উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 18/10/2020
Upokontha sahitya patrika Web Megazine- 18/10/2020
উপকন্ঠ প্রাত্যহিক সাহিত্য পত্রিকা
"উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-18/10/2020, রবিবার
সময় :- সন্ধ্যা 7:25 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :-
কবিতার রূপকল্প : পর্ব : ২৬
মাতৃভাষা আন্দোলন
সৌম্য ঘোষ
পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুধু একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল না। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য বহুমাত্রিক: সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক। মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে উপমহাদেশের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা দুটিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬-এর নির্বাচনে পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম লিগকে ভোট না দিলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা সম্ভব হত না।সমগ্র পাকিস্তানের জনগণের ৫৬ শতাংশ ছিল বাংলা ভাষাভাষী।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারতভাগ হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দু’টি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল।
স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং উর্দুভাষী বুদ্ধিজীবীরা বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে দাবি ওঠে, বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষার এ দাবিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে। পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন অনুমোদিত বিষয় তালিকা থেকে বাংলাকে বাদ দেয় এবং একই সঙ্গে মুদ্রার নোট এবং স্ট্যাম্প থেকে বাংলা মুছে ফেলা হয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ফজলুর রহমানউর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন।
এতে ঢাকার ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহল ক্ষুব্ধ হন এবং ভাষার ব্যাপারে তাঁরা একটি চূড়ান্ত দাবিনামা প্রস্ত্তত করেন; দাবিটি হলো: পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষা ও সরকারি কার্যাদি পরিচালনার মাধ্যম হবে বাংলা আর কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে দুটি বাংলা ও উর্দু। ঐ সময় পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নির্দেশ আসে উর্দু কেই রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে গ্ৰহন করতে হবে ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। ধর্মঘটের পক্ষে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই শ্লোগানসহ মিছিল করার সময় শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, শামসুল হক, অলি আহাদ, শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ গ্রেপ্তার হন। শহরের স্কুল-কলেজের হাজার হাজার ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হয়। ছাত্ররা পাঁচ-সাতজন করে ছোট ছোট দলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে । মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে, ছাত্রীরাও এ আক্রমন থেকে রেহাই পায়নি। ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসররত মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবদুল জববার, আবুল বরকত (রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ শ্রেণীর ছাত্র) নিহত হয়। বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে সেক্রেটারিয়েটের পিয়ন আবদুস সালাম মারা যায়। অহিউল্লাহ্ নামে আট/নয় বছরের এক কিশোরও সেদিন নিহত হয়। নিহতরা সকলেই মুসলিম হওয়ার অর্থ এই নয় , সেই আন্দোলনে হিন্দু বাঙ্গালীরা অংশ নেয়নি । পূর্ব বাংলায় ভাষা আন্দোলনের শরিক হয়েছিলেন আপামর বাংলার সকলেই । জাতি, ধর্ম, রাজনীতি নির্বিশেষে সকলেই ।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট, অফিস ও গনপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ধর্মঘট শুরু হয়। আইনসভায়, মনোরঞ্জন ধর, বসন্তকুমার দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহ ছয় বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে আহত ছাত্রদের দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার দাবি জানান এবং শোকের চিহ্ন হিসেবে গণপরিষদ মুলতবির দাবি করেন।
মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, শরফুদ্দীন আহমেদ, শামসুদ্দীন আহমেদ খন্দকার এবং মশিউদ্দিন আহমেদ সহ সরকারি দলের কিছু সদস্য সমর্থন দেন।তবে নুরুল আমিন এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
এই আন্দোলনটিকে বুঝতে গেলে গভীর ভাবে বুঝতে হবে দেশভাগের পর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অসাম্যের ইতিহাস।
দেশভাগ হওয়ার পর জিন্না বেশি দিন বাঁচেননি। তিনি উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে প্রচার চালান। নিজে উর্দু বলতে পারতেন না। জনসভায় ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতেন। তাঁর সঙ্গে থাকতেন এক জন অনুবাদক। তিনিই জিন্নার বক্তব্য উর্দুতে অনুবাদ করে দিতেন। যখন ঢাকায় গিয়ে জিন্না বক্তব্য রাখেন, তখন পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত বাঙালি চিৎকার করে তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। ১৯৫১তে পাকিস্তানে প্রথম যে আদমশুমারি হয় তাতে দেখা যায়, মোট জনসংখ্যার ৫৪.৬ শতাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলেন। উর্দুতে কথা বলেন ৭.১ শতাংশ। পঞ্জাবি ভাষাভাষির সংখ্যা ২৮.০৪ শতাংশ। ৫.৮ শতাংশ হিন্দি। পস্তু ৭.১ শতাংশ। এর মধ্যে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা তথা প্রভাবশালীদের বড় অংশ ছিল উত্তর ভারত থেকে আগত উর্দুভাষী নাগরিক।
মহম্মদ আলি জিন্না বা লিয়াকত আলিদের মতো অধিকাংশ উচ্চ ও প্রভাবশালী পরিবার ছিল মোহাজির। সেই কারণে লিয়াকতের মন্ত্রিসভাকে মোহাজির মন্ত্রিসভা বলা হত। আর পাকিস্তানের জমিদার বাড়ির ছেলেরাই উচ্চশিক্ষিত হয়ে অধিকাংশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। তারাই খান সেনাদের নিয়ন্ত্রণ করত। উর্দু বনাম বাংলার লড়াইতে এই আর্থিক বিভাজনই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৪৮-এ ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকায় সৈয়দ মুজতবা আলি লেখেন, পশ্চিম পাকিস্তান যদি বাংলাকে মর্যাদা না দেয় ও উর্দুকে এ ভাবে চাপিয়ে দেয় তা হলে কিন্তু এক দিন পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে যাবে। ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন হুমায়ুন কবীর । বলা দরকার, ভাষা আন্দোলনের পিছনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের আর্থিক অসাম্য বড় কারণ ছিল। এই অসাম্যই পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের বাঙালি সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। সাংস্কৃতিক আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে পর্যবসিত হয়। এবং সেই আন্দোলন থেকেই এক দিন জন্ম নেয় আওয়ামি লিগ।
আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন।
ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লিখিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রবর্তিত হয়। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন জারি করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবার্ষিকভাবে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয়।
অনেকেই অভিযোগ করেন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় যে ভাবে ঢাকার বাঙালিরা সরব রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সে ভাবে নয়। উল্টে আমরা হিন্দি জাতীয়তাবাদের শরণ নিয়েছি। অথচ, চেন্নাই শহরে তামিল ভাষার জন্য হিন্দি বিরোধী আন্দোলন যে ভাবে দিল্লিকে বেগ দিয়েছে, সে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা দেননি। গাঁধী এবং সুভাষ বসুর মধ্যে বিতর্ক রাজনৈতিক। কিন্তু হিন্দি বনাম বাংলার বিতর্ক সে ভাবে হয়নি। আর আজ তো আমরা সেই বিতর্কের ঊর্ধ্বে।
বার বার অভিযোগ ওঠে যে ঢাকায় যে রকম ভাবে বাংলাভাষাকে মর্যাদা দিয়েছেন ওখানকার মানুষ, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি কোনও দিনই সেভাবে তার বাঙালি সত্ত্বাকে নিয়ে লড়াই চালায়নি। স্বাধীনতার পর বরং তামিল ভাষা নিয়ে চেন্নাইতে আন্দোলন হয়েছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে তামিল বিদ্রোহ সুবিদিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি তো আজ কার্যত হিন্দিকে অনেক বেশি গ্রহণ করেছে। সৌজন্যে বলিউড। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, বাঙালি নিজেকে যতটা ভারতীয় মনে করে ততটা বাঙালি সত্ত্বাকে মর্যাদা দেয় না। বাঙালি সত্ত্বাকে জাগ্রত করতে গেলে প্রাদেশিক সঙ্কীর্ণতার অভিযোগ ওঠে।
বাংলাদেশে এই ভাষা চেতনা রাজনৈতিক আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিয়েছে। চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান লিখেছিলেন,
‘এই আমাদের আজকের শপথ।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।
সেপাইরা ছুটে এসে চক্রাকারে ঘিরে দাঁড়ালো ওদের
সবার বুকের সামনে একটা করে রাইফেলের নল চিকচিক করছে
তবু চারপাশ থেকে ধ্বনি উঠল
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।
সূর্য উঠছে।
সূর্য ডুবছে।
সূর্য উঠছে।
সূর্য ডুবছে।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’
আর আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসী,
আমাদের কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছেন, "দেশ আমাদের কোনও মাতৃভাষা দেয়নি এখনও! "
মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা
(১)
চোখে বাঁধি পট্টি
শোবার
সময় এখন
চোখ বেঁধে রাখি
ভালো লাগেনা মরিচীকা আলো
আলোয় থেকেও পেয়েছি. শুধু অন্ধকার
অন্ধকারের দেশে তাই শিখছি এখন অভিযোজন।
অনেক পথ হেঁটে করেছি আলোর রোমন্থন
বুকের মাঝে বেড়েছে শুধু হাহাকার
আইনের চোখের পট্টিও কালো
সত্যকে রাখে ঢাকি
সত্য কথন
বোবার ।
(২)
তোমার জন্য
কতদিন
দেখিনি তোমায়
তুমি আছো দূরে
তবুও জেনো আছো কাছে
অলস সময়ে তোমাকেই বহন করি
তুমি ছাড়া কি আমি থাকতে পারি?
ভালোবাসার চৌকাঠে কখনো পড়েনা জেনো দাঁড়ি
তোমার ভূমিতেই স্বপ্নের সৌধ গড়ি
জল যেমন নদীর বুকে
তুমিও আবর্তে ঘুরে
পাবে আমায়
একদিন।
সকালের ছায়া হয়ে
উমর ফারুক
এখন রবি মুখ ঢেকে
পুবে ঢালু শরীর
এরকম যেমন একটা কৃষ্ঠী।
লেবুর পাতায় শিশির
গাছগুলো পাথর
অস্পষ্ট গোধুলির দিকে দৃষ্টি
সকালে আলো দেখি
বিষন্ন স্বরে আঙুল তুলে
মোর সুররাজ সখা!
তোমার দুয়ারে বসে
এমন এক প্রান্তে ছুটি
সকালের ছায়া হয়ে
জেগেছি একশত বছর
আঁচর খেয়েছি
পুড়ে খাক এ শুন্য জীবন
নাই কোন মোর জুটি!
দৌড়াও
বদরুদ্দোজা শেখু
দৌড়াও শুধু দৌড়াও
জন্ম থেকে শুধু দৌড়াও
যতো পারো সাধ্য মতো দৌড়াও
প্রাণপণ দৌড়াও, দৌড়ানোই জীবন।
চারিদিকে ইঁদুর-দৌড়, দ্রুত শিক্ষাদীক্ষা খুঁজো
খাদ্য খুঁজো, খুদকুঁড়ো খুঁজো
কাজকর্ম খুঁজো সঙ্গীসাথী খুঁজো
প্রেম- ভালবাসা খুঁজো জোড়াজোড়ি খুঁজো
পরকীয়া খুঁজো , প্রত্যাখানে মুষড়ে পোড়ো না
ব্যর্থতায় চেষ্টা ছেড়ো না
আবার খুঁজো, আবার খুঁজো , নইলে বাতিল হও
দিনরাত্রি দৌড়াও ,দৌড়াও যতোক্ষণ যাচ্ছোনা
শূন্যের অপারে।
শূন্যের অপারে গেলে কি সব ঘুচে যায় ? সব মুছে যায় ?
হয়তো তাই, হয়তো-বা নয়
হয়তো প'ড়ে থাকে কৃতিকথা জন্মলতা ঝরামরা রেণু
ফুল ঝুল ধূলোয় ধূলোয়,
ততক্ষণ দৌড়াও ,দৌড়াও তুমি !
তোমার চার পাশে অজস্র শুঁড়িপথ গলিপথ
গিরিপথ রাজপথ নদী নালা মরুপথ
সমস্তই গোলকধাঁধার অকূল আঁধার,
দৌড়াও তবু দৌড়াও তুমি
থামলেই অক্বা পাবে জন্মের মতো
কোনোকিছুই তোমার জন্য থামবে না, মুহূর্ত্তে অতীত
হবে তুমি,এই এক মস্ত হেঁয়ালি বটে জীবনের মিথ !
আমি বেঁচে থাকতে চাই
অনাদি মুখার্জি
আমার না হয় এই ভাবে কেটে যাবে তোর ভাবনায় রাতগুলো ,
তবু তোর চোখে থাকুক পূর্ণ !
বিশ্বাসের ঘরে ভালো বাসা লীলা খেলায় আমাকে ঠকালে ,
সেই সব কষ্ট না হয় আমি নিলাম তুমি থাকো সুখে !
তোমার ঠোঁটে ছিল একদিন পাগলের ভালোবাসা ,
তাই তো আমার ঠোঁটে উপর ছিলো এই ছোঁয়া !
একসাথে দুই জনে জোৎস্না দেখতাম রাতের আকাশে ,
নদীর তীরে বসে সেই পরীর গলপ শুনে রাত কাটতো দুই জনে !
কি দিলি অবশেষে আমায় কষ্ট দিয়ে তুই কি সুখ পেলি !
আজ আমার সময় কাটে শুধু বিষণ্নতায় ,
না ভালো লাগে কোন গান ভালো লাগে কবিতা !
আজ এই শূণ্যতা নিয়ে চলে যেতে ইচছে করে পৃথিবীর থেকে ,
কিন্তু পারি না তোর এই ভালো বাসা কে ভুলতে !
রাত কি ভালো থাকে চাঁদ বিহনে ,
নদী কি সুখ পায় সাগরের মোহনায় না মিলে ,
তেমনি তোমাকে ছাড়া রহিব আমি কেমনে !
তাই তো আমি তোর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই পৃথিবীতে !
আমার মেয়ে কুমারী
সুস্মিত দে
জীবন্ত দূর্গা পাবে পদ্মফুল অষ্টমীতে পদ্মফুল সপ্তমীর অপরাজিতা নবমীতে রাঙা জবা সবাই কুমারী থাকবে।একজন কুমারী পূজো তবে আমার কমারীর কি দোষ , জানিনা তো কোন দিন কুমারী পূজা রক্তমাংসের কুমারী দের সৌন্দর্য গায়ের রঙের বিচার হয়। এবার মাকে প্রশ্ন রাখবো , আমার কুমারী বিনা অপরাধে বধো একি রে তোর বিবেচনা
চল চল চল আসছে শত শত মিষ্টি হাসি মাখা শিশু দূর্গার দল ।মানুষ আপন মনে সামান্যই আনন্দ চাইছে ? নির্বাসনের অত্যাচারে মুক্ত হোক সকল জ্বালা যন্ত্রনার প্রানে শুদ্ধ বাতাস টুকু লাগুক তাতেই আসবে প্রানহীন প্রানে প্রান ।
উতলা আকুল হয়েছে বাতাস
আগমনী র ভৈরব রাগ
বাজছে তান মা আয় ধ্বনির শব্দে ছন্দে নবো আনন্দে উমা মা সবার খুশির দিনে আসে বছর কেবল একবার ,পূজার গন্ধ নদীর জল নীলাকাশ কচি ঘাস শিউলির রঙে কাপড় সেলাই রঙে রাঙিয়ে বিছানো ফুলে পদ্ম অপরাজিতা রাঙা রঙের লাল জবা মিলনের বাহার দেখে মখমল কার্পেটর উপড় মায়ের পায়ে নূপুর রুনুরুনু ঝঙ্কারে বাজে, শিশু দলের প্রাণ আনন্দে মহাসমারোহে কখনো হাসে খিলখিলিয়ে দুষ্টুমি তাদের মজাটাই সব
ছোট্ট কতো বালক বালিকা মায়ের হাতে কাশফুুল তুলে দিয়ে বলে ,কিছু চাইনি মা কিছু চাইনি মা আমরা কেউ?
তাদের বাস্তবে অনুভব বলে পেটের জ্বালায় ক্ষিদে হারিয়ে গেছে আর চাই না কিছু ভয়ে মাগো?
পেটের ক্ষিদের জয় করেছে অতিক্রম আজ তারা জয়ের শিখরে জোতির্ময়ের আলোতে নক্ষত্রের মতো জ্বলে মা তা দেখে ?নহে আমি নহে আপনি কেউ
না, নয় মা দূর্গা প্রতিমা অর্জিত
সম্পদের মধ্যে শিশুর হাসি অবোধ
নিষ্পাপ সহজ সরল শিশু চাইতে শেখেনি !!!
দূর্গা কেঁদে ওঠে , ভাবনা আসে
আমার চাড় সন্তান হয়নি কি সুন্দর রক্ত মাংসের মানুষ,কি শেখাবো আমি মা হয়ে মার শিক্ষা প্রথম পারবো আমি? নিজের মনে উথালপাথাল প্রশ্ন আসে ।
আর কি ছাড়বে ?অভুক্ত শিশুরা দিতে জানে ,নিতে নয়।ক্রন্দনরত দূর্গা নিঃশব্দে শ্বাসপ্রশ্বাসটাই তার শেষ সম্বল চোখের
দামী জলের চেয়ে দামী শিক্ষা লুকিয়ে আছে বছর বছর অপেক্ষা করবে
না মা দূর্গা আর। দশভুজা অন্তরে চিঠি লেখে ,তার ভিখারি স্বামী রাজাধিরাজ কে অন্ধকারে অন্তরেতে অশ্রুঅঁ বাদল ঝড়ে।
আগমনীর বাণী
ডঃ রমলা মুখার্জী
ত্রিভূবনে শুনছি যে আজ
মায়ের আগমনী,
সোনার আলোয় মায়ের নূপুর
বাজছে রিণিরিণি।
বুকের মাঝে বাজছে যে ঢাক
ঠ্যাং কুরাকুরকুর...
বছর পরে বাপের ঘরে
আসছে দুর্গা ঠাকুর।
শিউশি, কমল, শালুক, কাশে
উমা'র আবাহন-
আগমনী গানে বাঙালি-প্রাণে
দজভূজা-আরাধন।
গাঁয়ের বধু নিকানো উঠানে
আঁকে যে আল্পনা-
আমের পাতায় সাজায় দুয়ার
উৎসবের জল্পনা।
শারদ আকাশে মধুর বাতাসে
তিতলির আনাগোনা...
অলির নৃত্যে অধীর চিত্তে
পুজোর স্বপ্ন বোনা।
ঢাকের তালে
পিনাকী মুখার্জী
ঢ্যাং কুরা কুর বোলে
ঢাকের তালে তালে !!
সেই স্বপ্ন মাখা নীলাম্বরী
মায়ের আঁচল তলে !!
উলু কাসর শঙ্খ ধ্বনিতে
প্রতিধ্বনি মা'র মন !!
দশ হাতে বিম্বিত পণ ,
রূপে মায়ের স্নেহধন !!
মা- মা গন্ধ ভাসে
মনের আশেপাশে !!
মা যেন শিশির ভেজা
শিউলির সুবাসে !!
মা'র ললাটের সিঁদুর ছোঁয়া
সেই আশার পূর্বাচলে !!
ভাসান কোথায় সম্মুখে , ঢাকের
আবার আসবো বোলে !!
ধন্য জীবন
হামিদুল ইসলাম
ফিরে যাচ্ছি তোমাদের সাথে
চাদরে মোড়া জীবন মুস্কিলে আসান
বিষাক্ত বায়ুদের উদ্গীরণ
রাস্তায় মরণাপন্ন আসমান ।।
সবে তো কলির সন্ধ্যে
মুত্যু উৎসব এখনো হয় নি শুরু
বিবর্ণ পাতাবাহার ঝরে পড়ে
বুকের মাঝে দুরুদুরু ।।
পালাতে চাই কোথাও
কিন্তু কোথায় পালাই
জীবন বড়ো কঠিন কষ্টের বোঝা
প্রতিপদে আতঙ্কের বালাই ।।
পালাবো না কোথাও
মরে যদি যাই ভালো, তবু পালাবো না
এ জীবনে একদিন মৃত্যু নিশ্চিত
পালিয়ে গিয়ে এভাবে কোনোদিন বাঁচতে পারবো না ।।
তোমাকে ফেলে পালাবো কোথায়
এ জীবনে তুমি চিরধন্য
মৃত্যুর মাঝে আজো বেঁচে আছি
বেঁচে আছি তোমার জন্য ।।
স্বপ্ন সফলতা
মোঃআলিউল হক
রাতের স্বপ্ন খুব স্বাভাবিক
ঘুমের মধ্যে অনেকে অনেক কিছু দেখে।
কিন্তু দিবা স্বপ্ন কঠিন জিনিস
সবাই দিবা স্বপ্ন দেখেনা
যে দিবা স্বপ্ন দেখে সে রাতে ঘুমায় না
ঘুমাতে পারেনা।
সে জানে এক মুঠো শ্রমের পরে
আমার দীর্ঘ জীবন সুখময় হবে।
দিবাস্বপ্ন পুরণে তার নিদ্রা উড়ে যায়
স্বপ্ন ধরার আশায়
ঘুমিয়ে কখনও স্বপ্ন সার্থক হয়না।
যে জাগ্রত সে স্বপ্ন পুরনে সচেষ্ট হয়।
মুক্তা মাণিক কি এমনি মেলে?
গভীর জলের তলে ডুবতে হয়
অন্ধকার ভয় দূরে ঠেলে,
সাফল্য ধরা দেয় শ্রম সাধনার পরে।
আলো
সাফরিদ সেখ
অদ্ভুত আঁধার এক পৃথিবীকে করেছে গ্রাস
যত দেখি তত কালো রূপ ধেয়ে আসে।
কালো মেঘ পৃথিবীকে করে শাসন, নিয়ন্ত্রণ
থমকে দিয়েছে চরাচরের সমস্ত কিছু এক নিমেষে।
দাড়ায় করিয়েছে পৃথিবীকে সেই আদিম বন্যলোকে,
যেখানে রাতদিন কেবলই অন্ধকার, কালো।
এর পর ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল আমার
খাতার উপর মেঘের আর্তনাদ অহরহ
সমস্ত ধরণী কে কম্পিত করে দিল ভয়াবহতা
নয় যে তখন সূর্য বজ্রের বাহুডোরে আবদ্ধ।
রৌদ্র তখন হয়তো মেঘের পাশে প্রহর গুনছে
যেমন বিপদে পিতৃ পাশে সন্তান গোলে।
অন্ধকার তুমি যতই কালো হও, তবু আমরা
করিনা ডর। তুমি ই তো কালি, কল্যাণীয়া।
সমস্ত সৃষ্টির মাঝে তোমার কল্যাণ রূপ প্রতিনিয়ত
যাতায়াত করে, সমৃদ্ধ করে সৃষ্টি মাতাকে। অন্ধকার কেটে যায় কেবানা আলো আসবেই।
জীবনের সব কালো সরিয়ে দেয় একমাত্র আলো।
করি বন্দনা আনকোরা আলোর, আলতাফ পরশ,
সবুজ ঘাসে শরৎ পাতের শিশির কমাতে।
সবুজ ধানের সবুজ পাতায় মুক্তো এনে দেয়।
ভোরের আলো দরজায় কড়া নাড়ে নবীন প্রানে
তরুণ আবেশ, সবুজ প্রানে জাগায় মনে, ধরিত্রীতে
স্পন্দন আনে নবরূপে নব বিন্যাসে নবীণ কিশলয়।
আইসোলেশন থেকে বলছি
গোপাল বিশ্বাস
আইসোলেশন বন্দ্ব ঘর থেকে বলছি
আমি covid-19পজিটিভ, এতো দহন !
কি যে কষ্ট,
আমার নাম বাণী পদ দত্ত
বাড়ি ঈশান পুর -তিন নম্বর গলি l
সাতদিন অতিক্রান্ত, চিকিৎসা চলছে
ডাক্তার বাবু, নার্স আমার ভগবান
জ্বর কাশি শ্বাস কষ্ট অনেকটা কমেছে,
বার বার হাত ধূয়া, ল্যাকডাউন সেনিটেজ
কোরোনার বিরুদ্ধে রুখে দঁড়ানোর শপথ l
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে জীবন দান
বাঁচানোর কি আপ্রাণ চেষ্টা l
এটাই ভারতবর্ষ, এটাই মানবতা l
জীবন্ত ভগবানকে আমার স্যালুট
তাঁদের জন্য জোড়ে হাততালি l
আমি আইসোলেশন বদ্ধ কেবিন থেকে বলছি
দশদিন পর আবার আমার পরীক্ষা হলো
covid-19 নেগেটিভ কি করে সম্ভব ?
কি যে মুক্তির অনুভূতি !
মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলে -কেমন লাগে ?
যম কেও এবার নতুন করে হিসাব কষতে হবে
এবার আমি মাস্ক খুলবো -কিছুক্ষনের জন্য
কারণ যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি l
জীবনের প্রয়োজনে
জুয়েল রূহানী
জীবনের প্রয়োজনে
জীবন এগিয়ে আসে,
মহৎ এর পরিচয়ে-
নিঃস্বার্থে ভালোবাসে।
জীবন-জীবনে আঁকা
জীবনের প্রতিচ্ছবি,
জীবনের প্রতিদানে-
মায়াবী এ পৃথিবী!
জীবনের জ্বয়গানে
জীবনের ছবি আঁকা,
জীবন চলার দুর্গম পথ-
কখনও সরল; বাঁকা!
লালন স্মরণে
আসরাফ আলী সেখ
এসো এসো, এসো হে লালন আখেরি কলিতে ,
জাত বিচারে মরছে মানুষ ফাঁদ পেতে সে জাতের ,
মানুষ জাতির নাইয়া হয়ে দাঁড় টা টেনে ধরো ও হে,
কোথায় তোমার আরশিনগর নগর একটু নিয়ে চলো ,
কোথায় তোমার সিরাজ সাঁই এর আখড়া আমায় বলো,
মানুষ মানুষের ভেদাভেদের নেই তো কোনো ধর্ম
কোথায় তোমার মনের মানুষ দাও না বলে কর্ম,
হৃত মাঝারে বিরাজিত সাঁই ,
মন্দির মসজিদ গির্জা তে নাই ,
সোনার মানুষ সাথে সাঁই খেলে প্রেমের খেলা
মানব প্রেমে করলেন সাঁইএই ভবের মেলা ,
কোথায় তোমার আরশিনগর নগর একটু নিয়ে চলো,।।
রূপকথার দেশ
আব্দুল রাহাজ
আমাদের পৃথিবী
সুন্দরে ভরা
চারিদিকে সবুজের সঞ্চার
তা দেখে মানুষের আনন্দে রূপকথার জগতে ভেসে বেড়ায়।
সবুজের মনোরম পরিবেশে ফুটছে গ্রাম বাংলার মায়াভরা পরিবেশ
তা দেখে মনে হয় কোথাও যেন রূপকথার দেশ।
কিন্তু কোথাও যেন বর্তমান সময়ে হারিয়ে যাচ্ছে সেই মনোরম পরিবেশ
পাল্টাচ্ছে সবুজ পৃথিবী ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ সবুজ ধ্বংস করে চলেছে মানুষের আরাম ভোগবিলাস ।
হে মানুষ জোট বদ্ধ হও
জাগো ফিরিয়ে দাও সচেতন হও আর পৃথিবী কে ফিরিয়ে দাও সবুজের সঞ্চার
গ্রামবাংলা হয়ে উঠুক মনোরম পরিবেশের অধিকারী
গ্রামবাংলা ও পৃথিবীর সৌন্দর্য হয়ে উঠুক রূপকথার দেশ।
দেশও জুড়ে হা হা কার
মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ
হঠাৎ উদীয়মান হইয়া আসিয়াছে করোনা
মানব জাতিকে করিয়াছে ভয়ের উন্মোচনা।
পুলিশ মামা করছে যে হুঁশিয়ারি
তবু হচ্ছে বাহির,পড়ছে লাঠি,ছুটিছে মানব জাতি।
রোজ আমাদের হিংসে বিদ্বেষ
শেখাই যে পুরোহিতি।
যুগ যুগ ধরে আমরাতো জানি তার নাম রাজনীতি।
করোনা তোমার ভয়ে বন্ধ সে বিদ্বেষ উচ্চারণ।
মানব বুঝিছে জীবন নেই পুরোহিত প্রয়োজন।
করোনা আসিলে কি জাদু লইয়া?
ভয়ে ডাকিছে ঈশ্বর বা আল্লা খোদা।
তাই মানব আজ বড়ো অসহায়
রইয়াছে টাকা নাইরে খাইতে পাই।
করোনা দিলো মানবের মনে ভয়
সরকার,ধরিয়াছে হাল,
মানব জাতিকে করছে বেহাল।
করিয়া দিয়াছে ঘরকে পথ,মাঠ,বাজার।
করোনা আসিয়াছো ভবে দেখিয়া নাচিছে প্রাকৃতি
পথো,মাঠো বলিছে এলো বুঝি সুখের দিন।
নাইরে আঘাত,নাইরে চাপ পাচ্ছি শান্তি ময়।
করোনা তোমার ভয়ে জাচ্ছেনা দেখা
সাদা কালো চামড়া।
মানবের মন বড়ো অসন্তোষ।
কিন্তু করোনা আর নাইরে থাকার কোনো অধিকার
পেছনে রইয়াছে রাস্তা যে শুনশান।
করোনা যাও,করোনা তুমি যাও
শুধু ভয়টাকে রেখে যাও
হোক ভয়টা সাম্যবাদী।।
কালোকিষ্টি
মহীতোষ গায়েন
বহুদিন থেকে কালোকিষ্টিরা স্বপ্নে ভাসছে...
পাশে আসছে,কাছে আসছে,ধরা দিচ্ছে না,
ধরতে গেলে তারা পালাচ্ছে প্রেতসিদ্ধের মত।
কালো টাকা,কালো দিন,কালো প্রেম,কালো
রাজনীতি এরাও স্বপ্নে এসে দাপাচ্ছে,এরা
মস্তিষ্কের কোষে কোষে রাজত্ব করতে চায়।
কালোকিষ্টি ইদানীং ঐসব কালোদের সাথে
মিশে বেশ সখ্যতা করে নিয়েছে,কালোকিষ্টি
আলো দেখলেই পালিয়ে যায় উত্তাপব্যাকুল।
আলো আসুক সাদা,আলোর তীব্র ফোকাসে
সব কালো প্রকাশ্যে সাদা হয়ে যাক,সব কালো
সাদা হলেই মানুষ বাঁচতে পারবে অবলীলায়।
এবার স্বপ্নে আসুক আলো শুধুই সাদা,আলো
আসুক চিন্তা,চেতনায়;ফুল,পাখি,গাছ,আকাশ
সব কাছে এলেই এদের দাপাদাপি বন্ধ হবে।
আসলে কালো মাখতে মাখতে কালোকিষ্টি
মানুষের স্বপ্নে থাবা দিচ্ছে;এবার প্রতিরোধ
হবে জোর,কালোত্তীর্ণ হবে শ্বেতশুভ্র আলো।
করোনাকালের দূর্গোৎসব
বিপ্লব গোস্বামী
শরতের আকাশ জুড়া সাদা মেঘের ভেলা ,রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরি আর শিউলি ফুলের গন্ধে জানান দেয় এসেছে শারদীয় দূর্গোৎসব।বাঙালির প্রাণের উৎসব দূর্গোৎসব।দুর্গোৎসবে বাঙালি মেতে উঠে মহানন্দে।কিন্তু এ বছর করোনার করাল গ্ৰাসে সর্বত্র আতঙ্ক-ত্রাস আর নিরানন্দ।সারা বিশ্ব জুড়ে হাহাকার আর মৃত্যু মিছিল।তবুও বাঙালি থেমে নেই দূর্গোৎসবে।সরকারী নির্দেশ ও সামাজিক দূরত্বতা মেনে চলছে পূজোর প্রস্তুতি।
ইতিমধ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে সারা রাজ্যের জন্য ঘোষণা করেছেন পূজোর এসওপি।সারকারী নির্দেশ মতে পূজো আয়োজকদের পূজোর আগেই জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নিতে হবে অনুমতি।প্যান্ডেল হতে হবে খোলামেলা এবং বিভিন্ন দিকে দরজা রাখতে হবে।মণ্ডপে ৫০ জনের অধিক দর্শনার্থী যেন জড়ো না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হয় আয়োজকদের।পূজো মণ্ডপে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।পূজোর আগে ও পরে পূজো কমিটির সদস্য, পুরোহিত ও তার সহযোগির করতে হবে কেভিড পরীক্ষা।কোন ধরনের প্রসাদ বিতরণ করা যাবে না।রাত দশটার মধ্যে প্রত্যেক পূজো মণ্ডপ বন্ধ করে দিতে হবে।করা যাবে না কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।হতে পারবে না পূজো উদ্বোধন ও বিসর্জন নিয়ে কোন অনুষ্ঠান।প্রতিমা বিসর্জনে কোন ধরনের শোভাযাত্রা হবে না। একটি প্রতিমার সঙ্গে ১০ জনের অধিক যেতে পারবে না।এ রকম আরো অনেক নির্দেশিকা।
করোকালের দূর্গোৎসবের জন্য সরকার যে এসওপি ঘোষণা করেছে তা আমাদের মেনে চলা উচিত।কারণ প্রতি বছর দূর্গোৎসবে মণ্ডপে মণ্ডপে যে ভাবে দর্শনার্থীদের ভীর হয় এবারও যদি সেভাবেই হয়ে থাকে তবে তার পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর।তার ফল ভোগ করতে হবে সবাইকে।তাই সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের কর্তব্য হলো নিজে সচেতন হয়ে অন্যকে সচেতন করা।সেজন্য আমরা সকলের দায়িত্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।প্রতি জন সচেতন নাগরিককে গ্ৰামের সাধারণ মানুষদেরকে সরকারী নির্দেশিকা মেনে পূজোর আনন্দ উপভোগ করার পরামর্শ দিতে হবে।
দূর্গোৎসব হচ্ছে আনন্দের উৎসব।দেবী দূর্গার অন্য নাম আনন্দময়ী।তাই আনন্দময়ীর আগমনে সবাই আনন্দে মেতে উঠে কিন্তু এবারের দূর্গোৎসব মোটেই আনন্দের নয়।বিশ্বব্যাপি ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস গোটা মানব জাতীকে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে।করোনার কারণে মানুষের জীবনযাত্রা, অর্থনীতি,উন্নয়ন সব কিছুই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।বহু মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকারে পরিণত হয়েছে।অনেকে অভাবে পড়ে দারিদ্র্য সীমা রেখার নীচে নেমেছে।এসব মানুষদের কাছে এবারের দূর্গোৎসব মোটেই আনন্দের নয় বরং যন্ত্রণার।তাই আমরা যারা তুলনায় আর্থিক দিক দিয়ে একটু ভালো তারা যেন ঐসব মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াই।সম্ভব হলে নূতন কাপড় কিনে দেই।সামর্থ মত আর্থিক সাহায্য করি।একটু হলেও ওদের মনে আনন্দ হাসি এনে দিতে পারি।অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সামর্থবান সকল মানুষের কর্তব্য।
এবার না হয় না হলো আলোকসজ্জার প্রতিযোগিতা,না হলো কোন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা।না হোক দামী কাপড় আর আভিজাত্যের অহঙ্কার।এবার যেন হয় দীন,দুঃখী আর অসহায়দের মধ্যে সহানুভূতি-সহযোগিতার মহোৎসব।এবার শুধু ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে আর সরকারী নির্দেশিকা অনুযায়ী পালিক হোক বাঙালির প্রাণের উৎসব দূর্গোৎসব।
I Remember By Sabir Ahmed
At the day's end
The falling twilight disappears
Slowly beyond the hills on the earth
Dusk fetches familiar faces
Are very past in my dream vision
I heard it to tell me
From my father
Mother you died
Died of unknown disease
After I was born
When I was nursling of two hours
Deprived of your care caress I am
solely-
I miss
Your shadowy affectionate lap
And the symbolic kisses too
I could not play-
Under the edge of your saree
What had happened exactly to you
I know not
As then I was innocent
Tears ah salty water
Mother I do remember you
My waiting will wishes
To see your unseen face
When the birdlets fly with their caretaker…..
স্মৃতিমঞ্চ
পলাশ পোড়েল
পাক খেয়ে হাওয়ায় উড়ছে তোর ছাই
দহনে লেখা সেই দেহ ছবি হারিয়ে গেল
দিয়ে যাও করতল ভরে দুঃখ শুধু একমুঠো
নিত্য নতুন মঞ্জুল অনুভব ঠায় এলোমেলো।
মাটিতে চলো দেশান্তরী মন অগ্নিদগ্ধ ছাই
স্মৃতিমঞ্চে আটকে থেকো ছায়ার রেখা ধরে
নতুন প্রচ্ছদে অচেনা তুমি দিয়ে গেছো ফাঁকি
সঞ্চিত হৃদয় গভীরে নিলীন কিছু বিশ্ব চরাচরে।
অধর্ম যখন
নদেরচাঁদ হাজরা
অধর্ম যখন মাথা চাড়া দেয়
পালনকর্তা তখন জেগে ওঠেন অধর্মের বিনাশে৷
ভগবান বিষ্ণুকে বারবার আসতে হয় ধরাধামে
মানুষ কিংবা মনুষ্যেতর প্রাণী রূপে ৷
পৃথিবীর সব কষ্ট ভোগ করে
অধর্মের সঙ্গে যুদ্ধ করেন বারবার ৷
তিনি ঈশ্বর
তিনি মানব মহামানব
আবার তিনিই মনুষ্যেতর রূপে রক্ষা করেন সৃষ্টিকে ৷
পালনকর্তা যে !
তাইতো বারবার এসেছেন
মিশে গেছেন মানবের অস্তিত্বের সাথে ৷
অথছ আমরা !
দম্ভে পা পড়েনা মাটিতে
অহংকারে জর্জরিত হয়ে নাক সিটকাই বারবার ৷
কিন্তু তিনি !
তিনি যে সবার মধ্যে মিশে গেছেন
আমাদের অস্থিতে
আমাদের মজ্জায় এক হয়ে গেছেন ৷
যুদ্ধ করেছেন
ধ্বংসলীলা ঘটেছে কতবার ৷
আসলে দাউ দাউ করে জ্বলা অধর্ম
পুড়িয়ে দেয় অনেককিছু
তাকে যে যে রদ করতে হবে !
তখনতো যুদ্ধ ছাড়া গতি থাকেনা ৷
পরাজিত করতে হয় অসুররূপী অধর্মকে
সেও তো ছেড়ে দেয়না ৷
কেউ কাউকে পথ ছেড়ে দেয়না যে !
কাঁটা হয়ে রোধ করে রাখে পথ
সেই কাঁটা তুলতে হলে
যুদ্ধ ছাড়া গতি থাকেনা যে !
তাইতো যুদ্ধ ৷
সে যুদ্ধ যতই ভয়ানক হোক
অসুররূপী অধর্মকে পরাজিত হয়ে
পথ ছেড়ে যেতে হয় ৷
হাজার লক্ষ প্রতাপ মুছে যায় একদিন ৷
ধর্ম আবার ফিরে আসে
সে ধর্ম মানবধর্ম যে !
মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়েই ভগবান বিষ্ণু হয়েছেন মহামানব ৷
মানবের সব যন্ত্রনা ভোগ করে একাত্ম হয়েছেন মানুষের সাথে ৷
আবার আসবেন তিনি মানবধর্ম নিয়ে ৷
তারই পথ চেয়ে আমরা আজ ৷
খুব ভালো লাগলো । বেশ বৈচিত্র্যময় ।
উত্তরমুছুনউপকন্ঠ সাহিত্য পত্রিকা অনেক অনেক শুভেচ্ছা
শ্রদ্ধেয় পরিচালকমন্ডলী
উত্তরমুছুনআমি নিজে খুব খুশি আমার লেখা এখানে দেখতে পেয়েছি। সবাই সুন্দর লেখেন। আমাকে সূচিত করুন আমার লেখা প্রকাশিত হলে আমার চাইতে কেউ বেশি খুশি হবেন না। আমার উৎসাহ আমাকে আপন উদ্দীপনা তে উড়িয়ে নেবে ।মনে আনন্দে আত্মহারা আমি লেখার ধার বাড়িয়ে আপন গতিতে কলম ছুটবে।তবুও আপনার বিচার শিরোধার্য । সবাই ভালো থাকুন । আবার লিখবো। আন্তরিক শুভেচ্ছা জীবনের নির্মল হোক