উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা
উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 05/10/2020
Upokontha Sahitya Patrika Web Megazine- 05/10/2020
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা"
(ওয়েব ম্যাগাজিন)
প্রকাশ কাল:-05/10/2020, সোমবার
সময় :- সন্ধ্যা 5 টা
সভাপতি:- অরুণ কুমার ঘড়াই
সহঃ সভাপতি:- সেক আব্দুল মজিদ
সম্পাদক এবং
প্রকাশক:- সেক আসাদ আহমেদ
যুগ্ম সহঃ সম্পাদক :-
১) ইমরান খাঁন
২) শেখ মণিরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় দপ্তর ::-
গ্রাম:- গাংপুরা ডাকঘর:- সাগরেশ্বর
থানা:- রামনগর জেলা:- পূর্ব মেদিনীপুর
সূচক-৭২১৪৪৬ পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মুঠোফোন:- 9593043577
===ভ্রমণ কাহিনী ===
ঝিরনার জঙ্গলে
সুমন ভট্টাচার্য
কুমায়ন হিমালয়ের কোলে কয়েকটা দিন কাটানোর পর ‘জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক’-এ আসব এমনটা আগে থেকেই স্থির হয়ে ছিল। হিমালয় আমাকে বরাবর টানে। এ এক অদৃশ্য, অনিবার্য টান। আমি দু-হাত দিয়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলেও সে আমার গা-এ এসে পড়ে। তখন আর উপায় থাকে না, তাকে আলিঙ্গন করা ছাড়া। মনে হয় এখানেই বুঝি আমার আসল ঘর। থেকে যাই এমনি কোন পাহাড়ি ঝরনার ধারে নির্জন কুটিরে।একটা পেট বই তো নয়, চলে যাবে ঠিক। বয়ে যাবে দিন।
ওই ছেলেটিকে আমার হিংসে হয়। ওইটুকুন তো বয়স। দশ কি বারো! মুন্সিয়ারির কাছে এক পাহাড়ি ঝরনা দেখতে গিয়ে অনেক চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে যখন উপরে পৌঁছালাম, দেখি এক দৃষ্টে ঐ ঝরনার দিকে চেয়ে বসে আছে আনমনা। এই যে আমরা গেছি এতগুলো মানুষ, হইহই –উল্লাস, কোনদিকে চোখ নেই। জিজ্ঞেস করি- কিরে তোর ঘর কোথায়? কোন এক অজানা শুন্যতায় আঙুল দেখিয়ে বলে- ওই তো ওইখানে। যাবিনা ?বাড়ি? উত্তর আসে- হ্যা, যাবো। যদি ইচ্ছে হয়।
আমার হিংসে হয় ঐ সদ্য কিশোর ছেলেটির উদাস বসে থাকাটাকে। আমাদের যাওয়ার তাড়া, খাওয়ার তাড়া, শোয়ার তাড়া, ওঠার তাড়া। ওর যেন কোন তাড়া নেই, নেই কোন ব্যাস্ততা। সব কাজ সেরে তবে যেন এসেছে এখানে, এই নির্জনে, পাহাড়ের কোলে ছোট্ট ঝরনার শব্দ শুনবে আর চেয়ে থাকবে তাঁর পুরাতন প্রেমিকার দিকে অপলক। হাতের চিপস এর প্যাকেটটা ওর হাতে গুঁজে দি। ও ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।
জিম করবেট ফরেস্টের সুখ্যাতি প্রথম শুনি আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে।তারপর আরো এর ওর কাছে। সেই থেকেই একটা যাবো যাবো মন ছিলই।সুযোগটা এসে গেল হঠাত করেই, সহযাত্রীরা সকলে যখন রাজি হয়ে গেলেন আমার প্রস্তাবে।
অনলাইন বুকিং করা ছিল জিম করবেট ফরেস্টের ঢেলা গেট দিয়ে ঢুকে ঝিরনা জোনের ফরেস্ট গেস্ট হাউসে। রামনগর থেকে আমাদের পারমিট আর যাবতীয় কাগজপত্র দেখাতেই আমাদের জুড়ে দেওয়া হল একটি হুড-খোলা জিপ গাড়ির সঙ্গে। ড্রাইভার বছর ২৫ এর হাসিখুসি দিলখোলা যুবক জাহির। আমরা ৬ জন টপাটপ গাড়িতে উঠে পরলাম। জীপ গাড়ির একটা বিশেষত্ব আছে- এই গাড়িতে বসলেই কোত্থেকে একটা অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার গন্ধ গায়ে এসে লাগে। মনে হয় কাঁধে একটা বন্দুক ঝুলছে, আর হাতে রয়েছে একটা দূরের নাম-না-জানা ক্ষুদে পাখিকে ল্যাপটপের স্ক্রীনে এনে দিতে পারা লম্বা লেন্স ওয়ালা ক্যামেরা।
ফরেস্টের মেন গেট দিয়ে গাড়ি যতই ভেতরে ধুকতে লাগল, আশে পাশের জঙ্গল ঘন হতে লাগল। যতদূর চোখ যায় শুধু ঘন জঙ্গল আর রাস্তার দুপাশে ঝোপঝাড়। এগাছ-ওগাছ কয়রে বেড়াচ্ছে নাম-না–জানা সব পাখি। যতটা সম্ভব আমরা ক্যামেরা বন্দী করছি, ভরসা আছে পদ্মনাভ। আমাদের স্কুলের লাইব্রেরিয়ান। ও পক্ষী বিশেষজ্ঞ। ওকে দেখালেই নাম গুলো পটাপট বলে দেবে-এমনকি এদের বৈজ্ঞানিক নাম সহ। ঝিরনা জঙ্গলের একটা বিশেষত্ব হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দূরে পাহাড়। আর সেই পাহাড়ের কোলে এই জঙ্গল। মাঝে মাঝে জীপ চলেছে রাস্তার উপর দিয়ে নির্বিঘ্নে বয়ে চলা পাহাড়ি নদীর উপর দিয়েই।
ফুরফুরে মেজাজে বেশ ৮/১০ কিলোমিটার যাওয়ার পর হঠাত ঘচাং কয়রে ব্রেক চাপল জাহির। চমকে উঠে কি যেন একটা বলতে যাচ্ছিলাম আমি। ইশারায় আমাকে চুপ করতে বলে সামনের দিকে তাকাতে বলল জাহির। সাত জোড়া চোখ তখন সামনের দিকে। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি সামনের রাস্তার উপর দিয়ে একটা বড়সড় বাঁদর –কে গলার টুঁটি টা ধরে হ্যাঁচরাতে হ্যাঁচরাতে টেনে নিয়ে চলেছে একটা চিতা। আমরা মাত্র ১০/১২ ফুটের দুরত্বে গাড়িতে সিঁটিয়ে রয়েছি। জঙ্গলে পা রেখেই এমন একটা ভয়ানক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন যে হব, তা ভাবতেই পারিনি। ঘটনার আকস্মিকতায় ক্যামেরা অবধি হাত গড়ায় নি কারোরই। চিতাটা জঙ্গলের ভিতর ঢুকে যেতেই জাহির গাড়ি স্টার্ট করল। মনে হল-আমাদের থমকে যাওয়া হার্ট যেন পুনরায় রক্তস্রোত ফিরে ফেল।
বুঝলাম সামনের ৩ দিনে আমাদের জন্য এমন আরো অনেক মনি-মানিক্য উপহার দিতে চলেছে ঝিরনার জঙ্গল। এখন শুধুই অপেক্ষা তার জন্য।
জিপ যখন আমাদের নিয়ে জিম কর্বেট ফরেস্টের ঝিরনা জোনে ফরেস্ট বাংলোটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তখন সন্ধ্যে নামছে। এ সময়টা যে কোন জঙ্গলেই সুন্দর। জঙ্গল যেন বলে দিচ্ছে –যাও অতিথি, যাও হে মানুষ, এবার তোমরা ঘরে ঢুকে পড়। এবার সময় আমাদের । পাখিরা দলে দলে ফিরছে গাছের ডালের আড়ালে তাদের বাসায়। মা পাখিকে দেখে তাদের সন্তানেরা আদর-মাখা অনুযোগে কিচির মিচির কলরব শুরু করেছে। ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসছে,যেন দেখা যায় জঙ্গলে এলে।ফরেস্ট বাংলোর দুটো অংশ, একটা দিকে VVIP রা এলে থাকে, আর একদিকে আমাদের মতন সাধারণ টুরিস্ট-রা। দুট বাড়ির মাঝে একটা ছোট বাড়ি-সেখানেই রান্নাঘর। বাংলোয় পৌঁছাতেই আমাদের আমন্ত্রণ জানাতে এল বছর ৫০ এর লিকলিকে চেহারার সেপাই-এই ফরেস্ট বাংলোর রক্ষাকর্তা রচপাল সিং।তার বাঁ কাঁধে একটা বন্দুক ডেড বডির মতন ঝুলছে আর ডান হাতে একটা টর্চ। বাংলোর চাবিটা খুলতে খুলতে রচপাল সিং বলে উঠল, খ্যাঁকখ্যাঁকে আর ফিনফিনে গলায়-‘আভি শাম হো জায়গা, অন্ধেরা ছা জায়গা। হাম দো ঘন্টে কে লিয়ে জেনারেটর চালায়গা, ফির বন্ধ।আপলোগ মোমবাত্তি লায়ে হ্যায় না?’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই রচপাল সিং বলে উঠল আবার-‘রাত মে ক্যায়া খাইয়েগা?খিচ্রি-অমলেট চলেগা’।আমাদের মধ্যেই কে যেন বলে উঠল-‘চলেগা মানে দৌড়ায়গা, তুম বানাও।’
ভটভট শব্দ করে সন্ধ্যা ৬ টায় জেনারেটর চালু হল। কাঠের ঘরে একটা সোঁদা গন্ধ থাকেই। মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। আলো জ্বলছে। তবু টর্চ মেরে এদিক ওদিক ভালো করে দেখতে লাগলো সব্যসাচী, আমার স্কুলের ইংরাজী শিক্ষক।সে এবং তার স্ত্রী এসেছে আমাদেরই সাথে। হঠাত, সব্যসাচীর চিৎকার শুনে আমরা বাথরুমের দিকে ছুটে গেলাম।গিয়ে দেখি একটি সাপ বাথরুমের জল-বেরনোর ছিদ্র দিয়ে মাথা গলিয়ে আমাদের দেখতে আসার চেস্টা করছে।আমাদের হই-হই শুনে রচপাল সিং ও ছুটে এসেছে-‘ক্যা হুয়া বাবু?’ তারপর একগাল হেসে বলল-‘ওহ,কুছ নেহি, সাপ হ্যায়’। কুছ নেহি সাপ মানেটা কি?
সব যেন কেমন গুমোট হয়ে গেল।পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি বাজারে মুড়ি-চানাচুরের অবতারণা করলাম, সঙ্গে আমার নানান আষাঢ়ে ভুতের গল্প। অরুণাভ খুব মন দিয়ে শুনছে, যদিও আমি ভালই জানি এগুলোর কোনটাই ও একটুও বিশ্বাস করছে না। অরুণাভ, আমাদের স্কুলের ভুগোল দিদিমণি প্রিয়াঙ্কার হাসবেন্ড।ওরাও আমাদের এ যাত্রার সঙ্গী। প্রিয়াঙ্কা ডাকাবুকো সাহসী মেয়ে। বলল-‘সন্ধ্যে বেলা, আমরা মেয়েরা বসে থেকে কি করব?চল স্বাগতা(সব্যসাচীর স্ত্রী), আমরা বরং রান্না ঘরে গিয়ে দেখি রচপাল সিং কি রান্না করছে।’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই রান্না ঘর থেকে চেঁচামিচির আওয়াজ আসতে লাগল। আমি আর বিপ্লব গিয়ে দেখলাম, রচপাল সিং-এর সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে প্রিয়াঙ্কার। বিষয়- একটি সাদা ছোট বিড়াল।
ফরেস্ট বাংলোয় ঢুকেই চোখে পড়েছিল এই বিড়ালটাকে। আমাদের পায়ের কাছে খানিকক্ষণ ঘুর-ঘুর করছিল। রান্না ঘরে বিড়ালটাকে দেখে রচপাল সিং বেজায় রেগে গেছে- আর বলেছে-‘ হাম ইসকো গো-গো-গোলি মার দেগা।’ এই শুনেই পশুপ্রেমী প্রিয়াঙ্কা গেছে ক্ষেপে। সেও রনং-দেহী মূর্তি নিয়ে তেড়ে গেছে রচপাল সিং –এর দিকে-‘ ক্যায়া বোলা, তুম একটা ছোট্ট বিড়ালকে গুলি মারেগা? হাম তুমকো গুলি করেগা...।’
নাহ, শেষমেশ অবিশ্যি কেউ কাউকে গুলি মারেনি। আর রাগে গজ-গজ করতে করতে বানালেও রচপাল সিং সেই রাতে খিচুরিটা বেড়ে বানিয়েছিল।
আসলে এই রচপাল সিং নিজেকে এই জঙ্গলের, এই বন-বাংলোর রাজা ভাবে। ভুলে যায়, সে একজন সাধারণ কর্মচারী মাত্র। সরকার –বাহাদুর চাইলে তাকে যে কোনদিন ছাঁটাই করে দেবে। তাকে আবার ফিরে যেতে হবে তার গ্রামে, সেখানে ক্ষেতি-বাড়ি করে তার দিন চলবে। জঙ্গল তাকে মনে রাখবে না। নিজের বাড়ির মতোন করে সে সামলে রাখে এই ঝিরনার ফরেস্ট বাংলোটাকে। টুরিস্ট-দের রান্না করে খাওয়ায়। কিছু বকসিস পেলে মাসের শেষে একবার কয়েকঘন্টার জন্য সাইকেলে করে জঙ্গল পেরিয়ে গ্রামের বাড়িতে যায়, সেখানে তার বউ-ছেলে-মেয়ে আছে। তাদের জন্যে রামনগর হাট থেকে কিনে নিয়ে যায় সস্তার কিছু জামাকাপড়। রচপাল জানে এই জঙ্গলে পোষ্যের কোন স্থান নেই। এ জঙ্গল বন্যের। সন্ধ্যে নামতেই ময়ূরের দুর্দান্ত কেকা, শিকারী বন্য জন্তুর উল্লাস আর মৃত্যু-মুখে আর্তনাদ করতে থাকা অসহায় হরিন কিম্বা বুনো শুয়োরের বিকট চিৎকার ভেসে আসে চারপাশ থেকে; অন্ধকারের মতন সেসব শব্দ ঘিরে ধরে এই বন-বাংলোটাকে। বছরে পর বছরের এই শব্দের সঙ্গে থাকতে থাকতে রচপাল যেন জঙ্গল হয়ে গেছে। তাই কোনভাবে জঙ্গলে চলে আসা এই ছোট্ট বিড়ালটাকে দেখলেই তার মনে হয়-একে গুলি করব।
রাতে খাওয়ার সময় আড় চোখে প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকিয়ে রচপাল বলে-‘ইস বিল্লিকে লিয়ে আজ ইহা চিতা আয়েগা, ফির?’ আমি পরিস্থিতি সামলে নিয়ে বলি-‘আচ্ছা রচপাল, হাম লোগ যাব ইহা সে জায়গা, ইস বিল্লি কো লে কে জায়গা, ঠিক হ্যায়?’ রচপাল বন্দুক ঠুকে সম্মতি জানায়।
সারাদিনের ক্লান্তির পর ভালো খাওয়া-দাওয়া হলে ঘুম ও এসে যায় চট-পট। কিন্তু ঘুম কেড়ে নিল ঝিরনার জঙ্গল। বিকট এক শব্দে উঠে বসলাম ঠিক রাত দুটোর সময়।
রাত তখন দুটো। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল একটা অজানা অস্বস্তিতে। আমি আর সব্যসাচী যে ঘরে শুয়েছি, সেটার পায়ের কাছে একটি জানালা খোলা রেখেছি।অপর একটি ঘরে স্বাগতা ও প্রিয়াঙ্কা শুয়েছে, আরেকটিতে অরুনাভ ও বিপ্লব। বিপ্লবদের ঘর থেকে নাক ডাকার রিদ্মিক আওয়াজ ভেসে আসছে, মাঝে মাঝে সে শব্দ বাইরে বিরামহীন ডাকতে থাকা ময়ূরের জোরালো ডাককেও ফিকে করে দিচ্ছে।
রাত ৯ টার পর রচপাল সিং জেনারেটর নিভিয়ে দিয়েছিল। আমাদের লিকলিকে মোমবাতি গুলোও বেশ কিছুক্ষণ জ্বলে নিভে গেছে। এখন এই বন-বাংলোর ঘর জুড়ে এক জমাট অন্ধকার। আমার পায়ের কাছের খোলা জানালা দিয়ে ঠিকরে ঢুকে আসা খানিক জ্যোৎস্নার আভা সেই অন্ধকারকে যেন আরো গভীর,গম্ভীর করে তুলেছে।
ভালো করে কান পাতলে ঘরের বাইরে খুব কাছেই একটা গর্গর্ শব্দ কানে আসছে। কি সেই শব্দ? অনেক চেস্টা করেও বুঝতে পারছি না। ভাবলাম, উঠে একবার বাইরে যাই দরজা খুলে। কিন্তু, পাশে শুয়ে থাকা সব্যসাচী যে জেগে আছে, সেতা বুঝিনি-আমাকে উস্খুস্ করতে দেখে মৃদু স্বরে বলে উঠল-‘সুমনদা, শুয়ে পড়, আমারও ঘুম আসছে না এই সব আওয়াজে।’ ওর কথা শুনে শুতেই যাচ্ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ দেখলাম জানালাটার কাছে একটা কি যেন নড়াচড়া করছে।কি ওটা? এই আলোআঁধারিতে ভাল করে বোঝার উপায় নেই!
বালিশের পাশেই টর্চটা ছিল। ওটা হাতে নিয়ে টর্চের আলো ফেলতেই ‘মিউ’ ডেকে উঠল জন্তুটি। দেখলাম-আর কেউ নয়, সেই ছোট্ট বিড়ালটি জানালার গ্রিল দিয়ে নেট সরিয়ে ভেতরে ঢোকার চেস্টা করছে। উঠে গেলাম জানালার দিকে। তারপর জানালার বাইরের দিকে চোখ যেতেই রক্ত হিম হয়ে গেল আমার। আমাদের জানলার ঠিক বাইরেই বিড়ালটার দিকে চেয়ে ওত পেতে বসে আছে একটা আস্ত চিতা বাঘ। রাতের অন্ধকারে ওর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। এতক্ষণের গরগর্ আওয়াজের রহস্য এবার উদ্ঘাটন হল। আমি নেটটা সরিয়ে আস্তে করে বিড়ালটাকে ঘরে ঢুকিয়ে নিলাম। তারপর জানালার দিকে ক্ষানিকক্ষণ চেয়ে রইলাম এক দৃষ্টে।মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম এই বন্য জন্তুর অপূর্ব দেহ-সোউষ্ঠব।মনে পড়ে গেল সেই বিখ্যাত কবিতার কথা-
‘Tiger Tiger burning bright
In the forest of the night...’
বন্ধুদের সব্বাইকে ডেকে দেখানোর কথাটা মনে আসতে বেশ খানিকটা দেরী হয়ে গেল।
ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে চিতাটা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে এক লাফে বাংলোর ‘ইলেকট্রিক ফেন্সিং’ পেরিয়ে চলে গেল জঙ্গলের গভীরে।
একবার ভাবলাম, রচপাল সিং-কে ডাকি। কিন্তু, কেমন একটা মায়া হল, সারাদিনের এত পরিশ্রমের পর লোকটা হয়ত একটু ঘুমাচ্ছে;ঘুমের মাঝে স্বপ্নে সে হয়ত তার মেয়ের কোলে মাথা রেখে জঙ্গলের পশু-পাখির গল্প শোনাচ্ছে তাকে, আর সেই শুনে তার ছোট্ট মেয়ে খিলখিল করে হাসছে।ডাকলাম না রচপাল সিং-কে।
ভোরের আলো তখনো ভালো করে ফোটেনি ।বাংলোর সামনের দিকে ছাউনি দেওয়া বসার জায়গাটিতে চা নিয়ে বসলাম আমি, সব্যসাচী, বিপ্লব। আমাদের পায়ের কাছে এলিয়ে শুয়ে আছে সাদা বিড়ালটা।লাঠি ঠক-ঠক করতে করতে রচপাল সিং এলো, বলল-‘বাবু, কাল চিতা আয়া থা ইহা, হাম বলা থা না আপকো, ইস বিল্লি কে লিয়ে হাম সব মরেগা!’
সব্যসাচী এক জোর ধমক লাগালো রচপাল-কে। বলল-‘চোপ রও। পহেলে তুম বাতাও, রাত কো ‘ইলেকট্রিক ফেন্সিং’ মে কারেন্ট কিউ নেহি থা? কউন বন্ধ কিয়া?’
রচপাল সিং কোন কথার উত্তর দিলনা। কটমট করে একবার সব্যসাচীর দিকে, একবার বিড়ালটার দিকে চাইল। তারপর প্রাসঙ্গিকভাবে বলে উঠল-‘বাবু, আজ আপ লোগকা জঙ্গল সাফারি হ্যায়।শের দেখনে কো মিলেগা জরুর। আভি জাহির আয়েগা। আপলোগ রেডি হো যাও।’
এক্ষনি বেরোতে হবে জঙ্গল সাফারিতে।
ভোর ৪.৩০ এ জাহির এসে হাজির আমাদের রেস্ট হাউসের সামনে তার জীপ নিয়ে। জাহিরের জীপের শব্দ পেয়ে একটু নড়েচড়ে বসলেও একেবারে উড়ে গেলনা paradise flycatcher টা। সেই আলো ফোটার পর থেকে আমি লক্ষ্য করছি ওকে, সামনের বুড়ো-দাদুর দাড়ির মতন ঝুরি-ওয়ালা অশ্বত্থ গাছটায় বসে আছে; আমার মনে হচ্ছে ও যেন আমাদের সাথে বন্ধুতা করতেই এসেছে এখানে। এই নির্জনে ও-ও বুঝি রচপাল সিং-এর মতনই সঙ্গীবিহীন।
Paradise Flycatcher এর বাংলা নামটাও ভারি সুন্দর ‘শাহ-বুলবুল’।দেখতে অনেকটা বুলবুল পাখির মতন। পদ্মনাভ, আমাদের বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক, প্রকৃতির নানা বিষয়ে ওর উৎসাহ এবং জ্ঞান অপরিসীম। ওর কাছে শুনেছিলাম পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ শাহ-বুলবুল নাকি রঙ পরিবর্তন করে সাদা রুপ ধারণ করে। মাথা থেকে গলার অংশটা তখন আরো নীলচে দেখায়।ও বলেছিল- সুমনদা, যদি উড়ন্ত অবস্থায় প্রজাপতি, মৌমাছি কিংবা ফড়িং ধরতে দেখতে পাও, তাহলে ছবি তুলতে ভুলো না। দেখবে তখন এই paradise fly-catcher কে সত্যিই স্বর্গের পাখির মতন লাগবে।
পদ্মনাভর কথা মিথ্যে নয়। আজ ভোর থেকে দেখছি এগাছ-ওগাছ উড়ে উড়ে গিয়ে পোকামাকড় ধরে breakfast সারছে পাখিটা। আর ওর লম্বা লেজ শুন্যে ঝুলছে স্বর্গের meta-mundane হাতছানি নিয়ে।
জাহির হর্ন বাজালো। এই জঙ্গলে কে কাকে দেখবে জানিনা, তবে আমাদের সঙ্গী দিদিমণিরা (প্রিয়াঙ্কা ও স্বাগতা) সাজগোজে খামতি করেনি। সেই ভোররাত থাকতে উঠে শুরু করেছে সাজুগুজু। দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আমি বুঝেছি, আসলে মেয়েরা নিজেদের জন্যেই সাজে, অন্যকে দেখানোর চেয়েও নিজেকে দেখা, নিজের কাছে নিজেকে সুন্দর করে তোলা তাদের বড় ঝোক।তারা যেন এই অরণ্যের মতনই। এই জঙ্গলে ওই যে সবুজ গাছের পাতারা হরেকরকম কারুকাজ করে নিজেদের মাতিয়ে রাখে, পথের পাশে গুচ্ছে গুচ্ছে উঠলে ওঠে ফুল, সে কি আমার-আপনার মতন ট্যুরিস্ট এসে ছবি তুলবে বলে? না, তা তো একেবারেই নয়। তারা আপনি মাতে, আপনি আনন্দে ভাসে। জগতের আনন্দ যজ্ঞে এভাবেই তারা সামিল করে নেয় নিজেদের।
আমাদের ইঁট, কাঠ, পাথরের শহুরে জীবন , আমাদের digital হয়ে ওঠার উদগ্র উদ্যোগ – যখন ভুলিয়ে দেয়, জগত জুড়ে নিত্য আহুতিতে প্রজ্জ্বলিত সেই যজ্ঞের অগ্নিশিখার উত্তাপের কথা, তখন এই অরণ্যে এসে নিজেকে যেন reboot করে নেওয়া।
জাহিরের জীপ ছুটেছে জঙ্গলের এপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। চোখে পড়ছে নানা ধরণের পশুপাখি। আমরা কেউ বন্যপ্রাণী বিশারদ নই। জাহির আমাদের চিনিয়ে দিচ্ছে, নাম বলে দিচ্ছে। আমি গাছ ভালোবাসি বুঝে কোথাও কোন বিশেষ প্রজাতির গাছ দেখলে, সেটাও গাড়ি থামিয়ে দেখাতে ভুলছে না জাহির।
জাহির-কে প্রথম দিনেই বলেছিলাম- আমরা কানহা, বান্ধবগড়, বেতলা, পেঞ্চ এমন অনেক জঙ্গল ঘুরেছি, কিন্তু সামনে থেকে বাঘ দেখার সৌভাগ্য আজও হয়নি। জাহির কথাটা মনে রেখেছে। জঙ্গলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত গাড়ি নিয়ে ছুটছে সে। অনেক পশু-পাখি দেখছি বটে, কিন্তু বাঘের দেখা মিলছে না। জাহির হতাশ হয়ে পড়ছে। একে ওকে ফোন করছে(জঙ্গলের সাফারি করাচ্ছে এমন অন্য বন্ধু ড্রাইভেরদের)। এদিকে জীপে বসে প্রিয়াঙ্কা ‘হনুমান চালিসা’ পড়তে আরম্ভ করেছে। ওর বিশ্বাস হনুমানজি নিশ্চয়ই আমাদের মনের আশা পূর্ণ করবেন-বাঘের দেখা মিলবেই মিলবে।জানিনা, হনুমানজি রাম-চিন্তন ছেড়ে এক মুহুর্তের জন্য ব্যঘ্র-চিন্তনে মগ্ন হয়েছিলেন কিনা, তবে ২/৩ মিনিট পড়েই জাহিরের ফোনে ফোন এলো। ফোন টা রেখেই জাহির পাগলের মতন গতিতে জীপ চালাতে লাগল। নদী-নালা,পাথুরে রাস্তা কিছু মানল না, জীপ ছুটছে দুরন্ত গতিতে। সব্যসাচী চিৎকার করতে লাগল- ‘আরে, ক্যায়া হুয়া? জীপ তো উলটে জায়েগা, হাম লোগ মর জায়েগা।’
না, জীপ উল্টায় নি। চিতার মতন গতিতে আমাদের নিয়ে জাহির পৌছালো বড় জলাশয়ের ধারে। দুপাশ ঘন জঙ্গলে ঘেরা। জাহিরের ইশারায় আমাদের চোখ গেল সামনের দিকে, অর্থাৎ ওই জলাশয়ের দিকটায়। দেখলাম, হ্যা, সত্যি সত্যি দেখলাম এক বিরাটাকার বাঘ হেলতে দুলতে এগিয়ে আসছে জলাশয়ের দিকে। আমরা যেখানে জীপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে ওই স্থানের দূরত্ব অনেকটাই। কিন্তু তবু, কি এক সম্ভ্রমে যেন আমাদের চোখ ভারি হয়ে এলো, কি এক অব্যক্ত উত্তেজনায় বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল। চোখের সামনে এত বড় একটা বাঘ- এ জেন সত্যি স্বপ্নপূরণ। শিশুর মতন উল্লাসে নেচে উঠল সব্যসাচী। সঙ্গে কম বেশি আমরা সকলেই। জাহির কথা রাখতে পেরেছে, ওর চোখে-মুখে সেই পরিতৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট। ধীরে ধীরে জলাশয়ের ধারে এসে জল পান করে, সেই জলাশয়ের পাশেই গা এলিয়ে বসে রইল বাঘ মামা। যত ইচ্ছে ছবি তোলো। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে আমাদের পাশে আরো কিছু জীপ গাড়ি এসে জড় হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কিছু পেশাদার ফটোগ্রাফার রয়েছে। তাদের ক্যামেরার কচাকচ শব্দ মুহুর্তের মধ্যেই বাঘমামা কে হিরো বানিয়ে দিয়েছে। জানিনা সেকথা সে বুঝেছে কিনা, তবে হাবে ভাবে মনে হচ্ছে, এত গুলো চোখের তার প্রতি উন্মুখ দৃষ্টি, এ ব্যাপারটা সে বেশ উপভোগ করছে। জাহির খবর দিল, পাশের জঙ্গলে গতকাল একটা হরিণ শীকার করেছেন ইনি। তাই মাঝে মাঝে খাওয়া সেরে জলপান করতে আসছেন।
সারাদিন প্রাণ ভরে জঙ্গল দেখে এবার আবার রেস্ট হাউসে ফেরার পালা। আজ সবার মনে একটা ফুরফুরে ভাব। বাঘ দেখার আনন্দে সবাই আজ দিলদরিয়া ভাব। রেস্ট হাউসে ফিরে দেখি রচপাল সিং আমাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলোর কাঁটাতারের গেটের কাছে। আমাদের দেরী হচ্ছে দেখে দৃশ্যতই সে বেশ চিন্তিত- আমাদের দেখেই বলে উঠল-‘ ক্যায়া বাবু, শের মিলা?’ স্বাগতা মজা করে বলল- ‘ হা, মিলা। শের বলছিল, ও তমাকে খুব ভয় পায়। তুমি নাকি ওকেও একবার বলেছিলে-হাম তুমকো গোলি মার দেগা!’ – স্বাগতার রসিকতায় হো হো করে হেসে উঠল রচপাল সিং। সন্ধ্যা নামল গাছের গা বেয়ে।
আজকের রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালে আমাদের জঙ্গল ছেড়ে চলে যাওয়ার পালা।পরের দিন সকাল ৮ টা নাগাদ জাহির চলে এলো বাংলোর সামনে গাড়ি নিয়ে। প্রিয়াঙ্কা জীপে ওঠার সময় একটা ছোট্ট থলের মধ্যে সেই ছোট্ট সাদা বিড়ালটাকে পুরে নিল। ও কিছুতেই ওতাকে রচপাল সিং-এর ভরসায় ছেড়ে যেতে রাজি নয়। কে জানে, সত্যিই ও যদি গুলি করে মেরে ফেলে বিড়ালটাকে।তার চেয়ে বরং, রামনগর পৌঁছে শহরের কোন দোকানের সামনে ছেড়ে দেওয়া ভালো বিড়ালটাকে।
জীপ স্টার্ট দিল জাহির। অরুনাভ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল রচপাল সিং এর দিকে। দেখলাম গেস্ট হাউসের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এক হাতে ওর জং-ধরা মান্ধাতা আমলের বন্দুকটা ধরে আরেক হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছছে রচপাল সিং। আজও জানিনা সেদিন কেন চোখে জল এসেছিল রচপাল সিং-এর- বিড়ালটা-কে নিয়ে আমরা চলে এসেছিলাম, সে জন্যে নাকি, ওকে মানুষ বলে ভাবতে পারিনি আমরা, ভেবেছিলাম ও-ও ওই জঙ্গলের বন্যদের একজন, যার বিদুমাত্র দরদ নেই একটা নীরিহ প্রাণীর প্রতি, যে প্রকৃতির মতনই নিস্টহুর,যে ওই বুনো পশুগুলোর মতনই হিংস্র; নাকি রচপাল সিং-এই দু দিনেই ভালবেসে ফেলেছিল আমাদের, সন্ধ্যের মুড়ি-চানাচুরে ওকে ডেকে নেওয়া, ওর সাথে খুঁটিনাটি ঝগড়া-ঝাটি- এসব ওকে কি মনে করিয়ে দিয়েছিল ওর পরিবারের কথা, যে পরিবার এই জঙ্গল পেরিয়ে কোন এক দূর গ্রামে নিত্য চেয়ে থাকে ওর অপেক্ষায়!!!
••••••••••••••••••••••••••••
প্রবন্ধ
পরিবেশ সংরক্ষণের উপায়
আব্দুল রাহাজ
বর্তমান সময় পরিবেশ এক কঠিন তম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে সামনের দিনগুলো মানবজাতির কাছে আছে অশনিসংকেত পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছে । পরিবেশ তার স্বয়ং মহিমা শোভা কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে যদিও বা আছে তা বিষে ভরা। আর বর্তমান সময়ের মানুষ নিজেদের স্বার্থ আরাম ভোগ বিলাস ইত্যাদির পেছনে দৌড়ে পরিবেশকে ভুলেই গেছে যার ফলস্বরূপ পরিবেশ তথা আমাদের সুন্দর পৃথিবী কোথাও যেন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই বর্তমান সময়ে পরিবেশ সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী সেই রকম মানুষকে এগিয়ে আসা ও জরুরী।
বর্তমান সময়ে পরিবেশে সবুজের বড় অভাব যদিওবা আছে তা যেন বিষে ভরা এক অগ্নিপিণ্ড তাই সকল মানুষকে তথা পৃথিবীবাসীকে বৃক্ষরোপণ করতে এগিয়ে আসতে হবে। সেটা শহরে হোক বা গ্রামাঞ্চলে হোক সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে তবেই আমাদের পরিবেশ আবার জাগ্রত হবে। আবারো সুন্দর পৃথিবী আমাদের প্রকৃতি মা গড়ে উঠবে এক মনোরম পরিবেশ নিয়ে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বর্তমান সময়ে এই বৃক্ষরোপনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে ফলে কোথাও যেন আশার আলো দেখা যাচ্ছে পরিবেশের এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে
একটা দেশের অর্থনীতি পরিবেশের ভারসাম্য নির্ভর করে সেই দেশের জীব বৈচিত্র্যের উপর ফলে জীব বৈচিত্র্য রক্ষা বর্তমান সময়ের পরিস্থিতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ যে মানব জাতির কাছে অত্যন্ত মূল্যবান পদক্ষেপ হবে। আমাদের পরিবেশ বাঁচবে দেশের অর্থনীতি এক আলোর দিশা পাবে।
বর্তমান সময়ের পরিবেশের যে অবস্থা তাতে করে প্রাথমিক স্তর থেকে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে পরিবেশ কে বাঁচাতে হবে এই ধ্বংসের ভয়াল রূপ থেকে। সেজন্য গ্রাম থেকে শহর পাড়ায় পাড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বর্তমান সময়ে গঠন করা অত্যন্ত পরিবেশকে অতল গভীরে হারিয়ে ফেলব আমাদের মানব জাতির অস্তিত্ব আর পৃথিবীতে থাকবে না তাই যত সম্ভব খুব তাড়াতাড়ি আমাদের সেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। যদি কিছুটা আমরা রক্ষা করতে পারি তাহলে আমাদের পরিবেশ শান্তি পাবে।
সামাজিক গণমাধ্যম
বর্তমান সময় আধুনিক তত্ত্বের মায়াজালে আবৃত তাই পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সামাজিক গণমাধ্যম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এগিয়ে আসবে পৃথিবী ব্যাপী মানুষকে সজাগ করবে সচেতন করবে পরিবেশের এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে মানুষের কাছে একটাই বার্তা তারা পৌঁছে দেবে তোমরা পরিবেশকে সংরক্ষণ করো তা না হলে আমাদের সামনে মহাবিপদ মহাবিপদ। তাহলে সামাজিক গণমাধ্যম পরিবেশ সংরক্ষণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বর্তমান সময়ের এই পরিস্থিতিতে স্কুল বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নিজেদের গ্রাম প্রতিবেশী বাড়ি মানুষ পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে যদি কিছু জ্ঞান দান করে কিংবা কোন লফলেট
পোস্টার মিছিল এককথায় সচেতনতা প্রচার করলে অনেকটা তাদের ভিতর পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে ধারণা আসবে পরিবেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পরিচিত হবে। আশা করা যায় ছাত্র ও যুব সমাজ এগিয়ে আসলে পরিবেশ সংরক্ষণ অনেকটা এগিয়ে যাবে। ফলে পরিবেশ একদিন না একদিন নতুন দিশা দেখতে পাবে আর মানব জাতি পাবে এক নতুন পৃথিবী নতুন পরিবেশ।
অশনি সংকেত
সাফরিদ সেখ
আমরা আজ অজানা এক
অন্ধকার যুগের মধ্যে ঢুকছি।
সমাজে শিক্ষা,সংস্কৃতি অত্যাচারীর
আক্রমণে রক্তাক্ত।
মানীদের বিপর্যস্থ করতে আজ
তৈরী দেখ বর্বর মানুষরুপি দানব।
হিং স্র রূপ আজ উড়িছে গগনে
রক্ত হোলির জঘণ্য খেলায় মেতেছে কত।
মানুষ আজ রক্ত লোলুপ পিশাচ
তাদের কাছে মানবতা মূল্যহীন।
ধর্মের মোহে মেতেছে মানব আজ
অন্যায় অবিচার ছেয়েছে সমাজ।
মহান দেশে
আসমত আলী
ধন্য আমার জন্মভূমি
ধন্য মহান দেশ
অতীত স্মৃতি সোনার স্বপন
গরিমার নাই শেষ।
কালের সুরে মানবপুরে
মানবতার ক্ষয়
ভেকধারী সব দিগ্বিদিকে
হিংসা বিবাদ ময়।
মানব বেশে ছুটছে দেশে
চিল শকুনের দল
নখের আঁচড় জীবন কাড়ে
অর্থে ধরে বল।
খুন ধর্ষণ রাহাজানি
বিভেদ বাতাস বয়
নয়কো দানব মানবকে আজ
কুঁড়িও পায় ভয়।
নিপীড়িত পায় না বিচার
কানা আইন চুপ
লুটেরা আর নরপিশাচ
সমাজ শাসক রূপ।
গন্ধ যত নোংরা নীতির
আসুক নেমে লয়
মানুষ বাঁচুক মানুষ হয়ে
মানবতায় জয়।।
পাপী শুধরে যা রে....
শুভ্রাংশু কুম্ভকার
বাড়ি গাড়ির অহংকারে পা পড়েনা তোর,
মানুষ কেনাবেচা করে রাত হয়ে যায় ভোর।
পাকস্থলী খুঁড়ে দেখিস কিসে যে পেট ভরে?
হাড়ে হাড়ে নয়রে,চিনি অক্ষরে অক্ষরে।
হিংসা জমা বুকের মাঝে, মাসিক হারে বাড়ে,
বীভৎস মুখ লুকিয়ে রাখিস মুখোশেরই আড়ে।
মিষ্টি মুখে মধুর কথায় লাগে বেমানান,
কাজে কথায় অমিল দেখি তারই যে প্রমাণ।
আত্ম ছাড়া বুঝিসনারে অন্য কারো দুঃখ,
শত্রু দুঃখে খুঁজে চলিস না পাওয়া সব সুখ।
নিজ হতাশা চাপিয়ে দিস অন্য কারো কাঁধে,
অপরকে দোষ দিতে তোর একটুও কি বাঁধে?
দিনেরাতে হাজার পাপে ভরিয়ে ফেললি ঘড়া,
ঘাড় চিনে ঠিক পৌঁছে যাবে ভগবানের খাঁড়া।
ফল পেতে তুই তৈরী থাকিস রে নরকের পোকা,
পরমদয়াল ঈশ্বরও ক্ষমা করবেনা রে বোকা।
সময় থাকতে শুধরে যা রে বলছি বারেবারে,
চলে গেলে সময়তো আর আসেনা রে ফিরে।
মানুষ রূপে সমান সমান ধনী গরীব সবে,
একই পরিচয়ে সবাই এসেছে এই ভবে।
দে সম্মান প্রত্যেকেরে,নিজেও তাই পাবি,
সবার ভালো করলে তবেই দাগ রেখে যাবি।
মরবে সবাই কেউবা আগে কেউবা কিছু পরে,
যদিন বাঁচিস কাজ করে যা সব মানুষের তরে।
কর্মমাঝেই মরণশীল মানুষ বেঁচে থাকে,
ধন মান নয় কর্মগুণকেই পৃথিবী মনে রাখে।
কবিতা :
জীবনের ক্যানভাসে!
বিশ্বজিৎ কর
রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে শিরা-ধমনীতে,
ওষ্ঠদ্বয়ের নির্যাস শুকিয়ে গেলে আমরা ভিজব কেমন করে,কামনার স্রোতে!
আমার না-থাকার মূহুর্ত তোমাকে স্বস্তি দেবেই না,
সমাজ তোমাকে ব্যঙ্গ করবে স্বার্থপরতার শ্লোগানে!
ঐ শোনো করিমচাচার নমাজপাঠের মিষ্টতা!
নিরাপদকাকার দাওয়ায় নামকীর্তন চলছে....
এই তীরে এলাম, হাত ধরো -
চলো,ভালবাসার বেলাভূমিতে-
চুম্বনে ভরিয়ে দিই তোমায়!
প্রিয় বান্ধবী
হামিদুল ইসলাম
দেয়াল ভেঙে পড়ে প্রতি মুহূর্তে
প্রতিবেশী দেয়াল
মেঘহীন আকাশ
ধুলোয় মেশে
হায় রে ! পোড়া কপাল ।
সাঙ্গোপাঙ্গো যা ছিলো
এখন অতীত
জমিন পুড়ে যাচ্ছে নিদাঘের তপ্ত আগুন
আসুন ইতিহাস চাষ করি
কতো জমি পড়ে আছে পতিত ।
বর্ষা নির্মেঘ আকাশ
উত্তপ্ত খরায় ভাঙে মন
জীবন জীবীকার প্রশ্ন এখন
বারবার জিগ্যেস করি
মৃত্যু এখন ।
ছন্দের সাথে তাল রাখি
ব্যথাতুরা পৃথিবী
ঝড়ের অশনি সংকেত
তবু টিকে থাকে প্রেম
যদি সাথে থাকে প্রিয় বান্ধবী ।
বিভাগ-হাইকু কবিতা
শংকর হালদার
০১।
ধানের শীষে
প্রাণের হাসি মেলে
স্বার্থক শ্রম ।
০২।
তুমি... মানুষ
বিবেকে পশু হানা
পোশাকি প্রাণ ।
০৩।
পোশাকে লজ্জা
বিকিয়ে গেছে দেহ
অর্থ সম্ভারে ।
০৪।
ধর্ষণে শান্তি
অঞ্জলি তাজা রক্তে ।
আজব দেশ ।
০৫।
শরৎ এলো
মুক্তো আবির রঙে
উল্লাসে ধরা ।
শরতের চিঠি
জুয়েল রুহানী
শরৎ এসেছে বলে-
সবুজের সমারোহ,
সাদা মেঘের আড়ালে
কাটে না রূপের মোহ!
শরৎ এসেছে বলে-
পাখিদের কোলাহলে,
নদীতে শাপলা-শালুক
আনন্দে মৃদু দোলে।
শরৎ এসেছে বলে-
শিউলী তলে শিউলী ফুল,
কী অপরূপ দৃশ্যপট-
নেই সীমানা নেইকো কূল।
শরৎ এসেছে বলে-
নীলাকাশে সাদা মেঘ,
মেঘের আড়ালে ছবি
মায়াময়ী চেয়ে দেখ।
শরতের চিঠি এলে-
দুরু দুরু করে মন,
মায়াবী রূপের মোহে-
ভরে উঠে দু'নয়ন!
বিশেষ অনুুুরোধমুলক লেখা আমার ও ভালো লেগেছে তাই প্রকাশ করলাম
"শ্রদ্ধেয় সম্পাদক , এই কবিতাটি লিখেছেন তারা ভট্টাচার্য্য। কবি দৃষ্টিহীন। কবিতাটি উপকন্ঠে প্রকাশিত হলে বাধিত হব।"
কেমন আছ
তারা ভট্টাচার্য
কেমন আছ একলা দুপুর
কেমন আছ শূন্য বাড়ি
কেমন আছ শ্যাওলা পুকুর
কেমন আছ ঘাটের সিঁড়ি
কেমন আছ হোমের ছেলে
কেমন আছ রঙীন ঘুড়ি
কেমন আছ কা লো মেয়ে
খড়্গ ধর তাড়াতাড়ি.....
বিশেষ ধারাবাহিক প্রবন্ধ:
কবিতা র রূপকল্প: পর্ব ১
কাজী নজরুল ইসলাম ----- ফিরে দেখা
প্রথম অংশ
সৌম্য ঘোষ
কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব যেন তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা "ধূমকেতু"র নামের মতোই আকস্মিক। সচ্ছল হিন্দু মধ্যবিত্তই যেখানে বাংলা কাব্যের স্রষ্টা , সেখানে নজরুল উঠে এলেন দরিদ্র মুসলিম পরিবার থেকে । পাননি নিয়মিত শিক্ষা । দু'বছরের সৈনিক জীবনের যে অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করেছিলেন, তেমন অভিজ্ঞতা বাঙালি কবিদের জীবনে জোটে না । উদ্দাম ভাবাবেগ অদম্য প্রাণশক্তি নিয়ে বাংলার কাব্য প্রাঙ্গণে তাঁর আবির্ভাব । তিনি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন বলা হয় বটে, কিন্তু তাঁর উদ্দাম স্বতঃস্ফূর্ততা কোন প্রভাবকে মেনে নেয়নি । তিনি আপনাকে ছাড়া কাউকে কুর্নিশ করেননি। তাঁর কাব্যে দৃঢ়তা আছে, বলিষ্ঠতা আছে । কিন্তু তাঁর সেই কবিতার অদম্য আবেগকে তিনি সুবিন্যস্ত করতে পারেননি ।
কোন সাম্প্রদায়িক ভাবনা এই কবিকে স্পর্শ করতে পারেনি । তিনি কবিতায় শপথ করেছেন,'যেদিন উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশকে মুখরিত করবে না, সেই দিন তিনি শান্ত হবেন।' সমাজ-রাজনীতি সচেতন ছিলেন বলেই অনেক সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন । কলাকৈবল্যবাদে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না । বলেছেন ,
"বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবী'"।
আর সেই কারণেই তিনি এত লোকপ্রিয় হয়েছিলেন।
তাঁর এক হাতে যেমন কবির 'রণতূর্য ,তেমনি অন্য হাতে ছিল বাঁশের বাঁশরী ।' প্রেমের কবিতায় তিনি
" বিহ্বল যৌবনের রূপাঙকনে ব্যগ্ৰ । "
প্রেমের অতৃপ্ত পিপাসা তাঁর কবিতায় বারেবারে পাই ।
"কস্তুরী হরিণসম
আমারই নাভির গন্ধ খুঁজে ফেরে; গন্ধ-অন্ধ মন মৃগসম
আপনারই ভালোবাসা
আপনি পিইয়া চাহে মিটাইতে আপনার আশা!"
তাঁর গজল গান গুলিকে চমৎকার প্রেমের কবিতা বলে আস্বাদন করা চলে । কবিতায় বিশুদ্ধতার সমর্থক বুদ্ধদেব বসুর মতে, নজরুলের নির্বাচিত গানের মালা মহাকাল কন্ঠে ধারণ করে ধন্য হবে ।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ এবং আধুনিক বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত। রবীন্দ্রনাথের অনুকরণমুক্ত কবিতা রচনায় তাঁর অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী কবিতার জন্যই ‘ত্রিশোত্তর আধুনিক কবিতা’র সৃষ্টি সহজতর হয়েছিল বলে মনে করা হয়। নজরুল সাহিত্যকর্ম এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবিভক্ত বাংলায় পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, মৌলবাদ এবং দেশি-বিদেশি শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। এ কারণে ইংরেজ সরকার তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ ও পত্রিকা নিষিদ্ধ করে এবং তাঁকে কারাদন্ডে দন্ডিত করে। নজরুলও আদালতে লিখিত রাজবন্দীর জবানবন্দী দিয়ে এবং প্রায় চল্লিশ দিন একটানা অনশন করে ইংরেজ সরকারের জেল-জুলুমের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন এবং এর সমর্থনে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে গ্রন্থ উৎসর্গ করে শ্রদ্ধা জানান।
•••••••••••••••••
এক মুঠো সমুদ্র
গোপাল বিশ্বাস
(দুই )
আমি তোমাকে সবুজ মাঠের
শিশির ভেজা ঘাস দিতে চেয়েছিলুম
নিলে না,
ফিরিয়ে দিলে বুকের ভেতর
চিতার অনল
বদ্ধ করে দিলে সম্মুখ দরজা
গলে গলে পড়ে লাল পলাশ
মাটি ফেটে বেরোয়
জমানো ক্রোধ, কবরের লাশ l
এক মুঠো ভালোবাসা চেয়েছিলুম,
দিলে না
ফিরিয়ে নিলে মুখ
ছড়িয়ে দিলে ভাঙা কাচ
পথে পথে
নাচ ঘরে
ব্যর্থতার বিষন্ন সন্ধ্যা l
আমি তোমাকে জল ভরা পুকুর দিতে চেয়েছিলুম
পুকুরে মাছও ছিল
ডুব স্তান ছিল
নিলে না ,
ফিরিয়ে দিলে নিদ্রা হীন রাত্রি l
আমার ভিটে মাটি
অগোছালো ঘরটি দিতে চেয়েছিলুম
নিলে না ,
ফিরিয়ে দিলে ঝড়ো বাতাস
ভাঙা ঘরে ধূলো মাটি
কোন পথে যে হাটি l
(ক্রমশঃ )
অতীতের আয়না
বিপ্লব গোস্বামী
সাইকেলে করে সাত কিলো মিটার দূরে বাজারে ঘরে ঘরে দুধ পৌছে দিয়ে আমি স্কুলে যেতাম।স্কুল থেকে এসে মাঠে গরু চরাতাম। বাবা ভাইকে কাজে সাহায্য করতাম। স্কুলের সহপাঠীরা আমার সঙ্গে তেমন একটা মেলা মেশা করত না।কারণ তাদেরকে সময় দিতে পারতাম না।তা ছাড়া আমার মধ্যে বিলাসিতার চিহ্ন মাত্র ছিল না।তাই ওরা আমাকে এড়িয়ে চলত।
এভাবেই স্কুল জীবন শেষ করে কলেজে গেলাম।তখন কলেজের ছাত্র বয়সও বেড়েছে। তাই দয়িত্বটুকুও বেড়েছে।ফলে বাড়ির কাজে আগে ছেয়ে বেশি সাহায্য করতে হত।কলেজে সপ্তাহে দুই বা বড়জোড় তিন দিন যেতাম।এ জন্য অনেক কথা শুনতে হত অধ্যাপকগণের।শুধু তাই নয়,নন কলেজিটির জন্য প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় বসে দেওয়া হয়নি আমাকে।পরে অধ্যক্ষ মহাশয়ের কাছে সব খোলে বলি।তিনি খুব দয়ালু মানুষ।আমার কথায় খুব কষ্ট পেলেন এবং আমার পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করে দিলেন।উনার দয়ায় কলেজ থেকে poor fund পেলাম।
কলেজে পড়ার সময় অসম সরকারের আযোজিত শিক্ষক যোগ্যতা পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হয়ে যাই।তারপর ২০১৭ সালে রাজ্য সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক পদে নিযোক্ত দেয়।
মায়ের মুখে গল্প শুনেছি আমি যখন শিশু ছিলাম খেলনা কিনার টাকা ছিলো না।মা আমাকে পুরনো ছিড়া বই দিতেন খেলার জন্য।আর আমি বই জন্য বায়নাও ধরতাম।
সাহিত্যের প্রতি অনুরাগটা সেই ছাত্র জীবন থেকেই।ছোট বেলে পাঠ্য বইয়ের কবিতা পড়তাম।কবিতা খুব ভালো লাগত।সেই ভালো লাগতা থেকেই কি ভাবে যে লেখাটা শুরু হয়ে গেলো তা বুঝতেও পারিনি।মনে আছে ষষ্ট শ্রেণীতে পড়ার সময় এক বন্ধু বলেছিল তার দাদা নাকি কবিতা লিখতে পারেন।কথাটা আমার মাথার মধ্যে ঢুকে গেলো।আমি বাড়িতে এসো চেষ্টা করতে লাগলাম।
আমার জন্ম দরিদ্র ব্রাহ্মন পরিবারে।দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্ৰাম করে বেড়ে উঠা।আমি নিজেকে ধন্য মনে করি গরীবের ঘরে জন্ম হওয়ার জন্য।গরীবের ঘরে জন্ম হয়েছে বলিই বুঝতে পারেছি দরিদ্রতার জ্বালা কি।বুঝতে পেরেছি দারিদ্রতার জন্য মানুষকে কতটা অবহেলিত হতে হয়।হতে হয় কতটা অত্যাচারিত,কতটা অবহেলিত ও কতটা উপহাসের পাত্র।তাই আমার কলমে সব সময় দীন -অবহেলিত লোকদের অন্তর বেদনার কথা লেখতে চেষ্টা করি। "ঈশান বাংলা" আমার প্রথম কাব্য গ্ৰন্থে গ্ৰাম বাংলার অজ পাড়াগাঁয়ের আমার মতো অবহেলিত দীনজনের কথা তুলে ধরেছি।
বৃথা
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
কী হবে আর চিন্তা করে
সবাই ব্যস্ত কাজে
দু মিনিটের কথোপকথন
সবই হোলো বাজে।।
মা এর মধ্যেও আছে শ্মশান
দুঃখ কোরোনা
অপর কেউ নয় গো আপন
বৃথা সান্ত্বনা। ।
ঠাকুর ঘরে গিয়ে দ্যাখো
কে কার আপনা
ঠাকুর মশাই বসে আছেন
দিতে সান্ত্বনা।
জনম জনম এই নিয়মেই
বাঁধা খেলা ঘর
অভিমানে অভিযোগের সুর
আছে যে বিস্তর।।
একটা_তুষারঝড়_পেরিয়ে
সুপ্তোত্থিতা সাথী
কলেজ ক্যান্টিনে অধৈর্য্য হয়ে এক কোণে বেঞ্চে বসে, জিয়ন। ধুমপান দন্ডে পর পর কয়েকটা টান মেরে পায়ের তলায় আচ্ছাসে তাকে এমনভাবে পিষে দিল যেন বিরক্তির টুঁটি চেপে তাকে খতম করে দেওয়া হলো।
-'ধ্যাত! কলেজেও কেউ যে এমন সিরিয়াসলি পড়তে শুনতে আসে,তা এই মেয়েটাকে দেখে এদ্দিনে বিশ্বাস হল আমার।
আরে স্টুডিয়াস হ আর মেরিটোরিয়াস,তা বলে কি প্রেম-ট্রেম করতে নেই! কোন বইতে এমনটা লেখা টেখা আছে শুনি! প্রশ্ন করলেই তো মেয়ে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে।সেই থেকে রুহির জন্য ওয়েট করতে করতে পস্টেরিয়ারের নার্ভাস সিস্টেমে জ্যাম লেগে যাবার উপক্রম,তবু দেবীর অবতরণের সময় হল না এখনো।'
জিয়ন,বিড়বিড় করে যেতে লাগলো আপন মনে।
শশব্যস্ত ভাবে ক্যান্টিনের বাকি সবাইকে পাশ কাটিয়ে, জিয়নের বেঞ্চের উপর হাতের ডায়েরি আর পেনটা ধপ করে রেখে,'উফ' শব্দে রুহি বুঝিয়ে দিল যে ক্লাস সেরে,বন্ধুদের উপেক্ষা করে, জিয়নের কাছে আসতে তাকে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে।রুহির হাতটা ধরে পাশে বসিয়ে জিয়ন অপলক দৃষ্টিতে দেখেই চলেছে তাকে।রোজই তো সে রুহিকে খুব কাছ থেকে দেখে।কিন্তু সেই দেখার কেন যে শেষ হয় না,তার কারণটা থার্ড ইয়ারে এসেও জিয়নের বুঝে ওঠা হয় না।কলেজের ফ্রেশারের দিন থেকে রুহিকে যেমনটা দেখেছিল জিয়ন,আজও ঠিক সেই প্রথম দিনের মতই রুহি আটকে আছে তার চোখের ফ্রেমে।প্রায় প্রতিদিনই তাদের মধ্যেকার সম্পর্কের একবার করে অকাল মৃত্যু ঘটে,আবার জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় তা রোজই বেঁচে ওঠে।তবু জিয়নের কাছে রুহি একবারের জন্যও অপ্রিয় হয় না।
মহাশূণ্য থেকে যেনো একটা উল্কাপিন্ড ধেয়ে এসে সজোরে ভূপতিত হবার আগেই, হাওয়ায় গা ভাসিয়ে থিতু হল জিয়নের মাথায়।তার ঠিক পরেই উল্কাপিন্ড থুড়ি উড়ন্ত চাটির মালকিনের বক্তব্য-
-"এই,এই জিয়ন!মেয়ে দেখিসনি কখনো আগে? রোজই তো দেখিস আমায়,আর রোজই পজ মোডে চলে যাস আমায় দেখে।কেন বল তো!
তুই কি কখনো সিরিয়াস হতে পারিস না?নাকি তোর নার্ভাস ব্রেক ডাউনের টেন্ডেন্সি আছে?"
নিজের মাথায় খানিক হাত বোলাতে বোলাতে একটু লাজুক ভাবেই ঢোকটা গিলে নেয় জিয়ন।তারপর লজ্জা ঢাকতে একগাল ক্যাবলা হাসি হেসে-
-"ধুর! কি যে বলিস রুহি! এতই যদি ভাবুক হতাম,তবে কবেই আমি কবি হতাম,আর তোকে নিয়ে কাব্যি করে,তোর চলার পথে,দেওয়ালে, পোষ্টে সেই কবিতা সাঁটিয়ে দিয়ে মজাও নিতাম।
নে চল,চল,যে কারণে তোকে আজ তলব করা,সেই কথাটা পাড়া যাক এখন,কি বলিস!"
আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই হুজুগে বাঙালীর গালভরা ভালোবাসার দিন, মানে যার পোষাকি নাম- "ভ্যালেন্টাইন ডে"-তারই আসার প্রস্তুতিপর্ব চলছে।তাই চারিদিকে ভালোবাসার পার্থিব সম্ভার সাজিয়ে, বিজনেস পলিসিতে মুনাফা লোটার তোড়জোড় চালাচ্ছে কিছু সুবিধাবাদী লোক আর রঙীন ভালোবাসায় হাবুডুবু খেয়ে মুনাফা লোটা লোকের কাছে বিকিয়েও যাচ্ছে বোকা প্রেমিক-প্রেমিকার দল।যদিও রুহি বা জিয়নের কাছে ভালোবাসার জন্য কোন বিশেষ দিন হয় না।তবুও নিজেদের জীবনে ভালোবাসাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য,একটা কিছু নতুন রেজোলিউশন নেওয়াই যায়-এই লজিকে তারা দুজনেই বিশ্বাসী।ক্যান্টিনে বসে সেই কথাটাই এবার পাড়লো জিয়ন।রুহিও মাথা নেড়ে,মুচকি হেসে তাতে সায় দিলো।কিন্তু ব্যাপারটার মধ্যে একটু অন্যরকম স্বাদ আনার জন্য রুহি একটা শর্ত রাখলো।শর্ত অনুযায়ী ভ্যালেন্টাইন ডের আগে কেউ কারো মুখোমুখি হলেও মুখে 'রা'-টি কাড়বে না।বড়ো জোর এড়িয়ে যাওয়া যাবে।যে রেজোলিউশনটি টেক করা হবে,সেটি ব্রেনের হার্ড ডিস্কে স্টোরড থাকবে।আর সেই বিশেষ দিনে,একটা নির্দিষ্ট জায়গায়,রেজোলিউশনে সফল হয়ে, দুজন আবার মুখোমুখি এসে দাঁড়াবে।যাতে নিজেরাই নিজেদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভালোবাসাকে আত্মস্থ করতে পারে।
শর্ত শুনেই জিয়ন গাইগুঁই শুরু করে দিয়েছিল প্রায়।তীব্র প্রতিবাদী মন নিয়ে রুহির কাছে আপিলও করেছিল।কিন্তু সিরিয়াস টাইপ রুহির ধমকানিতে সে আপিল গোঁত্তা খেয়ে লাট পাকিয়ে গেল।অগত্যা- লেজ গুঁটিয়ে কুইকুই করে, ঠোঁট উলটে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ঘাড়টা এমন করে ঘোরালো যেন ঘড়িতে "ছ'টা বেজে পাঁচ" হয়ে রয়েছে। রুহি,জিয়নের এহেনো অদ্ভুত আচরণে কটমট করে খানিক ওর দিকে তাকিয়ে, ডায়েরি আর পেনটাকে প্রায় ছোঁ মেরে উঠিয়ে নিয়ে আবার আগের মতই শশব্যস্ত হয়ে, সবার পাশ কাটিয়ে, সায়েন্স কম্পাউন্ডের করিডোর ধরে এগিয়ে চলে গেলো।আর ঠিক আগের মতই স্পেলবাউন্ড জিয়ন ক্যান্টিনের খোলা জানলা দিয়ে মায়ামাখা রুহির ছায়াশরীরকে চোখের সামনে থেকে নড়ে চড়ে দূ-রে-আরও দূরে সরে যেতে দেখে চললো।
নেক্সট ডে।সকাল এগারোটা বেজে পাঁচ।কলেজের সায়েন্স কম্পাউন্ডের ঢোকার মুখে ফেব্রুয়ারীর স্টোল জড়ানো মোলায়েম রোদে গা সেঁকে নিয়ে,অনেকেই দাঁড়িয়ে অলস গল্পে মশগুল।রুহিও দাঁড়িয়ে আছে জটলার মধ্যেই।তবুও ভীড়ের মধ্যেও যেন একটা খাঁ খাঁ করা আনচান ভাব টের পাচ্ছে ও।কখনো হাতে রাখা ফোনে হোয়াটস্যাপ মেসেজ বক্স চেক করছে,কখনো রিস্টওয়াচের কাঁটার নড়াচড়া ওয়াচ করছে,আবার কখনো বা বিশেষ কাউকে না দেখতে পাওয়ার উচাটনে বিরক্তিসূচক ভ্রুকুটিও করছে।
-'ধুর!ধুর!কি কুক্ষণে যে জিয়নকে জব্দ করার জন্য গর্ত খুঁড়তে গেলাম! নাও, এখন ঠ্যালা সামলাও।অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে, নিজেকেই যে সেই গর্তে একদিন পড়তে হয়,তার প্রমাণ আমি হাতে নাতে পাচ্ছি।হে ভগবান! এইবারটি কোন ক্রমে উতরে দাও,এরপর এমন মন্দবুদ্ধি আর জীবনে অ্যাপ্লাই করবো না আর কক্ষণো।'
স্বগতোক্তির পর কলেজ গেটে বার কয়েক চোখ বুলিয়ে আবার হো- অ্যাপ চেক করতে গিয়ে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো রুহি।
-"এক্সকিউজ মি!"
রুহি হো অ্যাপ থেকে চোখ ওঠাতেই,সামনে রে-ব্যানের গগলস আঁটা, সুপুরুষ জিয়নকে খুব সিরিয়াস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।রুহি এমন রূপ দেখেনি আগে জিয়নের।দ্বিতীয়বার
-"এক্সকিউজ মি!" বলে পাশ কাটিয়ে, সামনের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের দিকে,ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গেল জিয়ন।যেন রুহির জন্য আজ কোন আবেগ কাজ করছে না ওর।কোন এক মন্ত্রবলে যেন রুহির প্রতি তার মন্ত্রমুগ্ধতা কেটে গেছে।রুহি, এ কোন্ জিয়নকে দেখছে! আজ রুহিও হতভম্ব হয়ে জিয়নের চলে যাওয়াটা শুধু দেখে চলল। ভীষণ কান্না পেল ওর,কিন্তু পরক্ষণেই রেজোলিউশনের শর্ত মনে পড়ে গেল।নিজেই নিজের জাঁতাকলে পড়ে ছটফট করতে লাগলো।ক্লাসের গ্যাপে ক্যান্টিনেও রুহি খোঁজ করলো জিয়নের।ফেরার সময় পুরো কম্পাউন্ড,ক্যাম্পাস,ক্যান্টিন,লাইব্রেরি,ইউনিয়ন রুম- তন্ন তন্ন করে খুঁজেও জিয়নের টিকি তো দূর,নিঃশ্বাসের গন্ধটুকুও টের পেল না রুহি।মন মরা বেচারি রুহি,একলা একাই কলেজ থেকে নিঃশব্দে বাড়ি ফিরে এলো।অনেক রাত পর্যন্ত হো অ্যাপ বক্সে জিয়নের মেসেজ খোঁজ করে যেতে লাগলো ও। মেঘলা মুখের ঝিল চোখ চিরে কয়েক ফোঁটা আক্ষেপ বিন্দুও ঝরে পড়লো অজান্তে, সেই মূহুর্তে।
অনেক রাত পর্যন্ত বালিশ আঁকড়ে কেঁদে কেটে ঘুমিয়েছে রুহি।পরের দিন তাই রসবড়ার মত ফুলে যাওয়া চোখ আর নাকে তালা ঝুলিয়ে, লোকের কাছে জবাবদিহির পাত্রী হয়ে,কলেজ যেতে তার একটুও ইচ্ছে করলো না।আর তাছাড়া যাকে দেখলে,যার সাথে কথা বললে মন চনমনে হয়,গোলাপ ঠোঁটে দু'ফালি চাঁদ পিছলে যায়.........
-'নাহ থাক,ভাববো না,একটুও ভাববো না তার কথা।যে আমাকে না দেখে থাকতেই পারতো না এক মূহুর্ত,সে কিনা শর্তে জেতার জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমায় এড়িয়ে চলছে!
ভাববো না,ভাববোই না তোর কথা,জিয়ন!তুই জিতেছিস,আর আমি হেরে গেছি।সত্যিই হেরে গেছি জিয়ন,আর পারছি না এভাবে তোকে মেনে নিতে।প্লিজ কামব্যাক,জিয়ন......'
আবার খানিক অকাল বর্ষণে ভিজে গেলো চিবুক,ভিজে গেলো আবেগের পাতা।
রুহি কলেজ আসেনি জেনেও জিয়ন সারা দিন,সারা রাতের মধ্যেও একটা মেসেজ বা টেক্স করে খোঁজ নেয়নি ওর।রুহিও চোদ্দোশো চল্লিশ মিনিট খোঁজ নিলো না জিয়নের।একটা বিষাদময়,অপয়া তেরোই ফেব্রুয়ারী এভাবেই তাদের বোবাকান্না আর দীর্ঘশ্বাসের আড়ালে হারিয়ে গেল। দু'দিকেরই ডায়েরির পাতায়,! ব্ল্যাক মার্কারের ডার্ক সার্কেলে মার্কড হয়ে থাকলো 'আনলাকি থার্টিন'।
আজ বাঙালীর আদিখ্যেতা দেখাবার দিন।বাবু,সোনা,নেকুপুষু-সুন্টুমুন্টু ডার্লিংদের আজ দারুন এক্সাইটমেন্টের দিন।কত রঙের গোলাপ যে আজ নিহত হবে,কত রঙীন র্যাপার যে আজ হাওয়ায় উড়বে অবহেলিতের মত,আর কত্ত কত্ত প্রেমিক সত্ত্বা যে আজ হিরোর মত হাঁটু মুড়ে প্রেমিকার সামনে নতজানু হবে!-সবটাই যেন একটা প্রিপ্ল্যান্ড সেলিব্রেশন।যেন সেলিব্রেশনের সেলিব্রিটি হবার জন্যই ভ্যালেন্টাইন ডে গুরুত্ব পায় প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে।ভালোবাসার দিন-ক্ষণ কি তবে নির্দিষ্ট করা যায়!
-'ধুর! বেকার আদিখ্যেতা সবার।যখন তখন দুমদাম করে,ইচ্ছে হলেই ভালোবাসতে নেই বুঝি!আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে যেতে নেই বুঝি!তবে কেন তিন-তিনটে বছর জিয়ন একই ভাবে,একই মুগ্ধতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে? কেন আমি সামনে এলেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় ওর?কেন ক্যাবলাকান্ত হয়ে যায় আমায় দেখে? কেন আমায় চোখে হারায় ও? হুহ! চোখে হারায় না ছাই! আজ রেজোলিউশনের নিকুচি করে,শর্তকে কুচিকুচি করে,জিয়নের সামনে উড়িয়ে দিয়ে, বুঝিয়ে দেবো যে আমিও কথা না বলে থাকতে পারি,না দেখেও থাকতে পারি।বাকিটা যা বোঝার, বুঝে নিক জিয়ন নিজেই।'
স্বগতোক্তিতে হালকা কপট রাগ বেরিয়ে এলো রুহির ভেতর থেকে।
নিজেকে মানানসই পোষাকে মুড়ে,হাল্কা স্টোল গলায় জড়িয়ে, পিঠে স্কাইব্যাগ চাপিয়ে,নাক দিয়ে খানিক টেনে নিল একটা রোদেলা হাওয়া।কারণ,রণক্ষেত্রে নামার আগে একটা ফ্রেশ মেন্টাল প্রিপারেশনের দরকার হয়, নইলে পরাজয় সুনিশ্চিত।বাড়ির মেইন গেট পেরিয়ে,ছলছলে চোখদুটো রুহি স্মার্টলি ঢেকে নিল রোদ চশমার আড়ালে।সামনে রাস্তার দিকে এগোতে গিয়ে হঠাৎ বাউন্ডারি ওয়ালে চোখ আটকে গেল ওর।কেউ যেন ছোট্ট ছোট্ট লিফলেটের মত কিছু সাঁটিয়ে রেখেছে ওয়ালে।সন্দিগ্ধ চোখে পড়ে দেখার জন্য কাছে যেতেই.........
" আমার জন্য তুই পুরোটাই কাব্য
হিসেব করে তোর কথা কেন ভাববো!
চোখের আড়াল,বুক করে দুরু দুরু
যে চোখেতে কাজল টানিস পুরু!
সেই চোখেতেই ক্যাবলা কুপোকাত
ভাবের আঙুল জড়িয়ে দুটো হাত
ঠোঁট বাঁকালেই বুকের চাতাল বিদ্ধ
তুই হাসলেই জিয়ন-ও সমৃদ্ধ।"
দেওয়াল লিখন পড়ে রুহি হাসবে না কাঁদবে!-বুঝে পেল না।ফ্যান্টাসিতে ভর করে সে নিজেকে মূহুর্তের জন্য সিন্ডারেলা ভেবে নিল।মন যেন হাজার প্রজাপতির পাখা মেলে ফড়ফড় করে উড়তে থাকলো।তারপর আশেপাশে চোখ কান খোলা রেখে জিয়নের উপস্থিতি খুঁজতে খুঁজতে আস্তে-ধীরে স্টেশনমুখী হল।প্ল্যাটফর্মের যেখানটাতে বসে রুহি প্রতিদিন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে, সেখানে পৌছতেই আবার একটা লিফলেট চোখে পড়লো ওর।তাতে বড় বড় করে লেখা.....
"এদিক,ওদিক খুঁজিস যাকে,খুঁজিস না তো বুকের ফাঁকে!
নজরদারি চোখের উপর,আটকে আমার গোটা শহর
ম্যাহফিল হয় শূন্য ম্যাহেক,বিন রুহিতে যাচ্ছি ব্যাহেক
চেনা মঞ্জিল,ছেঁড়া জঞ্জির,রেশমি সুতোয় বাঁধবি কাকে!"
ভাবের ঘরের আহ্লাদী রুহি আনন্দজল রুমালে মেখে নিয়ে অ্যালার্ট হল।প্ল্যাটফর্ম ছুঁয়ে আগত ট্রেনকে স্বাগত জানিয়ে রুহি লাফিয়ে উঠে পড়লো তার পেটের খুপরিতে।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির সামনে গিয়ে দাঁড়াতে চলেছে।সেটা ভেবেই সে শিহরিত হচ্ছে বারেবার।যার ভেতর এত্ত ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল,যার কবি সত্ত্বা এভাবে অপ্রত্যাশিত ভাবে প্রকাশ পেল শুধু মাত্র রুহির জন্য,তাকে খুব কাছ থেকে দু'চোখ ভরে দেখার সুপ্ত ইচ্ছেটা লাফিয়ে লাফিয়ে যেন বাড়ছে আর রুহির কাছে একটা স্টেশন পেরিয়ে পরের স্টেশনের মধ্যেকার দূরত্বটাও যেন বহু যোজন মনে হতে লাগলো।যে দূরত্বটা তার কাছে অসহ্যকর,অথচ সেই দূরত্বটাই তার কাছে মিলন-সাঁকো।তাই কখনো কখনো দূরত্ব থাকা ভালো,তাতে কাছে যাবার টান বাড়ে।সমস্ত পথটাই এভাবে জিয়নের ভাবনায় ডুবে গিয়ে রুহির অদৃশ্য হাতটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেল জিয়নের বুক।আগে থেকেই তাদের গন্তব্য নির্দিষ্ট।ট্রেনটাও সেই নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম ছুঁয়ে রুহিকে সিঅফ করলো।প্ল্যাটফর্মে পা রাখতেই...... একটা চেনা ভরসার হাত রুহির পিঠ আগলে, ভীড় বাচিয়ে তাকে সেফ জোনে নিয়ে এল।রুহি ঘাড় ঘুরিয়ে মূর্তিমান মিষ্টার জিয়নের সিরিয়াস মুখটা দেখতে পেল। এক্সপেক্টেড ক্যাবলাকান্ত জিয়নের গালভরা হাসিটা বড্ড মিস করলো রুহি।খারাপ লাগাটা বুকের ভেতর লুকিয়ে নিয়ে আঙুল ফাঁকে শক্ত করে জিয়নের আঙুল গলিয়ে এগিয়ে চলল কাছাকাছি একটা পার্কের দিকে।
পার্কের এক কোণে, ঝিলের ধারে একটা ফাঁকা বেঞ্চে, রুহিকে বসিয়ে দিয়ে জিয়ন একটু ফ্রেশ হবার ছুঁতোয়, রুহির চোখের আড়ালে হলো।একলা রুহি ঝিলের জলে রোদের ঝিলিমিলি কাটাকুটি খেলায় চোখ বসালো।রুদ্র তাপসও বুঝি মজার ছলে একলা,আনমনা রুহিকে একটু উষ্ণ করার খেলায় মাতলো।ঝিলের বুকে রোদের আদর-খেলা দেখতে দেখতে গলার স্টোলটা আনমনে খুলে,বেঞ্চের উপর রাখতে গিয়েই- একটা খচমচ শব্দে, ভাবের ঘোরটা কেটে গেল রুহির।স্টোল সরাতেই চকচক করে উঠলো সেলোফিন মোড়া গুলদস্তা আর তার ঠিক নীচ থেকে উঁকি দিলো একটা সুদৃশ্য ডায়েরির কিয়দংশ।ফুলগুলোতে হাত রাখতে গিয়েই রুহির চোখ পড়লো-তার পায়ের ঠিক কাছেই ঘাসের উপর পড়ে আছে একটা বড়োসড়ো বেলুন হৃদয়।অনাদরে পড়ে থাকা আদরের হৃদয়কে সযত্নে যেই বুকের কাছে চেপে ধরলো রুহি,অমনি সশব্দে অপ্রত্যাশিত ভাবে বিদীর্ণ হল বেলুন হৃদয়।রুহি আচমকা ঘটে যাওয়া ব্লাস্টে ডুকরে উঠে মুখ ঢাকলো হাতের পাতায়।আর ঠিক তখনই আবার সেই চেনা ভরসার হাত ওর হাতের আড়াল সরিয়ে,মুঠোবন্দি করলো রুহির কাঁপা কাঁপা হাত।রুহি অবাক হয়ে শুধু দেখলো তার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে আছে জিয়ন, আর আসেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বেশ কয়েকটা চকলেট হার্ট।রুহির বাচ্চা মন ফ্যান্টাসিতে ভাসতে ভালোবাসে,কিন্তু, সেই ফ্যান্টাসি যে বাস্তবে তাকে ধরা দেবে,এমনটা সে কক্ষণো ভাবেনি।বিস্ময়ের চমকে রুহি কথা হারিয়ে শুধু দেখে চলেছে জিয়নকে।গুলদস্তাকে বেঞ্চ থেকে সযত্নে উঠিয়ে রুহির কোল ভরে দিল জিয়ন।পাশে রাখা ডায়েরিটাও তুলে দিল রুহির অন্য হাতের তালুতে।
-"রুহি! ঘোরের চাদর ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে একবারটি দেখ,তোর এই নতুন জিয়ন,তোর মনের মতন হল কিনা!"
রুহির ঠোঁট তিরতির করে কেঁপে উঠলো অনেক কিছু বলার জন্য,কিন্তু ভাষা হারিয়ে এক ঝটকায় জিয়নকে জাপ্টে ধরলো শক্ত করে।মনের বাঁধ খুলে ততক্ষণে স্রোতস্বিনী কান্নারা ভিজিয়ে দিয়েছে জিয়নের শক্ত চওড়া কাঁধ।আর কানের কাছে একটা অভিমানী ঠোঁট বলে চলেছে.......
-"নিকুচি করেছি রেজোলিউশনের।যে রেজোলিউশনে দূরত্ব বাড়ায়,কষ্টের নুড়ি জমিয়ে দেয় বুকের বাঁ-পাশে,যে রেজোলিউশন ক্যাবলাকান্তের দন্ত বিকশিত হাসি কেড়ে নেয়,সে রেজোলিউশনের ভেন্টিলেশনেই থাকা ভালো।আর কক্ষনো যদি এমন রেজোলিউশনের কথা মুখে আনিস!তবে ভালো হবে না বলে দিলাম।"
"-কি হবে শুনি! বিপদ যদি আগে থেকে ঘন্টা বাজিয়ে সংকেত দেয়,তবে না হয় বর্ম পরেই রণক্ষেত্রে নামবো"।
চওড়া হাসি ঠোঁটে সাজিয়ে নিয়ে জিয়ন বলে উঠলো।
-"তবে রে!ইয়ার্কি হচ্ছে!আজ তোরই একদিন কি আমারই........ "
হঠাতই ঝড় ওঠার পুর্বাভাস দিয়ে,থমথমে নীরবতার বুক চিরে বেরিয়ে এলো একটা মৃদু চকাস শব্দ।ঘাসের বুকে গুলদস্তাও লেপ্টে থাকলো আদরে আর তার ঠিক পাশেই খোলা ডায়েরির বুকে কিছু কালিমাখা শব্দের উপর দোল খেয়ে গেল একজোড়া ঝুমকো কানের দুল......
তোর জন্য গ্ল্যাডিওলাস,বাদের খাতায় গোলাপ ফুল
ডেইজি আছে অপেক্ষাতে,ডায়েরি ভাঁজে কানের দুল
বেলুন বুকে চকলেটি হার্ট,আর কি দেবো বল!
দীঘল চোখে মানায় না যে হিরের কুচি-জল
ঝগড়া হলে করতে পারি কান ধরে উঠ-বোস
নুইয়ে মাথা করবো স্বীকার,সবটা আমার দোষ
লুকিয়ে কাঁদিস,রাগও দেখাস,পুষিস অভিমান!
বুকের ভেতর রুহির ডেরা,রামধনু আসমান।
তোকেই পড়ি,তোকেই লিখি,উপন্যাস বা কাব্য
বারণ থাকুক উপেক্ষাতে,তোকেই শুধু ভাববো।।
---------মধুরেণ সমাপয়েৎ-------
---------®সুপ্তোত্থিতা_সাথী
কলেজ ক্যান্টিনে অধৈর্য্য হয়ে এক কোণে বেঞ্চে বসে, জিয়ন। ধুমপান দন্ডে পর পর কয়েকটা টান মেরে পায়ের তলায় আচ্ছাসে তাকে এমনভাবে পিষে দিল যেন বিরক্তির টুঁটি চেপে তাকে খতম করে দেওয়া হলো।
-'ধ্যাত! কলেজেও কেউ যে এমন সিরিয়াসলি পড়তে শুনতে আসে,তা এই মেয়েটাকে দেখে এদ্দিনে বিশ্বাস হল আমার।
আরে স্টুডিয়াস হ আর মেরিটোরিয়াস,তা বলে কি প্রেম-ট্রেম করতে নেই! কোন বইতে এমনটা লেখা টেখা আছে শুনি! প্রশ্ন করলেই তো মেয়ে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে।সেই থেকে রুহির জন্য ওয়েট করতে করতে পস্টেরিয়ারের নার্ভাস সিস্টেমে জ্যাম লেগে যাবার উপক্রম,তবু দেবীর অবতরণের সময় হল না এখনো।'
জিয়ন,বিড়বিড় করে যেতে লাগলো আপন মনে।
শশব্যস্ত ভাবে ক্যান্টিনের বাকি সবাইকে পাশ কাটিয়ে, জিয়নের বেঞ্চের উপর হাতের ডায়েরি আর পেনটা ধপ করে রেখে,'উফ' শব্দে রুহি বুঝিয়ে দিল যে ক্লাস সেরে,বন্ধুদের উপেক্ষা করে, জিয়নের কাছে আসতে তাকে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে।রুহির হাতটা ধরে পাশে বসিয়ে জিয়ন অপলক দৃষ্টিতে দেখেই চলেছে তাকে।রোজই তো সে রুহিকে খুব কাছ থেকে দেখে।কিন্তু সেই দেখার কেন যে শেষ হয় না,তার কারণটা থার্ড ইয়ারে এসেও জিয়নের বুঝে ওঠা হয় না।কলেজের ফ্রেশারের দিন থেকে রুহিকে যেমনটা দেখেছিল জিয়ন,আজও ঠিক সেই প্রথম দিনের মতই রুহি আটকে আছে তার চোখের ফ্রেমে।প্রায় প্রতিদিনই তাদের মধ্যেকার সম্পর্কের একবার করে অকাল মৃত্যু ঘটে,আবার জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় তা রোজই বেঁচে ওঠে।তবু জিয়নের কাছে রুহি একবারের জন্যও অপ্রিয় হয় না।
মহাশূণ্য থেকে যেনো একটা উল্কাপিন্ড ধেয়ে এসে সজোরে ভূপতিত হবার আগেই, হাওয়ায় গা ভাসিয়ে থিতু হল জিয়নের মাথায়।তার ঠিক পরেই উল্কাপিন্ড থুড়ি উড়ন্ত চাটির মালকিনের বক্তব্য-
-"এই,এই জিয়ন!মেয়ে দেখিসনি কখনো আগে? রোজই তো দেখিস আমায়,আর রোজই পজ মোডে চলে যাস আমায় দেখে।কেন বল তো!
তুই কি কখনো সিরিয়াস হতে পারিস না?নাকি তোর নার্ভাস ব্রেক ডাউনের টেন্ডেন্সি আছে?"
নিজের মাথায় খানিক হাত বোলাতে বোলাতে একটু লাজুক ভাবেই ঢোকটা গিলে নেয় জিয়ন।তারপর লজ্জা ঢাকতে একগাল ক্যাবলা হাসি হেসে-
-"ধুর! কি যে বলিস রুহি! এতই যদি ভাবুক হতাম,তবে কবেই আমি কবি হতাম,আর তোকে নিয়ে কাব্যি করে,তোর চলার পথে,দেওয়ালে, পোষ্টে সেই কবিতা সাঁটিয়ে দিয়ে মজাও নিতাম।
নে চল,চল,যে কারণে তোকে আজ তলব করা,সেই কথাটা পাড়া যাক এখন,কি বলিস!"
আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই হুজুগে বাঙালীর গালভরা ভালোবাসার দিন, মানে যার পোষাকি নাম- "ভ্যালেন্টাইন ডে"-তারই আসার প্রস্তুতিপর্ব চলছে।তাই চারিদিকে ভালোবাসার পার্থিব সম্ভার সাজিয়ে, বিজনেস পলিসিতে মুনাফা লোটার তোড়জোড় চালাচ্ছে কিছু সুবিধাবাদী লোক আর রঙীন ভালোবাসায় হাবুডুবু খেয়ে মুনাফা লোটা লোকের কাছে বিকিয়েও যাচ্ছে বোকা প্রেমিক-প্রেমিকার দল।যদিও রুহি বা জিয়নের কাছে ভালোবাসার জন্য কোন বিশেষ দিন হয় না।তবুও নিজেদের জীবনে ভালোবাসাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য,একটা কিছু নতুন রেজোলিউশন নেওয়াই যায়-এই লজিকে তারা দুজনেই বিশ্বাসী।ক্যান্টিনে বসে সেই কথাটাই এবার পাড়লো জিয়ন।রুহিও মাথা নেড়ে,মুচকি হেসে তাতে সায় দিলো।কিন্তু ব্যাপারটার মধ্যে একটু অন্যরকম স্বাদ আনার জন্য রুহি একটা শর্ত রাখলো।শর্ত অনুযায়ী ভ্যালেন্টাইন ডের আগে কেউ কারো মুখোমুখি হলেও মুখে 'রা'-টি কাড়বে না।বড়ো জোর এড়িয়ে যাওয়া যাবে।যে রেজোলিউশনটি টেক করা হবে,সেটি ব্রেনের হার্ড ডিস্কে স্টোরড থাকবে।আর সেই বিশেষ দিনে,একটা নির্দিষ্ট জায়গায়,রেজোলিউশনে সফল হয়ে, দুজন আবার মুখোমুখি এসে দাঁড়াবে।যাতে নিজেরাই নিজেদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভালোবাসাকে আত্মস্থ করতে পারে।
শর্ত শুনেই জিয়ন গাইগুঁই শুরু করে দিয়েছিল প্রায়।তীব্র প্রতিবাদী মন নিয়ে রুহির কাছে আপিলও করেছিল।কিন্তু সিরিয়াস টাইপ রুহির ধমকানিতে সে আপিল গোঁত্তা খেয়ে লাট পাকিয়ে গেল।অগত্যা- লেজ গুঁটিয়ে কুইকুই করে, ঠোঁট উলটে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ঘাড়টা এমন করে ঘোরালো যেন ঘড়িতে "ছ'টা বেজে পাঁচ" হয়ে রয়েছে। রুহি,জিয়নের এহেনো অদ্ভুত আচরণে কটমট করে খানিক ওর দিকে তাকিয়ে, ডায়েরি আর পেনটাকে প্রায় ছোঁ মেরে উঠিয়ে নিয়ে আবার আগের মতই শশব্যস্ত হয়ে, সবার পাশ কাটিয়ে, সায়েন্স কম্পাউন্ডের করিডোর ধরে এগিয়ে চলে গেলো।আর ঠিক আগের মতই স্পেলবাউন্ড জিয়ন ক্যান্টিনের খোলা জানলা দিয়ে মায়ামাখা রুহির ছায়াশরীরকে চোখের সামনে থেকে নড়ে চড়ে দূ-রে-আরও দূরে সরে যেতে দেখে চললো।
নেক্সট ডে।সকাল এগারোটা বেজে পাঁচ।কলেজের সায়েন্স কম্পাউন্ডের ঢোকার মুখে ফেব্রুয়ারীর স্টোল জড়ানো মোলায়েম রোদে গা সেঁকে নিয়ে,অনেকেই দাঁড়িয়ে অলস গল্পে মশগুল।রুহিও দাঁড়িয়ে আছে জটলার মধ্যেই।তবুও ভীড়ের মধ্যেও যেন একটা খাঁ খাঁ করা আনচান ভাব টের পাচ্ছে ও।কখনো হাতে রাখা ফোনে হোয়াটস্যাপ মেসেজ বক্স চেক করছে,কখনো রিস্টওয়াচের কাঁটার নড়াচড়া ওয়াচ করছে,আবার কখনো বা বিশেষ কাউকে না দেখতে পাওয়ার উচাটনে বিরক্তিসূচক ভ্রুকুটিও করছে।
-'ধুর!ধুর!কি কুক্ষণে যে জিয়নকে জব্দ করার জন্য গর্ত খুঁড়তে গেলাম! নাও, এখন ঠ্যালা সামলাও।অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে, নিজেকেই যে সেই গর্তে একদিন পড়তে হয়,তার প্রমাণ আমি হাতে নাতে পাচ্ছি।হে ভগবান! এইবারটি কোন ক্রমে উতরে দাও,এরপর এমন মন্দবুদ্ধি আর জীবনে অ্যাপ্লাই করবো না আর কক্ষণো।'
স্বগতোক্তির পর কলেজ গেটে বার কয়েক চোখ বুলিয়ে আবার হো- অ্যাপ চেক করতে গিয়ে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো রুহি।
-"এক্সকিউজ মি!"
রুহি হো অ্যাপ থেকে চোখ ওঠাতেই,সামনে রে-ব্যানের গগলস আঁটা, সুপুরুষ জিয়নকে খুব সিরিয়াস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।রুহি এমন রূপ দেখেনি আগে জিয়নের।দ্বিতীয়বার
-"এক্সকিউজ মি!" বলে পাশ কাটিয়ে, সামনের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের দিকে,ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গেল জিয়ন।যেন রুহির জন্য আজ কোন আবেগ কাজ করছে না ওর।কোন এক মন্ত্রবলে যেন রুহির প্রতি তার মন্ত্রমুগ্ধতা কেটে গেছে।রুহি, এ কোন্ জিয়নকে দেখছে! আজ রুহিও হতভম্ব হয়ে জিয়নের চলে যাওয়াটা শুধু দেখে চলল। ভীষণ কান্না পেল ওর,কিন্তু পরক্ষণেই রেজোলিউশনের শর্ত মনে পড়ে গেল।নিজেই নিজের জাঁতাকলে পড়ে ছটফট করতে লাগলো।ক্লাসের গ্যাপে ক্যান্টিনেও রুহি খোঁজ করলো জিয়নের।ফেরার সময় পুরো কম্পাউন্ড,ক্যাম্পাস,ক্যান্টিন,লাইব্রেরি,ইউনিয়ন রুম- তন্ন তন্ন করে খুঁজেও জিয়নের টিকি তো দূর,নিঃশ্বাসের গন্ধটুকুও টের পেল না রুহি।মন মরা বেচারি রুহি,একলা একাই কলেজ থেকে নিঃশব্দে বাড়ি ফিরে এলো।অনেক রাত পর্যন্ত হো অ্যাপ বক্সে জিয়নের মেসেজ খোঁজ করে যেতে লাগলো ও। মেঘলা মুখের ঝিল চোখ চিরে কয়েক ফোঁটা আক্ষেপ বিন্দুও ঝরে পড়লো অজান্তে, সেই মূহুর্তে।
অনেক রাত পর্যন্ত বালিশ আঁকড়ে কেঁদে কেটে ঘুমিয়েছে রুহি।পরের দিন তাই রসবড়ার মত ফুলে যাওয়া চোখ আর নাকে তালা ঝুলিয়ে, লোকের কাছে জবাবদিহির পাত্রী হয়ে,কলেজ যেতে তার একটুও ইচ্ছে করলো না।আর তাছাড়া যাকে দেখলে,যার সাথে কথা বললে মন চনমনে হয়,গোলাপ ঠোঁটে দু'ফালি চাঁদ পিছলে যায়.........
-'নাহ থাক,ভাববো না,একটুও ভাববো না তার কথা।যে আমাকে না দেখে থাকতেই পারতো না এক মূহুর্ত,সে কিনা শর্তে জেতার জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমায় এড়িয়ে চলছে!
ভাববো না,ভাববোই না তোর কথা,জিয়ন!তুই জিতেছিস,আর আমি হেরে গেছি।সত্যিই হেরে গেছি জিয়ন,আর পারছি না এভাবে তোকে মেনে নিতে।প্লিজ কামব্যাক,জিয়ন......'
আবার খানিক অকাল বর্ষণে ভিজে গেলো চিবুক,ভিজে গেলো আবেগের পাতা।
রুহি কলেজ আসেনি জেনেও জিয়ন সারা দিন,সারা রাতের মধ্যেও একটা মেসেজ বা টেক্স করে খোঁজ নেয়নি ওর।রুহিও চোদ্দোশো চল্লিশ মিনিট খোঁজ নিলো না জিয়নের।একটা বিষাদময়,অপয়া তেরোই ফেব্রুয়ারী এভাবেই তাদের বোবাকান্না আর দীর্ঘশ্বাসের আড়ালে হারিয়ে গেল। দু'দিকেরই ডায়েরির পাতায়,! ব্ল্যাক মার্কারের ডার্ক সার্কেলে মার্কড হয়ে থাকলো 'আনলাকি থার্টিন'।
আজ বাঙালীর আদিখ্যেতা দেখাবার দিন।বাবু,সোনা,নেকুপুষু-সুন্টুমুন্টু ডার্লিংদের আজ দারুন এক্সাইটমেন্টের দিন।কত রঙের গোলাপ যে আজ নিহত হবে,কত রঙীন র্যাপার যে আজ হাওয়ায় উড়বে অবহেলিতের মত,আর কত্ত কত্ত প্রেমিক সত্ত্বা যে আজ হিরোর মত হাঁটু মুড়ে প্রেমিকার সামনে নতজানু হবে!-সবটাই যেন একটা প্রিপ্ল্যান্ড সেলিব্রেশন।যেন সেলিব্রেশনের সেলিব্রিটি হবার জন্যই ভ্যালেন্টাইন ডে গুরুত্ব পায় প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে।ভালোবাসার দিন-ক্ষণ কি তবে নির্দিষ্ট করা যায়!
-'ধুর! বেকার আদিখ্যেতা সবার।যখন তখন দুমদাম করে,ইচ্ছে হলেই ভালোবাসতে নেই বুঝি!আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে যেতে নেই বুঝি!তবে কেন তিন-তিনটে বছর জিয়ন একই ভাবে,একই মুগ্ধতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে? কেন আমি সামনে এলেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় ওর?কেন ক্যাবলাকান্ত হয়ে যায় আমায় দেখে? কেন আমায় চোখে হারায় ও? হুহ! চোখে হারায় না ছাই! আজ রেজোলিউশনের নিকুচি করে,শর্তকে কুচিকুচি করে,জিয়নের সামনে উড়িয়ে দিয়ে, বুঝিয়ে দেবো যে আমিও কথা না বলে থাকতে পারি,না দেখেও থাকতে পারি।বাকিটা যা বোঝার, বুঝে নিক জিয়ন নিজেই।'
স্বগতোক্তিতে হালকা কপট রাগ বেরিয়ে এলো রুহির ভেতর থেকে।
নিজেকে মানানসই পোষাকে মুড়ে,হাল্কা স্টোল গলায় জড়িয়ে, পিঠে স্কাইব্যাগ চাপিয়ে,নাক দিয়ে খানিক টেনে নিল একটা রোদেলা হাওয়া।কারণ,রণক্ষেত্রে নামার আগে একটা ফ্রেশ মেন্টাল প্রিপারেশনের দরকার হয়, নইলে পরাজয় সুনিশ্চিত।বাড়ির মেইন গেট পেরিয়ে,ছলছলে চোখদুটো রুহি স্মার্টলি ঢেকে নিল রোদ চশমার আড়ালে।সামনে রাস্তার দিকে এগোতে গিয়ে হঠাৎ বাউন্ডারি ওয়ালে চোখ আটকে গেল ওর।কেউ যেন ছোট্ট ছোট্ট লিফলেটের মত কিছু সাঁটিয়ে রেখেছে ওয়ালে।সন্দিগ্ধ চোখে পড়ে দেখার জন্য কাছে যেতেই.........
" আমার জন্য তুই পুরোটাই কাব্য
হিসেব করে তোর কথা কেন ভাববো!
চোখের আড়াল,বুক করে দুরু দুরু
যে চোখেতে কাজল টানিস পুরু!
সেই চোখেতেই ক্যাবলা কুপোকাত
ভাবের আঙুল জড়িয়ে দুটো হাত
ঠোঁট বাঁকালেই বুকের চাতাল বিদ্ধ
তুই হাসলেই জিয়ন-ও সমৃদ্ধ।"
দেওয়াল লিখন পড়ে রুহি হাসবে না কাঁদবে!-বুঝে পেল না।ফ্যান্টাসিতে ভর করে সে নিজেকে মূহুর্তের জন্য সিন্ডারেলা ভেবে নিল।মন যেন হাজার প্রজাপতির পাখা মেলে ফড়ফড় করে উড়তে থাকলো।তারপর আশেপাশে চোখ কান খোলা রেখে জিয়নের উপস্থিতি খুঁজতে খুঁজতে আস্তে-ধীরে স্টেশনমুখী হল।প্ল্যাটফর্মের যেখানটাতে বসে রুহি প্রতিদিন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে, সেখানে পৌছতেই আবার একটা লিফলেট চোখে পড়লো ওর।তাতে বড় বড় করে লেখা.....
"এদিক,ওদিক খুঁজিস যাকে,খুঁজিস না তো বুকের ফাঁকে!
নজরদারি চোখের উপর,আটকে আমার গোটা শহর
ম্যাহফিল হয় শূন্য ম্যাহেক,বিন রুহিতে যাচ্ছি ব্যাহেক
চেনা মঞ্জিল,ছেঁড়া জঞ্জির,রেশমি সুতোয় বাঁধবি কাকে!"
ভাবের ঘরের আহ্লাদী রুহি আনন্দজল রুমালে মেখে নিয়ে অ্যালার্ট হল।প্ল্যাটফর্ম ছুঁয়ে আগত ট্রেনকে স্বাগত জানিয়ে রুহি লাফিয়ে উঠে পড়লো তার পেটের খুপরিতে।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির সামনে গিয়ে দাঁড়াতে চলেছে।সেটা ভেবেই সে শিহরিত হচ্ছে বারেবার।যার ভেতর এত্ত ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল,যার কবি সত্ত্বা এভাবে অপ্রত্যাশিত ভাবে প্রকাশ পেল শুধু মাত্র রুহির জন্য,তাকে খুব কাছ থেকে দু'চোখ ভরে দেখার সুপ্ত ইচ্ছেটা লাফিয়ে লাফিয়ে যেন বাড়ছে আর রুহির কাছে একটা স্টেশন পেরিয়ে পরের স্টেশনের মধ্যেকার দূরত্বটাও যেন বহু যোজন মনে হতে লাগলো।যে দূরত্বটা তার কাছে অসহ্যকর,অথচ সেই দূরত্বটাই তার কাছে মিলন-সাঁকো।তাই কখনো কখনো দূরত্ব থাকা ভালো,তাতে কাছে যাবার টান বাড়ে।সমস্ত পথটাই এভাবে জিয়নের ভাবনায় ডুবে গিয়ে রুহির অদৃশ্য হাতটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেল জিয়নের বুক।আগে থেকেই তাদের গন্তব্য নির্দিষ্ট।ট্রেনটাও সেই নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম ছুঁয়ে রুহিকে সিঅফ করলো।প্ল্যাটফর্মে পা রাখতেই...... একটা চেনা ভরসার হাত রুহির পিঠ আগলে, ভীড় বাচিয়ে তাকে সেফ জোনে নিয়ে এল।রুহি ঘাড় ঘুরিয়ে মূর্তিমান মিষ্টার জিয়নের সিরিয়াস মুখটা দেখতে পেল। এক্সপেক্টেড ক্যাবলাকান্ত জিয়নের গালভরা হাসিটা বড্ড মিস করলো রুহি।খারাপ লাগাটা বুকের ভেতর লুকিয়ে নিয়ে আঙুল ফাঁকে শক্ত করে জিয়নের আঙুল গলিয়ে এগিয়ে চলল কাছাকাছি একটা পার্কের দিকে।
পার্কের এক কোণে, ঝিলের ধারে একটা ফাঁকা বেঞ্চে, রুহিকে বসিয়ে দিয়ে জিয়ন একটু ফ্রেশ হবার ছুঁতোয়, রুহির চোখের আড়ালে হলো।একলা রুহি ঝিলের জলে রোদের ঝিলিমিলি কাটাকুটি খেলায় চোখ বসালো।রুদ্র তাপসও বুঝি মজার ছলে একলা,আনমনা রুহিকে একটু উষ্ণ করার খেলায় মাতলো।ঝিলের বুকে রোদের আদর-খেলা দেখতে দেখতে গলার স্টোলটা আনমনে খুলে,বেঞ্চের উপর রাখতে গিয়েই- একটা খচমচ শব্দে, ভাবের ঘোরটা কেটে গেল রুহির।স্টোল সরাতেই চকচক করে উঠলো সেলোফিন মোড়া গুলদস্তা আর তার ঠিক নীচ থেকে উঁকি দিলো একটা সুদৃশ্য ডায়েরির কিয়দংশ।ফুলগুলোতে হাত রাখতে গিয়েই রুহির চোখ পড়লো-তার পায়ের ঠিক কাছেই ঘাসের উপর পড়ে আছে একটা বড়োসড়ো বেলুন হৃদয়।অনাদরে পড়ে থাকা আদরের হৃদয়কে সযত্নে যেই বুকের কাছে চেপে ধরলো রুহি,অমনি সশব্দে অপ্রত্যাশিত ভাবে বিদীর্ণ হল বেলুন হৃদয়।রুহি আচমকা ঘটে যাওয়া ব্লাস্টে ডুকরে উঠে মুখ ঢাকলো হাতের পাতায়।আর ঠিক তখনই আবার সেই চেনা ভরসার হাত ওর হাতের আড়াল সরিয়ে,মুঠোবন্দি করলো রুহির কাঁপা কাঁপা হাত।রুহি অবাক হয়ে শুধু দেখলো তার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে আছে জিয়ন, আর আসেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বেশ কয়েকটা চকলেট হার্ট।রুহির বাচ্চা মন ফ্যান্টাসিতে ভাসতে ভালোবাসে,কিন্তু, সেই ফ্যান্টাসি যে বাস্তবে তাকে ধরা দেবে,এমনটা সে কক্ষণো ভাবেনি।বিস্ময়ের চমকে রুহি কথা হারিয়ে শুধু দেখে চলেছে জিয়নকে।গুলদস্তাকে বেঞ্চ থেকে সযত্নে উঠিয়ে রুহির কোল ভরে দিল জিয়ন।পাশে রাখা ডায়েরিটাও তুলে দিল রুহির অন্য হাতের তালুতে।
-"রুহি! ঘোরের চাদর ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে একবারটি দেখ,তোর এই নতুন জিয়ন,তোর মনের মতন হল কিনা!"
রুহির ঠোঁট তিরতির করে কেঁপে উঠলো অনেক কিছু বলার জন্য,কিন্তু ভাষা হারিয়ে এক ঝটকায় জিয়নকে জাপ্টে ধরলো শক্ত করে।মনের বাঁধ খুলে ততক্ষণে স্রোতস্বিনী কান্নারা ভিজিয়ে দিয়েছে জিয়নের শক্ত চওড়া কাঁধ।আর কানের কাছে একটা অভিমানী ঠোঁট বলে চলেছে.......
-"নিকুচি করেছি রেজোলিউশনের।যে রেজোলিউশনে দূরত্ব বাড়ায়,কষ্টের নুড়ি জমিয়ে দেয় বুকের বাঁ-পাশে,যে রেজোলিউশন ক্যাবলাকান্তের দন্ত বিকশিত হাসি কেড়ে নেয়,সে রেজোলিউশনের ভেন্টিলেশনেই থাকা ভালো।আর কক্ষনো যদি এমন রেজোলিউশনের কথা মুখে আনিস!তবে ভালো হবে না বলে দিলাম।"
"-কি হবে শুনি! বিপদ যদি আগে থেকে ঘন্টা বাজিয়ে সংকেত দেয়,তবে না হয় বর্ম পরেই রণক্ষেত্রে নামবো"।
চওড়া হাসি ঠোঁটে সাজিয়ে নিয়ে জিয়ন বলে উঠলো।
-"তবে রে!ইয়ার্কি হচ্ছে!আজ তোরই একদিন কি আমারই........ "
হঠাতই ঝড় ওঠার পুর্বাভাস দিয়ে,থমথমে নীরবতার বুক চিরে বেরিয়ে এলো একটা মৃদু চকাস শব্দ।ঘাসের বুকে গুলদস্তাও লেপ্টে থাকলো আদরে আর তার ঠিক পাশেই খোলা ডায়েরির বুকে কিছু কালিমাখা শব্দের উপর দোল খেয়ে গেল একজোড়া ঝুমকো কানের দুল......
তোর জন্য গ্ল্যাডিওলাস,বাদের খাতায় গোলাপ ফুল
ডেইজি আছে অপেক্ষাতে,ডায়েরি ভাঁজে কানের দুল
বেলুন বুকে চকলেটি হার্ট,আর কি দেবো বল!
দীঘল চোখে মানায় না যে হিরের কুচি-জল
ঝগড়া হলে করতে পারি কান ধরে উঠ-বোস
নুইয়ে মাথা করবো স্বীকার,সবটা আমার দোষ
লুকিয়ে কাঁদিস,রাগও দেখাস,পুষিস অভিমান!
বুকের ভেতর রুহির ডেরা,রামধনু আসমান।
তোকেই পড়ি,তোকেই লিখি,উপন্যাস বা কাব্য
বারণ থাকুক উপেক্ষাতে,তোকেই শুধু ভাববো।।
---------মধুরেণ সমাপয়েৎ-------
© সেক আসাদ আহমেদ
সম্পাদক, উপকণ্ঠ
খুব সুন্দর হয়েছে । সুন্দর আয়োজন ।
উত্তরমুছুন