শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০

সেলফি শব্দটার আদি উৎস সন্ধানে ( The original source of Selfie)

     সেলফি শব্দটার আদি উৎস সন্ধানে   ! 

In Search of the original Source of the word Selfie  ! 
 
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে আমরা সবাই একটি কথার সাথে অতপ্রোত ভাবে পরিচিত, কথাটা হল 'সেলফি'। 
কিন্তু এই সেলফি কথার আদি উৎস কী তা আমাদের অনেকেরই জানা  নেই, তাই সেলফির আদি উৎস সন্ধানে গবেষণামূলক তথ্য লিখেছেন 
         " অপূর্ব হালদার"
অপূর্ব হালদার
সেলফির উৎস সম্পর্কিত গবেষণামূলক তথ্য সমৃদ্ধ প্রবন্ধ

একটি করুণ আত্ম প্রেমের  গল্প  : যার অন্তরালে থেকে গেছে বহু কথা এবং  আজকের যুগে সবচেয়ে  জনপ্রিয় রোগ সেলফি'র আদিকথা !! 

গল্পটা শুরুর আগে কিছুটা বলে  নিই, চলুন....  সেলফি  কিন্তু নার্সিসিজমের একটি করুণ পরিণতি ও নেগেটিভ সত্তায় বিভোর আত্মমগ্নতার অংশ!! 

নিজস্বী বা আত্ম প্রতিকৃতি, যা ইংরেজি ভাষায় " সেলফি " বলে পরিচিত। এই " সেলফি " শব্দটি  এসেছে বিদেশি শব্দ  'সেলফিশ ' থেকে। যার বাংলা অর্থ হলো  নিজস্বী বা আত্ম প্রতিকৃতি বা নিজস্ব প্রতিবিম্ব। আজকের এই আধুনিকতার যুগে তথা  মোবাইল, ক্যামেরা র সময়ে , এককথায় ডিজিটাল যুগে " সেলফি " যেন শ্বাস-প্রশ্বাস এর মতো জুড়ে জীবনের পথে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে  আজকাল এটা এক রোগে পরিণত হয়েছে , যেখানে আমরা সকলেই  ওতোপ্রোতভাবে  মিশে গেছি অর্থাৎ যেটা   আক্রান্তের থেকে বেশি সংক্রমিত করে।  আমরা রাস্তাঘাটে চলতে, ফিরতে,হাঁটতে  এই সেলফি'র ঘনঘটা লক্ষ করি। কিন্তু  এই সেলফি'ই কখনো কেড়েছে শতাধিক প্রাণ কখনো ঘটিয়েছে মহাবিপদ!  সময়ের ঘূর্ণিপাকে আমরা তা দেখেছি ক্রমশই!  এই রোগের বিপদ জেনেও আমরা তারই বশবতী হয়েছি সবসময়! 


এই সেলফি'র কিন্তু  আমরা কখনোই  অতীত খোঁজার চেষ্টা করিনি,  সময়ের ঘূর্ণিপাকে আমরা সত্যিই কি ইতিহাস খোঁজার চেষ্টা করেছি?  সদুত্তরে অনেকেই বলবে না!! আর হ্যাঁ বলা হাতে গোনা কয়েকজন তা   করলেও এই টুকু। 


" সেলফি " বা  ইংরেজি ভাষায়  " SELFIE "       (যার উৎস SELFISH! )  যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়  নিজস্বী বা আত্ম প্রতিকৃতি।  সেলফি 'র সূত্রপাত যদি দেখি ১৮৩৯ সালে।  প্রথম সেলফি ( সেলফি 'র আলোকচিত্র)  বা আত্ম প্রতিকৃতি  'র আলোকচিত্র তুলে জনসমক্ষে তুলে ধরেছিলেন। যার নাম রবার্ট কর্ণিলিয়াস,  তিনি ছিলেন  মার্কিন অগ্রণী আলোকচিত্রী। এছাড়াও ১৯০০ সালে পোর্টেবল কোডাক ব্রাউনি বক্স ক্যামেরা বাজারে আসার পর আলোকচিত্রে সেলফি বা আত্ম প্রতিকৃতি সংরক্ষণ করা হতো কিন্তু তা আজকের মতো এতটা সহজ ছিল না, আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করিয়ে তোলা হতো সেলফি বা আত্ম প্রতিকৃতি র আলোকচিত্র। 


{{ আমি  আবার একটু   অন্যভাবে ভাবলাম  SELFIE  ( নিজস্বী)  + S ( S for Social / সমাজ)।    আর   এখানেই লুকিয়ে সেলফি'র নেশার তথ্য কিছুটা। আমরা দেখি সেলফি তুলেই সমাজের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা একটি মাধ্যমে সেটাকেই আপলোড করে  বারংবার দেখা — সেটাতে   কটা লাইক পড়লো, কে  কটা কমেন্ট করলো,  সেটা কতগুলো  শেয়ার পেলো ইত্যাদি!!  }}


এরপর,  সময়ের বিবর্তনে সেলফি'রও পরিবর্তন আসে।  ২০০৪ সালে সনি এরিকসন কোম্পানির তত্ত্বাবধানে  Z1010  মডেলের  ফোন বাজাররত হয়, সেই মোবাইলের সামনে একটা ক্যামেরা ছিল। যেখানে  ভিডিও কলে নিজেকে দেখানোর জন্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই পদ্ধতির আগেই ২০০২  সালে ১৩ সেপ্টেম্বর  অস্ট্রেলিয়ার একজন ব্যক্তি নিজের ছবি নিজেই তুলে নাম দেন সেলফি।

 তারপর সময়ের সাথে সাথে  " আইফোন ৪ " ২০১০ সালে বাজারে আসার পর সেলফি শব্দটির প্রচলন  বেড়ে যায়।  ২০১২ সাল থেকে সেলফি'র  ব্যাপক জনপ্রিয়তা বাড়ে এবং  দেশব্যাপী সেলফি 'র প্রসারতা বাড়তে থাকে!! ২০১৩ সালে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল ডিকশনারি তে শব্দটি স্থান  পায়।  

এটুকুই তো জানতে পারি,  কিন্তু  সত্যিই  অনেককিছুই আড়ালে রয়ে গেছে, যেটা আজ এখানে উপস্থাপন করার সামান্যতম চেষ্টা করেছি। এই সেলফি কিন্তু  আধুনিক পন্থা নয়, একটি প্রাচীন পন্থার বিবর্তিত রূপ!  তাই সেলফি আধুনিকতার বাহক নয়, সময় বলছে অন্য কথা। আর এরই পেছনে লুকিয়ে একটি করুণ  অভিশপ্ত আত্ম প্রেমের গল্প! 

                              আধুনিকতার এই সময়কালে মানুষের  প্রযুক্তিগত ও জাগতিক কাজকর্ম তথা সমৃদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে  স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। বর্তমান প্রজন্ম  শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। পাশের মানুষটির মানবিক  ডাকে সাড়া দেওয়ার মতো সময় তার নেই। শুধু  নিজে কীভাবে  আরো ভালো থাকা যায় সেই চিন্তা, ভাবনা  মানুষকে কল্যাণকামিতা ও সহমর্মিতা অনুভব থেকে  দূরে সরিয়ে দিয়েছে!!  মানুষ  তার মূল ধর্ম মনুষ্যত্ব' কে অস্বীকার করলো, মানবতাকে বিদায় জানিয়ে নিজেই নিজের কাছে সব হয়ে উঠলো। নিঃস্ব, ব্যথিত মানবতা স্রষ্টার কাছে আর্জি জানালো হীন স্বার্থ মানুষের বিরুদ্ধে।  নিপীড়িত মানবতার ক্রন্দন স্রষ্টার মর্ম স্পর্শ করল। স্রষ্টা  বিচার করার সিদ্ধান্ত নিলেন।স্থির করলেন প্রেমহীন  আত্ম প্রেমিক  এই মানুষের দন্ড হবে আজকের  করুণ আত্ম প্রেমের গল্প যাকে নিয়ে!!  স্বভাবজাত  প্রকৃতি যেহেতু  একই, পরিণতিও  অনুরূপ হওয়া ' টাই বাঞ্ছনীয়!  যেখানে মানুষ  সারাদিন নিজের চেহারা দেখতে থাকবে আর মারা যাবে সেই আত্মপ্রেমে বিভোর হয়ে  তথা আত্মমগ্নতার কারণেই। তাই চেহারা দেখার জন্য ব্যবস্থা হলো প্রাচীন পন্থায় থাকা পুকুরের জল কিংবা দর্পণ ছেড়ে সময়ের বিবর্তনে স্মার্টফোনে। আর দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে ( নিজের ছবি নিজেই দেখতে দেখতে)  মারা যাচ্ছে সেই সমস্ত আত্ম প্রেমিকেরা , যেখানে সেই  করুণ আত্ম প্রেমের গল্পের অভিশপ্ত নায়কের মৃত্যুর মতোই। সময়ের ঘূর্ণিপাকে এখন এটাকে রোগের সাথে তুলনা করে বলা হচ্ছে  এটা একধরনের রোগ,যার নাম " সেলফিটিস।" ( selfie + itis)  এখানে ' টিস' শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে প্রদাহ বোঝানোর জন্য। কেননা বাংলায় " সেলফিটিস" এর অর্থ  আত্ম অহংবোধের প্রদাহ।  একদিকে তো সত্যিই  " সেলফি " আত্মবোধের প্রদাহ। 

 গণমাধ্যমের মারফত আমরা বহু প্রাণ হারানোর খবর পাই। এই আত্মবোধের প্রদাহের জন্য , অর্থাৎ  সেলফি রোগে আক্রান্তের জন্য।  এছাড়াও  রেস্তোরাঁ, রেস্টুরেন্টে  খেতে গিয়ে  দেখি সেলফি তুলছে, এমনকি মৃত ব্যক্তির সাথেও সেলফি তুলতে দেখা গেছে!  


 🍁🍂🍁 এবার আমি  চলে এসেছি  সেই করুণ আত্ম প্রেমের গল্প বলতে....  🍁🍂🍁 


আত্ম প্রেম বা আত্ম প্রতিকৃতি বা আত্ম মগ্ন শব্দগুলো শোনা বা দেখার সাথে সাথে আমরা  যদি একটু  ইতিহাসের দিকে চোখ রাখি তাহলে দেখব, এই শব্দের অন্তরালে কতটা করুন অভিশপ্ত কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে।  বিদেশি শব্দ  " নার্সিসিস্ট " বা " নার্সিসিজম " যার বাংলা অর্থ  নিজেই নিজের প্রতিকৃতিতে মুগ্ধ হয়ে বিভোর থাকা,  আর এই শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করে ১৮৯৯ সালে,  পল নাচ ( paul nache)।  যিনি  তাঁর  বিখ্যাত  " Sexual Perversious " নামক গবেষণায় শব্দটির প্রয়োগ করেন।  আর এটা একটি রোগ হিসেবে পরিচিত,  " নার্সিসিজম।  "  এই রোগের কারণ  " নার্সিসাস" নামে  এক সুদর্শন যুবক, যার নাম থেকেই এই শব্দগুলোর উৎপত্তি।    নার্সিসাসের আত্ম কেন্দ্রিকতা বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করা হয়।  

  আপনি এই রোগে আক্রান্ত কিংবা সংক্রমিত নন তো ???    এই রোগে আক্রান্ত হলে এখুনি সাবধান হয়ে যান!! নাই নিজেই নিজের আত্ম অহংকারের প্রদাহে ধ্বংস হয়ে যেতে পারেন!!  🍃🌿🍂

 চলুন  একটু  ফিরে যায় সময়ের  অতীতে, ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে!!  " নার্সিসাস" শব্দটি বিদেশি,  আর এর আদি উৎস  গ্রিক ভাষায়। " নার্সিসিজম " একটি নেগেটিভ শব্দ,  যার বাংলা অর্থ  আত্ম প্রেম বা আত্ম  মগ্নতা!! আবার " নার্সিসাস " একটি বিদেশি ফুলের নাম, যা ' ডেফোডিল ' জাতের ফুল বিশেষ।  যার সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত।  কিন্তু  সময়ে ঘটা ইতিহাস  তথ্য বলছে আর একটা করুন অভিশপ্ত কাহিনির কথা।  আর আলোচ্য বিষয়ের সাথে এই কাহিনি টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং  ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে!!  আর সেলফি 'র প্রসঙ্গ টাও এরই সাথে মিশে !!  


🍂🌿🍂 মূল কাহিনি  🍂🌿🍂


কথিত রয়েছে ,  নদী দেবতা সিফিসাস ( Cephissus)  এবং  জলপরী লিরিউপি ( Liriope)   র পুত্র  নার্সিসাস ( Narcissus) ।  নার্সিসাস জন্ম থেকেই তাঁর দীর্ঘ জীবন পথে জীবিত পর্যন্ত  অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন। যেখানে রূপের বর্ণনা  ভাষায় প্রকাশ করাটা অসম্ভব ছিল!  আর এই রূপ মাধুর্য 'ই তাঁকে অহংকারী এব আত্ম গর্বিত  যুবকে পরিণত করে। যেখানে করুন অভিশপ্ত কাহিনি লুকিয়ে তাঁর অজানায়। যেকোনো মেয়ে, বনপরী, স্থলপরী, জলপরী, সব পরীরাই তা্র অনিন্দ সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছে, এমনকি পুরুষরাও তাঁর প্রেমে মজেছে তাঁকে দেখেই, তাঁর রূপ এতটাই  সৌন্দর্যের কামুকতায়  ভরা আর মোহগ্রস্ত  ছিল! নার্সিসাসের মোহে স্বর্গের  দেবীরাও নাকি কামুক হয়ে উঠতেন।  কিন্তু  নার্সিসাস নিজের সৌন্দর্যে এতটাই মুগ্ধ ছিল, নিজেকে ছাড়া আর কাউকেই ভালো লাগত না, কোনো মেয়েকেই তিনি রূপের দিক থেকে  মূল্যায়ণ করতেন না। সবসময়ই  তিনি আত্মমগ্নতায় বিভোর থাকতেন। 

 নার্সিসাসের মা  নার্সিসাসকে নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকতেন।  একদিন তাঁর মা নার্সিসাসের  আয়ুষ্কালের ভবিষ্যত জানতে টাইরেসিয়াসের  ( Tirasias) কাছে আসেন  এবং জানতে পারেন -- " এই ছেলে একটা  দীর্ঘ  জীবন  পাবে,  কেবল যদি সে নিজেকে না দেখে!  আর এর অন্যথায় করুণ পরিণতি অনিবার্য..!!  " 

নার্সিসাসকে নিয়ে খুবই  চিন্তিত থাকতো  তাঁর মা লিরিউপি।  ছোটোবেলা থেকেই কিন্তু নিজের  রূপের  এত প্রশংসা শুনেছেন,  যেখানে  রূপের প্রশংসাই অদ্ভুত এক অহংকারবোধ জাগিয়েছিল  নার্সিসাসের মনে!   নারীদের  রূপের চেয়েও তাঁর রূপের বাহার আর মুগ্ধতার কথা শুনে নিজেই নিজের রূপে মগ্ন হয়ে পড়তেন। যারা তাঁর প্রেমে মজেছিল তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর শিকার হয়েছে  করুন পরিস্থিতির, যা নিষ্ঠুরতার সাথে এক কঠিন প্রত্যাখ্যান। 

সময়ের ঘূর্ণিপাকে একটি ঘটনা ঘটল, আর মনে করা হয় এই ঘটনাই তার এই আত্মমগ্নতার বিনাশ ঘটিয়েছিল!   দেবী, অপ্সরী, বনপরী  ছিলেন ইকো ( Echo)। যিনি অপূর্ব মিষ্টি কন্ঠস্বরের  অধিকারী ছিলেন। দেবতারা পর্যন্ত  নাকি তার কাছে চলে যেতেন।  তাঁর সম্পর্কে  এক ইতিহাস গাঁথা রয়েছে।  জিউস আর ইকো একবার যৌন সঙ্গমের সময় জিউসের স্ত্রী হেরার হাতে ধরা পড়ে যায় , তখন হেরা অভিশাপ দেন যে শুধুমাত্র অপরের কথা প্রতিধ্বনিত করতে পারবে, নিজে আর কোনোরকম কথা বলতে পারবে না।  এরূপ শাস্তি কারণ ইকো খুব মিষ্টি কন্ঠস্বরে গল্প বলতে পারতেন। তাই তার সবচেয়ে  শক্তিশালী শক্তিটাই কেড়ে নেয় জিউসের স্ত্রী হেরা। নার্সিসাসের প্রেমে পড়েন ইকো। তিনি বাস করতেন গভীর জঙ্গলে ও পাহাড়ে। নার্সিসাস শিকারী ছিলেন ।  তিনি বনে যেতেন শিকার করতে।একদিন  নার্সিসাস শিকারে গেলেন বনের গভীরে। তখন ইকো তার প্রেম নিবেদন পর্বে প্রত্যাখ্যাত হলেন নার্সিসাসের পক্ষ থেকে। ইকো পিছু পিছু হেঁটে নার্সিসাসের পক্ষ নেয়, আর লুকিয়ে পড়ে।কিন্তু  নার্সিসাস পায়ের শব্দ পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন --  এখানে কেউ আছে...  ইকো তার বলা কথার প্রতিধ্বনিত করে বলে -- আছে আছে।  আবার নার্সিসাস বলেন -- সামনে এসো....  তখন ইকো বলেন -- এসো এসো।  নার্সিসাসের সম্মতি পেয়ে সামনে বেরিয়ে আসেন এবং  কথা বলতে না পারায় অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছেন না।সেই মুহূর্তে  ইকো নার্সিসাসকে জড়িয়ে ধরেন।  কিন্তু  নার্সিসাস ইকোকে ঠেলে মাটিতে ফেলে দেয়।  আর বললেন -- " আমি বরং  মারা যাবো তবুও তোমাকে কাছে আসতে দেব না। "  লজ্জায়,  কষ্টে, অপমানে ইকো কাঁদতে কাঁদতে  পাহাড়ে চলে গেলেন।   ইকো'কে  খুব ভালোবাসতেন নেমেসিস।  যিনি ভাগ্য ও প্রতিশোধের দেবী।  তখন কষ্ট পেয়ে  প্রতিশোধের দেবী নেমেসিসের কাছে ইকো প্রার্থনা করেন -- "হে দেবী নেমেসিস,  নার্সিসাস যদি কখনো প্রেমে পরেও, সে যেন ভালোবাসা না পায়। আমার মতোই কষ্ট পেয়ে শোকাহত হয়ে হতাশায়, বেদনায়  ডুবতে থাকে। "   নেমেসিস তাঁর প্রার্থনা শুনেছিলেন। তারপর নার্সিসাসের ভাগ্য  নির্ধারণ  করে ফেললেন ।  এদিকে ইকো তারপর মনের দুঃখে পাহাড়ে না খেয়ে পড়ে থাকে , আর দিনের পর দিন এভাবে অভুক্ত থাকার কারণে মারা যান।  এবং সেখানেই  তার দেহ পচে যায়। কিন্তু  তার প্রতিধ্বনিত করার অভিশপ্ত ক্ষমতা পেয়ে যায়  #পাহাড়।  আর এখান থেকেই উৎপত্তি  ইংরেজি শব্দ  ইকোর, যার বাংলা অর্থ  শব্দের প্রতিধ্বনিত করা বা অন্যের কণ্ঠস্বরকে অনুকরণ করে বলা বা  প্রতিধ্বনিত করা ।  


নেমেসিসের অভিশাপের  কারণে নার্সিসাস তৃষ্ণার্ত হয়ে ওই  অবস্থায়  একটি হ্রদ বা  পুকুরের দিকে ধাবিত হন। তখন ওই পুকুরের পাড়ে গিয়ে জল পানের জন্য   পাড়ের ধারে বসে  নিচের দিকে   ঝোঁকে। তখন এক ঘটনার শিকার হন নার্সিসাস। নার্সিসাস নিজের রূপ কখনো নিজের চোখে স্পষ্টভাবে  কোনোদিন দেখেননি।  এই দেখাটাই তাঁর জীবনের করুণ পরিণতি ডেকে আনে।  সময়ের কঠিন চতুরতায় একদিন হরিণ শিকারের পর ক্লান্ত,  জল পিপাসার্ত নার্সিসাস তৃষ্ণা নিবারণের জন্য একটি  হ্রদ বা পুকুর  পাড়ে আসলেন, যা জগতের সবচেয়ে  স্বচ্ছ কাঁচের মতো সেই হ্রদের জল, যেখানে কোনোদিন কেউ হাত দেয়নি, কখনো কোনো পশু এর জল পান করেননি। নার্সিসাস যখন জলের জন্য নিচু হয়ে হ্রদের জলের দিকে ঝোঁকে তখন প্রথমবারের মতো নিজেকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেলেন।  এবং  জলে নিজের প্রতিবিম্ব তথা নিজের রূপ দেখে মুগ্ধ বিস্ময়ে বারবার বলতে লাগলেন -- "এত সুন্দর, এত সুন্দর!  " নিজের প্রতিবিম্বকে ছুঁয়ে দেখার জন্য  তিনি জলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং  সেই হ্রদের জলে ডুবে মারা গেলেন নার্সিসাস!  

 নার্সিসাসের  এই স্বভাব থেকেই আত্মকেন্দ্রিকতা বা আত্মমগ্ন  বোঝাতে " নার্সিসিজম " শব্দটি ব্যবহার হয়।  আর এই আত্ম মোহে ভোগা মানুষ  সেই মোহ সহজে কাটিয়ে উঠতে পারে না । " নার্সিসিজম " মূলত পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বা ব্যক্তিত্বের সংকট।  আর এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কখনোই অপরের কথায় নিজেদের নিমজ্জিত করে না। তারাই তাদের  কাছে ঠিক এবং  পৃথিবীতে তারাই একক বলে মনে করে!! এছাড়াও ভাবতে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তি তিনিই!! 

নার্সিসাস  যেমন আত্ম প্রেমে নিজের মৃত্যু  নিজেই ডেকে এনেছিল। সমাজিক যোগাযোগের  মাধ্যম ফেসবুকে বা ইন্সটাগ্রামে কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে  প্রবেশ করলে দেখা যায়  অনেকটাই সেই করুণ পরিণতি। আর চোখে পড়ে সেই ধরনের  আত্ম প্রেম এবং  গণমাধ্যমের দ্বারা  দেখতে পাই,  শুনতে পাই কত কত প্রাণ হারানোর গল্প!! কিন্তু  সেই আত্ম প্রেমের করুন অভিশপ্ত পরিণতি ফিরে এসেছে বারবার সমাজের বুকে সময়ের বিবর্তনের ও  ঘূর্ণিপাকের  কঠিন সত্য  নিয়ে  " সেলফি " হয়েই!!! 


লেখক— অপূর্ব হালদার

ঋণস্বীকার  — অন্তর্জাল 

ছবি — ঋণস্বীকারভুক্ত !!




© লেখক 

    Copy Right Received

২টি মন্তব্য:

  1. বেশ ভালো লেখক। আজকের পরিস্তিতির এই অদ্ভুত আত্ম অহংকারী দিকটা বেশ ভালো ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, অবশ্যই

    উত্তরমুছুন