শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০

উপকণ্ঠ স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা-2020




উপকণ্ঠ স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা-2020 
        "উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
                  (ওয়েব ম্যাগাজিন)

  প্রকাশ কাল:-15/08/2020, শনিবার
               সময় :- বিকাল 3 টা

সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত

মুঠোফোন:- 9593043577

🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ফেসবুক আইডি লিঙ্কে ক্লিক করুন আর যুক্ত হন আমাদের সাথে

Click Here

উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপতে যুক্ত হন লিঙ্কে ক্লিক করে

Click Here

👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇

👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇








🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳                      প্রবন্ধ বিভাগ
🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
'স্বাধীন' এবং 'স্বাধীনতা'
        রাজা দেবরায়

'স্বাধীন' মানে স্ব-অধীন অর্থাৎ যে শুধুমাত্র নিজের অধীন । এছাড়াও 'স্বাধীন' মানে অপরের আজ্ঞাবহ নয়, অবাধ, স্বচ্ছন্দ, অনন্যপর, স্ববশ, স্বনির্ভর বা অন্য কারো ওপর নির্ভরশীল নয় । আভিধানিক অর্থে তাই অনেকেই 'স্বাধীন' !

কিন্তু আদৌ কি আমরা 'স্বাধীন' ?

আমরা কি নিজেদের নিজের অধীনে রাখতে পারি বা পারছি ? আমাদের মানসিক গঠন কি সেভাবে তৈরী হয়েছে যে আমরা নিজেদের নিজের অধীনে রাখতে পারবো ? আমাদের ভাবনার যে ভীত বা 'বেস' যদি বলি সেটা কি আদৌ শক্ত হয়েছে ?

আমরা কী চিন্তা করবো বা কিভাবে চিন্তা করবো সেটাই তো আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বুঝতে পারিনা । তাহলে তার মানে কি আমরা চিন্তা করিনা বা করতে পারিনা ? অবশ্যই চিন্তা করি বা করতে পারি । কিন্তু সেই চিন্তা করার বা চিন্তা করতে পারার ক্রেডিট যায় অথবা যাবে রাষ্ট্র, পারিপার্শ্বিক সামাজিক দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত খবর ও বিজ্ঞাপনের দিকে ! তাদের সমষ্টিগত ভাবনাটাকেই নিজের ভাবনা বলে চালাতে চেষ্টা করি এবং না বুঝেই তাতে বেশ আত্মগরিমায় ভুগি । অর্থাৎ সহজভাবে আসল কথাটা বললে, সেরকমভাবে মুক্ত চিন্তা করার অভ্যাস বা পরিকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি আমাদের মননে, চিন্তনে । ফলে নিজের ভাবনার অধীনে থাকাটাও কেমন যেন দাসত্বের বা পরাধীনতার যন্ত্রণাকেই সূচিত করে, যদিও আমরা খুব একটা বুঝতে পারিনা সেটা ! আর বুঝতে পারিনা বলেই আমরা মননে, চিন্তনে এখনো 'পরাধীন' হয়ে আছি যা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার !

আরেকটু ব্যাখ্যা করলে এভাবেও বলা যায় যে নিজের অধীনে থাকা সার্বিকভাবে খুবই কঠিন । কাম, ক্রোধ, লোভ, লালসা অতিক্রম করে সঠিক অবস্থানে নিজেকে কেন্দ্রীভূত করা দুরূহ ব্যাপার । ফলে সমস্ত কিছু থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখাটাই যেখানে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সেখানে নিজের 'স্বাধীন' মত বা পথ ব্যক্ত করতে পারাটা তো কঠিন হবেই ।

তাই আমাদের 'স্বাধীন' কথাটাই বুঝতে অসুবিধে হয় বা হচ্ছে ।

আর স্বাভাবিকভাবেই, 'স্বাধীনতা' কথাটা বুঝতে আরেকটু অসুবিধে হবে । 'স্বাধীনতা' শব্দটি ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতীয় জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বজন কাঙ্ক্ষিত একটি শব্দ । 'স্বাধীনতা' হতে হবে সার্বিক ।

সহজভাবে বললে, যে দেশ তার জনগণকে যত বেশি সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার প্রদান করে, সে দেশ তত বেশি উন্নত, সুন্দর এবং জনকল্যাণকামী সভ্য দেশ । আবার যে দেশের জনগণ তাদের নাগরিক এবং সামাজিক দায়িত্ব যত বেশি সুষ্ঠু এবং যথাযথভাবে পালন করে সে অনুযায়ী তাদেরকে সমাজের আদর্শ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় । এভাবে সুষ্ঠু সামাজিক ব্যবস্থা, উন্নত সুশীল নাগরিক জীবনের জন্য সমাজ এবং সমাজের প্রত্যেকের পারস্পরিক সহযোগিতা-সহমর্মিতা অথবা পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্য এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রত্যেক নাগরিকের একান্ত প্রয়োজন ।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, আদর্শ নাগরিক এবং সমাজ গঠনের জন্য বর্তমান সার্বিক পরিকাঠামো কি সন্তোষজনক ? যেখানে আমাদের ভাবনার কাঠামোতেই সংশয় প্রকাশ বিদ্যমান, সেখানে 'স্বাধীন' এবং 'স্বাধীনতা'র মানে বোঝাতে গেলে মূলত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে । আর ভাবনাচর্চার ভিত্তি গড়ার জন্য প্রি-প্রাইমারি এবং প্রাইমারি স্তরের সিলেবাসে বা পড়াশোনায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে । সঠিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করতে হবে । রেশনিং ব্যবস্থার পরিকাঠামোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান রেশনিংয়ের মাধ্যমে সুষম বন্টন করতে হবে । প্রতিটি পরিবারের জন্য ঘর বরাদ্দ মৌলিক অধিকারের মধ্যে রাখতে হবে । কৃষিকাজকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খুব বেশি শক্তিশালী করতে হবে । প্রতিটি পরিবারের অন্ততপক্ষে একজন সদস্যের কাজ করার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।

তবেই তো আমাদের দেশ সার্বিক দিক দিয়ে সুশিক্ষিত এবং সুনাগরিক তৈরি করতে পারবে । 'স্বাধীন' এবং 'স্বাধীনতা'র প্রকৃত অর্থও তখন বোঝা এবং বোঝানো অধিকতর সহজ হবে এবং আমাদের দেশও তখন প্রকৃত অর্থে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে ।।






স্বাধীনতার যুদ্ধে 
    অগ্নিমিত্র ( ডাঃ সায়ন ভট্টাচার্য) 

  অগ্নিযুগে এক অতি সুদর্শন ও সুদক্ষ বিপ্লবী ছিলেন। তাঁর নাম উল্লাসকর দত্ত । স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর নাম অমর হয়ে আছে।
   পূর্ব বাংলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৮৮৫ সালে তাঁর জন্ম হয়। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে উল্লাসকর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে যান। এখানে রাসেল নামে জনৈক ইংরেজ অধ্যাপক একদিন বাঙালীদের বিষয়ে নানা কটূক্তি করছিলেন। উল্লাসকর প্রথমে মৌখিক প্রতিবাদ করেন, পরে তাঁকে ঘুষি মারেন। ফলে কলেজ থেকে সাসপেন্ড করা হয় তাঁকে।
  কলকাতাতেই উল্লাসকর যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতির কাজে জড়িয়ে পড়েন। বিপ্লবীদের জন্য বোমা বাঁধার কাজে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত । যে বোমা মজঃফরপুরে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী ইংরেজদের উপর নিক্ষেপ করেছিলেন , সেটি উল্লাসকরেরই বানানো । তবে এতে কিংসফোর্ড মারা না গিয়ে অন্য এক জজ প্রিঙ্গলের দুই আত্মীয়া মারা যান।
  ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী ধরা পড়েন। মহাদেব নামে আত্মগোপন করে থাকা উল্লাসকরও পরে ধরা পড়েন । তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে আন্দামানে সেলুলার জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে অকথ্য নির্যাতনে তিনি সাময়িক ভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন ।
 নয় বছর পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন উল্লাসকর দত্ত । ১৯৩১ সালে আবার গ্রেফতার হন উল্লাসকর।
  দেশভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান, তবে সেখানে থাকতে না পেরে কলকাতায় ফিরে আসেন ও ১৯৫৪ সালে এক সহযোদ্ধা নারী বিপ্লবীকে বিবাহ করেন। ১৯৬৫ সালে শিলচরে উল্লাসকরের দেহাবসান হয়।
 অগ্নিযুগের এই মহান যোদ্ধার প্রতি আমার শতকোটি প্রণাম রইলো। আরো অনেক এমন দামাল ছেলের জন্যই ভারতবর্ষ স্বাধীনতার মুখ দেখেছিল!!..









স্বাধীনতা সংগ্রামে রামনগর এর চন্দনপুর
              রাজীব কুমার নন্দী

১৯৪২ সাল স্বাধীনতার আগুন জ্বলছে ভারতবর্ষ সহ মেদিনীপুর এর আনাচে কানাচে।স্বদেশী আন্দোলনের জমাট বেঁধেছে অবিভক্ত মেদিনীপুরের মাটিতেই।পূর্ব মেদিনীপুর এর রামনগর এলাকার চন্দনপুর গ্রাম ছিলো তৎকালীন স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান ও গোপন ঘাঁটি।মেদিনীপুর এর স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক না বলা কাহিনী জড়িয়ে আছে এই চন্দনপুর গ্রামের সাথে।চন্দনপুর এর চৌধুরী বাড়ি অর্থাৎ তৎকালীন জমিদার বাড়িতে আজও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বাক্ষর বহন করে।জমিদার পুলিন বিহারী চৌধুরী ও ভূধর চৌধুরীর বংশধর রজত বরণ চৌধুরী স্মৃতি চারণ করছিলেন সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের কথা।
    তৎকালীন সংগ্রামী নেতা বলাই লাল দাস মহাপাত্র ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের দাপুটে নেতা।তাঁর প্রতিনিধিত্বেই স্বদেশী আন্দোলন এক নুতুন প্রাণ পায় মেদিনীপুরের রামনগর এর বুকে।তিনি তৎকালীন রামনগর এর এক জনপ্রিয় নেতাও ছিলেন।কাঁথি ও রামনগর এলাকার স্বাধীনতা সংগ্রামের গোপন আখড়া করতেন চন্দনপুর এর জমিদার বাড়ির গোপন ডেরায়।সেই আখড়ায় আসতেন বিভিন্ন প্রান্তের লোক।চন্দন পুরের স্বাধীনতা সংগ্রামী দের মধ্যে আসতেন পুলিন রায় চৌধুরী,যামিনী পাহাড়ী, বিজয় মন্ডল,খগেন্দ্র রানা।এমনকি কাঁথি থেকে জমিদার বাড়ির আখড়ায় আসতেন প্রমথ বন্দোপাধ্যায়, ঈশ্বর মাল,সুধীর দাস প্রমুখ।
জমিদার বাড়ির গোপন ডেরায় ও পড়ো মন্দিরে চলতো গোপন মিটিং ও লাঠি খেলার প্রশিক্ষণ ও দেওয়া হতো।
জমিদার বাড়ির সদস্য রজত চৌধুরী সেই ভয়ঙ্কর দিনের  কথা বলছিলেন।১৯৪২ সালের সেই প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের ঠিক আগের দিন ইংরেজ ও তাদের মদদপুষ্ট দুষ্কৃতী জমিদার বাড়িতে চুরি করে ও পরে জমিদার বাড়ি সমেত চন্দন পুর গ্রামের বেশ কিছু বিপ্লবী দের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়।গ্রেপ্তার হয় বেশ কিছু বিপ্লবী।জমিদার বাড়ির সদস্যরা  কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যায়।কথিত আছে  বর্তমান পিছাবনীর কাছে ইংরেজ রা প্রবল ঝড়ের সম্মূখীন হয়ে মারা যান।বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনেও মেদিনীপুর এর সাথে রামনগর এক বিশেষ স্বাক্ষর বহন করে রেখেছে।স্বাধীনতার অনেক বছর পেরোলেও এখনো স্মৃতির পাতায় সমুজ্জল হয়ে আছে আন্দোলনের রূপরেখা।স্বাধীনতার দিনেও এখনো পরাধীনতার যন্ত্রণার ইতিহাস লেখা রয়েছে চন্দনপুর জমিদার বাড়ির জীর্ণ বাড়ির আনাচে কানাচে।









       স্বাধীনতা - একটি অন্য ভাবনায় 
               সৌম্য ঘোষ

  'স্বাধীনতা ' অর্থ  স্ব --- অধীনতা। ' স্ব' এখানে ব্যক্তির একক মনন ,চিন্তন ,শিক্ষা-সংস্কৃতির পরিসর হতে পারে । তেমনি 'স্ব' বলতে একটি দেশ জাতি বা গোষ্ঠী হতে পারে। ১৯৪৭ সাল, ১৫ ই আগস্ট আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে । ভারতের জাতীয়তাবাদী ইতিহাসে স্বাধীনতা একটি মহান ও পবিত্র ফলক হিসেবে উল্লেখিত । জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তার কাঙ্ক্ষিত পরিণতি লাভ করে স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ।
  'স্বাধীনতা'  কি ? একটি ধারণা মাত্র ।একটি নির্ধারিত পরিসর। কিছু বিধি বন্ধন সাপেক্ষে তার অস্তিত্ব । স্বাধীনতা কে একটি খোলা মাঠের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে । যার সীমা আছে । আবার পরিসরও আছে ।
    স্বাধীনতা কি ব্যক্তির ? ব্যক্তি মানে তার মনন- চিন্তন । আপাত আধুনিক, ফ্যাশন দুরস্ত তরুণ-তরুণী ,যারা একই সঙ্গে বিজ্ঞান ও জ্যোতিষে মগ্ন  ; সে  কি স্বাধীন  !  সে-ও তো কু- সংস্কারের  কাছে অনৃতের কাছে বন্দী ।এদের স্বাধীনতা কবে আসবে  ? আসলে স্বাধীনতার কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয় না । নানাভাবে আমরা বন্দি । নন্দনতত্ত্ব ,সাহিত্য ,শিল্পকলা ,বিজ্ঞান, চিত্রকলা ,নাটক ,ভাস্কর্য ,সিনেমা ইত্যাদির কোন নির্দিষ্ট ভূগোল নেই ।সে অনন্ত আকাশের পাখির মতো সর্বত্রগামী।স্বাধীনতার আসল রূপটিও তাই ।
   
      রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা নাগরিকের জীবন ও ভূখণ্ড রক্ষা করে ।সেই ভূখণ্ড নাগরিক বৃন্দের দেশ ।সেই দেশের মধ্যে আছে সমাজ ,ধর্ম, সংস্কার ও সংস্কৃতি। আছে নিয়ত বিবর্তনশীল মানবিক সত্তা । যা সমাজের প্রতিটি দিক ,ব্যবস্থা এবং ব্যক্তি মানুষের নৈতিকতা ও আচরণবিধির মধ্যে পরিবর্তন ঘটায়। দেশ ও রাষ্ট্র --------- এক অর্থ নয়। রাষ্ট্র সম্যক বিধি ও নিয়মকানুন তৈরি করে শৃঙ্খলা রক্ষা করে ।  ব্যক্তির  বোধ ও বিকাশে তার এক্তিয়ার নেই । সেখানে চিত্তবৃত্তির স্বাধীনতা ।
        একজন ব্যক্তি প্রথম একক সত্তা । তারপর সে সামাজিক সত্তা ।এরপর আসে তার রাষ্ট্রীয় পরিচিতি ।আর এই পরিচিতির জন্য লাগে ভোটার আইডি ,পাসপোর্ট ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু সেই ব্যক্তি ছবি আঁকবে কিনা , কী  গান গাইবে, আমিষ, না নিরামিষ ভোজন করবে । কী খাবে ,কী খেতে পারবে না । নাস্তিক না ঈশ্বরবিশ্বাসী ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা থাকতে পারেনা ।
       রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে প্রতিটি নাগরিকের গুরুত্ব সমান হওয়া উচিত ।কারণ রাষ্ট্র একটি নৈব্যক্তিক সত্তা । একটা কাঠামো মাত্র। সমাজের প্রয়োজনের নিয়মবিধি তৈরি করা রক্ষা করা ; রাষ্ট্র হল নির্ণায়ক, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক । একেই বলা হয়ে থাকে সরকার বা গভর্মেন্ট  ।প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের অধীন ও রাষ্ট্রের অংশ ।
       অনেক সময় আমরা দেখে থাকি, রাষ্ট্র স্বয়ং ক্রিয় যন্ত্রের মত নাগরিক অধিকার হরণ করতে উদ্যত হয় । অর্থাৎ যখন এই দেশের কিছু সংখ্যক ক্ষমতাবান নাগরিক, যারা শাসন প্রণালীর পরিচালক ,ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে সেই মুহূর্ত থেকে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতার লুপ্ত হয়। যে মুহূর্তে দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ।রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বাধীন সত্তার অপব্যবহার ঘটতে থাকে , তখন নাগরিকবৃন্দও আর স্বাধীন থাকেনা।
        কর্তব্যে, অঙ্গীকারে স্বাধীনতা প্রতিমুহূর্তে অর্জন করতে হয় । প্রতিক্ষেত্রে ।  জীবনে এর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু নেই  ।।









স্বাধীনতার হিসেব
          সুব্রত সামন্ত


বিপ্লবীরা হয়তো শেষ হয়ে যায় তবে বিপ্লবের সমাপ্তি ঘটে না কোনদিন--- আর এই বিপ্লবের শিকার আজও সারা পৃথিবী! জ্বলন্ত সমাজ তার অংশবিশেষ...নয় নয় করে বাহাত্তরটা বছর পেরিয়ে এলাম। আজ হিসেব নেওয়ার দিন কি পেলাম আর কি পেলাম না!! পূর্ব পুরুষেরা বলত সেদিন স্বাধীন ভারত সরকার পরাধীন প্রবীণ ও বিপ্লবীদের ফ্রিডম ফাইল তৈরি করে এক ধরনের ভাতা প্রদান করবে আমরা নিইনি। শুধু বলেছিলাম স্বাধীনতা পাবো বলে আন্দোলন করেছিলাম স্বাধীনতা পেয়ে গেছি ফ্রিডম ফাইলের কী দরকার? সেদিন ইংরেজের দাসত্ব করার জন্য যে আমাদেরকে ইংরেজ সরকার শোষন করত ঠিক তবে বহু সুবিধাও দিয়েছিল সেই সুবিধা আমরা অনায়াসে ত্যাগ করেছিলাম শুধুমাত্র স্বাধীনতা একদিন ঠিক পাবো বলে। এখন ভাবি আমরা কাদের জন্য স্বাধীনতা এনেছিলাম? এই এদের জন্য? যারা বোঝে না স্বাধীনতা কী জিনিস... উনারা মৃত্যু অবধি বলেছিলেন--- আজ নেতাজি থাকলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত। কাশ্মীর সমস্যা ও তিব্বত সমস্যা ঐতিহাসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াতো না। আজ ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা যেতনা। ধর্ম নিয়ে বিভেদ তৈরী হতো না, সোনার বাংলা সোনার থাকতো সোনালী সংস্কৃতিগুলো নষ্ট হতো না, কলেজ স্ট্রিটের অসহায় বিদ্যাসাগর আজ মাটিতে লুটিয়ে পড়তনা,বলতে লজ্জা বোধ হয় কার জন্য স্বাধীনতা পেলাম সেই মানুষটাকেই জানেনা অনেকেই!! তবুও আমার ভারত... আপনার ভারত...। নেতাজীকে নিয়ে মহান বিপ্লবী ও মনীষীদের নিয়ে আমরা আজও নোংরা নোংরা মন্তব্য করি নিজেদের বুদ্ধিজীবী ও বিশ্বের সেরা রাজনীতিবিদ মনে করতে ব্যাস্ত, অথচ ইতিহাসের পাতায় কোন কারনে স্থান পেল সিঙ্গুর আন্দোলন তা কখনই তলিয়ে দেখিনা। সত্যি এই আমার ভারত এই আমার বাংলা...হয়তো সত্যি কারে স্বাধীন হলে গরিব মানুষ গরিব থাকত না, শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হতো না একজন মেথরের ছেলেও শিক্ষক হবার দাবী রাখতো।দেশবাসীর মানসিকতা একটু অন্যরকম হতো হয়তো রবীন্দ্রনাথের নোবেলটা খোলা জায়গায় রাখলেও সুরক্ষিত থাকতো।
           আজ নিজেকে প্রশ্ন করুন--- আপনি স্বাধীন তো? বিরোধী দল সমর্থন করেন বলে আপনার বাড়িতে বিপর্যয়ের কোনও ত্রান অথবা অনুদান আসে কী?  প্রশ্ন করুন পাশের বাড়ির মানুষটাকে যে এই লকডাউনে আপনি কেমন আছেন? আজকের দিনটা আপনার জন্য কতটা স্পেশাল? বছর দশেকের ছেলেটা যে কিনা চায়ের দোকানে কাজ করছে ওর কেমন লাগছে একবার  জিজ্ঞাসা করুন!! ন্যায়ের পক্ষে কথা বলায় যাকে হাজতবাস করতে হয় সে কি এই ভারতীয়? বিশ্বাস করুন পরাধীন ভারত থেকে আজও প্রমাণিত সত্যিকারের নায়ক তারাই যারা দেশের প্রাণ দিয়েছেন... নিজেদের ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিয়াত্তরতম স্বাধীনতা দিবস তাদের জন্য উৎসর্গ হোক মহান বিপ্লবী,দেশনায়ক, মনীষী,বর্তমান সেনানায়ক,জোয়ান,প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্মী ওদের সৌজন্যে ও স্মৃতিতে।
আসুন শপথ গ্রহণ করি---
    
    আমার ভারত তোমার ভারত
        আমরাই ভারত বাসি...
     আর যেন না কাঁদতে শুনি
            আমার মহীয়সী!
           শিক্ষা চাই শাস্তি
       চাই আরো অধিকার---
     শান্তিতে থাক সৈন্যগুলো
       আঁকড়ে রাখুক বর্ডার।
      শাসন থেকে মুক্তি পাক
         বাড়ির লক্ষীরাও
      আমার ভারত শীর্ষে যাক
          জানুক বিশ্বটাও।।
                         ....✍সুব্রত সামন্ত








কাকে বলে স্বাধীনতা?
            সৌরভ পুরকাইত



দীর্ঘ দুশো বছরের
পরাধীনতার শিকল ভেঙে স্বাধীনতা লাভ- একটিমাত্র তারিখের মধ্যে যেন এত বড় ইতিহাসকে ধরে রাখা আছে।তারিখটি হল ১৫ই আগস্ট। ভারতের স্বাধীনতা দিবস।
স্বাধীনতা শব্দটিকে ভাঙলে হয় স্ব+অধীনতা।অর্থাৎ পরের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের অধীনতায় আসাই হল স্বাধীনতা।যেমন দেশের স্বাধীনতা,মনের স্বাধীনতা সমাজের স্বাধীনতা,বাক স্বাধীনতা,কাজের স্বাধীনতা। ব্রিটিশ শাসকের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছে।
আরও নানা ভাবে স্বাধীনতা শব্দটিকে প্রয়োগ করা হয়।অনেকে বলে 'আমি স্বাধীন,আমি যা খুশি তাই করতে পারি'।কিংবা বলি 'আমার কি একটা স্বাধীনতা নেই?' বাস্তবে দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নামে শাসন বিধিকে লঙঘন করে রাস্তায় ঝড়ের বেগে বাইক চালিয়ে যাওয়া, উৎসবে অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকারের গগনবিদারী তাণ্ডব, আহারে বিহারে বিদেশী সংস্কৃতির সস্তা   অনুকরণ এসব স্বাধীনতা নামের যোগ্য উদাহরণ হতে পারে না। স্বাধীনতা যখন তার মাত্রাকে অতিক্রম  করে তখন তা স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হয়।যেমন অতিভোজন ডেকে আনে বদহজমকে।
আমাদের মনে দুপ্রকার বৃত্তি।যখন শুভবৃত্তির অধীনে থাকি তখন সত্যিকার স্বাধীনতা। যেমন শিক্ষকের শাসন,অভিভাবকের তিরস্কার  আমাদের শৃঙ্খলের অধীনে রেখে স্বাধীনতা আস্বাদের যোগ্য করে তোলে।
ইংরেজরা  আমাদের চিন্তা,চলাচলকে বন্দী করতে চেয়েছিল  সেটা ছিল পরাধীনতা।আবার যখন শিক্ষা,বিজ্ঞান উপহার দিল  সেটা একপ্রকার  স্বাধীনতা।

সুতরাং  স্বাধীনতা শব্দটি বেশ মজার। ক্ষেত্র বিশেষে এর অর্থ পাল্টে যায়।।




🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
              গল্প
🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
     
  ভিন্ন স্বাদের স্বাধীনতা
                    কবিরুল ( রঞ্জিত মল্লিক )
      
           মালদার বামনগোলার অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে সৌমিতা ছোট থেকেই স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখেছে।

       শ্বশুড়বাড়িতে এসেই এই প্রথমবার হোঁচট খেল। হস্তক্ষেপ হল স্বাধীনতার। স্বাধীনভাবে বাঁচার ইচ্ছাটাই যেন মাটি হয়ে গেল। কোথাও যেন একটা কিছু না পাওয়ার খেদ।

      স্বাধীনতা যে পরম সুখ সেটা সৌমি বুঝেছিল। নজরুলের বিদ্রোহী কবিতাটা পড়লেই বুকের মধ্যে একটা স্বাধীনভাবে বাঁচার দামামা বেজে ওঠে।

       আজ শ্বশুড়বাড়িতে পা রাখতেই মনে হল যেন সেটা চোট পেল। মনের মধ্যে বেড়ে ওঠা " চেতনার নজরুল " যেন শ্বশুড় বাড়ির ভারী গম্ভীর আলমারির পিছনে লুকিয়ে পড়ল। দম বন্ধ হয়ে ছটফট করতে শুরু করল।

      স্বামী মস্ত বড় এমএনসির কর্ণধার হওয়াতে বিভিন্ন জায়গাতে যেতে হয় আর সেই সুবাদে পার্টিতে অ্যাটেণ্ড করতে হয়। সেই জন্য সৌমিতার অনেক সমীকরণ বদলে গেল।

       শ্বশুড়বাড়িতে এসেই ফতোয়া জারি হল। সৌমিতার শাড়ি পড়া চলবে না। জিনস্ টপ পড়তে হবে। শাঁখা সিঁদূরতো একদমই নয়। ঐগুলো এখন নাকি ব্যাক ডেটেড। অন্তর্বাসের ফিতেটাও একটু উন্মুক্ত রাখতে হবে। সাধারণ খাওয়া ছেড়ে কন্টিনেন্টাল ধরতে হবে। শুধু তাই নয় বর অর্ক যেহেতু পার্টিতে যায় সেইজন্য সৌমিকে মদ্যপান করতে হবে। শ্বশুড়বাড়িতে মাঝে মাঝেই মদের আসর বসে। আর সেই জন্য সৌমিকে এই সব ব্যাপারে একটু সড়গড় হতেই হবে।

     সব শুনে সৌমির তো দম বন্ধ হবার মত অবস্থা।এই নিয়ে অর্কের সাথে অশান্তি কম হয়নি।

      বিয়ের পর বেশ কিছু মাস কেটে গেছে।
     ....... ...... ...... ........ ..........   
     
              আজ মিস্টার খাস্তগীরের বাংলোয় বিশাল বড় পার্টি। বিদেশ থেকেও নাকি অনেকে আসছেন। শ্বশুড়বাড়ির সকলেই গেছে। সৌমিকে কেউ নিয়ে যায়নি।ও নাকি আনস্মারট্। ঐ সব জায়গায় একদম বেমানান।

      এদিকে সন্ধ্যের আগেই মিসেস খাস্তগীরের ফোন। সৌমিকে আসতেই হবে পার্টিতে। মিসেস খাস্তগীর সৌমিকে যে ভীষণ স্নেহ করেন।

      সন্ধ্যের পর পরই পাট ভাঙ্গা শাড়ি আর খোপায় বেল ফুলের মালায় নিজেকে মুড়ে জাইলো গাড়িটার স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়ে সৌমির রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব।

    শ্বশুড়বাড়ি সকলেই অবাক। বর হাঁদার মতন চেয়ে চেয়ে সৌমিকে দেখছে। একটা পর একটা বিদেশী প্রতিনিধিদের সাথে সৌমিতা কখনো ইংরাজী কখনো স্প্যানিশ বা ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলছে। সৌমি যে এত সব করতে পারে সেটা কেউই ভাবতে পারেনি। সবাই থ হয়ে গেছে।

                   সৌমিতার চোখে মুখে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার উচ্ছ্বাস। একটা খুশীর জোয়ার।

       একটু পরেই ধুতি পাঞ্জাবী আর শাড়িতে সুসজ্জিত হয়ে খাস্তগীর দম্পতি উপস্থিত হলেন। উনাদের এই পোষাকে দেখে সকলেই স্তম্ভিত। শুধু তাই নয়। এই প্রথম পার্টিতে সুরা বর্জন। খাবারেও বাঙালীয়ানার ছোঁয়া।

       নেপথ্যের কারিগর সেই সৌমি। সৌমিতায় খাস্তগীর দম্পতিকে এইসব আয়োজন করতে বলেছেন।

      মিসেস খাস্তগীর সৌমিকে একটা গান গাওয়ার অনুরোধ করতেই সৌমি স্টেজে উঠল। আর সবাইকে অবাক করে শুরু করল -
     " আমি বাংলায় গান গায়
       আমি বাংলার ...... ........
         ....... ....... ...........
        ........ ........ ...........

       আমি আমার আমিকে ...... .......
        ........ ...........
       ........ খুঁজে পাই
      ......... .....
...... ......... ........... "

        সৌমির চোখে মুখে একটা স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার স্বাদ। ভিতরের " চেতনার নজরুল " টা যেন বেরিয়ে আসছে। বেরিয়ে এসেই ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছে। সবাইকে সে শোনাচ্ছে স্বাধীনতার বাণী , মাথা উঁচু করে চলার উপপাদ্য।

       পার্টি শেষ হতেই জাইলো গাড়ির চাকায় শ্বশুড়বাড়ির সকলের অহংকারকে পিষে ফেলে হুস্ করে বেরিয়ে গেল প্রেসিডেন্সীর সেরা ছাত্রী সৌমিতা সেন (চৌধুরী)।
      ..... ....... ....... ........

        দেখতে দেখতে স্বাধীনতা দিবস চলে এল। সৌমিতার পাড়ার ক্লাবে এবার বিশাল বড় অনুষ্ঠান। সৌমি ঠিক করেছে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে।
                                  .. ..... ...... ........
       
       স্বাধীনতা দিবসের দিন সৌমি প্রভাতফেরীতে পা মেলেছে। রক্তদান শিবিরেও রক্তদান করেছে। তারপর স্বাধীনতা নিয়ে বাংলাদেশের এক বিখ্যাত কবির কবিতাও আবৃত্তি করেছে।

        সন্ধ্যেবেলায় শহীদ ক্ষুদিরামের জীবনী অবলম্বনে এক সুন্দর নৃত্যনাট্যও পরিবেশন করেছে।

               " এক বার বিদায় দে মা ....... .........
                হাসি হাসি পড়ব ফাঁসি দেখবে ভারত বাসী
                             ........ ...... ......... "

      সৌমি স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখেছে। এইভাবে বাঁচার মধ্যে ও একটা আলাদা রসদ খুঁজে পাই।যেটা ওর হিমোগ্লোবিনকে চাঙ্গা করে।

       শ্বশুড়বাড়িতেও আর তেমন অশান্তি নেই। সৌমির বর অর্ক সৌমিকে বেশ সমীহ করে চলেন।
                    ....... ...... ...... ............
     
               আজ বিশ্বকর্মা পুজো। বসতির ছেলে গুলো সকাল বেলায় সৌমি আন্টি বাড়িতে এসে হাজির। ওদের পড়নে ছেঁড়া প্যান্ট , মুখে বুরুণ্ডির ক্ষুধা । কিন্তু চোখ ভিসুভিয়াসের মতন জ্বলছে। ওদের হাতে ঘুড়ি লাটাই।

               সবাইকে নিয়ে সৌমি ছাদে উঠল। হাওয়ায় ওর চুল গুলো উড়ছে।

                     লাটাই হাতে ধরে একটার পর একটা ঘুড়ি ছেড়ে দিল।

                  ঘুড়ি গুলো কি সুন্দর আকাশে উড়ছে। হাওয়ায় দুলছে। ঠিক সৌমির মতন। বাঁধনহীন। তাই দেখে বসতির ছেলে গুলোর দারুণ উল্লাস।

               " ভো কাট্টা ! ভো কাট্টা !

      স্বাধীনতার স্বাদ সত্যিই বড় মধুর।








স্বাধীনতা 
ডা: নরেন্দ্র নাথ নস্কর

চম্পা মাসি আমাদের বাড়িতে রান্না করত। ভালো নম ছিল চম্পাবতী। বয়স আন্দাজ 60 থেকে 65 বছরের মধ্যে। এই বয়সে মানুষ অবসর নেয়। কিন্তু পেটের দায়ে মাসি লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ নিয়েছে।
এমনটা হবার কথা নয়। মাসির ছেলে মেয়ে দুই আছে। ছেলের অবস্থা ভালো। চাকরিও ভালো করে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আশ্চর্য তবুও এই বৃদ্ধ বয়সে মাসিকে কাজ করতে হচ্ছে।
স্বামী মারা গেছে বছর দুই হয়ে গেল। স্বামী বেঁচে থাকতে মাসি বেশ যত্নেই ছিল। একটা প্রাইভেট কম্পানিতে লেবারের কাজ করত স্বামী। কম মাইনে পেত। খুব কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশুনা করিয়েছে।ছেলে বলত " মা আমি চাকরি পেলে তোমাকে আর বাবাকে কোন কাজ করতে দেব না।
মাসি বলত আগে তুই চাকরি কর,তোকে একটা বিয়ে দিই। তারপর দেখা যাবে।
মেয়েকে বেশ কয়েক বছর আগে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
বাবা অবসর সময়ে যা টাকা পেয়ে ছিলেন তাতে যাহোক করে মেয়ের বিয়ের খরচ হযে গেছে। কারো কাছে হাত পাততে হয় নি। বিয়ের পর চম্পার সংসারে একটু টানাটানি কিছুদিন চলেছিল।স্বামীর প্রেসার ও হাই সুগার ছিল। ওষুধ কিনতেই অনেক খরচ হয়ে যেত। ছেলে চাকরি পাবার পর কিছুদিন সংসারে একটু স্বচ্ছলতা এসেছিল। বাবার চিকিৎসাও বেশ চলছিল। মা বললে এবার একটা বিয়ে কর বাবা। ছেলে এই সময় বিয়ে করতে চায় নি। চম্পাই বৌ এর হাতের ভাত খাবে বলে জোর করে ছেলের বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ভাবলে তো আর হয় না।ছেলের বিয়ের পর ছমাস যেতে না যেতেই বৌমার আসল রূপ বেরিয়ে পড়ল । আলাদা থাকবে বলে বৌ ছেলের উপর চাপ দিতে লাগল। ছেলে অনেক করে বৌকে বুঝিয়েছিল। কিন্তু সুখে থাকবে বলে,আলাদা হতে চেয়ে
সংসারে ছেলের সাথে ঝগড়া করতে লাগল। অশান্তি এড়াতে চম্পাই বলল বাবা তুই আলাদা হলে বৌমা যদি সুখে থাকে তবে তাই হোক। নিজের বাড়ি ছেড়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছেলে ও বৌ বাবা মা কে ছেড়ে চম্পার সামনে দিয়ে চলে গেল। তারপর কিছু দিন ছেলে মা বাবার জন্য কিছু টাকা পাঠাত। ছমাস পর সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। এর পর খুব কষ্ট করে চম্পার দিন কেটে ছিল। স্বামীর চিকিৎসা ঠিক মত করাতে পারেনি। প্রায় বিনা চিকিত্সায় বছর খানেক পরে স্বামী পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। স্বামী মরে যাবার পর নাম মাত্র কিছুদিন মাকে টাকা পাঠাত। বছর খানেক পরে সেটাও পাঠান বন্ধ করে দিল বৌমার চাপে।
এই সময় একেবারে অগাদ জলে পড়েছিল চম্পা মাসি। সংসারে দেখার কেউ নেই,কোন জমানো টাকাও ছিল না। প্রায় না খেতে পাওয়ার অবস্থা হয়ে ছিল সেই সময় চম্পা মাসির। সাতকুলে কেউ নেই। পড়াশুনাও জানে না। বাধ্য হয়ে লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ নিয়েছিল। এতে দুবেলা দুমুঠো ভাত সে খেতে পাচ্ছিল।
ভুলেও ছেলে বা ছেলের বৌ কেউ এই সময় দেখতে আসেনি। টাকা দেবার ভয়ে, না মা ঝিয়ের কাজ করে সেই লজ্জায় কেউ আসেনি।
মেয়ের বিয়ে হয়ে ছিল একটুক্ষ দুরে। তার ইচ্ছা ছিল মাকেক্ষ সাহায্য করার,কিন্তু জামাই বলত চাকরি করা ছেলে যখন মাকে দেখেনা,সামান্য অবস্থায় আমরা কি দেখব।
যাই হোক এই হল চম্পামাসির ইতিহাস।
স্বাধীনতা দিবস এগিয়ে আসছে। সবাই স্বাধীনতা নিয়ে হইচই করছে। বিশেষ করে রাজ নীতির লোকজনেরা তো এ ওকে দোষ দিতে ব্যস্ত। তাদের দলের কোন দোষ নেই যেন।
সমাজের গরিব না খেতে মানুষদের কাছে স্বাধীনতা কি তারা বুঝতে পারে না।
কৌতূহলী হয়ে একবার চম্পামাসিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম " মাসি স্বাধীনতা দিবসের মানে বোঝ? মাসি অবাক হয়ে বলেছিল স্বাধীনতা কাকে বলে বাবা? এই বুড়ো বয়সেও দেখনা আমি কেমন স্বাধীনতা উপভোগ করছি।
আচ্ছা বাবা তুমিই বল না,আমি কি স্বাধীন?
যে স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করে কিছু দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেটা কি আমরা দেখতে পাচ্ছি?
লেখা পড়া জানি না, কিন্তু এটা জানি আজও আমরা দাসত্ব করছি।
তখন আমাদের বাবা কাকারা বৃটিশ দের দাস ছিল। আর আমরা শাসকদের দাসত্ব করছি।
যে দেশ বৃদ্ধ বৃদ্ধা দের অবসরের বয়সেও পেট ভরে খাওয়ার দায়িত্ব নিতে পারেনি,সেখানে কি করে বলি আমাদের মত গরিবরা স্বাধীনতা পেয়েছি?
এর বেশি কিছু বুঝিনা বাবা।
আমি আর এর উত্তরে চম্পামাসিকে কিছু বলতে পারিনি। আমার সাধ্য ছিল না কিছু বলার।






প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলার স্বাধীনতা দিবস পালন 
         আব্দুল রাহাজ

একটা ছোট্ট প্রত্যন্ত গ্রাম চারিদিকে গাছপালায় আবৃত করে আছে এখানকার মানুষ অত্যন্ত প্রান্তিক সেদিন হাবিল কাবিল জয়দাশরা স্কুলের শিক্ষকের কাছে শুনেছে এবার আমাদের স্কুলে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে সেদিন ওরা প্রথম স্কুল যায় এর আগে কোনদিন ইস্কুলে পড়ে নি স্বাধীনতা দিবস পালন ওরা করেনি ওদের গ্রামের স্বাধীনতা দিবস পালন হয় না গ্রামে একটা রেডিও পর্যন্ত নেই সারাদিন বনের কাঠ ফলমূল কুড়িয়ে যা হয় তাই দিয়ে সংসার চালায় সেখানকার মানুষেরা এইভাবে গ্রামের মানুষের দিন কাটে ওরা সেদিন শিক্ষকের কথা মন দিয়ে শুনলো ওরা ইস্কুল থেকে বাড়ি আসার সময় ভাবতে লাগলো হরিহরদের বাগানে এসে হাবুল বলল আমরা আমাদের গ্রামের স্বাধীনতা দিবস পালন করব তোরা কি বলিস কাবিল জায়গা দাসেরা বলল হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ তাই হবে কিন্তু কিভাবে করবি এই কথা বলতে বলতে হারু দাদার সাথে দেখা হারু দাদা আমাদের গ্রামের একজন ভালো মানুষ ওরা বলল হারু দাদা আমরা এবার স্বাধীনতা দিবস পালন করব ভারতে বলল বাহ বাহ খুব ভালো অনেকদিন পর আবার দেশাত্মবোধক গানে আমাদের সবুজ শ্যামল গ্রাম ভরে উঠবে আমাদের নেতৃত্ব দেবে আমরা সবাই একযোগে কাজ করব। তাহলে
 মধু সুজন সরেন সবাই এ কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে ওদের বলিস হাত ধরে বলল তাহলে সন্ধ্যাবেলায় আমার বাড়িতে আসিস একটা আলোচনা হবে হাতে মাত্র তিন দিন ঠিক আছে ওরা বিকেলে নদীর ধারে খেলা করতে করতে মধু সুজন আর সরেন বলল ওরা তো খুব খুশি একথা শুনে। ওরা সন্ধ্যেবেলায় হাজির হল হারু দাদা বললো হাবুল কি করবি কাবিল জয়দাশরা হ্যাঁ বলল স্কুলে যেভাবে করবে সেভাবে
আমরাও করবো তাহলে পতাকা কোথায় পাবি সুজন বলল আমরা আনবো তোমরা শুধু কি করতে হবে বল এইতো অনেকটা কাজ এগিয়ে এলো মধু বলল কোন জায়গায় করবি তালতলার মাঠে সবাই শুনতে পাবে হাদু দাদা কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা শুরু হলো ‌। সুন্দরভাবে সাজানো হলো চারিদিকে খুশি হিমেল বাতাস গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রামের মানুষের মধ্যে এক অন্যরকম অনুভুতি আসে মনে ছিল সেদিন যেন গ্রামের উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতা দিবসের সকালবেলা সূর্যের স্ফুলিঙ্গ আলো চারিদিকে বৈচিত্র্যময় করেছিল হারু দাদা রেডিয়োয় দেশাত্মবোধক গান শুরু হল চারিদিকে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন তালতলার মাঠ এক অন্যরকম পরিবেশ নিয়ে গড়ে উঠেছিল তারপর হারু দাদা গ্রামের প্রবীণ মানুষ নিমাই সাঁধুকার হাত ধরে আবুলদের গ্রামে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন হয় আস্তে আস্তে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হাবুলদের গ্রামের প্রথম হতে চলা স্বাধীনতার অনুষ্ঠান। সেই দিন সকাল যেন প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলাকে অপরূপ শোভায় পরিণত করে অনন্য পরিবেশ গড়ে তুলেছিল হাবুল জয় কাবিলরা মধু নরেন সরেন রা দেখেছিল নতুনগ্রাম অত্যন্ত ছোট্ট গ্রামের স্বাধীনতা দিবস পালন এক অন্য মাত্রায় অন্য মর্যাদায় পরিণত করেছিল।






🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
            অনুগল্প
🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি অনুগল্প ------

       স্বাধীনতার খোঁজে
                      জহরলাল দাস

              স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কিত ছবি আঁকতে হবে।স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন ক্লাসে রবীন স্যারের নির্দেশ মত তিতলি একটি ছবি এঁকে জমা দেয় স্যারের কাছে।

"ফুটপাতে ডাস্টবিনে জীর্ণ শীর্ণ পোষাক পরিহিত কয়েকটি ছেলে মেয়ে কি খুঁজছে।পাশে দু'একটি কুকুরকেও দেখা যাচ্ছে। "

ব্যতিক্রমী এই ছবিটা হাতে পেয়েই রবীন স্যার তিতলিকে ডেকে নিয়ে বললেন-----"এই তিতলি কি এঁকেছিস্ রে এটা?
আমি তো তোর এই ছবির কিছুই বুঝতে পারছি না।"
তিতলির জটপট উত্তর---স্যার ফুটপাতের ডাস্টবিনে উচ্ছিষ্টের ভিতর কুকুরের সাথে ওরা ও স্বাধীনতা খুঁজছে!"




🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳

              স্বাধীনতার ছড়া
🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳

      স্বাধীন
              উমর ফারুক

স্বাধীন হলাম বড্ড খুশি
ভারতমাতার কোল
দেশের বুকে সেই ছদ্দবেশী
বাজায় ডামোডোল
স্বাধীন হল আইন বিচার
আরেক রাজার হাতে
তাইতো আইন ভ্রষ্ট হলো
ধর্ষিত দিনে রাতে।
ক্ষুধা যখন জোঁকের কামড়
করুন সুরে ডাক।
রাজনীতির এই জুয়াখেলায়
উল্টো দিকে বাঁক।
শিথিল হলো জ্ঞানের গাড়ি
মূর্খ হলো রাজা
স্বাধীন তবু লজ্জা লাগে
শিক্ষিত হয় প্রজা।






     এসো ক্ষুদিরাম
               সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

ঝিলমিল ঝিল মনের মাঝে
  নতুন আঙিনায়
চল্ চল্ চল্ কোথায় যাবি
   সেই সে ঠিকানায়
আয় আয় আয় কে যাবি আয়
      সময় বয়ে যায়
তিরতির বাতাস বহে
আয় না ছুটে আয়।
গুণগুণগুণ গান শুনে ঐ
   মায়ের কাছে আয়
মা যে আজ বড়োই দুখী
  ক্ষুদিরামকে চায়
হাসি মুখে পড়তে দড়ি
  যে ফাঁসির মঞ্চে যায়।





      ভারতের স্বাধীনতা
                  জুয়েল রূহানী
ইংরেজ শাসনের হলো অবসান-
ভেঙ্গেছে শিকল পরাধীনতার,
ভারতবাসীর মনে মুক্তির জ্বয়গান-
সময় এখন শির তুলে দাড়াবার!
এতদিন যারা লুটেছিল ধন,মান;
দু'শ বছরের ইতিহাস স্বীকৃত,
দিয়ে গেল তারা আমাদের সম্মান,
যে ঘটনা আজ ইতিহাস বিস্তৃত।
কুঠি গেড়ে তারা ছিল মসনদে,
শোষিত হয়েছিল ভারতবাসী
অবশেষে শত বাদ-প্রতিবাদে-
তাড়িয়ে দিয়েছি ভারতবাসী।
দু'শ বছর কেটে যেতে যেতে
কর্ণগোচরে মুক্তিরও বাণী,
পনেরো আগস্ট, ৪৭ হতে-
ভারতবাসীর স্বাধীনতা জানি।










বন্দেমাতরম্
তাপসী প্রামাণিক

ডাকছে ওই দেশমাতা
ডাকছে ভারতবর্ষ
ওঠো জাগো ঘুমন্ত প্রাণ
থেকো না আর বিমর্ষ।

রক্ত দিয়ে শহীদের ঋণ
করো এবার পূর্ণ
হাতে হাত মিলিয়ে করো
শত্রুর দর্প-চূর্ণ।

প্রয়োজনে ধারণ করো
অস্তরূপী কলম
বহু-রক্তের স্বাধীনতায়
উপশমকারী মলম।

কোটি কণ্ঠে উচ্চস্বরে
বলো বন্দেমাতরম্
জয়-হিন্দ ধ্বনিতে করো
মাতৃ-মুক্তি-পণ।

দেশের জন্য যারা আজ
প্রাণ দিচ্ছে বলি
তাদের জন্য খেলব মোরা
শত্রুর রক্তে হোলি।

দেশের শত্রুকে বর্জন করি
নির্দ্বিধায় - নির্ভয়ে
গর্বিত হই দেশমাতার জন্য
সন্তান- পরিচয়ে।

       



🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
                কবিতা বিভাগ
🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳


   স্বাধীনতা
            শাশ্বতী দাস

আমরা নাকি স্বাধীন আজ,
স্বাধীন আমাদের ভারত মা!
সত্যিই কি হয়েছি স্বাধীন!
পেয়েছি কি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা?
কাকে বলে স্বাধীনতা?
কাদের বলে স্বাধীন ভারতবাসী?
যে মেয়েটিকে হতে হয় নির্যাতিতা প্রতিনিয়ত পুরুষের হাতে,
সেওতো ভারতবাসী,
সন্তান স্বাধীন ভারত মায়ের!
যে শিশুটি কন‍্যা ভ্রূণ হওয়ার অপরাধে
মারা যায় মাতৃগর্ভে -
সেওতো হতো ভারতবাসী,
জন্ম নিতো স্বাধীন ভারত মায়ের কোলে!
যে মেয়েটিকে পুড়ে মরতে হয় পণপ্রথার বলি হয়ে,
সেওতো ছিল ভারতবাসী স্বাধীন ভারতবর্ষে!
যে মেয়েটির প্রতি বাঁকা নজর
অফিসে বসের বা পুরুষ সঙ্গীর,
সেও কিন্তু ভারতবাসী!
নাগরিক আজকের স্বাধীন আধুনিক ভারতবর্ষের।
যে মেয়েটিকে ভোলাতে হয় নিত‍্যনূতন পুরুষের মন প্রতিরাতে নিজের শরীর বেচে অসহায় নিরন্ন পরিবারের মুখে অন্ন জোটাতে,
সেও কিন্তু ভারতবাসী
স্বাধীন ভারতবর্ষে।।
এরই নাম কি স্বাধীনতা?
শৃঙ্খলমোচন ভারত মায়ের!
যে মায়ের কোটি কোটি কন‍্যাসন্তান বলি হয় প্রতিদিন প্রতিক্ষনে -
কি হবে স্বাধীনতা দিবসে
সেই মাকে সাজিয়ে!
একটাইতো আকাশ, একইতো মাটি -
আমার ভারতবর্ষে,
তবু কেন এতো ভেদাভেদ এ দেশের পুরুষে নারীতে!
যে মায়ের মেয়ে আজও পরাধীন,
সেই মাও কি হয়েছে স্বাধীন?
সত্যিই যদি করতে হয় পালন স্বাধীনতা দিবসের,
তবে আগে সম্মান কর এ দেশের
প্রতিটি মায়ের, প্রতিটি মেয়ের।।








স্বাধীনতা  -- ৭৩ 
               জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

দাদাকে বললাম,আজ কী বলতো?
দাদা বললো,আজ বকুল সংঘের সঙ্গে আমাদের টি-টোয়েন্টি।
জিততেই হবে,নইলে মুখ দ্যাখানো যাবে না।
ধাক্কা খেলাম।আজ কী তা আমি জানি।তবু ---
দিদিকে বললাম,আজ কী জানিস?
দিদি চুলে ক্লিপ লাগাতে লাগাতে বলে,জানি না মানে!আজ আমাদের
ডান্স কম্পিটিশনের মহা মুকাবিলা।আমিই অন্যতম ফেভারিট।আমি জানবো না!
এবার গেলাম কাকুর কাছে।জিজ্ঞাসা করি,বলতো আজ কী দিবস?
কাকু বলে,আজ ভোজ দিবস।চিকেন বিরিয়ানি উইদ কষা মাংস।এন্তার খাওয়া।
--- আজ আর কিছু হবে না?
কাকু বিরক্ত হয়,হবে না কেন পদযাত্রা হবে।চলে যাস তুইও সাঁটাবি।
এবার সামনে পড়ে বাবা।তাকে প্রশ্ন করি,আজ কী দিবস জানো?
বাবা সবজান্তার মতো দরাজ হাসে,আমি জানবো না!আজ ব্রিজ কম্পিটিশনের
ফাইনাল রাউন্ড দিবস।আমাকে জিততেই হবে।
মাকে কিছু বলতে হয় না।সে বলে,তাড়াতাড়ি স্কুলে যা।প্রভাতফেরি হবে না?
আর মুক্তির মন্দির সোপানতলে গানটা গাইবি।মা সব জানে।
দাদুকে পরীক্ষা করতে গিয়ে ঠকে গেলাম।হাতে একটা পতাকা ধরিয়ে তিনি বলেন,
পতাকা খাড়া রেখে পদযাত্রা করবি।ভুলবি না,আমরা শহিদের বংশধর।
ভারতবাসীকে শৃঙ্খলিত করার ক্ষমতা কারও নেই।
এবার কাজের পিসিকে দেখে শুধাই,বল দেখি আজ কোন দিন?
পিসি উজ্জ্বল মুখে উত্তর দেয়,আজ স্বাধীনতা দিবস বাবু।জানো না?
আজকের দিনে দেশ স্বাধীন হয়েছিলো যে।আমাদের ঘরে নেতাজির যে ছবিটা
আছে তাকে মুছে চন্দন দিয়ে মালা দিতে হবে।আর তার সামনে একটা পতাকা দিতে হবে।
তার মুখে কত আলো!
আমি অবাক হয়ে ভাবি আমার মা,দাদু এমনকি কাজের পিসি স্বাধীনতার কথা জানে
আর আমার দাদা,দিদি,কাকু,এমনকি বাবাও তা মনে রাখে না! কোনটা আগে ---
টি-টোয়েন্টি, ডান্স, ব্রিজ কম্পিটিশন না হাজার শহিদের রক্তে পাওয়া স্বাধীনতা?!





   আমার স্বাধীনতা  
            প্রশান্ত মাইতি

আমার মা স্বাধীনতা দেখেনি কখনো
কিন্তু আমি দেখছি প্রতিমুহূর্ত
              
সেই ইংরেজদের বুটের গটগট শব্দ
ভারি গলার গর্জন,বন্দুকের আওয়াজ
এসব মা দেখেনি কখনো
               
আমি দেখেছি স্বাধীনতা মুক্তাঙ্গনে
                
মায়ের শাসন,বেত্রাঘাত,আর ---
অনুশাসনীয় আশীর্বাদের স্নেহশীল ছায়ায়
বড় হয়েছি বাঁধন ছাড়া
           
আমার মা আমার স্বাধীনতা ।।
       





ফিরিয়ে দাও পরাধীনতা
             আব্দুল রহিম

স্বধীনতা শব্দটি শুনতে বিচ্ছিরি লাগে
ঠিক উলঙ্গ বেশ‍্যা অপয়া নারীর  মতো
স্বাধীন শব্দটি শুধু মনের একটা সান্ত্বনা।।
সারা পৃথিবী  আজও পেটের ক্ষুধার জালায়
নিজ নিজ  ইজ্জত বাজারে বেঁচে বেড়ায়
গণতন্ত্র  লুকিয়ে  লাল  শাড়ির  ঘোমটাই
নিজ রক্তই লাগায় প্রতারনার যুদ্ধ লড়াই
এই তো  আমার দেশের সভ‍্য স্বাধীনতা।।
স্বাধীনতা বিষয়টি ঠিক  ধর্ষিতা  নারীর  মতো
যা আজীবন কালো পর্দার আড়ালে নির্যাতিত
কিন্তু কখনো বলতে পারেনা মনের ব‍্যথা।।
জানতে চাই আজ  স্বাধীনতার  স্বাদ  কেমন
তাজা রক্তের মতো না পচা পুঁজের মতো?
আজ স্বাধীনতা নয় মিথ‍্যা সাজানো  রংতুলি
আমার দেশের শাসন ব‍্যবস্থা না"কি গণতন্ত্র
তবে কেন এতো জাতি ধর্ম বর্ণ বৈষম্য।।
স্বাধীনতার স্বপ্নদেখা মানুষগুলো আজ শীতঘুমে
জাতির পতাকায় রক্তে লাল কালো দাগ জমে
এই তো আমার সভ‍্য দেশের স্বপ্নের স্বাধীনতা।
বেশ‍্যার মেয়েকে স্বাধীন সমাজ আবার করে নগ্ন
মানুষ আজ স্বার্থ লোভ লালশায় দ্বন্দ্বে  মগ্ন
বেশ‍্যা  কথাটা  শুনতে  সবার বিচ্ছিরি  লাগে
কিন্তু  হাত বাড়িয়ে বদলে দিতে কেউ চাইনা
বেশ‍্যা বেশ‍্যাই থাকে, স্বাধীনতা মিথ‍্যা রং মাখে।।
আর শুনতে চাইনা স্বাধীনতা স্বাধীনতা স্বাধীনতা
আর বাঁচতে চাইনা এ জীবনে মিথ‍্যা মিথ‍্যা মিথ‍‍্যা
ফিরিয়ে দাও পলাশীর সে রক্তরাঙা পরাধীনতা
আবার হক না'হয় নতুন করে প্রতিবাদের নব সূচনা।।







পালিত হয় স্বাধীনতা
             আভা সরকার মন্ডল

বন্ধ থাকে পঠন-পাঠন, কাজে-কর্মের ইতি
পালিত হয় স্বাধীনতা মেনে রীতি নীতি
আনন্দ উৎসবে-----
মেতে থাকা আকাশ বাতাস ভরে কলরবে ।।
রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা সাঁতরে স্বাধীনতা এলো
ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেলো
খুশি ঘরে ঘরে----
তবুও তো অশ্রু ঝরে পথটা স্মরণ করে।।
উত্তোলিত তেরঙ্গা তে স্বপ্ন ওড়ে কত
গোপন ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে বুকের ক্ষত
অনেক ব্যথার কাঁটা ---
ফুটে আছে শরীর জুড়ে সইছে বুকের পাটা‌‌ ।।

দেয়া কথার ঢলে ছিল  কুলে ফেরার তাড়া 
পরিণামে  কত পাখি হলো যে ঘর ছাড়া
স্তুপাকৃতি ছলে----

ডুবন্ত এক আশা শুধু বাঁচার কথা বলে ।।









 স্বাধীনতা তুমি
           সৌভিক রাজ

স্বাধীনতা তুমি রুক্ষ কঠিন শিশুর মুখের হাসি,
স্বাধীনতা তুমি প্রেম নিদারুন তোমায় ভালবাসি।
স্বাধীনতা তুমি গর্ব মোদের রক্ত স্নাত দিন,
স্বাধীনতা তুমি মুক্তিযোদ্ধা শোধ করেছ মায়ের ঋণ।
স্বাধীনতা তুমি উলঙ্গ শিশুর মুষ্টিবদ্ধ হাত,
স্বাধীনতা তুমি জেগে কাটিয়েছ শত বিনিদ্র রাত।
স্বাধীনতা তুমি প্রতিবাদী আর আমার অহংকার,
স্বাধীনতা তুমি জাগ্রত বিবেক আমার চেতনার দ্বার।
স্বাধীনতা তুমি প্রভাতফেরী মাতৃভাষার গান,
যে সুখেতে জড়িয়ে আছে বাংলা মায়ের প্রান।
তোমাকে নিয়ে আনন্দ মোদের গর্বে ভরে বুক,
স্বাধীনতাকে বুকে নিয়ে বাঁচি দূর হয় যতো দুখ,
স্বাধীনতা তুমি দুর্জয় ভারী প্রতিশোধের কঠিন রুপ,
স্বাধীনতা তুমি বজ্রসম সুরভিত দেবধূপ।
স্বাধীনতা তুমি নিকনো উঠোন শিশুর সদ্য ফোটা বোল,
স্বাধীনতা তুমি শান্তি অপার আমার বাংলা মায়ের কোল।


             


স্বাধীনতা,তুমি.....
                বিশ্বজিৎ কর

স্বাধীনতা,তুমি নিশ্চয় জানো-
রাজনীতি এখন পাঁকে,
স্বাধীনতা,তুমি জানো কি -
কত ব্যথা আজ বুকে!
স্বাধীনতা,আজও দেশজুড়ে-
অপুষ্টি ও অনাহার,
স্বাধীনতা,এখন দাপট শুধু -
দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার!
স্বাধীনতা,তুমি শুনে যাও -
আমরা নেই ভালো,
স্বাধীনতা,তুমি দেখে যাও -
আকাশ কত কালো!







স্বাধীনতার পর আমরা
           অঞ্জলি দে নন্দী, মম

স্বাধীনতার পর আমরা কি করছি?
একে অন্যের সঙ্গে লড়াই করছি।
অকালে মরছি।
কেন এ সব করছি?
তাঁরা কত ত্যাগ করে এনেছিলেন
আজকের এই স্বাধীনতা।
আর আমরা?
সত্যই কি স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করছি?
তাঁরা জেনেছিলেন,
কি তা, স্বাধীনতা।
কি দেশের প্রকৃত স্বত্বা?
আর আজকের আমাদের হিংসার উন্মত্ততা,
করে দিচ্ছে নিঃশেষ,
তাঁদের সেই সে ত্যাগের উপহার, তা।
স্বাধীনতা। স্বাধীন দেশ।
এখন শুধুই কথার কথা।
অপব্যবহার যথা তথা।






স্বাধীনতা
তৃণা মুখার্জী

স্বাধীনতার বড়াই করতে আর ভালো লাগে না।
 স্বাধীন সমাজে, এখনো পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আছি।
 স্বা--ধী--ন--তা।
বড় একটা শব্দ।
 বলতে ও ভাবতে অনেক ভালো লাগে। জ্ঞানভান্ডারে সঞ্চয় করা অনেক ভালো ভালো কথা মনে পড়ে যায় শুধুমাত্র এই দিনটিতে।
 স্বা--ধী--ন--তা।
 ভীতি সঞ্চারিত মনে স্বাধীনতা এসেছে কিনা দ্বন্দ্ব লাগে।
 স্বা--ধী--ন--তা ।
বড় একটা শব্দ।
 মানান সই বিশ্লেষণে ভাঙতে না পারা শব্দ। বৃহত্তর নামকরণে সমাদৃত,
 হারিয়ে যায় অনেক কন্ঠের ভীড়ে।
 শোনা যায় না, মুক্তকণ্ঠের স্বা--ধী--ন--তা র ডাক।
শুধু শোনা যায় ....
বড় একটা শব্দ ।
স্বা--ধী--ন--তা।








 স্বাধীনতাবোধ
        অলোক রায়


  স্বাধীনতা মানে যা খুশি তা করা নয়,
স্বাধীনের ভাব অপরাধীনতা স্বাতন্ত্র্যবোধকে স্বাধীনতা কয়।
  স্বাধীনতা হল একটি অকপট শর্ত,
যেখানে থাকবে জাতি দেশ,
  থাকবে নিজস্ব শাসন ব্যবস্থার রেশ,
কোন অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব।
  যেখানে দেহ মন আত্মা পরাধীন,
সেখানে সত্ত্বা নয়কো স্বাধীন।
হ্যাঁ! আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি,
    সে তো তথাকথিত।
কত শত তরুণ শহীদদের বিনিময়ে,
    তা আজ কল্পনার অতীত।
শত প্রাণের আত্মবলিদানে,
  হয়েছে স্বাধীন দেশ।
তবুও কেন প্রাণ দিতে হয় আজও,
    এই শুধু আক্ষেপ!

   স্বাধীনতা পেলেও তাঁর সুফল দূর্নীতিতে ভরা,
মানচিত্র পেলেও নিরাপত্তা আজ অধরা।
      এ কেমন স্বাধীনতা,
  যেখানে নারী কিশোরী হচ্ছে ধর্ষিতা।
স্বদেশেই আজ তাঁরা,
    আপন জনের মুখে নিত্য চর্চিতা।
কেন আজ মায়েরা স্বাধীন হয়েও লাঞ্ছিত,   
    কেন তাঁরা স্বাধীনতার সুফল থেকে বঞ্চিত।
স্বাধীন দেশে সন্ত্রাস কাদের হাতে তৈরি,
      স্বাধীন হয়েও কেন তবে,
বাক্ স্বাধীনতা আর কলমের গলায় দড়ি।
কেন যেন মনে হয় আজও আছি কারো অধীন,
আমি মুক্ত নই কোথাও যেন পরাধীন।
স্বাধীন দেশে আইন আছে শাসন নেই,
   নিরাপরাধী জেলে যায়,
আর গুন্ডা বদমাশ মুক্তি পায়।

   জোর যার মুল্লুক তাঁর,
প্রশ্ন জাগে, স্বাধীনতা তুমি কার?
  গরিবেরা অসহায় আর শিশুরা শ্রমিক হলে,
একে কী স্বাধীনতা বলে?








স্বাধীনতা
        অনাদি মুখার্জি

স্বাধীনতা তুমি স্বাধীন হও,
পরাধীনতা থেকে তুমি মুক্তি পাও।
হাজার হাজার মানুষের প্রাণের বিনিময়ে,
এসেছিলে তুমি কত যুদ্ধ করে।
সেই বীর শহিদের রক্তে ভিজে গেল মাটি,
ইংরেজদের তাড়িয়ে ভারত হলো খাঁটি ।
আমরা ছিলাম ব্রিটিশদের কাছে পরাধীন,
15 ই আগষ্টের এই শুভ দিনে আমরা হলাম স্বাধীন।
যাদের জন্য নষ্ট হচ্ছিল আমাদের মাটি,
তাদেরকে তাড়িয়ে দেশকে করেছিল খাঁটি ।
"তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো" বলেছিলেন সুভাষ,
প্রতিটি রক্তের ফোঁটায়, চোখের অশ্রুজলে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সে আমার ভারতবর্ষ ।









সেই স্বাধীনতা চাই
           রমলা মুখার্জী

স্বাধীনতা মানে নয় তো স্বেচ্ছাচার
দ্বন্দ্ব ভুলে ছন্দে দুলে বাস।
স্বাধীনতা মানে শ্রমের সঠিক দাম,
ঘরে সবার খাবার বারমাস।
স্বাধীনতা মানে দূষণ দূরের দেশে
শ্বাসবায়ুতে অম্লজানের বাতাস-
স্বাধীনতা মানে হতাশার ধোঁয়া মুছে....
স্বপ্নে মোড়া আলোয় ভরা আকাশ ।
স্বাধীনতা মানে সবার পায়ে মাটি
মাথার ওপর একটুখানি ছাদ।
স্বাধীনতা মানে অমাবস্যার ইতি..
উছলে পড়া জ্যোৎস্না-ঝরা চাঁদ।
স্বাধীনতা মানে নয় তো অসম্মান,
নারী-পুরুষের সাম্যবাদের গান।
স্বাধীনতা মানে পাখ-পাখালির দেশে.......
গাছ-গাছালির সুস্থ অবস্থান।
স্বাধীনতা মানে মানুষে মানুষে মিলে.....
প্রেম প্রীতি ত্যাগে ভালবাসার তান,
স্বাধীনতা মানে শেকল ছেঁড়া পায়ে
বিশ্বের বুকে মুক্তির আঘ্রাণ।
সেই স্বাধীনতা নামুক ভারতবর্ষে...
ফুল-পাখি-সহ মানুষ থাকুক হর্ষে।









বাঁইচে থাইকার শ্বাস আশ
        ড.মহীতোষ গায়েন


কারা তুদের কান ভাঙাইনলো কারা?
আরে দ‍্যাশটা স্বাধীন কইরলো যারা
তাদের কথা ভুইলা গেলি ক‍্যানে গো
তাদের কথা একবারটি ভাইব‍্যা দ‍্যাখ।

ছেঁড়া চটি,শামা ধরা শাটিন,উঁনচাই ধুতি
বুকে পাথর ভাঙা সাহস,বজ্রকঠিন পেইশি
ফুলাইয়া লোহার ডাণ্ডি খাইয়া,ঘাম রক্ত
ঝরাইনয়ে তুরা এ্য দ‍্যাশটা স্বাধীন করলিরে।

আরে ও সিধু,ও কানু,বিরসা,খুদিরামরে-এ
দেখ,দেখ ক‍্যানে,তুদের লড়াইটো লুইটটে
প‍্যুট‍্যা খাইছে,দেখ-দেখ ক‍্যানে,দেখ লোভের
থাবা বসাইনছে,দ‍্যাশটারে ভাঙ্গে ফেলাইনছে।

এদিকে মহামারী,দুর্যোগ,ভয়াল অর্থ সনকট
উদিকে,সীমন্তে কাটাকাটি,ক‍্যানদের বন্চনা
লকডাউন,আরামছাঁটাই,লুটপাট,জারতীয়
শিকসানীতি,অনলাইন কেলাস,বেকারত্ব।

নতুন লিয়োগ হত‍্যাছে কত,গরীব বাড়ির
কেউ লাইরে,কেউ লাই,বেকার মানুষ কাজ
পাইত‍্যাছে না,লড়াই হইছে,আন্দোলন হইছে
কত,রেশনে চাল-গম দিত‍্যাছে,লেতারা খুশ।

আমাগো সরকার লড়ত‍্যাছে,সরকার ব‍্যর্থ হয় লাইগো,তব হ‍্যা,আমাগো খাবার কাইড়লে রুটি,রুজি কাইড়লে আমরা ছ‍্য‍্যড়া দেবক লাই,তোরাইতো পথ দেখাইলি,বল না ক‍্যানে?

চাইয়া দেখরে ক‍্যানে তুরা,লরতুন পোরভাত
বেশী দেরী লাই,টিকা আইসত‍্যাছে,ভয় লাই,
হাজারো কচি কানচা দ‍্যাশ বাঁচানোর ডাক
দিতাছে-এ-এ-এ,আজ,পনরো তারিখ বটে।

দেশমাতা,তুমি কি শুনইনছো গো,দেখ ক‍্যানে
আবার সবাই মিলে হামরা ঘর বানবো,ফসল
ফলাইনবো,মাজা উঁচা কইরা দাঙা রুখে দিব
বড়া শান্তি বুকে বাজেরে,আ:বড়া শান্তি,সুখ।




রুজিরুটি
         সত‍্যব্রত ধর

ইনসাফের চেম্বারে পঙ্গু যুবসম্প্রদায়,
এডুকেটেড মন্তব্যে ভার্চুয়াল আওয়াজ তোলে।
লোভনীয় মৃত‍্যুমিছিল দরজায় আসার আগেই,
সাক্ষাৎ চিৎকারে স্মৃতিহত‍্যা করেছি।

ভাষার লালিত‍্যে ঠোঁটের তীব্রতা প্রেমের স্বাদ মেটায়,
স্বপ্নে মশগুল স্বাস্থ‍্যবতী ভালোবাসায়।
তখন ছলনাময়ী বিশ্বাসের ষড়যন্ত্রের চাপা কষ্টে,
দুঃখী আত্মারা কান্নাকাটি শুরু করেছে।

নিঃস্ব সরকারের নীতিহীনতা সম্পত্তির লোভে,
সেকেন্ডারি গ‍্যারান্টারের মেয়াদ বাড়ায়।
অকট মূর্খের কচকচানি সত‍্যের মুখোমুখি হয়ে,
রুজিরুটির টানে শেষমেশ সময়ের স্রোতে গা ভাসায়।







      স্বাধীনতার অপেক্ষায়
    মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ
           

ভারতের মাটি হলো স্বাধীন
যাদের রক্তের বিনিময়ে
তারা আজ পরোপারে,কিন্তু
মানবের মনে জাগ্রত আছে।
হাজারও মায়ের বুক শুন‍্য করে
দিলো জীবন অকাতরে
দেশও বাসীর কথা ভেবে
দিলো নিজেকে আত্তোবলীদান।
তাদের কারনে পেলাম আজ
মাথা গোঁজার ঠাঁই।
ভারত স্বাধীন দেশ আমার
ভারত স্বাধীন দেশ আমার।।
স্বাধীনতা জয় যুদ্ধের গান
আজও বাজে কানের ধার।
সেই বিদ্রোহের আগুন,জ্বলে ওঠে
প্রতি ক্ষণে ক্ষণে আজ।
প্রতিবারের মতো আবারও সাজাবো
সবুজ,সাদা,গেরুয়া রংয়ের সাজ।
ভারতস্বাধীনতা সংগ্রামী বীরদের জন‍্য
ফুলের মালা হাতে সারা ভারতবাসী
১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা দিনটি
ফিরে আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে।
ভারত স্বাধীন দেশ আমার
ভারত স্বাধীন দেশ আমার।।







শহীদের মা
          শ‍্যামাপ্রসাদ সরকার


এই তো পরবাস,
বেয়নেটেতে পরমায়ু
শাণায় বারোমাস !

একটি করে সলতে নেভে
একটি করে জ্বালি,
শঙ্খ বাজাই পুলিশ এলে
তুলসীমঞ্চ খালি।

আমার ছেলে একটি নয় গো!
দেশের কাদামাটি,
সেই মাটিকেই দুধ দিয়েছি
থামিয়ে কান্নাকাটি !

ধান বুনেছি, মাছ ছেড়েছি,
খোকন খাবে বলে
আমার ছেলের পাঁজর ভেঙে
লক্ষ বুলেট চলে।

আমার ছেলে একটি নয় গো !
দেশের কাদামাটি
সেই ছেলেকেই ঘুম পাড়ালাম
ভিজলো শীতলপাটি !

খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
ফিরল খোকা শেষে,
একটি বুলেট মাথার ভিতর,
একটি পাঁজর ঘেঁষে।

ছেলের চোখে ঘুম নেমেছে
ঠান্ডা নিথর দেহে,
মায়ের চুমো আছড়ে পড়ে
নিবান্ধা কোন গেহে !

আমার ছেলে একটি কোথায়
হাজার জোনাক জ্বলে
নিথর হয়ে যতই ফিরুক
বারুদমাখা ছেলে !

অভিবাদন অনেক হলো
এবার বিদায় দিয়ে
লক্ষমানিক আকাশ ভরাক
তারার আলো নিয়ে !

মা হয়েছি নাড়ীর টানে
কান্না কোথায় আর
বেটার বুকে নিশান জেগে
রক্তে রাঙা জোয়ার !

হাজার গেছে হাজার আছে
শহীদ হল ছেলে,
মায়ের বুকে আকাশপ্রদীপ
পাঁজর জ্বেলে জ্বলে !







    নেতাজি মানে
              শিবব্রত গুহ

নেতাজি মানে,
এক আপোষহীন লড়াই,
পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে,
স্বাধীনতা অর্জন করা চাই।
নেতাজি মানে,
অসীম সাহসীকতা,
নেতাজি মানে,
এক বীরত্বের ইতিকথা।
নেতাজি মানে,
দেশের প্রতি ভালোবাসা,
কোটি কোটি ভারতবাসীর,
আশা ও ভরসা।
নেতাজি মানে,
অন্যায়ের প্রতিবাদে গর্জে ওঠা এক কন্ঠ,
নেতাজি মানে,
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে করে দেয় লন্ডভন্ড।
নেতাজি মানে,
ইস্পাতকঠিন মানসিকতা,
নেতাজি মানে,
মৃত্যুকে জয় করার এক রূপকথা।
নেতাজি মানে, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে,
দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা,
নেতাজি মানে, হাসতে হাসতে দেশের,
জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারা।
নেতাজি হলেন ভারতমাতার এক বীর সন্তান,
কখনো ভোলা যাবে না,
নেতাজির অবদান,
নেতাজির অবদান,
নেতাজিরই অবদান।









এই দেশ ভারতবর্ষ
          গণেশ দেবরায়

সকালের সোনার রৌদ
উঠোনের এক কোনে পড়ে
সামনে খালি থালা খাবারের
উলঙ্গ শিশু শাড়ির আঁচল চিবুচ্ছে মায়ের,
স্বপ্নহীন চোখ শূণ্য কোটর
খাদ্যের সন্ধানে সারা বেলা ঘুরে
সন্ধ্যায় নিরন্ন ক্লান্ত দেহ
এলিয়ে দেয় ফুটপাতে
অথবা কোন পরিত্যক্ত বারান্দায়!
এই আমার দেশ ভারতবর্ষ।

উল্টো রথ চলছে যেন
অফিস স্কুল কলেজ
সর্বত্র ছড়িয়ে আজ জাতের লড়াই
অচ্ছুৎ বা ছোঁয়াছে নয়
উল্টো পথেই হচ্ছে শোষন
বর্ণে বর্ণে জ্বলছে হৃদয়!
এ আমার দেশ ভারতবর্ষ।

হচ্ছে লড়াই আসন নিয়ে
বসতে গেলেই লড়তে হচ্ছে
গায়ের জোরে চলছে যেন
আসন নিয়ে বাড়াবাড়ি
দেখছে দেশ নীরব হয়ে!
এ আমার দেশ ভারতবর্ষ।

রাত নামে আজ সকালে ও
দুপুরে ও আকাশ হয় মলিন
নিষ্পাপ মেয়েটার উলঙ্গ দেহ
পড়ে থাকে রাজপথে যখন তখন ,
তাকে নিয়েই টানা হেঁচড়া
শকুন কুকুরের দলের!
এ আমার দেশ ভারতবর্ষ!







স্বাধীনতা এলে
              বিপ্লব গোস্বামী

স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
নীলাভ দিনের কথা
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
দাসত্বের সেই প্রথা।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
অপমান আর গ্লানি
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
বীর নেতাজীর বাণী।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
রক্ত নদীর বন‍্যা
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
মা বোনের কান্না।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
বীর শহীদের বলিদান
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
জাতীর পিতার আহ্বান।






 এটাই ছিল স্বাধীনতা ?
       অজয় মন্ডল

এটাই ছিল স্বাধীনতা?
এর জন্যই কি নেতাজীর ক্লান্ত অস্থি
                                      আজও গঙ্গা পায়নি? এরজন্যই ক্ষুদিরামের উনিশ ছোঁয়া হয়নি আর?
এর জন্যই কি শহীদের তালিকা ভরে উঠেছিল,
                         স্বাধীনতা যুদ্ধের ক্যালেন্ডারে ? যদি এটাই স্বাধীনতা হয়;
তবে,ধিক্কার এই স্বাধীনতা!

যে সমাজ মুখে কালো কাপড় বেঁধে দেয়,
                                                -সত্যের ভয়ে!
যে সমাজ কলমের কালি কিনে নেয়-ধমক দিয়ে, যে সভ্যতা নারীর কপালে অসভ্যতার আঁচড় টেনে
                                           - কলঙ্কিনী সাজায় !
সে স্বাধীনতায় কাজ কী?
ক্ষমতা যার,স্বাধীনতা তার পকেটে,
                                 ঘুড়ি কাটাকাটি খেলে!
আর গরীবের কাটা লাশে পোকা কিলবিল করে,
                    একটু ঘি আর কেরোসিনের জন্য!
হায়রে স্বাধীনতা!
সবার জন্য সমান হয়ে কেন এলেনা?


বাজারের আলু-পটলের দর কষাকষি,
                                  যদি বাকস্বাধীনতা হয়।
রয়েল এনফিল্ডে চড়ে মধ্যরাত্রিতে যুবকের
                    তীব্র সাইরেন যদি স্বাধীনতা হয়। কিংবা,পৃথিবীতে জায়গা হয়নি বলে চাঁদের
            মাটিতে জমি কেনা যদি স্বাধীনতা হয়।
তাহলে বলবো, ভিতরে ভিতরে রক্ত গরম হচ্ছে;
সুপ্ত লাভা যেদিন চিৎকার করে বেরিয়ে আসবে,
যেদিন সবার ঠাঁই হবে এই রুক্ষ মাটিতে,
সেদিন মিথ্যা স্বাধীনতার নামাবলীতে অঙ্কিত,
মৌলিক অধিকারের নীতিসমূহ ঝাপসা হবে।
ঝাপসা হবে রক্তের লাল দাগ।
স্বাধীনতা আসবে সেদিন - সমান সমান।


আমি অবাক হই না,১৫-ই আগস্ট এর,
                         ডায়লগ ভরা দীর্ঘ বক্তৃতায়! অবাক হই না, জিলাপির মধ্যে রাজনীতির 
                                    চতুর রংমিলন্তিতে!
আমি একটুও অবাক হই না, প্লেনের রঙিন ধোঁয়া দিয়ে আকাশের বুকে তিরঙ্গা আঁকাতে! 
  আমায় অবাক করে শুধু,
  স্টেশনে শুয়ে থাকা কচি শিশুরা যখন
                       মৃত মায়ের স্তন হাতরায়!
কষ্ট হয় তখন, যখন কার্তুজে ঝাঁজরা বুকে মায়ের চোখের নোনা জল ঝরে পড়ে যন্ত্রণায়!
স্বাধীনতা তখন গলির কোণে মুখ ঢাকে!
যন্ত্রনা তীব্র হয় তখন আরও!
তোমাদের এটাই যদি স্বাধীনতা হয়,
এটাই যদি বেঁচে থাকা হয়,
তাহলে ধিক্কার এই স্বাধীনতা!
ধিক্কার এই বেঁচে থাকা!






বিপ্লবীদের স্মরণে
        বিমান প্রামানিক


রক্ত চেয়ে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে তোমার ইচ্ছা ছিল
স্বাধীনতার আগেই অন্যায় ভাবে তোমাকে হারাতে হলো।
অগ্নীশিশু পেলে খ্যাতি, এতই কাঁচা তোমার বয়স
কিংক্সফোর্ডকে মারতে গিয়ে তোমায় হারালাম সারা দিবস।
বিনয়-বাদল-দীনেশ তোমাদের আজও ভুলিনি
অলিন্দ যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন আজও রেখেছে মনে ভারত জননী।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন তোমার হাতেই হয়েছে সফল।
তাই তো ঠিকই আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে হয়নি বিফল।
গান্ধীবুড়ি পেলে খ্যাতি, তুমিও ছিলে এক নেত্রী
স্বাধীনতার লড়াইতে তুমি ছিলে দেশের কান্ডারী।
কত কত আন্দোলনে তুমি ছিলে সবার আগে আগে
জাতির জনক খ্যাতি তোমার প্রাণ হারালে গুলির চোটে।
লাল-বাল-পাল পরিচয়ে ছিলে তোমরা তিন জন
স্বাধীনতার কান্ডারী, স্বাধীনতার লড়াইতে সর্বক্ষণ।
নারী নেত্রীর আর এক জন প্রীতিলতা তোমার নাম
দেশ বাঁচাতে বিষ পানে দিয়েছো জীবন বলিদান।
বাঘাযতীন, প্রফুল্য চাকী,কানাইলাল আরও কত জন
স্বাধীনতা যুদ্ধে বলিদান দিল নিজেদের জীবন।
বাংলার বাঘ নামে পরিচিতি তোমার এই ভারতে
স্বাধীনতার যুদ্ধে তুমিও ছিলে সাথে ইংরেজ হটাতে।
অগ্নি যুগের আর এক শহীদ ভগৎ শিং তোমার নাম
ব্রিটিশ পুলিশকে হত্যা করে ফাঁসির মঞ্চে জীবন দান।
বিদ্রোহের মাঠে নামেননি কখনও রবি--নজরুল,
কলমের শাণে বিদ্রোহে লড়ে ফুটিয়েছো স্বাধীনতার ফুল।







অস্ত্র বনাম কলম
     নাশরাতুল হোসাইন নিশান

আমি অস্ত্র ধরতে শিখি নি,
আমি কলম ধরতে শিখেছি।
আমি অস্ত্রের যুদ্ধকে ভালোবাসিনি,
আমি কলমের তেজকে ভালোবেসেছি।

এই ছোট হাতে কি অস্ত্র মানায়?
এই ছোট হাতে মানায় ফুল।
ছোট্ট ছোট্ট কদম ফুল।

আমাকে রক্তের দাগ নয়
দাও কলমের কালি,
যে কালি দিয়ে লিখবো আমি
ভালোবাসার কাব্য গুলি ।

তুমি বলেছো,
তোমার অস্ত্রের মুখে সব ন্যায়
আমি বলি,
যে অস্ত্র দিয়ে করছো খুন সেটা খুবি অন্যায়!!

তুমি বুলেটের আঘাতে সব করেছো ক্ষতবিক্ষত,
বুলেটের আঘাতে আজ সব তিক্ত।
তুমি কি কখনো কলম ধরেছো?

যখনি তুমি তোমার মুঠোয় কলম ধরবে
তোমার মনুষ্যত্ব আবার জাগ্রত হবে।
তুমি তোমার পশুত্ব কোরবানি দাও,
তুমি আমায় গোলাবারুদ নয়
পারলে কিছু কালি দাও।




 স্বাধীনতা
 দেবস্মিতা খাঁড়া দাস


হে স্বাধীনতা, তোমায় পাবো বলে,
রত্ন জন্ম নিল ভারতমাতার কোলে।
সুভাষের আজাদ বাহিনী, আর রবি নজরুলের গানে,
ঐক্যবদ্ধ হলো হিন্দু-মুসলমানে।
হাসিমুখে ফাঁসিমালা, নিল বিশ্ববাসীর কাছে তরুণ ক্ষুদিরাম,
মিটিং-মিছিল আর ধর্মঘটের হলোনা বিরাম।
কবি ছাড়লেন "নাইট", পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে জালিয়ানওয়ালাবাগ,
কলকাতার পুত্র ধন্য তোমরা বি-বা-দী বাগ।
ভাই ভাই সবাই, এই উৎসবে কেউ রইল না বাকি,
সবার হাত রাঙিয়ে দিল কবির রাখি।
জীবপ্রেমে বলিয়ান, বিবেকের বাণী শোনালেন ভারতরত্ন স্বামীজি,
অসহযোগ, আইন অমান্য-এ উত্তাল করল গান্ধীজী।
নারীরাও পিছিয়ে নেই, প্রীতিলতা, মাতঙ্গিনী প্রাণ দিলেন,
ঢাকায় বিপ্লবী হলেন সূর্য সেন।
বিদ্যাসাগরের শিক্ষা, আর বাণীতে মুখর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন,
ব্রাহ্মসমাজে আশার আলো হলেন রামমোহন।
দ্বিতীয় সমরে যবে, স্বাধীনতা রব উঠলো ধরণী ঢাকি,
তখনই বোমায় জর্জরিত হল হিরোশিমা-নাগাসাকি।
তবু হে স্বাধীনতা, তোমায় পাবো বলে,
তেত্রিশ কোটি জনতা ভাসল নয়ন জলে।
ত্রিরঙ্গা পতাকা, আর জয় হিন্দ ধ্বনিল সেই রক্তক্ষয়ি সকালে,
দিনটা হলো ১৫ ই আগস্ট, ১৯৪৭ সালে।
রক্ত ধুয়ে গেছে কবে, তবু স্মৃতি রয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়,
কফিনে, কবরে নিয়েছে কত মনীষি বিদায়।









 স্বাধীণতা সবার 
সত্যজিৎ মজুমদার

স্বাধীণতা আমার_
আমার ভায়ের বুলেট বেধাঁ রক্তে ভেজা জামার
আমার বোনের শাড়ির আচল মায়ের পাথর আঁখি
বুকের ভেতর গুমরে কাঁদে স্বাধীনতার পাখি

সেই পাখিকে আজো কারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারে?
ইতিহাস ফিরে আসে শুধুই বারে বারে
ওরা মুখশ পরে_
সব মানুষের জীবন নিয়ে দিব্যি খেলা করে!

চিকিৎসকের লেবাস পরে জিস্মি করে সেবা!
দেশদ্রোহী ছাড়া অমন করতে পারে কেবা
খাদ্যে অবলীলায় এখন মেটাচ্ছে বিষ কারা
ওদের আমি বলব কী আর দেশদ্রোহী ছাড়া

মরছে কিশোর করছে লোপাট ভোগ করছে নারী
ওদের দেশদ্রোহী ছাড়া কী আর বলতে পারি
আমার স্বাধীন দেশে
ওরাই বড়ো আততায়ী সুধীজনের বেশে

উৎখাত ওদের চাই
এ তল্লাটে ডাকাত খুনির নাই কোনো ঠাই নাই
পরিতাজ্য ওরা
নতুন দিনের মুক্তি সেনা ওঠ জেগে ওঠ তোরা

তোরাই আবার আনতে পারিস নতুন স্বাধীণতা
দ্যাখ ইতিহাস সমস্বরে বলছে তোদের কথা

স্বাধীণতা তোমার আমার সবার ।








সর্বহারার স্বাধীনতা 
          বদরুদ্দোজা শেখু


স্বাধীনতার বাদ্যি বাজে, পতপতপত--পত
ত্রিরঙ্গা উড়ছে দ্যাখো, সেজেছে জনপথ
রাজকীয় সাজসজ্জায়, শহরে ঘুরপাক
খাচ্ছে বেতাল সেপাই সান্ত্রী, চক্ষে লাগে তাক
ঝাঁক ঝাঁক ঝাঁক উড়ছে বায়ুসেনার কপ্টার
মাথার উপর, ফুল-ঝরোকায় ঝরছে ফুলভার
আকাশ থেকে , সাঁজোয়া দেখে গর্ব-ভরা বুক
সব ভুলে যায় ভুখ-যাতনা খাওয়া না-খাওয়ার দুখ,
মুখ্যুসুখ্যু মানুষের তরে  মিথ্যা ঝুড়ি ঝুড়ি
কাহন কাহন প্রতিশ্রুতির কথার ফুলঝুরি
বুড়ি - ছোঁওয়া স্বপ্নগুলোয় ছল-চাতুরী উড়ে
সাত দশকের পার ক'রে তাও এখন থুত্থুড়ে
বুড়ো হলো, খুড়োর কলে গণতন্ত্র চলে
রাজনীতির খেয়োখেয়িতে ভোটতন্ত্রের বলে,
সর্বহারা ভাবতে থাকে ফতুর বোবা ম্লান---
স্বাধীনতার রূপকথারা সাধু, না শয়তান !?






🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
     অনুকবিতা
🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
       জন্মভূমি
        তাপস বর্মন

জন্মভূমি মায়ের সমান
      পাই যে নাড়ীর টান,
ফুলে ফলে জলে হওয়ায়
   তৈরি দেহ প্রাণ।
অযুত বর্ষ বাঁচতে চাই
   তাহার আঁচল তলে,
যেথায় রবী নাজরুল স্বামী
   মৈত্রীর কথা বলে।
     





স্বাধীনতা দিবস সংখ্যার জন্য দুটি অনুকবিতা
      সুনন্দ  মন্ডল


             ছায়া
আজও ফুটপাতে কান্না ঝরে
স্বাধীনতার আশায়।
স্বাধীন ভারতে এখনও কতজন
আস্তাকুঁড়ের ছায়ায়।
            অত্যাচারী
ভালোবাসা উঠে গেছে, নেই স্নেহ
জগতের বিছানায়।
আমরা স্বাধীন বলেই হয়তো
অত্যাচারী নির্দ্বিধায়।
   

🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
             বিভাগ  ছড়া
🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳

জননী মাতঙ্গিনী
           জগদীশ মন্ডল

মেদিনীপুরের হোকলা গ্ৰামে
যাকে সবাই চিনি,
বীরঙ্গনা বীর ললনা
জননী মাতঙ্গিনী।
গান্ধী ডাকে " ভারত ছাড়ো "
বাংলাদেশকে জুড়ি
মেদিনীপুরে আকাশ বাতাস
কাঁপায়  "গান্ধীবুড়ি "।
পরাধীন মার দুঃখ দেখে
ঝান্ডা নিলে তুলে,
এগিয়ে গেলে সবার আগে
মৃত্যু কথা ভুলে।
ব্রিটিশ সেনার গুলি ছোটে
একটি লাগে বুকে,
রক্তে ভিজে ভূঁয়ে পড়ে
" বন্দে "ধ্বনি মুখে।
স্বাধীন যজ্ঞে প্রাণটি দিয়ে
অমর হলে তুমি,
জয় মাতাজী মাতঙ্গিনী
ধন‍্য ভারতভূমি।





🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
     ইংরেজি কবিতা
🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳
National Flag Does Have Five Dyes !
      by S. Sundar Mondal


Stop that dotard, a great parrot of Joy Hind from his protest against a mistake
And let the child fly a false that National Flag has five dyes in the blank full scape.
Behold a majestic coffin lies between two fragile stakes, mom and dad's dumb deck
None could bring rivers in the desert of the coffin-corpse's sweet-soul's rosy flake.
Not only mom, not only dad,not only Love
But a rivulet with soul full of promise to be sprouted whole
Have been dyed taking the silent syllables from you, black toll.
These dyes have come to no last, extended the brush to a soft heart of little dearest.
Only a soft syllable flew its wings, crying for milk,taking it’s nest on mother's breast.
None but a lady, mother of a sacrificed soul came to soothe the child....
"Calm child, calm and see how great the National Flag" in a tone deep and mild.
And it's strange in a moment the eye drops found no outlet
The child saw the dyed Flag wrapped in a big puppet.
The lady asked the child," What colours have you seen, child.?"
The answer is like a child-- green,blue,white, saffron, and red.....five die !
The lady murmured," Five die, dad,mom,wife,
daughter and a little child !
And the colours-- green,blue,white,saffron and a soldier's blood ! "
The lady pronounced in a glorious mother
..Yes child, National Flag does have five dyes.
...green,blue,white,saffron and a martyr's dye.


🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳

©সেক আসাদ আহমেদ 
              সম্পাদক, উপকণ্ঠ






0 comments: