উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 03/10/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 03/10/2020
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা
উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 03/10/2020 |
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-03/10/2020, শনিবার
সময় :- সন্ধ্যা 5 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
হাইকু কবিতা
শংকর হালদার
০১।
মাটির কান্না
ছন্দ ডোবে আঁধারে
দুর্ভোগ নিয়ে ।
০১।
দিনের শেষে
রাতের মায়া বাড়ে
নির্জনে একা ।
০৩।
তব আকাশ
মেঘ চাদরে ঢাকা
বিষাদ মন ।
০৪।
তব শাসন
আশীষ মনে হয়
স্মরণে কাঁদি ।
০৫।
হিন্দোল কাশ
জনে জনে মেতেছে
লগন এল ।
গান
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
ডাকবো না ডাকবো না না
অমন করে ফোন করে আর
ডাক পাঠাবো না
না না না।
ভেবেছিলাম যেমন ছিলে
আজও তুমি তেমনই আছো
না না না
আমার ভাবনায় ছিল ভুল
তাইতো আমায় অজুহাতে
ঠেলে দিলে
ফুলের বনে মধু পানে যেতে গিয়ে
হোঁচট খেলাম-- ভুলবোনা না
অমন করে আর কোনো দিন
ডাকবো না না
না না না।
ভালো তুমি বেসে ছিলে
হৃদয় দিয়ে জড়িয়ে ছিলে
এখন তোমার সংসারে
এসেছে ছেলে মেয়ে
তাই তাদের অলক্ষ্যে
প্রেম আর ভাল্লাগছে না
আমি আজ হয়েছি পর
তোমার প্রেমের পাবো না ঘর
পৃথিবী যেমন বদলে গেছে
তুমিও তেমনি বদলে গেছ
বুঝতে পারিনি
ভুলতে পারিনি তোমার অতীত স্মৃতি
না না না
অমন করে আর তোমাকে
ডাক পাঠাবো না
না না না।
কবে পাবে মুক্তি
অনাদি মুখার্জি
স্বাধীন দেশ স্বাধীন পুরুষ ,
তবুও কেনো মা তোর গর্ভে ,
থাকে কেনো পড়ে নারী লাশ?
পরাধীন আছে আজো ও নারী জীবন ,
অকালে মতোন ঝরে যায় তাদের প্রাণ !
ভিড়ে মাঝে রাস্তার ধারে দেখছো তুমি নারী কে ,
বেশ্যা বলে ভাবো কেনো মনে ?
বলি ওহে পুরুষ সমাজ যাকে তুই ভাবিস ঐ চোখে ,
সেই নারী তো তোর জীবনের দেখালো পৃথিবীর আলো যে !
পশ্চাতে ফিরে দেখবে যখন,
নারী কোথায় দোষ !
কে কাহারে দোষ দিয়ে যায় ,
নারী আছে আজ সবার ঘরে !
নেশার ঘোরে থাকে পুরুষ ,
রাস্তায় খায় গড়াগড়ি,
তখন তোমার ঘরণী লজ্জায় মরে,
তোমার বাড়াবাড়ি !
সহ্য শক্তির আরাধনা একমাত্র নারী,
পুরুষেরা তো হয় কাপুরুষ ,
তাই তো তারা দিবারাত্রি নারী কে করে বেহুঁশ !
গর্ভধারণকারী মাতার সন্মান দিও গো ঐ পুরুষ সমাজ ,
এই দেশে তে কবে পাবে নারী দের মুক্তি উপায় !
কেন নারী হয় ধর্ষিতা
বিপ্লব গোস্বামী
একবিংশ শতক এখন
সভ্যতার যুগ সন্ধিক্ষণ।
তবে কেন দিকে দিকে
এত নারী ধর্ষণ ?
আধুনিক যুগে এ কি
এত অধর্মীর উত্থান !
কোথা হতে এল
ভবে এত শয়তান ?
আজ সাধু,গুরু,ছাত্র সব
হয়ে গেলো নারী ভোগী।
রাজনেতা হতে বকাটে ছেলে
সবাই একই রোগের রোগী।
ভুলে যায় ওরা
নারী ভগিনী ,নারী মেয়ে
নারী মায়েরি জাতি।
নিজেরি বোন,নিজেরি মেয়ে
নিজেরি কোন জ্ঞাতি।
ধর্ষিতা হলে নারী
রাজনেতা মিডিয়াতে এসে
শুনায় ন্যায়ের বাণী।
সত্য কি ন্যায় পায় সে নারী
মুছু যায় কি তার গ্লানি ?
জনগণ মিলে ন্যায় চাইয়া
করে পথ অবরোধ।
জননেতা এসে মিষ্টি ভাষে
করে যায় কর্তব্য শোধ।
আদিকালে ছিল নারী বন্দী
নারী ছিল দাসী।
একালতো সাম্যের যুগ
সেকাল হয়েছে বাসী।
একালে শাসনে নারী,
ন্যায়ালয়ে নারী,সর্বজয়া নারী।
তবে কেন ন্যায় পায় না নারী
শাস্তি পায় না ধর্ষণকারী ?
আদি কাল হতে একাল অবধি
কত নারী হলো অবতার।
তবু কেন বন্ধ হয় না ধর্ষণ
নারী পায় না অধিকার ?
ছড়ার গান
গোপাল বিশ্বাস
লিখবো ছড়া
গাঁথবো মালা
ছড়ার তালে নেচে যাবো
সকাল সন্ধ্যে বেলা l
ছড়ার গানে
ফুল ফোটে
জ্বলে আলোক বাতি
ছড়ার গানে খুঁজে পাই
ছোট বেলার সাথী l
খোকা খোকী কাটছে ছড়া
মিষ্টি মধুর সুর
আঁধার রাত কেটে যায়
পাখির ডাকে ভোর l
ছড়ার ছন্দে এমন জাদু
দুঃখ যে যাই ভুলে
শিশুরা ছবি এঁকে
হৃদয় ভরে তোলে l
ছড়ার তালে
মাথা দোলে
পথে নাচে বাউল
পথে পথে ছড়িয়ে পড়ুক
ভালোবাসার আগুন l
চক্র বাড়ি
আব্দুল রাহাজ
একটা ছোট্ট গ্রামের পশ্চিম দিকে সবুজ গাছপালার ভেতরে একটা বাড়ি ছিল নামটি ছিল চক্র বাড়ি। গ্রামের প্রান্তিক মানুষ গুলো আজীবন কাল ধরে এই নামেই শুনে আসছে অবশ্য এ বাড়িতে এখন আর কেউ থাকেনা সবাই চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে এদের আর পরবর্তী প্রজন্ম এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই সেজন্য গাছপালায় ঢেকে গিয়েছে চক্র বাড়ির। গ্রামের মানুষেরা বলে রাতের বেলা নাকি খুব অদ্ভুত হয়ে ওঠে চক্র বাড়ি। ওপাড়ার আর লালু ভুলু রা সেদিন রাতে গিয়েছিল গঞ্জে হাট বাজার করতে সেদিন একটু ফিরতে রাত হলো ওদের ওরা বিভিন্ন গল্প করতে করতে চক্র বাড়ির পাশ দিয়ে আসতে আসতে দেখে চক্র বাড়িতে আলো জ্বলছে এর আগে তো কোনদিন জ্বলেনি ওরা এই গ্রামে নতুন এসেছে কদিন হলো তাই ব্যাপারটা জানতো না পরের দিন সকাল বেলা গ্রামের খগেন দাদার কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো প্রতিরাতেই অদ্ভুতভাবে আলো জ্বলে ওঠে আর সকাল হলে নিভে যায় আরো কত কি চক্র বাড়ির রহস্য আছে কি জানি বাবা। সেদিন ছিল পূর্ণিমা রাত গ্রামের মানুষ সবাই বাইরে বেরিয়ে একটু ঘুরে বেড়াচ্ছিল চারিদিকে হঠাৎ চক্র বাড়ি থেকে একটা আওয়াজ আসতে শুরু করে হাহাহাহা গ্রামের মানুষ সবাই ভয় পেয়ে গেল তারপর চক্র বাড়ি ঘুরতে আরম্ভ করলোনা যেন লাট্টুর মত সবাই যে যার ঘরে ঢুকে গেল নতুন লোক গুলো খুবই স্পষ্ট ভাবে তারপর সকাল হতেই আবার সব স্বাভাবিক চক্র বাড়ি একদম ঠিকঠাক আস্তে আস্তে গ্রামের মানুষ চক্র বাড়ি কে কোথাও যেন হানাবাড়ি হিসেবে ধরে নিল পর থেকে ওই পথ দিয়ে গ্রামের সবাই যাওয়া বন্ধ করলো। আস্তে আস্তে চক্র বাড়ি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে থাকলো একসময় সবুজ গাছপালায় চক্র বাড়ি সূর্যের আলোর মত মাটিতে মিশে গেল আর সারা গ্রামের লোক চক্র বাড়িকে সারা জীবন ভুতের হানাবাড়ি হিসেবে মনে রাখলো।
পরাজিত পুরুষ
আসরাফ আলী সেখ
হ্যালো হ্যালো ,,,,
মামা দুপুরে একটু
এসো না , ওরা
আসবে দেখতে আমায় বিয়ে দেবে
বলে , তিন জনে
বাইক চেপে এলো
নাগাত বিকেলে ,
খাওয়া দাওয়া ভালো ই হলো শো পাঁচেক টাকা হাতে দিও শরীর
ভাষা বুঝিয়ে দিল
ইংরেজি শিক্ষিত বেকার প্রেম বেকার জ্বালায় পুড়ে গেলো ।
গণিত শিক্ষত প্রেমিকা ইস্কুলের টিচার কথা দিয়ে ছিল
মিশন স্কুলে করবো তোমার সনে বিয়ে ,
তুমি চাকরি পেয়ে গেলে ভুলো না প্রেম
আমার মনের ,
আমি চাকরি
পেলে আগে করবো
তোমার সাথে বিয়ে ,
বাবা মায়ের পছন্দ না বেকার ছেলেটা , মেয়ে দিদু মনি সব ভুলে গিয়ে ,
বিয়ে করেছে
স্কুলের ইংরেজি মাষ্টার ।
বেকার ছেলে ইংরেজি শিখা হয়েছে
আজ ফাঁসি কাঠের
সাজা প্রাপ্ত ধর্ষক ।।
কবিতা :
এগিয়ে চলো!
বিশ্বজিৎ কর
নৌকা ছেড়ে দাও,
ওকে চলতে দাও,নিজের মতো!
ঈশান কোণে মেঘ জমার আগে, চলো ভোরের পাখির সুরে গলা মিলিয়ে এগিয়ে চলি!
আমাদের ঘনিষ্ঠতার সুবাসে নৌকা এগিয়ে চলবে!
কেউ হাসবে,কেউ জ্বলবে,আবার কেউ বা টিপ্পনী....!
সময় এসে গেছে, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের চোখ উপড়ে ফেল!
নাটুকেপনা বিসর্জিত হোক্, ভালবাসতে শেখো,যেভাবেই হোক্!
তুমি না থাকলে
হামিদুল ইসলাম
তোমার জন্যে
সুখ আনি
শান্তি আনি
দুহাতের মুঠোয়
দুহাত শক্ত করে ধরি যেনো পালিয়ে না যাও ।
বড়ো ভয় করে আমার
সাহস আনি
শৌর্য আনি
হৃদয়ের বোঁটায়
তুমি ছাড়া এ জীবন নিঃসঙ্গ। শূণ্যতাও ।
কখনো সাহসে পেরিয়ে যাই নদী
ভয়ংকর হাওয়া
ইতিহাস উলোট পালোট
বিকেলে ভোরের সুগন্ধি ছড়ায়
ছুটে আসে প্রতিদিন রঙ বেরঙের প্রজাপতি ।
তুমি না থাকলে
আমি ভীরু
জড়
অচল পাথর
অথচ তুমি থাকলে আমি হয়ে যাই কালাপাহাড় ।
আমার হাতে জ্বলে ওঠে হৃদয়ের মোমবাতি ।
পুষ্পরাজি
জুয়েল রুহানী
কী অপরূপ সৃষ্টি তোমার-
হে রহীম-রহমান,
শেষ করা তো যায় না গেয়ে
তোমার গুনগান!
সৃষ্টি করে পুষ্পরাজি-
ছড়িয়েছ রূপ,
নিখূত সৃষ্টি হে কারিগর -
রয়েছে নিশ্চুপ!
গন্ধ-বর্ণ-ছন্দ এঁটে-
করেছো সৃজন,
মোদের তরে নাজ-নেয়ামত
এত আয়োজন!
কাঁপন-ধরা নিশিযাপন
বদরুদ্দোজা শেখু
আজ সারাদিন ভীষণ গুমোট, ধূমোট ধূমোট সন্ধ্যা
ভূমন্ডলের বর্ষারাণীর মেঘগুলো কি বন্ধ্যা ?
ভাদ্র মাসের দহন-জ্বালায় জ্বলছে খানাখন্দ
আকাশ জুড়ে ঝরছে আগুন , হাওয়াবাতাস বন্ধ
দ্বন্দ্ব-দ্বিধার আমরা পাতক চাতক সাধু সন্ত
কেউ জানি না কখন্ হবে এই গুমোটের অন্ত !
দিগ্বলয়ে বিজুরী-চমক আকাশটাকে
চিরছে
থেকে থেকেই , এঁকেবেঁকেই ঈশান কোণে ফিরছে,
রাত দুপুরে মুহুর্মুহু বিজুরীবালা নাচলো
চোখে মুখে ধাঁধাঁর আঁধার, বজ্রকাহন কাঁপলো-কাঁপলো
বাজ পড়লো মুহুর্মুহু , পিলে কাঁপলো চমকে'
কমণ্ডলুর কান্নাহাসি চমকে' গেল থমকে'
ত্রস্ত পশু পাখি মানুষ ফুঁস-তরাসের রজনী
ঘন্টাখানেক সে তাণ্ডবে কাঁপলো সারা মেদিনী
কাঁপলো মনমর্জিয়ার লতা কল্পকথাদ্রুম গো
ধূম লেগেছে আসমানে আজ ,ছুটলো ধড়ের ঘুম গো !
বজ্র-বিদ্যুৎ তর্জন-গর্জন কুদরতির কাণ্ড
ঘটলো যতো , ঝরলো না ততো ঝড়বৃষ্টির ভাণ্ড ,
ওম শান্তি ওম শান্তি-- আপাততঃ শান্তি
মনে হলো, তবু কাটলো না গুমোটের ভোগান্তি,
ক্লান্তি এখন ঝিম ধরেছে বিজুরীবালার অঙ্গে
আপোসরফা করলো বুঝি বজ্রবালার সঙ্গে,
রঙ্গশালায় কালো পর্দা নামলো যখন নামলো
কাঁপন-ধরা নিশিযাপন থামলো এবার থামলো।।
থামলো কুদরতির আপদ সব জনপদ স্তব্ধ
এখন আমার মনের মধ্যে হাজার কথার শব্দ ,
নীড়হারা কোন্ পাখি কাঁদছে ? বাজছে আমার বক্ষে
হাসি কান্নায় পৃথিবীটাই মুড়ে আছে অলক্ষ্যে ,
চক্ষে আমার সখ্য নামে তন্দ্রাধামের প্রান্তে
দিনরজনীর জীবন ফুরোয় এসব টানতে টানতে . . .
ধর্ষণের পর
অনিন্দ্য পাল
যখনই
একজন নারী পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়
ঠিক তখনই
একটা সমাজও শোষকের পাশবালিশে পরিণত হয়
মেয়েটির নরম নগ্ন শরীর ও জঙ্ঘা-সন্ধিতে
পথভ্রষ্ট হয় উন্নয়নশীল গনতন্ত্রের অন্ধ সচেতনতা
তারপর
ধর্ষিতার বুকে মাথা রাখতে এগিয়ে আসে
গোঁড়া মানবতাবাদী কিছু লাজুক ধর্ষক
সহানুভূতির মোড়কে প্রকাশ করে
সুপ্ত রিরংসা
যেন তারা অপেক্ষায় ছিল
ধর্ষণটার
অতঃপর অপরিহার্য শোরগোল
অশক্ত বিচারপদ্ধতি কেড়ে নিতে থাকে একে একে
সমস্ত বর্তমান
ভবিষ্যৎ আটকে পড়ে ব্রেকিং নিউজে
সবশেষে জ্বলে ওঠে কয়েকটা মোমবাতি
আর
একটানে ছিঁড়ে ফেলা অন্তর্বাসের টুকরো।
বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :
কবিতা র রূপকল্প : ১২
রবীন্দ্র সমসাময়িক কবি --৩
সৌম্য ঘোষ
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
এই পর্বে আলোচনা করব সেই সব কবিদের কথা যারা পুরোপুরি রবীন্দ্র ছত্রছায়ায় আবির্ভূত হয়েছিলেন । ভাবে ,ভাষায় তাঁদের প্রধান ঋণ রবীন্দ্রনাথের কাছে। রবীন্দ্র ধারার একটি বিশেষ পর্বের তাঁরা অনুবর্তন করে চলেছিলেন । খেয়াল করেননি যে , রবীন্দ্রনাথ নিজেই নিজেকে ভেঙে নতুন করে বারে বারে রচনা করেছেন নতুন আঙ্গিক । এই রবীন্দ্র অনুসারী কবিদের সুধীন্দ্রনাথ দত্ত চিত্রল পতঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন । এরা বুঝতে পারেননি যে, রবীন্দ্রনাথের মায়াবী আসঙ্গ নিরাপদ নয়। বাংলার কবিতার ইতিহাসে এই রবীন্দ্র অনুরাগীদের প্রধান সার্থকতা তাঁদের এই আত্মলোপী পরিণাম পরবর্তীদের সাবধান করে দিতে পেরেছিল । এই কবি গোষ্ঠীতে ছিলেন----- করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৮৭৭-১৯৫৫), যতীন্দ্রমোহন বাগচী ( ১৮৭৭- ১৯৪৮), সতীশ চন্দ্র রায় (১৮৮২-১৯০৪), সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২-১৯২২), কুমুদ রঞ্জন মল্লিক (১৮৮৩-১৯৭০), কিরণ ধন চট্টোপাধ্যায় (১৮৮৭-১৯৩০), সাবিত্রী প্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় (১৮৮৮-১৯৬৫), এবং কালিদাস রায় (১৮৮৯-১৯৭৫) প্রভৃতি ।
করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দাম্পত্য প্রেমের কবি । তিনি প্রকৃতিরও কবি । বহির্জগতের তরঙ্গ বিক্ষোভ এই কবির প্রসন্ন ধ্যানকে বিঘ্নিত করেনি । তাঁর সঙ্গীতময় কবিতার মধ্যে একটা আচ্ছন্ন তন্ময়তা আছে।
যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবি মন, তাঁর কবিতা ভাবে ও ভাষায় বাস্তবিকই রবীন্দ্র পূজা । তাঁর স্বকীয়তা মেলে সমসাময়িক অনেক কবির মতো বাঙালির ঘরোয়া গার্হস্থ্য চিত্রণে । লৌকিক ছড়ার সৌরভে জড়ানো তাঁর কাজলা দিদি খুব জনপ্রিয় ছিল।
" মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই।"
যতীন্দ্রমোহনের "অন্ধবধূ " কবিতাটিও চমৎকার।
তাঁর কিছু কিছু কবিতা পুরাণের নতুন ভাষ্য , যদিও এক্ষেত্রে তিনি রবীন্দ্রনাথের পথ অনুসরণ করেছিলেন।
সতীশ চন্দ্র রায় রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রভাবে শান্তিনিকেতনে কবির সান্নিধ্যে গড়ে উঠেছিল তাঁর কবিসত্তা । অকাল প্রয়াণে তাঁর কাব্য প্রদীপটি কে তিনি জ্বালিয়ে রাখতে পারলেন না । এই প্রকৃতিপ্রেমিক লিখেছেন :
" সোনার সন্ধ্যার পর এলো রাত্রি , বিকশিত তারা
দিগন্ত মিলায় বনে নভস্তল চন্দ্রকলাহারা।
কালো অন্ধকার যেন কালো এক ভ্রমর বিপুল
আবরিয়া বসিয়াছে ধরণীর মধুময় ফুল !"
তাঁর "চন্ডালী" একটি চমৎকার কবিতা ।
কবি কুমুদ রঞ্জন রায় ছিলেন গ্রামের কবি । শহরবাস তাঁর কাছে মনে হয়েছে বনবাস । অজয় নদী তীরবর্তী গ্রাম ও প্রকৃতির সঙ্গে ছিল তাঁর জন্ম জন্মান্তরের সৌহার্দ্য । তাঁর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য সারল্য ,আন্তরিকতা ও দরদ । পল্লী প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে তাঁর কবিতায় মেলে দেশ অনুরাগ , ঐতিহ্য অনুরাগ । এই খাঁটি বাঙালি কবির কবিতায় পাই অনাড়ম্বর শুচিতা ।
রবীন্দ্র ছত্রছায়ায় রবীন্দ্র অনুসারী কবি গোষ্ঠীদের নেতৃস্থানীয় ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত । তিনি ছিলেন ছন্দের জাদুকর । সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন এই সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি । তাঁর কবিতায় আছে শব্দ মাধুর্য , ভাষার প্রসাধন, সর্বোপরি ছন্দ নির্মিতির কুশলতা । চিত্র ময়তা , ছন্দ বিলাস আর লঘু কল্পনার চপলতায় তাঁর কবিতা সমকালের পাঠকের মনোরঞ্জন করেছিল । সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় প্রকৃতি প্রেম, মানবতাবাদ, ঐতিহ্যানুরাগী ও দেশ প্রীতির প্রমাণ প্রচুর । এই কবি তাঁর কবিতার উপকরণ আহরণ করেছেন প্রকৃতির চিত্রশালা এবং পন্ডিতের পুঁথিশালা থেকে।
রবীন্দ্রনানুরাগী কবিরা ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমিক ,ফলত: পল্লী প্রেমিক । কিন্তু কিরণধন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন নাগরিক কবি । দাম্পত্য প্রেম নিয়ে যে কবিতা লেখার ধারা চলে আসছিল বিহারীলাল চক্রবর্তী থেকে কিরণধন সেই ধারার কবি । আটপৌরে ভাষায় তিনি গার্হস্থ্য প্রেমের মধুর খুনসুটির ছবি এঁকেছেন:
" বেলফুল চাইনা , জুঁইফুল দাও!
ও গানটা গেয়ো না , এই গানটা গাও !"
সাবিত্রী প্রসন্নও ছিলেন পল্লী প্রেমিক কবি । কিন্তু তিনি রোমান্টিক দৃষ্টিতে বাংলার পল্লীকে দেখেননি । মোহমুক্ত দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন তার বাস্তব রূপ । তাঁর কিছু কবিতায় প্রেমমুগ্ধ হৃদয়ের প্রকাশ আছে । কিন্তু সাবিত্রীপ্রসন্ন প্রধানত দেশানুরাগের কবি ।
কালিদাস রায়ের কবিতা কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, " বাংলাদেশের মাটির মতো স্নিগ্ধ ও শ্যামল" । তাঁর কাব্যগুলি পড়লে " বাংলার ছায়াশীতল নিভৃত আঙিনার তুলসী মঞ্চ ও মাধবী কুঞ্জ মনে পড়ে ।" এই দিক থেকে কুমুদ রঞ্জন মল্লিক এর সঙ্গে কালিদাস রায়ের মিল আছে । তাঁর কবিতায় পাই :
" আমি বাঙালির কবি ; বাঙ্গালীর অন্তরের কথা,
বাঙালির আশাতৃষ্ণা , স্মৃতি -স্বপ্ন, চিরন্তন ব্যথা
ছন্দে গেয়ে যাই আমি ।"
প্রথম মহাযুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় ঘটেছিল । জমিদারি উপস্বত্ব ভোগী এবং চাকুরীজীবী বাঙালি মধ্যবিত্তের স্থিতিশীল জীবনে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল । কিন্তু এই রবীন্দ্র প্রতিধ্বনিতে বধির রবীন্দ্র ছত্রছায়ায় লালিত কবিরা সেই সময়ের পরিস্থিতিকে বিচার করতে পারেননি । সেই সময় বাংলার ছায়াশীতল আঙিনায় ভাঙ্গন ধরেছিল, গ্রাম পতনের বীজ প্রবেশ করেছিল । কিন্তু এইসব রবীন্দ্রমুগ্ধ কবিরা সময়ের বিচারে অসমর্থ ছিলেন ।
বহু প্রবন্ধে পড়েছি, কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (১৮৮৭-১৯৫৪), কবি মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২) এবং কাজী নজরুল ইসলাম কে (১৮৯৯-১৯৭৬) রবীন্দ্র অনুসারী সমাজের অন্তর্গত করা হয়েছে । ভাষার ভঙ্গিতে ছন্দে ছন্দে তাঁরা রবীন্দ্র বৃত্তের বাইরে সব সময় যেতে পারেননি ঠিকই । কিন্তু তাঁদের ভাব জগত স্বতন্ত্র । তাঁদের কবি কণ্ঠস্বর স্বকীয় । তাঁরা অনিশ্চিত প্রশ্নসংকুল জীবনকে নিয়ে নতুন কাব্যধারার আবির্ভাব আসন্ন করেছিলেন, পূর্ব আভাস দিয়েছিলেন । রবীন্দ্রনাথের মাছিমারা অনুকরণ এর অর্থ হবে নিজেই মরা , একথা বুঝতে পেরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ সমসাময়িক যতীন্দ্রনাথ , মোহিতলাল এবং কাজী নজরুল ইসলাম । এই তিন কবি বাংলা কবিতার ইতিহাসের রবীন্দ্র পর্বের সঙ্গে আধুনিক পর্বের যথার্থ সেতু রচনা করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর আগে থেকেই তাঁরা শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রোত্তর পর্বের বাংলা কবিতার নান্দীপাঠ ।।
তেসরা
মম
তেসরা অক্টোবর। শনিবার। দিল্লীতে এখন অতি মনোরম আবহাওয়া। না ঠান্ডা। না গরম। ফুরফুরে হাওয়া বইছে। উইকেন্ডে বেড়ানোর অভ্যাসটা করোনার প্রকোপে বন্ধ ছিল। লক ডাউন। এবার তো একেবারে - " বাঁধা গরু ছাড়া পেয়েছে..... " চললাম তাই ভোরে ঘুম থেকে উঠে। আমাদের জার্মানী কারটায় বহুদিন চড়ে কোথাও যাইনি। ওটা যেন ডাকছে আমায় আকুল হয়ে, " ম্যাডাম জী! আমার সিটে বোসো! ব্লেট বাঁধ! গান শোনো! এ. সি. চালাও! আবার বন্ধ কর! উইন্ডোজ ওপেন কর! বাইরের দৃশ্য দেখ! আই মিস ইউ, ম্যাডাম জী! " আমরা চললাম জিম করবেট। হিমালয় বড় টানে! মৌন, পবিত্র, শুদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করি। মনপ্রাণ ভরে যায়।
সমুদ্র তোমার কাছে
মিনতি গোস্বামী
সমুদ্র তোমার কাছে এসেছি
ক'মাস যাপন করেছি বন্দীজীবন
প্রতিটা মূহুর্তে কুঁকড়ে গেছি আতঙ্কে,
ভেবেছি এই বুঝি এলো ডাক
অবশেষ বাঁধন ছেড়ে চলে এসেছি
সমুদ্র তোমার কাছে।
তুমি দেখো, তোমার কাছে আসতেই
আতঙ্কে ভোগা মনটা
কেমন স্বপ্নের ডানা মেলে
কিশোরীবেলার মত নেচে উঠলো।
প্রথমে পা, তারপর শরীর,শেষে
চিবুক স্পর্শ করে আমাকে
টেনে নিলে বুকের মাঝে।
আমার হাত ধরে নাচছো
ঢেউয়ের তালে তালে,
তোমার উষ্ণ অভ্যর্থনায়
ভুলে গেছি আতঙ্কের আবহ ।
এ যেন আমার নবজন্ম
ভাগ্যিস এলাম আমি
সমুদ্র তোমার কাছে।
ধর্ষিতার প্রতি
উমর ফারুক
মানুষ যখন করছে খেলা অমানুষের বেশে
জনম ধরে রাখবে তোমায় নিছক ছদ্মবেশে।
শিশুর শরীর কিম্বা কিশোর শরীর হলে হয়
মৃত্যু টা তো গোড়ার খেলা খেলে বিশ্বময়।
ধর্ষিতা বোন করেছে শয়ন বিচার দিল মেপে
বিচার হলে ঘোলা জলে উঠবে শরীর কেঁপে
রাজার মনে ইচ্ছে করে বাড়ুক অপরাধী
বিচার চেয়ে বোনের হয়ে রাজপথে দু'পা দিই
বর্বরতা বাড়ছে দেশে পশুর থেকেও বেশি
আমদানী তা হচ্ছে দেশে বর্বর পরদেশীর।
কাতল করে চলছে নিয়ম ইচ্ছে ঘুড়ি ওড়ায়
হায়েনা গুলো নির্জনেতে শক্ত কামড় বসায় ।
নষ্ট হয়ে পাঁপড়ী ফুলের সুভাস গেল চলে
মরচে ধরা সমাজ টা তো বিষম গ্যারাকলে!
কেমন এ যুগ শকুনি চোখ রাখে সদা খোলা
ধর্ষিত হয় মনটা কভু ভীত হয়ে পথ চলা?
পাপের ভাগী হউনি তুমি ছাড়লে অভিশাপ
জ্বলুক আগুন বাঁচুক আরো হাজার নিষ্পাপ।
তোমার চোখের স্বপ্নগুলো রঙিন হয়ে থাক
ধর্ষক বেশে রক্ষক দেশে তারা নিপাত যাক।
© সেক আসাদ আহমেদ
সম্পাদক, উপকণ্ঠ
0 comments: