমাদের আত্মা কে হারিয়েছি ।" একটি চিঠিতে কবি শঙ্খ ঘোষ কে জানিয়েছিলেন , তিনি কবিতায় খোঁজেন " চেতনা তোলপাড় করার মতো " শক্তি । " চেতনা ছাড়িয়ে অবচেতনা অথবা সুচেতনা রাজ্যে " পৌঁছে দিতে পারার সামর্থ্য তিনি খোঁজেন কবিতার উচ্চারণে ।
গান গাইতে গাইতে হঠাৎ তাঁর গলা দিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে ।এক বর্ষার দিনে ক্যান্সারে ভুগে তাঁর অকাল প্রয়াণ বড় এক শূন্যতা সৃষ্টি করে দেশের জাগ্রত বিবেকে । শতবর্ষের কবি আমাদের খুব বড় একটা শিক্ষা দিয়ে যান :
"পরের দুঃখে কাতর হওয়ার মন্ত্র " ।।
কবিতা
স্বপ্নেরা
মৌসুমী গুহ রায়
ভেঙ্গে গেছে আকাশচুম্বী অট্টালিকা
স্বপ্নেরা শিমুল তুলো
চড়ুই রা আজ ডানা মেলে আকাশে
কবি চায় ভীড়ের মুখ
একলা অরন্যে সিংহ বড় বিষণ্ণ
ছোট্ট ঝিনুক, সাধারন মানুষ আজ কবির রামধনু
প্রজাপতি খেলা করে ফুলের বনে
ছাই রঙা আকাশ মুখ ভার করে
কবি বুঝেছে পথ আর পথের ধূলো অন্তিম সঙ্গী।
সাফল্য
রাহাত জামিল
ব্যর্থতায় কেটেছে জীবনের আঠারোটা বসন্ত,
তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির মতো খুঁজেছি সাফল্যকে।
আমি ছুটেছি সেখানে,
যেখানে পেয়েছি সাফল্যের ঘ্রাণ।
আমি ছুটেছি রাতের আধাঁরে,
কিসের আশায়?
শিশির বিন্দুর ন্যায় সাফল্যর তরে।
ধরা দেয়নি দুর্লভ সাফল্য,
সুখের বার্তা নিয়ে আমার জীবনে।
সুবিশাল সাহারার মাঝে আজ,
পথহারা পথিক এর মতো
হাটছি ব্যার্থতাকে সঙ্গে নিয়ে।
তবুও বিশ্বাস রাখি মন-প্রাণে,
ব্যর্থতাকে ঠেলে উঠব একদিন
সাফল্যর শিখরে।
সেদিন কৃপন সাফল্য বলবে দীপ্ত কন্ঠে-
আজ ধন্য, ধন্য আমি তোমার ছোঁয়া পেয়ে।।
অরিজিত কথা
-: অরিজিৎ কুমার রায়
"ভালোবাসা নাকি ঝালমুড়ি"
ভালোবাসা এমনি একটা জিনিস যার কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই, যার কোনো পরিমাপও হয় না। ভালোবাসা এতোটাই বৃহৎ যে তাকে একটা সংজ্ঞা দ্বারা সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় । ভালোবাসা কিছুটা ঈশ্বরের মতো যা সবকিছুর মধ্যেই বিদ্যমান।
ভালোবাসা, সময় ও ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ভালোবাসা কখনোই একটি নির্দিষ্ট রূপে বিরাজমান নয়। তাই বিভিন্ন সময় ভালোবাসাকে বিভিন্ন অবজেক্টের সাথে তুলনা করা যায়। আমরা ভালোবাসাকে কখনো চাঁদ কখনো পাখি বা ওই ধরনের কিছু বস্তুর সাথে তুলনা করে থাকি। তেমনি আমার কাছে ভালোবাসাটা কিছুটা ঝালমুড়ির মতো।
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ' ভালোবাসাকে কি ভাবে ঝালমুড়ির সাথে তুলনা করা যায়?'
এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো, 'অবশ্যই যায়'।আর এটা আমি জোর দিয়েই বলতে পারি আমাদের সবার জীবনে ভালোবাসাটা ঝালমুড়ির মতোই।
ঝাল মুড়ি যদি খাঁটি হয় অর্থাৎ যার মধ্যে লঙ্কার ঝাল, সরষের তেলের ঝাঁজ আর বাঙালিয়ানার অপূর্ব স্বাদ উপস্থিত থাকে তবে সেই ঝাল মুড়ি খাওয়ার সময় আমাদের অবস্থা কেমন হয় একটু ভেবে দেখুন তো। সেই ঝালমুড়ি আমাদের চোখের জলে, নাকের জলে করে ছাড়ে তবুও তার অপূর্ব স্বাদের টানে আমরা ঝালমুড়ি খাওয়া ছাড়তে পারি না। ঝালমুড়ির যত বেশি ঝাল আর ঝাঁজ যুক্ত হয় ততই ঝালমুড়ির স্বাদ আমাদের জিভে লেগে থাকে।
তেমনই ভালোবাসা যদি খাঁটি হয় তবে তার মধ্যে যতই দুঃখ-কষ্ট, বিরহ-বেদনা, রাগ-অভিমান উপস্থিত থাকুক না কেন কখনোই সেই ভালোবাসাকে ভুলতে বা ছাড়তে পারি না। বরং ভালোবাসার মধ্যে দুঃখ-কষ্ট, বিরহ-বেদনা, রাগ-অভিমান যত বেশি উপস্থিত থাকে সেই ভালোবাসার গভীরতা ততই বেশি হয়, তাই নয় কি?
আবার ভালোবাসার জন্য মাঝে মাঝে আমরা ত্যাগ স্বীকার করতে করতে, আমরা একটু একটু করে শেষ হয়ে যাই। আমরা সবই বুঝতে পারি তবু ভালোবাসার মায়াজাল কেটে বেরিয়ে আসতে পারি না।এটাও তো সেই ঝালমুড়ির মায়ার মতোই ।স্বয়ং বিচার করুন।
কবিতা :
নদীর তীরে!
বিশ্বজিৎ কর
নদীকে কাছে চেয়েছিলাম,
জীবনতরী ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য!
প্লাবিত সব নদী তীর দেয়নি,
দিয়েছে লড়াই করার ঢেউ!
কত ঢেউ জড়িয়ে ধরেছি,
হিমশীতল মাদকতায়!
তীরভাঙ্গা ঢেউ আমার প্রেরণা,
আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে!
এখন বুঝতে পারি -
তীর খুঁজে পাব তখন,
"যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন",
এই জীবন-নদীর পাড়ে!
রিক্সাওয়ালা
হরিহর বৈদ্য
আজও দেখা যায় শহরের পথে
টানা-রিক্সা চলছে ছুটে,
ধনীরা চড়ছে আরামে তাতে-
টানছে গরীব মুটে।
গা-থেকে তার ঘাম ঝরে পড়ে
রাস্তাতে যায় মিশে,
ক্লান্ত অবশ দেহ নিয়ে তবু
প্রাণপনে শুধু ছোটে।
নাতি- সম কোন জোয়ান দেখি যে
রিক্সাতে বসে আছে,
বৃদ্ধ দাদু তাকে নিয়ে ছোটে
পড়ে কি মরে সে পাছে!
এক নিদারুণ আধারের ছায়া
চাপা থাকে তার মনে,
অমানবিক ব্যথা সয়েও সে
কষ্টের দিন গোনে।
মানুষ দুজনে তবু ভাবেনাকো মনে
কেমনে রিক্সা চড়ি,
নির্বোধ আর নির্দয়ের মত
বসিয়া আরাম করি।
ফিরুক মানবতা হৃদয়ে ভালোবাসা
মনের কুসুম বাগে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রীতি-রাগ-অনুরাগে।
গায়ের রঙ কালো
রুহুল আমিন
এতটুকু ডুবতে চাইনি আহ্লাদে,
উতালা আকাশ কাঁদে;
আমার অশ্রু জল প্রবাহিত করে।
গায়ের রঙ কালো বলে হয়তো,
আমার ভালোবাসার উচ্ছাসিত সে প্রেম;
ডাকিয়া নেওনি তোমার কাছে।
পূর্নতা নষ্ট হয়ে যায়,
অপূর্নতার শর্তবিহীন কষ্টে।
স্বিকার করো আমি কালো বলেই,
কখন ডাকিয়া নেওনি আমায়।
আজ নষ্ট প্লাবিত বন্যায়,
উজাড় করা হৃদয় পুকুরে বান আসে।
কবিতা
আমার শহর
মিনতি গোস্বামী
আমার শহর নিঝুম আজ
বন্ধ রেখেছে সব কাজ
শহর আমার আজ নিঝুম
ছুটে গেছে রাতের ঘুম
নিঝুম আজ শহর আমার
জানেনা শমন আসবে কার
আজ নিঝুম আমার শহর
ফেরাবে মান আর হুঁশের বহর।
বর্তমান মানবজাতি
আব্দুল রহিম
নতুন সূর্যের চোখ খোলার আশায়
মানুষ বসে নিজ নিজ আবদ্ধ বাসায়
বাড়িতে চাল ডাল শেষ কাঁদে মৃত কঙ্কালের দেশ।।
কালো মুখোশ স্বপ্ন দেখে
মা হাঁসবে মনের সুখে
কিন্তু মায়ের শূন্য আঁচল তলে
পরিপূর্ণ আজ নোনা জলে।।
কালো বাজারে ধষর্ণের আর্তনাদ
হাজার নারী শয় নগ্নতার স্বাদ
কিন্তু পৃথিবী চোখে কাফন পড়ে
সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তাকে দোষী করে।।
বৃষ্টির আশায় চাষীর শিরদাঁড়া বাঁক ধরে
শ্রমিকের মা হাড়িতে চোখের জল রান্না করে
তবু মানুষের মনুষ্যত্ব আজ ভাগাড়ে পড়ে
সুযোগ পেলে শিশু নারীর ঠোঁটে কামড়ে ধরে।।
পৃথিবীর শিরদাঁড়া বেঁকে নৌকা আকার
তবু কেউ নেই স্বার্থফেলে দেখবার
মৃত কঙ্গাল আজীবন কাঁদে গোরসস্থানে
তবু কেন শিহরণ জাগে না কারোর মনে।।
জীবন যুদ্ধে ঈশ্বর হাতিয়ার
কিন্তু ঈশ্বরকে উপলব্ধ দরকার
বিশ্ব জুড়ে বারবার আসবে হাহাকার
কিন্তু তোমাকে হাত বাড়ানো দরকার।।
নিশ্চই উঠবে নতুন সূর্য
জীবন মানে তো নিজ যুদ্ধ
আবার নিশ্চই হাসবে শিশু
বিবেক বিবেচনা চাই শুধু ।।
ইচ্ছেধারী
বিপ্লব গোস্বামী
যেমনি করে শিশু খেলে
বাল্য বয়সে,
ভাঙে গড়ে মাটির পুতুল
মনের হরিষে।
ক্ষণে স্মরে, ক্ষণে ভুলে
ক্ষণে গড়ে, ক্ষণে তুড়ে।
অমনি করে খেলছো তুমি
মানব জীবন নিয়ে,
সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা
জয়,পরাজয় দিয়ে।
রাজা, ফকির, মুনিব, নকর
বড়, ছোট করে,
অহং, লোভ, স্বার্থ দিয়ে
পাঠিয়েছো ভবের মাঝারে।
যেজন অহঙ্কারে মত্ত হয়
করো তার পতন,
দীনের করো রাজা তুমি
আপন ইচ্ছে মতন।
উচ্ছ হয়ে নিম্নে যারা
করে যখন হেলা,
তুমি তখন তোমার মত
শুরু করো খেলা।
উঁচুরে করো নিচু আবার
নিচুরে করো উঁচু,
উচ্ছ শ্রেণীর অহং নাশে
কলঙ্ক দেও পিচু।
রাজারে করো ভিখারী আবার
ভিখারীরে করো রাজা,
অহঙ্কারীর অহং নাশে তুমি
বড় পাও মজা।
"উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-27/07/2020, সোমবার
সময় :- বিকাল 4 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে
Click Here
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে
Click Here
🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼
- প্রবন্ধ
হতাশার শারদ উৎসব ২০২০
আব্দুল রাহাজ
দীর্ঘ এক বছর পর বাঙালির সামনে আবার আসতে চলেছে শারদ উৎসব বা দুর্গাপূজা কিন্তু করোনার আবহে সে উৎসব কোথাও যেন বাঙালির কাছে আনন্দটা কিছুটা হলেও হতাশার আক্ষেপের। সর্ব ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালি যে দুর্গাপূজা তার এবার সেইভাবে চোখে পড়বে না সূর্যের নিস্তেজ আলোর মত বাঙালির এই বড় উৎসব নদীর ভাটার মতো মিশে যাবে। এবছর মানুষের যে চাঁদের হাট আনন্দের যে ঘনঘটা পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় শহরে শহরে দুর্গা মাকে ঘিরে যে ভিড় তার থাকবে না কোথাও যেন চারিদিকে গুটিকয়েক মানুষের সমাহারে এক হতাশাময় পরিবেশ নিয়ে এবারের শারদ উৎসব উপস্থাপিত হবে বাঙালি সামনে। ও পাড়ার রহিম করিমরা আর আসবে নাকোথাও যেন সম্প্রীতির মেলবন্ধন পারস্পারিক আদান-প্রদান আর হবেনা এখানেও যেন এ বছর আক্ষেপ কোথায় থাকবে। যে আলোর ঝঞ্ঝার রশ্মিতে চারিদিকে বৈচিত্র্যে ভরা দিচ্ছে এক অন্যরকম পরিবেশ নিয়ে শারদ উৎসব এর সংজ্ঞা মেতে উঠতো অনন্য রূপে শারদ উৎসবে সন্ধ্যা মেতে উঠতো অনন্য রূপে এবছর শারদ উৎসবে আলোর রশ্মি থাকলেও মানুষের যে ভিড় তা আর চোখে পড়বে না জমজমাট যে কোলাহল আনন্দের পরিবেশ তার থাকবেনা বিভিন্ন খাবারের দোকান দেওয়া মানুষগুলো হতাশ হয়ে থাকবে এক অন্যরকম পরিবেশ নিয়ে শারদ উৎসব বাঙালির চোখের সামনে হতাশ রূপে উপস্থাপিত হবে। বাঙালির বড় উৎসব দুর্গাপূজা তার যে সংজ্ঞা বৈশিষ্ট্য বিগত বছরের আনন্দে রচনায় সম্প্রীতি আবেগ যে মেলবন্ধন ফুটে উঠত তার থাকবে না সবি হতাশাজনক হয়ে গড়ে উঠবে। কাশফুল গুলো যেন এবার মনমরা হয়ে উঠবে খোলামেলা শরৎ এর আকাশ কোথাও যেন হতাশায় ভুগবেন।শারদ উৎসবের মেলা ঘুরতে ঘুরতে বাড়ি ফেরার পথে জিলাপি খেতে খেতে বাবার কাঁধে চড়ে রাতের বেলা কাশ বনের মধ্য দিয়ে বাড়ি আসা এবার হয়তো বাঙালির ছেলে মেয়েরা আর সেইসব পাবেনা। সব মিলিয়ে বছর ঘুরে আসা এই শারদ উৎসবের আনন্দ সম্প্রীতি বার্তা যে আনন্দ তা যেন এবছর আর চোখে পড়বে না করোনার আকালে শারদ উৎসব বাঙালির কাছে বাতাস আক্ষেপ হয়ে থাকবে।
মানবী ঘর
রঞ্জনা রায়
নিজস্ব কোরকের স্নিগ্ধ আভায়
মন থেকে চেয়েছি যাদের সজ্জিত করে, সুন্দর করে
আমাকে তারাই ছেড়ে যায়
হৃদয়কে নির্বাসিত করে, নিরুদ্দেশে।
বেঁধে নেব আমার একক মানবী ঘর
রতিময় বিশ্বে রতিহীন সম্ভোগ আশায়।
অণু কবিতা
আমার স্বপ্ন
কনিকা রায়
কতদিন দেখিনি তোমায়!
কত রাত ভেবেছি তোমায়!!
কত পথ চলেছি একাএকা!
তবুও তোমার পায়নি যে দেখা!!
তুমি মোর স্বপ্নে জাগরণে
রয়েছো অন্তরে!
একবার যদি পায় তোমার দর্শন !!
এক মূহুর্তের লাগি আমি করিবো আলিঙ্গন!
ওগো মোর প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘা!!
বিভাগ : কবিতা
সাদা কালো রঙ্গীন
কবিরুল
তুমি একা কাঁদো বারান্দায়
শুনি কার প্রতীক্ষায়
বেলা যে যায় যায়।
একটু পরে নামবে আধাঁর
হবে ফিকে লোক ,বাজার
জমবে আসর মশার।
অফিস থেকে ফিরে
বাস ট্রেনের ভিড়ে
অবশেষে তোমার প্রেমঘন নীরে।
তোমার ক্লান্ত শরীর
পাবে আদর নিবিড়
যখন রাত গভীর।
আসবে নতুন ভোর
কাটবে ঘুমের ঘোর
আবার খুলবে কাজের দোর।
আবার তুমি একা
আমার অপেক্ষায় থাকা
দিনের শেষে তোমার নামটি ধরে ডাকা।
এভাবেই দুজনের একটা দিন
কালো সাদা রঙ্গীন
নিজেকে ভাঙ্গে প্রতিদিন।
তোমার জন্য
বিমান প্রামানিক
ও প্রিয়তমা সুখে থেকো তবে
তোমার সাথে কবে দেখা হবে?
জানি তুমি ভালো আছো
আমায় কি মনে রেখেছো?
বেসেছি ভালো, বাসবো ভালো
জীবনে তুমি এগিয়ে চলো।
তোমার সুখেই সুখী আমি
তোমার কথা ভাবছি আমি।
আজ তুমি অন্যের ঘরণী
অনেক শান্তি তোমার জানি।
জীবন যেন বড়োই কঠিন
পুরনো স্মৃতি তবুও নবীন।
স্মৃতি গুলো ফিরে আসে
কেবল তুমি নেই পাশে।
ছোট্ট ছোট্ট ছিল কত আশা
তাই তো এখনও ভালোবাসা।
জীবনের প্রতিটি ক্ষণে তুমি
তাই আজও তোমায় ভুলিনি।
আবাহনী
মৈত্রেয়ী ঘোষ
প্রকৃতি আজ তোমার আবার পরীক্ষা এই বিশ্বকূলে
সেই আদিকালে অসুরদলনী রূপে আবির্ভূতা হয়েছিলে।
শরতের সেই পুণ্য তিথিতে অকালবোধনের স্বরে
মহিষাসুরের বিনাশ করেছিলে ধরিত্রী রক্ষার তরে।
আকাশ বাতাস সেদিন ছিল আগমনী গানে মুখরিত,
আজ আবার বহু শতাব্দী পর অশুভ শক্তিরা আগত।
কখনো দাবানল রূপে , তো কখনো রূপ মহামারী
কখনো অতি বৃষ্টি আর ঝড়ের তান্ডবে
মানুষ হারায় ভিটে-মাটি-বাড়ি।
মানব সভ্যতা আজ অস্তাচলে, চারিধারে প্রাণ সংশয়
রুদ্ধশ্বাসে প্রহর গুনছে মানুষ বুকে নিয়ে মৃত্যুভয়,
চারিদিকে শুধু মৃত্যু-মিছিল, দু'মুঠো অন্নের হাহাকার,
সন্তানেরা তোমার এত অসহায়,তবু তুমি নির্বিকার?
আসছে মাগো আবার শরৎ,মোরা সকলে অপেক্ষমান,
তোমার আগমনে সাজুক ধরা হোক অশুভ শক্তির অবসান।।
এক পশলা বৃষ্টি
অলোক রায়
কখনো তুমি বিরহী হয়ে অঝোরে ঝড়ো,
কখনো ঝিরিঝিরি ভাবে বাতাসে ভেসে পড়ো।
এক পশলা বৃষ্টি কোথায় তোমার সৃষ্টি,
তুমি তো আকাশের কান্না বড়োই মিষ্টি।
হাসো তুমি রোদেলা দুপুরে সূর্যের পরশে,
ঝড়ে পড়ো মাটিতে ছুঁয়ে দিয়ে বাতাসে।
আহা! কী আর বলবো তোমায়,
হিমেল হাওয়ায় ভেসে যে
থাকো তুমিই রোমান্সের সূচনায়।
আবার কখনো তুমিই হও বারি রূপে কালবৈশাখী,
তখন তোমায় অন্য রূপে দেখি।
তোমাতেই হয় যৌবনের পাগলামি আর প্রেমের প্রকাশ,
কখনো তোমার অবাক আগমনে মেতে ওঠে মনাকাশ।
তুমি হলে যুগলদের প্রথম পছন্দে,
তোমার মায়াবী শীতলতায়
ওরা যে গা ভেজায় স্বাচ্ছন্দ্যে।
তুমি এক পশলা বৃষ্টি,
তোমাতেই আদিমতার সৃষ্টি।
শতবর্ষের আলোকে কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
সৌম্য ঘোষ
১৯২০-র ২রা সেপ্টেম্বর ঢাকার বিক্রমপুর তার জন্ম । আজীবন সুন্দর সমাজ গঠনের স্বপ্নকে অবলম্বন করেই তাঁর কাব্য সৃজন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "গ্রহচ্যুত" তাকে কবি পরিচিতি না দিলেও "রানুর জন্য" কাব্যগ্রন্থে পেয়েছেন স্বীকৃতি । আজীবন আধুনিক বাংলা কবিতায় তিনি যে কত প্রাসঙ্গিক , আজও তা তাঁর কবিতা পড়লেই জানা যায় । পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৮২) ।
তাঁর সমস্ত উচ্চারণ ,শব্দ গুলির জন্ম যেন উঁচু ঘাড় , ফোলানোর শিরা আর উঁচু পর্দা থেকে ; কিন্তু তা বিশুদ্ধ কাব্য গুনে পুষ্ট । সমস্ত অসাম্যের বিরুদ্ধে, সমস্ত লাঞ্ছনার বিপরীতে তাঁর প্রচন্ড রণহুঙ্কার ধ্বনিত হয় ।দেশভাগ ,পার্টি ভাগ ,খাদ্য আন্দোলন থেকে শুরু করে নকশালবাড়ি আন্দোলন , জরুরি অবস্থা ,বন্দি মুক্তি আন্দোলন-------- তাঁর লড়াই-সংগ্রাম । পাশাপাশি মধ্যবিত্ত মন-মেজাজ মানসিকতাকে চাবকে শাসনের পর বিধ্বস্ত তাঁর হৃদয় থেকে উৎসারিত রক্তমাখা শব্দ , একটি নির্মল প্রেমের কবিতা ।
তাঁর ঝোলার ভেতর থাকতো কবিতার বই। মন্ত্রের মতো সব শব্দলিপি । দরজায় দরজায়, মেলায়, গ্রামে ঘুরে ঘুরে নিজের বই বিক্রি করেছেন। একটানা ত্রিশ বছর ।বইমেলাতেও দেখা যেত , নিজের বই বিক্রি করছেন। ভালোবাসতেন বিড়ি, সিগারেট ,চা। প্রিয় খাদ্য মুড়ি। ঢাকাই টানে বাঙাল ভাষায় কথা বলতেন। কবিতা মাথায় এলে হাতের কাছে যা পেতেন -------- তাতেই লিখে রাখতেন । তিনি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।এই ভাবেই একদিন লিখলেন কালজয়ী কবিতা :
" মাটি তো আগুনের মতো হবেই
যদি তুমি ফসল ফলাতে না জানো
যদি তুমি বৃষ্টি আনার মন্ত্র ভুলে যাও
তোমার স্বদেশ তাহলে মরুভূমি ।
যে মানুষ গান গাইতে জানে না
যখন প্রলয় আসে, সে বোবা ও অন্ধ হয়ে যায় ।"
জীবন যাপনে নিজের আদর্শ ,স্বাধীনতা ও সততার প্রতি দায়বদ্ধতা অন্য কারোর সঙ্গে যার মেলেনা । মানুষের প্রতি তাঁর অনি:শেষ ভালবাসার জন্য যাঁকে রাখা হয় --- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ,ঋত্বিক ঘটকের পাশে।
প্রথম জীবনে কবিতা লেখার উৎসাহ পেয়েছিলেন বিমল চন্দ্র ঘোষ ও অরুণ মিত্র -র কাছ থেকে । কলেজ শিক্ষক ছিলেন বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে । দেশভাগ তাঁকে আলোড়িত করেছিল। লিখেছেন :-
"আমার জন্মভূমিকে এখন আমি স্বদেশ বলতে পারিনা ।"
চল্লিশ দশকে বহু কবি লেখক এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল । ছিলেন রাম বসু ,মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় ,কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত ,অমিয়ভূষণ মজুমদার ,হেমাঙ্গ বিশ্বাস প্রভৃতি । বন্ধু ছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী । যেতেন প্রেমেন্দ্র মিত্র বা দিনেশ দাস বা অশোক বিজয় রাহার বাড়ি ।সখ্যতা ছিল জীবনানন্দ দাশ ,মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে।
শুরুর দিকে তাঁর কবিতায় ছিল প্রেম ও স্মৃতি ।গোড়ার দিকে প্রচ্ছন্নভাবে হলেও তাঁর কবিতায় জীবনানন্দের প্রভাব ছিল । যেন তিনি জীবনানন্দের জগত থেকে জেগে উঠলেন। তখন তাঁর প্রায় সমস্ত কবিতার ভুবন ছিল জীবনানন্দের নদী ,মাঠ ,ঘাস ,ফুল ,পাতা ,শালিক ,চড়ুই ,চাঁদ, হাওয়া । ক্রমে তাঁর কবিতায় মূল বিষয় হয়ে উঠতে থাকে ------ মানুষ ও দেশ । মুখোশ পরা মানুষ দেখতে দেখতে ক্লান্ত কবি লিখলেন ,
"আসলে মুখোশ মোটেই বাইরের নয়। বরং ভিতরের
যাকে আমরা সত্যিকারের মুখ ভাবি
তেমন কিছুই মানুষের নেই । "
"আশ্চর্য ভাতের গন্ধ" কবিতায় মানুষকে বলেন,
"তোমার কাজ
আগুনকে ভালোবেসে উন্মাদ হয়ে যাওয়া নয়
আগুনকে ব্যবহার করতে শেখা । "
একজন প্রকৃত কবি তাঁর সময় থেকে এগিয়ে থাকেন ।এটি খুবই পুরানো কথা ।অতি ব্যবহৃতও বটে । কবি র কবিতায় সময় ও ইতিহাস চেতনাকে ধারণ করবে । বামপন্থী মতাদর্শ এর প্রেক্ষিতে আজীবন গণআন্দোলনের অংশ হয়ে কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর সমসাময়িক সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি থেকে এগিয়ে ছিলেন। তাই আজ তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতেও তাঁর কবিতা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ।
একজন প্রকৃত বামপন্থী কম্যুনিস্ট এবং সৈনিক কবির মতো তিনি চিরকাল ক্ষমতা কাঠামোর বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন নির্ভীক চিত্তে। আপোষ করার মধ্যপন্থা তাঁর মধ্যে ছিল না । একটা সময় সারা দেশের মানুষ একটা মুক্ত ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিলো । ক্রমশ: ভারতবর্ষে রাষ্ট্রের শোষন , ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা দেশের ঘাড়ের উপর চেপে বসে ।১৯৬৮ সালে ২২শে আগস্ট তিনি যে কবিতা লেখেন , তা কি এখনো জীবন্ত নয় ?
|| অন্ধ পৃথিবী ||
""""""""""""""""""""""
কার পাপ আমাদের রক্তের ভিতরে;
কার অন্ধকার ?
কণ্ঠস্বর,
ভেসে আসে, "জোর যার".....
মানুষ কি এখনো তোমার
চোখ -রাঙানো প্রেমের চাকর ? "
অথচ কোথায় যাবো ? এ পৃথিবী আমার,
তোমার ও !
"মারো ! যত পারো ! "
কবি শঙ্খ ঘোষ যখন লেখেন, " এ আমার তোমার পাপ" , জীবনানন্দ লেখেন, " যারা অন্ধ আজ সবচেয়ে বেশি চোখে দেখে তারা ।" তখন সকল ভাবনা যেন একসূত্রে এসে মিশে যায়। কী নীরব , শান্ত এক সংলাপ ! সমসাময়িক অথচ চিরকালীন ।
সারাজীবন আর্থিক অনটনের মধ্যে কাটিয়েছেন। বারংবার কাজ হারিয়েছেন । বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন। এখানে কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবুও তিনি কখনো সরকারি অনুদান, বদন্যতা গ্রহণ করেননি। বরং শাসকের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন আজীবন। আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রখর। বলতেন, কবি যত শক্তিমান ই হোন , তাঁকে ভালো মানুষ হতে হবে । সময়ের অস্থিরতার আঘাতে কেঁপে উঠেছেন। তাঁর উচ্চারণ শ্লোগান হয়েও কবিতা , সোচ্চার হয়ে ওঠা মন্ত্র ; কবিতার মন্ত্র :
" অন্ন বাক্য অন্ন প্রাণ / অন্ন চেতনা / অন্ন ধ্বনি অন্ন মন্ত্র অন্ন আরাধনা "
তরুণ কবিদের প্রতি ছিল গভীর মমত্ববোধ । তাদের ভালো কবিতা লেখার প্রেরণা দিতেন । দেশভাগ, ১৯৫৯- এর খাদ্য আন্দোলন, ভিয়েতনামের যুদ্ধ, ফের ১৯৬৬- র খাদ্য আন্দোলন, জরুরি অবস্থা, জেল, কবিতা, মিছিল, প্রতিবাদের মধ্যে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। লিখেছেন,
" ছত্রিশ হাজার লাইন কবিতা না লিখে
যদি মাটিকে জানতাম !"
দেশের প্রতি গভীর মমতা ঝড়ে পড়তো তাঁর লেখায় ,
" তোর কি কোন তুলনা হয় ?
তুই ঘুমের মধ্যে জলভরা মেঘ,
জাগরণে জন্মভূমির মাটি । "
বামপন্থী সভা-সমিতিতে কখনও যেতেন, কিন্তু সেও কারণ বিবেচনা করে তবেই। ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। বলতেন, কমিটেড হতে গেলে কোন দলে নাম লেখাতে হবে কেন ? রবীন্দ্রনাথের একাধিক কবিতা, বিভূতিভূষণের "আরণ্যক" , সতীনাথ ভাদুড়ীর " ঢোঁড়াই চরিত মানস" বা জীবনানন্দের " ১৯৪৬--৪৭ "- এর মত কমিটেড লেখা কটা আছে? তিনি বলেছিলেন, " আধুনিক সভ্যতার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, কিন্তু ....... আমাদের আত্মা কে হারিয়েছি ।" একটি চিঠিতে কবি শঙ্খ ঘোষ কে জানিয়েছিলেন , তিনি কবিতায় খোঁজেন " চেতনা তোলপাড় করার মতো " শক্তি । " চেতনা ছাড়িয়ে অবচেতনা অথবা সুচেতনা রাজ্যে " পৌঁছে দিতে পারার সামর্থ্য তিনি খোঁজেন কবিতার উচ্চারণে ।
গান গাইতে গাইতে হঠাৎ তাঁর গলা দিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে ।এক বর্ষার দিনে ক্যান্সারে ভুগে তাঁর অকাল প্রয়াণ বড় এক শূন্যতা সৃষ্টি করে দেশের জাগ্রত বিবেকে । শতবর্ষের কবি আমাদের খুব বড় একটা শিক্ষা দিয়ে যান :
"পরের দুঃখে কাতর হওয়ার মন্ত্র " ।।
কবিতা
স্বপ্নেরা
মৌসুমী গুহ রায়
ভেঙ্গে গেছে আকাশচুম্বী অট্টালিকা
স্বপ্নেরা শিমুল তুলো
চড়ুই রা আজ ডানা মেলে আকাশে
কবি চায় ভীড়ের মুখ
একলা অরন্যে সিংহ বড় বিষণ্ণ
ছোট্ট ঝিনুক, সাধারন মানুষ আজ কবির রামধনু
প্রজাপতি খেলা করে ফুলের বনে
ছাই রঙা আকাশ মুখ ভার করে
কবি বুঝেছে পথ আর পথের ধূলো অন্তিম সঙ্গী।
সাফল্য
রাহাত জামিল
ব্যর্থতায় কেটেছে জীবনের আঠারোটা বসন্ত,
তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির মতো খুঁজেছি সাফল্যকে।
আমি ছুটেছি সেখানে,
যেখানে পেয়েছি সাফল্যের ঘ্রাণ।
আমি ছুটেছি রাতের আধাঁরে,
কিসের আশায়?
শিশির বিন্দুর ন্যায় সাফল্যর তরে।
ধরা দেয়নি দুর্লভ সাফল্য,
সুখের বার্তা নিয়ে আমার জীবনে।
সুবিশাল সাহারার মাঝে আজ,
পথহারা পথিক এর মতো
হাটছি ব্যার্থতাকে সঙ্গে নিয়ে।
তবুও বিশ্বাস রাখি মন-প্রাণে,
ব্যর্থতাকে ঠেলে উঠব একদিন
সাফল্যর শিখরে।
সেদিন কৃপন সাফল্য বলবে দীপ্ত কন্ঠে-
আজ ধন্য, ধন্য আমি তোমার ছোঁয়া পেয়ে।।
অরিজিত কথা
-: অরিজিৎ কুমার রায়
"ভালোবাসা নাকি ঝালমুড়ি"
ভালোবাসা এমনি একটা জিনিস যার কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই, যার কোনো পরিমাপও হয় না। ভালোবাসা এতোটাই বৃহৎ যে তাকে একটা সংজ্ঞা দ্বারা সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় । ভালোবাসা কিছুটা ঈশ্বরের মতো যা সবকিছুর মধ্যেই বিদ্যমান।
ভালোবাসা, সময় ও ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ভালোবাসা কখনোই একটি নির্দিষ্ট রূপে বিরাজমান নয়। তাই বিভিন্ন সময় ভালোবাসাকে বিভিন্ন অবজেক্টের সাথে তুলনা করা যায়। আমরা ভালোবাসাকে কখনো চাঁদ কখনো পাখি বা ওই ধরনের কিছু বস্তুর সাথে তুলনা করে থাকি। তেমনি আমার কাছে ভালোবাসাটা কিছুটা ঝালমুড়ির মতো।
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ' ভালোবাসাকে কি ভাবে ঝালমুড়ির সাথে তুলনা করা যায়?'
এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো, 'অবশ্যই যায়'।আর এটা আমি জোর দিয়েই বলতে পারি আমাদের সবার জীবনে ভালোবাসাটা ঝালমুড়ির মতোই।
ঝাল মুড়ি যদি খাঁটি হয় অর্থাৎ যার মধ্যে লঙ্কার ঝাল, সরষের তেলের ঝাঁজ আর বাঙালিয়ানার অপূর্ব স্বাদ উপস্থিত থাকে তবে সেই ঝাল মুড়ি খাওয়ার সময় আমাদের অবস্থা কেমন হয় একটু ভেবে দেখুন তো। সেই ঝালমুড়ি আমাদের চোখের জলে, নাকের জলে করে ছাড়ে তবুও তার অপূর্ব স্বাদের টানে আমরা ঝালমুড়ি খাওয়া ছাড়তে পারি না। ঝালমুড়ির যত বেশি ঝাল আর ঝাঁজ যুক্ত হয় ততই ঝালমুড়ির স্বাদ আমাদের জিভে লেগে থাকে।
তেমনই ভালোবাসা যদি খাঁটি হয় তবে তার মধ্যে যতই দুঃখ-কষ্ট, বিরহ-বেদনা, রাগ-অভিমান উপস্থিত থাকুক না কেন কখনোই সেই ভালোবাসাকে ভুলতে বা ছাড়তে পারি না। বরং ভালোবাসার মধ্যে দুঃখ-কষ্ট, বিরহ-বেদনা, রাগ-অভিমান যত বেশি উপস্থিত থাকে সেই ভালোবাসার গভীরতা ততই বেশি হয়, তাই নয় কি?
আবার ভালোবাসার জন্য মাঝে মাঝে আমরা ত্যাগ স্বীকার করতে করতে, আমরা একটু একটু করে শেষ হয়ে যাই। আমরা সবই বুঝতে পারি তবু ভালোবাসার মায়াজাল কেটে বেরিয়ে আসতে পারি না।এটাও তো সেই ঝালমুড়ির মায়ার মতোই ।স্বয়ং বিচার করুন।
কবিতা :
নদীর তীরে!
বিশ্বজিৎ কর
নদীকে কাছে চেয়েছিলাম,
জীবনতরী ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য!
প্লাবিত সব নদী তীর দেয়নি,
দিয়েছে লড়াই করার ঢেউ!
কত ঢেউ জড়িয়ে ধরেছি,
হিমশীতল মাদকতায়!
তীরভাঙ্গা ঢেউ আমার প্রেরণা,
আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে!
এখন বুঝতে পারি -
তীর খুঁজে পাব তখন,
"যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন",
এই জীবন-নদীর পাড়ে!
রিক্সাওয়ালা
হরিহর বৈদ্য
আজও দেখা যায় শহরের পথে
টানা-রিক্সা চলছে ছুটে,
ধনীরা চড়ছে আরামে তাতে-
টানছে গরীব মুটে।
গা-থেকে তার ঘাম ঝরে পড়ে
রাস্তাতে যায় মিশে,
ক্লান্ত অবশ দেহ নিয়ে তবু
প্রাণপনে শুধু ছোটে।
নাতি- সম কোন জোয়ান দেখি যে
রিক্সাতে বসে আছে,
বৃদ্ধ দাদু তাকে নিয়ে ছোটে
পড়ে কি মরে সে পাছে!
এক নিদারুণ আধারের ছায়া
চাপা থাকে তার মনে,
অমানবিক ব্যথা সয়েও সে
কষ্টের দিন গোনে।
মানুষ দুজনে তবু ভাবেনাকো মনে
কেমনে রিক্সা চড়ি,
নির্বোধ আর নির্দয়ের মত
বসিয়া আরাম করি।
ফিরুক মানবতা হৃদয়ে ভালোবাসা
মনের কুসুম বাগে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রীতি-রাগ-অনুরাগে।
গায়ের রঙ কালো
রুহুল আমিন
এতটুকু ডুবতে চাইনি আহ্লাদে,
উতালা আকাশ কাঁদে;
আমার অশ্রু জল প্রবাহিত করে।
গায়ের রঙ কালো বলে হয়তো,
আমার ভালোবাসার উচ্ছাসিত সে প্রেম;
ডাকিয়া নেওনি তোমার কাছে।
পূর্নতা নষ্ট হয়ে যায়,
অপূর্নতার শর্তবিহীন কষ্টে।
স্বিকার করো আমি কালো বলেই,
কখন ডাকিয়া নেওনি আমায়।
আজ নষ্ট প্লাবিত বন্যায়,
উজাড় করা হৃদয় পুকুরে বান আসে।
কবিতা
আমার শহর
মিনতি গোস্বামী
আমার শহর নিঝুম আজ
বন্ধ রেখেছে সব কাজ
শহর আমার আজ নিঝুম
ছুটে গেছে রাতের ঘুম
নিঝুম আজ শহর আমার
জানেনা শমন আসবে কার
আজ নিঝুম আমার শহর
ফেরাবে মান আর হুঁশের বহর।
বর্তমান মানবজাতি
আব্দুল রহিম
নতুন সূর্যের চোখ খোলার আশায়
মানুষ বসে নিজ নিজ আবদ্ধ বাসায়
বাড়িতে চাল ডাল শেষ কাঁদে মৃত কঙ্কালের দেশ।।
কালো মুখোশ স্বপ্ন দেখে
মা হাঁসবে মনের সুখে
কিন্তু মায়ের শূন্য আঁচল তলে
পরিপূর্ণ আজ নোনা জলে।।
কালো বাজারে ধষর্ণের আর্তনাদ
হাজার নারী শয় নগ্নতার স্বাদ
কিন্তু পৃথিবী চোখে কাফন পড়ে
সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তাকে দোষী করে।।
বৃষ্টির আশায় চাষীর শিরদাঁড়া বাঁক ধরে
শ্রমিকের মা হাড়িতে চোখের জল রান্না করে
তবু মানুষের মনুষ্যত্ব আজ ভাগাড়ে পড়ে
সুযোগ পেলে শিশু নারীর ঠোঁটে কামড়ে ধরে।।
পৃথিবীর শিরদাঁড়া বেঁকে নৌকা আকার
তবু কেউ নেই স্বার্থফেলে দেখবার
মৃত কঙ্গাল আজীবন কাঁদে গোরসস্থানে
তবু কেন শিহরণ জাগে না কারোর মনে।।
জীবন যুদ্ধে ঈশ্বর হাতিয়ার
কিন্তু ঈশ্বরকে উপলব্ধ দরকার
বিশ্ব জুড়ে বারবার আসবে হাহাকার
কিন্তু তোমাকে হাত বাড়ানো দরকার।।
নিশ্চই উঠবে নতুন সূর্য
জীবন মানে তো নিজ যুদ্ধ
আবার নিশ্চই হাসবে শিশু
বিবেক বিবেচনা চাই শুধু ।।
ইচ্ছেধারী
বিপ্লব গোস্বামী
যেমনি করে শিশু খেলে
বাল্য বয়সে,
ভাঙে গড়ে মাটির পুতুল
মনের হরিষে।
ক্ষণে স্মরে, ক্ষণে ভুলে
ক্ষণে গড়ে, ক্ষণে তুড়ে।
অমনি করে খেলছো তুমি
মানব জীবন নিয়ে,
সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা
জয়,পরাজয় দিয়ে।
রাজা, ফকির, মুনিব, নকর
বড়, ছোট করে,
অহং, লোভ, স্বার্থ দিয়ে
পাঠিয়েছো ভবের মাঝারে।
যেজন অহঙ্কারে মত্ত হয়
করো তার পতন,
দীনের করো রাজা তুমি
আপন ইচ্ছে মতন।
উচ্ছ হয়ে নিম্নে যারা
করে যখন হেলা,
তুমি তখন তোমার মত
শুরু করো খেলা।
উঁচুরে করো নিচু আবার
নিচুরে করো উঁচু,
উচ্ছ শ্রেণীর অহং নাশে
কলঙ্ক দেও পিচু।
রাজারে করো ভিখারী আবার
ভিখারীরে করো রাজা,
অহঙ্কারীর অহং নাশে তুমি
বড় পাও মজা।
আজকের উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ পড়ার এবং মতামত দেওয়ার অনুরোধ রইল।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
সম্পাদক উপকণ্ঠ