উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 08/10/2020
Upokontha sahitya patrika Web Megazine- 08/10/2020
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা Upokontha sahitya patrika
উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন-08/10/2020 |
"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-08/10/2020, বৃহস্পতিবারসময় :- সন্ধ্যা 5 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
🌍🌍🌍🌍🌍🌍🌍🌍🌍🌍🌍🌍🌍🌍
লিমেরিক
সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
দুগ্গা পুজোর ভাসান শেষে, ভাষণ হবে শুরু,
ভোট পুজোতে বাজবে ঢাকা, তাক কুর কুর কুরু,
আবার পাঁচ বছর পরে,
আসবে নেতা দোরে-দোরে
বলবে নেতা আম জনতা, এখন মোদের গুরু।
এখানে পিঞ্জর
হামিদুল ইসলাম
শরতের সকাল
হিম হিম হাওয়ার ছন্দ
মনের গভীরে বশংবদ জীবন আশঙ্কা
হারিয়ে যায় শরতের আকাশ
এ জীবন এখন পিঞ্জরে আবদ্ধ ।।
নৈঃশব্দ্যতা ভাঙে মন
সরীসৃপের মতো ভেসে আসে অজানা কীট
খেয়ে নেয় জীবন
রস রক্ত অস্থি মজ্জা
দাসত্বের ভয়ে কুঁকড়ে যায় পিঠ ।।
পতিত জমিতে দেখি
সূর্যের অনাবিল যাতায়াত
মগ দস্যুরা লুটে খায় ইজ্জত
মণীষার বুক ক্ষত বিক্ষত
জরায়ু বিপন্না পৃথিবীর নেই জাতপাত ।।
এখন পেছনে হাঁটার পালা
পেছিয়ে যাচ্ছে দেশ
নারীরা পুরুষের যৌন দাসী
বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও ভেক স্লোগান
মা বেটি মরে শেষ ।।
কবিতা:-
প্রিয়তম
কনিকা রায়
জানিনা কেমন আছো তুমি?
জানিনা আমায় , এখনো তোমার পরে কিনা মনে?
জানিনা এখনো দোদুল দোলে কিনা বনে?
জানিনা এখনো কদম শাখায় কোকিল গায় কিনা গান?
জানিনা তোমার কন্ঠে,
আজও ওঠে কিনা ভালোবাসার অপূর্ব সেই তান?
জানিনা তোমার, এখনো আমায় পরে কিনা মনে?
আমার কিন্তু আজও তোমায় পরে মনে ,
আজও আমার মনে তোমার উৎজ্বল প্রতিচ্ছবি সদা বিরাজমান।
প্রথম যেদিন হয়েছিল দেখা-তার পর ক্রমে ক্ষনে ক্ষনে সকলি আছে মোর মনে।
আজও মোর হৃদয়ও মাঝে দোলে যে দোদুল!
মধুর সুরে কোকিল গায় গান!!
তারি সাথে বাজে ওঠে তোমার ভালোবাসার তান !
এভাবেই বাজবে চিরকাল!!
একবার যদি পাই তোমারে কাছেতে!
মুছে দেব সব গ্লানি , সব অভিমান!!
একবার কৃপা করে এসো মোর সম্মুখে!
জুড়াবো তব পরান ,
অতিযতনে রাখিবো তোমায় আমি আপনও বুকেতে।
বিভাগ-অনুকবিতা
শংকর হালদার
০১।
শূন্যতায় সবকিছু শেষ নয়
শূন্য'র পর নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা
সংখ্যার ঊর্ধ্বমুখী মান বদলে দেয় জীবনকে ।
০২।
দিনমনির হাসি চীরউজ্জ্বল ,প্রাণদায়ক ,শক্তির বহিঃপ্রকাশ
শশীর হাসি কবিতা, গান, উচ্ছল হৃদয়ের ঢেউ
গোধূলির হাসি বিবর্ণ, ফ্যাকাসে, শত আবেগ
অস্তমিত হওয়ার বাসনা চোখে
নবভাবে জেগে ওঠার প্রতীক্ষা
এখনও জাগেনি ভোর ঘুচিয়ে কালো
লগন্ এসেছে...
বিপ্লব গোস্বামীর দু'টি ছড়া
(এক)
দুই রূপে দুই মা
আমার এক মায়ের পূজা হয়
বড়োই ধুমধামে ;
আমার অন্য মা মাঠে খাটেন
শরীর ভিজে ঘামে !
আমার এক মায়ের পূজার লাগি
বড়োই আয়োজন ;
আমার অন্য মায়ের খবর নিতে
নেইতো আপন জন !
আমার এক মাকে তুষ্ট করতে
লক্ষ বলিদান ;
আমার অন্য মায়ের ভাগ্যে জোটে
কত শত অপমান !
আমার এক মায়ের গায়ে শোভে
হাজার আভূষণ ;
আমার অন্য মায়ের লজ্জা ঢাকার
নেইতো আবরণ !
আমার এক মায়ের প্রণামী থালায়
স্বেচ্ছায় করি দান।
আমার অন্য মা ভিক্ষা মাগতে
সইতে হয় অপমান !
(দুই)
স্বরবর্ণের ছড়া
আ=অজগর অলস তাই পারে না নড়তে
আ=আম গাছে জাম গাছে পারে না চড়তে।
ই=ইঁদুরটা দুষ্ট তাই করে শুধু কাটাকাটি
ঈ=ঈগলটা ভীষণ শিকারী তীক্ষ্ণ তার চোখ দুটি।
উ=উটরা বোকা তাই মোট বয় সারাক্ষণ
ঊ=ঊষাকালে সূর্ষ উঠে পাখিসব করে কূজন।
ঋ=ঋষি মুনি ধ্যান করেন জগতের হিতে
এ=একতারা বাজিয়ে বাউল গান করে সুখ চিত্তে।
ঐ=ঐক্যতায় থাকলে বাধা নেই কোন কাজে
ও=ওজস্বী হতে পারি সম্ভাবনা সবার মাঝে।
ঔ=ঔচিত্য কাজ করে আমরা সব হব মহান
জগৎ মাঝে রেখে যাব আমাদের সেরা দান।
প্রবন্ধ
জীবনের দৈনন্দিন ঘটনা ও সাহিত্যে তার প্রভাব
অগ্নিমিত্র
একজন লেখকের দৈনিক জীবনে যা ঘটনা ঘটে, অবশ্যই তার একটা প্রভাব তাঁর লেখায়ও পড়ে। অনেক সময়েই সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করেই লেখক অনেক গল্প বা কবিতা লিখে থিকেন। যেমন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ' আরণ্যক'উপন্যাস । লেখক সাঁওতাল পরগণায় কর্মসূত্রে অনেকদিন ছিলেন, তাই সেখানকার ঘটনাবলী অবলম্বন করে এই উপন্যাস লিখেছেন। অথবা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ' গল্পগুচ্ছ '। লেখক জমিদারী তদারকির জন্য শিলাইদহ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যেতেন; সেখানকার লোকেদের সাথে কথোপকথনের সূত্রে ও নিরীক্ষণ অভিজ্ঞতা থেকেই অনেক গল্প লিখেছেন।
আবার অনেক সময়ে এই ঘটনাগুলি লেখকের মনেও নানা প্রভাবও ফেলে, যার ফলে তাঁর একটি বিশিষ্ট মানসিকতা তৈরী হয়। এগুলির প্রভাব পড়ে তাঁর লেখায় ।।
••••••••••••••••
করোনা-য় আক্রান্ত হয়ে
আমাদের ছেড়ে বিদায় নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন
সাগর দ্বীপের ফুল ডুবি মাদ্রাসা প্রধান শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জীবদ্দশায় লেখা ছড়াটি আজ স্মৃতিচারণা ও আত্মার শান্তি কামনায় উপহার দিলাম
সাগর দ্বীপে
জাহাঙ্গীর দেওয়ান
ফুলডুবির ইস্তেমাতে
জমল মেহ্ফিল ,
জনসমুদ্রে মাদ্রাসামাঠ
হ'লযে ফুলফিল।
মুফতি সা'বের বয়ানে
মন করে আনচান ,
মেহমানদারী খিদমতে
ব্যস্ত নওজোয়ান।
লঙ্কা ও তরমুজ চাষেই
যাদের কপালে হাত ,
মিনধরে ও গরানকেটে
চলছে দিনাতিপাত।
রাস্তাঘাটে মাবোনদের
দেখাই মেলা ভার ,
ধানচাষে ও পানচাষে
রাত্দিন দরবার।
দূরে দূরে বাড়িগুলো সব
দাঁড়িয়ে পুকুরধার ,
গাছগাছালি পাখপাখালি
সব্বাই একাকার |
পা'রহাল ও গা'র হালনেই
নেয় চাষেই যতন ,
সাদামাটা জীবন তাঁদের
শিক্ষাতে সচেতন।
কবিতা:-
পথের পথিক
আব্দুল রাহাজ
ও পথের পথিক
তুমি যাচ্ছ কোন দেশে আরে বাবা যাচ্ছি এক সে দেশে
তোমার তল্পি টাই পথিক
সে জেনে তোমার কি হবে
আচ্ছা আচ্ছা বাবা তাই হবে
তা পথিক তুমি যাচ্ছ কোন দেশে
একটু একটু রেগে বললো পথিক তোমার জেনে কি হবে
একটু থেমে পথিক বলে যাচ্ছি সে এক দেশে
যে দেশেতে নেই কোনো অশান্তি নেই কোনো স্বার্থপরতা সেই দেশেতে যাচ্ছি।
মনুষ্যত্ব
জুয়েল রূহানী
মানুষরূপী হায়েনার দল
কান পাতিয়া শোন,
মাতিয়া না থেকে,কর রে-
হেফাজত যৌবন!
লোভ-লালসায় মত্ত থেকে
করিস না অন্যায়,
ব্যাভিচারে লিপ্ত থেকে-
মনোবাসনায়!
পশু রূপের মুখোশ কে শোন
কর্ রে উন্মোচন,
মনুষ্যত্বের বড় পরিচয়ে-
পাবি রে সম্মান!
বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :
কবিতার রূপকল্প : পর্ব ১৭
|| রবীন্দ্র পরবর্তিকাল এবং আধুনিক কবিতার আন্দোলন ||
( দ্বিতীয় অংশ )
সৌম্য ঘোষ
১৯০০ সালের প্রারাম্ভে বা তার আগে-পরে বাংলা সাহিত্য জগতে দিকপাল নক্ষত্র গনের আবির্ভাব হয়েছিল । এঁদের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ বয়সে একটু বড় ( ১৮৯৯--১৯৫৪) । সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১--৬০) , মনীশ ঘটক (১৯০২--৭৯), অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (১৯০৩--৭৬),
জসীমউদ্দীন (১৯০৩--৭৬), অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪--), প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪--৮৮), অজিত দত্ত (১৯০৪--), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-- ৭৪) , সঞ্জয় ভট্টাচার্য (১৯০৯--৬৯) এবং বিষ্ণু দে (১৯০৯--) ইত্যাদি।
আধুনিক কবিদের মধ্যে বয়সের সবচেয়ে বড় জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্র পরবর্তী কালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে অবিসংবাদিত স্বীকৃতি পেয়েছেন। কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে আলোচনা একটু পরে করবো। প্রথমে যার কথা বলতে চাই, তিনি স্বনামখ্যাত প্রেমেন্দ্র মিত্র। প্রেমেন্দ্র মিত্র, সম্পূর্ণ আধুনিক কবি কিনা এ নিয়ে নানাজনের সংশয় আছে। কিন্তু গল্পকার হিসেবে তাঁর আধুনিকতা প্রবাদপ্রতিম। কবি হিসেবে প্রেমেন্দ্র মিত্র যেন নজরুল ও আধুনিকদের মধ্যে যোজক । দুই সময়কালের মধ্যে তিনি সেতু-বন্ধন করেছিলেন। বলা যেতে পারে, আধুনিকতার ভূমিকা তিনিই রচনা করেছিলেন। তাঁর কবিতায় রচনাগত সরলতা তাঁকে জনপ্রিয়তা দিয়েছে। রবীন্দ্র পরবর্তী কালে গদ্যছন্দের চর্চায় তিনি সফল হয়েছিলেন। তাঁর কবিতায় উৎকণ্ঠা বা সমাজ বিরোধিতা নেই। নেই বৈয়াকরণিক বিপর্যয় বা বাগভঙ্গির তীর্যকতা । তাঁর কবিতা সরল আশাবাদ দ্বারা প্রাণিত । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "প্রথমা" চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল :
"এ মাটির ঢেলা কবে যে ছুঁড়িল সূর্যের পানে ভাই
পৃথিবী যাহার নাম ?
লক্ষ্যভ্রষ্ট চিরদিন সে যে ঘুরিয়া-ঘুরিয়া ফেরে
সূর্যেরে অবিরাম ।"
কিম্বা,
"আমি কবি যতো কামারের আর কাঁসারির আর ছুতোরের ,
মুটে মজুরের --
আমি কবি যত ইতরের ।"
এই কবিতাকে কি ব্যঙ্গ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তাঁর কবিতা "শৌখিন মজদুরি ।"
অনেক সময় তাঁর কবিতায় পাওয়া যায়, নজরুল সুলভ কাব্যিক বাগ্মিতা । প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা আমরা পাই পরাজিত মানুষের প্রতি মানবিক করুণা এবং মুক্ত পৃথিবীর মানব ইতিহাসের হাতছানি :
" পৃথিবীর স্তরে স্তরে কত ঘুম অগাধ অধীর
সুমের, মেম্ফিস, উর, নিনেভে, ওফির
মরুর বালুকালুপ্ত গাঢ় ঘুম
কত নগরীর;
অন্ধকারে আজো তার ঢেউ ।"
শতাব্দীর সমান বয়সী কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি আত্মমগ্ন নির্জনতার কবি ছিলেন না। তিনি মনে করতেন, সভ্যতার বাইরে ব্যক্তিসত্তার অস্তিত্ব বা মুক্তি নেই। 'ব্যক্তিগত মনীষায় জাতীয় মানস' ফুটিয়ে তোলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এলিয়ট বলেছিলেন, পোড়ো জমি আর ক্যাকটাসের কথা । সুধীন্দ্রনাথ বললেন, মরুভূমি আর ফণীমনসার কথা। "ভগ্ন সেতু নদীতে নদীতে/
মরু নগরে নগরে ।" তাঁর প্রথম কাব্য "তন্বী" । পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়, 'অর্কেস্ট্রা', 'ক্রন্দসী', 'উত্তর ফাল্গুনী', এবং'সংবর্ত'। শেষ কাব্য 'দশমী' ।
"অবশ্য অপ্রতিকার্য অন্তিম কুম্ভক:
অনুত্তার্য নাস্তির কিনারা ;
বৈকল্যের ষড়যন্ত্রে তুঙ্গী ধ্রুবতারা
ও মগ্ন চুম্বক ।"
কখনো লিখেছেন ,
"জন্মাবধি যুদ্ধে যুদ্ধে, বিপ্লবে বিপ্লবে
বিনষ্টির চক্রবৃদ্ধি দেখে, মনুষ্যধর্মের স্তবে
নিরুত্তর, অভিব্যক্তিবাদে অবিশ্বাসী, প্রগতিতে
যত না পশ্চাৎপদ , ততোধিক বিমুখ অতীতে।"
কখনো রোমান্টিক হয়ে যান,
"বাঁশির বর্বর কান্না, মৃদঙ্গের আদিম উচ্ছ্বাস ।"
কখনো লেখেন,
"তোমারে ভুলিবো আমি, তুমি মোরে, ভুলিবে
নিশ্চয়;
মদনের চিতানলে অনঙ্গের হবে আবির্ভাব.."
কবি অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১--৮৬) রচনা ভঙ্গিতে রবীন্দ্রনাথ থেকে স্বতন্ত্র হলেও রবীন্দ্র ভাবনা মন্ডলের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থ
'খসড়া', এবং 'একমুঠো' প্রকাশের পরই তিনি পাঠকের নজরে আসেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কবিতার বই 'অভিজ্ঞান বসন্ত', 'দূর যানি', 'পারাপার', 'পালাবদল' ইত্যাদি ইত্যাদি। অমিয় চক্রবর্তীর কবিতায় হপকিন্সের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ।
"অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে।
বৃষ্টি ঝরে রুক্ষ মাঠে, দিগন্তপিয়াসী মাঠে, স্তব্ধ
মাঠে,
মরুময় দীর্ঘ তিয়াষার মাঠে..."
তিনি লিখেছেন,
" শুধু জানি আগুন, আগুনের কাজ, সৃষ্টির
আগুন লাগলে প্রাণে
তীব্র হানে বেদনা জাগবার, আর্টের আগুন
মরিয়াকে টানে । "
কবি অমিয় চক্রবর্তীর কবিতায় আমরা পাই এক মরমীয়াবাদ । পাই অলৌকিকতা। পাই সেক্যুলার আধ্যাত্মিকতা ।
"মেলাবেন তিনি ঝড়ো হাওয়া আর
পোড়ো বাড়িটার
ঐ ভাঙা দরজাটা।
মেলাবেন ।"
যিনি মেলান , তিনি 'হে প্রভু ঈশ্বর মহাশয়।'
মহামন্বন্তরের বেদনায় তাঁর কবিতার আলো আজো অনির্বাণ:
"পাথরে মোড়ানো হৃদয় নগর
জন্মে না কিছু অন্ন--
এখানে তোমরা আসবে কিসের জন্য?....
আসো যদি তবে শাবল হাতুড়ি
আনো ভাঙাবার যন্ত্র
নতুন চাষের মন্ত্র। "
কী অসাধারণ স্তবক !
কবি বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮--৭৪)
----------------------------------------------
তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক । বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকের নতুন কাব্যরীতির সূচনাকারী অন্যতম কবি । তবে সাহিত্য সমালোচনা ও কবিতা পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনার জন্য তিনি বিশেষভাবে সম্মাননীয়। 'প্রগতি' ও 'কবিতা' পত্রিকার সম্পাদক এবং 'কবিতাভবন' প্রকাশনার কর্ণধার হিসাবে আধুনিক বাংলা কবিতা আন্দোলনের প্রধান নেতা ও মুখ্য প্রচারক। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'বন্দীর বন্দনা' প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কবি পরিচিতি খ্যাতি লাভ করে। পরবর্তীকালে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ 'কঙ্কাবতী', 'দময়ন্তী', 'শীতে প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর',
'যে আঁধার আলোর অধিক', 'মরচে-পড়া পেরেকের গান' প্রভৃতি। তিনি রোমান্টিক, অন্ত: প্রেরণায় বিশ্বাসী, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ আস্থাশীল। তাঁর কবিতা পড়ে স্বয়ং কবিগুরু প্রীত হয়েছিলেন ।
কাব্য জীবনের সূচনায় তিনি লিখেছিলেন :
"আমি যে রচিত কাব্য, এই উদ্দেশ্য ছিল না স্রষ্টার,
তবু কাব্য রচিলাম ; এই গর্ব বিদ্রোহ আমার।"
তিনি মনে করতেন, প্রকৃতি ও চৈতন্যের দ্বন্দ্বই আধুনিকতার মূলকথা । তিনি র্যাঁবো , বোদলেয়ার, হেরডারলিন , রিলকের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে রোমান্টিক কাব্য কালিদাসের 'মেঘদুত'-এর অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য 'দময়ন্তী' কাব্যগ্রন্থ চিরন্তন যৌবনের বন্দনা । তাঁর কবিতায় আছে প্যাশনের তীব্রতা।
"ঘুম নেই, স্বপ্ন নেই, দিন নেই,
কিছু নেই , কিছু নেই.....
আমার উন্মত্ত তীব্র, আত্মহারা
ভালোবাসা ছাড়া ।"
বুদ্ধদেব বসুর সবচেয়ে ভালো কবিতা সংকলন
"যে-আঁধার আলোর অধিক" । কেন উপমা, কেন ছন্দ, কিভাবে স্মৃতি বা মগ্নচৈতন্যে সঞ্চিত অভিজ্ঞতাপুঞ্জ থেকে তৈরি প্রেরণার তাড়নায় কবিতার জন্ম হয়, কিভাবে চৈতন্য সেই আবেগের তাড়নাকে বশীভূত করে , এইসব প্রশ্নের কাব্যময় জবাব খুঁজেছেন এই বইতে। কবির সঙ্গে কবির এই সংলাপের বিষয় কাব্যাদর্শ । তিনি বলতেন, প্রেরণা বিনা কবির গতি নেই , ' সারথি নিস্পৃহ যবে, সেইক্ষনে নিঃশেষ অর্জুন "।
বিষ্ণু দে
----------------
বিষ্ণু দে (১৯০৯--৮২) -র কবিতায় পাওয়া যায় এক বিবর্তন ধারা । তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ
'উর্বশী ও আর্টেমিস' , ' চোরাবালি' , 'অন্বিষ্ট', ' আলেখ্য', 'স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ', 'ইতিহাসে ট্রাজিক উল্লাসে' প্রভৃতি । তাঁর কাব্য জীবনে প্রথম পর্বে তিনি এলিয়টের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর কাব্যে এলুয়ার, লোরকা, নেরুদা প্রভৃতির ছায়া নজরে পড়ে। তিনি লিখেছিলেন, "মানুষের অরণ্যের মাঝে আমি বিদেশী পথিক ।" তিনি প্রার্থনা করেন, "মৈনাক ডুবিয়ে দিক পৃথিবীর জনতাকে আজ।" উজ্জীবনের ইশারা বিখ্যাত কবিতা "ঘোড়সোয়ার"
এ গতিতীব্র অশ্বক্ষুর ধ্বনির মধ্যে:
"হে প্রিয় আমার, প্রিয়তম মোর,
আয়োজন কাঁপে কামনার ঘোর ।
কোথায় পুরুষকার ?
অঙ্গে আমার দেবে না অঙ্গীকার ?"
নাগরিক কবি সান্নিধ্য কামনা করেছেন প্রকৃতির,
"শহরের মন যায় থেকে থেকে ছোট সেই গ্রামে ।"
কবির প্রার্থনা তাই ----- "জল দাও আমার শিকড়ে।"
যে বিষ্ণুদে প্রথম পর্বের কবিতায় বিদেশি পুরাণের অনর্গল ব্যবহার করতেন, পরবর্তীকালে তিনি ফিরে আসেন দেশজ পুরাণের কাছে । তাঁর কবিতায় আসে রূপকথা, দেশজ- প্রাকৃত বাচন, কথ্য ভাষার ছন্দ ।
এই সময়ে অন্য কবিদের মধ্যে অন্যতম মনীশ ঘটক (১৯০২--৭৯) । তাঁর কাব্য গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'শিলালিপি', 'যদিও সন্ধ্যা', 'বিদুষী বাক' ইত্যাদি। কবি মনীশ ঘটকের কবিতাতেও প্যাশনের তীব্রতা আছে ।
"হায় সখী , হায়
তুমি তো জানিলে নাকো সেই মৃগায়ায়
এক অস্ত্রে হত হলো মৃগী ও নিষাদ ।"
জসীমউদ্দীন
---------------------
এই সময় আমরা পেলাম কবি জসিমউদ্দিনকে । তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক। 'পল্লীকবি' উপাধিতে ভূষিত । জসীমউদ্দীন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি।ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগরসভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব জসীমউদ্দীনের। তাঁর 'নকশী কাঁথার মাঠ' , ' রঙ্গিলা নায়ের মাঝি' ও 'সোজন বাদিয়ার ঘাট' বাংলা ভাষার গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শনগুলোর অন্যতম। এগুলি দেশভাগের আগে প্রকাশিত হয় । তাঁর কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর সঙ্গে কুমুদরঞ্জন মল্লিকের কিছুটা মিল আছে।
"তবুও গাঁয়ে নামলো না জল , গগনখানা ফাঁকা;
নিঠুর নীলের বক্ষে আগুন করেছে যেন খাঁ খাঁ ।"
ওনার কলম :
|| আমন্ত্রণ ||
---------------------------
"তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,......."
এই সময়ে অন্য কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অজিত দত্ত (১৯০৭--৭৯) । অজিত দত্ত তাঁর কবিতায় এক নিপুণ রোমান্টিক সুর সংযোজন করেছিলেন । তাঁর সেই বিশিষ্টতা পাওয়া যায় তাঁর কাব্যগ্রন্থ 'কুসুমের মাস' ও 'পাতাল কন্যা'গ্রন্থে :
" তুমি ফুল ভালোবাসো? লাল ফুল? চোখে
যাহা লাগে,
কঠিন সৌন্দর্যে যার নয়ন সে হয় প্রতিহত?
আমিও কুসুমপ্রিয় । আজিকে তো কুসুমের মাস
মোর হাতে হাত দাও, চলো যাই কুসুম-বিতানে।
বসিয়া নিভৃত কুঞ্জে কহিবো তোমার কানে কানে
কোন ফুলে ভরে আছি জীবনের মধু অবকাশ।"
তাঁর কাব্য নায়িকা মালতী । সেই মালতি যেন লোককথার রাজকন্যা। সনেট রচনায় অজিত দত্ত কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য, কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, হেমচন্দ্র বাগচী (১৯০৪--), অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪--), নিশিকান্ত রায়চৌধুরী (১৯০৯--), সঞ্জয় ভট্টাচার্য (১৯০৯--৬৯) প্রভৃতি। মূলতঃ কথাসাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত কবিতার বইয়ের সংখ্যা মাত্র সাত । হেমচন্দ্র বাগচীর কবিতায় চেয়ে দেখার আনন্দ আছে । তাঁর কবিতার বই 'দীপান্বিতা' , 'মানস বিরহ' । অন্নদাশঙ্কর রায়ের খ্যাতি মূলতঃ ছড়াকার হিসেবে বেশি । তাঁর বিখ্যাত ছড়া ----
" তেলের শিশি ভাঙলো বলে খুকুর পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙে ভাগ
করো
তার বেলা ?"
"পূর্বাশা"- পত্রিকার সম্পাদক কথাসাহিত্যিক সঞ্জয় ভট্টাচার্য কিছু ভালো কবিতা লিখেছিলেন। 'সাগর ও অন্যান্য কবিতা', 'উর্বর উর্বশী', 'প্রাচীন প্রাচী' প্রভৃতি তাঁর প্রধান কাব্যগ্রন্থ। তিনি তাঁর কাব্য জীবনে , এক এক পর্বে এক এক কবি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন ।
"এই আলো এই ছায়া যখন উধাও
বিকেলের উপকূলে বিকেলের শ্বাস ফেলে চুপচাপ
ঝাউ
ভালো-লাগা ভালো-লাগা মন----- নেই তা- ও
তখনো হয়তো কিছু থাকবে কোথাও ।।"
গান
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
এতো বেশি হোলো
বেশ --ই তো হোলো
মৌ বনে আর যাবো না
মধু নাকি আর পাবোনা
যৌবন হারিয়ে গেছে
রয়ে গেছে স্মৃতি টুকু শুধু
ভুল করেও আর সেথা যাবো না।
না না না।
ভালোই তো হোলো
আর যাবো না।
কবিতা
নারী
মিনতি গোস্বামী
অবলা
বলে নারীকে
রেখেছিলে বহুদিন ঘরে
লাঞ্ছনা, প্রতারণা ছিল অলংকার
পুরুষের অবদমিত ইচ্ছাপূরণে ছিল গৃহবন্দী
শুনেছি বহুযুগ কর্মী পুরুষের জয় জয়কার।
পুরুষের ক্ষমতায়নে চাপা পড়ে নারীর হাহাকার
এখন ধরা পড়ছে সব ফন্দি
নারীও হতে পারে নির্ভার ,
নারীকে বন্ধনমুক্ত করে
করো তাকে
সবলা।
এক দিন যেতেই হবে
মোঃআলিউল হক
প্রভাতে ফোটে ফুল
সুবাসিত করে
গন্ধ হীন হয় তাহা
দুপুরের পরে,
সাঁঝে ধুলোয় মেশে
কে নেয় খোঁজ
কত প্রান এরূপে
ঝ'রে যায় রোজ ।
সময়ের হাত ধ'রে
সম্মুখে চলা,
কে আছি কে নাই
যায় নাকো বলা।
সত্য যাহা মেনেছি
জন্মিলে অবন -
এক দিন যেতে হবে
ডাকিলে মরণ।
চলেই যাবো
গোপাল বিশ্বাস
এসেছি একা
যাবো একা
কেউকে নেব না সাথ
মৃত্যুর সাথে বাঁধা
আমার দুটো হাত l
অভিনয়ে
খেলাচ্ছলে
সময় করছি পার
বেলা শেষে ভাঙা হাট
হিসাব মেলাচ্ছি কার ?
কেন এলাম
কেন গেলাম
কোথায় আমার ঘর
মানুষের জন্যই মানুষ কাঁদে
আপনকে করি পর l
ভূতের গল্প
ভূতের ভয়
নুরসেবা খাতুন
ঘড়িতে দেখি ১১টা বাজতে চললো, আমি রোজ কার মতো হাতে একটা বই নিয়ে শুয়ে পড়লাম ,কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি হঠাৎ মেঘের গর্জনে ঘুম ভেঙ্গে যাই ।চোখ খুলেই দেখি ঘুটঘুটে অন্ধকার মনে হচ্ছে আমি একটা অন্ধকাময় কূপে পরে আছি। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি সাথে বজ্রবিদ্যুৎ সে কি বিকট ভয়ংকর আওয়াজ, শরীর যেন শিউরে উঠল, বুকের ভেতর টা যেন ভয়ে শেদিয়ে যাচ্ছে ,এদিকে আবার ঘড়ের জানালা দরজা গুলো এক ধাক্কাতেই খুলে গেল আর সেগুলো হাওয়ায় দুলতে থাকে, আর খটখট আওয়াজ করে মনে হচ্ছে সব হাওয়া এবার ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। ঘরের আসবাবপত্র, একেএকে মেঝেতে পড়তে শুরু করলো, আর এদিকে আমি ভয়ে কাঠ হয়ে গেছি, হাত-পা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে, শুনেছি ভূতেরা নাকি মধ্যরাতে আসে আর ভোরের আগে আগে চলে যায়, বিছানা হাতড়ে লাইট- টা পেলাম ঘড়ির দিকে একবার জ্বালাতেই দপ করে নিভে গেল, দেখলাম প্রায় ১২টা বাজতে চললো এবার আমি ভয়ে শেষ।সব জিনিস মেঝেতে পড়তে থাকে, মেঘের ভয়ংকর গর্জন আর প্রচন্ড বেগে হাওয়া বইতে শুরু করলো দেখি দরজার সামনে সাদা শাড়ী পরে একজন দাঁড়িয়ে আছে । চুল গুলো ও সব সাদা ।চোখ দুটো লাল আর হাতে ,চোখে ,মুখে, রক্তের দাগ লেগে আছে ,আর হাতে একটা ধারালো অস্ত্র, দেখে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল, বুকের ভেতর টা যেন শূকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে,মনে হচ্ছিল আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। কথা বলার মতো কোনো অবস্থাতে-ই নেই,চোখ দিয়ে শুধু জল গড়িয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায দরজা থেকে শুনতে পাই 'আয় চলে আয় তোর সময় শেষ' ওঠ চলে আয় ,দেখি গুটি গুটি পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করি তারপর কি হলো আমার কিছু মনে নেই তারপর চোখ খুলেই দেখি মা বাবা আমার পাশে বসে আছে আর বলছে আমার কি হয়েছিল আমি চিৎকার করছিলাম কেন আমি তো অবাক দেখি ঔ বুড়ি উধাও, কেউ কোথাও নেই তখন ঝড়ের কোনো চিহ্ন মাএ নেই, সব যেন ম্যাজিকের মতো উধাও হয়ে গেল , বুঝলাম আমি ভূত দেখেছিলাম, হয়তো একেই বলে ভূতের ভয়।
সাফরিদ সেখ এর দু'টি কবিতা
পাহাড়ী পথ -১
ইলিশের মতো সাদা গগন চুম্বী বৃক্ষ।
পাহাড়ী পথ মৃত্যু অনিবার্য।
চালক এক মনে পথ কেটে চলছে।
চালকের একটা ভুলেই ঘটে যেতে পারে
মহা বিপদ ।আমরা চলে যেতে পারি।
খাদের কিনার থেকে গভীরে।
এক মুহূর্তে শত প্রাণ বেরিয়ে যেতে পারে।
শত শত প্রিয়জন হারাতে পারে
নিগূঢ় ভালোবাসার সুশীতল নীড়ে।
এই পাহাড়ী পথ চলেছে বাইজি নাচে।
কখনোই হাটে না চলে।
প্রতিবেশী গা শুধুই নীরবে দেখে।
পাহাড়ী পথ ২
এ রাস্তা নয় যেন পুরসেরাত
আমরা সবাই ব্যস্ত আপাতত।
প্রাণবায়ু মুঠোর মধ্যে নিয়ে
ভীড় বসে নিজেকে বন্দী করি।
লিঠিপাড়া হয়ে গোড্ডা চলেছে এই রাস্তা।
কেউ করেনা সুষ্ঠ ব্যাবস্থা।
রাস্তা যেথা চলেছে সেটা কি বলি?
সেটা বনপদ !না দারিদ্র প্রদেশ!
এমন পথ কে চাই?উত্তর অজানা।
শাসকের চোখে পড়ে না।
স্মৃতি
ইউসুফ মোল্লা
চুড়ুইপাখি থাকতো চিলেকোঠার ফোকরে।
আজ আর চিলেকোঠার ফোকর নেই,
এসি-র শীতল হাওয়া বেরিয়ে যাওয়ার ভয়ে!
তাই চুড়ুইপাখির কুড়িয়ে আনা খড়কুটো দেখি না,
যেভাবে দেখি না তোমার কেশের বাহার।
গাঁদাফুলের আর বাগান করি না,
তোমার মাথায় গোঁজা হয় না বলে।
শিশুদের আর ছোটাছুটি কোলাকুলি দেখি না,
বৃষ্টির দিনে মাঠের মাঝে ফুটবল নিয়ে।
সব শিশু বাড়ি ফেরে, পড়ে থাকে শূন্য মাঠ।
কাদাখোঁচা পাখি খাবার খোঁজে;বিফল হয়ে বাড়ি ফেরে,
যেভাবে আমিও খুঁজেছি তোমাকে মাঠে-ঘাটে।
কোথাও দেখি না এসব; হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিকে।
___________
সত্যিই আমরা এগিয়েছি
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
মহাভারতে হয়েছিল এক দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ।
এখন হচ্ছে অগণিতা ধর্ষিতার রক্ত ক্ষরণ।
তখন ছিল রাজার শাষিত সমাজ।
আর আজ?
গণতন্ত্র করছে রাজ।
সত্যিই কী বদলেছে শাষণের ধরণ?
সত্যিই কী মাতৃজাতী পাচ্ছেন সম্মানের বরণ?
তখন ছিল এক দুর্যোধন, এক দুঃশাসন,
আর ছিল মিত্র এক করণ।
এখন তারা অগণিত সংখ্যায়।
বহু শাসক এখন দুনিয়ায় নেয় সৎ-শপথ।
অথচ অন্যায় অত্যাচারে করে জন-শাসন।
নৃশংসতা আজ দেয় গণমত।
বাজছে নির্যাতনের বিজয়ী বাদ্য উচ্চ ডঙ্কায়।
এরা করছে নারীত্ব হরণ।
মাতৃত্ব আঁধারে লুকোয় আত্মশঙ্কায়।
হ্যাঁ এখন আর বন্দিনী নয় দেবী লঙ্কায়।
আজ তো উনি আপন মাতৃভূমিতে বন্ধ।
সকল দেশ - সন্তানগণ কী হল তাহলে অন্ধ?
তারা কী সকলেই ধৃতরাষ্ট্র?
হায়! স্বাধীন রাষ্ট্র!
হায় রামায়ণ! হায় মহাভারত!
কোথায় আজ শ্রী রাম ও শ্রী কৃষ্ণের রথ?
কোথায় ধর্ম, কর্ম, রক্ষাকারী, চির সৎ?
কোথায় সেই সে পবিত্র বৈদিক পথ?
কোথায় যত মত তত পথ?
আজ কন্যা দুর্গা বোধনের পূর্বেই হচ্ছে বিসর্জিতা।
নারী শক্তি শুধুই নির্যাতিতা।
জন্ম, জীবন হচ্ছে বৃথা।
নয় কুমারী কন্যা আর এখন দেবীরূপে আদৃতা।
অশুভ আশ্বিন
উমর ফারুক
ভাদ্র গিয়ে আসবে যে মাস
কোকিল ডাকে তাই
পাখির গায়ে খুশির আমেজ
শিশির ভেজা পায়।
নদীর আমেজ পৃথিবী জুড়ে
প্রজাপতির মাঠ
আমোদ করে ইঁদুর-বেড়াল
ওই বসেছে হাট।
এ গাছ ও গাছ দাপিয়ে বেড়ায়
বানর নাচে বেশ
আশ্বিন মাসে মিলবে নাকি
সঙ্গী দেরই দেশ।
শুভ কি আর সবার কাছে?
ব্যাঙ হবে খুব দুখী
নাচবে ঝিঁঝি ছাড়পোকা উই
পারবে না দিতে উঁকি।
কিন্তু শকুন আকাশ থেকে
বিছিয়ে দিবে ফাঁদ
কখন তুমি আটকে যাবে
মৃত্যুর পাবে স্বাদ.!!
হারিয়ে যাবো
অনাদি মুখার্জি
নামটি তোমার মিষ্টি ,তুমি একটু কথা বলো ,
তোমাকে দেখে আমার মনে প্রেমের আশা জাগলো !
মিষ্টি মুখে মিষ্টি হাসি যখোন তুমি হাসো ,
আমার হৃদয়ে তখন যে কালবৈশাখীর ঝড় তোলো !
হারিয়ে যায় তোমায় দেখে আমি গভীর অতল ,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি সাজো তখন !
চোখটি তুমি নাচিয়ে আমার সাথে বলো কথা ,
ভাবি আমি তখন তোমাকে নিয়ে নানা রুপকথা !
হাঁটো যখন নূপুর পায়ে আমার পাশ দিয়ে ,
চুপটি করে তাকিয়ে দেখি তোমার সুন্দর চলন কে !
আসতে করে কথা বলো অলপ হাসো তুমি ,
চোখের ইশারায় কি যে বলো অবাক হয়ে দেখি আমি !
এলাকেশি অষ্টাদশী অপরূপা ফোর্সা গায়ের রং ,
তোমার প্রেমের মগ্ন আমি দেখাও শত ঢঙ !
তোমার কথার মিষ্টি সুরে আমার অনুভূতি জাগে,
সব কিছু কাজ ভুলে গিয়ে থাকি তোমার পাশে !
তোমার মতোন এত ভালো মন তো কারোও নাই
তোমার ভালোবাসা ছোঁয়া পেয়ে কবিতা লিখে যায় !
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে। উপকন্ঠের দিন দিন শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। প্রায় সকলেই ভালো লিখেছেন। নাম না নিয়েও বলা যায় সকলেই প্রশংসার যোগ্য।
উত্তরমুছুন