রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 04/10/2020

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 04/10/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 04/10/2020 

Upokontha sahitya patrika Web Megazine- 04/10/2020


উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
              (ওয়েব ম্যাগাজিন)
            
প্রকাশ কাল:-03/10/2020, শনিবার
               সময় :- সন্ধ্যা 5 টা 

সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
                  ১) ইমরান খাঁন
                  ২) শেখ মণিরুল ইসলাম

সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577


👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇

গান
- অগ্নিমিত্র

আজকালকার যা সব গান..
শুনে পিলে চমকে যায় ।
গায়কদের সে গান শুনে
ব্রহ্মদত্যি ছুটে পালায় !
আছে যত নকলচি যে
পুরনো গানই মকশো করে
শ্রাদ্ধ করে গানের তারা;
পুরনো সে দিন মনে পড়ে ।
ছিল যত কিশোর, রফি,
মান্না, মুকেশ, গুণীজন ..
কোথায় তারা চলে গেল
এখন তাই যে খারাপ মন ।
বর্তমানে গান শুনে পাই
কানে, প্রাণে বেজায় ব্যথা!
এখনকার গান যে খালি
ঝালাপালা , ঝুটঝামেলা ..
শিল্পের কিছু নেই যে তাতে
সবই যে ব্যবসারই খেলা !!







দ্রৌপদীর শাড়ি
             রঞ্জনা রায়

দ্রৌপদীর শাড়ি লুটায়
আঁচলের কলকাবনে কালনাগিনী ফোঁসফোঁসায়।
দ্রৌপদীর শাড়ি কাঁটাঝোপে  লুঠায়।
দ্রৌপদী একা জেগে মাঝরাতে
দ্রৌপদীরা জেগে থাকে সারারাত
ঝলসায় বিদ্যুৎ চূড়ান্ত অপমানে নিস্তব্ধ বৃষ্টিপাত।
দ্রৌপদীরা  বড্ড একা -  ট্রামে বাসে বনে রাজপ্রাসাদে
হাতগুলো এগিয়ে আসে,চোখের হাঁ-মুখে জ্বলে নগ্ন খিদে।
দ্রৌপদীর শরীর পুড়তে থাকে -
আগুনে   অ্যাসিডে ...

দুঃশাসনের পৃথিবীতে  সখা কৃষ্ণ
এক অলীক বাস্তব !









হাইকু কবিতা
         শংকর হালদার

০১।
ভক্তিতে মুক্তি
চরণ ছুঁয়ে আমি
সদয় হও ।

০২।
আঙিনা জুড়ে
তোমার পদচিহ্ন
অন্তর কাঁদে ।

০৩।
চরণে সঁপি
বিশ্বাসে মেলে শান্তি
তোমারি ছায় ।

০৪।
ধরণী খেলে
এক এক ঋতুতে
বিচিত্র রূপে ।

০৫।
কবিতা প্রাণ
রঙ তুলির টানে
বিমূর্ত নয় ।






কেয়ামত
        উমর ফারুক

সব কিছু মিলিয়ে একখান পৃথিবী
সাগর পাহাড় ফেটে হয়ে যাবে চৌচিড়
বালু বয়ে  উড়িবে যা হবে বিস্ময়!
রূপ খানি বদলে এক কোটি সংশয়।
বেড়ে যাবে অন্যায় ঠিক এটা আলামত 
মিথ্যার ঘোলা জলে সত্যের হবে মউত।
ইলম যার পাহাড়ের বিস্তার হবেনা
গুনাহগার ভরে যাবে নেককার রবেনা।
আকাশটা কাঁচ হয়ে চুরমার ফাটবে
সূর্যটা ডুবে গিয়ে পশ্চিমে উঠবে।
দুয়া যত করো তবু করবেনা তা কবুল
আপনার পাপ গুলি ফুটবে হয়ে ফুল ।
কাফেরের বিষদাত বের হয়ে আসবে
মজলুম অসহায় দিনরাত কাঁদবে
মুসলিম লেপ মুড়ি কেউ দিবে শীতঘুম
বিশ্বের কিনারে পড়বে মিসাইল বোম ।
যুদ্ধ হলে কেউ শহীদের পাবে স্বাদ 
নরকে যাবে কেউ করে যারা  আহ্লাদ।
এক থেকে শত দেশ জাল হযে লড়বে
একে একে কাফের গুলো মশা হয়ে মরবে।










কবিতা:
       কলিজার স্বপ্ন  
        আসরাফ আলী সেখ

আলোর ছানা কচি কচি ডানা মেলে ধেয়ে
চলে স্বপ্নের কোলাহলে  , দিনে রাতে অবিরা মে ,

মাটি নিশ ফিস করে দুর্গার পদতলে ,ফুল গুলো ডানা মেলে উড়ে প্যান্ডেল প্যান্ডেলে ,

সদ্য যৌবন পালে
লেগেছে বাতাস ডানা মেলে  বসন্ত ইচ্ছে জোনাকি বুকে স্বপ্ন ধরে ,

উড়তে উড়তে ঘিরে ফেলে কাত্তিক  কুত্তা
আগলে পথে দল বেঁধে,

বিষ দাঁত লা দাঁত
বসিয়ে দেয় খচা খচ
স্বপ্ন মাখা বুকে , স্বপ্ন
বেরিয়ে আসে কলিজার সাথে,









তুমি আসবে বলেই
              বিমান প্রামানিক

তুমি আসবে বলেই, ঊষার আকাশে,
তারারা এখনো যায়নি;
তুমি আসবে বলেই, ভীরু বাহুপাশে,
প্রেম পথ খুঁজে পায়নি।

তোমার আশার ছলনাতেই মুগ্ধ হয়েছি আমি,
তাই তো চক্ষু বুজি,
তোমার প্রেমের টানেই ভূষণ হারিয়ে আমি
ভীষণ তোমায় খুঁজি।










কবিতা -    জতুগৃহ
            পিনাকী  মুখার্জী
    
              যখন  তুমি নিচে তাকাও
           এক ভাগ প্রাণ বায়ুতেই তুষ্টি  !!
            বেশির  সাথে  পেশির  আস্ফালন
               চার  ভাগে সেই  পেশির পুষ্টি  !!

                 সৃষ্টি  লগ্নে  ফিরে  চাও
             জ্বলছে  সদাই  সকল  সৃষ্টি  !!
           লেলিহান শিখা খোঁজে আহুতি
                ওপর  হতে  অ্যাসিড  বৃষ্টি  !!
         
              উপগ্রহ চিত্রে আজ প্রমাণ
          উত্তাল সমুদ্র , তিন ভাগ আগ্রাসন !!
             শুধু  একভাগ বাঁচার চেষ্টায়
            আজ  ও  চলে  উপর্যুপরি আক্রমণ  !!

              ময়না  তদন্তে  দূষণ  শাসন
             ধোঁয়াশা  আর কালো ধোঁয়া  !!
                গ্রীন  হাউসে ঘিরে  রাখা
               পোড়া  স্বপ্ন  ওড়া  ধোঁয়া  !!









স্বাস্থ‍্য বিধি
           বিপ্লব গোস্বামী

শাখ সবজি খাবে বেশি
মাজ মাংস খাবে দেশী।

রাগারাগি খরবে কম
খুশি থাকো হরদম।

খাবার খাবে নিয়মমাফিক
স্নান,ঘুম রাকবে ঠিক।

জল খাবে খালি পেটে
যথা সম্ভব চলবে হেঁটে।

ঊষা কালে করবে যোগ
থাকবে তবে সদা নিরোগ।

ছোট রেখবে চুল নোক
কখনো হবে না রোগ।

খাবার আগে পরে হাত ধুবে
আট ঘন্টার অধিক না শুবে।










ক্ষমাশীল বীর
       সুশান্ত মজুমদার

আদিতে ছিলে রহিবে অন্তিমে
আছো দুশো বছরে,
জীবন জুড়ে পলে পলে
মনের গহিন আঁধারে।

মাতৃ ভক্তি করিয়া ধন
দুর্যোগে নদী পার,
বাল বিধবার অশ্রু মোচনে
বাড়িয়ে দিলে কর।

শিক্ষা মুকুলে ফুটালে কুসুম
রচি বর্ণ পরিচয়,
দেব ভাষা করি রপ্ত
হলে পন্ডিত জ্ঞানময়।

পাঠশালা বিনে বৃক্ষ তলে
তব পাঠ দানে,
শিশু নারী  কিশোর  সবে
ভান্ডার ভরিল জ্ঞানে।

শুনিয়ে শিক্ষার মন্ত্র পাঠ
বধির নারীর কানে,
অবলার মুখে ফুটালে বাণী
সমাজ বাড়িল মানে।

বজ্র-কঠিন পাঁজরে মোড়া
কুসুম কোমল অন্তর,
দান দরিয়া অবগাহনে
হলে দয়ার সাগর !

মুখোশ ধারী সুশীল সমাজ
মাধ‍্যমে বুলি ঝাড়ে,
মাখিয়া গায়ে রকমারি বর্ণ
তোমায় পাথর মারে।

লজ্জা ঘৃণায় কলঙ্কে  ইতিহাস
করিবে নত শির,
নিজ গুণে করিও ক্ষমা
হে ক্ষমাশীল বীর।

বিশ্বদর্পন তুমি সমাজে প্রতিবিম্ব
জগৎ জোড়া নাম,
তুচ্ছ মানব রিক্ত হস্তে
চরণে জানাই প্রনাম।









সৃষ্টিকর্তার ভুল সংশোধন
          অঞ্জলি দে নন্দী, মম

নিজের ক্ষুদ্র সংস্করণ রূপে ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করলেন। বেশ নিজের পরিচিতি ব্যাপ্ত হচ্ছে। আপন সুকর্মে খুব সন্তুষ্ট ভগবান নিজেই। চলছে এভাবেই ......জীবন প্রবাহ অটুট রাখতেই, নিজের কর্মকে অশেষ করতেই উনি মানুষের যৌনাঙ্গ সৃষ্টি করেছিলেন। এবার ওনার এক বিরাট ভুল হল, উনি মানুষের মধ্যে কুবুদ্ধি দিয়ে ফেললেন। শুধু সুবুদ্ধি রাখলেই পারতেন। কিন্তু ঐ যে ওনারও ভুল হয়। এবার মানুষ তাঁরই প্রদত্ত কুবুদ্ধি ব্যবহার করে তাঁরই সৃষ্ট যৌনাঙ্গ অপব্যবহার করে কত পবিত্র প্রাণ শেষ করতে লাগলো। এবার পৃথিবীর করুন ক্রন্দনরতা নারী আর্তনাদ করে প্রার্থনা করল, " ও গো সৃষ্টিকর্তা! তুমি আমাদের দয়া করে রক্ষা কর! পুরুষের যৌনাঙ্গের অপব্যবহার বন্ধ কর! " তখন উনি ওই অঙ্গকে অক্ষম করে দিলেন। পরিবর্তে নারীকে একক দেহে সন্তান জন্ম দেবার শক্তি দিলেন। সংশোধিত নিয়মে জগৎ রক্ষা পেলো।










প্রবন্ধ
জীববৈচিত্র্য এর গুরুত্ব
         আব্দুল রাহাজ

জীব বৈচিত্র্যে পরিবেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বাস্তুতন্ত্র কে রক্ষা করে আবার কোথাও যেন মানুষের কাছে অমূল্য সম্পদ হয়ে ওঠে। প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে স্বংমহিমায় ফুটিয়ে তুলতে জীব বৈচিত্র্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটা দেশের অর্থনীতি একটা দেশের সৌন্দর্যতা কোথাও যেন জীব বৈচিত্র্য
মেলে ধরে।
পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে জীব বৈচিত্র্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কোথাও যেনো কোথাও পাতলা এই জীব বৈচিত্র্যের এই প্রচুর মিলন সমাহারে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন বিভিন্ন ঔষধি গাছ বা উপাদান যা থেকে তৈরি হচ্ছে মানুষের রোগ নিরাময়ের ওষুধ যা থেকে উপকৃত হচ্ছে গোটা মানব জাতি। তাই ঔষধি উপাদান সংগ্রহ করতে জীববৈচিত্র্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সর্পগন্ধা কুইনাইন কালমেঘ তুলসী প্রভৃতি
কোন একটা দেশে যখন একশো শতাংশ এর  ভেতরে বেশির ভাগটাই জীব বৈচিত্র্য
সমাহার সেই দেশের জীব বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় একটা একটা দেশে জীব বৈচিত্র্য এতটাই সমৃদ্ধ যে ওখানকার সরকার পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারবে এছাড়া আরো অনেক কিছু জীব বৈচিত্র্য কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে সেই দেশে এইভাবে দেশের অর্থনীতির উন্নতির উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হবে। ব্রাজিল এর সর্বোকৃষ্ট উদারহন
একটু অবাক লাগছে না যে প্রান্তিক মানুষ কিভাবে জীব বৈচিত্র্য থেকে সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবে হ্যাঁ অবশ্যই করতে পারবে যেসব দেশে জীব বৈচিত্র্যের সমাহার আছে কিংবা যেসব দেশের মানুষ অল্প জীব বৈচিত্র্য অঞ্চলের আশেপাশে গড়ে উঠেছে তারা লাভবান হবে কিভাবে এই জীব বৈচিত্র্য তাদের কাছে মায়ের মত সেখান থেকে তারা ফল-মূল কাঠ এছাড়া বেঁচে থাকার রসদ টুকু ওখান থেকে পাবে। নিজেদের চাহিদা মতো ফলমূল কাঠ সংগ্রহ করতে পারবে। এইভাবে বৈচিত্র্য প্রান্তিক মানুষের জীবন যাপনকে সচ্ছল করতে পারে
যেসব অঞ্চলে জীব বৈচিত্র্যের প্রাধান্য বেশ অঞ্চল জুড়ে আছে সেখানে নরম কাঠের সন্ধান সহজেই পাওয়া যাবে কাগজ শিল্প ব্যাপক উন্নতি হবে। অনেক মানুষ কাজের সুযোগ পাবে ফলে কোথাও যেন জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কানাডার কাগজ শিল্পে উন্নতি কারণ সেখানকার অঞ্চলগুলিতে জীব বৈচিত্র্যের প্রাধান্য বেশি নরম কাঠ এর সন্ধান পাওয়া যায় খুব সহজেই ফলে দেশটি জীব বৈচিত্র্য কে কেন্দ্র করে এই শিল্পে উন্নতি লাভ করেছে
যেসব অঞ্চলে জীব বৈচি বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বিস্তার করেছে সেই সব অঞ্চলে খাদ্যের অভাব কিছুটা হলেও কমবে আর বাড়তি খাবার থেকে যাবে বঞ্চিত খাবারের পরিমাণ বাড়ার ফলে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য অন্য দেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। ফলে সেই অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের অভাব থাকবে না সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিতে পারবে সুস্থ সবল দেহ গড়ে উঠবে সেখানকার মানুষের ।
তাই জীব বৈচিত্র্য  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রতিটি সময়ে।











বিশ্বাস
         সাফরিদ সেখ

বিষণ্ন দিন এগিয়ে চলে ভগ্ন বিশ্বাসের প্রতিমূর্তি হয়ে।
মানব সমাজ আজ বিশ্বাস
ভাঙ্গার উদ্দাম ক্রীড়ায় মগ্ন।

বাক্যালাপে ভর করে আছে
মেকি আন্তরিকতা ,অবিশ্বাস।
উদ্দেশ্য ও ক্রিয়াপদ সংস্থাপন করে যা বলে তা একরূপ ছলনা।

যে প্রেমিক আজ প্রতিশ্রুতি দেয়
কাল অন্য প্রেমিক পেলেই ব্যাস।
সীমান্তের সিঁদুর আর ঈশ্বরের সামনে জবান  বন্দী ধুলায় লুটায়।

তবুও আজও বেঁচে আছে এই সমাজে বিশ্বাস,মূল্যবোধ নিজ মহিমায়।
আজ স্ত্রী স্বামীর বিশ্বাস শরীরে মেখে
প্রতিনিয়ত বিশ্বাসের এক পানসি নিয়ে

সংসার নামক অজানা যাত্রা পথের
অনন্তলোকে পাড়ি দেই আজও।
কেবল বিশ্বাস করেই বেঁচে ছিল।
বেঁচে আছে ।বাঁচতে চাই শতাব্দীর পর শতাব্দী।











                    অন্ধকার
                হামিদুল ইসলাম
                   
তুমি পাথর
বরাবর পাথর
তোমার একটানা নীরবতা
তোমার স্তব্ধতা
পাথরের মতো
নিশ্চল   ।।

তুমি পাথর
তোমার হৃদয় সেঁচে দেখেছি
পাই নি কিছুই
পেয়েছি পাথর
তুমি পাথরে তৈরি কঠিন হৃদয়
কঠিন   ।।

পাথরের ভেতরে থাকে না
প্রেম
ভালোবাসা
মমতা
পাথর পাথরই
পাথর   ।।

তুমি নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো
বেলা পড়ে আসে
তোমার নীরবতায় ঢাকে
অন্ধকার
আলোর মাঝেও তুমি অন্ধকার
অন্ধকার  ।।









মুখোমুখি তোমার 
          প্রশান্ত মাইতি

থমকে যাই তোমার কাছে গিয়ে
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ
ঠিক যেন পাশাপাশি পল্লবহীন  গাছ
               
নিঃসঙ্গ আঁকরে থাকা যন্ত্রনা,ঘৃণার
মতো একাকী দাঁড়িয়ে তারা
আমি বাকরুদ্ধ হই চোখে চোখ রেখে
                
যেভাবে হারিয়ে যায় ঝরা পাতার
ভিড়ে শাল,পলাশের চিহ্ন রেখা
সেভাবেই আমি হারিয়েছি কথা
            
আমি হারিয়ে যাই তোমার চোখের
তারায় ভালোবাসার সীমাহীন প্রান্তরে ।।
     









বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :
কবিতার রূপকল্প: পর্ব  ১৩
রবীন্দ্র সমসাময়িক ৪

     সৌম্য ঘোষ

             || যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ||
             -----------------------------------

                              কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
মৃত্যুর বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রোত্তর পর্বের বাংলা কবিতার নান্দীপাঠ । এই নান্দীপাঠের অন্যতম মুখ যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ( ১৮৮৭-১৯৫৪)। তার প্রথম তিনটি কাব্যগ্রন্থ------ মরীচিকা, মরুশিখা, মরুমায়া আধুনিক কালের কবিতা পাঠকের কাছে এখনো আকর্ষক । মোহিতলাল মজুমদার যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত র কবি ভাষা সম্বন্ধে বলেছিলেন এই কবি প্রচলিত কবি ভাষাকে যেন পদদলিত করেছেন । চলিত, সাধু ,সংস্কৃত , ম্লেচ্ছো, চাষা বা ভদ্র সব শব্দকেই নির্দ্বিধায় কবিতায় ব্যবহার করেছেন । ক্ষুদিরাম দাস যতীন্দ্রনাথের সঙ্গে ইংরেজি কবি টমাস হার্ডি কে তুলনা করেছেন। দুজনেরই কবিতার ভাষা লালিত্য বর্জিত, দুজনেই ছিলেন অজ্ঞাবাদী আর উভয়ই ছিলেন জীবন সম্বন্ধে নৈরাশ্যবাদী । রবীন্দ্র অনুসারীদের মত যতীন্দ্রনাথ মাধুর্যের লালিত্যে মনোহরণ করতে চাননি কবিতাকে । তিনি লিখেছেন :

"কল্পনা, তুমি শান্ত হয়েছ, ঘন বহে দেখি শ্বাস,
  বারো মাস খেটে লক্ষ কবির একঘেয়ে ফরমাস!"

তিনি লিখেছেন :

"মিথ্যা প্রকৃতি, মিছে আনন্দ, মিথ্যা রঙিন সুখ,
  সত্য সত্য সহস্রগুণ সত্য জীবের দুখ ।"

তার কবিতায় শব্দ কে বা উপমাকে বৈপরীত্য সংঘাতে বাজিয়ে তুলে জীবনের অন্তর্নিহিত বিরোধকে মূর্ত করেন এই কবি আর সেই ভাবে পরিস্ফুট হয় তার কবি দৃষ্টির স্বাতন্ত্র্য । জীবন সম্বন্ধে আবেগময় সমালোচনা এবং মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মনোভাব কবি যতীন্দ্রনাথের বৈশিষ্ট্য ।
                 কবি যতীন্দ্রনাথের একটি বিখ্যাত কবিতা উদ্ধৃতি করলাম :

       লোহার ব্যাথা
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
-       যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
ও ভাই কর্মকার
আমাদের পুড়িয়ে পিটানাে ছাড়া কি নাহিক কর্ম আর ?
কোন ভােরে সেই ধরেছ হাতুরি,রাত্রি গভীর হল,
ঝিল্লিমুখর স্তব্ধ পল্লী, তােল গাে যন্ত্র তােল
ঠকা ঠাই ঠাই কাদিছে নেহাই, আগুন ঢলছে ঘুমে
শ্রান্ত সাঁড়াশি ক্লান্ত ওষ্ঠে আল গােছে ছেনি চুমে।

দেখােগাে হেথায় হাপর হাঁপায়, হাতুড়ি মাগিছে ছুটি;
রাত্রি দুপুরে মনে নাহি পড়ে কি ছিলাম আমি ভােরে,
ভাঙ্গিলে গড়িলে সিধা বাঁকা গােল লম্বা চৌকা করে;
কভু আতপ্ত, কভু লাল, কভু উজ্জ্বল রবিসম
কভু বা সলিলে করিলে শীতল অসহ্য দাহ মম।
অজানা দুজনে গাঁয়ে আগুনে জুড়িয়া মিটালে সাধ,
ধড় হতে কভু বাহুল্য বােধে মাথাকে কেটে দিলে বাদ।
ঘন ঘন ঘন পরিবর্তনে আপনা চিনিতে নারি,
স্থির হয়ে যাই ভাবিবারে চাই,পড়ে হাতুড়ির বাড়ি।


                      || মোহিতলাল মজুমদার ||
                      ----------------------------------------

                          মোহিতলাল মজুমদার ষ১৮৮৮- ১৯৫২) এর কবিতায় দেহগত কামনার অকপট স্বীকৃতি আকৃষ্ট করেছিল আধুনিক সাহিত্য আন্দোলনের  পুরোগামীদের তারা মোহিতলালের এইসব চরণ মুগ্ধ বিস্ময়ে উচ্চারণ করেছেন, " দেহ ভরি করো পান কবোষ্ণ এ প্রাণের মদিরা ।" বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত "প্রগতি" পত্রিকায় লেখা হয়েছিল,  রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া " Revolution রূপ পেয়েছে শ্রীযুক্ত যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের " মরীচিকা"-য় এবং evolution পরিণতি লাভ করেছে শ্রীযুক্ত মোহিতলাল মজুমদারের "বিস্মরণী"- তে ।"  কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় , কবি মোহিতলাল তার পরবর্তী আধুনিক সাহিত্য সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন, " শ্মশান-ভূমির পচ্যমান আবর্জনা।" মোহিতলালের কবিতার আসল বৈশিষ্ট্য হলো তার রূপ মুগ্ধতা এবং ইন্দ্রিয়মদিরতা। ইন্দ্রিয়ের পঞ্চ উপাচারে জগতের সৌন্দর্য বন্দনা করেছেন তিনি। আর সেই কারণেই কবি রুপ তপস্যায় মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দুনিয়ার মরুভূমি মরুদ্দ্যান ইরানি তরুণীদের কথা ব্যবহার করেছেন অনর্গল আরবি ও ফারসি শব্দে। রূপমুগ্ধ বলেই এই কবি আস্থা রেখেছিলেন দেহবাদে । লিখেছেন, "সত্য রে চাহিনা তবু, সুন্দরের করি আরাধনা ।"  আবার কখনো বলেছেন, "ভুলেছি আত্মার কথা, মানি শুধু দেহের সীমানা।" তিনি দেবেন্দ্রনাথ সেনের অনুরাগী ছিলেন । দেবেন্দ্রনাথের মত সনেট রচনা তে পারদর্শী ছিলেন । মোহিতলালের কবিতার তীব্র আবেগ চৈতন্য দ্বারা শাসিত । এই কবি রূপকল্প সচেতন । তার কবিতার রূপকল্প ও ভাষা ছিল সংহত ও পরিশীলিত ।  মোহিতলাল মজুমদারের একটি কবিতা যা পাঠকদের অতি পরিচিত । স্কুল জীবনে পাঠ্যপুস্তকে পড়া সেই বিখ্যাত কবিতা টি উদ্ধৃতি করলাম :

কালবৈশাখী 
"""""""""""""""""""""
মোহিতলাল  মজুমদার
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""
মধ্যদিনের  রক্ত  নয়ন  অন্ধ করিল  কে ! 

ধরণীর  'পরে   বিরাট  ছায়ার  ছত্র  ধরিল  কে !

কানন-আনন  পাণ্ডুর   করি 

জলস্থলের নিশ্বাস  হরি 

আলয়ে-কুলায়ে  তন্দ্রা  ভুলায়ে  গগন  ভরিল  কে! 

আজিকে   যতেক  বনস্পতির   ভাগ্য দেখি   যে  মন্দ,   নিমেষ গনিছে  তাই  কি  তাহারা সারি সারি  নিস্পন্দ? 

  মরুৎ-পাথারে   বারুদের   ঘ্রাণ 

এখনি  ব্যাকুলি  তুলিয়াছে  প্রাণ? 

পশিয়াছে  কানে  দূর  গগনের  বজ্রঘোষণ   ছন্দ? 










এক মুঠো সমুদ্র
           গোপাল বিশ্বাস

(এক )
এক মুঠো ভালোবাসা চেয়েছিলাম
দিলে না
ফিরিয়ে দিলে অনন্ত গোধূলি
অন্ধকার পথের যাত্রী
পেঁচার পালকের নিচে
আমি অচেনা রাত্রি  l
তোমাকে একটা আকাশ দিতে চেয়েছিলুম
ভাসমান মেঘ দিতে চেয়েছিলুম
নিলে না
ফিরিয়ে দিলে ঝড়ো সমুদ্র ঢেউ
ওখানে যে কত ব্যথা
জানে না তো
কেউ
যে জানার কথা
সে তো নেই  l

একটা সবুজ পাতায় লেখা ছিল
আগ্নেয়গিরির সৃষ্টির আদিকথা ,
নষ্ট দুপুর T
অহল্যারা ঘুমিয়ে কান্না পাথর
দিগন্তের তরঙ্গ নীল আগুনে
অকাল --নদী --নারী  l
এক মুঠো স্বপন গুঁড়ো চেয়েছিলুম
দিলে না
উল্টো বুকে এক রাশ ঘৃণা
মুখে এক পাত্র তরল বিষ
আমি তো ভোলানাথ নই যে নীল কণ্ঠ হবো  l
সমুদ্রে ভেসে ভেসে তোমার উষ্ণ স্পর্শ পেতে চেয়েছিলুম ,
তোমার তো শরীরই নেই
শুধু ছায়াময় উলঙ্গ রোদ   l

(ক্রমশঃ )







পত্র
জুয়েল রুহানী

ভূস্বর্গীয় রানী চৈতী,
আষাঢ়ের সকালে চায়ে পেয়ালায় চুমুক দিয়ে এতক্ষণে হয়তো ঘুম ভাঙ্গিয়াছে, না ভাঙ্গিলেও আরাম-আয়েশে আষাঢ়ের সকাল অতিবাহিত করিতেছ ঘুমের ঘোরে বিভোর হয়ে।
চৈতী, জীবনের বহুটা পথ যখন অতিক্রম করিয়াছি একাকীত্বের অভিবাদনে সাড়া প্রদানের মধ্য দিয়ে তখন স্বর্গীয় হুর রুপে আমার পানে ছুটিয়া আসিলে  প্রভুর দৃষ্টি দানে মায়াবী সুর সৃষ্টি করিয়া মোর শূন্য হৃদয়খানা পূর্ণ করিতে। সেই সময় হইতে নতুন স্বপ্ন দেখিতে আরম্ভ করিয়াছি, আর ত্রমি সেই স্বপ্নগুলিকে রঙ্গীন করিয়া তুলিয়াছিলে মায়াবী রুপের আচ্ছ্বাদনে। কিন্তু সেই স্বপ্ন যে মাত্র কেয়কদিনের ব্যাবধানে আঁধারে বিলীন হইয়া যাইবে তাহা সইবার ক্ষমতা বিধাতা আমাকে প্রদান করেন নাই।
চৈতী তুমিইতো বলিয়াছিলে ক্ষণিকের এ জগৎ সংসারে দু'জনার আত্মার যে অমরত্ব সৃষ্টি হইয়াছে, তাহা যেন দু'জন-দু'জনার পানে দৃষ্টি দানের জন্য। আজ কেন তবে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন বলিয়া গণ্য করিলে? তবে কী আমি ইহাই মনে করিব, যে স্বপ্ন তুমি আমাকে দেখাইয়াছে তাহা শুধুই আবেগের নামান্তর? খেলাচ্ছলে প্রেমে মত্ত হইয়া ছলনার আড়ালে সত্য গোপন করিয়া লুকাইয়া রাখিয়াছো স্বপ্নের রুপ!

চৈতী দীর্ঘদিন পূর্বে যখন তোমার কন্ঠ আমার কর্ণগোচর হয় ঠিক তখনই আমার মনের মণিকোঠায় চিরদিনের জন্য তোমার স্থান করিয়া দেই বিশ্বাসের চরম শিখরে। আর বিশ্বাসের প্রতিদানে এই কী ভালোবাসার মূল্য?

চৈতী জানো? "পাঁকি যখন যখন আকাশে উড়তে বিশ্বাসই তখন তার একমাত্র অবলম্বন থাকে"। আমিও যেন জীবন সঙ্গী চয়ন করিয়া প্রথম উড়তে শিখিয়াছি তোমায় বিশ্বাসের আসনে আসীন করিয়া। কিন্তু তুমি সেই ডানা ভাঙ্গিয় দিলে ডানা ঝাপ্টানোর পূর্বেই! নীল গগনে ডানা মেলিয়া উড়িবার স্বপ্ন স্বপ্নি রহিয়া গেল তোমার ভালোবাসার অমর্যাদায়!

"বিশ্বাস-অবিশ্বাস মনের ব্যাপার যেখানে জোর খাটাইবার যাওয়া অন্যায়" আমি যেইকানে বিশ্বাসের চরম শিখরে পৌঁছাইতে এতটুকু কার্পণ্যবোধ করি নাই, তুমি সেইখানে অবিস্বাসের মূলমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহন করিয়াছো ছলনাময়ীর ছলে, কূট-কৌশলে! যাহা হউক সেটা তোমার মনের ব্যাপার। তোমার মনের উপর অধিকার খাটাইবার অধিকার হয়তো আমার নাই। তুমি বিশ্বাস কর, আমি শুধু এই স্বপ্নই বুকের ভিতর লালন করিয়াছি; তোমাতে বিস্বাসের যে বীজ বপন করিয়াছি তা একদিন অঙ্কুরিত হইয়া সবুজ ছাঁয়ার আচ্ছ্বাদনে সজীব করিয়া রাখিবে আমার প্রাণ।
চৈতী, তুমি যাহা চাও তাহাই হউক। তুমি অবলীলায় তোমার ভালোবাসা অস্বীকার করিতে পারিলে। কিন্তু আমি আমার ভালোবাসা পুঞ্জীভূত করিয়া রাখিবো চিরদিনের জন্য। নিষ্কলঙ্ক প্রেমের বেড়াজালে যখন আবদ্ধ হইয়াছি তখন জানিয়া রাখো;  জীবন সয়াহ্নেও ভালোবাসার মূল্য দিতে আমি প্রতীজ্ঞাবদ্ধ।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বচন স্বরন করিয়া পত্রের ইতি টানিবো, "বিচ্ছেদের দুঃখে প্রেমের বেগ বাড়িয়া উঠে" তুমি আজ আমায় অনেক দূরে তাড়াইয়া দিলে  বিচ্ছেদের অনলে দগ্ধ করিতে মোর হৃদয় জগৎ! কিন্তু আমার নিষ্কলঙ্ক ভালোবাসার অমরত্ত্বে দগ্ধ হইবে না, তাড়াইয়া দিবে না বহুদূরে, বরং হৃদয়রাজ্যে  বিচরিত সুখকর স্মৃতিগুলো মায়ার উদ্রে ঘটাইয়া তােমার কাছে টানিবে।

জীবন সয়াহ্নে রব
শূন্য পথের পথিক হয়ে
ফিরে যদি এসো কভূ
তবে ফিরব আপন নীড়ে
বীরের বেশে জীবন যদ্ধ জয়ে।
         
     তোমার প্রাণে ব্যাথা সঞ্চারক




1 টি মন্তব্য: