শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 29/08/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 29/08/2020
Upokontha Sahitya Patrika
Upokontha Web Megazine


"উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
   (ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-29/08/2020, শনিবার
               সময় :- সকাল 11 টা 

সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷







ধারাবাহিক গল্প 

    সিদ্ধিলাভ
         ( তৃতীয় পর্ব )
           🖊🖊 শাশ্বতী দাস


       দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর সৃজার আজ অনেকদিন পর খুব গল্পের বই পড়তে ইচ্ছে হলো। কতদিন গল্পের বই পড়েনা! সবসময় শুধু মেডিকেল জার্নাল, হসপিট‍্যাল আর পেশেন্ট। "নাঃ আজ একটা গল্পের বই পড়ি।" নিজের মনেই বলে সৃজা।  যেমন ভাবা তেমন কাজ। গল্পের বই নিতে সৃজা মা'র ঘরে যায়। মা'র বুকশেল্ফ ছাড়া গল্পের বই আর কোথায়! সৃজার নিজের বুকশেল্ফতো এখন পুরোটাই শুধু দেশবিদেশের মেডিকেল জার্নালে ঠাসা। মা'র বুকশেল্ফ ঘাঁটতে ঘাঁটতে সৃজার নজর যায় জীবনানন্দ দাশের কবিতার বইয়ের দিকে। "বাঃ! কতদিন কবিতা পড়া হয় না! " বইটা টেনে নেয় সৃজা। "আজ সারাদুপুর কবিতা পড়ব"। মনে মনে ভাবতে ভাবতে বইটার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে নিজের ঘরে আসে। হঠাৎ, বইয়ের ভেতর থেকে কি যেন একটা নীচে পড়ে গেল, তাকিয়ে দ‍্যাখে একটা ছবি! সৃজা নীচু হয়ে ছবিটা তুলেই চমকে ওঠে! এ কাকে দেখছে সে! এতো যৌবনের নিলয় সেন! হ‍্যাঁ, তাইতো, এই ছবিটাইতো সে দেখেছে এর আগে! হ‍্যাঁ, ঠিক, অনেকদিন আগে, সব মনে পরতে থাকে সৃজার, তখন বোধহয় সৃজা ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ে। সরস্বতী পূজোর সকালে মার আলমারি থেকে শাড়ি বের করতে গিয়ে বেরিয়েছিল ছবিটা। সেদিন অনেক প্রশ্ন করেও মা'র কাছে কোনো উত্তর পায়নি সৃজা! বারে বারে জানতে চেয়েছিল কে এই ভদ্রলোক!   মা শুধু একটা কথাই বলেছিলেন, "বড় হও সব জানবে। " তারপর এতো বছরে আস্তে আস্তে সৃজা ভুলেই গিয়েছিল এই ছবির কথা। " কিন্তু আজ যে জানতেই হবে, কি এই ছবির রহস্য! কেন এই ছবি তার মা'র আলমারিতে! কে এই নিলয় সেন!"  এইভাবেই কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে, সৃজা খেয়ালও করেনি।
         "বাবি কি করছিস? দুপুরে একটু ঘুমিয়েছিস?" জিজ্ঞেস করতে করতে মেয়ের ঘরে ঢোকেন প্রজ্ঞা দেবী। "নিলয় সেনের এই ছবি তোমার কাছে কেন মা?" ছবিটা মায়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে সৃজা। চমকে ওঠেন প্রজ্ঞা দেবী। "এই ছবি তুমি কোথায় পেলে!" নিজেকে সামলে নিয়ে কঠিন গলায় প্রশ্ন করেন। "তোমার বুকশেল্ফে এই বইটির ভেতরে।" অদ্ভুত শান্ত গলায় উত্তর দেয় সৃজা। চুপ করে থাকেন প্রজ্ঞা দেবী। "এই ছবি আমি এর আগেও দেখেছি তোমার আলমারিতে মনে আছে মা? তুমি সেদিন বলেছিলে আমি বড় হলে সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। আজ তোমায় বলতেই হবে কেন এই ছবি তোমার কাছে! কি সম্পর্ক তোমার সাথে এই নিলয় সেনের? বলো মা, আজ আর চুপ করে থেকোনা! আজ আমার এইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া খুব দরকার।" একদমে কথাগুলো বলে হাঁফাতে থাকে সৃজা।
             "ইনিই তোমার বাবা।" ধীর শান্ত গলায় উত্তর দেন প্রজ্ঞা দেবী। "মানে! আমি অনাথ নই!" চমকে উঠে প্রশ্ন করে সৃজা। "না, তুমি আমার আর নিলয় সেনের সন্তান। কিন্তু বিবাহ পূর্ব সন্তানের পিতৃত্বের দায় নিতে অস্বীকার করে সেদিন নিলয় সেন তার বাবার বিশাল সম্পত্তি হারাবার ভয়ে। উনি সেদিন নিজের বাবার নির্দেশে তোমাকে এই পৃথিবী থেকে চির বিদায় দিতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি রাজী হইনি। কি করে রাজী হতাম বল! আমি যে তোর গর্ভধারীনী!  নিজের গর্ভের সন্তানকে জন্মের আগেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে আমি পারিনি। তাই উনি আমাকে ত‍্যাগ করেছিলেন। কিন্তু আমি আজও ভুলতে পারিনি ঐ অমানুষটাকে, তাই এই ছবিটা বয়ে নি বেড়াই।" বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পরেন প্রজ্ঞা দেবী। "কিন্তু আমাকে কেন অনাথ পরিচয়ে বড় করলে মা! কেন তোমার সন্তান বলে পরিচয় দিলেনা?" কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায়, অভিমানে গলা বুঁজে আসে সৃজার।
                    ( ক্রমশ )








ছোটোগল্প
         সেই মেয়েটি
                     আব্দুল রাহাজ


রাতুল গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকতো ওর বাবা-মা কেউ ছিলনা বলতে গেলে এই পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই সে খুব কষ্ট করে গ্রামের পাঠশালায় পড়ে পড়াশোনায় বেশ ভালো সকালবেলা কোনদিন ভাতের স্বাদ নেয় কোনদিন ভাতের স্বাদ হয় না ময়ূরী নদীর পাশে বসে কত ভাবনা পরিকল্পনা করতে থাকে রাতুল। গ্রামের ছেলেদের সাথে বেশ খেলাধুলা করে খুব আনন্দে বাবা-মা হারা কষ্টকে দমিয়ে রেখে বেঁচে থাকে প্রকৃতির মায়ের বুকে। গ্রামের পাঠশালায় হরি চাচার মেয়ে তিন্নির সাথে ওর খুব ভাব দুজনে একসাথে ময়ূরী নদীর ধারে বসে কত গল্প করে খেলাধুলা করে এইভাবে গ্রামের পাঠশালায় শেষ পর্যায়ে এসে পড়ে ওরা দুজনেই এখন বেশ বড় গ্রামের পাঠশালা শেষ হওয়ার আগের দিন নদীর ধারে বসে তিন্নি বলল রাতুল আমি কাল শহরে চলে যাব আর বোধহয় আর দেখা হবে না আমাদের রাতুল হেসে উড়িয়ে দিল তিন্নি বলল তুই হাসছিস তা না তো কি তুই শহরে চলে যাবি আর আমি ওই দূরে দেখ কানু মাঝির সাথে কাল থেকে কাজে যাব তিন্নি বলল তোর পড়াশোনা আরে বাবা মা হারা ছেলের পড়াশুনা হয় না এই না দেখ কাল থেকে না খেয়ে আছি কোন কষ্ট হচ্ছে আমার তিন্নি বললো তুই এখনো খাস নি বা বা বেশ দম আছে তো তোর এর পর তিন্নি ওকে দৌড়ে বাড়ি থেকে ভাত এনে দিল সেই দিনে যেন রাতুল বেশ ভাত খেলো ওদের বাড়ি থেকে এদিকে দূরের ঐ মসজিদ থেকে আজান ভেসে আসে রে আমি বাড়ি চললাম হয়তো কাল থেকে আর একসাথে দেখা হবে না রাতুল বললো আচ্ছা ঠিক আছে যা ভালো থাকিস। রাতুল সন্ধ্যায় বাড়ি এসে একা একা বলতে লাগল আমি আবার একা হয়ে গেলাম একা হয়ে গেলাম তো ঠিক আছে কাল থেকে মনু মাঝির সাথে কাজ করতে যেতে হবে বাকি জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দেবে তার কিছুক্ষণ পর স্কুলের হরি দাদু এসে বলল রাতুল তোমাকে মাধব বাবু ডেকেছেন একটু রাতুল দৌড়ে গেল মাধব বাবু বললো রাতুল শুনছি তুমি নাকি কাল থেকে কাজে যাবে মনু মাঝির সাথে রাতুল বলল হ্যাঁ পড়াশোনা করবে না আর বাবা মা হারা ছেলের পড়াশোনা তাও তো ঠিক আচ্ছা তুমি যাও রাতুল ভাবলো বোধহয় পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে কিন্তু এ তো দেখছি উল্টো হয়ে গেল এবারের মতো পড়াশোনা দরকার হয় তিন্নির জন্য বসে থাকবো ময়ূরী নদীর দিকে ফিরে পরের দিন থেকে কাজ করতে লাগলো এইভাবে রাতুল বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিল আর তিন্নি চলে গেল শহরে রাতুল সে যে বসে আছে তার অপেক্ষায় কিন্তু সূর্যের এক দিগন্ত রাশির মত সে যেন এক কথায় মিশে গেল রাতুলের কাছে তিন্ন হয়ে রইল সেই মেয়েটি রুপে ।







কবিতা :
        মোর কল্পনা
                   সায়ন প্রামানিক

নিস্তব্ধতার বুকে শুন‍্যতা ঘিরে
বসে আছি আমি একা ,
একলা আকাশ একলা নীড়
একলা বেচে থাকা ।
শূন্যতা কে আজ বুকে টেনে নিয়ে
বেধেঁছি দৃঢ় জল্পনা ,
একলা পৃথিবী জয় করব
এই মোর কল্পনা ।
    








শুভ জন্মদিন
             বিপ্লব গোস্বামী


হাসি দিয়ে লুকালে যদি মম সবটুকু বেদনা
মম তরে আজীবন হাসো প্রিয় এটুকুই বাসনা।
চরণে দিও ঠাঁই হে প্রিয় করতে তব বন্দনা
আজ তব জনম দিনে করি তব শুভ কামনা।
কি আছে দেবার বলো,কি আছে বলার
যা কিছু আমার সবই তব উপহার।
হৃদ বাগে সদ‍্য ফোটা কুসুমের হার
করিব তোমাকে দান করে তোমাতেই ধার।
না দেবো অমূল‍্য ধন,না দেবো গোলাপ
আজ না হয় করে গেলাম শুধুই প্রলাপ।
বঙ্গ তব সৃষ্টি কভু করবেনা অপলাপ
প্রাপ্তি যেন হব তব কাঙ্খিত সর্বচ্ছো ধাপ।










অনুগল্প
কল্পতরুর কল্পনা
             আরশাদ আল গালিব


বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি, একহাতে সিগারেট আর আরেক হাতে আমার লেখা বই 'স্পর্শী'। সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে, ছাই জমা হচ্ছে,  কিন্তু আমি অপলক নয়নে তাকিয়ে আছি বইয়ের দিকে। পড়ছি কিনা তা বলতে পারব না, তবে একমনে দেখছি। এমন সময় পিঠে হাতের স্পর্শ পেলাম। কিন্তু চমকে উঠলাম না। কারন এ স্পর্শের সাথে আমি বহুদিনের পরিচিত। এ আলতো স্পর্শ কখনো ভোলার মতো নয়। এর রয়েছে একটি নিজস্বতা, রয়েছে মোহময়ী এক অনুভূতির আকুল আবেদন। তাই আমি না দেখেই বলে দিতে পারি যে এটা কল্পতরু। সবসময়ের মতো কল্পতরু আজও এসে আমার পিঠে হাত রেখে বলল,
- কি করছ
আমি বললাম,
- "প্রখর রৌদ্রতপ্ত মরু পানে দাঁড়িয়ে
  পথিক যেমন চায় এক পেয়ালা জল,
  তেমনি আমিও আছি উন্মুখ হয়ে
  পেতে তোমারই পেলব করতল।"
- তাই!
  এ বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
- "চাও যদি হে প্রিয়
  পেতে মোর করতল,
  তব কেন অপেক্ষায়
  এসো চলে আমারই নিকটে"
আমি অবাক হয়ে বললাম,
- আজ হঠাৎ মুখে কবিতা!
- কেন কবিতা বুঝি আমার মুখে মানায় না।
- না তা নয়, তুমি তো কবিতা আবৃত্তি করতে চাইতে না। আজ হঠাৎ?
সলজ্জ হেসে কল্পতরু বললো,
- আজ ইচ্ছে হলো তাই।
একটু থেমে আবার বললো,
- কেন তুমি খুশি হও নি?
- সব অভিব্যক্তি কি ভাষায় প্রকাশ করতে হয়।
কিছু নাহয় বুঝেই নিলে।
- তারমানে?
কল্পতরুর বাড়িয়ে দেয়া দুটি হাত ধরে বললাম, 
- "হে প্রিয়া এসেছ মোর জীবনে নিয়ে আজ,
   অঝর ধারায় আনন্দ বর্ষণের সাজ।
   তাই, চলো হে প্রিয়া আজ হতে ধরি এ হাত
   মেটাই আজন্মের বন্ধনের আস্বাদ। "
আবেগাপ্লুত হয়ে উঠলো কল্পতরু। মুখে প্রাণোচ্ছল হাসি এনে বলল,
- সত্যি বলছো তো।
- হুম, তিন সত্যি।
- জানো তোমার মুখ থেকে একথাটি শোনার জন্য আমি অপেক্ষায় ছিলাম আজ অসংখ্য রজনী।  শুধু একবার এ কথাটি শোনার আসায়।
আজ সত্যি ই আমি আনন্দিত। ভালো লাগার এক মোহময়ী আবেশ যেন আচ্ছন্ন করছে আমায়।
এসব শুনতে শুনতে কখন যে হারিয়ে গেছি এক তৃপ্তিময় অজানা ভুবনে তা হয়তো আমি নিজেও জানি না। আমার দুচোখে এখন শুধু একবুক তৃষ্ণা আর কল্পতরুর কল্পনা। এই নিয়ে ই আমি থাকতে চাই, এটাই আমার তৃপ্তিময় এক পাওয়া। কল্পতরু আমার কল্পনায় আসে প্রতিনিয়ত,  যদিও সে বাস্তব চরিত্র,  কিন্তু সদা বিরাজমান আমার কল্পনার এক অসীম মোহময় ভুবনে।








কবিতা : প্রতীক্ষা!
               বিশ্বজিৎ কর

আমি যাবই তোমার কাছে,
যেদিন তোমার মধুময় হৃদয়ে-
থাকব শুধু আমি!
নিখাদ ভালবাসার নির্যাস,
আকন্ঠ পান করার ইচ্ছায়-
ছুটে যাব তোমার কাছে !
বাহুবন্ধনের তাপে তপ্ত হয়ে,
বুঝে নেব ভালবাসার উষ্ণতা!
দিন গুনেই চলেছি,
কবে যে আসবে সেই দিন!









                      বাবা
                হামিদুল ইসলাম

বাবা নামক এক ছাতা ছিলেন
দাঁড়িয়ে পাহারা দিতেন
সারাটা সময়  ।
আমরা ব‍্যস্ত থাকতাম প্রতিদিন ।
ভ্রুক্ষেপ করি নি
সেই ছাতাই আমাদের পথ প্রদর্শক
সময় কিংবা অসময় ।
বৈধব‍্যের জাল রোদে শুকায় অজানা মেঘ ।
হে ঈশ্বর !
ক্ষমা করো
বাবা নামক ছাতাটাকে তুমি টেনে নিলে অজানতে ।
সেই থেকে সংসারে ছাতার বড়ো অভাব ।








নিঃসঙ্গতা
           জুয়েল রুহানী


নিঃসঙ্গ জীবনের বাঁকে
উপনীত আজ
অর্থ-বিত্তের নেই চিত্তন্নতি
তাইতো সকলে যায় বহুদূরে
দিয়ে নিঃসঙ্গ জীবন উপহার!
গুমড়ে উঠে বুকের ভিতর-
সঞ্চিত সুখকর অনুভূতিগুলো
করুণার সুর মম অন্তরে বাজে,
নিঃসঙ্গ জীবন দানে-
বহুজন বহুরূপে সাজে!!










       ভুল
           মিনতি গোস্বামী

ভুলে
যাচ্ছি তারিখ
বার ও সময়
ঘরের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছি
মাপা খাবারে পেট ভরাচ্ছি দুবেলা
পরিকল্পনা হীন বাড়িতে গেঁথে যাচ্ছি ইঁট ।
ভুলে যাচ্ছি আমি মানুষ না কীট।
মৃত্যুর সঙ্গে খেলছি কানামাছি খেলা
কুপীর আলোতে চোখ জ্বালছি
প্রতি মূহুর্তেই প্রলয়
আঁকছি সামান্তরিক
কূলে।










প্রকৃতি
         সত‍্যব্রত ধর


নদীরা নীল জামা পরে ছুটে চলে দিক-দিগন্ত পেরিয়ে,
মোহিত মিলনের নেশায়।
বনের অজস্র গাছের সবুজ প‍্যান্ট ঝলসে গেছে,
পোড়া রোদের নিদারুণ তাপে।
ওদিকে পাহাড়ের কোলের বরফ গলছে অবিরত,
যেন বিধবার কাপড় খুলে যাচ্ছে।
প্রকৃতির রূপ আজ মিছে সভ‍্যতার জৌলুসে ছিন্ন হলেও,
ফুলের গন্ধ মাতিয়ে রাখে আমাদের।
পাখিদের কুজনে ঘুম ভাঙতেই দেখি নানা পশু হাজির,
ভালোবাসা বিনিময় করতে।
চশমা পড়া কবির চোখে প্রকৃতি ধরা দেয় যেনো,
স্বপ্নের তিলোত্তমা রূপে।








এই কবিতা টি আমি আমার বাবার স্মৃতি তে  লিখেছিলাম । ওনার  হসপিটালে থাকাকালীন ব্যাথ্যাতুর  স্মৃতি :-----------

  তোমায় দেওয়া শেষ কথা রাখতে পারিনি
             সৌম্য ঘোষ
       
মুখটা পান্ডুর হয়ে আসছিলো ,
চোখের তারা ধীরে ধীরে ফিকে ,
থেমে থেমে আসছিল তোমার কথা
দু'চোখে ব্যাকুল আকুলতা নিয়ে
বলেছিলে ,
আমার হাত তোমার কাঁপা কাঁপা দু'হাতে
চেপে
তোমার কাতরতা :
"বাবু, চল্ বাড়ি যাই ,
বাড়ি ,বাড়ি
আমাদের বাড়ি ফিরে চল ! "
তোমায় কথা দিয়েছিলাম :
আর ক'টা দিন থাকো
ডাক্তারবাবু তোমায় বাড়ি যেতে দেবেন  ।
প্রাণপণ চেষ্টায় টেনে টেনে বলেছিলে
কথাগুলি ।
নিশ্চল কালো পাথরের সামনে
নতজানু হয়ে বসে আছে, মা আমার ।
করজোড় প্রার্থণা !
মা বলেছিলো :
" কবে বাড়ি আসবে , তোর বাবা ?"
সজল চোখ !
প্রতিজ্ঞা বদ্ধ আমি , হারবো না  কিছুতেই ।
হাসপাতালের দক্ষিণ দিকে সোনাঝুরি গাছ
সারাদিন সেখানে পাখিদের আসর !
ক্লান্ত মানুষটার এটাই ছিল শেষ বিনোদন !
বাড়ী ফিরেছিলাম ,
একা ,
সঙ্গে নিথর হয়ে যাওয়া একটা মানুষ ।
ফিরে এসেছি ,  বাড়ি
একা
তুমি এলে না ঘরে ।
রাখতে পারিনি তোমাকে দেওয়া শেষ কথা ।
পারিনি তোমায় বাড়ি ফিরিয়ে আনতে ,
তোমায় দেওয়া শেষ কথাটুকু ---
পারিনি রাখতে  ।।








গোপন সম্পদ  
             সমীহ বসু  

বুক চিরে দেখাতে পারবে না --

তোমার বুকে আছে রাম সীতা !

বুক চিরে দেখাতে পারবো --
    আমার বুকে আছে হৃৎপিণ্ড !

মরিচিকার পিছনে ছুটে কী লাভ, 
  গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো ছাড়া, 

 তোমার কাছে আছে
      সেই চির তৃষ্ণার
            শ্বাস-প্রশ্বাস ! 

জ্ঞান, চেতনা, চৈতন্য, হরি ওঁ ...








     বিপর্যয়ের আগে  
                শুকদেব পাল 

সেদিনও ভাবেনি আমরা থমকে যাবো এই গতিশীল পৃথিবীতে ।
লাশের পাহাড় চোখের জলকে শুকিয়ে দেবে চুল্লির দহনে, সময় যে গুটি গুটি পায়ে পেছনে ফিরে যাবে তারপর গতিহীন হতে হতে ঘুমিয়ে পরবে বন্দি ঘরে কে ভেবেছিল ।
প্রকাশ কথা দিয়েছিল সামনের মাসে বাড়ি ভাড়ার টাকা মিটিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে দশ মাস পর ,মা অপেক্ষায় আছে ভাঙ্গা ঘরের ছাউনীটা মেরামতি করবে বর্ষায় জল পড়ে ভেসে যায় ব চোখের পাতা দুটি থেকে বিছানায়।
বিকাশ ভেবেছিল বয়সের শেষবেলায় সরকারি চাকরির জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করবে ,নইলে প্রিয়তমা পরিণীতার কথাটি আর রাখতে পারবে না নইলে তাকে পরিনয় বিরহের জীবন্ত দর্শক হয়ে থাকতে হবে ।
তাদের সম্পর্কের বাঁধন কষতে কষতে ছিড়ে যাবে ।
স্বপন কাকার ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর সাথ ছিল , আর ছোটো মেয়েটিকে গায়িকা করবে কিন্তু হঠাৎ চটকল বন্ধ হয়ে গেল ।
কাকা এখন স্বপ্ন দেখে রাতের অন্ধকারে ।
বিশু রেলের হকারের কাজটা করে দুবেলা পেটপুরে ভাত খেতে পাচ্ছিল ,তার অভাবে কিছুটা ঘুচেছে ।
বিজয় বাবু অফিসার কর্মব্যস্ততা আপনজনের বিয়োগ বেদনাকে ভুলিয়ে রেখেছে ...
কার্তিকদার দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর বিয়ে ঠিক হল ,সংসারের বুড়ি মা টাকে এবার নিস্তার দেবে ।
পঞ্চম ক্লাসের ছাত্র জীবন ,সে অসুস্থ তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে ,যদিও ফার্স্ট স্টেজ ।
ইলিয়াস চাচা ফুলবাগানে আয়তন টা বেশি বৃদ্ধি করেছে এ বছর বাংক থেকে লোন নিয়েছে বড়ো রকমে ,তার রকমারি ফুল বিদেশ যাবে ।
চিত্রা আর্ট কলেজ ভর্তি হয়েছে বড়ো বড়ো এক্সেবিশনে নিজের প্রতিভা প্রকাশ করবে তার লক্ষ্য ।
প্রদীপ্ত মনে জেদ ধরেছে আবার উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করবে বোর্ডের টপার হবার ইচ্ছাটা জিইয়ে রেখেছে ,
আর ধনী বাবুর পাঁচতারা হোটেল,নতুন গাড়ি ,বেশ কটা বাড়ি নেতাদের ধরে মানুষের কাছে ইমেজটা বাড়ানো সবমিলিয়ে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ......
তখনি নেমে এলো বিপর্জয় প্রকাশ বাড়ি ফেরেনি ,রেল লাইন ধরে হাঁটার সময় মালগাড়ি তাকে পিষে দেয়েছে ।
বিকাশ চাকরির আশা ছেড়ে বেরিয়ে গেছে দিনমজুরের কাজে ।
বিশুর পেটের হাড় গুলি বেরিয়ে এসেছে তীব্র ক্ষুধায় তার কাজ নেই ।বিজয় বাবুর প্রিয়জনের কোথায় ফিরে ফিরে আসছে স্মৃতিতে । কার্তিক দার বিয়েটা ভেঙে গেল, বয়সের ভার বয়ে বেড়াচ্ছে । জীবনের জীবন সংশয় চিকিৎসার অভাবে । ইলিয়াস চাচা ফুলের বাগানে বসে কাঁদে কাঁদে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল তার সাধের বাগানের ফুল দিয়েই শেষ যাত্রার সমাপ্তি ঘটলো । চিত্রা চোখের কোণে কালসিটে শেষ রঙের ভাষা বুঝতে পারে না । প্রদীপ্ত পরীক্ষা দেওয়া হলো না ,তার পরিশ্রমের মূল্যের মাপকাঠির মূল্যায়ণ হলো না ।
সহস্র মানুষের আশা ক্ষীণ হতে হতে মুছে যাবে চিতার আগুনে .......


🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉🌉

Today last day for Maharam Issue 2020






0 comments: