উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 09/10/2020
Upokontha sahitya patrika Web Megazine- 09/10/2020
Upokontha sahitya patrika
উপকণ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা
উপকণ্ঠ প্রাত্যহিক বিভাগউপকণ্ঠ প্রাত্যহিক ওয়েব ম্যাগাজিন- 09/10/2020
লিমেরিক কবিতা
শংকর হালদার
আজ বেতারে খবর শুনে গিন্নি রেগে আগুন
মদের সাথে ফাও আছে এক কেজি বেগুন ।
এমন খবর শুনে কানে
ডাণ্ডা দিয়ে বেতার ভাঙে,
রাগের চোটে বাপের বাড়ি তিন তিনটে ফাগুন।
টুকরো ছবিতা -১১
ডাঃ তারক মজুমদার
ভালো থাকার মন্ত্র যখন
করেছে রপ্ত মন
সুখ পাখির ডানায় আগুন
অস্তমিত যত পণ। ।
অনু কবিতা
চাষীর কথা
এমাজউদ্দিন সেখ
খাওয়ার জন্য বাঁচি না আমি ;
তোমাদের পাতে খাবার পৌঁছে দিতেই বাঁচি !
আমি প্রাণ ধারণের জন্য খাই , আমি চাষী l
কার স্বার্থে আমার বাঁচার অধিকার কেড়ে নাও তুমি ?
হে রাজা ; তোমার নীতিই আমার গলার ফাঁসি ll
কবিতাঃ
অলসতা
জুয়েল রূহানী
অলস সময় পার করে আর
কীই বা হবে বসে থেকে?
তার চে বরং খেলার মাঠে-
হাসি মনে যাবে ছুটে।
ঘরের দুয়ার বন্ধ রেখে-
কি আর হবে বসে থেকে?
এর চে বরং বটের ছাঁয়ায়
সময় কাটাও ছঁবি এঁকে।
অলস সময় পার না করে
সময় কাটাও কাজে,
কাজ না জানো, জানতে কভূ-
তুমি ঢাকবে না মুখ লাজে।
আমি এক
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
আমি এক যোদ্ধা
যুদ্ধ করতে করতেই জীবন শেষ
অসত্যের বিরুদ্ধে
অন্যায়ের বিরুদ্ধে
অমানবিকতার বিরুদ্ধে আমার দুর্দান্ত আন্দোলন
জিততে আমায় হবেই হবে
আসুন যারা আসতে চান এই আন্দোলনে
আমরা সবাই যোদ্ধা----
প্রশ্ন
রঞ্জনা রায়
মাগো প্রতিবছর শরতের এই চারটি দিনে
তুমি আসো আমাদের ভীষণ কাছাকাছি ,
খুশির মঙ্গল শঙ্খ বেজে ওঠে দশদিকে ।
শরত সাজিয়ে রাখে পদ্মের কলি
তোমার ওই রক্তিম চরণের প্রান্তে ।
মহালয়ার তর্পণের মন্ত্রে বেজে ওঠে আগমনী
দশমীর শেষ লগ্নে চলে যাও কৈলাস ভূমি ।
মাগো তোমারই তো প্রতিরূপ
আমাদের প্রতিটি ঘরে ঘরে –
তবু কেন এই দুর্গারা
চির অবহেলা অনাদরে মরে ?
লালসার অগ্নিতাপে শব হয়ে কেউ
পড়ে থাকে ধানক্ষেতের পাশে
কেউ বা জটিল গোলোক ধাঁধায় পাক খেয়ে
ভেসে যায় কুটিলতার গ্রাসে ।
অবিরাম চলে রক্তপাত শ্বাপদের বিষাক্ত থাবায়
পণ্যের দাবানলে ,
জীবনের ওঠাপড়া , জীবনের যন্ত্রণা
নীল হয়ে মিশে যায় সাগরের জলে ।
নারী খোঁজে মুক্তি , খোঁজে সম্মান
পুরুষের ছক কাটা পাশার দানে!
নিভে যায় আশার মোমবাতি অবিশ্রান্ত বর্ষণে।
একটু শান্তি একটু আলো
মাগো তুমি কি দেবে না একটা উদ্যত
কালসর্প এদের দুর্বল বিপন্ন হাতে ?
অসুর নিধনে এরা কি হবে না চণ্ডী
শরতের স্বচ্ছ্ব স্বর্ণালী প্রাতে??
মিনতি গোস্বামীর দুটি কবিতা
(১)
করো তর্পণ
করো
দুর্গতিনাশিনীর তর্পণ
দশহাতেতে অস্ত্র তার
ভয় কেনগো মর্ত্য নারীর
অসুর যত বিনাশ হলে পূজা
ফিরবে আবার কৈলাসেতে অসুরদলনী নব মাতৃরূপে।
সাবধান তারা এখনো যারা আছে অন্ধকূপে
কন্যা,জায়া, জননী সবাই দশভূজা
লক্ষীরূপী নারী শ্রী বাড়ির
নারীর মর্যাদার. ভার
নারীকেই সমর্পণ
করো ।
(২)
প্রার্থনা
দুর্গতিনাশিনী
দুর্গার কাছে
থাকলো একটি প্রার্থনা
পুজোর চারটি দিন যেন
অন্ধ আতুর সবার জোটে ভাত
ভাত আমাদের চালিকাশক্তি ভাত আমাদের মা।
ভাতের জন্য লড়াইয়ে রক্ত ঝরায় পা
ভাতের জন্য আসে নষ্ট রাত
ভাতের দুঃখ তবু কেন ?
পুরাও ভাতের প্রার্থনা
ধরার মাঝে
অসুরদলনী ।
কবিতা :
আমার আকাশে!
বিশ্বজিৎ কর
আমার আকাশে ভাবনাগুলো-
গুমড়ে গুমড়ে মরে,
আমার আকাশে সব ব্যর্থতা-
বৃষ্টি হয়ে ঝরে!
আমার আকাশ সুবিধাবাদের-
ছবি তুলে ধরে,
আমার আকাশে স্বার্থান্বেষীর-
মুখোশ ধরা পড়ে!
আমার আকাশে সব প্রিয়জন-
অতি আদরণীয়,
মুক্তমনায় তাই বলি -
আকাশ,যুগ যুগ জিও!
মানব জীবন রেল গাড়ী
আসরাফ আলী সেখ
মানব জীবন রেল গাড়ী ,
চলে অভিজ্ঞতা লাইন ধরি
ষ্টেশন ছাড়ার সময়
সোনায় দানায় বোঝাই করি।
ষ্টেশনে যখন থামে গাড়ি
লুট হয় সোনা দানা
কে যে ওঠে আর কেই বা নামে
কারও নেই জানা।
ঠিক ঠিকানা জানে কোন জনে
যখন চেকার ওঠবে শেষের ষ্টেশনে?
চেকার টিকিট খোঁজে একে একে
নেমে যেতে হবে এ বাহন ছাড়ি
গারদে পাঠায় হিসেব কষে
মানব জীবন রেল গাড়ী।
কোন ষ্টেশনে কে যে ওঠে ,
বসে এ গাড়ির আসনে
মাঝে মাঝে হকারের দল
জীবন করে চনমনে।
শেষ স্টেশনে জমিন পরে
বেচা কেনা শেষ হলে
ভগ্ন হৃদয়ে রেল গাড়ি হতে
হকার যায় নেমে চলে।
নামতে হয় রে সকল ছেড়ে ,
চেকার আছে ঘাপটি মেরে ,
ট্যাঁকের কড়ি দাও নগদে
টিকিট ছাড়া যাও গারদে।
থাকবি একা বিনা জামিনে ,
উপরওলার হিসাব ভারি
জামিন পাবি বিনে হিসেবে,
মানব জীবন রেলের গাড়ী।
বৃদ্ধ
হামিদুল ইসলাম
বয়েসটা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন
খুব তাড়াতাড়ি
অথচ মনের ইচ্ছেগুলো পূর্ণ হলো না
পেরিয়ে গেলো সুদিন
এখন আমি বৃদ্ধ ।।
প্রতিদিন বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি
অথচ এমন তো কথা ছিলো না
তোমাকে নিয়ে যতো স্বপ্ন ছিলো আমার
স্বপ্নগুলো এখন বাক্সবন্দি
আমি ফিরে যাচ্ছি নন্দন কানন ।।
তোমার সাথে দেখা করার
ইচ্ছে ছিলো
তোমার বয়েস এখন কাঁচা
কাঁচা বয়েসে প্রেমটা জমে ওঠে তাড়াতাড়ি
আগের মতো ।।
তুমি পাশে থাকলে
ভুলে যাই কোনো বৃদ্ধের দিন
তোমার বুকে শান্তি খুঁজি
আমি এখন বৃদ্ধ
আমার স্বপ্ন আর হবে না রঙিন ।।
অনাচার
সাফরিদ সেখ
চারিদিকে অনাচার ঘোর।
ধর্ষণ করে হত্যা আজ
হয়েছে নিত্য দিনের ঘটনা।
অফিস আদালত যেথা যাও
ফেলো কড়ি মাখো তেল।
এ যেন দুর্নীতির এক স্বর্গরাজ্য-
পুলিশকে ঘুষ দাউ।আর
বেআইনি মাল সীমান্ত পার কারো।
গ্রাম্য নেতার বিচার ছেলে খেলা,
অন্যায় এর পক্ষ্যে রায় ন্যায়ের অপমান।/
ডক্টর হাসপাতালে দেখলে সব ঠিক আছে।
না হয় অন্য কোথাও নিয়ে যাও।
যেই চেম্বারে যাও ভয়ঙ্কর ব্যাপার!
এ অসুখ সারবে না সহজে,দরকার
অস্ত্রোপচার বিশ হাজার লাগবে।
করোনা
গোপাল বিশ্বাস
করোনা গো করোনা
তোমার হৃদয়ে নেই করুনা
মানব জাতিকে ধ্বংস করবে
মনে বুঝি এই বাসনা ?
ঔষধ নাই , ভেকসিন নাই
কি খাবো রে ভাই
করোনাতে কি মরে যাবো
নাই যে কোন ঠাঁই l
ঠাঁই আছে পথ আছে
আমাদেরই হাতে
মাস্ক পড়ো হাত ধোও
সকলের সাথে l
স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলো
করোনা হবে দূর
ভগবান মোদের রক্ষা করুন
এই অচিন পুর l
বিবেক
আসমত আলী
মানুষ নামক মানুষ আছে
জগৎ জুড়ে ভাই
মানব বিবেক খুঁজেই ফিরি
তাকে কোথা পাই?
বিবেক জগৎ ভরে গেছে
মানুষ নামক কলে
ছুটছে সবাই আপন তালে
দাম্ভিকতার বলে ।
চোরকি ঘোরা ঘুরছে সবে
কে আর কাকে মানে ?
ভাবনা শুধু কখন কে কার
কাছা ধরে টানে।
ক্ষুধায় শিশু কাঁদছে পড়ে
খাবার জোটে না
বিবেক হারা মানুষ সে দিক
ফিরে তাকায় না।
বিবেক তোমায় খুঁজে ফিরি
ভুবন মাঝে হায়
অহর্নিশি খুঁজেও যে গো
তোমার দেখা নাই।
উপকন্ঠ প্রাত্যহিক সাহিত্য পত্রিকা :
|| কবিতার রূপকল্প : পর্ব : ১৮ ||
রবীন্দ্র পরবর্তী কাল এবং আধুনিকতার
আন্দোলন
( তৃতীয় অংশ )
সৌম্য ঘোষ
""""""""""""""""""""""""""""""'"""""""""""""""""""""""""""""""""
তিনি প্রকৃতির কবি, বিষণ্ণতার কবি । রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক বাংলা কবিতায় তাঁর অবিসংবাদিত পরিচিতি নানাভাবেই প্রকাশ মুখর । রবীন্দ্র পরবর্তীকালে সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি জীবনানন্দ দাশ । ১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি বরিশালের এক শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ। জীবনানন্দ কবি কুসুমকুমারী দাশের পুত্র । জীবনানন্দের ঠাকুরদা সর্বানন্দ দাশগুপ্ত ছিলেন বরিশালের ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনের পুরোধা । পিতা সত্যানন্দ দাস একজন শিক্ষক । তিনি ছিলেন প্রবন্ধকার ও পত্রিকার প্রকাশক ।
কবির ৫৬ বসন্তের ছোট্ট এক টুকরো জীবন কেটেছে চরম দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে । কর্মজীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কোথাও থিতু হতে পারেননি । তিনি বহু কলেজে অধ্যাপনা করেছেন । ১৯৩৫ সালে বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, ও সমর সেন একটি নতুন কবিতার পত্রিকা প্রকাশ করেন যার নাম "কবিতা" । প্রথম সংখ্যায় জীবনানন্দের "মৃত্যুর আগে" কবিতাটি প্রকাশ পায় । কবিতাটি পড়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, "চিত্ররূপময়!" ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "বাংলা কাব্য পরিচয়" নামক একটি কবিতার সংকলন সম্পাদনা করেন । এই সংকলনে তিনি জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিয়েছিলেন । বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত "কবিতা" পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যাতে (১৩৪২) জীবনানন্দ দাশের অমর কবিতা " বনলতা সেন" প্রকাশিত হয়। এই কবিতাটি বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ।
জীবনানন্দ দাশ বাংলা রূপকথার ছাঁচে গল্প বলার ধারায় কবিতায় লৌকিকতার আমেজ নিয়ে আনেন । মানব সভ্যতার ইতিহাস চেতনার সঙ্গে রূপসী বাংলার নিসর্গ প্রীতিকে চিত্রিত করেন ।
"কচি লেবু পাতার মতো নরম সবুজ আলোয়
পৃথিবী ভরে গিয়েছে এই ভোরের বেলা;
কাঁচা বাতাবির মতো সবুজ ঘাস-- তেমনি সুঘ্রান
হরিণেরা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে !
আমারো ইচ্ছা করে এই ঘাসের এই ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো
গেলাসে গেলাসে পান করি..... ... "
প্রকৃতির বুকেই তাঁর প্রেম ।তাই কবি তাঁর মানসী শঙ্খমালাকে খুঁজেছেন নক্ষত্রে, সন্ধ্যার নদীর জলে, জোনাকি দেহে ,ধানক্ষেতে ,অঘ্রাণের অন্ধকারে :
"খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি কুয়াশার পাখনায়
সন্ধ্যার নদীর জলে নামে যে আলোক
জোনাকি দেহ হতে খুজেছি তোমারে সেইখানে ধূসর প্যাঁচার মতো ডানা মেলে অঘ্রাণের অন্ধকারে
ধানসিঁড়ির মত ধানে আর ধানে
তোমারে খুঁজেছি আমি নির্জন প্যাঁচার মতো প্রাণে।
স্বভাবে তিনি ছিলেন অন্তর্মুখী ; দৃষ্টিতে ছিল চেতনা থেকে নিশ্চেতনা ও পরচেতনার শব্দরূপ আবিষ্কারের লক্ষ্য । তিনি ইতিহাস সচেতনতা দিয়ে অতীত ও বর্তমানকে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক সূত্রে এক করেছেন । জীবনানন্দ বাংলা কাব্য সাহিত্যের যে অজ্ঞাত পূর্ব ধারা আবিষ্কার করেছিলেন তা জীবনানন্দের সমকালীন সময়ের কাব্য রসিক কিংবা নন্দনতাত্ত্বিকরা অনুধাবন করতে পারেননি । তাই জীবদ্দশায় তিনি কবি খ্যাতি পাননি । তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ "বনলতা সেন" ১৯৫৩ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হয় । ১৯৫৪ সালে তাঁর "শ্রেষ্ঠ কবিতা "গ্রন্থটির জন্য আকাডেমী পুরস্কার লাভ করেন ।
তিনি মনে করতেন, "উপমাই কবিত্ব ।" তাই অনর্গল উপমা ব্যবহারে তাঁর কবিতা সচিত্র । গ্রাম বাংলার প্রতি মুগ্ধ কবি বলতে পারেন----
"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাইনা আর ।"
তাঁর সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছিলেন----
"অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চেয়ে দেখে তারা।"
২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ সালে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় অন্যমনস্ক আত্মস্থ ঘরে ফিরতে চাওয়া
কবির পথচলা স্তব্ধ হয়ে যায় ।।
গ্রন্থ সমালোচনা
করোনা কালের বইপড়া-৬
প্রশান্ত ভৌমিক
লেখালেখির জন্য বই পড়া বেড়েছে। এটা একটা ভাল কাজ আমার জন্য। তবে বেশিরভাগ
ক্ষেত্রেই শিশু কিশোর উপযোগী বই পড়া হচ্ছে বেশি। এটাও খারাপ নয়।
১) তপুর গোয়েন্দাগিরি
সাইফুল ইসলাম জুয়েল
তপুর গোয়েন্দাগিরি সিরিজের প্রথম বই এটি। চারটে গল্প আছে এতে। ‘’সাধু
সুন্দরবন গল্পের পটভূমি সুন্দরবন, ‘চৌধুরী নিবাসে খুনের রহস্য’ গল্পে
ঢাকা, ‘ঝিনুক রহস্য’ গল্পের পটভূমি কুয়াকাটা আর ‘জমিদার বাড়ির রহস্য’
গল্পের পটভূমি ময়মনসিংহ। গল্পগুলোর কেন্দ্রীয় চরিত্র তপু। আর সব গোয়েন্দা
গল্পের নিয়ম মেনে সহকারী হিসেবে না হলেও কাহিনির লেখক হিসেবে তপুর বন্ধু
রবিন আছে। গল্পগুলো পড়ে বুঝলাম, তপুর সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাটি হল ওর
ক্ষুরধার মস্তিষ্ক। ‘জমিদার বাড়ির রহস্য’ গল্পে যেমন ঘটনাস্থলে একবারও না
গিয়েই যুক্তি আর বুদ্ধির সাহায্যে সম্পূর্ণ রহস্যের সমাধান করে ফেলেছিল
তপু। সব মিলিয়ে কিশোর উপযোগী খুব ভাল একটি বই। তবে শেষ গল্পে ‘রক্ষিতা’
শব্দটি প্রয়োগ না করে অন্যভাবেও বোঝানো যেত ব্যাপারটি, বইটি যেহেতু
কিশোরদের জন্যেই রচিত।
২) চোর ও রমনী
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘হারিয়ে যাওয়া লেখা’ শীর্ষক বই থেকে পড়লাম
উপন্যাসটি। চোর রঘু ও তার পরিবারের গল্প। রঘুর স্ত্রী বীথি তাকে ছেড়ে চলে
গিয়েছিল। রঘুর ভাই শিবুও ঠিক রঘুকে পছন্দ করে এমন নয়। সাপের কামড়ে শিবুর
বউ মারা যায়, সে আবার বিয়ে করার জন্য পাত্রী দেখতে থাকে। নানা ঘটনার পরে
শেষ পর্যন্ত ছন্নছাড়া রঘুর জীবনে আবার বীথির ফিরে আসে। সব মিলিয়ে মনে হয়,
জীবন কেবলই মন্দ নয়। মাঝখানে যাত্রার বিবেকের মত উদয় হয় দলিল লেখক বীরেন
সাধুখাঁ। তার মধ্যস্থতায় মধুরেণ সমাপয়েৎ। খুব ভাল লাগল পড়তে। এবং একটা
ধন্যবাদ জানাতেই হয় ‘হারিয়ে যাওয়া লেখা’ বইটির সম্পাদক রঞ্জন
মুখোপাধ্যায়কে, তিনি সংগ্রহ করে রেখেছেন বলেই এই উপন্যাসটি পড়তে পারলাম।
৩) টানাপোড়েনটানাপোড়েন
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘হারিয়ে যাওয়া লেখা’ শীর্ষক বইয়ের থেকে পড়া
আরেকটি উপন্যাস। সুবীরবাবুর পরিবারের গল্প। সুবীরবাবুর পরিবারে আছেন
স্ত্রী অর্চনা, পুত্র অবু আর কন্যা ঝুমা। বড় কন্যা বুলার বিয়ে হয়ে
গিয়েছে। ছেলে অবু মায়ের প্রশ্রয়ে বাবার অবাধ্য। মেয়ে ঝুমা দাদার
অবাধ্যতাকে মেনে নিতে পারে না। এক জামাই ষষ্ঠীর দিনে ঘটে যায় এক অঘটন।
ঠিক ঘটে না, ঘটার মুখোমুখি হয়। পরে এক শুভাকাঙ্খীর সহায়তায় ফিরেও আসতে
পারে। অর্চনা দেবীর এক নীরব প্রেমিক বাঁচিয়ে দেয় সম্পূর্ণ পরিবারকে।
মায়ের কিংবা বাবার অবহেলা একটা সন্তানের জীবনকে কীভাবে শেষ করে দিতে
পারে, তাঁর উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই উপন্যাস। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বই
বরাবর সুখপাঠ্য। শীর্ষেন্দুর নির্যাসটুকু পাওয়া যায় ষোল আনাই।
৪) সূর্যদেবের বন্দি
হার্জ
টিনটিনের কমিকস অনেক প্রিয়। একটা লেখা রেডি করার জন্য আবার শুরু করতে হল
পড়া। অনেক আগে পড়া থাকলেও এবার পড়তে শুরু করেই অবাক হলাম। ‘সূর্যদেবের
বন্দি’ বইয়ের শুরুর দিকেই ‘কোয়ারান্টাইন’ শব্দটির ব্যবহার অবাক করল।
করোনার কারণে এখন এই শব্দটি অনেক আলোচিত হলেও, আগেও এই শব্দটির ব্যবহার
চোখে পড়েনি। পড়লেও সেভাবে লক্ষ্য করিনি। একটা জাহাজকে কোয়ারান্টাইন করার
ব্যাপারে বলা হয়েছে “যাত্রীদের কারো ছোঁয়াচে রোগ হলে কিছুদিনের জন্য সেই
জাহাজকে আলাদা করে রাখা হয়, তাকেই বলে কোয়ারান্টাইন।” টিনটিনের
অ্যাডভেঞ্চারগুলো সবসময়েই আকর্ষণীয়। কিন্তু সূর্যদেবের বন্দিতে দক্ষিণ
আমেরিকায় ভ্রমণটা আরো মজাদার হয়ে উঠল। টিনটিনের দুঃসাহসী মনোভাব সত্যিই
আকর্ষণীয়। ইনকা মন্দিরে যাওয়ার পথের সেই রাস্তা, পাহাড়, নদী, ঝর্ণা সব
মিলিয়ে মনে হয় টিনটিনের সাথে বেরিয়ে পড়ল মন্দ হত না।
৫) হুমায়ূন আহমেদের সাথে সাতটি বছর
মোঃ মাহবুবুল আলম
আগেও একটি বইতে হুমায়ূন আহমেদের ছবি দেখে কিনে ঠকেছিলাম। এরপর সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলাম হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখা হলেই সেই বই কিনব, এটা করা যাবে না।
কিন্তু এই বইটি কেনার পেছনে কারণ ছিল তিনটি। (১) বইটি খুব কম দামে পাওয়া
যাচ্ছিল, (২) বইয়ের লেখক হুমায়ূনের নাটকে দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন,
(৩) বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব। বইটি পড়া শেষ
করে সবচেয়ে বেশি রাগ হল নিজের ওপর, তারপর আহসান হাবীবের ওপর। ছাড়ে পাওয়া
বই কেনা উচিত হয়নি আমার। পাশাপাশি আহসান হাবীবেরও উচিত হয়নি অনুরোধে এরকম
একটি বইয়ের ভূমিকা লেখা। অত্যন্ত নিম্নমানের বই। হুমায়ূন কীভাবে হাটত,
বসত এসব বর্ণনা পড়ে কার কী লাভ হবে আমার জানা নেই। এই ধরনের বই প্রকাশ
বন্ধ না হলে অতি শীঘ্রই হয়ত হুমায়ূনের বাড়ির পরিচারকেরাও বই লেখা শুরু
করে দেবে হুমায়ূনকে নিয়ে।
কবিতা:-
ন্যায় শৃঙ্খলিত রাজনৈতিক শিকলে আজ
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
নেশা করে ওরা।
সারা রাত পথে পথে পথে ঘোরা।
বিশৃঙ্খল সমাজ।
হায়! এ কী দুরাবস্থা আজ।
কে করবে এ সব দূর?
এ যে কঠিন কাজ।
নারী আজ বিপন্ন।
ধর্ষণ - জঘন্য।
কারো কানে ঢোকে না আর্তনাদের সুর।
ওরা রাজনৈতিক দলের প্রিয়।
ওরা তাই বরণীয়।
নারী ধর্ষণ তো করণীয়।
ন্যায় বিচার না পায় ধর্ষিতা।
মিছে কলঙ্ক ওর ওপরে কেন
অকারণ বিনা দোষে বর্ষিতা?
আইন তো শৃঙ্খলিত রাজনৈতিক শিকলে আজ।
স্খলিত পদক্ষেপ শোধরাবে কে আজ?
একসময় ও ও তো ছিল হর্ষিতা।
নারীত্ব লুট গেছে ওর।
তাই আঁশু ঝরে, বৃষ্টি যেন।
লুটেরার দল,
হেসে ফেরে, উৎসবে করে মস্তি-কোলাহল।
রমণীর জীবন যা ছিল রমণীয়া,
আজ তো ও হলাহল।
কতদিন আর চলবে অন্যায় এ হেন?
জাগো কন্যা তুমি জেগে ওঠো!
জ্বলন্ত অগ্নিরূপে হও সবিতা!
জ্বালিয়ে দাও ওদের যারা তোমার করেছে হানি।
শক্তি, তেজ হোক তব জীবনে রবি তা।
জয় মা কালি! হোক তোমার নিজের ছবি তা!
আপনার রক্ষা আপনই কর্ম।
বজায় রাখো নিজ দেহ ধর্ম।
মনকে কর শক্তা।
হও যুদ্ধ জয়ী, অসুর নিধনকারীনী মা কালির ভক্তা!
ধর্ষণকারীর চিতাই হোক তোমার হবন অগ্নি।
সেই শশ্মান হোমানলে দাও আহুতি নিজ অসম্মানে।
আপন অন্তর্নিহিত শক্তিকে স্মরণ কর,
আপন অস্তিত্ব ত্রাণে!
নিজেরে আত্ম বিশ্বাসে ভর!
হ্যাঁ, তুমিই বিদ্রোহীনী ভগ্নী।
রক্ষা বন্ধনে কেন ভ্রাতা তোমায় করবে রক্ষা?
নিজেই নিজেরে দাও আত্ম-সুরক্ষা!
বোঝ আপন মনুষ্য জীবনের আসল মানে!
তোমাদের ধর্ষকদের কে করবে বধ?
তুমিই তো এ কাজের উপযুক্ততা।
নাও প্রতিশোধ!
বাঁচাও তুমি আজ
তোমার নির্যাতিতা সমাজ।
হোক আজ তোমার খড়্গ উন্মুক্তা!
খণ্ডিত হোক ধর্ষকের মাথা!
হুঙ্কার তোল! বল, জয় শ্রী কালি মাতা!
প্রবন্ধ
বাংলার শীত
আব্দুল রাহাজ
বাংলার ঋতু বৈচিএ্য বাংলার পরিবেশকে এনে দিয়েছে এখন অনন্য স্বাদ সূর্যের উজ্জ্বল রাশির মত ফুটিয়ে তুলেছে রূপলাবণ্যে বিশ্বের মাঝে বাংলার পরিবেশ হয়ে উঠেছে এক অনন্য প্রতীক। সত্যি বলতে কি আমাদের সোনার বাংলার পরিবেশ পর্যায়ক্রমিক ঋতুর আগমনী এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে শান্তির হিমেল বাতাস প্রতিটি ঘরে ঘরে বয়ে চলে। সেরকমই শীতকাল বাংলার পরিবেশকে ফুটিয়ে তোলে এখন অন্যের সৌন্দর্যের অধিকারী হিসেবে। সকালবেলার কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ শিশির ভেজা ঘাসে চারিদিকে ঠান্ডা হিমেল বাতাস বয়ে চলে চারিদিকে সত্যিই কি ভালো নায় না লাগে বাংলার পরিবেশ শীতের আগমনে আকাশে বাতাসে এক অনন্য প্রতীক রূপে ফুটে ওঠে। বাংলার প্রান্তিক মানুষ গুলো দুচোখ ভরে তাদের গ্রাম বাংলার শীতের যে পরিবেশ সেটা উপভোগ করে কোথাও যেন তাদের মনটাকে হালকা করে দেয় এই পরিবেশ। মজা করে একসাথে সবাই যখন তেলি পাড়ার মাঠে গিয়ে রহিমদের বাড়ি থেকে খড় এনে সবাই মিলে আগুন এর তাপ নেয় হইচই করে কত আনন্দ হয় এই সময়
সত্যি বাংলার শীত এখন অন্য রূপে ফুটে ওঠে সবার মাঝে যা জীবন ধরে চলে আসছে। বিভিন্ন উৎসব শীতের আমেজ আরো রোমাঞ্চকর করে তোলে সাথে সাথে পরিবেশ ও তার মেলে ধরে সবমিলিয়ে বাংলার পরিবেশ শীতের আগমনে অনন্য প্রতীক রূপে ফুটে ওঠে এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া কোলে।
©সেক আসাদ আহমেদ
সম্পাদক, উপকণ্ঠ
0 comments: