"উপকণ্ঠ 06 আগষ্ট সংখ্যা "
"উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-06/08/2020,বৃহস্পতিবার
সময় :- বিকাল 3 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে
Click Here
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে
Click Here
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇
সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত সেক আসাদ আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প.... আজ প্রথম অংশ প্রকাশিত হল
নিজের পরিচয়
সেক আসাদ আহমেদ
(প্রথম অংশ)
দুপুর ১টা
রতনপুর প্রাইমারি স্কুলে টিফিনের ঘন্টা বেজে উঠল। বৈশাখ মাসের কড়া রোদ্দুর। ভ্যাপসা গরমে বাইরে বেরুনো দায়। গা যেন পুড়ে যায়, তাই হেডমাস্টার মশাই স্কুলের বাইরে বেরুতে বারণ করেছেন। কিন্তু আজ একমাত্র ব্যাতিক্রম হল খালেক। কখনও শিক্ষকের আদেশ অমান্য করেনি, তবুও প্রচন্ড গরমে বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল।
আজ স্কুলে আসার পর থেকে মনটা কেমন ছটফট করছিল। কিছু ভালো লাগছিল না ওর, নিয়মিত ক্লাসে পড়া দেয়। কিন্তু আজ পড়া করে এসেও পড়া দিতে পারেনি। এর জন্য ক্লাস টিচারের বকুনি ও খেতে হয়েছে।
কেন? কেন সে পড়া দিতে পারেনি ?— মনে প্রশ্ন জাগল তার।
বাড়িতে তো মা অসুস্থ! কিছু হয়নি তো? ভাবতেই গা শিউরে উঠল।
বাড়ি থেকে স্কুল মাত্র ৭ মিনিটের হাঁটা পথ।
এগিয়ে চলল খালেক।
মোড়ের রাস্তায় রাইসু জেঠুর কাছে খবর পেল মা হাসপাতালে। আর কোনো কথা না শুনে সোজা দৌড় দিল ওদিকে। হাসপাতালে পৌঁছে দেখল বাবার চোখে জল...
এখন সারাদিন বাড়িতে একা থাকে খালেক।
বাবাকে তো পেটের জন্য ফেরি করতে যেতে হয়। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করেনা, স্কুলেও যায় না। যেখানে সেখানে একা বসে কাঁদে। মনের আনন্দ যে ওর হারিয়ে গেছে।
এই অল্পবয়েসী শিশুকে কে মানুষ করবে? কে তার হারানো মুখের হাসি এনে দেবে। এভাবে আর কতদিন চলতে পারে।
শেষে ইউসুফ বাবু ঠিক করলেন ওর জন্য নতুন মা আনবেন।
নতুন মা পেয়ে তার মুখে সত্যি হাসি এল, কিন্তু তা বেশিদিন নয়।
কথায় বলে ফুটো কলসিতে আর কতক্ষণ জল ভর্তি থাকে।
খালেক যখন ১১ বছরের হল তখন বিমাতার পুত্র সন্তান হল।
নতুন মা আর যেন ভালোবাসে না। কেমন যেন হিংসুটে হয়ে গেছে, কথায় অকথায় গলা চড়ায়। বাড়ির কাজ কর্ম করায়... এমনকি এতো থালা-বাসন ও মাজিয়ে নেয়।
বাবাকে জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। তাই মুখ বুজে সব সহ্য করেছে।
চলবে.....
সোনাদের সেই আতা গাছ
আব্দুল রাহাজ
লালু ভুলু আর সোনা ওরা সবাই ছেলেবেলার বন্ধু খুব আনন্দে দিন কেটেছে ওদের ছেলেবেলার দিনগুলি খেলার একটাই জায়গা ছিল সোনাদের সেই আতা গাছ সেখানে ওরা রোদে জলে শীতে সব সময় খেলা করতো কত খেলা । ওরা এখন সবাই শহরের স্কুলে পড়ে গ্রামের বাড়িতে আর আসে না ওরা একবার পুজোর ছুটিতে এসেছে আতা গাছের নিচে বসে সে কি গল্প ওরা এখন বেশ বড় হয়েছে । একদিন লালু ভুলু আর সোনা স্কুল থেকে বাড়ি আসার সময় পথে দেখে আতা গাছ কে কয়েকজন লোক কাটবে বলে দাঁড়িয়ে আছে ওর দাদু এসেছে সোনার সোনার ছোট কাকু বলল সোনা গাছ এখানে থাকবে না এখানে আমি বড় বাড়ি ওরা সবাই মিনতির সুরে বলল তোমরা কাটবে না গাছ ওরা গাছ জড়িয়ে ধরে রাখল কিন্তু ওই হিংস্র রূপে লোক কাটারি নিয়ে এগিয়ে আছে সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে গাছ বাঁচানোর কথা তাদের এই খবর শুনে থানা থেকে পুলিশ এসেছে পুলিশ এসে সব খবর জেনে গাছ কাটতে বাধা দিলেন তারপর পুলিশ কাকু ওদের এই সাহসিকতার জন্য চকলেট খেতে দিলেন গ্রামের মানুষ দেখে নেয় সাহসিকতার পরিচয় চারিদিকে সোনা ভুলু লালু দের কথা ছড়িয়ে পড়ে এই ভাবে দিন যায় দিন আসে ওরা ছায়াতল আতা গাছের নিচে লুকোচুরি খেলা থেকে শুরু করে আরো কত কি খেলা করেছে ওখানে কিন্তু গ্রামের পাঠশালায় দিকে শেষ হয়ে আসছে ওরা বেশ চিন্তায় এদিকে বাড়ি থেকে সবার শহরে পড়ার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে সেইমতো সোনা দাদুরা আতা গাছ কাটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সব মিলিয়ে ওদের কাছে এক কঠিন অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল আতা গাছ কে কেন্দ্র করে। দিনটা বেশ মেঘাচ্ছন্ন গ্রামের পাঠশালা শেষের দিন তখন ঘড়িতে নটা ওরা আতা গাছের নিচে এসে আতা গাছ কে জড়িয়ে ধরে বলল আমরা আবার আসব আবার আসব অশ্রুসিক্ত জলে তাকে বলে গেল ওদের কাছে এই আতা গাছ ছিল শৈশবের খেলার সাথী ওরা তাকে ছেড়ে চলে যাবে কালকে এদিকে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল সাধুদের পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে হইহই করে শেষ বারের মত একসঙ্গে সবাই স্নান করল ওদিকে সাড়ে দশটায় স্কুলে চলে গেলো দেখতে দেখতে বেলা তিনটার সময় গ্রামের পাঠশালা শেষ করে বাড়িতে ফিরল বাড়ির লোকেদের কড়া নির্দেশ কাল ভোরে চলে যাবে শহরের স্কুলে আর গ্রাম দেখা হবে না আর আতা গাছে দেখা হবে না সারারাত ওরা যেন বিষন্ন মন নিয়ে কাটাল তারপর ভোর বেলা পাখির কুজনে সূর্যের উজ্জ্বল রশ্মিতে চারিদিকে বৈচিত্র্যে ফুটে উঠলওরা চার রাস্তার মোড়ে এসে বাছাই করে সবাই শহরে পড়তে চলে গেল আর এদিকে আতাগাছে তাদের আশীর্বাদ করল চেয়ে থাকল তাদের অপেক্ষায় অপেক্ষায়। এই আতা গাছ সোনা ভুলু লালুর কাছে ছেলের ছেলে বেলার খেলার সাথী সে আজ এক হয়ে গেল তাদের এই ছেলেবেলার স্মৃতি ওদের মনে প্রাণে অমর হয়ে থাকল আজীবন যা ওরা শহরে পড়লেও তাদের মন পড়ে থাকে সেই আতা গাছে কে নিয়ে তাদের কাছে ছিল এই আতা গাছ আজীবন স্মৃতি বিজারক যা তাদেরকে প্রতি পদে পদে স্মরণ করিয়ে দেয়। এইভাবে সোনাদের আতা গাছ চেয়ে থাকে তাদের অপেক্ষায় অপেক্ষায়।
শব্দের সন্ধানে
রঞ্জনা রায়
শব্দ পাতায় জল ঝরে
জ্যোৎস্নায় রঙিন উপকথা জীবন্ত হয়
মহুয়া ফুল সুগন্ধ ছড়ায় ।
শাল পিয়ালের জঙ্গল এখনও খোঁজে ঝড়
তোমার হারিয়ে যাওয়া সেই সবুজ পাঞ্জাবি
শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে সেদিনও বলেছিলে
রূপকথা, চোখের সাগরে চোখ ডুবে যায়
তুমি খুঁজে আনো গন্ধর্ব মুক্তকনা,প্রেমবিন্দু
তৃষ্ণা, শুধু অতৃপ্ত নিবিড়তা,খাদের কিনারে
একটি শুদ্ধ পলাশ স্বাতী নক্ষত্রের স্বপ্ন দেখে ।
জল জীবনের দোসর, প্রবাহিত জীবনমাতৃকা
প্রেম আনে বৃষ্টির সংকেত রামধনু আকাশে
তুমি সাজিয়েছ কেয়াপাতার নৌকো আনমনে
আমি প্রেম খুঁজি শব্দের অন্তরে, শব্দের তুফানে ।
তাহাদের কথা
সৌম্য ঘোষ
কখনো পাহাড়ে গেছি , কখনো দিগন্ত
হারিয়ে উত্তাল সমুদ্র
বালুতটে রৌদ্ররা চাদর বিছিয়ে
পাহাড়ে প্রসন্ন শাল , শিরিষের মাথা ।
কখনো বট অশ্বত্থের কথা ভেবেছি
এমন কি জুঁই , কেতকী , মাধবীলতাদের কথা ,
গভীর রাতে যখন স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না
আমার ঘরে , বিছানায় চাদরের উপর
কোমল উপস্থিতি ।
বস্তুতঃ তোমাদের কথা একবারও ভাবা হয়নি।
যে বিষন্নতা ঘিরে তোমাদের অসহায়
দিনরাত্রি
ভয় , ক্ষুধা ও ঘৃণার মধ্যে
তোমাদের যাপন
তার কথা একবারও লিখিনি ।
তোমাদের ভেঙ্গে যাওয়া মুখের ছবি
এক অব্যক্ত কান্না বোবা হয়ে
শুকিয়ে গেছে ; বার্ধক্য , অন্ধত্ব
একাকার হয়ে নিরালা সন্ধ্যা আসে ।
এরপর আঁধারে ঢেকে যাবে চারিদিক
আমাদের দেশ , ঈশ্বর , প্রেম ।
একদিন এই নির্লিপ্ত মুখ
আমার কাছে আসবে , জবাবদিহি নিতে ।।
উজ্জ্বল কন্যা
মৌসুমী গুহ রায়
পশু হাসপাতালে খরগোশ কে নিয়ে,
মেঘার পশু প্রেম দেখ চেয়ে।
কবেকার সন্ধ্যা বেলায় তালের বড়া,
স্যরের কাছে মন দিয়ে পড়া।
জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রস্তুতি তুঙ্গে,
মা, বাবার আশীর্বাদ সঙ্গে।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে,
জীবন কেটেছে আনন্দে।
প্রথম চাকরি খেমাশুলি হেলথ সেন্টারে,
সাড়ে তিন বছর কেটেছে জীবন সংগ্রামে।
মেঘার শৈশব দিয়েছে আনন্দ অনেক,
এখন সে কিশোরী, উজ্জ্বল কন্যা এক ।
কবিতা
বিশ্বজয়ী
ডঃ রমলা মুখার্জী
ভাগ্যজয়ে দুর্ভাগা তুই পিছিয়ে পড়া দল-
শাঁখা-সিঁদুর লেবেল সাঁটা, পায়ের বেড়ি মল।
মেঘ ভীষণ গর্জে উঠে করে প্রতিবাদ -
"ওপরে আয় আছি আমি, মুঠোয় ধরি চাঁদ।
দেখ রে চেয়ে অসীম, অবাধ, খোলা নীলাকাশ...
ঘুঙুর পায়ে তাথৈ তাথৈ নারীর হোক প্রকাশ।"
ঝড় বলে,"বাতাসেতে ওড় না সন্ সন্......
ভয় ভেঙে ভয়ঙ্করী, ঝঞ্ঝা, মহারণ।
উড়তে উড়তে পেরিয়ে যা অন্ধ সংস্কার -
ছাতা পড়া নিয়ম-নীতি উড়িয়ে পগার পার।"
সাগর ডাকে,"আয় ছুটে আয় ভেঙে ঘরের তালা-
বিশ্বজয়ী বিশ্ব ঘুরে আন রে জয়ের মালা।"
পত্নী বিহীনা যজ্ঞ
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
শ্রী রাম রাজা।
করছেন যজ্ঞ।
চির দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
রাজকর্মে ইনি।
হোমাগ্নিতে ঢালছেন ঘী, খাঁটি।
বড় ভাগ্যবান, দেশের মাটি।
বড়ই উনি বিজ্ঞ।
সীতা পাচ্ছেন সাজা।
ত্যাজ্যা, পরিত্যক্তা তিনি।
স্বামীর কাছে উনি অজ্ঞ।
সোনার পত্নী পাশে।
জীবন্ত পতি সিংহাসনে।
প্রেমের সম্পর্ক করুন হাসি হাসে।
পতি পত্নীর বন্ধন ছিন্ন।
দেহে, মনে তাই তো ভিন্ন।
জন্ম পরিচয় যাঁর
মহর্ষির, রাজর্ষীর হল কর্ষণে
এই তো জীবনের পরিণতি তাঁর।
অশ্রু তাঁর জীবন বর্ষণে।
বঞ্চিতা স্বামী পর্শনে।
ঠাঁই নাই রাজ রানীর পদ হর্ষনে।
রাজার কোনও ভ্রুক্ষেপই নাই
রানীর অদর্শনে।
ন্যায় পরায়ণ, প্রজা বৎসল তো তাই।
পত্নী কী নন প্রজা?
ন্যায় বিচারে তিনি নন কী বঞ্চিতা?
প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কী সোজা?
প্রশ্ন করে কলির সীতা।
ভারতের অসহায় দুহিতা।
আজও বাকী রয়ে গেছে অধিকার খোঁজা!
চির বিরহী
বিপ্লব গোস্বামী
আমি চির বিরহী
তুমি আমার চির বিরহিনী সতী ।
কভু মনে জাগে নাই কাম
কভু জাগে নাই রতি।
যুগে যুগে না পাওয়ার
তৃষা জাগাইয়া ;
যুগে যুগে জন্মিয়াছি মোরা।
করিয়াছ প্রেমি আমায়
আমি করিয়াছি প্রিয়া।
যেদিন আদি সৃষ্টি হয়িলো বিরহ
বিধাতা দানিলা তব বুকে মম বুকে
বেদনার দাহ্ !!
জন্মিয়াছি তরু হয়ে
তুমি হলে পাতা ;
ঝরে গেলে অকালেতে !
না মিটিতে আশা,তৃষা
না ফুরাতে কথা।
তারপর দাপর যুগ
অন্তরেতে মহা রোগ !
আমি কালা তুমি রাধা
মিলনেতে শত বাধা।
শেষে শেলিম আর আনারকলি
দিতে হলো প্রেমের বলি !!
অতৃপ্ত ভালোবাসা
হরিহর বৈদ্য
তুমি আমার সোনালী স্বপ্ন কবিতার রাজকন্যে,
তুমি নূতন ধানের সুবাসিত ঘ্রাণ যেন নবান্নে।
তুমি আদিম বন্য ভালোবাসা, গভীর অরন্যে-
তোমার প্রেমই আজও টানে মোরে সেই জন্যে।
তুমি হিমাচল হতে নেমে আসা ঝর্ণার কলোতান,
তব হাসিভরা গানে মোর হৃদয়ে সঞ্চিত হয় প্রাণ।
তুমি বেদুইন মেয়ের প্রেমজাল বোনা যেন এক উপাখ্যান,
বিনিময়ে যে চায়নি কখনো ভালোবাসার প্রতিদান।
তুমি উদার সুনীল আকাশে উদিত পূর্ণিমা চাঁদ সম,
উদভাসিত স্নিগ্ধ আলোতে ভরাও পৃথিবী মম।
তুমি অসীম সাগরের বুকে যেন দুরন্ত উচ্ছাস,
তুমি অবলা নারীর অব্যক্ত বেদন নির্মম ইতিহাস।
তুমি পাতাঝরা কোনো কালবৈশাখী কিংবা এযুগের আমফান,
তুমি গৃহ-হারাদের ক্রন্দনধ্বনি, বিপ্লবীর জয়গান।
তুমি একরাস প্রসফুটিত ফুলের সুগন্ধে ভরা বাতাস,
তুমি সোনালী আবির মাখানো কোন নূতন ভোরের আকাশ।
তুমি মুক্ত বিহঙ্গের গান গাওয়া ঠোঁটে মিষ্টি কুহুতান,
তুমি পৌষ-পারবনের সুস্বাদু যেন পিঠের-ই আঘ্রাণ।
তুমি শিতের রাতে সুখের আবেশে মধুর স্বপ্ন যেন,
বিদীর্ণ মনেতে মাঝে মাঝে এসে ধরা দিয়ে যাও কেন?
জানি তুমি ভুলতে পারনি আজও এই অধমেরে,
জাতের ঐ অজুহাত টুকু ভালোবাসা নিলো কেড়ে।
ভালোবাসা
হামিদুল ইসলাম
কতোকাল দেখি নি তোমায়
ভুলে গেছো নিশ্চয়
কখনো ফুল কখনো মালা ।
শুকনো ফুল আর মালা
তোমার সুন্দর মুখ
ভুলে যাই তবু ভুলতে পারি না এতোটুকু সুখ ।
দুঃসহ রাত একা কাটি
বিনিদ্র চোখ তোমাকে জড়ায়
আমি থেকে যেতে চাই তোমার আঁচলের ছায়ায় ।
একটু জায়গা দাও তোমার অন্তর্বাসের ভেতর
আমি অবোধ শিশু
তোমার প্রেমে হয়ে যাবো যিশু ।
বন্যার কবলে
মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ
মুশোল ধারা বৃষ্টির তোড়ে
গ্রাম গুলো বন্যার যুদ্ধে
ঘর গুলো সব পড়ছে খোসে
গাছ গুলো যাচ্ছে হেলে।
পাড়া পোড়সি সব চিন্তা করে
বন্যার জল কমবে কবে
রান্না খাওয়া বন্ধ তাদের
বন্যায় খাদ্য সব গেলো ভেসে।
দাদি নাতনি খাদ্যের খোঁজে
যাচ্ছে হাঁটুজল ঝাঁপিয়ে
মা তার কাপড় কাছে
কি হবে সব ভাবছে বসে।
রাস্তা সব হলো নৌকার পথ
গাড়ি নৌকা চলছে পাশাপাশি
দেখতে বেশ লাগছে মজা
চিন্তায় আবার কান্না দূঃখে ভরা।
অনাহারে তারা থাকবে ক'দিন
তাইতো মাথায় হাত প্রতিদিন
বন্যার জন্য গ্রাম হাসছে খিলখিল
রাজত্ব করবে তারা এই কটাদিন।
কবিতা : জেদ!
বিশ্বজিৎ কর
তুমি যত থাকবে দূরে,
বাঁধব তোমায় প্রেমের ডোরে-
আড়াল থেকে তোমার গন্ধ,
করব গ্রহণ প্রাণভরে!
তুমি যত করবে অবহেলা,
থামবে না এই পথচলা -
ভালবাসার সাত সমুদ্রে,
থাকব ডুবে সারাবেলা!
তুমি যত থাকবে এড়িয়ে,
রাখব তোমায় হৃদয় মাঝে -
ভালবাসার রাজপ্রাসাদে -
থাকব আমি প্রেমিক সাজে!
চিঠি
মিনতি গোস্বামী
শ্রাবণ এলেই তোমাকে
চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে।
উদাসীন জলধারায় তোমার সঙ্গে কথা
কৃষ্ণচূড়ার ব্যাকুল ছায়ায়
নির্মোহ গালিচায়
তোমার গায়ে গা ঘেঁষে পরম শান্তি।
শরতের মেঘের মত আমার সঙ্গে লুকোচুরি,
ফুচকা,এগরোলের কম্পিটিশন
কবিতার বই নিয়ে খুনসুটি
আমার সব কাজ ভুল করে দেয়।
বলেছিলে, ভালবাসা আধিভৌতিক ব্যাপার
দমকা হাওয়ায় নাড়িয়ে দিয়ে যায়
এ নাড়া হৃদয়ে ধারণ করতে হয়।
এত কিছু বুঝিনি কোনদিন
কিন্তু ভালবাসার একটা আকর্ষণ আছে
এটা বুঝি পলে পলে
দূরে থেকেও তাই
সময়ে অসময়ে তোমার সঙ্গে পথ চলি।
হাজার বিপর্যয় পেরিয়ে
শ্রাবণ মেঘের হাতে চিঠি দিয়ে
একসাথে আছি বলি।
নিরর্থক স্বার্থ
জুয়েল রূহানী
নিপূন কর্মে মর্ম ফুটে-
ধর্ম-কর্ম সকল জুটে,
সমাজপতি ফায়দা লুটে
পকেট ভরে লুটে-পুটে!
অনাহারির খাবার জুটে
দু'টি ঠোটে হাসি ফুটে,
এ সবেও ভাগ বসিয়ে-
সমাজপতি ফায়দা লুটে!
যদি ত্যক্ত খাবার জুটে-
কুকুর-বিড়াল চেটে-চুটে,
যা আছে সব দেয় যে টুটে।
সমাজপতি ফায়দা লুটে!
"একটা অপেক্ষা"
রোজিনা খাতুন
একটা অপেক্ষায় তিক্ততা নেই,
নেই ভালোবাসা কিংবা বিরক্তি,
আছে শুধু বিস্ময়!
যার অপেক্ষায় ক্ষয়ে যায় জীবন,
নিভে যায় দিন,
ঢলে পড়ে অন্ধকার!
যে অপেক্ষায় নেই কোনো সীমা পরিসীমা,
আছে এক অনিশ্চয়তা,
আর আছে শূন্যে মিলিয়ে যাওয়া!
হ্যাঁ, সেতো মৃত্যু!
এক বিভীষিকা,
যার রহস্য হয়না কভু উন্মোচন!
মৃত্যুই নয় শেষ,
তাইতো তার তরে এত অপেক্ষা,
নতুন জীবনের সে যে এক দ্বারপ্রান্ত!
মৃত্যু মৃত্যু মৃত্যু...
যেন এক পথ মিছিলের শেষ প্রান্ত,
কোনো এক অগ্রগামী দুতের অমোঘ পরিণতি!
আমি তুমি তাই,
পথ বেয়ে চলি মৃত্যুরই অপেক্ষায়!
শ্রাবণের মাঝে তুমি
আব্দুল রহিম
বৃষ্টির প্রতি ফোঁটাতে লাগে হৃদয় মাঝে আগুন
বার বার কেন আসে শরীরটা ছিঁড়ে খেতে শ্রাবণ
ফিরে পেতে চাইনা যৌবক কালের হারানো যৌবন
তবু কেন করে এ মন চনমন,চাইনা মিথ্যা শ্রাবণ।।
শ্রাবণ বায়ুর কোমল স্পর্শে মন হয়ে উঠে উন্মাদ
শ্রাবণে মিশে থাকা চোখ মানেই তো মৃত্যু ফাঁদ
তবু আমি বেঁচে বুকে একটা মস্ত পাহাড় বেঁধে
কতদিন আর টিকে থাকবো শ্রাবণের এ যুদ্ধে।।
যতোবার চাই বাঁচতে ততোবার শ্রাবণ আসে মারতে
মনে পড়ে শ্রাবণে বৃষ্টি মাখা তোমার কোমল স্পর্শ
মনে পড়ে ভিজে চুলের অপরূপ মিষ্টি সুগন্ধ
মনে পড়ে দুটো ঠোঁটের অতৃপ্ত ভরা অজস্র চুম্বন।।
শ্রাবণের বৃষ্টিতে লাল গোলাপ ফুলটি ফুটেছিল
শ্রাবণের বন্যাতে পাপড়ি গুলি খসে পড়েছিল
তার পর দেখতে দেখতে চল্লিশটা বছর কেটে গেল
কিন্তু আসেনি হারানো শ্রাবণী,আমি হতে পারেনি প্রেমী।।
রামের বাঙালীয়ানায় কৃত্তিবাসের রামায়ণ।
রাজীব কুমার নন্দী
"আদিত্য বার শ্রীপঞ্চমী পূর্ন মাঘ মাস,
তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস।"
রামায়ণের বাঙালীয়ানায় রাম ও সীতাকে নব আঙ্গিকে ভক্তির জায়গা যিনি করে দিয়েছিলেন তিনি হলেন কৃত্তিবাস।যার রচিত কাব্য "শ্রীরাম পাঁচালী" বা "রামায়ণ পাঁচালী"
ঋষিকবি বাল্মীকির সংস্কৃত ভাষায় রচিত রামায়ণ মহাকাব্য অনুসরণে কবি কৃত্তিবাস বাংলায় রামায়ণ পাঁচালী রচনা করেন।
কৃত্তিবাসি কাব্যের সুরে এক নিখাঁদ বাঙালীয়ানা প্রকাশিত।কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ কাব্যে সাত কান্ড :-আদি কান্ড,অযোধ্যা কান্ড,অরণ্য কান্ড,কিসকিন্ধ্যা কান্ড,সুন্দর কান্ড,লঙ্কা কান্ড,উত্তরা কান্ড -প্রত্যেক কান্ডেই বাঙালীয়ানা স্পষ্ট।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাংলা ভাষার সাহিত্যে ধনীর অট্টালিকা থেকে গরীবের পর্ণকুটির পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো।যা বাঙালী দের কাছে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
১)স্বার্থক বাঙালীয়ানা:-
রামায়ণ এর বিষয়বস্তুর মধ্যে বাঙালী সমাজের রীতি নীতি,আচার অনুষ্টান,পোশাক আশাক দারুন ভাবেই প্রকট।
২)ভক্তি ও আদর্শ বোধ:-
কৃত্তিবাসী রামায়ণ এর করুন রস বাঙালির নিজস্ব সম্পদ,অধিকন্তু রামচন্দ্র ভক্তের ভগবান।বিভীষণ ও তার পুত্র তরণী সেন রামভক্ত।ঘটনাচক্রে রাবনও যুদ্ধ ক্ষেত্রে রামের মধ্যে নারায়ণ কে দেখতে পেয়েছে।এই ভক্তি রসের ভাবনা বাঙালী সেন্টিমেন্ট কে দারুনভাবে নাড়া দিয়েছে।
৩)রচনা শৈলী:-
কৃত্তিবাসী রামায়ণ অনুবাদ কাব্য হলেও এটি তার নিজস্ব গুনে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।রচনায় পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দের সুনিপুন ব্যাবহার লক্ষ করা যায়।
_"দশ মুখ মেলিয়া রাবন রাজা হাসে।
কেতকী কুসুম যেনো ফুটে ভাদ্র মাসে।"
৪)চরিত্র চিত্রন:-
কৃত্তিবাস তাঁর গ্রন্থে বাঙালীয়ানার ভাবনায় চরিত্র গুলিকে সৃষ্টি করেছেন।দশরথ হয়ে উঠেছেন বাঙালি পরিবারের বৃদ্ধ কর্তা।রামচন্দ্র হয়ে উঠেছেন পত্নীগত প্রানা বাঙালী স্বামী।সীতা সতত অশ্রুমুখী বাঙালী বধূ।ভরত ও লক্ষণ বাঙালি ঘরের অনুগত ভাই।রাবন যেন প্রভাবশালী জমিদার।
৫)বাঙালির আচার আচরণ:-
কৃত্তিবাসী রামায়ণে বাঙালির আচার অনুষ্টান যেমন পাঁচুটি, ষষ্ঠী পূজা,অস্ট কলাই, অন্নপ্রাসন ইত্যাদি।এছাড়া খাদ্যের তালিকায় তালবড়া, ছানাবড়া,খাজাগজা,জিলিপি, পায়েস,পিঠে ইত্যাদি।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ ভক্তিরসের অনন্ত প্রবাহের সঙ্গে বঙ্গ জীবনের ভাবাবেগ ও জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে এক নিখাঁদ বাঙালীয়ানায়।
"অনাথের নাথ তুমি পতিতপাবন।
দয়া করি মস্তকেতে দেহশ্রীচরণ।"
ভেজার গান
আভা সরকার মন্ডল
বৃষ্টি আসুক জোরে-শোরে ভিজিয়ে দিক মন
ফুলে ফলে ভরুক যত বন আর উপবন।।
একখানা মেঘ ছটফটানি নাম রেখেছি তার
অস্থিরতায় দিয়ে দোলা ভাঙ্গে মনের পাড়।।
যত আছে মন ভোলা ঢেউ তার কথাতেই দিক
পাল্টে নিয়ে ঢুকেই পড়ে মনের ঘরে ঠিক ।।
সেই মেঘ আমার নিমন্ত্রিত বুকের ঘরে বাস
তার ইশারায় চলতে গিয়ে ভিজি বারো মাস।।
খেলা
জহরলাল দাস
মানুষ খেলতে ভালবাসে
খেলায় জিততে ভালবাসে
প্রতিপক্ষকে হারিয়ে
বিজয়ীর হাসি হাসতে ভালবাসে।
গেইম! গেইম! আনন্দ, উচ্ছ্বাস !
আমাদের মত বোকাদের নিয়ে
পাকা খেলোয়াড় মানুষেরা
মজা করে খেলে আর খিল্ খিল্ হাসে!
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
লেখা আহ্বান
আমাদের পরবর্তী বিশেষ সংখ্যা
"স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা"
লেখা পাঠান :- 01 Aug 2020 থেকে 13 Aug 2020 এর মধ্যে
যে ধরনের লেখা পাঠাবেন 👇👇👇👇
১) হাইকু, অনুকবিতা, লিমেরিক, কবিতা
২) অনু গল্প, ছোটোগল্প, গল্প
৩) প্রবন্ধ, জীবনী, স্মৃতি কথা, চিঠি
৪) ইংরেজি:-
Poem, Short story, Story, Essay
• নিদির্ষ্ট কোনো শব্দসীমা নেই
• whatsaap তে টাইপ করে পাঠান
• 9593043577 এই নং তে
• লেখার উপর অবশ্যই উল্লেখ করবেন "স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা"
লেখক তালিকা প্রকাশিত হবে 14 Aug 2020
পত্রিকা প্রকাশ করা হবে- 15 Aug 2020
প্রচারে :- সম্পাদক, উপকণ্ঠ
"উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-06/08/2020,বৃহস্পতিবার
সময় :- বিকাল 3 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে
Click Here
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে
Click Here
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇
সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত সেক আসাদ আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প.... আজ প্রথম অংশ প্রকাশিত হল
নিজের পরিচয়
সেক আসাদ আহমেদ
(প্রথম অংশ)
দুপুর ১টা
রতনপুর প্রাইমারি স্কুলে টিফিনের ঘন্টা বেজে উঠল। বৈশাখ মাসের কড়া রোদ্দুর। ভ্যাপসা গরমে বাইরে বেরুনো দায়। গা যেন পুড়ে যায়, তাই হেডমাস্টার মশাই স্কুলের বাইরে বেরুতে বারণ করেছেন। কিন্তু আজ একমাত্র ব্যাতিক্রম হল খালেক। কখনও শিক্ষকের আদেশ অমান্য করেনি, তবুও প্রচন্ড গরমে বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল।
আজ স্কুলে আসার পর থেকে মনটা কেমন ছটফট করছিল। কিছু ভালো লাগছিল না ওর, নিয়মিত ক্লাসে পড়া দেয়। কিন্তু আজ পড়া করে এসেও পড়া দিতে পারেনি। এর জন্য ক্লাস টিচারের বকুনি ও খেতে হয়েছে।
কেন? কেন সে পড়া দিতে পারেনি ?— মনে প্রশ্ন জাগল তার।
বাড়িতে তো মা অসুস্থ! কিছু হয়নি তো? ভাবতেই গা শিউরে উঠল।
বাড়ি থেকে স্কুল মাত্র ৭ মিনিটের হাঁটা পথ।
এগিয়ে চলল খালেক।
মোড়ের রাস্তায় রাইসু জেঠুর কাছে খবর পেল মা হাসপাতালে। আর কোনো কথা না শুনে সোজা দৌড় দিল ওদিকে। হাসপাতালে পৌঁছে দেখল বাবার চোখে জল...
এখন সারাদিন বাড়িতে একা থাকে খালেক।
বাবাকে তো পেটের জন্য ফেরি করতে যেতে হয়। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করেনা, স্কুলেও যায় না। যেখানে সেখানে একা বসে কাঁদে। মনের আনন্দ যে ওর হারিয়ে গেছে।
এই অল্পবয়েসী শিশুকে কে মানুষ করবে? কে তার হারানো মুখের হাসি এনে দেবে। এভাবে আর কতদিন চলতে পারে।
শেষে ইউসুফ বাবু ঠিক করলেন ওর জন্য নতুন মা আনবেন।
নতুন মা পেয়ে তার মুখে সত্যি হাসি এল, কিন্তু তা বেশিদিন নয়।
কথায় বলে ফুটো কলসিতে আর কতক্ষণ জল ভর্তি থাকে।
খালেক যখন ১১ বছরের হল তখন বিমাতার পুত্র সন্তান হল।
নতুন মা আর যেন ভালোবাসে না। কেমন যেন হিংসুটে হয়ে গেছে, কথায় অকথায় গলা চড়ায়। বাড়ির কাজ কর্ম করায়... এমনকি এতো থালা-বাসন ও মাজিয়ে নেয়।
বাবাকে জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। তাই মুখ বুজে সব সহ্য করেছে।
চলবে.....
সোনাদের সেই আতা গাছ
আব্দুল রাহাজ
লালু ভুলু আর সোনা ওরা সবাই ছেলেবেলার বন্ধু খুব আনন্দে দিন কেটেছে ওদের ছেলেবেলার দিনগুলি খেলার একটাই জায়গা ছিল সোনাদের সেই আতা গাছ সেখানে ওরা রোদে জলে শীতে সব সময় খেলা করতো কত খেলা । ওরা এখন সবাই শহরের স্কুলে পড়ে গ্রামের বাড়িতে আর আসে না ওরা একবার পুজোর ছুটিতে এসেছে আতা গাছের নিচে বসে সে কি গল্প ওরা এখন বেশ বড় হয়েছে । একদিন লালু ভুলু আর সোনা স্কুল থেকে বাড়ি আসার সময় পথে দেখে আতা গাছ কে কয়েকজন লোক কাটবে বলে দাঁড়িয়ে আছে ওর দাদু এসেছে সোনার সোনার ছোট কাকু বলল সোনা গাছ এখানে থাকবে না এখানে আমি বড় বাড়ি ওরা সবাই মিনতির সুরে বলল তোমরা কাটবে না গাছ ওরা গাছ জড়িয়ে ধরে রাখল কিন্তু ওই হিংস্র রূপে লোক কাটারি নিয়ে এগিয়ে আছে সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে গাছ বাঁচানোর কথা তাদের এই খবর শুনে থানা থেকে পুলিশ এসেছে পুলিশ এসে সব খবর জেনে গাছ কাটতে বাধা দিলেন তারপর পুলিশ কাকু ওদের এই সাহসিকতার জন্য চকলেট খেতে দিলেন গ্রামের মানুষ দেখে নেয় সাহসিকতার পরিচয় চারিদিকে সোনা ভুলু লালু দের কথা ছড়িয়ে পড়ে এই ভাবে দিন যায় দিন আসে ওরা ছায়াতল আতা গাছের নিচে লুকোচুরি খেলা থেকে শুরু করে আরো কত কি খেলা করেছে ওখানে কিন্তু গ্রামের পাঠশালায় দিকে শেষ হয়ে আসছে ওরা বেশ চিন্তায় এদিকে বাড়ি থেকে সবার শহরে পড়ার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে সেইমতো সোনা দাদুরা আতা গাছ কাটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সব মিলিয়ে ওদের কাছে এক কঠিন অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল আতা গাছ কে কেন্দ্র করে। দিনটা বেশ মেঘাচ্ছন্ন গ্রামের পাঠশালা শেষের দিন তখন ঘড়িতে নটা ওরা আতা গাছের নিচে এসে আতা গাছ কে জড়িয়ে ধরে বলল আমরা আবার আসব আবার আসব অশ্রুসিক্ত জলে তাকে বলে গেল ওদের কাছে এই আতা গাছ ছিল শৈশবের খেলার সাথী ওরা তাকে ছেড়ে চলে যাবে কালকে এদিকে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল সাধুদের পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে হইহই করে শেষ বারের মত একসঙ্গে সবাই স্নান করল ওদিকে সাড়ে দশটায় স্কুলে চলে গেলো দেখতে দেখতে বেলা তিনটার সময় গ্রামের পাঠশালা শেষ করে বাড়িতে ফিরল বাড়ির লোকেদের কড়া নির্দেশ কাল ভোরে চলে যাবে শহরের স্কুলে আর গ্রাম দেখা হবে না আর আতা গাছে দেখা হবে না সারারাত ওরা যেন বিষন্ন মন নিয়ে কাটাল তারপর ভোর বেলা পাখির কুজনে সূর্যের উজ্জ্বল রশ্মিতে চারিদিকে বৈচিত্র্যে ফুটে উঠলওরা চার রাস্তার মোড়ে এসে বাছাই করে সবাই শহরে পড়তে চলে গেল আর এদিকে আতাগাছে তাদের আশীর্বাদ করল চেয়ে থাকল তাদের অপেক্ষায় অপেক্ষায়। এই আতা গাছ সোনা ভুলু লালুর কাছে ছেলের ছেলে বেলার খেলার সাথী সে আজ এক হয়ে গেল তাদের এই ছেলেবেলার স্মৃতি ওদের মনে প্রাণে অমর হয়ে থাকল আজীবন যা ওরা শহরে পড়লেও তাদের মন পড়ে থাকে সেই আতা গাছে কে নিয়ে তাদের কাছে ছিল এই আতা গাছ আজীবন স্মৃতি বিজারক যা তাদেরকে প্রতি পদে পদে স্মরণ করিয়ে দেয়। এইভাবে সোনাদের আতা গাছ চেয়ে থাকে তাদের অপেক্ষায় অপেক্ষায়।
শব্দের সন্ধানে
রঞ্জনা রায়
শব্দ পাতায় জল ঝরে
জ্যোৎস্নায় রঙিন উপকথা জীবন্ত হয়
মহুয়া ফুল সুগন্ধ ছড়ায় ।
শাল পিয়ালের জঙ্গল এখনও খোঁজে ঝড়
তোমার হারিয়ে যাওয়া সেই সবুজ পাঞ্জাবি
শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে সেদিনও বলেছিলে
রূপকথা, চোখের সাগরে চোখ ডুবে যায়
তুমি খুঁজে আনো গন্ধর্ব মুক্তকনা,প্রেমবিন্দু
তৃষ্ণা, শুধু অতৃপ্ত নিবিড়তা,খাদের কিনারে
একটি শুদ্ধ পলাশ স্বাতী নক্ষত্রের স্বপ্ন দেখে ।
জল জীবনের দোসর, প্রবাহিত জীবনমাতৃকা
প্রেম আনে বৃষ্টির সংকেত রামধনু আকাশে
তুমি সাজিয়েছ কেয়াপাতার নৌকো আনমনে
আমি প্রেম খুঁজি শব্দের অন্তরে, শব্দের তুফানে ।
তাহাদের কথা
সৌম্য ঘোষ
কখনো পাহাড়ে গেছি , কখনো দিগন্ত
হারিয়ে উত্তাল সমুদ্র
বালুতটে রৌদ্ররা চাদর বিছিয়ে
পাহাড়ে প্রসন্ন শাল , শিরিষের মাথা ।
কখনো বট অশ্বত্থের কথা ভেবেছি
এমন কি জুঁই , কেতকী , মাধবীলতাদের কথা ,
গভীর রাতে যখন স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না
আমার ঘরে , বিছানায় চাদরের উপর
কোমল উপস্থিতি ।
বস্তুতঃ তোমাদের কথা একবারও ভাবা হয়নি।
যে বিষন্নতা ঘিরে তোমাদের অসহায়
দিনরাত্রি
ভয় , ক্ষুধা ও ঘৃণার মধ্যে
তোমাদের যাপন
তার কথা একবারও লিখিনি ।
তোমাদের ভেঙ্গে যাওয়া মুখের ছবি
এক অব্যক্ত কান্না বোবা হয়ে
শুকিয়ে গেছে ; বার্ধক্য , অন্ধত্ব
একাকার হয়ে নিরালা সন্ধ্যা আসে ।
এরপর আঁধারে ঢেকে যাবে চারিদিক
আমাদের দেশ , ঈশ্বর , প্রেম ।
একদিন এই নির্লিপ্ত মুখ
আমার কাছে আসবে , জবাবদিহি নিতে ।।
উজ্জ্বল কন্যা
মৌসুমী গুহ রায়
পশু হাসপাতালে খরগোশ কে নিয়ে,
মেঘার পশু প্রেম দেখ চেয়ে।
কবেকার সন্ধ্যা বেলায় তালের বড়া,
স্যরের কাছে মন দিয়ে পড়া।
জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রস্তুতি তুঙ্গে,
মা, বাবার আশীর্বাদ সঙ্গে।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে,
জীবন কেটেছে আনন্দে।
প্রথম চাকরি খেমাশুলি হেলথ সেন্টারে,
সাড়ে তিন বছর কেটেছে জীবন সংগ্রামে।
মেঘার শৈশব দিয়েছে আনন্দ অনেক,
এখন সে কিশোরী, উজ্জ্বল কন্যা এক ।
কবিতা
বিশ্বজয়ী
ডঃ রমলা মুখার্জী
ভাগ্যজয়ে দুর্ভাগা তুই পিছিয়ে পড়া দল-
শাঁখা-সিঁদুর লেবেল সাঁটা, পায়ের বেড়ি মল।
মেঘ ভীষণ গর্জে উঠে করে প্রতিবাদ -
"ওপরে আয় আছি আমি, মুঠোয় ধরি চাঁদ।
দেখ রে চেয়ে অসীম, অবাধ, খোলা নীলাকাশ...
ঘুঙুর পায়ে তাথৈ তাথৈ নারীর হোক প্রকাশ।"
ঝড় বলে,"বাতাসেতে ওড় না সন্ সন্......
ভয় ভেঙে ভয়ঙ্করী, ঝঞ্ঝা, মহারণ।
উড়তে উড়তে পেরিয়ে যা অন্ধ সংস্কার -
ছাতা পড়া নিয়ম-নীতি উড়িয়ে পগার পার।"
সাগর ডাকে,"আয় ছুটে আয় ভেঙে ঘরের তালা-
বিশ্বজয়ী বিশ্ব ঘুরে আন রে জয়ের মালা।"
পত্নী বিহীনা যজ্ঞ
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
শ্রী রাম রাজা।
করছেন যজ্ঞ।
চির দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
রাজকর্মে ইনি।
হোমাগ্নিতে ঢালছেন ঘী, খাঁটি।
বড় ভাগ্যবান, দেশের মাটি।
বড়ই উনি বিজ্ঞ।
সীতা পাচ্ছেন সাজা।
ত্যাজ্যা, পরিত্যক্তা তিনি।
স্বামীর কাছে উনি অজ্ঞ।
সোনার পত্নী পাশে।
জীবন্ত পতি সিংহাসনে।
প্রেমের সম্পর্ক করুন হাসি হাসে।
পতি পত্নীর বন্ধন ছিন্ন।
দেহে, মনে তাই তো ভিন্ন।
জন্ম পরিচয় যাঁর
মহর্ষির, রাজর্ষীর হল কর্ষণে
এই তো জীবনের পরিণতি তাঁর।
অশ্রু তাঁর জীবন বর্ষণে।
বঞ্চিতা স্বামী পর্শনে।
ঠাঁই নাই রাজ রানীর পদ হর্ষনে।
রাজার কোনও ভ্রুক্ষেপই নাই
রানীর অদর্শনে।
ন্যায় পরায়ণ, প্রজা বৎসল তো তাই।
পত্নী কী নন প্রজা?
ন্যায় বিচারে তিনি নন কী বঞ্চিতা?
প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কী সোজা?
প্রশ্ন করে কলির সীতা।
ভারতের অসহায় দুহিতা।
আজও বাকী রয়ে গেছে অধিকার খোঁজা!
চির বিরহী
বিপ্লব গোস্বামী
আমি চির বিরহী
তুমি আমার চির বিরহিনী সতী ।
কভু মনে জাগে নাই কাম
কভু জাগে নাই রতি।
যুগে যুগে না পাওয়ার
তৃষা জাগাইয়া ;
যুগে যুগে জন্মিয়াছি মোরা।
করিয়াছ প্রেমি আমায়
আমি করিয়াছি প্রিয়া।
যেদিন আদি সৃষ্টি হয়িলো বিরহ
বিধাতা দানিলা তব বুকে মম বুকে
বেদনার দাহ্ !!
জন্মিয়াছি তরু হয়ে
তুমি হলে পাতা ;
ঝরে গেলে অকালেতে !
না মিটিতে আশা,তৃষা
না ফুরাতে কথা।
তারপর দাপর যুগ
অন্তরেতে মহা রোগ !
আমি কালা তুমি রাধা
মিলনেতে শত বাধা।
শেষে শেলিম আর আনারকলি
দিতে হলো প্রেমের বলি !!
অতৃপ্ত ভালোবাসা
হরিহর বৈদ্য
তুমি আমার সোনালী স্বপ্ন কবিতার রাজকন্যে,
তুমি নূতন ধানের সুবাসিত ঘ্রাণ যেন নবান্নে।
তুমি আদিম বন্য ভালোবাসা, গভীর অরন্যে-
তোমার প্রেমই আজও টানে মোরে সেই জন্যে।
তুমি হিমাচল হতে নেমে আসা ঝর্ণার কলোতান,
তব হাসিভরা গানে মোর হৃদয়ে সঞ্চিত হয় প্রাণ।
তুমি বেদুইন মেয়ের প্রেমজাল বোনা যেন এক উপাখ্যান,
বিনিময়ে যে চায়নি কখনো ভালোবাসার প্রতিদান।
তুমি উদার সুনীল আকাশে উদিত পূর্ণিমা চাঁদ সম,
উদভাসিত স্নিগ্ধ আলোতে ভরাও পৃথিবী মম।
তুমি অসীম সাগরের বুকে যেন দুরন্ত উচ্ছাস,
তুমি অবলা নারীর অব্যক্ত বেদন নির্মম ইতিহাস।
তুমি পাতাঝরা কোনো কালবৈশাখী কিংবা এযুগের আমফান,
তুমি গৃহ-হারাদের ক্রন্দনধ্বনি, বিপ্লবীর জয়গান।
তুমি একরাস প্রসফুটিত ফুলের সুগন্ধে ভরা বাতাস,
তুমি সোনালী আবির মাখানো কোন নূতন ভোরের আকাশ।
তুমি মুক্ত বিহঙ্গের গান গাওয়া ঠোঁটে মিষ্টি কুহুতান,
তুমি পৌষ-পারবনের সুস্বাদু যেন পিঠের-ই আঘ্রাণ।
তুমি শিতের রাতে সুখের আবেশে মধুর স্বপ্ন যেন,
বিদীর্ণ মনেতে মাঝে মাঝে এসে ধরা দিয়ে যাও কেন?
জানি তুমি ভুলতে পারনি আজও এই অধমেরে,
জাতের ঐ অজুহাত টুকু ভালোবাসা নিলো কেড়ে।
ভালোবাসা
হামিদুল ইসলাম
কতোকাল দেখি নি তোমায়
ভুলে গেছো নিশ্চয়
কখনো ফুল কখনো মালা ।
শুকনো ফুল আর মালা
তোমার সুন্দর মুখ
ভুলে যাই তবু ভুলতে পারি না এতোটুকু সুখ ।
দুঃসহ রাত একা কাটি
বিনিদ্র চোখ তোমাকে জড়ায়
আমি থেকে যেতে চাই তোমার আঁচলের ছায়ায় ।
একটু জায়গা দাও তোমার অন্তর্বাসের ভেতর
আমি অবোধ শিশু
তোমার প্রেমে হয়ে যাবো যিশু ।
বন্যার কবলে
মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ
মুশোল ধারা বৃষ্টির তোড়ে
গ্রাম গুলো বন্যার যুদ্ধে
ঘর গুলো সব পড়ছে খোসে
গাছ গুলো যাচ্ছে হেলে।
পাড়া পোড়সি সব চিন্তা করে
বন্যার জল কমবে কবে
রান্না খাওয়া বন্ধ তাদের
বন্যায় খাদ্য সব গেলো ভেসে।
দাদি নাতনি খাদ্যের খোঁজে
যাচ্ছে হাঁটুজল ঝাঁপিয়ে
মা তার কাপড় কাছে
কি হবে সব ভাবছে বসে।
রাস্তা সব হলো নৌকার পথ
গাড়ি নৌকা চলছে পাশাপাশি
দেখতে বেশ লাগছে মজা
চিন্তায় আবার কান্না দূঃখে ভরা।
অনাহারে তারা থাকবে ক'দিন
তাইতো মাথায় হাত প্রতিদিন
বন্যার জন্য গ্রাম হাসছে খিলখিল
রাজত্ব করবে তারা এই কটাদিন।
কবিতা : জেদ!
বিশ্বজিৎ কর
তুমি যত থাকবে দূরে,
বাঁধব তোমায় প্রেমের ডোরে-
আড়াল থেকে তোমার গন্ধ,
করব গ্রহণ প্রাণভরে!
তুমি যত করবে অবহেলা,
থামবে না এই পথচলা -
ভালবাসার সাত সমুদ্রে,
থাকব ডুবে সারাবেলা!
তুমি যত থাকবে এড়িয়ে,
রাখব তোমায় হৃদয় মাঝে -
ভালবাসার রাজপ্রাসাদে -
থাকব আমি প্রেমিক সাজে!
চিঠি
মিনতি গোস্বামী
শ্রাবণ এলেই তোমাকে
চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে।
উদাসীন জলধারায় তোমার সঙ্গে কথা
কৃষ্ণচূড়ার ব্যাকুল ছায়ায়
নির্মোহ গালিচায়
তোমার গায়ে গা ঘেঁষে পরম শান্তি।
শরতের মেঘের মত আমার সঙ্গে লুকোচুরি,
ফুচকা,এগরোলের কম্পিটিশন
কবিতার বই নিয়ে খুনসুটি
আমার সব কাজ ভুল করে দেয়।
বলেছিলে, ভালবাসা আধিভৌতিক ব্যাপার
দমকা হাওয়ায় নাড়িয়ে দিয়ে যায়
এ নাড়া হৃদয়ে ধারণ করতে হয়।
এত কিছু বুঝিনি কোনদিন
কিন্তু ভালবাসার একটা আকর্ষণ আছে
এটা বুঝি পলে পলে
দূরে থেকেও তাই
সময়ে অসময়ে তোমার সঙ্গে পথ চলি।
হাজার বিপর্যয় পেরিয়ে
শ্রাবণ মেঘের হাতে চিঠি দিয়ে
একসাথে আছি বলি।
নিরর্থক স্বার্থ
জুয়েল রূহানী
নিপূন কর্মে মর্ম ফুটে-
ধর্ম-কর্ম সকল জুটে,
সমাজপতি ফায়দা লুটে
পকেট ভরে লুটে-পুটে!
অনাহারির খাবার জুটে
দু'টি ঠোটে হাসি ফুটে,
এ সবেও ভাগ বসিয়ে-
সমাজপতি ফায়দা লুটে!
যদি ত্যক্ত খাবার জুটে-
কুকুর-বিড়াল চেটে-চুটে,
যা আছে সব দেয় যে টুটে।
সমাজপতি ফায়দা লুটে!
"একটা অপেক্ষা"
রোজিনা খাতুন
একটা অপেক্ষায় তিক্ততা নেই,
নেই ভালোবাসা কিংবা বিরক্তি,
আছে শুধু বিস্ময়!
যার অপেক্ষায় ক্ষয়ে যায় জীবন,
নিভে যায় দিন,
ঢলে পড়ে অন্ধকার!
যে অপেক্ষায় নেই কোনো সীমা পরিসীমা,
আছে এক অনিশ্চয়তা,
আর আছে শূন্যে মিলিয়ে যাওয়া!
হ্যাঁ, সেতো মৃত্যু!
এক বিভীষিকা,
যার রহস্য হয়না কভু উন্মোচন!
মৃত্যুই নয় শেষ,
তাইতো তার তরে এত অপেক্ষা,
নতুন জীবনের সে যে এক দ্বারপ্রান্ত!
মৃত্যু মৃত্যু মৃত্যু...
যেন এক পথ মিছিলের শেষ প্রান্ত,
কোনো এক অগ্রগামী দুতের অমোঘ পরিণতি!
আমি তুমি তাই,
পথ বেয়ে চলি মৃত্যুরই অপেক্ষায়!
শ্রাবণের মাঝে তুমি
আব্দুল রহিম
বৃষ্টির প্রতি ফোঁটাতে লাগে হৃদয় মাঝে আগুন
বার বার কেন আসে শরীরটা ছিঁড়ে খেতে শ্রাবণ
ফিরে পেতে চাইনা যৌবক কালের হারানো যৌবন
তবু কেন করে এ মন চনমন,চাইনা মিথ্যা শ্রাবণ।।
শ্রাবণ বায়ুর কোমল স্পর্শে মন হয়ে উঠে উন্মাদ
শ্রাবণে মিশে থাকা চোখ মানেই তো মৃত্যু ফাঁদ
তবু আমি বেঁচে বুকে একটা মস্ত পাহাড় বেঁধে
কতদিন আর টিকে থাকবো শ্রাবণের এ যুদ্ধে।।
যতোবার চাই বাঁচতে ততোবার শ্রাবণ আসে মারতে
মনে পড়ে শ্রাবণে বৃষ্টি মাখা তোমার কোমল স্পর্শ
মনে পড়ে ভিজে চুলের অপরূপ মিষ্টি সুগন্ধ
মনে পড়ে দুটো ঠোঁটের অতৃপ্ত ভরা অজস্র চুম্বন।।
শ্রাবণের বৃষ্টিতে লাল গোলাপ ফুলটি ফুটেছিল
শ্রাবণের বন্যাতে পাপড়ি গুলি খসে পড়েছিল
তার পর দেখতে দেখতে চল্লিশটা বছর কেটে গেল
কিন্তু আসেনি হারানো শ্রাবণী,আমি হতে পারেনি প্রেমী।।
রামের বাঙালীয়ানায় কৃত্তিবাসের রামায়ণ।
রাজীব কুমার নন্দী
"আদিত্য বার শ্রীপঞ্চমী পূর্ন মাঘ মাস,
তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস।"
রামায়ণের বাঙালীয়ানায় রাম ও সীতাকে নব আঙ্গিকে ভক্তির জায়গা যিনি করে দিয়েছিলেন তিনি হলেন কৃত্তিবাস।যার রচিত কাব্য "শ্রীরাম পাঁচালী" বা "রামায়ণ পাঁচালী"
ঋষিকবি বাল্মীকির সংস্কৃত ভাষায় রচিত রামায়ণ মহাকাব্য অনুসরণে কবি কৃত্তিবাস বাংলায় রামায়ণ পাঁচালী রচনা করেন।
কৃত্তিবাসি কাব্যের সুরে এক নিখাঁদ বাঙালীয়ানা প্রকাশিত।কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ কাব্যে সাত কান্ড :-আদি কান্ড,অযোধ্যা কান্ড,অরণ্য কান্ড,কিসকিন্ধ্যা কান্ড,সুন্দর কান্ড,লঙ্কা কান্ড,উত্তরা কান্ড -প্রত্যেক কান্ডেই বাঙালীয়ানা স্পষ্ট।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাংলা ভাষার সাহিত্যে ধনীর অট্টালিকা থেকে গরীবের পর্ণকুটির পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো।যা বাঙালী দের কাছে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
১)স্বার্থক বাঙালীয়ানা:-
রামায়ণ এর বিষয়বস্তুর মধ্যে বাঙালী সমাজের রীতি নীতি,আচার অনুষ্টান,পোশাক আশাক দারুন ভাবেই প্রকট।
২)ভক্তি ও আদর্শ বোধ:-
কৃত্তিবাসী রামায়ণ এর করুন রস বাঙালির নিজস্ব সম্পদ,অধিকন্তু রামচন্দ্র ভক্তের ভগবান।বিভীষণ ও তার পুত্র তরণী সেন রামভক্ত।ঘটনাচক্রে রাবনও যুদ্ধ ক্ষেত্রে রামের মধ্যে নারায়ণ কে দেখতে পেয়েছে।এই ভক্তি রসের ভাবনা বাঙালী সেন্টিমেন্ট কে দারুনভাবে নাড়া দিয়েছে।
৩)রচনা শৈলী:-
কৃত্তিবাসী রামায়ণ অনুবাদ কাব্য হলেও এটি তার নিজস্ব গুনে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।রচনায় পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দের সুনিপুন ব্যাবহার লক্ষ করা যায়।
_"দশ মুখ মেলিয়া রাবন রাজা হাসে।
কেতকী কুসুম যেনো ফুটে ভাদ্র মাসে।"
৪)চরিত্র চিত্রন:-
কৃত্তিবাস তাঁর গ্রন্থে বাঙালীয়ানার ভাবনায় চরিত্র গুলিকে সৃষ্টি করেছেন।দশরথ হয়ে উঠেছেন বাঙালি পরিবারের বৃদ্ধ কর্তা।রামচন্দ্র হয়ে উঠেছেন পত্নীগত প্রানা বাঙালী স্বামী।সীতা সতত অশ্রুমুখী বাঙালী বধূ।ভরত ও লক্ষণ বাঙালি ঘরের অনুগত ভাই।রাবন যেন প্রভাবশালী জমিদার।
৫)বাঙালির আচার আচরণ:-
কৃত্তিবাসী রামায়ণে বাঙালির আচার অনুষ্টান যেমন পাঁচুটি, ষষ্ঠী পূজা,অস্ট কলাই, অন্নপ্রাসন ইত্যাদি।এছাড়া খাদ্যের তালিকায় তালবড়া, ছানাবড়া,খাজাগজা,জিলিপি, পায়েস,পিঠে ইত্যাদি।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ ভক্তিরসের অনন্ত প্রবাহের সঙ্গে বঙ্গ জীবনের ভাবাবেগ ও জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে এক নিখাঁদ বাঙালীয়ানায়।
"অনাথের নাথ তুমি পতিতপাবন।
দয়া করি মস্তকেতে দেহশ্রীচরণ।"
ভেজার গান
আভা সরকার মন্ডল
বৃষ্টি আসুক জোরে-শোরে ভিজিয়ে দিক মন
ফুলে ফলে ভরুক যত বন আর উপবন।।
একখানা মেঘ ছটফটানি নাম রেখেছি তার
অস্থিরতায় দিয়ে দোলা ভাঙ্গে মনের পাড়।।
যত আছে মন ভোলা ঢেউ তার কথাতেই দিক
পাল্টে নিয়ে ঢুকেই পড়ে মনের ঘরে ঠিক ।।
সেই মেঘ আমার নিমন্ত্রিত বুকের ঘরে বাস
তার ইশারায় চলতে গিয়ে ভিজি বারো মাস।।
খেলা
জহরলাল দাস
মানুষ খেলতে ভালবাসে
খেলায় জিততে ভালবাসে
প্রতিপক্ষকে হারিয়ে
বিজয়ীর হাসি হাসতে ভালবাসে।
গেইম! গেইম! আনন্দ, উচ্ছ্বাস !
আমাদের মত বোকাদের নিয়ে
পাকা খেলোয়াড় মানুষেরা
মজা করে খেলে আর খিল্ খিল্ হাসে!
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
লেখা আহ্বান
আমাদের পরবর্তী বিশেষ সংখ্যা
"স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা"
লেখা পাঠান :- 01 Aug 2020 থেকে 13 Aug 2020 এর মধ্যে
যে ধরনের লেখা পাঠাবেন 👇👇👇👇
১) হাইকু, অনুকবিতা, লিমেরিক, কবিতা
২) অনু গল্প, ছোটোগল্প, গল্প
৩) প্রবন্ধ, জীবনী, স্মৃতি কথা, চিঠি
৪) ইংরেজি:-
Poem, Short story, Story, Essay
• নিদির্ষ্ট কোনো শব্দসীমা নেই
• whatsaap তে টাইপ করে পাঠান
• 9593043577 এই নং তে
• লেখার উপর অবশ্যই উল্লেখ করবেন "স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা"
লেখক তালিকা প্রকাশিত হবে 14 Aug 2020
পত্রিকা প্রকাশ করা হবে- 15 Aug 2020
প্রচারে :- সম্পাদক, উপকণ্ঠ
0 comments: