বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 01/10/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 01/10/2020
Upokontha sahitya patrika Web Megazine- 01/10/2020



বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :
_____________________

কবিতা র রূপকল্প : পর্ব ১০
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
     
  || রবীন্দ্র সমসাময়িক কবি  --- ১ ||
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
               সৌম্য ঘোষ
     """""""""""""""""""""""""""""""""""""

        রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক সময়ের কবি ছিলেন প্রিয়নাথ সেন (১৮৫৪-১৯১৬), বিজয় মজুমদার (১৮৬১-১৯৪২), মানকুমারী বসু (১৮৬৩-১৯৪৩), দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩), কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩), রজনীকান্ত সেন (১৮৬৫-১৯১০), প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬), হিরন্ময়ী দেবী (১৮৭০-১৯২৫), বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭০-১৮৯৯), চিত্তরঞ্জন দাশ(১৮৭০-১৯২৫), প্রিয়ংবদা দেবী (১৮৭১-১৯৩৫), কুসুমকুমারী দাশ (১৮৮২-১৯৪৮) ।
                        ____________________
                          || দ্বিজেন্দ্রলাল রায়||
                         -------------------------------
           প্রথিতযশা কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় মূলতঃ গান রচনা করতেন তার আর্যগাথা গানগুলি কে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে----- প্রকৃতি-বন্দনা, ঈশ্বরস্তুতি , বিষাদোচ্ছ্বাস এবং দেশপ্রীতিমূলক কবিতা । দেশপ্রীতি মূলক কবিতায় আর্য গৌরব ও হিন্দু গৌরবের আতিশয্য । এইসব কবিতা " কবির
অপরিস্ফুট মানসলোকের ও ছায়াময় অস্তিত্বের স্বপ্নসহচর । 'আর্যগাথা"-র  দ্বিতীয় ভাগ দশবছর পরে প্রকাশিত হয় এবং তা অনেক পরিণত । এই ভাগের কবিতাগুলি স্বতঃস্ফূর্ত ও অকৃত্রিম গীতিধর্মীতায় মন্ডিত । তিনি বাঙালি চরিত্রের আতিশয্য আর দুর্বলতা নিয়ে ব্যঙ্গ- পরিহাস করেছেন  । কবি নিজেই বলেছেন :

   " ঘোমটা যে জিনিসটা সেটা ভালোই; তা বলে,
      সেটা ঠিক একটি গজ লম্বা না হলেও চলে ।
      যদি অন্যে পত্নীর চারু চন্দ্র মুখখানি
      দেখে খুশি হয়-বা তাতে এমনকি হানি... ।"

আবার সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপও আছে :

   "দেশটা দেখো যাচ্ছে ভরে ম্লেচ্ছ আর নাস্তিকের,
    হচ্ছে সব তুল্য পাপী, দিচ্ছে কারে শাস্তি কে;
    মানছে না কেউ শাস্ত্রগত মিথ্যাও কি সত্যও;--
    ধর্ম যদি রাখতে চাও, প্রত্যূষেতে প্রত্যহ
                                     সালসা খাও ।"

গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই সব কৌতুক প্রধান কবিতায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, " উপরিতলের ফেনপুঞ্জ এবং নিম্মতলের গভীরতা একত্র প্রকাশ পাইয়াছে।" দ্বিজেন্দ্রলালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাব্য  "মন্দ্র ।" এই কাব্যে আছে "অভিজ্ঞতার বেদনা , বাস্তবতার জ্বালা ও অতৃপ্তি  । " রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, "তাঁহার কাব্যে হাস্য , করুণা ,মাধুর্য, বিস্ময়, কখন কে কাহার গায়ে আসিয়া পড়িতেছে তাহার ঠিকানা নাই ।"

               _____________________
                 || রজনীকান্ত সেন ||
              -----------------------------------

   রজনীকান্তের মৃত্যুর পূর্বে তিনটি , মৃত্যুর পরে পরে তাঁর পাঁচটি  কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল ।  তাঁর রচনার অধিকাংশই গীত । নজরুল ইসলাম পর্যন্ত অনেক বাঙালি কবি ছিলেন গীতিকার ও সুরকার । বাংলা কাব্যগীতির এই ঐতিহ্যেরই কবি যেমন দ্বিজেন্দ্রলাল , তেমনি রজনীকান্ত সেন । রজনীকান্তের গানগুলি তিন শ্রেণীর -------- ভক্তিমূলক গান , স্বদেশী গান এবং হাসির গান । রবীন্দ্রনাথের "কণিকা"র আদর্শে কিছু নীতি কবিতা লিখেছিলেন । ভক্তিমূলক গানেই রজনীকান্তের প্রতিভা র সবচেয়ে আন্তরিক প্রকাশ ; সেই সব গানের সরল আত্মনিবেদন অবিশ্বাসীকেও স্পর্শ করে :

  " কেন     বঞ্চিত হব জীবনে?
    আমি     কত আশা করে বসে আছি ,
    পাব       জীবনে না হয় মরণে ।"

তাঁর ভাব জগত বাঙালি র , ভাষার সরল আটপৌরে । রজনীকান্তের স্বদেশী গান
" মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই "
খুব জনপ্রিয় হয়েছিল তাঁর সরল আবেদনের জন্যে।
                 __________________
                   || প্রমথ চৌধুরী ||
                 ------------------------------

রবীন্দ্রনাথের কবিতার খেলো-নকল দেখতে দেখতেতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন প্রমথ চৌধুরী । তিনি লিখেছিলেন অল্প কিছু ভিন্নধর্মী কবিতা । 'সনেট -পঞ্চশৎ'-এর জন্য বাংলা কবিতার ইতিহাসে তাঁর স্থান স্থায়ী।  এই ফরাসি রীতির তন্বী চতুর্দশপদীকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,  "চোদ্দ নালীর হার " ; নবম-দশম দুই লাইনের  "কটিদেশটি খুব আঁট " ।  সরস্বতী এইসব সনেটে আবির্ভূত হয়েছেন গাউনপরা মূর্তিতে ।  ইস্পাতের মতো ধারালো এইসব  সনেটে " তীক্ষ্ণধার হাস্য ঝকমক করছে ।" প্রমথ চৌধুরী স্বয়ং স্বীকার করেছিলেন তাঁর কবিতায় art এর চেয়ে বড় artificial বেশি;  কিন্তু তাঁর কৃত্রিমতাও বলার ভঙ্গিতে আকর্ষক ।  তবে প্রমথ চৌধুরী সবখানেতেই বীণাপাণি "খড়্গপাণি মূর্তিতে "  আবির্ভূত নন ।




নারীর সম্মান..
       শুভ্রাংশু কুম্ভকার

ধর্ষক এখনো বুক ফুলিয়ে নির্ভয়ার দেশে সবাইকে কাঁপায় ভয়ে,
ওরা জানে কেউ বেশিদিন কথা বলবেনা ধর্ষকের হয়ে।
গরীব তুমি, আধপেটা খেয়েও বেচতে চাওনি শরীর,
তাই ছিনিয়ে নিয়েছি ইজ্জত গায়ের জোরে,
ফলাফল একই আছে,অবশেষে পরিচিত R I P লেখা তোমার কবরে।
তারপর মোমবাতি, দু এক পা হেঁটে,
কিছুদিন অবরোধ চিৎকারে কিছু গলা ফাটে।
ক্রমশ নিস্তেজ হয় মানবিক মুখ,
ভোগীদের বুড়োরাজার চুপসে যায় বুক।

বলতো ভবেন, লজ্জা কি বন্ধক রাখো?
এত ভুল থেকে কি জানি কি তুমি শেখো?
ধর্ষকের ফাঁসি হতে যুগ লেগে যায়,
লুটে ব‍্যাঙ্ক বড়লোক বিদেশে পালায়।
ভুখারা শানকি চাটে আজো ভাঙা ঘরে,
নারীদের ইজ্জত বিকায় বাজারে।
নির্ভয়ার আত্মা বাঁচে ভালো দিন চেয়ে,
মনীষারা কিভাবে যৌবন রাখবে লুকিয়ে?
ষাঁড় পোষো,মোষ পোষো,মায় গোমাতা,
একটু মানুষ করো এদের বিধাতা।
মা,বোন বিলকুল ভুলে যায় পশু,
উনিশ, বাইশ খায়,বাদ যায়নাকো শিশু।
কামান্ধ নরকের কীট বাঁচে ওই আশে,
মাংসল নারীর গন্ধ বড় ভালোবাসে।
সহস্র পাপেও এরা বুক ঠুকে থাকে,
রাজনীতি এনাদের সমাদরে ডাকে।
মানুষের ছদ্মবেশে শয়তান এরা,
সহজসাধ‍্য নয় এদেরকে ধরা।
তাই শেষে ভগবানে ভরসাটা রাখি,
জনগণ চোখ খুলে জেগে ওঠ দেখি।
সবে মিলে বিচারক সেজে কাজ করি,
প্রচণ্ড আঘাতে ভাঙি অন‍্যায় জারিজুরি।
যা কিছু অবিচার হবে এই সমাজেতে,
বিধি মেনে দ্রুত বিচার হোক আদালতে।
ন‍্যায় চাই সর্বোপরি নারীর সম্মান,
না হলে তলিয়ে যাবে সমাজের মান।
সম্ভ্রম,শ্রদ্ধা দিয়ে মায়ের জাতিকে,
বড়ো করে রাখি চলো সবাকার থেকে।





ফরাসী বিপ্লব
উমর ফারুক

প্রাক বিপ্লব ও তাঁর একটি চিত্রে দেখেছি
সোনালী রঙের ঊষা আঁধারে ঢাকছে—
বলি তখনও হয়নি মানুষের,
বরং আরও গভীরভাবে প্রবেশ করে
এগিয়ে যেতে লাগল কিছুটা সময় ।
উদাস জনবিচ্ছিন্ন করা রাজার বিবরণ
একজন চিন্তশীল মানুষকে বিপাকে ফেলে।

সভ্যতার মায়াজাল সমাদৃত কতটা?
চেতনার সাথে মানুষ  বিবেচনা করেছে
বিপ্লব তখনও আসেনি ফ্রান্সে।
কেবলই  আরও গভীরভাবে
আঁধার নেমে আসলো ....
জামাটাও বদলানো হলো না রাজার !
একেবারেই কাছাকাছি বিপ্লব ফ্রান্সে।
সে বস্তুর অনেক বড়ই অভাব ছিল 
শ্রমিকদের মাথায়  করের বোঝা চাপলো  ।
জোগার করবে সম্পদ হিসেবে  ! 

এবার একটু বিজ্ঞরা দ্রুত নড়ে বসল
বিস্ময় নিয়ে কারো চোখের দিকে
তাকাতে পারেনি রাজা।
জনতা মাটি ফুঁড়ে বেড়িয়ে এসেই
বাস্তিলে আঘাত ! পতনের পর সেটা
শান্তির আলয় হয়ে উঠল।









সাম্যবাদ
          সাফরিদ সেখ

সাম্যবাদ আমাদের দিয়েছে অধিকার ।
জমিতে চাষ করার স্বাধীন চিন্তা-চেতনা ।
আমরা মনের আনন্দে শত কষ্ট মেনে নিয়েছি।
চাষী বলে আমরা গর্বিত, হাস্য ভাব সদা।
পুঁজিবাদ তুমি কেড়ে নিয়েছো মাটির অধিকার।
জমিতে চাষ করার যত মনন ও চিন্তা।
তুমি আমাদের বুকে মারছ পাথর পারছো যত ।
আমরা সইছি তত পারছি
যত।
পুঁজিবাদ তোমার লেলিহান শিখা এত তীব্র,
এত বিষাক্ত কিভাবে সৈব বলো!
দাবানল পুঁড়িয়ে ফের একটি একটি বনানী
তুমি পুঁড়িয়ে দাও বিশ্বকে নিমিষে।

ভানুর কিরণে কম বেশি সবাই দগ্ধ।
তোমাদের তেজে দলিত শ্রমজীবী নিষ্পেষিত।
তোমার হিংস্র রূপ দেশ মহাদেশ ছাড়িয়ে
উঠিয়াছে মহাপৃথিবীর ঊর্ধ্বলোকে,মহাবিশ্ব।

টাটা বিড়লা প্রীতি তোমাদের রীতি।
নর্দমা কয়লা খাদান শ্রমিকের গতি।
তেলামাথাই তেল ,কর্পোরেট স্বার্থ দেখো
গরিব হলে চিন্তা নাই, লাশের সংখ্যা নয় বেশি।



ছড়া
ঘুরতে যাবার মজা
     কনিকা রায়

সাজছে দেখ দুই বোন
লিপস্টিক , লাইনারে,
ভাই টি তখন বলছে হেসে কে দেখবি আয়নারে।

সেজেগুজে যাবো মোরা,
যাবো মামার বাড়ি,
ভাই টি এবার বলছে রেগে -
সাজ না তারা তারি।

গাড়ি গুলো সব গেলো চলে,
হাঁপিয়ে গেছি তোদের বোলে,
মেয়েরা এতো সাজে কেনো?
লাগে কেমন ?
ঠিক পেত্নি যেমন।




জিজ্ঞাস্য
        এমাজদ্দিন সেখ

￰মানবদেহী অমানুষ গুলো ,
মনীষার  জিভ  কেটে নিয়েছে ,
যেন আর কথা বলতে না পারে l

মানবদেহী অমানুষ গুলো ,
মনীষার শিরদাঁড়া  ভেঙে দিয়েছে ;
যেন আর মাথা তুলতে না পারে l

  মানবদেহী  হায়েনা গুলো ,...
মনীষার পা পক্ষাঘাতগ্রস্থ  করেছে ;
যেন আর দাঁড়িয়ে চলতে না পারে l

পারেনি l
মনীষা আর বলতে পারেনি !
বোনটি  আর মাথা তুলতে পারেনি !
ভারত কন্যা আর দাঁড়িয়ে চলতে পারেনি !
তবু অপরাধী ভয়ে তার কায়া জ্বালিয়ে  দিয়েছে ;..
তার চিহ্ন ও রাখেনি  !!

কিন্তু ;
আমার ? তোমার ?আমাদের ? ...
আমাদের জিভ এখনও অক্ষত  !
আমরা কি কথা বলবো না ?
আমাদের শিরদাঁড়া আজও ভেঙে যায়নি !
তবুও কি মাথা তুলবো  না ?
পা দু'টো  এখনও সচল  !
তবুও কি উঠে দাঁড়িয়ে চলবো  না ?
কে জানে কবে ;...
আমার জিভ , আমার শিরদাঁড়া , আমার পা .....
তার আগে আমি কি মানুষের মতো বাঁচবো না ?
অন্যায় দেখেও নীরবে যে ইন্ধন যোগায় তাকে তো মানুষ বলে না !!




         একান্নবর্তী
         পিনাকী  মুখার্জী
  
               ছড়িয়ে  পড়া  স্বপ্ন  গুলো 
                    বাঁচবে  তেমন  করে  !!
                মনের  ঘরটা  অগোছালো  ঠিক
                     থাকবে  যেমন  করে  !!

              রামধনুরই  রঙের  বাহার  যখন
                     সাদায়  বিলাপ  করে  !!
                 প্রিজম  কখনো জলের কণা
                      ইচ্ছে   পূরণ  করে  !!

            স্বরবর্ণ  ব্যঞ্জনবর্ণ , আজকে  মজা
                   দেখনা  দাঁড়িয়ে   দূরে  !!
               ভাবনা   প্রকাশ  তোদের  বিনা
                    কেমনে  গুমরে  মরে  !!

                লক্ষ   তারা   দূর  হতে
                 কত  ,  আলোকবর্ষ  দূরে  !!
                   তবু   মনে- মনে   বাঁধা
               নিউটনে  ,  যৌথ  পরিবারে  !!







দোসর
রঞ্জনা রায়

আমার হৃদয় জুড়ে পাশাপাশি শুয়ে আছে
অনেক স্বপ্ন আর নিঃসঙ্গ যন্ত্রণার শব ।
স্বপ্নেরা উন্মুখ হয়  মৃগনাভি গন্ধে
নষ্ট গোলাপের বাস্তব প্রান্তরে ।

বিকর্ষণে  দগ্ধ  আমার ঝলসানো হাতে
তুমি তুলে দিলে সবুজ অনুতাপ পত্র ।
কবর খুঁড়তেই হবে বুকের গভীরে
আমার সব যন্ত্রনা শান্তি উত্তাপ চায়
একটু  সুস্থিত  নিরাপদ  আশ্রয়
বিসর্জিত প্রতিমা চলেছে গঙ্গা যাত্রায় ।

কবরে দিয়েছি মাটি
আমার স্বপ্ন আর যন্ত্রনা
এখন অন্ধকারে  চুম্বিত স্বজন ।









বধ্য শিশু
গোপাল বিশ্বাস

হরিয়ানায়
গহনায়
দলিত শিশু হত্যা পুলিশেরা পিটিয়ে মারে
ছোট লোকের বাচ্ছা  !

দলিত শিশু কি
শেয়াল ছানা ?
জীবন মূল্যহীন  !
মায়ের কোল খালি করে
সাপুড়ে বাজায় বিন  l

নিরাপদ আশ্রয়ে
বিষধরের ফোঁস,
রক্ত ঝরে লাশ
ঝড় ওঠুক প্রতিবাদের
খুনির হোক ফাঁস  l

দলিত লোকের
গন হত্যা
কংস রাজের খেলা
খেলার মাঝেই লুকিয়ে আছে
দলিত নিধন মেলা

চারদিক কান্না
ষড়যন্ত্র
শিশু হত্যার রঙ ভূমি
বাবা সাহেব এসো আবার
ভারতবর্ষে তুমি  l

কেউ বলে আত্মহত্যা
গোপনেই খুন
জেগে ঘুমায় প্রশাসন
বুকে লাগে আগুন  l

কি অপরাধে মৃত্যু দণ্ড
কোমল মনের শিশু ?
দলিত শিশুরাই বধ্য
যেন ভগবান জীশু  l



কান্ত বুড়ো
      আব্দুল রাহাজ

এক মাথা চুল
দানব মতো দেখতে
যাচ্ছে ওই পথ দিয়ে।
ধপ ধপ করে আওয়াজ হচ্ছে
পথের লোক সব হাঁ করে  তার দিকে।
ও পাড়ার জটায় বলল আরে আরে ও যে কান্ত বুড়ো যে।
সবাই দেখে হাহাহা করে উঠলো বটে
যেইনা একবার ফিরল কান্ত বুড়ো
এমনি সব উল্টে গেল উলাট পুরান হয়ে।
ও পাড়ার রহিম আলী টুনুরা দেখবে বলে বুড়ো কে লুকিয়ে আছে ওই গাছ তলাতে।
যেইনা সামনে এলো দৌড় দিল চিত্রা নদীর পাড়ে।
কান্ত বুড়ো কান্ত বুড়ো তুমি তো বেজায় রসিক
ছোট্ট বন্ধুদের কাছে।






হারানো শৈশব
          বিপ্লব গোস্বামী

আজো মনে পড়ে
হারানো শৈশব
অনন্দ হাসি-খুশি
দুষ্টামি সব।
লুকোচুরি,ছোঁয়াছুয়ি
আরো কত খেলা
ছোটাছুটি হইহুল্লোড়ে
কাটত সারা বেলা।
ঝড়ের রাতের প্রহরগুলো
কষ্টে কাটাতাম
ভোরে উঠে সবার আগে
আম কুড়োতাম।
কবাড়ি,বন্দি,হাডুডু
আরো যত খেলা
কুমির খেলা,দৌড়-ঝাপে
ফুরিয়ে যেত বেলা।
বন্ধুর সাথে ঝগড়া ঝাটি
রোজ দিনই হত
একটু পরেই ভুলে গিয়ে
মিল হয়ে যেত।
পাড়ার যত ছেলে মেয়ে
এক সাথে খেলতাম
এক সাথে স্কুলে যেতাম
এক সাথে চলতাম।
বাবার ধমক মায়ের স্নেহে
কেটে যেত বেলা
আর কি ফিরে পাবো
সেই সোনালী ছেলেবেলা ।





দিল্লীতে পূর্ণিমা চাঁদ
           অঞ্জলি দে নন্দী, মম

আমার নিরিবিলি ছাদ।
আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ।
দেখে দেখে দেখে
মেটে না সাধ।
দৃষ্টিতে ওর আসাযাওয়া অবাধ।
দিল্লীতে ওর আলো ঢোকে এঁকেবেঁকে।
উচ্চ অট্টালিকার বাধা।
ঘন জনবহুল প্রচুর প্রাসাদ।
যেন কাঠিণ্যের গোলক ধাঁধা।
তবুও জ্যোৎস্না আপনারে ছড়িয়ে দেয়।
মন কেড়ে নেয়।
নিশা নবরূপ পায়।
রাজধানী ঊর্ধ্বে চায়।
আমি ছাদে হাঁটি ধীর পা'য়।
হাওয়া লাগে গা'য়।
চন্দ্রালোক নাওয়ায় কায়।
হৃদয় অকারণেই পিছনে ধায়।
কন্ঠ গায়,
সেই সে পুরোনো গান, বাংলায়।
এই রাত তোমার আমার.....
নিশি রাত বাঁকা চাঁদ.....
ঘুম ঘুম চাঁদ........
স্মৃতির গতি কভু নয় থামার।
অন্তর আবেগের অঞ্জলি দেয়।
বর্তমান আবেশে আপন করে নেয়।




কবিতা,:
     মানুষের জন্য  !
     আসরাফ আলী সেখ

আকাশ তারায় , চাঁদে
রামধনু, তে নক্ষত্র ঝাঁকে ছায়া পথে ,
তরফে তরফে সাজানো ,

মানুষ নেই !

বাতাসে প্রানের গুঞ্জন
আনাগোনা সুবাসের ,
গানের তাল ভেসে
বেড়ায় ,

মানুষ নেই,!

জলে জলপরী ,মাছ
ডলফিন , অক্টোপাস ,
ঝিনুকের বুকে মুক্ত!

মানুষ নেই !

পাহাড়ে গায়ে গোলাপ
মিছিল , ঝর্ণার নাচ ,হেলে দুলে নদী
চলে , কোকিল , ডেকে চলে , বৌ কথা ক ও , বোল তেড়ে আসে,

মানুষ নেই !

হাতি ঘোড়া নস্কর ,
সিংহাসন , দিগন্ত
খোলা রাজত্ব !

মানুষ নেই!

বসন্তের ফুল গাছে গাছে, খেজুর , আঙ্গুর
জুলে আছে , অপ্সরা
চুল খুলে হেলান দিয়ে
আকুলি বিকুলি তে
পুড়ছে ,

রাজপুত্র নেই !

হাতির পিঠে , সখি সাথী , রাজ সজ্জা
রাজপুত্র বিচলিত
কি চাই যেন !

রাজকন্যা নেই !

নদীর ঘাটে কলসি কাঁখে রাধা চলে ,
ছলাত ছলাত ঢেউ ওঠে নদীর জলে ,

কৃষ্ণ নেই !

রাধা আছে কৃষ্ণ
আছে বাঁশি নেই !
কেমনে তাজমহল
হবে
প্রিয় ?






কবিতা : মনের কথা!
বিশ্বজিৎ কর

তোমার জন্য কষ্ট রেখে যাব না -
তোমার জন্য থাকবে এক হৃদয় সুখস্মৃতি!
বিষণ্ণ দুপুরে আমি হব ভাবনাসখা,একান্ত দু'জনে!
যদি চোখে জল আসে,
তুমিময় কবিতা দিয়ে মুছে নিও!
তোমার সন্ধ্যাপুজোর শঙ্খধ্বনি শুনতে পাই,
নীলকন্ঠ পাখি সেই সুরে গান করে -
তোমার ভালবাসার দাঁড়ে বসে!
এই শুনছো,ওকে কোনদিন আঘাত কোরো না!




   কেউ আসে না শিফনবাড়ি
     
             হামিদুল ইসলাম
                
কবিতাগুলো পুড়ে যাচ্ছে
প্রতিদিন
বিকট ধোঁয়া
ধোঁয়ায় ঢাকছে আকাশ
সবাইকে ডাকছি। সাড়া নেই  ।।

নিঃসাড়ে পুড়ে যাচ্ছে
কবিতার বই
ঘৃণা আর বিদ্বেষ যাদের মনে
তারা প্রতিদিন পোড়ায় কবিতার বই
প্রতিদিন পোড়ায় আমাকে  ।।

আমি এখন কবিতা
কবিতার বই
আমার বারো ঘর তেরো উঠোন
জোছনা রাত
তবু আগুন নেভাতে আসে না কেউ  
।।
আসলে এ যুগের কবিতা
পছন্দ নয় অনেকের কাছে
বেমানান সব স্মৃতিকথা
পাল্টে যাচ্ছে কবিতার ইতিহাস
তাই কবিতা পুড়লে কেউ আসে না শিফনবাড়ি  ।।








আমি বলছি
       শংকর হালদার

যখন তোমরা স্বাধীনতা আঁকো
রঙ তুলির আপন টানে,
খোশমেজাজে লেখনি চলে
অর্জুনেরই তীক্ষ্ম বাণে ।

স্বাধীন তকমা গায়ে লেপে পশুচারন পোশাকে মুড়ে,
মরে মেরে সমাজ ক্ষয়
বাড়ায় ব্যসন রেস ধরে ।

সুখ পেলোনা স্বাধীনতা
ওদের গায়ের গন্ধে,
ছুটছে দেশ নেশার ঘোরে
কুয়াশা মাখা ছন্দে ।

এ কেমন দেশে করছি বাস
মূল্য দিয়ে মূল্যায়ন!
যাদের শ্রমে সমাজ গড়া
শোণিত ধারায় আপ্যায়ন ।

স্বাধীন যারা ধন ঐশ্বর্যে
মনের পাতায় রাবন,
বেঁচে থাকা কী স্বাধীন হওয়া?
স্বাধীনতার কারন!

স্বাধীন হওয়া কী এতই সহজ
মনে প্রাণে সাম্য নেই,
খেয়াল খুশির নাগর দোলায়
স্বাধীনতার মূল্য নেই ।

পেটের দায়ে মরছে ওরা
স্বাধীন বলে করছ বড়াই,
তোমার ন্যায় ওরা ও মানুষ
অভাব কেন ওদের ভাই?

বলছি আমি দৃঢ় কণ্ঠে
আগস্ট মানে দুঃস্বপ্নের রাত,
মূল্য তাদের দিল'না কেউ
ফাঁসির মঞ্চে অকালে প্রাণপাত ।

নিছক স্বপ্নে বিষন্ন মন
ভারাক্রান্ত এক আশা,
অথই প্রাণের বলিদানে
অদ্য সমাজে কীটের বাসা ।




মাটি
অনিন্দ্য পাল

মাটিতে হাত লেগে গেলে ধুয়ে নিও
ঘাসের সঙ্গে নিও নাগরিক আড়ি
অথচ বেঁচে আছি এই সব ধুকপুক প্রাণ
এই মাটিই তো জীবনের একমাত্র বাড়ি,

কদাকার, বিবর্ণ, কর্কশ তবু এত প্রাণ আছে লুকিয়ে
কি আছে, কি নেই, সব উত্তর রেখেছ গুছিয়ে
এত যে সবুজ, এত যে রক্ত, তুমি প্রাণহীন মাটি
এত যে ফুল, প্রেম আর ভালোবাসার জামবাটি

শরীর খুঁড়ে দিয়েছ রূপ রস আর সুগন্ধ
এত প্রাণহীন তবু কি করে তুমিই যোগাও বাঁচার মন্ত্র?





চোখ
      বদরুদ্দোজা শেখু
-----------------------------------

যত্ত দোষ চোখ দু'টোর-ই , দেখতে পাইনা ভালো
যা যা দেখছি ,সবই যেন ঝাপসা আবছালো
সবই ক্যামন ছায়া -ছায়া নিরাবয়ব কায়া,
তবু কোথাও আটকে থাকে অস্তিত্বের মায়া—
মায়ার শিকড় গাছের মতো অনেক তলের
টান
চাষীর চোখে যেমন থাকে সোনালি পাকা ধান
ধান শুধু ধান স্বপ্নের গান মাঠের পরে মাঠ
উপচে' পড়ে পেরিয়ে যেতে উঠান চৌকাঠ ।
সেই চোখেরই এমন দশা ? তৃতীয় নেত্র কই ?
যাওয়ার আগে জ্বালিয়ে দিও সার সম্বল ওই
অনুভবের পিদিমটুকু  ,প্রভু , আমি তো নই
তোমার প্রিয় হেলেন কেলার, এই অবেলার চোখ
যেন অন্ততঃ কিছুটা পায় হেলেনের আলোক !!
                                 





কবিতা
ভিত
       মিনতি গোস্বামী

ভিতটা ঠিক না হলে
টিকবে না তোমার ঘর
ছাদে মালমশলা ঢাললেও
স ইতে পারবেনা ঝড়।

ভিত করার আগেই
করতে হবে মনস্থির
সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে
হয়না যেন একচুল চিড়।

ভিত ভালো না হলে
হবেই জেনো ধ্বংস
নিছক ভালোবাসায় বাঁচেনা ভিত
ভিত হয় তখন নির্মম কংস।










1 টি মন্তব্য:

  1. খুব সুন্দর লেখা গুলো । আমার লেখাকে স্থান দেয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ । সামগ্রিক ভাবে খুব সুন্দর আয়োজন । নিরন্তর শুভকামনা ♥️ উপকন্ঠর জন্য

    উত্তরমুছুন