বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

গল্প ভালোবসতে গেলে বোঝাপড়াটা জরুরি অনাদি মুখার্জি

গল্প
 ভালোবসতে গেলে বোঝাপড়া টা জরুরি 
          অনাদি মুখার্জি 


আজ আকাশের মুখটা বেশ ভার! সকাল থেকে দু এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে! না বলার কথা গুলো সেই রকম শুভর মনেও জমাট বাঁধা মেঘের সৃষ্টি করেছে ! আজ বলতে হবে রিয়া কে ,সেই তাকে ভালোবাসে ,আজ ভ্যালেন্টাইন ডে এই ভেবে শুভ এক গোছা গোলাপ ফুল কিনতে গেল ! কলেজের এক অনুষ্ঠানে সেই প্রথম রিয়া কে দেখে ,হালকা লাল রঙের শাড়িতে তাকে সুন্দর লাগছিল ! শুভ  প্রথম তার সাথে আলাপ কররো ! তার ঐ মিষ্টি চোখের চাওনি আর মিষ্টি হাসিতে তার প্রেমে পড়ে গিয়েছে ! প্রথমে তার সাথে বন্ধুত্ব করে ,তার পর ফেসবুকের তাকে মেসেজ করে ! সেই অনেক কথা মেসেজে হয়েছে ! একদিন শুভ তাকে মেসেজ দিল , মিষ্টি তোমার মুখখানি, সুইটস তোমার হাসি ,সত্যি করে বলছি আমি, তোমাকে আমি ভালোবাসি ! সেই জবাবে রিয়া বলেছিল ,থ্যাংকস ! কিন্তু রিয়া সামনে কোনোদিন সেই তার মনের কথা বলতে পারেনি ,আজ সেই কথা বলে তার মনের মেঘ কে সরিয়ে নিয়ে রিয়ার ভালোবাসার বৃষ্টি তে ভিজতে চাই ! 

তাই আজ কলেজের ঢোকার মুখে দেখে গোছা গোছা গোলাপ ফুল বিক্রি হচছে ! শুভ তার বাইকটাকে স্ট্যান্ড করে এক গোছা লাল গোলাপ কিনে নিল !

কি রে কার জন্য গোলাপ কিনছিস ? 

প্রশ্ন টা শুনে চমকে পিছনে তাকায় শুভ ! পাশে  দাঁড়িয়ে আছে শবনম আর হাসছে মুচকি মুচকি ! শুভ মনে মনে বললো এই মাল টা আর সময় পেলো না ,শুধু বললো তোর জেনে কি কাজ যা ভাগ ! হঠাৎ তার পাশে থাকা অজয় বললো বুঝলি না ,আজ কি ? কাকে দিতে পারে গোলাপ ! শবনম বললো বুঝলাম রিয়ার জন্য ! কিন্তু কোনো লাভ নেই ,এই তো আজ দেখলাম রিয়া কে কোন এক বয়ফ্রেন্ডের গাড়িতে চেপে কলেজের এলো ! এই কথাটা শুনে শুভর বুকে সজোরে ধাক্কা লাগলো ! অজয় বললো ঐ ছেলেটা সাথে রোজ রিয়া কলেজের আসে ! এই সব শুনে শুভর ভেতরের ঝড় বইতে শুরু করলো ! তাকে জানতে হবে রিয়া কোন বনধু সাথে কলেজের আসে ,রিয়াতো তাকে কোনোদিন বলেনি ! সেই কলেজের ঢুকে রিয়ার খোঁজ করতে লাগলো ,অবশেষে রিয়াকে দেখা পেলো ,রিয়া তখন তার বনধুদের  সাথে জমিয়ে গলপ করছে ,শুভ তার কাছে গিয়ে বললো রিয়া শোনো তোমার সাথে কিছু কথা আছে ! রিয়া বললো এইখানে বলো কি কথা ,আমার শরীর টা ভালো নেই ! শুভ বললো এইখানে বলা যাবে না ,একটু এইদিকে এসো ! রিয়া খানিক টা সরে এসে বললো ,কি বলো ? শুভ  বলে উঠলো তোমার তো অনেক বয়ফ্রেন্ড আছে দেখছি ,তোমার বয়ফ্রেন্ড আবার তোমাকে কলেজের পৌঁছে দেয় ! রিয়া কথাটা শুনে বললো ,মানে তুমি কি বলতে চাইছো ? শুভ বললো তুমি কার গাড়িতে চেপে কলেজের এসেছো ,ভেবেছো আমি কিছু জানি না, তুমি একটা বাজে মেয়ে বলে তার আনা গোলাপ ফুল টা ছুড়ে দিয়ে চলে গেলো ! রিয়া তখন পিছন থেকে বললো শুভ তোমার কোথাও ভুল হচছে শুনে যাও আসল কথাটা ,সেই কথা না শুনে শুভ চলে গেলো ! শুভর এইরকম ব্যাবহার দেখে রিয়ার মনে দুঃখ হলো ! সেই ও জানে শুভ তাকে ভালোবাসে খুব রিয়াও তাকে ভালোবাসে কিন্তু তা কোনোদিন প্রকাশ করেনি দুইজনে ! 

শুভ মনে মনে ভাবলো রিয়ার ঐ বয়ফ্রেন্ড কে নিজের চোখে দেখতে চাই ,তাই পরের দিন সেই সকাল সকাল কলেজের গেটে সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো ! খানিক বাদে রিয়া এলো ঐ বয়ফ্রেন্ডের গাড়িতে চেপে,গাড়ি থেকে নেমে বললো ঠিক সময়ে এসে তাকে যেনো নিয়ে যায় ! এই দেখে শুভ মন আরো খারাপ হয়ে গেলো ! সত্যিই তার ভালবাসা রিয়া বুঝলো না !

রিয়া শুভ কে দেখে বললো আজ মন তোমার ভালো আছে ,কথটা শুনে শুভ বলে উঠলো ,যার সাথে এলে তাকে বলো ,আমাকে কেন ? এখন তো তোমার ঐ সব ! কথাটা শুনে রিয়া বলে উঠলো যা জানো না তা নিয়ে ফালতু কথা বলো না ! শুভ রেগে চলে গেল !

সেই রাতের রিয়া শুভকে মেসেজ করে জানতে চাইলো তোমার এতো রাগ কেন আমার উপর ,সাথে সাথে শুভ রিয়াকে তার ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিলো ! তখন রিয়া শুভ কে ফোন করতে লাগলো, কিন্তু যতবার ফোন করছে ততবার শুভ কেটে দিচছে ফোন এই ভাবে রিয়ার মন খুব খারাপ লাগলো ,সেই ভাবলো শুভ তাকে ভুল বুঝেছে সেই যে একমাত্র শুভ কে ভালোবাসে, তাদের ভালোবাসার কথা এখনো বাড়িতে বলেনি ! 

আবার শুভ কে ফোন করলো ,এইবার শুভ ফোনটা তুলে রিয়া কে গালাগালি দিয়ে বললো তুমি আমার সাথে কোনোদিন কথা বলো না ,তোমার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ ওকে ! এই কথা শোনার পর রিয়া সমস্ত রাত বালিশে মুখ গুছে কান্নায় চোখের জল ভাসায় ! পরের দিন সকালে রিয়া তার প্রিয় দাদাভাই কে সব কথা খুলে বলে ! সেই কথা শোনার পর রিয়ার দাদা শুভকে ফোন করে বলে যেন এখুনি তাদের বাড়িতে আসতে ! জবাবে শুভ বলে কেন আমাকে কি দরকার ? আপনার বোনের তো অনেক বয়ফ্রেন্ড আছে তাদেরকে ডাকুন ! তখন রিয়া তার দাদার কাজ থেকে ফোন টা নিয়ে বলে শুভকে তুমি যদি না আসো তবে আমার মরা মুখ দেখতে পাবে ! এই কথাটা শোনার পর শুভর তার অভিমান ভেঙে রিয়ার বাড়িতে আসে ! তখন রিয়ার দাদা বলে শুভকে তুমি যাকে ভালোবাসো তার প্রতি তোমার বিশ্বাস নেই ,তুমি এই চিনলে আমার বোন কে ! শুভ সেই খানে রিয়ার দাদা কে দেখে চমকে উঠে,ঐ কথাটা শোনার পর শুভ বলে আমি বুঝতে পারছি না ,আপনি কি বলছেন? তখন রিয়া বললো তুমি আমাকে যার গাড়িতে চেপে কলেজের যেতে দেখেছো সেই আমার দাদা ! তুমি সেই দিন আমার কথাটা না শুনে দুমদাম উলটা পালটা কথা বলে চলে গেলে ! তুমি কেন এত ভুল বোঝো আমাকে ! শুভ সব শুনে বুঝলো  ব্যাপার টা তার মনের ভুল ! আসলে রিয়ার সেই দিন শরীর খারাপ ছিল বলে তার দাদা তাকে গত দুইদিন কলেজের পৌঁছে দিত ! সত্যিই ভালোবাসা কি জিনিস একটু তে কত ভুল হয় ,যদি সেই দিন রিয়ার সাথে বোঝাপড়া করে নিত সেই কার সাথে গাড়িতে চেপে কলেজের এসে ছিল তা হলে এতদূর জল গড়াতো না ! সব কিছু একটা বোঝাপড়া না করার জন্য তার জীবনের দুঃখ কষ্টের মন ভরে গেসলো ! আগ বাড়িয়ে কিছু বলার আগে বোঝাপড়া জরুরি এই টা তার মনের মধ্যেই ছিলো না ! শুভ তখন সামান্য লাজুক হয়ে বললো সরি দাদাভাই আমি আসলে কম বুঝি ! রিয়া তখন চোখের জল মুঝে বলে ,তুমি বড়োই অভিমানী !



0 comments: