উপকণ্ঠ এ পি জে আব্দুল কালাম সংখ্যা-2020
••• বিশেষ সংখ্যা •••
খবরের কাগজ বিক্রেতা থেকে রাষ্ট্রপতি
বিপ্লব গোস্বামী
খবরের কাজগ বিক্রেতা থেকে বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী, শেষে দেশের একাদশতম রাষ্ট্রপতি।না এ কোন সিনেমার গল্প নয়।এ কোন গল্প বা নাটকের নায়কের কথা নয়। সিনেমার গল্পকে বাস্তবে রূপ দেওয়া এক মহা নায়কের নাম এ.পি.জে আব্দুল কালাম।যিনি সমগ্ৰ ভারতবাসীর কাছে গর্ব।যার অনন্য কীর্তি ও দেশত্ববোধ প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে এক মহান অনুপ্রেরণা।
১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর অধুনা ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূল সংলগ্ন রামনাথস্বামী জেলার রামেশ্বরমে এক দরিদ্র তামিল মুসলমান মৎস্যজীবী পরিবারে আব্দুল কালামের জন্ম।তাঁর পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আব্দুল কালাম।তাঁর বাবার নাম জয়নুল আবেদিন ও মায়ের নাম অশিয়াম্বা।তাঁর বাবা ছিলেন অতি দরিদ্র এক নৌকা চালক।যিনি রামেশ্বরামের ও তার সংলগ্ন ধনুষ্কোডিতে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের পারাপার করতেন।অভাবের সংসার তাই অল্প বয়সেই পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বভার পরে কালামের উপর।পড়াশোনার খরচ চালানর জন্য খরবের কাগজ বিক্রি করতেন তিনি।সময় সময় বাবাকে নৌকা চালাতেও সাহায্য করতেন।
রামেশ্বরম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু।তারপর রামনাথপুরম স্কোয়ার্টাজ ম্যাট্রিকুলেশনেরস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন।পড়াশোনায় তিনি ছিলেন সাধারণ মানের ছাত্র কিন্তু পড়াশুনার প্রতি তার মনোযোগ ছিল গভীর ।তিনি খুব পরিশ্রমী ছিলেন।রাত দুইটা পর্যন্ত পড়াশোনা করতেন আবার ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে বাবাকে কাজে সাহায্য করতেন।বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্ত করার পর পরিবারের আর্থিক অভাব মিটাতে তিনি সংবাদ পত্রে লিখতে শুরু করেন।
রামনাথপুরম স্কোয়াটর্জ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকে শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর তিনি ভর্তি হন চিরুতিরাপল্লী সেইন্ট জোসেফ কলেজে।১৯৫৪ সালে সেই কলেজ থেকেই পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করেন।উক্ত কলেজে পড়ার সময় বিশিষ্ট অধ্যাপক চিন্নারেড্ডি ও কৃষ্ণমূর্তির সান্নিধ্যে তিনি বিকিরিত রশ্মির জ্ঞান অর্জন করেন ।সেই সময়ই বিজ্ঞান চেতনার আধ্যাত্মিক চেতনার অপূর্ব মিলন ঘঠে আব্দুল কালামের।স্নাতকোত্তর ডিগ্ৰী অর্জন করে তিনি ভর্তি হন মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এম.আই.টি)।সেখান থেকে তিনি এ্যারোনটিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং -এ ডিপ্লোমা করেছিলেন।তারপর বাঙ্গালোর হিন্দুস্তান এ্যারোনেটকিস্ লিমিটেড থেকে বিমান ইঞ্জিনিয়ারিং -এর স্নাতক ডিগ্ৰি লাভ করেন।
১৯৬০ কালাম ভারতীয় পতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার এ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাবলিশমেন্ট অর্গানাইজেশনে (আইএসআরও) তে বিজ্ঞানী হিসাবে যোগদান করে তার কর্ম জীবন শুরু করেন।সেখানে তিনি প্রখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী ডঃ বিক্রম সারাভাইয়ের অধীনে কাজ করতেন।এরপর ১৯৬৯ সালে ইণ্ডিয়ান স্পেস রিচার্জ অর্গানাইজেশনে (আইএসারও)স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল প্রকল্পের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পান।১৯৮০ সালের জুলাই মাসে আটারো তারিখে তাঁর নেতৃত্বে এস এল বি -৩ রকেটে রোহিনী নামের উপগ্ৰহকে তার কক্ষপথে সফলতার সঙ্গে স্থাপন হয়।এই উপগ্ৰহ স্থাপনের ফলে ভারত একটি মাইলফলক ছোঁয়ে ফেলে।এরপর এই মহান বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে মাত্র দশ বছরে ভারত পাঁচটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মিশাইল নাগ,পৃথ্বী,আকাশ,ত্রিশূল ও অগ্নি ক্ষেপনাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়।এই ক্ষেপনাস্ত্র গুলো তৈরি করে ক্ষেপনাস্ত্র শক্তির দিক থেকে ভারত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নিত হয়।মহাকাশবাহী রকেট ও ব্যালিস্টিক ক্ষপনাস্ত্র প্রযুক্তি তৈরির ক্ষেত্রে বিপ্লব আনার জন্য আব্দুল কালামকে "ভারতের মিশাইল ম্যান" বলা হয়।
১৯৮২ সালে আব্দুল কালাম প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত হন।সেই বছর আন্না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তাঁকে "ডক্টরেট" উপাধিতে সম্মানিত করা হয়।ঐ বছর স্বদেশী মিসাইলের উন্নতির জন্য তাঁর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয় যেখানে তাঁকে সভাপতি নিযুক্ত করা হয়।১৯৯৮ সালে কালামের নেতৃত্বে ভারত দ্বিতীয় বারের জন্য পরমাণু বোমার সফল পরীক্ষা করতে পরেছিল।পরমাণু বিস্ফোরণের সেই সফলতা তাঁকে ভারতের সবচাইতে বিখ্যাত ও সফল পরমাণু বিজ্ঞানী হিসাবে পরিচিত করে তোলে।
ছোটবেলা খবরের কাগজ বিক্রি করা আব্দুল কালাম ২০০২ সালে ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হন।তাঁর কার্যকাল ছিল ২০০২-২০০৭ সাল পর্যন্ত।তিনি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়ে সর্বদা ভারতের উন্নতির স্বপ্ন দেখতেন।বাচ্ছা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি অতি আন্তরিক ভাবে ভাব বিনিময় করে আনন্দ উপভোগ করতেন।রাষ্ট্রপতি হিসাবে জনগনের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছ।তিনি জনগণের কাছে এতটাই শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন যে জনগণ তাঁকে জনগণের রাষ্ট্রপতি (people's presiden)বলে অভিহিত করত।তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের অনুপ্রেরণা।মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন কর্মঠ ও নিয়মানুবর্তিতা।রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েও তার জীবন যাপনের কোন পরিবর্তন হয়নি।তিনি যথা রিতি রাত দুটায় ঘুমাতে যেতেন এবং ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠতেন।সাধারণ মানুষের জন্য ছিল রাষ্ট্রপতি ভবন খোলা।বিশেষ করে বাচ্ছাদের জন্য সব সময় খোলা ছিল তার দরজা।
তিনি কতটা মানব দরদী ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তিনি রাষ্ট্রপতি থাকা কালীন একবার রমজান মাসে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়।কারণ ভারতীয় রাষ্ট্রপতির জন্য একটা নিয়মিত রেওয়াজ আছে যে রাষ্ট্রপতি রমজানের ইফতার পার্টির আয়োজন করেন।সে অনুযায়ী আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার পর তিনি জানতে চাইলেন সে পার্টিতে কত টাকা খরচা হবে।তিনি জানতে পারলেন সে পার্টিতে প্রায় ২২ লক্ষ রুপি খরচা হবে।তখন তিনি নির্দেশ দিলেন সেই টাকা দিয়ে খাদ্য, পোষাক ও কম্বল কিনে কয়েকটি এতেম খানায় দান করতে।এরপর নিদিষ্ট এতেমখানা বাছাই করে রাষ্ট্রপতি ভবনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয় এবং তার কথা মত নিদিষ্ট এতেমখানায় খাদ্য ও পোষাক বিতরণ করা হয়।
কালামের প্রাপ্ত পুরস্কার ও উপাধির সংখ্যা ছিল প্রচুর।তিনি ৪০ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্ৰী লাভ করেন। ১৯৮১ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মাননা প্রদান করে।তারপর তিনি ১৯৯০ সালে ভারত সরকার কতৃক পদ্মবিভূষণ সর্বোচ্ছ অসামরিট সম্মাননা লাভ করেন।১৯৯৭ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্ছা অসামরিক সম্মান "ভারতরত্ন" সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন।তাছাড়া তিনি ১৯৯৭ সালে ভারত সরকার কতৃক বীর সাভারকার,২০০৭ সালে অনারারী ডক্টরেট অব সায়েন্স,২০০৭ সালে ইক ,কে কতৃক কিং চার্লস মেডেল পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন।এছাড়া তিনি জাতীয় নেহেরু পুরস্কার,ইন্দিরাগান্ধি জাতিয় সংহতি পুরস্কার প্রভৃতি অনেক উল্লেখযোগ্য পুরস্কারে তিনি সম্মানিত হয়েছিলেন।
তিনি নব প্রজন্মকে প্রজ্জ্বলিত করে রাখতে চেয়েছিলেন।তিনি শিক্ষা ব্যবস্থান সৃজনশীলতার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।তাছাড়া তিনি সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছিলেন।তিনি মানুষের মাঝে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসতেন।ভালোবাসতেন নিজের জীবনের শিক্ষা তরুণ সম্প্রদায়ের কাছে পৌছে দিতে।এভাবেই ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইণ্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে "বসবাস যোগ্য পৃথিবী" নামক বিষয়ে বক্তব্য রাখছিলেন।ভারতীয় সময় ৬ টা ৩০ মিনিটে বক্তব্য রাখা অবস্থায় তার হার্ট এ্যটাক হয়ে যায়।সঙ্গে সঙ্গে তাকে বেথানি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সন্ধ্যে ৭ টা ৪৫ মিনিটে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
একজন অতি সাধারণ মৎস্যজীবি -নৌকা চালক গরীব ঘরের ছেলে সততা,পরিশ্রম,মেধা,যোগ্যতা ও দক্ষতার ফলে কতদূর এগোতে পারেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এ.পি.জে আব্দুল কালাম।তাঁর অনন্য অবদান প্রতি জন ভারতবাসীর কাছে অনুপ্রেরণা।নব প্রজন্মের কাছে তিনি আদর্শ পুরুষ।দেশবাসীর কাছে তিনি প্রণম্য হয়ে আছেন আর অনন্ত কাল ধরে থাকবেনও।
••••• কবিতা বিভাগ•••••
মিসাইল ম্যান
উমর ফারুক
পরমাণু অস্ত্রের মহড়া দিয়ে
যখন শত্রুদের জয়গান শোনা যায়
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিযোগিতায়
আবিষ্কারের নেশা যোখন আষ্টেপিষ্টে ধরে।
শত্রু ও মিত্র বাহিনী অভিযান চালানোর পর
ক্ষেপণাস্ত্রের জোর অনুযায়ী
কোন একজন জয়ী হলেও
সেটা ছিল তোমার চোখের ঘুম কেড়ে নেওয়া।
একবিংশ ভারতে
এমন এক নক্ষত্রের আলো জ্বলে উঠল
মিসাইল বারুদের অঙ্গারে
শত্রুদের টুটি চেপে ধরার অস্ত্র ।
অনেক প্রগতিশীল ও সংস্কারবাদী আলোও জ্বলে উঠে এই সময়।
দরিদ্রের পাঁচ মহড়াও কাটিয়ে ওঠেছিল ।
তদানীন্তন রাষ্ট্র পিতা ক্ষুধা কে ভয় পান।
ভিখিরির বেশে জীবন প্রণালীর ব্যাপকতা
ও মিসাইল ম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশ
ভারতের একশ বছরের সাধনা!!
অমর প্রকাশ
রঞ্জনা রায়
মাইলের পর মাইল হেঁটে চলে একটি ছেলে
ছোট্ট ছোট্ট পায়ে কষ্টের পাহাড় ডিঙিয়ে
পৌঁছে যায় স্কুলে, পৌঁছে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ,
তার প্রাত্যহিকতার খামে শুধুই বাধা আর বিপদ
তবুও মুক্তির উড়ান বীজ সে বোনে তার বুকে।
দেশ আর দেশের মাটি তার সোনার আঁচল
তার স্বপ্নের চিরসবুজ এক ভারতবর্ষ।
ভারতের পতাকা উজ্জ্বল হোক পৃথিবীর বুকে
এই ছিল সেই বিজ্ঞানসাধকের একমাত্র পণ।
আজীবন ব্রহ্মচারী ব্রতধারী সেই ছেলে
শিক্ষায় প্রতিরক্ষায় জ্ঞানের প্রদীপটি জ্বালে।
এ পি জে আবদুল কালাম তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি
ভারতআত্মার এক অমর প্রকাশ।
সেলাম কালাম
শুভ্রাংশু কুম্ভকার
অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি ছিল জীবনের প্রতি,
উড়ন্ত পাখির ডানায় দেখতেন স্বপ্ন সফল গতি।
অদম্য এক প্রতিজ্ঞায় অটল শৈশবকাল থেকে,
মনের গোপনে পুষে রাখতেন আপন স্বপ্নটাকে।
বাবার উৎসাহ, মার ভালোবাসা, দাদার আদর স্নেহ,
অভাব অনটন সত্বেও ছিল খুশিতে পূর্ণ গৃহ।
শিখতেই হবে, পারবই আমি, নাছোড়বান্দা জেদ,
উড়ে যাক ঘুম,বিশ্রামহীন শরীরে ঝরুক স্বেদ।
অধ্যয়নে মগ্ন হতেন পাঠ্য বিষয়ের গভীরে,
সেঁচে আনতেন নতুন যুক্তি ডুব দিয়ে জ্ঞান সাগরে।
শুধু তাত্বিক নয়,ব্যবহারিক জ্ঞান অসীম সাগর প্রায়,
পদার্থবিদ্যায় সীমাবদ্ধ নয়,কারিগরি জ্ঞান চাই।
বুঝে গেছিলেন সঠিক কথাটি শিক্ষাজীবন মাঝে,
বিমান উড়ানোর স্বপ্ন সফল এম আই টি মাদ্রাজে।
ডানা নাই থাক, স্বপ্ন তো আছে তাতেই সফল হবো,
লক্ষ্যে অবিচল থেকে সঠিক কর্মটি করে যাবো।
এই মনোভাবে সব জয় করে গরীব মাঝির ছেলে,
মায়ের আশিসে, বাবার দোয়ায় সর্ব সফল হলে।
উপগ্ৰহ কক্ষে স্থাপন,কত মিসাইল ছোঁড়ো,
পরমাণুধর রাষ্ট্র হিসাবে ভারতকে তুমি গড়ো।
সর্বোচ্চ দেশ নাগরিক হলে সবার নয়নমণি,
আসল ভারতরত্ন হিসাবে কালাম স্যারকে মানি।
ছাত্রছাত্রীর বুকের শক্তি কালাম স্যারের কথা,
সংগ্ৰামময় জীবনটা এক শিক্ষণীয় গাথা।
কর্মব্যস্ত শেষ শ্বাসেতেও কালাম তুমি ধন্য,
জন্মদিনে হাজার সেলাম জানায় এই নগন্য।
কালাম তুমি কালাম নও
নির্মল সরকার
তুমি তো ছিলে এক সাধারণ বালক,
কেউ কোন দিন ভাবেনি ।
তুমি যে হবে রাষ্ট্রপতি-
তুমিই দেশের গর্ব যে ।
দেশ যে ছিল মায়ের তুল্য-
আঙ্গুল দিয়ে শেখালে।
দেশকে তুমি করলে দান
তোমার গুনের ফসল যে ।
দেশ যে তোমায় ভুলবেনা কভু
শিশু-ছাত্র- মায়েরা।
তুমিই ভারত - তুমিই শাস্ত্র,
তোমার অস্ত্রেই শক্তি আজ ।
তুমিই মোদের রাষ্ট্রের গর্ব-
বিশ্ব মাঝে করলে আজ ।
তোমার চরণে শত নমন -
আজীবন থাকবে তা ।
••••প্রবন্ধ•••••••
শ্রেষ্ঠ এপিজে আবদুল কালাম
আব্দুল রাহাজ
ছিলেন ভারতের এক অন্যতম ব্যক্তিত্ব বিশ্বের জগত সভায় ভারতবর্ষকে দেখিয়েছিলেন এক নতুন দিশা পাইয়ে দিয়েছিলেন দেশের অসংখ্য সেরা সম্মান। সত্যি একজন মহান শ্রেষ্ঠ ও দয়ালু দরদী ব্যক্তিত্ব ছিলেন এপিজে আবদুল কালাম। প্রান্তিক পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা এই কালাম একদিন জয় করলেন বিশ্বকে নিজের দেশকে দেখিয়েছিলেন নতুন দিশা । তিনি বাচ্চাদের ভালবাসতেন সব সময় পরবর্তী প্রজন্মকে উপদেশ দিতেন সত্যিই তিনি এক মহান যা প্রতিটি ভারতবাসীর মনেপ্রাণে আজীবন গেঁথে থাকবে। তিনি যেন এক স্বয়ং মহিমা রূপে প্রতিটি ভারতবাসীর সামনে এসেছিলেন পোখরান পরমাণু বিস্ফোরণের অন্যতম কারিগর ছিলেন আমাদের এপিজে আবদুল কালাম ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি সত্যিই তার সময়ে রাষ্ট্রপতি ভবন খোলা ছিল জনসাধারণের জন্য ছেলেমেয়েদের জন্য তার উক্তি গুলো সত্যিই মানুষকে পরিবর্তন করতে বাধ্য করে। প্রতিটি ভারতবাসীর তারা বাঙালির কাছে গোটা বিশ্বের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশ্বের মঞ্চে ভারতবর্ষকে তিনি তুলে ধরেছেন এখন অন্য রূপে সূর্যের উজ্জল রাশির মত তিনি এই ভারতবর্ষের ভূমিকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
সত্যিই তিনি শ্রেষ্ঠ তুমি মহান প্রতিটি ভারতবাসীর মনে
তিনি আজীবন ভারতবাসীর কাছে এই ভারত ভূমি কাছে ভারত ভূমি সন্তান হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠ আজীবন হয়ে থাকবে।
প্রবন্ধ
‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’
ডঃ রমলা মুখার্জী
আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আব্দুল কালামের জন্ম ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমের এক প্রত্যন্ত গ্রামের এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে। তাঁর বাবা জয়নুল আবদিন ছিলেন একজন সাধারণ মৎস্যজীবী। আব্দুল কালাম ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, লেখক ও সমাজচিন্তক, ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।
আব্দুল কালাম পদার্থবিদ্যা বিষয় নিয়ে তিরুচিরাপল্লীর সেন্ট জোসেফ'স কলেজ থেকে ১৯৪৫ সালে স্নাতক হন এবং বিমান প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয় নিয়ে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। চল্লিশ বছর তিনি প্রধানত রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন (ডি আর ডি ও) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন। ভারতের অসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিক সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশযানবাহী রকেট উন্নয়নের কাজে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়।ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’ নামে খ্যাত এ.পি.জে. আব্দুল কালামের ব্যক্তিগত জীবন কিন্তু খুব সহজ এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল।
১৯৯৮ সালে পোখরান-২ পরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি প্রধান সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রধান মন্ত্রীর মুখ্য বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শদাতা।
এ পি জে আব্দুল কালাম তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন বিজ্ঞানী হিসেবে। পরে তিনি ২০০২ সালের ২৫শে জুলাই ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি এবং ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন।
শুধু বিজ্ঞানী নন, কালাম ছিলেন একজন ছাত্র-বৎসল আদর্শ শিক্ষক। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হবার পর তিনি শিলং, ইন্দোর, আমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, বেনারস হিন্দু বিশ্ব বিদ্যালয়, আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে নিয়মিত পড়াতেন।
প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আব্দুল কালামের আত্মজীবনীমূলক বই "উইংস অব ফায়ার" এর বাংলা অনুবাদ বইটির নাম "অগ্নিপক্ষ"। ২০২ পৃষ্ঠার এই বইটিতে আব্দুল কালামের সাহসী ও সংগ্রামী জীবনের অনেক কথা লেখা আছে যা পড়লে বুঝতে পারা যাবে এই নীরব মানুষটি তাঁর ঐকান্তিক পরিশ্রম দিয়ে জাতির প্রগতিকে কতোটা এগিয়ে দিয়েছেন!
ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্নসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছিলেন কালাম সাহেব।
এই মহান মানুষটি ২০১৫ সালের ২৭শে জুলাই আমাদের ছেড়ে পরপারে যাত্রা করলেও তাঁর অমর বাণীগুলি আমাদের অবিরত সাহস, নিষ্ঠা, কর্ম-প্রেরণা যোগায়।
তাঁর জীবদ্দশায় ৮৪ বছরের দীর্ঘ ও সফল কর্মজীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও দর্শন থেকে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য মহামূল্যবান বাণী, তার মধ্যে দশটি উদ্ধৃত করলাম:-
১. একটি ভালো বই একশ ভালো বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান।
২. সফলতার গল্প পড়ো না, কারণ তা থেকে তুমি শুধু গল্পটাই পাবে। ব্যর্থতার গল্প পড়ো, তাহলে সফল হওয়ার কিছু উপায় পাবে।
৩. স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি. ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।
৪. মানুষ তার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারে না, কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। অভ্যাসই মানুষের ভবিষ্যত পরিবর্তন করে দেয়।
৫. তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখো।
৬. উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
৭. নেতা সমস্যায় ভয় পান না। বরং সমস্যার মোকাবিলা করতে জানবেন। তাকে কাজ করতে হবে সততার সঙ্গে।
৮. জাতির সবচেয়ে ভালো মেধা ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চ থেকে পাওয়া যেতে পারে।
৯. ছাত্রজীবনে আমি বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়েছি, হয়ে গেছি রকেট বিজ্ঞানী।
১০. জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে।
••অন্যান্য নিয়মিত বিভাগ
সনেট শারদ শান্তি
সুশান্ত মজুমদার
বর্ষা শেষে শরৎ আসে ঋতুর টানে
মাঠ ঘাট প্রান্তর হাসে কাশের বনে।
ভাটির দেশে কাশে চিত্ত করে হরণ,
দিঘি ভরা জলে মন হয় উচাটন।
ভরা দিঘির কাঁখে শালুক পদ্ম হাসে
দেবীর আগমনে সর্ব আঁধার নাশে।
শিউলি সুরভি মাখা সকাল বেলায়,
নবীন শিশির হাসে ঘাসের ডগায়।
টগর মল্লিকা ফোটে মন কুঞ্জবনে,
পল্লীবালা সাজে ফুলে কবরী বন্ধনে।
দূর গগনে মেঘের ভেলা ভেসে চলে,
দখিনা বাতাসে ধান ক্ষেত দোলে তালে।
শারদ শান্তির বাতাস হেমন্ত মাখে
চাষীর মুখের হাসি আগামীর সুখে।
মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা
(১)
জাবর জীবন
উট
ঘোড়া,পাখি
কিছুই হতে পারিনি
দ্বিপদ জীবের জাবর কাটা
রেশনের ফ্রি চালে মাথায় ঘুণ
কানের পাশ দিয়ে পালিয়ে গেল দেশটা ।
জীবনভর তালুতে পুষে গেলাম অনাদি চেষ্টা
জলের জন্য পায়ে ঝরাইনি খুন
ঘরকন্না মানে বুঝেছি ফুটিফাটা
কিছুতেই মাথা ঘামাইনি
শুধু চাখি
বুট ।
(২)
মধ্যবিত্ত
আমার
একটাই অপরাধ
শ্রেণী হিসেবে মধ্যবিত্ত
পুরোনোকে কিছুতেই ছাড়তে পারিনা
নতুনকে আঁকড়ে ধরতেও সমূহ বাধা
নিজের বৃত্তেই আপাদমস্তক নিজেকে মুড়ে রাখি ।
ঘটি,বাটি বেচে পোড়োদালানের সম্মান ঢাকি
চৌকাঠ পেরোতেই চোখে লাগে ধাঁধা
জাত, ধর্ম কিছুই ছাড়িনা
ঘূণে ফোঁফরা বৃত্ত
লালনের সাধ
বামার।
ময়না পাঁখি
জুয়েল রুহানী
ছোট্ট সোনার ময়না পাঁখি
গুন গুনিয়ে গায়,
দেখলে চেয়ে জুড়ায় আঁখি
মন হারিয়ে যায়।
পালক দিয়ে অঙ্গ ঢাকা-
পলক ফেরা দায়,
দু,চোঁখে যে স্বপ্ন আঁকা
বুঝা বড় দায়!
ময়না পাঁখির কন্ঠে যে সুর
হৃদয়ে দোল খায়,
আসছে যেন স্বর্গীয় হুর-
নুপূর পড়ে পায়।
কেমন যেন ?
অশোক কুমার রায়
আলোর মাঝে টানটান
ছায়ার মাঝে শূন্য ।
বুকের.মাঝে ধুকপুকানি
ভাবের নেশায় পূর্ণ ।
প্রেমের মাঝে স্বপ্ন ভাসে
ঘৃণার মাঝে ক্ষয় !
চোখের মাঝে রঙীন আলো --
লোভের মাঝে ভয় !
লাট্টু
পিনাকী মুখার্জী
তিন ভাগ নোনাজল
মিষ্টি বৃষ্টি হতে !!
তিনভাগ জীবন নোনা
একভাগ অনিবার্যের মহিমাতে !!
অভিযোগের রেখা গুলো
অক্ষ আর দ্রাঘিমা !!
কখনো রোদ কখনো
বৃষ্টি , ওদেরই মহিমা !!
লাট্টুর গোল ঘুরপাকে
বাঁচার জোর লড়াই !!
ভরসা আঁকড়ে রেখে
ভরসা গোলগোল ঘোরাটাই !!
কর্ণের অন্তর সংঘাত
ক্ষোভের , বিম্ব কুরুক্ষেত্র !!
দ্রাঘিমা - অক্ষ জন্মে
লিখিত , জীবনের মানচিত্র !!
বিবেক হরণ
অনাদি মুখার্জি
দেখিলাম সেই দিন রাস্তার মধোই,
বয়স্ক বৃদ্ধ পিছলে গেলো পা পড়ে!
দেহ তার কঙ্কাল সাড় ছিলো ছিন্ন বস্ত্র পরে,
বয়সে ভারে মলিন বদন বল নেই তার চরণে !
শহরের ঘুরে ঘুরে সেই বৃদ্ধ ভিক্ষে করে মুষ্টি চাল,
এক বাবুসাহেবের ধাক্কায় পড়ে দশা হল এই হাল !
কাদাজলে পড়ে গেল তার কষ্টের চাল গুলি ,
কান্না চোখে জল নিয়ে চালগুলো তুলে ভরে ঝুলি !
তার এই কষ্ট দেখে আমার মন করিলো আঘাত ,
সেই গরিব বলিয়া আজ নেই তার কোনো সন্মান!
ছিলাম আমি তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে,
তখনই ছুটে গেলাম তাকে তুলিতে ,
আমাকে দেখে পথচারী রা শুধু হাসে !
তাকে ধরিয়া তুলিলে বুঝি যাবে আমার জাত ,
ছিলো এক শিক্ষক বাড়ালো না আমার সাথে হাত !
বলি হাইয়ে সমাজ আজকে তোদের চোখে একি হাল !
ধন দিতে পারে শুধু ক্ষণিকে সম্মান,
গরিবের পাশে থাকিলে পাবে তার চিরতরে সন্মান !
টাকা আছে বলে আজ গর্ব করেছে যারা ,
জীবনের মূল্য কি বোঝেনা যে তারা !
অর্থ হলো আজকের এই অনর্থ মূলত কারন ,
এই অর্থ করছে তাদের বিবেক হরণ !
সারারাত
হামিদুল ইসলাম
বলেছি, শরীর শরীরকে চায়
একান্ত গোপনে
সত্যের অগোচরে
একান্ত র্নিদ্বিধায়
অনন্ত বালুকারিশি যখন ভাঙে জীবাশ্মের বলিরেখা।
তোমার নাভিমূলে হাত রাখি
উষ্ণ
আদর করি
সোহাগ করি
বুঝে নিই এই নগ্ন শরীরে তোমার সাথে আমার দেখা ।
সাতকালে কেউ ছিলো না আমার
গোপন রাত্রি
চাঁদের কিরণ
হিম হিম শরীর
সে শরীরে ঢলাঢলি করলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মন ।
আসুক অগাধ রাত
অন্ধকার
আলোহীন দরজা
দুজনে লেপের ভেতর
উলোট পালোট শরীর ঘুম আসে না কিছুতেই।
প্রতারক
আসরাফ আলী সেখ
বুঝলে পৃথিবী!
চোখের কোণে তোমায় প্রথম দেখাতেই ভালো বেসে ফেলেছিলাম ;
তোমার রূপ রস গন্ধ
আমাকে মাতিয়ে দিত
আমি দৌড়ে মায়ের কোলে উঠতাম ;
আর ও একটা পৃথিবী !
দৌড়ে যেতাম পুকুর খালে , সাঁতার দিতাম,
মাছ ধরতাম ;
এখন ও সব ই আছে ,
তবে তুমি কোথায়?
স্কুলের কলেজের
জীবনের সময় পাতায় তোমাকে
পাল্টে দিতে চেয়েছিলাম;
চেয়ে ছিলাম স্টেশনে
বাটি হাতে , পথে পথে
ঝোলা হাতে , রস ঝরা নাকে পথের পথিক কে তোমার সাথে দেখা করাতে ;
তার দেখা পাওয়ার পর তোমার সাথে
সে আমি ও তুমি এক
সাথে জড়াজড়ি করে
থাকতে চেয়েছিলাম;
আমি আজ প্রতারক ! সাংঘাতিক
বেঈমান !
শরতের প্রভা
বিমান প্রামানিক
শরতের ঐ মাঠের পরে কত কাশফুল যে ফোটে
বিলের পানে চেয়ে দেখি তা পদ্মে ভোরে উঠে।
বিকেল হলেই মাঠের পানে ছুটে ছেলেরদল
কাশফুলের থোরা হাতে নিয়ে কেমন আনন্দ বল্।
আকাশ পানে যেই তাকাই, দেখি মেঘের মেলা,
কখনও রোদ, কখনও মেঘ এটাই শরতের খেলা।
সকাল হলেই গাছের তলে শিউলি ফুলের চাদর,
পাড়ার ছেলেরা ছুট্টে আসে শরৎ এমনই মধুর।
মাঠের পানে চোখ যে জুড়ায় শুধুই কাশবন,
দুর্গাপুজো ঢাকের আওয়াজ চনমনে হয় মন।
মেঘের মাঝে মিঠা রোদে কখনও জীবন ধন্য,
পদ্ম, কাশের, শিউলির থোরায় শরৎ সত্যিই অনন্য।
পার্বতীর সংসার
সুস্মিতা দে
🙏মা তোর ছোট্ট দূর্গা এসেছে
হাতে দুটো মেয়ে ধরে কোলে গনেশ নিয়ে কার্তিক কে মাথায় করে কুঁচি দিয়ে ধুতি পরে কেমন সুন্দর সাজে সাজিয়ে এনেছেন।🙏
❤মেনকা ডাকে দুগ্গি ?
🙏গণেশের বায়না কিছু কম নয়, সে বলে মারে তোর চার পাশে ঘুরে বিশ্বরূপ দর্শন করছি , মায়ের চোখে আনন্দের জল জমাট বেঁধেছে। পড়বে ঝড়ে দেখবে খুশি তে আত্মহারা দেখে চেয়ে আকাশে আমার গনেশ কেমন আকাশকে রামধনু তে রাঙিয়ে দিয়েছে।
ছেলে আমার দোকান বন্ধ থাকলে লাড্ডু খেতে চায়। তবে পড়ে দেবো বললে লক্ষ্মীছানার মতো মায়ের কোলে ঢুকে চুপটি করে শুয়ে মায়ের পানে চেয়ে হাসে ঘুমিয়ে পড়ে নেই আর কোন বায়না তখন মায়ের কাছে থাকবে বায়নাটা তার ছল।🙏
মেনকা ডাকে দুগ্গি ?❤
🙏সরস্বতী কি কম দুষ্টু? মামার বাড়ি যাবে নিয়ে যাবে না সাজসজ্জা আর সাজের সরঞ্জাম , যাবে নিয়ে তার বীণা আর গুচ্ছের বই আর কালির দোয়াত কলম সব ।
শুরু হবে দুই বোনের ঝগড়া। লক্ষী সাজের জিনিস দেবে না স্বরসতীর পণ লক্ষীর সব চাই 🙏
❤মেনকা ডাকে দুগ্গি ?
🙏লক্ষীশ্রি রুপে দূর্গার লক্ষী মেয়ে কিছু কম দুষ্টু না,? তার ধনে গর্বে মাটি তে সে হাঁটতে চায়না। দুষ্টুমি করবি যদি এক নয়া পয়সা দেবো না , ভাই বোনকে আদর করে বলে লক্ষীটা অর্থ দান করতে চায় তবে নারায়ণ তার চোখের মনি নারায়ণের দেখা পেলেই মন গলে জল হয়ে যায়।ভালো বাসে তাই তো লক্ষীনারায়ন যুগলমূর্তি পূজো বাঙালি দের ঘরে ঘরে হয়, দূর্গা বোঝে চোখের জল তার অর্থের চেয়ে অনেক দামী , 🙏
❤ মেনকা ডাকে দুগ্গা?
আর উনি আর এক জন নৌকাতে রয়ে গেলেন দূর্গার স্বামী । চোখে হারায় তার পার্বতীকে তবু সে আসবেন না কারন তা দুগ্গা জানে ,আসবে নন্দী ভিঙ্গী নিয়ে শশ্মানে গিয়ে আগে গাঁজা টানবে তার পড়ে সে আসবেন শ্বশুর বাড়ি।
দুর্গা কাঁদে সংগোপনে আছে রাজাধিরাজ ভোলানাথ তার তপস্যার স্বামী কে পার্বতী ছাড়া কেউ তাকে চিনবে না
সে যে ভোলা মহেশ্বর শিব সৃষ্টি কর্তা পার্বতী তাই তো জগৎে আজ জগদ্ধাত্রী রুপে বিরাজমান রুপংদেহি জয়ংদেহি দ্বিষোজয়ী যশোদেহি ।
মেনকা ডাকে ? দুগ্গি বরনডালা আন মা জামাই এয়েছেন?
মায়ের সংসার কথা এখন শেষ ।
রামায়ণ কান্ড শেষে
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
নন্দী বুড়ী। বয়স চার কুড়ি। চির আইবুড়ী। শ্বেতী, সারা অঙ্গ ভরা, তাই আর বিয়ে হয় নি। মা বাবার একই সন্তান ছিল। যখন পাঁচ বছরের তখন বাবা আবার বিয়ে করে এদের ছেড়ে চলে যায় সুদূর আফ্রিকায়। যে অফিসে কাজ করত সেখানেই এই মেয়েটিও কাজ করত। করতে করতে প্রেম। তারপর ওকে নিয়ে এই চাকরী ছেড়ে বিদেশে অন্য চাকরী নিয়ে পালানো। প্রেম শুরু হয় যখন ওর বউ অন্তঃস্বত্ত্বা তখন থেকে। ডাক্তার বেড রেষ্ট বলেছিলেন। তাই ও বাবার বাড়ী থাকতো। আর মেয়ে ওখানেই জন্ম নেয়। এরপর তাকে আট মাসের বড় করে তারপর স্বামীর কাছে আবার ও শিশু কন্যাকে নিয়ে চলে আসে। ও যখন বাবার বাড়ীতে তখন প্রায়ই অফিস থেকে প্রেমিকাকে এনে বউয়ের মত করে নিজের শোবার ঘরে রাখতো। এর আবার বাবা ও মা এখানে থাকে না। একটি ঘর ভাড়া করে একাই থাকে এই শহরে। গ্রামে মা, বাবা, ভাই ও বোন থাকে। মাঝে মধ্যে ও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কয়েক দিন গ্রামের বাড়ীতে কাটিয়ে আসে। তাই শহরে একা থাকায় এর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে নিজে বাসায় না গিয়ে প্রায়ই এর বাড়িতেই রাত কাটায়। এবার যখন মেয়ে, বউ এলো তখন ও প্রায়ই অফিসের কাজের জন্য বাইরে যাওয়ার বাহানায় প্রেমিকার ঘরে রাত কাটাতো। এভাবে চলতে থাকলো। এবার ও আফ্রিকাতে জব নিলো। আর সেখানে প্রেমিকাকে সঙ্গে করে নিয়ে চলে গেলো। এরা পড়ে রইল এখানে। মা বেশ শিক্ষিতা। তাই জব পেয়ে গেল। মেয়েকে খুব উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতা করলো। এরপর ও জব পেলো। মা ও মেয়ে দুজনেই জব করে ও বেশ সুখেই থাকে। ত্বকে শ্বেতী বলে অনেকেই বিয়ে করতে রাজি হয় নি। তাই ওর মা চেষ্টা করতে চাইলেও ও ওর মাকে বারণ করে দেয়। ও সারা জীবন বিয়ে করবে না। এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। মা মারা গেছে। ও একাই থেকেছে। তারপর চাকরী থেকে রিটায়ার্ড করেছে। যা টাকা পেয়েছিল তাতে করে বেশ চলে। ও রোজ রামায়ণ পাঠ করে আর পাড়ার অনেকেই তা শোনে। রোজ সন্ধ্যায় এই পাঠ চলে। এবার ওর টাকা শেষের দিকে এসে গেল। অবশেষে ওর খাওয়ার অভাব হল। বাড়িটা বিক্রী করে দিল। পাশেই একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকলো। ওই টাকায় চলল। সে টাকাও ফুরোলো। পাঠ কিন্তু চলতেই থাকলো। আবার উপোস। না খেয়ে চলল বৃদ্ধা জীবন তার। এবার যারা পাঠ শুনতে আসে তারা কেউ কেউ মাঝে মধ্যে খেতে দিল। এভাবেই চলছে। ভাড়ার টাকা দিতে পারে না। তাই যারা পাঠ শুনতে আসে তারাই ওই টাকাটা প্রতি মাসে সবাই মিলে দিয়ে দেয়। সবার দেওয়া পুরোনো পোশাক পড়ে। একদিন ও মাথা ঘুরে পড়ে গেল। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ও উঠতে পারলো না। পাঠ শুনতে এসে সবাই দেখলো। ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালো। স্কিন ক্যানসার। মাসখানেক ভর্তি থাকার পর মারা গেল। রামায়ণটি ওর মাথার কাছেই রাখা ছিল। পাড়ার শ্রোতারা ওই মোটা রামায়ণ সমেত ওর মৃতা দেহটি ওর ওই পাঠ ঘরে আনলো। একজন ওটি পড়ে ওর মৃতা দেহকে শোনাতে গিয়ে দেখলো যে প্রতি কাণ্ডের শেষে শেষে শেষে একটি করে কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি রাখা আছে। এগুলি ওরা খুব যত্ন করে রাখলো। ওর দাহ হল। এবার কয়েকদিন পর শ্রাদ্ধও হল। পাড়ার সবাই মিলেই করলো। এবার ওরা ওই সকল পাণ্ডুলিপি এক প্রকাশকের কাছে দেখালো। বই হল অনেকগুলো। রয়ালটিও পেলো। খুব বিক্রী হল। মৃত্যুর পরে ও বিখ্যাত হল। ওর বইয়ের টাকায় ওর শ্বেত পাথরের মূর্তি স্থাপন করলো পাড়ার সকলে। নীচে খোদাই করা হল - " কবি আইবুড়ী নন্দীবুড়ীর কান্ড শেষে............... "
ধারাবাহিক প্রবন্ধ :
কবিতার রূপকল্প : পর্ব : ২৩
|| জীবনানন্দ পরবর্তীকাল এবং আধুনিক কবিতার আন্দোলন ||
পঞ্চাশ দশকের কবি
( দ্বিতীয় অংশ )
সৌম্য ঘোষ
পঞ্চাশ দশকে যে সমস্ত প্রতিভাবান কবিদের আমরা কলকাতা ভিত্তিক পশ্চিমবাংলার বাংলা কবিতার আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভাবে পেলাম, তাঁরা হলেন :
রাজলক্ষ্মী দেবী
_________________
জন্ম অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহে।কবিতায় প্রকৃতির মাধুর্য আর প্রেম । তাঁর কবিতার রচনা কত সৌন্দর্য আকর্ষণীয় । "পলাশ আবির আনে । সিঁদুরের সেজেছে কৃষ্ণচূড়া ।" প্রেমের নানান রূপান্তরের কথা তাঁর কবিতায় আমরা পাই : "তুমি একমাত্র তোমার তুলনা, / শুদ্ধ শরীরের মন্ত্রে করেছো প্রেমের অভিষেক। " তাঁর কবিতায় নারীর বেদনা অনুভূত হয় : " অর্ধেক নারী আমি, অর্ধেক যন্ত্রনা ।" আত্মিক উচ্চারণ তাঁর কবিতার বিরল মুহূর্ত ।
কবিতা সিংহ (১৯৩১--৯৯) নারীর পক্ষ নিয়ে কবিতা সিংহ বাংলা কবিতায় প্রথম বিদ্রোহিণী । তাঁর এক একটি কবিতায় উনিশ শতকী আবহ :
" বুকের এ তালপুকুরে
ভেবেছো ঘটি ডোবে না
এ অতল ফল্গু জলে
ও বাপু ছিপ্ ফেলো না.....।"
তাঁর কবিতায় নারী 'অনলবর্ষিনী' । মানুষ তাঁর কাছে মানুষ । নারী-পুরুষের তিনি লিঙ্গ ভিত্তিক ভেদ করতে রাজি নন।
তাঁর অমোঘ উচ্চারণ :
"সোনার শিকল/ আমি প্রথম/ভেঙেছিলাম/হইনি তোমার/ হাতের সুতোয়/ নাচের পুতুল/ যেমন ছিল/ আদম আদম/ আমি প্রথম / বিদ্রোহিণী/ তোমার ধারায়/ আমি প্রথম।"
কবি আলোক সরকার
( ১৯৩১--২০১৬)
_______________________
দুর্লভ প্রকৃতির মগ্ন কবি । স্বল্পভাষী প্রকৃতি মগ্ন এই ছবি সমকালের সব থেকে স্বতন্ত্র। তিনি বলেন, প্লাবিত সুন্দরতা, বিস্ময়, আনন্দের তরঙ্গায়িত উজ্জলতা আমাকে নিরন্তর টানে।
"পড়ন্ত বেলার রোদে
একাকি শালিক এক
দৃষ্টির বিস্ময় নিয়ে দিগন্তের সোনারঙ দেখে।"
সদয় প্রকৃতির সঙ্গে তন্ময় কবির ঘটেছে মৈত্রী :
"নীল আকাশ তার অচ্ছেদ্য স্নেহে
অন্তরালের প্রতিষ্ঠা প্রান্তরের গোপন বিশালতায়
সকালবেলায় বর্ণহীন ভালোবাসার আনন্দিত সুখ
রেখে দেবে ।"
প্রসঙ্গত: একটি তথ্য জানানোর লোভ সংবরণ করতে পারছিনা । কবি আলোক সরকার তখন বর্ধমান জেলার শ্যামসুন্দর কলেজের বাংলার অধ্যাপক । আমার দিদি (শ্রীমতি শাশ্বতী সরকার) ওনার ছাত্রী ছিলেন । সেই সুবাদে 'স্যারের' কাছে
আমার যাতায়াত ছিল । পরবর্তীকালে আমি যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের ছাত্র তখন তাঁর রাসবিহারীর বাড়িতে যেতাম ।
শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় (১৯৩১--) বাংলা কবিতা সাহিত্যের আর এক উজ্জল স্বতন্ত্র কবি। কার বেশিরভাগ কবিতায় একটা লঘু চাল আশ্রয় করেন তিনি।
" ফুঁ দিয়ে দেখো যদি মঙ্গলশঙ্খের মতো / বেজে উঠতে পারি।"
পুরানের নতুন ভাষ্য লেখেন :
"বেহুলা নিতান্ত বিনিময় দক্ষ বণিক কন্যা ও সদাগর- বধু আর দেবযানীর কাম্য ছিল বিবাহের নিরাপত্তা ।"
"ফিরে এসো, চাকা।"
এই একটি কাব্যগ্রন্থের জন্য কবি বিনয় মজুমদার
(১৯৩৪-- ২০০৬)বাংলা কবিতার ইতিহাসে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন। আঠারো মাত্রার মহাপায়রে বিন্যস্ত এই প্রেমের কবিতা গুচ্ছ । এই কবিতায় উপেক্ষার কথা আছে, নায়িকার সরে যাওয়ার কথা আছে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আছে ধৈর্যশীল একাত্মতার স্বর :
"কৌটোর মাংসের মতো সুরক্ষিত তোমার প্রতিভা
উদ্ভাসিত করেছিল ভবিষ্যৎ, দিকচক্রবাল।"
তাঁর কবিতায় উপমাও স্বতন্ত্র ধরনের :
" যে গেছে সে চলে গেছে ; দেশলাইয়ের বিস্ফোরণ
হয়ে
বারুদ ফুরায় না যেন।"
আবার কখনো লেখেন :
"প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি।"
বিনয় মজুমদারের অন্য কবিতার বই "অফ গ্রহণের অনুভূতি মালা" ও "বাল্মীকির কবিতা ।"
আরো এক স্বতন্ত্র পথের পথিক কবি উৎপল কুমার বসু (১৯৩৯-২০১৫ ) । তিনি বস্তুজগতের আড়াল থেকে অন্য জগৎ উঠে আসেন।
"ফিরে যাও সাগরে আবার। ফিরে যাও উন্মাদ তুফানে। অস্তিত্বকে ফিরে দাও ।" তাঁর বিখ্যাত কাব্য "পুরী সিরিজ ।" তিনি প্রকৃতির মধ্যে দেখেন হিংস্রতা । " স্ত্রীলোক আজ রণভূমি ।" তিনি মুখের ভাষার গদ্যে অনবদ্য কবিতা লিখতে পারতেন।
অমিতাভ দাশগুপ্ত (১৯৩৫--২০০৭)।
অমিতাভ দাশগুপ্ত বামপন্থী রাজনীতি করতেন। ভারতের কম্যুনিষ্ট পার্টি র সদস্যপদ গ্রহণ করেন তিনি এবং কিছুদিন জেলে কাটে তাঁর। দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা সর্বপ্রথম ছাপা হইয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র 'কালান্তর' পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীতে ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি 'পরিচয়' পত্রিকার সম্পাদক হন।কাব্য রচনার জন্যে নক্ষত্র পুরস্কার এবং প্রসাদ পুরস্কারে সম্মানিত হন। ১৯৮৯ সালে ইন্দো সোভিয়েত কবি সম্মেলনে প্রতিনিধিস্বরূপ রাশিয়া যান অমিতাভ দাশগুপ্ত। ১৯৯৯ সালে তাঁর 'আমার নীরবতা আমার ভাষা' কাব্যগ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্ত হন ।
সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত (১৯৩৫--২০১১)
________________________________
ঢাকা ও কলকাতায় ব্যাপক জনপ্রিয় কবি সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত ১৯৩৫ সালের ৫ মে ঢাকার পুরানা পল্টনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালে কলকাতা আসার আগ পর্যন্ত তিনি জীবনের প্রথম ১৬ বছর ঢাকাতেই কাটান। কলকাতায় এসে তিনি বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৫৬ সালের দিকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। এ পর্যন্ত তাঁর ৩০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর চারটি প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা থেকে। কবির শেষ কবিতাগ্রন্থ ‘অবৈষ্ণব পদাবলী’ সম্প্রতি কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয়। কবিতা ছাড়াও সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত ভ্রমণ কাহিনি ও প্রবন্ধও লিখেছেন। ঢাকা ও কলকাতাকে নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘দুই নগরী’। সমরেন্দ্র সেন ‘আমার সময় অল্প’ কাব্যের জন্য ২০০৭ সালে পান সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার। ‘কফি হাউজের সিঁড়ি’ কবিতাগ্রন্থের জন্য ১৯৯৮ সালে পান রবীন্দ্র পুরস্কার। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি সাহিত্য পত্রিকা ‘বিভাব’ ও ‘কৃত্তিবাস’ সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
"মানুষের মতো এমন সরল প্রাণী আর নেই,
সে এখনো বিশ্বাসপ্রবণ, এখনো সে পেঁপে ও শসা,
নিটোল বেগুন
কিনে আনে বউয়ের জন্য । বিপ্লবীর স্ত্রী করে লক্ষ্মী পূজা;
মন্ত্রীর পরিবার রবিবার হাত দেখায় হরিশ আচার্যকে ।"
মণীন্দ্র গুপ্ত (১৯২৬--২০১৮) ।
এদের মধ্যে সবচেয়ে বয়সে প্রবীণ কবি। বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন। শব্দ ব্যবহারে কুশলতা চমৎকার। তাঁর কবিতা :
"তুমি তরুণী দেবীর মত গূঢ় আলিঙ্গনে
তৎক্ষণাৎ অস্তিত্ব স্পর্শ করো; ওষ্ঠের পাপড়ি খুলে
মধুবাহী কোমল পর্ণাল জিভ আকর্ষণে উঠে আসে মুখে--
ফোঁটা ফোঁটা পুষ্পাসব চুইয়ে পড়ে
মিশ্রিত সোমের রস এবং মাধ্বীক ।"
সুনীল বসু (১৯৩০--)।
কবিতায় থাকে এক শব্দগত হৈ-হুল্লোড়, বিস্ফোরণ, ভাঙচুর।
"এই হপ্ হপ্ পাগলা ঘোড়ার পিঠে
হেই পর্বনা থাকবোই ঝুলে বাজি;
হেই চিৎপাত আচ্ছা আছাড় মিঠে
কাঠের গুঁড়ো ডিগবাজি ডিগ্ বাজি।"
এমন সব কবিতা!
তরুণ সান্যাল (১৯৩২--২০১৮)।
কবি বলতে তরুণ সান্যাল বুঝতেন ‘এক বিপ্লবী ব্যক্তিস্বরূপকে’। এই ব্যক্তিস্বরূপ প্রকৃতি, সমাজ, শ্রেণি ও ব্যক্তিসত্তার অন্তঃসার সংগ্রহণে অক্লান্ত। এই কবির প্রকাশভাবনায় থাকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার ইচ্ছে। তরুণ সান্যালের ভাষায়– ‘আমার লেখা ও প্রায় প্রতিটি কবিতাই তাই নিসর্গ, প্রকৃতি, সমাজ ও আত্মবিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে রচনা।’
তাঁর কবিতা রচনার শুরু চোদ্দ-পনের বছর বয়স থেকে। আর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ ১৯৫৬ সালে। নবীন কবি বেড়ে উঠেছেন সাম্যবাদী চেতনায় আর তাঁর সামনে আদর্শের মতো থেকেছেন বিষ্ণু দে, সমর সেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো কবিরা। সাম্যময় এক উজ্জ্বল সমাজ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা এঁদের কবিতায় এবং মার্কসবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ এই ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারকে আত্মস্থ করেই কবি হয়ে উঠেছেন তরুণ সান্যাল। দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ ও উদ্বাস্তু সমস্যার প্রভাবে পঞ্চাশের অনেক কবিই যখন আত্মমগ্নতায় আশ্রয় খুঁজেছেন, তরুণ সান্যালের কবিতায় তখন স্পষ্ট হয়েছে প্রতিবাদী ও সমাজবিশ্লেষণের প্রবণতা। পঞ্চাশের কবিতায় এর অভিমুখটা আমরা লক্ষ করি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, রাম বসু ও অমিতাভ দাশগুপ্তের কবিতায়।
পূর্ণেন্দু পত্রী (১৯৩১--৯৭)।
আসল নাম পূর্ণেন্দু শেখর পত্রী । পূর্ণেন্দু পত্রী নামে সর্বাধিক পরিচিত; ছদ্মনাম সমুদ্র গুপ্ত । একজন বিশিষ্ট কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, সাহিত্য গবেষক, গবেষক, চিত্র-পরিচালক ও প্রচ্ছদশিল্পী।
কবিরুল ইসলাম (১৯৩৪--২০১২) ।
তাঁর কবিতা আত্মমগ্ন, ধীর ও আস্তিক্যময় । জীবনকে নিয়ে যন্ত্রণার পীড়া নেই । বরং আছে বিরল প্রসন্ন স্নিগ্ধতা ।
" তাই আমার ব্যক্তিগত বিগ্রহের
কোন বিসর্জনও নেই-----
ফলত, প্রতিদিন আমার পূজা
প্রতিদিনই আমার পার্বণ ।"
রবীন সুর (১৯৩৪--৮৮)।
নানা দুঃখ যন্ত্রণা নিয়েও জন্মের যে আহ্লাদ তাই নিয়েই তাঁর কবিতা ।
"এখনও নিভন্ত ধুপ গন্ধ দিচ্ছে, দূর অরুন্ধতী
আলোর ইশারা স্পর্শ করেছে রোমকূপের প্রতিটি শিকড়"
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩৬--)।
প্রকৃতি জগত নিয়ে, চারিদিকের সংসার নিয়ে তাঁর কবিতায় এক আত্মস্থ মগ্নতা পাওয়া যায় । চাঁদনী কুয়াশায় ক্ষয়ের গন্ধ জড়ানো , ত্রাস পাষাণের পাতাল । বীরেন্দ্রনাথ রক্ষিতের (১৯৩৪--) কবিতায় ঠাস বুননে এবং ইঙ্গিত ময় । তাঁর কবিতায় যতিচিহ্ন খুব লক্ষ্য করতে হয় । বাক্যের চেয়ে বাক্যাংশ তাঁর কবিতায় মূল্যবান।
তারাপদ রায় (১৯৩৬-- ২০০৭)।
তাঁর কবিতা হালকা ধরনের খুবই আকর্ষক। তুচ্ছের সৌন্দর্য দেখেন তিনি।
"কিঞ্চিৎ রৌদ্রের সঙ্গে চার পাঁচটি ফড়িং মিশিয়ে
ঈশ্বর বললেন ডেকে, ওহে,
তোমার বাড়ির সামনে ফাগুন দ্যাখো হে ।"
ত্রিকালজ্ঞ ঈশ্বরের প্রতি কবির নিবেদন:
"আমাকে বাচাল যদি করেছ মাধব
বন্ধুদের করে দিও কালা।"
এই সময়ের অন্য কবিরা হলেন সুনীল কুমার নন্দী (১৯৩০--), আনন্দ বাগচী (১৯৩৩--), শিব শম্ভু পাল (১৯৩৪--), সাধনা মুখোপাধ্যায় (১৯৩৮--২০২০), রঞ্জিত সিংহ (১৯৩৪--), সুধেন্দু মল্লিক (১৯৩৫--) , দিব্যেন্দু পালিত (১৯৩৯--২০১৯) প্রভৃতি।।
শ্রদ্ধেয় কালাম স্যারকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি । খুব সুন্দর আয়োজন । শুভকামনা উপকন্ঠ সাহিত্য পত্রিকা
উত্তরমুছুনএ সংখ্যায় কালাম স্যারকে নিয়ে লেখা গুলো বেশ ভালো লাগলো। জানা তথ্য গুলো আরও স্মৃতির কোণে গাঁথা হলো। আর অন্যান্য লেখা গুলো ও বেশ সুন্দর ও উন্নত মানের । সবাই কে শুভেচ্ছা জানাই।
উত্তরমুছুনসশ্রদ্ধ প্রনাম জানাই
উত্তরমুছুন