বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/11/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 26/11/2020

**********************************

"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
                 (ওয়েব ম্যাগাজিন)     

প্রকাশ কাল:- 26/11/2020, বৃহস্পতিবার
               সময় :- রাত 7 টা. 40 মি:


সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ

সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ

যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম


সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577

✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒✒

এই ঠান্ডায় খেয়ে  মজা
          চিত্তরঞ্জন  দেবভূতি

গরমের  দিনে খেয়ে মজা  নেই,
যতটা  ঠান্ডার দিনে  আছে,
খেতে  বসে  বার বার
মনে  পড়ে  তোমাকেই,
তুমি  আসবে  আমাদের
পাহাড়ের  কাছে৷
পিঠেপুলি,  খেজুর  গুড়ের  পায়েস,
সমান  ভালো  লাগে,
আমার  প্রিয়তমা  কণিকা  এই  কথা,
বুঝে  যায়  সবার  আগে৷

আমরা  হরেক  রকম  খাবার  কে—না ভালোবাসি?
অফিস  থেকে  হাত  মুখ  ধুয়ে  আগে  খেতে  বসি৷
বয়স  হয়েছে  বলে  সুরা পান  করতে  চায়  না  যে  মন,
খুব  সাবধানে  থাকতে  হয়,
সময়টা  যে একেবারেই  অন্য  রকম৷





শীত পড়েছে তাই
অঞ্জলি দে নন্দী,মম

শীত পড়েছে, শীত পড়েছে, শীত পড়েছে ভাই।
ঠান্ডা জলে স্নান করি না তাই।
ভর দুপুরে রোদে বসে চুল শুকাই।
ভরসা কেবল সূর্যি মামাই।
আর একই সঙ্গে কমলা লেবুও খুব খাই।
এ তো মর্তের সুধাই।
আর মটরের খোসা ছাড়াই।
সন্ধ্যের সময় ঠাম্মার সাথে পিঠে বানাই।
তখন দাদু মোবাইল ফোনে শোনে সানাই।
আর দাদুর পায়ে তেল মালিশ করে বালক কানাই।
মারা গেছে দুজনেই, ওর মা বাবাই।
ওর বাবা ছিল দাদুর দূর সম্পর্কের জামাই।
এখন তাই কানাই-এর বাড়ী আমাদের বাসাই।
রাতের বেলায় লেপের তলায় মুখ লুকাই।
মায়ের গায়ে গা লাগিয়ে ঘুমাই।
মা তো যেন দেবী শ্রী উমাই।
এমন সুখ আর দুনিয়ায় নাই।
সবার সাথে গরম দেশে বেড়াতেও যাই।
তখন তো ঘাম ঝরাই।
ঠান্ডা জলে সাঁতার কাটাও চাই।
আহা বড় তৃপ্তি পাই।





আলু
মাথুর দাস

আলু নিয়ে আলুবাজি
কার কী যে কারসাজি,
বোঝে না কি পাবলিক !

অকারণে    দাম   বাড়ে
ক্রেতা  ত্রাহি ডাক ছাড়ে,
ঝাড়ে বাড়ে  ফড়ে ঠিক ।

চড় চড়  দামে  ওই
নড়ে চড়ে বসে কই,
যারা ঠিক  নড়বার ?

পঞ্চাশ   ছুঁই   ছুঁই
হিমঘরে আলু তুই,
নেই কিছু করবার ?
         *****




বিপ্লব গোস্বামী এর চারটি অনুকবিতা

১|
রাজনীতি

রাজনীতিএক ভীষণ ব‍্যাধি
লক্ষণ বুঝা শক্ত ।
নেতা হলে সবার দেহে জন্মে
লোভের রক্ত।

২|
ঈশান বাংলার কৃষাণ

ঈশান বাংলার কৃষাণ আমরা মাঠে ফলাই ধান
কৃষাণ বলেই ভাগ‍্যে জোটে শত অপমান।
সবার মুখে অন্ন দিতে আমরা ঝরাই ঘাম
ভদ্র লোকের সভ‍্য যুগে নেইতো মোদের দাম !

৩|
বিচিত্র সমাজ

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মাঝে বিচিত্র শাসন
রাস্তায় একা লক্ষ্মী পেলে করতে চায় ধর্ষণ !
বিয়ের লক্ষ্মী কালো হলে চায় মোটা পণ
গর্ভে যদি লক্ষ্মী আসে ভ্রুণে করে নিধন !

৪|
আধুনিক নারী

অর্ধ নগ্ন নেটে মগ্ন পর ভাষায় কথন
নাইট ক্লাবে মদ‍্য পাণ পুরুষের মতন।
আধুনিক যুগের আগুয়ান নারীর এইতো চলার কায়দা
সেই সুজুগে নর পিশাচ সব লোটছে তাদের ফায়দা।





ওগো প্রিয়তমা
          অনাদি মুখার্জি

কত দিনরাত ভেবেছি তোমায় ওগো প্রিয়তমা,
কবিতা তে লিখে রাখলাম মোর  হৃদয়ে সব কথা !
যদি পারো পড়ে নিও আমার লেখা ওগো চিরসখা,
ভাবেনি গো তুমি হবে মোর জীবনের প্রথম প্রেমিকা!
বর্ণিল সাজ পোষাক অলঙ্কার রূপের বাহার তোমার,
সরু তোমার কটি দেশ উন্নত নাক আর চুলের বাহার !
টানাটানা নয়ন তোমার রেশমের মতোন নরম ঠৌট,
এই ভেবে আমি হারিয়ে যায় অতল গভীর ভেতর!
বুকের ভেতর টা জ্বলে উঠে ক্ষণিকের আলো,
হয়তো কোনো একদিন প্রিয়া আমাকে বাসবে ভালো!
লাল চেরি শাড়ি পরে যখোন এসো আমার কাছে,
আমার ষোড়শ যৌবন ছটপট মনে শিহরণ জাগে !
তাই বারে বারে বলছি তোমায় ওগো প্রিয়তমা,
আমার বুকের মধ্যেই থাকো সারাজীবন মোর চিরসখা !




মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা

১। শিরোনাম- ফুটবলের যাদুকর

ফুটবলের
তুমি যাদুকর
তুমি. ফুটবলের রাজপুত্র
ফুটবল শিখেছিল  তোমার কাছে
একদম নতুন একটা নাচের ছন্দ
যে ছন্দে মেতেছিল একদিন সারা পৃথিবী।

দিয়েগো মারাদোনা ছিলে ফুটবল জগতের নবী
ফুটবলকে ভালোবেসে কাটিয়েছিলে সব ধন্দ
শতাব্দীর সেরা গোলে আছে
তোমার নিজস্ব সূত্র
ঈশ্বরের বর
গর্বের।

২। শিরোনাম-তোমাকে ভালোবেসেই

মারাদোনা
তুমি বলো
একদিন তোমাকে দেখেই
পৃথিবীর দূরতম দেশ আর্জেন্টিনাকে
আপামর বাঙালি প্রিয় ফুটবলকে ভালোবাসা
তোমার ছন্দেই ফুটবলে জাগে নতুন আশা।

ফুটবল তোমার পায়ে এনেছিল নতুন ভাষা
তোমার নামেই মেসিতে জাগে আশা
তোমার বিদায় নাড়ায় অস্তিত্বকে
সবুজ মাঠ রেখেই
বন্ধ হলো
আনাগোনা।




শীতের সকাল
    আব্দুল রাহাজ

কুয়াশাময় শীতের সকাল ফুটে ওঠে
এখন অনন্য রূপে।
সূর্যের উজ্জ্বল দীপ্ত রশ্মিতে বৈচিত্র্য ফুটে ওঠে মায়াবী শীতের সকাল‌।
কেউ ছোটে নিজের কাজে ঠান্ডায় হুহু করতে করতে
আবার কেউ উলের  পোশাক পড়ে যায় পড়তে
কেউ আবার ছুটির দিনে ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে চলে যায় বনভোজনের আয়োজনে।
ছোট‌ ছোট ছেলেমেয়েরা মজা করে আগুনের তাপ নিতে যায় তেপান্তরের মাঠে।
প্রকৃতি ফুটে ওঠে তার অপরূপ সৌন্দর্যের
একরূপে লাবণ্যে সবার সামনে মেলে ধরে
ও যে শীতের সকাল।






                আস্ফালন
           হামিদুল ইসলাম
              

জীবনের জন‍্যে জীবন গড়ি
ভালোবাসার জন‍্যে
স্বপ্নের তাজমহল
তুমি আজ কতো কাছে তবু কতোদূর
তোমার ভালোবাসায় প্রতিদিন ভূগোলের পাঠ নিই  ।।

ভূগোলের শরীর গলদঘর্ম
নুন জলে ভেজা
আমি প্রতিদিন সংগ্রামে মাথা ঠুকি
ভেঙে ফেলি একবিংশ শতাব্দীর দোড়গোড়া
রাঙা চোখে তাকায় পুঁজিবাদ  ।।

নিরন্তর কাস্তে চলে মাঠে
হাতুড়ি কারখানায়
বিপ্লবীরা দখল করে আরো একটি দেশ
আজ ধর্মঘট
শত্রু মিত্রের ময়দানে দেখা হবে আজ  ।।

আমরা অথৈ জলের মাছ
মনের গভীরে স্বপ্ন দেখি বাঁচার
রাম সীতা প্রতিদিন বনবাসে যায়
খোঁজ রাখে না জনতা
কেবল ধানসিঁড়ি ভেঙে পড়ে অনর্থক আস্ফালনে  ।।




দুই ফুলে দাঙ্গার  শহর 
   বদরুদ্দোজা শেখু


শহরের সমারোহ দেখতে দেখতে  ফুল এলো চোখে
ফুলের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হ'য়ে যেতে যেতে
ফুলের মতোই এলো শহরিণী রমণীর মুখ
চোখের সুখের সাথে যাতে বাড়ে বুকের অসুখ ।

দু'য়ের রহস্য আমি পাশাপাশি দাঁড় করালাম
সবুজের অন্তরাল ছেয়ে থাকা ফুলের অনল
নিসর্গের অভিধানে যৌবনের প্রতীকী সম্ভার
মানুষের বংশ-পিপাসার সাথী ষোড়শীরা সব
অন্তরঙ্গ কামনার ফুটে-ওঠা জৈবনিক ফুল
আমার ধূসর চোখে মশগুল ভালবাসার বিকম্প্র প্রবাহ ।

রাশি রাশি পথে-দেখা ফুল আর পথে-দেখা নারী
আমাকে নাড়ায় ভারী , হঠকারী দু'য়েরই প্রকোপ ,
একদল পবিত্র আবেশে মন ভ'রে দ্যায় আর
অন্য দল অশমিত আকাঙ্ক্ষার আগুন জ্বালায়
মনে, যেন এই মন উভয়ের এক অঘোষিত
যুদ্ধক্ষেত্র , পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী নিসর্গ নিয়মে।

রক্তমাংসের ফুল-ই লাস্যময়ী উলঙ্গ রমণী
বড়ো বেশী জিতে যায় আপাততঃ বয়সের দোষে ,
বলি হয় ফুলেরা ভালবাসার বাঁধানো তোড়ায় ,
অবশেষে জৈবনিক যবনিকা নেমে এলে পরে
করুণায় কবরের ঝোপে হাসে বিজয়িনী ফুল ।
অকস্মাৎ রক্তাক্ত হৃদয় দেখি দৃশ্য পরস্পর
সুন্দরের অভিজ্ঞানে উভয়ের দাঙ্গার শহর ।






               বিভাগ ---- প্রবন্ধ
        জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিকথা
         অধ্যাপক সৌম্য ঘোষ
     

          "জয় সর্বগত দুর্গে জগদ্ধাত্রী নমোহস্তুতে"।

জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ "জগত+ধাত্রী।
জগতের ( ত্রিভুবন) ধাত্রী ( ধারণকর্ত্রী) ।"
ব্যপ্ত অর্থে দুর্গা,কালী এবংঅন্যান্য শক্তিদেবীগণও
জগদ্ধাত্রী। তিনি জগতের পালিকা শক্তি । তিনি দেবীদুর্গার আরেকটি রূপ । তাই জগদ্ধাত্রীর প্রণাম মন্ত্র তাঁকে " দুর্গা" বলে স্তুতি করা হয় । উপনিষদের ইনি হলেন উমা হৈমবতী । বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরান গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে । জগদ্ধাত্রী আরাধনা বিশেষতঃ বঙ্গদেশে প্রচলিত । বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চন্দননগর , গুপ্তিপাড়া ও নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী উৎসব জগদ্বিখ্যাত।  কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।  হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় মানসে রাজসিক দেবী দুর্গা ও তামসিক দেবী কালীর পরেই স্থান সত্ত্বগুণের দেবী জগদ্ধাত্রী ।
                 স্বামী প্রমেয়ানন্দের মতে ,  " ধৃতিরূপিনী মহাশক্তি জগদ্ধাত্রী । সগুণ ব্রহ্মের সৃষ্টি , স্থিতি ও বিনাশ তিনগুণের যুগপৎ প্রকাশ যেমন কালীরূপের বৈশিষ্ট্য,  তাঁর ধরণী ও পোষনী গুণের যুগপৎ প্রকাশও জগদ্ধাত্রী রূপের বৈশিষ্ট্য । ...... ‌
"ধা"  ধাতুর অর্থ ধারণ করা। ভগবতী নিখিল বিশ্বকে বক্ষে ধারণ করে পরিপালন করেন বলে মুনিগণ কর্তৃক তিনি ত্রৈলোক্যজননী নামে অভিহিত । ........
সতত পরিবর্তনশীল জগত সেই মহা শক্তি দ্বারা বিবৃত .... ....
তিনি নিত্যা , শাশ্বতী ও অপরিবর্তনীয়া । দেবী জগদ্ধাত্রীই সেই ধৃতিরূপিনী মহাশক্তি ।"

                     দেবী জগদ্ধাত্রী সিংহবাহিনী, কিন্তু দশভূজা নন, চতুর্ভূজা। বিবিধ আভরণভূষিতা , অরুণকিরণবৎ  বর্ণযুক্তা এবং সর্পরূপ যজ্ঞোপবীতধারিণী । তাঁর বাম দিকে দুই হাতে থাকে শঙ্খ ও ধনু  এবং ডান দিকে দুই হাতে থাকেই চক্র ও পঞ্চবান। রক্তবর্ণের বস্ত্র তাঁর পরিধানে । তিনি সত্ত্বগুণের প্রতীক , তাই প্রথম সূর্যের মতো তাঁর গায়ের রং। অর্থাৎ কমলা। বাহন সিংহ করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান। জগদ্ধাত্রী পূজা তান্ত্রিক পূজা। দুটি প্রথায় এই পূজা হয়ে থাকে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী --------  এই তিনদিন জগদ্ধাত্রী পূজা হয়ে থাকে । কোথাও কোথাও প্রথম বা দ্বিতীয় পূজার পর কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার  মত  জগদ্ধাত্রী পূজাতেও বিসর্জনকৃত্য বিজয়াকৃত্য নামে পরিচিত। এমনকি পুষ্পাঞ্জলী ও প্রণাম মন্ত্রসহ পূজার অনেক মন্ত্র দুর্গাপূজার অনুরূপ।


0 comments: