শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০

উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 10/10/2020

  উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 10/10/2020
 Upokontha sahitya patrika Web Megazine- 10/10/2020 
Upokontha sahitya patrika
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা-10/10/2020




👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇

মনের খবর
         রঞ্জনা রায়

নিষেধ গুলো জমিয়ে রাখি
খিল তোলা এক বন্ধ ঘরে
ওড়ার নেশায় মনের রাখি
পরিয়ে দিলাম নদীর চরে।
লক্ষ টাকার হিরের কলস
যখের ধন মায়ার খোলস
ছাড়বো সব পথের খোঁজে
বিদায় বাঁশি উঠছে বেজে।
একলা দুপুর রোদের ঢেউ
মনের খবর রাখে না কেউ
শরীর জুড়ে হিমেল বাতাস
গোধুলি মেঘ স্বপ্নে উদাস।



কবিতা
প্রথম প্রেম
           অনাদি মুখার্জি

তুমি আমার প্রথম প্রেম প্রথম ভালোবাসা,
তোমার সাথে থাকবো সারা জীবন এই আমার আশা !
প্রথম দেখাতে তুমি আমার হাতে দিয়েছিলে হাত ,
সেই ছোঁয়া পেয়ে ঘুমানি সারা রাত !
জানতাম না আমি তখন  প্রেম কাকে বলে ,
তুমি আমার সাথে খেলতে সারা বিকেল জুড়ে !
তোমার ঐ মিষ্টি হাসি দেখতাম আমি যখন ,
আমার গালে হাত বুলিয়ে কি যেন বলতে তখন !
তোমার চোখের দিকে তাকালে কাঁপতো আমার বুক ,
আমার বুকের মধ্যেই মাথা রাখতে যখন তুমি ,
তোমার গালে অজান্তেই হাত বুলাতাম আমি !
হঠাৎ সেই দিনে বৃষ্টি দিনে আমার কাছে এলে ,
আমার দিকে তাকিয়ে তুমি মোর ঠৌটৈ চুমু এঁকে দিলে !
তুমি আমার প্রথম প্রেম প্রথম ভালো বাসা ,
তুমি আমার জীবনের বেঁচে থাকার আশা !
তোমার ভালো বাসায় নেই কোনো ভুল ,
তোমার মন যে  নিষ্পাপ গোলাপ ফুল !
সেই দিন আমি বুঝলাম প্রেম কি অনুভূতি
তুমি পাশে না থাকলে  আজো পাই মনে আশে না শান্তি !
সারাজীবন মনে রেখো আমার তোমার সেই প্রেমের স্মৃতি ,
তাই তোমাকে পেয়ে আজো ও আমি সারাজীবন সুখি!




টুকরো ছবিতা -১২
            ডাঃ তারক মজুমদার

শিরদাঁড়া বেয়ে নামছে যত
কাপুরুষতা রাশি রাশি
উদ্বিগ্নতা বিছিয়েছে জাল
তবু তোকেই ভালোবাসি।


অণুগল্প 
      হাতেখড়ি
                ডঃ রমলা মুখার্জী

ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলে পড়ুয়া দশ বছরের মৌ তার মাকে প্রশ্ন করে, "কি বই কিনলে মাম্মী?"
সুজাতা বলে, "কিনিনি রে, আজ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ঐ যে দ্বিশতবর্ষের অনুষ্ঠানটায় গিয়েছিলাম না, ওখানেই দিয়েছে। এটা বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ। ঠিক দুশো বছর আগে এই মহামানব বিদ্যাসাগর বাংলাভাষা, বাঙালির পড়াশোনা, মেয়েদের  উন্নতি, বিধবাদের বিয়ে, বাল্য-বিবাহ রোধ এসবের জন্য জীবন-পণ করে লড়েছিলেন। বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম যে এই বইতেই আমার প্রথম বাংলা অক্ষর পরিচয়, বাংলাকে প্রথম চেনাশোনা হয়েছিল। তুই তো বাঙালি হয়ে একবর্ণও বাংলা লিখতে দূরে থাক, পড়তেও পারিস না।"
-সেটা কি আমার দোষ? তুমিই তো দায়ী, ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি তো করালেই, আবার সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিন্দি রাখলে। ড্যাড তো বাংলা মিডিয়ামেরই পক্ষপাতি ছিল।"
-ঠিক আছে তোকে রোজ একটু সময় করে প্রথমে "প্রথম ভাগ", তারপর "দ্বিতীয় ভাগ", "কথামালা" এসব পড়াবো।
- আর ঐ উইডো ম্যারেজ, আর্লি ম্যারেজ ঐ গল্পগুলো বলবে না। বাবা বলছিলো উনি নাকি পঁয়ত্রিশটা গার্লস স্কুল করেছেন বেঙ্গলে, আরও অনেক কিছু করেছেন, সব গল্প কিন্তু বলা চাই। এত বড় গ্রেট ম্যান, কিন্তু কিছুই জানি না। এখন তো এনাফ টাইম, তোমার আমার দুজনেরই তো স্কুল নেই।
-বলবো তো নিশ্চয়ই, তবে তুই বাংলা ভালো করে শিখে নে, বড় হলে ওনার "শকুন্তলা", "ভ্রান্তিবিলাস" এইসব অনুবাদ সাহিত্যগুলোও পড়তে পারবি। কি সুন্দর সব অনুবাদ, ঠিক মনে হবে যেন মৌলিক রচনা!
-হিন্দি "বেতালপচ্চিশি" অবলম্বনে কি যেন বই লিখেছিলেন ড্যাড বলছিলো?
-হ্যাঁ, "বেতাল পঞ্চবিংশতি"। তোকে বিদ্যাসাগরেরই শুধু নয়, আরও সব বাঙালি লেখকের অনেক বই কিনে দেবো। তোর বাবা ঠিকই বলে যে শেকড়কে না জানলে শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। নে এখন তো তোর হাতেখড়িটা সেরে ফেলি।"
- সেটা কি গো মা? এই দেখ তুমি ড্যাড না বলে কিন্তু বাবাকে বাবা বলে ফেললে।
-তুই বাবাই বলিস, আমার ব্যাগে দেখ একটা প্যাকেট আছে, নিয়ে আয়।
-এগুলো কি গো মা? আমি কিন্তু তোমাকে মা বলেই ডাকবো, দেখছো না সবাই মা দুর্গা বলে, তুমিই তো আমার মা দুর্গা।
-বেশ বেশ ঠিক আছে। এই দেখ না, এটা হল স্লেট আর এই হল স্লেট পেন্সিল।
-কি হবে মা এসব দিয়ে? ঐ যে হাতেখড়ি না কি যেন বললে তাই হবে?
- হ্যাঁ, আমি এই স্লেটে "অ" লিখে দেবো, তারপর তোর হাত ধরে বোলানো করাবো, তাকেই বলে হাতেখড়ি।
মৌকে বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষের শুভক্ষণে বাংলা বর্ণে হাতেখড়ি দিল সুজাতা। একটু দেরি হলেও সুজাতার যে চৈতন্য হয়েছে সেটাই অভাগিনী বাংলা ভাষার অনেক ভাগ্যি। সবাইকার চৈতন্যোদয় হলে তবেই বাংলা বাঁচবে।





প্রবন্ধ

ঐতিহাসিক চরিত্র, সাহিত্য ও জীবনে প্রভাব
         অগ্নিমিত্র

   ঐতিহাসিক চরিত্রেরা আমাদের সবার খুব প্রিয় । তারা আমাদের সাহিত্য সৃষ্টির অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেন। অনেক কিছু লেখাও যায় তাঁদের জীবন বা বহুমুখী কর্মকাণ্ড নিয়ে । যেমন শিবাজী, রাজসিংহ, মানিকলাল, ঔরঙ্গজেব, , সিরাজউদ্দৌলা, জোব চার্ণক, রানী রাসমণি ও মথুরবাবু প্রমুখ ।
  আবার এদের হঠকারী সিদ্ধান্ত বা ভুল কাজগুলি থেকে আমাদের শিক্ষাও নেওয়া উচিত। তবে আমরা সাধারণত তা করি না। পাঠ্যবইয়ের বা গল্পের বইয়ের পাতাতেই তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকেন। আর আমরা কলমেই তাঁদের উদ্দেশ্যে সমালোচনা বা প্রশংসার ঝড় তুলি। আমাদের নিজস্ব জীবনে তাঁদের করা ভালো কাজগুলো বা ভুলগুলো থেকে কিছু শিখি না। যদিও শেখা দরকার ছিলো, কারণ ইতিহাস বারবার নিজের পুনরাবৃত্তিই ঘটিয়ে থাকে! এটি এক সর্বজনবিদিত সত্য ।। ..





সোনার প্রশ্ন
            বিপ্লব গোস্বামী

টিভি দেখে ছোট্ট সোনা
প্রশ্ন করে মাকে,
বাক্সের ভিতর মানুষ মাগো
কেমন করে থাকে ?

শুধু শুধু মানুষ নয়
থাকে পশু পাখি,
সবগুলো তো জ‍্যান্ত দেখি
করে ডাকা ডাকি।

এসবকে বাক্সের ভিতর
কে দিয়েছে ভরে ?
বাক্সের ভিতর খারব মাগো
পায় কেমন করে ?

ছোট্ট বাক্সে কেমনে চলে
হরেক রকম গাড়ি,
কেমন করে দাঁড়িয়ে আছে
মস্ত দালান বাড়ি ?





দুটিই পুরুষ লাইলি মজনু
         জাহাঙ্গীর দেওয়ান

এক বর্ষণ উৎসেই অবতারণা
      একফোঁটা পানির দুইটি বিন্দু।
একই স্রোতস্বিনীর দুইটি ঝর্ণা
      এই গুলিই গিয়ে ভরাবে সিন্ধু।

যুদ্ধগানের বাজনায় দু'টি তাল
      মৃত্যুখেয়ালী গানেই দুইটি সুর।
লড়াকু সেনানির তরবারি ঢাল
      দর্শক আসনটা থাকে বহু দূর।

এক বিশেষ পাখির দু'টি পাখা
      এক বিশেষ সাপের দুটি ফণা।
এক বিশাল বৃক্ষের দু'টি শাখা
      এক-ই নক্ষত্রবিচ্যূত দুটি কণা।

একটা গাছেই দু' রকমের ফুল
      দু'টি শাখায় দুই রকমের ফল।
তফাৎ ফুল ফলে-একটাই মূল
      গাছটির দেখতে জনতার ঢল।

কতগুলি বসন্ত খুঁজে রাতদিন
      একই ঘরানাতে মজনু লাইলী।
একঘা বেতেই লাগে দু'জনের
      এহেন প্রেমিকে প্রেমে পাগলি।

সমাজেই ভালোভাবে খুঁজবে
      এক দু'টি নয়- শতফুল পাবে।
ফুলদানি-ই ফুলগুলি গুঁজবে
      জাহাঙ্গীর-আজিজুলও যাবে‌।





ও চিল!!
           উমর ফারুক

ও চিল!!
তোমার চোখের স্বপ্নগুলো রঙিন
নির্মল আনন্দ বয়ে উড় আকাশে 
সবুজ নীল হলুদ সভ্যতা ঘুরো
ঘুড়ি হয়ে...!
বাতাসের বাঁশিতে জেগে ওঠো.
ভোরের শুভ্র সমগ্র শরীরে মেখে।

ও চিল!!
তোমার কাঁদনে সবাই কাদে 
আমার কাদনে পৃথিবীর মাটি ভিজে
অশ্রুর লোনা জলে ভিজে যায় বুক
মুছে যায় জীবনের হাজার সুখ
বেদনায় বেদনায় মৃত্যু দানা বাঁধে!!

ও চিল!!
তোমার চোখের স্বপ্নগুলো রঙিন
জীবনের সাত রঙে রাঙিয়ে তুলেছ সব!
কিন্তু শকুন ও শেয়ালের কাছে
আমার ও তোমার বন্ধুত্ব দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে
সব নিশানার শেষ দেখা মাত্র







আজকের অঞ্জলি আমার
      অঞ্জলি দে নন্দী, মম

আমার হাতে শাণিত খড়্গ।
অসুর-শোণিত আমার অর্ঘ্য।
কলুষিত মর্তকে বানাবো পবিত্র স্বর্গ।
আমি আজকের নারী।
সহ্যের সীমা আজ হয়েছে শেষ।
ধৈর্যের বাঁধ আজ ভেঙেছে।
চক্ষু আজ রক্ত রঙে রেঙেছে।
আর দব না অশ্রু অঞ্জলি।
সব দ্বিধা ছাড়ি
এবার করব নারী-খাদক বলী।
রক্ষা করব আপন আভ্রু-বেশ।
মুঠোয় ধরে দানবের কেশ
ছিন্ন করব শয়তানী-মাথা।
ধর্ষকের মৃত দেহে ফেলবো
আমার পায়ের পাতা।
নৃশংসের কাটা মুণ্ডু নিয়ে ফুটবল খেলবো।
হ্যাঁ, শ্রী কালি দেবী আমার মাতা।




জাগো নারী
     সুশান্ত মজুমদার

যুগে যুগেই তুমি লাঞ্ছিতা কামনা লালসায় নিমজ্জিত,
ধর্মীয় পুরাণ কল্প কাহিনীতে দৃষ্টান্ত  রহিয়াছে শতশত।
প্রেম নিবেদনে নারীর কিবা দোষ ছিলো হায়!
শূর্পণখা নারী বলিয়া কি নাক-চুল কাটা যায়?
পঞ্চ স্বামীর ভোগ‍্যা হইয়াও পাঞ্চালী পাশার স্বীকার,
অবলা তাই দেবী হইতে দাসীতে সহজাত রূপান্তর।
দেবরাজ ইন্দ্রের ছলনাময় কামনার রোষে,
সতী নারী অহল‍্যা পাষাণ হইল নির্দোষে।
অন্তর্যামী রাঘব জানিয়া বুঝিয়া করিয়া সমীক্ষা,
তবুও তো সীতা দেবীর করিলেন অগ্নি পরীক্ষা।
বাল‍্য-বিবাহ  সতীদাহ  সকল কুলীন প্রথা,
পৌরুষ আধিপত‍্যের ধ্বজা চিরকাল নাড়িল মাথা।
সুশীল শিক্ষায় বদলাইয়া সমাজ পাল্টিল মানবিকতা,
নীতির নীতিমালায় বদ্ধ হইল আধুনিক সামাজিকতা।
থামিল না তবু নারীর লাঞ্ছনা বাড়িল না  সন্মান,
পণপ্রথা যৌনাচারে বিধ্বস্ত বাড়িছে ভ্রূণের হনন !
বাড়িছে কন‍্যা পিত্রালয়ে গচ্ছিত অপরের ধন,
পুত্রের আনন্দ যজ্ঞে কন‍্যার হইতেছে বলিদান।
কামনার কদর্য লালসার বিকার ঘটিছে আকছার,
শিশু  পৌঢ়া বৃদ্ধা  পাইলনা ছাড় যুবতী কোন ছার?
সময় আসিয়াছে জাগো নারী মার খাইবে কতকাল ?
তুলিয়া লও হস্তে খড়্গ মুছি নয়নের জল।
বুকের দুধ খাইয়া   তব বুকেই মারিছে আঁচড়,
নিজ হস্তে করিতে দমন দশভুজা রূপ ধর !
পুঁথির শিক্ষা হইল অনেক সমাজ হইলনা আগুয়ান,
মনুষ‍্যত্বের শিক্ষা পাইলে মানব  বাড়িবে সমাজের মান।




কবিতা
        নারীর মর্যাদা
                আব্দুল রাহাজ

প্রত্যেক নারী এক মহা মূল্যবান সমাজ তথা দেশের কাছে।
ওরাও তো আগামীতে দেশ গড়ার ভবিষ্যৎ
তবে কেন তাদের উপর অত্যাচার
ওরাও তো এই সমাজের অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই
কেন তবে তাদের উপর অত্যাচার।
এসো হে নওজোয়ান এসো হে সকল নারী আমরা সবাই মিলে একসাথে প্রতিবাদ করি ওই সব জানোয়ারদের বিরুদ্ধে।
মোরা মিলেমিশে আবার নতুন করে গড়ে তুলি নতুন সমাজ নতুন দেশ
পাপী ব্যভিচার দূর হবে একদিন যদি মোরা একসাথে হই।
মর্যাদা দিন নারীদের
তারাও তো মানুষ তাদেরও তো সমাজে অধিকার আছে
তাদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা সকলেই প্রতিবাদ করি
সবাই এগিয়ে আসুন নারীদের মর্যাদা করি সবে মিলে।





       জঙ্গলের রাজত্ব
                   হামিদুল ইসলাম
                       
রাজ‍্যের নাম পশ্চিম বঙ্গ
জেলা মেদিনীপুর
ঘটনা শালবনীর তমাল নদী
নয়দিন পরে তমাল নদীর আটকে পড়া স্রোতে
এক আদিবাসী মহিলার নগ্নদেহ উদ্ধার
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ধর্ষণ আর শারীরিক অত‍্যাচার করেই
খুন করা হয়েছে আদিবাসী মহিলাকে  ।।

এছাড়া ঘাটাল, ডেবরায় আরো  একজন নাবালিকা  ও একজন মধ‍্যবয়সী মহিলার নগ্নদেহ হয়েছে উদ্ধার  ।।

এ কোন রাজত্বে আমাদের বাস
এখানে নারীর নেই কোনো সম্মান
নেই কোনো অধিকার  ।।

শালবনীর মহিলা তিন সন্তানের জননী
শালবনের পাতা কুড়িয়ে
হাটে হাটে বিক্রি করে বহুকষ্টে সংসার চালাতো ও
দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার
তার উপর এই অকথ‍্য নির্যাতন
জঙ্গলের রাজত্বে বাস
জঙ্গলমহল
হাসি ফুটছে এখন
দেখে নিন এ হাসি না কান্না
এর জবাব দেবে কে  ?
রাষ্ট্রশক্তি
না কি ইতিহাস  ?






সবাই পড়ো
        মোঃআলিউল হক

পড়ো
সবাই পড়ো
নিজেকে তৈরি করো

চাকুরির কথা ভেবো না
শিক্ষা কেবল শিক্ষক হবার জন্য
অথবা চাকুরি করার জন্য নয়,
মস্ত  ধোকার দিকে ঠেলে দিও না নিজেকে!

বিদ্যা শিক্ষা করা সবার অবশ্য কর্তব্য।

অক্ষর জ্ঞানের চর্চা যখন আরম্ভ হয়
তখন এ হীন  ধারণা কারও মনেই আসেনি।

মনুষ্য বুদ্ধি বিকাশের জন্য শিক্ষা অপরিহার্য।
বর্তমানে  শিক্ষা ব্যতীত জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন
শিক্ষাই মানুষকে সব এনে দিয়েছে
শিক্ষা মানুষকে মহান করেছে।

একবার দুনিয়ার দিকে তাকাও
যে দেশ যত উন্নত ;জনতা তত শিক্ষিত।

একদিন এমন আসবে -
কাজে লাগবেনা জমি বাড়ি
বিদ্যা বুদ্ধির জোরেই মানুষ
চাঁদে মঙ্গলে দেবে পাড়ি।






মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা
(১)
ধস

ধস
নামছে দেখি
একটু একটু করে
রোজ নিজের বুকের ভেতর
এই বুঝি হবে সলিল সমাধি
মুছে যাবে নারীজন্মের আরো এক ইহকাল।

আমিতো বিশ্বাস করিনি কখনো কোনদিন পরকাল
বাঁচতে চেয়েছি নিয়ে নিজের আধিব‍্যাধি
সাজাতে চেয়েছি নিজের ঘর
নরককীটের  কবলে পড়ে
নারীজন্মে লিখি
লালারস।

(২)

একা

দেখছি
আজ আমি
বড় বেশি একা
হাত ধরে টানার মত
সবাই পাশ থেকে গেছে সরে
এরাই একদিন ছিল ঘরে ভিড় করে।

একা শুধু বেঁচে থাকি মরমে মরে
যারা আপনের অভিনয় গেছে করে
তারা স্বার্থে ছিল  রত
মুখ মুখোশে ঢাকা
শুধু ইতরামি
শুনছি।





বিষাক্ত সমাজ
        সাফরিদ সেখ

নর পিশাচের হিংস্র থাবা
আগুনের মতো এগিয়ে আসে।
রক্ত লোলুপ অমানুষ আজ
ছিঁড়ে ফেলে ভবিষ্যতের স্বপ্ন গুলো।

আর কত স্বপ্নকে এরা মাড়িয়ে যাবে।
উত্তর আজও মেলে না।শুধুই হতাশা এক......।
যে মেয়ে আজ জন্মালো সে তো অবলা।
আমার কি উচিত ছিল না তাঁকে বাঁচতে দেয়া?

যত দূরে দৃষ্টি যায় শুধুই অন্ধকার।
দুর্বৃত্তরা আজ ঢেকেছে নির্মল আকাশকে।
রক্ত হোলির নগ্ন খেলায় মেতেছে তারা।
আদিগান্ত কেবলই বিষাক্ত ধুঁয়া ওড়ে।





সময়ের প্রতিজ্ঞা
           গোপাল বিশ্বাস

দিবা রাত্র ছুটছে সময়
গড়ছে মহা কাল
মানুষ কি কভু পায়
সময়ের নাগাল ?

নদী ছুটছে মহা সমুদ্রে
উড়ে যায় পাখি
সময়ের কাজ সময়ে না করলে
পড়বে জীবন ফাঁকি  l

ভুল গুলো শোধরে নেবো
করবো না আর ভুল
তবেই আমার আশার বৃক্ষে
ফুটবে সোনার ফুল  l

প্রতিবাদী হবো মোরা
সত্য কথা বলবো
ন্যায়ের ভিটে দাঁড়িয়েই
দেশটাকে  গড়বো  l





কবিতা -   
     সময়ের  সহজপাঠ
              পিনাকী মুখার্জী
   
                ঝরাফুল  গুলো ঝরে
             দিয়ে গেছে সময়ের মূল্য !!
            ওদের ও পৃথিবী ততটাই
               ছিল আমাদেরই তুল্য !!

           থমকে গেছে পৃথিবীটা আজ
                 দিন রাত  একটাই  !!
           যুদ্ধের মাঝে হারিয়ে গিয়েছে
                   চেনা সে ছন্দটাই  !!

           ঈশ্বর আমি আমার হাতেই
                   সকল  নিয়ন্ত্রণ !!
             উচিৎ  শিক্ষা সময় সময়
                   ওটাই  বিবর্তন  !!

              চেনা ছন্দে ফেরার স্বপ্ন
                  সময় নদীর তটে !!
            টিকে থাকা আজ অমূল্য
            তাই  জীবনের খেয়াঘাটে !!







  || কবিতার রূপকল্প : পর্ব : ১৯ ||

রবীন্দ্র পরবর্তীকাল  এবং আধুনিক কবিতার      
           আন্দোলন

            ( চতুর্থ অংশ )
             সৌম্য ঘোষ


            এই পর্বে কবিতার রূপকল্প আলোচনা করার পূর্বে সেই সময়কার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করা জরুরি । তৎকালীন বিশ্ব পরিস্থিতি এবং অবশ্যই আমাদের দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইতিহাস অনুধাবন না করলে , কবিতার আবহমানতাকে ধরা সম্ভব না ।
          ১৯৩৬ সালে শুরু হয় স্পেনের গৃহযুদ্ধ, ১৯৩৭ সালে জাপান আক্রমণ করে চীন দেশ । অতঃপর শুরু হয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ । ১৯৪১ সালে হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে । সারা বিশ্বব্যাপী ফ্যাসিবাদ বিরোধী মানুষের ফ্রন্ট গঠিত হয় । আমাদের দেশের ভিতরেও পরিস্থিতি ছিল অগ্নিগর্ভ । চল্লিশের দশকে সারা ভারতবর্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ ( অখন্ড বাংলা) উত্তাল হয়ে ওঠে । রাজনৈতিক বিক্ষোভ আলোড়িত করে সমস্ত দেশকে। প্রতিরোধ রচনায়  একত্র হয়ে ছিলেন রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে সংস্কৃতিকর্মীরাও । এই দশকে গান্ধীজীর ভারতছাড়ো আন্দোলন, আজাদ হিন্দ ফৌজের মুক্তি আন্দোলন, নৌসেনার বিদ্রোহ, 'ডাক ও তার' কর্মীদের হরতাল  । চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছানো দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম । সেই সময় ইংরেজ শাসকবর্গের চরম ঔদাসীন্যে ও হৃদয়হীনতা পঞ্চাশের মহামন্বন্তর  এবং ইংরেজ শাসকদের প্ররোচনায় হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা । এই শতকের শেষে দ্বিখণ্ডিত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা এলো । পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু স্রোত এসে আছড়ে পড়লো এই দেশে।
                    সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার তাঁর আত্মজীবনীতে , তৎকালীন সময়ের ভয়াবহতা কিছুটা বর্ণনা করেছেন । স্বাধীনতা লাভের পর হিন্দু-মুসলিম-শিখ-পাঠানদের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী ভয়ঙ্কর সংঘাত হয়েছিল, তাতে কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন হানি হয় । প্রাণ রক্ষার প্রবল আকাঙ্ক্ষা সৃষ্ট বাস্তুত্যাগে জনতার বিশাল কাফেলাকে তিনি মানুষের হিমবাহ রূপে বর্ণনা করেছেন ।
                    সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে রাষ্ট্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সেই সময় কম্যুনিস্ট পার্টি বিপ্লবের  সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শুরু হয় তেভাগা আন্দোলন। এই সমগ্র পরিস্থিতি চল্লিশ দশকের বাংলা কবিতাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলো । শিল্পকলার সাহিত্যের ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রণকারী ভূমিকা গ্রহণ করার চেষ্টা করে । এর সমর্থক ছিলেন ফরাসি কবি লুই
আরাগঁ  ।  শিল্প-কলা-সাহিত্যে রাজনৈতিক পার্টির
হস্তক্ষেপ  বুদ্ধদেব বসু , বিষ্ণু দে, অরুণ মিত্র মেনে নেননি।  এই সময়ের অভিঘাতে বদলে যায় বিষ্ণু  দের কবিতা , বুদ্ধদেব বসুর মতো কলাকৈবল্যবাদী কবিও লিখলেন :
"বৃহন্নলা, ছিন্ন করো ছদ্মবেশ ।"

                          প্রগতিপন্থী ।
                          প্রগতিপন্থী এই কবি গোষ্ঠীর মধ্যে অগ্রণী ছিলেন সমর সেন (১৯১৬--৮৭) এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-- ২০০৩) । কবি সমর সেন তাঁর আঠারো বছর বয়স থেকে ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত মাত্র বারো বছর কবিতা লিখেছিলেন। প্রথম দিকে তিনি আধুনিক সভ্যতার বন্ধ্যাত্ব ও শূন্যতার কবি ছিলেন।
" শ্রান্ত হয়ে এলো অগণিত কত প্রহরের ক্রন্দন
    তবু আমার রক্তে খালি তোমার সুর বাজে ।"
তাঁর কবিতা পড়তে পড়তে মনে পড়ে এলিয়টের পদগুচ্ছ " waste and void " . তাঁর কবিতার ছন্দে আমরা পাই , " চীনের গণিকা, মাতালের স্খলিত চিৎকার, লম্পটের পদধ্বনি, রেস্তোহীন
গুলিখোর , চিৎপুরের ঘাটের নারীদলের কথা । বাংলা গদ্যছন্দে তিনি অনবদ্য। তাঁর কবিতা নির্মেদ
নির্ভার , সরল ভাষা , কিন্তু একেবারে স্বকীয় । তিনি মনে করতেন, বিস্তীর্ণ নগরে যে আধুনিক সভ্যতার প্রতীক তার অবক্ষয় ও আসন্ন বিনাশ অবশ্যম্ভাবী । লিখলেন, " আমাদের মৃত্যু হবে পান্ডুর মত । " পান্ডুর অসংযত যৌনাচার এবং ধৃতরাষ্ট্রের সজ্ঞান অন্ধতা ।

"তাই ঘরে বসে সর্বনাশের সমস্ত ইতিহাস
  অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মতো বিচলিত শুনি,
  আর ব্যর্থ বিলাপের বিকারে বলি :
   আমাদের মুক্তি নেই , আমাদের জয়াশা নেই ।"

তাঁর চিত্রকল্প গুলি অসামান্য :

----- " চাঁদ ওঠে জ্বলন্ত খড়্গের মত"।
-----  "এখানে সন্ধ্যা নামল শীতের শকুনের মতো"।
-----   "বন্য মহিষের আক্রোশে জগদ্দল মেঘ
          ঘন ঘন ডাকে ।"
-----  "উজ্জ্বল, ক্ষুধিত জাগুয়ার যেন
          এপ্রিলের বসন্ত আজ ।"

তিনি মনে করতেন, অনুর্বর সভ্যতার ধ্বংস অনিবার্য, এবং তার ধ্বংসস্তূপ থেকে জন্ম নেবে নতুন সভ্যতা ।
"কালের গলিত গর্ভ থেকে বিপ্লবের ধাত্রী
   যুগে যুগে নতুন জন্ম আনে ।"
সাহিত্য সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক মতবাদের উগ্ৰ হস্তক্ষেপ তিনি পরবর্তীকালে মেনে নিতে পারছিলেন না । বরং তাঁর মনে হচ্ছিল , ব্যক্তিগত সততা বজায় রাখার মধ্য দিয়েই কবি হতে পারেন প্রগতিশীল ।  ফলে নিজের রাজনৈতিক দলের সহকর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন । ব্যথিত কবি স্তব্ধ হয়ে গেলেন :
          " শুনি না আর সমুদ্রের গান
       থেমেছে রক্তে ট্রামের বাসের বেতাল স্পন্দন
      ভুলে গেছি সাঁওতাল পরগনার লালমাটি...
    রোমান্টিক ব্যাধি আর রূপান্তরিত হয় কবিতায় "

                   সুভাষ মুখোপাধ্যায়
               ----------------------------------
                  সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর কবিতার বই "পদাতিক" নিয়ে আবির্ভূত হয়ে সাড়া ফেলে দিলেন। আর তিনি প্রথম থেকেই রাজনীতিকে করে নিলেন কবিতার বিষয়। সেই সময় রাজনীতিকে কবিতার বিষয় করা নিয়ে বুদ্ধদেব বসুসহ অন্যান্যদের দ্বিধা ছিল, কিন্তু শৈল্য কুশলী সুভাষ পেয়েছিলেন অকুণ্ঠ অভ্যর্থনা । তাঁর এই সব কবিতায় ছিল ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারুণ্যের উদ্দীপনা ।
         "প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
           ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা ।"
চল্লিশ দশকে শুরু হলো কবিতার শেষ চরণে আশাবাদী সার কথা বলা। তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা  " মিছিলের মুখ ।"
          "বিস্রস্ত কয়েকটি কেশাগ্র
           আগুনের শিখার মত হাওয়ায় কম্পমান।
           তখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী সেই মুখ
            নিষ্কোষিত তরবারির মত .....।"
এই কবিতায় প্রেম ও রাজনীতির অনবদ্য একাত্মতা।
                       অমরুশতক , হাফেজ, চর্যাপদ, গাঁথাসপ্তশতী থেকে শুরু করে সারা জীবন অনেক কবির কবিতা তরজমা করেছেন । তবে সবচেয়ে ফলপ্রসূ হয়েছিলেন তুর্কি কবি নাজিম হিকমতের কবিতা অনুবাদ করে। এরপরই তিনি লিখলেন "ফুল ফুটুক " কবিতা গুচ্ছ । তাঁর জনপ্রিয় কবিতার স্তবক "ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত" । এই কবিতাগুচ্ছে আছে শহরতলীর চটকল কেন্দ্রিক বস্তি জীবনের সব চিত্রকল্প।একসময় যিনি ফুল খেলা নিয়ে বিদ্রুপ করেছিলেন তিনি পরবর্তীকালে সন্ধ্যামণি ফুল ফোটাবার কথা বললেন।   তাঁর " কাল মধুমাস" আত্মজৈবনিক কবিতা যেখানে ফিরে আসে হারানো সব স্মৃতি।
"পদাতিক কবি" সুভাষ মুখোপাধ্যায় আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে জীবনের কথা লিখে গেছেন। তিনি জানতেন, " নটেগাছ মুড়োলেও বীজ থেকে জন্ম দেবে মাটি ।"

       পদাতিক কবির স্মরনীয় কবিতা :

  " শতাব্দী লাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা;
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না –
পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা,
দুর্যোগে পথ হয়, হোক দুর্বোধ্য
চিনে নেবে যৌবন আত্মা।"

কবিতা -- ' বায়ে চলো ভাই , বায়ে চলো'

"বাঁয়ে চলো ভাই,
বাঁয়ে—
কালো রাত্রির বুক চিরে,
চলো
দুহাতে উপড়ে আনি
আমাদেরই লাল রক্তে রঙিন সকাল"।

               অরুণ মিত্র । কবি অরুণ মিত্র সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সমসাময়িক বটে, কিন্তু তিনি সুভাসের মত নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না । কবি হিসেবে তিনি একেবারেই স্বতন্ত্র। তিনি অনুভব করেছিলেন, শিল্পসাহিত্য সৃজন একক সাধনার বস্তু ।  ' প্রান্তরেখা' কবিতার পর , তাঁর লেখা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । এরপর তিনি ফ্রান্সে চলে যান । ফরাসি কবিতার সঙ্গে পরিচয় তাঁকে আপন পথে এগোতে আত্মবিশ্বাস যোগায় ।
ধ্যানলীন অরুণ মিত্রের কবিতা । স্বগতোক্তর  মত অন্তর্লীন কবিতা রচনা আদর্শ তিনি প্রধানত অর্জন করেছেন  স্যাঁ ঝন্ , পেরসে , পোল এলুয়ার  প্রভৃতির কাছ থেকে । তাঁর অসামান্য স্তবক--
" সমস্ত লাবণ্য শব্দেই ছেঁকে তোলা যাবে "
  " আমি বাক্য দিয়ে আমার প্রেম প্রমাণ করেছি"

             কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
            ________________________

                  ২০২০ সাল কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মশতবার্ষিকী । আজীবন আধুনিক বাংলা কবিতায় তিনি যে কত প্রাসঙ্গিক, আজও তা তাঁর কবিতা পড়লেই বোঝা যায় । তাঁর সমস্ত উচ্চারণ, শব্দগুলির জন্ম যেন উঁচু  ঘাড় , ফোলানো শিরা , আর উঁচু পর্দা থেকে । কিন্তু তা বিশুদ্ধ কাব্যগুনে পুষ্ট । সমস্ত অসাম্যের বিরুদ্ধে, সমস্ত লাঞ্ছনার বিপরীতে তাঁর প্রচন্ড রণহুঙ্কার ধ্বনিত হয় । দেশভাগ, পার্টি ভাগ, খাদ্য আন্দোলন থেকে শুরু করে নকশালবাড়ি আন্দোলন, জরুরি অবস্থা, বন্দী মুক্তি আন্দোলন -------- তাঁর লড়াই,  তাঁর সংগ্রাম। পাশাপাশি মধ্যবিত্ত মন- মেজাজ- মানসিকতাকে চাবকে শাসনের পর বিধ্বস্ত দেহে তাঁর হৃদয় থেকে উৎসারিত রক্তমাখা শব্দ---- একটি নির্মল প্রেমের কবিতা ।
                    
                         ঢাকাই টানে বাঙাল ভাষায় কথা বলতেন। কবিতা মাথায় এলে হাতের কাছে যা পেতেন------ তাতেই লিখে রাখতেন। এই ভাবেই একদিন লিখলেন কালজয়ী কবিতা :

"মাটি তো আগুনের মতো হবেই
যদি তুমি ফসল ফলাতে না জানো
যদি তুমি বৃষ্টি আনার মন্ত্র ভুলে যাও
তোমার স্বদেশ তাহলে মরুভূমি ।
যে মানুষ গান গাইতে জানে না
যখন প্রলয় আসে, সে বোবা ও অন্ধ হয়ে যায়।"

সরল সাদাসিধে জীবনযাপনে, নিজের আদর্শ, স্বাধীনতা ও সততার প্রতি দায়বদ্ধতায় অন্য কারো সঙ্গে যাঁর মেলেনা । তাই তাঁকে রাখা হয় , মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঋত্বিক ঘটকের পাশে। দেশভাগ তাঁকে আলোড়িত করেছিলো :

"আমার জন্মভূমিকে এখন আমি স্বদেশ বলতে পারিনা ।"

মুখোশ পরা মানুষ দেখতে দেখতে ক্লান্ত কবি লিখলেন :
"আসলে মুখোশ মোটেই বাইরের নয়। বরং ভিতরের
যাকে আমরা সত্তিকারের মুখ ভাবি
তেমন কিছুই মানুষের নেই।"
তাঁর আত্মমর্যাদা বোধ ছিল প্রখর। বলতেন, "কবি যত শক্তিমান ই  হন , তাকে ভালো মানুষও হতে হবে ।" একজন প্রকৃত বামপন্থী কম্যুনিস্ট । তাঁর উচ্চারণ স্লোগান হয়েও কবিতা , সোচ্চার হয়ে ওঠা মন্ত্র ;  কবিতার মন্ত্র :

"অন্ন বাক্য, অন্ন প্রাণ
অন্নই  চেতনা
অন্ন ধ্বনি, অন্ন মন্ত্র ,অন্ন আরাধনা ।"
স্বদেশের প্রতি তাঁর গভীর মমতা ঝড়ে পড়তো :

"তোর কি কোন তুলনা হয়?
তুই ঘুমের মধ্যে জলভরা মেঘ,
জাগরণে জন্মভূমির মাটি ।"
    
                    সুকান্ত ভট্টাচার্য
                  --------------------------

                    দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ , মহামন্বন্তর , হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার রক্ত কলুষিত দিনগুলিতে যাত্রা শুরু করলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ( ১৯২৬--৪৭) ।  আত্মপরিচয় দিয়ে তিনি লিখলেন, "আমি এক দুর্ভিক্ষের কবি,/ প্রত্যহ দুঃস্বপ্ন দেখি, মৃত্যুর সুস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি ।" দেশ যখন সাম্রাজ্যবাদ- বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল, তখন সুকান্তর কবিতায় পেলাম পরাধীনতার বেদনা :

"এদেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম,
অবাক পৃথিবী! সেলাম, তোমাকে সেলাম।"
তাঁর দ্যুতিময় ছত্র :

"ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়;
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ।"

ইংরেজ কবি অডেনের "Night Mail" কবিতা থেকে বীজ এসে অঙ্কুরিত হলো সুকান্তর " রানার " ।

                     প্রগতি আন্দোলন প্রভাবিত আরো কয়েকজন কবি হলেন, বিমল চন্দ্র ঘোষ, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, সরোজ দত্ত, চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় এবং দিনেশ দাস । বিমল চন্দ্র ঘোষ প্রথমদিকে কবিতা লিখলেও পরের দিকে তিনি বিখ্যাত গান রচনা করেছিলেন । যেমন,  " উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা " ,  " ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস " । কবি জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র র কবিতায় বিষ্ণু দের প্রভাব স্পষ্ট । উত্তরকালে  বিখ্যাত  নকশালপন্থী নেতা কবি সরোজ দত্ত ।
                     চল্লিশের দশকের প্রথমার্ধে কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায় । তাঁর তিনটি কাব্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল।  চল্লিশ দশকের অন্যান্য স্বনামধন্য কবিরা হলেন ,  কিরণ শঙ্কর সেনগুপ্ত, মনীন্দ্র রায়, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, রাম বসু, অসীম রায় প্রভৃতি।  কবি কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত র  মমতাময় আত্মস্থতা :

  " অংকুর থেকে আস্তে আস্তে ফুল
     সময় লাগে
      বীজ থেকে আস্তে আস্তে ধান
      সময় লাগে.... ‌।"
এই কবিতার ব্যপ্তি ও  রেশ  চেতনায় গেঁথে যায়।

                  কবি মনীন্দ্র রায় দক্ষতার সঙ্গে কবিতা রচনা করেছেন । তাঁর কবিতার প্রধান বিষয় হল প্রবাহ কাল ।
" এই করতলে
   আয়ুর মতোই আমি কয়েকটি রেখায়
   বন্দি করে রেখেছি ত্রিকাল ।"

কি অসাধারণত্ব  !

                    কবি সিদ্ধেশ্বর সেন কবিতা লেখা শুরু করেন চল্লিশ দশকের কারফিউর রাতগুলিতে। তাঁর কবিতায় ভারতীয় ঐতিহ্য আত্মস্থ , শ্লোকের প্রতিধ্বনি । তিনি ধরতে চান কবিতায় চিরন্তন ধৈর্য :

" এই প্রাণময় গ্রহে , নৃত্যপর ঘুরণে, আহ্নিকে,
   মুক্তি চাই মানবতা , অবিচ্ছিন্ন সময়ের দিকে।"







©সেক আসাদ আহমেদ

   সম্পাদক ,উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা






1 টি মন্তব্য: