বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 14/10/2020

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 14/0/2020
Upokontha sahitya patrika Web Megazine- 14/10/2020
Upokontha sahitya patrika
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা 
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 14/10/2020


The Old Peepal Tree
                   By Sabir Ahmed

              Day after day passed by.
  A peepal tree uprights near a deserted path.
    Seems to be aged. Stares lifelessly
With its bulky body wrapped by creepers.
Twisting and wavy arms are much to rotted,
And quarterly broken, broken by either gypsies
      Or bohemians or the needy .
Giant has died lately stretching leafless canopy
      Reigned over the realm of plants
  By casting shadows and obstructing light.
No colony of bird's fledgelings is built else !
       No feet prints of men are there !
  Lying on back on base roots from ground,
Some grass-cutters had sang without stopping;
  Songs of separation from losing someone,
  In estival solstice or when sweat would come out.
     One or two flautists tuned up magically
          Keeping the flute along the lips,
More thrilling than canaries in Macaronesian ;
  Peculate singing the visitors' acumen.             
The tree that reminds my agile childhood;
   Is an ideal icony future.
Fomented fair by nature will decay shortly !
     Provident power must stumble down !
    Cosiness will be dim through the ptosis !
       Through  time,action and destiny !





The Flowers

Mahitosh  Gayen


Look at the flowers blooming with love,

Look at the flowers on the tree, life ...

The flowers are blooming...


look at the flowers of love ...

The flowers are green,

The flowers of life..

Come sing people's songs, come flowers.


Mixed with flowers are men,flowers are women,Come,forget violence,envy,love flowers;

Flowers and people are the lifeblood

of the dying world.





কবিতা :
তোমাকে বলছি!
               বিশ্বজিৎ কর

ভালবাসার জমিতে,
অভিমানের মহীরুহটাকে -
উপড়ে ফেলেছি,একটু দেখে নিও!
আন্তরিকতার ক্যানভাসে,
সন্দেহের ছবিটাকে -
মুছে দিয়েছি,একটু বুঝে নিও!
কামনার কোমল শয্যায়,
তোমার উদাসীনতায়-
আঘাত হেনেছি,একটু ভেবে দেখো!
হ্যাঁ,তোমাকে বলছি!




মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা

(১)
বেশ‍্যা

মুখে
রং মেখে
মেয়ে  রাস্তায় দাঁড়ালে
তাকে আমরা বেশ‍্যা বলি
সমাজের অন্ত‍্যজ বলে ঘেন্না করি
ছুঁড়ে ফেলে দিই সমাজের মূলস্রোত থেকে।

যারা  পবিত্রতার বোরখায় নিজেকে রাখি ঢেকে
তারা শুধু নারীর দোষ ধরি
পাঁকের পুরুষ নিয়ে চলি
পুরুষ অন্ধকারে হারালে
রাখি ঢেকে
বুকে ।

(২)

উপায় কোরো মা

মাগো
এবার পূজায়
কাজকর্ম  সব বন্ধ
যোগাতে পারিনা  পেটের খাবার
কেনা হবেনা ছেলেমেয়ের নতুন জামা
তুমি এলে  বলবো তোমাকে সেসব কথা।

তুমি ছাড়া বুঝবেনা কেউ মনের ব‍্যথা
সারাজীবন   দিয়েছি কতজনাকে  কত  হলফনামা
তবু জোটেনি নিশ্চিত আহার
চোখ থেকেও অন্ধ
কোরো উপায়
দুর্গতিনাশিনীগো।




খেলাঘর
       অনাদি মুখার্জি

জীবনের আর এক নাম খেলাঘর,
তাই বুঝি না কে আপণ কে বা পর !
দিন যায় দিন আসে কেউ চলে যায় ,
সময় যেনো ডাকে কোন পিছু ইশারায়!
মাঝে মাঝে কারোও সাথে হয় পরিচয়,
বালুচরে মতোন কেউ বা হারিয়ে যায় !
জীবনের খেলাঘরে আমি এক অসহায় ,
বেদনা বালুঝড়ে কাটে শুধু নিরাশয় !
কখনো  বা  স্মৃতি  ঘেরা অতিত কে হারায় ,
কালের স্রোতের তালে সব ভেসে যায় !
কত আশা ভালোবাসা প্রাণে থেকে যায়,
এই নিয়ে আমার দিনরাত কেটে যায় !



জেগে ওঠো
         বিমান প্রামানিক

ওগো জেগে ওঠো আছো যত নারী
সমাজে আজও অন্যায় হচ্ছে ভুড়ি ভুড়ি।
দিদি বোন মাসি আছে যত নারী
তাদের উপর অত্যাচার কেমনে ভুলতে পারি?
ওগো জেগে ওঠো তোমরা, একসাথে নারী।

এসো এগিয়ে জাতির বিভেদ ভুলে
নারী জাতি তোমরা এই পরিচয় পেলে।
সমাজের সেবিকা তোমরা সবাই যাচ্ছে ভুলে
তাই তো তোমরা নাকি চক্রান্তের শিকার হলে।
আইনের কাছে চাইবে জবাব আঙুল তুলে।



হিল কুইন শিমলা
   অঞ্জলি দে নন্দী,মম

বলছি শোনো!
গপ্পো নয় কোনো।
শিমলা গেলাম।
হিল কুইন।
সত্যিই ভেরি ফাইন।
ট্রয় ট্রেনের মজাই আলাদা।
কালি বাড়িতে আলু পোস্ত, ভাত সাদা।
আহা মনের সুখে খেলাম।
কত যে তৃপ্তি পেলাম।
এবার পায়ে হেঁটে ঘুরলাম, পার্বত্য রাস্তায়।
মাঝে মাঝে মাঝে পেট ভরাচ্ছি
পার্বত্য নাস্তায়।
কাঁধে এসে বসে পড়ছে বাঁদরের দল
বহুৎ সাবধানে তাদের সরাচ্ছি।
ঘোড়ায় চড়ে ঘুরলাম শিমলা-মল।
ছবি, ভিডিও ক্যামেরায় নিলাম।
প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধতা উজাড় করে দিলাম।







মানবতা আজ কোথায়?
        শিবব্রত গুহ

মানবতা আজ কোথায়?
মানুষ ভুলতে বসেছে মানবতাকে,
মানবতাকে দিয়েছে বলি,
লোভ ও হিংসার যূপকাষ্ঠে বারংবার।
মানুষ আজ অর্থের পূজারী,
তার এখন প্রয়োজন,
অনেক অনেক অর্থের।
মানবতার কোন প্রয়োজন আজ,
মানুষের জীবনে আছে কি?
মানুষের মন এখন ভরা কলুষতায়,
অন্যের ভালো সে পারে না দেখতে।
অহংকারে মদমত্ত হয়ে আজ,
চলছে মানুষ,
এপথ ধ্বংসের না সৃষ্টির?
সে বিবেচনা করে কি মানুষ?
মানুষ এখন আর মানুষ নেই,
অমানুষে সে হয়েছে পরিণত,
অমানুষরূপী মানুষে আজ ভরে উঠেছে সমাজ।
এর থেকে চাই, মুক্তি,
মুক্তি,
শুধু মুক্তি।



    বৃষ্টি পায়ে পায়ে 
           পিনাকী  মুখার্জী   
 
           উপরেতে  চড়া  রোদ
              কভু  ঘোর  বর্ষা ,
            নিরাপদ ছায়াতল
                তুমি   ভরসা  !!

              যে  জনের  নাই
             সেই  জানে মনে  !!
            না  থাকার  বেদনা
             প্রতি  ক্ষণে  ক্ষণে  !!

             সেই  সুখ   স্মৃতি
           সেই   অঝোর বর্ষণ  !!
           ভেজেনি  মাথা  তবু
            আজ ও  ভেজা  মন  !!

             বয়ে গেছে  জল  কত
           স্মৃতির  সরণী  বেয়ে  !!
              চলেছি  পথ , সেই
               বৃষ্টি  পায়ে  পায়ে   !!
         
  


নদীর তীর
         আব্দুল রাহাজ

নদী তীরে ডুবেছে তরি
ডুব যে সূর্যের অস্ত।
দিগন্ত আকাশে পাখি যায় তার নিজস্ব গৃহে
নদীতীরে মানুষের আনাগোনা
গাছপালায় ভরা সবুজায়ন তাই দেখে মানুষ তো পাগল
এইভাবে চলে নদী তীর যুগের পর যুগান্তর
সভ্যতার কাছে এই নদীতীর হয় রূপকথার রূপান্তর।





         জ্বলছে সংবিধান
                    সুশান্ত মজুমদার

ভাষণের চাতালে নারী শিক্ষা,নারী সুরক্ষা
নারী নিরাপত্তার ঝড়,
কামনার উঠোনে নারী ভোগ‍্যা, লালসার থাবায়
জর্জরিত রক্তাক্ত লাশ।

ধর্ষণে  নারকীয় হত‍্যায় মেলেনা মৃত‍্যুকালীন
ন‍্যূনতম সন্মান,
কাণ্ডারী বাঁচাতে রাষ্টতরী ডুবিয়ে দেয় শেষ
সাক্ষ‍্য প্রমান......
ভনিতার চালে চলে এনকাউন্টারে  হনন।

আলো আঁধারিতে চলে মোম বাতির দল..
মিডিয়ায় ওঠে রব :-"জাস্টিস ফর.......!"
কামদুনি, নির্ভয়া,মনীষা সুশীল সমাজের গালে
একটা সজোরে থাপ্পড়।

মসনদের  মদতে অসম্ভম  হয় সম্ভব ,
পড়ে থাকে প্রশ্ন:- ইয়ে-জ্বল-ক‍্যায়া-রহা-হ‍্যাঁয়?
জেগে ওঠে আদিম বর্বর বর্ণাশ্রম ধ্বনি।

জ্বলছে দেশমাতা, জ্বলছে আমাজন,
জ্বলছে আম্মেদকর,জ্বলছে বিচারের বাণী..
জ্বলে পুড়ে হল খাক  দেশের অমূল‍্য রত্ন
সংবিধান খনি।




শেরপা
আসরাফ আলী সেখ

ভালো বাসার এখন সময় আসে নি ,
কাঠফাটা রোদের ভালো বাসায় ,
আমার শিরদাঁড়া শুকিয়ে সোজা হয়ে
দাঁড়াবার সময়, স্টেশনে কুড়ি টাকার
রঙিন স্বপ্নের চিকচিকে তে শুয়ে
তোমার জন্য স্বপ্নের
বাসর জোগার করতে
এসেছি , থরথর করে
বুলবুলি মতো কাঁপতে
থাকা ভালো বাসর সময় এখন নয় !
জ্যোৎস্না পাহাড় এনে তোমার ভালো বাসার
শেরপা হয়ে দেখাবো কত চাঁদের আলোয়
পাহাড়ি প্রেমিক প্রেমিকা পাহাড় ধসে
রূপকথার কবিতা হয়ে পঠিত হচ্ছে
নতুন শেরপা র খোঁজে ।।







       জীবন           
              হামিদুল ইসলাম
                 
রক্তচক্ষুর আড়ালেও কেমন করে
ভালোবাসা
বুঝি নি আগে
এ জীবন যোগ আর বিয়োগের খেলা
শূণ‍্য ফল তাতে ।

এ জীবনকে চিনি না আমি
জীবন বড়ো বালাই
কোথায় রাখি তারে
শূণ‍্য হাত
পাতার ছায়ায় রাখি তারে ।

পাতাকে জেনে নিই
সবুজ ক্লোরফিলে তার বাসা
মৃত‍্যু ধেয়ে আসে হাতের কাছে
মুহূর্তের জীবন
গন্ধ ছড়ায় তাতে ।

স‍ম‍্যক চিনি
এই জীবন
জীবন দুর্জয়
শব্দের ছন্দ ভাঙে সংগ্রাম
জীবনকে পেয়ে যাই হাতের পাতায় ।



মন
উমর ফারুক

সন্ধ্যে হলে অলস রবি ঢলে
মনটা কেমন ভিজে ভিজে ভাব     
নির্জনতায় মনটা আমায় বলে।
ইচ্ছের বালুচড়ে ঘুরিস কেন রাত?
বর্ষা বিকেল সূর্য থাকে ঢাকা
বিকেল হলে ফুড়ুৎ পাখি ওড়ে
দোয়েল ফিঙে উড়িয়ে দিয়ে পাখা
হাতের মুঠোয় বিশ্ব নিয়ে ঘোরে।
মোহনা থেকে নদীর পাড়ে বসা
সাধ্য হলেও মিথ্যা আশা জানি!
সাগর হয়ে করব দুর হতাশা।
খেলুক না মন আজকে মহারানী।
ভাবুক হলে মনটি কেমন করে,
নানান স্মৃতি ভাসচে তুলোর মতো
বৃষ্টি কেমন আমোদ হয়ে ঝরে। 
থাকলে ভালো বৃষ্টি ভেজা হতো!





হয়তো তুমি আসবে
                বিপ্লব গোস্বামী

হয়তো তুমি আসবে
সেদিনের মত,
ফাল্গুনের মেঘের দুপুরে।
হয়তো তুমি আসবে
পুরনো তিথিতে,
বরণ করবে আমায়
আগের নীতিতে।
হয়তো থাকবে তোমার
নীল জামাটি গায়,
সে দিনের ঢিলা চপ্পল
থাকতে পারে পায়।
হয়তো আগের মত
বাসবে আমায় ভালো,
আশার দ্বীপে জ্বালি
রাঙ্গা স্নিগ্ধ আলো।
আমার জন‍্য হয়তো
সাজবে নানা সাজে,
হয়তো পাশে শোনবো
তোমার পায়ের নূপুর বাজে।




বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :

|| কবিতার রূপকল্প : পর্ব :  ২২   ||

||  জীবনানন্দ পরবর্তীকাল এবং  হাংরী  আন্দোলন ||
              || পঞ্চাশ দশকের কবি ||
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
                      ( প্রথম অংশ )
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
                    সৌম্য ঘোষ
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""

                 যাদের পঞ্চাশের কবি বলা হয় কবি হিসেবে তাঁদের আবির্ভাব স্বাধীনতার পর । যদিও কমিউনিস্ট পার্টি এই স্বাধীনতাকে অলীক ও মিথ্যা বলে ঘোষণা করেছিল , তবু সাধারণ মানুষের মধ্যে, দেশভাগ ও উদ্বাস্তু সমস্যা সত্ত্বেও, এই স্বাধীনতা উন্মাদনার সৃষ্টি করেছিল। ত্রিশ দশকের আধুনিক কবিতাকে যদি বলা হয় 'প্রত্ন- আধুনিকতা'। তাহলে দেশ স্বাধীন হওয়ার অভিঘাতে যে আধুনিকতার সূচনা হলো, তাকে বলা যেতে পারে 'নব্য-আধুনিকতা' ।  ত্রিশ দশকের কবিতায় ছিলো পাশ্চাত্য কাব্যনির্ভরতা । তাঁরা আদর্শের খোঁজে পশ্চিমী অবক্ষয় আধুনিকতাবাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন । চল্লিশ দশকের কবিরা দ্বারস্থ হয়েছিলেন ---------- 
মায়াকোভস্কি, লোরকা, এলুয়ার , নেরুদা প্রকৃতির কাছে । যাদের বলা হতো বিপ্লবী আধুনিক কবি। কিন্তু স্বাধীনোত্তর কালের কবিরা কিছু ব্যতিক্রম কে বাদ দিলে, তাঁরা কোনো বিদেশি গুরুর কাছে নাড়া বাঁধেননি । তাঁদের কবিতা মূলতঃ আত্মনির্ভর ও স্বাবলম্বী । এই পর্বে আমি চারজন প্রধান কবিকে নিয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখছি ।

                     শঙ্খ ঘোষ
                  ______________

শঙ্খ ঘোষ (জন্ম, ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ ) এক জন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্য সমালোচক। তিনি এক জন বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞও। তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনাও করেছেন। 'বাবরের প্রার্থনা' কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল--------- "মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে", "এ আমির আবরণ",  "উর্বশীর হাসি" , "ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ"  ইত্যাদি। সাহিত্যের ক্ষেত্র ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক ঘটনায় নিয়মিত প্রতিক্রিয়া জানানো ও পথে নামার মধ্য দিয়ে শঙ্খবাবু আজও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির বিবেকের ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছের এই সময়টাকে সবদিক দিয়ে সর্বার্থে জড়িয়ে আছেন তিনি। তাঁরই কথায়, ‘শিকড় দিয়ে আঁকড়ে’ আছেন। তাই কবি শঙ্খ ঘোষ-এর কোনও বিশেষ পরিচয় হয় না। তাঁর অস্তিত্বই তাঁর পরিচয়। বাংলা কবিতায় প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি তৈরি করে নিয়েছেন এমন এক পথ, যে-পথে স্বল্প যাত্রী, যে পথে সামান্য আলো জ্বলে। সমালোচনায় নিয়ে এসেছেন সর্বজনবোধ্য এক জ্ঞানচর্চার দিশা, সংক্রামকভাবে বারবার সাড়া দিয়েছেন সংকট সময়ে ।
১৯৫২ সালে প্রকাশিত তাঁর কবিতা " যমুনাবতী" আপামর সাহিত্যপ্রেমীদের নাড়িয়ে দিয়েছিল।

                     যমুনাবতী
                    ___________

"নিভন্ত এই চুল্লীতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে।
নোটন নোটন পায়রাগুলি
খাঁচাতে বন্দী
দু’এক মুঠো ভাত পেলে তা
ওড়াতে মন দি’।...... ‌‌........."

   মুখ ঢেকে যায় বিঞ্জাপনে
___________________________

"একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
… তোমার জন্যে গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।............."

মানুষের সত্তার সমস্যা শঙ্খ ঘোষের কবিতা আয় ফিরে ফিরে আসে। আত্ম থেকে পৃথক করে সমস্ত ভুবনকে তিনি দেখেন সমগ্রতায়-------"আমার আশ্লেষ থেকে পৃথিবী কে মুক্ত করে নাও।" সময় নির্যাস উঠে আসে তাঁর কবিতায় । ঘটনায় উত্তেজিত হন,  প্রতিবাদ না করে পারেন না । বিধ্বংসী বিদ্রুপে লেখেন । কিন্তু উত্তেজিত মুহূর্তেও শিল্পের সংযম হারান না।  শঙ্খ ঘোষ কবিতায় প্রমাণ করেন,  সত্য বলা ছাড়া কবির আর কোন কাজ নেই------- বাইরের সত্য,  ভিতরের সত্য ।

                 অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
                ------------------------------------
                 অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত (১৯৩৩-- ) জগতের নিহিত রহস্যের সন্ধানী । তাঁকে আধুনিক মরমিয়া কবি বলা চলে। কম্পমান যবনিকার অন্তরালে তিনি আত্মিক সত্যকে খোঁজেন । তিনি পরম অস্তিত্বকে ঈশ্বর বলেন , কিন্তু তাঁর ঈশ্বর ধর্মনিরপেক্ষ ।' আকাশ ছুঁয়ে অবুজ হুতাশনে/ ঈশ্বরের বিরহে কাঁদে মীরা । '  'খুব উঁচু ডাল মোহাম্মদ পয়গম্বর '। ' এই কনকমন্দিরে / আমরা একসঙ্গে রাখবো ওষ্ঠাধর গ্রন্থসাহেব ।' তাঁর কাছে সব ঈশ্বরই  অভিন্ন । অপ্রত্যাশিত শব্দ ব্যবহারে অনেক সময় তাঁর কবিতা ভূমি স্পর্শ করে না ।
                           অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত র   ২০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ আছে। এর পাশাপাশি তিনি বহু বাংলা ও সাঁওতালি কবিতা ও নাটক ইংরাজি ও জার্মানে অনুবাদ করেছেন। জার্মান ও ফরাসি সাহিত্য অনুবাদ করেছেন বাংলায়। তাঁর বেশ কয়েকটি প্রবন্ধের বই-ও আছে। তাঁর গদ্যরচনার বিশেষ ভঙ্গি বাংলা সাহিত্যে আলাদা স্থান করে নিয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জার্মানি পর্যন্ত তাঁর অধ্যাপনার জগৎ বিস্তৃত থেকেছে। ভারতীয় ও জার্মান সংস্কৃতিকে কাছাকাছি নিয়ে আসার তাঁর প্রয়াসের জন্য জার্মান সরকার তাঁকে গ্যেটে পুরস্কার দেয়।

                    শক্তি চট্টোপাধ্যায়
                   -----------------------------

                           জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচিত। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। ষাটের দশকে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের (  ১৯৬১) জনক মনে করা হয় তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম। হাংরি আন্দোলন নিয়ে পরবর্তী সময়ে পৃথক প্রবন্ধ লেখার বাসনা আছে ।
                   শক্তি চট্টোপাধ্যায় ( ১৯৩৩--৯৫) এর কবিতায় একাকীত্বের কথা আছে , কিন্তু তাঁর নিঃসঙ্গতা ফলবান ও ইতিবাচক । তিনি, ' চিত্র ও সংগীতময় পংক্তি' যেমন উঠে আসে, কেমনি সাজিয়ে পরাবাস্তব পদ্ধতিতে কবিতা লিখতে ভালোবাসেন । অনেক সময় সেই সব কবিতায় ঘটে যায় 'ক্ষিপ্ত বিকেন্দ্রীকরণ' । আধুনিক সময়ে যন্ত্রণাজর্জর জীবনযাপন তাঁকে ভাবাতো ।  "মানুষের সব গিয়ে এখন রয়েছে হিংসা বুকে" । " এক মুষ্টি ভাত নেই, ভাতের গন্ধ নেই কোনখানে ।"
"আছে রক্তচঞ্চু শঠ " । তাঁর কবিতায় বিতৃষ্ণা বা ক্লান্তি নেই :

  " উদাসীনতার মতো ব্যাধি আর পৃথিবীতে নেই।
   আজ উদাসীন নই , ব্যাধিমুক্ত, দুহাতে পেয়েছি
    সংসারের অম্লতিক্ত কষায় রসের পূর্ণ বাটি ।"

তার কবিতায় থাকে জীবনকে নিয়ে আনন্দ আর জীবন বিশেষ শ্রদ্ধা । তিনি বৃষ্টির কথা লেখেন বারে বারে ------ " অন্তরে মেঘ করে/ ভারী ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে ।"
অকালপ্রয়াত এই আপদমস্তক শক্তিমান কবির রচনায় শেষ পর্বে মৃত্যুর কথা আসছিল বারে বারে ---- "চিতা কাঠ ডাকে;/ আয়, আয় ।"
একদিকে মৃত্যুর হাতছানি , অন্যদিকে জীবনের প্রতি ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে লেখা তাঁর প্রতিটি চরণ কবিত্বের দুর্লভ সত্তাসারে স্পন্দিত । তাঁর  বিখ্যাত কবিতাগুলির মধ্যে একটি :

অবনী বাড়ি আছো
-------------------------------

অবনী বাড়ি আছো
অবনী বাড়ি আছো
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’

বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’

আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ?’

যেতে পারি কিন্তু কেন যাব
----------------------------------------

ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভাল
এত কালো মেখেছি দু হাতে
এত কাল ধরে।
কখনো তোমার করে, তোমাকে ভাবিনি।

এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ্ ডাকে আয়, আয়, আয়।
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতা কাঠ ডাকে আয়, আয়, আয়।

যেতে পারি,
যেকোনো দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?

সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
একাকী যাবো না অসময়ে।

                 সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
              ---------------------------------
               
                       
                      
                    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ( ১৯৩৪ --    ২০১২) বিংশ শতকের শেষার্ধের  বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব   এবং  সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপক ভাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি  । একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তাঁর কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "নীললোহিত", "সনাতন পাঠক" ও "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টোব্দে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’ এবং ১৯৬৬ খ্রিস্টোব্দে প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’ প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি "কাকাবাবু-সন্তু" নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা।
                        তাঁর কবিতায় নিসর্গ, নারী ও কবিতা একাকার হয়ে যায় । নারী কবির  কাব্য নায়িকা নীরা  । তাঁর কবিতায় গাছের ঝরা পাতা, নববর্ষের চিঠি, পানা পুকুরের জলে মেঘলা সূর্যের রশ্মি, টিয়া পাখির  তেজী ডাক, ধুনির নিভন্ত আগুন এইসব দৃশ্যের মধ্যে উচ্চারিত হয় মানুষের কথা । তিনি আদ্যন্ত প্রেমের কবি।

সুনীলের কবিতা :

হঠাৎ নীরার জন্য
"""""""""""""""""""""""""""""""

আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি

বাস স্টপে দেখা হলো তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল

                                   স্বপ্নে বহুক্ষণ

দেখেছি ছুরির মতো বিঁধে থাকতে সিন্ধুপারে–দিকচিহ্নহীন–

বাহান্ন তীর্থের মতো এক শরীর, হাওয়ার ভিতরে

তোমাকে দেখছি কাল স্বপ্নে, নীরা, ওষধি স্বপ্নের

নীল দুঃসময়ে।

দক্ষিণ সমুদ্রদ্বারে গিয়েছিলে কবে, কার সঙ্গে? তুমি

আজই কি ফিরেছো?

স্বপ্নের সমুদ্র সে কী ভয়ংকর, ঢেউহীন, শব্দহীন, যেন

তিনদিন পরেই আত্মঘাতী হবে, হারানো আঙটির মতো দূরে

তোমার দিগন্ত, দুই উরু ডুবে কোনো জুয়াড়ির সঙ্গিনীর মতো,

অথচ একলা ছিলে, ঘোরতর স্বপ্নের ভিতরে তুমি একা।

এক বছর ঘুমোবো না, স্বপ্নে দেখে কপালের ঘাম

ভোরে মুছে নিতে বড় মূর্খের মতন মনে হয়

বরং বিস্মৃতি ভালো, পোশাকের মধ্যে ঢেকে রাখা

নগ্ন শরীরের মতো লজ্জাহীন, আমি

এক বছর ঘুমোবো না, এক বছর স্বপ্নহীন জেগে

বাহান্ন তীর্থের মতো তোমার ও-শরীর ভ্রমণে

পুণ্যবান হবো।"





1 টি মন্তব্য:

  1. ভালো লাগলো । খুব সুন্দর আয়োজন ।
    আমার লেখাকে স্থান দেয়ার জন্য ধন্যবাদ উপকন্ঠ সাহিত্য পত্রিকা

    উত্তরমুছুন