গল্প
ভালোভাবে বাঁচায় আশা
অনাদি মুখার্জি
এখন ঘড়িতে বারোটা বাজে ,এখনো অবধি অনাদি বাবু চা ও জলখাবার এলো না ! সত্যিই একে বলে পরিবর্তন ,আবার কেউ বলে আজকাল নিজের ছেলে ও বিয়ে দেবার পর ,তার বাপের খোঁজ খবর রাখে না ! তার দুই ছেলের বউমার এই রকম আচরণ দেখে অবাক হয় অনাদি লোহার !
ঠিক দশ বছর আগে অনাদি বাবু কেন্দ্রীয় সরকারের উচচপদে কাজ করতেন ,তখন বেশ আরামে দিন কাটতো ! ঠিক সকালে জলখাবার ও অফিস যাবার সময়ে মালা তাকে ঠিক তার মতোন খাবার দিত ! অনাদি বাবু তার চাকরি জীবনে চুটিয়ে তার কাজ করে টাকা কামিয়েছেন ,তখন সংসারে বাকি কাজ তার বউ মালা সব দেখভাল করতেন ! রান্না করা ,বাজারে যাওয়া, দুটো ছেলেকে মানুষ করা এবং তাদের বিয়ে দেওয়া সবই অনাদি বাবু বউ মালা একা হাতে সামলেছেন ! তার হাতে ছিল সংসারে চাবিকাঠি !
চাকরি থেকে অবসর নেওয়া পর বেশ আরামেই দিন কাটছিল অনাদি বাবু ! স্ত্রী দুই ছেলে, দুই বউমা ও এক নাতি নিয়ে তার ভরা সংসার !
চাকরি থেকে অবসর নেওয়া পরে তার রোজকার রুটিন নিজের মতোন গুছিয়ে নিয়েছেন ! রোজ ভোর ভোর উঠে ঘন্টা দুই ঘুরতে যাওয়া তার ফাঁকে তার বন্ধুদের সাথে গলপ করে সময় কাটানোর পর বাড়িতে এসে স্ত্রী সাথে গলপ করতে করতে চা খেতেন ও পেপার পড়তেন ! ঠিক দশটা মধ্যেই জলখাবার খেতেন ,সেই সময় তার বউমা ও ছেলে এসে বলতো বাবা আজ বাজারে যদি যাও তবে বেশ বড়ো সাইজের মাছ এনো ,থলি হাতে নিয়ে বাজার করতেন ! দুপুরের খাওয়া পর নাতিকে নিয়ে গলপ বলা তার ছিল রোজকার রুটিন ! রাতের বেলায় ডাইনিং টেবিলে বসে একসাথে গলপ করতে করতে খাওয়া ,বেশ আরামে দিন কাটছিল অনাদি বাবু ! হঠাৎ একদিন অনাদি বাবুর স্ত্রী চান করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান,মাথার পিছনে খুব আঘাত পান ,তাতে সেই অজ্ঞান হয়ে যান ,সাথেই সাথে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর ডাক্তার বাবু তাকে মৃত বলে ঘষণা করেন ! বিনা মেঘের বজ্রপাতে মতোন ঘটনা ঘটে গেলো অনাদি বাবুর জীবনের ! তাঁর এত দিনের সুন্দর জীবন সব এলোমেলো হয়ে যায় ! ছেলে ও বউমা সব নিজের কাজে ব্যাস্ত আর নাতিও আসে না আগের মতোন তার কাছে ! সংসারে অনাদি বাবু এখন নিজেকে অসহায় বোঝা মনে করেন ,শুধু রাতের বেলায় তে ছেলে সাথে একটু গলপ হয় !
অনাদি বাবু নিজেকে গলপের বই ও টিভি দেখে সময় কাটান ! এর মধ্যেই একদিন তার দুই ছেলে ও দুই বউমা কে ডেকে বললেন ,দ্যাখো তোমাদের মা চলে যাবার পর আমি নিজেকেই গুটিয়ে নিয়েছি ,এই বার আমি ঠিক করেছি আমার যা সমপ্রতি আছে তা তোমাদের দুই ভাইয়ের নামে লিখে দিতে চাই ! এই কথা শোনার পর বড়ছেলে বলে এখন কি দরকার এইসব ,সাথে সাথে বড়ো বউমা বলে উঠলো বাবা যদি চাইছেন সেই টা করুক না ! সবাই তখন একমত হয়ে বললো ঠিক আছে বাবা ,শেষে অনাদি বাবু বললেন আমার সব কিছুই তোমাদের হাতে দিলাম, এখন ঠিক করো আমি কার কাছে শেষ জীবন টা কি ভাবে কাটাবো ! ঠিক হলো যে মাসের পনেরো দিন বড়ো ছেলে আর মাসের শেষ পনেরো দিন ছোটো ছেলের থাকবেন ,কিন্তু যত দিন যাচছে তার দুই ছেলে ও বউমা তাঁর খোঁজ তো নেই না ,এবং ঠিক সময়ে খাবার ও পান না ,এমন দিন গেছে শুধু জল খেয়ে দিন কেটেছে ! এই সব ভেবে অনাদি বাবুর ভাবে কি করবেন যেন তিনি ছেলের কাছে বোঝা হয়েগেছেন ! জীবনের শেষ পর্যন্ত তার বাচঁর দিশা খুজে পারছেন না !
একদিন অনাদি বাবুর এক তার বনধু সাথে দেখা হয় ,অনেক গলপ হবার পর অনাদি বাবু তার অবস্থার কথা বললেন, তখন তার বনধু গৌতম এক উপায় বলে দেন !
দিন দুই দেক পর অনাদি বাবু তার বড় বউমা ডেকে বললেন তোমার শাশুড়ি মায়ের একলাখ টাকা আছে আমার লকারে রাখা ,আমি তোমাকে বিশ্বাস করি এই টাকা তোমাকে দেব ,কিন্তু একটা কথা আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন পর্যন্ত তুমি আমার সেবা করবে ,এই কথা আবার ছোটো ছেলে ও ছোটো বউমাকে বলো না ! তখন বড় বউমা খুশি হয়ে বললো ঠিক আছে বাবা আমি আজ থেকে সব আপনার দেখভাল করবো ! পরের দিন আবার ছোটো বউমা কে ডেকে সেই একিই কথা বললেন ! সেই থেকে দিনরাত বড়ো বউমা ও ছোটো বউমা অনাদি বাবু কে ঠিক মতোন খাবার ও দেখভাল করতে লাগলো ,মাঝে মাঝে ছেলে ও এসে খোঁজ নিয়ে যেত ! এইসব দেখে অনাদি বাবু মনে মনে হাসে ! কিছু দিন পর সেই একলাখ টাকা তার বনধু গৌতম কে দিয়ে বলে সত্যি বন্ধু তুমি এই টাকা আমাকে ধার দিয়ে দারুন উপকার করেছো ,জীবনের শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার একটা আলোর ঠিকানা বলে দিয়েছো ! গৌতম বললো এখন তোমার বউমা রা তোমাকে ঠিক মতোন দেখছে তো ! অনাদি বাবু বললো হুম সব কিছুই যেনো এক পরিবর্তন ! বলে অনাদি বাবু বললো সত্যি আমাদের মতোন যারা বৃদ্ধো বয়সে এমন কষ্টের মধ্যেই থাকে তারা যেন এই রকম একটা উপায় বের করে রাখে যাতে বৃদ্ধো বয়সে আর অসহায় ভাবে দিন না কাটায় ! এই ভাবে অনাদি বাবু তার শেষ জীবন টা ভালো ভাবে কাটানোর জন্য যে নতুন আলোর দিশা বের করলেন !
0 comments: