উপকন্ঠ প্রাত্যহিক সাহিত্য পত্রিকা :
বড়দিন---
শুধু খ্রিস্টান নয়, মুসলিমরাও শ্রদ্ধা
করে
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
মুসলিমদের কাছে যীশু হচ্ছেন ঈসা নবী
যা জেনে বিশ্বের খ্রিস্টানরা অবাক হতে পারেন তা হলো - ইসলাম যীশুর জন্মদিন পালন না করলেও - তাঁকে সম্মান করেন।মুসলমানরা তাঁদের ধর্ম বিশ্বাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে যীশুকে গভীরভাবে সম্মান করেন যীশুকে সবচেয়ে সম্মানিতদের অন্যতম বলে স্থান দিয়েছে কোরান।
কোরানে অসংখ্যবার উল্লিখিত হয়েছে যীশুর নাম(যাকে আরবিতে বলা হয়-- ঈসা)। নবী মোহাম্মদের নামের চেয়েও বেশিবার।
ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থে নাম ধরে উল্লেখ করা হয়েছে এমন নারী আছেন মাত্র একজন।
তিনি হচ্ছেন কুমারী মেরি । আরবিতে তাঁর নাম মরিয়ম।
মেরি বা মরিয়মের নামে কোরানের একটি পূর্ণাঙ্গ সুরার নামকরণ হয়েছে - যাতে কুমারীর গর্ভ থেকে যীশুর জন্মের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
তবে ইসলামের এই কাহিনিতে কোনো জোসেফের উল্লেখ নেই, নেই কোন যীশুর জন্মের বার্তাবাহী জ্ঞানী ব্যক্তি বা পশুর আস্তাবলের কথাও।
এখানে আছে, মেরি একাই যীশুর জন্ম দিয়েছিলেন মরুভূমিতে, একটি মরা খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিয়ে।
সেখানে তাঁর খাবার জন্য গাছ থেকে পাকা খেজুর পড়ে, এবং তাঁর পায়ের কাছে পানীয়জলের ধারার সৃষ্টি হয়।
মেরি এবং তাঁর কুমারী অবস্থায় যীশুর জন্মের গল্প শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মনে দাগ কেটেছে।
একজন অবিবাহিত নারী সন্তান জন্ম দেবার ফলে তাঁকে নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু যীশু - নবজাত শিশু অবস্থা থেকেই ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ হিসেবে কথা বলতে শুরু করেন।
এই যাদুকরী ঘটনার পর তার মায়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা থেমে যায়। তবে এটি হচ্ছে সংস্কার ও বিশ্বাস ।
মুসলিমরা যখন যীশুর নাম নেন, তখন তাঁদের 'তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক' বলতে হয়।
মুসলিম ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী শেষ বিচারের দিনের আগে ( Judgement Day) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যীশু পৃথিবীতে ফিরে আসবেন । মুসলিম সাহিত্যে তাঁকে যেভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছে তা শুধু কোরানেই সীমিত নয়।
সুফী দার্শনিক আল-গাজ্জালি যীশুকে বর্ণনা করেছেন 'আত্মার নবী' বলে। ইবনে আরাবি তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন 'সন্তদের নিশানা' হিসেবে।
মুসলিম বিশ্ব জুড়েই ঈসা এবং মরিয়মের নামে শিশুদের নাম রাখা হয়। খ্রিস্টান পরিবারে কি মোহাম্মদের নামে শিশুর নাম রাখার কথা কেউ কল্পনা করতে পারেন?
ইসলাম ধর্মের সাথে যীশু পরিচয়ের ঐতিহাসিক কারণ আছে। ধর্ম হিসেবে ইসলামের জন্ম হয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে। ততদিনে মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিস্টান ধর্ম ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে ।
বাইবেলে নবী মোহাম্মদের কোন উল্লেখ নেই।
কিন্তু ইসলাম যদিও যীশুকে সম্মান করে, তবু এটা বলা খুব একটা ভুল হবে না যে খ্রিস্টান চার্চ সবসময় এ অনুভূতির সদয় প্রত্যুত্তর দেয়নি।
ইতালির বোলোনায় পঞ্চদশ শতকের স্যান পেত্রোনিও গীর্জায় একটি দেয়ালচিত্র আছে যাতে ইসলামের নবীকে দেখানো হয়েছে নরকে, তাঁর ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। ইউরোপে এমন অনেক শিল্পকর্ম আছে যাতে তাঁকে অবমাননার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।
সময় বদলে গেছে, কিন্তু আমাদের এই যুগে নতুন সব ধর্মীয় দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষমূলক সংস্কার, এবং উগ্রপন্থী সহিংসতার জন্ম হয়েছে।
২০০২ সালে বোলোনার চার্চের দেয়ালচিত্র বোমা মেরে উড়িযে দেবার ষড়যন্ত্রের জন্য ইসলামী জঙ্গীদের সন্দেহ করা হয়।
বোলোনার ওই ঘটনার পরবর্তীকালে ইসলামের নামে ইউরোপে এবং বহু মুসলিম দেশেও বড় বড় আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে - যাতে বহু লোকের মৃত্যু হয়েছে। এগুলোর ফলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেকার সম্প্রীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
সেকারণেই মুসলিমদের মধ্যে যীশুকে কিভাবে চিত্রিত করা হয়, এবং তাঁর গুরুত্বই বা কি - এটা উপলব্ধি করাটা হয়তো আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা খ্রিস্টানদের জন্য যেমন, তেমনি মুসলিমদের জন্যও।
নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে - তা দূর করার একটা ভালো পন্থা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে যেসব অভিন্ন ব্যাপার আছে তা তুলে ধরা।
__________________________________________
লেখক :---- অধ্যাপক সৌম্য ঘোষ । চুঁচুড়া। হুগলি।
0 comments: