রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন-12/07/2020

     

           "উপকণ্ঠ 12 জুলাই সংখ্যা "
               "উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
                    (ওয়েব ম্যাগাজিন)

        প্রকাশ কাল:-12/07/2020, রবিবার
                    সময় :- সন্ধ্যা 7 টা


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত

মুঠোফোন:- 9593043577
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷

উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে
Click Here

উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে
Click Here

👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇




         হালুম
                 সিদ্ধার্থ সিংহ
শিকার পড়লে চোখে টানা তিন দিন
অপেক্ষা করতে পারে ওত্ পেতে বাঘ
তার পরে গুটিগুটি হঠাৎ ঝপাং
যেটাকে টার্গেট করে, সেটাকেই ধরে।

আর, এই আপনারা? গন্ধ যদি পান
কোনটা ক্যানিং আর কোনটা সিঙ্গুর
একাকার হয়ে যায় সুতানুটি গ্রাম
আশপাশ না দেখেই জালটা গোগান।

রে রে করে তেড়ে আসে তড়িঘড়ি সব
জড়ো হয় লাঠি-সোঁটা, ভাড়া করা লোক
এ চালায় ছুরি আর ও চালায় গুলি
একে অপরের নামে করে দোষারোপ।

ঝপাঝপ ছবি ওঠে চ্যানেলে চ্যানেলে
মুখোমুখি দুই দল কত মাতব্বর
তার ফাঁকে এক কোণে জুলজুল চোখে
বাঘ শুধু বলে--- আরে, কোথায় এলাম!






ধারাবাহিক প্রবন্ধ

প্রাথমিক শিক্ষাঃ কিছু প্রস্তাব
(দ্বিতীয় পর্ব)
~ রাজা দেবরায় (আগরতলা, ত্রিপুরা)

বেসিকগুলো পড়ালে সিলেবাস শেষ হবে না । আবার লেসন প্ল্যান, টিচারস ডাইরীও সঠিকভাবে মেনটেন করাও সম্ভব হবে না । অনেক স্কুলই পরীক্ষার প্রশ্ন নিজেরা তৈরী করতে পারেন না । একটি ইউনিট থেকে প্রশ্নগুলো আসে । ফলে সিলেবাস শেষ করতেই হয় সম্মানিত টিচারদের । সিলেবাস শেষ না করলে শিক্ষাদপ্তর, সম্মানিত অভিভাবকগণও চেপে ধরবেন টিচারদের । এখন শ্রদ্ধেয় টিচাররা কী করবেন ?

সঠিক শিক্ষা দিতে হলে সিলেবাস ভুলে যেতে হবে নতুবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুশাসনে সিলেবাস শেষ করার দিকেই মনোনিবেশ করতে হবে, তাতে স্টুডেন্টরা প্রকৃত শিক্ষা না পেলেও কি করা !!

একেক জায়গার জন্য ভিন্ন বই বা সিলেবাস হয়তো করা সম্ভব না, নানাকারণেই তা সম্ভব নাও হতে পারে ।

কিন্তু যেই যেই স্কুলে এরকম সমস্যা সেগুলোতে শ্রদ্ধেয় টিচারদের তো স্বাধীনতা দেওয়াই যেতে পারে । এতে টিচাররাও পরিকল্পনামাফিক সঠিক শিক্ষা দিতে পারবেন । কারণ ক্লাস ওয়ান ও টু-তে তো কোন পরীক্ষা নেই বা অনেক স্কুলে হয়তো আছে । যদিও নতুন নিয়মে কী হবে বা হয়েছে জানা নেই । তাছাড়া ক্লাস ফাইভের আগে তো কোন পাশ-ফেল নেই, যদিও এখন পর্যন্ত দেশের সব বিদ্যালয়ে লাগু হয়নি বলেই মনে হয় । মোটামুটিভাবে অনেক বিদ্যালয়েই এখনো পর্যন্ত ক্লাস এইট পর্যন্ত 'নো ডিটেনশন পলিসি' চলছে । তবে এই সুযোগটাকে তুলনামূলক দুর্বল স্টুডেন্টদের স্বার্থে ভালোভাবে কাজে লাগানো যেতেই পারে ।।

(চলবে)



        ধূসর বাস্তবে এসে
                       রঞ্জনা রায়

 জীবনের সবগুলি অধ্যায়ে  জন্ম নেওয়া রঙের  বাষ্প
 আকাশকে বড় বেশি কাছে ভাবে
 নিজের উষ্ণতা দিয়ে আকাশের ছবি আঁকি।

 দিনের গুণিতক বাড়ে
 আকাশের উচ্চতাও বাড়ে
 সাতঘণ্টার লেট ট্রেন কখনো কী
 হারানো সময় খুঁজে পায়?

 ধূসর বাস্তবে এসে স্বপ্নেরা
 কখনো নির্ভুল কোন সন্ধান দেয় না।




           গালিব 
                   শ্যামসুন্দর 

হরফের জীবন অক্ষর হতে চেয়েছে তোমার জিভে।
একদিন। মাত্র একদিন।
দৃষ্টির নিচ সীমায় কার্নিভ্যাল চলছে।
ঔরঙ্গজেবের তৃপ্তি,আর হিটলারের উল্লাস--
উষ্ণ লবন রক্তিম স্বাদে তোমার জিভে আসা জলকে
বারবার অনিচ্ছায় পথ করে দেয় আলজিভ।
মুখে দুশাসনের বিজয় হাসি
সঙ্গে স্তাবক ধৃতরাষ্ট্রের দৃষ্টি।
তুমি অটল গুমোট সন্ধ্যার মতো।

কিন্তু ---
কিন্তু সন্ধ্যারও বার্ধক্য আসে। আসে মৃত্যু। নবজন্ম।
শোষিত সঞ্চিত জমাট রক্ত ভোরের আলোয় ঝরে যায়।
নব জন্মে হতে হয় মুঠো মুঠো প্রতিশ্রুতি নিয়ে মুক্তো শিশিরবিন্দু,
সবুজের গালিচায় গালিব হয়ে উঠো তখন।






চলছে ধর্মের নামে অপসংস্কৃতি
                  নীলকণ্ঠ কবি

আজকাল প্রায়ই দেখা যায় ধর্মের নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকার বাজেট ধরে ঘটা করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।কিন্তু সেখানে সাত্ত্বিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে আধুনিকতাকে প্রাধান‍্য দিতে দেখা যায়।বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় ডেকোরেশন ও আলোক শয‍্যায়।তাছাড়া চলছে প‍্যান্ডলে প‍্যান্ডলে প্রতিযোগিতা।কে কার চেয়ে কত টাকা বেশি খরচ করতে পারে।আজকাল ধর্মের থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় টাকাকে। আয়োজকেরা লোক সমাগম বাড়ানোর জন‍্য আয়োজন করে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।কিন্তু সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে চলে সিনেমার গান ও নৃত‍্য।কোথাও কোথাও দেখা যায় পশ্চিমী নৃত‍্যের তাল।
         লক্ষ লক্ষ টাকার বাজেটের পূজো আয়োজকদের দেখা যায় না দীন দুঃখীদের বস্ত্র বিতরণ করতে।পূজোতে সকলেই নুতন কাপড় পরিধান করে পূজো দেখতে আসে কিন্তু কখনো কেউ তাদের কথা ভাবে না যারা অর্থের অভাবে সন্তানের জন‍্য নুতন কাপড় কিনতে পারে না।তাদের পাশে কখনো কোন লক্ষ টাকা ব‍্যয় করা পূজো কমিটিকে দাঁড়াতে দেখিনি।





ছড়া 
জননী আমার মা 
                মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ

মায়ের মতো এই দুনিয়ায়
নেইতো আপন কেহ
মা জননী থাকলে দূরে
নিশ্বাস যায় উড়ে।

মাগো তোমার মায়ার ছায়া
পেতে ইচ্ছে হয়
ভুবন থেকে তোমার ছায়া
অনেক বড়ো তাই।

মা ডাকটি অতি মধুর
বলতে লাগে বেস
তুমি ছাড়া এই ভুবনে
কষ্ট জমে তেজ।

মাগো তুমি আমার কাছে
জান্নাতের রাস্তা
যেখান থাকো মাগো তুমি
করো একটু দোয়া।

মাগো তোমার চরন ধুলি
আজকে পেতে চাই
হঠাৎ যদি যাওগো দূরে
হচ্ছে অনেক ভয়।





হঠাৎ যদি তোকে

শঙ্কর ভট্টাচার্য 


"আর একটা স্যান্ডউইচ খা"
"না খেতাম কিন্তু খাবনা।"ঝাঁঝিয়ে উত্তর দেয় ঈশিকা, শৈবালের কথায় ।
শৈবাল অবাক হয়ে প্রশ্ন করে "কেন?"
"তুই আজ আবার মদ খেয়ে এসেছিস।কাল প্রতিজ্ঞা করলি আর খাবিনা"নীচু স্বরে বলে ঈশিকা ।শৈবাল অপরাধীর মত মাথাটা নীচু করে দাঁড়ায় ।ঈশিকা এ সি ক্যান্টিন থেকে হন হন করে হেঁটে বেরিয়ে যায়।সোজা ষ্টেশন।লক্ষ্য বাড়ী  ফেরা।
অন্যদিন হলে শৈবাল হয়ত ঈশিকাকে আটকে দিত কিন্তু আজ কোন চেষ্টা করল না ।নিজের অপরাধ বোধ হয়ত তাকে সংযত হতে বলল।
শৈবাল এবং ঈশিকা দুজনেই একই ইউনিভার্সিটি র ছাত্র ।ঈশিকা ইতিহাসের এম এর দ্বিতীয় বর্ষ ।সাধারন মানের ছাত্রী ।হয়ত টেনেটুনে প্রথম বিভাগ পেয়ে যাবে।আর শৈবাল?এককথায় বলতে গেলে জিনিয়াস ।রিসার্চ স্কলার।বিষয় নিউক্লিয়ার ফিজিক্স ।শুধু পড়াশুনা নয় সব বিষয়েই ওর পারদর্শিতা সকলকে আকৃষ্ট করে শুধু ওর দিকে।ক্রিকেটে ইউনিভার্সিটি ব্লু,ছাত্র রাজনীতিতে প্রথম সারির নেতা, আবৃত্তি ,গান ,নাটক কোন কিছুতেই ও পিছিয়ে নেই
প্রফেসর দের কথায় মাঝে মাঝে ক্লাসও নেয় ও।ওর ঠিকানা নেপাল সেন হস্টেল ।বালুরঘাটে র ছেলে।বাড়ী যাওয়ার যেন কোন তাড়াই নেই।দু
মাস আগে ওর মা ঈশিকাকে ফোন করে বলেছে প্রায় এক বছর হয়ে গেল তবু এখনও ও বাড়ী ফিরল না।দু মাস ধরেই ঈশিকা ওর কানের সামনে বলেই চলেছে" বাড়ী তে একবার যা,মা'র তো কিছু প্রত্যাশা থাকে তোর কাছে ,তারপর তিনি আবার ডায়াবিটিসের রুগী।"হচ্ছে, হবে করে কাটিয়ে দিয়েছে শৈবাল ।
গত সপ্তাহে ঈশিকা নিজে ওর যাতায়াতের দুখানা টিকিট কেটে ওকে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে "পঁচিশ তারিখ আমি তোকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসব, ওখানে  সাতদিন থাকবি।আগামী মাসের চার তারিখে তোর রিটার্ন ।"
বিস্ময়ে শৈবাল বলে "দশটা দিন ভোগে পাঠিয়ে দিলি তো?কুড়ি তারিখে আমার একটা এসাইনমেন্ট আছে।"তারপরেই সুর পাল্টে বলে "দশটা দিন তোকে দেখব না মূসা?"
ঈশিকা শ্লাঘা দেখিয়ে বলে "ন্যাকামো করিস না"
পিঠের বেস গীটারটা খুলে একটা ইংরাজি গানের সুর দু কলি গেয়ে শৈবাল বলে "আসলে জানিস মুসা সকলের সঙ্গে যখন থাকি তখন নিজেকে খুঁজে পাই আর একলা হয়ে গেলেই নিজেকে কেমন অনাথ বলে মনে হয় "।
ঈশিকা ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে "আমি তো আছি না কি?
আবেগে ঈশিকার হাতটা ওর নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে "তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি না তো কোনদিন? দ্যাখ আমি একটু আনঅরগানাইছড, সেটা আমি বুঝি।সেটা আমার  ত্রুটি ।তবুও নিজেকে সংশোধন করতে পারি না।কিন্তু তুই তো জানিস আমি মেটিরিয়াল টা খুব খারাপ নই।"
বাড়ী  থেকে আনা পরোটা তে ফুলকপির তরকারি মাখিয়ে শৈবালের গালে দিত দিতে ঈশিকা বলে " সমুদ্র কে ছেড়ে কোথায় যাব আমি?সে তো নিজেই আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।তোর সাথে মাঝ সমুদ্রে আমিও ভাসতে চাই শৈবাল ।তোর উদ্দামতা আর উথাল পাথালে আমিও স্রোতের নাগরদোলায় চড়তে চাই।"
দশ দিনের জন্য বালুরঘাটে গিয়ে ঠিক চারদিনের মাথায় ফিরে এল শৈবাল ।ওর সহপাঠীরা বলে মদ আর গাঁজার টান ও ফিরে এসেছে।
আহত হয়েছে ঈশিকা ।কোন কথাই বলেনি শৈবালের  সাথে।একটু যেন ফাটল দেখা যায় ওদের সম্পর্কে র মাঝে।ঈশিকা খবর পায়  গভীর রাতে ভরপেট মদ খেয়ে, সঙ্গী সাথীদের নিয়ে আর সব সময়ে র সাথী ঐ বেস গীটারটা বাজিয়ে সুকান্ত সেতুর ওপর ফুটপাথে বসে গান গায় ।কখনও কখনও ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে ।এমন অনেকদিন গেছে রাতের পুলিশরা ওকে হস্টেলে পৌঁছে দিয়ে গেছে।আসলে ওরাও ওকে চেনে।
আজ অনেকদিন হয়ে গেল ওদের বাক্যালাপ বন্ধ ।সম্পর্কের ভাঙনটা প্রায় অনিবার্য হয়ে গেছে।ওদের প্রিয় বন্ধু অনি আর নিপার কাছে একদিন সব সংযম কাটিয়ে চোখের জলে প্লাবন এনে বলেছিল ঈশিকা "পারলাম না রে অনি ,আমি হেরে গেলাম।আর আসব না এখানে ।"
উদ্বিগ্ন নিপা বলে "পরীক্ষা দিবি না?ফাইনাল?"
ঈশিকা বলে "হ্যাঁ  সেটা হয়ত দেব।"
ও বাড়ীতেও বলে "আমার বিয়ের জন্য তোমরা পাত্র  দেখ।আমি বিয়ে  করব।"
ওর বাবা একটু অবাকই হন ,মা'সবকথা জানতেন,উনি বাবাকে সব বুঝিয়ে বলেন।
পছন্দের পাত্র তৈরি ই ছিল।সিভিল ইঞ্জিনিয়র ।বর্তমানে সিঙ্গাপুর থাকে।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সব ফাইনাল হয়ে গেল ।এমনকি বিয়ের দিন পর্যন্ত
ওদিকে শৈবাল তখন বেহেড মাতাল, গাঁজাড়ু।ওর বাড়ীতে খবর যেতেই ওর দুই দাদা ছুটে এল।গোবরডাঙার একটা রিফরমেশন সেন্টারে ওকে ভর্তি করে দিল।
যেদিন ঈশিকার বিয়ে  ,ওর বন্ধুরা বলে শৈবাল সবই  বুঝতে পেরেছিল।ওষুধের ঘোরে আচ্ছন্ন, অস্পষ্ট স্বরে বলেছিল "মাই বার্ড ইস গোয়িং টু হার ওন নেস্ট "।
রিফরমেশন সেন্টারে দেবার পর মাত্র চার মাসের মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল ।তবু ওর দাদারা আটমাস রেখে সম্পূর্ণ সুস্থ করে যখন শৈবাল ওর নিজের কাজে আবার ফিরে এল তখন সে অন্য মানুষ ।মদ,গাঁজার ওপর বিন্দুমাত্র আসক্তি নেই ওর।এখন ও শুধুমাত্র সিগারেট খায় ।দেড় বছরের মধ্যে ওর পি এইচ ডি সম্পূর্ণ করে ভারতের এক বিখ্যাত নিউক্লিয়ার গবেষণা কেন্দ্রে যোগদান করল এবং খুব অল্প দিনের মধ্যেই ওর জাত চিনিয়ে দিল।কেন্দ্রের ডাইরেক্টর প্রফেসর রঙ্গরাজনের এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গবেষক হল শৈবাল ।
ঈশিকা এখন সিঙ্গাপুর ।প্রায় তিন বছর হয়ে গেল বিয়ে হয়েছে ।ওর স্বামী সৈকতের অত্যন্ত মার্জিত ব্যবহার।বিচক্ষন ছেলে।একটা বিদেশী ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়র ।এখনও  ওদের কোন ইস্যু হয়নি।
বর্তমানে শৈবাল একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত কাজটায় সার্থকতা পেলে ওর নাম সারা পৃথিবী জানবে।
ল্যাব থেকে ফিরে কোয়ার্টার এর এ সিটা বন্ধ  করে দেয়  শৈবাল ।গা টা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে।কেয়ারটেকারকে বলে "এক কাপ গরম কফি করে দিনত সাধু দা।এই সাধুদা বাঙালী ।কোলকাতা থেকে শৈবালের কালেকশন।চেন্জ না করেই শৈবাল কমপিউটারের সামনে বসে।একটা ভাবনা অনেকক্ষন থেকেই মাথায়  ঘুরপাক খাচ্ছে ।
সাধুদা কফির কাপটা টেবিলে রেখে বলে "রাত এখন এগারটা, খাবেন কখন এর পর? এরপর তো পঁচিশ  তারিখ হয়ে যাবে।"
শৈবাল বলে "একটু পরেই খাচ্ছি ।আপনি বরং খেয়ে  শুয়ে  পড়ুন ।"
সাধুদা  চলে যায় ।শৈবালের মনে পড়ে কাল পঁচিশে আগস্ট ।মুসার মানে ঈশিকার জন্মদিন ।মোবাইল টা তুলে নেয়  হাতে।কয়েক সেকেন্ড ভেবে নেয় কাজটা ঠিক হবে কিনা।কুন্ঠা কাটিয়ে একটা মেসেজ পাঠায় ঈশিকা কে।শুদ্ধ  বাংলা ভাষায় ।"আগামীকাল দিনটা ফিরে আসুক  বার বার হাসি আর আনন্দে ।"মেসেজটা পাঠিয়ে মোবাইল টা টেবিলে রাখে।ভাবে হয়ত এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মুসা।যাক যখন দেখবে যদি উওর দেবার হয় তো দেবে।
এক মিনিটের মধ্যে ই শৈবালের মোবাইলটা শব্দ করে বেজে ওঠে।ঈশিকার প্রত্যুত্তর "তুইএখনও  আমাকে  ভুলিসনি জিৎ?" ঐ নামেই শৈবাল কে আদর করে ডাকত ঈশিকা ।তবে সব সময়  নয়।।
আবার মেসেজ ঈশিকার  "জিৎ কথা বল,চুপ করে থাকিস না প্লীজ।তোর কথা যখন কাগজে পড়ি গর্ব
হয় আমার ।মনে হয় সেই ই আমার  জিৎ আমার সমুদ্র ।তুই নিশ্চয়  বিয়ে করেছিস?"
সংক্ষিপ্ত উত্তর শৈবালের "না।আর করবও না।"
প্রসঙ্গ পালটাবার জন্য  শৈবাল বলে "তুই নিশ্চয় খুব ভাল আছিস তোর হাজবেন্ড আর বাচ্চা কে নিয়ে?"
ঈশিকার উত্তর "সৈকত খূব ভাল মানুষ ।আর আমাদের এখনও  কোন ইসু হয়নি।মানে আমি চাইনি তাই ।"
মানে তুই বিবাহিত জীবনের আনন্দ উপভোগের সময়টা আরও দীর্ঘায়িত  করতে চাস? দ্যাটস গুড।ক্যারি অন বেবি।"
ঈশিকার উত্তর "না রে শৈবাল  ,আমার খুব ভয় হয়।"
শৈবালের  প্রশ্ন  "কিসের ভয় তোর?"
অনেকক্ষন পর ঈশিকার উত্তর  আসে "না রে আমার স্বামী খুব শান্ত, স্থিতধী, খুব কম কথা বলে।শুধু নিজের কাজটুকু  বোঝে।ওখানে ও কমিটেড ।বাইরের কোন খবর ও রাখতে চায় না।"
শৈবাল  বলে "সে তো খুব ভালকথা।"
ঈশিকা বলে "জিৎ, আমি যে একটা সাগর চাই।স্রোতস্বিনী,তরঙ্গিত সমুদ্র ।যে থামতে জানেনা।দূর্বার,দূর্বিনীতও বটে।একেবারে  তোর মত"
মেসেজ টা পেয়ে শৈবাল  অনেকক্ষন হাসে।ইতিমধ্যে ঈশিকার  মেসেজ আসে "কি রে উত্তর  দিচ্ছিস না কেন?"
অলস হাতে মোবাইল টা তুলে শৈবাল  টাইপ করে "এর কি উত্তর  হয় বল?"
শৈবাল  বোঝে ঈশিকা আবেগ প্রবন হয়ে পড়েছে ।
ঈশিকার মেসেজ  "জিৎ  ,আমাকে একটা ভিক্ষা দিবি?
অবাক হয় শৈবাল  বলে "কি ভিক্ষা?"
একটা উত্তাল সমুদ্র, একেবারে  তোর মত।তোর ঔরসজাত শুধু  একটিবার।আমার জন্মদিনের  উপহার ।দিবি জিৎ? না বলিস না ।প্লীজ।"
শৈবাল  নিজেকে সংযত করে বলে "অনেক রাত্রি হল।এবার  শুয়ে পড়।আমি মোবাইল টা বন্ধ  করছি।







সম্প্রতিকালে ভয়াবহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মানব সমাজের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলেছে (প্রবন্ধ)
            আব্দুল রাহাজ

বর্তমান সময়ে এ এই মারণব্যাধি করোনা ভাইরাস কে ঘিরে বিশ্ব থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মানুষ এক হতাশ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে অসহায় মানুষ গুলোর পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্যাপকভাবে চিন্তিত এই করোনা নিয়ে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের উপর এক ভয়াবহ তার রূপ প্রভাব বিস্তার করেছে। দেশের শিল্প থেকে অর্থনীতি সংস্কৃতি খেলাধুলা চলচ্চিত্র জগতের উপর এই এই কোরোনার প্রভাব পড়েছে ফলে একটি দেশের অর্থনীতিতে অনেকটাই তলানীতে পৌঁছেছে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন। আর এই করোনার আকালে পড়ে কত মানুষ দুবেলা-দুমুঠো খেতে না পেয়ে না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে কত শ্রমিক নিজের জন্ম ভিটাতে আসতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ছে কেউ গাড়ির তলায় পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে আবার কেউ মাইলের পর মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরছে সত্যি বলতে কি মানব জাতির উপর এই করোনা এক ভয়াল রূপ নিয়ে অবস্থান করছে যা প্রতি পদে পদে মানব জাতি এক অন্য রকমের সাক্ষী হয়ে থাকছে। এরূপ ভিত্তিতে বলা যায় করো না অসহায় মানুষগুলোর যে স্বাভাবিক জীবনযাপন তা অনেকটাই বিপর্যস্ত করে দিয়েছে সমগ্র পৃথিবীবাসী এই কণার আবহে পড়ে দিনগুলো ভয়ে ভয়ে কাটাচ্ছে। ফলে করো না মানব জাতির সামনে অসনি সংকেত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে যা পরবর্তী প্রজন্মকে এর ফল ভুগতে হবে বলে আশা করা যায়। ফলে করোনার আকাল মানবজাতির সম্মুখে এক ভয়াবহতা রূপ নিয়ে পৃথিবীতে কালো অন্ধকারের মুখে ঠেলে দিয়ে সে অবিরাম ছড়িয়ে পড়ছে। যা মানব জাতির কাছে ভয়াল বিপদ এর অশনিসংকেত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।







                " অসম্ভব জীবন "
           
                 হামিদুল ইসলাম

                   
কবিতার তীর্থে জৈবিক অন্বষণ
বারবার আহ্বান করে শান্ত আকাশ
হে সম্রাজ্ঞী ! তোমাকে পেতে চাই
হাত পা বাঁধা ঈশ্বর
গর্ভবতী ধানক্ষেত    ।।

তীর্থ সলিলে ডুবন্ত জাহাজ
হাজার হাজার প্রাণ
মৌনতার মিছিলে দাঁড়িয়ে থাকে অলস মধ‍্যাহ্ন কাল
নিঝুম রোদ
ছেয়ে রাখে জীবন   ।।

জীবনের গান গাই
কখনো পাড়ি দিই মরুতীর্থ হিংলাজ
কুন্তিরা ডুবে মরে হিংলাজে
অভিশপ্ত জীবন
প্রতিদিন অন্বেষণ করি শামুকের খোল   ।।

তোমার পূজোর বেদিতে
নির্বিকার অষ্টাদশীর চাঁদ
ঘুন পোকায় খেয়ে নেয় সমস্ত কলেবর
অসম্ভব জীবন ! পেরিয়ে যাই মরুভূমির অগোছালো রাত    ।।





" উপকন্ঠ প্রাত‍্যহিক বিভাগ"
*অণুগল্প*
     রূপকথা ও চুপকথা
                      টুম্পা মুখার্জী


ঝমঝমে বৃষ্টি বড় ভালো লাগে শ্রীপর্ণার। শার্সিতে কেমন জলছবি আ়ঁকা হয়।মনে হয় কোনো দক্ষ চিত্রকর যেন শুধুমাত্র শ্রীপর্ণার জন্য রামধনু রঙে অপূর্ব ছবি এঁকে চলেছে। সাথে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম কফি, আর জগজিৎ সিংয়ের গজল। উফ্! তিনতলার সুপ্রশস্ত ব‍্যালকনিটাকে স্বর্গ মনে হয় । অবিরাম যদি এমন বৃষ্টি হয় , রাস্তা তাহলে নদী আর তাদের বড় বাড়িটা একটা দ্বীপ... আর শ্রীপর্ণা সেই দ্বীপের রাণী--- এমন ভাবনা ভাবতে ভাবতে দামি সোফার নরম ওমে আয়েশে ডুবে যায় শ্রীপর্ণা।

শ্রীপর্ণাদের অট্টালিকার ঠিক উল্টো দিকেই দরমার বেড়া আর টালির চালের ছোট্ট বাড়ি মাধবীর। ইতিমধ্যে সাত মাসের ঘুমন্ত শিশুটাকে তিনবার জায়গা বদল করে শুইয়েছে, শেষে মশারির উপরে প্লাস্টিক বিছিয়ে দিয়েছে, যাতে বাচ্চাটা না ভেজে।মাঝে মাঝে দাওয়ার বাইরে উঁকি দিয়ে মেপে আসছে বৃষ্টি থামার সময়। একরাশ নিরাশায় আচ্ছন্ন হয়ে মাধবী মনে মনে ভাবে, সেই কোন সকালে জামা কাপড়ের গাঁটরি সাইকেলে চাপিয়ে ফেরি করতে বেরিয়েছে মানুষটা। সস্তার পুজি যদি ভেজে সাড়ে সব্বোনাশ! বাচ্চাটার দুধটাও দুদিন হলো ফুরিয়ে গেছে, জল-সাবু জ্বাল দিয়েই খাওয়াচ্ছে। হে ঠাকুর, বৃষ্টিটা কমিয়ে দাও।
              -----//----




প্রকৃতি
         সত‍্যব্রত ধর

আকাশের সংসারে লালচে চোখের মেঘের সংকেত পেতেই,
শিকড়ের টানে বারবার ছুটে যাই ঈশান কোণে।
সেখানে শামুকের খোল পরিযায়ী শিশিরের আনন্দধারায়,
খোলা মনে চুপিসারে মুক্তির স্বাদ নেয়।
তখন ব‍্যর্থ মহাযজ্ঞের অক্ষম অস্ত্রগুলো,
ভয়ার্ত মুখে মৃত্যুর হাতছানিতে সঞ্জীবনী মন্ত্র আওড়ায়।
সৌজন্যের হিসেব কষে যৌবনের কন্ঠস্বর শুনে,
কোলাহলে বন্দী হৃদয়ের চরিত্র মাপা হয়।
এরপর দোদুল্যমান দুপুরে দৃষ্টিকটু ভাবনায়,
বানানের প্রেম ভুলে ছন্দের তালিম নেয় ইউনিটের নব যোদ্ধা।
আমি ভীড়ে ভরা রুক্ষ কংক্রিটের সভ‍্যতা পেরিয়ে,
জীবনের পাঁচালীতে অনাদি সুখ খুঁজি।
সেই মন মাতানো পাগল করা একফোঁটা সুখ মেলে,
শুধুমাত্র নদীর কলরব ও সবুজ কচি পাতার প্রকৃতিতেই।








ভ্রমণকথা 

এক বেলা ডাউকিতে 
 - অগ্নিমিত্র 
   কখনো এমন নদী দেখিনি , যার তলদেশ দেখা যায় । ...এমন নদী দেখিনি যা দুটি দেশের মধ্যে বিভাজন করে। ..তাই গেলাম গুয়াহাটি  থেকে শিলং হয়ে ডাউকি। ..
 ঘন্টা খানেক পর ডাউকিতে পৌঁছলাম। ডাউকি নদী এখানে মেঘালয় পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে । নদীর জল টলটলে, ছোট ছোট টিলার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে, জল স্বচ্ছ!
 নৌকোয় আমরা, চালাচ্ছে এক খাসি বালক। উপরি পাওনা তার হুইসলিং ।..একের পর এক হিন্দি গানের সুরে সে শিস দিয়ে চলেছে। চারদিকের দৃশ্য অনুপম। 
 ওপারে বাংলাদেশ, একটা দড়ির ব্যবধান মাত্র । ওখানে কুলের আচার আর ঝালমুড়ি নিয়ে বিক্রেতা দাঁড়িয়ে ।
  দড়ির এপার থেকেই হাত বাড়িয়ে কুলমাখা খাওয়া হলো। সে বলে -' ভালো লাগলে ট্যাকা দেবেন কত্তা ! নইলে না। '
 এপারে কারো কথা বুঝছি না; ওপারে সবার কথা প্রাঞ্জল । অদ্ভুত অনুভূতি!
 কুলের মাখাটা খুব ভালো ছিল, তবে পয়সা দেবার সময় পাইনি ।
  পারলে আবার যাবো ওখানে। .. এই তালাবন্ধ অবস্থায় সুন্দরী ডাউকি কেমন আছে কে জানে!!



🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵


© সেক আসাদ আহমেদ






0 comments: