মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন-13/10/2020 (Upokontha)

 উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 13/10/2020

Upokontha sahitya patrika Web Megazine- 13/10/2020

Upokontha Bengali Megazine 

উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা



বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ :      
কবিতার রূপকল্প : পর্ব : ২১

  || রবীন্দ্র পরবর্তীকাল  এবং আধুনিক কবিতার আন্দোলন ||
                     ( ষষ্ঠ অংশ )
                       সৌম্য ঘোষ

                       চল্লিশ দশকের শেষে ভারত বিভাজনের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয় । তারপর থেকেই বাংলা কবিতার মূল প্রবাহ দুইটি স্রোতে প্রবাহিত হতে লাগলো । একটি পূর্ববঙ্গে, যার নতুন নাম হল "পূর্ব পাকিস্তান" । অপরটি, পশ্চিমবঙ্গ । পূর্ব পাকিস্তানের কবিরা প্রথমদিকে তাদের কবিতার ধারার স্বতন্ত্র আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে ভাষার দিক থেকে উর্দু মেশানো বাংলা এবং ভাবের দিক থেকে প্যান ইসলামিক চেতনাকে আশ্রয় করেছিলেন । আহসান হাবীব ( ১৯১৭--৮৫
এইসময় লেখেন, " এ মৃত্তিকা বিশ্বাসঘাতক"  বা 
" প্রত্যয়ের  দিন নাই , প্রতিশ্রুতি বিদ্রূপবিক্ষত ।"

ফররুখ আহমদের( ১৯১৮--৭৪) " সাত সাগরের মাঝি" দেশভাগের আগেই প্রকাশিত হয় । কবি পূর্ব পাকিস্তান চলে যাবার পর প্রকাশিত হয় তাঁর
"নৌফেল ও হাতেম ",  " হাতেম  তায়ী " । তাঁর রচনায় নজরুল ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রভাব নজরে আসে ।

আবুল হোসেনের (১৯২২--) কবিতার কথ্য রীতি আকর্ষণীয় । উপমাগুলি তুলে আনেন প্রাত্যহিক জীবন থেকে । তাঁর কবিতার পটভূমি সচরাচর শহরের । যন্ত্রণা আর জিজ্ঞাসা ক্ষত-বিক্ষত করে এই কবিকে ।

সৈয়দ আলী আহসান (১৯২২--) গোড়ায় পুঁথি সাহিত্যের ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে কবিতা লিখতেন । যথা, " চাহার দরবেশ ।" পরে তিনি সেই পথ পরিহার করেন। " অনেক আকাশ" কাব্যগ্রন্থ থেকে তাঁর আধুনিক চেতনার বিকাশ । তাঁর কাব্যে নিসর্গ ও নারীর প্রতি ভালোবাসা উন্মুক্ত হয়েছে ।
        
           " হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সিক্ত নীলাম্বরীতে
              দেহ ঘিরে
               তুমি আমার পূর্ব বাংলা
                পুলকিত সচ্ছলতার প্রগাঢ় নিকুঞ্জ।"

              এই সময়ের অন্য উল্লেখযোগ্য কবি হলেন -- সিকান্দার আবু জাফর (১৯১৯--৭৫), সানাউল হক (১৯২২--), আব্দুল গনি হাজারী (১৯২৫--৭৬) । বলিষ্ঠ উচ্চারণের জন্য সিকান্দার আবু জাফরের কবিতার আবেদন ব্যাপক। রোমান্টিক মন তাঁর কিন্তু সমকালের যন্ত্রণা তিনি এড়িয়ে যান না ।
"আমি বাস করি  আরো অনেকের সাথে
নির্জন বধির এ যুগজীর্ণ কবরখানায় ।"

জীবনের অসহায় রূপ, জীবনের অবমাননা তাঁকে পীড়িত করে । 

কবি সানাউল হক মানুষ ও প্রকৃতির প্রেমে আচ্ছন্ন। তাঁর মন ভাটিয়ালি বাউলের দেশজ
দাক্ষিণ্যে মগ্ন :

"শীতলপাটির মত ঠিক আমাদের প্রিয়া নদী
  রুপোলী কেশের গুচ্ছ সুচিক্কন ঢেউ ----- ঢেউ যার
  তনুপূর্ণা --- কত স্নান উন্মীলিত ভাঁজে ভাঁজে তার।
  ডুব দাও গহীন বুকের স্বাদ পেতে চাও যদি ‌ ।"

কবি আবদুল গনি হাজারীর বুদ্ধিগ্রাহ্য মন খুব পর্যবেক্ষণশীল । সজাগ দৃষ্টি মেলে চতুর্দিকে পরিপার্শ্বকে দেখেন তিনি । 
"ফুলার রোডের কৃষ্ণচূড়ার গাছে
রঙের আভাস ছেনালীর মত লাগে ।"
তাঁর বিখ্যাত   "কতিপয় আমলার স্ত্রী" কবিতায়--

       " আমাদের রাত্রির শরীর পানসে
         জানলায় চাঁদ নীরক্ত
          ব্যবহৃত দেহ
          নাক-ডাকা স্বামী
          বিনিদ্র রাত
           এবং  ট্রাংকুলাইজার.... ‌"

এই সময়ের আরো অন্য স্বনামখ্যাত কবিরা হলেন বেগম সুফিয়া কামাল (১৯১১-- ), তালিম হোসেন (১৯১৮-- ) এবং আশরাফ সিদ্দিকী (১৯২৭-- )।

বেগম সুফিয়া কামালের একটি বিখ্যাত কবিতা :

সাঁঝের মায়া         
"""''''''''''''''''"""""""""""
"অনন্ত সূর্যাস্ত-অন্তে আজিকার সূর্যাস্তের কালে

সুন্দর দক্ষিণ হস্তে পশ্চিমের দিকপ্রান্ত-ভালে

দক্ষিণা দানিয়া গেল, বিচিত্র রঙের তুলি তার_

বুঝি আজি দিনশেষে নিঃশেষে সে করিয়া উজাড়

দানের আনন্দ গেল শেষ করি মহাসমারোহে।

সুমধুর মোহে

ধীরে ধীরে ধীরে

প্রদীপ্ত ভাস্কর এসে বেলাশেষে দিবসের তীরে

ডুবিল যে শান্ত মহিমায়,

তাহারি সে অস্তরাগে বসন্তের সন্ধ্যাকাশ ছায়।......."






বিভাগ-লিমেরিক
             শংকর হালদার

ভূমিবিদ রামসিং মাটি শোঁকে সারাদিন
গুনে গুনে বীজ লাগান এক দুই তিন ।
গন্ধ বুঝে আলু মূলো
কখনও আবার গুটি তুলো,
ভূমির উপর শয়ন করে সারা রাতদিন ।





চিঠি
       উমর ফারুক

একটি চিঠির খামের ভেতর
ডাক পিয়নের হাতে
সাইকেলে তার মুখে আওয়াজ
কলম চালান তাতে ।
ভোরের আলো ফোটার আগে
বন্ধ জানালা টা 
আষাঢ় কালো মেঘ জমেছে
বুকটা তাদের ফাটা।
চলে গেলেন রামুর মাতা
আর কটা দিন পর,
জানাজা তাহার নাই কপালে
নাই কোন প্রতিত্তূর।
আর কিছুদিন কেটে গেল
চিঠির জবাব করে
চিঠি আওয়াজ মিরাট থেকে
লাশের খবর ওড়ে।
বোনের হাতে এমন চিঠি
কান্না মাখা মুখ
বড়মা চাচি খুড়তুতো ভাই
ভাসায় কেঁদে বুক।
অধম ছেলের লাস হল আজ
মথুরা বাই পাসে
মায়ের শরীর আঁচল ধরে
শোয়ালো ডান পাশে।





দুগ্গা দেখে অবাক
        অঞ্জলি দে নন্দী, মম

ঠাকুর দেখতে আসছে ওরা।
সারাদিনরাত শুধুই ঘোরা।
বাজছে বেদম ঢাক।
মা তো অবাক।
এ আবার কেমন সাজ
করেছে ভক্ত আজ!
মুখে কেন মুখোশ পড়েছে?
মায়ের মুখ আশ্চর্যে ভরেছে।
পরে জানলেন অন্তর দৃষ্টিতে।
করোনা মহামারী এনেছে তাঁর সৃষ্টিতে।
তিনি হলেন ক্ষুব্ধ বড়।
ডেকে বললেন, " ওহে ভাইরাস!
পৃথিবী থেকে চিরতরে সর!
এখানে আর কর না বাস! "
মায়ের প্রতাপে ও ভাগল।
সবার মাস্ক খোলা মুখে
ফের হাসি জাগল,
অনন্ত সুখে।






The Flowers
       Mahitosh  Gayen

Look at the flowers blooming with love,
Look at the flowers on the tree, life ...
The flowers are blooming...

look at the flowers of love ...
The flowers are green,
The flowers of life..
Come sing people's songs, come flowers.

Mixed with flowers are men,flowers are women,Come,forget violence,envy,love flowers;
Flowers and people are the lifeblood
of the dying world.







মানবতা প্রশ্নের মুখে
                 বিপ্লব গোস্বামী

ওর সাথে আমার সম্পর্কটা কি তা নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন।সন্ধেহটা অমুলক নয়।কারণ সব সম্পর্কের একটা নাম থাকে যেমন মা বোন স্ত্রী প্রেমিকা ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি।কিন্তু ও আমার কে হয় ?সত‍্যিইতো ও আমার কে হয়।এ কথা এত দিন ভাবিনি।আজ কেন মনে হয় ও আমার কে হয়।
           ও আমার কে হয় একথা ভাবতে গিয়ে আমার বুকের ভিতর একটা চিম চিম ব‍্যথা হচ্ছে।কেন লোকে ওর ও আমার সম্পর্কটা জানতে চায় ?আর চাইবে না কেন ? এতে লোকের দোষ কোথায়।কিন্তু সত‍্যিতো ওর সাথে আমার সম্পর্কটা কি তা আমিও জানি না।ওতো আমার কেউ নয়।তবে কেন এত মমতা ওর জন‍্য।ও কে হয় আমার তা আমি জানি না।তবে একটা মানুষ আর আমি এক মানুষ হয়ে ওর পাশে না দাঁড়ালে নিজে একটা মানুষ এ কথা বলেতে পারতাম না।
            শ্রাবণের কোন এক পরন্ত বিকেলে আকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা।ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল।কাজ শেষে আমি নিশ্চিন্তপুরের পথ ধরে যখন বাড়ি ফিরছিলাম।বটতলায় আসতেই দেখতে পেলাম এক যুবতীর মর দেহ।গা শিহরণ দিয়ে উঠল।কেটে পরতে চাইলাম।কিন্তু বিবেকের কাছে হার মানতে হলো।এগিয়ে এসে দেখি ওর দেহে এখনো প্রাণ আছে।মনে হল ওর সাথে নর পশুরা পাশবিকতা চরিতার্থ করে মেরে ফেলে দিয়েছে।সঙ্গে সঙ্গে আমি থানায় কল দিলাম।পুলিশ ছুটে এলো।জরুরীকালীন চিকিৎসা সেবায় ভর্তি করা হল।অনেক চিকিৎসার পর জ্ঞান ফিরল কিন্তু স্মৃতি ফিরল না।চিকিৎসা শেষে ডাক্তার জানালেন ওকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হরেছিল কিন্তু বলাৎকার  হয়নি।ওর স্মৃতি না থাকায় ও তার বিড়ির ঠিকানা দিতে পারে নি।ডাক্তার ওকে আমার কাছে সমঝে দিলেন।আমি ঘটনাটা বাড়িতে জানালাম।আমার পরিবারের সবাই ওকে বাড়ি নিয়ে আসতে বললেন।আমি ওকে বাড়ি নিয়ে এলাম।মাস তিন চার হয়ে গেছে।একটু একটু করে এখন ওর স্মৃতি ফিরে এসেছে।ভাবছি ওর বলা ঠিকানা মত ওকে বাড়ি দিয়ে আসবো।






পুলওয়ামা হত্যাকান্ড
                আব্দুল রাহাজ

বরফের স্তুপে এ সজ্জিত স্বর্গরাজ্য
হঠাৎ যেন ছন্দপতন
কারা যেন ওই গুলির আওয়াজে কাঁপিয়েছে গোটা স্বর্গরাজ্য।
লুটিয়ে পড়লো বীর সেনা জওয়ান রক্তে সজ্জিত হল গোটা উপত্যাকার একটি অংশ
মায়ের কোল শূন্য করে দেশের জন্য প্রাণ দিল
শহিদ হলো ওই পুলওয়ামার প্রান্তরে
হায়রে পুলওয়ামা ভিজলো তোমার মাটি শহীদের রক্তে




অন্য রকম সকাল
            মোঃআলিউল হক

সকাল বেলাটা এখন সুদীর্ঘ যেন
কাজের তাড়া নেই ;
নেই শয্যা ত্যাগের জন্য সময় দেখা ।
আলসেমিকে এখন প্রাধান্য দিয়ে চলেছি।

করোনা কালে সকাল বিকাল সব একই যেন।

তবে সাহিত্য সাথীরা অনেকেই
এই আলসেমিকে কমিয়ে দিয়েছেন।

প্রাত্যহিক কর্ম শেষে
ছাদে একটু পায়চারী সেরে
মোবাইল হাতে বসে পড়ি সাহিত্য অঙ্গনে,

এ গ্রুপ সে গ্রুপের পাতায় চোখ চলে
তখন সময় সড়াৎ চ'লে গেলেও
থেকে যায় ছড়া কবিতার প্রবহমান আবেগ।

এ অন্য রকম সকাল।





প্রবন্ধ

' পেশার চাপ ও সাহিত্য '
   - অগ্নিমিত্র

  মাধ্যমিক  পাশ করার পর ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার পরে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীর লক্ষ্য থাকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়া ও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা গবেষক হওয়া । আসলে ছাত্রছাত্রীদের বাবা মায়েরা মনে করেন যে এইগুলি নিয়ে পড়লে তার পুত্র বা কন্যার  ভবিষ্যতে চাকরি বা কাজ নিতে সুবিধা হবে, সমাজে প্রতিপত্তিও হবে। কেউই চান না ছেলেমেয়েদের বাংলা সাহিত্য বা বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াতে। তার কারণ এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তেমন নেই।  ছেলেমেয়েরাও যে সবাই বিজ্ঞানভিত্তিক পড়াশোনা করতে চায় তাও নয়। বাবা মায়ের কথাতেই অনেক সময় তারা এই বিষয়ে পড়ে। তবে সাহিত্য বা ভাষাকে তারা কিন্তু ভালোই বাসে !
তবে ভবিষ্যতে ভালো সাহিত্যিক তৈরী হবে কী করে ? এই প্রশ্ন ওঠে এবং যথাযথ ভাবেই ওঠে। আসলে সাহিত্য সৃষ্টি হয় ভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকে। একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা গবেষক হলেই সে যে ভাষা ভালোবাসবে না বা সাহিত্য রচনা করবে না, তা নয়। কিরীটী চরিত্রের স্রষ্টা নীহাররঞ্জন গুপ্ত ডাক্তার ছিলেন। অমর সাহিত্যিক বনফুলও ছিলেন চিকিৎসক । বিখ্যাত লেখক জরাসন্ধ ছিলেন পেশায় জেলার।  তাই সাহিত্য সৃষ্টি হতেই থাকবে। তার প্রবহমানতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।।







                ভুলে যাই ইতিহাস                 
                   হামিদুল ইসলাম
                     
আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ
উল্টো কুঁজো
পুরোনো দিনগুলো আবার ফিরে আসে
গাছের শেকড়ে
বিশ্বাস রাখি অটল ।।

জীবন যুদ্ধের ইতিহাস
যুদ্ধ করেই টিকে থাকে এ জীবন
আজ ময়ূরবনের হাট
সংগ্রাম হয়ে যাই পার
আস্তাবলে ঘোড়াগুলো এখনো সচল   ।।

জীবনের স্বপ্নগুলো ফেরি করি
প্রতিদিন হাটে হাটে
ক্রেতা নেই
বসে থাকি একাকী
একাকীত্বে ভরা এ জীবন সংসার  ।।

জানি না কিছুই
তবু ভুলে যাই প্রৌঢ়ত্বের ইতিহাস
জীবন যুদ্ধ
এখন কুরুক্ষেত্র
আমার পুরুষকার ভাঙে অব‍্যর্থ পাঁজরের হাড়   ।।





কবিতা:
       তুমি কোথায় আছো ?
             আসরাফ আলী সেখ


তোমায় পেয়ে খুশি হয়ে ছিল সবাই ,
আমি ও ,
তুমি কোথায় ? একটা
কল করো ,

সকাল গায়ে মেখে সূর্য সেই দিন হামা
দিয়ে এসে ছিল ,
আমি ও ,
তুমি এখন কোথায় ?
একটা হোয়্যাটসঅ্যাপ করো?

ভরা যৌবন শ্রাবনী যখন তোলপাড় করত দুপুর ,
ঝাড় দিতো সবাই !
আমি ও ঝাঁপ দিতাম!
তুমি কোথায় ?
না হয় একটু এস এম এস করো ?

ফুলের সাজি , কোকিল ঝাঁক , মৌমাছি দল ডালে ডালে নতুন স্বপ্ন নিয়ে
যখন এসে ছিলে ,
সবাই তোমার সুবাসে বুক ভরাতো !
আমি ও !
তুমি না হয় শেষমেশ
একটা মিসড কল দিও ?






মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা
(১)

ধর্ষক

মেয়েরা
জানি ধর্ষকের
কোন জাত নেই
ধর্ম নেই, সম্প্রদায় নেই
বোধবুদ্ধি ও নেই, নেই পরিবার
রাজনীতির ছত্রছায়ায় তারা হয় বিল্পবী বলাৎকার।
 
প্রহসন হয়ে যায় ক্ষমতাসীন ধর্ষিতার হাহাকার
ধর্ষনের পরেও ধর্ষিত পরিবার বারবার
লজ্জা, সংকোচের হারায় খেই
ধর্ষক নাচে ধেইধেই
এদেশ বুর্বাকের
তোমরা ?

(২)

নারী

নারী
তুমি এবার
মেরুদন্ডটা সোজা করো
আইনের দরজায় কড়া নেড়োনা
রান্নাঘরের সরঞ্জাম হোক তোমার অস্ত্র
শত্রু বুঝলে তাকে নিজেই করো বিনাশ ।

মোমবাতি মিছিলে বন্ধ হয়না নারীর হাঁসফাঁস
চলছে অবিরত হরণ  দ্রৌপদীর বস্ত্র
অন‍্যের করুনায় আর বেঁচোনা
প্রতিবাদের সুর  ধরো
থেকোনা আর
আনাড়ি।






হারিয়ে গেছে
             সত্যেন্দ্রনাথ পাইন

   পুরোনো কে বিদায় নিতেই হয় নতুনকে জায়গা দিতে।
এটাই সময়ের কালের নিয়ম।
এই কালটা তাহলে কী?
   কাল অর্থাৎ মহাকাল। মহাকালের অমোঘ বিধানে সবাই বিবর্তিত আমরা।
তবুও কিছু জিনিস এমন আছে যার পরিবর্তন মেনে নেওয়া খুবই দুর্বোধ্য। অনেক সময় অশালীনত্ব ও প্রকাশ পায়।
   শৈশব পরে কৈশোর থেকেই যৌবন প্রোঢ়ত্ব এবং বার্দ্ধক্য বিরাজ করে। সমাজে আমরা এখন যৌথ থাকার বাঁধনকে মানছি না। ফলে একাকীত্ব গ্রাস করেছে নিদারুণ ভাবে ।
   খারাপ না ভালো, সুন্দর না অসুন্দর তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। মা, কাকী মা, জ্যেঠিমা, দাদু ঠাকুমা থাকলে কী অসাধারণ অনুভূতি জাগে বোধকরি নতুনভাবে বোঝাতে হবে না।
    সেটা হারিয়ে আমরা আবর্জনায় নিমজ্জমান।
  পুরোনো দিনে দুপুর বেলায় মা কাকীমাদের গল্প হাসি থেকে রামায়ন মহাভারত পড়া এখন আর নেই।
    এখন পিএন পিসি করতেই ব্যস্ত সকলে।
    রেডিও তে রম্য গীতি শোনা, অনুরোধে র আসরের বিখ্যাত গান শোনা বন্ধ।
     টিভি র দৌলতে নানান ঝগরুটে সাংসারিক কূট কৌশল দেখে মানুষের মন তিতিবিরক্ত।
  সাংবাদিক ভায়েরাও রোজগারের আশায় শুধু টিআরপি বাড়ানোর জন্য উদ্  গ্রীব।
  কেন অসংখ্য ভুল তথ্য পরিবেশন-- জানিনা। সমাজের কাছে, সকলের কাছে তাঁদের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই?
   উদাহরণস্বরূপ বলা যায়---( ক্ষমা করবেন) কোনও খবরের কাগজে ধরুন সামান্য কিছু জায়গা ফাঁকা আছে। প্রেস থেকে এডিটর মশাইকে জানানো হোল। তিনি বললেনঃ " লিখুন-- এইমাত্র খবর পাওয়া গেল প্রধানমন্ত্রী মারা গেছেন।"
  প্রেস বললো -- সে কি স্যার!
"আঃ, কী মুস্কিল! জায়গা ভরেনি তো? তাহলে লিখুন-- খবরটা সর্বৈব মিথ্যা। ""
     ভরেছে?
হ্যাঁ স্যার।
ব্যাস্।
মিটে গেল। এই তো---
  এই তো এখনকার মতো মানুষের স্বভাব।
    ছোটবেলার এক্কাদোক্কা খেলা, চোর পুলিশ খেলা, মাঠে ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি দড়ি লাফ দেওয়া, ঘুরি ওড়ানো সবই বন্ধ। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের শুধু মোবাইলে চোখ রাখা।
ফলে মস্তিষ্কের বিকিরণ ঘটলেও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে।
নানান রোগের উৎপাত তাই লক্ষণীয়।
   দূর দূরান্তে গিয়ে যাত্রা পালা দেখা, রামায়ন গান শোনা, ভাগবত পাঠ শোনা এখন নেই।
হরিনাম সংকীর্তন ও তার মাধুর্য হারিয়েছে। শুধু চটকদার কীর্তনের সংলাপ। প্রেম কৈ?
   মহাপ্রভুর প্রেমকে নগ্নতা দিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। ফলে--!
   গুরুজনদের আশীর্বাদে ছোটদের  শিক্ষা হয়। মাষ্টার মশাই এখন হয়েছে স্যার আর শিক্ষিকা হয়েছে ম্যাডাম।
   বাবা মায়ের আদর্শের সন্তান তাই বাবা মাকেই সম্মান দিচ্ছে না।
   পয়সা রোজগারের আশায় বাবা মা সন্তানকে অন্য মাসীর আওতায়( শকুন্তলায়) রেখে দিব্যি রইলেন।
আরে বাবা , সেই সন্তান পরে আপনার জন্য চিন্তা করবে কেন?
রামকৃষ্ণ মিশনে দিয়ে হাঁফ ছাড়লেন। যাক্ বাবা-- বাঁচলাম।
না, ।
সেই ছেলে পড়াশুনা করে ডিগ্রী পাবে-- কিন্তু বাৎসল্য-- প্রেম বঞ্চিত ছেলে পরে কী হবে? --- ভেবেছেন একটুও!!!
   নতুন সভ্যতার  ছেলে মেয়েরা পার্কে, রবীন্দ্রসদনে কিংবা বি গার্ডেনে বসে ছাতার আড়ালে লুকিয়ে নোংরামিটা করছে কেন? প্রেম ছিল, আছে এবং থাকবেও।
  কিন্তু  এত নগ্নতা কেন?
প্রেম না থাকলে আমরা জন্মগ্রহণই করতাম না।
অতএব প্রেম চলুক- নিভৃতে এবং মাধুর্যের মধ্যেই।
নগ্নতা মেনে নেওয়া যায় কি?
     নারীদের স্থান অন্দরে অন্দরে যেমন বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।
  তাই বলে রমনীকূলের কাছ নতজানু হয়ে বলি - এটাও আপনার নিজস্ব প্রতিবেদন।
তবু এটা আগে ছিলনা এখন দেখি।
নারীরাও সমান্তরাল ভাবে পুরুষ দের সাথে সমান ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইছে।
   ভুল না ঠিক বলার অধিকার আমার নেই।
   আমি শুধু হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার কথা বললাম মাত্র।
ষাট সত্তর দশকের যুগান্তকারী গানের বানী, সুর এবং গায়ক গায়িকার সেই পরিবেশন এখন নেই। এখনকার গানের বানী কেমন যেন এবং সুরের মাধুর্য নেই এবং গায়কীর কথা নাই বা বললামঃ।
   শুধু যন্ত্রের আধিক্য। বড় বড় বক্স বাজছে। কান থেকে শুরু করে বুকের যন্ত্রনা বেড়েছে।
স্থান সংকুলানের অভাবে শেষ করতে বাধ্য হচ্ছি।






পরজীবী শাসন
              এমাজদ্দিন সেখ

যতই তোমরা চিৎকার করো ---
"চাই শ্রমিক রাজ , কিষান রাজ "
যতই তুমি স্লোগান মুখর হও ---
সবার সুখের তরে সাম্যের গান  গাও ;...
এ দেশ কিন্তু পরজীবীর ll

পরজীবী  সাম্রাজ্য তোমার চেতনে ,মননে ---
মনু বাদ , মৌলবাদ ছড়ি  ঘোরায় ;
লক্ষ্যে অলক্ষ্যে  জীবনের সর্ব ক্ষণে !!

পরজীবীর শাসন শোষণ নাগপাশ হতে ---
মুক্ত যদি না হতে পারো ;...
আগামী দিনের মনুষ্যত্বের সকল দাবী মিথ্যা বলো !!

পরজীবীর শাসনে তোমার সকল স্বপ্ন ---
সংগ্রাম-স্লোগান - চিৎকার- অবরোধ- প্রতিরোধ প্রয়াস ---
যত উচ্চ মার্গের  চিন্তন ও বাদ; ...
কল্যাণ ভাবাদর্শ  হবে সব বর্বাদ ll

     







আনন্দ মুখর সাহিত্য উৎসব
             শিবব্রত গুহ

গত ১০ ই অক্টোবর, শনিবার, খুব ধুমধামসহকারে, অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, আনন্দ
মুখর সাহিত্য উৎসব। হ্যাঁ, এ এক অন্য ধরনের উৎসবই বটে। আর কিছুদিন পরেই সবাই মেতে
উঠবে শারদোৎসবে। মা দুর্গার আরাধানায় ব্রতী হবে সকলে। তার আগে, পশ্চিমবঙ্গের কবি - সাহিত্যিকেরা মেতে উঠলেন সাহিত্য উৎসবে।

একথা সত্যি, ভয়ংকর করোনা ভাইরাসের জন্য,
একমাত্র অনলাইন ছাড়া, সব ধরনের সাহিত্য অনুষ্ঠান অনেকদিন ছিল বন্ধ। কবি - সাহিত্যিকেরা ভুগছিলেন এক মনোকষ্টে। কারণ, সাহিত্য উৎসব যে হল কবি - সাহিত্যিকদের মিলন
মেলা। সেই মিলন মেলা হল আবার উন্মোচিত
আনন্দ মুখর সাহিত্য পত্রিকার উদ্যোগে।

আনন্দ মুখর সাহিত্য পত্রিকা - এই নামটার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অভিনবত্ব। এই পত্রিকা
অল্প সময়ের মধ্যে, দেশে ও বিদেশে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। এর জন্য এই পত্রিকার সম্পাদক
সুপর্ণা রায়ের অবদান বিরাট। তিনি হলেন একজন সাহিত্যপ্রেমী নারী। তাঁর কর্মদক্ষতা অতুলনীয় । তিনি তাঁর এই পত্রিকায় নতুন
নতুন কবি সাহিত্যিকদের তাঁদের সাহিত্য প্রতিভা
বিকশিত করার সুযোগ করে দেন। যা সত্যিই
প্রশংসনীয়।

কবি ও সাহিত্যিক সুপর্ণা রায়, দেশ ও বিদেশ থেকে নানা পুরষ্কারে হয়েছেন সন্মানিত। আনন্দ মুখর সাহিত্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল কোলকাতার প্রাণকেন্দ্র শিয়ালদহের কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল হলে। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল
ঠিক সকাল দশটায়, শেষ হয় দুপুর ২টা নাগাদ।

এখানে বসেছিল যেন চাঁদের হাট। বিভিন্ন জ্ঞানী
গুণীজনের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান এক অপূর্ব রূপ নিয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন
মাননীয় লক্ষ্মীনারায়ণ চক্রবর্তী, যিনি একজন
প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক ও বাচিক শিল্পী, যিনি পেয়েছেন সি.সি. আই, নিউ দিল্লী পুরষ্কার।
প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় কমল ভট্টাচার্য
, যিনি হলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কোলকাতা
প্রেস ক্লাবের।

এই অনুষ্ঠান স্বাগত ভাষণ পরিবেশন করেন মাননীয় বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য। এখানে দুইজন
সন্মানীয় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বিখ্যাত বাউল শিল্পী, স্বপন দত্ত এবং কবি, অধ্যাপক ও আলোচক মাননীয় ডঃ সঞ্চয় প্রামাণিক। পুরো
অনুষ্ঠানটি খুব সুন্দরভাবে সঞ্চালনা করেন,
বিশিষ্ট কবি ও সমাজসেবী মাননীয় অশোক
কুমার চক্রবর্তী।

এই অনুষ্ঠান মুখরিত হয়ে ওঠে বিভিন্ন কবির স্বরচিত সৃষ্টি কবিতা এবং বাচিক শিল্পীদের সুমধুর আবৃত্তি ও সঙ্গীতশিল্পীদের অনবদ্য
সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে। আমরা আশা
করবো, ভবিষ্যতে এরকম আরো অনেক সুন্দর
সাহিত্য উৎসব আমাদের উপহার দেবে আনন্দ
মুখর সাহিত্য পত্রিকা।










0 comments: