বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 19/08/2020

 "উপকণ্ঠ 19 আগষ্ট সংখ্যা "
         "উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগ"
                (ওয়েব ম্যাগাজিন)

  প্রকাশ কাল:-19/08/2020, বুধবার
               সময় :- বিকাল 4 টা 

সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত

মুঠোফোন:- 9593043577

🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳

🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳🇮🇳

নাকি
      সিদ্ধার্থ সিংহ
এনগেজড এনগেজড এনগেজড
যখন ফোনে পেলাম, আপনি বললেন---
রিয়াদি ফোন করেছিল।
আমি ভেবেছিলাম, আপনি হয়তো ছোট মামার কথা বলবেন
অথবা মেজপিসির কথা
কিংবা অফিসের সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু রুনুর কথা
আপনার ফোন অনেকক্ষণ বিজি থাকলে আপনি যা যা বলেন আর কী...
কিন্তু রিয়াদি ফোন করে যা যা বলেছেন বলে
আপনি যেগুলো বললেন, হয়তো ভুলেই গেছেন
এই কথাগুলোই মাত্র দিনকতক আগেই আপনি আমাকে বলেছিলেন...
আচ্ছা আপনার ফোনে কি এখন বিপ বিপ শব্দ হচ্ছে?
মানে অন্য কোনও কল ঢুকছে?
যিনি করছেন, এতক্ষণ এনগেজড পেয়ে তিনি যদি জানতে চান
কার সঙ্গে কথা বলছিলে?
তখন কি আপনি রিয়াদির কথাই বলবেন?
নাকি ন'কাকার কথা?
নাকি বেলুড়ের জ্যাঠতুতো দাদার কথা?
নাকি ডায়মন্ড হারবারের বড়পিসির মেয়ের কথা?
নাকি... নাকি... নাকি...







বেঁচে থাকা
            রঞ্জনা  রায়

অনেক মাঠ পেরিয়ে একটা টিলার উপরে
একটু সবুজ ঘাস দেখার আশায়
তপস্যার স্তব্ধতায় দিন কাটাই।
আমার মেয়েজন্মের প্রতিটি দিন
প্রজাপতি হতে গিয়ে
ডানায় মুছে যায় প্রতিটি আশার রং।
বেঁচে থাকা - অভ্যাসের খেলায়
মগ্ন হতে পারিনা কিছুতেই,
অবিরত বৃষ্টি ঝরে
সুড়ঙ্গের অন্ধকারে।










জোনাকি পোকা
           বিপ্লব গোস্বামী

আঁধার রাতে ছোট্ট ছোট্ট
জোনাকি পোকা,
উজার করে দিচ্ছে আলো
কেবল একা।
বিশ্রাম বিহীন সারাটা রাত
দিচ্ছে আলো,
সবাই মিলে পণ করেছে
ঘুচাবে কালো।
অমবস‍্যার ঘোর কৃষ্ণ কালো
চাঁদের ছুটি,
তারার সব সঙ্গে গেছে
লক্ষ কোটি।
তাই দায়িত্বটা বেড়ে গেছে
দ্বিগুণ মাত্রায়,
অল্প হলেও ঘুচাব আঁধার
এই অভিপ্রায়।









    
আযানের সুর
            জুয়েল রূহানী

পৃথিবীর সেরা সুর
ঐ আযানের ধ্বনী,
কান পেতে শুনলে যে
জুড়ায় হৃদয় খানি!
যতই শুনি আমি
ততই ভালো লাগে,
নাজাতের সুর ধ্বনী-
হৃদয় মাঝে জাগে।
মৃত্যু অব্দি যেন-
প্রতিদিন প্রতি ক্ষণ,
আযানের সুর শুনে-
আলোকিত হয় মন।









      যুদ্ধ শত্রু নাস্তিকতা
                হামিদুল ইসলাম
         
       
যুদ্ধের ইতিহাস শুনেছিলাম
ওদের মুখে
ওরা যুদ্ধ করতে গিয়েছিলো সোমালিয়ায়
অথচ সেখানে যুদ্ধ ছিলো না
ছিলো ভূখা মানুষের দল ।
শিক্ষায় পেছিয়ে পড়া একটি দেশ
কুসংস্কারাচ্ছনে এখনো ডুবে আছে মানুষ
কী করে লোকগুলো বেঁচে থাকে
জানে না দেশের সরকার
অথচ সে দেশটার সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেছি আমরা ।
এরা এখানে মাটিকে পূজা করে
ঈশ্বর বলে জানে না কাউকে
নাস্তিকের দল
ইতিহাস জানে না কোনোদিন
কোনদিকে সূর্য ওঠে হিসেব রাখে না তার ।
আমরা পালিয়ে এসেছি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে
এ পালানোর নাম ফিরে আসা
যুদ্ধ করতে যাবো না আর
যুদ্ধে ইতিহাস হয়ে যায় মিথ‍্যে
আমরা কেবল পরস্পর শত্রু হই নিজেদের।









গল্প
       ঢেউয়ের ভিতরে ঢেউ
                        চিত্তরঞ্জন গিরি

রতন বাজার থেকে সবজি নিয়ে ঘরে ঢুকতেই স্ত্রী রনিতার চিৎকার --কেন তুমি টেংরা মাছ নিয়ে এসেছো। আমি কাটতে টাটতে পারব না।
--আরে আজকে বাজার করতে দেরি হয়ে গেছে। বাজারে গিয়ে দেখি মাছ কাটার কেউ লোক নেই। ততক্ষণ আমি মাছ কিনেই ফেলেছি। ভাবলাম যারা মাছ কুটে দেয় তাদের কাছে গিয়ে এই টেংরা মাছ গুলোকে কুটিয়ে আনব। গিয়ে দেখি কেউ নেই।
--যে মাছ এনেছ ফেলে দাও। আমি অত কুটতে পারবো না। আর যদি কুটতে হয় তুমি করো।
মেঝেতে পড়ে ছিল টেংরা মাছের ব্যাগ। তা তুলে  নিয়ে রতনের দিকে ছুঁড়ে দেয়। রতনের কাছে ব্যাগটা খুলে কিছু টেংরা মাছ মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে । ইচ্ছে হচ্ছিল দু'চারটা থাপ্পর লাগিয়ে দিতে। তবু কিছু বলল না। সব রাগ হজম করলো।নিজেই বটিটা টেনে নিয়ে মাছ কুটতে আরম্ভ করে। ঠিক সেই সময় চেঁচামেচির সবটা  রতনের মা অন্য ঘর থেকে শুনতে পায়। সে এসে রতনের কাছ থেকে বটিটা ছাড়িয়ে নিয়ে নিজে মাছগুলোকে কুটে ধুয়ে দেয়।
কিছুদিন হয়েছে রতনের বাবা মারা গেছে। স্ত্রী মায়ের সাথে প্রচুর ঝগড়া করত। মা এর নামে স্বামীর কাছে কান ভাঙ্গাতো  । মা এই বলেছে। মা ওই বলেছে। কিন্তু রতন জানে তার মা খুব ভালো।  স্ত্রী সকাল দশটার সময় উঠতো। সকাল থেকে কাজের জন্য বেরিয়ে যেত রতন। নটা দশটার সময় যখন বাড়ি ফিরতো। তখন রতন খেতে পেত না। বাড়ির বাইরের কাজ সেরে বাড়িতে এসে দেখে  তার মা রতন অভুক্ত। তখন রতনের মা তার বৌমার সাথে ঝগড়া করত। বিরক্ত হয়ে বলতো -কার ঘরের বউ সকাল দশটার সময় উঠে ? স্বামীকে ঠিকমত খেতে দেবে না। শুধু বিছানায় শুয়ে ফোন করা না হয় টিভি দেখা। এই ঘরের লক্ষী থাকবে কি করে,ঘরের বউ  যদি এইরকম হয়। রতনের বউ শিক্ষিত মেয়ে। ওর বাবার  বাড়ির অবস্থা খুব ভালো। স্বামী ও শাশুড়িকে যখন-তখন থানার ভয় দেখাতো। ""এরপর যদি বেশি কিছু বলতে আসো আমি সরাসরি থানায় তোমাদের নামে পুলিশের কাছে কমপ্লেন করব। "এখন তো সরকারি আইনের বউ দের পক্ষে রায় বেশি দেয়। একটা সমীক্ষায় পেপারে পড়েছে ও 70% নারীরা মিথ্যা কেস দিয়ে স্বামী শ্বশুর-শাশুড়ী দের থানায় আটকে দিয়েছে । তাই স্ত্রীর ওপর বেশি কিছু বলতেও পারেনা। আবার মধ্যে মধ্যে ফোন করে শশুর শাশুড়ি রতনকে শাসায়। আইনের ভয়ে অনেকটা কুঁকড়ে থাকে রতন। অনেক কিছু বলতে চাইলেও সে বলতেও পারেনা। নেহাত নিরুপায় হলে খুব মাথা গরম হলে তেড়ে যায়। আর সেই রকম অবস্থায় রতনের বউ ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। পরের দিন ক্ষমা চেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে রতন তার স্ত্রীকে নিয়ে আসে। প্রথম দিকে তো বেতন নিয়ে অনেক ঝগড়া বৌমা‌র। রতন যা রোজগার করতো সবই তার মায়ের হাতে তুলে দিত। সেই নিয়ে তুমুল তুলকালাম করলো বৌমা। রতন দিনমজুরের কাজ করে। প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন ই নিয়ে আসে। ঝগড়া এড়ানোর জন্য  মা বলে-- রতন এবার থেকে এই টাকাটা  তোর বৌমার হাতে তুলে দিবি।
ছেলে রাজি না হলেও পরিস্থিতির জন্য বাধ্য হয়।
তারপর থেকে যেটুকু রোজগার করত সবই বৌমার আলমারির লকারে থাকতো। স্কুলে পড়া এক বন্ধু আমিনুরের সাহায্যে ইতালিতে কাজ জোগাড় করে। বন্ধুই তাকে ভিসা ও পাসপোর্ট ব্যবস্থা করে  দেয়।
বিদেশ থেকে প্রতিমাসেই টাকা পাঠায় রতন। মাস ছয়েক যাওয়ার পর স্ত্রী শাশুড়ির সাথে অকারনে একটা ঝগড়া বাঁধিয়ে সে শাশুড়িকে পৃথক করে দেয়। শাশুড়ি এখন বহুকষ্টে লোকের বাড়িতে কাজ টাজ করে দিন কাটায়। এদিকে রতন বিদেশে বহু টাকা রোজগার করে মাসের পর মাস পাঠাতে থাকে। রতন জানলো না তার মা পৃথক। বৌমা সেই টাকা নিয়ে বড় বিল্ডিং তৈরি করে। সেই বিল্ডিংয়ে শাশুড়ির জায়গা হলো না। স্বামীর পুরনো ভাঙ্গা ঘরে শাশুড়ির দিনকাল যেমন কাটতো সেরকমই কাটলো।
তিন বছর পর বাড়িতে এসে জানতে পারে তার মাকে পৃথক করে দিয়েছে। রতন রেগে দু'চারটা থাপ্পর তার স্ত্রীকে দিয়ে দেয়। স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে বাপের বাড়ি চলে যায়। শ্বশুরবাড়ি থেকে নানা রকম হুমকি দিয়ে ফোন আসে। বাধ্য হয়ে রতনের মা রতনকে নিয়ে গিয়ে আবার শ্বশুর বাড়িতে ক্ষমা চেয়ে তার বৌমাকে নিয়ে আসে। বৌমা একটা শর্তে আসতে রাজি হয় ।শাশুড়ি যেন তার সাথে না থাকে । শাশুড়ি বলে তোরা যদি ভালো থাকিস আমি তাতেই খুশি। আমাকে নিয়ে তোদের সংসারে আগুন জ্বলবে এটা আমি চাইনা। প্রায় তিন বছর তো আমি আমি আলাদা রান্না করে খাই। আমার কোন অসুবিধা হবেনা ছেলেকে বোঝায়। আরো বোঝায় সে একটা কাজ পেয়েছে গ্রাম সদস্যের বাড়িতে। এবারেগ্রাম সদস্য হয়েছে অনিল গারু। সে আমাকে পঞ্চায়েত থেকে বার্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাছাড়া লোকের বাড়িতে পান সাজানোর কাজ করে। দিনটা  মোটামুটি কেটে যায়। তবুও লুকিয়ে মায়ের হাতে বেশ কিছু টাকা দিয়ে আসে। যাতে ভালো মন্দ কিছু কিনে খেতে পারে।
এরপর মাস যায় বছর যায়। রতনের বউ এর চালচলন আভিজাত্যের ছাপ ক্রমশ প্রকট দেখা যায়। রতনের মা লোকের বাড়িতে কাজ করে দিন আনে দিন খায় সেই রকমই চলে। এক বছর দুই বছর তিন বছর আবার কেটে যায়।
হঠাৎ একদিন খবর আসে ওখানে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ শক খেয়ে রতন মারা গেছে। খবরটা আমিনুর ফোন করে রতনের স্ত্রীকে দেয়। স্ত্রী প্রথম একটু কষ্ট পায়। কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে। ওকে সামলে রতনের লাশ বডি টাকে দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। স্ত্রী রাজি হয়ে যায়। আমিনুর কে জানতে চায় এই লাশ বডি টা আনতে খরচ টা কি তাকেই দিতে হবে ? প্রত্যুত্তরে আমিনুর তাকে জানায় -হ্যাঁ। তাকেই দিতেই হবে। কিছুক্ষণ ভেবে স্ত্রী বলে- যে মারা গেছে তাকে আর দেখে কি হবে। টাকা পয়সা দিয়ে ওখান থেকে স্বামীকে আনার মত তার ইচ্ছে নেই ।এই মতামত টা জানিয়ে দেয় আমিনুরকে।
এই খবরটা ঘন্টাখানেক পর রতনের মা জানতে পারে। আমিনুরের বাড়ির মারফত। কান্নাকাটি করে প্রায় পাগলের মতো হয়ে যায় রতনের মা। সরাসরি রতনকে ফোনে বলে তুমি নিয়ে এসো। আমার স্বামীর 5 কাঠা জমি আছে সেটা বিক্রি করে আমি শোধ করে দেব। কথাগুলো শুনে আমিনুর ব্যবস্থা করতে থাকে। তিনদিন পরে রতনের মৃতদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছয়। শাশুড়ির তদারকিতে আসছে তা জানতে পেরে রতনের স্ত্রী তার বাপের বাড়ি চলে যায়। কাউন্সিলর অনিল গারু পার্টির সাহায্যে সরকারির মধ্যস্থতায় বিদেশ থেকে লাশ বডি টাকে আনতে সাহায্য করে। বডি এসে পৌঁছায়। তার সাথে আসে আমিনুর।  যে কোম্পানিতে কাজ করত রতন। তারাই আমিনুরের মাধ্যমে রতনের বাড়িতে তার লাশ দেশে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে। তার সমস্ত খরচ দায় বহন করে ওই কোম্পানি। এবং 5 লাখ টাকার চেক মৃত্যুর জন্য আমিনুরের হাতে দিয়ে পাঠায়। খবরটা তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। রতনের স্ত্রীর কাছে পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না।
ইতালি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে 5 লাখ টাকার চেক এর খবর এখানকার পুলিশ স্টেশনে।
এখানকার স্থানীয় শ্মশান চুল্লি তে রতনের মৃতদেহ সৎকার হলো। সবার সামনে আমিনুর চেকটা থানার বড়বাবুর মারফতে রতনের মায়ের হাতে তুলে দিতে যাবে। এমন সময় কাঁদতে কাঁদতে হাজির হয় রতনের স্ত্রী। কাঁদতে কাঁদতে ও থানার বড়বাবুকে জানায় -আমার স্বামী যে মারা গেছে আমি কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম। আমার অপেক্ষা না করে পোড়াও হয়ে গেল। শুধু টাকার জন্য শাশুড়ি আমাকে জানায়নি। শাশুড়ি যদি টাকা নেবে তো নিক। স্বামীর শেষবারের মতো মৃতদেহটা আমি দেখতে পেতাম।
থানার বড়বাবু কথাটা শুনে বলল -এটা অন্যায় করলো। আমরা আপনার হাতেই চেকটা তুলে দেব।
পুলিশের বড়বাবু চেকটা প্রথমে স্ত্রীর হাতে তুলে দেয়।
ছেলের শোকে মুহ‍্যমান বৃদ্ধা মা। অনর্গল চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। দুটো হাত জোড় করে বৌমার দিকে তাকিয়ে বলে- বৌমা এই পাঁচ লাখ টাকা চেকের জন্য এত বড় মিথ্যা কথা বলতে পারলে!








স্কুলের সেই দিনটা
        আব্দুল রাহাজ

ওরা গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নরেশ পুর উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে প্রতিদিন ফেরি ঘাট পার হয়ে যাওয়া আসা করে। একদিন বেশ রোদ ঝলমলে দিন সূর্য তার স্বয়ং মহিমা ফুটিয়ে তুলেছে চারিদিকে তেলি পাড়ার মাঠে ক্রিকেট খেলছে ওরা স্কুল থেকে খেলার শিক্ষক অতনু বাবু এসে ওরে গোপাল রাহুল আলি তোরা খেলছিস ওরা ওদের খেলার শিক্ষককে দেখে দেখে অবাক কারণ গোপাল রাহুল আলি পড়াশোনায় ততটা ভালো না স্কুলে গিয়ে সবার শেষের বেঞ্চিতে বসে ক্লাসের ছেলেরা ওদের কেউ দাম দেয়না খেলা শিক্ষকের সাথে ওরা অনেকক্ষণ কথা বললো তারপর খেলার শিক্ষক বলল আজ আসি কাল স্কুলে দেখা হবে আচ্ছা ।
  পরের দিন স্কুলে ওদের কানে ভেসে আসছে রসুলপুর হাই স্কুলের সাথে আমাদের স্কুলের একটা প্রীতি ম্যাচ হবে কিন্তু আজ স্কুল দলের তিনজন প্লেয়ার আসেনি তাই খুব চিন্তিত ‌। এরপর প্রার্থনা সভার শেষ হওয়ার পর খেলার শিক্ষক অতনু বাবু ক্লাসে এসে রহিম আলি আর  গোপালকে সামনে ডাকলো ওরা মাথা নিচু করে সবার সামনে গেল সবাই ওদের দেখে হাসতে লাগলো ওদের জামা প্যান্ট দেখে জোর গলায় বলে উঠলো চুপ চুপ সবাই চুপ হয়ে গেল আজকে আমাদের তিন জন প্লেয়ার আসেনি ওদের বদলে এরা তিনজন খেলবে সবাই হা হয়ে গেল ক্লাসের ক্যাপ্টেন চিন্ময় বলল এরা খেলবে এরা কি খেলতে পারে আরে দেখো না কি খেলতে পারে আজকে আমরা জিতবোই আচ্ছা ঠিক আছে দ্বাদশ শ্রেণির তমাল দা এসে বলল এরা তো কালকে রাত্রে টুর্নামেন্ট খেলে এসেছে আমাদের সাথে জিতেছে বটে আজকে আমরা জিতব এরা তিনজন খেললে এদিকে ক্লাসে হইচই পড়ে গেল খেলা হতে এখনো অনেক দেরি স্কুলের ইকো ক্লাব প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো। ওদিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির তন্ময় মানবেশ সাগর পরিমল সুকুমার দা রা পাশ থেকে বেশ উৎসাহ দিচ্ছে ওরা নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে এদিকে স্কুলের টিফিন হয়ে গেছে আর খেলার মাত্র পনেরো মিনিট বাকি আজকের খেলার আম্পায়ার ছিল আশিস কড়া হাতে খেলাটি পরিচালনা করার জন্য তৈরি হচ্ছে থার্ড আম্পায়ার হিসেবে দেখা গেল সৌভিক কে বেশ জমজমাট পরিবেশ চারিদিকে এবারে সময় হয়ে এসেছে টসের পালা এদিকে ক্যাপ্টেন  চিন্ময় আর অন্যদিকে রসুলপুর হাই স্কুলের ক্যাপ্টেন হাসান এগিয়ে এলো বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ শিশির সিংহ মহাশয় তিনি টসটি করলেন নরেশ চন্দ্র পুর হাই স্কুল টসে হেরে গেল রসুলপুর হাই স্কুল ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিল এদিকে খেলার স্যারের নিয়ম অনুযায়ী বল হাতে পড়লো গোপালের প্রথম ওভারেই চমক ইতিমধ্যেই রসুলপুর হাই স্কুল পরপর দুটো বলে উইকেট হারিয়ে ফেলেছে এরকম চলতে চলতে কুড়ি হবে শেষে রসুলপুর হাই স্কুলের রান দাঁড়ায় একশো পঁচাশ একশোএকান্ন রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নরেশ চন্দ্র পুর স্কুল মাঠে নামলো আলী প্রথমে ব্যাট করল আউট করতে পারল না সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে স্কুলকে জিতিয়ে দিলো চারিদিকে ওদের নাম ছড়িয়ে পড়ল তারপর থেকেই স্কুলে ওদের একটা নাম ডাক হয়ে গেল তারপর থেকে স্কুলের অদ্ভুত ভাবে পড়াশোনায় মনোযোগ এসে গেল সবার সাথে হেসে খেলে অন্তিম পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এলো সেই দিনটি ওদের কাছে ছিল আজীবন চিরস্মরণীয় চিরস্মরণীয় ।









কবিতা :
          উষ্ণতা নেই!
                       বিশ্বজিৎ কর

কোথায় সেই উষ্ণতা-
যে উষ্ণতায় ভালবাসা সজীব,
কাছে আসা ঘনিষ্ঠতায় একাকার!
উষ্ণতার একটা গন্ধ থাকত,
তোমার না থাকাতেও!
গন্ধ এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে -
উগ্রতার চোখধাঁধানো মোড়কে!
কোমলতা আক্রান্ত, প্রেম হিসেবি, সম্পর্ক কম্পমান!
গন্ধ চাবুক মারে, প্রেমের ক্যানভাসে!
আক্রান্ত প্রেম বিস্মৃতির অন্তরালে ঢাকা পড়ে যায়!










অপেক্ষা
        সায়ন প্রামানিক

মনের কোণে টুকরো মেঘ জমেছে,
তোমায় লেখা কবিতা গুলো আজ ফিকে হয়েছে
সন্দিগ্ধের আগুন আজ যেন নিষ্প্রাণ
জীবন আজ অন্তমিলের খোঁজে,
তোমার অপেক্ষায় নিস্তব্ধ শ্মশান।।
         









নন্দী বাড়ীর দরজা
                 অঞ্জলি দে নন্দী, মম

নন্দী বাড়ীর ইয়া বড় দরজা।
তাকে নিয়ে গাওয়া হয় তরজা।
শুনে তা সবাই পায় বড় মজা।
তার মাথার ওপরে ওড়ে ধ্বজা।
দরজার আছে ইয়া বড় দুপাল্লা।
ওদুটি বন্ধ আছে দিয়ে এক তালা।
ওদের জন্য ঝড়ের বড় জ্বালা!
বৃষ্টিরও খুবই অসহ্যের ওরা!
ঝড় চায় ভেঙে দিতে তালা আর পাল্লা।
বৃষ্টি চায় ভিজিয়ে ওদের শেষ করতে।
কিছুতেও আর তা পারে না করতে।
অতি মজবুত যে ওরা!
ওদের ভেতরে থাকে বাদুড় নিযুৎ, অযুৎ।
ওরা আঁধারের দূত।
বাড়ীর ভেতরে ঢোকা মানা রোদের।
তাই তো বহুৎ মজা ওদের।
করি-বর্গাগুলি খুব মজবুত!
দিনে ধরে ওগুলিই ঝোলে ওরা।
আর কাজ ওদের
সারা রাত ওড়া।
বাড়ীতে থাকে ওদের সাথে বুড়ো খুড়োর ভূত।
সন্ধ্যা হলেই সে,
ঝনাক করে খোলে তালা আর দরজা।
একসাথে বাদুড় আর সে,
বাইরে যায় বেরিয়ে।
সারা রাত ঘুরে বেড়িয়ে
তারপর সকালে আবার আসে বাড়ী ফিরে।
ফের বন্ধ করে খুড়ো ভূত তালা দিয়ে দরজা।
সবার বড় কৌতূহল এই দরজাকে ঘিরে।
ক্যানোই বা কোনদিনও যায় না ছিঁড়ে,
নন্দী বাড়ীর দরজার ওপরের ধ্বজা, চির উড়ন্ত?
কেনোই বা অতি দুরন্ত
ঝড়, বৃষ্টিতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না ওই দরজা?
রহস্য বড়ই অদ্ভুত!
হয় তো বা কারণ ভূত।









অনুগল্প
      মিনতি গোস্বামী

বৃষ্টির রাতে

ভাদ্রের প্রথম দিন, দুপুর থেকেই ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। আজ বাড়িতে কেউ ছিলনা, ভাবলাম জমিয়ে একটা ভূতের গল্প লিখবো।বৃষ্টি পড়লেই
কেন ভূতকে মনে পড়ে নিজেই জানিনা।
       একটা গল্প হবে লিখতে শুরু করেছি,দরজায় কলিংবেল। ভাবলাম,একে বৃষ্টি, তাতে করোনা। 
দরজা খুলেই অবাক! প্রিয় বান্ধবী অনামিকা?
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে বললো,'আমাকে
ঢুকতে দিবিনা?
অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,'আয়,আয়'।
ঘরে ঢুকেই সোফায় বসলো।আমি বললাম,'ছাতা কোথায় রাখলি, বৃষ্টিতে ভিজিসনি?
সে বললো, 'ধুর, আমি কি ভেজার অবস্থায় আছি?'
'মানে?'
''সবের মানে খুঁজিসনা।আমাদের পাড়ায় মড়ক লেগেছে,তুই আমার প্রিয় বান্ধবী, তোকে সাবধান করতে এলাম।সাবধানে থাকিস, বাইরে টো টো করে ঘুরিসনা।
আমি বললাম,'হাত-পা ধুয়ে আয়, টেবিলে স‍্যানিটাইজার আছে হাতে নে।তারপর আমি চা করে নিয়ে আসি।
স‍্যানিটাইজার বলে,হা হা করে হাসলো অনামিকা।
সঙ্গে সঙ্গে লোডশেডিং হয়ে গেল।
আমি টর্চ খুঁজতে উপরে এলাম।
ফোন বেজে উঠলো।অনামিকার স্বামী অতীশ
বললো,'তোমার বান্ধবী কাল রাতে করোনায়
মারা গেছে।'

0 comments: